ইসলামে যুদ্ধনীতি সম্পর্কে ইসলাম বিদ্বেষীদের ভুল ব্যাখ্যার জবাব



ইসলামে যুদ্ধনীতি সম্পর্কে ইসলাম বিদ্বেষীদের ভুল ব্যাখ্যার জবাব

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

                                 +++শত্রু পক্ষের সাথে যুদ্ধ করা বা আক্রমণ করা+++

* সুরা বাকারা ২:২১৬ = তোমাদের উপর লড়াইয়ের বিধান দেয়া হয়েছে অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় এবং হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর । আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর ।

* সুরা বাকারা ২:২১৭ = তারা তোমাকে হারাম মাস সম্পর্কে, তাতে লড়াই করা বিষয় জিজ্ঞাসা করে । বল, তাতে লড়াই করা বড় পাপ, কিন্তু আল্লাহ্‌র পথে বাধা প্রদান , তার সাথে কুফুরি করা,মসজিদুল হারাম থেকে বাধা দেয়া এবং তার অধিবাসীদেরকে তা থেকে বের করে দেয়া আল্লাহ্‌র নিকট অধিক বড় পাপ । আর ফিতনা হত্যার চেয়েও বড় । আর তারা তোমাদের সাথে লড়াই করতে থাকবে, যতক্ষণ না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়, তারা যদি পারে । আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তার দ্বীন থেকে ফিরে যাবে অতপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরং করবে বস্তুত এদের আমল সমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী , তারা সেখানে স্থায়ী হবে ।

* সুরা বাকারা ২:২৪৪ = তোমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় লড়াই করো এবং জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সর্বস্রোতা । সর্বজ্ঞ ।

* সুরা আনফাল ৮:১২ = অতএব তোমরা আঘাত করো ঘাড়ের উপরে এবং আঘাত করো তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে । (বদর যুদ্ধের সময় এই আয়াত নাজিল হয় - তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ)

* সুরা আনফাল ৮:১৩ = এটি এ কারনে যে, তারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করেছে আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করবে , তবে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শাস্তি দানে কঠোর ।

* সুরা আনফাল ৮:১৫ = হে মুমিনগন তোমরা যখন কাফিরদের মুখোমুখি হবে বিশাল বাহিনি নিয়ে, তখন তাদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না ।

* সুরা আনফাল ৮: ১৬ = আর যে ব্যাক্তি সেদিন তাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তাহলে সে আল্লাহ্‌র গজব নিয়ে ফিরে আসবে । তবে যুদ্ধের জন্য (কৌশলগত) দিক পরিবর্তন অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহনের জন্য হলে ভিন্ন কথা ।

* সুরা আনফাল ৮:১৭ = সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করোনি বরং আল্লাহ্‌ই তাদেরকে হত্যা করেছেন । আর তুমি নিক্ষেপ করোনি যখন তুমি নিক্ষেপ করেছিলে বরং আল্লাহ্‌ই নিক্ষেপ করেছেন।

* সুরা আনফাল ৮: ১৮= এই হল ঘটনা এবং নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কাফেরদের ষড়যন্ত্র দুর্বল করে দেন।

* সুরা আনফাল ৮:৩০ = আর যখন কাফেররা তোমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল , তোমাকে বন্দী করতে অথবা তোমাকে হত্যা করতে কিংবা তোমাকে বের করে দিতে আর তারা তো তাদের ষড়যন্ত্র করছিল এবং আল্লাহ্‌ও তাঁর কৌশল করছিলেন , বস্তুত আল্লাহ্‌ হলেন শ্রেষ্ঠ কৌশলী ।

* সুরা আনফাল ৮: ৩৯ = তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো যতক্ষণ না ফিতনা অবসান হয় এবং দ্বীন পূর্ণরুপে আল্লাহ্‌র জন্য হয়ে যায় । তবে যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তারা যা করে সে বিষয় সম্যক দ্রষ্টা ।

* সুরা আনফাল ৮:৬০= তাদের মুকাবেলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত করো , তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহ্‌র শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকেও , যাদের তোমরা জানো না । আল্লাহ্‌ তাদের জানেন । আর তোমরা যা আল্লাহ্‌র রাস্তায় খরচ করো তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেয়া হবে আর তোমাদেরকে জুলুম করা হবে না ।

* সুরা আনফাল ৮:৬৫ = হে নবী তুমি মুমিনদের লড়াইয়ে উৎসাহ দেও, যদি তোমাদের মধ্যে থেকে বিশজন ধৈর্যশীল থাকে তারা দুশজনকে পরাস্ত করবে আর যদি তোমাদের মধ্যে একশজন থাকে , তারা কাফেরদের একহাজার জনকে পরাস্ত করবে ।কারা তারা (কাফেররা) এমন কওম যারা বুঝে না ।

* সুরা আনফাল ৮:৬৭ = কোন নবীর জন্য সংগত নয় যে বন্দীদেরকে নিজের কাছে রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশে পুরপুরিভাবে শত্রুকে পরাভূত করা হয় । তোমরা তো পার্থিব ধন সম্পদ কামনা করো আর আল্লাহ্‌ চান আখেরাতের মঙ্গল ।

* সুরা তওবা ৯:৫ = যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা করো এবং তাদেরকে পাকড়াও করো , তাদেরকে অবরোধ করো এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাটিতে বসে থাক । তবে তারা যদি তওবা করে এবং সালাত কায়েম করে আর যাকাত দেয় তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দেও । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ বড়ই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু ।
* সুরা তওবা ৯:১৪ = তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো । আল্লাহ্‌ তোমাদের হাতে তাদেরকে আযাব দিবেন এবং তাদের অপদস্ত করবেন।

