মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথা VS ইসলামে দাস আইন


বিষয়ঃ মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথা VS ইসলামে দাস আইন

লিখেছেনঃ এমডি আলী

=================================

আগেই বলে নিচ্ছি লেখাটি খুবই বড় হবে। তাই সত্যটা জানার ইচ্ছা থাকলে সময় নিয়ে পুরো লেখাটি পড়তে হবে। যদি আপনি আসলেই সত্য জানতে চান তাহলে পড়া শুরু করে দিন। নাস্তিকদের মুক্তচিন্তার দাসপ্রথা মানবিক নাকি ইসলামের দাস আইন মানবিক আমরা দুই দিকের সকল তথ্য প্রমাণ গুলোকে আজকে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিব। ইসলামে নাকি দাসদেরকে নির্যাতন, অত্যাচার করবার বৈধতা আছে, আসলেই কি তাই? নাকি অন্য কিছু? ইসলাম অমানবিক? বর্বর? ইসলাম কেন দাস আইন দিতে যাবে? ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের ও অভিযোগের সত্যতা নিতে আলোচনা সমালোচনা করা হবে। পাঠকদেরকে শুধু মন দিয়ে, সততার সাথে নিরপেক্ষ হয়ে লেখাটি পুরো পড়ে শেষ করতে হবে। কারণ জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

ধর্মহীনরা মুক্তচিন্তায় যেভাবে দাসপ্রথার চর্চা করেঃ

আমরা জানি চায়না একটি নাস্তিক প্রধান দেশ (১)। সেখানে বেশির ভাগ মানুষই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে থাকেন। এমনকি তারা আল্লাহ রসুলে বিশ্বাস করেন না। কোনো ধর্মেই তাদের বিশ্বাস নেই, নিজেদের নাস্তিক্যধর্ম ছাড়া। চাইনিজরা নিজেদের মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথার চর্চা করে থাকে। নাস্তিক্যধর্মে যে যার মতো জীবন পরিচালনা করা বৈধ। তাই কোনো নাস্তিকরা চাইলে মানুষকে ধরে নিজের দাস বানাতে পারে। এমনকি দাস বানিয়ে, দাসী বানিয়ে তাদেরকে ধর্ষণ, গণহত্যা সবই করতে পারবে কারণ এসব মুক্তচিন্তায় বৈধ। এখানে কোনো লজ্জিত চেহারার নাস্তিক যদি বলে ‘না’ ‘না’ এসব তো ঠিক নয় তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আপনার মুক্তচিন্তা দিয়ে তো আর ধর্মহীন চাইনিজরা চলে না তাই না? তারা চলে তাদের মুক্তচিন্তা দিয়ে। সুতরাং আপনার কাছে মানুষকে দাস বানিয়ে ধর্ষণ করা, হত্যা করা, খুন করা এসব খারাপ লাগলেও অন্য ধর্মহীন মুক্তমনাদের কাছে এসব খারাপ না। মুক্তচিন্তার যুক্তিটি কেন বোঝেন না আপনারা?

“দৈনিক সংগ্রাম” অনলাইন পত্রিকায় ০৫ নবেম্বর ২০১৯ তারিখে “চীনে মুসলিম নারীদের যৌনদাসী করা হচ্ছে!” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়(২)। সেখানে বর্ণিত হয়েছে,

চীনে বসবাস করা মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম উইঘুর। তারা চীনে বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এর আগে মুসলিম সম্প্রদায়টির সাধারণ মানুষের শরীর থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। আর এবার পাওয়া গেল আরো বড় এক অভিযোগ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে উইঘুর সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীদের যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হচ্ছেএকিদন নয়, প্রতিদিনই তাদের বাধ্য করা হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীদের সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। তাদের বাধ্য করা হয় কর্মকর্তাদের রুমে যেতে। আর ওই নারীরা যখন সরকারি কর্মকর্তাদের রুমে যান তখনই তাদের যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করা হয়। আর এই সময় তাদের স্বামীদের আটক রাখা হয় প্রদেশটির ডিটেনশন ক্যাম্পে

এসব খবরকে মুক্তচিন্তায় অবিশ্বাস করা হয়। ধামাচাপা দেয়া হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয় আরও রয়েছে। “BBC NEWS বাংলা” অনলাইন পত্রিকায় ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে “চীনে উইঘুর নারীরা গণধর্ষণের শিকার শিনজিয়াংয়ের বন্দী শিবিরে - 'তাদের লক্ষ্য সবাইকে শেষ করা” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছে(৩),

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জন্য যেসব 'পুনঃশিক্ষণ' কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে - তাতে নারীরা পরিকল্পিতভবে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন বলে নতুন পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছে বিবিসিএই নারীদের একজন হচ্ছেন তুরসুনে জিয়াউদুন। বিবিসিকে দেয়া তার এই বর্ণনা কোন কোন পাঠককে বিচলিত করতে পারে। "তখন কোন মহামারি চলছিল না কিন্তু ওই লোকগুলো সবসময়ই মুখোশ পরে থাকতো" - বলছিলেন তুরসুনে জিয়াউদুন।"তারা স্যুট পরতো, পুলিশের পোশাক নয়। কখনো কখনো তারা আসতো মধ্যরাতের পরে। সেলের মধ্যে এসে তারা ইচ্ছেমত কোন একজন নারীকে বেছে নিতো। তাদের নিয়ে যাওয়া হতো করিডোরের আরেক মাথায় 'কালো ঘর' বলে একটি কক্ষে। ওই ঘরটিতে নজরদারির জন্য কোন ক্যামেরা ছিল না।"জিয়াউদুন বলেন, বেশ কয়েক রাতে তাকে এভাবেই নিয়ে গিয়েছিল ওরা। "হয়তো এটি আমার জীবনে এমন এক কলঙ্ক - যা আমি কখনো ভুলতে পারবো না"- বলছিলেন তিনি। "এসব কথা আমার মুখ দিয়ে বের হোক - এটাও আমি কখনো চাইনি।" শিনজিয়াং প্রদেশে চীনের এইসব গোপন বন্দী শিবিরের একটিতে তুরসুনে জিয়াউদুন বাস করেছেন মোট ৯ মাস। তিনি বলছেন, ওই সেলগুলো থেকে প্রতিরাতে নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হতো, তার পর মুখোশ পরা এক বা একাধিক চীনা পুরুষ তাদের ধর্ষণ করতো। জিয়াউদুন বলেন - তিনি নিজে তিনবার গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতিবারই দুই বা তিন জন লোক মিলে এ কাজ করে।

আরেকটি ধর্মহীন দেশ নাম উত্তর করিয়া। সেখানে ইসলামের তেমন কোনো চর্চা নেই। সেই দেশের ধর্মহীনদের সাথেও যা করছে জানলে ভয়ে গা শিউরে উঠবে। “BBC NEWS বাংলা” অনলাইন পত্রিকায় ২১ মে ২০১৯ তারিখে “চীনে যৌন দাসত্বে বাধ্য করা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নারীদের” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছে(৪),

চীনের হাজার হাজার উত্তর কোরীয় নারী ও মেয়েশিশুকে যৌন বাণিজ্যে কাজ করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে বলে লন্ডন ভিত্তিকএকটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। লন্ডন-ভিত্তিক কোরিয়া ফিউচার ইনিশিয়েটিভ বলছে, এই নারীদের অপহরণ করে পতিতা হিসাবে বিক্রি করা হয়, অথবা চীনা পুরুষদের বিয়ে করার জন্য বাধ্য করা হয়। সংস্থাটির মতে, বিভিন্ন অপরাধ সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর এই উত্তর কোরীয় নারীদের নিয়ে ১০ কোটি ডলারের যৌন বাণিজ্য হয়ে থাকে। চীন তার দেশ থেকে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর কারণে প্রায়ই এই নারীদের কোন উপায় থাকেনা। সেজন্য তারা ফাঁদে আটকা পড়েন এবং বাড়ির ভেতরে নির্যাতন সয়ে যান।

