তাকদিরের বিশুদ্ধ ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

বিষয়ঃ তাকদিরের বিশুদ্ধ ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি। 

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

=======================

ভূমিকাঃ তাকদির নিয়ে লেখাটি পড়তে হলে আপনাকে পুরো লেখাটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। প্রয়োজনে অল্প অল্প করে পড়ুন কিন্তু এরপরেও বুঝার চেষ্টা করে যেতে হবে। আমার লেখাতে তাকদির বিষয়ক সকল অংশ আমি বিস্তারিত সহজে তুলে ধরেছি। ইসলামের দৃষ্টিতে তাকদির বিষয়টি খুবই সহজে আমি বুঝিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। তাকদির নিয়ে যারা সমালোচনা করে বিশেষ করে ইসলামবিদ্বেষীরা এরা আসলে তাকদিরের দৃষ্টিভঙ্গিই বোঝে না। ইসলামবিদ্বেষীরা যেভাবে তাকদিরের ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে ধোঁকা দেয় প্রকৃত অর্থে ইসলাম আসলে তাকদিরকে সেভাবে বোঝায় না। তাছাড়া আপনি কেন ইসলামের ব্যাখ্যা ইসলামকে যারা ঘৃণা করে তাদের থেকে নিতে যাবেন? বিষয়টি অনেকটা এমন না যে বাংলাদেশের যুদ্ধের ইতিহাস আপনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে জানতে চাচ্ছেন? তেমনি নাস্তিকরা যারা ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ঘৃণা করে এরা ইসলামের সঠিক বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা করবে এটা আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন? আমার রেগুলার পাঠকরা ভালো করেই জানেন নাস্তিকরা ইসলামের কিভাবে ভুল মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে ব্যাখ্যা করে ইসলামের বদনাম করার চেষ্টা করে। ইসলাম বিদ্বেষীরা আপনাকে কিছু আয়াত দেখিয়ে বলবে, দেখছো কোরআন এটা বলছে, হাদিস এটা বলছে, অথচ কোরআন-হাদিসেরই আরেক জায়গায় এর বিস্তর ব্যাখ্যা,মূল উদ্দেশ্য,কারণ,ভাবার্থ,প্রেক্ষাপট সব রয়েছে, যা তারা আপনাকে কস্মিনকালেও দেখাবে না,দেখাবে তো দূরের কথা ওরা নিজেরাও কুরআন সুন্নাহ সেসব তথ্য দেখতে চায় না কারণ তাহলে মিথ্যাচার করবে কি দিয়ে? তাকদিরের সকল সাইড আমি তুলে ধরেছি, সকল অভিযোগ এমনকি প্রশ্নের যৌক্তিক ধারালো জবাব আমি দিয়েছি তাও খুবই সহজে যাতে সকল প্রকার মানুষ অনুধাবন করতে পারেন।

তাকদির কি স্রষ্টার অস্তিত্ব বাতিল করে?

একদমই না। নাস্তিকরা বলে আল্লাহ সব কিছুই যেহেতু লিখে রেখেছে সেহেতু মানুষ তো তাই করবেই অর্থাৎ আল্লাহ জবরদস্তি মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করাচ্ছে তাই আল্লাহ অপরাধী সুতরাং আল্লাহ বলে কিছু নাই।- পাঠক খেয়াল করুন, নাস্তিকরা যেভাবে বুঝিয়েছে ইসলামের দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ বাতিল ব্যাখ্যা। তর্কের খাতিরে যদি নাস্তিকদের ব্যাখ্যাকে ধরেও নেয়া হয় তাহলে নাস্তিকদের যুক্তিতে নাস্তিকদেরকেই বিশ্বাস করতে হবে যে স্রষ্টা খারাপ এরপরেও কিন্তু নাস্তিকদের যুক্তিতে এটা প্রমাণ হয় না যে স্রষ্টা বলে কিছু নাই। নাস্তিকদের বানানো যুক্তি অনুযায়ী স্রষ্টাকে খারাপ হিসেবে কি নাস্তিকরা নিজেরা বিশ্বাস করতে পারবে? স্রস্টাকে খারাপ হিসেবে বিশ্বাস করলে নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদ ভুল প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে কারণ নাস্তিক্যবাদ অর্থ স্রষ্টা বলে কিছু নেই সেখানে নাস্তিকরা নিজেরাই যুক্তি দিচ্ছে স্রষ্টা খারাপ তাহলে নাস্তিকরা কি স্রষ্টাকে খারাপ হিসেবে বিশ্বাস করবে? নাস্তিকদের নিজেদের দাবির প্রতি কি নাস্তিকদের নিজেদের বিশ্বাস আছে? এই দিকটি ভাল করে বুঝে নিন।কোন নাস্তিক যদি বিশ্বাস করে স্রষ্টা মানুষের তাকদীর লিখার কারণেই মানুষ জাহান্নামে যাবে তাই স্রষ্টা অপরাধী–স্বয়ং এই দাবীতে কোনো নাস্তিক আস্থা, বিশ্বাস,ভরশা করলে কি সে নাস্তিক হতে পারবে? নাকি সাথে সাথে অন্যরকম আস্তিক হয়ে যাবে যাদের বিশ্বাস হয়ে যাবে স্রস্টা অপরাধী? কারণ তার বিশ্বাস হচ্ছে স্রষ্টা মানুষের তাকদীর লেখার কারণে সে অপরাধী? তাহলে দেখা যাচ্ছে অভিযোগকৃত দাবিটি যদি সঠিক হয় তাহলে নাস্তিক,আস্তিক হয়ে যাচ্ছে যা “নাস্তিকতা বিরোধী” আবার যদি অভিযোগ ভুল হয় তাহলে নাস্তিকদের তাকদির বিষয় দাবীটিই বাতিল। এছাড়া ‘বিশ্বাস’  এই শব্দটিই নাস্তিকরা বাতিল করে দেয় শুধু তাই নয় স্বয়ং বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পুরো বই’ই লিখে ফেলেছে এক নাস্তিক। চলুন দেখি বিশ্বাস শব্দটিকেই নাস্তিক গুরুরা কিভাবে বাতিল করেছে। যদিও নাস্তিকরা বিশ্বাস করা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারছে না,কেন? 

হুমায়ুন আজাদ লিখিত "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ভূমিকার শেষের দিকে লেখা আছে,

মানুষের জন্যে যা ক্ষতিকর , সেগুলোর শুরুতেই রয়েছে বিশ্বাস, বিশ্বাস সত্যের বিরোধী, বিশ্বাসের কাজ অসত্যকে অস্তিত্বশীল করা,বিশ্বাস থেকে কখনো জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না, জ্ঞানের বিকাশ ঘটে অবিশ্বাস থেকে, প্রথাগত সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে না মেনে তা পরীক্ষা করার উৎসাহ থেকে।

আমার অবিশ্বাস' ২২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধরে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে,পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস।বিশ্বাস কাকে বলে ? আমরা কি বলি পিঁপড়েয় বিশ্বাস করি, সাপে বিশ্বাস করি, জলে বিশ্বাস করি বা বজ্রপাতে বা পদ্মানদীতে বিশ্বাস করি? এসব এবং এমন বহু ব্যাপারে বিশ্বাসের কথা উঠে না,কেননা এগুলো বাস্তব সত্য বা প্রমাণিত। যা সত্য,যা প্রমাণিত যা সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই তাতে বিশ্বাস করতে হয় না, কেউ আমরা বলি না যে আমি বিদ্যুৎে বিশ্বাস করি বা রোদে বিশ্বাস করি বা গাড়িতে বিশ্বাস করি।কেননা সত্য বা প্রমাণিত ব্যাপারে বিশ্বাস করতে হয় না , বিশ্বাস করতে হয় অসত্য, অপ্রমাণিত,সন্দেহজনক বিষয়। অসত্য অপ্রমাণিত কল্পিত ব্যাপারে আস্থা পোষণই হচ্ছে বিশ্বাস।

আমার অবিশ্বাস বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

বিশ্বাসের সাথে অন্ধকারের সম্পর্ক গভীর,বিশ্বাস অন্ধকারের আত্মজ।আলোর সম্পর্ক তার কম বা নেই।......বিশ্বাস হচ্ছে রহস্যীকরণপ্রবণতা,যা বস্তুনিষ্ঠভাবে সত্য জানতে চায় না,বরং মিথ্যেকেই আকর্ষণীয় ও শক্তিশালী করে তুলতে চায়। রহস্যীকরণপ্রবণতা মিথ্যেকেই করে তুলেছে সত্য;এজন্যে সত্য শব্দটি এখন বিভ্রান্ত করে আমাদের।

নাস্তিকরা বলে স্রষ্টা আমাকে নাস্তিক বানিয়েছে তাই আমি নাস্তিক হয়েছি সুতরাং আমার নাস্তিক হবার জন্য স্রষ্টা দায়ী- প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকরা নিজেদের এই কথায় বিশ্বাস করবে নাকি অবিশ্বাস? যদি বলে বিশ্বাস করবে তাহলে বিখ্যাত হুমায়ুন আজাদের যুক্তি অনুযায়ী নাস্তিকদের কথা অসত্য, অপ্রমাণিত, কল্পিত বাতিল। নাস্তিকরা নাস্তিক্যবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করে নিজেদের যুক্তিতেই স্রস্টাকে অপরাধী হিসেবে বিশ্বাস করবে? নাকি অবিশ্বাস করবে? 

যৌক্তিক কারণে এটা নিশ্চিত তাকদিরের ধারণা স্রষ্টার অস্তিত্বকে বাতিল করতে পারে না উল্টো নাস্তিকদের নিজেদের দাবিই নাস্তিক্যবাদকে বাতিল করে দেবার সামনে এসে দাড়ায়।

তাকদির কাকে বলে?

তাকদির অর্থ সংজ্ঞা বিষয় গবেষক এক্সপার্টরা কি বলে চলুন পড়ি। কারণ ইসলামবিদ্বেষী তাকদির বিষয় যেই ব্যাখ্যা করে সেই ব্যাখ্যা ইসলামের দৃষ্টিতে বাতিল এবং মিথ্যা।

যে কোন ব্যাপারে ভাল ও মন্দ বিষয়ে আল্লাহ্‌পাকের জ্ঞানে একটা পরিমান নির্ধারণ আছে এবং প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ্‌তা’লা উহা জানেন। আল্লাহ্‌তা’লার চিরন্তন জানা পরিমাপকেই তাকদীর বলে। - “আলফিয়াতুল হাদিস” লিখেছেন মাওঃ মনযুর নো’মানী (রহ),অনুবাদ ও সম্পাদনায় হযরত মাও মুফতি মোবারক উল্লাহ। ৩৭ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত দেখুন ।

মাওঃ শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ) লিখিত “বোখারী শরীফ” (বাংলা তরজমা ও  বিস্তারিত ব্যাখ্যা)। ৭ খণ্ড , ৭৮ থেকে ৮০ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত (পড়ুন) বর্ণনা করে হয়েছে,

তাকদীরের মূল তাৎপর্য হইল, আল্লাহ্‌তা’লার এলম ও জ্ঞান অর্থাৎ মানুষ তাহার প্রাপ্ত স্বায়ত্ত শাসিত স্বাধীন ইচ্ছা ক্ষমতা ও ইচ্ছার দ্বারা পরবর্তীকালে যাহা করিবে বা তাহার উপর বিভিন্ন কারনে অথবা বাহ্যিক কারন ব্যাতিরেকে যাহা কিছুর আবির্ভাব হইবে অনাদি কাল হইতে আল্লাহ্‌তা’লা তাহা জ্ঞাত আছেন। এমনকি লৌহে মাহফুজ সৃষ্টি করিয়া আল্লাহ্‌তা’লা প্রত্যেক ব্যাক্তির নামে নামে ঐসব তথ্য লিখিয়াও রাখিয়াছেন। কিন্তু মানুষের স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা ও ইচ্ছাকে খর্ব করেন নাই। ঐসব কার্যাবলী যখন বাস্তবায়ীত হইবে তখন তাহার সেই ক্ষমতা ও ইচ্ছার মাদ্ধমেই হইবে। বুঝিবার জন্য সামান্য একটি নমুনা – রেলওয়ে টাইম টেবিল। এক বৎসর বা ছয় মাস পূর্ব হইতেই প্রত্যেক গাড়ীর প্রত্যেক স্টেশনে নির্ধারিত সময়ে গমনাগমন বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত, লিখিত ও ছাপান হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাতে ইঞ্জিন চালকের স্বাধীন ক্ষমতা ও ইচ্ছা খর্ব হয় না, বরং তাহার ইচ্ছাতেই গাড়ী পরিচালিত হইয়া প্রতি স্টেশনে পৌছিতে থাকে। অবশ্য মানুষের জ্ঞান অতি সামান্য ও সংকীর্ণ তাই সেই জ্ঞানে উৎপাদিত টাইম টেবিল ব্যাতিক্রম ঘটিয়া থাকে। পক্ষান্তরে আল্লাহ্‌তা’লার এলম ও জ্ঞান তো ঐরূপ নয়।তাই সেই জ্ঞানে উৎপাদিত লৌহ মাহফুজের লেখার ব্যাতিক্রম ঘটে না। ইহাও আল্লাহ্‌তা’লার এলম ও গানের কামাল পরিপূর্ণতা। ইহাতে মানুষের স্বায়ত্ত শাসন ও ইচ্ছা খর্ব হয় না। বিশেষতঃ সে যখন কার্য করার পূর্বে উহা সম্পর্কে আদৌ কোন খোজ রাখে না। সুতরাং উহার দ্বারা তাহার ইচ্ছা খর্ব হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এই হাদিসটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এখানে নবীজি (সা) তাকদির বিষয় পুরো স্পষ্ট ব্যাখ্যাসহ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নামীদের বিষয় সব লিখে রেখেছেন আর এটা নিঃসন্দেহে উনার জ্ঞানের অংশ। সাহাবায়ে কেরাম যখন প্রশ্ন করলেন তাহলে আমলের কি দরকার? এর জবাবে নবীজি (সা) বলেছেন সঠিক পথে থেকে চেষ্টা করতে থাকো। নবীজি (সা) এর এই কথাটি পরিস্কার করে দেয় তাকদিরে আল্লাহ যাই লিখে রাখুক না কেন তারপরেও মানুষকে চেষ্টা করে যেতে হবে তাও সঠিক পথে থেকে কারণ তাকদির স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা প্রদান করে না। যদি করতো তাহলে নবীজি (সা) নিজেই বলতেন যে যেহেতু সব লিখাই আছে সেহেতু আমাদের আর আলাদা করে চেষ্টা করার দরকার নেই কিন্তু উনি কি এরকম কিছু বলেছিলেন? অবশ্যই না।

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ২১৪২,হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি গ্রন্থ তাঁর দুই হাতে নিয়ে আমাদের নিকট এসে বললেনঃ তোমরা এই দুটি গ্রন্থের ব্যাপারে কি জান? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তবে যদি আপনি আমাদেরকে জানিয়ে দিন। তিনি তাঁর ডানহাতের গ্রন্থের দিকে ইশারা করে বললেনঃ এটা রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ হতে একটি কিতাব। এতে জান্নাতী সকল ব্যক্তির নাম,তাদের বাপ-দাদার নাম ও তাদের গোত্রের নাম লিখা আছে। আর শেষে এর যোগফল রয়েছে এবং এতে কম-বেশি করা হবে না। তারপর তিনি তার বামহাতের গ্রন্থের দিকে ইশারা করে বললেনঃ এটাও আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ হতে একটি গ্রন্থ।এতে জাহান্নামী সকল ব্যক্তির নাম,তাদের বাপ-দাদার নাম ও গোত্রের নাম লিখা আছে।এর শেষেও যোগফল রয়েছে।এতে কখনো কমানো-বাড়ানো হবে না। তাঁর সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বিষয়টি এরূপভাবেই চূড়ান্ত হয়ে থাকলে তবে আর আমলের কি প্রয়োজন? তিনি বললেনঃ তোমরা সঠিক পথে থেকে সঠিকভাবে কাজ করতে থাক এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য হাসিলে চেষ্টা কর। কেননা, জান্নাতী লোকের শেষ মুহূর্তের আমল জান্নাতীদের আমলই হবে, সে পূর্বে যে আমলই করুক না কেন। আবার জাহান্নামীর শেষ মুহূর্তের কাজ জাহান্নামীদের আমলই হবে, সে পূর্বে যে আমলই করুক না কেন।তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দুইহাতে ইশারা করেন এবং কিতাব দুটি ফেলে দিয়ে বলেনঃ তোমাদের প্রভু তাঁর বান্দাহদের আমল চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে আর অন্যদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।- ihadis.com

সহিহ বুখারী,৬৫৯৬ হাদিসের নিচে তাকদীর বিষয় ২ নং টিকায় যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা হলোঃ

অতীতে যা ঘটেছে, বর্তমানে যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সবই আল্লাহ তা‘আলার চোখের সামনে রয়েছে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই তিনি সমানভাবে জ্ঞাত। প্রত্যেকটি মানুষ কখন জন্মিবে, কখন মরবে আর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মুহূর্তে কোন আমাল করবে সবই তাঁর জানা। মৃত্যুর পর কেউ জান্নাতে যাবে, না জাহান্নামে যাবে কিংবা প্রথমে জাহান্নামে যাওয়ার পর আবার জান্নাতে যাবে- এ সব কিছুই তাঁর জানা। মাতৃগর্ভে ১২০ দিন পর আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে লিখিয়ে দেন কতটা রিযিক সে পাবে, কখন কোথায় মরবে, সে জান্নাতী হবে, না জাহান্নামী হবে। তিনি তো সবই জানেন, আর তাই তিনি লিখিয়ে দেন। ভাগ্যে লিখে দেয়ার কারণে কেউ জান্নাতী-জাহান্নামী হয় না, নিজের আমলের কারণেই জান্নাতী জাহান্নামী হয়। বান্দার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আল্লাহর জানা কথাগুলো আগেই লিখে দেয়ার নামই তাকদীর। তাকদীর গড়ার দায়-দায়িত্ব বান্দার, তাকদীর গড়ার স্বাধীনতা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে দিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্ত করেন না যে পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন না করে- (সূরা রাদ-১১)। অবশ্য আল্লাহ মানুষকে বিভিন্নভাবে ফযীলাত বা প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা দান করেন। কিন্তু দুনিয়াবী প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আখিরাতের সফলতা বা ব্যর্থতার কোন সম্পর্ক নাই। কেউ জান্নাতের পথে যেতে যেতে শেষ মুহূর্তে জাহান্নামে চলে গেলেও তার জন্য সে নিজেই দায়ী। আর আল্লাহ- যিনি তাকদীর লেখান তিনি ভালভাবেই জানেন যে, শেষ মুহূর্তে ঐ ব্যক্তি নিজেই দিক পরিবর্তন করে জাহান্নামে পৌঁছবে, যদিও সে সারাজীবন জান্নাতে যাওয়ার কাজই করেছে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাকে বিবেক বুদ্ধি দান করেছেন এবং তাকে ভাল ও মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, তার বিবেক-বুদ্ধিকে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার স্বাধীনতাও দিয়েছেন আর এর দ্বারা তাকে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন। এছাড়া আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষসহ কোন কিছুকেই বেকার সৃষ্টি করেননি। অতএব তিনি যখন কোন কিছুকেই বেকার হিসেবে সৃষ্টি করেননি তখন বিবেকসম্পন্ন এ মানব জাতিকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়ে তাদেরকে তো পরীক্ষা করবেনই। আল্লাহ্ তা‘আলা ভাল আর মন্দের সৃষ্টিকর্তা, তিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন মানব ও দানব জাতিদ্বয়কে পরীক্ষা করার জন্যই। কিন্তু এ পরীক্ষায় কে কেমন ফলাফল করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর অগ্রিম জ্ঞান দ্বারাই অবগত রয়েছেন। সেটিই হচ্ছে তাকদীর যার কোন ব্যতিক্রম হবে না। এ তাকদীরের উপর প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ঈমান আনা মু’মিন হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত। সারা জীবন ভাল কাজ করে শেষ জীবনে মন্দ কাজ করে জাহান্নামে যাওয়ার পরিণতি এড়ানোর জন্যই আল্লাহ বলেছেন- তোমরা মুসলমান না থাকা আবস্থায় কক্ষনো মরোনা অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের উপর কায়েম থাক- (আল-ইমরান-১০২) > (৩) নং টিকায় বলা হয়েছে, বাহ্যিকভাবে অনেক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি মন্দ আমল করবে এবং অনেক দুর্ভাগা ভাল আমল করবে। কিন্তু আল্লাহর ইলমে তার ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ বা নির্ধারণ করা হয়েছে তার কোনই পবিরর্তন হবে না। । [উল্লেখ্য আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে বিবেক-বুদ্ধি দান করে ভালো-মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে তা গ্রহণ এবং বর্জন করার স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। এ স্বাধীনতা দেয়ার মূল কারণ তাকে পরীক্ষা করা যে, সে কোন পথের যাত্রী হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর পূর্ব জ্ঞান দ্বারা জানেন যে, সে ভাল পথ অবলম্বন করবে নাকি মন্দ পথ অবলম্বন করবে। আর এ অগ্রীম জ্ঞান দ্বারাই তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী]।- ihadis.com

ই,ফা, মুসনাদে আহমেদ, খণ্ড ১,পৃষ্ঠাঃ১০৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত নবী (সা) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্‌তাঁর সৃষ্টি জগতকে অন্ধকারে সৃষ্টি করেছেন।এরপরে আল্লাহ্‌ তাঁর নুর বা জ্যোতি তাদের উপর বিকিরন করেন।যারা সেই নুর প্রাপ্ত হয়েছে তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছে আর যারা সেই নুর পায় নাই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।এ কারনে আমি বলছি যে আল্লাহ্‌রব্বুল আলামিনের কলম শুকিয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ হিদায়েত প্রাপ্তি কিংবা ভ্রষ্টটা যার তাকদীরে যা কিছু আছে তা আল্লাহ্‌র ইলমের আওতাধীন। এই হাদিসে অন্ধকার বলতে তাকদীর সৃষ্টির পূর্বেকার ভাগ্য সমতাকে বুঝানো হয়েছে। (তাবারানি, বায়হাকি ও তিরমিযী, তিনি হাদিসটি সহিহ বলে মন্তব্য করেছেন)

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে আল্লাহর নুর পায় নাই তাই তারা হেদায়েত পায় নাই তাহলে বান্দার অপরাধ কি? হাদিসটি খেয়াল করুন আল্লাহর ইলমের আওতাধীন তাকদিরে যা কিছু আছে সেহেতু আল্লাহ জানেন কারা নিজেদের ইচ্ছায় হেদায়েত পাবেনা তাই তারা আল্লাহর নুর পায় নাই। এখানে যদি আল্লাহ ইচ্ছা করে সবাইকেই হেদায়েত করে দিতেন তাহলে তো আর মানুষের জন্য পরীক্ষার যেই ইচ্ছা আল্লাহ করেছেন তার বাস্তবায়ন হবে না। আর আমরা জানি যে ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর এই ইবাদত করাতে মানুষ স্বাধীন অর্থাৎ যার ইচ্ছা ইবাদত করবে যার ইচ্ছা করবে না।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ১০৮ আয়াতে বর্ণিত,

হে মানুষ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য এসেছে। সুতরাং যে হিদায়েত গ্রহণ করবে সে নিজের জন্যই হিদায়েত গ্রহন করবে আর যে পথভ্রষ্ট হবে সে নিজের ক্ষতির জন্য পথভ্রষ্ট হবে। 

তাকদির আসলে কি এটা নিয়ে আশা করি আর ভুল বোঝার সুযোগ নেই। এই ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই যে তাকদিরে আল্লাহ যেহেতু সব লিখে দিয়েছেন সেহেতু মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা নেই কেননা এই ব্যাখ্যা ইসলামের দৃষ্টিতে ভুল। যদি স্বাধীন ইচ্ছা মানুষের নাই থাকতো তাহলে নবীজি (সা) অবশ্যই কষ্ট করে ইসলামের দাওয়াত দিতেন না বরং এটা বলতেন যে তাকদিরে তো সব লেখা আছেই আমাকে আর নতুন করে কেন কষ্ট করতে হবে? যেহেতু এমন কোনো কথা উনি বলেন নাই সেহেতু এটা নিশ্চিত যে তাকদির আল্লাহর জ্ঞানের অংশ কিন্তু এরমানে এটা নয় যে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় তা বাধা প্রদান করবে। হযরত মোহাম্মদ (সা) যেমন পরিবারের কাজ করেছেন, সামাজিক কাজ করেছেন এমনকি রাষ্ট্রীয় কাজ করেছেন তাকদির যেমন এসব কাজ কর্মে বাধা হয়ে দাড়ায় নি তেমনি আমরাও আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সব কাজ করলেও তাকদির বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমি জানি যে আপনি আমার লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন আমার এই জানা কি আপনার স্বাধীন ইচ্ছায় বিন্দুমাত্র বাধা দিয়েছে? উত্তর হচ্ছে না। তেমনি আল্লাহর রয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণ জ্ঞান উনি জানেন মানুষ নিজের স্বাধীনতা ভোগ করে যা যা করতে পারে তাই উনি লিখে রেখেছেন আর আল্লাহর লিখে দেয়া কখনোই ভুল হবে না কারণ উনি পারফেক্ট।