* সুরা তওবা ৯:২৯ = তোমরা লড়াই করো আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসে ইমান রাখে না এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না আর সত্যদ্বীন গ্রহণ করে না । যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিযিয়া দেয় ।

* সুরা তওবা ৯:৭৩ = হে নবী , কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো এবং তাদের উপর কঠোর হও, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।

* সুরা তওবা ৯:১১১= মুমিনরা আল্লাহ্‌র পথে লড়াই করে , অতএব তারা মারে ও মরে ।

* সুরা তওবা ৯:১২৩= হে মুমিনগণ তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায় ।

* সুরা আহজাব ৩৩:৬০,৬১ = যদি মুনাফিকগণ এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা ও শহরের মিথ্যা সংবাদ প্রচারকারীরা বিরত না হয় তবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে ক্ষমতাবান করে দিব । অতপর তারা সেখানে তোমার প্রতিবেশি হয়ে অল্প সময়ই থাকবে । অভিশপ্ত অবস্থায় । তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে পাকড়াও করা হবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হবে ।

* সুরা মুহাম্মদ ৪৭:৪= তোমরা যখন কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের ঘাড়ে আঘাত করো, পরিশেষে তোমরা যখন তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করবে তখন তাদেরকে শক্তভাবে বেধে নেও । তারপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ করো অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দাও - যে পর্যন্ত না যুদ্ধবাজ শত্রুপক্ষ অস্র সমর্পণ করে । এ হুকুম অবশ্য পালনীয় । আর আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন । কিন্তু তিনি তোমাদের একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান । আর যারা আল্লাহ্‌র পথে নিহত হয় তিনি কখনো তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করবেন না।

* সুরা সফ ৬১:৪ = নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালবাসেন , যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর ।

                                        +কেন শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে+

* সুরা বাকারা ২:১৯০ = তোমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সীমালঙ্ঘন করো না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করে না।

* সুরা বাকারা ২:১৯১ = আর তাদেরকে হত্যা করো যেখানে তাদেরকে পাও এবং তাদেরকে বার করে দেও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করেছিল আর ফিতনা হত্যার চেয়েও কঠিনতর এবং তোমরা মসজিদুল হারামের নিকট তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো না , যতক্ষণ না তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সেখানে লড়াই করে । অতপর তারা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তবে তাদেরকে হত্যা করো । এটাই কাফেরদের প্রতিদান ।

* সুরা বাকারা ২:১৯২ = তবে তারা যদি বিরত হয় , তবে আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু ।

* সুরা বাকারা ২:১৯৩ = আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দ্বীন আল্লাহ্‌র জন্য হয়ে যায় । সুতরাং তারা যদি বিরত হয় তাহলে জালিমরা যারা কারো উপর কোন কঠোরতা নাই ।

* সুরা বাকারা ২: ১৯৪= যে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে, তোমরাও তার উপর আক্রমণ করো। যেরূপ সে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে ।

* সুরা আল ইমরান ৩:২১ = নিশ্চয় যারা আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহের সাথে কুফুরি করে এবং অন্যায়ভাবে নারীদের হত্যা করে আর মানুষের মধ্য থেকে যারা ন্যায়-পরায়নতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে হত্যা করে । তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দেও।

* সুরা মায়দাহ ৫:৩২= অন্যায়ভাবে যে কাউকে হত্যা করল সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল । আর যে ব্যাক্তি কোন মানুষের প্রান বাচাল সে যেন পুরা মানবজাতিকেই বাচাল ।

* সুরা মায়দাহ ৫:৩৩= যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমিনে ফাসাদ করে বেড়ায় তাদের আযাব কেবল এই যে , তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শুলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে , এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাআযাব ।

* সুরা মায়দাহ ৫:৩৪= তবে তোমাদের আয়ত্তাধীন আসার আগেই যারা তওবা করে তাদের জন্য না ।জেনে রাখো যে আল্লাহ্‌ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

* সুরা আনফাল ৮:৬১= আর যদি তারা সন্ধির প্রতি ঝুকে পড়ে , তাহলে তুমিও তার প্রতি ঝুকে পড় ।

* সুরা আনফাল ৮:৬২= আর যদি তারা তোমাকে ধোঁকা দিতে চায় তাহলে তোমার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট । তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা।

* সুরা আনফাল ৮:৭০= হে নবী তোমাদের হাতে যে সব যুদ্ধবন্দী আছে তাদেরকে, যদি আল্লাহ্‌ তোমাদের অন্তরসমুহে কোন কল্যাণ আছে বলে জানেন তাহলে তোমাদের থেকে যা নেয়া হয়েছে , তার চেয়ে উত্তম কিছু দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন । আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু ।

* সুরা আনফাল ৮:৭১= আর যদি তারা তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ইচ্ছা করে , তাহলে তারা তো পূর্বেই আল্লাহ্‌র সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে । অতপর তিনি তাদের উপর তোমাকে শক্তিশালী করেছেন।

* সুরা তওবা ৯:৬= যদি মুশরিকরা কেউ তোমাদের কাছে আশ্রয় চায় তাহলে তাকে আশ্রয় দেও , যাতে সে আল্লাহ্‌র কালাম শুনে। অতএব তাকে পৌছিয়ে দেও তার নিরাপদ স্থানে ।

