আল্লাহ্‌র কি মানুষের মত অঙ্গপ্রতঙ্গ আছে ?



প্রশ্নঃ আল্লাহ্‌র কি মানুষের মত অঙ্গপ্রতঙ্গ আছে ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

যারা দাবি করেন যে আল্লাহ্‌ হলেন মানুষের মত, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মত হুবহু আল্লাহ্‌রও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে, প্রথমে আমরা তাদের দলিল প্রমান সমূহ দেখে নিব এরপরে তাদের তথ্য জালিয়াতি ধাপে ধাপে প্রকাশ করবঃ

১/ সুরা আর রহমান ৫৫:২৬,২৭ = ভূপৃষ্টের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার মুখ ছাড়া ।

২/ সূরা কাসাস ২৮:৮৮ = আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করবেন না। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহর চেহারা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে। বিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে ।

৩/ সুরা তুর ৫২:৪৮ = আপনি আপনার পালনকর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় সবর করুন। আপনি আমার দৃষ্টির সামনে আছেন এবং আপনি আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ঘোষণা করুন যখন আপনি গাত্রোত্থান করেন।

৪/ সুরা সোয়াদ ৩৮:৭৫ = আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?

৫/ সুরা ফাতাহ ৪৮:১০ = যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।

৬/ সুরা মায়েদা ৫:৬৪ = আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। একথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত।

৭/ সুরা বাকারা ২:১৩৮ = আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে?আমরা তাঁরই এবাদত করি।

৮/ সুরা কাসাস ২৮:৩০ = যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।

৯/ সুরা নাম’ল ২৭:৮,৯ = অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

১০/ সুরা মুজাদালাহ ৫৮:১ = যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।

১১/ সুরা নিসা ৪:১৩৪ = আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন।

১২/ ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৭০৫৫, সহিহ হাদিসঃ হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো এ-ই যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা আদাম (‘আঃ)-কে তাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তার দৈর্ঘ্য হলো ষাট হাত। সৃষ্টির পর তিনি তাকে বললেন, যাও এদেরকে সালাম করো। সেখানে একদল ফেরেশ্‌তারা বসা ছিলেন। সালামের জবাবে তারা কি বলে তা খুব মনোযোগ সহকারে শুনো। কেননা তোমার এবং তোমার বংশধরদের অভিবাদন হবে এ-ই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন ও বললেন, “আস্‌সালামু ‘আলাইকুম”। জবাবে তারা বললেন, “আস্‌সালামু ‘আলাইকা ওয়ারহমাতুল্লাহ্‌”। তাঁরা ওয়ারহমাতুল্লাহ্‌ বাড়িয়ে বলেছেনঃ । অবশেষে তিনি বললেন, যে লোক জান্নাতে যাবে সে আদাম (‘আঃ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তার দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। [তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,] তারপর আদাম (‘আঃ)-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ ক্রমশই খাটো হয়ে আসছে।

১৩/ ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩৪৩৯, সহিহ হাদিসঃ ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ টেঁড়া নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চক্ষু টেঁড়া। তার চক্ষু যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত।

১৪/ ihadis.com, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৭ , সহিহ হাদিসঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌র ডান হাত পরিপূর্ণ, কোন কিছুই তার পূর্ণতাকে হ্রাস করতে পারে না। তিনি রাত-দিন অবধারিত দান করেন। তাঁর অপর হাতে রয়েছে তুলাদন্ড। তিনি তুলাদন্ড উঠানামা করান। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহ্‌ আসমান-যমীন সৃষ্টির সূচনা থেকে অবাধে খরচ করছেন, তারপরও তাতে তাঁর হাতে যা আছে তার সামান্যও কমেনি।

১৫/ ihadis.com, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৯ , সহিহ হাদিসঃ আন-নাওওয়াস বিন সামআন আল-কিলাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিটি অন্তঃকরণ দয়াময় আল্লাহ্‌র দু' আঙ্গুলের মাঝখানে অবস্থিত। তিনি চাইলে তা সোজা পথে প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তিনি চাইলে তা বক্র পথে চালিত করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ ''হে অন্তরসমূহের স্থিরতাদানকারী! আমাদের অন্তরসমূহকে আপনার দ্বীনের উপর স্থির রাখুন।'' তিনি আরো বলেন, তুলাদন্ডও দয়াময় আল্লাহ্‌র হাতে। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত কোন সম্প্রদায়কে উন্নত করবেন এবং কোন সম্প্রদায়কে অবনত করবেন।

