বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল?


বিষয়ঃ বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

—-----------------------------------------

ভূমিকাঃ আগেই বলে নিচ্ছি লেখাটি অনেক বিশাল হবে। আপনি সত্যিটা জানতে চাইবেন আর একটু কষ্ট করে পড়বেন না। তা কি হয়? আপনাকে পুরো লেখাটিই মনযোগী হয়ে পড়তে হবে। সময় নিয়ে হলেও পড়তে হবে। যদি পড়তে না চান তাহলে এখনই সরে যান।

 

ইসলামে যুদ্ধবন্দিনীদের বিষয় বিস্তারিত সব প্রমাণের আলোকে আলোচনা করা হয়েছে। মুক্তমনাদের সকল অভিযোগ গুলোর সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। হযরত উমার (রা) নাকি দাসীদেরকে নগ্ন বুকে চলতে বলতেন, আব্দল্লাহ ইবনে উমার নাকি দাসীদের স্তন টেপাটেপি করতেন, হযরত আলী নাকি দাসীদেরকে চতুস্পদ জন্তুর মতো মনে করতেন ইত্যাদি সকল ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যে কোনো সত্য সন্ধানী মানুষ লেখাটি থেকে উপকৃত হবে সন্দেহ নাই।

 

ইসলাম কি আসলেই যুদ্ধবন্দিনীদেরকে ধর্ষণ করতে বলে? নবী মোহাম্মদ (সা) নিজে কি যুদ্ধবন্দিনীদেরকে গণধর্ষণ করেছিলেন? উনার অনুসারীরা কি আসলেই উনার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করেছিল? কোনটা সত্যি? কোনটা মিথ্যা? জানতে হবে না? আপনি তো চিন্তা করতে পারেন। আপনি তো নিজেকে মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করেন। আপনার মগজে তো মনুষ্য বিবেক রয়েছে। তাহলে কেন আপনি সত্যিটা গ্রহণ করতে চাইবেন না? কেন আপনি নিরপেক্ষ হয়ে যাচাই করে দেখবেন না? অবশ্যই আপনাকে যাচাই করতে হবে। এখানের প্রতিটি কথা আপনাকে হৃদয় থেকে উপলব্ধি করতে হবে।

আপনাকে প্রশ্ন করছি-আপনি প্রস্তুত আছেন তো অজানাকে জানতে?

 

নাস্তিকরা বনু মুস্তালিক যুদ্ধবন্দিনীদের যে হাদিস গুলো পেশ করেঃ

পাঠক আপনাদেরকে অনুরোধ করবো নিচের হাদিস গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। কারণ এই হাদিস গুলো দেখিয়ে মুক্তমনারা নিজেদের অনুসারীদের ও অন্য মানুষদেরকে ইসলাম বিষয় ভুল বোঝায়।

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৩৪৩৬,সহিহ হাদিসঃইবনু মুহায়রিয (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি এবং আবূ সিরমাহ্ (রহঃ) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আবূ সিরমাহ্ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ সা’ঈদ! আপনি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ‘আয্ল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হাঁ আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে বানূ মুস্তালিক-এর যুদ্ধ করেছি। সে যুদ্ধে আমরা আরবের সবচেয়ে সুন্দরী বাঁদীদের বন্দী করলাম। এদিকে আমরা দীর্ঘকাল স্ত্রী সাহচর্য থেকে বঞ্চিত ছিলাম। অন্যদিকে আমরা ছিলাম সম্পদের প্রতি অনুরাগী। এমতাবস্হায় আমরা বাঁদীদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করার এবং ‘আয্ল করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমরা এ কথাও আলোচনা করলাম যে, আমরা কি এ কাজ করতে যাব, অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন। তাঁর নিকট আমরা কি এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব না! তাই আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ ঐ কাজ না করাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করার কথা লিখে রেখেছেন সে সব মানুষ সৃষ্টি হবেই।

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ২১৫৫,সহিহ হাদিসঃ আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃহুনাইনের দিন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আওতাসের দিকে একদল সৈন্য পাঠালেন। তারা শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়ে তাদের নারীদেরকে বন্দি করে আনেন। কিন্তু সেই বন্দী নারীদের মুশরিক স্বামীরা বর্তমান থাকায় কতিপয় সাহাবী তাদের সাথে সঙ্গম করাকে গুণাহ মনে করেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “যে মহিলাদের স্বামী আছে, তারা তোমাদের জন্যে হারাম। তবে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত” (সূরা আন-নিসাঃ ২৪)। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী দাসী যখন তাদের ইদ্দতকাল সমাপ্ত করবে তখন তারা তোমাদের জন্যে বৈধ।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২২২৯, সহিহ হাদিসঃ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএকদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা বন্দী দাসীর সাথে সঙ্গত হই। কিন্তু আমরা তাদের (বিক্রয় করে) মূল্য হাসিল করতে চাই। এমতাবস্থায় আযল- (নিরুদ্ধ সঙ্গম করা) সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, আর তোমরা কি এরূপ করে থাক! তোমরা যদি তা (আযল) না কর তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা যে সন্তান জন্ম হওয়ার ফায়সালা করে রেখেছেন, তা অবশ্যই জন্ম নিবে।

একই ধরণের আরও হাদিস রয়েছে। যেমন, সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৫৪২,৪১৩৮,৭৪০৯ / সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৩৫০০ / সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ২১৭২,২১৭৩ / মুয়াত্তা ইমাম মালেক,হাদিসঃ ১২৩৪ / আল লু'লু ওয়াল মারজান,হাদিসঃ ৯১৩। সব গুলা হাদিস সহিহ।-ihadis.com

ইসলামের সমালোচকদের কাছে কি প্রমাণ আছে?

পাঠক খেয়াল করেছেন, উপরের ঘটনায় যতটুকু বর্ণনা করা হয়েছে সেটা থেকে কোনো ভাবেই এটা নিশ্চিত হওয়া যায় না যে তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। “আমাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে” মর্মে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ উক্ত তথ্য থেকে পাওয়া যায় না। আপনি আমার সাথে একমত হবেন যে, কেউ ধর্ষিত হয়েছে কিনা সেটা প্রমাণ করতে হলে যে ধর্ষিত হয়েছে তার মুখের সাক্ষ্য লাগবে অথবা যদি তার সাক্ষ্য পাওয়া না যায় তাহলে যারা দেখেছে তাদের সাক্ষ্য লাগবে আর যদি বলা হয় সাক্ষ্যকে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে তাহলে কে লুকিয়েছে? কারা লুকিয়েছে? কারা দেখেছে এসব লুকিয়ে ফেলতে? তারা আসলেই সত্য কথা বলছে কিনা? এসব প্রমাণ করতে হবে। উপরের একটি হাদিসেও এমন কোনো সাক্ষ্যের কথা পাওয়া যায় না অর্থাৎ নারীদের থেকে না স্পষ্ট সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে আর না তাদের সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে যারা দেখেছে। যদি বলেন লুকিয়ে ফেলা হয়েছে তাহলে এটা শুধু বললেই তো আর হবে না স্পষ্ট প্রমাণ পেশ করতে হবে।

আমি যুদ্ধবন্দিনীদের থেকেই সাক্ষ্য পেশ করতে পারবো যে উনাদেরকে ধর্ষণ করা হয় নাই। কিন্তু নাস্তিকরা যেহেতু নিশ্চিত যে উনাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে সেহেতু নাস্তিকদেরকে নিজেদের দাবির পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ পেশ করতে হবে। কারণ নাস্তিকরা নিশ্চিত হয়েই উপরের হাদিস গুলো দেখিয়ে দাবি করছে উক্ত নারীরা ধর্ষিত হয়েছে অথচ এমন কিছুই উপরের হাদিস গুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। নাস্তিকদের দাবির সাথে প্রমাণের বিন্দুমাত্র মিল নেই কেন? 

উপরের হাদিস গুলো থেকে বিন্দুমাত্র প্রমাণ করাই যাচ্ছে না যে বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীরা ধর্ষিত হয়েছে। যেহেতু নাস্তিকরা উপরে দেয়া হাদিসের ভিত্তিতে ১০০%-ই নিশ্চিত যে তাদেরকে ধর্ষণ করাই হয়েছে তাহলে নাস্তিকদেরকে স্পষ্ট করে যা প্রমাণ করতে হবে।

> উপরের হাদিস গুলো থেকেই নারীদের সাক্ষ্য দেখান যেখানে তারা বলেছে মুসলিমরা আমাদেরকে ধর্ষণ করেছে।

> যারা দেখেছে ধর্ষণ করতে তাদের সাক্ষ্য গুলোর বর্ণনা হাদিস থেকেই দেখান। 

> যদি বলেন এসব তথ্য-সাক্ষ্য লুকিয়ে ফেলা হয়েছে তাহলে সেটার প্রমাণ গুলোও হাদিস থেকেই স্পষ্ট করুন।

> কুরআন অথবা হাদিস থেকে এমন একটা বিধান দেখান যেখানে বর্ণিত আছে "দাসীদের ধর্ষণ করো" বা "দাসীরকে নির্যাতন করো” অথবা "যুদ্ধবন্দিনীদের প্রতি যৌন হামলা করা ফরজ"।

যদি প্রমাণ করতে না পারে তাহলে নাস্তিকরা যে মিথ্যুক,প্রতারক,ধোঁকাবাজ,তথ্যচোর এটা সত্য প্রমাণ হয়ে যাবে অটোম্যাটিক। নাস্তিকরা যখন বুঝতে পারে তাদের কাছে তেমন কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই। তখন ইমোশনাল ট্রিক্স করে এভাবে বলে,

ইসলামিক যত সোর্স আছে, যেমন কুরআন, হাদিস, তাফসীর, সীরাত ইত্যাদি সকল গ্রন্থে নিশ্চয়ই নবী, সাহাবী ও মুসলমানদের কথাই লিপিবদ্ধ থাকবে, তাদের গুণকীর্তনেই পরিপূর্ণ থাকবে। যুদ্ধবন্দী দাসীরা কি বলেছে না বলেছে সেটি নিশ্চয়ই সেখানে লেখা থাকবে না। এটি তো খুব স্বাভাবিক বিষয় যে, তাদের আত্মীয় স্বজনকে হত্যা করে যারা মেয়েগুলোকে বন্দী করে নিয়ে এসেছে, তাদের স্বাধীনতা হরণ করেছে, তাদেরকে স্বাধীন মানুষ থেকে দাসী বানিয়েছে, তাদের পরিবার পরিজন ছেলে মেয়ে স্বামী ভাই বাবামায়ের তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসার ধ্বংস করেছে, তারা কখনোই তাদের সাথে স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি হবে না। যদি তার উল্টো ঘটনা ঘটে, অর্থাৎ কেউ দাবী করে যে আমাকে কোনোরকম জোর করে কিছু করা হয় নি, তাহলে তারই নিজের মুখের সাক্ষ্য লাগবে যে আমি স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি ছিলাম। বন্দী একজন মানুষের সাথে যৌনকর্ম হওয়া এটিই প্রমাণ করে, তার বন্দিত্ব এখানে একটি প্রভাব ফেলেছে। স্বেচ্ছায় সহবাস হতে পারে শুধুমাত্র তার বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সম্মতি দেয়ার মাধ্যমে।যেই ইসলামিস্টরা দাবী করছে, যুদ্ধবন্দী নারীরা সাহাবাদের সাথে সহবাসে রাজি ছিলেন, তাদেরকেই যুদ্ধবন্দী নারীদের নিজস্ব মুখের সাক্ষ্য পেশ করতে হবে যে, উনারা স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি ছিলেন। সেই সাথে প্রমাণ করতে হবে যে, এরকম স্বীকারোক্তির পেছনে সেই সব বন্দী নারীর কোন রকম ভয়ভীতি কিংবা আতঙ্ক ছিল না

পাঠক, নাস্তিকরা আসলে এটা মানতেই পারে না ইসলাম কেন এতো ভালো হবে? বা হতে পারে? এই কারণে তারা এই অন্ধবিশ্বাস করে নিজেদেরকে বুঝ দেয়, যেহেতু সকল যুদ্ধে নারীদেরকে গণধর্ষণ করা হতো সেহেতু স্বাভাবিক ভাবে নবী ও সাহাবীরাও একই কাজ করেছে। কিন্তু বাস্তব সত্যি সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলে।

যেই মূর্খমনা নাস্তিকটি এই কথা বলেছে,ইসলামিক যত সোর্স আছে, যেমন কুরআন, হাদিস, তাফসীর, সীরাত ইত্যাদি সকল গ্রন্থে নিশ্চয়ই নবী, সাহাবী ও মুসলমানদের কথাই লিপিবদ্ধ থাকবে, তাদের গুণকীর্তনেই পরিপূর্ণ থাকবে। যুদ্ধবন্দী দাসীরা কি বলেছে না বলেছে সেটি নিশ্চয়ই সেখানে লেখা থাকবে না। তাকে আমি প্রশ্ন করছি আপনি কেন সকল তথ্য পড়তে পারলেন না? আপনি কেন সেই তথ্য গুলোকে ধামাচাপা দিতে চান যেখানে যুদ্ধবন্দিনীদের ব্যাপারে বিস্তারিত সব লেখা আছে? নবী মোহাম্মদ (সা) যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে কেমন আচরণ করেছেন আপনি কেন এসব জানতে পারলেন না? নাকি জানতে চান নাই? নবী মোহাম্মদ (সা) অনুসারীদেরকে কি কি শিক্ষা দিতেন আপনি কেন তা পাশ কেটে এই কথা বলে দিলেন যে “যুদ্ধবন্দী দাসীরা কি বলেছে না বলেছে সেটি নিশ্চয়ই সেখানে লেখা থাকবে না”? যদি যুদ্ধবন্দিনীরা কি বলেছে ইসলামে যদি সেটা নাই থাকে তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে এই অন্ধবিশ্বাস করে বসে আছেন যে তাদেরকে আসলেই ধর্ষণ করা হয়েছে? আপনার মস্তিস্কের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যে আপনি কি আসলেই পরিপূর্ণভাবে মানুষে বিবর্তিত হতে পেরেছেন নাকি কোনো প্রজাতিতে এখনো আটকিয়ে রয়েছেন? আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের বিবর্তিত চেহারাটা একটু দেখুন!

যে ঘটনা গুলো নাস্তিকরা ধাপাচাপা দিয়ে রাখেঃ

বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদেরকে আসলেই কি ধর্ষণ করা হয়েছিল? আসুন যাচাই করে দেখি। হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস হচ্ছে উনি দুনিয়ার সব থেকে ভয়ংকর নিকৃষ্ট খারাপ সন্ত্রাসী ও নারী অত্যাচারকারী মানুষ ছিলেন। উনি নারীকামী ছিলেন। নারীদের সাথে জবরদস্তি সহবাস করতে উনি খুবই পছন্দ করতেন। উনি ১১টি নারী বিয়ে করেছিলেন নিজের খায়েশ মেটানোর জন্য। উনি সব সময় নিজের স্ত্রীদেরকে মারতেন। নিজের দাসীদেরকে নির্মমভাবে সারারাত অত্যাচার করতেই থাকতেন। উনার থেকে নিকৃষ্ট মানুষ এই জগতে আর নাই। আসলেই?

পাঠক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি লক্ষ্য করুন। কোনো ভয়ংকর খারাপ সন্ত্রাসী লোক অথবা নারীদেরকে অত্যাচারকারী লোক কি যুদ্ধের ময়দানে নারীদেরকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে পারে? নারীদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারে? নারীদের বিপদে সাহায্য করতে পারে? নারীর মতামতকে প্রাধান্য দিতে পারে? আপনি যদি নাস্তিক না হয়ে সুস্থচিন্তার মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উত্তর হবে কোনো ভয়ংকর অত্যাচারী নারীকামী লোক কখনো নারীদের সাহায্য করবে না, সম্মান করা তো দুরের কথা। মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে এমন নাস্তিক ছাড়া এমন যেকোনো মানুষ আমার কথার সাথে একমত হবেই। এই ঘটনা সমূহ এখন পর্যবেক্ষণ করুন।

আল্লামা ইদ্রিস কান্দলবি (রহ) লিখিত “সিরাতুল মুস্তফা (সা)”,খণ্ড ২, ২৩৯-২৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিতঃ

বনু মুস্তালিকের সর্দার হারিস ইবনে জিরারের কন্যা জুয়াইরিয়াও বন্দী ছিলেন। গনিমতের মাল বণ্টনকালে জুয়ায়রিয়া হযরত সাবিত ইবনে কায়স (রা) এর ভাগে পরে।হযরত সাবিত তাকে মুকাতাবা হিসেবে ঘোষণা দেন । অর্থাৎ এত পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা শর্তে সে মুক্ত হয়ে যাবে। হযরত জুয়াইরিয়া (রা) রাসুল (সা) এর খিদমতে উপস্থিত আরজ করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ ,আপনি অবগত আছেন যে, আমি জুয়াইরিয়া,বনী মুস্তালিক অধিপতি হারিস ইবন জিরারের কন্যা।আমার বন্দিত্বের কথাও আপনার অগোচরে নেই। বণ্টনকালে আমি সাবিত ইবন কায়সের ভাগে পড়ি এবং তিনি আমাকে মুকাতাবা ঘোষণা করেন। মুক্তিপণের ব্যাপারে আমি আপনার সাহায্য- সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়েছি। রাসুল (সা) ইরশাদ করলেনঃ আমি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পরামর্শ দিচ্ছি,যদি তুমি তা পছন্দ করো। তা হলঃ তোমার পক্ষ থেকে পরিশোধযোগ্য মুক্তিপণ আমি আদায় করে দিচ্ছি এবং তুমি মুক্ত হওয়ার পর তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করব। হযরত জুয়াইরিয়া (রা) বললেনঃ আমি সম্মত আছি। (আবু দাউদ,কিতাবুল ইতাক)।হযরত জুয়াইরিয়া তো প্রথম থেকেই ইচ্ছা করছিলেন যে তিনি মুক্ত হবেন। ঘটনাক্রমে তার পিতা হারিসও নবী (সা) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, আমি বনী মুস্তালিক গোত্রের সর্দার,আমার কন্যা দাসী হয়ে থাকতে পারে না। আপনি তাকে মুক্ত করে দেন। নবী (সা) বললেনঃ এটা উত্তম হবে না যে, আমি এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা জুয়াইরিয়ার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেই ? হারিস ফিরে গিয়ে জুয়ায়রিয়াকে বললেনঃ রাসুলুল্লাহ (সা) তোমার মুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহনের বিষয়টি তোমার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। হযরত জুয়াইরিয়া (রা) বললেনঃ আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে গ্রহন করেছি। - ইবন মান্দা বর্ণিত এ হাদিসটি সনদ সহিহ, ইসাবা, খণ্ড ৪ , পৃষ্ঠা ২৬৫।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ৩৯৩১, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, বনী মুস্তালিক যুদ্ধে ‘জুয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস ইবনুল মুস্‌তালিক’ বন্দিনী হয়ে সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাস (রাঃ) বা তার চাচাত ভাইয়ের ভাগে পড়েন। অতঃপর তিনি নিজেকে আযাদ করার চুক্তি করেন। তিনি খুবই সুন্দরী নারী ছিলেন, নজর কাড়া রূপ ছিল তার। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি চুক্তির অর্থ চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এলেন। তিনি দরজায় এসে দাঁড়াতেই আমি তাকে দেখে অসন্তুষ্ট হলাম। আমি ভাবলাম, যে রূপ-লাবন্যে তাকে দেখেছি, শিঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে এভাবে দেখবেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জুয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস, আমার সামাজিক অবস্থান অবশ্যই আপনার নিকট স্পষ্ট। আমি সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাসের ভাগে পড়েছি। আমি মুক্ত হওয়ার চুক্তিপত্র করেছি, চুক্তির নির্ধারিত অর্থ আদায়ে সাহায্য চাইতে আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাবে তুমি রাজি আছো কি? তিনি বললেন, কী প্রস্তাব, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আমি চুক্তির সমস্ত পাওনা শোধ করে তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তিনি বললেন, হাঁ, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি আছি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুয়াইরিয়াহকে বিয়ে করেছেন, একথা সবার মাঝে জানাজানি হয়ে গেলো। তারা তাদের আওতাধীন সমস্ত বন্দীকে আযাদ করে ছাড়তে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শ্বশুর বংশের লোক। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নিজের গোত্রের কল্যাণের জন্য তার চাইতে বরকতময়ী মহিলা আমি আর কাউকে দেখিনি। শুধু তার মাধ্যমে বনী মুস্তালিকের একশো পরিবার আযাদ হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম শাসক সরাসরি বিয়ে করতে পারেন।-ihadis.com

যদি কোনো নারী এটা দেখে যে যুদ্ধে পুরুষরা নারীদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে তাহলে সেই নারী কি সেই পুরুষদের নেতার কাছে গিয়ে সাহায্য চাওয়ার সুযোগ পাবে? অথবা কোনো ভয়ংকর সন্ত্রাসী লোকদের নেতা কি যুদ্ধে নারীদের সাথে এমনভাবে কথা বলতে পারে যে “তুমি যদি রাজি হও তোমাকে আমি একটা পরামর্শ দিতে পারি”? অথবা এই টাইপের লোকেরা যুদ্ধে প্রাপ্ত সুন্দরী নারীকে নারীর ইচ্ছা অনুযায়ী সুবিধা দিয়ে বিয়ে করারই বা প্রস্তাব দেবে কেন? ইচ্ছা করলেই তো বেঁধে নির্যাতন করতে পারতো? ধর্ষণ করতে পারতো? একটু সুস্থভাবে চিন্তা করুন প্রশ্ন গুলো নিয়ে। 

উপরের বর্ণিত ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করলে এটাই শক্তিশালী প্রমাণিত হয় যে বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করা তো দূরের কথা বরং সেই নারীদের সাথে সম্মান দিয়ে মুসলিমরা কথা বলেছিল। নবী মোহাম্মদ (সা) যে নারীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতেন এমনকি সেটা যুদ্ধের সিচুয়েশনে হলেও এটা তো সত্য প্রমাণিত হয়ে গেলো। শধু কি তাই? যুদ্ধে কোনো নারী উনার কাছে সাহায্য চাইতে আসলেও উনি সাহায্য করতেন। তাহলে নাস্তিকরা হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে যেভাবে অন্ধবিশ্বাস পোষণ করে এটা কি মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেলো না? কি? যুক্তি কি বলে? প্রমাণ কি বলে? বিবেক কি বলে?

নাস্তিকরা বলে বনু মুস্তালিক যুদ্ধবন্দিনীদেরকে নবী মোহাম্মদ (সা) ও উনার সাহাবীরা ধর্ষণ করেছিল কিন্তু উপরে বর্ণিত ঘটনায় উল্টো চিত্রই দেখা যাচ্ছে। আমি জানি এই তথ্য গুলো নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে চরম আঘাত হানবে। কিন্তু সত্যিটা আমাকেই জানাতেই হবে। বনু মুস্তালিক নারী জুহায়রিয়াকে নবীজি (সা) সাহায্য করলেন তাও আবার উনি যেভাবে সুবিধা চেয়েছেন ঠিক সেইভাবেই নবী মোহাম্মদ (সা) উনাকে সুবিধা দিয়েছেন। তাহলে নবী মোহাম্মদ (সা) কিভাবে উনার অনুসারীদেরকে ধর্ষণ করবার অনুমতি দিতে পারেন?

আবার জুহায়রিয়া যখন নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করলেন এই খবর শুনে নবীজি (সা) এর সকল সাহাবী বন্দীদের মুক্ত করে দিলেন। এমনকি এমন চিত্র দেখে স্বয়ং আয়েশা (রা) বললেন নিজের গোত্রের কল্যাণের জন্য তার চাইতে বরকতময়ী মহিলা আমি আর কাউকে দেখিনি। কি মনে এক প্রকার ধাক্কা লাগলো না? হ্যাঁ, এই ধাক্কা সত্যের। নাস্তিকরা এসব নিয়ে ভাবতে চায় না।

নাস্তিকদের মিথ্যাবিশ্বাস অনুযায়ী নবী মোহাম্মদ (সা) যদি আসলেই খারাপ মানুষ হতেন তাহলে তো উনি বনু মুস্তালিক যুদ্ধে বন্দী হওয়া নারী জুহায়রিয়াকে আগে অত্যাচার করতেন, যৌন হামলা করতেন কারণ উনি জুয়াইরিয়া,বনী মুস্তালিক অধিপতি হারিস ইবন জিরারের কন্যা ছিলেন। নবী মুহাম্মদ (সা)এর কাছে সাহায্য চাওয়ার প্রশ্নই তো আসে না। কিন্তু নবীজি (সা) কি বললেন? তুমি যদি পছন্দ করো তাহলে তোমাকে আমি পরামর্শ দিতে পারি। একটু কল্পনা করতে পারেন যুদ্ধবন্দিনী নারীকে নবী মোহাম্মদ (সা) কেমন সম্মান দিয়ে কথা বলছেন? যে তুমি যদি পছন্দ করো তাহলে তোমাকে আমি পরামর্শ দিতে পারি অথবা তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে? নাস্তিকরা মানুষকে কেমন ইসলাম দেখায় আর বাস্তবে ইসলাম আসলে কেমন চিন্তা করতে পারছেন? নাস্তিকরা আসলে ইসলামের সত্যতাকে সহ্য করতে পারে না যদি পারতো তাহলে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করতো না। এখানেই শেষ না আরও আছে, আরও আছে। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। সততার সাথে পড়ুন। নাস্তিকরা আপনার হৃদয়ে ইসলাম নিয়ে ঘৃণা তৈরি করতে চায় সেটাকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ হয়ে এসব পড়ুন। 

 

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪ খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

হজরত জুহায়রিয়া বলেন, রাসুল (সা) আমাকে মুক্ত করে বিবাহ করেন, আল্লাহ কসম! রাসুল (সা) এর সঙ্গে আমার সম্প্রদায় সম্পর্কে আমি কোন কথা বলিনি। মুসলমানরা নিজেরাই তাদেরকে আযাদ করেছেন। আমার চাচাতো বোনের এক দাসীর মাধ্যমে আমি এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। সে আমাকে এ খবর দিলে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। ওয়াকিদী বলেন, রাসুল (সা) জুয়াইরিয়ার মহর হিসেবে বনু মুস্তালিকের ৪০ জন সে মুক্ত করেন। মুসা ইবন উকবা বনু মুস্তালিক সুত্রে উল্লেখ করেন যে তাঁর পিতা তাঁর খোঁজ নেন এবং মুক্তিপণ দিয়ে তাঁকে মুক্ত করেন। তারপর রাসুল (সা) তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে তাঁর পিতা তাঁকে রাসুল (সা) এর নিকট বিবাহ দেন। - আরো বিস্তারিত জানতে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪ খণ্ড, ২৯২ থেকে ২৯৮ পৃষ্ঠা পড়ুন।

মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী (রহ) লিখিত “ইসলামের ইতিহাস” ১ খণ্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

হযরত নবী করীম (সা) জুয়াইরিয়াকে নিজে মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করিয়ে দিলেন। জুয়াইরিয়া পিতার সাথে যাওয়ার চাইতে হযরত নবী করীম (সা) এর খিদমতে থাকা অধিকতর পছন্দ করলেন। তখন তিনি জুয়াইরিয়ার ইচ্ছা অনুসারে এবং হারিসের সম্মতিক্রমে জুয়াইরিয়াকে বিবাহ করলেন। এই বিবাহের ফলে সাহাবায় কিরাম বনু মুস্তালিকের সমুদয় বন্দীকে এই বলে মুক্ত করে দিলেন যে, যে গোত্রের লোক হযরত নবী করীম (সা) এর আত্মীয় হয়ে গেছেন আমরা তাদেরকে বন্দী অথবা দাস বানিয়ে রাখতে পারি না। একই সাথে সমুদয় মালে গনীমতও তাঁরা ফিরিয়ে দিলেন । এভাবেই ইহুদীদের একটি গোত্রের সাথে এই বিবাহের ফলে শত্রুতার স্থলে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো।

পাঠক কি বুঝলেন? নিজের দুশমন পক্ষের নেতার মেয়েকে নবীজি (সা) বলছেন “এটা উত্তম হবে না যে, আমি এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা জুয়াইরিয়ার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেই ?” যদি নবীজি (সা) যুদ্ধবন্দিনী নারীদেরকে ধর্ষণ করতে চাইতেন অথবা করতে বলতেন তাহলে দুশমনের নেতার মেয়েকে কেন ইচ্ছার স্বাধীনতা দিলেন? সুযোগ সুবিধা কেন দিলেন? নাস্তিকদের মিথ্যাকথা অনুযায়ী নবীজি (সা) যদি খারাপ মানুষ হতেনই তাহলে উনি জবরদস্তি করে নিজেদের দুশমনের নেতার মেয়েকে সবার আগে ধর্ষণ করতেন অথচ উনি এরকম কিছুই করেন নাই। বরং উল্টা ভালো ব্যাবহার করেছেন সাথে সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। জুয়াইরিয়া উনি নিজেই নবীজি (সা) এর কাছে গিয়ে সাহায্য চেয়েছেন নিজের মুক্তির জন্য। ভাবা যায়? 

আপনি যদি নাস্তিক হয়ে থাকেন তাহলে একটু ভাবুন আপনাকে যারা ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যাকথা বলেছে তারা কেন বলেছে? মুক্তচিন্তায় মিথ্যাকথা বলা বৈধ এই কারণে? মিথ্যা বললে তো শারীরিক ক্ষতি হয় না এই কারণে? তাহলে কোন কারণে? বনু মুস্তালিকের নারীদেরকে যদি নির্যাতন, অত্যাচার অথবা ধর্ষণ করা হতো তাহলে কাফের নেতার সুন্দরী মেয়ে জুয়াইরিয়া উনি নবীজি (সা) এর কাছে সাহায্য চাওয়ার সুযোগই পেতেন না যেহেতু তাকেও অত্যাচার করা হবে,হচ্ছে,হচ্ছিলো? আর কিভাবে বুঝালে আপনি সত্যকে অনুধাবন করতে পারবেন? কিভাবে বুঝালে আপনি ইসলামকে সঠিকভাবে জানবেন?

জুয়াইরিয়া উনি সুন্দরী নারী ছিলেন তাই উনার বিষয়ে খারাপ চিন্তা করলে নবীজি (সা) অবশ্যই উনাকে স্বাধীনতা দিতেন না বরং আগে যৌন হামলা করতেন অথচ এই ধরনের কিছুই ঘটেনি। এই সত্যিকথা কি নাস্তিকান্ধদের মাথায় প্রবেশ করতে অক্ষম? পুরো ঘটনাই প্রমাণ করছে উনাদেরকে ধর্ষণ করা হয়নি, নির্যাতন করা হয়নি,অত্যাচার করা হয়নি। বরং এক জুহায়রিয়ার কারণে সমস্ত বন্দীদেরকে মুক্ত করে দেয়া হয়। মুক্তমনারা পুরো ঘটনা না বলে হাদিস থেকে অর্ধেক তথ্য দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।

 

নবীজি (সা) জুয়াইরিয়া (রা) কে মতামত দেবার স্বাধীনতা দিলে জুয়াইরিয়া (রা) বলেন আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে গ্রহন করেছি। অথচ জার্মানে বসে বসে মূর্খমনা নাস্তিকটি বলছে “যুদ্ধবন্দী দাসীরা কি বলেছে না বলেছে সেটি নিশ্চয়ই ইসলামিক সোর্সে লেখা থাকবে না”। অন্ধমনা নাস্তিকদের কাছে এসব কথা সহ্য হবে না, আমি জানি। কারণ ইসলাম নিয়ে নাস্তিকরা এতদিন যা বিশ্বাস করে আসছে তা যে আসলেই ভুল এটা কি সহজে নাস্তিকরা মেনে নিবে আপনিই বলুন? 

 

প্রশ্ন গুলো অবশ্যই ভাবিয়ে তুলবার মতো। নবীজি (সা) যদি স্বার্থপর খারাপ হতেনই তাহলে কাফের নেতার সুন্দরী মেয়েকে নিজের মতামত প্রদানের সম্পুর্ন স্বাধীনতা পাওয়া সত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামকেই কেন গ্রহণ করে নিলেন? ইসলাম কেন গ্রহণ করলেন? আজীবন কেন ইসলামের পক্ষেই থেকে গেলেন? ইসলামের বিপক্ষে জুয়াইরিয়া (রা) কখনোই কিছু করেন নাই কেন? তাই যৌক্তিক মস্তিস্কের সুস্থ সচেতন মানুষ এটা বলতে বাধ্য যে যুদ্ধবন্দিনীদেরকে ধর্ষণ করা হয়ই নাই বরং তাদের সাথে মানবিক আচরণ করা হয়েছিল। এমনকি কাফের নেতার সুন্দরী যুদ্ধবন্দিনী নারী থেকেই এটা স্পষ্ট প্রমাণ হয়ে যায়। 

নাস্তিকরা এখানে বলতে পারে একজন মাত্র যুদ্ধবন্দিনীর আচরণ ভালো হলেই যে সবার আচরণ সাথে ভালো আচরণ করা হবে তা কিভাবে বুঝা যাবে? আসলে নাস্তিকরা তো মানুষের মতো যৌক্তিক চিন্তা করতে পারে না এই কারণে এসব অযৌক্তিক প্রশ্ন করে। নাস্তিকদের বিশ্বাস নবী মোহাম্মদ (সা) ধর্ষক তাহলে উনি যদি আসলেই সেটাই হতেন তাহলে উনি নিজেই আগে দুশমন পক্ষের নেতার মেয়েকে ধর্ষণ করতেন কিন্তু বিশুদ্ধ ইতিহাস আমাদেরকে উল্টো তথ্যই দিচ্ছে। তাহলে নবী মোহাম্মদ (সা) যেখানে যুদ্ধবন্দিনীর সাথে এমন আচরণ করেছেন তাহলে উনার সাহাবীরা কেমন আচরণ করবেন সেটা সহজেই বুঝা যায়। কারণ সাহাবীরা উনাকেই অনুসরণ করতেন। উনি যাই বলতেন সেটাই মেনে নিতেন। পড়তে থাকুন আরও নতুন নতুন অজানা সত্যি আপনি জানতে পারবেন।

নবীজি (সা) বনু মুস্তালিকের নেতার কন্যাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন এবং উনাদেরকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল আর উনারা সবাই স্বেচ্ছায় মুসলিম হয়েছিল ইত্যাদি আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের “সীরাতে বিশ্বকোষ”,৭ খণ্ড, ৩০ থেকে ৩১ পৃষ্ঠা পড়ুন // বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর ইবনে কাছীর প্রণেতা আল্লামা এমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর রচিত মহানবী (সা) এর নির্ভরযোগ্য জীবনী গ্রন্থ “সীরাতে ইবনে কাছীর”, ৮৬ পৃষ্ঠা পড়ুন // মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী লিখিত “ইসলামের ইতিহাস” ১ খণ্ড, ১৭০ থেকে ১৭৩ পৃষ্ঠা পড়ুন // আর রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৩৩১ থেকে ৩৩৩ পৃষ্ঠা পড়ুন // আবু আহমদ সাইফুদ্দীন বেলাল (হা;ফি) লিখিত “সীরাতুল হাবীব”, ১৪৪ পৃষ্ঠা পড়ুন // সহজ ইন আমুলবারী শরহে বুখারী মাগাযী ও তাফসীর অংশ,১৩ খণ্ড, ১৪৭ থেকে ১৫৩ পৃষ্ঠা পড়ুন // আনওয়ারুল মিশকাত শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, ৪ খণ্ড, ৪৩৩ পৃষ্ঠা পড়ুন // ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবী লিখিত "নবীজর যুদ্ধ জীবন পাঠ ও পর্যালোচনা" ৩০৪ থেকে ৩০৮ পৃষ্ঠা পড়ুন // হযরত মাওলানা হাকীম আবুল বারাকাত আবদুর রউফ দানাপুরী (রহ) লিখিত "আসাহহুস সিয়ার" ১৪৩ থেকে ১৪৬ পৃষ্ঠা পড়ুন।

ইসলাম কি শিক্ষা দেয়?

যেখানে ইসলাম মুসলিমদেরকে এই শিক্ষা দিচ্ছে অশ্লীলতার কাছেও যেও না সেখানে যুদ্ধবন্দিনী নারীদেরকে ধর্ষণ করা ইসলামের বিধান হবে- এই টাইপের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর। যদি ধর্ষণ করা ইসলামের বিধান হতো তাহলে কুরআনে এরকম আয়াত অনেক থাকতো যে তোমরা বেশি করে ধর্ষণ করো কিন্তু নেই কেন? এমনকি হাদিসেও এরকম কথা থাকতো যে ধর্ষণ করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে কিন্তু এরকম হাদিসের অস্তিত্বই নেই? বরং এর বিপরীত কথা কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়। তাহলে ধর্ষণ করা ইসলামের বিধান এরকম ডাহামিথ্যে কথা নাস্তিকরা কিভাবে বানাচ্ছে?

আল কুরআন, সূরা আনয়াম ৬ঃ১৫১ আয়াত থেকে বর্ণিতঃ 

তোমরা অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না।সেটা গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে।

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ২৭১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) নিজেও অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীলতাকে তিনি পছন্দও করতেন না। তিনি বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম স্বভাব-চরিত্রের লোকই সর্বোত্তম।-ihadis.com

আল লু'লু ওয়াল মারজান,হাদিসঃ ১৭৫৫, হাদিস সহিহ থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিষিদ্ধ কার্যে মু’মিনদেরকে বাধা দানকারী আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক কেউ নেই,এজন্যই প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করেছেন,আল্লাহ্‌র প্রশংসা প্রকাশ করার চেয়ে প্রিয় তাঁর কাছে অন্য কিছু নেই, সেজন্যেই আল্লাহ আপন প্রশংসা নিজেই করেছেন।-ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৬৯৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

লায়স (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সুফীয়্যাহ বিন্‌ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমর (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী (রহঃ) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল, বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জারিমানা নেই। কিন্তু তার উপর ‘হদ’ জারি হবে।- ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৭৪৪৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, 'আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর দু'জন বাদী ছিল। একজনের নাম ছিল মুসাইকাহ এবং অপরজনের নাম ছিল উমাইমাহ। সে দু'জন বাদীকে দিয়ে জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি করাতো। তাই তারা এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অভিযোগ করল। তখন আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন : “তোমাদের বাদীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে জোর-জবরদস্তি করবে না। আর যে তাদেরকে জোরজবরদস্তি করে তবে তাদের (বাদীদের) উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩৪৪৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যদি কোন লোক তার দাসীকে শিষ্টাচার শিখায় এবং তা উত্তমভাবে শিখায় এবং তাকে দ্বীন শিখায় আর তা উত্তমভাবে শিখায় অতঃপর তাকে মুক্ত করে দেয় অতঃপর তাকে বিয়ে করে তবে সে দু’টি করে সওয়াব পাবে। আর যদি কেউ ‘ঈসা (‘আঃ)-এর উপর ঈমান আনে অতঃপর আমার প্রতিও ঈমান আনে, তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে। আর গোলাম যদি তার রবকে ভয় করে এবং তার মনিবদের মান্য করে তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে।-ihadis.com

এসব তথ্য প্রমাণ থেকে এটা পরিস্কার যে ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে অশ্লীলতার কাছেও না যাওয়া, দাসীদের সাথে ভালো আচরণ করা এবং তাদেরকে আদব কায়দা শিখানো এরপরে বিয়ে করলেও বেশি সওয়াব। কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে এমন একটি মাত্র কথাও পাওয়া যায় না যে যেখানে বর্ণিত আছে যে “দাসীদেরকে ধর্ষণ করলে অনেক সওয়াব হয়” অথবা “আল্লাহ বলছেন তোমরা দাসীদেরকে ধর্ষণ করো”।

সামনে আরও বিস্তারিত পরিস্কার এমন এমন প্রমাণ পেশ করব যা নাস্তিকান্ধরা ভুলেও চাইবে না মানুষ এসব জানুক। ইসলামকে সঠিক ভাবে জানতে চায়,বুঝতে চায় এরকম মানুষও যেন এসব তথ্য না জানতে পারে এর জন্যও নাস্তিকরা চেষ্টার কমতি রাখবে না। কিন্তু আমি কি এটা হতে দিতে পারি? ইসলামকে জানতে হলে আপনাকে ইসলামের দৃষ্টিতেই জানতে হবে।

এমন কঠিন নিয়ম নিজেদের জন্য কেন বানাবেন?