* সুরা তওবা ৯:৭ = কিভাবে মুশরিকদের জন্য চুক্তি কার্যকর থাকবে আল্লাহ্‌র কাছে ও তাঁর রাসুলের কাছে ? অবশ্য যাদের সাথে মসজিদে হারামে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের কথা আলাদা । অতএব যতক্ষণ তারা তোমাদের সাথে সরলভাবে থাকে তোমরাও তাদের সাথে সরলভাবে থাকবে । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুক্তাকিদের ভালবাসেন ।

* সুরা তওবা ৯:৮= কেমন করে কার্যকর থাকবে (মুশরিকদের সাথে চুক্তি ?) যদি তারা তোমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করে তবে তারা তোমাদের আত্মীয়তাঁর মর্যাদাও দিবে না এবং অঙ্গীকারের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবে না । তারা কেবল নিজেদের মৌখিক কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট রাখে কিন্তু তাদের অন্তর তা অস্বীকার করে । আসলে তাদের অধিকাংশই ফাসেক ।

* সুরা তওবা ৯:১০= তারা কোন মুমিনের ব্যাপারে আত্মীয়তার ও চুক্তির ব্যাপারে খেয়াল রাখে না । আর তারাই হল সীমালঙ্ঘনকারী

* সুরা তওবা ৯:১২= যদি তারা তাদের চুক্তি সন্ধির পর তাদের কসম ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে খারাপ কথা বলে তাহলে তোমরা কুফরের নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো । নিশ্চয় তাদের কোন কসম নাই । তারা যেন বিরত হয়।

* সুরা তওবা ৯:১৩= তোমরা কেন এমন কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না , যারা তাদের কসম ভঙ্গ করেছে এবং রাসুলকে বহিষ্কার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে । আর তারাই প্রথমে তোমাদের সাথে শুরু করেছে । তোমরা কি তাদের ভয় করছ ? অথচ আল্লাহ্‌ অধিক উপযুক্ত যে, তোমরা তাঁকে ভয় করবে । যদি তোমরা মুমিন হও ।

* সুরা তওবা ৯:৩৬= তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই করো যেমনিভাবে তারা সকলেই তোমাদের সাথে লড়াই করে।

* সুরা হজ ২২:৩৯ = যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে , যাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে । কারন তাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম ।

* সুরা হজ ২২:৪০ = যাদেরকে তাদের নিজ বাড়ি-ঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুদু এ কারনে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে আমাদের রব আল্লাহ্‌ । আর আল্লাহ্‌ যদি মানবজাতির এক দলকে ওপর দল দ্বারা দমন না করতেন তবে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খৃষ্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম , গির্জা , ইহুদীদের উপাসনালয় ও মসজিদ সমূহ- যেখানে আল্লাহ্‌র নাম অধিক স্মরণ করা হয় । আর আল্লাহ্‌ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন যে তাঁকে সাহায্য করে । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শক্তিমান , পরাক্রমশালী ।

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮ = দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি ঘর থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি সদয়,ভাল,উত্তম ব্যাবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ্‌ তোমাদের নিষেধ করেন না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ন্যায় পরায়ণদের ভালবাসেন ।

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:৯ = আল্লাহ্‌ শুদু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন , যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ও তোমাদেরকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে যারা সাহায্য করেছে , আর তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম ।

                             ++ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত যুদ্ধের পিছনের মুল কারন++

বদর যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ মক্কার কুরাইশরা হিংসা করে মুসলিমদের প্রতি । রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নবী (সা) এর সঠিক নেতৃত্বের প্রতি মদিনার সকলেই সমর্থন করে । ইসলামের সাফল্যে মক্কার কুরাইশরা হিংসে পুড়ে যায় । তাই তারা ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে ।

২/ আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর এর ষড়যন্ত্রঃ এই মুনাফিক নেতা বনু খাজরাজ গোত্রের একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন । সে মদিনার শাসক হবার স্বপ্ন দেখত কিন্তু রাসুল (সা) এর কারনে তার স্বপ্ন পূরণ হয় নাই এর কারনে হিংসা করে সে মুনাফিক নেতা নবী মুহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় এবং মক্কার পণ্ডিতদের সাথে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ হয় । তার এই ঘৃণ্য কার্যকলাপ কুরাইশদের মদিনা আক্রমণে উদ্ভুদ্ধ করে ।

৩/ মদিনার ইহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতাঃ মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় প্রথম দিকে রাসুল (সা) সাদরে গ্রহণ করলেও পরে বিরোধিতা করতে থাকে । ইসলামের ব্যাপক প্রচার প্রসার দেখে ইহুদিরা প্রচুর হিংসে করে । মদিনা রাষ্ট্রে তাদেরকে সকল ধর্মীয় ও নাগরিক স্বাধীনতা প্রদান করা সত্ত্বেও ইহুদীরা কোন দিনই মুসলমানদের সুনজরে দেখেনি । তারা মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গ করে কুরাইশদের সাথে গোপনে তথ্য পাচার করে ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে ।

৪/ কুরাইশদের নেতা আবু সুফিয়ান বাণিজ্যের অজুহাতে যুদ্ধের অস্ত্র সংগ্রহের জন্য সিরিয়া গমন করে । এ বাণিজ্যে কাফেলায় প্রায় ৫০ হাজার দিনার মূল্যের যুদ্ধের অস্ত্র ও পণ্য সামগ্রী ছিল ।