১৬/ ihadis.com,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৮৩৪, সহিহ হাদিসঃ আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যাপ্ত পরিমাণে বলতেন : “হে আল্লাহ্‌! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো”। এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের ব্যাপারে আশংকা করেন? আমরা তো আপনার উপর ঈমান এনেছি এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন সেই বিষয়ে আমরা আপনাকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করে নিয়েছি। তিনি বলেনঃ অন্তরসমূহ মহামহিমান্বিত করুণাময়ের দু’ আঙ্গুলের মাঝে অবস্থিত। তিনি সেগুলোকে ওলট-পালট করেন। আ‘মাশ (রাঃ) তার দু’ আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেন।

১৭/ ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ১০ খণ্ড , হাদিসঃ ৬৯০৮, ৫৫৩ পৃষ্ঠাঃ সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা"লা কিয়ামতের দিন পৃথিবীটা তাঁর মুঠোয় নিয়ে নিবেন, আসমানকে তাঁর ডান হাতে জড়িয়ে বলবেন , বাদশাহ একমাত্র আমিই......রাসুল (সা) বলেন, আল্লাহ্‌ তা"লা যমীনকে তাঁর মুঠোয় নিয়ে নিবেন ।

১৮/ ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ১০ খণ্ড, হাদিসঃ ৬৯০৯, ৫৫৩ পৃষ্ঠা, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত যে, এক ইহুদী নবী (সা) এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মদ ! আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন আসমানগুলোকে এক আঙুলের ওপর, যমীনগুলোকে এক আঙুলের ওপর, পর্বতমালাকে এক আঙুলের ওপর, বৃক্ষরাজিকে এক আঙুলের ওপর এবং অবশিষ্ট সৃষ্টিকে এক আঙুলের ওপর তুলে বলবেন, বাদশাহ একমাত্র আমিই। এতে রাসুল (সা) হেসে দিলেন। এমনকি তাঁর মাড়ির দাত মুবারক পর্যন্ত দীপ্ত হয়ে উঠল। তারপর তিনি তিলোয়াত করলেনঃ তারা আল্লাহ্‌ তা"লার যথোচিত মর্যাদা উপলব্ধি করেনি। ইয়াহইয়া ইবন সাইদ বলেন , এই বর্ণনায় একটু সংযোজন করেছেন, ফুদায়ল ইবন আয়ায......... আবিদা (রহ) সুত্রে আবদুল্লাহ (রা) থেকে যে , এ কথা শুনে রাসুল (সা) আশ্চর্যান্নিত হয়ে তার সমর্থনে হেসে দিলেন ।

১৯/ ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ১০ খণ্ড, হাদিসঃ ৬৯৪১, পৃষ্ঠা, ৫৭৭, ৫৮৮, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টি স্বীয় প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করল। জান্নাত বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যাপারটি কি হলো যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শ্রেনীর লোকেরাই প্রবেশ করবে। এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করল অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি আমার রহমত। জাহান্নামকে বললেনঃ তুমি আমার আযাব। আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌছাব। তোমাদের উভয়কেই পূর্ণ করা হবে। তবে আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টির কারো উপর যুলম করবেন না। তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানুযায়ী নতুন সৃষ্টি পয়দা করবেন। তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অভিরিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরতের কদম (পা) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ন হয়ে যাবে। তখন জাহান্নামের একটি অংশ আরেকটি অংশকে এই উত্তর করবে যথেষ্ট হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে ষথেষ্ট হয়েছে।

২০/ ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ১০ খণ্ড, হাদিসঃ ৬৯৩২, পৃষ্ঠা ৫৭০, সহিহ হাদিসঃ এই হাদিসটি অনেক বিশাল বড় ...... এই হাদিসের সারসংক্ষেপ হল কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাঁর পায়ের নলা খুলে দিবে ফলে ইমানদারগন এটি দেখে সকলেই সেজদা দিবেন ............