তাকদিরের সুত্র ও মূলনীতিঃ

আল্লাহ যাই জানুক, যেভাবেই জানুক অথবা তাকদির যেমনই হউক এটা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় কখনো বাধা প্রদান করবে না, জবরদস্তি করবে না। আল্লাহর ভবিষ্যৎ জ্ঞান যেহেতু পারফেক্ট সেহেতু সব তিনি লিখে মানুষের নিজ কর্মফলের ভিত্তিতে আগেই লিখে রেখেছেন। আল্লাহ জানেন মানুষের ভবিষ্যৎ সমূহ তাই সবকিছু আগেই লিখে রেখেছেন। আল্লাহ লিখেছেন বলেই মানুষ তাই জবরদস্তি করছে এটা সঠিক ধারণা নয়। বরং অর্থাৎ মানুষ করবে বলেই আল্লাহ লিখেছে রেখেছেন আর আল্লাহর লেখা ভুল হবেই না।

আল কুরআন, সুরা বাকারা, ২ঃ২৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।

আল কুরআন,সুরা কামার ৫৪ঃ৫২,৫৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তারা যা কিছু করেছে,সবই আমলনামায় লিপিবদ্ধ আছে।ছোট ও বড় সবই লিপিবদ্ধ।

আল কুরআন, সুরা হাজ ২২ঃ৭০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে। এবং এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।

তাফসীরে আহসানুল বয়ান,৯৩৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আহলে সুন্নাহর ইমামগণ এই (সুরা কামার ৫৪:৪৯) আয়াত এবং এই ধরনের অন্যান্য আয়াত গুলোকে দলিল হিসেবে গ্রহন করে ভাগ্য যে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সে কথা সাব্যস্ত করেছেন।আর অর্থ হল মহান আল্লাহ সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই তাদের ব্যাপারে জানতেন এবং সেই জানার আলোকে তিনি তাদের সকলের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে দেন।

যারা বলে তাকদিরে যা লিখা আছে তা তো হবেই আমার স্বাধীন ইচ্ছার এখানে মূল্য নেই- এদের এমন ভুল কথার জন্য জবাব হচ্ছে এই হাদিস যেখানে বলা হচ্ছে দোয়া করার দ্বারা তাকদির পরিবর্তন হয়। এখানে সুক্ষ একটি জিনিস বোঝার আছে সেটা হচ্ছে যারা তাকদির নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করেন তারা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে পারেন যাতে সব কিছু সুন্দরভাবে হয়।

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২১৩৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবীজি (সা) বলেছেন দুয়া ছাড়া অন্য কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ছাড়া অন্য কোন কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না। সুনানে ইবনে মাজাহ , হাদিসঃ ৯০,হাসান হাদিস।-ihadis.com

সুতরাং তাকদিরের অজুহাতে নিজের অপরাধ স্রষ্টার দিকে চাপিয়ে কোনো লাভ নাই। ধরুন আপনি ভবিষ্যতে এমন একটি কাজ করবেন যা আপনার নিজের জন্যই ভালো না কিন্তু আপনি এই হাদিসের উপর আমল করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকলেন যে আল্লাহ আমার ভবিষ্যতে যদি আমার কোনো অকল্যাণ থাকে আপনি দূর করে দেন- এই যে আপনি দোয়া করছেন এই দোয়ার ফলে আল্লাহ আপনাকে সেই খারাপ কাজ হতে দূর রাখবেন। আবার দোয়া করে বসেও থাকা যাবে না বরং ভালো পথে থেকে চেষ্টাও করেও যেতে হবে। দোয়া করে হাত পা বন্ধ করে ইসলাম যেমন বসে থাকতে বলে না তেমনি তাকদিরের আশ্রয় নিয়ে কাজ করা বন্ধ করাও ইসলাম সমর্থন করে না। যারা নিজে অপরাধ করে সেটা আল্লাহর দিকে চাপিয়ে দিতে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে ভুল কাজ করে। কেননা আল্লাহ খারাপ কাজ করতে বলেন নাই তাই নিজে খারাপ কাজ করে সেটা আল্লাহকে দায়ী করা ভুল। বরং মানুষ নিজেই নিজের খারাপ কাজের জন্য দায়ী। আল্লাহ কাউকে ভালো অথবা খারাপ কাজ করতে জবরদস্তি করেন না, দেন না বাধা প্রধান। বরং মানুষ নিজের কর্মে পূর্ণ স্বাধীন।

আল কুরআন, সুরা হামিম সেজদা ৪১ঃ৪৬ আয়াতে বর্ণিত,

যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ১০৮ আয়াতে বর্ণিত,

হে মানুষ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য এসেছে । সুতরাং যে হিদায়েত গ্রহণ করবে সে নিজের জন্যই হিদায়েত গ্রহন করবে আর যে পথভ্রষ্ট হবে সে নিজের ক্ষতির জন্য পথভ্রষ্ট হবে।-এরকম আরও আয়াত আছে যেমনঃ সুরা মুমিন ৪০:১৭ /সুরা আহকাফ ৪৬:১৯/সুরা যিলযাল ৯৯:৬,৭,৮/

আল কুরআন, সুরা নাজম ৫৩ঃ৩৯ আয়াতে বর্ণিত,

মানুষ তাই পায়, যা সে করে।

আল কুরআন, সুরা কাহফ ১৮ঃ২৯ আয়াতে বর্ণিত, 

বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।

আল কুরআন, সুরা রুম ৩০ঃ৪৪ আয়াতে বর্ণিত,

যে কুফরী করে, তার কফুরের জন্যে সে-ই দায়ী এবং যে সৎকর্ম করে, তারা নিজেদের পথই শুধরে নিচ্ছে।

কুরআনের আয়াতে স্পষ্ট মানুষ কর্মে স্বাধীন। তাই তাকদিরের অপব্যাখ্যা করার সুযোগ নাস্তিকিস্টদের আর থাকছে না। আসলে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের দৃষ্টিতে তাকদিরের বিষয়টি বোঝেই না আর যে যা বোঝে না সেটা তার নিজের কাছে কঠিন লাগবেই। মানুষ নিজ ইচ্ছায় যেই কাজ করবে আল্লাহও সেই দিকে তাকে ঘুরিয়ে দিবেন যাতে মানুষের কর্মে বাধা না আসে অর্থাৎ মানুষ পরিপূর্ণ ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগে স্বাধীন। কেউ ভালো কাজ করতে চাইলে আল্লাহ বাধা দিবেন না তেমন কাউ খারাপ কাজ করলেও আল্লাহ দুনিয়াতে বাধা দিবেন না। পরিক্ষার খাতায় ছাত্র সঠিক বা ভুল যাই লিখুক শিক্ষক যেমন বাধা দেয় না বরং ছাত্র যা লিখতে চায় শিক্ষক তাকে লিখার পূর্ণ সুযোগ দেন।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১১৫ আয়াতে বর্ণিত,

যে রাসুলের বিরুদ্ধাচরন করে তার জন্য হিদায়েত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরন করে ,আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর আবাস হিসেবে তা খুবই খারাপ।

আল্লাহ সব কিছু পরিমাপ করে সৃষ্টি করেছেন। মানে আপনি ভালো কাজ করলে ভালো ফল পাবেন খারাপ কাজ করলে খারাপ। হ্যাঁ, মানুষের জন্য এই সিস্টেম আল্লাহই দিয়েছেন। 

আল কুরআন, সুরা কামার ৫৪ঃ৪৯ আয়াতে বর্ণিত,

নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু সৃষ্টি করেছেন নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী। তাফসীরে ফাতহুল মাজিদে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ পাপী  ও অপরাধী লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা সত্যের পথ হতে বিচ্যুত,তারা সন্দেহ ও দুর্ভাবনার মধ্যে পতিত হয়েছে। প্রত্যেক কাফির ও বিদআতী যারা তারা এ দোষে দুষ্ট। এরপরে আল্লাহ বলেছেন তাদের এ সন্দেহ ও দোদুল্যমনা জাহান্নামে নিয়ে যাবে।তারপর আল্লাহ বলেছেন নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমানে। এরুপ আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ সুরা ফুরকান ২৫ঃ২ আয়াতে, তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে। একই কথা আছে সুরা আলা ৮৭:২ ও ৩ আয়াতে।

ইচ্ছা করলে ভালো কাজ করা যেমন সহজ তেমনি ইচ্ছা করলে খারাপ কাজ করাও সহজ। আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন কাজ করবেন? খেয়াল করলে দেখবেন যারা মুক্তমনে সিগারেট খায় তারা জানা সত্ত্বেও কিন্তু খাচ্ছে তাদের নিজের কাছে কি এই কাজ কষ্ট মনে হচ্ছে? না। অন্যদিকে যারা ভালো কাজ করেন যেমন পিতামাতার সেবা যত্ন করা এই কাজটি যেসব সন্তানরা করেন তাদের কাছে কি কষ্ট মনে হচ্ছে? না। সুতরাং আপনার যা ইচ্ছা তাই করার স্বাধীনতা আছে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আপনি ইসলামের বিরোধিতা করে জাহান্নামে যাবেন নাকি ইসলাম নামক সত্য জীবন বিধানকে গ্রহণ করে জান্নাতে? সিদ্ধান্ত আপনার।

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১২৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কাজ ক’রে যাও। যেহেতু যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য তা সহজ ক’রে দেওয়া হবে।-ihadis.com

আল কুরআন, সুরা মূলক,৬৭ঃ৮,৯,১০,১১,১২ আয়াতে বর্ণিত,

ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি? তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা'আলা কোন কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ। তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না। অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামীরা দূর হোক। নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।

আমি মনে করি সুরা মূলকের এই আয়াত গুলো তাকদির বিষয়টিকে খুবই সহজে বলে দিয়েছে। খেয়াল করেছেন অপরাধীরা নিজেদের সব অপরাধ স্বীকার করে নেবে? তাকদির অর্থ যদি আসলেই এটা হতো আল্লাহ জবরদস্তি করে মানুষকে দিয়ে পাপ কাজ করান তাহলে ফেরেশতা কখনোই এই প্রশ্ন করতেন না যে তোমাদের কাছে সতর্ককারী আসে নাই? সতর্ক তখনই করা হয় যখন সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য চলে আসে? মানে কোন কাজ করলে আপনি জান্নাতে আর কোন কাজ করলে আপনি জাহান্নামে যাবেন এই বিষয় আপনাকে সতর্ক করা হয়েছে? তাই নিজের অপরাধের জন্য তওবার বিধান ইসলাম আপনাকে দিয়েছে। আপনি মুক্তচিন্তায় আল্লাহর দেয়া গাইড লাইন অনুযায়ী চলবেন না আর সব দোষ দিবেন আল্লাহর এটা কি হয় বলুন? এটা কি বোকামি না? হাস্যকর না? অযৌক্তিক না? তাহলে?

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৪৯৯, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ মাত্রই গুনাহগার অপরাধী। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাহকারীরাই উত্তম।-ihadis.com

তাকদির গড়ার স্বাধীনতাও আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। আপনি নিজেকে পরিবর্তন না করলে আল্লাহর কি ঠেকা পরেছে আপনাকে জবরদস্তি করে পরিবর্তন করার? দুনিয়া পরিক্ষার কেন্দ্র এখানে আল্লাহ আপনাকে আপনার কর্মে বাধা দিবেন না। 

আল কুরআন, সুরা রাদ ১৩ঃ১১ আয়াতে বর্ণিত,

আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।

মানুষ স্বাধীন ইচ্ছায় যা করবে আল্লাহ্‌ উনার ভবিষ্যৎ জ্ঞানের আলোকে তা আগেই তিনি লিখে দিয়েছেন আর আল্লাহ যা লিখে দিয়েছেন তা ভুল হবে না। তাকদির কথাটি যতবার সামনে আসবে ততবার এই সূত্রটি মনে রাখবেন তাহলে সামনের আলোচনা বুঝতে আপনাদের জন্য সহজ হবে।

হযরত আদম (আ)এর তাকদিরের দোহাই দিয়ে বিতর্কঃ

প্রথমে অভিযোগটি পড়ে নেয়া যাক,

ইসলাম বিদ্বেষীরা কিছু হাদিস দেখিয়ে বলে আদম (আ) যদি নিজের অপরাধের দ্বায়ভার আল্লাহর দিকে চাপিয়ে নিজে বিতর্কে জিতে যেতে পারেন তাহলে আমরা কেন পারবো না? সুতরাং এসব হাদিস থেকে এটা বুঝা যায় যে তাকদির দিয়ে নিজের অপরাধ আল্লাহর দিকে চাপানো যাবে।

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ২১৩৪,সহিহ হাদিস/সুনানে আবু দাউদ , হাদিসঃ ৪৭০২ , হাসান হাদিসঃ এই হাদিসে আদম (আ) ও মুসা (আ) এর একটি বিতর্কের কথা বলা হয়েছে। মুসা (আ) আদম (আ) কে বললেন আপনিই মানবজাতির বিপথগামী ও তাদেরকে জান্নাত হতে বহিষ্কারের কারণ হলেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তারপর আদম (আঃ) বললেনঃ আপনিই তো মূসা, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে মনোনীত করেছেন। আপনি এরূপ একটি কাজের জন্য আমাকে অভিযুক্ত করছেন, যা করার সিদ্ধান্তকে আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যামীন সৃষ্টির পূর্বেই আমার জন্য লিখে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তারপর সেই বিতর্কে আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-এর উপর বিজয়ী হন।-ihadis.com

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১২৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একদা আদম ও মূসা আপোসে তর্কাতর্কি করলেন; মূসা বললেন, আপনি পাপ করে আমাদেরকে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে বের করে এনেছেন। আদম বললেন, মূসা! তুমি তো নবী ছিলে। তোমাকে আল্লাহ তওরাত দিয়েছিলেন, যে তওরাত আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর পূর্বে লিখেছেন, তাতে কি পেয়েছ যে, ‘আদম অবাধ্য হয়ে ভ্ৰষ্ট হয়ে গেল?’ মূসা বললেন, হ্যাঁ। আদম বললেন, তাহলে সেই ভুলের জন্য আমাকে কেন ভর্ৎসনা কর, যা আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর আগেই লিখে দিয়েছেন? সুতরাং মূসা এ তর্কে হেরে গেলেন।”- ihadis.com

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকদির বিষয়ে নাস্তিকিস্টদের জালিয়াতি নতুন কিছু নয়। এর যৌক্তিক জবাব মুসলিম গবেষকরা আগেই দিয়ে রেখেছেন।একেকজন চিন্তাবিদ একেকভাবে এ প্রশ্নের চমৎকার জবাব দিয়েছেন। আমি সব স্টাইলের জবাব গুলোই সাজিয়ে নিচে পেশ করছি যাতে পাঠকদের জন্য বুঝতে সুবিধা হয়। 

মুসলিম বিশ্বে সমাদৃত সুবিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ “সুনানে ইবনে মাজাহ” এর অনন্য ব্যাখ্যা গ্রন্থ “সহজে দরসে ইবনে মাজাহ” যা সম্পাদনা করেছেন শায়খুল হাদীস হাফেজ মাওঃ মোঃ হাবীবুর রহমান। এই বিখ্যাত বইয়ের ২৩২-২৩৩ পৃষ্ঠায় এই প্রশ্নের জবাবে বর্ণিত হয়েছে যে,

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন তাকদীরের আশ্রয় নেয়া দুরকমের হতে পারে।প্রথমত পাপাচারের প্রতি বেপরোয়া হয়ে নিজ লজ্জানুভুতি দূর করার জন্য কুৎসিত কাজকে তাকদীরের দিকে সম্বদ্ধ করা এবং নিজেকে তাকদীরের অনুগামী বানিয়ে নিরপরাধ বলে জাহির করা।এটা মহাপাপ। দ্বিতীয়ত অনুতপ্ত হয়ে তওবা ও ইস্তেগফার করা সত্ত্বেও মন পরিতিপ্ত,প্রশান্ত হচ্ছে না, তখন তাকদীরের আশ্রয় নিয়ে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া।এটা কাম্য ও প্রশংসনীয় কাজ। হযরত আদম (আ) এর তাকদীরের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি ছিল দ্বিতীয় প্রকারের। কাজেই কোনো প্রশ্ন থাকলো না। 

আল্লামা কাশ্মীরি (রহ) বলেন পাপাচারে লিপ্ত হতে তাকদীরের দোহাই দেওয়া তখনই নিষেধ যখন তা কর্মজগতে তথা দুনিয়াতে হবে আর হযরত আদম (আ) ও হযরত মুসা (আ) এর উল্লিখিত বিতর্ক ছিল দুনিয়া থেকে বিদায়ের পর আলমে বরযখে। সুতরাং সেখানে তাকদীরের আশ্রয় নেওয়াতে কোনো অপরাধ হয়নি। ইমাম নববী (রহ) ও মোল্লাআলী কারী (রহ) থেকেও এ জবাব বর্ণিত আছে। তা ছাড়া কর্মজগতে থাকা অবস্থায়ও তিনি তাকদীরের আশ্রয় নিয়ে কখনো তাকদীরের উপর দোষ চাপান নি বরং নিজের অপরাধ স্বীকার করে আল্লাহর দরবারে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা পার্থনা করেছেন।

মুহাদ্দিস মাওলানা আহমদ মায়মুন,মুফতি আব্দুস সালাম, মাওঃ মোঃ সিদ্দীকুল্লাহ (হাঃফি) কর্তৃক অনুবাদ ও সম্পাদনা “আনওয়ারুল মিশকাত শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ” ১১০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন উত্তর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি জবাব এভাবে বর্ণিত হয়েছে,

হযরত আদম (আ)কে উনার ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে (সুরা বাকারা ২:৩৭)। অতএব উনার জন্য তাকদীরের দলিল দেওয়া বৈধ ছিল। আমাদের অপরাধ ক্ষমা হয়েছে কিনা? তা জানার উপায় নেই।

পাঠক আপনাদেরকে বলছি, আরেকবার উপরে ঘটনাটি পড়ুন। ঘটনায় আদম (আ) কোথাও আল্লাহ তা’লাকে অপরাধী বলেন নাই অথবা আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষমূলক কিছুই উচ্চারণ করেন নাই বরং আল্লাহ তাকদির সব আগে লিখে রেখেছেন আর তাই হয়েছে সেটাই কিন্তু উনি সরাসরি বলেছেন। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি ধরতে পারবেন। যেমন ধরুন ক্লাসে এক শিক্ষক এক ছাত্রকে বলল যদি তুই খাতায় ভাল লিখিস তাহলে ভালো রেজাল্ট করতে পারবি আর যদি খাতায় ভুল লিখিস তাহলে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে। শিক্ষকের বলা সত্ত্বেও সেই ছাত্র পরীক্ষার খাতায় ভুল লিখে ফেইল করেছে এবং স্কুল থেকে শিক্ষক ওকে বের করে দিয়েছেন। এই ছাত্রকে প্রশ্ন করা হলো তুই কেন স্কুল থেকে বের হয়ে এসেছিস? সে নিজের কর্মের কথা না বলে স্বাভাবিক উত্তরে বলল, স্যার আমাকে বের করে দিয়েছেন তাই।- পাঠক খেয়াল করুন এরমানে এই না যে স্যার বিনা কারণে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন। অথবা স্যার সেই ছাত্র বিষয় জানতেন যে এই ছাত্র পরিক্ষায় ফেইল করবে তাই সচেতন করা সত্ত্বেও সে ফেইলই করেছে কিন্তু ছাত্র যখন বলল স্যার আমাকে বের করে দিয়েছে এর অর্থ এটা নয় যে স্যার জবরদস্তি বের করে দিয়েছেন বা ফেইল করিয়ে দিয়েছেন। বরং ছাত্রের কর্মের ব্যাপারে শিক্ষক আগে অনুধাবন করতে পেরেছেন একইসাথে সতর্কও করেছিলেন। এই উদাহরণ বুঝে থাকলে এটা বুঝা একেবারেই সহজ যে আল্লাহ, আদম (আ) কে নিষেধ করেছেন যে গাছের কাছেও না যেতে, না হলে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হবে।

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ৩৫ আয়াতে বর্ণিত,

আমি (আল্লাহ) আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে। 

আল্লাহর নিষেধ করা সত্ত্বেও আদম (আ) নিজ ইচ্ছায় সেই গাছের কাছে গিয়েছিলেন । আর আল্লাহ জানতেন আদম (আ) সেই গাছের ফল খাবে এবং এই অবাধ্যতার জন্য আল্লাহ উনাকে জান্নাত থেকে বের করে দিবেন। এর মানে এই না যে আল্লাহ জবরদস্তি করে বিনা কারণে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছেন। আল্লাহ জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছেন এটা সরাসরিই বলেছে আদম (আ) কিন্তু এর মানে এই না যে আদম (আ) আল্লাহকে অপরাধী বা দোষ চাপাচ্ছেন বরং আদম (আ) যে গাছের কাছে গিয়েছেন এবং ফল খেয়েছেন এই অবাধ্যতার জন্য তারা নিজেরাও তওবাও করেছেন কিন্তু।

আল কুরআন,সুরা আরাফ ৭:২৩ আয়াতে বর্ণিত,

তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। 

এই আয়াত থেকেও সরাসরি প্রমানিত যে আদম (আ) নিজের ভুলের জন্য আল্লাহকে কখনোই দোষারোপ করেন নাই বরং আল্লাহ সব আগেই লিখে রেখেছেন এবং সেটাই উনি করেছেন কারণ আল্লাহর লিখে দেয়া কখনো ভুল হবে না সেটাই বুঝিয়েছেন আর এভাবেই বিতর্কে জয়লাভ করেন। আদম (আ) ও মুসা (আ) এর ঘটনাটি থেকে কোনো ভাবেই এটা প্রমানিত হয় না যে নিজে ইচ্ছা করে অপরাধ করে সেটার দোষ আল্লাহর উপর দিয়ে দিতে হবে। যদি এটাই বুঝাতো তাহলে রাসুল (সা) এটা করেন নাই কেন? নবীজি (সা) কি কখনো বলেছিলেন যে আদম (আ) যেভাবে বিতর্কে জিতেছেন আমরাও তেমনটাই করবো? উনার সাহাবীরা কি এমন কিছু বলেছিলেন? নবীজি (সা) কোনো হাদিসে সাহাবীদেরকে এই দাবী করেছেন যে বান্দা অপরাধ করলে সেটার দোষ আল্লাহর? নাকি ভালো আমল করে যেতে বলেছেন? সব তথ্য একত্রে করলে এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে একজন নবী অপরাধের দোষ আল্লাহকে দিবেন যেখানে তিনি নিজেই নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন? তাই উপরের ঘটনাটি থেকে ভুল ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। হযরত আদম (আ) এর উক্ত ঘটনা থেকে সর্বোচ্চ এতটুকু প্রমাণ হয় যে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব না নিয়ে হতাশা থেকে মুক্তির জন্য তাকদিরের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে কিন্তু নিজের পাপের দ্বায়ভার থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দিকে দোষ চাপানোর জন্য তাকদিরের আশ্রয় নেয়া যাবে না। হাদিসটি পড়ুন।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১০২, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ(দেহমনে) সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে, ‘যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’ বরং বলো, ‘আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন।’ কারণ, ‘যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়।-ihadis.com

ক্ষতি হলে মানুষের দুঃখ হয়, মানুষ হয় হতাশা, এই হতাশা থেকে মুক্তির জন্য তাকদিরের আশ্রয় নিয়ে এটা বিশ্বাস করা যাবে যে আল্লাহ যা লিখেছেন তাই হয়েছে। কারণ আপনার ক্ষতির কারণে যদি এসব কথা বলতে শুরু করে দেন যদি এটা হতো , সেইটা হতো তাহলে এসব কথা আপনার হতাশা আরও বৃদ্ধি করবে এবং শয়তান আপনার বিরুদ্ধে পয়তারা করবে সহজে। তাই হতাশ না হয়ে এই ক্ষেত্রে তাকদিরের আশ্রয় নিতেই পারেন।

কার্যকলাপ তো সবই আগে লেখা আছে তাহলে?

