নবী মুহাম্মদ (সা)’র সাহাবীদের আর্গুমেন্ট
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
তারিখে ইবনে শিহাব সুত্রে ইমাম তাবারি (রহ) বর্ণনা করেনঃ
এক ইহুদী হযরত ফারুকে আজম (রা) এর কাছে এসে বলল কুরআনে আছে তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন । (সুরা আল ইমরান আয়াত ১৩৩) এর অর্থ কি ? যদি জান্নাতের প্রশস্ততাই আসমান ও জমিনের সমান হয় তাহলে জাহান্নাম থাকবে কথায় ?
তখন ফারুকে আজম (রা) অন্য সাহাবীদেরকে বললেন এ প্রশ্নের জবাব দাও কিন্তু এ সম্পর্কে তাদের কোন জবাব জানা ছিল না ।
ফারুকে আজম (রা) জবাবে বললেনঃ দিন, যখন আসে তখন তার আলোয় আসমান জমিন ছেয়ে যায় কিনা ?
ইহুদী বললঃ কেন যাবে না ?
ফারুকে আজম (রা) বলেনঃ তখন রাত্র কথায় থাকে ?
ইহুদীঃ আল্লাহ্ যেখানে চান ।
ফারুকে আজম (রা) বলেনঃ জাহান্নামও আল্লাহ্ যেখানে চান সেখানে থাকবে ।
অমনি ইহুদী বলে উঠল, হে আমিরুল মুমিনিন ! যে মহান সত্তার মুঠোয় আপনার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি , আল্লাহ্র কিতাবেও ঠিক সেভাবে বলা হয়েছে , যেভাবে আপনি বলেছেন ।
রেফারেন্সঃ
*ইযালাতুল খাফা আন খিলাফাতুল খলাফা, খণ্ড ২, লেখক শাহ অলিউল্লাহ্ মহাদ্দেসি দেহলভি (রহ) ।
টিকাঃ
অনেক নাস্তিকেরাও এই ধাঁচের প্রশ্ন করে । তাদের জবাবে আমি বলব । আপনি যখন গভীর কোন বিষয়ে ভাবেন । যেমন ধরেন কাল খুব কঠিন এক্সাম যার চিন্তায় আপনার ঘুম আসছে না । এখন আমি বলব যখন আপনি পরিক্ষা নিয়ে ভাবছেন তখন আপনার অন্য হতে সেটা যে কোন চিন্তাই হোক সেটা কথায় বসে থাকে , ভেবেছেন ?
ধরেন আপনার মা কে বলছেন, আম্মাজান আমি আপনাকে খুব ভালবাসি । আপনি আমার প্রানের থেকেও প্রিয় । এখন পাশে ছিল আপনার ছোট ভাই , সে আপনাকে প্রশ্ন করলো যে ভাইয়া আপনি আম্মাকে ভালবাসেন সম্মান করেন ভাল কথা তো আপনার অভালবাসা তখন কথায় থাকে ? আপনি যদি বুদ্ধিমান হন এর সহজ উত্তর হল আপনার মদ্ধেই থাকে ।
কুরআনে আছেঃ নভোমণ্ডল, ভুমণ্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সব কিছুর আধিপত্য আল্লাহ্রই । তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান বা ক্ষমতাবান । (সুরা মায়েদা আয়াত ১২০ )
সব কিছুর ওপর আল্লাহ্ ক্ষমতাবান তাই জান্নাতকে আল্লাহ্ যেভাবে রাখতে পারবেন সেভাবে তাঁর ক্ষমতাবলে জাহান্নামকেও রাখতে পারবেন ।
হযরত আলী (রা) এর জবাব
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা) খেলাফতের মসনদে সমাসীন । খলীফার দ্বার রয়েছে সবার জন্য উন্মুক্ত । মানুষ, সমাজ , রাষ্ট্র ধর্ম সকল বিষয়ে খলীফার সাথে সরাসরি আলাপ করতেও দ্বিধাবোধ করে না কেহ । এক অগ্নিপূজারী এসে বলল তোমাদের ধর্ম গ্রন্থ কুরআন সত্য কিনা ?
খলীফাঃ হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের ধর্ম গ্রন্থ আল কুরআন সত্য ।
অগ্নিপূজকঃ তোমাদের ধর্ম গ্রন্থে আছে , কাফেরের কবরে সকাল সন্ধ্যা অগ্নি প্রজ্বলিত করা হয় । অতপর অগ্নিপূজক তার পকেট হতে দুটি মাথার খুলি বের করল । সে একটির দিকে ইঙ্গিত করে বলল । এটা আমার পিতার মাথার খুলি এবং অন্যটির প্রতি ইশারা করে বলল ওটি আমার ভাইয়ের খুলি মাথার খুলি । যদি তোমাদের ধর্ম গ্রন্থ সত্য হয় তাহলে এ দুটি খুলি শীতল কেন ? এদের মধ্যে আগুন কথায় ?