এক ধর্মহীনরা আরেক ধর্মহীন দেশের নারীরকে যৌনদাসী বানাচ্ছে মুক্তচিন্তায়। অনেক লজ্জিত নাস্তিক এটা এখানে বলতে পারে যে তারা মুক্তচিন্তায় কাজটি করছে না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কিসের জন্য করছে? মানুষকে খুন করা, ধর্ষণ করা যে খারাপ এই কথাকে যদি তারা বিশ্বাস করতো তাহলে তো অবশ্যই সেই মুক্তচিন্তা করতে পারতো না। তাদের কাছে কোনো নৈতিক ধর্মীয় গ্রন্থ নেই যা তারা বিশ্বাস করে চলবে। তারা মনে করে নৈতিকতা আকাশ থেকে আসে না তারাই নীতি নৈতিকতার উৎস।এটা লজ্জিত নাস্তিকদেরকে স্বীকার করতে হবেই যে তাদের কাজটি তাদের মুক্তচিন্তার ইচ্ছাতেই করেছে। অস্বীকার করবার কোনো উপায় নেই। মুক্তচিন্তা কোনো কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ না।

“দৈনিক ইত্তেফাক” অনলাইন পত্রিকায় ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে “চীনা বন্দিশিবির থেকে ফিরে যা বললেন নির্যাতিত মুসলিম নারী” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয় (৫)। সেখানে বর্ণিত হয়,

চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলমানদের আটক রাখা ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা নারী আইবোটা সেরিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, 'ওই ক্যাম্পে আমি ৭ দিন ছিলাম। আমার মনে হয়েছে ওই কয়েকদিন আমি জাহান্নামে ছিলাম'। খবর বিবিসির। সেখানে আমাকে হাতে হাতকড়া পড়িয়ে, পা এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় অন্ধকার কক্ষে আটক রাখা হয়েছেআমাকে হাত উপরের দিকে তুলতে বলে গরম পানি ঢেলে দেওয়া হতো। আমি তখন শুধু চিৎকার করতাম। এ সময় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়তাম। আমার আর কিছু মনে পড়ে না। তারা বলতো আমরা দৈত নাগরিকরা দেশের শত্রু, বিশ্বাসঘাতক'। কাজাখ বংশোদ্ভূত ওই নারী ছাড়াও এই ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা অন্যান্যরাও এটিকে একটি বন্দিশালা হিসেবেই অবহিত করেছেন।………….এদিকে মানবাধিকার কর্মীরা ক্যাম্পে আটককৃতদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'সেখানে আটক বন্দিরা কোন আইনি সহায়তা তো পানই না, বরং তাদের সঙ্গে পরিবার পরিজনদের দেখাও করতে দেওয়া হয়না। শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বিনা করণে আটক করে রাখা হচ্ছে তাকে'। তবে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলমানদের এমন ক্যাম্পে আটকে রাখার কথা দীর্ঘদিন থেকেই অস্বীকার করে আসছে চীন। চীনা কর্মকর্তারা এটিকে বিনামূল্যে ভকেশনাল টেনিং সেন্টার বললেও এই ক্যাম্পের বিরুদ্ধে উঠেছে বিভিন্ন অভিযোগ।

“Risingbd.com” ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে “উইঘুর নারীদের সঙ্গে রাত কাটাতে পাঠানো হয় চীনা পুরুষদের” শিরোনামে এক খবর প্রকাশ করা হয়(৬)। সেখানে বর্ণিত হয় যে,

উইঘুর মুসলিম নারীদের ওপর নতুন ধাঁচের নির্যাতন শুরু করেছে চীন সরকার‘জোড়াবদ্ধ ও পরিবার হওয়া’ কর্মসূচির আওতায় শিনজিয়াংয়ে উইঘুর নারীদের সঙ্গে রাত কাটাতে তাদের বাড়িতেই পাঠানো হচ্ছে চীনা হান সম্প্রদায়ের পুরুষদের। হান পুরুষদের সঙ্গে যেসব নারীদের রাত কাটাতে বাধ্য করা হচ্ছে, তাদের অধিকাংশের স্বামীই চীনের বন্দিশিবিরে আটক রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চীনা পুরুষরা উইঘুরদের বাড়িতে একটানা ছয় দিন অবস্থান করে। তারা ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাজ করে এবং তাদের খাওয়াদাওয়াটাও হয় একসঙ্গে। এই সময় তারা কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ নিয়ে আলোচনা করে। আরেক চীনা কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা ওই পরিবারটিকে মতাদর্শ দিয়ে সাহায্য করে, তাদেরকে নতুন চিন্তাচেতনায় নিয়ে আসা হয়। তারা জীবন নিয়ে কথা বলে। আর এই সময়ে তারা একে অন্যের প্রতি অনুভূতি জাগ্রত করার চেষ্টা করে’। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত উইঘুর মুসলিম রুশান আব্বাস একটি অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি উইঘুর নারীদের পদ্ধতিগত ধর্ষণ’তিনি বলেন, ‘এটা গর্ণধর্ষণ। উইঘুর নারীদের বিয়ের জন্য সরকার হান পুরুষদের অর্থ,বাড়ি ও চাকরি দিচ্ছে’। রুশান জানান, এই ধরনের পুরুষদের প্রত্যাখ্যান করা অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে উইঘুর নারীদের জন্য। কারণ প্রত্যাখ্যান করা হলে তাদেরকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হবে। তিনি বলেন,‘মেয়ে অথবা তার পরিবারের সদস্যরা এ ধরনের বিয়ে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। কারণ নাস্তিক হান চীনাদের প্রত্যাখ্যান করা হলে তাদেরকে ইসলামি  চরমপন্থি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বছরের পর বছর ধরে বিয়ের নামে উইঘুর নারীদের ধর্ষণ করে যাচ্ছে চীনারা’।

“যুগান্তর” অনলাইন পত্রিকায় ০৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে “চীনে উইঘুর নারীদের শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করা হচ্ছে” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়(৭)। সেখানে বর্ণিত হয়েছে,

চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বী উইঘুর নারীদের জোরপূর্বক শয্যাসঙ্গী করছে চীনের সরকারি কর্মকর্তারাএসব উইঘুর নারীদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে রেখেছে চীন সরকার। এই সুযোগে তাদের পরিবারের উপর নজরদারির নামে নারীদের শয্যাসঙ্গী করা হচ্ছে। খবর যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট’র। চীনে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীদের শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করা হচ্ছে। উইঘুর পুরুষরা চীনের আটক কেন্দ্রে বন্দি। এজন্য তাদের স্ত্রীদের বাসায় তদারকির জন্য যায় সরকারি কর্তারা। উভয় সময়ই তাদের সঙ্গে বিবাহিত মুসলিম নারীদের একই বিছানায় থাকতে বাধ্য করা হয়। খবরে বলা হয়, প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। বন্দিদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে দেশটি। 

“Jagonews24.com“ অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ১৪ আগস্ট ২০১৯ তারিখে “চীনে মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা বানানো হচ্ছে” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়(৮)। সেখানে বর্ণিত হয় যে,

চীনের উইঘুর গোত্রভুক্ত মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা বানানো হচ্ছে। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে কথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আটক ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমের মধ্যে যেসব নারী রয়েছেন তাদের সঙ্গে এমনটা করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। জিনজিয়াংয়ের সেসব শিবিরে একসময় বন্দি থাকা নারীর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। চীনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এসব মুসলিম দীর্ঘদিন ধরে জিনজিয়াংয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। জিনজিয়াং প্রদেশ চীনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। ওই অঞ্চলটি স্বর্ণ, তেল ও গ্যাসসম্পদে সমৃদ্ধ। সেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা সবাই উইঘুর সুন্নি মুসলমান। তারা চীনা নয়, তুর্কি ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত। কথাও বলেন উইঘুর ভাষায়। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করতে পারে ভেবে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে চীনা সরকার। গুলবাহার জালিলোভা। চীনা সরকারের কথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ বন্দিশিবিরে এক বছরের বেশি সময় আটক ছিলেন তিনি। পরে বুদ্ধি খাটিয়ে একসময় তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত বিরতিতে আমাদের শরীরে ইনজেকশন দেয়া হতো।’

বঙ্গীয় প্রবাসী লজ্জিত নাস্তিকদের কাছে এসব কর্ম খারাপ মনে হলেও চাইনিজ ধর্মহীনদের কাছে সেসব খারাপ না। কারণ তাদের মুক্তচিন্তায় মুসলিমদেরকে গণহত্যা করে, মুসলিম নারীদেরকে ধর্ষণ করে, মুসলিম শিশুদেরকে খুন করে, নারীদেরকে বন্ধ্যা বানিয়ে ফেলা বৈধ। নাস্তিক্যধর্মেও এসব বৈধ। মুক্তচিন্তা শুধুমাত্র ইসলামের বিরোধীতায় মধ্যেই কেন থাকবে? মুক্তচিন্তা শুধু মাত্র কুরআন হাদিসের সমালোচনার মধ্যেই কেন সীমাবদ্ধ থাকবে? মুক্তচিন্তা কেন নৈতিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? মুক্তচিন্তা কেন নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না? যা ইচ্ছে তাই মুক্তচিন্তা কেন করা যাবে না? বস্তুবাদী দৃষ্টিতে, ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে এমনকি নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এসব প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব কি হবে?

ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে সবাই প্রাণীজগতের অংশ।মানুষ,অন্যান্য প্রাণী থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। মানুষ জীবজগতেরই একটা অংশমাত্র। কুকুর, শিম্পাঞ্জী, হাতি, গরিলা যেমন আলাদা-আলাদা প্রজাতি, মানুষও তেমন। তবে প্রজাতিভিত্তিক প্রাণিকুলের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। বলা হয় যোগ্যতমদের টিকে থাকার লড়াই যা আমাদেরকে এই পর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছে না হলে আমরাও নাকি অন্য বিলুপ্ত প্রাণীদের মতো বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারতাম! কুকুর ও শূকর প্রাণী যেমন এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে ধিরে ধিরে বিবর্তিত হয়ে এসেছে ঠিক একই ভাবে রিচার্ড ডকিন্সরা সেই আদিকোষ থেকেই অস্তিত্বে এসেছে-বিবর্তনবাদ আমাদেরকে তাই বলে। আমাদের সবার চিন্তা-চেতনা, শক্তি-সামর্থ্য, খাদ্য সিস্টেম প্রায় সব কিছুই ভিন্ন ভিন্ন। একজনের কাছে যা ভালো অন্যজনের কাছে তা ভালো না আবার অন্যজনের কাছে যা ভালো তা আপনার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে।

আপনাকে জানানো হয়নি যে,ডারউইনের বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে দাসপ্রথা সম্পূর্ণ সমর্থন যোগ্য? একটি প্রাণী যেমন নিজে টিকে থাকার জন্য যা ইচ্ছা তাই করেই নিজেকে রক্ষা করে থাকে এবং নিজের অস্তিত্বের বহন স্বীকৃতি দেয় ঠিক একইভাবে শক্তিশালী মানব প্রাণী নিজেদের স্বার্থে দুর্বল মানবদের দাস বানাচ্ছে, দাসদের নির্যাতন করে, অত্যাচার করে ও নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। কিন্তু দাসরা যেহেতু দুর্বল সেহেতু তারা কিছুই করতে পারে না। প্রাণী জগতেও শক্তিমানরা দুবলদেরকে দমিয়ে রাখে বরং মেরেই ফেলে এরকম বহু উদাহরণ বাস্তবে দেখা যায়। বাঘ যেমন হরিণকে খায়, বড় তিমি মাছ যেমন ছোট মাছদের খায়,মানুষরা যেমন হাঁস,মুরগী খায় একইভাবে কিছু শক্তিশালী মানব প্রাণীরা দুর্বল মানব প্রাণীদেরকে নিজেদের দাসত্বে বন্দী করতো এবং নিজেদের স্বার্থে উপকার লাভ করতো। তারা যে এই কাজ করতো এটা তাদের কাছে মোটেও অনৈতিক ছিল না বরং নৈতিক চিন্তা করেই এই কাজটি করা হতো। যেমন ঈগল পাখি সাপকে খেয়ে ফেলে আর এই খেয়ে ফেলাটা ঈগল পাখির কাছে একদমই অনৈতিক মনে হয় না। যদি মনেই হতো তাহলে তো আর সাপটিকে মজা করে খেতে পারতো না,তাই না? একটি তিমি মাছ যেমন হাজার হাজার মাছকে খেয়ে ফেলে,একটি বাঘ যেমন হরিণকে খেয়ে ফেলে, মানুষ যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগীকে যুগে যুগে খেয়ে আসছে,আসবে এগুলো যেমন প্রাণীজগতে অনৈতিক না ঠিক একই ভিত্তিতে মানব প্রজাতিতে দাসপ্রথাও অনৈতিক নয়।

নাস্তিকরা যতই দাবি করুক না কেন দাসপ্রথা অমানবিক কিন্তু বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে, নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে সে কখনোই দাস প্রথাকে খারাপ প্রমাণ করতেই পারবে না বরং দাসপ্রথা ব্যক্তিগত স্বার্থে ভালো এরপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে রয়েছে। তারা নিজেরাও জানে এসব তথ্য কিন্তু এগুলো মানুষের সামনে নিয়ে আসতে চায় না। মানুষ এদের ভণ্ডামি ধরে ফেলবে তাই।

দাসপ্রথাকে খারাপ প্রমাণ করার জন্য যে যুক্তিগুলো দাড় করানো হয়ঃ

একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না।

একজন মানুষ আরেকজন মানুষের দাসত্বে থাকতে পারে না।

একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে নির্যাতন-অত্যাচার করতে পারে না।

মানুষকে দাস বানালে সেই দাসের নিজের কোন ইচ্ছাই থাকে না। যা অমানবিক।

দাসসের নিজস্ব স্বাধীনতা নেই, নেই সামাজিক সম্মান, নেই কোন অধিকার তাই দাসপ্রথা খারাপ।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, আপনার কাছে দাসপ্রথা খারাপ হওয়ার যে কারণ গুলো রয়েছে সেই কারণ গুলো সত্য হিসেবে কি তারা ধরে নিতে বাধ্য যারা মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথাকে সমর্থন করে? অবশ্যই না। তাহলে আপনার কাছে দাসপ্রথা খারাপ কিন্তু অন্য মানুষের কাছে তা ভালো। তাহলে আপনি এই যুগে এসে দাসপ্রথাকে খারাপ হিসেবে দেখাতে চাইলেও প্রাচীন যুগের মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না এমনকি আপনাকে যদি (ধরা যাক) টাইমমেশিন দিয়ে সেই যুগে পাঠিয়ে দেয়া হয় এরপরেও আপনার দেয়া কারণ তারা মানতে বাধ্য না। আপনার কাছে এই কারণ গুলোর কারণে দাসপ্রথা বর্বর মনে হলেও চীনের নাস্তিকদের কাছে এই কারণে দাসপ্রথা খারাপ নয় বরং ভালো। এযুগেও যে দাসপ্রথা আছে জানেন? “চীন উইঘুর মুসলিমদের দাস বানিয়ে রেখেছে” এই শিরোনামে অনলাইনে সার্চ করলে অনেক প্রমাণ পাবেন যেখানে নাস্তিক চীনারা অসহায় মুসলিম মা-বোন ও পুরুষদেরকে দাস-দাসী বানাচ্ছে। ওদের যুক্তিতে, ওদের দৃষ্টিতে দাসপ্রথা ভালো তাই ওরা মুসলিমদেরকে দাস-দাসী বানাচ্ছে। যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে এমন কোনো নির্যাতন নেই যা মুক্তচিন্তক চীনারা মুসলিমদের সাথে করছে না।তাছাড়া যে যুক্তিতে দাসপ্রথাকে খারাপ বলে প্রমাণ করা হবে একই ভিত্তিতে দাসপ্রথাকে ভালো প্রমাণ করা গেলে কি নাস্তিকরা বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে দাসপ্রথাকে ভালো হিসেবে মেনে নিচ্ছে?