কিছু হাদিস দেখিয়ে ইসলামবিদ্বেষীরা বলে সব কার্যকলাপ তো আগেই লেখা আছে এর মানে মানুষ সেটাই করবে যা লিখে দেয়া হয়েছে তাহলে এখানে মানুষ স্বাধীন কিভাবে? - এই অভিযোগ করে যেই হাদিস গুলো তারা দেখায় আমি সব গুলো নিচে তুলে ধরছি যাতে ইসলামের দৃষ্টিতে এর সঠিক ব্যাখ্যা সবাই জানতে পারে।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৯১, সহিহ হাদিসঃ সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৬৬৩০, সহিহ হাদিসঃ এসব হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কার্যকলাপ কি তাই যা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তদানুযায়ী তাকদীরে নির্ধারিত হয়েছে, না ভবিষ্যতে যা করা হবে তা? রাসুল (সা) বলেন, বরং তাই যা পূর্বেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে এবং তদানুযায়ী তাকদীর নির্দিষ্ট হয়েছে। যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য তা সহজসাধ্য করা হয়েছে।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২১৩৫/ আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৭৮৪/সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৯১, / সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৭০৯ , সহিহ হাদিসঃ কিছু সাহাবী প্রশ্ন করেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমলের ক্ষেত্রে আপনার অভিমত কি? আমরা যেসব কাজ করি তা কি নতুনভাবে ঘটল না আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে? তিনি বললেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র! তা আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছেআর সকলের করণীয় বিষয় সহজ করে রাখা হয়েছেযারা সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত তারা অবশ্যই সাওয়াবের কাজ সম্পাদন করে আর যারা দুর্ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত তারা দুর্ভাগ্যজনক কাজই সম্পাদন করে থাকে।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৬৬৪৪, সহিহ হাদিসঃ তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহাবাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক সহাবাকে দেখতে পেয়েছি। তারা বলতেন যে, সকল বিষয় নির্ধারিত (সৃষ্ট)। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সকল বিষয় নির্দিষ্ট পরিমাণে সৃষ্ট; এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বা বুদ্ধিমত্তা ও অক্ষমতাও।-ihadis.com

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ৮৭, সহিহ হাদিসঃ ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ মুযায়নাহ গোত্রের দুই লোক রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি মনে করেন, মানুষ এখন (দুনিয়াতে) যা ‘আমাল (ভাল-মন্দ) করছে এবং ‘আমাল করার চেষ্টায় রত আছে, তা আগেই তাদের জন্য তাকদীরে লিখে রাখা হয়েছিল ? নাকি পরে যখন তাদের নিকট তাদের নাবী শারী'আহ (দলীল-প্রমাণ) নিয়ে এসেছেন এবং তাদের নিকট তার দলীল-প্রমাণ প্রকটিত হয়েছে, তখন তারা তা করছে ? উত্তরে রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: না, বরং পূর্বেই তাদের জন্য তাক্বদীরে এসব নির্দিষ্ট করা হয়েছে ও ঠিক হয়ে রয়েছে। এ কথার সমর্থনে তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন (অনুবাদ): “প্রাণের কসম (মানুষের)! এবং যিনি তাকে সুন্দরভাবে গঠন করেছেন এবং তাকে (পূর্বেই) ভাল ও মন্দের জ্ঞান দিয়েছেন"- (সূরাহ আল লায়ল ৯২:৭-৮)।”- ihadis.com

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ৮৬, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: মহান আল্লাহ তা'আলা আদাম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হল দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। কিন্তু সহীহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, আদাম সস্তানের জন্য তাকদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হল চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।- ihadis.com

সহিহে হাদিসে কুদসি, হাদিসঃ ১৫৭, হাসান হাদিস/সহিহে হাদিসে কুদসি, হাদিসঃ ১৫৯, সহিহ হাদিসঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ “নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার পিঠ থেকে মখলুক বের করেন ও বলেনঃ এরা জান্নাতি আমি কোন পরোয়া করি না, এরা জাহান্নামী আমি কোন পরোয়া করি না। তিনি বলেন এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল তাহলে কিসের ওপর আমল করব”? তিনি বললেনঃ “তাকদিরে নির্ধারিত স্থানে- ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩৪৭৪, সহিহ হাদিসঃ ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্লেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেন, তা একটি আযাব। আল্লাহ্‌তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের প্রতি ইচ্ছা করেন তাদের উপর তা প্রেরণ করেন। আর আল্লাহ্‌তা’আলা তাঁর মুমিন বান্দাদের উপর তা রহমত করে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি যখন প্লেগে আক্রান্ত জায়গায় সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ্‌ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে তাহলে সে একজন শহীদের সমান সওয়াব পাবে।- ihadis.com

আমি আগে একটি কথা আপনাদেরকে বলেছিলেন মনে আছে? যেখানে তাকদিরের কথা আসবে এই সুত্র মনে রাখবেন তাকদির আল্লাহর জ্ঞান কিন্তু এই জ্ঞানের কারণে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। উপরের হাদিস গুলো এখন আরেকবার পড়ে আসুন। উপরের প্রতিটি হাদিস খুব গভীর ভাবে বুঝার চেষ্টা করুন। উপরের হাদিস গুলোতে যে বলা হচ্ছে আল্লাহ তাকদিরে যা লিখে রেখেছেন মানুষ তাই করবে,এমনকি মানুষ কি কি আমল করবে, কি করবে না সবই আল্লাহ আগেই লিখে রেখেছেন এবং যা লিখে রেখেছেন তা হবেই এমনকি সব কিছু আগে থেকেই নির্ধারিত এসব কথার অর্থ এটা নয় যে মানুষের স্বাধীনতা নেই বরং আল্লাহ যেহেতু স্বয়ংসম্পূর্ণ জ্ঞানের মালিক সেহেতু উনি নির্দিষ্ট করেই জানেন কোন মানুষ কি করবে আর কোন মানুষ কি করবে না এই হিসেবে উনি সবই নির্দিষ্ট করে আগেই লিখে রেখেছেন। আর আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন সেসব ভুল হবেই না,সবই সত্য হবে কারণ মানুষ যা করবে সবই উনি জানেন। উপরের প্রতিটি হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি এটাই যে আল্লাহ পারফেক্ট জ্ঞানের অধিকারী তাই উনি মানুষের জন্য যাই-ই লিখে রেখেছেন সেটাই হবে কারণ উনার লিখে দেবার মধ্যে কোনো ভুল হবেই না। তার অর্থ এটা নয় যে আল্লাহ জবরদস্তি মানুষকে দিয়ে তাই করাচ্ছেন যা উনি লিখে দিয়েছেন। এই দিকটি খুবই মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। কারণ এই দিকটি-ই না বুঝার কারণে অনেকেই তাকদির বিষয় ভুল বোঝে।

পাঠক খেয়াল করুন উপরের হাদিস গুলোতে “যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য তা সহজসাধ্য করা হয়েছে” এই কথা বলা হচ্ছে। তার মানে নবীজি (সা) নিজেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ খুবই সহজেই সেই কাজ গুলো করে ফেলবে। অর্থাৎ আপনার জন্য যদি কোনো কাজ সহজ হয় আপনার প্রতি কি তাহলে সেটা জবরদস্তি? অবশ্যই না। ঠিক তাই। আপনি যা যা করবেন সেই সব কাজে আপনাকে বাধা দেয়া হবে না বরং আপনি তা সহজেই করে ফেলতে পারবেন আর আপনি আপনার ইচ্ছাতে করবেন দেখেই আল্লাহ সব আগেই লিখে রেখেছেন। কি বোঝাতে পেরেছি? নাকি কঠিন মনে হচ্ছে? আচ্ছা সহজ কিছু উদাহরণ দেই তাহলে।

ধরুন আপনি রাস্তার মোড়ে বসে আছেন। মোড়টা ৯০ডিগ্রি এংগেলের কাছাকাছি ধরে নিন। পাশেই সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা আছে "গাড়ী আস্তে চালান, ১০০কিমি স্পীডে গাড়ী এই মোড় ঘুরতে পারবেনা, মোড় ঘুরানোর সময় ১০০কিমি স্পীডে গাড়ী থাকলে তা এক্সিডেন্ট করবেন।এবার আপনি দেখতে পেলেন কানে দুল হাতে ব্যাচলাইট পরা দুইজন ছেলে বাইক নিয়ে সেই লেভেলের স্পীডে আসতেছে। এখানে যে মোড় আছে তা তারা পাত্তাই দিলো না। ফলাফল, এক্সিডেন্ট। এখন আপনি কি বলবেন? কর্তৃপক্ষ এই সাইনবোর্ডে লিখে রেখেছিল তাই এক্সিডেন্ট হলো? না। তেমনি মানুষের প্রতিটা কাজ কর্ম আল্লাহ লিখে রেখেছেন এটা ঠিক।তবে আল্লাহ লিখে রেখেছেন বিধায় আমরা করছি, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং আমরা কখন কি করব কি খাব,কি আমল করবো,কার সাথে দেখা করবো ইত্যাদি এগুলো আল্লাহ আগে থেকেই জানেন, যেহেতু তিনি ইলমে গায়েবের অধিকার রাখেন, আর তাই তিনি লিখে রেখেছেন আর উনার লেখায় কোনো ভুল হবে না। উপরের হাদিস গুলা খেয়াল করে দেখুন যে বলা হচ্ছে আল্লাহ্‌ সব আগেই নির্ধারণ করেছেন অথবা কে জান্নাতে যাবে আর কে যাবে না সব আগেই লিখে দিয়েছেন। কোথাও কিন্তু এটা বলা হচ্ছে না যে আল্লাহ্‌ যা লিখে রেখেছেন সেটাই বান্দা জবরদস্তি করতে বাধ্য হয়েছে। মানুষকে যেই কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে সেই কাজ তার জন্য খুবই সহজ হবে। সে সেই কাজে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে এটা নিয়ে আল্লাহ্‌ পরোয়া করেন না অর্থাৎ মানুষ দুই জাগার যেখানেই নিজের কর্মফল অনুযায়ী প্রবেশ করুক না কেন সেটা আল্লাহর কিছুই আসে যায় না।

হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে প্রমাণ পেশ করছি এই একটি ব্যাখ্যা আরও সুন্দর করে উপরে সব গুলো হাদিসের সঠিক মর্মার্থকে প্রকাশিত করে দেবে। মুহাদ্দিস মাওঃ আহমদ মায়মুন,মুফতি আব্দুস সালাম, মাওঃ মোঃ সিদ্দীকুল্লাহ কর্তৃক অনুবাদ ও সম্পাদনা “আনওয়ারুল মিশকাত শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ” ১১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

আল্লাহ্‌তা’লা আদম সন্তানের মধ্যে এমন এক শক্তি সৃষ্টি করেছেন যার দ্বারা তারা ব্যাভিচারের স্বাদ উপভোগ করতে পারে এবং ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।অর্থাৎ প্রকৃতিগতভাবে তাদের মধ্যে কামভাব সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।এই অর্থ নয় যে তাদেরকে ব্যাভিচারের প্রতি বাধ্য করা হয়।

আল্লামা তীবী (রহ) বলেন …. তথা আল্লাহ্‌তা’লা সৃষ্টির আদিতে আদম সন্তানের ভাগ্যলিপিতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যে তাদের মধ্যে ব্যাভিচার চলতে থাকবে। তবে এর মর্ম এই নয় যে তাদেরকে ব্যাভিচারে বাধ্য করা হবে। বরং এতে লিপ্ত হওয়া না হওয়া তাদের ইচ্ছাধীন ব্যাপার।

উক্ত হাদিস গুলো আল্লাহর জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের কর্মের ফলাফল আগেই লিখে রাখাকে বোঝায় কিন্তু এটা বোঝায় না যে মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই। উদাহরণ হিসেবে ধরুন, আপনি টাইম মেশিন দিয়ে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে যা যা হবে সব দেখে আসলেন। কাউকে না জানিয়ে আপনি একটি বই লিখে ফেললেন যে আগামী ৫০ বছরে যা যা হবে সব। এই যে আপনি দেখে বই লিখে ফেললেন এবং ৫০ বছর তাই হতে থাকলো। প্রশ্ন হচ্ছে আপনার দেখে আসা ও মানুষ কি করবে ইত্যাদি সব নির্ধারিত করে লিখে দেয়া কি সকল মানুষের ইচ্ছাশক্তিতে বাধা প্রদান করেছে? অবশ্যই না। কেউ যদি বলে আপনি তো সব আগেই লিখে রেখেছেন বইতে এবং বইতে এটাও লিখা আছে আপনি যা যা লিখেছেন ৫০ বছরের মধ্যে মানুষ সেটাই করবে এর হেরফের হবেই না সুতরাং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা নেই- এই কথা কি ভুল হবে না? অবশ্যই হবে। কারণ আপনার “জানা” মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিতে বাধা প্রদান করবে না তেমনি আল্লাহর পারফেক্ট জ্ঞান রয়েছে, উনি জানেন যা যা হবে সব এবং উনি জানার ভিত্তিতে যা লিখে রেখেছেন বিন্দুমাত্র সেসবের হেরফের হবেই না। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে আল্লাহর জানা মানুষের স্বাধীনইচ্ছায় বাধা প্রদান করবে। যেসব নাস্তিকরা বলে তাকদির অর্থ আল্লাহ বান্দাকে নিয়ে জবরদস্তি সেই কাজ করিয়ে নেবেন যা আল্লাহ আগেই লিখে রেখেছেন। আল্লাহ যা লিখেছে বান্দা জবরদস্তি সেটাই করবে সুতরাং মানুষ যা যা করছে সব আল্লাহই করাচ্ছেন এখানে বান্দার স্বাধীন ইচ্ছা নেই। - এসব ব্যাখ্যা যে ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল তার বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে নিচের এই হাদিস গুলো। ইসলামের দৃষ্টিতে যদি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা নাই থাকতো তাহলে নবীজি (সা) কখনো বলতেন না যে নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো বরং উনি বলতেন কিছুই করার দরকার নেই যেহেতু আল্লাহ জবরদস্তি সব করাচ্ছেন। তাই নয় কি? সুতরাং এটা নিশ্চিত তাকদিরে আল্লাহ যাই লিখে রাখুক না কেন আল্লাহর পারফেক্ট জ্ঞান মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় কখনো বাধা দিবে না। হাদিস গুলো পড়ুন।  

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫২, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


নু‘মান ইব্‌নু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয় হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্‌ সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্‌রই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)।-ihadis.com


আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ৫৯৭, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আদী ইব্‌নু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গেই আল্লাহ্ তা‘আলা কথা বলবেন। আর সেদিন বান্দা ও আল্লাহ্‌র মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না। এরপর বান্দা নযর করে তার সামনে কিছুই দেখতে পাবে না। সে পুনরায় তার সামনের দিকে নযর ফেরাবে তখন তার সামনে পড়বে জাহান্নাম। তোমাদের মাঝে যে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও নিজেকে রক্ষা করে।রাবী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমন কি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬৫৪০,৬৫৬৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 


আদী ইব্‌নু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরুপ করলেন। এমন কি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামর আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর)-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ১৮৭৭, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে আসল এবং বলল ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এর উপরে আশংকা করছি। ইতিপূর্বে আরও তিনজন মৃত্যুবরণ করেছে, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তো এক কঠিন প্রাচীর দ্বারা জাহান্নাম থেকে নিজেকে রক্ষা করেছো।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৪০০৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছুকে শরীক করে না, নামায পড়ে, যাকাত আদায় করে এবং কবীরা গুনাহ হতে নিজেকে রক্ষা করে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। তখন লোকেরা জিজ্ঞেসা করলেনঃ কবীরা গুনাহ কী কী? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, মুসলমানদেরকে হত্যা করা, আর কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে পলায়ন করা।-ihadis.com

তাকদির বিষয় আরও জানতে লিংকে দেয়া পুরো লেখাটি পড়ুনঃ

 https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=63&section=835

“আল্লাহ আমল করিয়ে নেন” কথার অর্থ কি?

নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীরা বলে থাকে,

এসব হাদিসে যেখানে বলা আছে আল্লাহ যেসব বান্দাদের জাহান্নামের জন্য বানিয়েছেন তাদেরকে জাহান্নামের আমল করিয়ে নেন এই হাদিস গুলো কি স্পষ্ট নয় যে মানুষের আসলে স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছুই নেই বরং আল্লাহই বান্দাকে দিয়ে সব করাচ্ছেন?

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৭০৩,সহিহ হাদিসঃমুসলিম ইবনু ইয়াসার আল্‌জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃএকদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলোঃ “যখন তোমার রব আদম সন্তানের পিঠ হতে তাদের সমস্ত সন্তানদেরকে বের করলেন...” (সূরাহ আল-আ’রাফঃ ১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, আল্‌কা’নাবী এ আয়াত পড়েছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর স্বীয় ডান হাতে তাঁর পিঠ বুলিয়ে তা থেকে তাঁর একদল সন্তান বের করে বললেন, আমি এদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতবাসীর উপযোগী কাজই করবে। অতঃপর আবার তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে একদল সন্তান বের করিয়ে বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জাহান্নামীদের উপযোগী কাজই করবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমলের কি মূল্য রইলো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষে সে জান্নাতীদের কাজ করেই মারা যায়। আর আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যখন তিনি কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। অবশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করে মারা যায়। অতঃপর এজন্য তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৭০৮/রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৪০১ / সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৭৪৫৪, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট বর্ণনা করেনঃ বস্তুত, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ জান্নাতের উপযোগী কাজ করতে থাকে। এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত বা এক হাত পরিমাণ দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার সামনে তার তাক্বদীরের লেখা অগ্রবর্তী হয়, তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করে, ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত বা এক হাত পরিমাণ দূরত্ব থাকে। এমন সময় তার সামনে সে লেখা অগ্রবর্তী হয় এবং সে জান্নাতীদের আমল করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।-ihadis.com

বান্দা আমল করতে থাকে কিন্তু হটাত তাকদীরের লিখন সামনে আসে ফলে সে জাহান্নামী হবে অথবা আল্লাহ্‌ করিয়ে নেন এই হাদিস গুলোর অর্থ কি? এই হাদিস কি আল্লাহ্‌ বান্দাকে জবরদস্তি করে জাহান্নামে দিচ্ছে বুঝা যায় না?

তাকদিরের পুরো প্রেক্ষাপট সামনে না রেখে শুধু মাত্র এই হাদিস গুলো দেখিয়ে তাকদির বিষয় ভুল ব্যাখ্যা দিলে তা সঠিক হিসেবে ধর্তব্য নয়। উপরে যেই হাদিসে বলা হচ্ছে আল্লাহ্‌ করিয়ে নেন এই কথার প্রকৃত মর্মার্থ হচ্ছে আল্লাহ্‌ বান্দাকে সেই কাজ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দেন। এখন আল্লাহ্‌ যদি বাধা দেয় তাহলে তো মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা আর রইলো না, তাই না? মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সেহেতু মানুষ যা দুনিয়াতে করার স্বাধীন সুযোগ পাচ্ছে তা তো পরোক্ষভাবে আল্লাহই করাচ্ছেন তাই না এই দৃষ্টিতেই উপরের হাদিস গুলো বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন শিক্ষক ছাত্রকে দিয়ে পরিক্ষার খাতায় লিখিয়ে নিচ্ছেন। এটার অর্থ এই নয় যে শিক্ষক জবরদস্তি করে লেখাচ্ছেন বরং শিক্ষক সুযোগ দিচ্ছেন বলেই ছাত্র লিখতে পারছে তেমনি আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সেহেতু মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে সব কর্ম আল্লাহ করিয়ে নিচ্ছেন এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ মানুষকে কর্ম করার সুযোগ দিচ্ছেন বলেই মানুষ করতে পারছে। কুরআনের আয়াত গুলো পড়ুন।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১১৫ আয়াতে বর্ণিত,

যে রাসুলের বিরুদ্ধাচরন করে তার জন্য হিদায়েত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরন করে ,আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর আবাস হিসেবে তা খুবই খারাপ।

আল কুরআন, সুরা নাজম ৫৩ঃ৩৯ আয়াতে বর্ণিত,

মানুষ তাই পায়, যা সে করে।

আল কুরআন, সুরা কাহফ ১৮ঃ২৯ আয়াতে বর্ণিত, 

বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।

আল কুরআন, সুরা রুম ৩০ঃ৪৪ আয়াতে বর্ণিত,

যে কুফরী করে, তার কফুরের জন্যে সে-ই দায়ী এবং যে সৎকর্ম করে, তারা নিজেদের পথই শুধরে নিচ্ছে।

কর্মের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী এখন সে যেই দিকে ঘুরবে আল্লাহও তাকে সেই দিকেই ঘুরিয়ে দেবেন আল্লাহ বাধা দেবেন না। বিভিন্ন ধরণের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলছি। বুঝার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন ক্লাসে শিক্ষক জানেন এই ছাত্র খারাপ পড়াশোনা করে আর গনিত বুঝেই না তাই গনিতে ফেইল করবে। শিক্ষক কিন্তু ঠিকই ছাত্রকে পরিক্ষার হলে এক্সাম দেয়ায়ে নিচ্ছেন, খাতায় লিখিয়ে নিচ্ছেন এখন এটার জন্য শিক্ষক দায়ী নন কারণ শিক্ষক যদি পরিক্ষাই দিতে না দেন তাহলে ছাত্র স্বাধীন ইচ্ছায় খাতায় কি লিখবে? তেমনি আল্লাহ্‌ বান্দাকে দিয়ে সেই কাজ করিয়ে নিবেন যেটা সে করতে ইচ্ছা করবে। আল্লাহ্‌ যদি কাজে বাধা দেন তাহলে তো মানুষের আর স্বাধীন ইচ্ছাই থাকলো না। আল্লাহ বান্দাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেন বা নিবেন কথার মর্মার্থ এটাই। মার্ক জাকারবার্গ আমাদেরকে দিয়ে ফেসবুক চালিয়ে নিচ্ছেন না? অবশ্যই নিচ্ছেন। এখন কেউ যদি ফেসবুকের মধ্যে কোন অপকর্ম করে বলে সব দোষ আসলে মার্ক জাকারবার্গের কারণ সেই আমাকে দিয়ে ফেসবুক চালিয়ে নিচ্ছেন এটা বলা কি যৌক্তিক হবে? একদম না। তেমনি আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে দুনিয়ায় কর্ম করিয়ে নিচ্ছেন কথা সত্য কিন্তু কেউ দুনিয়াতে অপকর্ম করে যদি বলে আল্লাহ আমাকে দিয়ে এটা করিয়েছেন তাই আমার দোষ নেই, তাহলে এটা ভুল কথা হবে। আল্লাহ আপনাকে দিয়ে সবই করাবেন যা আপনি করতে চান কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে আপনার স্বাধীনতা নেই। আপনার শিক্ষক আপনাকে দিয়ে সেটাই লিখাবেন যা আপনি পরিক্ষার খাতায় লিখতে চাচ্ছেন কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে শিক্ষক আপনার স্বাধীনতায় বাধা দিচ্ছেন। পাঠক বুঝে গেছেন আশা করি উক্ত হাদিস গুলো আসলে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়েছে?

ধরুন আপনার হোস্টেলে কম্পিউটার আছে।আপনি কয়েস মাসের জন্য ঘুরতে যাবেন।আপনার এক বন্ধু আপনাকে বলল দোস্ত দুই তো কয়েক মাস থাকবি না তো তোর কম্পিউটাররা আমাদের কিছু দিনের জন্য দে আমি গেইম খেলবো। আপনি তাকে খেলতে দিলেন।একটি সময় দেখা গেল সে গেইম খেলার ফলে চোখে সমস্যা দেখা গেল।এখন সে বন্ধুকে দোষ দিচ্ছে আর বলছে তুই তো আমাকে তোর কম্পিউটারে খেলায়ে নিলি। যেহেতু তুই আমাকে খেলায়ে নিলি সেহেতু আমার চোখের সমস্যার জন্য তোর দোষ। পাঠক খেয়াল করুন এখানে আপনি আপনার বন্ধুকে দিয়ে ঠিকই খেলায়ে নিয়েছেন কিন্তু এই কথার অর্থ কি এটা যে আপনি তাকে জবরদস্তি করেছেন? অবশ্যই না। আপনি তাকে কম্পিউটার দিয়েছেন খেলার জন্য এখন সে যদি অতিরিক্ত খেলে নিজের চোখের সমস্যা করে ফেলে আপনাকে দায়ী করে তাহলে এটা যেমন অযৌক্তিক তেমনি আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে কর্ম করিয়ে নিচ্ছেন কথা সত্য কারণ আল্লাহ আমাদেরকে স্বাধীনতা না দিলে আমরা কিছুই করতে পারতাম না কিন্তু এর অর্থ এটা তো নয় যে আল্লাহ আমাদেকে দিয়ে জবরদস্তি সব করাচ্ছেন। দুনিয়া পরিক্ষার স্থান মানুষের জন্য, আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে পরিক্ষা দেয়াচ্ছেন এখন কোনো মানুষ ফেইল করে যদি বলে আল্লাহ করাচ্ছেন দেখে আমি করছি এই কথা বলা ভুল হবে।

আল কুরআন, সুরা মূলক ৬৭ঃ২ আয়াতে বর্ণিত,

যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।

এখন আসুন ধাপে ধাপে পরের হাদিস গুলোর জবাব দেই। অনেক মানুষ দেখবেন যারা আমাদের কাছে বাহ্যিক ভাবে ভালো সাজে কিন্তু আসলে তারা ভিতরে মন্দ এবং এই নিজের মন্দ কাজের জন্য তার শেষ পরিনতি ভাল হয় না। এই হাদিস সেই সব প্রতারক মানুষদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। অর্থাৎ তার বাহ্যিক কাজ গুলো সব শেষ দিকে খারাপ হয়ে থাকে সেই মন্দ কাজের প্রভাবে। একটি অংক পুরো সঠিক লিখেছেন কিন্তু উত্তরে গিয়ে ভুল লিখলেন তাহলে পুরো অংক যেমন বাতিল ঠিক একইভাবে আপনি যদি সারা জীবন ভালো কাজ করেন তাও মন্দ উদ্দেশ্যে কিন্তু শেষ দিকে এমন খারাপ কাজ করেন যা আগের ভালো কাজকে নষ্ট করে দিবে তাহলে সেটার দ্বায়ভার আপনার,আল্লাহর নয় কারণ আপনি এমন করবেন দেখেই আল্লাহ্‌ তা লিখে রেখেছেন সেটাই সত্য হয়ে যাবে আর সেটাই তাকদির হয়ে সামনে আসবে। ধরুন একজন নেতা মানুষের ভোট পাওয়ার জন্য ভালো হওয়ার নাটক করলো কিন্তু ভোট পেয়ে নেতা হয়ে সাথে সাথেই সে আবার দুর্নীতবাজ হয়ে গেল। এই যে উক্ত নেতা ভোট পেয়ে সাথে সাথে নিজের আগের চরিত্র থেকে উল্টো হয়ে গেলো আর এটা আল্লাহ জানেন দেখেই লিখে রেখেছেন আর তাই প্রতিফলিত হয়ে গেলো বা তাকদিরের লেখা অগ্রবর্তী হয়ে গেলো বা আল্লাহ আপনার বিষয় যা জানতেন সেটাই সত্য প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে অর্থাৎ আল্লাহ আপনার বিষয় যা জানতেন সেটা ভুল ছিল না। ব্যাপারটি ধরতে পেরেছেন?