যদি কোনো নেতা খারাপ হয়, স্বার্থপর হয়,ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয় সাথে উনার অনুসারীরাও তেমন হয় তাহলে এরকম খারাপ মানুষরা অবশ্যই যুদ্ধে জিতার পর এমন নিয়ম বানাবে না যাতে ধর্ষণ করতে অসুবিধা হয় বরং এমন নিয়ম বানাবে যাতে দ্রুত ধর্ষণ করা যায় অথবা কোনো নিয়মই বানাবে না। কারেক্ট? হুম। এবার এই হাদিসটি পড়ুন।

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ২১৫৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেও সঙ্গম করা যাবে না।- ihadis.com

যেসব নারীরা প্রেগন্যান্ট তাদের সাথে সহবাস করা যাবে না। যেসব নারীদের হায়েজ চলছে তাদের সাথেও সহবাস করা যাবে না। নির্যাতন,অত্যাচার বা যৌন হামলা করার ইচ্ছা থাকলে এরকম নিয়ম কেউ বানাতে পারে কিভাবে? নবীজি (সা) এরকম নিয়ম কেন বানালেন যদি উনার খারাপ উদ্দেশ্য থাকতই? কি হিসাব মিলাতে পারছেন না তো? কথায় আছে না “চোর চুরি করার ছাপ ঠিকই রেখে যায়” তেমনি নাস্তিকরা যতোই মিথ্যাকে সত্যি করে দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন নাস্তিকদের মিথ্যাচার ধরা খাবেই। এইবার এই হাদিসটিও পড়ুন। 

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৩৫০৩,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃআওত্বাস-এর যুদ্ধে কিছু কয়েদী সাহাবীগনের হস্তগত হয়, যাদের স্বামী ছিল। তারা তাদের সাথে সঙ্গম করতে ভয় পেলেন। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়- “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ। - ihadis.com

বনু মুস্তালিকের নারীদেরকে যদি যৌন নির্যাতন,যৌন অত্যাচার, যৌন হামলা করার উদ্দেশ্য নবীজি (সা) এর সাহাবীদের থাকতই তাহলে উনারা সহবাস করতে ভয় কেন পেলেন? ধর্ষকরা কি ধর্ষণ করতে ভয় পায় নাকি জবরদস্তি করে হলেও ধর্ষণ করে? কোনটা? ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি নারীর সাথে সহবাস করতে ভয় পায় তাহলে এমন মানুষ কি কখনো ধর্ষণ করতে পারে? নারীকে অত্যাচার করতে পারে? নির্যাতন করতে পারে? কি মনে হয় আপনার? এর একটাই যৌক্তিক অর্থ হয় অর্থাৎ সাহাবীরা অবশ্যই বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদেরকে ধর্ষণ করেনই নাই, ধর্ষণের ইচ্ছাও পোষণ করেন নাই। যদি এরকম ইচ্ছা করতো তাহলে নিজেদের জন্য সধবা (যে স্ত্রীর স্বামী জীবিত আছে) নারীদেরকে কেন নিষিদ্ধ করলো? হায়েজ অবস্থায় সহবাস কেন নিষিদ্ধ করলো? যেসব নারীদের স্বামী আছে তাদের সাথে সহবাস কেন নিষিদ্ধ করলো? নারীদের হায়েজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সহবাস নিষিদ্ধ প্রশ্ন হচ্ছে কোনো ভয়ংকর ধর্ষকরা কি নারীর হায়েজ শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে পারে? এই অকাট্য যৌক্তিক প্রশ্ন গুলো যেকোনো চিন্তাশীল মানুষ সহজেই বুঝতে পেরে যাবে কিন্তু বিবর্তিত মস্তিস্ক এই প্রশ্ন গুলো বুঝবেই না। বিবর্তিত মগজে এসব প্রশ্নকে গোঁজামিল মনে হবে। এইবার এই হাদিসটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ২১৫৫,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃহুনাইনের দিন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আওতাসের দিকে একদল সৈন্য পাঠালেন। তারা শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়ে তাদের নারীদেরকে বন্দি করে আনেন। কিন্তু সেই বন্দী নারীদের মুশরিক স্বামীরা বর্তমান থাকায় কতিপয় সাহাবী তাদের সাথে সঙ্গম করাকে গুণাহ মনে করেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “যে মহিলাদের স্বামী আছে, তারা তোমাদের জন্যে হারাম। তবে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত” (সূরা আন-নিসাঃ ২৪)। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী দাসী যখন তাদের ইদ্দতকাল সমাপ্ত করবে তখন তারা তোমাদের জন্যে বৈধ।-ihadis.com

বুলগুল মারাম,হাদিসঃ ১২৮৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ আওতাস নামক যুদ্ধে আমরা এমন কিছু যুদ্ধবন্দিনী লাভ করি যাদের স্বামী রয়েছে। ঐ বন্দিনীদের সাথে সহবাসকে মুসলিমগণ গুনাহের কাজ মনে করলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ আয়াত নাযিল করলেন- স্বামীওয়ালা মেয়েরা তোমাদের জন্য হারাম, বন্দিনী দাসী মেয়েদের ক্ষেত্রে তা নয়।-ihadis.com

ধর্ষণ করার উদ্দেশ্য হলে এই আইনও কেন বানাতে হলো? যেসব যুদ্ধবন্দিনী নারীদের স্বামী আছে তাদের সাথে সহবাস করা হারাম কেন করা হলো? বরং যাদের স্বামী আছে তাদেরকেই আগে ধর্ষণ করতে হবে এমন কথা কেন বলা হলো না? দাসীদেরকে ধর্ষণ করো তাদেরকে নির্যাতন-অত্যাচার করো এরকম বিধান কেন দেয়া হলো না? নবীজি (সা) এরকম আইন কেন দিলেন যেই আইনের ফলে কোনো যুদ্ধবন্দিনী নারীকে কেউ ধর্ষণ করতে পারবেই না? সুযোগই নেই? পাঠক আমার কি আরো স্পষ্ট করতে হবে যে ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধবন্দিনী নারীদের আইন কেমন? অথচ নাস্তিকরা দাবি করে সেই সব সাহাবীরা নাকি স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিল-কিভাবে এরা এমন ঠাণ্ডা মাথায় মিথ্যা কথা বলতে পারে?

সীরাতে বিশ্বকোষ, ৭ খণ্ড, ২৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,

যুদ্ধশেষে রাসুল (সা) গনীমত মুসলিম যোদ্ধাদের মধ্যে বণ্টন করার নির্দেশ দেন। বন্দীদের বণ্টনের দায়িত্ব প্রদান করেন বুরায়দা ইবনুল খাসীব (রা)কে আসবাবপত্র, অস্র পাতি, উট , বকরী প্রভুতি বণ্টনের দায়িত্ব দেন রাসুল (সা) এর মুক্তদাস শুকরান (রা) এর উপর, এক পঞ্চমাংশ (খুমুস) বণ্টনের দায়িত্ব দেন মাহমিয়া ইবন জাযই (রা) এর উপর। - (উয়ুনুল আছার, ২ খণ্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা । সবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৪ খণ্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা) এছাড়া আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৪ খণ্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, এ যুদ্ধে রাসুল (সা) তাদের অনেককে বন্দী করে মুসলিমদের মাঝে বণ্টন করেন।

মন দিয়ে বুঝুন। ধর্ষণ করার আইন থাকলে সবাই সিরিয়াল করে ধর্ষণ করতে পারবে এই বিধান থাকতো। বন্টন করার আইনই থাকতো না। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যদি ইসলাম আসলেই যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করার আইন থাকতো তাহলে যুদ্ধের পর দাসী বণ্টনের আইন থাকতো না বরং সবাই সবার দাসীকে ধর্ষণ করবে,নির্যাতন করবে - এরকম আইনই থাকতো।অথচ এরকম আইন ইসলামে নেই।কেন? দাসীকে যদি নির্যাতন,অত্যাচার করতেই হয় তাহলে ইসলাম কেন মুক্তিপণের আইন করলো? এক লোক প্রেগন্যান্ট দাসীর সাথে সহবাস করতে চাইলে নবীজি (সা) সেই লোককে অভিশাপ দেন,হুমকি দেন। এরপরেও নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে নাস্তিকরা অন্ধবিশ্বাস করে যাবে?

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৩৪৫৪,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃএকদা আসন্ন প্রসবা জনৈকা গর্ভবতী দাসীকে তাঁবুর দরজায় আনা হয়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ সম্ভবত ঐ ব্যক্তি তার সাথে সঙ্গম করতে চায়। লোকেরা বলল, হাঁ। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আমি মনে করেছি, তাকে এমন লা’নাত দেই, যে লা’নাতসহ সে ক্ববরে প্রবেশ করে। কিভাবে সে তাকে দাসীর গর্ভস্থ সন্তানকে ওয়ারিস বানাবে অথচ তা তার জন্য বৈধ নয়? কেমন করে সে তাকে সন্তানকে খাদিম বানাবে অথচ সে তার জন্য বৈধ নয়।- ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ২১৫৮,হাসান হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

রুয়াইফি’ ইবনু সাবিত আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃহানাশ (রহঃ) বলেন, একদা রুয়াইফি’ আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ প্রদানের সময় বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা কিছু শুনেছি তোমাদেরকে শুধু তাই বলব। তিনি হুনাইনের দিন বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্যে বৈধ নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচন করেন। অর্থাৎ গর্ভবতী মহিলার সাথে সঙ্গম করা। যে ব্যক্তি আল্লহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার জন্যে বৈধ নয় কোন বন্দী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে পবিত্র হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্যেও বৈধ নয় বন্টনের পূর্বেই গণীমাত বিক্রয় করা। -ihadis.com

এমন আইন বানালে কেউ যুদ্ধে জিতে নারীদেরকে কিভাবে ধর্ষণ করবে? প্রেগন্যান্ট থাকলে সহবাস করা যাবে না, হায়েজ চলাকালীন সহবাস করা যাবে না, যার স্বামী জীবিত আছে তার সাথে সহবাস করা যাবে না। ভয়ংকর সন্ত্রাসী ধর্ষকরা নিজেদের জন্য এমন নিয়ম বানাতে পারে? মুক্তমনারা কেন ইসলাম নিয়ে সুস্থচিন্তা করতে পারছে না? নাস্তিকদের কি মানুসিক চিকিৎসা দরকার? মুক্তমনারা মানুষের মতো চিন্তা করা কবে শিখবে? নিজের স্ত্রীর দাসীর সাথে ভুলে এক লোক সহবাস করার ফলে হযরত ওমর (রা) একশ বেত্রাঘাত করেন উক্ত লোককে। হযরত ওমর (রা) যদি ইসলাম থেকে এই শিক্ষা পেতেন যে দাসীকে ধর্ষণ করা বৈধ তাহলে উনি এই শাস্তি কখনোই দিতেন না।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২২৯০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ যিনাদ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু হামযা ইবনু আমর আসলামী (রহঃ)-এর মাধ্যমে তাঁর পিতা হতে থেকে বর্ণিতঃ ‘উমার (রাঃ) তাঁকে সাদকা উশুলকারী নিযুক্ত করে পাঠান। সেখানে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সাথে ব্যভিচার করে বসল। তখন হামযা (রহঃ) কিছু লোককে তার পক্ষ হতে যামিন স্থির করলেন। পরে তিনি ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট ফিরে আসলেন। ‘উমার (রাঃ) উক্ত লোকটিকে একশ’ বেত্রাঘাত করলেন এবং লোকদের বিবরণকে সত্য বলে গ্রহণ করলেন। তারপর লোকটিকে তার অজ্ঞতার জন্য (স্ত্রীর দাসীর সাথে যৌন সম্ভোগ করা যে অবৈধ তা সে জানত না) অব্যাহতি দেন। জরীর ও ‘আশ’আস (রহঃ) মুরতাদ-ধর্মচ্যুত ব্যক্তিদের সম্পর্কে ‘আবদুল্লাহ [ইবনু মাসঊদ (রাঃ)]-কে বলেন, তাদেরকে তাওবাহ করতে বলুন এবং গোত্রের লোকেরা তাদের যামিন হয়ে গেল। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি যামিন হবার পর মৃত্যুবরণ করে তবে সে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। হাকাম (রহঃ) বলেন, তার উপর দায়িত্ব থেকে যাবে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের উপর সে দায়িত্ব বর্তাবে)।-ihadis.com

যদি দাসীকে ধর্ষণ করা ইসলামের বিধান হতো তাহলে স্ত্রীর দাসীকে কেন ধর্ষণ করার বিধান দেয়া হলো না? যে কোনো দাসীর সাথে জবরদস্তি করে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে এমন বিধান ইসলামে নেই কেন?  নাস্তিকরা এখানে বলতে পারে স্ত্রী রাগ করবে বলে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম নাকি স্ত্রীকেও নির্যাতন করার অনুমতি দেয় যদিও এটা ডাহামিথ্যে কথা তাহলে স্ত্রীর দাসীর সাথে সহবাস নিষেধ কেন করা হলো? স্ত্রীর দাসীকে তোমরা ধর্ষণ করো এমন বর্ণনা কুরআন ও হাদিসে নেই কেন? নাস্তিকরা কি উত্তর দেবে এসব যৌক্তিক প্রশ্নের? আরও বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা ব্যাখ্যা করবে? ইসলামে দাসীকে ধর্ষণ করার বিধান থাকলে তো যে কোনো দাসীকেই জবরদস্তি করে যৌন নির্যাতনের আদেশ দেয়া থাকতো কিন্তু নেই কেন? নাস্তিকরা ইসলামের তথ্য গুলোকে বানিয়ে বানিয়ে মুক্তমনে মিথ্যাচার করে এই কথার সত্যতার আরও প্রমাণ লাগবে আপনাদের?

সাহাবীরা যুদ্ধবন্দিনীদের স্বামীর সামনেই ধর্ষণ করতো?

মুক্তমনারা নাস্তিকরা রসিয়ে রসিয়ে বানিয়ে বানিয়ে এভাবে বলে যে,

সেইসব স্বামীর সামনেই তাদের স্ত্রীদের ধর্ষণ করতে অনেক সাহাবীই সংকোচ করতেন। কী মহান আর করুনাময় আল্লাহ পাক এবং তার নবী। একটুও চিন্তা করার সময় ব্যয় না করে সাথে সাথে আয়াত নাজিল করে দিলেন, যেন সাহাবীগণ ঐসব কাফের স্বামীদের সামনেই তাদের স্ত্রীদের ঠিকমত ধর্ষণ করতে পারে! আল্লাহ ও তার নবীর দয়ার আসলে সীমা নেই!

সহীহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৫০০, সহিহ হাদিস, আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনায়ন-এর যুদ্ধের সময় একটি দল আওত্বাস-এর দিকে পাঠান। তারা শত্রু দলের মুখোমুখী হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্যে থেকে দাসীদের সাথে যৌন সঙ্গম করা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবা যেন নাজায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ‘ইদ্দাত পূর্ণ করে নিবে।-ihadis.com 

আমরা সবাই জানি নাস্তিকরা নিজেদের মিথ্যা কথা গুলোকে সত্যি প্রমাণ করার জন্য মুক্তচিন্তায় নানান কৌশল করে ইসলামের সমালোচনা করে থাকে। মুক্তমনারা এখানে খুব সুক্ষ একটি মিথ্যাচার করেছে। নাস্তিকরা দাবি করেছে সাহাবীরা যুদ্ধবন্দী স্বামীদের সামনে তাদের স্ত্রীদেরকে ধর্ষণ করেছে অথচ হাদিসে এমন কিছুই বলা নেই। বরং হাদিসটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে স্পষ্ট হয় যে সেই সব সাহাবীদেরকে তাদের সাথেই সহবাস করবার অনুমতি দেয়া হয়েছিল যাদের বিবাহ হয় নি এবং যাদের বিবাহ হয়নি তাদের ইদ্দত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। তাহলে এখানে ধর্ষণ কিভাবে হয়? ধর্ষণ করতে চাইলে তো এমন নিয়মের কোনো দরকারই নাই। আসুন সরাসরি একটি হাদিস মন দিয়ে পাঠ করে দেখি। নাস্তিকরা খুবই কৌশলে এই হাদিস গুলোর ভাবার্থকে ধামাচাপা দিয়ে রাখে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৫৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ হুনাইনের দিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওতাসের দিকে একদল সৈন্য পাঠালেন। তারা শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়ে তাদের নারীদেরকে বন্দি করে আনেন। কিন্তু সেই বন্দী নারীদের মুশরিক স্বামীরা বর্তমান থাকায় কতিপয় সাহাবী তাদের সাথে সঙ্গম করাকে গুণাহ মনে করেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “যে মহিলাদের স্বামী আছে, তারা তোমাদের জন্যে হারাম। তবে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত” (সূরা আন-নিসাঃ ২৪)। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী দাসী যখন তাদের ইদ্দতকাল সমাপ্ত করবে তখন তারা তোমাদের জন্যে বৈধ।-ihadis.com


বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ১১৮৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আওতাস নামক যুদ্ধে আমরা এমন কিছু যুদ্ধবন্দিনী লাভ করি যাদের স্বামী রয়েছে। ঐ বন্দিনীদের সাথে সহবাসকে মুসলিমগণ গুনাহের কাজ মনে করলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ আয়াত নাযিল করলেন- স্বামীওয়ালা মেয়েরা তোমাদের জন্য হারাম, বন্দিনী দাসী মেয়েদের ক্ষেত্রে তা নয়।-ihadis.com

যদি সাহাবীরা নাস্তিকদের মতো মুক্তচিন্তায় যুদ্ধবন্দীনিদেরকে ধর্ষণ করতে চাইতোই এমনকি নবী মোহাম্মদ (সা) উনার অনুসারীদেরকে নারী ধর্ষণ করতে আদেশ করতোই তাহলে যেসব নারীদের স্বামী আছে তাদেরকে কেন নিষেধ করবে? এমনকি ইদ্দত পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করতে বলবে? ধর্ষণ করতে চাইলে তো সাথে সাথেই সবাইকে জবরদস্তি করে বেঁধে ধর্ষণ করা যায়, তাই নয় কি? তাছাড়া সাহাবীরা এই কারণে পাপ মনে করেছিল যে দাসীদের স্বামী ছিল কিন্তু পড়ে যখন জানতে পারে স্বামী যাদের আছে সেই সব দাসীদের সাথে সহবাস জায়েজ নেই কিন্তু যাদের স্বামী নাই সেই সব দাসীদের ইদ্দত শেষ হলে সহবাস বৈধ হবে। অথচ নাস্তিকরা কিভাবে সাহাবীদের নামে, নবী মোহাম্মদ (সা) নামে মিথ্যা মিথ্যা কথা ঠাণ্ডা মাথায় বলে যাচ্ছে। আচ্ছা নাস্তিকরা কবে মানুষে সম্পূর্ণ বিবর্তিত হতে পারবে?

যুদ্ধবন্দিনী সাফিয়াকে নবী মোহাম্মদ সারারাত চাবুক দিয়ে পেটাতেন?

হযরত সাফিয়া (রা) এর সাথে নবীজি মোহাম্মদ (সা) এর আচরণ গুলোই প্রমাণ করবার জন্য যথেষ্ট যে ইসলামে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে কেমন পর্যায়ের আচরণ করা বাধ্যতামূলক। নাস্তিকরা সব সময় ইসলাম নিয়ে এই অন্ধবিশ্বাস করে বসে থাকে যে যেহেতু বেশির ভাগ যুদ্ধেই নারীদেরকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা হয় সেহেতু নবী ও সাহাবীরা হয়তো একই কাজ করে থাকবে। কিন্তু নাস্তিকদের কাছে অন্ধবিশ্বাস ছাড়া তেমন শক্তিশালী প্রমাণ নেই। কিন্তু আমার কাছে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে যে ইসলামে যুদ্ধবন্দিনীদেরকে নির্যাতন অত্যাচার করা যেখানে নিষেধ সেখানে তাদেরকে ধর্ষণ করা তো দূরের কথা। আসুন দেখি হযরত সাফিয়া (রা) যিনি ছিলেন যুদ্ধবন্দিনী। উনার সাথে নবীজি মোহাম্মদ (সা) কেমন আচরণ করেছেন?

সীরাতুর রাসুল (সা),লেখক মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব, পৃষ্ঠা ৪৯৪। এছাড়াও বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থে যেমন আর রাহীকুল মাখতুম, ইবনে হিশাম, সীরাতুন্নবি (সা) পাবেনঃ

খয়বর যুদ্ধ শেষে যখন যুদ্ধবন্দীদের একত্রিত করা হয় তখন দাহিয়া কালবি (রা) এসে বলল ,হে আল্লাহ্‌র রাসুল (সা) আমাকে বন্দীদের থেকে একটা দাসী প্রদান করুন । নবীজি (সা) বললেন যাও একজন দাসী নিয়ে যাও । তখন তিনি সাফিয়া (রা)কে নিয়ে যান । এক ব্যাক্তি রাসুল (সা) কে বললেন, আপনি কি সাফিয়াকে দাহিয়া কালবিকে প্রদান করলেন? সাফিয়া বিনতে হুয়াই ছিলেন কুরাইজা ও নাজীর গোত্রের সর্দারের কন্যা , তিনি তো আপনারই যোগ্য। তখন রাসুল (সা) দাহিয়াকে ডেকে এনে বলল তুমি এর বদলে তথা সাফিয়া ছাড়া অন্য যে কোন দাসী নিয়ে নাও।পরিশেষে নবী (সা) সাফিয়াকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সাফিয়া (রা) কবুল করেন ও নবীজি তাঁকে মুক্ত করে বিয়ে করেন

সাফিয়া (রা) প্রথমে নবী মোহাম্মদ (সা)কে ঘৃণা করতেন কিন্তু নবীজি (সা) উনাকে উনার পিতা,স্বামী ও ভাইদের ব্যাপারে বুঝিয়েছেন যে তাদের অপরাধের কারণেই উনাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধবন্দিনী সাফিয়া (রা) যখন সত্যিটা বুঝতে পারলেন তখন থেকেই উনি নবী মোহাম্মদ (সা)কে মন থেকেই ভালোবাসতেন। যুদ্ধবন্দিনীদেরকে কনভিন্স করা ইসলামের বিধান। পড়তে থাকুন সংশয়ের রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পেয়ে যাবেন।

আসাদুল্লাহ আল গালিব লিখিত “সীরাতুল রাসুল (সা)” বইয়ের ৪৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত সাফিয়া (রা) বলেন, আমার নিকট রাসুল (সা) এর চাইতে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি কেউ ছিল না কারন তিনি আমার পিতা ও স্বামীকে হত্যা করেছেনঅতপর রাসুল (সা) আমার নিকট বার বার ওজর পেশ করেন এবং বলেন হে সাফিয়া তোমরা পিতা আমার বিরুদ্ধে আরবদের জমা করেছিলেন । তাছাড়া অমুক অমুক (অন্যায়) কাজ করেছিলেন, অবশেষে আমার অন্তর থেকে তাঁর উপরে বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়

খেয়াল করুন সাফিয়া (রা) এর পিতা ও স্বামীকে তাদের অন্যায়ের কারণে নবী (সা) মৃত্যুদণ্ড দিলে , সাফিয়া (রা) প্রথমে নবীর প্রতি বিদ্বেষ থাকলেও যখন সাফিয়া (রা) বুঝতে পারলেন যে তার পিতা ও স্বামী সন্ত্রাসী ছিলেন ঠিক তখনই সে নবী (সা) কাজকে সাপোর্ট করেন এবং নবীর প্রতি যেই বিদ্বেষ সেটা দূর হয়ে যায়। যেই সব নাস্তিকরা ঠাণ্ডা মাথায় এই মিথ্যা কথাটি বলে যে নবী মোহাম্মদ (রা) ও সাহাবীরা যুদ্ধে নারী ধর্ষণ করতো তারা এই ক্ষেত্রে কি জবাব দেবে যে নবী মোহাম্মদ (সা) যুদ্ধন্দিনী সাফিয়া (রা)কে বুঝাচ্ছেন? নবী মোহাম্মদ (সা) যদি আসলেই নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস মতে খারাপ ও সন্ত্রাসী মানুষ হতেন তাহলে উনি কেন সাফিয়া (রা)কে বুঝাতে চাবেন? কেন সাফিয়া (রা)কে মানাতে যাবেন? উনি তো চাইলেই জবরদস্তি করতে পারতেন, করেন নাই কেন? উনি তো চাইলেই সাহাবীদের দিয়ে জবরদস্তি উনাকে বেঁধে রেখে যা ইচ্ছে করতে পারতেন কিন্তু করেন নাই কেন? এমনকি এরপরেও নবী মোহাম্মদ (রা) সাফিয়া (রা)কে জিজ্ঞেস করতেন আমার ব্যাপারে তোমার আগ্রহ আছে কি? পড়ুন যুদ্ধবন্দিনী সাফিয়া (রা) যেই জবাব দিয়েছিলেন।

পিস পাবলিকেশন, রাসুলুল্লাহ (সা)এর স্ত্রীগণ যেমন ছিলেন, ১৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

খয়বার যুদ্ধ বিজয়ের পর সাফিয়া (রা) বন্ধী হয়ে আসলে এক সময় তাঁকে রাসুল (সা) জিজ্ঞেস করলেন, আমার ব্যাপারে তুমার কোন আগ্রহ আছে কি? তিনি উত্তরে বললেন, শিরিকের মধ্যে নিমজ্জিত থাকার সময় আমি এই আশা পোষণ করতাম। সুতরাং ইসলাম গ্রহনের দ্বারা আল্লাহ্‌ আমাকে আপনার সাহচর্য লাভের যে সুযোগ দিয়েছেন,সে সুযোগ আমি কি ভাবে হারাতে পারি? 

সাফিয়া (রা) স্বেচ্ছায়, নির্ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। পড়ুন।

পিস পাবলিকেশন, রাসুলুল্লাহ (সা) স্ত্রীগণ যেমন ছিলেন, ১৫২ ও ১৫৩ পৃষ্ঠা থেকে বর্ণিত, 

নবী মুহাম্মদ (সা) সাফিয়া (রা)কে বললেন তুমি যা ইচ্ছা পছন্দ করো, বেছে নেও। যদি তুমি ইসলামকে পছন্দ করো তাহলে আমি তোমাকে আমার জন্য রেখে দিব আর যদি তুমি ইহুদী ধর্ম মতকে পছন্দ করো তাহলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দিব , যাতে তুমি তোমার কওমের সাথে মিলিত হতে পারোতিনি বললেন হে আল্লাহ্‌র রাসুল আমি ইসলামকে ভালবেসেছি। আপনি আমাকে দাওয়াত দেওয়ার আগেই আমি আপনাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি। এমনকি আমি আপনার সওয়ারীতে চড়েছি । ইহুদী ধর্মের প্রতি আমার আর কোন আকর্ষণ, আগ্রহ নাই আর সেখানে আমার পিতা ভাই কেউই নাই । আপনি কুফুরি বা ইসলাম যে কোনটি গ্রহনের এখতেয়ার (স্বাধীনতা) দিয়েছেন । আল্লাহ ও রাসুলই আমার নিকট অধিক প্রিয় , স্বাধীন হওয়ার চেয়ে। তখন রাসুল (সা) সাফিয়াকে নিজের জন্য রেখে দিলেন । মুক্ত করে বিয়ে করেন।

নবী মোহাম্মদ (সা) যুদ্ধবন্দিনী সাফিয়া (রা)কে সম্পূর্ণ সুযোগ করে দেন এরপরেও যুদ্ধবন্দিনী নারী নবী মোহাম্মদ (সা)কেই পছন্দ করে নেন। নাস্তিকরা এই তথ্য গুলোকে যেভাবেই হোক অস্বীকার করবার চেষ্টা করবে। কারণ নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে যেই অন্ধবিশ্বাস করে থাকে সেটা যে ভুল এটা নাস্তিকরা সহজেই স্বীকার করতে চাইবে না নিজেদের অহংকারের জন্য।

পিস পাবলিকেশন, রাসুলুল্লাহ (সা) স্ত্রীগণ যেমন ছিলেন, ১৫২ পৃষ্ঠা থেকে বর্ণিত,

সাফিয়া (রা) কোথাও যেতে রাজি হলেন না। তিনি নবী মুহাম্মদ (সা)এর কাছে বিনীত আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) খয়বার যুদ্ধে আমার পিতা ও স্বামী নিহত হয়েছেন । আমার নিকটতম আত্মীয় স্বজনরাও যুদ্ধে প্রান হারিয়েছে আর আমি ইহুদী ধর্ম ত্যাগ করে পবিত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছি। বর্তমানে আমার ইহুদী আত্মীয় স্বজন যারা বেঁচে আছে তাদের কেউই আমাকে আশ্রয় দিবে না এবং গ্রহণও করবে না। এ আশ্রয়হীন অবস্থায় আমি কোথায় যাবো ? কে আমাকে স্থান দিবে ? ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি আর কোথাও যাবো না , আমি আপনার আন্তঃপুরে একজন দাসী হয়ে থাকতে চাই । আপনি আমাকে আশ্রয় প্রদান করুন।

নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাসে চরম আঘাত এই ঘটনাগুলো। কারণ নাস্তিকরা বিশ্বাস করে নবী ও উনার সাহাবীরা নারী ধর্ষণ করে সকল তথ্য গায়েব করে দিয়েছে অথচ বাস্তব সত্যি সম্পূর্ণ উল্টো। হযরত সাফিয়া (রা) নবী মোহাম্মদ (সা) এমন ভালোবাসতেন যে নবীর রোগ হলে উনি চাইতেন সেই রোগ উনার নিজেরই হোক।

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩ খণ্ড,৩০৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

একবার মহানবী (সা) এর মৃত্যুরোগের সময় সমস্ত নবী সহধর্মিণী তাঁর খেদমতে একত্র হলেন । তখন হযরত সাফিয়া (রা) বললেন, হে আল্লাহ্‌! রাসুল (সা) এর রোগ তাঁর পরিবর্তে আমাকে দাও। বিবিগন এ কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছিল, তখন নবী মুহাম্মদ (সা) বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ নিশ্চয়ই সে সত্যবাদী ।

অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের কাছে প্রশ্নটি থেকে যাবে যে যদি সাফিয়া (রা) নবী মুহাম্মদ (সা) কে ঘৃণা করতেন তাহলে তিনি কেন নবী (সা) এর রোগের পরিবর্তে নিজের রোগ হোক এই দুয়া করবেন? তাছাড়া আজীবন সাফিয়া (রা) নবী মোহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেন নাই কেন? এমনকি নবীর ওফাতের পরবর্তী সময়তেও কখনো সাফিয়া (রা) ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেন নাই, কিন্তু কেন?

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত, সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩ খণ্ড,৩০৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত উমর (রা) বলেন সাফিয়ার এক দাসী হযরত উমর (রা) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলো যে, হযরত সাফিয়া ইহুদী সংস্কৃতি অনুকরনে শনিবারকে গুরুত্ব দেন এবং ইহুদীদের সাথে ভাল আচরণ করেন। হযরত উমর (রা) , হযরত সাফিয়া (রা) থেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন। হযরত সাফিয়া (রা) জবাবে জানালেন! যখন আল্লাহ্‌ তা'লা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দান করেছেন তখন থেকে আমি শনিবারকে আর পছন্দ করি না।অন্যদিকে আমার কিছু ইহুদী আত্মীয় আছে। আমি তাদের আত্মীয়তার হক অনুযায়ী ভাল আচরণ করি। তিনি হযরত উমর (রা) কে এই জবাব জানিয়ে পাঠালেন অন্যদিকে সেই বাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে আমার বিরুদ্ধে এই কাজে কে উস্কে দিয়েছে? সে সত্যি সত্যি জবাব দিল শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে। হযরত সাফিয়া (রা) বললেন ঠিক আছে। আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম ।-আল ইসাবা,৪/৩৪৭।

হযরত সাফিয়া (রা) নবীজি (সা) এর আদর্শকে হৃদয় থেকেই ধারণ করেছিলেন। খেয়াল করেছেন উনি ইহুদী প্রতিবেশীদের সাথে ভালো আচরণ করতেন যা ছিল নবীজি (সা) এরই শিক্ষা। অথচ নাস্তিকরা মানুষকে বুঝায় ইসলাম নাকি অমুসলিমদেরকে ঘৃণা করতে শিখায়। নবী মোহাম্মদ (সা)ও হযরত সাফিয়া (রা)কে অনেক ভালোবাসতেন। সন্ত্রাসী ধর্ষক কি ধর্ষিতাকে ধর্ষণ করে খুন করে ফেলে না? ভালোবাসতে পারে? বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে? মোহর দিতে পারে?

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ১৫৩৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!” আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ) (আবূ দাউদ ৪৮৭৫, তিরমিযী ২৫০২, আহমাদ ২৫০৩২) এর ভাবার্থ হল, তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ও নিকৃষ্টতার কারণে সমুদ্রের পানিতে মিশে তার স্বাদ অথবা গন্ধ পরিবর্তন ক‘রে দেয়। এই উপমাটি গীবত নিষিদ্ধ হওয়া ও তা থেকে সতর্কীকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিণত বাক্য।-ihadis.com

কোনো সন্ত্রাসী নিকৃষ্ট ধর্ষক কি কোনো নারীকে সম্মানের সাথে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাঁটু গেড়ে বসতে পারে? অবশ্যই না। বরং সম্মানিত নম্র ভদ্র ও মানবিক পুরুষই পারে এমন কাজ করতে। হযরত মোহাম্মদ (সা) সাফিয়া (রা) যখন উট থেকে নামতেন উনি উনার সুবিধার জন্য হাঁটু গেড়ে দিতেন যাতে সাফিয়া (রা) নামতে সুবিধা হয়। বাস্তব সত্যি কি বলে আর মূর্খমনারা আমাদেরকে কি বুঝায়?

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ২৮৯৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। অতঃপর আবূ ত্বলহা (রাঃ) আমাকে তার সাওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমত করতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরণ করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দু‘আ পড়তে শুনতামঃ ‘হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।’ পরে আমরা খায়বারে গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দুর্গের উপর বিজয়ী করলেন, তখন তাঁর নিকট সাফিয়্যা বিনতু হুয়াই ইব্‌নু আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হলো, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করলেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। আমরা যখন সাদ্দুস্‌ সাহ্‌বা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সফিয়্যাহ (রাঃ) হায়েয থেকে পবিত্র হন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে তাঁর সঙ্গে বাসর যাপন করেন। অতঃপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে ‘হায়সা’ প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা। অতঃপর আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পেছনে চাদর দিয়ে সফিয়্যাকে পর্দা করছেন। উঠানামার প্রয়োজন হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উঠের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর উপর পা রেখে উঠে আরোহণ করতেন। এভাবে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি এমন এক পর্বত যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। অতঃপর মদীনার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ, এই কঙ্করময় দু’টি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে আমি ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করছি, যেমন ইব্‌রাহীম (‘আঃ) মক্কাকে ‘হারাম’ ঘোষণা করেছিলেন। হে আল্লাহ্‌! আপনি তাদের মুদ এবং সা’তে বরকত দান করুন।’-ihadis.com

নাস্তিকরা বিভিন্ন কৌশল করে ইসলামে যুদ্ধ বা জিহাদের বিষয় গুলো তুলে এনে এরপরে বুঝায় যে ইসলাম কত অমানবিক যে কাফের হত্যা করে তাদের নারীদের বন্দী করে ধর্ষণ করে কিন্তু তথ্য প্রমাণ আমাদেরকে সম্পূর্ণ উল্টো কথাই বলছে। নাস্তিকরা কি এমন একটি মাত্র প্রমাণ দেখাতে পারবে যে নবী মোহাম্মদ (সা) যুদ্ধবন্দিনী সাফিয়া অথবা যে কোনো যুদ্ধবন্দিনীকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন অত্যাচার করেছেন? অথবা উনার সাহাবীদেরকে এই আদেশ দিয়েছেন যে “তোমরা যুদ্ধবন্দিনী নারীদেরকে ধর্ষণ করো”? তাহলে নাস্তিকরা প্রমাণ ছাড়া হুদাহুদি কেন মানুষকে বুঝাচ্ছে যে তাদেরকে ধর্ষণ করাই হয়েছে? কোনো সন্ত্রাসী নিকৃষ্ট ধর্ষক কি বিয়ে করবার জন্য নারীকে প্রস্তুত হবার সুযোগ দেয়? অবশ্যই না। এই হাদিসটি পড়ুন। হাদিসটি অনেক বড় তাই সংক্ষিপ্ত অংশটুকু তুলে দিচ্ছি।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ৩৩৮৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

বর্ণনাকারী বলেন, তিনি সফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন। আনাসকে লক্ষ্য করে সাবিত (রাঃ) বললেন, হে আবূ হামযাহ্‌! তিনি তাঁকে কী মাহর দিলেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সত্তাকে মুক্তি দান করেন এবং এর বিনিময়ে তাঁকে বিবাহ করেন। তারপর তিনি যখন (ফেরার) পথে ছিলেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ)-কে তাঁর জন্য প্রস্তুত করেন এবং রাতে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গে বাসর উদযাপনের পর ভোর হলে তিনি ঘোষণা করলেন, যার নিকট যা কিছু আছে তা নিয়ে যেন উপস্থিত হয়। আর তিনি চামড়ার বড় দস্তরখান বিছালেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে কেউ পানীয়, কেউ খেজুর ও কেউ ঘি নিয়ে হাযির হল। তারপর এসব মিলিয়ে তারা হায়স তৈরী করেন। আর তাই ছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওয়ালীমাহ্‌।

নবী মোহাম্মদ (সা) যদি সাফিয়া (রা)কে ধর্ষণ করতেই চাইতেন তাহলে হায়েজ শেষ হওয়া পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করলেন? এমনকি ছোট দস্তরখানে (খেজুর-ঘি ও ছাতু মিশ্রিত) হায়স নামক খানা সাজিয়ে রাখতেন? কেন বিয়ের অনুষ্ঠান করতেন?