৫/ কুরাইশদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য রাসুল (সা) আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি গোয়েন্দা দল সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঠান । তাদেরকে কোন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আদেশ দেয়া হয়নি । কিন্তু ভুল ক্রমে আবদুল্লাহ মক্কাগামী একটি কাফেলাকে আক্রমণ করলে নাখলার একটি খণ্ডযুদ্ধ সংঘঠিত হয় । এ যুদ্ধে কুরাইশ নেতা আমর বিন হাজরামি ও ২ জন বন্দী হয় । নাখলার যুদ্ধকে বদরের যুদ্ধের প্রদান কারন হিসেবে গণ্য করা হলেও তারা সন্ধি না করেই বদরের যুদ্ধে রওয়ানা হয় । মদিনায় হামলা করে মুসলিমদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে । নাখলার যুদ্ধে আমর ইবনুল হাজরামি হত্যার প্রতিশোধ নেয়াটা ছিল একটি অজুহাত মাত্র ।

বিস্তারিত দেখুনঃ সিরাতুল রাসুল (সা) , আসাদুলাহ আল গালিব এবং আর রাহীকুল মাখতুম ।

উহুদ যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ বদরের যুদ্ধে হেরে প্রতিশোধ হিসেবে কাফেররা উহুদ যুদ্ধ তৈরি করে । আবু জাহেল , উঠবা , শায়েবাকে হারিয়ে তারা হিংসায় আরও উগ্র হয়ে পড়ে । তারা শপথ করে যতদিন তারা মুসলমানদের ধ্বংস করতে না পারবে ততদিন তারা সকল ভোগবিলাস পরিহার করবে।

২/ ইহুদীদের ষড়যন্ত্রঃ বদরের যুদ্ধে হারার ফলে মক্কার কুরাইশরা মনোবল ভেঙ্গে যায় । এই অবস্থায় মদিনার স্বার্থপর ইহুদীরা উস্কানি দেয় যাতে আবার যুদ্ধ সৃষ্টি হয় । কাব বিন আশরাফ নামক এক কবি সে মক্কার কুরাইশদের উস্কানি দিত মুসলিমদের ধ্বংস করতে । ফলে মক্কার কুরাইশরা আবার যুদ্ধ করতে তৈরি হয় ।

৩/ মদিনার রাসুল (সা) এর জনপ্রিয়তা দেখে কাফেররা জ্বলে পুড়ে যায় তাই ইসলাম সহ রাসুলকে ধ্বংস করতে যুদ্ধ করে ।

৪/ কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ৩০০০ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনার পশিমে উহুদ প্রান্তরে অবস্থান করে । তার সেনাবাহিনীতে ৩০০ উস্থারোহী ও ২০০ আশ্চারোহী সৈন্য ছিল । আবু সুফিয়ানের যুদ্ধাভিযানের খবর পেয়ে নবী (সা) ১০০০ মুসলিম সৈন্য নিয়ে কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করেন । 

পথিমধ্যে মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ বিন উবাই ৩০০ সৈন্য নিয়ে দল ত্যাগ করলে রাসুলের মাত্র ৭০০ জন সৈন্য হয়ে পড়ে ।

বিস্তারিত দেখুনঃ সিরাতুল রাসুল (সা) , আসাদুলাহ আল গালিব এবং আর রাহীকুল মাখতুম ।

বনু নাজীর যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ সিরাতুন নবী (সা), ৩/১৮৮, ইবনে হিশাম রহঃ রাসুল (সা) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে এমনকি মাথার উপরে দিক থেকে পাথর ছুড়ে হত্যা করার জন্য । এরপরেই যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয় ।

২/ রাসুল (সা)কে হত্যার চেস্টা জঘন্য অপরাধ আর মদিনা সনদ যারা ভঙ্গ করে তারা রাষ্ট্রদোহী হয়েপরেছিল । বনু নাজীর চুক্তি করেছিল যে তারা রাসুলের সাথে যুদ্ধ করবে না কিন্তু এই শান্তি চুক্তি তারা ভঙ্গ করে ।

খণ্ডক যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ কাফেরদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন হয়নি কারন তারা রাসুল (সা) কে যুদ্ধে হত্যা করতে পারেনি তথা উহুদ যুদ্ধে । তাই কাফেররা আবার মুসলিমদের ধ্বংস করতে আরেক যুদ্ধের প্রস্তুতি তথা খণ্ডক যুদ্ধের জন্য রেডি হয় ।

২/ উহুদের যুদ্ধে পরাজয় থেকে মুসলিমরা একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়ে পড়ে , রাসুল (সা) এর নেতৃত্বে তারা আরও শক্তিশালী হয়। এটা দেখে কাফেররা মুসলমানদের শেষ বারের মত ধ্বংস করতে এমনকি দুনিয়া থেকে ইসলাম মুছে দেয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি নেয় ।

৩/ বেদুয়িনদের শত্রুতাঃ মদিনার উপকণ্ঠে বেদুয়িনরা অনিয়ন্ত্রিত ও বিশৃঙ্খল জীবন যাপন করত । তারা লুঠতরাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত । রাসুল (সা) তাদের ভাল হওয়ার উপদেশ এবং ভাল পরামর্শ দেন । তারা না মানলে শাস্তিও দেন । এই শাস্তির জন্য রাসুলের প্রতি খেপে কুরাইশদের সাথে এরা হাত মিলায় , মুসলিমদের ধ্বংস করার নিয়তে ।

৪/ ইহুদীরা আরবের বিভিন্ন গোত্র, জনগন ও শাসকদলকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে থাকে । ফলে তারা মদিনা আক্রমনের জন্য প্রস্তুতি হয় ।

৫/ নবী মুহাম্মদ (সা)কে এবং তাঁর দলকে ধ্বংস করতে কাফেরদের সৈন্য ছিল ১০ হাজার আর রাসুলের সৈন্য ছিল ৩ হাজার মাত্র । পরামর্শ করে পরিখা খনন করা হয় ফলে কাফেররা সরাসরি হামলা করতে পারে নাই । কাফেররা ২৭ দিন মদিনা অবরোধ করে রাখে 