আপনি যে আমার লেখাটি পড়ছেন, ধরুন পড়তে পড়তে আপনি চিন্তা করলেন বাকিটুকু অন্য সময়ে পড়ে নিব। খেয়াল করুন এই যে আপনি একটি গবেষণালব্ধ লেখা পড়ে যাচ্ছেন হটাত সিদ্ধান্ত নিলেন বাকি লেখা গুলো অন্য সময়ে পড়বেন এটা কি কেউ আপনাকে জবরদস্তি করেছে নাকি আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিলেন? অবশ্যই আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক এটাই অর্থাৎ একটি কাজ কেউ করতে থাকল কিন্তু নিজের ইচ্ছার কারণেই কাজটি ভিন্ন মোর নিলো আর এটা আল্লাহ আগে থেকেই জানেন দেখেই তাকদিরে লিখে রেখেছেন। আর এটা হবেই যেহেতু আল্লাহর জ্ঞান পারফেক্ট। বুঝে থাকলে এটাও বুঝতে সুবিধা হবে যে একজন মানুষ জান্নাতের যাওয়ার কাজ করতে থাকে কিন্তু তাকদির সামনে আসে আর খারাপ কাজ করে ফলে সে জাহান্নামের মত আমল করে। খেয়াল করুন এখানে সে “যেই কাজ করছে” সেটা কিন্তু নিজ ইচ্ছাতেই আর তাকদির সামনে আসে এর মানে আল্লাহ্‌ যেটা আগে লিখে রেখেছেন যে, সে ভালো কাজ করতে করতে হটাত খারাপ কাজ করবে, তার এই পরিবর্তন আল্লাহ জানতেন আর সেটি হয়ে যাবে কারণ সেই লোক নিজেই নিজের কর্মের ভিন্নতা করবে। হাদিসটি খেয়াল করুন।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৬৬৩৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত ‘আমালের বিবেচনায় জান্নাতীদের ‘আমালের ন্যায় ‘আমাল করবে; অথচ সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত। আর কোন ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত ‘আমালের বিবেচনায় জাহান্নামীদের ‘আমালের ন্যায় ‘আমাল করবে, অথচ সে জান্নাতীদের অন্তর্ভূক্ত।-ihadis.com

মিথ্যা পথ পাপাচারের দিকে ধাবিত করে বিধায় আমাদেরকে মিথ্যা পথ বর্জন করতে বলা হয়েছে অন্যদিকে সত্য পথ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায় দেখে আমাদেরকে সত্য পথে চলতে বলা হয়েছে। উপরের হাদিসের মর্মার্থ যদি এটা হতো যে তাকদির বান্দার স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা দেয় তাহলে এই হাদিস নবীজি (সা) কখনো বলতেন না। তাই এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় তাকদির নিয়ে যা যা হাদিস আছে এবং যেভাবেই আছে একটি হাদিসও বান্দার স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা দেবার কথা বুঝাচ্ছে না। 

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৪৯৮৯,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যাচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়। আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোন ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৫৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় সত্য পুণ্যের পথ দেখায় এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (অবিরত) সত্য বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে খুব সত্যবাদী বলে লিখা হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (সর্বদা) মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ অবধি আল্লাহর নিকটে তাকে মহা মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়।-ihadis.com

তাকদির নিয়ে যতো কুরআনের আয়াত পাবেন অথবা হাদিস পাবেন কোথাও কিন্তু এটা বলা হয় নাই যে মানুষকে কিছুই করতে হবে না যেহেতু তাকদিরে সব লেখাই আছে। এখান থেকে এটা তো পরিস্কার যে তাকদির বান্দার স্বাধীনতায় বিন্দুমাত্র জবরদস্তি করে না। হাদিসে নিজের কাজের প্রতি যত্নবান হবার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তাকদির আল্লাহর জ্ঞান। জ্ঞান মানুষকে কিভাবে স্বাধীনতায় বাধা দিতে পারে?

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১২৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা প্রিয়তর ও ভালো। অবশ্য উভয়ের মাঝেই কল্যাণ রয়েছে। তোমার যাতে উপকার আছে তাতে তুমি যত্নবান হও। আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর, আর অক্ষম হয়ে বসে পড়ো না। কোন মসীবত এলে এ কথা বলো না যে, ‘(হায়) যদি আমি এরূপ করতাম, তাহলে এরূপ হতো। (বা যদি আমি এরূপ না করতাম, তাহলে এরূপ হতো না।)’। বরং বলো, ‘আল্লাহ তকদীরে লিখেছিলেন। তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন।’ (আর তিনি যা করেন, তা বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন যদিও তুমি তা বুঝতে না পার।) পক্ষান্তরে ‘যদি-যদি না’ (বলে আক্ষেপ) করায় শয়তানের কর্মদ্বার খুলে যায়।”-ihadis.com

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১২৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কাজ ক’রে যাও। যেহেতু যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য তা সহজ ক’রে দেওয়া হবে।-ihadis.com

আল্লাহ তাকদির লিখে রেখেছেন যা উনি চেয়েছেন তাই করেছেন। আল্লাহ বান্দার তাকদির লেখায় সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু নবীজি (সা) কি বলেছেন হাত-পা বেঁধে বসে থাকতে? না। বরং কাজ করে যেতে বলেছেন। নবীজি (সা) এর কথাই প্রমাণ তাকদির অর্থ বান্দার ইচ্ছায় বাধা প্রদান নয় বরং বান্দাকে কাজ করে যেতে হবে কারণ সব কিছু সহজ করে দেয়া হয়েছে। পাঠক এবার এই হাদিসটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন একটি লোক যুদ্ধে নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। আর এটা নবীজি (সা) আগেই বলে দিয়েছেন। নবীজি (সা) যে আগে বলে দিয়েছেন সেটা কিন্তু সেই লোক জানতো না অথচ তারপরেও নিজের ইচ্ছাতে আত্মহত্যা করেছেন। এই হাদিসটিও একটি বাস্তব উদাহরণ হতে পারে মানুষ ভালো কাজ করতে থাকে কিন্তু নিজের ইচ্ছাতেই এমন কাজ করে যার ফলাফল ভালো হয় না এবং নিজের কর্মের জন্য সে জাহান্নামে যাবে। আর এটাই আল্লাহ্‌ আগে জানতেন বিধায় তাকদিরে আগেই লিখে রেখেছেন।

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ৬৬০৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে থেকে যে সমস্ত মুসলিম যুদ্ধ করেছেন তাঁদের মাঝে একজন ছিল ভীষণ বেগে আক্রমণকারী। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামীকে দেখতে পছন্দ করে সে যেন এই লোকটার দিকে তাকায়। লোকদের ভিতর থেকে এক লোক সেই লোকটির অনুসরণ করল। আর সে তখন ভীষণভাবে মুশরিকদের সঙ্গে মুকাবিলা করছিল। সে যখম হয়ে তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করল। সে তার তরবারীর ধারালো দিকটি নিজের বুকের উপর চেপে ধরল। এমন কি দু’কাঁধের মাঝ দিয়ে তরবারী বক্ষ ভেদ করল। তখন লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে দৌড়ে এসে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি সত্যিই আপনি আল্লাহ্‌র রসূল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী হল? লোকটি বলল, আপনি অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছিলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামী লোক দেখতে পছন্দ করে সে যেন এ লোকটাকে দেখে নেয়।” অথচ লোকটি অন্যান্য মুসলিমের চেয়ে তীব্র আক্রমণকারী ছিল। তাই আমার ধারণা ছিল এ লোকটির মৃত্যু এমন অবস্থায় হবে না। যখন সে আঘাত পেল, তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করল এবং আত্মহত্যা করে দিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা শুনে বললেনঃ নিশ্চয় কোন বান্দা জাহান্নামীদের ‘আমল করেন, কিন্তু আসলে সে জান্নাতী। আর কোন বান্দা জান্নাতের অধিবাসীর ‘আমল করেন কিন্তু আসলে সে জাহান্নামী। নিশ্চয়ই ‘আমলের ভাল-মন্দ নির্ভর করে তার শেষ অবস্থার উপর।-ihadis.com

পাঠক, এখানে আরেকটি আশ্চর্যজনক কথা না বলে পারছি না। এই হাদিসটি শক্তিশালী প্রমাণ যে হযরত মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য নবী ছিলেন। যদি উনি সত্য নবী না হতেন তাহলে কেউ আগে আত্মহত্যা করে জাহান্নামে যাবে এটা বুঝলেন কিভাবে? আত্মহত্যা করা ইসলামে হারাম। খেয়াল করুন নবীজি (সা) যখন বললেন সেই লোক জাহান্নামে যাবে তখন এক লোক কিন্তু নবীজি (সা) এর কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য চেক করতে লাগলো যখন দেখলো আসলেই তো নবীজি (সা) যা বলেছেন তাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে তখন কিন্তু এসে সেই লোক নিজেই ঘোষণা দিল আপনি সত্যিই আল্লাহর রাসুল। এরপরেও কি ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামে ফিরে আসবে না? ইসলাম যে সম্পূর্ণ সত্য এর আরও প্রমাণ লাগবে?

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ৮৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার অবস্থান জান্নাতে কিংবা জাহান্নামে লিখে রাখেননি। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমরা কি আমাদের তাক্বদীরের লেখার উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দিব না? নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, (না, বরং) আমল করে যেতে থাক। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান তাকে আল্লাহ সৌভাগ্যের কাজ করার জন্য সহজ ব্যবস্থা করে দিবেন। আর সে ব্যক্তি দুর্ভাগা হবে যার জন্য দুর্ভাগ্যের কাজ সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কুরআনের এ আয়াতটি) পাঠ করলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (সময় ও অর্থ) ব্যয় করেছে, আল্লাহকে ভয় করেছে, হাক্ব কথাকে (দ্বীনকে) সমর্থন জানিয়েছে"- সূরাহ্ আল লায়ল ৫-৬ নং আয়াতের শেষ পর্যন্ত।-ihadis.com

তাকদির নিয়ে জানতে আরও পড়তে পারেন,

https://www.hadithbd.com/hadith/detail/?book=12&section=327

https://www.youtube.com/watch?v=OffPeM1gays&t=4s

তাকদির নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করা হয়েছে কেন?

ইসলাম বিদ্বেষীরা বলে তাকদির নিয়ে স্বয়ং ইসলামের নবী নাকি হতাশায় ছিলেন যার কারণে উনি তাকদির নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করেছেন।

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২১৩৩, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন একসময় আমাদের সামনে এসে দেখলেন যে, আমরা তাকদীর বিষয়ক তর্কে-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি। তিনি ভীষণ রাগান্বিত হলেন, এতে তাঁর মুখমন্ডল এমন লালবর্ণ ধারণ করল যেন তাঁর দুই গালে ডালিম নিংড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি এজন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছ, না আমি তোমাদের প্রতি এটা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি? এ বিষয়ে তোমাদের পূর্ববর্তী জনগণেরা যখনই বাক-বিতন্ডা করেছে তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে তোমাদেরকে বলছিঃ তোমরা এ বিষয়ে কখনো যেন বিতর্কে লিপ্ত না হও।-ihadis.com

হযরত মোহাম্মদ (সা) তাকদির নিয়ে হতাশায় ছিলেন দেখে তাকদির নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করেছেন এই ব্যাখ্যা নাস্তিকরা কোথা থেকে পেলো? নাকি নিজেরাই বানিয়েছে? পাঠক খেয়াল করলেন তো ইসলাম বিদ্বেষীরা নাস্তিকরা নিজেদের মিথ্যা ব্যাখ্যা গুলো কিভাবে হাদিসের সাথে মিশিয়ে দেবার পয়তারা করে? তাকদির নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিস গুলোর প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে তাকদীর নিয়ে বিনা দলীলে এবং জ্ঞানহীন অহেতুক এবং বিভ্রান্তিকর আলোচনা করা যাবে না। তাকদির বিষয় যে বোঝে না সে যদি তাকদির বিষয় বিতর্ক করে এতে কোনো লাভ হবে?

আল কুরআন, সুরা বনী ইসরাইল,১৭ঃ৩৬ আয়াতে বর্ণিত,

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। 

কারণ কুরআন হাদিসের দিকনির্দেশনা বাদ দিয়ে নিজের মতো তো আর কথা বললে হবে না। কিন্তু যারা ইসলামের দৃষ্টিতে তাকদিরের বিষয় গুলো বোঝে তারা এই বিষয় আলোচনা করতেই পারেন বরং আলোচনা করা উচিত। যেই হাদিসে নবীজি (সা) তাকদির নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করেছেন সেই হাদিসের প্রেক্ষাপটটি খেয়াল করুন সেই লোক গুলো তাকদির বিষয় ভুল তর্ক-বিতর্ক করছিল না হলে নবীজি (সা) রাগ করবেন কেন? অন্যান্য হাদিস গুলোতে কিন্তু তাকদির নিয়ে নবীজি (সা)কে প্রশ্ন করলে উনি রাগ করেন নাই বরং উত্তর দিয়েছেন কিন্তু এখানে বিতর্ক করতে দেখে উনি রাগ করেছেন এখানে নিশ্চিত যে সেই তর্ক-বিতর্ক গুলো ভুল ছিল দেখেই নবীজি (সা) রাগ করেছিলেন। উনাদের উচিত ছিল তাকদির নিয়ে তর্ক-বিতর্ক না করে বরং নবীজি (সা) কে জিজ্ঞাসা করা। জানার জন্য জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করা এমনকি প্রয়োজনে সুন্দরতম পন্থায় বিতর্ক করার নির্দেশও ইসলামে রয়েছে।

আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬ঃ৪৩ আয়াতে বর্ণিতঃ

অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।

আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬ঃ১২৫ আয়াতে বর্ণিতঃ

আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৩৬, হসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদা আমরা কোন এক সফরে বের হলে আমাদের মধ্যকার একজনের মাথা পাথরের আঘাতে ফেটে যায়। ঐ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে সে সাথীদের জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি আমার জন্য তায়াম্মুমের সুযোগ গ্রহণের অনুমতি পাও? তারা বলল, যেহেতু তুমি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম, তাই তোমাকে তায়াম্মুম করার সুযোগ দেয়া যায় না। অতএব সে গোসল করল। ফলে সে মৃত্যুবরণ করল। আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট আসলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হলো। তিনি বললেনঃ এরা অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন। তাদের যখন সমাধান জানা ছিল না, তারা কেন জিজ্ঞেস করে তা জেনে নিল না। কারণ অজ্ঞতার প্রতিষেধক হচ্ছে জিজ্ঞেস করা। ঐ লোকটির জন্য তায়াম্মুম করাই যথেষ্টে ছিল। আর যখমের স্থানে ব্যান্ডেজ করে তার উপর মাসাহ্ করে শরীরের অন্যান্য স্থান ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হত।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৩৭, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ থেকে বর্ণিতঃতিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগে এক ব্যক্তি আহত হয়। ঐ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে তাকে গোসল করার নির্দেশ দেয়া হয়। অতঃপর সে গোসল করলে তার মৃত্যু হয়। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন: এরা লোকটিকে হত্যা করেছে। আল্লাহ যেন এদের ধ্বংস করেন! অজ্ঞতার প্রতিষেধক জিজ্ঞেস করা নয় কি?-ihadis.com

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ৫৭৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএকদা আমরা কোন সফরে বের হলাম। আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির মাথায় পাথরের আঘাত লেগে ক্ষত হয়েছিল। এরপর তার স্বপ্নদোষও হল। সে সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার জন্য কি তায়াম্মুম বৈধ মনে কর?’ সকলে বলল, “তুমি পানি ব্যবহার করতে অক্ষম নও। অতএব তোমার জন্য আমরা তায়াম্মুম বৈধ মনে করি না।’ তা শুনে লোকটি গোসল করল এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সে মারা গেল। অতঃপর আমরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ফিরে এলাম তখন তাকে সেই লোকটার ঘটনা খুলে বললাম। তা শুনে তিনি বললেন, “ওরা ওকে মেরে ফেলল, আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুক। যদি ওরা জানত না, তবে জেনে কেন নেয়নি? অজ্ঞতার ওষুধ তো প্রশ্নই। তার জন্য তায়াম্মুম ও (পটি বেঁধে) মাসহ যথেষ্ট ছিল।”-ihadis.com

আপনি যদি কিছু না জানেন সেটা যাই হউক না কেন যারা জানে তাদের থেকে জেনে নেয়াটাই ইসলামের শিক্ষা। তাছাড়া না জেনে কোনো বিষয়ই বিতর্ক করা ঠিক না সেটা তাকদির বিষয় হোক অথবা যে কোনো বিষয়েই হোক না কেন। তাকদির আল্লাহর তা’লার ব্যাপার। উনার জ্ঞানের আলোকে মানুষের স্বাধীন কর্মের ভিত্তিতে উনি যা যা জানেন সবই লিখে রেখেছেন। কি লিখে রেখেছেন তা কাউকেই আল্লাহ্‌ জানান নাই। তাই এটা নিয়ে তর্ক করা সময় নষ্ট বরং নিজের আমলকে উত্তম করার চেষ্টা করাটাই উত্তম।

সহজ নসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ১১ খণ্ড, ৫০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,

তাকদীর হল আল্লাহ্‌তা’লার রহস্যভেদের একটি রহস্য। আল্লাহ্‌তা’লা এটা কোনো নবী বা কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিতিশতাকেও জানান নি। (ফাতহুল বারী) তাই এর মধ্যে চিন্তা-গবেষণা করা জায়েজ নাই।

ধরুন একজন যাদুকর দর্শকদের সামনে একটি খাতায় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু লিখে পানিতে ফেলে দিল এবং বলল সে যা লিখেছে তাই হবে এবং এটা কাউকেই যে জানাবে না। এখন দুইজন লোক অযথাই বিতর্ক করতে লাগলো যে যাদুকর আসলে কি লিখেছিল?কি থাকতে পারে? ভবিষ্যতে কি কি হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আচ্ছা বলুন তো এই বিতর্কের কোনো লাভ আছে? অথবা এই বিতর্ক থেকে কি সেই যাদুকরের খাতায় কি আছে সেটা বের করা সম্ভব হবে? না। তেমনি আল্লাহ্‌ কিয়ামত অবধি যা মানুষ করবে তা আল্লাহ্‌ আগেই লিখে রেখেছেন। আগামীকাল অথবা আগামী সপ্তাহ,মাস-বছরে কি কি হবে আর কি কি হবে না আপনি তা জানেন না। এখন এটা নিয়ে শুধু শুধুই কেউ বিতর্ক করলে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাকদীর বিষয় কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে যা আছে ততটুকুই জানা যাবে আর সেটুকুই আমাদের বুঝতে পারলেই যথেষ্ট হবে। এর বাইরে বিতর্ক করে কোনো ফায়দা হবে না।

আল্লাহ্‌ ভাল-মন্দ উভয় সৃষ্টি করেছেন তাহলে ভালো কাজের জন্য ক্রেডিট নিলে মন্দ কাজের জন্য দায়ভার নিবে না কেন?

আল্লাহ্‌ ভালো মন্দ উভয় সৃষ্টি করেছেন। কেননা মন্দের অস্তিত্বই যদি না থাকতো তাহলে ভালোর অস্তিত্বই আমরা জানতে পারতাম না। তবে আল্লাহ আমাদেরকে ভালো কাজ করতে আদেশ দিয়েছেন এবং মন্দ কাজ হতে বিরত থাকতে বলেছেন। আল্লাহ ভালো কাজ করতে বলেছেন তাই মানুষ ভালো কাজ করলে উনি অবশ্যই ক্রেডিট পাবেন আর মন্দ কাজ করতে বলেন নাই দেখে ক্রেডিট নিবেন না। বোঝা গেছে?

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ৭৯ আয়াতে বর্ণিত,

আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসাবে। আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট-সববি ষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ২৮ আয়াতে বর্ণিত,

তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ-দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না।

আল কুরআন, সুরা শুরা ৪২ঃ৩০ আয়াতে বর্ণিত,

তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।

কর্মের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী। আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেই বিনা কারণে মানুষদেরকে খারাপ বানিয়েছেন তাই আল্লাহর দোষ – এই ভ্রান্ত ধারনাটিই আল্লাহ্‌ নিজেই বাতিল করে দিয়েছেনঃ সুরা আনআম, ৬:১৪৮, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৮ খণ্ড, ২১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ তা’লা স্বীয়  নবী (সা) কে সম্বোধন করে বলেন হে নবী (সা) তুমি ঐ কাফির ও মুশরিকদের বলে দাও – তোমরা কি করে জানতে পারলে যে আল্লাহ তোমাদের কাযে সন্তুষ্ট? যদি তোমাদের এ দাবীর পিছনে কোন দলীল থাকে তাকে পেশ করো।তোমরা কখনও এটা প্রমান করতে পারবে না।তোমরা শুধু অনুমান ও মিথ্যা ধারনার পিছনে পড়ে রয়েছ। ধারনা দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজে বিশ্বাস।তোমরাশুধুমাত্র আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছ।

আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬ঃ৩৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১৩ খণ্ড, ১৬৯ ও ১৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

আল্লাহ তা’লা মুশরিকদের উল্টো বুঝের খবর দিচ্ছেন যে তারা পাপ করছে,শিরক করছে,হালালকে হারাম করছে, যেমন জানোয়ারগুলোকে তাদের দেবতার নামে যবেহ করা এবং তারা তাকদীরকে হুজ্জত বানিয়ে নিচ্ছে আর বলছে যদি আল্লাহ আমাদের বড়দের এই কাজ অপছন্দ করতেন তবে তখনই তিনি আমাদেরক শাস্তি দিতেন? মহান আল্লাহ তাদেরকে জবাব দিচ্ছেন এটা আমার বিধান নয়।আমি তোমাদের এই কাজকে কঠিন ভাবে অপছন্দ করি আর আমি যে এটা অপছন্দ করি তা আমি আমার সত্য নবীদের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকি।তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তোমাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।প্রত্যেক গ্রামে গঞ্জে এবং প্রত্যেক দলে ও গোত্রে আমি নবী পাথিয়েছি।সবাই তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।

সহজ উদাহরণ দিয়ে বলি, ধরুন আপনি একটি ইউনিভার্সিটি তৈরি করলেন। কি করলে পরিক্ষায় ভালো করা যাবে আর কি করলে খারাপ সব ছাত্রদের জানিয়ে দেয়া হলো। একদিন একজন ছাত্র অন্য ছাত্রের ব্যাগ থেকে মোবাইল ও হাজার খানেক টাকা চুরি করলো। প্রশ্ন হচ্ছে এই চুরির কারণে কি আপনাকে দায়ী করা যাবে যেহেতু আপনি ইউনিভার্সিটি তৈরি না করলে চুরি হতো না? উত্তর হচ্ছে না কারণ আপনি ইউনিভার্সিটি এই কারণে তৈরি করেন নাই যে মানুষ এখানে চুরি করবে আপনি জানেন এখানে মন্দ কাজ হতে পারে কিন্তু আপনি মন্দ কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন নাই। বরং মন্দকে প্রতিরোধ করার সিস্টেম আপনি একইসাথে তৈরি করে দিয়েছেন তেমনি আল্লাহ মানুষকে খারাপ কাজ করার জন্য তৈরি করেন নাই এমনকি দুনিয়াকে খারাপ কাজ করার জন্য আল্লাহ বানান নাই বরং আল্লাহর ইবাদত করার জন্য, ভালো কাজ করার জন্য আল্লাহ সব কিছু তৈরি করেছেন। আল্লাহ জানেন এগুলো তৈরি হলে, মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিলে মানুষ ভালো-মন্দ উভয় কাজ করবে তাই আল্লাহ মন্দ কাজকে রোধ করার জন্য মানুষকে গাইড লাইন দিয়ে রেখেছেন। ভালো কাজ করতে বলেছেন এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। মন্দ কাজ কিভাবে বন্ধ হবে সেই পদ্ধতিও বলেছেন। এখন কোনো মানুষ যদি নিজের ইচ্ছায় আল্লাহর দেয়া সিলেবাস অমান্য করে খারাপ কাজ করে তাহলে অবশ্যই এর জন্য সে নিজেই দায়ী, আল্লাহ বিন্দুমাত্র দায়ী নয়।