২১/ ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ১০ খণ্ড , হাদিসঃ ৬৯৩৫, পৃষ্ঠাঃ ৫৭৪, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথে অচিরেই তোমাদের প্রতিপালক আলাপ করবেন । তখন প্রতিপালক ও তার মাঝখানে কোন দোভাষী ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কোন পর্দাও থাকবে না।

২২/ ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৭৪১৯, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র ডান হাত পূর্ণ, রাত দিনের খরচেও তা কমে না। তোমরা ভেবে দেখেছ কি? আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টির সূচনা থেকে তিনি কত খরচ করে যাচ্ছেন, তবুও তাঁর ডান হাতের কিছুই কমেনি। তাঁর আরশ পানির ওপর আছে। তাঁর অন্য হাতে আছে দেয়া আর নেয়া। তা তিনি উঠান ও নামান।
উপরের কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ্‌র মুখ , চেহারা , চোখ , হাত , রঙ , কথা , কান , আল্লাহ তা‘আলা আদাম (‘আঃ)-কে তাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ্ টেঁড়া নন, ডান হাত , দুই আঙুল , হাতের মুঠো, পা , পায়ের নলা, ইত্যাদি রয়েছে আর মানুষের যেহেতু এইসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রয়েছে সুতরাং আল্লাহ্‌ও হুবহু মানুষের মত ?

উত্তর সমূহঃ

সুরা আর রহমানের ৫৫:২৬,২৭ এবং সুরা কাসাস ২৮:৮৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছে যে "সব কিছুই ধ্বংসশীল আল্লাহ্‌র চেহারা ছাড়া" । পাঠক আপনারা যদি আয়াত সমূহের আরবির দিকে খেয়াল করেন তাহলে দুটি আরবি শব্দ পাবেন "ওয়াজহু" এবং "ওয়াজহাহু" এই শব্দ সমূহের অর্থ হল সত্তা অথবা অস্তিত্ব । প্রশ্নকর্তা কুরানের আয়াত দিয়ে "আল্লাহ্‌র মুখ বা চেহারা মানুষের মত" প্রমান করতে চেয়েছেন কিন্তু আমরা যদি আয়াতের এরাবিক অর্থে খেয়াল করি তাহলে সহজেই বুঝতে পারব যে আয়াতের সঠিক অনুবাদ হবে আল্লাহ্‌র সত্তা বা অস্তিত্ব ছাড়া সবকিছু ধ্বংসশীল।

ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১৫ খণ্ড , পৃষ্ঠা ৫৪৯ - এ বলা হয়েছে যে সুরা রহমানের ৫৫:২৬,২৭ আয়াতে যে "ওয়াজহু" শব্দ রয়েছে - এর দ্বারা আল্লাহ্‌র সত্তাকে (অস্তিত্ব) বুঝানো হয়েছে ।

ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১৭ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১৬ - তে সঠিক অনুবাদটিই করা হয়েছে । সুরা আর রহমান ৫৫:২৭= অবিনশ্বর শুধু তোমার প্রতিপালকের সত্তা, যিনি মহিমাময়, মহানুভব - ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে প্রত্যেক সৃষ্টজীবের মৃত্যু হয়ে যাবে । অনুরূপভাবে আকাশবাসীও মরণের স্বাদ গ্রহণ করবে, তবে আল্লাহ্‌ যাকে চাইবেন সেটা অন্য কথা। শুধু আল্লাহ্‌র সত্তা বাকী থাকবে। তিনি সর্বদা আছেন এবং সর্বদা থাকবেন । তিনি মৃত্যু ও ধ্বংস হতে পবিত্র ।

ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১৫ খণ্ড , পৃষ্ঠা ৫৪৭ - সুরা কাসাসে সঠিক অনুবাদটিও করা হয়েছে । সুরা কাসাস ২৮:৮৮ = আল্লাহ্‌ সত্তা ব্যাতীত সব কিছু ধ্বংসশীল ।

প্রশ্নকর্তার হয়ত হজম করতে কষ্ট হবে তাই আমরা তার কষ্ট দূর করার জন্য ধরেই নিলাম যে আয়াত সমূহে আল্লাহ্‌র মুখ বা চেহারাই উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু এরপরেও কি প্রমান হয় যে আল্লাহ্‌র চেহারা মানুষের মত ? উত্তর হচ্ছে না । আমি খুব শক্তিশালীভাবে দাবি করছি যে উপরের আয়াতে কোথায় বলা হয়েছে যে আল্লাহ্‌র চেহারা মানুষের মত অথবা অনুবাদক কি বলেছেন যে আল্লাহ্‌র চেহারা মানুষের মত ? উত্তর হচ্ছে না ।