বিস্তারিত দেখুনঃ সিরাতে ইবনে হিশাম, আর রাহীকুল মাখতুম ।

বনু কুরাইজা যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ মদিনা সনদের একটি দ্বারার মধ্যে এই চুক্তি ছিল যে মদিনাতে বাইরের শত্রু আক্রমণ করলে মোকাবেলায় সবাই এক থাকবে । রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া কেউ গোপনে চুক্তি করতে পারবে না কিন্তু এই দুটি চুক্তিই বনু কুরাইজা ভঙ্গ করে বরং তারা মক্কার কাফেরদের সাথে এক ছিল যে মুসলিমদের ধ্বংস করতে চাইত তারা ।

২/ হযরত আলী (সা) কুরাইজা দুর্গের কাছে যাওয়ার পরে সেই গোত্রের ইহুদীরা নবীজি (সা) অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে ।

৩/ রাষ্ট্রের চুক্তি অনুযায়ী বনু কুরাইজা বাসীর মুসলিমদের সাহায্য করার কথা ছিল কিন্তু তারা সেটা বিন্দুমাত্র করে নি । বরং তারা চাইত মুসলিম জাতি ধ্বংস হক । মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার জন্য তারা দেড় হাজার তলোয়ার, দুই হাজার বর্শা, তিনশত বর্ম এবং ৫০০ ঢাল মজুদ করে রেখেছিল । বিজয়ের পর মুসলিমরা সেসব অস্ত্র উদ্ধার করে । - আর রাহীকুল মাখতুম এর ৩৪৮ পৃষ্ঠা ।

৪/ বনু কুরাইজার একজন মহিলাকে হত্যা করা হয় কারন ঐ মহিলা ইবনে ছুয়াইদের উপর গম পেশাইর চাক্কি ছুড়ে তাকে হত্যা করেছিল । সেই হত্যার বদলে তাকেও শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা হয় ।

৫/ সহিহ হাদিস অনুযায়ী তথা জাবের (রা) বর্ণনায় আছে, বনু কুরাইজার ৪০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তারা সবাই ছিল যোদ্ধা আর কেউ কেউ ছিল সহযোগী ।মহিলাদের হত্যা করা হয়নি। (ihadis.com, তিরমিজি, হাদিস নং ১৫৮২)

৬/ যাদের নাভির নিচে চুল উঠেনি তাদের হত্যা করা হয়নি । আতিয়া কুরাজির নাভির নিচে চুল উঠেনি বিধায় তাকেও ছেড়ে দেয়া হয় । পড়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ।

৭/ সেই রাতে অস্ত্র সমর্পণের পরে বনু কুরাইজার কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করে । এতে তাদের সর্বচ্চ সবাইকে নিরাপত্তা দেয়া হয় । সেই রাতে আমর নামের এক লোক বেরিয়ে আসে যে বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতকতায় যোগদান করেনি । প্রহরীদের নেতা হযরত মোহাম্মদ ইবনে মোসলামা (রা) তাকে চিনতে পারেন ও ছেড়ে দেন । পরে এই লোকটি নিরুদ্ধেশ হয়ে যায় । তার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি।

রেফারেন্সঃ আর রাহিকুল মাখতুম, সিরাতুল রাসুল (সা), আসাদুল্লাহ আল গালিব , সিরাতুল মুস্তফা (সা), আল্লামা ইদরিস কান্ধলবি (রহ)

বনু মুস্তালিক যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ নবী রহমত, পৃষ্ঠা ২৮৫, লেখক, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভিঃ নবী মুহাম্মদ (সা) খবর পান যে, বনু মুস্তালিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই খবর পেতেই রাসুল (সা) তাদের মোকাবেলা করতে অতর্কিত হামলা করেন ।

খয়বরের যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ খয়বারে যারা বাস করত তারা ছিল বনু নাজীরের বাসিন্দা তথা ইহুদী । বনু নাজীরের সাথে আগে থেকেই মুসলিমদের সাথে শান্তি চুক্তি ছিল । বনু নাজীরের বস্তীতে একবার রাসুল (সা) এক বাড়ির দেয়ালে ঘেঁষে বসেছিলেন । বনু নাজীরের লোকেরা বাহ্যিকভাবে খুবই ভাল ব্যাবহার করছিল কিন্তু তলে তলে একজন ঠিক করল যে ছাঁদের উপর থেকে বড় একটি পাথর নবিজির মাথার ওপর ফেলবে । ফলে তিনি মারা যাবেন।এ সংবাদ রাসুল (সা) কে আল্লাহ্‌ জানিয়ে দেন । ফলে রাসুল (সা) সেখান থেকে উঠে চলে যান । ফলে তাদের ষড়যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায় । (উয়ুনুর আছার ২/৭০,৭১ পৃষ্ঠা, দারুল কলম প্রকাশনী, বৈরুত এবং সিরাতে ইবনে হিসাম ২/১৯০ পৃষ্ঠা )

২/ চুক্তি ভঙ্গ করে এমনকি রাষ্ট্র প্রদান নবী মুহাম্মদ (সা) কে হত্যার চেষ্টা করে।

৩/ ফাতহুল বারি ৭/৫৮১ , খণ্ডক যুদ্ধঃ খয়বারের অধিবাসী বনু নাজীরের সর্দার হুয়াই বিন আখতাব মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের এবং কিনানা বিন রবি বনু গাফতানকে উস্কানি দিয়ে ১০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা অবরোধ করেছিল খণ্ডন যুদ্ধে ।

