নবীজির এগারোটি বিয়ে আর উম্মতের চারটি বিয়ে

বিষয়ঃ
নবীজির এগারোটি বিয়ে আর উম্মতের চারটি বিয়ে।

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

===================================

ভূমিকাঃ আমরা জানি নবী মোহাম্মদ (সা) একাধিক বিয়ে করেছিলেন। উনার আদর্শ সব থেকে ভালো আদর্শ বলা হয়ে থাকে। তাহলে উনি যদি ১১ টি বিয়ে করে থাকেন তাহলে উনার উম্মতদেরকে কেন ৪ টি বিয়ে করতে বলা হল? কেন ১১ টি বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে? এই প্রশ্নটি নিয়েই আজকের আলোচনা। সত্যসন্ধানীদের জন্য অনেক তথ্য, অনেক যুক্তি, অনেক কথা বলা হয়েছে। তাই আগেভাগে আপনাকে লেখাটি মন দিয়ে পড়ে নিতে হবে। 

নাস্তিক্যধর্মের আলোকে বৈবাহিক বিধানঃ

নাস্তিক্যবাদ কোনো ধর্ম যদি না হয় তাহলে নাস্তিকরা কেন অন্যকে বুঝাতে আসে এতো বিয়ে করা যাবে আর সতো বিয়ে করা যাবে না? নাস্তিকরা কেন ইসলামের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে আসে যেখানে নাস্তিকরা নিজেরাই বিশ্বাস করে তারা নাকি ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় বিশ্বাসী? কোনো নাস্তিক যখন বলছে হযরত মোহাম্মদ (সা) একাধিক বিয়ে করে ঠিক করে নাই তখন কি এটা স্পষ্ট হয় না যে নাস্তিকরা আসলে ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় বিশ্বাসী না?

বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার হিন্দু , খৃষ্টান সহ ইত্যাদি ধর্মের অনুসারীরা করতে পারে কেননা তাদের নিজস্ব আইন আছে,নিয়ম আছে,নীতি আছে। কিন্তু নাস্তিকধর্মের অনুসারীরা কেন এই প্রশ্ন করবে? কারণ তারা নিজেরাই দাবি করে থাকেন তাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো নৈতিক মাপকাঠি নেই, আদর্শ নেই, ধর্মীয় নৈতিক বই নেই এমনকি নির্দিষ্ট কোনো নৈতিকতার মধ্যেও তারা নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ করতে নাকি চান না। তাহলে নাস্তিকরা কেন অন্যের নৈতিকতা নিয়ে আপত্তি তোলে? আর নাহলে এটা স্বীকার করে নিক নাস্তিক্যবাদ একটি ধর্মের নামই।

নাস্তিকরা বলে থাকে সম্মতি হলেই যাকে ইচ্ছে তাকে লাগানো যাবে তাহলে কোনো পুরুষ ১১ টি করুক , ৪ টি করুক অথবা ৫৫৫৫৫ টি করুক নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় সেটা তো জায়েজ। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে নবী মোহাম্মদ (সা) তো উনার স্ত্রীদের কাউকেই জবরদস্তি বিয়ে করেন নাই, উনার স্ত্রীরা সেচ্ছায় উনাকে বিয়ে করেছিলেন। উনি তো উনার স্ত্রীদের কাউকেই নির্যাতন বা প্রহার করেন নাই, অথবা ক্ষতি করেন নাই, তাহলে? তাহলে নাস্তিকরা কেন এই বিয়ে নিয়ে আপত্তি করছে?

নাস্তিকধর্মের দেশ চিনে ফ্রি সেক্স জায়েজ , সেখানে যত ইচ্ছা নারীর সাথে গুলুগুলু করা যায় এই তথ্য নাস্তিক ধর্মান্ধরা লুকায়। নাস্তিকরা হাজার নারীর সাথে মুক্তচিন্তায় যৌনচর্চা করতে পারবে। যৌনদাসী রাখতে পারবে। এগুলো নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় জায়েজ আছে। তবে কেউ না চাইলে সে করবে না। কিন্তু চিন্তার মুক্তির আন্দোলনে বিশ্বাস করা নাস্তিকরা কিভাবে এই প্রশ্ন করতে পারে যে একজন পুরুষ চাইলেই একাধিক স্ত্রী বিয়ে করতে পারবে না? যদি ১১ জন অথবা ৪ জন স্ত্রীরা এক স্বামীকে মেনে নেয় তাহলেও না? আসুন নাস্তিকদের লুকানো অধ্যায় লিক করে দেই।

যেই দেশে ধর্মহীন চর্চা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই দেশের নাম হচ্ছে চায়না। বহু বিবাহ যে শুধু প্রাচীন কালের তাই না-আধুনিক কালেও এর আইন আছে । ১৯৩৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অ্যামেরিকান লেখিকা Pearl S. Buck। তার অধিকাংশ উপন্যাস চিনের সামাজিক পটভূমি ওপরেই রচিত। তার বিখ্যাত উপন্যাস A House Divided , East Wind: West Wind , The Good Earth....১৯০০ সালের দিকে চিনের সামাজিক প্রেক্ষাপট ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন ঐ সময়গুলোতে চিনের পুরুষদের স্ত্রীর পাশাপাশি কিভাবে রক্ষিতা রাখতঐ রক্ষিতাদের গর্ভে চিনের প্রভাবশালী বিজনেস ম্যান, ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের জন্ম হয় , যারা কোন দিন পিতার পরিচয় পাননি।  

আরবেও তৎকালীন বর্বর মানুষের নারীদের যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই ব্যাবহার করতো,সম্মান তো দূরের কথা। নবী মুহাম্মদ (সা) নারীদের স্ত্রীদের মর্যাদা দিয়ে দেখিয়ে দিলেন নারীরা রক্ষিতা হবার জিনিস না। তাঁরা সম্মানের। নবী মোহাম্মদ (সা) এর অনেক ৪ জন দাসীও ছিলেন কিন্তু উনি কখনো সেই নারীদের সাথে খারপ আচরণ করেছেন বলে প্রমাণ নেই। কেউ দেখাতেও পারবে না।

নবী মোহাম্মদ নারীকামুক ছিলেন?