ধরুন মুক্তমনা চীনা সরকার চাইলো সে মুসলিমদেরকে দাস বানিয়ে রাখবে। এতে চীনা সরকারের লাভ হলো সে বিনামূল্যে যা ইচ্ছে তাই মুসলিমদের দিয়ে কাজ করাতে পারছে। মুসলিমরা যতই আন্দোলন করুক না কেন এতে চীনা সরকারের কিছুই আসে যায় না যেহেতু ক্ষমতা তার হাতে। সে আইন বানায় এবং সবাই তার আইন মেনে নিতে বাধ্য। সে আন্তর্জাতিক আইনে অবিশ্বাস করে, সে মনে করে আন্তর্জাতিক আইন বুদ্ধিকে আড়ষ্ট করে। তাই কেউ যদি তার আইন না মানে তাহলে নিজের মুক্তমনা ক্ষমতা প্রয়োগ করে সে বাধা দেবে। এখন ধরুন বাংলাদেশের একজন নাস্তিককে পাঠানো হলো চীনের সরকারকে বুঝাতে যে দাসপ্রথা খারাপ। সে উপরের সব গুলো পয়েন্ট পেশ করে দাসপ্রথাকে খারাপ প্রমাণ করতে চাইলো কিন্তু (ধরা যাক) নাস্তিক চীনা সরকার তার শ্বপক্ষে যুক্তি পেশ করলো এভাবেঃ

ক্ষমতা আমার হাতে আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। আমার মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথা ভালো। আমার নৈতিকতা আমি নির্ধারণ করবো। দেহ আমার, সিদ্ধান্ত আমার, আইন বানানোও আমার ইচ্ছা। কেউ আমাকে বাধা দিলে আমি আইন করে দিব, তার সারাজীবনের জন্য জেল। তোমার নৈতিকতা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে বাধ্য নয় যেহেতু আমার নিজের চিন্তা করার স্বাধীনতা আছে। আমার মুক্তচিন্তা করার অধিকার আছে, রয়েছে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা। সবার স্বাধীনতা যদি আমি দেখি তাহলে আমার স্বাধীনতায় আঘাত আসে তাই সবার কথা অথবা তোমার কথা আমি মেনে নিতে পারছি না। আর মুসলিমদেরকে দমন করার জন্য আমাকে অবশ্যই মুসলিমদের দাস বানিয়ে রাখতে হবে, ওদেরকে আমি অত্যাচার-নির্যাতন সব করবো এতে আমাকে বাধা দেবার অধিকার তোমার নেই। তুমিও তো চাও যে, মুসলিমদের অস্তিত্ব দুনিয়াতে না থাকুক। আর মৃত্যুই আমাদের শেষ ঠিকানা তাই এই দুনিয়াতে যা ইচ্ছা করে নিব। আমার মুক্তচিন্তার দাসপ্রথাকে যেমন তুমি সমর্থন করছো না একইভাবে আমিও তোমার মুক্তচিন্তাকে সমর্থন করবো না।

প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে কি দাসপ্রথাকে খারাপ বলার কোনো যুক্তি নাস্তিকদের কাছে আছে? একটি বান্দর যদি চোরকে বুঝায় যে চুরি করা খারাপ তাতে চোরের কি আসে যায়? বোঝেন নাই? কোনো গোমূর্খ নাস্তিক যদি বলে মুক্তচিন্তা এটা করা ঠিক না, সেটা করা ঠিক না, সেটা করা যাবে না, এটা করা যাবে তাহলে আসলেই কি এভাবে চিন্তার মুক্তি কথাটি বলা যাবে? নাকি উল্টো চিন্তার সীমাবদ্ধ বলতে হবে?

বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটাও প্রমাণ হয় যে বর্তমানে চায়নাতে এমনকি নর্থ কোরিয়াতেও পর্যন্ত দাসপ্রথার চর্চা রয়েছে(৯)।


2016 সালের জিএসআই অনুসারে চীনে আনুমানিক 3,388,400 জন মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার (জনসংখ্যার 0.25%)। জোরপূর্বক এবং শিশুশ্রম এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা, এবং এটি একটি সমস্যা যা 2007 সালে শিরোনাম হয়েছিল, যখন পুলিশ 450 জন বন্দিকে উদ্ধার করেছিল - যাদের মধ্যে কিছু 14 বছরের কম বয়সী শিশু ছিল - যাদের দিনে 16 থেকে 20 ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল ইট ভাটায় কোনো বেতন ছাড়াই। তাদের অনেককে মারধর করা হয়েছিল এমনকি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল এবং সবেমাত্র বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয়েছিল। জিএসআই-এর মতে, জোরপূর্বক বিয়ে এবং যৌন ব্যবসায় নারী ও শিশুদের পাচারও একটি বিশাল সমস্যা। মহিলা অভিবাসীরা যারা অবৈধভাবে দেশে আছেন এবং সাহায্যের জন্য অন্যদের কাছে পৌঁছান তারা বিশেষ করে গোপনে কনে হিসাবে বিক্রি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। 2012 সালে আনুমানিক 20,000 থেকে 30,000 উত্তর কোরিয়ার মহিলা চীনে বসবাস করছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের দাসত্ব সহ্য করছেন, ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর রিপোর্ট করেছে।


2016 GSI অনুযায়ী উত্তর কোরিয়া হল এক নম্বর অপরাধী, যেখানে জনসংখ্যার 4.37% আধুনিক দাসত্বের মধ্যে বাস করে। বিশ্বের সর্বোচ্চ অনুপাত, সংখ্যা না হলেও 2015 সালে, জাতিসংঘের তদন্তকারী মারজুকি দারুসমান অনুমান করেছেন যে 50,000 উত্তর কোরিয়ার নাগরিককে খনন, লগিং এবং টেক্সটাইল ও নির্মাণ শিল্পে কাজ করার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানত চীন, রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রেরিত এই ক্রীতদাসরা সরকারের জন্য বছরে প্রায় 2.3 বিলিয়ন ডলার আয় করে। ইতিমধ্যে, কর্মী নিজেরাই প্রায়শই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন 20 ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করেন এবং প্রতি মাসে গড়ে $120-$150 এর মধ্যে উপার্জন করেন। নিয়োগকর্তারা উত্তর কোরিয়ার সরকারকে "উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পরিমাণে" প্রদান করেছেন, দারুসমান দাবি করেছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে যে উত্তর কোরিয়ায় পরিস্থিতি এতটাই মরিয়া যে শ্রমিকরা প্রায়ই রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঘুষ দেয়। দাসত্ব আমাদের "আধুনিক" বিশ্বে সর্বব্যাপী, এমনকি যদি আমরা এটি প্রতিদিনের ভিত্তিতে নাও দেখি।

বর্তমানে শুধুই চীন না আরও বিভিন্ন ধর্মহীনদের দেশে মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথার মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা হয়ে থাকে। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী একদম ন্যাচারাল কাজটি করে যাচ্ছে। টিকে থাকার লড়াই। সামনে আরও অজানা সব নতুন নতুন তথ্য প্রমাণ আর যুক্তি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি সেসব জানার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিন। কারণ আপনি এমন এক সত্য সম্পর্কে জানতে যাচ্ছেন যা আপনি এর আগে হয়তো জানেন নি আসলে আপনাকে জানতেই দেয়া হয়নি। চিন্তা করতে দেয়া হয়নি। বুঝতে দেয়া হয়নি। ভাবতে দেয়া হয়নি।

বিজ্ঞানমনস্ক এরিস্টটলের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ

মানব সভ্যতার বিকাশ সাধনে যে সকল মনীষী তাঁদের অবদানের মাধ্যমে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তাঁদের অন্যতম। তিনি ছিলেন গ্রিক সভ্যতা, সংস্কৃতি ও দর্শনের অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র। রাষ্ট্রদর্শন ও রাষ্ট্রতত্ত্বের ক্ষেত্রে এরিস্টটল ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক।…..শিশু অবস্থা থেকেই এরিস্টটল রাজপরিবারের সাথে সম্পর্কিত থাকার ফলে তিনি অনেকাংশে বিজ্ঞানমনস্ক ও অভিজাততান্ত্রিক মানসিকতার অধিকারী হয়েছিলেন(১০)।