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪২১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমরা খাইবারে এসে পৌঁছলাম। এরপর যখন আল্লাহ তাঁকে খাইবার দূর্গের বিজয় দান করলেন তখন তাঁর কাছে (ইয়াহূদী দলপতি) হুয়াঈ ইবনু আখতারের কন্যা সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর সৌন্দর্যের ব্যাপারে আলোচনা করা হল। তার স্বামী (এ যুদ্ধে) নিহত হয়। সে ছিল নববধূ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিজের জন্য মনোনীত করেন এবং তাকে সঙ্গে করে (খাইবার থেকে) যাত্রা করেন। এরপর আমরা যখন সাদ্দুস সাহবা নামক স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম তখন সফিয়্যাহ (রাঃ) তাঁর মাসিক ঋতুস্রাব থেকে মুক্ত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গে বাসর করলেন। তারপর একটি ছোট দস্তরখানে (খেজুর-ঘি ও ছাতু মিশ্রিত) হায়স নামক খানা সাজিয়ে আমাকে বললেন, তোমার আশেপাশে যারা আছে সবাইকে ডাক। আর এটিই ছিল সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে বিয়ের ওয়ালীমা। তারপর আমরা মাদীনাহ্‌র দিকে রওয়ানা হলাম, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সাওয়ারীর পেছনে সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর জন্য একটি চাদর বিছাতে দেখেছি। এরপর তিনি তাঁর সাওয়ারীর ওপর হাঁটুদ্বয় মেলে বসতেন এবং সফিয়্যাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটুর উপর পা রেখে সাওয়ারীতে উঠতেন।-ihadis.com

সাফিয়া (রা) এর সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) বিয়েতে আশে পাশের সবাই খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। পাঠক নাস্তিকরা ইসলাম সম্পর্কে আপনাদেরকে কখনোই পুরো ঘটনা বলতে চাইবে না। নিজেদের সুবিধা অনুপাতে যতটুকু দেখালে মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে ধোঁকা দেয়া যাবে ঠিক ততটুকুই দেখাবে। এই ঘটনাটি মন দিয়ে পাঠ করুন অনেক কিছুই আপনারা পরিস্কার হয়ে যাবেন।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩৯৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ) দিহ্‌ইয়া (রাঃ)-এর ভাগে পড়েন। লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাঁর প্রশংসা করে বলতে লাগলো, আমরা কয়েদীদের মধ্যে তাঁর কোন জুড়ি দেখিনি। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন তিনি দিহ্‌ইয়াকে ডেকে পাঠালেন এবং সফিয়্যার বদলে তাকে যা তিনি চাইলেন তা দিয়ে দিলেন। অত:পর তিনি সফিয়্যাকে আমার মা (উম্মু সুলায়ম)-এর কাছে দিয়ে বললেন, তুমি তাকে (সাজিয়ে) ঠিকঠাক করে দাও। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার থেকে বের হয়ে পড়লেন। যখন ছেড়ে আসলেন তখন অবতরণ করলেন। অত:পর সফিয়্যার উপর একটি তাঁবু খাটিয়ে দিলেন। ভোরে উঠে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার কাছে উদ্বৃত্ত খাদ্য আছে সে যেন তা আমার কাছে নিয়ে আসে। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন লোকজন তার উদ্বৃত্ত খেজুর এবং উদ্বৃত্ত ছাতু আনতে লাগল। এমনকি এগুলোর একটি স্তুপ পরিমাণ জমা করে হায়স তৈরী করল। অত:পর সকলে হায়স থেকে খেতে লাগল এবং বৃষ্টির পানির হাওয থেকে তারা পানি পান করতে লাগল। বর্ণনাকারী (সাবিত) বলেন, আনাস (রাঃ) বলেন, তাই ছিল সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্‌। তিনি বলেন, অত:পর আমরা রওনা দিলাম এবং যখন মাদীনার প্রাচীরগুলো দেখতে পেলাম তখন মাদীনার জন্য আমাদের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। আমরা আমাদের সওয়ারীগুলোকে দ্রুত চালনা করলাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সওয়ারীকে দ্রুত চালালেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সফিয়্যাহ্‌ তাঁর পিছনে তাঁর সাথে সওয়ার করে গিয়েছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উটনী হোঁচট খায়। ফলে তিনি ও সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ) পড়ে যান। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা কেউ তাঁর ও সফিয়্যার দিকে দৃষ্টিপাত করেননি। ইতোমধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে তাঁকে আবৃত করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা মাদীনায় প্রবেশ করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অপরাপর সহধর্মিণীগণ বের হয়ে সফিয়্যাকে একজন আর একজনকে দেখাতে লাগলেন এবং তাঁর মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে আফসোস করতে লাগলেন।-ihadis.com

অনেক মূর্খ নাস্তিক নিজেকে আরও বেশি গাধা প্রমাণ করবার জন্য বলে থাকে সাফিয়া (রা)কে নাকি কোনো দেনমোহর দেয়া হয় নাই। সেই মিথ্যুকবাজ নাস্তিকদের মুখে এই হাদিস গুলো চপেটাঘাত।

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ১০২৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রী সাফীয়াহ (রাঃ) এর দাসত্ব মুক্তির বিনিময়কে তাঁর মাহরানা ধার্য করেছিলেন।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৯৪৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদিন) ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতে আদায় করলেন। অতঃপর সওয়ারীতে আরোহণ করলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ আক্‌বার, খায়বার ধ্বংস হোক! যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের এলাকায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হয় কতই না মন্দ! তখন তারা (ইয়াহূদীরা) বের হয়ে গলির মধ্যে দৌড়াতে লাগল এবং বলতে লাগল, মুহাম্মাদ ও তাঁর খামীস এসে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, খামীস হচ্ছে সৈন্য-সামন্ত। পরে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের উপর জয়লাভ করেন। তিনি যোদ্ধাদের হত্যা করলেন এবং নারী-শিশুদের বন্দী করলেন। তখন সফিয়্যাহ প্রথম দিহ্‌ইয়া কালবীর এবং পরে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অংশে পড়ল। অতঃপর তিনি তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাঁর মুক্তিদানকে মাহ্‌ররূপে গণ্য করেন।‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) সাবিত (রাঃ)-এর নিকট জানতে চাইলেন, তাঁকে কি মোহর দেয়া হয়েছিল? তা কি আপনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি বললেন, তাঁর মুক্তিই তাঁর মোহর, আর মুচ্‌কি হাসলেন।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩৮৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃতিনি সফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁর আযাদ করাকে মাহর ধার্য করলেন। অপর এক হাদীসে মু’আয তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফিয়্যাকে বিবাহ করেন এবং তাঁর আযাদ করাটাই ছিল মাহর।-ihadis.com

এতো এতো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মুক্তমনারা মুক্তচিন্তায় বলে নবী মোহাম্মদ (সা) নাকি সাফিয়ার পিতা ভাই ও স্বামীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে সাফিয়াকে নির্যাতন করতেন, মারধর করতেন, ধর্ষণ করতেন অথচ নাস্তিক প্রাণীদের মগজ কিভাবে এই সত্যিটা বুঝবে যে তাদের কথা গুলো সব মিথ্যা? যেই নবী নিজেই যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে এমন এমন আচরণ করতে পারেন সেই নবী কি কখনো নিজের অনুসারীদেরকে যুদ্ধবন্দিনীদেরকে ধর্ষণ, নির্যাতন, অত্যাচার করবার অনুমতি দিতে পারেন? শুধু এই একজনই না বরং একাধিক যুদ্ধবন্দিনী সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) একইরকম আচরণ করেছিলেন।

যুদ্ধবন্দিনী নারীর ইচ্ছার প্রাধান্য নেই ইসলামে?

কোনো যুদ্ধবন্দী নারী যদি নিজের স্বামীর সাথে থাকতে চাইতো তাহলে সেই সুযোগ করে দিতেন হযরত মোহাম্মদ (সা)। নাস্তিকরা এসব ঘটনা কখনোই মানুষকে বলতে চাইবে না। নাস্তিকরা এসব দেখাবেও না। 

কারণ এগুলো মানুষ জেনে গেলে নাস্তিকদের বানানো মিথ্যা কথা গুলো মানুষ গ্রহণ করবে না। 

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ খন্ড, ৪৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন রাসুলুলুল্লাহ (সা) সাফিয়া বিনত বাশশামাঃ ইবন নাযলা আল আম্বারকেও বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাকে তিনি যুদ্ধবন্দীরূপে পেয়েছিলেন। তিনি তাকে ইখতিয়ার দিয়ে বললেন, তুমি চাইলে আমাকেও গ্রহণ করতে পার আর ইচ্ছা করলে তোমার স্বামীকেও গ্রহণ করতে পার। সে বলল বরং আমার স্বামীকে। তখন নবী করীম (সা) তাকে মুক্ত করে পাঠিয়ে দিলেন।

ইসলামে যুদ্ধবন্দিনী নারীদেরকে যৌন নির্যাতন,অত্যাচার করার বিধান থাকলে অবশ্যই এই ধরনের আইন ইসলামে থাকতো না-এটা তো নিশ্চিত আপনাকে হতেই হচ্ছে।

একবার আবু উসাইদ আনসারি (রা) বাহরাইন থেকে কিছু লোককে বন্দী করে নিয়ে এলেন। বন্দীদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হলো। আল্লাহর রাসুল (সা) তাদের দিকে তাকালেন। হঠাত দেখতে পেলেন এক নারী কাদছে। নবীজি (সা) জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কাদছ কেন? সে বলল,আমার ছেলেকে বনু আবসের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা) আবু উসাইদ (রা)কে বললেন,তুমি তাকে নিয়ে এসো। আবু উসাইদ পুনরায় গিয়ে ছেলেটিকে নিয়ে এলেন। - এই ধরনের প্রচুর ইতিহাস পাবেন প্রখ্যাত ইতিহাস-গবেষক,লেখক ড. রাগিব সারজানি (হা;ফি) লিখিত "মানবীয় দুর্বলতায় নবিজির মহানুভবতা" অনুবাদ করেছেন আবু তালহা সাজিদ। ১৭১ থেকে ১৭২ পৃষ্ঠা, মুসতাদরাকে হাকিম,হাদিসঃ ৬১৯৩ / সুনানে সাইদ বিন মানসুর,হাদিসঃ ২৬৫৪।

হযরত মোহাম্মদ (সা) সুদূর বাহরাইনে উনার এক সৈন্যকে পাঠিয়েছেন দাসীর ছেলেকে নিয়ে আসার জন্য। কেন? শুধু বন্দিনীর মন শান্ত করার জন্য। তার চোখের অশ্রু মুছে দেওয়ার জন্য। যেই নেতা সাধারণ একজন বন্দিনীর কান্না সহ্য করতে না পেরে বন্দিনী ইচ্ছা সম্পুর্ন করেছেন সেই নেতা হুকুম দিবেন ধর্ষণ করতে? নাস্তিকদের মাথা খারাপ কেন? নাস্তিকরা যাই বলবে তাই মানুষকে অন্ধবিশ্বাস করতে হবে? মাফ চাই আমি নাস্তিকান্ধদের মতো অন্ধবিশ্বাস করতে রাজি নই। আমি নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করি। কারণ নাস্তিক্যবাদ ভুলে ভরা একটি ধর্ম। নাস্তিক্যধর্মের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।

প্রখ্যাত ইতিহাস-গবেষক,লেখক ড. রাগিব সারজানি (হা;ফি) লিখিত "মানবীয় দুর্বলতায় নবিজির মহানুভবতা" ১৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

পূর্বে বর্ণিত যেসব বন্দিদের কথা আমরা জানতে পেরেছি, প্রকৃতপক্ষে তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিল। যোদ্ধা বন্দীদের সাথে নবিজী (সা) যদি এমন দয়া ও স্নেহপূর্ণ আচরণ করে থাকেন তাহলে যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের সাথে নবী করিম (সা)এর আচরণ কেমন হতে পারে? সাভাবিকভাবেই বেসামরিক লোকদের প্রতি নবীজি (সা) এর দয়া ও গুরুত্ব ছিল সর্বাগ্রে। এ অধ্যায় বেসামরিক বলতে আমরা শিশু,নারী,অসুস্থ, বৃদ্ধ যুদ্ধ করতে অক্ষম লোকদের বোঝাচ্ছি। এদের প্রতি ইসলাম এমন গুরুত্ব প্রদান করেছে, অন্য কোনো জাতি কিংবা ধর্মে যার জুড়ি মেলা ভার। নবী জীবনে এমন অনেক চমকপ্রদ চিত্র রয়েছে যা মোহাম্মদ (সা)এর নবুয়ত ও এই অসহায় দুর্বলদের প্রতি উনার দয়া ও কোমলতার প্রমাণ দেয়। এই বইয়েরই ১৭৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,রাসুল (সা) সব সময় মুসলিম বাহিনীর সেনাপতিকে তাকওয়া ও আল্লাহর স্মরণে উপদেশ দিতেন, সৃষ্ট জীবের চোখের আড়ালে থাকলেও যেন যে উনার তার যুদ্ধনীতি অনুসরণে ও যুদ্ধক্ষেত্রে দয়া প্রদর্শনে উদ্ভুদ্ধ হয়।....... নবীজি (সা) শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমনোদ্দত সেনাপতিকে যে দয়াপূর্ণ উপদেশ দিচ্ছেন তা লক্ষ করে দেখুন। সবশেষে তিনি সতর্ককর্মের সর্বোচ্চ স্তরের উপদেশ দিয়ে বলেছেন,ইহসান করবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদেত ভালোবাসেন। শত্রুর সাথে এই ছিল নবীজি (সা)এর আচরণ।

হযরত মোহাম্মদ (সা)এর নামে মিথ্যাকথা বলা নাস্তিকদের মুক্তচিন্তারই অংশ। একজন নাস্তিক যদি এটা বিশ্বাস করতে চায় যে আমার নৈতিকতায় ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করা বৈধ কারণ এটা আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা।এমন বিশ্বাস করা নাস্তিকরা কিভাবে সঠিক তথ্য দিতে পারে? আমি যেসব বাস্তব ঘটনা তুলে ধরেছি নাস্তিকরা হয়তো মনে মনে ভাব্বে এই মুমিন যদি এসব ইতিহাস সামনে নিয়ে না আসতো তাহলে কতো ভালো হতো? এই মুমিন আমাদের জালিয়াতির কলাকৌশল সব ফাঁস করে দিচ্ছে। সত্যকে নাস্তিকরা গ্রহণ করুন অথবা না করুক যারা চিন্তাশীল তারা ঠিকই সত্যকে বিশ্বাস করে নেবে। যারা সচেতন হতে জানে তারা ইসলামকে সঠিকভাবেই জানবে।

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ খণ্ড, ৫০০ ও ৫০১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,

রাসুলুল্লাহ (সা) বনু কুরায়জাকে পরাজিত করার পরে রায়হানা বিনত আমর ইবন খিনাফাকে নিজের জন্য একান্ত করে নিলেন। নবী করীম (সা) এর ওফাত পর্যন্ত তিনি তার নিকটে তাঁরই মালিকানাধীন ছিলেন। তিনি তাঁকে ইসলাম গ্রহণ করার এবং তাঁকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।………  ওয়াকিদী (র) বলেন, পরে রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁকে উম্মুল মুনযির সালমা বিনত কায়স (রা) এর বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে অবস্থান কালে তাঁর ঋতুস্রাব দেখা দেয় এবং এক বারের স্রাবের পরে তিনি পবিত্রা হলে উম্মুল মুনযির (রা) এসে রাসুলুল্লাহ (সা)কে তা অবহিত করলেন। নবী করীম (সা) উম্মুল মুনযিরের বাড়িতে তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার যদি পছন্দ হয় তবে তোমাকে মুক্ত করে দিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করি। তবে আমি তাই করব। আর যদি আমার মালিকানায় থাকা তোমার কাছে ভাল লাগে তবে মালিকানা সুত্রে আমি তোমাকে ব্যাবহার করব। সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার দৃষ্টিতে আপনার জন্য এবং আমারও জন্য আপনার মালিকানাধীন থাকা অধিক নির্ঝঞ্জাট ও সহজ। ফলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা) এর মালিকানাধীন ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ অবস্থায় অব্যাহত ছিল।

যুদ্ধবন্দিনীকে নবীজি (সা)কে গ্রহণ করার অথবা না করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। একটু সুস্থচিন্তা করার চেষ্টা করুন। রায়হানা (রা) নিজে নবীজি (সা)কেই গ্রহণ করে নিলেন। নবীজি (সা) ইচ্ছা করলেই কিন্তু পারতেন উনাকে জবরদস্তি, নির্যাতন অত্যাচার করতে কিন্তু উনি এমন কিছুই করেন নাই। কারণ ইসলামে নিজের বাদীর সাথে খারাপ আচরণ করার নির্দেশ নেই বরং তাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করতে হবে। হযরত রায়হানা (রা)কে নিয়ে এই তথ্যও পাওয়া যায় যে, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ খণ্ড, ৫০২ পৃষ্ঠায় বলা আছে,ইবন ওয়াহব (র) বলেছেন, ইউনুস ইবন ইয়াযীদ (র) সুত্রে যুহরী (র) থেকে। তিনি বলেন,

রাসুলুল্লাহ (সা) বনু কুরায়জার রায়হানাকে বাদী-পত্নীরূপে গ্রহণ করলেন। পরে তাঁকে মুক্তি দিয়ে দিলে তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনের সংগে মিলিত হলেন।

আমি যদি এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করি নবীজি (সা) যদি চাইতেন রায়হানাকে ধর্ষণ করতে তাহলে মুক্তি দিয়ে পরিবারে সাথে কেন দেখা করতে দেবেন? উনি তো দাসীদের মুক্তির সিস্টেমই রাখতেন না যদি ধর্ষণ করার উদ্দেশ্য থাকতো তো। কিন্তু উনি মুক্তি করে কেন দিলেন? এর জবাব গুলো কি হবে নাস্তিকান্ধদের কাছে? যুদ্ধবন্দিনী নারীর এক কর্ম দেখে হযরত মোহাম্মদ (সা) অন্যান্যদের দয়া শিক্ষা দিয়েছিলেন। উনি তো চাইলেই পারতেন এই আদেশ করতে যে সেই নারীকে তোমরা ধর্ষণ করো কিন্তু উনি কি এরকম কিছু আদেশ দিয়েছিলেন? তাহলে নাস্তিকরা হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে মুক্তমনে জালিয়াতি করছে কেন?

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৪২৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

উমার ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী এল। তিনি দেখলেন যে, বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা (তার শিশুটি হারিয়ে গেলে এবং স্তনে দুধ জমে উঠলে বাচ্চার খোঁজে অস্থির হয়ে) দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ সে বন্দীদের মধ্যে কোনো শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিয়ে (দুধ পান করাতে লাগল। অতঃপর তার নিজের বাচ্চা পেয়ে গেলে তাকে বুকে-পেটে লাগিয়ে) দুধ পান করাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি মনে কর যে, এই মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে?’’ আমরা বললাম, ‘না, আল্লাহর কসম!’ তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দাদের উপর তার চেয়ে অধিক দয়ালু।-ihadis.com

আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১৭৫১, সহিহ হাদিস/হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ৪৫১, সহিহ হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে। থেকে বর্ণিতঃ

‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল। তার স্তন দুধে পূর্ণ ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিত এবং দুধ পান করাত। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে করো এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ ফেলার ক্ষমতা রাখলে সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ এ মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তদপেক্ষা অধিক দয়ালু।-ihadis.com

হযরত সাফিয়া (রা) যুদ্ধবন্দিনী নারী ছিলেন। একদিন আয়েশা (রা) উনাকে বেটে বলার কারণে নবী মোহাম্মদ (সা) তা পছন্দ করলেন না। রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৫৩৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ


আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!” আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।-ihadis.com


নাস্তিকরা বানিয়ে কথা বলে মানুষকে ইসলাম নিয়ে যেভাবে ভুল বোঝায় আসলে ইসলাম তেমন না। বরং ইসলাম যুদ্ধবন্দিনী নারীদের সাথে ভালো আচরণ করতে শিক্ষা দেয়। ইসলাম নারীদের সাথে মানবিক আচরণ করতে শিক্ষা দেয়। অন্যদিকে নাস্তিক্যধর্ম নাস্তিকদেরকে নিজের মায়ের সাথে সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক করার শিক্ষা দেয়। নিজের নাস্তিক ছেলে সন্তানের সাথে বাবার সমকামীতা চর্চার স্বাধীনতা দেয়। নাস্তিক মাকে এই শিক্ষা দেয় নিজের কন্যা সন্তানের সাথে লেসবিয়ান হতে। নাস্তিক বাবা নিজের নাস্তিক কন্যা মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে এই শিক্ষা প্রদান করে। নাস্তিক্যধর্ম মুক্তমনে মিথ্যাচার করার ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রদান করে।

হযরত মোহাম্মদ (সা)এর এক স্ত্রী উনার সাথে থাকতে না চাইলে উনি সম্মানের সাথে উনাকে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেনঃ

নবী মোহাম্মদ (সা) এর সাথে উনারই এক স্ত্রী থাকতে রাজি হন নাই এটা বুঝতে পেরে উনি উনার স্ত্রীকে সম্মানের সাথে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন। হযরত মোহাম্মদ (সা) যদি খারাপ মনের মানুষ হতেন তাহলে তো এই নারীকে বেঁধে নির্যাতন করতে পারতেন কিন্তু করলেন না কেন? এই নারীকে কেন সম্মানের সাথে পরিবারে কাছে চলে যেতে বললেন তাও দুটো কাতান কাপড় উপহার দিয়ে?


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫২৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আওযা’ঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি যুহরী (রহঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন্‌ সহধর্মিণী তাঁর থেকে মুক্তি প্রার্থণা করেছিল? উত্তরে তিনি বললেনঃ ‘উরওয়াহ (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, জাওনের কন্যাকে যখন রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট (একটি ঘরে) পাঠানো হল আর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, তখন সে বলল, আমি আপনার কাছ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫২৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

সাহ্‌ল ইবন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ(ভিন্ন সনদে) সাহ্‌ল ইব্‌ন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমাইয়া বিনতু শারাহলীকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। সে এটি অপছন্দ করল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দুখানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌছে দেবার নির্দেশ দিলেন।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫২৫৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

সাহ্‌ল ইবন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ(ভিন্ন সনদে) সাহ্‌ল ইব্‌ন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমাইয়া বিনতু শারাহলীকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। সে এটি অপছন্দ করল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দুখানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌছে দেবার নির্দেশ দিলেন।-ihadis.com

সেই মহিলা হযরত মোহাম্মদ (সা) কে বাজারি বলে সম্বোধন করে এমনকি উনি যে হযরত মোহাম্মদ (সা)কে পছন্দ করতেন না এটাও বুঝিয়ে দিলেন কিন্তু এরপরেও হযরত মোহাম্মদ (সা) উল্টো সেই নারীকে দু’খানা কাতান কাপড় উপহার দিয়ে তাকে পরিবারের কাছে পৌছিয়ে দিতে বলেন। যেই নারী হযরত মোহাম্মদ (সা)এর সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে কিন্তু নবী মোহাম্মদ (সা) বিন্দুমাত্র খারাপ আচরণ করলেন না সেই নারীর সাথে বরং সম্মানের সাথে সেই নারীকে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিতে বললেন। কোনো খারাপ মানুষের আচরণ এমন হতে পারে?


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫২৫৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ উসায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌছালাম এবং এ দু’টির মাঝে বসলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি (ভিতরে) প্রবেশ করলেন। তখন নু’মান ইব্‌ন শারাহীলের কন্যা উমাইয়ার খেজুর বাগানস্থিত ঘরে জাওনিয়াকে আনা হয়। আর তাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নবী যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বললঃ কোন রাজকুমারী কি কোন বাজারিয়া ব্যক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? রাবী বলেনঃ এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবূ উসায়দ! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।-ihadis.com

নাস্তিকরা আসলে বিবর্তিত চতুষ্পদ পশু এই কারণে এসব ঘটনাকে এরা মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে বুঝতে পারে না। এসব ঘটনা বুঝতে হলে নাস্তিকদেরকে মানুষে বিবর্তিত হতে হবে যা এখনো হতে পারে নাই। কারণ সুস্থচিন্তার অধিকারী মানুষরাই অনুধাবন করতে পারবে যে হযরত মোহাম্মদ (সা) আসলেই একজন ভালো মানুষ ছিলেন এমনকি নারীদেরকে প্রচুর সম্মান করতেন। কোনো নারী খারাপ আচরণ করলেও উনি রাগ না দেখিয়ে, প্রতিশোধ না নিয়ে বরং পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এমন সুন্দর চরিত্রের অধিকারীই তো হওয়া উচিৎ সকল পুরুষদের।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৬৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কাউকে স্বহস্তে মারেননি, না কোন স্ত্রীকে না কোন দাস-দাসীকে। কারো দিক থেকে তিনি কোন কষ্ট পেলে কষ্টদাতার নিকট থেকে প্রতিশোধ নেননি। হ্যাঁ, যদি আল্লাহর হারামকৃত কোন জিনিস লংঘন করা হত (অর্থাৎ কেউ চুরি, ব্যভিচার ইত্যাদি কাজ করে ফেলত), তাহলে আল্লাহর জন্যই তিনি প্রতিশোধ নিতেন (শাস্তি দিতেন)’-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৬৪৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হত। কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য কখনই কোন বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে ফেললে তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।-ihadis.com

হযরত মোহাম্মদ (সা) কখনো স্বাভাবিক অবস্থায় কাউকে প্রহার করেন নাই এমনকি দাস-দাসী বা স্ত্রীকেও। নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে মানুষকে কিভাবে ভুল বোঝায় আর প্রকৃত অর্থে ইসলাম আসলে সম্পূর্ণ উল্টো। আর কতো প্রমাণ লাগবে? এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করুন যেই আয়েশা (রা)কে নিয়ে মিথ্যাচার করতেও নাস্তিকরা ভুল করে না সেই আয়েশা (রা)ই উনার বয়স্কা স্বামীর প্রশংসা করছেন। নবী মোহাম্মদ (সা) যদি আয়েশা (রা)এর সাথে খারাপ আচরণ করতেন তাহলে আয়েশা (রা) কি স্বামীর প্রশংসা করতেন? অবশ্যই না। এর থেকে প্রমাণ হয় যে আয়েশা (রা) উনার বয়স্কা স্বামীকে নিয়ে সুখেই ছিলেন। তাই কোনো নারী যদি তার স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকে সেখানে নাস্তিকদের অভিযোগ করার বিন্দুমাত্র ভিত্তি নাই। এই হাদিস গুলো পড়ুন।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৮৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি।-ihadis.com 

শামায়েলে তিরমিযি, হাদিসঃ ২৬৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি।-ihadis.com

এক সাহাবী তার এক দাসকে প্রহার করলে নবীজি (সা) কঠোর হুমকি দেন এরপরে সেই সাহাবী আর কোনো দিন তাকে মারেন নাই। হ্যাঁ এটাই হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা। হযরত মোহাম্মদ (সা) এটাই শিখিয়েছেন। ইসলাম মানবিক জীবন বিধান শিক্ষা দেয় প্রমাণ পেলেন তো?

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, কোন এক সময় আমি আমার এক গোলামকে প্রহার করছিলাম। তখন আমার পিছন হতে একজন লোককে আমি বলতে শুনলাম, আবূ মাসঊদ, জেনে রাখ, আবূ মাসঊদ, জেনে রাখ! আমি পিছনে তাকানো মাত্রই দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বললেনঃ তুমি এর উপর যে পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী, তোমার উপর আল্লাহ্‌ তা‘আলা এরচাইতে অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী। আবূ মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এরপর হতে আমি আমার কোন গোলামকে আর কখনো মারিনি।-ihadis.com

হযরত মোহাম্মদ (সা) উনি সকল স্ত্রীকে উনার সাথে থাকার অথবা না থাকার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন কিন্তু এরপরেও উনার স্ত্রীরা উনাকেই পছন্দ করে নেন। নাস্তিকরা এরপরেও নবী মোহাম্মদ (সা)কে নারীলোভী বলে অপবাদ দেবে?

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১৭৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রী হিসাবে থাকা বা না থাকার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমরা তাকে গ্রহণ করলাম। এতে কি তালাক হল?-ihadis.com

প্রমাণ দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি কিন্তু কিছুই করার নেই কারণ সত্য যে কঠিন সেই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। নবী মোহাম্মদ (সা) মহিলাদের বিপদে খোজ খবর নিতেন। হাদিসটি পড়ুন।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬১৮৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে তিনি ও আবূ ত্বলহা (রাঃ) (মদিনায়) আসছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সফিয়্যাহ (রাঃ) তাঁর উটের পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। পথে এক জায়গায় উটের পা পিছলে যায় এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্ত্রী পড়ে যান। তখন আবূ ত্বলহা (রাঃ) ও তাঁর উট থেকে লাফ দিয়ে নামলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র নবী! আপনার কি কোন চোট লেগেছে? আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। তিনি বললেনঃ না। তবে মহিলাটির খোঁজ নাও। তখন আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁর কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে তাঁর দিকে অগ্রসর হলেন এবং তাঁর উপরও একখানা বস্ত্র ফেলে দিলেন। তখন মহিলাটি উঠে দাঁড়ালেন। এরপর আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁদের হাওদাটি উটের উপর শক্ত করে বেঁধে দিলেন। তাঁরা উভয়ে সাওয়ার হলেন এবং সবাই আবার রওয়ানা হলেন। অবশেষে যখন তাঁরা মাদীনাহ্‌র নিকটে পৌছলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে লাগলেনঃ “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্‌কারী, ‘ইবাদাতকারী এবং একমাত্র স্বীয় রবের প্রশংসাকারী”। তিনি মদিনায় প্রবেশ করা অবধি এ কথাগুলো বলছিলেন।-ihadis.com

নারীদের প্রতি নবীজি মোহাম্মদ (সা) এর আচরণকে আপনি কিভাবে অস্বীকার করবেন? আপনি কেন এসব সত্যি গুলো গ্রহণ করতে পারছেন না? আপনি না নিজেকে মুক্তচিন্তক বলে দাবি করেন? আপনি না নিজেকে সত্যসন্ধানী বলে প্রচার করেন? তাহলে সমস্যা কোথায়?

দাসীদের দিয়ে বেশ্যবৃত্তি করা যাবে?

ইসলামে যুদ্ধবন্দিনী নারীকে ধর্ষণ করার বৈধতা থাকলে সেই সব দাসী নারীদেরকে দিয়ে বেশ্যবৃত্তি করানোও ইসলামে জায়েজ হতো। অন্যের দাসীকেও জবরদস্তি করে সহবাস ইসলামে বৈধ হতো। অথচ এসব কোনটাই ইসলামে বিন্দুমাত্রও বৈধ না। স্পষ্ট নিষিদ্ধ।

 

আল কুরআন, সুরা নুর ২৪:৩২,৩৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছেঃ

তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জান যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে, অর্থ-কড়ি দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে দান কর। তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। যদি কেহ তাদের উপর জোর- জবরদস্তি করে, তবে তাদের উপর জোর- জবরদস্তির পর আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৭৪৪৩,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, 'আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর দু'জন বাদী ছিল। একজনের নাম ছিল মুসাইকাহ এবং অপরজনের নাম ছিল উমাইমাহ। সে দু'জন বাদীকে দিয়ে জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি করাতো। তাই তারা এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অভিযোগ করল। তখন আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন : “তোমাদের বাদীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে জোর-জবরদস্তি করবে না। আর যে তাদেরকে জোরজবরদস্তি করে তবে তাদের বাদীদের উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। - ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৬৯৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

লায়স (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সুফীয়্যাহ বিন্‌ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমর (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী (রহঃ) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল, বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জারিমানা নেই। কিন্তু তার উপর ‘হদ’ জারি হবে।-ihadis.com

যেই ইসলাম নিজের দাসীকে দিয়ে জবরদস্তি বেশ্যাবৃত্তি করাকে নিষেধ ঘোষণা করেছে সেই ইসলাম কিভাবে যুদ্ধবন্দিনী হয়ে নিজের প্রাপ্ত দাসীকে যৌন নির্যাতন করে সহবাসের বৈধতা দিতে পারে? ধর্ষণের বৈধতা দিতে পারে? যেখানে কুরআন সুন্নাহ আমাদেরকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে দাসীর সাথে বিন্দুমাত্র খারাপ আচরণ করাই যাবে না এখানে নাস্তিকদের মুক্তমনা মিথ্যাচার করার উদ্দেশ্য গুলো কি কি? নাস্তিকরা কেন ইসলামকে সঠিকভাবে জানতে চাচ্ছে না? চলুন কিছু হাদিস পাঠ করি। এই হাদিস গুলো হয়তো ইসলাম বিদ্বেষীরা জীবনে চোখেও দেখে নাই। আর দেখে থাকলেও মানুষকে এরা দেখাতে চাইবে না। অথবা নিজেরা প্রাণী হবার কারণে হাদিস গুলোকে সুস্থ মানুষদের মতো চিন্তা করতে সফল হয় নাই।

সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ৪১৮৪,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ। আর ঈমানের অবস্থান হল জান্নাতে। আর অশ্লীলতা হল অত্যাচার জুলুম ,আর অত্যাচার থাকবে জাহান্নামে।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ১৩২৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ 

আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাঃ) বলেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম ঈমানের অংগ, আর ঈমানের মুমিনের স্থান বেহেশতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা যুলুমের অংগ, আর যুলুমের যালেমের স্থান হলো দোযখে।-ihadis.com

নাস্তিকদের দাবি সত্য হলে এমন হাদিস কেন নেই যেখানে বলা আছে অত্যাচার করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে? অত্যাচার করা খুবই ভালো কাজ? যারা অত্যাচার করে এরা বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে? যেহেতু নাস্তিকরা নাস্তিকদের পক্ষে প্রমাণ পেশ করতে পারছে না এতে কি প্রমাণ হচ্ছে না যে এরা কুরআন নিয়ে মিথ্যা কথা বলে? হাদিসের মিথ্যা ব্যাখ্যা বানায়? হযরত মোহাম্মদ (সা)এর বদনাম করে মানুষকে বোকা বানায়? সাহাবীদের দুর্নাম রটায়?

কোনো মেয়ে কীভাবে এমন কারো সাথে শারিরীক সম্পর্কে করতে রাজি হতে পারে,যে তার পরিবারের লোকদেরকে হত্যা করেছে?

কোনো মেয়ে যদি এটা দেখে যে নিজের পরিবারের লোকদের থেকে অন্য পরিবারের লোকেরা বেশি ভালো। অর্থাৎ যুদ্ধে হেরে গেলে নারীদের নির্যাতিত হতে হবে, ধর্ষিত হতে হবে এটা সব যুদ্ধেই হয়ে থাকে কিন্তু মুসলিমরা যদি কোনো যুদ্ধে জিতে তাহলে নারীদেরকে ধর্ষণ-নির্যাতন করা তো দূরে থাক এমনকি সম্মান দিয়ে কথা বলে। নারীর কোনো অসুবিধা হলে সাহায্য করার কথা বলে। এই ক্ষেত্রে একটি মেয়ের কি অসুবিধা হবার কথা এমন পুরুষের সাথে সেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক করার? অবশ্যই না। এর বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে হযরত সাফিয়া (রা)। কিভাবে? নিচে দেয়া প্রমাণ গুলো পড়ুন।

বিশিষ্ট ইসলামিক গবেষক আসাদুল্লাহ আল গালিব সাবেহের লিখিত “ সীরাতুল রাসুল (সা)” বইয়ের ৪৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

হযরত সাফিয়া (রা) বলেন, আমার নিকট রাসুল (সা) এর চাইতে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি কেউ ছিল না কারন তিনি আমার পিতা ও স্বামীকে হত্যা করেছেন । অতপর রাসুল (সা) আমার নিকট বার বার ওজর পেশ করেন এবং বলেন হে সাফিয়া তোমরা পিতা আমার বিরুদ্ধে আরবদের জমা করেছিলেন। তাছাড়া অমুক অমুক (অন্যায়) কাজ করেছিলেন, অবশেষে আমার অন্তর থেকে তাঁর উপরে বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়।- ছহীহ ইবনু হিব্বান, হহা/৫১৯৯; তাবারানী,ছহীহাহ, হা/২৭৯৩; ইবনু হিশাম ২/৩৩৬।

খেয়াল করুন নবী মোহাম্মদ (সা)কে প্রথমে সাফিয়া (রা) ঘৃণা করতেন কিন্তু যখন উনি জানতে পারলেন যে উনার পিতা ও স্বামী অপরাধী তথা সন্ত্রাসী ছিলেন তখন এই সত্যটা জানতে পেরে নবী মোহাম্মদ (সা)কে উনি আর ঘৃণা করেন নাই। নবী মোহাম্মদ (সা) থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে যায় যে দাসীর সাথে কিছু করতে হলে অবশ্যই তার মতামত নিতে হবে,জবরদস্তি করা যাবে না।এই তথ্য নাস্তিকরা দেখাবে মনে হয়? এখানেই শেষ নয়। সাফিয়া (রা)কে নবী মোহাম্মদ (সা) কেমন সম্মান করতেন পড়ুন।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৯৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

উম্মুল মু’মিমীন সাফিয়্যাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই’তিকাফ অবস্থায় ছিলেন। এক রাতে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে তাঁর নিকট গেলাম। কথাবার্তা শেষ করে আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালে তিনিও আমাকে এগিয়ে দিতে দাঁড়ালেন। তার (সাফিয়া (রাঃ) বসবাসের স্থান ছিল উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)-এর ঘর (সংলগ্ন)।এ সময় আনসার গোত্রের দুই ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা থামো! ইনি (আমার স্ত্রী) সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াই। তারা দু’জনে বললেন, “সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শয়তান মানুষের মধ্যে রক্তের মত চলাচল করে। তাই আমার ভয় হচ্ছিল যে, সে তোমাদের দু’জনের মনে মন্দ কিছু নিক্ষেপ করবে।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২২৩৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার গমন করেন। যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দুর্গের বিজয় দান করেন, তখন তাঁর সামনে সাফিয়্যাহ (রাঃ) বিনতে হুয়ায়্যি ইবনু আখতাব এর সৌন্দর্যের আলোচনা করা হয়। তাঁর স্বামী নিহত হয় এবং তিনি তখন ছিলেন নব-বিবাহিতা। অবশেষে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে নিজের জন্য গ্রহণ করে নেন। তিনি তাঁকে নিয়ে রওনা হন। যখন আমরা সাদ্দা রাওহা নামক স্থানে উপনীত হলাম, তখন সাফিয়্যাহ (রাঃ) পবিত্র হলেন! তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গে মিলিত হন। তারপর চামড়ার ছোট দস্তরখানে হায়েস (খেজুরের ছাতু ও ঘি মিশ্রিত খাদ্য) তৈরী করে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা আশেপাশের লোকদের উপস্থিত হওয়ার খবর দিয়ে দাও। এই ছিল সাফিয়্যাহ (রাঃ)-এর বিবাহে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ওয়ালিমাহ। এরপর আমরা মদীনার উদ্দেশে রওয়ানা হই। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেলাম যে, তাঁকে নিজের আবা’ দিয়ে ঘেরাও করে দিচ্ছেন। তারপর তিনি তাঁর উটের পাশে বসে হাঁটু সোজা করে রাখলেন, পরে সাফিয়্যাহ (রাঃ) তাঁর হাঁটুর উপর পা দিয়ে ভর করে আরোহণ করলেন।-ihadis.com

একজন স্বামী স্ত্রীকে এগিয়ে দিতে দাঁড়ালে এর অর্থ কি সেই স্বামী খারাপ? সেই স্বামী অত্যাচারী? সেই স্বামী ভয়ংকর? নাকি? সঠিক অর্থ এটাই যে উনি সাফিয়া (রা)কে অনেক সম্মান করতেন। একজন নারী উটে উঠতেন স্বামীর পায়ে পা রেখে। ইসলাম কেমন সুন্দর এখনো অনুধাবন করতে পারছেন না? হযরত সাফিয়া (রা) একজন যুদ্ধবন্দিনী নারী হওয়া সত্ত্বেও হযরত মোহাম্মদ (সা)কে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলেন। স্বেচ্ছায় উনার সাথে সহবাস করেছিলেন। হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার মতামতকে প্রাধান্য দেন নাই?

“রাসুলুল্লাহ (সা)এর স্ত্রীগণ যেমন ছিলেন” বই যা পিস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত,সংকলন করেছেন মুয়াল্লীমা মোরশেদা বেগম, সম্পদনা করেছেন মুফতি মোহাম্মদ আবুল কাসেম গাজী,ও হাফেজ মাওলানা আরিফ হোসাইন,এই বইয়ের ১৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

খয়বার যুদ্ধ বিজয়ের পর সাফিয়া (রা) বন্ধী হয়ে আসলে এক সময় তাঁকে রাসুল (সা) জিজ্ঞেস করলেন, আমার ব্যাপারে তুমার কোন আগ্রহ আছে কি ? তিনি উত্তরে বললেন, শিরিকের মধ্যে নিমজ্জিত থাকার সময় আমি এই আশা পোষণ করতাম।সুতরাং ইসলাম গ্রহনের দ্বারা আল্লাহ্‌ আমাকে আপনার সাহচর্য লাভের যে সুযোগ দিয়েছেন,সে সুযোগ আমি কি ভাবে হারাতে পারি?