নাস্তিকান্ধরা বহুবিবাহ দিয়ে না বুঝাতে চায় তাহল - রাসুল (সা) নাকি নারীলোভী ছিলেন অথচ বিশুদ্ধ ইতিহাস আমাদের জানায় নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁর যৌবন, পড়ন্ত যৌবন এবং বুড়ো বয়স এর সময় পার করেছেন তাঁর প্রথম স্ত্রী খাদিজার সাথেই। প্রথম স্ত্রী যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেননি, চাইলেই করতে পারতেন কারণ তখন একাধিক বিয়ে একেবারেই সাধারন ব্যাপার ছিল । নবী মুহাম্মদ (সা) এর যখন ৫০ বছর তখন তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হন। যাকে নারীলোভী ট্যাগ লাগাতে চায় সেই তিনিই নাকি তাঁর পুরা যৌবনকালের সবটুকু সময় অর্থাৎ ২৫ বছর কাটিয়ে দিলেন একজন ৪০ বছর স্ত্রীর সাথেই। নাস্তিকদের মিথ্যা দাবি যদি সত্যি হতো তবে ২৫ বছরে নবী মুহাম্মদ (সা)এর আরও বেশি স্ত্রীর থাকা উচিৎ ছিল কিন্তু ইতিহাসে এরকম কোনো প্রমাণ নাই। এর থেকে কি প্রমাণ হয়? প্রমানিত হয় যে নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় মিথ্যা কথা বলে নবীর দিকে চাপিয়ে দিয়েছে।

যেকোনো সিরাত গ্রন্থে এই ঘটনা গুলো পাবেন। নবী মুহাম্মদ (সা) বয়স যখন ২৫ বছর তখন তাঁর সাথে বিয়ে হয় ৪০ বছর বয়সের মহিলা খাদিজা (রা) এর সাথে। প্রশ্ন আসে যে, একজন সুদর্শন পুরুষ , যখন তাঁর টগবগে তারুণ্য ভরা যৌবনকাল, ঠিক তখন কিসের জন্য তিনি ৪০ বছরের একজন নারীকে বিয়ে করলেন, যখন তাঁর যৌবনকাল ডুবি অবস্থায়? শুধু কি তাই নাকি? এই ৪০ বছরের নারী ছিলেন একজন বিধবা। যুবক হিসেবে একজন যুবতি নারীকেই বিয়ে যৌক্তিক ছিল, কেন তিনি ৪০ বছরের মেয়ে বিয়ে করলেন? যারা উনাকে নারী কামুক বলেন তারা যে আসলে উনাকে নিয়ে প্রমাণ ছাড়াই অন্ধবিশ্বাস করছেন সেটা কি আলাদা করে বলতে হবে? 

ইসলাম বিদ্বেষীরা দাবি করে , খাদিজা (রা) সম্পদ, সম্পত্তি ছিল, সেই সম্পত্তির লোভে নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু এই কথা সম্পূর্ণ মিথ্যাকথা, ভিত্তিহীন এবং জালিয়াতির পরশ। কারণ খাদিজা (রা) রাসুল (সা) এর বিশ্বাসযোগ্যতা, সত্যবাদীতা, কর্মনিষ্ঠা ও সুন্দর আচরনের জন্য নিজের বিজনেসে চাকরি দেন এবং নবী মুহাম্মদ (সা) কে যাচাইও করেন এবং বুঝে যান যে এই মুহাম্মদ সম্পূর্ণ ফ্রেশ একজন মানব। এরপরেই তিনি রাসুলকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। নবী মুহাম্মদ (সা) নিজের থেকেই কিছু না বলে অভিবাবক হিসেবে চাচা আবু তালিবকে এই প্রস্তাবের বিষয়টি জানান । আবু তালিবের সম্মতিতে রাসুলের সাথে খাদিজা (রা) এর বিয়ে হয়। এখন বলেন, "এখানে সম্পদের লোভে বিয়ে করেছিল" - এই মিথ্যা কথা আসে কিভাবে?

এমনকি বড় বড় কাফেররা সুন্দরী সুন্দরী নারীর অফার দেয় হযরত মোহাম্মদ (সা) কাছে। কিন্তু সেসব তিনি সাথে সাথে অস্বীকার করেন। বয়কট করেন। আপনি কখনো এমন নারীলোভী দেখেছেন যে যার কাছে নারীঅফার করলে সে ফিরিয়ে দেয়?

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তফা (সা)” ১ খণ্ড, ১৬৩,১৬৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

উতবা নবী (সা) এর নিকটে এলো এবং বলল, মোহাম্মদ! তোমার বংশ ,মর্যাদা, যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তুমি সমগ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ। তুমি আমাদের প্রতিমাগুলোকে মন্দ বলো, আমাদের পিতা-মাতামহকে বোকা ও মূর্খ বলো, তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলতে চাই। রাসুল (সা) বললেন, হে আবুল ওলীদ, বলুন, আমি শুনছি। উতবা বলল, ওহে আমার ভাতিজা! তোমার এ সব কথাবার্তার মূল উদ্দেশ্য কি? তুমি যদি ধন-দওলতের প্রত্যাশী হও, তা হলে আমরা সবাই মিলে এতটা পরমাণ সম্পদ একত্র করে দেব যে, বড় থেকে আমীর ব্যক্তিও তোমার সমকক্ষ হতে পারবে না। আর যদি তুমি বিয়ে করতে চাও, তা হলে যে মেয়েকে ইচ্ছা, যতজনকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পার। আর যদি সম্মান ও নেতৃত্ব লাভের ইচ্ছা পোষণ কর, তা হলে আমরা সবাই তোমাকে আমাদের নেতা হিসেবে মেনে নেব। আর যদি বাদশাহী চাও, তা হলে আমরা তোমাকে আমাদের বাদশাহ রূপে মেনে নেব। আর যদি তুমি অসুস্থ হয়ে থাক, তবে তোমার চিকিৎসা করাব। হযরত (সা) বললেন, হে আবুল ওলীদ, আপনার যা বলার ছিল, তা কি বলে শেষ করেছেন? উতবা বলল, হ্যাঁতিনি বললেন, আচ্ছা, এখন আমি যা বলি, তা শুনুনআপনাদের মাল-সম্পদের প্রয়োজন আমার নেই, আর আপনাদের নেতৃত্ব সর্দারী করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি তো আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ আমাকে আপনাদের প্রতি পয়গাম্বর করে প্রেরণ করেছেন, তিনি আমার প্রতি একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। তিনি আমাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি আপনাদেরকে আল্লাহ প্রদেয় নেকীর সুসংবাদ শোনাব এবং তাঁর আযাবের ভীতি প্রদর্শন করব। আমি আপনাদের কাছে আল্লাহ তা’লার পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। আপনাদের কল্যাণকামী হিসেবে উপদেশ আকারে তা অবহিত করেছি। যদি আপনারা তা গ্রহণ করেন তবে তা আপনাদের জন্য উভয় জগতের সৌভাগ্য ও কল্যাণের নিমিত্ত হবে। আর যদি আপনারা না মানেন, তা হলে আল্লাহ আমার এবং আপনাদের মধ্যে ফয়সালা না করা পর্যন্ত আমি সবর করব। 

নবী মুহাম্মদ (সা) বাকি যাদের বিয়ে করেছিলেন সবাই বয়স্কা এবং মাক্সিমাম বিধবা ছিলেন,আয়েশা (রা) ছাড়া। নারীকামুক হলে তো সুন্দরী সুন্দরী ধরে ধরে বিয়ে করতে পারতো। তাই না? করে নাই কেন? 

ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সহিহ বুখারী,৮ খণ্ড,৩৯১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪৭০৯, সহিহ হাদিসঃ 

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বিয়ে , করলে রাসুল (সা) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কেমন মেয়ে বিয়ে করেছ ? আমি বললাম বিধবা রমণীকে বিয়ে করেছি । তিনি বললেন কুমারী মেয়ে এবং তাঁদের কৌতুকের প্রতি তোমার আগ্রহ নেই? তুমি কেন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না , যাতে তুমি তাঁর সাথে এবং সে তোমার সাথে ক্রিয়া কৌতুক করতে পারত ? 

এ হাদিস থেকে বুঝলাম , নবী (সা) জানতেন কুমারী নারী বিয়ে করলে শারীরিক তৃপ্তি বেশি পাওয়া যায় এবং তিনি যেহেতু শিক্ষক ছিলেন তাই তাঁর সাহাবীদের রুচি রাসুল (সা) বুঝতেন তাই ঐ সাহাবীর অবস্থা উপলব্ধি করেই এই কথা রাসুল (সা) বলেন। খেয়াল করেন রাসুল (সা) নিজেই তাঁর সাহাবীকে বলছেন তুমি কেন কুমারী মেয়ে বিয়ে করলে না অথচ নবী মুহাম্মদ (সা) নিজে যাদের বিয়ে করেছিলেন তাঁদের মাক্সিমাম ছিল মধ্যবয়স্কা। যদি তিনি নারী লোভী হতেন তাহলে তো তিনি বেছে বেছে কুমারী মেয়েদেরই বিয়ে করতেন। কি?

নবী মুহাম্মদ(সা) এর একাধিক বিয়ের কারণঃ

মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব (হাঃফি) লিখিত “সীরাতুল রাছুল (সা)” এর ৭৬৯ পৃষ্ঠা থেকে ৭৭৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তারিত পড়তে পারেন। আমি সংক্ষিপ্ত করে বলছি। 

হযরত খাদিজা (রা) মৃত্যুর পরে। রাসুল (সা) হযরত সওদা (রা) কে বিয়ে করেন রাসুলের চার কন্যা সন্তানকে দেখভালের জন্য। বনু মুস্তালিক গোত্রের নেতা হারেসার কন্যা জুহাইরিয়া (রা) কে রাসুল (সা) বিয়ে করেন। হারেসা হয়ে গেল রাসুলের শ্বশুর , এই দিকে বিবেচনা করে রাসুল (সা) এর সাথে বনু মুস্তালিক গোত্রের সবাইকে মুক্ত করে দেন এবং এতে দুই গোত্রের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়। হযরত সাফিয়া (রা) বিয়ের ফলে যুদ্ধ তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। রাসুলের সাথে সন্ধি করে ইহুদীরা খয়বারে বসবাস করতে থাকে। নিজের কাছের সাহাবীদের সাথে সম্পর্ক আরও মজবুত , আরও শক্তিশালী করার জন্য তিনি তাঁদের সাথে সম্পর্ক করেছেন । হযরত উমর (রা) এর কন্যা হাফসা (রা) কে এবং আবু বকর (রা) এর কন্যা আয়েশা (রা) কেও রাসুল (সা) বিয়ে করেন । শুদু কি তাই ? নবীজি নিজের কন্যা ফাতিমাকে (রা) কে আলীর (রা) সাথে এবং কুলসুম আর রুকাইয়া (রা) বিয়ে দেন উসমান (রা) এর সাথে । ইসলামের ইতিহাস দেখুন । নবী মুহাম্মদ (সা) এর ওফাতের পরে এই চারজনকেই ধারাবাহিক ভাবে খলিফা তথা মুসলিমদের আমীর নির্বাচিত করা হয় এতে বুঝা যায় রাসুল (সা) এর কৌশলটি কত সুদূর প্রসারিত ছিল ।

হযরত জয়নাব (রা) কে বিয়ে করেন সমাজের মিথ্যা কুসংস্কার দূর করার জন্য। উম্মে হাবিবাহ (রা) কে বিয়ে করার পর তার পিতা কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান আর রাসুল (সা) এর প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেন না । বরং ৮ম হিজরিতে রমজান মাসে মক্কা বিজয়ের পূর্বরাতে তিনি ইসলাম গ্রহন করেন। হযরত মায়মুনা বিনতুল হারেছকে বিয়া করার ফলে নাজদ বাসীদের অব্যাহত শত্রুতা ও ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অথচ এই নাজদবাসীরাই ৭০ জন সাহাবীদের দাওয়াত এর বাহানায় নির্মমভাবে হত্যা করেছিল । এই ঘটনা বিরে মাউনার ঘটনা নামে প্রসিদ্ধ। এছাড়াও নবীজির স্ত্রী আয়িশা (রা) ছিলেন অল্পবয়স্কা। উনার থেকে নারীদের সকল বিষয় জেনে নিতেন অন্য স্ত্রীরা। ছোট হওয়ার কারণে স্মরণশক্তি ছিল ধারালো। তাই দেখা যায় নবীজির (সা) এর বেশির ভাগ হাদিস উনি বর্ণনা করেছেন নারীদের মধ্যে। এই সকল কারণ পাশে রেখে ইসলামবিরোধীরা মাত্র একটি ক্ষতি দেখাক যে উনাকে বিয়ে করার কারণে উনার কোনো স্ত্রীর ক্ষতি হয়েছে? একাকধিক বিয়ের কারণে কি কি ক্ষতি হয়েছিল? উনার স্ত্রীরা কি কি বলেছিলেন? কেন বলেছিলেন? কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণ পেশ করে দেখাক, কি পারবে?