তাহলে প্রশ্নকর্তা কিভাবে দাবি করতে পারে যে আল্লাহ্‌র চেহারা মানুষের মত ? আল্লাহ্‌র চেহারা বলতে এখানে আল্লাহ্‌র অস্তিত্বকেই বুঝানো হয়েছে আর আল্লাহ্‌র চেহারা কেমন সেটি আমরা জানি না আর আমরা যদি কল্পনাও করি সেটিও ভুল হবে কারন মানুষ যা দেখে নি সেটি নিয়ে সে সঠিক কল্পনা করতেই পারে না এটি অসম্ভব । আল্লাহ্‌র চেহারা কেমন সেটি একমাত্র আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সুরা তুর ৫২:৪৮ = আপনি আপনার পালনকর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় সবর করুন। আপনি আমার দৃষ্টির সামনে আছেন এবং আপনি আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ঘোষণা করুন যখন আপনি গাত্রোত্থান করেন। - এই আয়াতের সুন্দর ব্যাখ্যা ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১৭ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩০ ও ১৩০ = আল্লাহ্‌ তা"লা বলেন , হে নবী (সা) তুমি ধৈর্যধারন করো এবং তাদের খারাপ ব্যাবহারে ও কষ্ট প্রদানে তুমি মনক্ষুণ্ণ হয়ো না । তাদের পক্ষ থেকে বিপদ পড়ার তুমি মোটেই ভয় করো না । জেনে রাখো যে তুমি আমার হেফাজতে রয়েছো । আমি সব সময় তোমাকে দেখছি । তোমার রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব আমার । সমস্ত শত্রু হতে তোমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমারই উপর ন্যাস্ত ।

- আচ্ছা এখানে আল্লাহ্‌র দেখা বলতে কি মানুষের মত দেখা বুঝানো হয়েছে ? উত্তর হচ্ছে না । হ্যাঁ, আল্লাহ্‌ দেখেন কিন্তু সেই দেখার ধরন কেরকম সেটি আমরা জানি না , কল্পনাও করতে পারি না আর তাই আল্লাহ্‌র দেখা মানুষের মত এই দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হল । উপরে আয়াত দিয়ে কি নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন যে আল্লাহ্‌র দেখা মানুষের মত ? উত্তর হচ্ছে না । সহজ উদাহরন দিলে বুঝতে পারবেন । যেমন একটি রোবটের দেখাও কিন্তু দেখা পক্ষান্তরে একটি মানুষের দেখাও কিন্তু দেখা কিন্তু এই দুই দেখা কি এক ? উত্তর হচ্ছে না । মানুষ আর রোবট সম্পূর্ণ আলাদা । একই ভাবে আল্লাহর দেখাও দেখা আর মানুষের দেখাও কিন্তু দেখা তবে এই দুই দেখার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে । কারন আল্লাহ এবং মানুষ কখন এক না । আল্লাহ হলেন সমস্ত কিছুর স্রষ্টা আর মানুষ হলেন সৃষ্টি ।

সুরা ফাতাহ ৪৮:১০ আয়াতের ব্যাখ্যায় ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১৬ খণ্ড, ৭৬৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর - অর্থাৎ তিনি তাদের সাথে আছেন এবং তাদের কথা শুনেন । তিনি তাদের স্থান দেখেন এবং তাদের বাইরের ও ভিতরের খবর জানেন । সুতরাং রাসুল (সা) এর মাধ্যমে তাদের নিকট হতে বায়াত গ্রহনকারী আল্লাহ তা'লাই বটে। সুতরাং এখান থেকে বুঝা গেল আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর বলতে আল্লাহ তাদের সাথে আছেন বুঝানো হয়েছে ।

সুরা সোয়াদ ৩৮:৭৫ ও সুরা ফাতাহ ৪৮:১০ এবং সুরা মায়েদা ৫:৬৪ এই আয়াত সমুহে আল্লাহর হাতের কথা এসেছে। কিন্তু এর মানে এটি প্রমান হচ্ছে না যে আল্লাহর হাত মানুষের মত । সিমপলের মধ্যে একটা গরজিয়াস প্রশ্ন করি । প্রশ্নকর্তার কাছে আমি জানতে চাই যে আপনি কুরআনের এমন একটি আয়াত অথবা বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমান করে দেখান যেখানে উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে "আল্লাহর হাত মানুষের মত"?