এই বইয়েরই ১৫২ ও ১৫৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,নবী মুহাম্মদ (সা) সাফিয়া (রা)কে বললেন তুমি যা ইচ্ছা পছন্দ করো,বেছে নেও। যদি তুমি ইসলামকে পছন্দ করো তাহলে আমি তোমাকে আমার জন্য রেখে দিব আর যদি তুমি ইহুদী ধর্ম মতকে পছন্দ করো তাহলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দিব,যাতে তুমি তোমার কওমের সাথে মিলিত হতে পারো।তিনি বললেন হে আল্লাহ্‌র রাসুল আমি ইসলামকে ভালবেসেছি।আপনি আমাকে দাওয়াত দেওয়ার আগেই আমি আপনাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি।এমনকি আমি আপনার সওয়ারীতে চড়েছি।ইহুদী ধর্মের প্রতি আমার আর কোন আকর্ষণ,আগ্রহ নাই আর সেখানে আমার পিতা ভাই কেউই নাই। আপনি কুফুরি বা ইসলাম যে কোনটি গ্রহনের এখতেয়ার (স্বাধীনতা) দিয়েছেন।আল্লাহ ও রাসুলই আমার নিকট অধিক প্রিয়,স্বাধীন হওয়ার চেয়ে। তখন রাসুল (সা) সাফিয়াকে নিজের জন্য রেখে দিলেন।মুক্ত করে বিয়ে করেন। 

এই বইতেই ১৫২ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণিত হয়েছে,সাফিয়া (রা) কোথাও যেতে রাজি হলেন না।তিনি নবী মুহাম্মদ (সা)এর কাছে বিনীত আরজ করলেন,ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) খয়বার যুদ্ধে আমার পিতা ও স্বামী নিহত হয়েছেন।আমার নিকটতম আত্মীয় স্বজনরাও যুদ্ধে প্রান হারিয়েছে আর আমি ইহুদী ধর্ম ত্যাগ করে পবিত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছি।বর্তমানে আমার ইহুদী আত্মীয় স্বজন যারা বেঁচে আছে তাদের কেউই আমাকে আশ্রয় দিবে না এবং গ্রহণও করবে না। এ আশ্রয়হীন অবস্থায় আমি কোথায় যাবো?কে আমাকে স্থান দিবে? ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি আর কোথাও যাবো না , আমি আপনার আন্তঃপুরে একজন দাসী হয়ে থাকতে চাই।আপনি আমাকে আশ্রয় প্রদান করুন। 

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তফা (সা)” ৩ খণ্ড, ৩০৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

একবার মহানবী (সা) এর মৃত্যুরোগের সময় সমস্ত নবী সহধর্মিণী তাঁর খেদমতে একত্র হলেন । তখন হযরত সাফিয়া (রা) বললেন, হে আল্লাহ্‌! রাসুল (সা) এর রোগ তাঁর পরিবর্তে আমাকে দাও । বিবিগন এ কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছিল, তখন নবী মুহাম্মদ (সা) বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ নিশ্চয়ই সে সত্যবাদী।

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তফা (সা), ৩ খণ্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

হযরত সাফিয়া (রা) যখন নবী (সা) এর স্ত্রীর মর্যাদা পেলেন, নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখের উপর একটু নীল দাগ দেখতে পেলেন,তিনি তাঁকে প্রশ্ন করলেন, এ দাগ কিভাবে হয়েছে ? তখন সাফিয়া (রা) বর্ণনা করলেনঃ একদিন আমি আমার পূর্ব স্বামীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আকাশের চাঁদ আমার কোলে এসে পড়েছে । আমি ঘুম থেকে উঠে আমার স্বামীকে আমার সপ্নের কথা বলার পরে সাথে সাথে সে আমাকে প্রচণ্ডভাবে একটি চড় মারল এবং বলল , তুমি (ইয়াসরিব) মদীনার শাসককে কামনা করছ অর্থাৎ সে মহানবী (সা) এর দিকে ইঙ্গিত করেছিল। সাফিয়া (রা) মদীনায় আগমনের পরে তিনি হারিস ইবনে নুমানের গৃহে উঠেন। হজরত সাফিয়া (রা) অনেক সুন্দর ছিলেন। আনসারী মহিলারা তাঁকে দেখতে ভিড় করেন । হযরত আয়েশা (রা) তাঁকে দেখতে যান কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁকে চিনে ফেলেন। পরক্ষনে তিনি ফিরে আসলে নবী (সা) তাঁকে প্রশ্ন করলেন, আয়েশা! কেমন দেখলে ? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ , এই ইহুদীকে দেখে এলাম । রাসুল (সা) বলেন তুমি এভাবে বল না। সে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম গ্রহণ উত্তমভাবেই করেছে ।-যারকানী,৩/২৫৭ এবং আল ইসাবা,৪/৩৪৭

যুদ্ধে জিতে মুসলিমরা কখনোই নারীদেরকে নির্যাতন অথবা যৌন হামলা করতেন না এমন ঘটনা দেখে যে কোনো নারীই মুসলিমদের দিকে আকর্ষিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় বরং স্বাভাবিক। হযরত সাফিয়া (রা) ঘটনা গুলোই এর সত্যতার জন্য যথেষ্ট। সাফিয়া (রা) ছিলেন যুদ্ধবন্দিনী নারী অথচ নবী মোহাম্মদ (সা) উনার সাথে কেমন মানবিক ব্যাবহার করেছেন নিজেরাই তো পড়লেন, তাই না? ইসলামের কিছু সস্তা সমালোচক দাবি করে সাফিয়া (রা)কে নাকি নবীজি (সা) দেনমহর দেন নাই- এই দাবি ডাহামিথ্যে কথা। কারণ,সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২০৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যাহ (রাঃ)-কে মুক্ত করেন এবং এ মুক্তিকে তার মোহর হিসেবে গণ্য করেন।-ihadis.com

এছাড়া অমুসলিম চিন্তাবিদ ও গবেষকের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় পূর্বে নারীরা বিজয়ীদেরকেই আকর্ষণ করার চেষ্টা করতো যাতে এদের দয়া পাওয়া যায়। যেমন,গবেষক জন ম্যাকক্লিনটক (মৃ-১৮৭০) লেখেন(ক),

“Women who followed their father and husbands to the war put on their finest dresses and ornaments previous to an engagement, in the hope of finding favor in the eyes of their captors in case of a defeat’’

ভাবার্থঃ যে সকল নারীরা তাদের বাবা অথবা স্বামীদের সাথে যুদ্ধে যেত তারা সবচেয়ে ভালো মানের পোশাক ও অলঙ্কার পরিধান করত যাতে বন্দী অবস্থায় বিজয়ীদের দয়া পাওয়া যায়। 

চিন্তাবিদ স্যামুয়েল বার্ডার (মৃ. ১৮৩৬) লেখেন(খ),

“It was customary among the ancients for the women, who accompanied their fathers or husbands to battle, to put on their finest dresses and ornaments previous to an engagement, in order to attract the notice of the conqueror, if taken prisoners.”

ভাবার্থঃ “এটি প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিলো যে, যেসকল নারীরা তাদের বাবা অথবা স্বামীর সাথে রণক্ষেত্রে যেতো, তাদেরকে সবচেয়ে উন্নতমানের কাপড় ও অলঙ্কার পরিধান করানো হতো, যাতে বন্দি হলে বিজয়ী বন্দিকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।

এসব প্রমাণ আমাদেরকে জানাচ্ছে তৎকালীন যুদ্ধে হেরে গেলে যারা জয় প্রাপ্ত হতো তাদেরকেই সন্তুষ্ট করার চেষ্টা নারীরা করতো। তাই নাস্তিকদের নির্দিষ্ট করে এটা বলার সুযোগই নেই যে নারীরা যুদ্ধে জিতা পুরুষের সাথে সম্পর্ক করতো না। নাস্তিকরা যখন যুক্তি-প্রমাণে পেরে উঠে না তখন আরেকটি প্রশ্ন করে যে ইসলাম যদি এতোই যুদ্ধবন্দিনীদের সুযোগ সুবিধা দেয় তাহলে বন্দী কেন করতে হবে?

উত্তর খুবই সোজা-যেসব নারীরা তাদের পুরুষদের সাথে মিলে মুসলিমদেরকে হত্যা করতে এসেছিল তাদেরকে বন্দী করাই যৌক্তিক। কারণ তাদেরকে সেভাবে ছেড়ে দিলে তারা পুনরায় মিলে আবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পয়তারা করবে। কিন্তু তখন তো আর বর্তমানের মতো কারাগার ছিল না তাই এটাকে নামে মাত্র বন্দী বলা যায় তাছাড়া বন্দী করলে এরা পুনরায় মিলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করার অথবা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে না। এই কারণে। বোঝা গেছে? গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে বন্দী করলেও একটি নারীকেও কোনো মুসলিম ধর্ষণ করতে পারবে না,নির্যাতন করতে পারবে না,অত্যাচার করতে পারবে না, কোনো জবরদস্তি করতে পারবে না।

যুদ্ধবন্দিনী রায়হানা, যুদ্ধবন্দিনী সাফিয়া এনাদের সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) আচরণ প্রমাণ করে ইসলামে যুদ্ধবন্দিনীদের ব্যাপারে আইন কেমন। এছাড়া সরাসরি স্পষ্ট করেই নবী মোহাম্মদ (সা) দাসীদের সাথে মানবিক আচরণ করতে আদেশ দিয়ে গিয়েছেন। নবী মোহাম্মদ (সা) উনার সাহাবীদেরকে দাসীদের ব্যাপারে যা যা শিক্ষা দিতেন সব বিস্তারিত সামনে তুলে ধরবো। পড়তে থাকুন তদন্তমনা হৃদয় দিয়ে।

আপনার মা বোন যদি দাসী হয় আপনার কেমন লাগবে?

আমি বেশ কিছু পাকিস্তানি নাস্তিকদেরকে দেখেছি যখনই মুসলিমদের সাথে যুক্তিতর্কে কুলাতে পারে না তখন এই প্রশ্নটি করে যে যদি আপনার মা বোনকে ইসলামিক সিস্টেমে দাসী বানানো হয় তখন আপনার কেমন লাগবে? 

আমার কাছে এর জবাব একদম সোজা। ধরা যাক কোনো কাফেরদের সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে। ধরে নিলাম সেই যুদ্ধে আমরা হেরে গিয়েছি। এখন সেই কাফেররা যদি ইসলামিক দাস দাসী অনুযায়ী আমার মা বোনকে অথবা আমার স্ত্রীকে দাসী বানায় এতে আমার আপত্তি নেই। কারণ আমি নিশ্চিত যে আমার মা বোন নির্যাতিত হবে না, অত্যাচারিত হবে না, ধর্ষিত হবার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যেহেতু কাফেরদের কাছে ইসলামের মতো যৌক্তিক ও কল্যাণকর দাস দাসী আইন নেই তাই আমি তীব্র নিন্দা করবো যদি তারা আমাদের নারীদের কাউকে দাসী বানায়।

সুতরাং নাস্তিকদের জন্য খুবই দুঃখের কথা যে এসব ফালতু ইমোশনাল প্রশ্ন করেও তারা নিজেদের ইসলাম বিরোধী অন্ধবিশ্বাসকে সত্যি প্রমাণ করতে পারে না।

যুদ্ধবন্দিনী রায়হানাকে নবী মোহাম্মদ কেটে ৫০০ টুকরো করেছিলেন?

ইসলামে যদি ধর্ষণ করা বৈধ হতো অথবা সওয়াবের কাজ হতো তাহলে কুরআন ও সহিহ হাদিসে প্রচুর এর পক্ষে দলিল প্রমাণ থাকতো। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে নবী মোহাম্মদ (সা) নিজে দাসী ধর্ষণ করতেন ও সাহাবীদেরকে ধর্ষণ করতে বলতেন। নাস্তিকরা এও বিশ্বাস করে নারী ও যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করার তথ্য নবী ও সাহাবীরা লুকিয়ে রেখেছে। বাস্তব সত্যি হচ্ছে এসবই আসলে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস। নাস্তিকদের কাছে শক্তিশালী কোনও প্রমাণই নাই। নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় মিথ্যা বিশ্বাস করতে পছন্দ করে।

আসুন দেখি যুদ্ধবন্দিনী রায়হানার সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) কেমন আচরণ করেছেন। এই ঘটনা গুলো প্রমাণ করে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে ইসলামের আচরণ কেমন হবে।

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৪ খণ্ড, ২৪০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ইবন ইসহাক আরাে বলেন, রাসূল করীম (সা) বনূ কুরায়যার বন্দীদেরকে সাযা দিয়ে সাঈদ ইবন যায়দকে নাজদে প্রেরণ করে তার বিনিময়ে অশ্ব ও অস্ত্র ক্রয় করেন। রাসূল করীম (সা) বন্ কুরায়যার নারীদের মধ্যে রায়হানা বিনতে আমর ইবন খানাকাকে নিজের জন্য পছন্দ করেন এ মহিলাটি ছিলেন বনূ আমর ইবন কুরায়যা গােত্রের। তিনি আমৃত্যু রাসূল করীম (সা)-এর মালিকানাধীন ছিলেন। রাসূল করীম (সা) তার কাছে ইসলাম পেশ করলে তিনি প্রথমে বিরত থাকেনপরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল করীম (সা) অত্যন্ত আনন্দিত হন। তাকে মুক্ত করে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলে তিনি রাসূলুল্লাহ সুবিধার কথা বিবেচনা করে এঝজন দাসীরূপে থাকাই পছন্দ করেনরাসূল করীম (সা)-এর ইনতিকাল পর্যন্ত তিনি তাঁর কাছেই ছিলেন তারপর ইবন ইসহাক খন্দক যুদ্ধের কাহিনী প্রসঙ্গে সূরা আহযাবের প্রথম দিকের আয়াত সম্পর্কে আলােচনা করেন। সূরা আহযাবের তাফসীরে এ বিষয়ে আমরা বিশদ আলােচনা করছি। সমস্ত প্রশংসা আর সন্তুষ্টি আল্লাহর জন্য।

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ খণ্ড, ৫০০ ও ৫০১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,

রাসুলুল্লাহ (সা) বনু কুরায়জাকে পরাজিত করার পরে রায়হানা বিনত আমর ইবন খিনাণাকে নিজের জন্য একান্ত করে নিলেন। নবী করীম (সা) এর ওফাত পর্যন্ত তিনি তার নিকটে তাঁরই মালিকানাধীন ছিলেন। তিনি তাঁকে ইসলাম গ্রহণ করার এবং তাঁকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।………  ওয়াকিদী (র) বলেঠ, পরে রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁকে উম্মুল মুনযির সালমা বিনত কায়স (রা) এর বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে অবস্থান কালে তাঁর ঋতুস্রাব দেখা দেয় এবং এক বারের স্রাবের পরে তিনি পবিত্রা হলে উম্মুল মুনযির (রা) এসে রাসুলুল্লাহ (সা)কে তা অবহিত করলেন। নবী করীম (সা) উম্মুল মুনধিরের বাড়িতে তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার যদি পছন্দ হয় তবে তোমাকে মুক্ত করে দিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করি। তবে আমি তাই করব। আর যদি আমাস মালিকানায় থাকা তোমার কাছে ভাল লাগে তবে মালিকানা সুত্রে আমি তোমাকে ব্যাবহার করবসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার দৃষ্টিতে আপনার জন্য এবং আমারও জন্য আপনার মালিকানাধীন থাকা অধিক নির্ঝঞ্জাট ও সহজ। ফলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা) এর মালিকানাধীন ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ অবস্থায় অব্যাহত ছিল।

পাঠক আপনাদেরকে আমি আরেকবার বলবো উপরের তথ্য গুলো খুবই মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন। অনেক অজানা তথ্য আপনি অনুধাবন করতে পারবেন। নবী মোহাম্মদ (সা) যদি ভয়ংকর খারাপ হতেন, সন্ত্রাসী হয়েই থাকতেন তাহলে উনি কেন রায়হানা বিনতে আমর ইবন খানাকাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে যাবেন? বিয়ে ছাড়াই তো উনি ইচ্ছে করলে জবরদস্তি করতে পারতেন, কি পারতেন না? এমনকি রায়হানা বিনতে আমর ইবন খানাকা নিজেই নবী মোহাম্মদ (সা) এর দাসী হয়ে থাকাকেই পছন্দ করলেন আজীবন যদিও উনাকে নবীজি (সা) মুক্ত করে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কি হিসাব মেলে? নাস্তিকরা যেভাবে দেখায় বাস্তবতা কি সেভাবে মেলে?

যেই সব মূর্খ নাস্তিকরা এভাবে মিথ্যা কথা বলে যে, দাসীদেরকে ধর্ষণ করে সেই তথ্য নবী ও সাহাবীরা সরিয়ে ফেলেছিল তাই দাসীদের থেকে তারা আসলেই ধর্ষণ হয়েছিল কিনা তা জানা না অথচ আমি একবার নয় একাধিক যুদ্ধবন্দিনী দাসীদের সাথে নবীজির আচরণ দেখালাম। যদি দাসীদেরকে ধর্ষণ করতেন তাহলে তো প্রথমেই রায়হানাকে বেঁধে তলোওয়ার ঠেকিয়ে ধর্ষণ করতে পারতেন কিন্তু এরকম কিছুই হয় নি, কেন?

নাস্তিকরা ইসলামের আক্রমণাত্মক যুদ্ধের আয়াত গুলো দেখিয়ে নিজেদের অনুসারীদেরকে এটা বুঝাতে চেষ্টা করে যে ইসলামে যেহেতু আক্রমণাত্মক যুদ্ধ আছে সেহেতু নারীদের স্বামী, ভাই, বাবাকে মেরে তো আর তাদের নারীদের সাথে ভালো আচরণ করতে না কিন্তু এই কথাটি সম্পূর্ণ নির্লজ্জ মিথ্যাচার। ইসলামে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ আছে কিন্তু কি প্রেক্ষাপটে, কি উদ্দেশ্যে, কি কারণে এসব নিয়ে আমি বিস্তারিত লিখবো। আমার অন্য সব লেখা আপনারা নিয়মিত পড়তে থাকুন।

সীরাতে ইবনে হিশাম, মূলঃ ইবনে হিশাম, অনুবাদঃ আকরাম ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ২২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

বনু কুরাইযার মহিলাদের মধ্য থেকে রায়হানা বিনতে আমর বিন খুনাফাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য মনােনীত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকাল পর্যন্ত সে তার মালিকানায় ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিয়ে করে পর্দার আড়ালে নেয়ার প্রস্তাব দেনকিন্তু সে বলে, “ হে আল্লাহর রাসূল, তার চেয়ে বরং আমাকে আপনি দাসী হিসেবে আশ্রয় দেন। এটা আমার ও আপনার উভয়ের জন্যই অপেক্ষাকৃত নিঝঞাট হবে।" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা মতই কাজ করলেনতাকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করার সময় সে ইসলাম গ্রহণের ঘাের বিরােধিতা করেছিল এবং ইহুদী ধর্মকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিলএতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে দূরে রইলেন এবং মর্মাহত হলেন। একদিন তিনি সাহাবীদের সাথে বৈঠকে আছেন এমন সময় পিছনের দিকে জুতার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, “নিশ্চয় সালাবা ইবনে সাইয়া আমাকে রায়হানার ইসলাম গ্রহণের খবর দিতে আসছে।" সত্যই সালাবা এলেন এবং জানালেন, রায়হানা ইসলাম গ্রহণ করেছে। এতে তিনি খুশী হলেন।

রায়হানা ইসলামের গ্রহণ করতে চায় নি এমনকি খুবই বিরোধীতা পর্যন্ত করতেছিল কিন্তু নবী মোহাম্মদ (সা) কি করলেন? উনাকে নির্যাতন করেছেন? ধর্ষণ করেছেন? অত্যাচার করেছেন? জেলে বন্দী করে রেখেছেন? নাহ। নবী মোহাম্মদ (সা) উনাকেই কিছুই করেন নাই বরং উনি রায়হানা থেকে দূরে রইলেন এবং মর্মাহত হলেন। ইসলামে যে যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করা নিষেধ এরপরেও বিবর্তিত মগজ হওয়ার কারণে নাস্তিকদের মাথায় এসব ঢুকবে না। রায়হানা সেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলে নবীজি (সা) অনেক খুশি হন। তারমানে কোনো দাসী যদি মুনিবের সাথে সহবাস করতে রাজি না হয় তাহলে সেই মালিকের এই অধিকার নেই যে দাসীর সাথে জবরস্তি করবে। ইসলাম বলে যেই দাসী তোমাকে কষ্ট দেয় তুমি তাকে বিক্রি করে দেও। কিন্তু নির্যাতন বা জবরদস্তি করে সহবাস করতে বলে নাই। এই হাদিস গুলো পড়ুন।

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৫৪৪,৩০১১,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,কারো যদি একটি বাঁদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে,তাহলে সে দ্বিগুন সাওয়াব লাভ করবে।-ihadis.com

সিলসিলা সহিহা,হাদিসঃ২৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইয়াযিদ ইবনু জারিয়াহ থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম বিদায় হাজ্জের দিন বলেছেন,তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো।তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো,তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো।অর্থাৎ, তাদের অধিকার আদায় করো,তাদের প্রতি অত্যাচার কর না এবং আল্লাহকে ভয় কর তোমরা যা খাও তাদেরও তা খাওয়াও,তোমরা যা পর তাদেরও তা পরাও।যদি তারা কোন অপরাধ করে যা তোমরা ক্ষমা করতে ইচ্ছা কর না। তবে আল্লাহর বান্দাদের বিক্রয় করবে।তাদের কষ্ট দিবে না।-ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৩০,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মা‘রূর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃআমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় লুঙ্গি ও চাদর আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়।আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃএকবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম।তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন,আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো,তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন।তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না,যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক।যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও,তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৫১৬১,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদেরকে খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তাই পরতে দাওআর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না।-ihadis.com

নবী মোহাম্মদ (সা) উনার সাহাবীদেরকে এই শিক্ষা দিচ্ছেন যে দাসীদের সাথে ভালো আচরণ করতো, তোমরা যা খাও তাদেরকেও তা খাওয়াও, তোমরা যা পরিধান করো তাদেরকেও তাই পরাও, তাদেরকে সাহায্য করো। তাদের উপর কিছু চাপিয়ে দেও না। অন্যদিকে আমাদের সমাজে বসবাস করা বিবর্তিত নাস্তিক প্রাণীরা বলছে ইসলামে দাসী ধর্ষণ করা জায়েজ। দাসীদেরকে নির্যাতন করা জায়েজ। দাসীদেরকে অত্যাচার করা জায়েজ। নবী মোহাম্মদ (সা) উনার সাহাবীদেরকে যেই ইসলামিক শিক্ষা দিয়েছেন সেটা বিশ্বাস করবো নাকি মুক্তচিন্তার মুক্তমনারা যেভাবে ইসলামকে খারাপ করে দেখায় সেই কথা বিশ্বাস করবো? সিদ্ধান্ত আপনার আপনি সত্যিটা নেবেন নাকি মুক্তমনাদের কথা নেবেন?

বিভিন্ন যুদ্ধে যেভাবে নারী ধর্ষিত হতোঃ

ফ্রান্স ছিল অ্যামেরিকার বন্ধু দেশ। তারপরও ৩৬০০ ফরাসি নারীকে ধর্ষণ করে আমেরিকান সৈন্যরা। Taken by force বইয়ের লেখিয়া J.Robert Lilly-র মতে, অ্যামেরিকান সৈন্যরা বেশি না, ফ্রান্সে ৩৬০০, যুক্তরাজ্যে ২৫০০, আর জার্মানীতে ১১,০০০ নারীকে ধর্ষণ করেছে। Lilly মিলিটারি রেকর্ড ও বিচারিক নথি ঘেঁটে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ঐ সময় পশ্চিম ইউরোপ কম বেশি ১৪০০০ বেসামরিক নারীকে ধর্ষণ করা হয়(১)। New York University press থেকে প্রকাশিত The GI War Against Japan বইয়ের লেখক Schrijvers Peter লেখেন, ধর্ষণ ছিল স্বাভাবিক ঘটনা (general practice)। তিনি আরও বলেন, দখলের প্রথম ১০ দিনে শুধু Kanagawa জেলাতেই ১৩৩৬ টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। ওকিনাওয়ার একজন ইতিহাসবিদ বলেন, ৩ মাসে সংখ্যা ছিল ১০০০০ এর বেশি

সম্প্রতি জার্মানিতে প্রকাশিত Crimes Unspoken: The Rape of German Woman at the End of the second World War বইয়ে একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ সাল এই ১০ বছরে দখলদার অ্যামেরিকা ১৯০০০০ জার্মান নারীকে ধর্ষণ করেছে। লেখিকা ইতিহাসের অধ্যাপক Miriam Gebhardt বলেন, ব্রিটিশরা আরও ৪৫০০০ এবং ফরাসিরা আরও ৫০০০০ নারীকে ধর্ষণ করে (২)। ১৯৪৫ সালের এপ্রিলের শেষের দিকে সোভিয়েত রেড আর্মি প্রবেশ করে বার্লিন শহরে। ৩০ এপ্রিল হিটলার আত্মহত্যা করে। শহর দখলের পর সভ্য! দেশের আর্মিটি মাত্র ১০ দিনে প্রায় ১ লক্ষ জার্মান নারীকে ধর্ষণ করে(৩)। 

চায়না,জাপান, জার্মানি, অ্যামেরিকা আরও কথিত যেসব উন্নত রাষ্ট্র রয়েছে তাদের প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে এমন আরও দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে। এছাড়া এভাবে বলতে থাকলে সেকুলার ও ধর্মহীনদের নির্মম কাহিনী শেষ হবে না। অনেক মূর্খ নাস্তিক নিজেকে আরও বেশি মূর্খ প্রমাণ করবার জন্য জেনেভা কনভেনশানের প্রশংসা করে থাকে। কিন্তু উপরের বর্ণিত ঘটনা গুলো ১৯২৯ সালে সাক্ষরিত যুদ্ধবন্দী সম্পর্কিত জেনেভা কনভেনশানের পরে। জেনেভা কনভেনশানের এর সিস্টেম যে অকার্যকর সেটা একাধিকবার প্রমাণিত। যাই হোক এই জেনেভা কনভেনশান নিয়ে লেখার কোনো রুচি আমার নেই। কোনো মুক্তমনা এই ফালতু সিস্টেম নিয়ে কখনো ওকালতি করতে আসলে তখন ধুয়ে দিব।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যুদ্ধে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা ছিল নর্মাল বিষয়। তরবারির নিচে জান্নাত,কাফেরদেরকে হত্যা করো যেখানে পাও এসব আয়াত ও হাদিস দেখিয়ে নাস্তিকরা এমন একটি দৃশ্যপট দাড় করাতে যায় যে নবী ও সাহাবীরাও যুদ্ধে নারীদের সাথে একই অপরাধ করেছে। ইসলামের সমালোচকরা অন্ধভাবে ধরেই নেয় যে যেহেতু সব যুদ্ধে নারীদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে সেহেতু নবী মোহাম্মদ (সা) ও উনার সাহাবীরাও একই কাজ হয়েছে। অথচ এই কথাটি মুক্তমনাদের অন্যান্য সব অভিযোগের মতই ডাহামিথ্যা কথা। আমরা স্পষ্ট দেখেছি যে নবী মোহাম্মদ (সা) কিভাবে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলেছেন। এমনকি উনাদেরকে সাহায্য করবার সকল সুযোগ দিয়েছেন। 

যদি কেউ ইসলাম গ্রহন করতে না চাইতেন উনি সেই নারী থেকে দূরে থাকতেন কিন্তু এরপরেও জবরদস্তি করে কিছুই করতেন না। এমনকি কোনো যুদ্ধবন্দিনীকে নবী মোহাম্মদ (সা) স্বামীর কাছে যাবার জন্য পর্যন্ত বলেছিলেন। এই যার আদর্শ সেখানে উনার সাহাবীদের তাহলে কেমন আচরণ হবে সেটা সহজেই বুঝা যায়। যুদ্ধে ইসলামের আইনের বিকল্প কোনো আইন নেই। ইসলাম যেই দাস আইন দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ কল্যাণকর। ইসলাম যুদ্ধবন্দিনীদের ব্যাপারে যেই আইন দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ যৌক্তিক। নাস্তিকদের অন্তরে হযরত মোহাম্মদ (সা) সম্পর্কে অযৌক্তিক মিথ্যা রয়েছে এই কারণে ইসলামের ব্যাপারে এসব সত্য কথা পড়লে নাস্তিকদের ভিতরে অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়।

বনু মুস্তালিকের উপর কেন অতর্কিত হামলা করা হয়েছিল?

নাস্তিকরা যেই হাদিস গুলো বেশি দেখায় আসুন সেটা আগে পড়ি।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৪১, সহিহ হাদিস,ইবনু ‘আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ) -কে পত্র লিখলাম, তিনি জওয়াবে আমাকে লিখেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। তাদের গবাদি পশুকে তখন পানি পান করানো হচ্ছিল। তিনি তাদের যুদ্ধক্ষমদের হত্যা এবং নাবালকদের বন্দী করেন এবং সেদিনই তিনি জুওয়ায়রিয়া (উম্মুল মু’মিনীন) -কে লাভ করেন। [নাফি‘ (রহঃ) বলেন] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) আমাকে এ সম্পর্কিত হাদীস শুনিয়েছেন। তিনি নিজেও সে সেনাদলে ছিলেন।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৩৩, সহিহ হাদিস, ইবনু ‘আওন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি যুদ্ধের সময় মুশরিকদের ইসলাম গ্রহণের দা‘ওয়াত দেয়া সম্পর্কে জানতে চেয়ে নাফি’ (রহঃ) এর নিকট পত্র লিখলাম। তিনি আমাকে লিখে জানালেন, এ নিয়ম ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী মুসত্বালিকের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছেন। অথচ তারা মুসলিমদের এরূপ আক্রমণ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তাদের পশুগুলো তখন পানি পান করছিল। এমতাবস্থায় অতর্কিত আক্রমণ করে তিনি তাদের যুদ্ধে সক্ষম ব্যক্তিদের হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের বন্দী করলেন। আর সেদিনই জুয়াইরিয়্যাহ বিনতুল হারিস তার হাতে বন্দী হন। এ ঘটনা আমার কাছে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেদিন ঐ সৈন্যবাহিনীতে শরীক ছিলেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি একটি উত্তম হাদীস। ইবনু ‘আওন (রহঃ) হাদীসটি নাফি’ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস বর্ণনায় তার সাথে কেউ অংশগ্রহণ করেননি।-ihadis.com


নাস্তিকরা খুব সুন্দর করে এই হাদিস গুলো লাল দাগ মেরে ফিটার হাতে কান্না করতে করতে মানুষকে বলে, দেখেছেন নবী মোহাম্মদ (সা) কেমন খারাপ মানুষ ছিল যে কিনা কাফেরদের উপর অতর্কিত হামলা করে তাদের সব কিছু লুটপাট করে মজা লুটতো। কিন্তু এই নাটকবাজ মূর্খমনারা এই কথা আপনাদেরকে কখনো বলবে না যে কেন বনু মুস্তালিকের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছিল। পুরো ঘটনার প্রেক্ষাপটকে মুক্তমনে ধামাচাপা দিয়ে শুধুমাত্র অর্ধেক ঘটনা দেখিয়ে মানুষের সামনে ইসলামের বদনাম করে সেই বিবর্তিত প্রাণীরা। আসুন এইবার আমি স্পষ্ট করে লাল দাগ মেরেই বিশুদ্ধ সুত্র দেখিয়ে দিচ্ছি বনু মুস্তালিকের গোত্ররা কি করেছিল যার কারণে নবীজি (সা) তাদের উপর অতর্কিত হামলা করেছিল।

নাসরুল বারী শরহে সহিহ বুখারী থেকেই আমি রেফারেন্স দিচ্ছি। “সহজ ইন আমুলবারী শরহে বুখারী মাগাযী ও তাফসির অংশ” এই কিতাবের ১৪৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

বনূ মুস্তালিকের দলপতি হারেস বিন আবী যিবার তার কওম ও অন্যান্য আরব গােত্র নিয়ে রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিপ্রায়ে রওনা দিয়েছে এ মর্মে রসূল (স.) সংবাদপ্রাপ্ত হয়ে তার সত্যতা যাচাই করার জন্য হযরত বুরায়দা আসলামীকে (রযি.) প্রেরণ করেনবুরায়দা (রযি.) নিজেই হারেসের সাথে সাক্ষাৎ ও মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় যে, সত্যই সে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেরাসূলে আকরাম (স.) খুবই জলদি রওনা দেন। পথিমধ্যে তাদের এ গুপ্তচরের সাথে সাক্ষাৎ হয়। কাফেররা তাকে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য প্রেরণ করে। হযরত উমর (রযি.) তাকে গ্রেপ্তার করে নবীজী (স.)-এর অনুমতিক্রমে হত্যা করেন। কাফেররা রাসূলে আকরাম (স.)-এর রওনা ও গুপ্তচর নিহত হবার খবর শুনে অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যায় এবং গােত্রের লােকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হারেসের সাথে কেবল তার নিজ গােত্র অবশিষ্ট থাকে। প্রথম আক্রমণেই কাফেররা পরাজিত হয়। সকল নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার হয়। বিপুল অর্থ-সম্পদ অর্জিত হয়। কোন মুসলমান এ যুদ্ধে শহীদ হননি।

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪ খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক (র) আসিম ইবন উমর ইবন কাতাদা প্রমুখ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) জানতে পারেন যে, হারিছ ইন আৰূ যিরারের নেতৃত্বে বনু মুস্তালিক রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সমবেত হচ্ছে। এ আবু যিরার ছিল পরবর্তীকালের উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়া এ খবর পেয়ে রাসূল (সা) তাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং মুরাইসী কূয়াের নিকট তাদের মুখােমুখী হন। স্থানটি ছিল কুদায়দ এর দিক থেকে সমুদ্র উপকূলে। উভয় পক্ষে লড়াই হয়। আল্লাহ্ তা'আলা বনূ মুস্তালিককে পরাজিত করেন তাদের অনেকে নিহত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের স্ত্রী-পুত্র কন্যাদের বন্দী করে এনে গনীমতরূপে বন্টন করেন। ওয়াকিদী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) হিজরী ৫ম সালে ২রা শাবান ৭ শত সাহাবীর একটা বাহিনী নিয়ে বনূ মুস্তালিক অভিমুখে রওয়ানা হন। এরা ছিল বনু মুদলাজের মিত্র। তাদের নিকট পৌঁছে রাসূল (সা) মুহাজিরদের পতাকা হযরত আবু বকর সিদ্দীক মতান্তরে আম্মার ইন ইয়াসিরের হাতে এবং আনসারদের পতাকা সা'দ ইবন উবাদার হাতে ন্যস্ত করেন।


আপনি যদি কোনো দেশের প্রধান হয়ে থাকেন আর আপনি যদি জানতে পারেন আপনার দেশের বিরুদ্ধে কোনো দল যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আপনি কি এটা শুনে তাদেরকে নান্নার কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়াবেন নাকি তাদের আগে আপনি নিজেই নিজের সৈন্যদেরকে বলবেন আগে অতর্কিত হামলা করে দিতে? কোনটা? যুক্তি কি বলে? নবী মোহাম্মদ (সা) যখন জানতে পারলেন বনু মুস্তালিক গোত্র উনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তখন নবী মোহাম্মদ (সা) আত্মরক্ষার জন্য তাদের উপর তাদের আগেই অতর্কিত হামলা করে দেন। এই সত্যি ঘটনাকে মুক্তচিন্তায় লুকিয়ে ফেলে নাস্তিকরা কেন শুধু সেইটুকু বলে যাচ্ছে যে নবী মোহাম্মদ অতর্কিত হামলা করেছে?


বনু মুস্তালিক যুদ্ধবন্দিনীদের সবাইকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছিলঃ

পাঠক আপনারা কি জানেন বনু মুস্তালিকের সবাইকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল এবং সবাই নিজের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল? কি অবাক হচ্ছেন তাই না? রাগ হচ্ছে কি,কেন আপনাকে এসব জানানো হয়নি বলে? নাস্তিকরা এসব সত্য সহ্য করতে পারে না কারণ এগুলো দেখালে তো আর মিথ্যাচার করার সুযোগ থাকে না। নাস্তিকরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করে,নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয় কিন্তু এটা তারা টের পায় না। কিন্তু আপনি কি নিজেকে ধোঁকা দিবেন নাকি বুদ্ধি ও যুক্তি প্রয়োগ করে সত্যিটা বুঝে নিবেন?

 

আল্লামা ইদরীস কান্দলবী (রহ) লিখিত, সীরাতুল মুস্তফা (সা),২ খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

নবীজি (সা) জুয়াইরিয়া (রা) কে মুক্ত করে নিজ স্ত্রী হিসেবে বরণ করে নেন।সাহাবায় কিরাম যখন এটা জানতে পারলেন তখন বনু মুস্তালিকের সকল বন্দীকে মুক্ত করে দিলেন। এ জন্য যে এরা রাসুল (সা) এর শ্বশুর কুলের আত্মীয় স্বজন। 

শায়েখ আসাদুল্লাহ আল গালিব (হা;ফি) লিখিত সীরাতুল রাসুল (সা) ৪২৯,৪৩০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,

গোত্রনেতা হারেছ কন্যা জুয়াইরিয়া (রা) এর সঙ্গে রাসুল (সা) এর বিবাহ হয়। ফলে শ্বশুর গোত্রের লোক হওয়ায় বিজিত দলের ১০০ পরিবারকে মুক্তি দিলে তারা সবাই ইসলাম কবুল করে।

মোহাম্মদ আকরাম খা লিখিত, "মোস্তফা চরিত" ৭১৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ

ন্দিগন যথা সময় মদীনায় আনীত হইলে হযরত তাহাদিগের দুরাবস্থা দর্শনে যার-পর নাই ব্যথিত হইয়া পরিলেন এবং তাহাদিগের মুক্তির উপায় সম্মন্ধে চিন্তা করতে লাগিলেন। আর মোহাম্মদ আকরাম খা লিখিত,৭১৮,৭১৯ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে, (যখন সাহাবীগন সবাইকে মুক্ত করে দিলেন) মুসলিমদিগের এই প্রকার করুণ ব্যাবহার দর্শনে মোস্তালেক - বংশ একেবারে স্তম্ভিত হইয়া পরিলো।যাহাদিগকে সমূলে বিনষ্ট করিবার জন্য তাহারা সাধ্যপক্ষে চেষ্টার তত্রুটি করে নাই, তাহাদিগের নিকট এই প্রকার আশাতীত সদব্যাবহার পাইয়া তাহারা ইসলামের মহিমায় অভিভুত হইয়া পরিলো এবং অনধিককালের মধ্যে এই গোত্রটি ইসলাম গ্রহণ করিয়া ধন্য হইয়া গেল।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ৩৯৩১, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, বনী মুস্তালিক যুদ্ধে ‘জুয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস ইবনুল মুস্‌তালিক’ বন্দিনী হয়ে সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাস (রাঃ) বা তার চাচাত ভাইয়ের ভাগে পড়েন। অতঃপর তিনি নিজেকে আযাদ করার চুক্তি করেন। তিনি খুবই সুন্দরী নারী ছিলেন, নজর কাড়া রূপ ছিল তার। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি চুক্তির অর্থ চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এলেন। তিনি দরজায় এসে দাঁড়াতেই আমি তাকে দেখে অসন্তুষ্ট হলাম। আমি ভাবলাম, যে রূপ-লাবন্যে তাকে দেখেছি, শিঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে এভাবে দেখবেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জুয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস, আমার সামাজিক অবস্থান অবশ্যই আপনার নিকট স্পষ্ট। আমি সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাসের ভাগে পড়েছি। আমি মুক্ত হওয়ার চুক্তিপত্র করেছি, চুক্তির নির্ধারিত অর্থ আদায়ে সাহায্য চাইতে আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাবে তুমি রাজি আছো কি? তিনি বললেন, কী প্রস্তাব, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আমি চুক্তির সমস্ত পাওনা শোধ করে তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তিনি বললেন, হাঁ, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি আছি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুয়াইরিয়াহকে বিয়ে করেছেন, একথা সবার মাঝে জানাজানি হয়ে গেলো। তারা তাদের আওতাধীন সমস্ত বন্দীকে আযাদ করে ছাড়তে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শ্বশুর বংশের লোক। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নিজের গোত্রের কল্যাণের জন্য তার চাইতে বরকতময়ী মহিলা আমি আর কাউকে দেখিনি। শুধু তার মাধ্যমে বনী মুস্তালিকের একশো পরিবার আযাদ হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম শাসক সরাসরি বিয়ে করতে পারেন।- ihadis.com

যদি নবীজি (সা) অথবা উনার কোনো সাহাবী যুদ্ধবন্দিনী কাউকে ধর্ষণ করতোই তাহলে অবশ্যই বনু মুস্তালিকের কেউই নিজের ইচ্ছায়, নির্ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করতেন না। তাছাড়া ধর্ষণ করতে চাইলে বিয়ের প্রস্তাব কেন দেবে এমনকি সবাই কেন মুক্ত করে দিতে চাইবে? নাস্তিকরা যা যা মিথ্যা অভিযোগ করে সেগুলো কি বাস্তবে মিলে একটাও? কি মনে হয়? নাস্তিকদের মস্তিস্ক জানোয়ারে বিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে এই কারণে সততার সাথে ইসলাম নিয়ে চিন্তা তারা করতে পারছে না? নাকি দুনিয়াতে বর্তমানে যেসব নাস্তিক প্রাণীরা রয়েছে তারা সামনে অন্য কোনো প্রাণীতে বিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে?

হযরত মোহাম্মদ (সা) সাহাবাদের কি শিক্ষা দিতেন?