ইংরেজ লেখক মি, বোদলে (R,c Bodley) রাসুল (সা) এর পবিত্র স্ত্রীগনের বিষয়ে উল্লেখিত পাশ্চাত্য অনুভূতি ও চিন্তা ধারার ওপর অত্যন্ত ন্যায়পরতা ও সাহসিকতার সঙ্গে সমালোচনা করেছেন। তিনি তার বইতে লিখেছেনঃ 

নবী মুহাম্মদ (সা) এর দাম্পত্য জীবনকে যেমন পাশ্চাত্যের মাপকাঠিতে যাচাই করার প্রয়োজন নাই তেমনি প্রয়োজন নাই সব প্রথা ও আইনের দৃষ্টিকোন থেকে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার । যেগুলো খৃষ্টবাদ জন্ম দিয়েছে। এরা পাশ্চাত্যের লোক নন, নন তারা খৃষ্টানও বরং তারা এমন এক দেশে ও এমন এক যুগে জন্ম নিয়েছিল যেখানে তাদের নিজেদেরই নৈতিক ও চারিত্রিক বিধানের চল ছিল । এরপরেও অ্যামেরিকা ও ইউরোপের নৈতিক ও চারিত্রিক বিধানকে আরবদের নৈতিক ও চারিত্রিক বিধানের চেয়ে উত্তম ভাবার কোন কারন নাই। পাশ্চাত্যের কাছে প্রাচ্যকে দেবার মত অনেক কিছুই আছে কিন্তু নিজেদের জীবন পদ্ধতি উত্তম এবং নিজেদের নৈতিক ও চারিত্রিক বিধানকে উন্নত প্রমানিত করার জন্য তাদের এখনো অনেক অনুসন্ধান চালানো দরকার। অতপর তাদের অপরের ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে কটুকাটব্য করা থেকে বিরত থাকাই বেশি শ্রেয় বোধ করি।-R,c Bodley, The Messenger, The life of Muhammad. London.

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত, “সীরাতুল মুস্তফা (সা)”, ৩ খণ্ডে, ৩১৪,৩১৫ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

মহানবী (সা) একাধিক বিয়ে কেন করেছিলেন? হযরত রাসূলে করীম (সা)-এর আবির্ভাবের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ধ্বংস ও সমস্যা থেকে বের করে নিয়ে আসা। এজন্য মহান আল্লাহ তা'আলা একটি পূর্ণাঙ্গ বিধান এবং নির্বাহী সংবিধান তথা আল-কুরআন নাযিল করেছেন। যারপর কিয়ামত পর্যন্ত কোন নতুন কোন বিধানের প্রয়ােজন হবে না। অন্যদিকে মহানবী (সা)-এর পবিত্র যিন্দেগীকে নমুনা স্বরূপ বানিয়েছেন, মানুষ যা দেখে কাজ করবে। এজন্য বলা যায়, শুধুমাত্র কোন বিধান মানুষের সংশােধনের জন্য যথেষ্ট হয় না যতক্ষণ না সে বিধানের বাস্তব মডেল বা নমুনা তার সামনে উপস্থিত না থাকে। যার প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবে। পৃথিবীবাসী দেখেছে, মহানবী (সা)-কে মহান আল্লাহ তা'আলা যে বিষয়ের দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তিনি কথা ও কর্মের মাধ্যমে তার সামান্যতম ব্যতিক্রম করেননি।,,,,,,,প্রত্যেক মানুষের জীবনে দু’টি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে বাহ্যিক দিক আরেকটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ দিক। কারাে জীবনের কাজকে মূল্যায়ন করতে হলে তার জীবনে দু'টি দিকের পর্দাই উম্মােচন করতে হবে। বাহ্যিক জীবন হচ্ছে, যা একজন মানুষ সাধারণ মানুষের সামনে যাপন করে থাকে। জীবনের এই অংশকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে ব্যাপক সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ জীবন বলতে ঘরােয়া জীবনকে বুঝায়, যার মাধ্যমে মানুষের চারিত্রিক অবস্থার সার্বিক রূপ পাওয়া যায়। প্রতিটি মানুষ নিজ গৃহের চার দেয়ালে মুক্ত স্বাধীন থাকে। পরিবার ও ঘরের লােকদের নিকট সে অকৃত্রিম হয়ে থাকে। তার চরিত্র ও নৈতিকতার দুর্বল দিকগুলাে পরিবারের সদস্যদের নিকট গােপন থাকে না। এই অবস্থায় মানুষের বাস্তব জীবনের মূল্যায়ন করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হচ্ছে তার ঘরােয়া জীবন সমাজের নিকট উন্মুক্ত করা। 

এমনিভাবে মহানবী (সা)-এর পবিত্র জীবনেরও দু'টি দিক ছিল। এক বাহ্যিক জীবন এবং ঘরােয়া জীবন। বাহ্যিক জীবনের যাবতীয় অবস্থা ও পরিচিতি, সাহাবায়ে কিরাম দক্ষতা ও পূর্ণতার সাথে পৃথিবীর নিকট উপস্থাপন করেছেন, যার তুলনা দুনিয়ার কোন জাতির মধ্যে এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নেই। তারা নিজ নবীর বিস্তারিত। জীবন ও অবস্থাকে নিশ্চিতভাবে ও পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি, বরং এর দশভাগের একভাগও দুনিয়ার সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনের অবস্থান ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র পবিত্র বিবিগণ জগতবাসীর নিকট প্রকাশ্যে উপস্থাপন করেছেন। যার মধ্যে মহানবী (সা)-এর গৃহের অবস্থা, ইবাদত, তাহাজ্জুদ, রাত্রি জাগরণ, দরিদ্রতা-কৃতা এবং চারিত্রিক ও নৈতিক জীবনের চিত্র ও কর্মময় জীবনের গােপনীয় ও প্রকাশ্য সকল বিষয় দুনিয়ার মানুষের সামনে এসে গেছে। এভাবে মহানবী (সা)-এর পবিত্র নুরানী জীবনের পরিচ্ছন্নতা স্বচ্ছতা, আল্লাহর দরবারে জবাবদিহীতা দিবালােকের মত স্পষ্ট ও আলােকিতরূপে প্রকাশিত হয়েছে। রাতের আঁধারে যখন আলিমুল গায়ব আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কেউ দেখার। ছিল না, তখনও মহানবী (সা) কিভাবে আল্লাহর ইবাদতে আন্তরিকতা ও আবেগ-অনুরাগ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন এ বিষয়ে সূরা মুয্যাম্মিলে সঠিক চিত্র অংকিত হয়েছে।

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত, “সীরাতুল মুস্তফা (সা)”, ৩ খণ্ডে,৩১৬ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