এরিস্টটলের লেখনী প্রতিভা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তাঁর প্রতিভা ছিল বহুমুখী। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। জ্ঞানের প্রায় সব শাখা জুড়ে ছিল তাঁর এসব লেখনী।…তিনি নীতিশাস্ত্র (Ethics), অধিবিদ্যা (Metaphysics), ইতিহাস (History), রাজনীতি (Politics), অর্থনীতি (Economics), পদার্থবিদ্যা (Physics), শরীরবিদ্যা (Gymnastics), চিকিৎসাবিদ্যা (Medical Science), জ্যোতির্বিদ্যা (Astronomy) এবং তর্কশাস্ত্র (Logic)- এ ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। এরিস্টটল কতকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছিলেন,তার সঠিক হিসেব পণ্ডিতরা আজ পর্যন্ত দিতে পারেন নি। উইল ডুরান্ট (Will Durant)-এর হিসেব অনুযায়ী তিনি ৪০০ বই লিখেছিলেন। কেউ কেউ আবার বলেন এর সংখ্যা এক হাজার। তবে এ কথা সত্য যে,তাঁর লেখা বইগুলো দিয়েই একটি গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছিল(১১)।

রাখী বর্মণ “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১০১ থেকে ১৬২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এরিস্টটল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা উল্লেখ করেছেন।

দাসপ্রথার সমর্থনে মুক্তবুদ্ধির মুক্তচিন্তার যুক্তি সমূহঃ

এরিস্টটল তাঁর দাসপ্রথাকে যুক্তির মাধ্যমে সমর্থন করেছেন। এরিস্টটলের মতে দাসপ্রথা প্রকৃতির শাশ্বত নীতিরই ফলশ্রুতি। এ নীতি হচ্ছে আদেশ ও আনুগত্যের সমন্বয়। তিনি বলেন,পারস্পারিক কল্যাণ সাধনের জন্য দাসপ্রথার প্রয়োজন আছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি চরমপন্থী তার্কিক অ্যান্টিফোন (Antiphone) এবং আলকিডেমাস (Alcidamas)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন(১২)।

যুক্তিবাদী এরিস্টটল দাসপ্রথার পক্ষে অনেক যুক্তি দিয়েছেন সব গুলো এখানে লিখে দিলে লেখা বিশাল হয়ে যাবে তাই আমি মূল মূল যুক্তি গুলো ছোট করে পেশ করছি। বিস্তারিত যুক্তি গুলো পড়তে রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১২০ থেকে ১২২ পৃষ্ঠা পড়তে পারেন।

এরিস্টটল বলেন, দাসপ্রথা একটি প্রকৃতিগত বিধান। প্রকৃতির নিকট হয়ে কোন কোন মানুষ প্রভুত্ব করার ক্ষমতা নিয়ে আসে, আবার কেউ কেউ দাসত্ব ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে। মানব দেহের সাথে তুলনা করে এরিস্টটল বলেছেন যে, মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের উপর যেমন আত্মার আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়, তেমনি পরিবারের অঙ্গ হিসেবে বিবেক বুদ্ধিহীন দাসদের উপর প্রভুত্ব করার অধিকার পরিবারের বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। কাজেই দেখা যায় কে প্রভু, আর কে দাস তা প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দেয়। দাসপ্রথাকে এরিস্টটল স্বাভাবিক এবং নৈতিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। মানুষের জন্য পরিবার এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতির  উপকরণ যেমন স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক অনুরূপভাবে দাসপ্রথাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক। দাসদের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া ব্যক্তি ও শাসকদের পক্ষে উত্তম ও নৈতিক জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। দাসপ্রথা শাসন ও অধীনতার নীতির (Principle of Rule and Subordination) উপর ভিত্তিশীল। এ নীতি অনুসারে উত্তম অধমকে শাসন করবে এবং অধম উত্তমের আদেশ পালন করবে।

এরিস্টটলের মতে, দাসপ্রথা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবভিত্তিক। কারণ বাস্তবে দেখা যায় যে, মানুষের মধ্যে এক শ্রেণী অধিক প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অধিকারী এবং অপর শ্রেণী অধিকতর দৈহিক শক্তির অধিকারী। মানব প্রকৃতির এ বিভিন্নতা সমাজ তথা রাষ্ট্র দেহে প্রভু ও দাস শ্রেণীর অস্তিত্বের যথার্থতা নির্ণয় করে।

নাস্তিকরা হয়তো বলতে পারে, এরিস্টটল দাসপ্রথার পক্ষে যা বলেছেন সব কিছু ভুল। এমনকি রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইতেই ১২২ থেকে ১২৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এরিস্টটলের দাসপ্রথার পক্ষের সব কথার বিরুদ্ধে কোঠর সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কথা এখানে নয়। কথা হচ্ছে, আপনি যদি নাস্তিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার যুক্তি,বিবেক,বুদ্ধি,ভাবনা ইত্যাদি সব মিলিয়ে আপনি যেমন বলতেছেন এরিস্টটলের দাসপ্রথার পক্ষে যা যা বলেছেন সব ভুল ঠিক একই সুত্রে এরিস্টটলের যুক্তি,বুদ্ধি,বিবেক,চেতনার ভাবনা অনুপাতেও আপনার দেয়া যুক্তি গুলো ভুল- এখন যুক্তির এই এক্সিডেন্টে চুরান্ত নৈতিকতার যৌক্তিক সমাধান গুলো কি কি হবে এবং কিভাবে হবে? চুরান্ত সত্য কোন যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে? কোন মানুষ সমাধান দেবে এই সমস্যার? তাছাড়া নাস্তিক্যদৃষ্টি,বিবর্তনবাদের দৃষ্টি, মুক্তচিন্তার দৃষ্টি,ব্যক্তিস্বাধীনতার দৃষ্টিতেও দাসপ্রথা সম্পূর্ণ নৈতিক ও বৈধ-এতে কোন সংশয় নেই। এসব দৃষ্টিতে দাসপ্রথাকে যুক্তি দিয়ে খারাপ প্রমাণ করা সম্ভব না। কথা হচ্ছে এখানে। বুঝতে পেরেছেন?

দাস প্রথায় একদল মানুষ আরেকদল মানুষকে অধস্তন মানুষে পরিণত করেছে। তাঁদের দাসানুদাসে পরিণত করে জীবজন্তুর মতো ব্যাবহার করেছে। ব্যাবহার করেছে নিজ স্বার্থে। নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে (১৩)।

গ্রিক প্রাচীন দার্শনিকেরা দাস প্রথাকে প্রাকৃতিক নিয়ম বলে তত্ত্ব দিয়ে একে যুক্তিসিদ্ধ করলো। প্রাচীন গ্রীসে তাই এক সময় মত জনসংখ্যার বিরাট অংশ বিভিন্ন ধরণের দাস মানুষে পর্যবসিত হলো। যে গ্রীসকে প্রাচীন পৃথিবীতে সভ্যতা,কৃষ্টি, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয় সেই গ্রীসে একই সময়ে মানুষকে দাসত্বে শৃঙ্খলিত করার ন্যক্কারজনক ব্যবস্থারও উদ্ভব হলো। অতপর দাস প্রথা ছড়িয়ে পড়লো প্রাচীন পৃথিবীর প্রায় সকল আদি জনপদে। দাসত্বের নানা রকমফেরে এসব জনপদে মানুষ শৃঙ্খলিত হলো। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে নানা কৌশলে মানুষকে দাস বানিয়ে রাষ্ট্র ও ব্যক্তির স্বার্থে ব্যাবহারের প্রথা শুরু হলো। প্রাচীন রোম থেকে শুরু করে প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া, চীন ও ভারতবর্ষে নানা আকারে প্রকারে দাস প্রথার উদ্ভব হয়। দাস মানুষেরা নীল নদ, দজলা ফোরাত, ইয়াজিং ও টাইবার নদীর উর্বর উপত্যকায় কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে। চীনের মহাপ্রাচীর থেকে মিশরের পিরামিড, ব্যাবিলনের শুন্যাদ্দান, গ্রীস ও রোমের অবাক করা সব অবকাঠামো- সবই দাস মানুষের শ্রম নির্মিত। দাস প্রথা এই যে সকল প্রাচীন সভ্যতায় কত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল তা প্রত্নতত্ত্ববিদদের খুঁজে পাওয়া ঐসকল জনপদের প্রাচীন রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধিবিধান থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়(১৪)।