ফাতিমা (রা) জান্নাতে নারীদের সর্দার ও হাসান হুসাইন জান্নাতের যুবকদের সর্দারঃ

মূর্খ না হলে নাস্তিক হওয়া যায় না এই কথার বিশুদ্ধ প্রমাণ নাস্তিকদের করা এই অভিযোগটি। অভিযোগটি পড়ুন নিজেই হাসবেন। নাস্তিকরা বলে, 

ফাতিমা (রা) কে জান্নাতের নারীদের সর্দারনী ঘোষণা ও ইমাম হাসান হুসাইনকে জান্নাতের যুবকদের সর্দার ঘোষণা করা কি তাদের নিজ যোগ্যতাতে হয়েছিল নাকি তারা শুধুমাত্র মোহাম্মদ (সা) এর পরিবার বলে স্বজনপ্রীতির অংশ হিসেবে তারা এই পদ লাভ করেছিলেন? আমি বা আপনি যদি মোহাম্মদ (সা) এর নাতী হয়ে জন্ম নিতাম তাহলে আমরাও জান্নাতের সর্দার হতে পারতাম,আমি মোহাম্মদ এর নাতী হয়ে জন্ম নেই নি সেটা তো আমার দোষ নয়।আল্লাহর ইচ্ছাতেই তো সব হয়েছে।

হযরত ফাতেমা (রা)কে জান্নাতের সর্দারনী বানাবেন। -ihadis.com,রিয়াদুস সলেহীন,হাদিসঃ৬৯২,সহিহ হাদিস। >>> হযরত হাসান হুসাইন (রা) জান্নাতে যুবকদের নেতা হবে – ihadis.com,সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ১১৮,সহিহ হাদিস।

জানোয়ারদের থেকে বিবর্তিত ব্রেন নিয়ে চলা নাস্তিক প্রাণীগুলো মানুষের কথা বুঝার যোগ্যতা আর কতটুকুই বা রাখবে বলুন? ইসলাম নিয়ে নাস্তিকরা যদি মিথ্যাচার করাতেই বিজি থাকে তাহলে ইসলামের সঠিক বুঝ কিভাবে বুঝবে নাস্তিক প্রাণীগুলো? নবীজির (সা) এর পরিবারের লোক হওয়ার কারণেই শুধুমাত্র উনারা এমন মর্যাদার ঘোষণা পেয়েছেন এটা ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস। নাস্তিকান্ধ কি আর আমি এমনিতেই বলি নাস্তিকদের? যদি ফাতেমা (রা) এবং হাসান হুসাইন (রা) ইমান না আনতেন এবং এই অবস্থাতেই মৃত্যু বরণ করতেন তাহলে উনারা কখনোই জান্নাতে যেতেই পারতেন না,জান্নাতের সর্দার ঘোষণা তো পরের কথা। পরিবারে লোক হলেই যদি জান্নাতে যাবার কথা থাকতো তাহলে নবীজির নিজের আপন চাচার মৃত্যুর সময়ে তাকে ইমান আনার দাওয়াত নবীজি (সা) কখনোই দিতেন না। নিচে দেয়া হাদিস গুলো মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন যেখান থেকে সরাসরি প্রমাণ হচ্ছে যে শুধু নবীজির পরিবারের সদস্য বলেই যে ক্ষমা পেয়ে যাবে ইসলামে এর ভিত্তি নেই। পাঠক নাস্তিকরা ইসলামের কতটুকু বোঝে বুঝতে পারছেন?

তাছাড়া যুক্তির খাতিরে আপনি বা আমি যদি নবীর পরিবারের লোক হতাম এবং অনেক ভালো কাজ করতাম তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে মর্যাদা দিতেন কথা সত্য কিন্তু সেই জান্নাত লাভের মর্যাদা কি এখন বন্ধ হয়ে গেছে? অবশ্যই না। নাস্তিকরা এখনই যদি নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করে সত্য ধর্ম ইসলামকে গ্রহণ করে নেয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত ভালো কাজ করতে পারে তাহলে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন। কিন্তু যেই নাস্তিকরা এখনই ইমান আনছে না সেই নাস্তিকরা নবীর যুগে থাকলে ইমান আনতো সেটার গ্যারান্টি কি? বরং যারা হযরত মোহাম্মদ (সা)কে না দেখেই এতো ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করার পয়তারা করে এই নাস্তিক গুলো তখন থাকলে আরও বেশি বেশি নির্লজ্জ জালিয়াতি করতো এটা নিয়ে সংশয় আছে? আবু জাহেলদের দলে যোগ দিয়ে নাস্তিকরা মুক্তচিন্তার নামে হযরত মোহাম্মদ (সা) কে যে খুন করতে চাইতো না সেটার গ্যারান্টি কি? ইসলামের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিমদেরকে যে হত্যা করতে চাইতো না সেটার নিশ্চয়তা কি? নাস্তিকরা যুক্তি বোঝে না কেন? হাদিস গুলো পড়ুন।

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৩৫২৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আব্দে মানাফের বংশধরগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে আল্লাহ্‌র শাস্তি হতে বাঁচাও। হে ‘আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হিফাজত কর। হে যুবায়রের মা- আল্লাহ্‌র রাসূলের ফুফু, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কন্যা ফাতিমা! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে রক্ষা কর। তোমাদেরকে আজাব হতে বাঁচানোর সামান্যতম ক্ষমতাও আমার নাই আর আমার ধন - সম্পদ হতে তোমরা যা ইচ্ছা তা চেয়ে নিতে পার।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ৪৮,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃযখন এই আয়াত নাযিল হলোঃ “তোমার নিকটতম আত্মীয়দের সতর্ক করো”(২৬ : ২১৪), তখন নবী (সাঃ) দাঁড়ালেন এবং ডেকে বলেনঃ হে বনু কাব ইবনে লুয়াই! নিজেদেরকে আগুন (দোযখ) থেকে রক্ষা করো। হে বনু আবদে মানাফ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে হাশেম বংশীয়গণ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে মুহাম্মদ কন্যা ফাতেমা! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। অন্যথায় তোমাকে আল্লাহর বিচার থেকে রক্ষা করার সামর্থ্য আমার নাই। কেবল আমার সাথে তোমাদের রক্তের বন্ধন, তা আমি সজীব রাখবো (বুখারী, মুনাসাঈ, তিরমিযী, দারেমী, হিব্বান)।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহীন,হাদিসঃ৬৫৬,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ যে মাখযূমী মহিলাটি চুরি করেছিল তার ব্যাপারটি কুরায়েশদেরকে চিন্তান্বিত করে তুলেছিল। সুতরাং তারা বলল, ‘এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় উসামাহ বিন যায়দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আর কে সাহস করতে পারবে?’ ফলে উসামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ডবিধির ব্যাপারে তুমি সুপারিশ করছ?’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি প্রদান করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা চুরি করত, তাহলে আমি তারও হাত কেটে দিতাম।’’-ihadis.com

নাস্তিকরা এই হাদিস গুলো পড়ে নি? এই হাদিস গুলো জীবনে চোখে দেখে নি? যদি নাস্তিকরা এই হাদিস গুলো পড়ে থাকে তাহলে ইচ্ছা করে অভিযোগ করার সময় হাদিস গুলোকে ধামাচাপা দিয়েই অভিযোগ গুলো করেছে, তাই নয় কি? নাস্তিকরা ইসলামের কিছু বোঝে? নাকি ইসলাম নিয়ে অভিযোগ করাটা নাস্তিকদের পেশা? নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে সঠিকভাবে কেন লেখাপড়া করে না? না বুঝে, না পড়ে ভ্রান্ত অভিযোগ করতে থাকাকে কি মুক্তচিন্তার আন্দোলন বলে?

ধর্ষণের ঘটনাও তো তাহলে সৃষ্টির বহু আগেই নির্ধারণ করা ছিলঃ

নাস্তিকরা এই বিষয় যখন অভিযোগ করে তখন এভাবে বলে অভিযোগটি করে থাকে,

ধরুন আসিফ মহিউদ্দিন নামের এক লোক সিদ্ধার্থ নামের তিন বছরের বাচ্চা শিশুকে ধর্ষণের পরে হত্যা করেছে।লোকটি নিজ ইচ্ছাতে এই কাজটি করেছে? এই কাজটির সম্পূর্ণ দ্বায় এই লোকটির? নাকি তিনি যে কাজটি করবেন তা সৃষ্টির বহু আগেই নির্ধারিত ছিল! আল্লাহ তাকে দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নিয়ে তাকে জাহান্নামে প্রেরণের ব্যবস্থা করেছেন যেহেতু আল্লাহ তাকে জাহান্নামে পোড়াবার উদ্দেশ্যই সৃষ্টি করেছেন? যেমন আয়াতে আছে,

সুরা তাকভীর ৮১:২৯ = আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না,যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর ইচ্ছা করেন। >>> সুরা ইউনুস ১০:৯৯,১০০ = আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতে সমবেতভাবে তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য? আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর।

কুরআনের সহজ আয়াত গুলো না বুঝে যারা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে এরা পশু থেকে বিবর্তিত হবে না তো কারা হবে? উপরের সার্বিক আলোচনা বুঝে থাকলে এটা বুঝা সহজ ব্যাপার যে, যেই মুক্তমনা লোক ধর্ষণ করেছে সে নিজ ইচ্ছাতেই করেছে আর এটা আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করার আগেই জানতেন এবং এই জানার কারণেই যে মুক্তমনা আসিফ ধর্ষণ করেছে তা নয় বরং মুক্তমনা আসিফ লুচ্চা, মিথ্যাবাদী ও ধর্ষক দেখেই, আল্লাহ এটা জেনে সৃষ্টির আগে লিখে রেখেছেন এবং এরকম মুক্তমনা নাস্তিকদের নির্লজ্জ অপরাধের জন্য জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেয়াটাই যৌক্তিক ন্যায়বিচার হবে। আল্লাহ লিখে রেখেছেন বলে মুক্তমনা আসিফ ধর্ষণ করেছে এটা ভুল কথা। আল্লাহ কি কখনো কাউকে বলেছেন ধর্ষণ করতে? অবশ্যই না। তাহলে নিজস্ব মুক্তচিন্তা থেকে ধর্ষক আসিফ যে কর্মটি করেছে তার জন্য তার মুক্তচিন্তা দায়ী, আল্লাহ নয়। কুরানের যেই আয়াত পেশ করা হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছা না করলে মানুষ ইচ্ছা করতে পারে না এই আয়াতের অর্থ এটা নয় যে আল্লাহ ইচ্ছায় মানুষ খারাপ কাজের ইচ্ছা করে বরং এই আয়াতের সঠিক মর্মার্থ হচ্ছে মানুষকে আল্লাহ মন্দ ও ভাল কাজ করার ইচ্ছা প্রদান করেছেন আর এই “প্রদান করাটাই” আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে। এখন মানুষ যদি আল্লাহর দেয়া ইচ্ছা শক্তিকে ভুল প্রয়োগ করে কাউকে ধর্ষণ করে সেটার জন্য সেই ধর্ষক-লুচ্চা মুক্তমনা আসিফই দায়ী। বুঝা গেছে? আসলে এসব মিথ্যুক নাস্তিকান্ধরা কুরআনের আয়াতই সঠিকভাবে বোঝে না। নাস্তিকরা কেন চিন্তা করা ভুলে যাচ্ছে? নাস্তিকরা কি ধিরে ধিরে গাধায় বিবর্তন হয়ে যাচ্ছে? নাস্তিকরা এখনো মানুষ হয় নি? 

পরের আয়াতে মর্মার্থ সহজেই বুঝা যায় যে, ইমান আনার জন্য মানুষকে জবরদস্তি করা যাবে না। আল্লাহ চাইলে সব মানুষ ইমান আনতো, এখানে আল্লাহর ক্ষমতা বুঝানোর হয়েছে। কিন্তু যেহেতু আল্লাহ সবাইকে স্বাধীনতা দিয়েছেন সেহেতু আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে “যার ইমান আনুক আর যার ইচ্ছা নাস্তিকান্ধ হউক”। শেষের কথা খেয়াল করুন পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর। এরমানে মানুষ যেনো নিজের স্বাধীন ইচ্ছার প্রয়োগ করে ভালো বুদ্ধি প্রয়োগ করে সত্য জীবন বিধান ইসলামকে স্বীকার করে নেয়। আল্লাহ যদি জবরদস্তি ইচ্ছা করে মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করাতেন তাহলে আল্লাহ কুরআনে মানুষকে বুদ্ধি প্রয়োগ করতে বলতেন না। নাস্তিকরা কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করা এখনো থামাবে না?

মানুষ যা কিছু করে তা আল্লাহর ইচ্ছায় করে অর্থাৎ মানুষ খারাপ কাজ করলে সেটা আল্লাহই করান সুতরাং সব অপরাধ আল্লাহর - এটি ইসলামের দৃষ্টিতে ভুল ব্যাখ্যা যা নাস্তিকরা করে থাকে। সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। মনোযোগ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন। "ধরুন আপনি খাটে শুয়ে আছেন, এখন শোয়া থেকে উঠে বাহিরে যাবেন, এরজন্য আপনাকে কি করতে হবে? আগে শোয়া থেকে উঠতে হবে, ওঠার জন্য আপনি ইচ্ছা করবেন ব্রেনে সিগন্যাল যাবে তারপর তখন অটোমেটিক সিস্টেমে আপনার বডিকে কন্ট্রোল করে উঠে যাবেন। তারপর হাঁটার জন্য ইচ্ছা করবেন ব্রেনে সিগন্যাল যাবে তারপর অটোমেটিক সিস্টেমে এক'পা দু'পা করে আগে বাড়াবেন আর হাঁটবেন" --- এই যে দুটো কাজ করলেন এই কাজের 'সিস্টেম' সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। কিন্তু আল্লাহ তা'য়ালা এই অটোমেশিনের কন্ট্রোল দিয়েছে আপনার আয়ত্ত্বে। অর্থাৎ মূল সিস্টেম সৃষ্টি আল্লাহর তবে তার ব্যাবহারিক ক্ষমতা আপনার হাতে। আপনি চাইলে আপনার অটোমেশিনকে ব্যাবহার করে দৌঁড়ে গিয়ে বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিতে পারেন। অথবা হেঁটে গিয়ে কোনো মানবিক কাজও করে আসতে পারেন। অথবা ধর্ষক আসিফের মতো মুক্তচিন্তা করে কাউকে ধর্ষণের মতো বর্জিত অপরাধ করতে পারেন। মানবদেহের যেকোন কর্মের জন্য সম্পূর্ণ প্রয়োগ ক্ষমতা মানুষের ইচ্ছায় পরিচালিত হয়ে থাকে। মানুষকে যেই স্বাধীন ইচ্ছা আল্লাহ দিয়েছেন সেটা আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষ পেয়েছে তাই আল্লাহ ইচ্ছা না করলে মানুষও স্বাধীন ইচ্ছা পেতো না। কিন্তু মানুষ সেই স্বাধীন ইচ্ছা কিভাবে পরিচালনা করবে এই গাইড লাইন আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন অর্থাৎ কোনো খারাপ কাজ করা যাবে না। এখন মানুষ যদি নিজের ইচ্ছাকে খারাপ দিকে পরিচালনা করে তাহলে এর জন্য মানুষ দায়ী হবে। আল্লাহ দায়ী নয়।

সূরা দাহার ৭৬ঃ৩০ আয়াতে ও  সুরা তাকভীর ৮১ঃ২৯ আয়াতে যেখানে বলে হয়েছে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাইরে কিছুই ইচ্ছা করতে পারো না। এসব আয়াত বুঝার জন্য আরও কিছু উদাহরণ পেশ করছি। কথা সত্য যে আল্লাহর ইচ্ছা না হলে আমরা ইচ্ছা করতে পারতাম না। আল্লাহর ইচ্ছা আছে বলেই আমরা নিজেদের স্বাধীনতায় চলতে ফিরতে পারছি। তবে এর অর্থ এই নয় যে আল্লাহর ইচ্ছা মানুষ খারাপ কাজ করুক অথবা আল্লাহ ইচ্ছা করে মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করাচ্ছেন। কারণ ইচ্ছা বলতেই আমরা শুধু কামনা, বাসনা বুঝাই না। ইচ্ছার আরেকটা অর্থ হলো- অবকাশ। যেমন- চেয়ারম্যান সাহেব একদমই ক্রিকেট খেলা পছন্দ করেন না। কিন্তু তারই বাড়ির মাঠে প্রতিদিন এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলে। এখানে আমি বলতে পারি যে, চেয়ারম্যান সাহেবের ইচ্ছা আছে বলেই তারা তার বাড়ির মাঠে খেলতে পারে। তিনি যদি না চাইতেন তাহলে তাদের পক্ষে সেই মাঠে খেলা সম্ভব হত না। এখানে কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেবের ইচ্ছা মানে পছন্দ, কামনা, বাসনা নয় (কারণ তিনি খেলা পছন্দই করেন না) বরং অবকাশ বা ছাড় দেয়া বা স্বাধীনতা দেয়া। অর্থাৎ চেয়ারম্যান সাহেব স্বাধীনতা দিয়েছেন দেখেই সকলে খেলতে পারছে। তেমনি আল্লাহর ইচ্ছা না করলে আমরাও ইচ্ছা করতে পারতাম না ব্যাপারটি তাই। অথবা কোনো শিক্ষক পছন্দ করেন না যে কোনো ছাত্র পরিক্ষায় খারাপ করুক কিন্তু এরপরেও শিক্ষক তার সামনেই ছাত্রকে ভুল লিখতে থেকে থামায় না বরং খাতায় লেখার পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ম এখানে বলা যায় যে শিক্ষক ইচ্ছা না করলে ছাত্র ভুল লিখতে পারতো না কিন্তু এর মানে এটা নয় যে শিক্ষক ইচ্ছা করে ছাত্রকে ফেইল করাচ্ছেন। তেমনি আল্লাহ ইচ্ছা না করলে মানুষ ইচ্ছা করতে পারতো না কথাটি সঠিক কারণ আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে আল্লাহ জবরদস্তি করে মানুষকে দিয়ে অন্যায়-অপকর্ম করাচ্ছেন। অর্থাৎ শিক্ষকের ইচ্ছায় যেমন ছাত্র ভালো-মন্দ লিখার স্বাধীনতা পায় তেমনি আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দা ভালো-মন্দ উভয় কর্ম করার স্বাধীনতা পায়। তাই আল্লাহ ইচ্ছা না করলে মানুষ ইচ্ছা করতে পারে না কথাটি ঠিক তবে আল্লাহ যেহেতু গাইড লাইন দিয়ে রেখেছেন সেহেতু আল্লাহ ইচ্ছা থেকে প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে অন্যায়কাজে প্রয়োগ করলে তার দ্বায়ভার মানুষের। আল্লাহর নয়।  

ইসলামিক চিন্তাবিদরা কি বলেন?


তাকদির বিষয় চমৎকার যৌক্তিক কথা বলেছেন মুফতি ইয়াসির নাদিম আল ওয়াজেদী (হাঃফি)। উনি নাস্তিকদের সাথে মুনাজারায় খুবই মাহের। উনার চ্যানেলটি এই বিষয় আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। তাকদির কি? প্রশ্নের জবাবে উনি বলেছেন,(ক) 


তাকদির এটা আল্লাহর জ্ঞানের একটি অংশ। যা আগে হয়েছে, সামনে যা হবে, যা হয় নাই সমস্ত কিছুই আল্লাহ জানেন। মানুষ যা করছে ভালো কাজ অথবা  খারাপ সব কিছুই আল্লাহর জ্ঞানে প্রথম থেকেই রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে মানুষ কিছুই করতে পারবে না। তাহলে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা কোথায়? এর জবাবে আমি বলবো, আপনি আমার কথা শুনছেন সরাসরি,আর এটা রেকর্ড করা ভিডিও নয় বরং সরাসরি আমরা একে ওপরের সাথে লাইভে কথা বলছি। সবাই আমাদেরকে দেখছে এবং শুনছে। আপনি আমার বর্তমান সম্পর্কে অবগত এবং আমিও আপনার বর্তমান সম্পর্কে অবগত আছি। আমার বর্তমান যেই সময়ে আমি খাবার খাচ্ছি না, আমি নামাজ আদায় করছি না, আমি কোথাও দৌড় দিচ্ছি না বরং আমি আপনার সাথে কথা বলছি। আপনি যে আমার সম্পর্কে এতকিছু নিশ্চিত দেখে জানলেন এটা আমাকে জবরদস্তি করে নাই, আমার স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা প্রদান করে নাই। আমি কিন্তু আপনার সাথে আমার স্বাধীন ইচ্ছাতেই কথা বলছি। আমরা মানুষরা যেহেতু সময়ের মধ্যে আছি সেহেতু আমরা অতীতকালকে স্মরণ করতে পারি কিন্তু অতীতকালে যেতে পারি না আর ভবিষ্যৎকাল যেহেতু এখনো আসে নাই সেহেতু আমরা ভবিষ্যৎকালেও ভ্রমণ করতে পারছি না। তো আমাদের সামনে যে সময় আছে সেটা আমাদের বর্তমান, না অতীতকাল আর না ভবিষ্যৎকাল। স্রষ্টা যিনি সর্বশক্তিমান, যিনি সব কিছু জানেন, যিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। যিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনি সময়েরও সৃষ্টিকর্তা। সময়ও স্রষ্টার একটি সৃষ্টি। অতীতকাল, বর্তমানকাল ভবিষ্যৎকাল এসব সময় স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন সেহেতু উনি সব অবস্থার সময় যা যা হবে সব কিছুই জানেন, জানবেন এটাই স্বাভাবিক। আপনি যেমন আমার বর্তমান অবস্থা দেখে নিশ্চিত সব কিছু দেখলেন, জানলেন এই জানাটা আমার স্বাধীন ইচ্ছায় যেমন বাধা প্রদান করে না, জবরদস্তি করে না, আমি সব কিছুই আমার নিজের ইচ্ছাতেই করতে পারছি তেমনি স্রষ্টা যিনি সময়ের স্রষ্টা তিনিও সব কিছুই নিশ্চিত ভাবে জানেন আর স্রষ্টার এই নিশ্চিত জানাটা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা প্রদান করে না, করে না জবরদস্তি। মানুষ সব কিছুই নিজের ইচ্ছাতে করতে পারে। এই সহজ উদাহরণ না বোঝার কিছু দেখি না আমি। এই একটি উদাহরণ তাকদির বিষয় সহজে বুঝে যাবার কথা।


পাকিস্তানের বিখ্যাত হযরত মুফতি তাকী উসমানী (হাঃফি) এর খলিফা হযরত মুফতি দেলোয়ার হোসেন (হাঃফি) বর্ণনা করেছেন, (হুজুরের ফ্যান পেইজ থেকে সংগ্রহ করেছি)


দুইটি বিষয় রয়েছে যা আল্লাহ্পাক প্রয়োগ করেন তন্মধ্যে একটা হচ্ছে ক্ষমতা ও আরেকটি হচ্ছে নীতি। ক্ষমতা হলো তিনি চাইলে যে কারো উপর প্রয়োগ করে তার অবস্থার পরিবর্তন করে দিতে পারেন তাৎক্ষণিকভাবে। কঠিন ও কট্টর ইসলাম বিদ্বেষীকেও ক্ষমতা প্রয়োগ করে হেদায়েত দিয়ে দিতে পারেন। সে হয়ে যেতে পারে আল্লাহওয়ালা; এটি একটি বিষয়। আরেকটি হলো আল্লাহপাকের নীতি। সেটি হলো মানুষকে ভালো-মন্দ দু’টি পথেই সুযোগ দেয়া। কেউ চেষ্টা-মেহনত করলে তাকে হেদায়েত দিবেন, হেদায়েতের পথে কায়েম রাখবেন। আবার কেউ যদি সেই গাইডলাইন অনুযায়ী না চলে মনচাহিভাবে খাহেশের পেছনে ছুটে চলেন সেটিতেও তিনি বাধা দিবেন না। বান্দার যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে রেখেছেন এবং এটাই পরীক্ষা। যে এই পরীক্ষায় পাশ করবে তার মর্যাদা ও পুরুষ্কার সেই মানের ও শান অনুযায়ী প্রাপ্ত হবে। এছাড়াও আল্লাহপাক ক্ষমতা সবসময় এবং সবার উপর তা প্রয়োগ করেন না। কখনো কখনো তিনি উদাহরণ সৃষ্টি করতে গিয়ে এটি করে থাকেন। সুতরাং আপনি যদি এই আশায় থাকেন যে, কোন প্রকার চেষ্টা-মুজাহাদা ছাড়াই আল্লাহপাক আপনাকে হেদায়েত দিয়ে আল্লাহর ওলী বানিয়ে নিবে তাহলে এটা ঠিক নয় কেননা আল্লাহপাক কার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে বদলে দিবেন তা কেবল তিনিই জানেন। কিন্তু তাঁর নীতি ও উসূল হচ্ছে যে-ই চেষ্টা করবে আল্লাহর পথে চলার জন্য, আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্য আল্লাহপাক তাকেই সে অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করবেন। তাহলে আমরা কী আল্লাহপাকের নীতি ও উসূলের পথেই চলবো নাকি ক্ষমতা প্রয়োগের আশায় চেয়ে থাকবো এবং মনচাহি জিন্দেগী যাপন করবো? কোনটা বুদ্ধিমানের কাজ? আর দেরী না করে আমাদের উচিত এখন থেকেই আল্লাহর পথে চলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা মেহনত করা। কারণ আল্লাহপাক সবার উপর তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না কিন্তু তাঁর নীতি ও উসূল সর্বদা জারী থাকে। আল্লাহপাক আমাদেরকে সহি বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন।