এজন্য রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত খাদীজা (রা) ছাড়াও আরও দশজন মহিলাকে বিবাহ করেছেন। যেন একদল নারী মহানবী (সা)-এর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনকে দুনিয়ার মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেন। কেননা স্ত্রীগণ যতটা স্বামীর নিবীড় ও ব্যক্তিগত গােপনীয় বিষয়ে অবগত হতে পারে, অন্যদের পক্ষে তা কখনাে সম্ভব হয় না। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা) বহু বিবাহ করেছেন। যার মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তি জীবনের সকল অবস্থা এবং তার পারিবারিক জীবনের চিত্র নিখুঁতভাবে দুনিয়াবাসীর সামনে এসে যাবে। একদল ব্যক্তির মাধ্যমে বর্ণিত হয়ে আসার কারণে কারাে মনে এ বিষয়ে কোন ধরনের দ্বিধা-দ্বন্ধ ও সংশয় থাকবে না। আর শরী'আতে যেসব বিধান বিশেষভাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য ও তা পুরুষের নিকট বর্ণনা করা লজ্জাজনক এবং পর্দার খেলাফ, এ ধরনের বিধানাবলী পবিত্র স্ত্রীদের মাধ্যমে প্রচার ও প্রসার লাভ করবে। বস্তুত মহানবী (সা)-এর বহু বিবাহ (নাউযুবিল্লাহ) কুপ্রবৃত্তির তাড়নার কারণে ছিল না। | এর প্রমাণ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর একজন কুমারী ব্যতীত অবশিষ্ট সকল স্ত্রী বিধবা ছিলেন। যারা সুন্দরী হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন না অথবা অর্থ-সম্পদের অধিকারী। হিসেবেও বিখ্যাত ছিলেন না। বস্তুত এর বিপরীত অবস্থাই ছিল। কেননা তাদের জীবনে ভােগ-বিলাসিতার কোন উপকরণ ছিল না, আসলে উদ্দেশ্য ত শুধু এটাই ছিল যে, নারীদের সাথে সম্পৃক্ত শরী'আতের বিধানাবলী নারীদের মাধ্যমেই প্রচার প্রসার হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পবিত্র বিবিদের গৃহগুলাে উম্মতের জন্য মা ও শিক্ষিকার ক্লাসরুম ছিল। যেই পূণ্যময়ী বরকতের ঘরে দু'মাস পর্যন্ত চুলায় হাঁড়ি উঠে নাই, শুধুমাত্র পানি ও খেজুর খেয়ে তার ও বিবিদের দিন কেটেছে, আর যিনি দিনে মজসিদে ও রাতে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে কাটাতেন এবং এভাবে আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে থেকে পা ফুলিয়ে দিতেন। তাঁর সম্পর্কে ভােগ-বিলাসিতার কল্পনাও করা যায় না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন,“সীরাত বিশ্বকোষ”, একাদশ (১১) খণ্ড, ৫০২,৫০৩, পৃষ্ঠায় বলা আছে,

রাসূলুল্লাহ (স) কর্তৃক অধিক স্ত্রী গ্রহণের তাৎপর্য হাফেজ ইবন হাজার বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)-এর বহু বিবাহের তাৎপর্য সম্পর্কে মনীষিগণ যে সকল মতামত পেশ করিয়াছেন তাহা হইতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি পরিস্ফুটিত হইয়া উঠে। (এক) রাসূলুল্লাহ (স)-এর একান্ত গােপনীয় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অবস্থা প্রত্যক্ষকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। তিনি যাদুকর বা এই ধরনের কিছু বলিয়া মুশরিকরা অহেতুক ধারণা করিত, ইহার যেন অবসান ঘটে। (দুই) রাসূলুল্লাহ (স)-এর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের সুবাদে আরব গােত্রসমূহের সম্মান বৃদ্ধি পাওয়া। (তিন) ইহার মাধ্যমে তাহাদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করা। (চার) দায়িত্ব পালনে কষ্টক্রেশ বৃদ্ধি করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (স)-এর উপর এইরূপ কঠিন দায়িত্ব অর্পিত হইয়াছিল যে, স্ত্রীদের কাহারও প্রতি তাঁহার ভালবাসা যেন উত্তমরূপে দীনের প্রচারকার্য হইতে তাঁহাকে বিরত না রাখে। (পাচ) স্ত্রীদের হইতে অধিক পরিমাণে তাঁহার বংশের বিস্তার লাভ করা, যাহাতে শত্রুর মুকাবিলায় তাহার সাহায্যকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। (ছয়) পুরুষদের পক্ষে জ্ঞাত হওয়া সম্ভব নয় শরীআতের এরূপ বিধান প্রকাশ করা। কেননা স্ত্রীর সঙ্গে সাধারণত এমন ঘটনা ঘটিয়া থাকে যাহা গােপন থাকাই বাঞ্ছনীয়। (সাত) প্রশংসনীয় অপ্রকাশ্য চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে অবহিত হওয়া। হযরত উম্মে হাবীবা (রা)-কে রাসূলুল্লাহ (স) এমন এক সময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন, স্বয়ং তাঁহার পিতা যখন তাঁহাকে জানী দুশমন হিসাবে ভাবিয়াছিল। অনুরূপ হযরত সাফিয়্যা (রা)-কে বিবাহ করেন তাহার পিতা, চাচা ও স্বামী নিহত হওয়ার পর। রাসূলুল্লাহ (স)-এর যদি চারিত্রিক পরাকাষ্ঠা না থাকিত, তাহা হইল অবশ্যই তাহারা তাহাকে ঘৃণা করিতেন; বরং বাস্তব সত্য হইল, তিনি তাঁহাদের কাছে তাহাদের পরিবার-পরিজনের চাইতেও অতিশয় প্রিয় ছিলেন। (আট) নারীদের পবিত্রতা সংরক্ষণ ও তাহাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সাইয়েদ আবুল হাসান আল নদভী (রহ) লিখিত “নবীয়ে রহমত” কিতাবের ৪৪১,৪৪২ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর জীবনের একটি অংশ একাকী ও নিঃসঙ্গ অবস্থায় অতিবাহিত করেন । আর এই সময়টি ছিল জীবনের সেই পঁচিশ বছর যা যৌবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত। তিনি একজন পরিপূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আরব নওজোয়ানের সর্বোত্তম নমুনা ছিলেন। মরু আরবে তিনি লালিত-পালিত হয়েছিলেন। সভ্যতা ও সংস্কৃতির যাবতীয় রোগ-ব্যাধি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে আল্লাহ পাক তাঁকে হেফাজত করেছিলেন। অশ্বারোহণ ও পুরুষোচিত গুণাবলীর বিস্তর অংশ তাঁর ভাগ্যে জুটেছিল আরবদের দৃষ্টিতে যার গুরুত্ব ছিল বিরাট। মনোবিজ্ঞানিগণও তা স্বীকার করেন। সে যুগে তাঁর নিকৃষ্টতম দুশমনও (নবুওয়াতের পুর্বে, যে যুগ তাঁর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও নাযুক ছিল) তাঁর ওপর এ বিষয়ে সমালোচনা করবার এতটুকু সুযোগ পায়নি এবং নবুওয়াত লাভের পর আজ পর্যন্ত কেউ এ ব্যাপারে তাঁর সমালোচনাও করেনি। চারিত্রিক সততা ও পবিত্রতা, দৃষ্টি ও আত্মার শুচি-শুভ্রতা এবং নিষ্পাপ সারল্যের তিনি ছিলেন সর্বোত্তম নমুনা। তিনি এমন সব দুর্বলতা থেকে বহু দূরে ছিলেন যা ছিল তাঁর যথাযথ মর্যাদার পরিপন্থী।