সুরা বাকারা ২:১৩৮ = আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে?আমরা তাঁরই এবাদত করি । এই আয়াতের মূল ভাব ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১ খণ্ড, ৪৩১ পৃষ্ঠা বলা হয়েছে যে , এখানে আল্লাহর রং এর ভাবার্থ হচ্ছে ধর্ম । অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ এ সুরা বাকারা ২:১৩৮ এই আয়াতের মাঝেও আল্লাহর রং আঁকড়ে ধর । ইবনু আব্বাস (রা) সহ অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, আল্লাহর রং হল আল্লাহর দ্বীন । মানে ইসলাম ।
সুতরাং উপরের আয়াতের মানে হল আল্লাহর রং অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া ইসলামের চাইতে আর উত্তম কিছুই হতে পারে না তাই আল্লাহর রং ধারন কর অর্থাৎ আল্লাহর ইসলাম গ্রহন করে আল্লাহর দেখানো পথে চল । কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের কোথায় বলা হয়েছে যে আল্লাহর রং মানে আল্লাহর অস্তিত্বর রং লাল , নীল, সবুজ রং???

সুরা নাম’ল ২৭:৮,৯ ও সুরা মুজাদালাহ ৫৮:১ এবং সুরা নিসা ৪:১৩৪ এসব আয়াতে আল্লাহর কথা বলা , শোনার কথা এবং দেখার কথা এসেছে। - আল্লাহ নবীদের সাথে কথা বলেন শুধু তাই নয় তিনি সব কিছুই দেখেন , শুনেন কিন্তু মানুষ সব কিছু দেখতে পারে না আর সব শুনতেও পায় না আর আল্লাহর সাথে সরাসরি নবীদের মত কথা বলতেও পারে না তাহলে উল্লেখিত আয়াত দিয়ে কিভাবে প্রমান হচ্ছে যে আল্লাহর কথা বলা , দেখা এবং শোনা মানুষের মত ? আর কুরআন এবং সহিহ হাদিসের কথায় আছে আল্লাহর কথা বলা , দেখা এবং শোনা মানুষের মত ? প্রমান করুন দাদা।

"আদম (আ) কে আল্লাহ নিজ আকৃতিতে বানিয়েছেন। তার দৈর্ঘ্য হলো ষাট হাত" - এই বর্ণনায় নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা দৃষ্টিভঙ্গি জালিয়াতি করেছে যে "নিজ আকৃতি বলতে এখানে আল্লাহর সত্তার মত করে সৃষ্টি করেছে" কিন্তু এটি ভুল কথা , আসলে হাদিসের মূল ভাবার্থ হবে আল্লাহ, হযরত আদম (আ)কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এর মানে আদম (আ) এর আকৃতির মত করেই আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন । একটি উদাহরন দিলে বুঝতে পারবেন সহজেই, যেমনঃ ক্লাসে স্যার বলছেন জসিম মবাইল ফোন তৈরি করেছে তার আকৃতিতে এরপরে সিম কার্ড এর স্পেস তৈরি করল, খেয়াল করুন এখানে মবাইল ফোনকে "নিজ আকৃতি" দ্বারা আসলে মবাইল ফোনের নিজ গঠনকে বুঝানো হয়েছে জসিমের দেহের গঠন না ।

ঠিক একই ভাবে আদম (আ) কে আল্লাহ নিজ আকৃতিতে বানিয়েছেন।তার দৈর্ঘ্য হলো ষাট হাত। এখানেও "নিজ আকৃতি" দ্বারা আদম (আ) এর দেহের গঠনের মত করেই সৃষ্টি করেছেন এটাই বুঝানো হয়েছে নাইলে পরের লাইনে কেন বলা হল যে তার দৈর্ঘ্য হলো ষাট হাত ? আল্লাহর অস্তিত্ব কি ৬০ হাত ? উত্তর হচ্ছে না । এই হাদিসেই শেষ দিকে আবার বলা হচ্ছে যে জান্নাতের অধিবাসীদের আকৃতি হবে আদম (আ) এর মত। এই থেকেও পরোক্ষ ভাবে বুঝা যায় যে আল্লাহ হযরত আদম (আ)কে স্বয়ং আদম (আ) এর আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর অস্তিত্বর মত করে না। যেমন আমি আমার মত করে গাড়ি তৈরি করলাম । এখানে কি "আমার মত" দ্বারা গাড়িকে আমার সাথে হুবহু বলা হচ্ছে ? উত্তর হচ্ছে না । আমি আমার মত গাড়ি তৈরি করলাম এর মানে এটি বুঝাচ্ছে না যে গাড়ি আর আমি একই জিনিস ।