মানুষের সমাজে যখন থেকে ধন-বৈষম্যের সূত্রপাত হলো তখন থেকেই মানুষে-মানুষেও বৈষম্যের সৃষ্টি হলো। কিছু মানুষ অন্য মানুষকে তার অধস্তন করলো। তাকে কাজে লাগিয়ে সম্পদ আহরণে ব্রতী হলো। ক্রমান্বয়ে ভূমিহীন, বিত্তহীন মানুষদের মধ্যে একদল অসহায় মানুষ বিত্তবানদের দাসে পরিণত হতে লাগলো। কেবলমাত্র ভরণপোষণের বিনিময়ে তারা তাঁদের জমিতে, বাড়িতে সার্বক্ষণিক কাজে নিয়োজিত হলো। তারা আর তখন থেকে সম মর্যাদার মানুষ রইলো না। দাস নামধারী মানুষ হিসেবে পরিচিত হলো(১৫)।

প্রাচীন লেখক পলিবিয়াস লিখেছেন, জীবনের অত্যাবশ্যক প্রয়োজন হলো দুইটি - গবাদি পশু আর ক্রীতদাস। উভয়েই যেন এক শ্রেণীর, একই মর্যাদার। দাসেরা তাই মানুষ নামধারী হলেও তারা প্রান্তিক মানুষ। এরিস্টটলের ভাষায় তারা জীবন্ত যন্ত্র(১৬)।

আমেরিকান কবি রালফ ওয়াল্ডো এমারসনের মতে, দাসত্ব হলো এমন এক প্রতিষ্ঠান যা মানুষকে বানরে পরিণত করে(১৭)।

দাসত্বের প্রাকৃতিক তত্ত্বে (natural slave theory) তারা বলেন, প্রকৃতপক্ষে দাসত্ব হলো জৈব বৈজ্ঞানিক সত্য, যা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক শর্ত দ্বারা নির্ধারিত। ……দাসত্ব ও দাস প্রথা সম্পর্কে প্রাচীনতম গ্রীক দার্শনিক প্লেটোসহ অনেকেই আলোচনা করেছেন। প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটল দাস প্রথাকে দার্শনিক যুক্তি দ্বারা যুক্তিযুক্ত করতে চেয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে কতিপয় তত্ত্ব (theory) উপস্থাপিত করে একে দার্শনিক ভিত্তি প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন(১৮)।

অর্থনৈতিক ভিত্তিই ছিল দাসপ্রথাঃ

দাসরা কায়িক শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। তাই বলে নাগরিকরা যে কোন কাজ করত না তা নয়। একথা সত্য যে, বড় খামারে দাসরাই কৃষিকাজ করত তবে নাগরিকরা সেসব খামারের তদারকি করত(১৯)।

স্পার্টার (প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম নগর রাষ্ট্র) সমাজ ব্যবস্থার সর্বনিন্ম স্তরে যারা ছিল তাদের হেলটস বলা হত। তারা ছিল মূলত দাস শ্রেণীর। এরাই সংখ্যায় অধিক ছিল। কায়িক শ্রমের দ্বারা প্রভু শ্রেণীর সেবা করাই ছিল তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য। তাদের একমাত্র কাজ ছিল চাষাবাদ ও খাদ্য উৎপাদন। এ কায়িক শ্রমের মাধ্যমেই তারা বাঁচার অধিকার লাভ করত।সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে তারা ছিল সম্পূর্ণ বঞ্চিত। কখনও কখনও তাদেরকে সেনাবাহিনীর নিন্ম পদসমূহে নিয়োগ করা হত। এ সুযোগ লাভকেই দাসগণ দাসত্ব থেকে তাদের মুক্তি বা পরিত্রাণ বলে মনে করত(২০)।

পৃথিবীর বিভিন্ন পুরনো সংস্কৃতিতে দাসপ্রথা বিদ্যমান ছিল। প্রাচীনতম জনপদগুলির প্রায় সব ক’টিতে দাসত্ব ও দাস প্রথা বহাল তবিয়তে ছিল। কোথাও বেশি, কোথাও কম। কিন্তু সর্বত্রই তা ছিল। কোন কোন জনপদে আবার পুরোপুরি দাসনির্ভর হয়ে পড়েছিল(২১)।

আবহাওয়া, ভূমির উর্বরতা, সেচের ব্যবস্থা প্রভুতি বিবেচনায় পৃথিবীর কতিপয় অঞ্চলে যে ক’টি জনপদ গড়ে উঠেছিল তার প্রায় সব ক’টিতে দাস প্রথা অপরিহার্য অঙ্গ ছিল(২২)।

নাস্তিকদের বিশ্বাস দুনিয়ার সকল মানুষ জন্তু জানোয়ারঃ

নাস্তিকদের বই-পত্র ও লেখালিখি থেকেই প্রমাণ হয় যে নাস্তিকদের বিশ্বাস মতে দুনিয়ার সব মানুষ জন্তু জানোয়ার ছাড়া কিছুই নয়। কেউ যদি বিশ্বাস করে উমুক জানোয়ার মানুষের কাছের আত্মীয়, মানুষ উমুক জানোয়ার থেকে বিবর্তন হয়ে বর্তমান রুপ ধারণ করেছে তাহলে এটি কি আসলেই মানুষের জন্য খুব মর্যাদার? বিজ্ঞানমনস্কতার নামে নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় কি আবল তাবল বিশ্বাস করে বসে আছে আসুন জেনে নেই।

নাস্তিকরা এসব সবার সামনে তেমন একটা আলোচনা করতে চায় না। কারণ এসব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাদের বিবর্তিত চেহারা লজ্জায় প্যান্টের ভিতর চলে যায়। আসুন মানুষ যে চতুষ্পদ জানোয়ার এই বিশ্বাসের কথা নাস্তিকদের মুক্তচিন্তা থেকেই জেনে নেয়া যাক। 

নাস্তিক বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এর “দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ” বাংলা অনুবাদ করেছেন, কাজি মাহবুব হাসান, এই বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এটা এখন সুস্পষ্ট সত্য যে আমরা শিপ্পাঞ্জিদের নিকটাত্মীয়, হয়তো বানরদের কিছুটা দূরের আত্মীয়, আর্ডভার্ক বা ম্যানিতিদের আরো খানিকটা দূরের আত্মীয়, আরো দূরের আত্মীয় কলা এবং শালগমদের…ক্রমশ যত ইচ্ছা দীর্ঘ করা যেতে পারে এই তালিকা

এখানেই শেষ নয় আরও আছে।

“AMERICAN ATHEIST” নাস্তিকদের একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। সেখানে “Ethics Without Gods” শিরোনামে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল পাব্লিশ করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে (২৩),

As human beings, we are social animals. Our sociality is the result of evolution, not choice. Natural selection has equipped us with nervous systems which are peculiarly sensitive to the emotional status of our fellows.