আয়েশা (রা) ব্যতিরেকে আর কোন কুমারী ও অবিবাহিতাকে বিয়ে করেননি। এছাড়া যতগুলাে বিয়ে তিনি করেছিলেন সবগুলাে বিয়ের ক্ষেত্রে দীন ও দীনের দাওয়াতের কোন সার্বিক কল্যাণ, বদান্যতা ও অন্তরের ঔদার্য প্রদর্শন, চারিত্রিক মহত্ত্ব, মুসলমানদের কোন সার্বিক কল্যাণ কিংবা বিরাট কোন সামাজিক বিপদ ও অনাসৃষ্টি রােধ ছিল মূল উদ্দেশ্য। আত্মীয়তা ও বৈবাহিক সম্পর্ক আরবদের গােত্রীয় ও সমাজ জীবনে যে গুরুত্ব বহন করত এতটা বােধ করি অপর কোন সমাজে ছিল। এজন্যই নতুন আত্মীয়তা ও বৈবাহিক সম্পর্ক ইসলামের দাওয়াত ও ইসলামী আদর্শ সমাজের ইতিহাসে, রক্তপাত রােধে ও আরব গােত্রগুলাের অনিষ্ট ও অপকারিতা থেকে আত্মরক্ষার অন্যতম উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হত। অধিকন্তু এসব পবিত্র সহধর্মিনিদের সঙ্গে হযরত (সা)-এর জীবন যাপন কোনরূপ আরাম-আয়েশ কিংবা ভােগ-বিলাসের জীবন ছিল না যা সাধারণত অনেকের বহু বিবাহের পেছনে লক্ষ্য হিসেবে থাকে। এই জীবন ছিল নিরাসক্ত ও নির্লিক্ত যুহদ-এর জীবন, ছিল আত্মােৎসর্গ ও ত্যাগ-তিতিক্ষার জীবন, ছিল অল্পে তুষ্টির জীবন, যে ধরনের জীবন যাপনের সামর্থ্য প্রাচীন ও আধুনিক যুগের বড় বড় উৎসাহী ও অটুট সংকল্পের অধিকারী খ্যাতনামা যাহিদের ভেতরও পাওয়া যাবে না। এর সামান্যতম ঝলক ও নমুনা আখলাক ও শামায়েল' অধ্যায়ে পেশ করা হবে।

উম্মতের জন্য কেন ৪ টি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করা হয়েছে?

নবী মোহাম্মদ (সা) ও উনার উম্মতদের মধ্যে পার্থক্য থাকার কারণে বিধানের পার্থক্য করা হয়েছে। নবী মোহাম্মদ (সা) এর সব কাজই যদি সুন্নাত হতো তাহলে তো আমাদেরকে চাঁদ দুইভাগ করতে হতো, আমাদের মুসলিমদেরকে মেরাজে ভ্রমণ করতে হতো। কিন্তু এগুলো কি সুন্নাত? উত্তর হচ্ছে না। এগুলো হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা) এর সাথেই যুক্ত। তেমনিভাবে উনার একাধিক স্ত্রী রাখার ব্যাপারটিও।

রাসুল (সা) হলেন নবী আর তাঁর উম্মত হল মুসলিমরা। রাসুল (সা) এর ক্ষেত্রে বিশেষে কিছু আদেশ আছে যা উম্মতের জন্য নয়। যেমন চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করা , মেরাজে যাওয়া , ৬ বছরে বিয়ে ইত্যাদি এমন অনেক হাদিস আছে যা রাসুল (সা) এর জন্য খাস উম্মতের জন্য তা পালনীয় নয় । রাসুল (সা) আমাদের সুন্নাহ মানতে বলেছেন হাদিস না । এই বিষয়ে সামনে বিস্তারি লিখব ইনশা আল্লাহ্‌। রাসুলের কাছে ওহী নাযিল হত কিন্তু আমাদের কাছে নাযিল হয় না। রাসুলকে আল্লাহ্‌ বিশেষভাবে মেরাজে নিয়ে গেছেন , আমাদের ক্ষেত্রে এটা অসম্ভব এখানে আমলের কিছুই নাই। রাসুলের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষেত্রে ১১ বা একাধিক স্ত্রী কিন্তু উম্মতের জন্য ৪ টি তবে তাও একটি প্রব্লেম সামাল দেওয়ার জন্য। একটি বিয়েই উম্মতের জন্য উত্তম।

সহজ উদাহরণ দিচ্ছি, বুঝতে পারবেন। টিচার আর স্টুডেন্টের মধ্যে যেমন পার্থক্য একইভাবে নবী এবং তাঁর উম্মতের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। টিচার থেকে স্টুডেন্টরা যেমন সব ধরণের শিক্ষা নেয় আবার শিক্ষকের জন্য বিশেষ কিছু কাজ আছে যা স্টুডেন্টদের জন্য প্রয়োজন নয়,যেমন শিক্ষক চাকরি করে, বেতন নেয়,পরিক্ষার হলে খাতা দেখে ইত্যাদি। কিন্তু স্টুডেন্টরা এসব কিছুই করে না। কেউ যদি বলে টিচার পরিক্ষার খাতা দেখে স্টুডেন্টরা কেন নিজের পরিক্ষার খাতা নিজেই দেখে না? তাহলে প্রশ্নটি ঠিক হলো। সেভাবে নবীর কিছু কিছু কাজ যা বিশেষ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ নবীকেই দিয়েছেন যা উম্মতের জন্য নয় তাই নবীর জন্য ১১ টি আর উম্মতের জন্য ৪ টি তাও শর্ত সাপেক্ষে। তবে ১ টি ই উত্তম। আয়াতটি খেয়াল করুন তাহলে আরও স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।