দেখুন আরেক হাদিসে এই উত্তর পরিস্কার ভাবে দেয়া আছেঃ

ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৬২২৭, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদাম (আঃ) –কে তাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শোনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেনঃ ‘আস্‌সালামু ‘আলাইকুম’। তাঁরা জবাবে বললেনঃ ‘আস্‌সালামু ‘আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তাঁরা বাড়িয়ে বললেনঃ ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদাম (আঃ) –এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ কমে আসছে।

"নবী‎ মুহাম্মদ (সা) লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ টেঁড়া নন" - আচ্ছা এই হাদিস দ্বারা কি প্রমান হচ্ছে যে আল্লাহর চোখ মানুষের মত ? উত্তর হচ্ছে না । উদাহরন সরুপ ধরুন আমি বললাম চাঁদটি এম ডি আলীর মত না ,এর মানে কি এটি প্রমান হল যে চাঁদ আর এম ডি আলী একই ? উত্তর হচ্ছে না । আবার কেউ বলল তোমার হাতের লেখা তোমার চুলের মত না , এর মানে কি হাতের লেখা আর চুল হুবহু একই ? আবার কেউ যদি বলে পানি লোহার মত শক্ত না, এর অর্থ কি পানি লোহার মত শক্ত ? সহজ উত্তর না................... বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে তেসপাতা .........

সুতরাং নবী মুহাম্মদ (সা) যে বলেছেন আল্লাহর চোখ টেড়া নন এর মানে এই নয় যে আল্লাহর চোখ মানুষের মত । বরং আল্লাহ দেখতে পারেন কিন্তু সেটি কেরকম এটি আমরা জানি না । যেহেতু কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদিসে এই বিষয় পরিস্কার করে কিছু উল্লেখ করা হয় নি ।

"আল্লাহ্‌ তাঁর পায়ের নলা খুলে দিবে" ও "আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরতের কদম (পা) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ন হয়ে যাবে" "আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ" "আল্লাহর আঙ্গুল" - এসব বর্ণনা থেকে এটি প্রমান হয় না যে আল্লাহর গুণাবলী মানুষের মত কারন

* সুরা শুরা ৪২:১১= কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয় । প্রশ্নকর্তা যেই দাবি করেছেন যে আল্লাহর ব্যাপারে বর্ণিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মানুষের মত এটি একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ ।আপনি যখনি আল্লাহর সাথে কোন কিছুর তুলনা করবেন এবং কল্পনা করবেন সেটাই ভুল হবে কারন আল্লাহর সাদৃশ্য কিছুই নাই ।

* সহজ আকীদাতুত তাহাবী , আল কাউসার প্রকাশনী, ২৪ পৃষ্ঠাঃ আল্লাহ তা"লার সাথে বান্দার কোন সাদৃশ্যতা নেই । যদিও বা অস্তিত্ব , শক্তি , জানা, শোনা, দেখা ইত্যাদি গুণাবলী বান্দাদের মধ্যেও বিরাজমান কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্ব বান্দার অস্তিত্বর মত না এবং আল্লাহর জানা বান্দার জানার মত না। অন্যান্য গুণাবলীর একই অবস্থা । উপরোক্ত কথার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তা"লার মধ্যে এ সকল গুণাবলী নেই বরং সব ধরনের গুণাবলী আছে সেগুলো বান্দার গুণাবলীর সাদৃশ্য নয় । কারন আল্লাহর তা"লার গুণাবলী চিরস্থায়ী এবং সর্বত্র বিরাজমান । পক্ষান্তরে মাখলুকের গুণাবলী ক্ষণস্থায়ী এবং সীমিত।

আল ফিকহুল আকবর গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফা (রহ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা"লা তাঁর কোন মাখলুকের সাথে সাদৃশ্যতা রাখে না । তাঁর সাথেও কোন মাখলুক সাদৃশ্যতা রাখে না । এরপর তিনি বলেন, তাঁর সকল গুণাবলী মানুষের গুণাবলীর বিপরীত । তিনি জানেন কিন্তু আমাদের জানার মত নয় । তিনি শক্তি রাখেন কিন্তু আমাদের শক্তি রাখার মত নয় । তিনি দেখেন কিন্তু আমাদের দেখার মত নয় ।