৪/ আগে থেকে মুসলমানদের সাথে সন্ধিতে চুক্তিবদ্ধ থাকা বনু কুরাইজাকেও বিদ্রোহ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজি করায় এ খয়বারের ইহুদী নেতা হুহাই বিন আখতাব ।

৫/ সিরাত ইবনে হিসাম ২/৩৩৬,৩৩৭ পৃষ্ঠাঃ সাফিয়ার স্বামী ছিল কিনান বিন রাবি , যে ছিল বনু নাজীরের একজন নেতা । এ গাদ্দার বনু গাফতানকে উস্কানি দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উৎসাহ দিয়েছিল । তারপরেও রাসুল (সা) সন্ধি করে, শান্তি চুক্তি করে তাদের নিরাপদ স্থানে যেতে বলেন কিন্তু তারা সেখানেও বেইমানি করে সেখানের সম্পদ চুরি করে পালাচ্ছিল যার নেতৃত্ব দিচ্ছিল কিনানা বিন রাবি । শুদু তাই না এই কিনানা বিন রাবি সাহাবী মাহমুদ বিন মাসলামা (রা) কে হত্যা করেছিল ।

৬/ এই যুদ্ধে মুসলিমদের ১৬ জন শহীদ হয় এবং ইহুদী পক্ষে ৯৩ জন মারা যায় । (সিরাতুল রাসুল (সা),৪৮৫ পৃষ্ঠা, আসাদুল্লাহ আল গালিব)

মুতার যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ সিরাতুল মুস্তফা (সা) ২/৩৯২,৩৯৪ এবং ৩৯৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইদরিস কান্ধলভি (রহ): রাসুল (সা) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বাদশাহ শারজিলের কাছে চিঠি পাঠায় । শারজিল ছিল রোম সম্রাট কায়সারের পক্ষে সিরিয়ার আমীর । হযরত হারিস ইবনে উমায়র (রা) যখন নবিজির পত্র নিয়ে মুতা নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন শারজিল তাকে হত্যা করে । এ জন্য হযরত রাসুল (সা) ৩ হাজার সৈন্যদের একটি বাহিনী মুতার দিকে প্রেরণ করেন। শারজিল যখন এ সেনা অভিযান এর খবর পায় তখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক লক্ষেরও অধিক সৈন্য একত্র করল আর হিরাক্লিয়াস স্বয়ং আরও ১ লক্ষ সৈন্য সহ শারজিলের সাহায্যে বালকায় এসে উপস্থিত হয় ।

২/ এই যুদ্ধে মুসলিমদের ১২ জন মৃত্যুবরন করেন তথা শহীদ হন ।

৩/ সিরাতুর রাসুল (সা), পৃষ্ঠা ৫১২, আসাদুল্লাহ আল গালিবঃ রাসুল (সা) মদিনার নিরাপত্তা বিধান ও শাম অঞ্চলে মুসলিমদের উপর খৃষ্টান শাসকদের অব্যাহত অত্যাচার দমনের উদ্দেশ্যে অভিযান প্রেরণ করেন । এটিই ছিল খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম যুদ্ধাভিযান ।

হুনায়েন যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ সিরাতুর রাসুল (সা) , পৃষ্ঠা ৫৫৬, আসাদুল্লাহ আল গালিবঃ মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে হাওয়াযেন নেতা মালেক বিন আওফ আন নাছরির নেতৃত্বে ৪ হাজার সৈন্যের এক আক্রমণাত্মক বাহিনী হুনায়েন এর কাছে আওতাস উপত্যকায় অবতরন করেন।তাদের নারী, শিশু, গবাদি পশু , সমস্ত ধন সম্পদ এই যুদ্ধে কাফেররা সাথে করে নিয়ে আসে যাতে এসবের লোভে কেউ যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ না করে । এই খবর শুনে রাসুল (সা) মক্কা হতে ২ হাজার ও ১২ হাজার সেনাদল নিয়ে রাসুল (সা) হুনায়েন এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় । এদের মধ্যে অনেক চুক্তিবদ্ধ মুশরিক ছিল । যেমন ছাফওয়ান বিন উমাইয়া ।

২/ সিরাতুর রাসুল (সা) , পৃষ্ঠা ৫৫৯, আসাদুল্লাহ আল গালিবঃ রাতের অন্ধকারে মুসলিম বাহিনী হুনায়েন পৌছায় , সাথে সাথে হটাত কাফের পক্ষ তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করে কারন তারা আগেই সেখানে অতপেতে বসে ছিল । এরপরেই তুমুল যুদ্ধ হয় দুই পক্ষের ।

৩/ উভয় পক্ষে তথা মুসলিমদের মধ্যে ৪ জন শহীদ হয় এবং কাফেরদের নিহত হয় ৭২ জন।

তাবুক যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ সিরাতুর রাসুল (সা) , পৃষ্ঠা ৫৮৩, আসাদুল্লাহ আল গালিবঃ মুতার যুদ্ধে রোমদের প্রথম অভিযানের ১৩ মাস পরে এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযান । এটিই রাসুল (সা) শেষ যুদ্ধ । এই যুদ্ধে রোমদের সৈন্য সংখ্যা ৪০ হাজার এবং মুসলিমদের সৈন্য সংখ্যা ৩০ হাজার ছিল।

২/ প্রথম মুতার যুদ্ধে শোচনীয় হারার ফলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই তারা সরাসরি মদিনাতে ভয়াবহ হামলা করার গোপন প্রস্তুতি নেয়।

৩/ মদিনা আক্রমণ করে ধ্বংস করতে চেয়েছিল ।

                                          ++যুদ্ধের কিছু হাদিস, কিছু প্রশ্ন, কিছু ব্যাখ্যা++

= বুখারি, হাদিসঃ ৩০২৯ এবং ৩০৩০, জিহাদ অধ্যায়ঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ যুদ্ধ মানে কৌশল ।