দাসীদের ব্যাপারে হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার সাহাবীদের যা যা শিক্ষা দিতেন এগুলো জানতে পারলেই নাস্তিকদের মিথ্যাচারের সুযোগ আরও বন্ধ হয়ে যাবে। অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা এসব প্রমাণ গুলোকে এড়িয়ে থাকতে চায়। নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী হযরত মোহাম্মদ (সা) যদি আসলেই খারাপ মানুষ হতেন তাহলে উনি বলতেন দাসীদের সাথে ভয়ংকর ব্যাবহার করো তাদেরকে অত্যাচার করো, জবরদস্তি করো, দাসীদেরকে গণধর্ষণ করো-কিন্তু এগুলো কি উনি বলেছিলেন? বরং উল্টো কথাই বলেছিলেন।

 

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ৩৪৪৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যদি কোন লোক তার দাসীকে শিষ্টাচার শিখায় এবং তা উত্তমভাবে শিখায় এবং তাকে দ্বীন শিখায় আর তা উত্তমভাবে শিখায় অতঃপর তাকে মুক্ত করে দেয় অতঃপর তাকে বিয়ে করে তবে সে দু’টি করে সওয়াব পাবে।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৬৯৭,২৬৯৮, হাদিস সহিহ থেকে বর্ণিতঃ

আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শেষ কথা ছিলঃ “নামায পড়বে এবং তোমাদের দাস-দাসীর সাথে সদাচার করবে”-ihadis.com

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৬৪৭০,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ 

জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাক। কেননা কিয়ামাত দিবসে অত্যাচার অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতা থেকে সাবধান হও। কেননা এ কৃপণতাই তোমাদের আগেকার কাওমকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাঁদের খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলোভন দিয়েছে।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ ২০৮,৫৬৮,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘‘তোমরা অত্যাচার করা থেকে বাঁচো, কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকার স্বরূপ।অর্থাৎ অত্যাচারী সেদিন আলো পাবে না। আর তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কৃপণতা পূর্ববর্তী লোকেদেরকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাদেরকে নিজেদের রক্তপাত করার এবং হারামকে হালাল জানার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে।-ihadis.com

এই সহিহ হাদিস গুলো আরো আছে,হাদিস সম্ভার,হাদিসঃ৯৮২/আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ৪৮৫,৪৯০।-ihadis.com । এছাড়া কেউ দাসী কিনতে চাইলে দাসী বিষয় কল্যাণের দুয়া করতে শিক্ষা দিতেন নবীজি (সা)। দাসীকে নির্যাতন করতে, অত্যাচার করতে, ধর্ষণ করতে আদেশ দেননি কখনোই। আমি এমন একটি আয়াত অথবা একটিও হাদিস পাই নাই যেখানে বলা আছে দাসীদেরকে ধর্ষণ করো অথবা দাসীদেরকে ধর্ষণ করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে।

সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ২২৫২,হাসান হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউ দাসী ক্রয় করলে সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণ এবং এর স্বভাবের মধ্যে যে কল্যাণ রেখেছেন তা প্রার্থনা করি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি”, অতঃপর বরকতের জন্য দোয়া করবে। আর তোমাদের কেউ উট ক্রয় করলে সে যেন তাঁর কুজের উপরিভাগ ধরে বরকতের জন্য দোয়া করে এবং পূর্বানুরুপ বলে।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩১৪৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ‘উমর ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! জাহিলী যুগে আমার উপর একদিনের ই‘তিকাফ মানৎ ছিল। তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে তা পূরণ করের আদেশ করেন। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ‘উমর (রাঃ) হুনাইনের যুদ্ধের বন্দীর নিকট হতে দু’টি দাসী লাভ করেন। তখন তিনি তাদেরকে মাক্কাহয় একটি গৃহে রেখে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনাইনের বন্দীদেরকে সৌজন্যমূলক মুক্ত করার আদেশ করলেন। তারা মুক্ত হয়ে অলি-গলিতে ছুটতে লাগল। ‘উমর (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) -কে বললেন, দেখ তো ব্যপার কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তবে তুমি গিয়ে সে দাসী দু’জনকে মুক্ত করে দাও। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিয়েররানা হতে ‘উমরাহ করেন নি। যদি তিনি ‘উমরাহ করতেন তবে তা ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে লুকানো থাকত না। আর জারীর ইব্‌নু হাযিম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) হতে অতিরিক্ত বর্ণনা করতেন যে, ‘উমর (রাঃ) দাসী দু’টি খুমুস হতে পেয়েছিলেন। মা‘আমার (রহঃ)…. ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)–এর নিকট হতে নযরের কথা উল্লেখ করেন, কিন্তু তিনি একদিনের কথা বলেননি।-ihadis.com

নবীজি (সা) দাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করতেন এই কথার অর্থ কি নাস্তিকান্ধদের কাছে দাসীদের অত্যাচার করা, নির্যাতন করা? নাকি ? ইসলাম নিয়ে আর কতো মিথ্যাচার করতে পারলে নাস্তিকদের মনে শান্তি আসবে, বলুন? অথচ নাস্তিকরা যেভাবে হযরত মোহাম্মদ (সা)কে দেখাতে চায় উনি যদি আসলেই সেমন হতো তাহলে তো সেই দাসীদের ব্যাপারে বলতো ওদেরকে কেন মুক্ত করতে হবে ওদেরকে নির্যাতন করতে থাকো? দাসীদের মৃত্যু হবার আগ পর্যন্ত তোমরা সবাই ওদেরকে ধর্ষণ করতে থাকো,অত্যাচার করতে থাকো কিন্তু উনি কি এরকম কিছু বলেছিলেন? কেন বলেন নাই? আসলে নাস্তিকরাই যে ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করে প্রমাণ পেলেন তো? সমস্ত তথ্য প্রমাণ আমাদেরকে দেখাচ্ছে যুদ্ধবন্দিনীদেরকে ধর্ষণ করা হয়নি, নির্যাতন করা হয়নি, অত্যাচার করা হয়নি সেখানে নাস্তিকদের মিথ্যাকথা বলার অর্থ কি?

এক ছেলে এক নারীর দিকে বার বার তাকাতে থাকলে হযরত মোহাম্মদ (সা) তার চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেন। একটু ভাবুন উনি যদি উনার সাহাবীদের এই শিক্ষা দিতেন যে নারীকে ধর্ষণ করার তাহলে চেহারা কেন বার বার ঘুরিয়ে দিতে যাবেন?

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১৫১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ফযল ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) একই বাহনে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ‘আম গোত্রের জনৈক মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকে এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে থাকে। মহিলাটি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! আল্লাহ্‌র বান্দার উপর ফর্‌যকৃত হজ্জ আমার বয়োঃবৃদ্ধ পিতার উপর ফর্‌য হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ (আদায় কর)। ঘটনাটি বিদায় হজ্জের সময়ের।-ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ১৮৫৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ফযল (ইব্‌নু ‘আব্বাস) (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় খাস’আম কবিলার এক মহিলা আগমন করলেন। ফযল (রাঃ) মহিলার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং মহিলাও তার দিকে তাকাতে লাগলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফযল (রাঃ)- এর মুখটি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে লাগলেন। এ সময় মহিলাটি বললেন, বৃদ্ধ অবস্থায় আমার পিতার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে এমন সময় হজ্জ ফর্‌য হয়েছে, যখন তিনি সওয়ারীর উপর বসে থাকতে পারছেন না। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করতে পারি? তিনি বললেনঃ হাঁ। এ ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার ঘটনা।-ihadis.com

এই হাদিসটি আরও পাবেনঃ

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ৭১৫,সহিহ হাদিস।-ihadis.com // মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিসঃ ৭৯২,সহিহ হাদিস।-ihadis.com // আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ৭৮৮,সহিহ হাদিস।-ihadis.com // সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ২৬৪১, সহিহ হাদিস।-ihadis.com // সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ২৬৪২,সহিহ হাদিস।-ihadis.com // সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৫৩৯১, সহিহ হাদিস।-ihadis.com // সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৫৩৯২, সহিহ হাদিস।-ihadis,com

অন্যায়ভাবে দাসীকে হত্যা করলে নবী মোহাম্মদ (সা) শাস্তি দিতেনঃ

একজন ইহুদী এক দাসীকে অন্যায়ভাবে পাথর দিয়ে পিষে দিয়েছিল পরে সেই ইহুদীকে পর্যন্ত নবীজি (সা) কঠিন শাস্তি দেন। নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুপাতে যদি নবীজি (সা) খারাপ মানুষ হতেন তাহলে তো দাসীকে পিষে ফেলার কারণে উনার খুশি হওয়ার কথা ছিল বরং উনি উল্টো ইহুদী অপরাধীকে খুজে শাস্তি দিলেন। এই মানুষ কিভাবে দাসীদেরকে ধর্ষণ করতে আদেশ দিতে পারে? হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে মিথ্যাচার করতে নাস্তিকদের একটুও বুক কাপে না? নাস্তিকদের কি সুস্থচিন্তা করার যোগ্যতা নেই? এরা কি যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারছে না? নাস্তিকদের মধ্যে কি সততা থাকতে পারছে না? কেন?

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৪১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ইয়াহূদী একটি দাসীর মাথা দু’টি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষে দিয়েছিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তোমাকে এরূপ করেছে? অমুক ব্যক্তি, অমুক ব্যক্তি? যখন জনৈক ইয়াহূদীর নাম বলা হল- তখন সে দাসী মাথার দ্বারা হ্যাঁ সূচক ইশারা করল। ইয়াহূদীকে ধরে আনা হল। সে অপরাধ স্বীকার করলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন। তখন তার মাথা দু’টি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষে দেয়া হল।-ihadis.com

আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১০৮৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে এক ইয়াহূদী একটি বালিকার উপর নির্যাতন করে তার অলঙ্কারাদি ছিনিয়ে নেয়। আর পাথর দ্বারা তার মস্তক চূর্ণ করে। সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্তে তার পরিবারের লোকেরা তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নিয়ে আসে। তখন সে নিশ্চুপ ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (একজন নির্দোষ ব্যক্তির নাম উল্লেখ পূর্বক) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে সে হত্যা করেছে? অমুক? সে মাথার ইশারায় বললঃ না। তিনি অন্য এক নিরপরাধ ব্যক্তির নাম ধরে বললেন, তবে কি অমুক? সে ইশারায় জানাল, না। এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হত্যাকারীর নাম উল্লেখ করে বললেনঃ তবে অমুক ব্যক্তি মেরেছে কি? সে মাথা নেড়ে বললঃ জি, হ্যাঁ। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ উক্ত ব্যক্তির মাথা দু’পাথরের মাঝখানে রেখে চূর্ণ করা হলো।-ihadis.com

হযরত মোহাম্মদ (সা) যদি নিজের স্বার্থে কিছু করতেন তাহলে এই ইহুদীকে শাস্তি না দিয়ে বরং অনুপ্রেরণা দিতে পারতেন কারণ নাস্তিকদের মিথ্যা বিশ্বাস হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা) অমানবিক মানুষ ছিলেন। কিন্তু উনি এরকম কিছুই করলেন না - এতে নাস্তিকদের বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হচ্ছে না? হযরত মোহাম্মদ (সা) খারাপ হলে সেই ইহুদীকে তো বলতেই পারতো যে তুই অর্ধেক স্বর্ণ আমাকে দে অর্ধেক তুই নে এভাবে বেশি বেশি করে দাসী হত্যা করবি কিন্তু উনি এমন কেন বলেন নাই? উনি কেন দাসী হত্যার শাস্তি দিতে গেলেন? উনি কেন দাসীর পক্ষে মানবিক বিচার করতে গেলেন? উনি কেন যাচাই করে অপরাধীকে সন্ধান করে শাস্তি প্রদান করলেন? নবী মোহাম্মদ (সা) যদি জুলমকারী হতেন বা ন্যায় বিচার না করতেন তাহলে সেই বালিকার পরিবার কেন উনার কাছে বিচার চাইতে আসবে? নাস্তিকরা কেন হযরত মোহাম্মদ (সা) কে ঘৃণা করে? কেন উনার নামে মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়? কেন হযরত মোহাম্মদ (সা) কে নিয়ে নাস্তিকদের হিংসা করতে হবে?

নবীজি (সা) উনার সমস্ত দাস দাসীদেরকে মুক্ত করে দিয়েছিলেনঃ

যেই নাস্তিকরা এই কথা বলে হযরত মোহাম্মদ (সা) দাস-দাসীদের অত্যাচার করতো,নির্যাতন করতো-সেই উনিই নাকি মৃত্যুর আগে সবাইকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন কি নাস্তিকদের বলা কথা মিথ্যে প্রমাণ হয়ে গেলো না? এটা নিয়ে সংশয় আছে? নাস্তিকরা এটাও বলে থাকে যে হযরত মোহাম্মদ (সা) নাকি সম্পদ লোভী ছিলেন তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে মৃত্যুর পূর্বে উনার সব সম্পদ কোথায় ছিল? কোন ব্যাংকে ছিল?

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৭৩৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত্যুকালে তাঁর সাদা খচ্চরটি, তাঁর হাতিয়ার এবং সে জমি যা তিনি সদকা করেছিলেন, তাছাড়া কোন স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা, কোন দাস-দাসী কিংবা কোন জিনিস রেখে যাননি।-ihadis.com

ইসলামের অন্যতম একটি আইন হচ্ছে, মুশরিকরা যদি আশ্রয় চায় তাহলে মুসলিমরা তাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য। যেমন আল কুরআন সুরা তওবা ৯ঃ৬ আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে,

যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে, অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে। তা এই জন্য যে, তারা এমন এক কওম, যারা জানে না।

এরপরেও যদি কেউ ইসলাম নিয়ে জোরপূর্বক ভুলগলদমিথ্যাচিন্তা করতে চায় এবং ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের মিথ্যা ব্যাখ্যা গুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে চায় তাহলে সেটা নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই। কারণ আমি মানুষকে বুঝাতে পারি কিন্তু বিবর্তিত প্রাণীদেরকে তো আর বুঝাতে পারবো না। তাই না? গরু-ছাগল প্রাণীদের যেমন দেশপ্রেমের গুরুত্ব যুক্তি দিয়ে বললেও ফায়দা নেই তেমনি কোটি কোটি বছর ধরে চতুষ্পদ প্রাণী থেকে বিবর্তিত হওয়া মানুষের মতো দেখতে নাস্তিক নামক প্রাণীদেরকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে বুঝালেও এরা বুঝতে পারছে না। 

হযরত উমার দাসীদের নগ্ন বক্ষ করে পেটাতেন?

যেই ঘটনা গুলোকে আমরা মুসলিমরাই বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য বলে থাকি সেই ঘটনা গুলোকে নাস্তিকরা লুফে নিয়ে ইসলামের দিকে চাপিয়ে দিয়ে দাবি করতে চায় ইসলাম খুব অমানবিক বর্বর। আসলে নাস্তিকরা ফিকহ শাস্ত্র বিষয় অজ্ঞ দেখেই জাল জইফ কাহিনী গুলোকে লুফে নিয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেয়। আসুন নাস্তিকদের সেই প্রিয় ঘটনাটি প্রথমে জেনে নেই।

ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিত্ব হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং ইসলামের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তার অনেকজন উম্মু ওয়ালাদ ছিল বলে জানা যায়। তার বাসায় ক্রীতদাসীগণ নগ্ন বক্ষে পানীয় পরিবেশন করতেন বলে হাদিস থেকে জানা যায়। নিচর হাদিসটি দেয়া হচ্ছে, সেটি পড়ুন। এই হাদিসটি ইসলাম ওয়েব ডট নেট নামক প্রখ্যাত একটি ফতোয়া এবং হাদিস বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে। মূল হাদিস গ্রন্থেও হাদিসটি বর্ণিত আছে। হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে কিতাব আল সুনান আল কুবরা গ্রন্থে। 

নাস্তিকরা আরও কিছু তথ্য দেখিয়ে দাবি করতে চায় হজরত উমার (রা) দাসীদেরকে নগ্ন হতে বলতেন এবং দাসীরা নগ্ন না হলে পেটাতেন এবং এই রেওয়াতের গুলো নাকি আবার সহিহ। আসুন যাচাই করে দেখি নাস্তিকদের দেয়া তথ্য গুলো।

আশরাফুল হিদায়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, নবম খণ্ড, ৬১৫ পৃষ্ঠায় বলা আছে যে,ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, পর পুরুষের জন্য অন্যের দাসীর দেহের এতটুকু অংশই দেখা জায়েজ যতটুকু তার মাহরাম মহিলার মধ্যে জায়েজ। কেননা দাসীকে কাজের পােশাক পরিধান করে তার নিজ মনিবের প্রয়ােজনে বাহিরে যেতে হয় এবং তার মেহমানের সেবা করতে হয়। সুতরাং ঘরের ভিতর নিকটাত্মীয় মাহরাম পুরুষের সামনে মহিলার যে অবস্থা ঘরের বাইরে পরপুরুষের সামনে দাসীর সেই অবস্থাই হলাে। হযরত ওমর (রা.) কোনাে দাসীকে (দেহ ও মাথা) আবৃত অবস্থায় দেখলে দুররা মারতেন এবং বলতেন, হে দাফার! তােমরা ওড়না ফেল, তুমি কি স্বাধীন মেয়েদের মতাে হতে চাও? 

আলােচ্য ইবারতে অন্যের মালিকানাধীন দাসীর দেহের কতটুকু অংশ দেখা যাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, পুরুষের জন্য তার মাহরাম মহিলার শরীরের যতটুকু অংশ দেখা জায়েজ অন্যের মালিকানাধীন দাসীর এতটুকু অংশ দেখা জায়েজ। উল্লেখ্য যে, মাহরাম মহিলার হাত, পা, বাহু, পায়ের নলা, বুক, চুল, গলা দেখা জায়েজ। ইতঃপূর্বে এ সংক্রান্ত মাসআলা আলােচনা করা হয়েছে। কারণ দাসীদেরকে কাজের পােশাক পরিহিত অবস্থায় মনিবের প্রয়ােজন সারতে ঘরের বাহিরে যেতে হয়। মনিবের মেহমানদের খেদমত করতে তাদের সামনে উপস্থিত হতে হয়। ফলে ঘরের বাইরে পরপুরুষের সামনে দাসীর অবস্থা এমন হলাে যেমন একজন মহিলার অবস্থা হয় তার মাহরাম পুরুষের সামনে ঘরের ভিতরে। ইতঃপূর্বে বলা হয়েছিল যে, মাহরাম মহিলার কাছে পুরুষেরা অবাধে যাতায়াত করে, আর মহিলারা তখন কাজের পােশাকে থাকে তাই মাহরাম মহিলার বাহু, বুক, গলা ইত্যাদি দেখা জায়েজ। তদ্রুপ দাসীরা যেহেতু কাজের পােশাকে বাইরে যায় এবং তাদের মনিবের কাজ করে তাই তাদেরও সেসব অঙ্গ দেখা জায়েজ বলে সাব্যস্ত হবেদ্বিতীয় দলিল হলাে হযরত ওমর (রা.) -এর আমল। হযরত ওমর (রা.) রাস্তা-ঘাটে কোনাে দাসীকে দেহ মাথা ঢাকা অবস্থায় দেখলে ধমকাতেন ও দুররা মারতেন এবং বলতেন- অর্থাৎ 'হে দাফার ! তােমার ওড়না ফেল, তুমি কি স্বাধীন মেয়েদের সাদৃশ্য অবলম্বন করছ?.......হাদীসটির সনদ সম্পর্কে হাফেজ যাহাবী (র.) বলেন, এর সনদ শক্তিশালী। বিনায়া মােটকথা কিতাবে উল্লিখিত শব্দে হাদীসটি যদিও প্রমাণিত নয় কিন্তু এর বক্তব্য বায়হাকীর এ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়।

তাফসীরে মাজহারী, নবম খণ্ড, ৫৬৭ পৃষ্ঠায় বলা আছে, হজরত আনাস বর্ণনা করেছেন, একবার এক ক্রীতদাসী স্বাধীনাগণের মতাে পর্দা করে হজরত ওমরের পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলাে। হজরত ওমর তার পর্দা উন্মােচন করলেন। বললেন, হতভাগিনী! মুক্ত রমণীদের মতাে পর্দা করেছাে কেনাে? একথা বলে তিনি তার আবরণী ছুঁড়ে ফেলে দিলেন দূরে। 

নাস্তিক্যধর্মের নৈতিকতায় কি নগ্ন হয়ে চলাফেরা করা অমানবিক? ইসলামের দৃষ্টিতে না হয় হযরত উমার (রা) এর ঘটনাটি বাতিল কিন্তু নাস্তিকদের কাছে যদি এই ঘটনাটি সহিহ হয় তাহলে নাস্তিকরা কি এই অভিযোগ করবার সুযোগ রাখে যে এটা তাদের নৈতিকতা অনুযায়ী খারাপ? নাস্তিকরা কেন এই মুক্তচিন্তা করতে পারছে না যে হযরত উমার যা করেছেন সেটা ভালো কাজ করেছেন? কারণ প্রতিটি মানুষের নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী চলার অধিকার রয়েছে? হযরত উমার যা ইচ্ছে হয় করুক কারণ নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে উনি খারাপ কিছু করেন নাই? নাস্তিকরা কেন এভাবে চিন্তা করতে পারছে না নিজেদের নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে?

নাস্তিকরা উক্ত ঘটনাকে সাধারণ মানুষদের কাছে গ্রহণযোগ্য করবার জন্য আরবি ভাষা ব্যাবহার করে যাতে যে কেউ এই ঘটনাকে দেখেই বিশুদ্ধ ভেবে বসে। নাস্তিকরা সেই সাইট থেকে উক্ত ঘটনাটি দাবি করছে আসুন সেই সাইটের সম্পূর্ণ কথা গুলো আমরা জেনে নেই (৪)। তাহলেই আমরা বুঝতে পারবো নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় যেভাবে অসততা করে থাকে।

As for your question, then as far as we know, there is no authentic evidence that the slave women used to walk around bare-breasted. Ibn Taymiyyah  may  Allaah  have  mercy  upon  him said, “...because ‘Ali, may Allah be pleased with him, said that the slave woman should dress for the prayer as she dresses when she goes out, and it is well-known that she did not go out with her breast or back uncovered.” [Sharh Al-‘Umdah]. What was reported is that slave women used to walk around with their heads uncovered. This matter should be understood within the context of the Muslim community in the early days of Islam, bearing in mind that the Muslim community was very different from our present-day community back then, especially given that slavery no longer exists.Since there was a constant need for the slave women at the time to carry out chores and errands, and they were required to come and go often, obliging them to observe the hijaab would have caused them significant hardship. Therefore, Allah, the Exalted, did not oblige them to wear the hijab as He obliged free women to wear it, out of His mercy. However, this should be confined to the situation in which there is no fear of Fitnah (temptation). If there is fear of Fitnah and there are means potentially leading to sin and evil, then those means must be eliminated and slave women must be ordered to wear the hijaab in order to ward off Fitnah.

ভাবানুবাদঃ আপনার প্রশ্নের খাতিরে আমরা গবেষণা করে পেয়েছি তা হলো এই হাদিসের কোনো অথেন্টিসিটি আমরা পাইনা যেখানে বলা হয়েছে উমর রাঃ এর দাসীরা নগ্ন স্তন নিয়ে আসতেন। কারণ, ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, "আলী রাঃ বলেন, দাসী মহিলাকে অবশ্যই সেই কাপড় পরিধান করেই বের হতে হবে যা সে নামাজ পড়া কিংবা ইবাদত করার সময় পরিধান করে (শারহ আল উমদাহ)"। যা জানা গেছে তা হল দাস মহিলারা মাথা ঢেকে ঘুরে বেড়াত। এই বিষয়টিকে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত, এটি মনে রাখা উচিত যে মুসলিম সম্প্রদায়টি তখনকার আমাদের বর্তমান সম্প্রদায়ের থেকে অনেক আলাদা ছিল, বিশেষ করে এই কারণে যে দাসপ্রথা আর নেই। যেহেতু সেই সময়ে দাস মহিলাদের জন্য কাজ এবং কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য একটি অবিরাম প্রয়োজন ছিল এবং তাদের প্রায়ই আসা-যাওয়া প্রয়োজন ছিল, তাই তাদের হিজাব পালন করতে বাধ্য করা তাদের উল্লেখযোগ্য কষ্টের কারণ হয়ে উঠত। অতএব, মহান আল্লাহ তাদের হিজাব পরতে বাধ্য করেননি যেভাবে তিনি স্বাধীন মহিলাদেরকে তাঁর রহমত থেকে হিজাব পরতে বাধ্য করেছিলেন। যাইহোক, এটি এমন পরিস্থিতিতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত যেখানে ফিতনার (প্রলোভনের) কোন ভয় নেই। যদি ফিতনার ভয় থাকে এবং পাপ ও মন্দের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য উপায় থাকে, তাহলে সেই উপায়গুলো অবশ্যই বাদ দিতে হবে এবং ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দাসীদেরকে হিজাব পরার নির্দেশ দিতে হবে

পাঠক কি বুঝলেন? যেই সাইট থেকে নাস্তিকরা উক্ত ঘটনাটি তুলে দিয়ে ইসলামকে নোংরা প্রমাণ করবার পয়তারা করে যাচ্ছে সেই সাইটেই স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে যে হযরত উমার (রা) থেকে যেই ঘটনাটি পাওয়া যায় সেটা সত্য না। সেই ঘটনাটি বিশুদ্ধ না এমনকি এই ঘটনার পক্ষে তেমন কোনো শক্তিশালী প্রমাণ পর্যন্ত নেই। ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের সকল অভিযোগই আসলে মিথ্যাচারে ভরপুর। পাঠক আপনারা শায়েখ আইনুল হুদা (হাঃফি) এর এই বিষয় পুরো ভিডিওটি দেখতে পারেন(৫)। উনি এই ঘটনার পুরো তাহাকিক বিস্তারিত কিতাব থেকে দেখিয়েছেন।

পাঠক আপনারা যদি ভালো করে আশরাফুল হিদায়ার সেই পৃষ্ঠা পড়েন দেখতে পারবেন সেখানেই লেখা আছে যে “দাসীকে কাজের পােশাক পরিধান করে তার নিজ মনিবের প্রয়ােজনে বাহিরে যেতে হয় এবং তার মেহমানের সেবা করতে হয়।” আরও লেখা আছে যে “উল্লেখ্য যে, মাহরাম মহিলার হাত, পা, বাহু, পায়ের নলা, বুক, চুল, গলা দেখা জায়েজ। ইতঃপূর্বে এ সংক্রান্ত মাসআলা আলােচনা করা হয়েছে। কারণ দাসীদেরকে কাজের পােশাক পরিহিত অবস্থায় মনিবের প্রয়ােজন সারতে ঘরের বাহিরে যেতে হয়।” অর্থাৎ দাসীদের দেহে পোশাক থাকতো। কিন্তু নাস্তিকরা এমনভাবে দেখাতে চায় যে দাসীদের বুকে নাকি কোনো কাপড়ই থাকতো না। দাসীরা পুরো বুক উদাম করে রাস্তায় চলতো। এমন কোনো বিষয় উক্ত বই থেকেও বুঝা যায় না। এটাও স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে সেই পৃষ্ঠাতে যে “মহিলারা তখন কাজের পােশাকে থাকে তাই মাহরাম মহিলার বাহু, বুক, গলা ইত্যাদি দেখা জায়েজ।” সুতরাং এটা পরিস্কার যে দাসীরা পোশাক পরিধান করতেন কিন্তু উমার (রা) তাদেরকে পর্দা করতে দেখলে ওড়না সরাতে বলতেন যাতে তারা যে দাসী এটা স্পষ্ট হয়। হযরত ওমর (রা.) রাস্তা-ঘাটে কোনাে দাসীকে দেহ মাথা ঢাকা অবস্থায় দেখলে ধমকাতেন ও দুররা মারতেন এবং বলতেন- অর্থাৎ 'হে দাফার ! তােমার ওড়না ফেল।ওড়না ফেলে দেয়া ও পুরো নগ্ন বক্ষ করা দুটো কথা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই নাস্তিকরা যে দাবি করে হযরত উমার দাসীদেরকে নগ্ন বক্ষ করে পেটাতেন কথাটি সম্পূর্ণ বাতিল। তাছাড়া আমরা তো আগেই জেনেছি যে হযরত উমার (রা) থেকে ঘটনাটি গ্রহণযোগ্য নয়।

আহকামুল নজর ১ খণ্ড,২৩০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ইবনে কাত্তান (রহ) বলেন, এই বর্ণনা দাসীর পোশাকের ব্যাপারে উমার (রা) থেকেই পাওয়া যায়, এবং সুত্রও নির্ভরযোগ্য না এবং এর বেশি কিছুও নেই যে দাসীকে স্বাধীন নারী সাজার জন্য দোষারোপ করা হয়েছে, পোশাকের জন্য নয়।-Abu Amina Elias(December 9,2019.Slave girls showing there naked breasts? Faith in Allah

অন্য মুহাদ্দিস ফকিহ শাস্ত্রবিদ সেসব উক্তির সমালোচনা করেছেন এবং এসব মত যে একদম দুর্বল সেটা প্রমাণ করেছেন। আসুন সকল তথ্য প্রমাণ জেনে নেই। পাঠক এখন আসুন আমরা জেনে নেই যে, ইসলামে দাসীদের পর্দার বিধান কেমন। নাস্তিকরা যেভাবে বুঝাতে চায় যে দাসীরা পুরো বক্ষ খোলা রাখবে সেখানে কোনো কাপড় থাকবে না-আসলেই নাস্তিকদের কথা কি সত্যি নাকি এখানে কোনো লুকোচুরি রয়েছে।

আল কুরআন, সূরা আহযাবে বলেন, ৩৩:৫৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় “আল বাহার আল মুহিত” গ্রন্থের ৮ খণ্ডে,৫০৪ পৃষ্ঠায় আবু হাইয়ান (রহ) বলেন, 

এদিকে "মুমিন নারী" বা ‘the believing women’ শব্দ দ্বারা মুক্ত নারী এবং দাসী উভয়কেই বলা হয়েছে। দাসীদের কাছ থেকে প্রলোভন আরও বেশি কারণ তাদের ঘন ঘন কার্যকলাপ, স্বাধীন মহিলাদের থেকে ভিন্ন। মহিলাদের সাধারণতা থেকে তাদের বাদ দিতে স্পষ্ট প্রমাণের প্রয়োজন।

“আহকাম আল নাযার” গ্রন্থের ১ খণ্ডে,২২৮ পৃষ্ঠায় ইবনে কাত্তান (রহ) বলেন,

এই আয়াতে মুমিন নারী বলতে দাসী এবং মুক্ত নারী উভয়কেই বোঝানো হয়েছে । এবং এদের দুইজনের মাঝে কোনোরকম পার্থক্য নেই । প্রকৃতপক্ষে এর মূল অর্থ হল পর্দা এবং সতীত্বকে রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। যেমন পর্দা করার ইচ্ছাটি যখন নিজ কর্তৃক স্বীকৃত হয় তখন তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়না। পক্ষান্তরে পাপী মহিলারা নিজেদের সুন্দর করে উপস্থাপন করে ব্যভিচারের জন্য। 

“আল মহুল্লাহ” কিতাবের ২ খণ্ড,২৪১ এবং ২৪৮ পৃষ্ঠায় ইবনে হাযম (রহ) বলেন,

একজন মহিলা শুধুমাত্র তাঁর চেহারা খুলে রাখতে পারবে। এবং এইটা সকলের জন্য প্রযোজ্য একজন মুক্ত পুরুষ এবং দাস এবং একজন মুক্ত নারী এবং মুক্ত দাসী সম্মানের দিক দিয়ে এক। এদের মাঝে কোনো তফাৎ নাই । মুক্ত নারী এবং দাসীর মাঝে পার্থক্যকরণের সুযোগ নেই কারণ আমাদের সকলের দ্বীন এক রব এক। 

যারা বলে উক্ত আয়াত আয়াত শুধুমাত্র স্বাধীন নারীর জন্য, দাসীদের জন্য না তাদের এই কথা যে ভিত্তিহীন এটা স্পষ্ট করে বলেছেন শায়েখ আলবানী (রহ)। উনি “জিলবাব আল মারআ” কিতাবের ১ খণ্ডে ৯১ থেকে ৯২ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বর্ণনা করেন যে, 

শায়েখ আলবানী (রহ) নিজেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে,

এটা আশ্চর্যজনক যে কিছু ব্যাখ্যাকারী এই দুর্বল বর্ণনা দ্বারা বোকা বানানো হয়েছে, তারা এই মতকে মেনে চলে যে 'বিশ্বাসী নারীদের' স্বাধীন নারী হিসেবে দাসীদের বর্জন করার জন্য তাঁর বাণীকে সীমাবদ্ধ করে এবং এর উপর ভিত্তি করে দাসীদের আবরণ করার বাধ্যবাধকতা নেই। আসলে তাদের মাথা ও চুল স্বাধীন মহিলাদের মতো। বরং, কিছু আইনী মাযহাব অতিরঞ্জিত করে যে তারা তার নগ্নতাকে পুরুষের নগ্নতার মতো উল্লেখ করেছে, কেবল নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত… তা সত্ত্বেও, কিতাব ও সুন্নাতে এর কোনো প্রমাণ নেই। 

“আল মাওসু আত আল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়া” ৩১/৪৯ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায় যে,

হাম্বলী আলেমগণ বলেছেন একজন দাসীর উলঙ্গতা একজন স্বাধীন নারীর নগ্নতার মতো। স্বাধীন নারীর ব্যাপারে যা দেখা জায়েয তা ছাড়া তার দিকে তাকানো জায়েয নয়।

হজরত উমার (রা) এর সাথে উক্ত দাসীর ঘটনাটি সম্পূর্ণ বাতিল বলেছেন হযরত ইমাম ইবনে আল কাত্তান (রহ)। “আহকাম আল নাজার” কিতাবের ১ খণ্ড, ২৩০ পৃষ্ঠায়, ইবনে আল কাত্তান (রহ) বলেছেন,

এটি উমর থেকে স্পষ্টভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে এবং এটি সত্য নয়। অন্যদেরকে তিনি একজন স্বাধীন মহিলা বলে ধরে নেওয়ার জন্য পোশাক পরার জন্য তার নিন্দা ছাড়া আর কিছুই নেই এতে।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে দাসীরা চুল না ঢেকে মানুষের সেবা করতো, কিন্তু তারা কখনও তাদের স্তন উন্মুক্ত করতো না। বাজারে নগ্ন দাস মহিলাদের প্যারাড করার ভয়ঙ্কর ঐতিহাসিক অনুশীলন, যা পরবর্তী প্রজন্ম আবিষ্কার করেছে, ইসলামী শিক্ষার সাথে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। 

আল হাত্তাব (রহ) “মাওয়াহিব আল জালিল” ১ খণ্ড,৫০১ পৃষ্ঠায় লিখেন,

ইমাম মালিককে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি কি কোনো দাসীকে খালি গায়ে বাইরে যাওয়া অপছন্দ কর? মালিক বললেন: হ্যাঁ, এবং আমি তাকে এর জন্য শাস্তি দেব

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) “মাজমাওল ফতোয়া” বইয়ের ১৫ খণ্ড,৪১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

দাসীরা সাহাবীদের সময়ে, মাথা ঢেকে রাস্তায় চলাফেরা করত এবং এমন লোকদের সেবা করত যাদের অন্তরে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। যদি একজন লোক আকর্ষণীয় তুর্কি দাসীকে এই সময় এবং স্থানের মতো লোকদের মধ্যে চলতে দেয়, যেমন এই দাসীরা করেছে, তবে এটি হবে এক ধরণের দুর্নীতি।

নাস্তিকরা দুটো হাদিস দেখিয়ে দাবি করে এই হাদিসে দাসীর সতর নাভির নিচ থেকে নিয়ে হাঁটুর উপর পর্যন্ত তারমানে ইসলামে দাসীর নগ্ন বক্ষ দেখা বৈধ এমনকি দাসীর বক্ষ সম্পূর্ণ খোলা রাখাও ইসলামে জায়েজ?  

সুনান আদ-দারাকুতনী, হাদিস,৮৬৩,তে বলা আছে, মুহাম্মাদ ইবনে মাখলাদ (রহঃ) … আমর ইবনে শুআইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের শিশুদের সাত বছর বয়সে নামাযের (পড়ার) নির্দেশ দাও। তারা দশ বছর বয়সে পদার্পণ করলে নামাযের জন্য (তা না পড়লে) তাদের দৈহিক শাস্তি দাও এবং তাদের বিছানা পথক করে দাও। আর তোমাদের কেউ নিজের দাসকে বা নিজের শ্রমিককে তার দাসীর সঙ্গে বিবাহ দিলে সে যেন তার নাভির নিচ থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত অঙ্গের প্রতি না তাকায়। কারণ নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর (অবশ্য আবরণীর অঙ্গ)-hadisbd.com

সুনান আদ-দারাকুতনী, হাদিসঃ ৮৬৪,তে বলা আছে, ইউসুফ ইবনে ইয়াকূব ইবনে ইসহাক ইবনে বাহলুল (রহঃ) … আমর ইবনে শুআইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের শিশুদের সাত বছর বয়সে (পৌছলে) নামায পড়ার নির্দেশ দাও। তারা দশ বছর বয়সে পদার্পণ করলে (নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য) তাদের দৈহিক শাস্তি দাও এবং তাদের বিছানা (তোমাদের থেকে) পৃথক করে দাও। আর তোমাদের কেউ তার দাসকে বা শ্রমিককে বিবাহ করালে সে যেন তার (স্ত্রীর) হাঁটু ও নাভির মধ্যবর্তী অঙ্গ না দেখে। কারণ নাভি ও হাঁটুর মধ্যবর্তী অঙ্গ লজ্জাস্থানের অন্তর্ভুক্ত।-hadisbd.com

যদিও এই হাদিস থেকে প্রমাণ হয় না যে দাসী নগ্ন বুক দেখা জায়েজ অথবা দাসীর নিজের বুক সম্পূর্ণ খোলা রাখবে তারপরেও তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় এরপরেও সমস্যা নেই কারণ এখানে তো নিজের দাসীর কথা বলা হচ্ছে। আর নিজের দাসীর বুক যদি খোলাও থাকে সেটা দেখাতে সমস্যা নেই। কারণ মুনিব ও দাসীর সম্পর্কে তো সহবাস করা বৈধ। এখন আসুন দাসীদের পোশাক এর ব্যাপারে নবী মোহাম্মদ (সা) থেকে স্পষ্ট সহিহ হাদিস গুলো পড়ে নেই।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মা‘রূর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে।-ihadis.com

 সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬০৫০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ তাঁর উপর একখানা চাদর ও তাঁর গোলামের গায়ে একখানা চাদর দেখে বললাম, যদি আপনি ঐ চাদরটি নিতেন ও পরতেন, তাহলে আপনার এক জোড়া হয়ে যেত আর গোলামকে অন্য কাপড় দিয়ে দিতেন। তখন আবূ যার (রাঃ) বললেনঃ একদিন আমার ও আরেক লোকের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। তার মা ছিল জনৈকা অনারব মহিলা। আমি তার মা তুলে গালি দিলাম। তখন লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট তা বলল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি অমুককে গালি দিয়েছ? আমি বললামঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কি তার মা তুলে গালি দিয়েছ? আমি বললামঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তো এমন লোক যার মধ্যে জাহিলী যুগের স্বভাব আছে। আমি বললামঃ এখনো? এ বৃদ্ধ বয়সেও? তিনি বললেনঃ হাঁ! তারা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা ওদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যার ভাইকে তার অধীন করে দেন সে নিজে যা খায়, তাকেও যেন তা খাওয়ায়। সে নিজে যা পরে, তাকেও যেন তা পরায়। আর তার উপর যেন এমন কোন কাজ না চাপায়, যা তার শক্তির বাইরে। আর যদি তার উপর এমন কোন কঠিন ভার দিতেই হয়, তাহলে সে নিজেও যেন তাকে সাহায্য করে।-ihadis.com

আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১০৭৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মা‘রূর (রহ.) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ একবার আমি এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, আবূ যর! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে।-ihadis.com

সিলসিলা সহিহা, হাদিসঃ ৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআবূ যার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় তোমাদের ভাইগণ (দাস-দাসীগন) তোমাদের উপহার স্বরূপ। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। যার অধীনে তার ভাই থাকবে তাকে যেন সে তা-ই খাওয়ায় যা সে খায়। আর তাকে তা-ই পরায় যা সে পরে। তাদের সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দিও না। যদি তাকে এমন কাজ করতে দাও যা তার সাধ্যাতীত তবে তাকে সাহায্য কর।-ihadis.com

এসব হাদিস থেকে পরিস্কার হয়ে যায় যে ইসলাম দাস বা দাসীদের সাথে কেমন আচরণ করতে শিক্ষা দেয় একইসাথে মালিক যেই পোশাক পরিধান করবে সে নিজের দাস বা দাসীকে একইরকম পোশাক পরিধান করা হবে। তাছাড়া এমন কোনো সহিহ হাদিস নাস্তিকরা দেখাতে পারে নি যেখানে নবী মোহাম্মদ (সা) বলেছেন দাসীরা বুক নগ্ন করে রাস্তায় চলাফেরা করবে। মুফতি শামায়েল নদভী (হাঃফি) উনি সকল মুল আরবি কিতাব খুলে খুলে স্পষ্ট করে এসব অর্থাৎ হযরত উমার (রা) ও দাসীর বুক থেকে ওড়না খোলা, এরপরে আবদুল্লাহ ইবনে উমার উনি নাকি দাসীদের টিপে টিপে দেখতেন এসব বর্ণনা যে ভিত্তিহীন এমনকি এসব বর্ণনাকে যে মুহাদ্দিসগণরাই ভিত্তিহীন বলে ঘোষণা করেছেন ইত্যাদির সকল দলিল প্রমাণ উনি সরাসরি লাইভে দেখিয়েছেন। আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন(৬)। বিস্তারিত জানতে (৭) আরও পড়তে পারেন এই তথ্য প্রমাণ গুলো (৮)।

দাসীর সাথে ইসলাম কেমন আচরণ করতে বলে?