ভাবানুবাদঃ মানুষ হিসেবে আমরা সামাজিক জানোয়ার। আমাদের সামাজিকতা বিবর্তনের ফল, পছন্দ নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সজ্জিত করেছে যা আমাদের সহযোগীদের মানসিক অবস্থার প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।

শুধু কি তাই? “মুক্তমনা বাংলা ব্লগ” নামে নাস্তিকদের একটি সাইটে “দেখা যাচ্ছে নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নই” শিরোনামে একটি আর্টিকেল রয়েছে। সেখানে বর্ণিত হয়েছে (২৪),

বানর” নামে ডাকা হলে আমরা অপমানিত হই, মন খারাপ করে এর প্রতিবাদ জানাই। অথচ, আমাদের যদি ডাকা হয় ইউথেরিয় স্তন্যপায়ী (mammal) কিংবা মেরুদণ্ডী (vertebrate) কর্ডেট, তাহলে কিন্তু আমরা অপমানিত বোধ করিনা। এমনকি আমরা যে ন্যাথান মাছ কিংবা অ্যামনিওট চতুষ্পদ (tetrapod) এই সত্য মেনে নিতেও আমাদের বেশিরভাগেরই কোন সমস্যা নেই। শুধু এক বানর নিয়েই আমাদের যতো সমস্যা। অথচ, আমরা যে নিছকই বানর বৈ কিছু নই এটা আমাদের জানা প্রায় তিনশো বছর ধরে। শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার (taxonomy) জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস প্রথম আমাদের অন্তর্ভুক্ত করেন প্রাইমেট ও এইপ এই শাখা (clade) দুটির, যাদের বাংলা আমি যথাক্রমে করবো বানর ও বনমানুষ।

“মুক্তমনা বাংলা ব্লগ” সাইটে “মানুষ কি বানর থেকে এসেছে?” শিরোনামে একটি আর্টিকেলেও এটা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে (২৫),

মানুষ মাঙ্কি নয়। মাঙ্কি থেকে মানুষের বিবর্তনও হয়নি। কিন্তু প্রাইমেটকে বানরের শব্দার্থ হিসেবে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষও একধরনের প্রাইমেট বা বানর জাতীয় প্রানী বৈ কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে মাঙ্কি একটি অধিবর্গ বা প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ, আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্সে প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ শক্তভাবে এড়িয়ে চলা হয়। আমরা কোন মাঙ্কি অবশ্যই নই, তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা প্রাইমেট। আমাদের পাশাপাশি অবস্থিত একজোড়া চোখ, ত্রিমাত্রিক, রঙ্গীন, স্টেরিও দৃষ্টি, চোখের পেছনে বিশাল বড় একটা মাথা, আড়াই শত দিনের কাছাকাছি গর্ভকালীন সময়, বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পূর্বে একটা অস্বাভাবিক রকম বিশাল শৈশব, ল্যাটেরাল থেকে ক্রমান্বয়ে স্ক্যাপুলার ডোর্সাল অক্ষে পিছিয়ে যাওয়া (regression), পেন্ডুলার পিনেস এবং টেস্টস, অস্বাভাবিক বিকাশপ্রাপ্ত প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্স আমাদের বানায় বানরজাতীয় জীব বা প্রাইমেট, এটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি। মানুষ সহ সব বনমানুষই স্তন্যপায়ী প্রানীর অন্তর্গত প্রাইমেট বর্গে পড়েছে। এখন পর্যন্ত  প্রাইমেটদের দু'শরও বেশি প্রজাতির সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। মানুষকে এই প্রাইমেট বর্গের মধ্যে হোমিনিডি অধিগোত্রের  অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। 

এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে ধিরে ধিরে ধাপে ধাপে কোটি কোটি বছর ধরে কুকুর, শুকর, বান্দর, হাতি, ঘোড়া, সাপ, বিচ্ছু, কাঁকড়া, তেলাপোকা ইত্যাদি এভাবে আসতে আসতে আজকের যুগের এই মানুষ প্রাণী। যদি নাস্তিকদের বইতে এই কথা বলা নাও থাকতো এরপরেও ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে মানুষ জানোয়ার ছাড়া অন্য কিছুই হতো না। ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে নাস্তিক নামের মানুষ ও শূকরের মধ্যে কোনো অস্তিত্বগত পার্থক্য নেই। উভয়ই জানোয়ার। আকার আকৃতি ছাড়া তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নেই। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সব মানুষ জন্তু জানোয়ার ছাড়া কিছু নয়।

দাস কেনা-বেচা করা অযৌক্তিক?

একজন মানুষ সারাজীবনের জন্য অন্যের অধিনে থাকবে এটা অমানবিক তাই একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে কখনো কিনতে অথবা বিক্রিও করতে পারে না।এখানে কথা হচ্ছে যে, যারা মুক্তচিন্তায় দাসপ্রথা সমর্থন করে তাদের কাছে এই যুক্তি ভিত্তিহীন কারণ সে একজন মানুষকে কিনছে এবং নিজের উপকারের জন্যই কাজে লাগাচ্ছে তাই কেনা অথবা বিক্রি করা তার কাছে তো আর অনৈতিক নয় বরং ন্যাচারাল। সরাসরি বস্তুবাদী দৃষ্টিতে বলতে গেলে মানুষ প্রাণী যদি গাছ প্রাণীর দেহ কেটে অথবা গাছ প্রাণী বিক্রি করতে পারে তাহলে এক মানুষ অন্য মানুষকে কেন নয়? সবার মধ্যেই তো প্রাণ রয়েছে? কেনা অথবা বিক্রি করা খারাপ - এর পক্ষে যে যুক্তি দেয়া হয়েছে সেই যুক্তি অনুপাতে, কুকুরের দোকান থেকে কুকুর কেনা বা বিক্রি করা,পাখির দোকান থেকে পাখি কিনা বা বিক্রি করা,বিড়ালের দোকান থেকে বিড়াল কিনা অথবা বিক্রি করা, বানরের দোকান থেকে বানর কেনা অথবা বিক্রি করাও একই যুক্তিতে অনৈতিক। এটাও এক প্রকার দাসপ্রথা। একজন মানব নিজে প্রাণী হয়ে যদি অন্য মানব প্রাণীকে বিক্রি করা বা কিনা অনৈতিক হতে পারে তাহলে একই ভিত্তিতে একজন মানব প্রাণী কুকুর প্রাণীর দোকান কিভাবে দিতে পারে? বিড়ালের দোকান কিভাবে দেয়? পাখির দোকান কিভাবে দেয়? 

আপনি বলতে পারেন হ্যাঁ, এসব পশু পাখির দোকান দেয়া ঠিক নয় কিন্তু আপনার যুক্তিতে যা ঠিক সেটা উক্ত দোকানদারের কাছে ঠিক না যেহেতু তার লাভ হচ্ছে। সে আপনার যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য কেন? তার স্বাধীনতা আছে। তার নিজের ইচ্ছা আছে । তার নিজের নৈতিকতায় নিজে চলার অধিকার আছে। তার লাভ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কার লাভ হচ্ছে বা ক্ষতি এটা দেখে তো তার কোনো ফায়দা হচ্ছে না। যারা দাস কিনে অথবা বিক্রি করে আপনার কাছে এটা অমানবিক বলে মনে হলেও তাদের মুক্তচিন্তার কাছে এটা যৌক্তিক এবং ন্যাচারাল। তাদের যুক্তি যেমন আপনি মেনে নিতে বাধ্য না ঠিক একইভাবে আপনার দেয়া যুক্তি তারাও মেনে নিতে বাধ্য না। আপনার যেমন স্বাধীনতা আছে তাদেরও রয়েছে স্বাধীনতা। আপনার বিবর্তিত বিবেক দিয়ে আপনি যেমন চিন্তা করতে পারেন একইভাবে তারাও তাদের বিবর্তিত বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে পারে। নাস্তিক্যদৃষ্টিতে আপনার দেয়া যুক্তি গুলো যে স্ববিরোধীতায় বাতিল হয়ে যাচ্ছে এটা কি এখনো বুঝতে পারেন নি?