     

হযরত মুফতি আবদুল ওয়াহিদ কুরায়েশি (হাঃফি)কে এক লোক প্রশ্ন করেছে,আল্লাহ যদি কারো ভাগ্যে হেদায়েত না লিখে আর সেই মানুষ যদি পথভ্রষ্ট থাকে তাহলে সেই বান্দার দোষ কি?উত্তরে উনি বলেন(খ),


আপনি শুধু (প্রশ্নকারীকে) কুরআনের সেই আয়াত পড়েছেন সেই আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দেন আর যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেয় না, আপনি আসলে কুরআনের আয়াতই বোঝেন নাই। আমি আপনাকে একটু বুঝিয়ে দেই। আল্লাহ কুরআনে শুধুমাত্র এই আয়াতই বলেন নাই যে যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন আর যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন না। আয়াত আরও রয়েছে। অন্য একটি আয়াতে এটা বলা হয়েছে আল্লাহ দুটো রাস্তাই দেখিয়েছেন, পথভ্রষ্টওয়ালা রাস্তা এবং হেদায়েতওয়ালা রাস্তাও, সত্য রাস্তা যেমন দেখিয়েছেন তেমনি কোনটি শয়তানের রাস্তা সেটাও পরিস্কার করে দিয়েছেন। এরপরে খেয়াল রাখবেন, আপনার সিদ্ধান্ত শক্তির প্রতি, আপনি কোনটি বেঁছে নিবেন সেই ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। আমি আমার মর্জিতে যদি হেদায়েত নিয়ে নেই তাহলে জান্নাতে যাবো আর যদি আমার মর্জিতে আমি হেদায়েত না নেই তাহলে আমি জাহান্নামে যাবো। যে নিবে তাকে আল্লাহ নেয়ার তৌফিক দিয়ে দিবেন। যে লোক মূর্তির সামনে সিজদা করে তাকে এই সিজদা দেবার তৌফিক কে দিয়েছে? আল্লাহই তো দিয়েছেন। কিন্তু এই বেইমান লোকটি আল্লাহকে সেজদা না দিয়ে মূর্তিকে সেজদা দিয়ে ফেলেছে। আসলে বেইমান লোকটি আল্লাহর দেয়া তৌফিককে খারাপ কাজে প্রয়োগ করেছে। দুই ছেলে একটি পিতার। দুইজনকেই পিতা ৫০ টাকা করে দিয়েছেন। একজন মায়ের জন্য ভালো জিনিস কিনে মায়ের সেবা করতে চাচ্ছে তো আরেকজন সেই টাকা দিয়ে ছুরি কিনে মাকে হত্যা করার জন্য পয়তারা করছে। পয়শা তো দুইজনকে পিতাই দিয়েছেন। প্রয়োগ করার মাধ্যম একজন ভালো করে আরেকজন খারাপ। তেমনি আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দিয়েছেন, সেই তৌফিককে আপনি ভালো কাজে প্রয়োগ করেছেন নাকি খারাপ কাজে এটা আপনার মর্জি। আপনি সিলেকশন ঠিক করলে আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দিবে আর সিলেকশন ভুল করলে জাহান্নাম দিবে। আপনি ইচ্ছা করলে আমার বয়ান না শুনে মন্দিরেও যেতে পারতেন, আমার কথা শোনার জন্য আপনাদেরকে কেউ এখানে জবরদস্তি করে বসিয়ে রাখে নাই। আপনারা মন্দিরে যাবেন না কেন? আল্লাহর খওফ আছে, এই কারণে জান্নাত মিলে যাবে আপনাদের। অর্থাৎ আপনার কাছে সিলেকশনের শক্তি আছে।


(ক) Yasir Nadeem al Wajidi: (Taqdeer kia Hey? Agar Sab Khuda Ki Marzi Sey Hey Tu Insan Majbur Hua?):https://www.youtube.com/watch?v=1exHItGEJEM


(খ) Mufti Abdul Wahid Qureshi: (Taqdeer Ky Masaly Per Aik Chor Ki Molvi Sahb Sy Guftugu):https://www.youtube.com/watch?v=SpX7qVPiQ_s

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দেন,যাকে ইচ্ছা দেন না তাহলে আল্লাহই আমাকে নাস্তিক বানিয়েছে এতে আমার কি দোষ?

ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করা নাস্তিকরা যখন তাকদির বিষয় ভুল ধরতে পারে না তখন শেষ মুহূর্তে এই কথাটি বলে যে আল্লাহই আমাকে নাস্তিক বানিয়েছে তাই আমার কি দোষ? এরপরে প্রেক্ষাপট গোপন রেখে এই আয়াত গুলো পেশ করে বলে এই যে প্রমাণ,

কুরআনে আছেঃ আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন আর যাকে ইচ্ছা আজাব দেন, যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন না। – এই ধরণের আরও আয়াত আছে যেমন সুরা বাকারা ২:৯০,১০৫,২১৩/সুরা আল ইমরান ৩:১২৯/সুরা মায়দা ৫:১৮,৪০,৫৪/সুরা আনআম ৬:৮৮/ সুরা ইউনুস ১০:২৫,১০৭/সুরা ইউসুফ ১২:৫৬,৭৬,১১০/সুরা রাদ ১৩:১৩,২৭/সুরা ইব্রাহীম ১৪:৪,১১/সুরা নাহল ১৬:২,৯৩/সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৩০/সুরা হাজ ২২:১৬,১৮/সুরা নুর ২৪:২১,৩৫,৩৮,৪৩,৪৬/সুরা কাসাস ২৮:৫৬/সুরা আনকাবুত ২৯:২১/সুরা রুম ৩০:৫/সুরা ফাতির ৩৫:৮,১২/সুরা শুরা ৪২:৮,১৯,৫২/সুরা ফাতহ ৪৮:১৪,২৫/সুরা নাজম ৫৩:২৬/সুরা হাদীদ ৫৭:২১,২৯/সুরা জুমুয়া ৬২:৪/সুরা দাহর ৭৬:৩১/সুরা কাহফ ১৮:১৭/ সুরা আরাফ ৭:১৭৮/সুরা হুদ ১১:৩৪/সুরা আনআম ৬:৩৯,৮৮,১০৭,১১২,১২৫/ সুরা তওবা ৯:২৭।-আরও কিছু হাদিসে আছে যেমনঃ ihadis.com,মিশকাতুল মাসাবিহ,হাদিসঃ২,৯৬৩,সহিহ হাদিস।

এই আয়াত গুলো কুরআনে যেই দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন আল্লাহ সেই দৃষ্টিভঙ্গি নাস্তিকরা ধরতেই পারেনি। না বুঝে, না চিন্তা করে, না অনুধাবন করেই পট করে একটা অভিযোগ করে দেবে, এগুলো নাকি আবার চিন্তার মুক্তির আন্দোলন। পাঠক হয়তো আমার উপরের আলোচনা থেকেই আপনারা নিজেরাই বুঝে গেছেন উক্ত আয়াত গুলোর ভাবার্থ গুলো, এরপরেও আমি বিস্তারিত প্রমাণ সহ আপনাদেরকে দেখাচ্ছি ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত অর্থেই উক্ত আয়াত গুলোর মর্মার্থ কি। তো চলুন দেখি আসলেই উক্ত আয়াত গুলোতে আল্লাহ কি বুঝিয়েছেন আর নাস্তিকপ্রাণী গুলো আসলে কি বুঝিয়েছে? পাঠক খেয়াল করুন এসব আয়াতে কিন্তু এই কথা বলা হয়নি যে মানুষকে স্বাধীনতা দেয়া হয়নি অথবা মানুষকে কারণ ছাড়াই আল্লাহ্‌ হেদায়েত দিবেন না। কুরআনে এটাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে আল্লাহ কাকে হেদায়েত দিবেন আর কাকে হেদায়েত দিবেন না অথচ এরূপ আয়াত গুলোকে নাস্তিকরা ধামাচাপা দিয়ে অভিযোগ করে বলতেছে আমাকে আল্লাহ নাস্তিক বানাইসে। এই বিষয় কুরআনের বাকি আয়াত গুলো সামনে রেখে দিলেই আয়াতের প্রকৃত মর্মার্থ বুঝতে সুবিধা হবে যেই আয়াত গুলো নাস্তিকরা দেখাতে চাচ্ছে না। তাহলে যে কারণে আল্লাহ্‌ মানুষকে হেদায়েত দিবে আর যে কারণে দিবে না এই সব কারণ গুলো বুঝতে পারলেই নাস্তিকদের অভিযোগ যে মিথ্যায়ভরা সেটি প্রমাণিত হয়ে যাবে। তাহলে সেসব কারণ গুলো কি কি? নিচে প্রমাণ পেশ করেছি। সব গুলো পড়ে উপলব্ধি করুন। কুরআনের আয়াত গুলো পড়ার পূর্বে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দেন আর যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দেন না- আয়াতের দৃষ্টিভঙ্গিগত মর্মার্থ বুঝার জন্য আমি বিভিন্ন ধরণের উদাহরণ পেশ করছি। উদাহরণ গুলো খেয়াল করুন।

ধরুন একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল ক্লাসে বলছে তোমরা যারা আমার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছ তাদেরকে স্বাগতম।কিন্তু যারা ভর্তি হয়নি তাদের জন্য নয়।আর আমি যাকে ইচ্ছা ভর্তি করি আর যাকে ইচ্ছা ভর্তি করি না। পাঠক উনার এই কথা কি ভুল হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না। কারণ উনি বুঝিয়েছেন যারা যোগ্যবান তাদেরকে উনি ভর্তি করাবেন আর যারা যোগ্যবান না তাদেরকে ভর্তি করাবেন না। তদ্রূপ আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দিবেন আর যাকে ইচ্ছা দিবেন না এই কথার মর্মার্থ হচ্ছে,যে মানুষ হেদায়েত নিতে চাইবে আল্লাহ্‌ তাকে হেদায়েত দিবে আর যে নিতে চাইবে না আল্লাহ্‌ তাকে হেদায়েত দিবেন না। কল্পনা করুন আপনি একজন বাড়িওয়ালা।এখন একজন লোক এসে আপনার কাছে বাসা চাচ্ছে তাও খারাপ আচরণ করে।আপনি তাকে বললেন যে, ভাই আমার বাড়ি আমি যাকে ইচ্ছা রুম দিব যাকে ইচ্ছা দিব না আপনি এরকম খারাপ আচরণ করছেন কেন? পাঠক লক্ষ্য করুন, এই যে বাড়িওয়ালা বলল যাকে ইচ্ছা রুম দিবে আর যাকে ইচ্ছা দিবে না, এটা বলা কি ভুল? উত্তর হচ্ছে না। কারণ বাড়িওয়ালা খারাপ বেয়াদব মানুষদেরকে রুম দিবেন না এটাই হচ্ছে উনি যাকে ইচ্ছা তাকে বাড়ি দিবে আর যাকে ইচ্ছা দিবে না কথার মর্মার্থ। তেমনি আল্লাহ্‌ হেদায়েত নামক পবিত্র জিনিস খারাপ অপরাধী মানুষকে দিবেন না যতক্ষননা সে নিজে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে না আসে। এটাই হচ্ছে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দিবেন আর যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দিবেন না কথার অর্থ।

ধরুন আপনি একটি অফিসের বস। এখন বেতন নেয়ার সময় এক কর্মচারী আপনার সাথে খারাপ আচরণ করলো।আপনি তাকে চাকরি থেকে বের করে দিলেন আর বললেন আমার যাকে ইচ্ছা অফিসে রাখবো, যাকে ইচ্ছা রাখবো না। এই যে আপনি তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়ার সময় বললেন যাকে ইচ্ছা অফিসে রাখবো যাকে ইচ্ছা রাখবো না এই কথার অর্থ কি এটা যে সে যোগ্য থাকার পরেও তাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন? অবশ্যই না। কারণ আপনি তাকে ঠিকই প্রথমে তার যোগ্যতার জন্য অফিসে চাকরি দিয়েছিলেন কিন্তু সে নিজের খারাপ আচরণের জন্য চাকরি হারালো। তেমনি আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দেন যাকে ইচ্ছা দেন না এর অর্থ কেউ যদি বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে হেদায়েত চায় আল্লাহ তাকে হেদায়েত দিবেন আর কেউ যদি ইচ্ছা করে নাস্তিক হয়ে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করতেই থাকে তাহলে সে হেদায়েতের আলো হারাবে। অফিসে চাকরি পেতে হলে যেমন আপনার মধ্যে যোগ্যতা থাকতে হবে তেমনি হেদায়েত পেতে হলে আল্লাহর প্রতি আপনার বিনয় ও ভালোবাসা থাকতে হবে। অথচ আপনি মনে মনে রাখবেন ইসলামবিদ্বেষ আর বলবেন সব আল্লাহর দোষ আল্লাহর, আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দেয় না তাহলে কি এটা বোকামি পূর্ণ কথা হয়ে গেলো না? আবার ধরুন পরিক্ষার খাতায় ছাত্ররা কিন্তু স্বাধীনভাবেই লিখে আর ছাত্রের লিখার উপর ভিত্তি করে ফলাফল দেন শিক্ষক। আর শিক্ষক কিন্তু যাকে ইচ্ছা তাকেই পাশ ফেইল করার অধিকার রাখেন। তাই একজন আদর্শবান ছাত্রের যা প্রয়োজন তা হচ্ছে শিক্ষকের সাথে ভদ্র আচরণ করা, এমন আচরণ করা যে শিক্ষক ছাত্রের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে পারে। এখন কোনো ছাত্র যদি বলে শিক্ষকের সাথে ভদ্র আচরণ করা আমার কাছে মুক্তচিন্তা বিরোধী, আমি কেন শিক্ষকের সাথে ভালো আচরণ করতে যাবো? আমি মুক্তচিন্তার আন্দোলনের কর্মী, আমার খাতায় আমি যা ইচ্ছা তাই লিখবো, আমার দেহ, আমার হাত এখানে শিক্ষক বলার কে? পাঠক লক্ষ্য করুন এই ছাত্রই যখন পরিক্ষায় ফেইল মারবে একইসাথে এর নোংরা চিন্তার কারণে শিক্ষক যখন একে অপমান করে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে তখন এই ছাত্র যদি বলে শিক্ষক বলেছে সে যাকে ইচ্ছা তাকে পাশ করাবে যাকে ইচ্ছা তাকে ফেল করাবে সুতরাং শিক্ষক আমাকে পরিক্ষার খাতায় ফেইল করিয়ে দিয়ে আমাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে তাই সব দোষ শিক্ষকের। 

পাঠক আপনারাই বলুন তো এই মুক্তমনা ছাত্রের কথা কি সঠিক? অবশ্যই না। কারণ শিক্ষক ফেইল করিয়ে দিয়েছে কথা সত্য, শিক্ষক ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে তাও সত্য কিন্তু শিক্ষক এই কাজ গুলো বিনা কারণে করেছেন? উত্তর হচ্ছে না। ছাত্র মুক্তমনার নামে অসভ্যতা করেছে,ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে খাতায় ভুল উত্তর লিখেছে তাই শিক্ষক তার নোংরা কর্মের ভিত্তিরে উক্ত আচরণ করেছেন। উদাহরণ বুঝে থাকলে তেমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দেন, যাকে ইচ্ছা দেন না এই কথা বুঝে থাকলে একজন আদর্শবান বান্দার কি প্রয়োজন? অবশ্যই সে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, বিনয়ী থাকবে, আল্লাহ কুরআনে যা বলেছেন সেই অনুযায়ী চলার চেষ্টা করবে। তাই না? অবশ্যই। কিন্তু এগুলো না করে যখন কোনো বান্দা আল্লাহ নিয়ে, রাসুল (সা)কে নিয়ে, ইসলাম নিয়ে মুক্তচিন্তার নামে ইসলাম নিয়ে গালাগালি করে, মিথ্যাচার করতেই থাকে, অপরাধ-অন্যায় কাজ করতেই থাকে তখন আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দিবেন না। এরা যদি চেষ্টা করতো, ইসলাম গ্রহণ করতো তাহলে আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দিয়ে দিতেন অথচ এরা নিজেদের যোগ্যতা নিজেরাই নষ্ট করেছে। খেয়াল করলে দেখবেন, এসব নির্লজ্জ নাস্তিকরাই আবার প্রশ্ন করে আল্লাহ কেন বান্দাকে মহর মেরে দেন?

আল কুরআন, সুরা সফ ৬১ঃ৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর তারা যখন বক্রতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরকে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১৬৭ ও ১৬৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যারা কুফরী অবলম্বন করেছে, এবং আল্লাহর পথে বাধার সৃষ্টি করেছে, তারা বিভ্রান্তিতে সুদূরে পতিত হয়েছে। যারা কুফরী অবলম্বন করেছে এবং সত্য চাপা দিয়ে রেখেছে, আল্লাহ কখনও তাদের ক্ষমা করবেন না এবং সরল পথ দেখাবেন না।

আল কুরআন, সুরা রাদ ১৩ঃ১১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।

আল কুরআন, সুরা আনকাবুত ২৯ঃ৬৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।”

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ১৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অবশ্যই আমি আল্লাহ্‌ তোমাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি যখন তারা যুলুম করেছে। আর তাদের নিকট তাদের রাসুলগণ প্রমানাদিসহ আগমন করেছিল,কিন্তু তারা ইমান আনার ছিল না। এভাবে আমি অপরাধী কওমকে শাস্তি প্রদান করি।

আল কুরআন, সুরা রাদ ১৩ঃ২৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যারা কুফুরি করেছে তারা বলে তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন কেন নাযিল হয় না? বল, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যে তাঁর অভুমুখী হয় তাকে তিনি তাঁর দিকে পথ দেখান।

আল কুরআন, সুরা কাসাস ২৮ঃ৫০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ৫২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর বলা হবে, গোনাহগারদিগকে, ভোগ করতে থাক অনন্ত আযাব-তোমরা যা কিছু করতে তার তাই প্রতিফল।

আল কুরআন, সুরা শুরা ৪২ঃ৩০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন নিজ কর্মের দোষেই আসে।

আল কুরআন, সুরা রুম ৩০ঃ৪১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

জলে ও স্থলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের নিজেরই কর্মের দোষে।

আল কুরআন, সুরা বনী ইসরাইল ১৭ঃ১৩ ও ১৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার ঘাড়ে করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।

আল কুরআন, সুরা আনফাল ৮ঃ৫৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নেয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয়  নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ৯৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন।

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ৮০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফারমানদেরকে পথ দেখান না।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১১৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ১০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত  আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের জন্য।

আল কুরআন, সুরা নাজম ৫৩ঃ৩৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

মানুষ তাই পায়, যা সে করে।

আল কুরআন, সুরা শামস ৯১ঃ৯ ও ১০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ৪৪ / সুরা তওবা ৯ঃ৭০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ জুলুম করেন না মানুষের উপর, বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর জুলুম করে।

আল কুরআন, সুরা কাহফ ১৮ঃ২৯ আয়তে বর্ণিত হয়েছে,

সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। 

আল কুরআন, সুরা বনী ইসরাইল ১৭ঃ১৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ১৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

মুশরিকরা যোগ্যতা রাখে না আল্লাহর মসজিদ আবাদ করার, যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরীর স্বীকৃতি দিচ্ছে। এদের আমল বরবাদ হবে এবং এরা আগুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে।

আল কুরআন, সুরা ফাতাহ ৪৮ঃ১৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস করে না, আমি সেসব কাফেরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ৯৯ ও ১০০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতো সমবেতভাবে। তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য? আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ৩১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করেছে। এমনকি, যখন কিয়ামত তাদের কাছে অকস্মাৎ এসে যাবে, তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এর ব্যাপারে আমরা কতই না ক্রটি করেছি। তার নিজের বোঝা নিজের পৃষ্ঠে বহন করবে। শুনে রাখ, তারা যে বোঝা বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ৪৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে তাদের নাফরমানীর কারণে আযাব স্পর্শ করবে।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ৬১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অনন্তর তাঁরই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমাদেরকে বলে দিবেন, যা কিছু তোমরা করছিলে।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ৭০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তাদেরকে পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। কোরআন দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দিন, যাতে কেউ স্বীয় কর্মে এমন ভাবে গ্রেফতার না হয়ে যায় যে, আল্লাহ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী নেই এবং যদি তারা জগতের বিনিময়ও প্রদান কবে, তবু তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। একাই স্বীয় কর্মে জড়িত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে-কুফরের কারণে।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ৯৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলেঃ আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোন ওহী আসেনি এবং যে দাবী করে যে, আমিও নাযিল করে দেখাচ্ছি যেমন আল্লাহ নাযিল করেছেন। যদি আপনি দেখেন যখন জালেমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকে এবং ফেরেশতারা স্বীয় হস্ত প্রসারিত করে বলে, বের কর স্বীয় আত্মা! অদ্য তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি প্রদান করা হবে। কারণ, তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তাঁর আয়াত সমূহ থেকে অহংকার করতে।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১০৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১২০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গোনাহ করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১২৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যারা অপরাধ করছে, তারা অতিসত্বর আল্লাহর কাছে পৌছে লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি পাবে, তাদের চক্রান্তের কারণে।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১২৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

এমনিভাবে আমি পাপীদেরকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে দেব তাদের কাজকর্মের কারণে।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছেকেননা, তারা আমার আয়াত সমূহ অস্বীকার করতো।

আল কুরআন সুরা আনআম ৬ঃ১৩০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করেনি? যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবেঃ আমরা স্বীয় গোনাহ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১৩২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

প্রত্যেকের জন্যে তাদের কর্মের আনুপাতিক মর্যাদা আছে এবং আপনার প্রতিপালক তাদের কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১৪০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ কোন প্রমাণ ছাড়াই হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব দিয়েছিলেন, সেগুলোকে আল্লাহর প্রতি ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে হারাম করে নিয়েছে। নিশ্চিতই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১৪৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে

নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১৬০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।

আল কুরআন, সুরা আল ইমরান ৩ঃ১১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

ফেরআউনের সম্প্রদায় এবং তাদের পূর্ববর্তীদের ধারা অনুযায়ীই তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন আর আল্লাহর আযাব অতি কঠিন।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১৫৫ ও ১৫৬ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতএব, তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল তাদেরই অঙ্গীকার ভঙ্গর জন্য এবং অন্যায়ভাবে রসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং তাদের এই উক্তির দরুন যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন। অবশ্য তা নয়, বরং কুফরীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছেন। ফলে এরা ঈমান আনে না কিন্তু অতি অল্পসংখ্যক। আর তাদের কুফরী এবং মরিয়মের প্রতি মহা অপবাদ আরোপ করার কারণে।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১৭৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ সওয়াব দান করবেন, বরং স্বীয় অনুগ্রহে আরো বেশী দেবেন। পক্ষান্তরে যারা লজ্জাবোধ করেছে এবং অহঙ্কার করেছে তিনি তাদেরকে দেবেন বেদনাদায়ক আযাব। আল্লাহকে ছাড়া তারা কোন সাহায্যকারী ও সমর্থক পাবে না।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ১৬২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অনন্তর জালেমরা এতে অন্য শব্দ বদলে দিল তার পরিবর্তে, যা তাদেরকে বলা হয়েছিল। সুতরাং আমি তাদের উপর আযাব পাঠিয়েছি আসমান থেকে তাদের অপকর্মের কারণে।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ১৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর তার চেয়ে বড় জালেম, কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করেছে কিংবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে অভিহিত করছে? কস্মিনকালেও পাপীদের কোন কল্যাণ হয় না।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ২৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর যারা সঞ্চয় করেছে অকল্যাণ অসৎ কর্মের বদলায় সে পরিমাণ অপমান তাদের চেহারাকে আবৃত করে ফেলবে। কেউ নেই তাদেরকে বাঁচাতে পারে আল্লাহর হাত থেকে। তাদের মুখমন্ডল যেন ঢেকে দেয়া হয়েছে আধাঁর রাতের টুকরো দিয়ে। এরা হল দোযখবাসী। এরা এতেই থাকবে অনন্তকাল।