* সহজ আকীদাতুত তাহাবী, আল কাউসার প্রকাশনী, ৫৩ পৃষ্ঠাঃ যে সকল মূলপাঠে আল্লাহর জন্য চেহারা , হাত ইত্যাদি অর্থবিশিষ্ট শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে সেগুলো আমরা স্বীকার তো করি তবে সেগুলো সম্পর্কে আল্লাহ তা"লাই ভাল জানেন বলি । কারন এটা মুখাপেক্ষীহীনতার পরিপন্থী তাই আমরা উল্লেখিত গুণগুলো মানি কিন্তু তাঁর ধরনের বিষয়টি আল্লাহ তা"লার নিকট সোপর্দ করে থাকি। আল্লাহ তা"লার কোন কিনারা বা শেষ নাই।কেননা এটি সীমিত বস্তু এবং শরীর সমূহের বৈশিষ্ট । আল্লাহ তা"লা তো সীমিত বস্তু নন , শরীর ধারীও নন। কোন কালের মধ্যে সীমাবদ্ধও নন , কোন জায়গায় বেষ্টিত নন । এ ছাড়া আল্লাহর জ্ঞান সত্তাগত উপার্জিত নয় । কারন উপার্জিত জ্ঞানের একটি সীমা রেখা থাকে কিন্তু আল্লাহ তা"লার জ্ঞানের তো কোন সীমা রেখা নাই ।

* আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) এর "আকাইদুল ইসলাম" এর ৫৯ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ আল্লাহ তা"লা কোন জিনিসের সাথে মিশ্রিত বা একীভূত নন। কোন জিনিসও আল্লাহর সাথে মিশ্রিত হয় না। কোন জিনিস আল্লাহর সত্তার মাঝে প্রবেশ করে না। তিনিও কোন কিছুর মদ্ধে প্রবেশ করেন না। খৃষ্টানদের নিকট তাদের বিশ্বাস হল আল্লাহ তা"লা ইসা (আ) এর মাঝে প্রবেশ করেছিলেন, হিন্দুদের নিকট তাদের বিশ্বাস হল আল্লাহ তা"লা মানুষের মাঝে, জীব জন্তুর মাঝে এবং গাছ ও পাথরের মাঝে প্রবেশ করেন । সামেরিরও এই ভ্রান্ত আকিদা ছিল যে আল্লাহ তা'লা বাছুরের মাঝে প্রবেশ করেছেন ।

* সুরা ইখলাস ১১২:১,২,৩,৪ = বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। - এই আয়াত দ্বারা প্রশ্নকর্তার অভিযোগ এক কথায় ধ্বংস হয়ে যায় ।

* সুরা বাকারা ২:২৫৫ = আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। - এই আয়াত দ্বারাও প্রশ্নকর্তার অভিযোগ এক কথায় ধ্বংস হয়ে যায় ।

* সুরা শুরা ৪২:১১= কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয় । - এই আয়াত থেকে পরিস্কার প্রমানিত হচ্ছে যে , যেসব বর্ণনায় আল্লাহ্‌র মুখ , চেহারা , চোখ , হাত , রঙ , কথা , কান , ডান হাত , দুই আঙুল , হাতের মুঠো, পা , পায়ের নলা, ইত্যাদি রয়েছে এসব কিছুই মানুষের মত না এবং আমরা স্বীকার করি ও বিশ্বাস রাখি যে আল্লাহ কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হওয়ার দরকার নাই তাই এসব অর্থ বিশিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছাড়াও আল্লাহ সব কিছুই করতে সক্ষম। তাহলে এসব অর্থ বিশিষ্ট শব্দ কেন ব্যাবহার করা হয়েছে ? এর উত্তর হল মানুষকে সহজ ভাবে বুঝানোর জন্য ।

উপরের সমস্ত বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান হাতে রেখে এই মুহূর্তে আমরা কিছু শক্তিশালী দাবি করব এবং ছুড়ে দিব কিছু প্রশ্ন । আশা করি নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা নিচের প্রশ্নের সমাধান দিবেন ।

১/ কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদিস থেকে পরিস্কার ডাইরেক্ট প্রমান হয়েছে আল্লাহ মানুষের মত না ।