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪:৩৬ আয়াতে বর্ণিত আছেঃ

পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়,এতীম-মিসকীন ,প্রতিবেশী,অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও।নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না অহংকারীকে।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩৯০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ মূসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে তার দাসী আযাদ করে তাকে বিয়ে করে, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব।- ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৫১৬১,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদেরকে খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তাই পরতে দাও।আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না।-ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৫৪৪,৩০১১,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,কারো যদি একটি বাঁদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে,তাহলে সে দ্বিগুন সাওয়াব লাভ করবে।-ihadis.com

সিলসিলা সহিহা,হাদিসঃ২৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

ইয়াযিদ ইবনু জারিয়াহ থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম বিদায় হাজ্জের দিন বলেছেন,তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো।তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো,তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো।অর্থাৎ, তাদের অধিকার আদায় করো,তাদের প্রতি অত্যাচার কর না এবং আল্লাহকে ভয় কর তোমরা যা খাও তাদেরও তা খাওয়াও,তোমরা যা পর তাদেরও তা পরাও।যদি তারা কোন অপরাধ করে যা তোমরা ক্ষমা করতে ইচ্ছা কর না। তবে আল্লাহর বান্দাদের বিক্রয় করবে।তাদের কষ্ট দিবে না।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৬০৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

ইয়ায ইবনে হিমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী পাঠালেন যে,তোমরা পরস্পরে নম্র ব্যবহার অবলম্বন কর।যাতে কেউ যেন কারো প্রতি গর্ব না করে এবং কেউ যেন কারো প্রতি যুলুম না করে।-ihadis.com

এই বিষয় আরো বিস্তারিত জানতে “নিজের দাসীকে যৌন নির্যাতন করে সহবাস ইসলামে বৈধ?” লেখটি পড়ুন। ইসলামে নিজের দাসীর সাথে কেমন আচরণ করতে বাধ্য করে বিস্তারিত সেখানে বলেছি।

হযরত মুয়াবিয়ার কাছে নগ্ন দাসী আনা হলে তিনি সেই দাসীদের লজ্জাস্থান ভোগ করতে চাইতেন?

নাস্তিকরা এভাবে বলে থাকে,

ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এই মু’আবিয়ার দরবারে দাসীদেরকে নগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন করা হতো বলে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে জানা যায়। মু’আবিয়া দণ্ড দিয়ে সেই সব দাসীদের গোপনাঙ্গ নির্দেশ করে বলতেন, এই সম্ভোগ অঙ্গ যদি আমার হতোএই অমানবিক এদের চিন্তা চেতনা

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮, ২৬৬,২৬৭ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, ইমাম শাবী ও অন্যরা বলেন, শেষ বয়সে মুআবিয়ার (রা) সামনের দুই দাঁত পড়ে গিয়েছিল। ইবনে আসাকির হযরত মুআবিয়ার আযাদকৃত গােলাম খোজা খাদীজের জীবনী আলােচনা প্রসঙ্গে তার উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন, (একবার) মু'আবিয়া (রা) একটি সুন্দরী ও ফর্সা বাদী খরিদ করলেন, এরপর আমি তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় তার সামনে পেশ করলাম, এ সময় তাঁর হাতে একটি দণ্ড ছিলতিনি তা দ্বারা তার বিশেষ অঙ্গের প্রতি নির্দেশ করে বলেন, এই সম্ভোগ অঙ্গ যদি আমার হত ! তুমি তাকে ইয়াযীদ বিন মু'আবিয়ার কাছে নিয়ে যাও। তারপর বলেন, না ! তুমি আমার কাছে রাবী'আ বিন আমর আল জুরাশীকে ডেকে আন, উল্লেখ্য যে, ইনি বিশিষ্ট ফকীহ ছিলেন। রাবী'আ যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তখন তিনি তাকে বলেন, এই বাদীকে বিবস্ত্র অবস্থায় আমার সামনে আনা হয়েছে এবং আমি তার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ দেখেছি, এখন আমি তাকে ইয়াযীদের কাছে পাঠাতে চাই। তিনি বললেন, না। আমীরুল মু'মিনীন! আপনি তা করবেন। কেননা, সে তার জন্য আর হালাল হবে না। তিনি বলেন, তুমি অতি উত্তম রায় প্রদান করেছ। রাবী বলেন, এরপর তিনি হযরত ফতিমা (রা)-এর আযাদকৃত গােলাম আবদুল্লাহ্ বিন মাসআদা আল ফাযারীকে বাঁদীটি দান করেন। আর সে ছিল কৃষ্ণাঙ্গ, তাই তিনি তাকে বলেন, এর মাধ্যমে তােমার সন্তানাদিকে ফর্সা করে নাও। এ ঘটনা হযরত মুআবিয়ার ধর্মীয় বিচক্ষণতা ও অনুসন্ধিৎসার পরিচায়ক। যেহেতু তিনি কামভাবের সাথে বাদীটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু তার ব্যাপারে নিজেকে দুর্বল গণ্য করেন (এবং তাকে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন) তাই তিনি।

এই ঘটনাটি যঈফ বা দুর্বল(৯)। তাই এই ভিত্তিহীন ঘটনা থেকে কোনো কিছু দাবি করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেই নাস্তিক্যধর্মে নারীদের বিকিনি পরিধান করবার স্বাধীনতা রয়েছে। যেই নাস্তিক্যধর্মে নাস্তিক মা নিজের কন্যার সাথে সম্মতিতে সেক্স করবার স্বাধীনতা দিয়েছে সেই নাস্তিকরাই যখন এই ভিত্তিহীন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামের বদনাম করে তখন সেটা হাস্যকর ও ভিত্তিহীন ছাড়া কিছু বলা যায় না। ফিকহ শাস্ত্র বিষয় একদম অজ্ঞ নাস্তিকরা এরপরে প্রশ্ন করে এসব জইফ ঘটনা কিভাবে এলো? কেন এলো? এখানে আমি এই ফালতু প্রশ্নের জবাব দিয়ে সময় নষ্ট করেত চাচ্ছি না। আপনারা লিংকের দেয়া লেখাটি থেকে জবাব জেনে নিন।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার দাসী কেনার সময় টিপে টিপে দেখতেন?

উনার সম্পর্কে একটি গুরুত্বপুর্ণ হাদিস পাওয়া যায় মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক গ্রন্থে, যেটি খুবই প্রাচীন একটি হাদিস গ্রন্থ। হাদিসটিতে বলা হচ্ছে, উনি বাজার থেকে দাসী কিনতেন, কেনার সময় টিপে টিপে দেখতেন দাসীদের। স্তন্যের মাঝখানে তিনি হাত দিয়ে দুলিয়ে দেখতেন, দাসীদের স্তন কেমন। খুবই গুরুত্বপুর্ণ হাদিস গ্রন্থ আবদুর রাজ্জাকের প্রণিত হাদিস গ্রন্থের এই হাদিসটি পাওয়া যাবে ইসলাম ওয়েব ডট নেট ওয়েবসাইটে।

এই ঘটনারও একটি বর্ণনাও বিশুদ্ধ বা গ্রহণযোগ্য না(১০)। নাস্তিকদের কাছে এসব জাল জইফ প্রমাণহীন কাহিনী বেশি মজা লাগে। কারণ এসব ভিত্তিহীন কাহিনী দেখিয়েই মানুষকে তারা মুক্তচিন্তায় ধোঁকা দেয়।

দাসী প্রহার করলে কী মুক্ত করা বাধ্যতামূলক?

নাস্তিকরা কিছু তথ্য দেখিয়ে দাবি করে ইসলামে দাসীদেরকে প্রহার করলেও মুক্ত করে দেয়া বাধ্যতামূলক না। আসুন প্রথমে নাস্তিকদের দেয়া তথ্য গুলো দেখেই নেই এরপরে যাচাই করে দেখবো আসলেই নাস্তিকদের দাবি সঠিক নাকি ভাউতাবাজি।

নাস্তিকরা “ইযাহুল মুসলিম” গ্রন্থের ৩৬৫ পৃষ্ঠা থেকে দাবি করে দাসকে প্রহার করলে মুক্ত করা বাধ্যতামূলক না বরং মুস্তাহাব। সুতরাং দাস দাসীকে নিজের ইচ্ছে মতো মারধর করা যাবে।

আল্লামা নববী (রহ.) বলেন, সকল আলিম এ ব্যাপারে একমত যে, প্রহৃত গােলাম আযাদ করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। ওয়াজিব না হওয়ার দলীল হযরত সুয়াদ ইবনে মুরিনের হাদীস-তিনি বলেন, রাসূলের (সা.) যুগে আমাদের একটি মাত্র গােলাম ছিল। একদা আমাদের মধ্য হতে কেউ তাকে আঘাত করে। ঘটনা শুনে রাসূল (সা.) বলেন—তাকে আযাদ করে দাও। রাসূল (সা.)-কে বলা হলাে, তাদের গােলাম এই একটিই। তখন তিনি বললেন আপাতত খেদমত গ্রহণ করাে, সুযােগ হলে আযাদ করে দিও। কাজী ঈয়ায (রহ.) বলেন—সামান্য পরিমাণ আঘাত করলে আযাদ করা ওয়াজিব না এ ব্যাপারে সবাই একমততবে যদি আগুন দিয়ে পােড়ায় অথবা অঙ্গহানী করে কিংবা বিনা কারণে প্রচন্ড আঘাত করে তাহলে ইমাম মালেক ও ফকীহ আবু লাইছের মতে তাকে আযাদ করা ওয়াজিব। কিন্তু অন্যান্য আলিমদের মতে এক্ষেত্রেও আযাদ করা ওয়াজিব নয়।

একই কথা বলা রয়েছে সহীহ মুসলিম গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থেও //সহীহ মুসলিম শরীফ প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ, আল হাদিস প্রকাশনী, ১৬ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২১ / 

এখানে এটা বলা হয় নাই যে দাস বা দাসীকে মারধর করা বৈধ। এটা বলা হয়েছে যে মারলে মুক্ত করে দেয়া বাধ্যতামূলক কিনা। নাস্তিকরা এখানে বুঝতে একদম ভুল করেছে। খেয়াল করুন,যেই মুহাদ্দিসরা দাবি করছে দাস প্রহার করলে মুক্ত করে দেয়া ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব তারা কোন হাদিসের উপর ভিত্তি করে এই ফতোয়া দিয়েছেন। তারা “হযরত সুয়াদ ইবনে মুরিনের হাদীস-তিনি বলেন, রাসূলের (সা.) যুগে আমাদের একটি মাত্র গােলাম ছিল। একদা আমাদের মধ্য হতে কেউ তাকে আঘাত করে। ঘটনা শুনে রাসূল (সা.) বলেন—তাকে আযাদ করে দাও। রাসূল (সা.)-কে বলা হলাে, তাদের গােলাম এই একটিই। তখন তিনি বললেন আপাতত খেদমত গ্রহণ করাে, সুযােগ হলে আযাদ করে দিও।”- এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিয়েছেন যে মুক্ত করে দেয়া ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। কিন্তু হাদিস কিন্তু একটি নয় আরও আছে। এই হাদিসটি পড়ুন।

সুনানে আবু দাউদ, ৫১৬৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা সুয়াইদ ইবনু মুক্বাররিন (রাঃ) এর বাড়ীতে থাকতাম। আমাদের সঙ্গে একজন মেজাজী বৃদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে একটি দাসী ছিল। তিনি তার চেহারায় চড় মারলেনএ কারণে, সুয়াইদ (রাঃ) এতোটা উত্তেজিত হয়েছিলেন যে, আমরা তাকে এমন উত্তেজিত হতে আর দেখিনিতিনি বললেন, একে আযাদ করা ব্যতীত তোমার জন্য অন্য কোন পথ নেই। তুমি দেখছো যে, আমাদের মুক্বাররিনের সাতটি সন্তান। আমাদের মাত্র একজন খাদেম ছিল। আমাদের কনিষ্ঠজন তার মুখে চড় মেরেছিল বিধায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তাকে আযাদ করার নির্দেশ দিলেন।-ihadis.com

এই হাদিসে নবী মোহাম্মদ (সা) স্পষ্ট করে বলেছেন যে আজাদ করা ছাড়া অন্য পথ নেই এরমানে দাসকে প্রহার করলে আজাদ করতেই হবে এটা নবী মোহাম্মদ (সা) থেকেই প্রমাণিত। বাকি যেসব মুহাদ্দিসরা বলেছেন বাধ্যতামূলক না তারা একটি হাদিসের উপর ভিত্তি করে বলেছেন তাও মুনিবের মাত্র একজন দাস ছিল। যদি একাধিক দাস হতো তাহলে অবশ্যই মুক্ত করে দেয়ার ফতোয়া দেয়া হতো। নিচের হাদিস গুলো খেয়াল করুন একজন মাত্র দাস ছিল দেখে নবী মোহাম্মদ (সা) প্রথমেই মুক্ত করে দিতে বলেন নাই বরং স্বাবলম্বী হলে মুক্ত করে দিতে বলেন। নবী মোহাম্মদ (সা) কিন্তু তারপরেও মুক্ত করে দিতে বলেন। তাহলে মুস্তাহাব কিভাবে হয়? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই মুক্ত করে দেয়া মুস্তাহাব তাহলেও সমস্যা নাই কারণ এই হাদিস গুলো থেকেই স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে মুনিব যদি দাসকে মারে তাহলে দাসও মুনিবকে ইচ্ছে করলে প্রতিশোধ নিতে পারবে। মনোযোগ দিয়ে হাদিস গুলো পড়ুন।

সুনানে আবু দাউদ, ৫১৬৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মু’আবিয়াহ ইবনু সুয়াইদ ইবনু মুক্বাররিন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আমাদের এক দাসকে চড় মারলামআমার পিতা তাকে ও আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তার থেকে প্রতিশোধ নাও। আমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মুক্বাররিন গোত্রের সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি খাদেম ছিল। আমাদের মধ্যকার একজন তাকে চড় মারলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একে মুক্ত করে দাও। তারা বললো, এছাড়া আমাদের কোন খাদেম নেই। তিনি বললেনঃ এরা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সে তাদের সেবা করবে। তারা স্বাবলম্বী হলে তাকে যেন মুক্ত করে দেয়া হয়।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, ৫১৬৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

যাজান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি ইবনু ‘উমারের (রাঃ) নিকট গেলাম। তিনি তার দাসকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তিনি মাটি হতে এক টুকরো কাঠ বা অন্য কিছু উঠিয়ে বললেন, একে মুক্ত করায় আমার এর সমানও নেকি নেই। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার ক্রীতদাসকে চড় মারবে বা মারধর করবে, এর কাফফারাহ হলো তাকে মুক্ত করে দেয়া।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪১৯০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ 'উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি ইবনু 'উমার (রাঃ)- এর কাছে আগমন করলাম, ইতোমধ্যে একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠি অথবা অন্য কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে তার সমতুল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজ ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফ্ফারা হল তাকে মুক্ত করে দেয়া।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪১৯১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

যযান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃইবনু 'উমার (রাঃ) তাঁর এক গোলামকে ডাকলেন। এরপর তার পিঠে (প্রহারের) দাগ দেখতে পেলেনতিনি তাকে বললেন, তুমি কি এতে যন্ত্রণা অনুভব করছ? সে বলল, নাতখন তিনি বললেন, তুমি মুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি মাটি থেক কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে এতটুকু পুণ্যও মেলেনি। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আপন গোলামকে বিনা অপরাধে প্রহার করল কিংবা চপেটাঘাত করল, এর কাফ্ফারাহ্ হল তাকে মুক্ত করে দেয়া।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম,৪১৯৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মু’আবিয়াহ্ ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, একদা আমি আমাদের এক গোলামকে চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি পালিয়ে গেলাম এবং যুহরের সালাতের আগে আগে ফিরে এলাম। আমি আমার পিতার পিছনে সলাত আদায় করলাম। তিনি তাকে এবং আমাকে ডাকলেন। গোলামকে বললেন, তুমি তার কাছ থেকে বদলা নাওঅবশেষে সে ক্ষমা করে দিল। এরপর তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সময়কালে বানী মুকার্রিন গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি গোলাম ছিল। একদা আমাদের কোন একজন তাকে চপেটাঘাত করল এবং এ সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছল। তখন তিনি বললেন, তাকে আযাদ করে দাও। তারা বলল, সে ব্যতীত তাদের কোন খাদেম নেই। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তার কাছ হতে সেবা গ্রহণ করতে থাক, যখনই তার প্রয়োজন মিটে যাবে তখনই তোমরা তাকে মুক্ত করে দিবে।-ihadis.com

হযরত আবু বকর দাসদাসীকে চতুষ্পদ জানোয়ার বলেছেন?

নাস্তিকরা দাবি করে থাকে,ইসলামে দাসদাসীর মূল্য মর্যাদার দিক দিয়ে চতুষ্পদ জন্তুর মত। তাই মানুষ এবং পশুর মধ্যে কিসাস হতে পারে না, ইসলামিক বিধানে এরকমই বর্ণিত রয়েছে। 

ডঃ মুহাম্মদ রাওয়াস কালা’জী, লিখিত “ফিকহে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু” বই আধুনিক প্রকাশনী, ১০২ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, ক্রীতদাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপরাধ, হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর রায় ছিল—ক্রীতদাস হত্যার বিনিময়ে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না। চাই সে দাস তার মালিকানাধীনে হােক কিংবা অন্যের মালিকানাধীন। কেননা দাস মর্যাদার দিক থেকে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়। কাজেই মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনাে কিসাস হতে পারে না।

নাস্তিকরা বুঝাতে চায় ইসলাম কত অমানবিক, কত বর্বর যে দাসদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় মনে করে। কিন্তু আসলেই কি এটা সত্যি? পাঠক আপনি যদি সেই বইয়ের ১০২ পৃষ্ঠায় চলে যান আপনি নিজেই দেখতে পারবেন যে উক্তিটি হযরত আবু বকর (রা) বলেন নাই কারণ আবু বকর (রা) এর উক্তিটি ছিল “ক্রীতদাস হত্যার বিনিময়ে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না” এই পর্যন্ত। এবং এই উক্তির রেফারেন্স হিসেবে ৫ নং পয়েন্ট দিয়ে বলেও দেয়া হয়েছে। কিন্তু মূর্খ নাস্তিকদের মগজে তো সততা বলে কিছুই নাই। যেভাবেই হোক ইসলামের বিরোধীতা তাদেরকে করতেই হবে। এটা নাস্তিকদের চাকরি যেন। আসলে উক্ত উক্তিটি করেছে বইয়ের লেখক ডঃ মুহাম্মদ রাওয়াস কালা’জী। উনার উক্তি দিয়ে ইসলামের কোনো বিধান প্রমাণ হয় না। আর উনি ভুল বলেছেন। কারণ নবীজি (সা) আসলেই দাসদাসীদের সম্পর্কে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন স্পষ্ট হাদিস থেকেই জানা যায়।

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৩০,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মা‘রূর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃআমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় লুঙ্গি ও চাদর আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়।আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃএকবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম।তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন,আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো,তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না,যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক।যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও,তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১১৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি (আবূ মূসা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন প্রকার লোকের সাওয়াব দ্বিগুণ করা হবে। যে গোলাম আল্লাহ ও তার মনিবের হাক্ব সঠিকভাবে আদায় করেছে। তার সাওয়াব দ্বিগুণ করা হবে। যে লোকের সুন্দরী বাঁদীঁ ছিল, সে তাকে উত্তম আচরণ ও আদব-কায়দা শিখিয়েছে এবং তাকে পরবর্তীতে মুক্ত করে বিয়ে করেছে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্য। তার সাওয়াবও দ্বিগুণ করা হবে। পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি যে লোক ঈমান এনেছে, তারপর পরবর্তী কিতাব (কুরআন) আসার পর তার উপরও ঈমান এনেছে, তাকেও দ্বিগুণ সাওয়াব প্রদান করা হবে।-ihadis.com

এখন আসুন জেনে নেই হযরত আবু বকর (রা) আসলেই দাসদাসীদের ব্যাপারে যেমন চিন্তাভাবনা করতেন। নাস্তিকরা এসব তথ্য আপনাকে জানাবে না। 

ডঃ আহমাদ আলী লিখিত “খালীফাতু রাসুলিল্লাহ আবু বাকর আছছিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু” বইয়ের ২৭৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আবু বাকর (রা.)-এর জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি বাইতুল মালের মধ্যে নর-নারী, ছােট-বড়, গােলাম-আযাদ ও আমীর-ফাকীর নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। খিলাফাতের প্রথম বছর বাহরাইন থেকে কিছু মাল আসে। তখন তিনি স্বাধীন-দাস, পুরুষ-স্ত্রীলােক, উচ্চ-নিচ নির্বিশেষে প্রত্যেককে সমভাবে দশ দিরহাম করে বিতরণ করেন। দ্বিতীয় বছর আরো অধিক মাল আসলে তিনি জনপ্রতি বিশ দিরহাম বিতরণ করেন। এ জাতীয় ভেদাভেদহীন সমান হার সম্পর্কে লােকেরা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “তােমরা যে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলছে, তা হলো পুণ্যের কাজ, যার বিনিময় আল্লাহ তা'আলা আখিরাতে দান করবেন। আর পৃথিবী হলাে কোনাে ধরনের জীবনধারণ। এখানে একজনের ওপর অপরজনকে অগ্রাধিকার দেয়ার চাইতে সমতা রক্ষা করাই উত্তম।”

এখানে একদম পরিস্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে হযরত আবু বকর (রা) দাসদাসীদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় মনে করতেন না। বরং সবাইকে সমান মনে করতেন। আসলে নাস্তিকদের নোংরা বিশ্বাস পদ্ধতি সম্পর্কে যাতে মানুষ বুঝতে না পারে এই কারণেই নিজেদের নোংরা বিশ্বাস ইসলামের দিকে চাপাতে চায় মিথ্যুকবাজ নাস্তিকগোষ্ঠীরা। কিন্তু সত্যের কাছে নাস্তিকরা সব সময় পরাজিত হতেই থাকবে। নাস্তিকদের সব থেকে বড় দুশমন হচ্ছে সত্য। তা না হলে ইসলামের প্রকৃত সত্যি ঘটনা গুলোকে নাস্তিকরা এড়িয়ে যেয়ে ইসলামের বিরোধীতা কেন করবে?

যদি ইসলামের দৃষ্টিতে দাস বা দাসীরা চতুস্পদ জন্তুর মতো হয়েও থাকে এরপরেও মুক্তমনারা একে খারাপ বলার কোনো ভিত্তি রাখে না। কারণ এই হাদিসটি,

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ১৯০২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (একবার) একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখলো সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি (এ করুন অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেয়া হলো। (এ কথা শুনে) সাহাবীগণ আরয করলেন, পশু-পাখির সাথে ভালো ব্যবহার করার মধ্যেও কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। প্রত্যেকটা প্রাণীর সাথে ভাল ব্যবহার করার মধ্যেও সাওয়াব আছে।-ihadis.com

হযরত আবু বকর (রা) যদিও সেই কথাটি বলেন নাই তারপরেও যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় তাহলেও কি মুক্তমনা নাস্তিকদের এই দাবি করবার অধিকার রয়েছে যে উনি ভুল বলেছেন? কারণ নাস্তিকদের বিশ্বাসই তো হচ্ছে দুনিয়ার সকল মানুষ চতুষ্পদ জন্তু জানোয়ার। সেখানে আবু বকর (রা) তো মাত্র দাসদাসীদেরকেই মাত্র বলেছেন (যদিও বলেন নাই) সবাই কে তো আর না। আসুন নাস্তিকদের বই ও তাদের কথাবার্তা থেকেই জেনে নেই যে মানুষ আসলে কি?

নাস্তিকরা এসব সবার সামনে তেমন একটা আলোচনা করতে চায় না। কারণ এসব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাদের বিবর্তিত চেহারা লজ্জায় প্যান্টের ভিতর চলে যায়। আসুন মানুষ যে চতুষ্পদ জানোয়ার এই বিশ্বাসের কথা নাস্তিকদের মুক্তচিন্তা থেকেই জেনে নেয়া যাক। 

 

নাস্তিক বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এর “দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ” বাংলা অনুবাদ করেছেন, কাজি মাহবুব হাসান, এই বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এটা এখন সুস্পষ্ট সত্য যে আমরা শিপ্পাঞ্জিদের নিকটাত্মীয়, হয়তো বানরদের কিছুটা দূরের আত্মীয়, আর্ডভার্ক বা ম্যানিতিদের আরো খানিকটা দূরের আত্মীয়, আরো দূরের আত্মীয় কলা এবং শালগমদের…ক্রমশ যত ইচ্ছা দীর্ঘ করা যেতে পারে এই তালিকা

এখানেই শেষ নয় আরও আছে।

“AMERICAN ATHEIST” নাস্তিকদের একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। সেখানে “Ethics Without Gods” শিরোনামে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল পাব্লিশ করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে (১১),

As human beings, we are social animals. Our sociality is the result of evolution, not choice. Natural selection has equipped us with nervous systems which are peculiarly sensitive to the emotional status of our fellows.

ভাবানুবাদঃ মানুষ হিসেবে আমরা সামাজিক জানোয়ার। আমাদের সামাজিকতা বিবর্তনের ফল, পছন্দ নয়প্রাকৃতিক নির্বাচন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সজ্জিত করেছে যা আমাদের সহযোগীদের মানসিক অবস্থার প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।

 

শুধু কি তাই? “মুক্তমনা বাংলা ব্লগ” নামে নাস্তিকদের একটি সাইটে “দেখা যাচ্ছে নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নই” শিরোনামে একটি আর্টিকেল রয়েছে। সেখানে বর্ণিত হয়েছে (১২),

বানর” নামে ডাকা হলে আমরা অপমানিত হই, মন খারাপ করে এর প্রতিবাদ জানাই। অথচ, আমাদের যদি ডাকা হয় ইউথেরিয় স্তন্যপায়ী (mammal) কিংবা মেরুদণ্ডী (vertebrate) কর্ডেট, তাহলে কিন্তু আমরা অপমানিত বোধ করিনা। এমনকি আমরা যে ন্যাথান মাছ কিংবা অ্যামনিওট চতুষ্পদ (tetrapod) এই সত্য মেনে নিতেও আমাদের বেশিরভাগেরই কোন সমস্যা নেই। শুধু এক বানর নিয়েই আমাদের যতো সমস্যা। অথচ, আমরা যে নিছকই বানর বৈ কিছু নই এটা আমাদের জানা প্রায় তিনশো বছর ধরে। শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার (taxonomy) জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস প্রথম আমাদের অন্তর্ভুক্ত করেন প্রাইমেট ও এইপ এই শাখা (clade) দুটির, যাদের বাংলা আমি যথাক্রমে করবো বানর ও বনমানুষ।

 

“মুক্তমনা বাংলা ব্লগ” সাইটে “মানুষ কি বানর থেকে এসেছে?” শিরোনামে একটি আর্টিকেলেও এটা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে (১৩),

মানুষ মাঙ্কি নয়। মাঙ্কি থেকে মানুষের বিবর্তনও হয়নি। কিন্তু প্রাইমেটকে বানরের শব্দার্থ হিসেবে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষও একধরনের প্রাইমেট বা বানর জাতীয় প্রানী বৈ কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে মাঙ্কি একটি অধিবর্গ বা প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ, আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্সে প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ শক্তভাবে এড়িয়ে চলা হয়। আমরা কোন মাঙ্কি অবশ্যই নই, তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা প্রাইমেটআমাদের পাশাপাশি অবস্থিত একজোড়া চোখ, ত্রিমাত্রিক, রঙ্গীন, স্টেরিও দৃষ্টি, চোখের পেছনে বিশাল বড় একটা মাথা, আড়াই শত দিনের কাছাকাছি গর্ভকালীন সময়, বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পূর্বে একটা অস্বাভাবিক রকম বিশাল শৈশব, ল্যাটেরাল থেকে ক্রমান্বয়ে স্ক্যাপুলার ডোর্সাল অক্ষে পিছিয়ে যাওয়া (regression), পেন্ডুলার পিনেস এবং টেস্টস, অস্বাভাবিক বিকাশপ্রাপ্ত প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্স আমাদের বানায় বানরজাতীয় জীব বা প্রাইমেট, এটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি। মানুষ সহ সব বনমানুষই স্তন্যপায়ী প্রানীর অন্তর্গত প্রাইমেট বর্গে পড়েছে। এখন পর্যন্ত  প্রাইমেটদের দু'শরও বেশি প্রজাতির সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। মানুষকে এই প্রাইমেট বর্গের মধ্যে হোমিনিডি অধিগোত্রের  অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। 

এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে ধিরে ধিরে ধাপে ধাপে কোটি কোটি বছর ধরে কুকুর, শুকর, বান্দর, হাতি, ঘোড়া, সাপ, বিচ্ছু, কাঁকড়া, তেলাপোকা ইত্যাদি এভাবে আসতে আসতে আজকের যুগের এই মানুষ প্রাণী। যদি নাস্তিকদের বইতে এই কথা বলা নাও থাকতো এরপরেও ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে মানুষ জানোয়ার ছাড়া অন্য কিছুই হতো না। ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে নাস্তিক নামের মানুষ ও শূকরের মধ্যে কোনো অস্তিত্বগত পার্থক্য নেই। উভয়ই জানোয়ার। আকার আকৃতি ছাড়া তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নেই। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সব মানুষ জন্তু জানোয়ার ছাড়া কিছু নয়।

দাসদাসীদেরকে চতুষ্পদ জন্তু মতো বললে যদি নাস্তিকদের কাছে অমানবিক মনে হয় আর এই কারণে যদি নাস্তিকরা ইসলাম ত্যাগ করে তাহলে নাস্তিকদের প্রথমে ডারউইনবাদকে ত্যাগ করে অবিশ্বাস করা উচিত এরপরে নাস্তিক্যবাদকেও ত্যাগ করা উচিত। কিন্তু নাস্তিকরা কি এসব অবিশ্বাস ও ত্যাগ করেছে?

যেই নাস্তিকরা দাবি করছে দাসদাসীদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বলা অমানবিক হয়েছে সেই নাস্তিকদেরকেই দেখবেন বিভিন্ন সাইটে, ফেসবুক পোস্টে দেখবেন মুসলিমদেরকে বিভিন্ন ভাবে ছাগল ভেড়া ইত্যাদি বলে কটূক্তি করে। ছাগলের কার্টুন বানায়ে আলেম ওলামাদের নিয়ে তামাশা করে যাচ্ছে আসলে নাস্তিকরা নিজেরাই আক্ষরিক অর্থে শূকর, ছাগল, কুকুর, গরুদের বংশধর। ডারউইনবাদ বিশ্বাস করলে নাস্তিকরা নিজেদের ও শূকরদের মধ্যে অস্তিত্বগতভাবে পার্থক্য মনে করতে পারবেই না। 

উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি করা ইসলামে বৈধ?

ইসলামের বিধান অনুসারে, উম্মে ওয়ালাদ হচ্ছে যে দাসীর গর্ভে মনিবের সন্তান জন্ম নেবে তারা। উম্মে ওয়ালাদ যদি বিক্রি করা ইসলামে নিষেধ হয়েই থাকে তাহলে হযরত উমার পরবর্তীতে কেন নিষেধ করলেন বা উনাকে কেন নিষেধ করতে হলো?

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৯৫৪, সহিহ হাদিস, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাক্‌রের যুগে উম্মু ওয়ালাদ বাঁদীদেরকে বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে ‘উমারের (রাঃ) যুগে তিনি আমাদের বারণ করায় আমরা বিরত হই।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৫১৭, সহিহ হাদিস, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা আমাদের যুদ্ধবন্দিনী ক্রীতদাসী ও উম্মু ওয়ালাদ বিক্রয় করতাম। আমরা এটিকে দুষণীয় মনে করতাম না।-ihadis.com

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ৭৯২,সহিহ হাদিস, জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেন, আমরা জননী দাসী বিক্রি করে দিতাম আর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যে জীবিত ছিলেন, এ বিষয়টিকে আমরা দোষ হিসেবে দেখতাম না। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন।-ihadis.com

নবী মোহাম্মদ (সা) উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু অনেকেই এটা জানতে পারে নাই দেখে তারা না জেনে বিক্রি করেছেন। কিন্তু যখন তারা হযরত উমার (রা) এর মাধ্যমে জানতে পারেন তখন আর বিক্রি করেন নাই(১৪)। তাছাড়া চার মাজহাবের সকল ইমাম একমত যে উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি করা জায়েজ নেই। সেই হাদিসটি পড়ি যেখানে নবীজি (সা) বিক্রি নিষেধ করে দিয়েছেন।

সুনানে আল-দারাক্বুতনী (আরবি), ৫ খণ্ড, হাদিস নং ৪২৫০, ২৩৭ পৃষ্ঠা সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

রাসূল (সা.) কারো সন্তানদের মা-কে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, তাদেরকে বিক্রি করা যাবে না, উপহারও দেয়া যাবে না, উত্তরাধিকার সূত্রেও পাওয়া যাবে না। মনিব জীবিত অবস্থায় তাকে ব্যবহার করবেন এবং যখন তিনি মারা যাবেন তখন তিনি মুক্ত হবেন।

নাস্তিকরা বলে, 

উমরের বিধান অনুসারে, এরকম দাসী মনিবের মৃত্যুর পরে মুক্ত হয়ে যাবে, তবে মনিব জীবিত থাকা অবস্থায় সে সেই উম্মে ওয়ালাদকে দাসীর মতই ভোগ করতে পারবে, তাকে দিয়ে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে। সুত্রঃ ফতোয়ায়ে আলমগীরি থেকে এই বিষয়ক একটি মাসআলা দেখে নিই,ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৭ ।

ফতোয়ায় আলমগীরীতে হযরত উমার (রা) থেকে এমন কোনো বর্ণনা নেই। বরং সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি করা জায়েজ নেই। আসুন পড়ে দেখি।

ফতোয়ায়ে আলমগীরি, ৩ খণ্ড, ১৩৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

উম্মে ওয়ালাদকে বিক্রি করা জাইয নেই। অনুরূপ তার মধ্যে প্রত্যেক ঐ সমস্ত তাসাররূফ করা জাইয নেই যা উম্মে ওয়ালাদ হওয়া সূত্রে অর্জিত আযাদীর হক বাতিল করে দেয়। যেমন তাকে হিবা করা, সাদাকা করা, কারাের জন্য ওসীয়্যত করা ও বন্ধক রাখা ইত্যাদি। যে সকল তাসাররূফের কারণে এ অধিকারটি বাতিল হয় না তা জাইয আছে। যেমন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শ্রমে নিযুক্ত করা, তার থেকে খিদমত নেওয়া, তাকে উপার্জনে লাগানাে, বিনিয়ােগ করা, উপভােগ করা এবং তার সাথে সহবাস করা ইত্যাদি। পারিশ্রমিক, আয়-উপার্জন, মােহর ইত্যাদির হকদার মনিব হবে

এখান থেকে স্পষ্ট যে উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি করা জায়েজ নেই তবে সেই বাদীর দ্বারা বিভিন্ন কাজ কোরানো বৈধ। একটি বাদী উম্মে ওয়ালাদ হওয়ার দ্বারা মালিকের থেকে যেমন সুযোগ সুবিধা নিবে তেমনি মালিককেও সে সুবিধা দিবে। এখানে মন্দ কিসের? তাছাড়া হযরত উমার (রা) থেকে পরিস্কার হাদিস পাওয়া যে যেখানে উনি স্পষ্ট বলেছেন জননী দাসী বিক্রি করা যাবে না। হাদিসটি পড়ুন।

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ৭৯১, সহিহ মাওকুফ, 

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, উমার (রাঃ) জননী দাসী বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, তিনি বলেছেন, বিক্রি করা যাবে না, হেবা (দান) করা যাবে না, ওয়ারিস হিসেবেও কেউ তাকে অধিগ্রহণ করতে পারবে না। তার মালিক যতদিন চাইবে ততদিন তার দ্বারা ফায়দা উঠাবে। মালিকের মৃত্যুর পর সে স্বাধীন হয়ে যাবে। -বাইহাকী বলেছেন- এ হাদীসের কিছু বর্ণনাকারী, অহম বা অনিশ্চয়তার ভিত্তিতে ‘মারফূ’ বৰ্ণনা করেছেন।-ihadis.com

সুতরাং যেখানে উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি করা ইসলামে জায়েজ নেই সেখানে নাস্তিকরা যদি দাবি করে জায়েজ আছে তাহলে অবশ্যই নাস্তিকদের দাবিটি মিথ্যা হবে। অনেক নাস্তিকরা বলে ইসলামে নাকি মা ও শিশুকে আলাদা করে বিক্রি করে দেয়া জায়েজ কিন্তু কথাটি সত্য না। যুদ্ধবন্দিনী দাসী ও সন্তানকে আলাদা করা যাবে না। এই হাদিসটি প্রমাণ।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৯৬, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বাঁদী ও তার সন্তানদের পৃথক করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এভাবে (আলাদাভাবে) বিক্রয় করতে নিষেধ করে এ বিক্রয় বাতিল করেন। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী মাইমূন (রহঃ) ‘আলীর (রাঃ) সাক্ষাৎ পাননি। মাইমূন (রাঃ) আল-জামাজিমের যুদ্ধে ৮৩ হিজরীতে নিহত হোন। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন হাররার ঘটনা ঘটে ৬৩ হিজরী সনে এবং ইবনুয যুবাইর (রাঃ) ৭৬ হিজরীতে শহীদ হোন।-ihadis.com


নবী মোহাম্মদ (সা) যেখানে শিশু ও মাকে আলাদা করে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন সেখানে এটা স্পষ্ট যে ইসলামে যেসব যুদ্ধবন্দী শিশুরা থাকবে তাদের সাথে কেমন আচরণ ইসলাম শিক্ষা দেয়।

দাসী মা এবং মেয়ের সাথে সহবাস ইসলামে বৈধ?