আল কুরআন, সুরা মরিয়ম ১৯ঃ৫৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে।

আল কুরআন, সুরা সাবা ৩৪ঃ৩৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করা হলেই তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলতে শুরু করেছে, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, আমরা তা মানি না।

আল কুরআন, সুরা যুমার ৩৯ঃ২৪ ও ২৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন তার মুখ দ্বারা অশুভ আযাব ঠেকাবে এবং এরূপ জালেমদেরকে বলা হবে, তোমরা যা করতে তার স্বাদ আস্বাদন কর,-সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়? তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছিল, ফলে তাদের কাছে আযাব এমনভাবে আসল, যা তারা কল্পনাও করত না।

আল কুরআন, সুরা যুমার ৩৯ঃ৩২,৩৩ ও ৩৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলে এবং তার কাছে সত্য আগমন করার পর তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তার চেয়ে অধিক যালেম আর কে হবে? কাফেরদের বাসস্থান জাহান্নামে নয় কি? যারা সত্য নিয়ে আগমন করছে এবং সত্যকে সত্য মেনে নিয়েছে; তারাই তো খোদাভীরু। তাদের জন্যে পালনকর্তার কাছে তাই রয়েছে, যা তারা চাইবে। এটা সৎকর্মীদের পুরস্কার।

আল কুরআন, সুরা শুরা ৪২ঃ২২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আপনি কাফেরদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে ভীতসন্ত্রস্ত দেখবেন। তাদের কর্মের শাস্তি অবশ্যই তাদের উপর পতিত হবে। আর যারা মুমিন ও সৎকর্মী, তারা জান্নাতের উদ্যানে থাকবে। তারা যা চাইবে, তাই তাদের জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। এটাই বড় পুরস্কার।

আল কুরআন, সুরা মাআরিজ ৭০ঃ১১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অপরাধী চাইবে যদি সে সেদিনের শাস্তি থেকে তার সন্তান সন্ততিকে পণ হিসেবে দিয়ে মুক্তি পেতে।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ১৭৫,১৭৬ ও ১৭৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে। তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ১২৫ ও ১২৬ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

বস্তুতঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এটি তাদের কলুষের সাথে আরো কলুষ বৃদ্ধি করেছে এবং তারা কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করলো। তারা কি লক্ষ্য করে না, প্রতি বছর তারা দু'একবার বিপর্যস্ত হচ্ছে,অথচ, তারা এরপরও তওবা করে না কিংবা উপদেশ গ্রহণ করে না।

আল কুরআন, সুরা ইব্রাহীম ১৪ঃ২৭ ও ২৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন। তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ৪৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর যেদিন তাদেরকে সমবেত করা হবে, যেন তারা অবস্থান করেনি, তবে দিনের একদন্ড একজন অপরজনকে চিনবে। নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে এবং সরলপথে আসেনি।

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ৭১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা'আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ১১২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে।

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ১১৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর আল্লাহ কোন জাতিকে হেদায়েত করার পর পথভ্রষ্ট করেন না যতক্ষণ না তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বলে দেন সেসব বিষয় যা থেকে তাদের বেঁচে থাকা দরকার। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব বিষয়ে ওয়াকেফহাল।

আল কুরআন, সুরা হুদ ১১ঃ১১৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর ধৈর্য্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ পূণ্যবানদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।

আল কুরআন, সুরা দাহর ৭৬ঃ২২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি লাভ করেছে।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১১০,১১১ ও ১১২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। যে কেউ পাপ করে, সে নিজের পক্ষেই করে। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। যে ব্যক্তি ভূল কিংবা গোনাহ করে, অতঃপর কোন নিরপরাধের উপর অপবাদ আরোপ করে সে নিজের মাথায় বহন করে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য গোনাহ।

আল কুরআন, সুরা মায়েদা ৫ঃ৭৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত তা অবশ্যই মন্দ ছিল।

আল কুরআন, সুরা আনয়াম ৬ঃ১৩২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

প্রত্যেকের জন্যে তাদের কর্মের আনুপাতিক মর্যাদা আছে এবং আপনার প্রতিপালক তাদের কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন।

আল কুরআন, সুরা হুদ ১১ঃ৯০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে মার্জনা চাও এবং তাঁরই পানে ফিরে এসো নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগার খুবই মেহেরবান অতিস্নেহময়।

আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬ঃ৮৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।

আল কুরআন, সুরা ইব্রাহীম ১৪ঃ৪২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে।

আল কুরআন, সুরা ইউনুস ১০ঃ১১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যাদের মনে আমার সাক্ষাতের আশা নেই, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টুমিতে ব্যতিব্যস্ত ছেড়ে দিয়ে রাখি।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ৯২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তাদেরকে ছেড়ে দেন,তারা তাদের অযাচিত সমালোচনায় খেলতে থাকুক।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ১৮৬ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন।

আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬ঃ৬১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১১০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব।

আল কুরআন, সুরা আনআম ৬ঃ১১৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতএব, আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যাপবাদকে মুক্ত ছেড়ে দিন যাতে কারুকার্যখচিত বাক্যের প্রতি তাদের মন আকৃষ্ট হয় যারা পরকালে বিশ্বাস করে না এবং তারা একেও পছন্দ করে নেয় এবং যাতে ঐসব কাজ করে, যা তারা করছে।

আল কুরআন, সুরা আনআম, ৬ঃ১৩৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আপনি বলে দিনঃ হে আমার সম্প্রদায়,তোমরা স্বস্থানে কাজ করে যাও,আমিও কাজ করি। অচিরেই জানতে পারবে যে,পরিণাম গৃহ কে লাভ করে। নিশ্চয় জালেমরা সুফলপ্রাপ্ত হবে না।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ১৪ ও ১৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

সে (শয়তান) বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হল।

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ৮২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতএব,তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশী কাঁদবে

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ১০৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তারপর তিনি জানিয়ে দেবেন তোমাদেরকে যা করতে।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ১৬৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর আমি তাদেরকে বিভক্ত করে দিয়েছি দেশময় বিভিন্ন শ্রেনীতে, তাদের মধ্যে কিছু রয়েছে ভাল আর কিছু রয়েছে অন্য রকম! তাছাড়া আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দের মাধ্যমে যাতে তারা ফিরে আসে।

আল কুরআন, সুরা যিলযাল ৯৯ঃ৭ ও ৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।

আল কুরআন, সুরা ক্কাফ ৫০ঃ১৭ ও ১৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।

আল কুরআন, সুরা ইনফিতার ৮২ঃ১০,১১,১২,১৩,১৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর। সৎকর্মশীলগণ থাকবে জান্নাতে। এবং দুষ্কর্মীরা থাকবে জাহান্নামে

তাফসীরে জালালাইনের, ৬ খণ্ড, ৫১০ পৃষ্ঠায়, সুরা সফ ৬১ঃ৫ আয়াতের ব্যাখ্যার বর্ণনা পড়লে উপরে দেয়া আয়াত গুলোর প্রকৃত মর্মার্থ স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। সেখানে বর্ণিত হয়েছে,

যেসব লোক নিজেরা বাঁকা পথে চলতে চায় তাদেরকে জবরদস্তি সহজ সরল পরিচালিত করা আল্লাহ্‌তা’লার নিয়ম নয়। যারা নিজেরা আল্লাহর নাফরমানি করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হবে তাদেরকে জোর করে হেদায়েত দানে বাধ্য করবেন-এটাও আল্লাহ্‌তা’লার নীতি নয়।এটা হতে স্বতস্পষ্ট হতে উঠে যে, কোনো ব্যাক্তির বা কোনো জাতির গোমরাহীর সূচনা আল্লাহর দিক হতে হয় না। সেই ব্যাক্তি বা জাতিই সর্বপ্রথম এ পথে পা বাড়ায়। অবশ্য আল্লাহর বিধান এই যে,যে লোক গোমরাহী পছন্দ করে তিনি তাদের জন্য হিদায়েতের পথে চলার নয়,গোমরাহীর পথে চলার উপায়-উপকরণই সংগ্রহ করেছেন। কেননা ব্যাক্তির গোমরা হওয়ার স্বাধীনতাটুকু যেন সে পুরোপুরি  ভোগ করতে পারে, তাই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহতো মানুষকে বাছাই ও গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা দান করেছেন। অতপর আল্লাহর আনুগত্য গ্রহন করা হবে কিনা এবং হেদায়েতের পথে চলা হবে কি বাঁকা-গোমরাহীর পথে সে বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা ব্যাক্তি ও ব্যাক্তি সমষ্টির নিজেদের দায়িত্ব। এ বাছাই ও গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে কোনো বিশেষ জবরদস্তি নেই। কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য ও হেদায়েতের পথে চলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ,তাহলে আল্লাহ্‌তাকে জোরপূর্বক গোমরাহী ও নাফরমানির দিকে ঠেলে দিবেন না। পক্ষান্তরে কেউ যদি নাফরমানি করার এবং হেদায়েতের পথ পরিহার করে চলারই সিদ্ধান্ত নেয়,তাহলে আল্লাহ্‌তা’লা তাকে আল্লাহর আনুগত্য ও হেদায়েতের পথে চলতে বাধ্য করবেন-এ নীতি আল্লাহর নয়। এতদসত্ত্বেও এ কোথায় কোনো সন্দেহ নেই যে,যে লোক নিজের জন্য যে পথই গ্রহন করুক না কেন কার্যত সেই পথে এক পাও অগ্রসর হতে পারে না,যতক্ষণ না আল্লাহ্‌তা’লা সেই পথে চলার জন্য জরুরি সামগ্রী করে দিবেন।

তাফসীরে জালালাইন,৩ খণ্ড,৫৬৬ পৃষ্ঠায়, সুরা বনী ইসরাইল ১৭ঃ১৪ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,

মানুষ যে কোনো জাগায় যে কোনো অবস্থায় থাকুক, তার আমলনামা তার সাথে থাকে এবং তার আমল লিপিবদ্ধ হতে থাকে। মৃত্যুর পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিয়ামতের দিন এ আমলনামা প্রত্যেকের হাতে হাতে দিয়ে দেওয়া হবে, যাতে নিজে পড়ে নিজেই মনে মনে ফয়সালা করে নিতে পারে যে সে পুরস্কারের যোগ্য, না আজাবের যোগ্য। হযরত কাতাদাহ থেকে বর্ণিত আছে সেদিন লেখাপড়া না জানা ব্যাক্তিও আমলনামা পড়ে ফেলবে।এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইস্পাহানী হযরত আবু উমামার একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন।তাতে রাসুল (সা) বলেন,কিয়ামতের দিন কোনো কোনো লোকের আমলনামা যখন তাদের হাতে দেওয়া হবে, তখন তারা নিজেদের কিছু কিছু সৎকর্ম তাতে অনুপস্থিত দেখে আরজ করবে, পরওয়ারদিগর! এতে আমার অমুক অমুক সৎকর্ম লেখা হয়নি। আল্লাহ্‌তা’লার পক্ষ থেকে উত্তর হবে। আমি সেসব সৎকর্ম নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি কারন তোমরা অন্যদের গিবত করতে। - তাফসীরে মাযহারী

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ২৬৬৯,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আমর ইবনুল আহওয়াস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিদায় হজ্জের দিন বলতে শুনেছিঃ সাবধান! অপরাধী তার অপরাধের দ্বারা নিজেকেই দায়বদ্ধ করে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়বদ্ধ করা যাবে না।-ihadis.com

মিশকাতুল মাসাবিহ,হাদিসঃ২৬৭০,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

.... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সাবধান! কোন অপরাধকারী যেন তার জীবনের ওপর যুলুম না করে। সাবধান! কোন অপরাধী যেন নিজের সন্তানের ওপর যুলুম না করে। কোন সন্তান যেন তার পিতার ওপর যুলুম না করে।-ihadis.com

সহিহ হাদিসে কুদসি,হাদিসঃ১,২,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ“আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। আর যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”।-ihadis.com

রিয়াদুস সালেহিন,হাদিসঃ১২ / সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব,হাদিসঃ১৭,১৮,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান প্রভু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পুণ্যসমূহ ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোনো নেকী করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত করতে পারে না, আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা তার জন্য কেবল নিয়ত করার বিনিময়ে একটি পূর্ণ নেকী লিখে দেন।আর সে যদি সংকল্প করার পর কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুণ, বরং তার চেয়েও অনেক গুণ নেকী লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকী হিসাবে লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর ঐ পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন।-ihadis.com

সহিহ ফাজায়েলে আমল,হাদিসঃ ২৬, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএকদা কিছু সংখ্যক মুশরিক লোক যারা মুশরিক অবস্থায় ব্যাপকহারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং যেনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছে তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো : আপনি যা বলেন এবং যে দিকে আহ্বান করেন তা খুবই উত্তম। তবে আমাদেরকে বলুন, অতীত জীবনে আমরা যে সমস্ত মন্দ কাজ করেছি তা মুছে যাবে কিনা? (তাহলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করবো)। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : “যে সমস্ত লোক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ্ মানেনা, আল্লাহর হারাম করা কোন প্রাণকে অকারণে হত্যা করে না এবং যেনা করে না। যারা ঐসব কাজে লিপ্ত হবে তারা নিজেদের পাপের প্রতিফল পাবে”- (সূরাহ্ আল-ফুরক্বান : ৬৮)। আরো অবতীর্ণ হলো : “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছো, তারা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, তিনি তো ক্ষমাশীল”- (সূরাহ্ আয-যুমার : ৫৩)-ihadis.com

সহিহ বুখারি,হাদিসঃ২৫২৮,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে।-ihadis.com

তো পাঠক,উপরের সমস্ত প্রমাণ সামনে রেখে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে স্পষ্ট ,কুরআনে যেখানে বলা হচ্ছে আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন,আল্লাহ্‌ যদি চাইতো সবাই ইমান আনতো,আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কেউ ইচ্ছা করতে পারে না,আল্লাহ্‌ না চাইলে বিপদ আসে না,আল্লাহ্‌ তৌফিক না দিলে তওবার সুযোগ হয় না ইত্যাদি এই ধরণের যতো আয়াত রয়েছে সমস্ত আয়াতের প্রকৃত ভাবার্থ,মূল উদ্দেশ্য,মর্মার্থ হচ্ছে মানুষ নিজ স্বাধীনতায় যেই দিকে যাবে আল্লাহ্‌ও সেই দিকে তাকে ঘুরিয়ে দিবেন।মানুষ নিজ ইচ্ছায় হেদায়েত নিতে চাইলে আল্লাহ হেদায়েত দিবেন আর মানুষ হেদায়েত না নিতে চাইলে আল্লাহও দিবেন না। মানুষ নিজে হেদায়েত গ্রহণ করতে না চাইলে সে অটোম্যাটিক পথভ্রষ্ট হতে থাকবে এমনকি শয়তানও তাকে পথভ্রষ্ট করার পয়তারা করবে তাই এই যে মানুষ নিজে হেদায়েত নিতে না চাইলে পথভ্রষ্টের দিকে ধাবিত হবে, এই ধাবিত হওয়ার সিস্টেম যেহেতু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সেহেতু বলা যে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এর অর্থ এটা নয় যে আল্লাহ জবরদস্তি করছেন। যেমন পরিক্ষায় সঠিক না লিখলে শিক্ষক ছাত্রকে ফেইল করিয়ে দেবেন এর অর্থ এটা নয় যে শিক্ষক জবরদস্তি করে ছাত্রকে ফেইল করিয়ে দেবেন। কোনো নাস্তিক যদি নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে আল্লাহও এই নাস্তিককে সাথে সাথেই হেদায়েত দিয়ে দিবেন। যদি হেদায়েত গ্রহণ না করে তাহলে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এই সহজ বিষয়টি না বুঝার কি আছে? ধরুন রাস্তায় লিখে দেয়া আছে “গাড়ি ধিরে চালান সামনে বিপদজনক বাক” এখন আপনি যদি মুক্তমনে স্পীডে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে বলেন সব দোষ সরকারের কারণ সরকার এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে না দিলে আমি গাড়ি চালাতে পারতাম না এই কথা যৌক্তিক? অবশ্যই না। কাউকে রাস্তায় গাড়ি চালাতে দেয়া খারাপ নয়, খারাপ নয় রাস্তায় গাড়ি চালানোর গাইড লাইন দিয়ে দেয়া কিন্তু খারাপ হচ্ছে মুক্তমনা চর্চা করতে গিয়ে নিজেকে বিপদে ফেলে দেয়া। এর জন্য গাড়ি চালক দায়ী, রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া সরকারের নয়। তেমনি আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন একইসাথে দিয়েছেন গাইড লাইন এই দুটো দেয়া মোটেও খারাপ নয় , খারাপ হচ্ছে স্বাধীনতাকে খারাপ কাজে ব্যাবহার করা এবং এই অপব্যাবহার করার জন্য দায়ী সেই যে খারাপ কাজ করবে।

অতএব মানুষ যে অন্যায়-অবিচার করছে এগুলো আল্লাহর থেকে প্রাপ্ত নিজেদের স্বাধীনতা আছে বলেই করছে। আল্লাহ যদি না চাইতেন তাহলে এগুলোও তারা করতে পারতো না এর অর্থ এটা নয় যে আল্লাহ তাদেরকে দিয়ে জবরদস্তি অন্যায় করাচ্ছেন। কারণ আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন,দিয়েছেন অবকাশ। দেখিয়েছেন ভালো-মন্দ দুটি পথ। এখন অপরাধী বান্দা যদি সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে বিপদগ্রস্ত হয়ে বলে- 'আমার কোনো দোষ নেই,আল্লাহ আমাকে স্বাধীনতা, অবকাশ দিয়েছেন বলেই আমি অপরাধ করতে পেরেছি।' এটা ভুল কথা হবে যেমনিভাবে কোনো ছাত্র পরিক্ষায় ফেইল করে বলে আমার কি দোষ? যদি আমার পরিক্ষা নেয়া না হতো,আমাকে শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশ করতে না দিতেন তাহলে আমি কি ফেইল করতে পারতাম? শিক্ষক আমার পরিক্ষা নিয়েছেন বলেই আমি ফেইল করতে পেরেছি সুতরাং সব দোষ শিক্ষকের, আমি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা। উদাহরণের এই ফেলটুস ছাত্রের কথা যেমন ভুল তেমনি কোনো ইসলামবিদ্বেষী ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিকটা না বুঝে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করার জন্য সব দোষ আল্লাহর দিকে চাপানোটাও ভুল। অপরাধীরা সবাই নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নেবে কারণ এরা জেনে যাবে এরা মিথ্যাচার করতো। কিন্তু সেই মুহূর্তে আফসস করে লাভ হবে না। নিচের আয়াত গুলো অনুভব করার চেষ্টা করুন।

আল কুরআন, সুরা মূলক, ৬৭ঃ৮,৯,১০,১১,১২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি? তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা'আলা কোন কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ। তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম নাঅতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামীরা দূর হোক। নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।

অপরাধীরা এই বলে আফসস করবে কেন দুনিয়ার জীবনে বুদ্ধি প্রয়োগ করলাম না। কুরআনের দৃষ্টিতে এটা পরিস্কার যে মানুষ নিজ সিদ্ধান্তের জন্য পুরোপুরি স্বাধীন আর আল্লাহ মানুষকে কখনো জবরদস্তি করবেন না। তাকদিরে যাই বলা থাকুক, যেভাবেই বলা থাকুক না কেন এমনকি মানুষ তাকদির বিষয় যাই বুঝুক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে একইসাথে তাকদির সেই স্বাধীনতায় বাধা প্রদান করবে না। এটাই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। আরও বুঝার চেষ্টা করুন মনোযোগ দিয়ে। মানুষ অন্যায় কাজ করলে, এ কথা বলা যাবে না যে, এই ক্ষেত্রে মানুষের কোনো ইচ্ছা ছিল না একইসাথে এ কথাও বলা যাবে না যে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজটি হয়েছে। কাজটা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে এটা যেমন সত্য তেমনি মানুষের ইচ্ছাও কাজটা করার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে। বুঝলাম না ভাই, কিভাবে এটা সম্ভব? একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। উদাহরণটা হলো বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভূমিকা। বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে,তেমনি বিদ্যুৎ গ্রাহকও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু দ্বায় বহন করতে হবে বিদ্যুৎ গ্রাহকের মানে আপনি ব্যাবহার কিভাবে করছেন সেটার উপর। মাস শেষে যখন হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল আসলো তখন কর্তৃপক্ষকে এ কথা বলে দোষ দেয়া চরম বোকামী হবে যে তারা কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ করলো, তারা ইচ্ছা করলে আমার বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারতো। তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে আপনার খরচ কমাতে পারতো এটা যেমন ঠিক, তেমনি আপনিও সাশ্রয়ী হয়ে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারতেন। কিন্তু বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আপনাকে গাইড লাইন দিয়েছিল যে আপনি সেটা কিভাবে ব্যাবহার করবেন অথচ আপনি সেটা না মেনে নিজের ইচ্ছার অপব্যাবহার করেছেন তাই খরচের এ দায়ভার বহন করবেন গ্রাহক অর্থাৎ আপনি, কর্তৃপক্ষ নয়। কেননা এই ক্ষেত্রে আপনি নিজেই অন্যায়ভাবে কাজটি করেছেন তাই গ্রাহকের বা আপনার ইচ্ছা ও কর্ম দায়ী।

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০২৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়ছে,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। যে সব অপরাধী আল্লাহর সাথে শির্‌ক করেনি তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি সম্পর্কে (আল্লাহ্ বলেন) : এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে।- সহিহ ফাজায়েলে আমল, হাদিসঃ ৬৭, -ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৪৪২ / সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে নিজ হাত প্রসারিত করেন, যেন দিবাভাগের অপরাধী তাওবাহ করে নেয়। আর তিনি দিনেও নিজ হাত প্রসারিত করেন, যেন রাতের অপরাধী তাওবাহ করে নেয়। যতক্ষণ না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হবে (এ নিয়ম অব্যাহত থাকবে)।-হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ৪৬৯,ihadis.com

তাই মানুষের ভাল-মন্দ কর্মের ব্যাপারে এটা বলা যায় যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে মন্দটা হতো না বা আল্লাহর ইচ্ছাতে মানুষ ভালো-মন্দ কর্ম করছে কিন্তু আল্লাহ যে গাইড লাইন দিয়েছে সেই গাইড লাইন না মেনে মানুষ যদি আল্লাহকে দোষারোপ করে এটা যৌক্তিকভাবেই ভুল হবে। আর এই ভুলটাই নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীরা করে বেড়াচ্ছে। আল্লাহ আপনাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, দিয়েছেন বুদ্ধি ও চিন্তা করার চমৎকার ক্ষমতা একইসাথে এসব উপকরণ আপনি কিভাবে ব্যাবহার করবেন আর করবেন না সবই বলে দিয়েছেন। অথচ আপনি এসব গাইড লাইন ফলো না করে যদি খারাপ দিকে ধাবিত হোন এর জন্য আপনি নিজেই দায়ী কারণ আল্লাহ আপনাকে জবরদস্তি করেন নি আর জবরদস্তি করলে অবশ্যই গাইড লাইন দিতেন না। কেউ যখন বলে “আল্লাহর ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়”, তখন সবচেয়ে বড় যে ভুলটা সাধারণত হয় তা হলো আল্লাহর ইচ্ছাকে মানুষের ইচ্ছার মত কিছু একটা বিবেচনা করা হয়। অথচ আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে আমাদের জন্য একপ্রকার শক্তি, যেই শক্তির বলে আমরা ইচ্ছা করতে পারি। আমরা তখনই কেবল ইচ্ছা করতে পারি যখন “আল্লাহর ইচ্ছা” আমাদেরকে ইচ্ছা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। ইচ্ছা করতে পারব কি না এই ব্যাপারে আমরা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। “আল্লাহর ইচ্ছা” তথা শক্তি ছাড়া আমরা কোনো ইচ্ছাই করতে পারি না। কিন্তু ইচ্ছা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি “আল্লাহর ইচ্ছা” কর্তৃক প্রাপ্ত হবার পর আমরা “কী ইচ্ছা করব”, সেই ব্যাপারে আমাদের স্বাধীনতা রয়েছে। যেমন শিক্ষকের ইচ্ছা ছাড়া কোনো ছাত্র খাতায় লিখতে পারবে না কিন্তু খাতায় কি লিখবে এই ব্যাপারে ছাত্র পূর্ণ স্বাধীন। বুঝা গেছে মানুষ নিজেই নিজের কর্মের জন্য কিভাবে দায়ী? ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিটা সঠিকভাবে বুঝতে পারলে ও উপরে যেসব সহজ উদাহরণ দিয়েছি তা বুঝতে পারলে আশা করি আল্লাহর ইচ্ছা ও মানুষের ইচ্ছায় মধ্যে পার্থক্যটি আপনি বুঝে ধরে ফেলতে পেরেছেন।