২/ যেসব বর্ণনায় অর্থ বিশিষ্ট শব্দ যেমন হাত, পা ও পায়ের নলা ইত্যাদি কথা এসেছে , আসলে এসব মানুষকে বুঝানোর জন্য উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ এসবের মুখাপেক্ষী না । এবং আল্লাহ কেমন সেটি আল্লাহই ভাল জানেন । আমরা জানি না ।

৩/ আল্লাহর হাত, পা অস্তিত্ব কেমন সেটা আল্লাহই ভাল জানেন , মানুষ সেটি কল্পনার মাধ্যমে যাচাই করতে অক্ষম এবং এটি পসিবল না ।

৪/ আল্লাহর কোন সাদৃশ্য নেই । তাঁর মত কেউই নাই ।

৫/ কেউ যদি আল্লাহর হাত , পা , নলী , মুখ এসব দিয়ে আল্লাহকে মানুষের মত বলতে চায় তাহলে এটি ভিত্তিহীন দুর্বল অভিযোগ হিসেবে প্রমানিত হবে।

৬/ নবী মুহাম্মদ (সা) কি বলেছেন আল্লাহ্‌র আকৃতি মানুষের মত ?

৭/ কোন কোন সাহাবী বলেছেন যে আল্লাহ্‌ মানুষের মত, মানুষের মত আল্লাহরও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে? তাঁদের নাম কি ?

৮/ কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম বলেছেন যে আল্লাহ্‌র আকৃতি মানুষের মত, মানুষের মত আল্লাহরও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে ?

৯/ প্রশ্নকর্তা কুরআন ও হাদিসের যেই তথ্য সমূহর মাধ্যমে প্রমান করতে চেয়েছেন যে আল্লাহ্‌ মানুষের মত , প্রশ্ন হল আপনার দাবিকৃত তথ্য প্রমান দিয়ে কি নবী (সা) এবং তাঁর সাহাবীরা এবং মুজতাহিদ ইমামরা কোন ইজমা প্রকাশ করেছেন অথবা তাঁরা প্রশ্নকর্তার উত্থাপিত কুরআন ও হাদিসের যেখানে হাত, মুখ, পায়ের নলা , চেহারা , আঙুল ইত্যাদির কথা আছে সেগুলা মানুষের মত - এই দাবি কি কেউ করেছেন ?

১০/ "আল্লাহ্‌র আকৃতি মানুষের মত" এই শব্দে কুরআন এবং সহিহ হাদিস থেকে প্রমান করতে পারবেন ?

১১/ নবী মুহাম্মদ (সা) কোথায় বলেছেন যে "আল্লাহ্‌র হাত, পা , পায়ের নলা, আঙুল , চেহারা এসব কিছুই মানুষের মত" ?

১২/ আল্লাহ সর্বশক্তিমান আর মানুষ দুর্বল তাহলে আল্লাহ কিভাবে মানুষের মত হয় ?

১৩/ আল্লাহ সব কিছুই দেখেন আর মানুষের দৃষ্টি সব দেখতে পারে না তাহলে আল্লাহ কিভাবে মানুষের মত হয় ?

১৪/ আল্লাহ তা'লার শুরু নাই এবং শেষ নাই আর মানুষের জন্ম আর মৃত্যু আছে, তাহলে আল্লাহ কিভাবে মানুষের মত হয় ?

১৫/ আল্লাহ হল অসৃষ্ট আর মানুষ হল সৃষ্ট , তাহলে কিভাবে আল্লাহ মানুষের মত হয় ?

১৬/ আল্লাহ এই সমস্ত মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন আর মানুষ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে পারে না তাহলে কিভাবে আল্লাহ মানুষের মত ?

১৭/ আল্লাহ সব কিছু শুনতে পান কিন্তু মানুষ সব শুনতে পায় না তাহলে আল্লাহ কিভাবে মানুষের মত হল ?

১৮/ আল্লাহ ঘুমান না আর মানুষ ঘুমায় তাহলে কিভাবে আল্লাহ মানুষের মত হল ?

১৯/ আল্লাহ সময়ের মুখাপেক্ষী না অথচ মানুষ সময় ছাড়া চলতে পারে না তাহলে কিভাবে আল্লাহ মানুষের মত হল ?

২০/ আল্লাহ অসীম এবং মানুষ ক্ষুদ্র তাহলে কিভাবে আল্লাহ মানুষের মত হয় ?

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post