নাস্তিকরা বলে থাকে,

ফিকহে ওসমান বা দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওসমানের ফিকহ গ্রন্থ অনুসারে, একই মালিক যদি মা এবং মেয়ে উভয়ের মালিক হন, তাহলে তিনি দুইজনার সাথেই সহবাস করতে পারেন। একে ওসমান হারাম করা পছন্দ করতেন না। এটা থেকে বুঝা যায় ইসলামে দাসী মা ও দাসী মেয়ের সাথে সহবাস বৈধ। 

“ফিকহে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু” গ্রন্থে, আধুনিক প্রকাশনী, ১৮০, ১৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,বাদীর সাথে সহবাস করলে হুরমতে মুসাহারাত (বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হারাম) প্রতিষ্ঠিত হয় না। যেমন আমরা ওপরে ইমাম শুরানী সংকলিত রিওয়ায়েত উল্লেখ করেছি। যেখানে বলা হয়েছে, হযরত ওসমান (রা)-কে মা ও মেয়ে যদি একই মালিকের অধীনে বাদী হিসেবে থাকে এবং মালিক যদি উভয়ের সাথে সহবাস করে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে হযরত ওসমান বলেছিলেন—তাদের দুজনকে হারাম করা আমি পছন্দ করি না।

হজরত উসমান (রা) এই মাসালা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না দেখেই উনি নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত দেন। তবে একই পৃষ্ঠা থেকে এটাও জানা যায় যে দুই বোনকে যেমন একত্রে বিয়ে করা যাবে না তেমনি মা ও মেয়ে দাসীকেও একই মালিকানাধীন মুনিবের ভাগে গেলে সহবাস করা যাবে না।

“ফিকহে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু” গ্রন্থে, আধুনিক প্রকাশনী, ১৮০ পৃষ্ঠাতেই বর্ণিত হয়েছে,

এমন দুজন বাদীর সাথে একই সময়ে সহবাস করা যাবে না যাদের একজনকে পুরুষ কল্পনা করলে তাদের দুজনের মধ্যে পরস্পর বিয়ে হতে পারে না। হযরত ওসমান (রা)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হলাে দু বােনকে একত্রে বাদী হিসেবে রাখা যাবে কি? অর্থাৎ এক বােনের সাথে সহবাস করে তাকে নিজ মালিকানায় রেখে একই সময়ে অন্য বােনকে মালিকানাভুক্ত করে তার সাথেও সহবাস করতে পারবে কি? হযরত ওসমান (রা) বললেন এক আয়াত অনুযায়ী বাদী হিসেবে দু বােনের সাথেই সহবাস করা জায়েয। অন্য আয়াত অনুযায়ী হারাম। তবে আমি এরূপ করা পছন্দ করি না।  যদি কোনাে ব্যক্তি বাদী হিসেবে এক বােনের সাথে সহবাস করে এবং অন্য বােনও তার মালিকানাধীন থাকে তাহলে অন্য বােনের সাথে ততক্ষণ সহবাস করা জায়েয হবে না যতক্ষণ সহবাসকৃত বােনকে দান করে না দেয় কিংবা বিক্রি না করে অথবা মুক্তি না দেয়। দু বােনকে যেমন একত্রে বিয়ে করা যায় না এ ব্যাপারটিও ঠিক তেমন।

সুতরাং নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই যে আসলেই দাসী মা ও মেয়ে এক সাথে একই মালিকের মালিকানাধীন হলে সহবাস করা যাবে নাকি যাবে না। স্পষ্ট কুরআন সুন্নাহ থেকে দলিল লাগবে যে সহবাস করা যাবে কি যাবে না। যেহেতু এখানে করা যাবে কি যাবে না এই বিষয় আদেশ সূচক কিছুই বলা হয় নাই সেহেতু এখান থেকে নির্দিষ্ট করে উক্ত মাসালা বৈধতা বা বৈধহীনতা কিছুই প্রমাণ হয় না।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ২৩ আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে,

তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু।  

এই আয়াতটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন। যেখানে দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা ইসলামে নিষেধ এমনকি সেটা দাসীর ক্ষেত্রেও সেখানে দাসী মা ও মেয়েকে একত্রে সহবাস কিভাবে বৈধ হতে পারে? আসুন পড়তে থাকি।

 

তাফসিরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৪ খণ্ড, ৩৩৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন-'বিবাহে দু বােনকে একত্রিত করাও তােমাদের জন্যে হারাম। অধীনস্থ দাসীদের উপরও এ হুকুম প্রযােজ্য যে, একই সময় দু’ বােনের সাথে সঙ্গম করা হারাম। কিন্তু অজ্ঞতার যুগে যা হয়ে গেছে তা আমি ক্ষমা করে দিলাম।' সুতরাং জানা গেল যে, আগামীতে কোন সময় এ কাজ কারও জন্যে বৈধ নয়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে, অর্থাৎ প্রথম মৃত্যু ছাড়া তথায় তারা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে না।' (৪৪ঃ৫৬) তাহলে জানা যাচ্ছে যে, আগামীতে আর মৃত্যুর আগমন ঘটবে না। সাহাবা, তাবেঈন, ঈমানগণ এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমদের ইজমা আছে যে, একই সাথে দু' বােনকে বিয়ে করা হারাম। যে ব্যক্তি মুসলমান হবে এবং তার বিয়েতে দু'বােন থাকবে, তাকে এ অধিকার দেয়া হবে যে, সে যে কোন একজনকে রাখবে অপরজনকে তালাক দেবে। আর এটা তাকে করতেই হবে। হযরত যহাক ইবনে ফীরােয (রাঃ) বলেন, 'আমি যখন মুসলমান হই তখন আমার বিয়েতে দু স্ত্রী ছিল যারা পরস্পর ভগ্নী ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন একজনকে তালাক দিয়ে দেই'। (মুসনাদ-ই-আহমাদ)

তাফসিরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৪ খণ্ড, ৩৪০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

সুতরাং দায়লামী অর্থে হযরত যহাক ইবনে ফীরােযকেই বুঝানাে হয়েছে। তিনি ইয়ামনের ঐ নেতৃবর্গের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা অভিশপ্ত আসওয়াদ আনসী মুতানাব্বীকে হত্যা করেছিলেন। পরস্পর দু' বােন এ রূপ দু’জন দাসীকে একই সাথে একত্রিত করে তাদের সাথে সঙ্গম করাও হারাম। এর দলীল হচ্ছে এ আয়াতটির সাধারণতা, যার মধ্যে স্ত্রী ও দাসী উভয়ই জড়িত রয়েছে।

তাফসিরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৪ খণ্ড, ৩৪১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর তিনি (হযরত আলী (রা) আমার হাত ধারণ করে বলেন, “জেনে রেখাে যে, আযাদ ও দাসী স্ত্রীলােকদের হুকুম বৈধতা ও অবৈধতার দিক দিয়ে একই। হ্যা, তবে সংখ্যায় পার্থক্য রয়েছে। আযাদ মহিলাদেরকে চারটের বেশী একত্রিত করা যায় না। কিন্তু দাসীদের সংখ্যার কোন শর্ত নেই।' দুগ্ধ পানের সম্পর্কের ফলে ঐ সমুদয় স্ত্রীলােক হারাম হয়ে যায়, বংশীয় সম্পর্কের কারণে যেগুলাে হারাম হয়ে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে যে, হযরত উসমান (রাঃ)-এর মতই হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। যেমন তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে যে, হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, পরস্পর বােন হয় এরূপ দু'টি দাসীকে একই সময়ে একত্রিত করে তাদের সাথে সঙ্গম করার বৈধতা এক আয়াত দ্বারা। সাব্যস্ত হচ্ছে এবং অপর আয়াত দ্বারা অবৈধতা সাব্যস্ত হচ্ছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, 'দাসীদের সাথে আমার আত্মীয়তার কারণে তারা অন্যান্য গুটিকয়েক দাসীকে আমার উপর হারাম করে থাকে। কিন্তু তাদের পরস্পরের আত্মীয়তার কারণে হারাম করে না। অজ্ঞতা যুগের লােকেরাও ঐ সমুদয় নারীকে হারাম বলে জানতাে যাদেরকে তােমরা হারাম মনে করে থাক। কিন্তু তারা শুধু পিতার স্ত্রীকে অর্থাৎ বিমাতাকে এবং একই সাথে বিবাহে। দু’ বােনকে একত্রিত করাকে হারাম মনে করতাে না। কিন্তু ইসলাম এসে এ দু’টোকেও হারাম করে দেয়। এ জন্যেই এ দু'টোর অবৈধতার বর্ণনার সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, যে বিয়ে হয়েছে তা হয়েছেই।

তাফসিরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৪ খণ্ড, ৩৪১,৩৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যে আযাদ স্ত্রীলােকগুলাে হারাম ঐ দাসীগুলােও হারাম। হাঁ, তবে সংখ্যায় এক নয়। অর্থাৎ আযাদ মহিলাদেরকে চারটের বেশী একত্রিত করা যায় না। কিন্তু দাসীদের জন্যে কোন সীমা নেই। হযরত শা'বীও (রঃ) এটাই বলেন। হযরত আবু আমর (রঃ) বলেন, হযরত উসমান (রাঃ) এ ব্যাপারে যা বলেছেন, পূর্ববর্তী মনীষীদের একটি দলও এটাই বলেছেন, যাদের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) রয়েছেন। কিন্তু প্রথমতঃ এর নকলে তাে স্বয়ং ঐ মনীষীদের মধ্যেই বহু কিছু মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এ উক্তির দিকে বিবেকসম্পন্ন আলেমগণ মােটেই মনােযােগ দেননি এবং তা গ্রহণও করেননি। হেজায, ইরাক, সিরিয়া এমনকি পূর্ব পশ্চিমের সমস্ত ধর্মশাস্ত্রবিদ ওর বিপক্ষে রয়েছেন।' মুষ্টিমেয় কয়েকজন শুধু শব্দের প্রতি লক্ষ্য করেই এবং কোন চিন্তা ও বুদ্ধি বিবেচনা না করেই তাদের হতে পৃথক রয়েছেন ও ইজমার বিপরীত মত পােষণ করেছেন। যারা পূর্ণ জ্ঞানের ও বিবেচনা শক্তির অধিকারী তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে, দু'বােনকে যেমন বিবাহে একত্রিত করা যায় না, তদ্রুপ ঐ দাসীদের সাথেও একই সময় সঙ্গম করতে পারে না, যারা পরস্পর বােনঅনুরূপভাবে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে যে, এ আয়াতে মাতা, কন্যা, বােন ইত্যাদিকে হারাম করা হয়েছে। এদের সাথে যেমন বিয়ে হারাম, তদ্রুপ যদি তারা দাসী হয়ে অধীন হয়ে যায়, তবে তাদের সাথেও মিলন হারামমােটকথা, বিয়ের ও দাসীদের উপর অধিকার লাভের পরে, এ দু' অবস্থাতেই এরা সবাই সমান। না তাদেরকে বিয়ে করে তাদের সাথে মিলন বৈধ, না তাদের উপর অধিকার লাভের পর তাদের সাথে মিলন বৈধ। অনুরূপভাবে এ হুকুমই হচ্ছে একই সাথে দু' বােনকে একত্রিত করণ এবং শাশুড়ীর ও স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যার একত্রিত করণ। স্বয়ং তাদের জমহুরেরও এটাই মাযহাব। আর এটাই হচ্ছে ঐ দলীল যা ঐ গুটিকয়েক বিপক্ষীর উপর পূর্ণ সনদ ও পরিপূর্ণ হুজ্জত। মােটকথা একই সাথে দু' বােনকে বিয়েতে একত্রিত করাও হারাম এবং দু’বােনকে দাসীরূপে রেখে তাদের সাথে মিলিত হওয়াও হারাম।

“দাসী রাখার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই”- বিষয়ে নাস্তিকরা খুব আপত্তি করে অভিযোগ করে যে এটা অমানবিক বর্বর নিয়ম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের কোন বিধানে এটা নির্ধারণ করা আছে যে একাধিক দাসী রাখা যাবে না? যেখানে নাস্তিক্যধর্মে এই স্বাধীনতা আছে যে যার ইচ্ছে ইচ্ছে তার সাথেই সহবাস করা যাবে সম্মতি থাকলে সেখানে দাসীর সাথে সম্মতিতে সহবাস করলে ক্ষতি কি? নাস্তিক্যধর্মে স্বাধীনতা আছে যে নাস্তিক চাইলে নিজের মায়ের সাথে, নিজের বাবার সাথে, নিজের সন্তানের সাথে, নিজের দাদার সাথে, নিজের দাদির সাথে এমনকি যার সাথে ইচ্ছে সম্মতি থাকলে সহবাস করা যাবে- নাস্তিকরা কি এসব জানেন না? তাহলে কোনো নাস্তিক যদি একাধিক দাসী রাখে এটা কিভাবে অমানবিক হবে?

একাধিক দাসী রাখা নিয়ে যেসব নাস্তিকদের খাউজ্জানি তাদেরকে বলবো এই উদাহরণটি খেয়াল করুন। ধরুন এক নাস্তিকের নাম পিকলু ডকিন্স। এনি একদিন দক্ষিণ আফ্রিকা গেলো ভ্রমণ করার নিয়তে। সেখানে ভ্রমণরত অবস্থায় হঠাৎ দেখতে পেলো কিছু পুরুষ দাসী নারীদেরকে নির্যাতন অত্যাচার করছে এবং কেউ যদি কিনতে চায় তাহলে তারা কিছু মদ্রার বিনিময়ে সেই নারীদের বিক্রিও করছে। পিকলু সাহেব মুক্তমনে চিন্তা করলো এখান থেকে সে ছয় জন নারীকে কিনে নিজের সাথে নেবে। তো যেই চিন্তা সেই কাজ। নারীদেরকে যখন যে কিনলো তখন সেই নারীদেরকে বলল দেখো, সেই সব পুরুষরা তোমাকে মুক্তমনে টর্চার করছিলো কিন্তু আমি করবো না।


তোমরা ছয়জন নারী আমার মালিকানায় থাকবে। আমি তোমাদের খাবারের দায়িত্ব, পোশাকের দায়িত্ব, এমনকি তোমাদের যৌন চাহিদার দায়িত্ব আমি পিকলু একাই নিব। তোমাদের উপর কখনা আমি কিছু চাপিয়ে দিব না। নারী গুলো যখন দেখলো এই লোকের সাথে থাকলে তো নিরাপদ তাই তারা ছয়জন নারী এই নাস্তিকের সাথেই থেকে গেলো। সেই পিকলু নাস্তিক একদিন বলল তোমরা চাইলে আমাকে ছেড়ে দিতে পারো কিন্তু সেই ছয়জন নারী বলল না না মুনিব এটা কি হয়? আপনি আমাদেরকে নির্যাতিত জীবন থেকে আপনার জীবনে নিয়ে এসেছেন আমাদের তো উচিত আপনার সাথেই থাকা, আপনার সেব যত্ন বেশি করে করা। আমরা আপনার দাসী হয়ে থাকতেই পছন্দ করি।

প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এটা কিভাবে খারাপ?


ছেলে-পিতা-দাদা মিলেমিশে দাসীভোগ করা ইসলামে বৈধ?


নাস্তিকরা বলে থাকে,


ইসলামের বিধান হচ্ছে, একজন দাসীকে খরিদ করা হলে তার সাথে সহবাস করা বৈধ। এখন সেই দাসীর সাথে যদি একই পরিবারের ছেলে, পিতা এবং দাদা সহবাস করে, সেই ক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম হলে সন্তানের পিতা কে হবে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ফিকহী মাসআলা পাওয়া যায় ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী থেকে। এটা কি প্রমাণ করা যে ইসলামে ছেলে-পিতা-দাদা মিলেমিশে দাসীভোগ করা জায়েজ?


ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, ১৫০ ও ১৪৩ পৃষ্ঠায় বলা আছে, বাদী যদি কোন ব্যক্তি ও তার ছেলে এবং তার দাদার শরীকানাধীন হয় এবং সে একটি সন্তান প্রসব করে। আর তাদের প্রত্যেকেই উক্ত সন্তানের দাবীদার হয় তাহলে দাদার দাবী উত্তম হবে (যহীবিয়্যা)। যদি পুত্র এবং পিতার শরীকানাধীন হয় এবং তারা দু'জনে একই সাথে সন্তানের দাবী করে তাহলে এক্ষেত্রে সূক্ষ্ম কিয়াস অনুযায়ী পিতার দাবী উত্তম হবে। সে বাদীর অর্ধেক মূল্য এবং অর্ধেক মােহরের জন্য দায়বদ্ধ হবে। পুত্র শুধু অর্ধেক মােহরের যামিন হবে। অতএব তারা দু'জনে আপােষ ভাগাভাগি করে নিবে (সিরাজুল ওয়াহ্হাজ)।


কেউ যদি নিজ পিতা কর্তৃক সহবাসকৃত বাদীকে উম্মে ওয়ালাদ বানায় তাহলে সন্তানের নসব তার থেকেই সাব্যস্ত হবে (কিনয়াহ)। পিতা যদি নিজ পুত্রের বাদীর সাথে যৌন সংগম করে, তারপর বাদী একটি সন্তান প্রসব করল এবং পিতা সে সন্তানের দাবী করল, তাহলে সন্তানের নসব তার থেকেই সাব্যস্ত হবে। এবং উক্ত বাদী তার উম্মে ওয়ালাদ হয়ে যাবে। পুত্র তাকে সত্যায়িত করুক বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করুক এবং পিতা সন্দেহবসত যৌন সঙ্গম ঘটার দাবী করুক বা চাই না করুক তাতে কোন পার্থক্য হবে না (সিরাজুল ওয়াহহাজ)।

এখানে একটি বারের জন্যও এই কথা বলা নেই যে ইসলামে পিতা ও ছেলে বা দাদা একই দাসীর সাথে সহবাস করা জায়েজ। অথবা দাদা বা নারী ভাগে যেই দাসী আসবে সেই দাসীর সাথে সহবাস করা ইসলামে জায়েজ। এখানে এটা শুধু বলা হয়েছে “যদি” করে তাহলে সন্তানের পিতা কে হবে কিন্তু এটা প্রমাণিত হয় না যে এসব ইসলামে জায়েজ। কোনো দাসীর যদি একাধিক মুনিব থাকে তাহলে কেউই সেই দাসীর সাথে সহবাস করতে পারবে না।

 

আল-মুগনী, ৬ খণ্ড,৬৪ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল ক্কহিরাহ, কায়রো,১৯৬৮ - সুত্রে বর্ণিত,

ইবনে কুদামা আল মাকদাসী (রহ) (মৃত্যু ৬২০ হিজরী) বলেন,যৌথ মালিকানাধীন দাসীর সাথে সহবাসের অনুমতি নেই।

যেখানে একজন দাসীর একাধিক মালিক হলে কেউই তার সাথে সহবাস করতে পারবে না সেখানে ছেলে-পিতা-দাদা মিলেমিশে দাসীভোগ কিভাবে জায়েজ হয়? নাস্তিকদের গিলু কি বিলুপ্তির পথে?

যুদ্ধে শিশুদেরকে নির্যাতন করতো সাহাবীরা?

কথায় আছে অপরাধ যে করে আর অপরাধ হতে যে দেয় তারা সমান অপরাধী। যুদ্ধে সেই সব নারীরা কেন আসবে যারা জানে যে যুদ্ধে হেরে গেলে তাদের সাথে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে সৈন্যদল। তারমানে এটা তারা মেনে নিয়েই যুদ্ধের ময়দানে আসে যে দুশমন পক্ষ তাদেরকে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। যদি সেই সব নারীদের মধ্যে এই ভয় থাকতো সে তাদের স্বামীরা যুদ্ধে হেরে গেলে তাদের সাথে এমনকি তাদের সন্তানদের সাথে ভয়াবহ আচরণ হতে পারে তাহলে কেন তারা শিশু নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে আসবে? এর একটাই অর্থ যে তারা সব পরিস্থিতি মেনে নিয়েই ময়দানে থাকে।

যুদ্ধের ময়দানে দুশমন পক্ষের নারীদের শিশুদেরকে নির্যাতন করা, হত্যা করা সাধারণ বিষয়। কিন্তু ইসলামে যুদ্ধে নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা নির্যাতন করা সম্পূর্ণ নিষেধ। আসুন প্রমাণ দেখে নেই।

আসলে নাস্তিকরা ইসলামের বিধান নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার করতে থাকে সেটা বলতে থাকলে হাজার হাজার পৃষ্ঠা হয়ে যাবে। নাস্তিকরা কিছু হাদিস দেখিয়ে দাবি করে ইসলামে নাকি নারী ও শিশুদেরকেও হত্যা করা যাবে। আসুন নাস্তিকদের দেখানো সেই হাদিস আগে দেখে নেই।

 

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৮৩৯, সহিহ হাদিস, সা’ব বিন জাসসামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত।-ihadis.com

 

যুদ্ধে ইচ্ছাকৃত কোনো নারী ও শিশুকে হত্যা করা ইসলামে নিষেধ। তাই যুদ্ধে ইচ্ছাকৃত নারী ও শিশু হত্যা করা ইসলামে বৈধ এমন দাবি করার কোনো ভিত্তি নেই। নিজেদের আত্মরক্ষার ব্যাপার আসে বা অতর্কিত আক্রমণের ব্যাপার আসে তখন যদি সেই আক্রমণের কারণে নারী ও শিশু নিহত হয় সেটা আলাদা কথা। তাতে সমস্যা হবে না। 

 

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩০১২,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে, 

সাব ইবনু জাসসামা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (সা) আবওয়া অথবা ওয়াদ্দাত নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন । তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে । যদি রাত্রিকালীন আক্রমণে তাদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয় তবে কি হবে ? রাসুল (সা) বলেন তারাও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত আর আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি যে সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সা) ছাড়া কারো জন্য হতে পারে না।-ihadis.com

 

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৪১, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ শিরোনামঃ 

রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশুর হত্যায় দোষ নাই-ihadis.com

 

যুদ্ধে অতর্কিত হামলা অথবা আক্রমণের ফলে যেই নারী ও শিশু নিহত হয় সেটা পেয়েই নাস্তিকরা বান্দরের মতো লাফাতে থাকে আর বলে এই যে দেখো ইসলাম কেমন অমানবিক। কিন্তু আসলেই কি ইসলাম যেমন আইন দেয়? উত্তর হচ্ছে না। 

 

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩০১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

হযরত উমর (রা) হত্যে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা) এর কোন এক যুদ্ধে এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন রাসুল (সা) মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন-ihadis.com

 

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩০১৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

উমর (রা) বলেন, রাসুল (সা) এর কোন এক যুদ্ধে এক নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহ্‌র রাসুল (সা) নারী ও শিশুদের হত্যার অসন্তোষ প্রকাশ করেন।-ihadis.com

 

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৬৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে, 

রাসুল (সা) বলেন যুদ্ধে নারী ও শ্রমিককে হত্যা করবে না।-ihadis.com

ঠাণ্ডা মাথার মিথ্যুকবাজ নাস্তিকরা নকল মায়া কান্না করে এভাবে বলে থাকে,

গত চৌদ্দশ বছরে ইসলামি নৃশংসতার বলি কত লক্ষ শিশুকে হতে হয়েছে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। এই নৃশংসতার আসলে কোন তুলনা হয় না। যেই শিশুটি যুদ্ধের কিছু বোঝে না, কে কোন পক্ষ কিছুই সে জানে না, ঘটনাক্রমে একটি কাফের পরিবারে জন্ম নিয়েছে, একদিন হুট করে কিছু ইসলামি সেনা এসে তাদের বাবাকে মেরে মাকে বানালো যৌনদাসী, তাদের বানানো হলো দাস। এগুলো কী ভয়াবহ বিধান, কল্পনা করা যায় না।  

কিন্তু কোনো শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল এর পক্ষে একটি প্রমাণও বিবর্তিত নাস্তিক প্রাণীরা দেখাতে পারে না। প্রমাণহীন অন্ধবিশ্বাস নাস্তিকরা কিভাবে পোষণ করে যাচ্ছে? আসুন দেখি শিশুদের বন্দী করবার পরবর্তী ঘটনা আসলে কি?

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৪১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনু ‘আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ) -কে পত্র লিখলাম, তিনি জওয়াবে আমাকে লিখেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। তাদের গবাদি পশুকে তখন পানি পান করানো হচ্ছিল। তিনি তাদের যুদ্ধক্ষমদের হত্যা এবং নাবালকদের বন্দী করেন এবং সেদিনই তিনি জুওয়ায়রিয়া (উম্মুল মু’মিনীন) -কে লাভ করেন। [নাফি‘ (রহঃ) বলেন] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) আমাকে এ সম্পর্কিত হাদীস শুনিয়েছেন। তিনি নিজেও সে সেনাদলে ছিলেন।-ihadis.com

সীরাতে ইবনে হিশাম, মূলঃ ইবনে হিশাম, অনুবাদঃ আকরাম ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ২২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু কুরাইযার ধন-সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তানদেরকে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করেন। তারপর সা’দ ইবনে যায়িদ আনসারীকে বনু কুরাইযার কিছুসংখ্যক দাসদাসীকে দিয়ে নাজদ পাঠিয়ে দেন। তাদের বিনিময়ে তিনি সেখান থেকে মুসলমানদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও ঘোড়া খরিদ করে আনেন।

সীরাতুন নবী (সা),৩ খণ্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ইশারা করে বললেন (সমীহের কারণে তিনি তাঁর দিকে তাকাতে পারছিলেন না) : তিনিও কি এ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ? রাসূলুল্লাহ (সা) জবাব দিলেন : হ্যা আমাদেরও এই প্রতিশ্রুতি। তখন সা'দ (রা) তাঁর রায় ঘােষণা করলেন : সকল পুরুষকে হত্যা করা হবে, ধন-সম্পদ গনীতমরূপে বণ্টন করা হবে এবং নারী ও শিশুদের গােলাম-বাঁদীতে পরিণত করা হবে।

সেইসব নাবালেগ খাদেম দ্বারা মুসলিম সৈন্যরা বিভিন্ন কাজ করাতো। কিন্তু কাউকে নির্যাতন করতো এমন মর্মে কোনো প্রমাণ নাই।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৩১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সর্বোত্তম সাদকাহ আল্লাহর রাহে তাঁবুর ছায়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া, (যার দ্বারা মুজাহিদ উপকৃত হয়) । আর আল্লাহর রাস্তায় কোন খাদেম দান করা (যার দ্বারা মুজাহিদ সেবা গ্রহণ করে। কিংবা আল্লাহর পথে (গর্ভধারণের উপযুক্ত হৃষ্টপুষ্ট) উটনী দান করা, (যার দুধ দ্বারা মুজাহিদ উপকৃত হয়) ।”-ihadis.com

এখানে কোথাও এই কথা বলা নাই যে শিশু বা নাবালেগদেরকে নিয়ে অত্যাচার করা হতো। যারা কাজ করতে পারবে তাদেরকে দ্বারা মুসলিম সৈন্যরা সেবা গ্রহণ করতেন। যুদ্ধে দুশমন দলের সন্তানদেরকে দাস বানানোর আরেকটা উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা বড় হয়ে যাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না আসে। এই সুযোগ বন্ধ করে দেয়া।

মুশরিক দাসীর সাথে সহবাস জায়েজ নাই?

নাস্তিকরা দাবি করে থাকে সুরা বাকারার ২২১, আয়াতে বিবাহের কথা বলা হয়েছে, দাসী হিসেবে রেখে যৌনসঙ্গমের প্রসঙ্গে এখানে কিছুই বলা হয়নি।

আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।-সুরা বাকারা - ২:২২১।

পাঠক সহজেই হয়তো আপনারা বুঝে গিয়েছেন যে আয়াতে “অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম” বলতে আসলে মুশরিক ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস না করে বরং মুসলিম ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করাই বেশি উত্তম-এটাই পরোক্ষভাবে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু নাস্তিকরা এই কথাটি ঠিক মতো বোঝেই নি। এখন আসুন ইজমার প্রমাণ দেই অর্থাৎ মুজাতাহিদ ইমামগণ একমত যে মুশরিক দাসীর সাথে সহবাস করা যাবে না। মুশরিক দাসীর সাথে সহবাস করা নিষেধ এই বিষয় পরিস্কার ইজমা রয়েছে। পড়ুন।

ইমাম কুরতুবি (রহ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট করে বলেন(১৫),

“শাস্ত্রীয় আরবীতে, 'নিকাহ' বলতে বিবাহ চুক্তি এবং যৌন মিলন উভয়কেই বোঝায়। যেহেতু মহান আল্লাহ আয়াতে 'নিকাহ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন (এর অর্থ): {আর মুশরিক নারীদের সাথে নিকাহ করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে},কোনো মুসলিম পুরুষের জন্য কোনো অমুসলিম নারীকে বিয়ে করা বা মালিকানার কারণে তার সঙ্গে সহবাস করা হারাম বলে গণ্য করা হবে।” 

তাছাড়া পাঠক আল্লাহ যদি অমুসলিম দাসীর সাথে সহবাস করা বৈধই করবেন তাহলে অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম কেন বলবেন? এই কথাটি কি প্রমাণ করে না যে তোমরা মুসলিম দাসীর সাথেই সহবাস করবে কারণ তারা অমুসলিম দাসীদের থেকে উত্তম? তাছাড়া মুজতাহিদ ইমামগণ একমত যে মুশরিক দাসীর সাথে সহবাস করবার অনুমতি নেই।

উমদাতুল ক্বারী, দারুল আহইয়া আল তুরাছ আল আরবী, বৈরুত, ৭ খণ্ড, ১০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আল আইনী (রহ) লিখেন, মুজতাহিদ ইমামগণ একমত যে, মুশরিক দাসীর সাথে সহবাসের অনুমতি নেই।

সাহাবীরা কি আসলেই মুশরিক নারীদের সাথে সহবাস করেছিল? নাস্তিকরা এই হাদিস দেখিয়ে দাবি করে সাহাবিরা মুশরিক নারীদের সাথে সহবাস করেছিল। আসুন সরাসরি হাদিসটি বুঝে পড়ে দেখি।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৫৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ হুনাইনের দিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওতাসের দিকে একদল সৈন্য পাঠালেন। তারা শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়ে তাদের নারীদেরকে বন্দি করে আনেন। কিন্তু সেই বন্দী নারীদের মুশরিক স্বামীরা বর্তমান থাকায় কতিপয় সাহাবী তাদের সাথে সঙ্গম করাকে গুণাহ মনে করেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “যে মহিলাদের স্বামী আছে, তারা তোমাদের জন্যে হারাম। তবে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত” (সূরা আন-নিসাঃ ২৪)। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী দাসী যখন তাদের ইদ্দতকাল সমাপ্ত করবে তখন তারা তোমাদের জন্যে বৈধ।

খেয়াল করুন সাহাবীরা গুনাহ মনে করেন। তাছাড়া উনারা কেউই সেই দাসীদের সাথে সহবাস করেছিলেন এমন মর্মে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং বনু মুস্তালিকের সকল যুদ্ধবন্দিনীদেরকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল ও তারা সকলেই মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন। যা আগেই প্রমাণ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে মুক্ত করে দেয়ার ইতিহাস নাস্তিকরা খুবই কৌশল করে এড়িয়ে যায়। যাতে তারা নবী ও সাহাবীদেরকে যেভাবে ভিলেন বানাতে চাচ্ছে সেই নোংরা উদ্দেশ্য সফল হয়। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই মুশরিক দাসীর সাথে সহবাস বৈধ এরপরেও সমস্যা হবে না। কারণটি আশা করি বুঝিয়ে বলার দরকার নেই।

নাস্তিকরা ধর্ষণ নিয়ে যেভাবে মুক্তচিন্তা করেঃ

নাস্তিকরা সব সময় চায় মানুষ তাদের মতো করে মুক্তচিন্তা করতে শিখুক। এই কারণেই দেখবেন বিভিন্ন ভাবে নাস্তিকরা তাদের বই পত্র মানুষকে পড়তে বলে থাকে। কারণ সেই সকল নাস্তিকিও বই পড়লে মানুষ বিশুদ্ধ উপায়ে মুক্তচিন্তা করা জানতে পারবে। শিখতে পারবে। বুঝতে পারবে। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে নাস্তিকদের বই পড়লে এমন এমন বিষয় সম্পর্কে জানা যায় যা কোনো যৌক্তিক সভ্য মানুষরা বিশ্বাস করতে চাইবে না। নাস্তিকদের বই থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়, যেকোনো নাস্তিক চাইলেই ধর্ষণ করতে পারবে এমনকি ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতে পারবে। আমি মুক্তমনাদের বই থেকেই প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি আপনি মিলিয়ে নিয়েন।

 

অন্যতম প্রসিদ্ধ একজন মুক্তমনা নাস্তিক নাম প্রবীর ঘোষ, উনার লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

নারীবাদী আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিমোন দ্য বোভোয়ার।তার সঙ্গে জঁ-পল সার্ত্রের বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ছিল। ‘দ্যা ডেঞ্জারাস লিয়াজো’ বইটি থেকে আমরা জানতে পারি, জঁ-পল সার্ত্র ও সিমোন দ্য বোভোয়ার তাদের ছাত্রী ও ছাত্রদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তেন বা গড়তে বাধ্য করতেন। এমনকী সার্ত্রে তার ছাত্রদের পাঠাতেন বোভোয়ারের সঙ্গে মিলনের জন্য। বিনিময়ে বোভোয়ারও তার ছাত্রীদের পাঠাতেন সার্ত্রের কাছে। সেই সময়কার বুদ্ধিজীবীরা ওদের বিরুদ্ধে নষ্ট চরিত্রের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু নারী স্বাধীনতা,ক্ষমতায়ন ও চেতনামুক্তি অভিযাত্রায় সিমোন দ্য বোভোয়ার আজ প্রাতঃস্মরণীয়।

শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করাকে কি ধর্ষণ করা বলে না? নারীবাদী আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যারা উনারা মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করতেন। নাস্তিকদেরকে এসব নিয়ে তেমন একটা কথা বলতে দেখবেন না কারণ নাস্তিকরা জানে এসব যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মুক্তমনা প্রবীর ঘোষ ধর্ষক নাস্তিকদের সমালোচনা করেছেন কিন্তু সে সমালোচনা করলেই সব নাস্তিকরা তার দেয়া কথাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য নয়। অথবা প্রবীর ঘোষ এমন কেউ নয় যে সে যদি কিছুকে খারাপ বলে তাহলে সেটাই খারাপ মনে করতে হবে নাস্তিকদেরকে।

নাস্তিক প্রবীর ঘোষ, উনার লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠাতেই বলেছেন,

বোভোয়ার ও সার্ত্রের জীবনে যত উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল, তা সবই তাদের ব্যাক্তিজীবনে আবদ্ধ। তাদের সৃষ্টিতে তা নগ্ন রুপ পায়নি। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি অবশ্য তাদের বা অন্য কারও ব্যাক্তিজীবনের যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা বা বহুগামিতালে সামান্যতম সমর্থন করছি না। বরং নিন্দা করছি, এই নিন্দনীয় কাজের চেয়ে তসলিমার কাজ বহুগুণে বেশি নিন্দনীয়।

এখানে আমি নাস্তিক প্রবীর ঘোষ সাহেবের সমালোচনাকে সাধুবাদ জানাই কিন্তু উনার এই নিন্দা প্রকাশ করার কারণে কি উপরে বর্ণিত ছাত্রছাত্রীদেরকে যে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা হতো সেটাকে খারাপ প্রমাণ করা যাবে? কারণ যারা ধর্ষণ গুলো করেছে তাদের মুক্তচিন্তায় সেই যৌনকর্মকে ভালো মনে হয়েছে দেখে তারা করেছে। সেই মুক্তমনারা ব্যাক্তিস্বাধীনতা মেনেই করেছেন আর প্রবীর ঘোষ প্রথমে সেটা স্বীকারও করেছেন যে সেসব কাজ তাদের ব্যাক্তিজীবনে আবদ্ধ। নাস্তিকদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে বুঝতে হবে। আসলে নাস্তিকরা নিজেদের বই পত্র ঠিক মতো বুঝে বুঝে পড়ে দেখে না। যদি পড়তো তাহলে আর নাস্তিক্যবাদে অথবা নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাস রাখতে পারতো না।

 

এখানেই শেষ নয়। আরও আছে। আরও আছে। নাস্তিকদের বই থেকেই প্রমাণ মেলে যে ভাষাবিজ্ঞানী, মুক্তচিন্তক, নাস্তিক, প্রথাবিরোধী হুমায়ুন আজাদ এক তরুণীকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। আসুন মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদের বই থেকেই প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি। অস্বীকার করবার কোনো সুযোগ নেই কারণ প্রমাণ একদম স্পষ্ট।

 

বিজ্ঞানমনস্ক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

যখন শিশু ছিলাম,কিশোর হয়ে উঠেছি যখন, তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি, আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছা করে, ছেলেবেলা ভোরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরোগুলোকে চুষে দেখতে, ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হতে জ্বলজ্বল করতো। সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছে হতো,কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মতো এক তরুণীকে

হুমায়ুন আজাদের মুক্তচিন্তায় এসবই ভ্রমণ করতে থাকতো। নারীকে যে সম্মান দিতে হয়, নারীরা যে চুইংগাম না, নারীদেরকে যে চাবানো যায় না সেটা হুমায়ুন আজাদের বিবর্তিত মগজে ঢুকতে পারেনি। একবার কল্পনা করুন তো যদি এই নাস্তিকটি সুযোগ পেতো আর সারাসন্ধা সেই অসহায় তরুণীকে চুষতে থাকতো আর চাবাতে থাকতো তাহলে কি অবস্থা হতো সেই তরুণীর? হুমায়ুন আজাদের মুক্তবুদ্ধিতে আরও কত প্রকারের মুক্তচিন্তা ভ্রমণ করতে থাকতো সেটা তার বই থেকেই দেখে নেই।

 

আমার অবিশ্বাস, ১৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

আরও কিছুকাল আমি নক্ষত্র দেখতে চাই, নারী দেখতে চাই, শিশির ছুঁতে চাই, ঘাসের গন্ধ পেতে চাই, পানীয়র স্বাদ পেতে চাই, বর্ণমালা আর ধনীপুঞ্জের সাথে জড়িয়ে থাকতে চাই, মগজে আলোড়ন বোধ করতে চাই। আরও কিছু দিন আমি হেসে যেতে চাই।

আমার অবিশ্বাস, ১৩ পৃষ্ঠায়, প্রথম পরিচ্ছেদ, আমার ইন্দ্রিয়গুলো, বর্ণিত হয়েছেঃ

আমার ভাল লাগতো ভোরের আকাশ, শ্রাবনের মেঘ, হেমন্ত, নদী বা নারী, কখনোই জানবো না আমি কবিতা পড়েছিলাম, এমনকি লিখেছিলামও, কেঁপে উঠেছিলাম কামনায়, অজস্র বার তৃপ্ত করেছিলাম আমার কামনা এবং বহুবার পরিতৃপ্ত করতে পারিনি

আমার অবিশ্বাস, ১৬ পৃষ্ঠায় সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছেঃ

ছোঁয়া সবচেয়ে অন্তরঙ্গ অনুভূতি, আমাদের শরীর ছোঁয়া চায়, আমরা ছুঁতে চাই, আমিও ছুঁতে চেয়েছি, ছোঁয়া চেয়েছি এবং ছোঁয়া পেয়ে ও ছুঁয়ে সুখী হয়েছি।

নাস্তিক মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ নারীদেরকে যে কিভাবে দেখতে চাইতো, কিভাবে ধরতে চাইতো কিভাবে নিজেকে অজস্র বার তৃপ্তি করতে চাইতো সেটা আর এখানে বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। এক নারী নাস্তিক্যবাদ, মুক্তচিন্তা ত্যাগ করেছিল দেখে হুমায়ুন আজাদ রেখে গিয়েছিলেন এবং প্রচুর তিব্র সমালোচনা করেছিলেন। পশুশ্রম বলে গালিও দিয়েছিল নারীটিকে। হুমায়ুন আজাদ এটা ভুলেই গিয়েছিলেন যে সে নিজেই ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা মারায় তার বইতে।

 

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এটাই দেখছি বাঙলাদেশঃ  ষাটের দশকে এক উগ্র আধুনিকাকে সেদিন দেখলাম, এখন সে বিসর্জিত দুর্গার মতো ভেঙ্গেচুরে গেছে, মুখে এতোটুকুও আভা নেই, একদা কলাভবনের বারান্দায় যার শরীরের বিভিন্ন বাঁকের তরঙ্গভঙ্গ দেখা আমাদের জন্য সুখকর ব্যাপার ছিলো, যার সম্মুখ ও পশ্চাৎ ছিলো সমান জলভ্রমিপূর্ণ, এখন সে বোরকা হিজাব তাঁবু বিসমিল্লায় সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, কয়েকবার পবিত্র মক্কা মদিনা মনোয়ারা ঘুরে এসেছে, ধনসম্পদে নিজেকে ভরে ফেলেছে ও ভরে চলছে- এটা করতে ভুল করে নি ও পবিত্র উপায়ে করে নি, কিন্তু এখন অন্ধকারে ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লা ইনশাল্লা ছাড়া কথা বলে না, ইসলামের জয়গানে সারাক্ষণ মুখর, সে জানে না তার এসবই পশুশ্রম, ধর্মগ্রন্থ ও সহিহ হাদিসগুলো সে পড়ে নি- হুররা তাকে তার কাম্য প্রাসাদে ঢুকতে দেবে না, তার সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

কলাভবন, শরিফ মিয়ার ক্যান্টিন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস, নিউমার্কেটের নতুন ঝলমলে বইয়ের দোকান, এবং আরো নানা জায়গায় ছিলো আধুনিকতা সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক ও অনুপ্রাণিত হওয়ার স্থান; তখন অনাধুনিকতা, মধ্যযুগীয়তা, বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ জোব্বা বোরকা ছিলো হাস্যকর, হিজাবের কথা কেউ জানতোই না

কলাভবনের বারান্দায় যেই নারীর দেহ দেখে, দেহের অঙ্গভঙ্গি দেখে মুক্তচিন্তায় সুখ গ্রহণ করতো নাস্তিকটি সেই নারীই যখন নাস্তিক্যবাদ ও মুক্তচিন্তার ভাইরাস ত্যাগ করলো তখনই শুরু করে দিল তাকে পশ্চাৎপদ, মধ্যযুগীও, অনাধুনিক বলে সমালোচনা করা। “আমার দেহ আমার সিদ্ধান্ত” কথাটি হয়তো নাস্তিকের মগজ তখন ভুলে গিয়েছিল? তাই না? পাঠক আপনারা হয়তো এতক্ষণে ঠিকই বুঝে নিয়েছেন নাস্তিকগোষ্ঠীরা কেন চায় নারী ছোট ছোট খোলামেলা পোশাকে থাকুক? নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের যদি এই মুক্তচিন্তা হয় তাহলে যারা তার বই পড়ে তার কথা বিশ্বাস করে নাস্তিক্যধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের মুক্তচিন্তার কিরকম চিত্র হতে পারে? শিপ্পপাঞ্জিরা লেংটা থাকে তাই নাস্তিকরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের আদর্শ এখনো ধরে রাখতে চাইছে নাকি?ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ নগ্ন শিশুদের দেখেও মুক্তচিন্তায় সুখ নিতেন। জানতেন এটা?