আল কুরআন, সুরা আহযাব ৩৩ঃ ৫০ আয়াতে বলা আছে, 

হে নবী আপনার জন্য আল্লাহ্‌ স্ত্রীগণকে হালাল করেছি যাদেরকে আপনি মহোরানা প্রদান করেন আর দাসীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে আল্লাহ্‌ আপনার করায়ত্ত করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাত ভগ্নী, ফুফাতো ভগ্নী, মামাতো ভগ্নী , খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পণ করে , নবী তাঁকে বিয়ে করতে চাইলে সেও হালাল । এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য , অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারণ করেছি আমার জানা আছে । আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।

আল কুরআন,সুরা নিসা ৪ঃ৩ নং আয়াতে আছেঃ 

এতিম মেয়েদের হক যথাযথ পুরন করতে পারবে না তবে যে সব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাঁদের বিয়ে করে নেও দুই, তিন অথবা চারটি পর্যন্ত । যদি এরুপ হয় যে তাঁদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরন বজায় রাখতে পাবে না তবে একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে , এতেই পক্ষপাতিত্য জড়িয়ে না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা

ই,ফাঃ সহিহ বুখারি ৮/ ৩৮২ পৃষ্ঠা,হাদিস নং ৪৬৯৪ সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, উপরের আয়াত হল তৎকালীন এতিম নারীদের সম্পদের লোভে প্রচুর নারী বিয়ে করা হত কিন্তু তাঁদের অধিকার দিত না তাই আল্লাহ্‌ সুরা নিসার ৩ আয়াত দিয়ে আইন করে দিলেন। এবং সর্বচ্চ ৪ টি বিয়ের কথা বললেন তবে একটি উত্তম। যদি ইসলামে উম্মতের জন্য একাধিক নারী বিয়ের বিধান ফরজ হতো তাহলে এটা উম্মতের জন্য কঠিন হতো। তাই আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন। সাথে এই ভয়ও দেখিয়েছেন যে ৪ জনের মধ্যে সুবিচার করতে না পারলে একটিই করো। সেটাই ভালো।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন, “সীরাত বিশ্বকোষ”,একাদশ (১১) খণ্ড, ৫০২ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

ইমাম শাফিঈ (র) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)-এর সুন্নাহ (যাহা আল্লাহ্র বাণীর ব্যাখ্যাস্বরূপ) হইতে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (স) ব্যতীত অন্য কাহারও জন্য একত্রে চারের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করা বৈধ নয়। হাফেজ ইব্‌ন কাছীর বলেন, “শাফিঈ (র)-এর কথিত উক্তির প্রতি আলিমগণের মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে” (তাফসীর ইবন কাছীর, ১/৪৬০)। সুতরাং উল্লিখিত বিধানটি রাসূলুল্লাহ (স)-এর একটি বৈশিষ্ট্য যাহা দ্বারা তিনি উম্মাহর অন্যান্য লোেকদের তুলনায় স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী হইয়াছেন। আলিমগণ এই ব্যাপারে একমত যে, ইন্তিকালের সময় রাসূলুল্লাহ (স) নয়জন স্ত্রী রাখিয়া যান। তাঁহারা হইলন (১) সাওদা বিনতে যামআহ কুরাশিয়া, (২) আইশা বিনতে আবু বকর কুরাশিয়া, (৩) উম্মু সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমায়া কুরাশিয়া, (৪) হাফসা বিনতে উমার কুরাশিয়া, (৫) যয়নাব বিনতে জাহশ আসাদিয়া, (৬) জুওয়ায়রিয়া বিনতুল হারিছ মুসতালিকিয়া, (৭) উম্মু হাবীবা রামলা বিনতে আবু সুয়ান কুরাশিয়া, (৮) সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই নাদীরিয়া এবং (৯) মায়মূনা বিনতুল হারিছ হিলালিয়া (রা)। 

কুরআনের আয়াত নবী মুহাম্মদ নিজেই মানেননি? 

ইসলামবিরোধী বিশ্বাসীরা বলে থাকে,

কুরআনের এই আয়াতের আদেশ উপদেশ যা স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সা) নিজেই মানেন নি। 

কুরআনে আছেঃ আর যদি তোমরা ভর করো যে এতীম মেয়েদের হক যথাযথ পূরণ করতে পারবে না তবে সে সেব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই , তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত । আর যদি এরূপ আশঙ্খা করো যে তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরন বজায় রাখতে পারবে না তবে একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে,এতেই পক্ষপাতিত্তে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা । (সুরা নিসা আয়াত- ৩ ) 

আয়াতটি সম্পর্কে আরও তথ্য জেনে নিলেই পরিস্কার বুঝা যাবে নাস্তিকরা সত্যি নাকি মিথ্যা বলেছে।

তাফসিরে মাযহারি, ২ খণ্ড, ৪২৮ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

সুরা নিসা ৩ নং আয়াত, ইমাম বুখারি (রহ) বিশুদ্ধ জুহরির বর্ণনা থেকে লিখেছেন , হযরত ওরওয়া বিন জবায়ের বর্ণনা করেছেন , আমি হযরত আয়েশাকে এই আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলাম । তিনি বললেন এই আয়াতের শুরুতে ঐ নারীদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে যারা এতীম অবস্থায় তাদের মুহরিম নয় (যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ নয়)। হযরত আয়েশা (রা) আরও বলেন যখন মানুষেরা এতীম রমণীদের বিবাহ করার বিষয়ে জানতে চাইলো তখন আয়াত  “ইয়াসতাফতুনাকা ফিন্নিসা” থেকে “আনতানতিহু হুন্না” পর্যন্ত অবতীর্ণ হল । এই আয়াত আল্লাহ্‌ পরিষ্কার বিবরন দিয়েছেন। রূপসী ও সম্পদশালী পিতৃহীনা নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হয় অনেকেই কিন্তু উপযুক্ত মহরানা দিতে চায় না আবার  রুপবর্তী ও সম্পদশালী না হলে তারা পিতৃহীনাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহ দেখায় না। এরকম হওয়া ঠিক নয় । উভয় অবস্থায় বিবাহ বৈধ হয় কেবল তখনই যখন তাদের অধিকার মেনে নেয়া হবে এবং যথপোযুক্ত মোহারানা পরিশোধ করা হবে