= বুখারি, হাদিসঃ ২৯৪৩, জিহাদ অধ্যায়ঃ আনাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা) কোন কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে সকাল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ করতেন না । আজান শুনলে আক্রমণ থেকে বিরত থাকতেন । আজান না শুনলে সকাল হবার সাথে সাথে আক্রমণ করতেন । আমরা খয়বারে রাত্রিকালে অবতরন করলাম । - ইসলাম অকারণে হটাত কারো উপর আক্রমণ করে না এই হাদিস তাই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে ।

= বুখারি, হাদিসঃ ৩০৪৭, জিহাদ অধ্যায়ঃ হযরত আলী (রা) বলেন , দিয়াতের বিধান বন্দী আজাদ করা এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফেরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয় । - ব্যাখ্যাঃ জিহাদের মধ্যে কোন মুসলিমকে যেন কাফেরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয়। অন্যায় ভাবে যদি কেউ হত্যা করে তবে মুসলিমের শাস্তি হবে ।

= বুখারি, হাদিসঃ ২৯৪৬, জিহাদ অধ্যায়ঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে যতক্ষণ না তারা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলে আর যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে সে তার জান ও মাল আমার হাত থেকে বাচিয়ে নিল । অবশ্য ইসলামের কর্তব্যাদি আলাদা আর তার হিসাব আল্লাহ্‌র উপর ন্যাস্ত । - ব্যাখ্যাঃ যুদ্ধের ময়দানে একজন নেতা তাঁর অনুসারীদের উৎসাহ দেয়ার জন্য সাহস দেয়ার জন্য এইভাবে কথা বলতেই পারে যে এই ভূমি আমার, শত্রুরা পরাজয় স্বীকার না করলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে । পরাজয় মেনে নিলে তারা আমাদের কাছে নিরাপদ । যুদ্ধ অবস্থায় এইসব কথা একেবারেই নরমাল একটি ব্যাপার ।

= সুনানে আন নাসায়ি, হাদিস ৩১০৯, জিহাদ অধ্যায়, হাদিস সহিহঃ আনু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন জাহান্নামে একত্রিত হবে না সে মুসলিম যে কোন কাফেরকে হত্যা করেছে । এরপর সঠিক ও সরল পথে দৃঢ় রয়েছে । আর কোন মুমিনের পেটে আল্লাহ্‌র রাস্তার ধুলা এবং জাহান্নামের শিখা একত্রিত হবে না আর আল্লাহ্‌র বান্দার অন্তরে ইমান ও হিংসা একত্রিত হবে না । - ব্যাখ্যাঃ যুদ্ধের ময়দানে কোন মুসলিম কাফেরকে হত্যা করলে কি লাভ তাই হাদিসে বলা হয়েছে এখানে অন্যায়ভাবে মারতে বলা হয়নি।

= মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৩৩, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ রাসুল (সা) বলেছেন তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো না আর যখন মুখোমুখি হয়ে পড়ো তখন ধৈর্যধারন করবে ।

= বুখারি, হাদিসঃ৩০৫২, জিহাদ অধ্যায়ঃ হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি এ অসিয়ত করেছি যে, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সা) এর পক্ষ হতে কাফেরদের সাথে যেন কৃত অঙ্গীকার যথাযথ পূরণ করা হয় । তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে যুদ্ধ করা হয়, তাদের সামর্থ্যের বাইরে তাদের উপর যেন জিজিয়া ধার্য না করা হয়। - অমুসলিমদের অধিকার বলা হয়েছে এই হাদিসে যে তাদের প্রতি মুসলিমদের অঙ্গীকার পালন করা প্রয়োজনে অমুসলিমদের নিরাপত্তায় যুদ্ধ করা এবং সামর্থ্যের বাইরে যাতে জিজিয়া কর ধার্য না করা হয়।

= বুখারি, হাদিসঃ ৩০৩৮, জিহাদ অধ্যায়ঃ রাসুল (সা) মুয়াজ ও আবু মুসা (রা) কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও আদেশ দেন যে, লোকদের প্রতি কোমলতা করবে,কঠোরতা করবে না, তাদের সুখবর দিবে, ঘৃণা করবে না । পরস্পর একমত হবে । মতভেদ করবে না । - ইসলাম যে সব সময় শান্তি চায় এই হাদিস তারই শক্তিশালী বাস্তব প্রমান ।

= মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪২৩, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ রাসুল (সা) বলেছেন নিশ্চয় প্রতারণাকারীর জন্য আল্লাহ্‌ কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা উড্ডীন করবেন , তখন বলা হবে যে এটি অমুকের ধোঁকাবাজির পতাকা। - অমুসলিমদের সাথে অন্যায়ভাবে প্রতারণা যে ইসলামের নিষেধ সেটাই এই হাদিসের শিক্ষা ।

                     ++ইহুদী খৃষ্টানদের কি বিনাকারনে মদিনা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা)+++

= মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৩, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদা আমরা মাসজিদে বসা ছিলাম। হঠাৎ আমাদের দিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এলেন। তারপর তিনি বললেন, তোমরা ইয়াহুদীদের দিকে যাও। সুতরাং আমরা তাঁর সঙ্গে বের হলাম। পরিশেষে তাদের কাছে এলাম। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে (ধর্মের দিকে) আহবান করে বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহন কর, তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবুল কাসেম! নিশ্চয়ই আপনি (আল্লাহর নির্দেশ) প্রচার করছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ আমি এ কথাই শুনতে চেয়েছি। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন। তোমরা ইসলাম গ্রহন কর, তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবুল কাসেম! নিশ্চয়ই আপনি প্রচার করছেন। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তাই চেয়েছিলাম। এরপর তৃতীয়বার তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা জেনে রেখো! নিশ্চয়ই পৃথিবী আল্লাহ ও তাঁর রসূলের। আর আমার ইচ্ছা যে, তোমাদেরকে আমি এ ভূখণ্ড থেকে বহিস্কার করবো। অতএব তোমাদের মধ্যে হতে যদি কারো কিছু মালামাল থাকে তাহলে সে যেন তা বিক্রি করে দেয়। নতুবা জেনে রেখো যে, সমগ্র ভু-মণ্ডল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ।

= মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৬, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমার কাছে ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি ইয়াহূদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে আরব উপ-দ্বীপ থেকে বের করে দেবো। তারপর মুসলিম ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেবো না ।

উত্তরঃ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৪, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বানু নাযীর এবং বানু কুরাইযাহ গোত্র দুটির ইয়াহূদীরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানূ নাযীরকে দেশান্তর করেন। এবং বনূ কুরাইযাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। পরিশেষে বানূ কুরাইযাও যুদ্ধ করল। ফলে তিনি তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পদসমূহ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। কিন্তু তাদের কিছু সংখ্যক লোক যারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তাদেরকে তিনি নিরাপত্তা প্রদান করেন। তখন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় সকল ইয়াহূদীকে দেশান্তর করেন। বানূ কায়নুকা’ গোত্রের ইয়াহূদী (‘আবদুল্লাহ ইবনু সালামের ইয়াহুদী গোত্র) , বানু হারিসাহর ‘ইয়াহুদী এবং মাদীনায় বসবাসরত সকল ইয়াহূদীকেই দেশ থেকে বহিষ্কার করেন ।

ব্যাখ্যাঃ ইহুদীরা রাষ্ট্রের চুক্তি ভঙ্গ করেছিল । রাসুল (সা) এর বিরুদ্ধে এরা বার বার যুদ্ধ করেছিল । ঐ ইহুদীরা মুসলিমদের ধ্বংস করতে চাইত।এর জন্যই মুসলিমদের নিরাপত্তার জন্য রাসুল (সা) তাদের মদিনা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন ।

                                              +++যুদ্ধে নারী শিশু হত্যা করা নিষেধ+++

= বুখারি, হাদিসঃ ৩০১৫, জিহাদ অধ্যায়ঃ হযরত উমর (রা) হত্যে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা) এর কোন এক যুদ্ধে এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায় । তখন রাসুল (সা) মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন ।

= বুখারি, হাদিসঃ ৩০১৪, জিহাদ অধ্যায়ঃ উমর (রা) বলেন, রাসুল (সা) এর কোন এক যুদ্ধে এক নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায় । তখন আল্লাহ্‌র রাসুল (সা) নারী ও শিশুদের হত্যার অসন্তোষ প্রকাশ করেন ।

= সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৬৯, জিহাদ অধ্যায়, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেন যুদ্ধে নারী ও শ্রমিককে হত্যা করবে না।

= মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৪১, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ শিরোনামঃ রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশুর হত্যায় দোষ নাই ।

= বুখারি, হাদিসঃ ৩০১২, জিহাদ অধ্যায়ঃ সাব ইবনু জাসসামা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (সা) আবওয়া অথবা ওয়াদ্দাত নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন । তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে । যদি রাত্রিকালীন আক্রমণে তাদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয় তবে কি হবে ? রাসুল (সা) বলেন তারাও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত আর আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি যে সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সা) ছাড়া কারো জন্য হতে পারে না । - ব্যাখ্যাঃ রাত্রে নারী ও শিশু চিহ্নিত করা কঠিন তাই অনিচ্ছায় যদি নিহত হয় তাহলে সমস্যা নাই । রাসুল (সা) সরাসরি নারী ও শিশুদের হত্যা করতে বলেছেন এমন শব্দে কোন হাদিস নাই । তাছাড়া আমরা এমন হাদিস পাই যেখানে রাসুল (সা) ইচ্ছা করে নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন ।

                 +++সুরা তওবার ৯:৫ আয়াতে কি কাফেরদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতে বলা হলা হয়েছে+++

সুরা তওবার ৯:৫ আয়াত হলঃ তোমরা মুশরিকদের যেখানেই পাও হত্যা করো এবং তাদের পাকড়াও করো, তাদেরকে অবরোধ করো এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাটিতে বসে থাক ।

মুশরিকদের কেন হত্যা করতে বলা হয় এর জবাব সুরা তওবা ৯:৭ আয়াতের তাফসীরে দেয়া আছে, তাফসীরে ইবনে কাসির ৮/৬৪৮ পৃষ্ঠাঃ মুশরিকদের চার মাসের অবকাশ দেয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি এই কারনে যে তাদের অপরাধ ছিলঃ
১/ তারা শিরক ও কুফুরি পরিত্যাগ করবে না এমনকি সন্ধি ও চুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিতও থাকবে না ।
২/ কাফের কুরাইশরা শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করেছিল ।

৩/ তাদের তথা কাফেরদের মিত্র বনু বকর রাসুল (সা) এর মিত্র খুযাআর ওপর আক্রমণ চালিয়ে দেয় । এমনকি হারাম শরিফের মধ্যেও তাদেরকে হত্যা করে।

৪/ এর উপরেই ভিত্তি করেই রাসুল (সা) কুরাইশদের উপর আক্রমণ চালান ।





এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post