 

আমার অবিশ্বাস, ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

উলঙ্গ শিশুরা, ওদের পরার কিছুই নেই, মাঘের শীতে পাতার আগুনের উম নিচ্ছে দেখে সুখ নেই, সুখ পেয়ে নিজেকে অপরাধী বোধ করি।আমার ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে চোখ দুটিই শ্রেষ্ঠ। এ দুটি দিয়ে আমি দূর থেকে ভেতরে টেনে আনি দৃশ্যের পর দৃশ্য,সৌন্দর্যের পর সৌন্দর্য। অন্য কোনো ইন্দ্রিয় দিয়ে এভাবে টানতে পারি না বাহিরকে।

আপনি সেখানে হলে কি করতেন অবশ্যই সেই শিশুদেরকে শীতের জামা কাপড় কিনে দিতেন। কিন্তু মুক্তমনা লোকটির মতো অবশ্যই সেই শিশুদের নগ্ন দেখে সুখ নিতেন না আর নিজেকে অপরাধীও মনে করতেন না। আসলে হুমায়ুন আজাদ তো শুধু অন্যের নগ্ন শিশু দেখে মুক্তমনে আনন্দ পেতেন। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের শিশু সন্তানদের সাথে যৌনকর্ম করতে পারে এমনকি নিজের শিশ্ন পর্যন্ত সারা সন্ধান চুষাতে পারবে। একটি উদাহরণ কল্পনা করুন।

ধরুন একজন নাস্তিকদের নাম আসিফ মহিউদ্দিন। তার একটি ছোট ছেলে সন্তান রয়েছে। সেই নাস্তিকটি নিজের ছেলেকে বলল,এই যে বাবা আমার শিশ্ন যদি তুমি চুষে দেও তাহলে তোমাকে চকলেট উপহার দিব। ছেলেটি বাবার আদেশ পেয়ে বাবাকে সুখ দেয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই নাস্তিক কি কোনো খারাপ কাজ করেছে নাস্তিক্যধর্ম অনুযায়ী? উত্তর হচ্ছে না। কারণ সেখানে বাপ পুতের কারওই কোনো ক্ষতি হয় নাই। আর নাস্তিকদের নৈতিক বিশ্বাস হচ্ছে নিজের ও অন্যের ক্ষতি না করে যা করা হবে সেটাই ভালো কাজ। এই হিসেবে কোনো নাস্তিক যদি নিজের ছেলেকে দিয়ে নিজের শিশ্ন চাটায় তাহলে নাস্তিকদের নৈতিক যুক্তি অনুযায়ী এটাকে অন্য খারাপ বলতে পারবে না। সুযোগ নেই। 

হুমায়ুন আজাদ নারী ধরতে চাইতো। পশু ধরতে চাইতো। এসবকে না ধরতে পেরে বেচারা কত আফসস করতো পড়ুন তার বই থেকেই।

 

আমার অবিশ্বাস, ১৬ পৃষ্ঠায় পরিষ্কার বর্ণিত হয়েছেঃ 

আকাশ আর আগুন ছুঁয়ে ফেলেছি কতোবার, ঘাস দেখলে এখনো ছুঁতে ইচ্ছা করে, পশু দেখলে ছুঁতে ইচ্ছা করে, কোনো কোনো নারী দেখলে ছুঁতে ইচ্ছা করে, কিন্তু ছুঁই না। সব কিছু ছোঁয়া অনুমোদিত নয়। ষ্ঠ দিয়ে ছোঁয়া নিবিড়তম ছোঁয়া, আমি যা কিছু ওষ্ঠ দিয়ে ছুঁয়েছি তারাই আমাকে সুখী করেছে সবচেয়ে বেশিআমাদের সমাজে ছোঁয়া খুবই নিষিদ্ধ ব্যাপার । আমরা খুব কম মানুষকেই ছুঁতে পারি, খুব কম মানুষকেই ছোঁয়ার অধিকার আছে আমাদের। ছোঁয়া এখানে পাপ, কোনো নারী যদি কোনো পুরুষকে ছোঁয়, কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে ছোঁয়, তাতে সূর্য খ'সে পড়ে না , আকাশে হুলস্থূল শুরু হয়ে যায় না। কিন্তু আমরা মনে করি মহাজগত তাতে খেপে উঠেছে । শরীর খুবই আপত্তিকর আমাদের কাছে, একে অজস্র পাপের উৎস ভেবে আমরা ভয় পাই, পবিত্র বইগুলো সব সময় মনে করিয়ে দেয় যে আমরা পাপী তাই আমাদের সুখ নয়, শাস্তি প্রাপ্য । কিন্তু আমি ছুঁয়েছি, ছোঁয়া পেয়েছি তাতে চাঁদতারা খ'সে পড়ে নি । ছুঁয়ে ও ছোঁয়া পেয়ে আমি যে সুখ পেয়েছি, তা আর কিছুতে পাইনি।

পশু ও নারী ছুঁতে না পেরে যে কত রেগেছিল হুমায়ুন আজাদ সেটা তার লেখা থেকেই পরিস্কার। সামাজিক কারণে সে কতকিছু করতে পারেনি। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে তারা চতুষ্পদ প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে এই কারণে তারা মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে কিছু ভাবতে পারে না। যেসব নাস্তিকরা নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবি করে থাকেন তারা কেন বললেন না যে "আকাশ আর আগুন ছুঁয়ে ফেলেছি কতোবার" আকাশ কি কখনো ছুঁয়ে দেখা যায়? নাস্তিকরা কি এখানে বৈজ্ঞানিক ভুল সন্ধান করে দেখে না? নাস্তিকতা কিভাবে মানুষকে মুক্তি দেখাবে? মুক্তচিন্তা মানুষকে কিভাবে সভ্য করবে? মুক্তবুদ্ধি কিভাবে মানুষকে নৈতিক বানাতে পারে? প্রশ্ন গুলোও ভাবিয়ে তোলে।

 

শুধু কি মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ এমন মুক্তচিন্তা করতেন? উত্তর হচ্ছে না। আরও অনেক নাস্তিকই নারীদের নিয়ে বিভিন্ন মুক্তচিন্তা করতেন।

 

পপুলার একজন নারীবাদী নাম রেবেকা ওয়াটসোন (Rebecca Watson)। এনি একই সাথে নাস্তিক আবার সংশয়বাদীও। উনার সাথে মুক্তচিন্তক নাস্তিকরা যেই আচরণ করেছিল সেটা উনি উনার এক আলোচনায় বর্ণনা করেছিলেন। ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান নাস্তিক সম্মেলনে উনি বর্ণনা করেন,(১৬)

Hundreds of atheists have informed me that either they wanted to rape me, someone should rape me so that I will loosen up or that no one would ever rape me because I am so ugly"

ভাবানুবাদঃ শত শত নাস্তিক আমাকে জানিয়েছে যে তারা আমাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এমনকি কেউ যাতে আমাকে ধর্ষণ করে দুর্বল করে ফেলে। আবার কেউ কেউ আমাকে ধর্ষণ করতে চায় না কারণ আমি নাকি খুবই বিশ্রী।

এই নাস্তিক সংশয়বাদী নারীটি যখন এই কথা ফাঁস করা দেয় তখন অনেক নাস্তিক তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এই বলে যে সে যা বলেছে সব ভুল। অথচ যার তার বিরুদ্ধে গিয়েছিল তারা না ঠিক মতো নাস্তিক্যবাদ বুঝতো আর না ঠিক মতো চিন্তার মুক্তির বিষয় বুঝতো। আমি এখানে অল্প কিছুই প্রমাণ দিলাম। নাস্তিকদের মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ বিষয় বিস্তারিত দলিল প্রমাণ সহ আমার অন্য লেখা গুলো আপনারা পড়ুন। নারীবাদীদের আইডল মনে করে অনেক নারী তসলিমা নাসরিনকে অথচ সেও নারীদেরকে ধর্ষণ করতে বলে। এমন অনেক তথ্য যা নাস্তিকরা লুকিয়ে রাখতে চায় সেই সব তথ্য প্রমাণ আমি সবার সামনে নিয়ে এসেছি। যাই হোক। এটা তো স্পষ্ট যে মুক্তচিন্তায় যে কোনো নাস্তিক চাইলে নারীদের নিয়ে ধর্ষণের মুক্তচিন্তা করতে পারবে।

নাস্তিকদের নৈতিকতাতেই ধর্ষণ করা বৈধ। নাস্তিকদের নৈতিকতাতেই যৌনদাসী বানানো, দাসীদেরকে ধর্ষণ করা, সন্তানদেরকে খুন করা, গণহত্যা ইত্যাদি বৈধ। তবে যেহেতু নাস্তিকদের নৈতিকতা নির্দিষ্ট নয় সেহেতু কোনো নাস্তিক চাইলে এসব নিয়ে মুক্তচিন্তা নাও করতে পারে। তবে কেউ চাইলে করতেও পারবে। এখন আমরা জানবো যে ধর্মহীনরা কিভাবে মানুষকে দাসী বানিয়ে নির্যাতন অত্যাচার করে ও মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করে।

 

ধর্মহীন ও প্রগতিশীলরা যেভাবে নারীদের মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করেঃ

যেখানে ইসলামের চর্চা করা হয় না। যেখানে আল্লাহ ও রাসুলের কথাকে বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে না। সবাই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে। সবাই মুক্তচিন্তা করে। সবাই বিজ্ঞানমনস্ক। এমনই একটি দেশের নাম হচ্ছে চায়না (১৭)। সেখানে নাস্তিকদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলছে। হাতে গোনা কিছু প্রবাসী নাস্তিকরা দাস বানানো থেকে নিয়ে দাসীদেরকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করাকে নৈতিকহীন মনে করলেও ধর্মহীন দেশের অনেক মুক্তমনারাই স্বাধীনমানুষকে দাস বানাচ্ছে,দাসী বানাচ্ছে এমনকি এমন কোনো অপকর্ম নেই যা মুক্তচিন্তায় তারা করছে না। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? এখনই হবে।

 

“দৈনিক ইত্তেফাক” পত্রিকায় ০৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে, “উইঘুর মুসলিমদের দাস বানিয়েছে চীন!” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছে,

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের বলপূর্বক দাসে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে চীনা সরকারের বিরুদ্ধে। মার্কিন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি’র সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি-ও এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার উইঘুর মুসলিমকে তুল চাষে বাধ্য করা হয়েছিল। যে কাজ গুলো তাদের দিয়ে করানো হয়েছিল তা আধুনিক শ্রমিক অধিকারের বিরোধী। রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কার্যত দাসের মতো ব্যবহার করা হয়েছ উইঘুরদের সঙ্গে

কিসের জাতিসংঘ, কিসের আন্তর্জাতিক আইন এসব কিছুকেই সেই ধর্মহীন মুক্তমনা গোনায় ধরে না। তারা এসবে সংঘ-আইনকে অবিশ্বাস করে। তারা চলে নিজের মতো করে। তারা কাউকে পাত্তা দেয় না। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেখানে নৌসেনারাই মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করে সেখানে এই যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীনকে হুশিয়ারি দিয়েছে। “যুগান্তর” পত্রিকায় ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে “উইঘুর ‘নারী ধর্ষণ’: চীনকে ফল ভোগের হুশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছে(১৮),

 

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের আটক রাখার বন্দিশিবিরগুলোতে নারীরা ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন খবরে ‘গভীরভাবে উদ্বেগের’ কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।  পাশাপাশি চীনকে এর ফল ভোগ করতে হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে শিনজিয়াংয়ে সংঘটিত ‘বর্বরতার জন্য চীনের মারাত্মক পরিণতি ভোগ করা উচিত’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, উইঘুর নারীদের ওপর চলা অবিচার দেখে তারা বিচলিত হয়ে পড়েছে। চীনের আটককেন্দ্রের সাবেক ভুক্তভোগী ও প্রহরীর বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্র। একসময় বন্দি হিসেবে থাকা কয়েকজন ও একজন নিরাপত্তারক্ষী বিবিসিকে ক্যাম্পে সংগঠিতভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রমাণ দেখা কিংবা এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবেদনটি পুরোটাই মিথ্যা। তবে চীনে বন্দিশিবিরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনেও বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, চীনের জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর ও  অন্য মুসলিমদের আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং নারীদের ওপর অত্যাচার চালানোর খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি আরো বলেছেন, এই নৃশংসতা বিবেককে নাড়া দেয় এবং এর গুরুতর ফল অবশ্যই তাদের ভোগ করতে হবে

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবেদনটি পুরোটাই মিথ্যা। মুক্তচিন্তায় মিথ্যা কথা বলা বৈধতা রয়েছে। নাস্তিক্যধর্মে কোনো ধর্মহীন চাইলে ঠাণ্ডামাথায় মিথ্যাচার করতে পারবে। কারণ এতে নিজের স্বার্থ রয়েছে। আর সব অবস্থায় নিজের স্বার্থের জন্য মিথ্যাকথা বলা নাস্তিক্যধর্মে বৈধ। এখন আসুন জেনে নেই অন্য প্রগতিশিলদের মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ।

 

“যুগান্তর” পত্রিকায় ২১ মে ২০১৯ তারিখে “তালিকা করে নারী সেনাদের ধর্ষণ করে মার্কিন নৌসেনারা” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছে(১৯),

নারী সহকর্মীদের কীভাবে ধর্ষণ করা হবে, কাকে আগে, কাকে পরে- তারই এক বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেছিল মার্কিন নৌসেনারা। সেই সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে এভাবেই যৌন হয়রানি করে আসছিল। সম্প্রতি জর্জিয়ায় মোতায়েন ইউএসএস ফ্লোরিডা নামের এক সাবমেরিন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই তালিকা। এটাকে ‘ধর্ষণ তালিকা’ হিসেবে অভিহিত করেছে সেনা কর্তৃপক্ষ। এরপরই মার্কিন নৌবাহিনীর নারী অবমাননার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়নি। এ তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে সাবমেরিনের নারী কর্মীরা আতঙ্কে রয়েছেন। খবর ইউএস নেভি টাইমস ও এনডিটিভির। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে প্রথমেই আছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী (নেভি সিল)। উন্নত প্রযুক্তি, নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নৌবাহিনীতে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী সব নাবিক ট্রেনিং নেন। রোববার সেই বিশ্বের সেরা ‘স্পেশাল ফোর্স’ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় এ চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

 

কয়েক মাস আগেই এ তালিকা কর্তৃপক্ষের হাতে এলেও ফ্রিডম অব ইনফরমেশন আইনের জোরে সম্প্রতি এটি প্রকাশ করা হয়েছে। ৭৪ পাতার এ তালিকায় সব নারী সহকর্মীর নাম দিয়ে পাশে তাদের সম্পর্কে নানা ‘বাজে যৌন মন্তব্য’ করা হয়েছে। তবে এখনও এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়নি। ২০১১ সাল থেকেই সাবমেরিনে দায়িত্ব পালন করে আসছিল নারী সেনারা। কিন্তু ২০১৫ সালেই প্রথমবারের ‘সাইলেন্ট সার্ভিস’র নামে রহস্যজনক কাজে তাদের ডাকা হয়। এরপর ২০১৬ সালে প্রথম দুই নারী সেনাকে গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন ইউএসএস ফ্লোরিডায় নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ পান আরও কয়েকজন নারী নাবিক। মার্কিন নৌসেনায় নারী কর্মী নিয়োগ করা এটি দ্বিতীয় সাবমেরিন। কিন্তু প্রথম থেকেই সাবমেরিনের ভেতরে ভয়াবহ যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আসছে নারী কর্মীরাএর মধ্যে গোসলের সময় নারী সহকর্মীদের ছবি ক্যামেরায় ধারণ, বিভিন্ন সময় অনাকাক্সিক্ষত স্পর্শ ইত্যাদি। অভিযোগ জানিয়েও যথাযথ তদন্ত কিংবা অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি

 

সম্প্রতি এক অফিসারের বিরুদ্ধে এক নারীকর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। সাবমেরিনের কর্মকাণ্ড তদারকি সম্পর্কিত কিছু অভিযোগসহ নারী কর্মীদের যৌন হয়রানির ঘটনা যথাযথ তদন্ত করতে ব্যর্থতার কারণে ক্যাপ্টেন কার্চারকে বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনার মাত্র ১১ মাস পর নতুন করে সেনা কর্মকর্তাদের ভয়াবহ যৌন কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেল। নেভি টাইমস জানিয়েছে, সাবমেরিনের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে তালিকাটি পাওয়া গেছে। ৩২ জন নারী কর্মীর নামের পাশে তারকা চিহ্ন দিয়ে তাদেরকে ধর্ষণের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এ তালিকা হালনাগাদ করত সেনারা।

 

“BBC NEWS বাংলা” অনলাইন পত্রিকায়, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে “চীনে উইঘুর নারীরা গণধর্ষণের শিকার শিনজিয়াংয়ের বন্দী শিবিরে - 'তাদের লক্ষ্য সবাইকে শেষ করা' শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছে(২০),

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জন্য যেসব 'পুনঃশিক্ষণ' কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে - তাতে নারীরা পরিকল্পিতভবে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন বলে নতুন পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছে বিবিসি। এই নারীদের একজন হচ্ছেন তুরসুনে জিয়াউদুন। বিবিসিকে দেয়া তার এই বর্ণনা কোন কোন পাঠককে বিচলিত করতে পারে। "তখন কোন মহামারি চলছিল না কিন্তু ওই লোকগুলো সবসময়ই মুখোশ পরে থাকতো" - বলছিলেন তুরসুনে জিয়াউদুন। "তারা স্যুট পরতো, পুলিশের পোশাক নয়। কখনো কখনো তারা আসতো মধ্যরাতের পরে। সেলের মধ্যে এসে তারা ইচ্ছেমত কোন একজন নারীকে বেছে নিতো। তাদের নিয়ে যাওয়া হতো করিডোরের আরেক মাথায় 'কালো ঘর' বলে একটি কক্ষে। ওই ঘরটিতে নজরদারির জন্য কোন ক্যামেরা ছিল না।" জিয়াউদুন বলেন, বেশ কয়েক রাতে তাকে এভাবেই নিয়ে গিয়েছিল ওরা। "হয়তো এটি আমার জীবনে এমন এক কলঙ্ক - যা আমি কখনো ভুলতে পারবো না"- বলছিলেন তিনি। "এসব কথা আমার মুখ দিয়ে বের হোক - এটাও আমি কখনো চাইনি।" শিনজিয়াং প্রদেশে চীনের এইসব গোপন বন্দী শিবিরের একটিতে তুরসুনে জিয়াউদুন বাস করেছেন মোট ৯ মাস। তিনি বলছেন, ওই সেলগুলো থেকে প্রতিরাতে নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হতো, তার পর মুখোশ পরা এক বা একাধিক চীনা পুরুষ তাদের ধর্ষণ করতো। জিয়াউদুন বলেন - তিনি নিজে তিনবার গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতিবারই দুই বা তিন জন লোক মিলে এ কাজ করে

লজ্জিত চেহারার নাস্তিকরা এখানে বলতে পারে ধর্ষণ করা ঠিক না। যেই ধর্মহীনরা ধর্ষণ করেছে সেটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর জন্য সব নাস্তিকদেরকে দায়ী করা ঠিক না। নাস্তিকতা ধর্ষণ নিয়ে কোনো ডিল করে না। নাস্তিকতা অর্থ হচ্ছে প্রমাণের অভাবে স্রস্টার অস্তিত্ব বাতিল করে দেয়া। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকতা যদি ধর্ষণ করা নিয়ে, নৈতিকতা নিয়ে ডিল না করেই থাকে তাহলে আপনার কথা তো এটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে নাস্তিকরা চাইলে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করতে পারবে, তাই নয় কি? নাস্তিকদের তো নির্দিষ্ট কোনো নৈতিক বিধান নাই আপনাদের কথা অনুযায়ী তাহলে এভাবে অন্য নাস্তিকদের তো স্বাধীনতা রয়েছে ধর্ষণ নিয়ে মুক্তচিন্তা করবার। 

হ্যাঁ, আপনার কাছে কাউকে দাসী বানিয়ে ধর্ষণ করা খারাপ মনে হতেই পারে একইভাবে অন্য নাস্তিকদের বা ধর্মহীন কাছে এটা খারাপ মনে করতে বাধ্য না। বোঝেন নাই? না বুঝলে আবার পড়ুন। কোনো ধর্মহীন মানুষ বা যে কোনো মানুষ চাইলে নিজের মুক্তচিন্তায় যেমন গণহত্যা, ধর্ষণ, খুন, ডাকাতি করতে পারবে ইসলাম তেমন না। ইসলামে কোনো মুসলিম চাইলে অপরাধের মুক্তচিন্তা করতে পারবে না। যদি করে তাহলে সেটা তার দোষ। এর জন্য ইসলামে শাস্তি আছে। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাসকারী নাস্তিকদের কথাবার্তা অনুযায়ী ধর্ষণ করা, দাসী ধর্ষণ করা, দাসী বানানো এসব খারাপ কিছু না বরং কেউ চাইলে এসবের মুক্তচিন্তা করতেই পারে। “দেহ যার সিদ্ধান্ত তার” কথায় আছে না।

 

যুদ্ধবন্দিনীদের প্রতি নবী মোহাম্মদ (সা) দয়া করতেনঃ

সকল তথ্য প্রমাণ সামনে রাখলে সততার সাথে এটা বলতে বাধ্য হতে হয় যে নবী মোহাম্মদ (সা) কখনো অন্যায়ভাবে কোনো দাসীকে না নিজে মেরেছেন আর না অন্যকে মারতে আদেশ দিয়েছেন। মুক্তমনারা কখনো সকল তথ্য প্রমাণ দেখতে চায় না এই কারণে তারা ইসলাম সম্পর্কে অন্ধবিশ্বাস করে যাচ্ছে।


আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১০৭৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ‘উমার ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! জাহিলী যুগে আমার উপর একদিনের ই‘তিকাফ (মানৎ) ছিল। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে তা পূরণ করার আদেশ করেন। নাফি‘ (রহ.) বলেন, ‘উমার হুনায়নের যুদ্ধবন্দীদের নিকট হতে দু’টি দাসী লাভ করেন। তখন তিনি তাদেরকে মাক্কায় একটি গৃহে রেখে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনায়নের বন্দীদেরকে সৌজন্যমূলক মুক্ত করার আদেশ করলেন। তারা মুক্ত হয়ে অলি-গলিতে ছুটতে লাগল। ‘উমার (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বললেন, দেখ তো ব্যাপার কী? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। ‘উমার বললেন, তবে তুমি গিয়ে সে দাসী দু’জনকে মুক্ত করে দাও।-ihadis.com


যুদ্ধবন্দিনী দাসী এক মায়ের প্রতি সন্তানের মায়া দেখে নবী মোহাম্মদ (সা) নিজেই দয়া শিক্ষা দিচ্ছেন। এই মানুষ কিভাবে দাসী ধর্ষণের নিয়ম বানাতে পারে? নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী যদি নবী মোহাম্মদ (সা) আসলেই ভয়ংকর নিকৃষ্ট মানুষ হতেন তাহলে তো উনার অনুসারীদেরকে বলতেন সেই দাসীর থেকে সন্তানকে আলাদা করে কতল করে দেও। কিন্তু এমন কিছুই উনি করেন নাই উল্টো দয়া মায়া শিক্ষা দিচ্ছেন কেন?


মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ২৩৭০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী এলো। তখন দেখা গেল, একটি মহিলার বুকের দুধ ঝরে পড়ছে, আর সে শিশু সন্তানের সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ বন্দীদের মধ্যে একটি শিশু দেখতে পেল। তাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে সে দুধ পান করাল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমাদের কি মনে হয় এ মহিলাটি স্বীয় সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে? উত্তরে আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রসূল! কক্ষনো না। যদি সে নিক্ষেপ না করার সামর্থ্য রাখে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অবশ্যই এ মহিলার সন্তানের প্রতি মায়া-মমতার চেয়ে বান্দার ওপর আল্লাহ তা‘আলার মায়া-মমতা অনেক বেশি।-ihadis.com


দুশমনদের জন্য নবী মোহাম্মদ (সা) দশ রাত অপেক্ষা করেছিলেন যাতে তারা এসে শান্তিপূর্ণ কিছু দাবি করে অথবা সন্ধি করে। নাস্তিকদের হৃদয়ে নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে এতো ঘৃণা যে সত্যিটা নাস্তিকদের চোখেই ধরা দেয় না। আসুন পুরো হাদিসটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করি।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৬০৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহঃ) ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণের পর প্রতিনিধি হিসাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এল এবং তাদের সম্পদ ও যুদ্ধবন্দী ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানাল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তোমরা দেখছ আমার সঙ্গে আরো লোক আছে। আমার নিকট সত্য কথা হল অধিক প্রিয়। তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ এ দুয়ের একটি বেছে নাও। আমি তো তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। (রাবী বলেন) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়েফ হতে ফিরে প্রায় দশ রাত তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টির যে কোন একটিই শুধু তাদের ফিরিয়ে দিবেন, তখন তারা বলল, তবে তো আমরা আমাদের বন্দীদেরই পছন্দ করব। অতঃপর তিনি মুসলিমদের সামনে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করে বললেন, আম্মাবাদ। তোমাদের এই ভাইয়েরা তাওবা করে আমাদের নিকট এসেছে, আর আমি তাদেরকে তাদের বন্দী ফিরিয়ে দেয়া সঠিক মনে করছি, কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া পছন্দ করে, তারা যেন তা করে। আর যারা নিজেদের অংশ পেতে পছন্দ করে এরূপভাবে যে, আল্লাহ আমাকে প্রথমে যে ফায় সম্পদ দান করবেন, তা হতে তাদের প্রাপ্য অংশ আদায় করে দিব, তারা যেন তা করে। সকলেই তখন বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা প্রসন্নচিত্তে তা মেনে নিলাম। তিনি তাদের বললেন, তোমাদের মধ্যে কারা অনুমতি দিলে আর কারা দিলে না, তা-তো আমি বুঝতে পারলাম না। কাজেই তোমরা ফিরে যাও। তোমাদের নেতারা তোমাদের মতামত আমার নিকট পেশ করবে। অতঃপর লোকেরা ফিরে গেল এবং তাদের নেতারা তাদের সঙ্গে আলোচনা করল। পরে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে জানাল যে, প্রসন্নচিত্তে অনুমতি দিয়েছে। হাওয়াযিনের বন্দী সম্পর্কে আমাদের নিকট এতটুকুই পৌঁছেছে। আবু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, এই শেষ অংশটুকুই ইমাম যুহরী (রহঃ)-এর বক্তব্য।-ihadis.com


যেই মানুষ নিজের দুশমনদের জন্য দশ রাত অপেক্ষা করতে পারেন সেই মানুষ যুদ্ধবন্দিনীদেরকে ধর্ষণ করবেন? মাথা খারাপ নাকি? আরও হাদিস পড়ুন। বন্দীদেরকে মুক্তপন ছাড়াও মুক্ত করা ইসলামে বৈধ।


বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ১২৮৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জুবাইর ইবনু মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের যুদ্ধ বন্দীদের ব্যাপারে বলেন, ‘যদি মুতয়িম ইবনু আদী (রাঃ) জীবিত থাকতেন আর আমার নিকট এ সকল নোংরা লোকের জন্য সুপারিশ করতেন, তবে আমি তাঁর সন্মানার্থে এদের মুক্ত করে দিতাম-ihadis.com


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৮৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

যুবাইর ইবনু মুত্বইম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে বলেনঃ মুত্বইম ইবনু ‘আদী জীবিত থাকলে এবং সে এসব নীচ কয়েদীদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করলে আমি তার কারনে এদেরকে ছেড়ে দিতাম।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪০২৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

যুহরী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইব্‌নু যুবায়র ইব্‌নু মুত‘ঈমের মাধ্যমে তার পিতা যুবায়র ইব্‌নু মুত‘ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাদ্‌রের যুদ্ধবন্দীর ব্যাপারে বলেছেন, আজ মুত‘ঈম ইব্‌নু ‘আদী যদি বেঁচে থাকতেন আর এসব অপবিত্র লোকদের সম্পর্কে যদি আমার নিকট সুপারিশ করতেন, তাহলে তার সম্মানে এদেরকে আমি (মুক্তিপণ ব্যতীতই) ছেড়ে দিতাম। লায়স ইয়াহ্‌ইয়ার সূত্রে সা‘ঈদ ইব্‌নু মুসায়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, প্রথম ফিত্‌না অর্থাৎ ‘উসমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পর বদ্‌রে যোগদানকারী সাহাবীদের আর কেউ বেঁচে ছিলেন না। দ্বিতীয় ফিত্‌না তথা হাররার ঘটনা সংঘটিত হবার পর হুদাইবিয়াহ্‌র সন্ধিকালীন সময়ের কোন সাহাবীই আর জীবিত ছিলেন না। এরপর তৃতীয় ফিত্‌না সংঘটিত হওয়ার পর তা কখনো শেষ হয়নি, যতদিন মানুষের মধ্যে আক্‌ল ও সদ গুণাবলী বহাল ছিল। মুত‘ঈম ইব্‌নু ‘আদী রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বিভিন্ন সময় কাফিরদের হাত থেকে নিরাপত্তা দিয়ে সহানুভূতি দেখিয়েছেন। তাই তিনি নিজের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, আজ যদি সে জীবিত থাকতো আর অনুরোধ করতো তাহলে তিনি তাদেরকে ছেড়ে দিতেন।-ihadis.com


কুরআনে স্পষ্ট আছে দাসীদের সাথে সৎ আচরণ করতে। এখন কেউ যদি নিজের দাসীকে জবরদস্তি করে, মারধর করে তাহলে কি দাসীর সাথে ভালো আচরণ করা হলো? অবশ্যই না। তাহলে মুক্তমনারা যে বলছে ইসলামে দাসী ধর্ষণ হালাল-দাবিটি কি ডাহামিথ্যাচার নয়? প্রশ্নটি আপনার কাছেই রেখে দিলাম।


আল কুরআন,সূরা নিসা ৪ঃ ৩৬ আয়াতে বলা আছে,

"আর উপাসনা করো আল্লাহর,শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী,অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীদের সাথেও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-অহংকারীকে।

উপসংহারঃ পাঠক এই মুহুর্তে আপনাকে যে তথ্য গুলো জানানো হয়েছে এসব আপনি নাস্তিকান্ধদের লেখায় কখনোই দেখতে পাবেন না কেননা এসব তথ্য যদি ওরা আপনাকে দেখায় তাহলে ওরা যেভাবে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করতে চাচ্ছে সেভাবে ওরা সফল হতে পারবে না। কিন্তু এখন তো আপনি জেনে ফেলেছেন সত্য গুলো সুতরাং সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি নাস্তিক হবেন নাকি মানুষ? সিদ্ধান্ত আপনার কাছে। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি আসলেই সত্যকে গ্রহণ করতে চান কিনা। 

সমস্ত তথ্য-প্রমাণ, দলিল-ইতিহাস, কুরআনের আয়াত-বিশুদ্ধ হাদিস,ধারালো যুক্তি আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য করছে যে বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদেরকে ধর্ষণ করা তো দূরে থাক বরং তাদের সাথে মুসলিমরা মানবিক আচরণ করেছে যা অন্যান্য যুদ্ধে তেমন একটা দেখা যায় না। নাস্তিকরা এই সত্য মেনে নিতে পারছে না যে ইসলাম এতো মানবিক কেন হবে? এতো ভালো কেন হবে? চিন্তাশীল মানুষরা আমার করা সকল প্রশ্ন গুলো নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকবেন অন্য দিকে আমরা যারা নাস্তিক্যবাদে অবিশ্বাস করি ও নিজেদেরকে মানুষ দাবি করে থাকি। তারা দুটো হাদিস পাঠ করে এখানেই বিদায় নেই কেমন।

 

মুয়াত্তা ইমাম মালেক,হাদিসঃ১৪২৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

ইয়াহ্ইয়া মাযেনী (র) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করবে না, তদ্রুপ পরস্পর কারো ক্ষতি করবে না।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ২৩৪২, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

আবূ সিরমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দিবে, আল্লাহ তাকে কষ্ট দিবেন।-ihadis.com

নবী মোহাম্মদ (সা) না কখনো উনার সাহাবীদের এই আদেশ দিয়েছেন যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করতে আর না সাহাবীরা কখনো যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করেছে। নাস্তিকরা আসলে এই সত্যটা বিশ্বাসই করতে চায় না। এই কারণে নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস পোষণ করতে যাচ্ছে। ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের অযৌক্তিক সমালোচনার ধরণ দেখলেই বলা যায় তারা মুক্তচিন্তা থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। নাস্তিক মুক্তমনারা অস্তিত্বগত পশু। তাই মুলহিদদের কাছে আল্লাহর থেকে সত্যি অবতীর্ণ ইসলাম কিভাবে ভালো লাগতে পারে? নাস্তিকদের প্রতিটি সমালোচনা তদন্ত করলেই বুঝা যায় তারা নিজেকে নিজেরাই বুঝ দেয় ইসলাম গ্রহণ করা যাবে না অথচ তাদের সব সমালোচনা ভিত্তিহীন ও মিথ্যায় ভরপুর। কিন্তু যারা আমার মতো যাচাই করে, বাছাই করে তারা ঠিকই এটা ধরতে পারবে যে নাস্তিকরা নিজেরা আজীবন ডিলুশনে ভোগে এবং অন্যকে সেভাবেই ভোগাতে চায়।

কুরআন সুন্নাহের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে দিয়ে নিজেদের মন মতো ব্যাখ্যা করে চালিয়ে দেয়া মুক্তমনাদের পুরাতন অভ্যাস সমূহের মধ্যে একটি। সাধারণ মানুষকে ইসলাম থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় বিভিন্ন কলাকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। সততার সাথে সেসব যাচাই করলেই সত্যিটা সামনে এসে যায়। নাস্তিক্যধর্মের মুলভিত্তি মুক্তচিন্তায় দাসীদেরকে গণধর্ষণ, গণহত্যা, যৌনদাসী বানানো ইত্যাদি বৈধ হলেও ইসলামে এসব স্পষ্ট নিষিদ্ধ।

রেফারেন্স সমূহঃ

[ক] John McClintock, James Strong, "Cyclopædia of Biblical, Theological, and Ecclesiastical Literature" [Harper & Brothers, 1894, p. 782।

[খ] Oriental Customs Or, an Illustration of the Sacred Scripture, Williams and Smith, London, 1807 vol.2 p.79, no. 753।

[১] DANNY BUCKLAND (Aug 18,2013).D-DAY Gls ‘raped and killed their French allies while Us army generals turned a blind eye”.Daily Express Jennifer Schuessler (May 20,2013). The Dark Side of Liberation. The New York Times

[২] Guy Walters ().Did Allied troops rape 285000 German Woman? That's the shocking claim in a new book.But  is the German feminist behind it exposing a war crime-or slandering heroes? Daily Mail

[৩] Lucy Asd (1 May 2015). The rape of Berlin.BBC News, Berlin

[৪] No authentic evidence that slave women used to walk around bare-breasted:

https://www.islamweb.net/en/fatwa/355954/no-authentic-evidence-that-slave-women-used-to-walk-around-bare-breasted

[৫] দাসীদের স্তন স্পন্দিত হতো - খলীফা উমর, দাসীর পর্দা ও শায়খ আলবানীর ভুল তাহকীক by মুহাম্মাদ আইনুল হুদাঃ https://www.youtube.com/watch?v=yus50ntUYHw

[৬] The Issue of Slavery in Islam | Debunking Atheistic Propaganda:

https://www.youtube.com/watch?v=rGEYGIUTP8o

[৭] Slave girls showing their naked breasts?

https://www.abuaminaelias.com/slave-girls-naked-breasts/

[৮] Slave women did not walk bare-breasted during lifetime of Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam:https://www.islamweb.net/en/fatwa/367498/slave-women-did-not-walk-bare-breasted-during-lifetime-of-prophet-sallallaahu-alayhi-wa-sallam

[৯] মুয়াবিয়া(রা.) ও বিবস্ত্র দাসীর ঘটনা এবং ইসলামবিরোধীদের প্রচারণাঃ https://response-to-anti-islam.com/

[১০] ইবন উমার (রা) এর বাজারে একটি দাসির দেহের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করা সক্রান্ত বর্ননার তাহকিক ও এই বর্ননাটির ব্যাপারে আলোচনাঃ https://islamicauthors.com/

[১১] Ethics Without Gods:

https://www.atheists.org/activism/resources/ethics-without-gods/

[১২] দেখা যাচ্ছে নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নইঃ

https://blog.muktomona.com/2010/07/02/7568/

[১৩] মানুষ কি বানর থেকে এসেছে?

https://mm-gold.azureedge.net/evolution/QA/human_monkey_evolution.html

[১৪] উম্মে ওয়ালাদ বিক্রি নিষেধঃ উম্মে ওয়ালাদ বিক্রয় কি বৈধ?

https://islamicauthors.com/view/62165378ec164017d7b13db7/?fbclid=IwAR1yzbX5_owjGvbDZukAU04OpgMg7U3D0FbrsT60eOAB42LPSWLu6qgollc

[১৫] Ruling on sexual intercourse with one's polytheistic slave-woman

https://www.islamweb.net/en/fatwa/272452/ruling-on-sexual-intercourse-with-ones-polytheistic-slave-woman

[১৬] Rebecca Watson-European Atheist Convention 2012 (১৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ১৬ মিনিট ৪০সেকেন্তের অংশে উক্ত কথাটি বর্ণনা করেছেঃ

https://www.youtube.com/watch?v=Q985XL7G1F8

 

[১৭] Most Atheist Countries 2022:

https://worldpopulationreview.com/country-rankings/most-atheist-countries

 

[১৮] উইঘুর ‘নারী ধর্ষণ’: চীনকে ফল ভোগের হুশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রেরঃ

https://www.jugantor.com/

 

[১৯] তালিকা করে নারী সেনাদের ধর্ষণ করে মার্কিন নৌসেনারাঃ

https://www.jugantor.com/

 

[২০] চীনে উইঘুর নারীরা গণধর্ষণের শিকার শিনজিয়াংয়ের বন্দী শিবিরে - 'তাদের লক্ষ্য সবাইকে শেষ করা'

https://www.bbc.com/bengali/news-55891965


======


প্রাসঙ্গিক আরও লেখাঃ


মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথা VS ইসলামে দাস আইন


দাসীর সাথে জবরদস্তি সহবাস ইসলামে বৈধ?


বনু কুরাইজাদের মৃত্যুদণ্ড বর্বর অমানবিক?


মুক্তবুদ্ধির যুক্তিতে বর্ণবাদ 


মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক শিশুবলৎকারী কেন?


নবী মোহাম্মদ (সা) এর যৌনজীবন


নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রকার মুক্তচিন্তা


আয়িশা (রা) নয় বছরেও বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছান নি?


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post