তাফসিরে মাযহারি, ২ খণ্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

ইমাম বাগবি (রহ) লিখেছেনঃ হাসান বসরি বলেছেন মদিনার কিছু কিছু অভিবাবক তাদের অধিনস্ত এতীমদেরকে বিবাহ করত  সম্পদের লোভে। অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে হলে সম্পদ হাতছাড়া হওয়ার ব্যাপার ছিল তাই তারা এরকম করত। অথচ এরকম করা শোভনীয় ছিল না। কোন কোন কুরাইশ দশের  অধিক বিয়ে করত। তারা স্ত্রীদের ভরন পোষণ দিতে অসমর্থ হত তখন এতীমদের সম্পদ খরচ করত। তাদের এ আচরনকে লক্ষ্য করেই সুরা নিসার ৩ নং আয়াত উক্ত নির্দেশ এসেছে যে তারা যেন চারের অধিক বিয়ে না করে যাতে অধিক খরচ বহন করতে যেয়ে এতীমদের সম্পদ খরচ থেকে বিরত থাকা সম্ভব হয়।

স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে আয়াতটি কাদের উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছে। যার উদ্দেশ্য নাজিলই হয় নাই সে কেন এই আয়াত বাধ্য হয়ে পালন করতে যাবে? নবী (সা) কে আল্লাহ এই আয়াত মানতে বাধ্য করেন নাই। যে হ্যাঁ নবী আপনি চারটি এতিম নারী বিয়ে করেন। যদি এই কথা আয়াতে বলা থাকতো আর নবী যদি অমান্য করতেন তাহলে ইসলামবিরোধী বিশ্বাসটি সঠিক হতো। কিন্তু এমন কিছুই ঘটে নেই। তাই ইসলামবিরোধী বিশ্বাসটি হচ্ছে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস।

নবী মোহাম্মদ (সা) সম্মানের সাথে সকল স্ত্রীদেরকে এই সুযোগ দিয়েছেন উনাকে ছেড়ে যাবারঃ

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩২০২, সহিহ হাদিসঃ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণকে তাঁর দাম্পত্য বন্ধনে থাকা না থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্বাধিকার দিয়েছিলেন। তা কি তালাক বিবেচিত হয়েছিল ? অর্থাৎ এতে তাঁরা তালাক হননি।-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩২০৩, সহিহ হাদিসঃ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ‘ইখতিয়া’র দিলে আমরা তাঁকেই গ্রহন করলাম তা কখনো তালাক বলে গণ্য হয়নি।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৪৭৮৫ ও ৪৭৮৬, সহিহ হাদিসঃ

লায়স (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তাঁর সহধর্মিণীদের ব্যাপারে দু’টি পন্থার একটি পন্থা বেছে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হল, তখন তিনি প্রথমে আমাকে বললেন, তোমাকে একটি বিষয় সম্পর্কে বলব। তাড়াহুড়ো না করে তুমি তোমার আব্বা ও আম্মার সঙ্গে পরামর্শ করে নিবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি অবশ্যই জানতেন, আমার আব্বা-আম্মা তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বলবেন না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا إِلَى أَجْرًا عَظِيمًا “হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর.....মহা প্রতিদান পর্যন্ত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আমার আব্বা-আম্মার সঙ্গে পরামর্শের কী আছে? আমি তো আল্লাহ্, তাঁর রসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অন্যান্য সহধর্মিণী আমার মতই জবাব দিলেন।-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩২০১, সহিহ হাদিসঃ

আবূ সালামা ইব্‌ন আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা যখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম – কে তাঁর স্ত্রীগণকে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে ‘ইখতিয়ার’ (স্বাধিকার) প্রদানের আদেশ করলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দিয়েই আরম্ভ করলেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমার নিকট একটি কথা বলব, কিন্তু তুমি সে ব্যাপারে তোমার পিতামাতার পরামর্শ গ্রহনের পূর্বে অবিলম্বে সে সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করবে না। কারন তিনি জানতেন, আমার মাতাপিতা তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পরামর্শ আমাকে দেবেন না তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (কুরআনের ভাষা অনুসারে) “হে নবী। আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, যদি তোমরা পার্থিব জীবন এবং এর সাজসজ্জা কামনা কর; তবে আসো, আমি তোমাদের ভোগ সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় দেই (৩৩:২৮)। আমি বললামঃ এ ব্যাপারে আমি আমার পিতামাতার নিকট পরামর্শ করব? আমি তো আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌র রাসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি-ihadis.com

বিস্তারিত জানতে আরো পড়ুনঃ

তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৫ খণ্ড, ৭৭৮ পৃষ্ঠা । ডঃ মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের অনুবাদ ।

তাফসীরে জালালাইন, ৫ খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা । 

তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৩ খণ্ড,  ৬৩ পৃষ্ঠা । 

তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন, ৫ খণ্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা ।

তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩ খণ্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা ।

তাফসীরে ফি যিলাযিল কুরআন, ১৬ খণ্ড, ১৪৪ পৃষ্ঠা ।

তাফসীরে মাযহারী, ৯ খণ্ড, ৪৭৬ পৃষ্ঠা ।

তাফসীরে আহসানুল বয়ান, ৭৩৩ পৃষ্ঠা ।

তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, সুরা আহযাব ২৮ ও ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ , সুরা আহযাব ২৮ ও ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ।

এরপরেও নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে গায়ের জোরে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যারা বলে আয়িশা (রা) নাকি নিজের বাবার ভয়ে নবীর বিরুদ্ধে কিছু বলে নাই, নবী মোহাম্মদ (সা) নাকি খারাপ লোক ছিলেন,নবীর স্ত্রীরা নাকি উনাকে ঘৃণা করতো কিন্তু সেটা নাকি প্রকাশ করতো না,আয়েশা (রা) এর পিতা নাকি ক্ষমতার লোভে নবীর কাছে বিয়ে দেন ইত্যাদি মুক্তচিন্তায় মিথ্যা বলে তাদের কাছে প্রশ্ন থাকবে আপনাদের মানুষের মতো চিন্তা করবার মস্তিস্কটি হয়তো হারিয়ে গিয়েছে। নাহলে ঠাণ্ডা মাথায় এভাবে কেউ বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কিভাবে বলতে পারে?

উপসংহারঃ নবী মোহাম্মদ(সা) নারীকামী ছিলেন,উনি জবরদস্তি করে স্ত্রীদের বিয়ে করেছিলেন, নিজের খায়েস পুরা করবার জন্য এতোগুলো বিয়ে করেন এছাড়া নাস্তিকরা যা যা ইসলামের বিরুদ্ধে বলে সব কিছুই তাদের ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস। কারণ নবী মোহাম্মদ (সা) কখনোই নারীকামুক ছিলেন না। উনি মানুষ জাতির জন্য উত্তম আদর্শ। এই কথাটিই বাস্তব সত্যি। ইসলামবিরোধী জাতিকে সভ্য হতে হলে নবী মোহাম্মদ (সা) এর আদর্শের বিকল্প নেই। এটাই নিশ্চিত সত্য কথা।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post