খলীফা ওমর (রা) অগ্নিপূজকের প্রশ্ন শুনে সাথে সাথে লোক পাঠালেন বিশ্ব নবীর (সা) জ্ঞান সাগরের কপাট হযরত আলী (রা) এর নিকট । হযরত আলী (রা) এসে উপস্থিত হলেন খলীফার দরবারে ।
খলীফাঃ অগ্নিপূজকের দিকে ইশারা করে । মাথার দুটি খুলি দেখিয়ে হযরত আলী (রা) কে বললেন যে আলী ! এ লোক এরুপ প্রশ্ন করেছে আপনি এর উত্তর প্রদান করুন ।
খলীফার কথা শুনা মাত্রই হযরত আলী (রা) বুঝতে পারলেন মুল বিষয় । কুরআন হাদিস দিয়ে এই অগ্নিপূজারীকে জবাব দিলে সে বুঝবে না অথবা মেনে নিবে না তাই একে যুক্তি দিয়েই বুঝাতে হবে । তাই প্রশ্ন শেষ করতে যতটুকু দেরি , উত্তর শুরু করতে দেরি করে নাই মোটেও । তৎক্ষণাৎ তিনি একটি হাতুড়ি ও এক খণ্ড লোহা আনিয়ে অগ্নিপূজকের সামনে রাখলেন ।
শুরু হল কথা
হযরত আলী (রা): এই লোহার ওপর হাত রাখুন ।
অগ্নিপূজকঃ অবাক হয়ে হাত রাখলেন লোহার ওপর ।
হজরত আলী (রা): কি মনে হচ্ছে, লোহা গরম নাকি ঠাণ্ডা ?
অগ্নিপূজকঃ একেবারে ঠাণ্ডা ।
এবারে হযরত আলী (রা) হাতুড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত করলেন উক্ত লোহার ওপর । আঘাতের ফলে এক ঝলক অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে গেল লোহার থেকে এবং শীতল লোহার হয়ে গেল গরম । গরম হবে না কেন , বীর কেশরি মহাবীর হযরত আলী (রা) এর একটি আঘাতই তো এর জন্য যথেষ্ট । অতপর শুরু করলেন কথা বার্তা ।
হযরত আলী (রা): আবার হাত রাখুন লোহার ওপর ।
অগ্নিপূজকঃ পুনরায় হাত রাখলেন লোহার ওপর ।
হযরত আলী (রা): কি মনে হচ্ছে এখন , লোহা ঠাণ্ডা নাকি গরম ?
অগ্নিপূজকঃ একেবারে গরম ।
হযরত আলী (রা): এ লোহা খণ্ড পূর্বে ছিল একেবারে ঠাণ্ডা এখন উহাতে অগ্নি আসলো কোথেকে ?
প্রশ্ন শুনে অগ্নিপূজক একেবারে হতবাক । একদম হাক্কা বাক্কা । সে কোন জবাবই দিতে পারেনি । এমতাবস্থায় হযরত আলী (রা)ই জবাব শুরু করলেন । এ লোহার মধ্যে যে স্রষ্টা অগ্নি রেখেছেন , যদিও আমরা সেটা বুঝতে পারি না । একইভাএ সে স্রষ্টাই তদীয় অপার কুদরতে এ দুজনের মাথায় খুলির মদ্ধেও অগ্নি রেখে দিয়েছেন এবং উহা সর্বদাই জ্বলছে যদিও আমরা অনুভব করতে পারি না ।
এবারে জ্ঞানগর্ভ উত্তর শুনে অগ্নিপূজক তৎক্ষণাৎ আত্মসমর্পণ করলো এবং বাধ্য হয়ে মেনে নিল আল কুরআন হচ্ছে অবশ্যই সত্য । সাথে সাথে প্রমানিত হল হযরত আলী (রা) সম্পর্কে বিশ্ব নবী মুহাম্মদ (সা) অমিয় বানীর সার্থকতা ।
“ আমি জ্ঞানের শহর আলী উহার কপট”
এখানে হযরত ওমর (রা) এর একটি বিশেষ দুয়া প্রনিধান যোগ্য
“আমাদের এখানে কোন কঠিন মাসয়ালা এসে গেল অথচ আলী সেখানে নাই
এমন যেন আল্লাহ্ না করেন”
রেফারেন্সঃ মুসলিম মনিষীদের অবাক করা জবাব । পৃষ্ঠাঃ ৭৬ । লেখকঃ আহকাব আব্দুর রহমান