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৬৬০,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

মু’মিন জননী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একটি নাবালক ছেলে মারা গেল আমি বললাম, তার জন্যে সৌভাগ্য। সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের থেকে এক চড়ুই পাখি (অর্থাৎ-নির্দ্বিধায় চলাচল করবে)। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তা’আলা তৈরি করেছেন জান্নাত এবং তৈরি করেছেন জাহান্নাম। এরপর তিনি এ জান্নাতের জন্য যোগ্য নিবাসী এবং জাহান্নামের জন্য যোগ্য নিবাসী তৈরি করেছেন।-ihadis.com

খেয়াল করুন এই হাদিসে বলা হচ্ছে আল্লাহ জান্নাতের জন্য যোগ্য নিবাসী এবং জাহান্নামের জন্য যোগ্য নিবাসী তৈরি করেছেন। অর্থাৎ যারা জান্নাতের যাওয়ার যোগ্য তাদেরকে আল্লাহ জান্নাত দিবে এবং যারা জাহান্নামে যাওয়ার যোগ্য তাদেরকেও আল্লাহ জাহান্নাম দিবেন। আল্লাহ জানেন কারা কারা নিজের যোগ্যতায় জান্নাতে যাবে ও কারা কারা নিজের যোগ্যতায় জাহান্নামে যাবে এবং এটা জেনে আল্লাহ উনার জানার ভিত্তিতে আগেই ফিক্স করে দিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, আল্লাহর জানার ভিত্তিতে আগে থেকেই ফিক্স করে দেয়া মানুষের স্বাধীনতায় বিন্দুমাত্র বাধা ঘটবে না। হাদিসের থেকেই উদাহরণ দিয়ে বলি।

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ২৬৪৫,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তাকে ধর্মের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেন।-ihadis.com

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন ব্যাক্তির কল্যাণ চান? জবাব হচ্ছে এই হাদিস,

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ২৬৪৬,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক জ্ঞানের খোঁজে কোন পথে চলবে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের পথ সহজ করে দিবেন। - ihadis.com

আল্লাহ কারও কল্যাণ চান এরমানে এই না যে সেই মানুষকে কিছুই করা লাগবে না বরং সেই মানুষ যদি চেষ্টা-সাধনা করে তাহলে আল্লাহ সেই মানুষের কল্যাণ করবেন। তাই আপনি যখন নিজ ইচ্ছাকে ভালো কাজে লাগাবেন আল্লাহও আপনাকে ভালো কাজের রাস্তা উন্মুক্ত করে দিবেন। এটাই হচ্ছে সিস্টেম। হাদিসেও তাই বলা হয়েছে। পড়ুন।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৬৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি একদা সওয়ারীর উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে বসে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘ওহে কিশোর! আমি তোমাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা শিক্ষা দেব তুমি সেগুলো স্মরণ রেখো। তুমি আল্লাহর বিধানসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ কর তাহলে আল্লাহও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর অধিকারসমূহ স্মরণ রাখো, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। আর এ কথা জেনে রাখ যে, যদি সমগ্র উম্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ তাকদীরের লিপি শুকিয়ে গেছে।-ihadis.com

আল্লাহ যা তাকদিরে লিখে রেখেছেন ততটুকুই হবে যা লিখেন নাই ততটুকু হবে না অথবা তাকদিরে আল্লাহ যা লিখে দিয়েছেন সেটাই হবে-লেখা পড়ে এখন এটা ভাবার সুযোগ নেই যে বান্দার স্বাধীনতা নেই বরং আল্লাহ পারফেক্ট জ্ঞানের অধিকারী তাই মানুষ যতটুকু করবে আল্লাহ ততটুকুই তাকদিরে লিখে দিয়েছেন আর যতটুকু মানুষ করবে না ততটুকু লিখেন নাই অর্থাৎ মানুষ স্বাধীনতা প্রয়োগ করে যাই করুক না কেন সেটা আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই জানেন,দেখেই, মানুষের কর্মের বিষয় নির্দিষ্ট করে লিখে দিতে পেরেছেন। মানুষের স্বাধীনতা নেই এই কথা তাকদিরের অর্থ নয় এটা তো নিশ্চিত তাই যেখানেই এরকম হাদিস দেখবেন যে, তাকদিরে যা লিখে দেয়া আছে তার কম বেশি হবে না, তাকদিরে যতটুকু লেখা আছে ততটুকুই হবে তখন নিজ দায়িত্বে বুঝে নিবেন যে তাকদির আল্লাহর পারফেক্ট জ্ঞানের অংশ, আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবেই জানেন মানুষ তার স্বাধীনতা ব্যাবহার করে যা করবে তাই আল্লাহ সেটাই নিশ্চিতভাবে লিখে রেখেছেন আর এটাই তাকদিরে বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি যা ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে।

আল্লাহ যদি সবই আগে থেকে নিশ্চিত জানেন তাহলে মানুষকে পরিক্ষার দরকারটা কি?

আল্লাহ সব জানেন কিন্তু মানুষ তো সব জানে না তাই মানুষের জন্য পরিক্ষার সিস্টেম দেয়া হয়েছে। আল্লাহ যদি দুনিয়াতে মানুষের জন্য পরিক্ষার সিস্টেম না করতেন তাহলে পরিক্ষা ছাড়াই রেজাল্ট দিয়ে দেয়াটা অযৌক্তিক ছিল। ধরুন আপনি একজন শিক্ষক আপনি যেহেতু আপনার ক্লাসের সব ছাত্রদের ব্যাপারে জানেন কারা কেমন ধরণের। যেসব ছাত্ররা বিজ্ঞান বোঝে না, অংক বোঝে না, হাজার বুঝালেও বোঝে না, এমনকি চেষ্টাও করে না। আপনি জানেন যে এইসব ছাত্র নির্ঘাত পরিক্ষায় ফেইল করবে। এখন আপনি যদি তাদেরকে পরিক্ষার আগেই ফলাফল দিয়ে দেন যে তোরা পাশ করবি না তাহলে কি এটা যৌক্তিক হবে? অবশ্যই না। তাদেরকে পরিক্ষার সুযোগ দেয়া উচিত। তেমনি আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ জ্ঞানে জানেন কোন মানুষ কেমন। এখন এই জ্ঞানের ভিত্তিতে যদি মানুষকে পরিক্ষা দেবার সুযোগ না দিয়ে আগেই ফলাফল দিয়ে দেয়া হয় তাহলে এটা অযৌক্তিক হবে। যদিও আল্লাহ সব জানেন এরপরেও পরিক্ষা দেয়াটা মানুষের অধিকার। দুনিয়াতে পরিক্ষা দেবার সুযোগ না থাকলে মানুষ, মানুষের দৃষ্টিতে এটা বলতে পারতো যে আল্লাহ ইচ্ছা করে আমাকে জাহান্নাম দিচ্ছেন যদি আমি দুনিয়ায় পরিক্ষার সুযোগ পেতাম তাহলে হয়তো জাহান্নামে যেতাম না। যেহেতু মানুষ দুনিয়াতে পরিক্ষা দিচ্ছে তাই বিচার দিবসে এটা বলার সুযোগই থাকবে না যে আমি কিছুই করি নাই,সব আল্লাহর দোষ। যদিও আল্লাহ সবই জানেন যে মানুষ সুযোগ পেলেও কতটুকু করতে পারবে আর কতটুকু করতে পারবে না কিন্তু এটা তো মানুষ নিজে জানে না, তাই না। আল্লাহ সব জানেন এটা আল্লাহর বিষয়, আর আল্লাহর জ্ঞান কেমন এটা তো মানুষ জানে না এই কারণেই দুনিয়াতে মানুষের জন্য আল্লাহ পরিক্ষার সিস্টেম করে দিয়েছেন যাতে মানুষ নিজের স্বাধীনতা পূর্ণ ভোগের সুযোগ পায়। তাই আল্লাহর জ্ঞানে কি রয়েছে এই রহস্যের পিছে না ছুটে নিজের কর্মকে সুন্দর করে তোলা বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া আল্লাহ যেহেতু মহাবিশ্বের স্রস্টা সেহেতু উনি মানুষের জন্য পরিক্ষার সিস্টেম করবেন কি করবেন না এটা উনার ব্যাপার কিন্তু মানুষের উচিত সঠিক পথে থেকে আল্লাহর দেয়া গাইড লাইন মেনে মৃত্যু পর্জন্য অটল থাকা। যেহেতু আল্লাহ মানুষের জন্য পরিক্ষার সিস্টেম করে দিয়েছেন সেহেতু মানুষের উচিত আল্লাহর পথে অটল থাকা। এটাই যৌক্তিক।

তাকদিরের কারণে আমল বন্ধ করতে হবে? 

মুসলিমরা তাকদির নিয়ে হতাশায় ভোগে না। কারণ পড়াশোনা করা মুসলিমরা জানে হাদিসে আছে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তাকদির পরিবর্তন করা যাবে। আপনি ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ যদি করতে যান যা আপনার জন্য ক্ষতিকর তবে তার আগে যদি দোয়া করেন তাহলে আল্লাহ সেই খারাপ কাজ হতে আপনাকে রক্ষা করবে। 

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ২১৩৯,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দু’আ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না। -সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ৯০।- ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ৬৬১৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেন, তোমরা ভয়ানক বিপদ, দুর্ভাগ্যের অতল তল, মন্দ পরিণতি এবং শত্রুর আনন্দ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাও।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ৩৩৭৩,হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে লোক চায় না, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নাখোশ হন।-ihadis.com

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ১০২ আয়াতে বর্ণিত,

আর কোন কোন লোক রয়েছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা মিশ্রিত করেছে একটি নেককাজ ও অন্য একটি বদকাজ। শীঘ্রই আল্লাহ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নিঃঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।

যে তাকদির নিয়ে প্রশ্ন করবে তাকে বলবেন আপনি জান্নাতে যেতে চান নাকি জাহান্নামে? উত্তরে সে হয়তো বলবে আমি জান্নাতে যেতে চাই। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করুন আচ্ছা আপনার তাকদিরে কি লেখা আছে জান্নাত না জাহান্নাম তা কি আপনি জানেন? সে বলবে না, আমি জানিনা। আচ্ছা তাহলে বিষয়টি আপনার কাছে অজ্ঞাত। আর অজ্ঞাত বিষয়ের উপর নির্ভর করে কোনো ভালো কাজ ছেড়ে দেয়া কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে? অবশ্যই না। পরীক্ষায় পাশ করবে না ফেল করবে এটা অজানা থাকার পরও মানুষ অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা দেয় পাশ করার আশায়। অপারেশন সাকসেস হবে কি হবে না তা অজ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও মানুষ অপারেশন করায় রোগ-মুক্তির আশায়। ফলাফল অজ্ঞাত থাকার অজুহাতে কোনো কাজ ছেড়ে দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা সুস্থ মস্তিস্কের কাজ হতে পারে না। নাস্তিকরা না হয় চতুস্পদ প্রাণী থেকে এসেছে এই কারণে অসুস্থ মস্তিস্কের অধিকারি কিন্তু আপনি তো এখনো মানুষের মতো চিন্তা করতে পারছেন, তাই না? আপনার তাকদিরে জান্নাত লেখা আছে না জাহান্নাম তা আপনার জানা নেই। কিন্তু আপনার লক্ষ্য যখন জান্নাত তখন লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য অবশ্যই কাজ করতে হবে। আর জান্নাত ও জাহান্নামের স্রষ্টা যখন বলে দিয়েছেন এটা জান্নাতের পথ আর ওটা জাহান্নামের পথ তখন তা বিশ্বাস করে আমল করতে অসুবিধা কোথায়? ইসলাম গ্রহণ করতে কষ্ট কোথায়? নাস্তিক্যবাদের অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি পেতে বাধা কোথায়?

মানুষের কর্মের স্বাধীনতা বিষয়ক আরো প্রমাণঃ

আল কুরআন, সুরা হিজর ১৫ঃ৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আমি কোন জনপদ ধবংস করিনি; কিন্ত তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল।

আল কুরআন, সুরা আম্বিয়া ২১ঃ৩৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ১৫৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। 

আল কুরআন, সুরা ইমরান ৩ঃ১৮৬ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার।

আল কুরআন, সুরা ইমরান ৩ঃ২০,২১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, "আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।" আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌছে দেয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা। যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে এবং পয়গম্বরগণকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে, আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন।

আল কুরআন, সুরা ইমরান ৩ঃ৮৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থ। 

আল কুরআন, সুরা ইমরান ৩ঃ১০২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।

আল কুরআন, সুরা ইমরান ৩ঃ১০৪,১০৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।

মিশকাতুল মাসাবিহ,হাদিসঃ ২২৬৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার রবকে স্মরণ করে আর যে করে না, তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯১০, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরকে ঘৃণা করো না, পরস্পর হিংসা করো না, একে অপরের গোয়েন্দাগিরি করো না, বরং আল্লাহ্‌র বান্দারা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। যে কোন মুসলিমের জন্য তার কোন ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক বিচ্ছেদ করা জায়িয নয়।-ihadis.com

আল কুরআন, বাকারা ২ঃ৮৩,৮৪,৮৫,৮৬ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্ব জন, এতীম ও দীন-দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী। যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে না এবং নিজেদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করবে না, তখন তোমরা তা স্বীকার করেছিলে এবং তোমরা তার সাক্ষ্য দিচ্ছিলে। অতঃপর তোমরাই পরস্পর খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে আক্রমণ করছ। আর যদি তারাই কারও বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে বিনিময় নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিস্কার করাও তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে। অতএব এদের শাস্তি লঘু হবে না এবং এরা সাহায্যও পাবে না।

তাফসীরে জালালাইন, ১ খণ্ড, ১৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রা) বলেন, আল্লাহ তা’লা যখন হযরত আদম (আ)কে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন মাটিকে অবহিত করে বললেন, হে মাটি! আমি তোমার হতে এমন এক জাতি সৃষ্টি করবো, যাদের মধ্যে আমার অনুগত ও নাফরমান উভয় ধরণের লোক হবে। যে আমার আনুগত্য করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে আমার নাফরমানি করবে, তাকে জাহান্নামে দিব। তখন মাটি বলল, হে আল্লাহ! আপনি আমার দ্বারা এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। আল্লাহ তা’লা বলবেন, হ্যাঁ। তখন মাটি কাঁদতে শুরু করে। তার কান্নার আস্রুধারা থেকেই পৃথিবীতে ঝর্নাসমূহ বয়ে চলছে।- [তাফসীরে খাজিনের সুত্রে হাশিয়ায়ে জামাল খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৬]

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে আমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে তাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলো। এতে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগলে আমি তাকে হত্যা করি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বলেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি মহামহিম আল্লাহর নিকট তওবা করো এবং যথাসাধ্য তার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও। আতা (র) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তার মা জীবিত আছে কিনা তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করলেন? তিনি বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নাই।-ihadis.com 

ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৭৮, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। তাঁর হাতে ছিল এক টুকরা কাঠ। তা দিয়ে তিনি মাটির উপর রেখা টানলেন, অতঃপর মাথা তুলে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার জান্নাতে তার একটি আসন অথবা জাহান্নামে তার নিকট আসন নির্ধারিত করা হয়নি। বলা হলো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাহলে আমরা কি ভরসা করব না? তিনি বলেন, না, তোমরা সৎ কাজ করতে থাকো এবং (এর উপর) ভরসা করো না। কারণ যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজসাধ্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দিব সহজ পথ। আর কেউ কার্পণ্য করলে, নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করলে আমি তার জন্য সুগম করে দিব কঠোর পথ।”(সূরাহ লায়ল ৯২ : ৫-১০)।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৭৭, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ধ্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের সমাদর করে।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৮০, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ শুরায়হ্‌ আল খুযা‘ঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা নিরবতা অবলম্বন করে।-ihadis.com 

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৮১, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

তারিক ইবনু শিহাব (আবূ বাক্‌র ইবনু আবী শাইবার হাদীসে) থেকে বর্ণিতঃমারওয়ান ঈদের দিন সলাতের পূর্বে খুত্‌বাহ্‌ দেয়ার (বিদ‘আতী) প্রথা প্রচলন করে। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘‘খুতবার আগে সলাত’’ (সম্পন্ন করুন)। মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হলো। সাথে সাথে আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) উঠে বললেন, ঐ ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে মুখ (বাক্য) দ্বারা এর পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের দুর্বলতম পরিচায়ক।-ihadis.com  

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১০১, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু (সা) আনহ থেকে বর্ণিতঃ‘যখন (রমযানের শেষ) দশক শুরু হত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত জাগতেন, নিজ পরিবারকে জাগাতেন, (ইবাদতে) খুবই চেষ্টা করতেন এবং (এর জন্য) তিনি কোমর বেঁধে নিতেন।-ihadis.com

উপদেশ,হাদিসঃ ১৮৫, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ঐ ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখীসে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২২; বাংলা মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৬১১)। অত্র হাদীছ দু’টি হতে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান কবীরা গুনাহ সমূহের উৎস। কেননা মানুষ মুখ দ্বারা মিথ্যাচার, গালমন্দ, চোগলখুরী, ধোঁকাবাজি, গীবত-তোহমত, অভিসম্পাৎ প্রভৃতি কবীরা গোনাহ করে থাকে। কিন্তু মানুষ এসব পাপ থেকে সাবধান হওয়ার ন্যূনতম চেষ্টা করে না। এগুলি থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের জিহ্বাকে সংবরণ করা অত্যাবশ্যক। কেননা এগুলির ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘চোগলখোর ও খোটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১২)।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ২৭, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ সায়ীদ সা‘দ ইবনু মালিক ইবনু সিনান খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃকিছু আনসারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি তাদেরকে দিলেন। পুনরায় তারা দাবী করল। ফলে তিনি (আবার) তাদেরকে দিলেন। এমনকি যা কিছু তাঁর কাছে ছিল তা সব নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর যখন তিনি সমস্ত জিনিস নিজ হাতে দান করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে যা কিছু (মাল) আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে কখনই জমা করে রাখব না। (কিন্তু তোমরা একটি কথা মনে রাখবে) যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর হতে পারে।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১১২, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ মাসউদ উক্ববাহ ইবনু ‘আমর আনসারী বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃযখন সাদকার আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন (সাদকা করার জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) আমরা নিজের পিঠে বোঝা বহন করতাম (অর্থাৎ মুটে-মজুরের কাজ করতাম)। অতঃপর এক ব্যক্তি এল এবং প্রচুর জিনিস সাদকাহ করল। মুনাফিকরা বলল, ‘এই ব্যক্তি রিয়াকার (লোককে দেখানোর জন্য দান করছে।)’ আর এক ব্যক্তি এল এবং সে এক সা’ (আড়াই কিলো) জিনিস দান করল। তারা বলল, ‘এ (ক্ষুদ্র) এক সা’ দানের আল্লাহ মুখাপেক্ষী নন।’ অতঃপর এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ ‘‘বিশ্বাসীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা সাদকা দান করে এবং যারা নিজ পরিশ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৫৩, হাসান হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

‘ইকরিমাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃইরাকের অধিবাসী কিছু লোক এসে বলল, হে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)! আপনি জুমু’আহ্‌র দিন গোসল করা ওয়াজিব বলে মনে করেন কি? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, না, তবে করাটা ভাল এবং তাতে গোসলকারীর অধিকতর পবিত্রতা হাসিল হয়। আর যে ব্যক্তি গোসল করে না তার জন্য এটা ওয়াজিব নয়। কিভাবে গোসলের সূচনা হয় আমি তোমাদেরকে তা জানাচ্ছি। তৎকালে লোকেরা কঠোর পরিশ্রম করত, পশমী পোষাক পরত এবং নিজেদের পিঠে করে বোঝা বহন করত। তাদের মাসজিদও ছিল সংকীর্ণ ও খেজুরের ডালের তৈরি নিচু ছাদ বিশিষ্ট। একদা গরমের দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলেন। লোকেদের কাপড় ঘামে ভিজে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এতে একের দ্বারা অন্যেরা কষ্ট বোধ করছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্গন্ধ পেয়ে বললেনঃ হে লোক সকল! যখন এদিন (জুমু’আহ্‌র দিন) আসে তখন তোমরা গোসল করে সাধ্যানুযায়ী তেল ও সুগন্ধী লাগাবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে মহান আল্লাহ তাদের সম্পদশালী করেন। ফলে তারা পশমের পরিবর্তে অন্যান্য (উত্তম) কাপড় পরিধান করতে থাকেন, কাজ-কর্ম অন্যদের দ্বারাও করাতে থাকেন এবং মাসজিদও প্রশস্তহয়, তখন পরস্পর পরস্পরের ঘামের গন্ধে কষ্ট পাওয়াও দূরীভূত হয়।-ihadis.com

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১০৮২ , সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ‘যখন রমযানের শেষ দশক প্রবেশ করত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নিজে জাগতেন, নিজ পরিজনদেরকেও জাগাতেন, কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং কোমরে লুঙ্গি বেঁধে নিতেন।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১৭৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রী হিসাবে থাকা বা না থাকার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমরা তাকে গ্রহণ করলাম। এতে কি তালাক হল?-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৬৪৬, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হত। কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য কখনই কোন বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে ফেললে তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।’-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৮২, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, জাহিলী যুগে যদি কোনো মহিলার সন্তান বেচেঁ না থাকতো তাহলে সে এ মর্মে মানত করতো যে, তার সন্তান বাচলেঁ তাকে ইয়াহুদী ধর্মে দীক্ষিত করাবে। অতঃপর যখন ইয়াহুদী গোত্র বনী নাযীরকে উচ্ছেদ করা হয়, তখন তাদের মধ্যে আনসারদের কতিপয় ঐরুপ সন্তান ছিলো। আনসারগন বললেন, আমরা আমাদের সন্তানদের (ইয়াহুদীদের সাথে) ছেড়ে দিতে পারবো না। তখন মহান আল্লাহর আয়াত অবতীর্ন করলেন, ”দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। হিদিয়াতের নির্ভূল পথকে ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করা হয়েছে।” (সুরা্হ আল-বাক্বারা্হ, আয়াত ২৫৬) আবূ দাউদ বলেন, যেসব মহিলাদের সন্তান বেচেঁ থাকে না তাদেরকে ‘মিক্বলাত’ বলা হয়।-ihadis.com

উপসংহারঃ ইসলামের দৃষ্টিতে তাকদির কখনোই মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা নয়। তাকদির আল্লাহর পারফেক্ট জ্ঞানের অংশ তাই আল্লাহ উনার পারফেক্ট জ্ঞান দিয়ে যা লিখে রেখেছেন সেসবের হেরফের হবে না কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা নেই। আল্লাহর জ্ঞান মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা নয়। নাস্তিকরা তাকদিরের মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে আল্লাহকে অপরাধী প্রমাণ করতে চায় যদিও নাস্তিকরা নিজেরাও এটা বিশ্বাস করে না যে “স্রস্টা অপরাধী”। তাকদির অর্থ যদি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা থাকবে না এটাই হতো তাহলে রাসুল (সা) মানুষকে কষ্ট করে ইসলামের দাওয়াতই দিতেন না,করতেন না যুদ্ধ। নবীজি (সা) কি তাকদির অর্থ এটা বুঝিয়েছেন যে আল্লাহ যেহেতু সব আগেই লিখে রেখেছেন তাই বান্দার দুনিয়াতে কিছুই করতে হবে না? সব দোষ আল্লাহর? নবীজি (সা) ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, নামাজ আদায় করেছেন, বিজনেস করেছেন, বিয়ে করেছেন, পরিবারের দায়িত্ব পালন করেছেন ইত্যাদি মানবিক সব কাজ করেছেন। রাসুল (সা) এর কর্মই প্রমাণ করে ইসলামের দৃষ্টিতে তাকদির কখনো বান্দার স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা নয়। 

সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সুস্থভাবে যে কেউই আমার এই লেখাটি পাঠ করবে যে সহজেই ধরতে পারবে তাকদির, মানুষের স্বাধীনতা, আল্লাহ ইচ্ছা, এসব বিষয় ইসলাম যেমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এরপরেও যারা ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ধামাচাপা দিয়ে ইসলামকে মানুষের কাছে খারাপ দেখানোর জন্য মিথ্যাচার করে যাবে,যাচ্ছে আর এই মিথ্যাচার গুলোকে চিন্তার মুক্তির আন্দোলন নামক প্যাকেটে ভরবে এমন বোধগম্যহীন মানুষকে আর কিভাবেই বা শিক্ষিত করে তোলা যাবে? যৌক্তিক ভাবনার অধিকারী মানুষরা কখনো নাস্তিকদের মতো ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করতে পারে না। অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের মিথ্যাচার আর জালিয়াতির দুর্গন্ধে সভ্য মানুষদের যতই কষ্ট হউক না কেন সেফটির জন্য বিশুদ্ধ তথ্যময় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আর যুক্তি প্রমাণের মাস্ক ব্যাবহার করলেই সেই নোংরা দুর্গন্ধ আমাদের নাকে লাগবে না।ইনশাআল্লাহ্‌।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post