শূকরের চাষ করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করা হচ্ছে। শূকরদেরকে মেশিনে রেখে নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের মাংস বিক্রি করা হচ্ছে (২৬)। এগুলো কি দাসত্ববাদ নয়? কোনো নাস্তিক কখনো চাইবে যে তাকে শূকরের মতো খুন করে তার মাংস বাজারে বিক্রি করে দেয়া হউক? উত্তর যদি না হয় তাহলে নাস্তিক প্রাণীজগতের অংশ আর শূকর কি প্রাণীজগতের অংশ না? নাস্তিকের জীবন গুরুত্বপূর্ণ আর শূকরের জীবনের মূল্য থাকবে না? শূকরের সাথে এই সাম্প্রদায়িকতা কেন? এমন নাস্তিকদের নাম আমি বলতে পারবো যারা মুক্তচিন্তায় শূকরের মাংস খেয়ে লাইভ করেছে কারণ তারা জানে মুক্তচিন্তায় শূকরের মাংস ভক্ষণ করা যাবে এমনকি শূকরদেরকে দাস বানিয়ে খুন পর্যন্ত করা যাবে।

স্বয়ং চিড়িয়াখানাই তো একটা বিশাল মুক্তচিন্তার দাসপ্রথা। চিড়িয়াখানায় যেসব প্রাণীদেরকে বন্দী করে রাখা হচ্ছে সেসব প্রাণী থেকে কি সম্মতি নেয়া হয়েছিল যে, তোমাদেরকে বন্দী করে রাখা হবে এবং টাকার বিনিময় তোমাদেরকে দেখার বৈধতা পাওয়া যাবে? মানুষকে যদি এভাবে বন্দী করে রাখা হতো এবং টিকেট কিনে দেখতে আসার সিস্টেম করা হতো এটা কি মানবিক হতো? চিড়িয়াখানায় বন্দী প্রাণীদের মুক্তভাবে চলাফেরা করার স্বাধীনতা থাকবে না? সংশয় হচ্ছে এই বিশাল দাসত্বের ব্যাপারে বঙ্গীয় নাস্তিকান্ধদের কখনো আন্দোলন করতে দেখা যায়নি? আপনারা কেউ দেখে থাকলে আমাকে জানায়েন। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে ও বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে তো দাসকে কিনা অথবা বিক্রি করা খারাপ বলে প্রমাণ করাই যায় না বরং যৌক্তিকতায় বৈধতার প্রমাণ মেলে। যে যুক্তি দিয়ে দাস কেনা বেচা অনৈতিক প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেই যুক্তি পরস্পর বৈপরীত্য হয়ে যাচ্ছে। কারণ নাস্তিক্যদৃষ্টিতে চুরান্ত নৈতিকতা বলে কিছুই নেই। বিবর্তিত হয়ে দুনিয়ার সব প্রাণীরা কি একই চিন্তা করতে পেরেছে?

The Origin of Species বইতে বর্ণিত আছে যে ডারউইনের দাবি মানুষ্য প্রজাতি ও বানর একই গোত্র থেকে। পরবর্তীতে এ দাবির সমর্থনে জীবাশ্ম অনুসন্ধানের হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু কিছু সংখ্যক বিবর্তনবাদী বিশ্বাস করতেন “অর্ধ বানর-অর্ধমানব” প্রজাতির শুধু জীবাশ্মই নয় বরং এ ধরণের জীব পৃথিবীর কোন অঞ্চলে জীবিত অবস্থায় বিদ্যমান। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই Missing Link অনুসন্ধানের কারণে বহু বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড ঘটে। এ সব ঘটনার মধ্যে একটি হলো পিগমী Ota Benga । ১৯০৪ সালে বিবর্তনবাদী গবেষক Samuel Verner, কঙ্গো থেকে Ota Benga কে বন্দী করেন। মাতৃভাষায় এই নামের অর্থ হলো বন্ধু। Ota Benga ছিলেন বিবাহিত ও তার দুইজন সন্তান ছিল। অথচ তাকে পশুর মত শিকল পড়ানো হয় ও খাঁচার মধ্যে বন্দী করে আমেরিকায় পাঠানো হয়। আমেরিকায় St Louies World Fair এ বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা তাকে বিভিন্ন প্রজাতির বানরদের সাথে খাঁচায় বন্দী করে মনুষ্য প্রজাতির “সবচেয়ে নিকটতম প্রাণী” হিসাবে প্রদর্শন করেন। দুই বছর পর তারা Ota Benga কে নিউইয়র্কের Bronx চিরিয়াখানায় প্রেরণ করা হয় যেখানে তাকে খাঁচায় বন্দী করে Dinah নামের একটি গরিলা, Dohung নামের একটি ওরাং ওটাং ও কিছু শিপ্পাঞ্জীর সাথে মানুষের সবচেয়ে প্রাচীনতম পূর্বসুরী হিসাবে প্রদর্শন করা হয়।

চিড়িয়াখানার বিবর্তনবাদী পরিচালক Dr.Willam T Horniday মনুষ্য প্রজাতির মিসিং লিং সংগ্রহ করার বিরল কৃতিত্ব বর্ণনা করে দর্শনার্থীর উদ্দেশ্যে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। দর্শনার্থীরা খাঁচায় বন্দী Ota Benga এর সাথে পশুর ন্যায় আচরণ করেনNew York Times পত্রিকায় দর্শনার্থীদের মনোভাব প্রকাশ পায় এভাবে, চিরিয়াখানায় ৪০,০০০ দর্শনার্থী উপস্থিত হয়। প্রায় প্রত্যেকটি মানুষ মহিলা ও শিশু প্রধান আকর্ষণ হিসাবে আফ্রিকার এই বন্য মানুষকে প্রত্যক্ষ করেদর্শনার্থীরা Ota Benga কে সমস্ত দিন মাঠে তাড়া করে, চিৎকার করে, বিদ্রূপ করে, তীব্র চিৎকার ও হট্টগোল করতে থাকে। কেউ কেউ তার পাজরে গুতা মারে, কেউ কেউ নাচতে থাকে, সবাই তাকে উদ্দেশ্য করে হাস্য পরিহাস করতে থাকে

বিজ্ঞানের নামে, মুক্তচিন্তার নামে এভাবে কতো কতো মানুষকে হয়তো মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচার করা হয়েছে তার ইতিহাস আমরা কয়জনেই বা জানি। নাস্তিক্যধর্ম সবাই ত্যাগ করতে পারে না শুধুমাত্র চিন্তাশীল মগজধারীদের এই সৎ সাহস রয়েছে নাস্তিক্যবাদ, ডারউইনবাদ ও মুক্তচিন্তা নামের শেকল থেকে নিজেকে মুক্ত করে ফেলা। যখন নাস্তিকদেরকে বলতে দেখি তারা মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হতে বলছে, মুক্তচিন্তা করতে বলছে এসব কথা যে হাস্যকর ও যুক্তিহীন সেটা বুঝতে আমার বাকি থাকে না।

চীন অন্যতম নাস্তিক প্রধান দেশ। সব চেয়ে বেশি যে দেশে নাস্তিক রয়েছে ৬ টি দেশের মধ্যে চীন প্রথম স্থান দখল করেছে (২৭)। চীনে হাই লেভেলের মুক্তচিন্তার চর্চা করা হয়। বঙ্গীয় নাস্তিকরা এসব নিয়ে সচরাচর কথা বলতে চায় না কারণ ওরা জানে এগুলো নিয়ে আলোচনা করলে সভ্য মানুষরা নাস্তিক্যধর্মকে থু থু দেবে। সাপ,বিচ্ছু থেকে শুরু করে এমন কোনো খাবার নেই যা এই মুক্তমনা চীনারা মজা করে খায় না। এরা জীবিত কুকুরের চামড়া ছিঁড়ে যতক্ষণরা পর্যন্ত দম শেষ হয়, এরপরে মাথা কেটে আনন্দের সাথে রান্না করে চুষে চিবিয়ে খায়। অনেক প্রাণী তো মুক্তমনা চীনারা জিন্দাই চিবিয়ে চিবিয়ে খায়(২৮)।সংশয় হচ্ছে, সাপ, বিচ্ছু, কুমির,কুকুরের মাথা, এদের জীবনের মূল্য নেই? এদেরকে হত্যা করে, আগুনে পুড়িয়ে আনন্দের সাথে ভক্ষন করা যদি ব্যক্তিগত ভাবে অনৈতিক না হয় তাহলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে দাস বানিয়ে নির্যাতন করা, অত্যাচার করা কেন ব্যক্তিগত নাস্তিক্যদৃষ্টিতে কিভাবে অনৈতিক হতে পারে? নাস্তিক্যধর্মে কোনো নাস্তিক চাইলে এসব খেতে পারবে। বৈধ।

নাস্তিকরা তো বলে থাকে যে উভয় সম্মতিতে যা ইচ্ছে তাই যদি করা হয় আর এতে যদি কারো ক্ষতি না হয় তাহলে এটাই নৈতিক ভালো কাজ। নাস্তিকদের এই যুক্তিতে নাস্তিকরা কি মেনে নিবে যে যদি কেউ নিজেকে বিক্রি করে দিতে সম্মতি হয় নিজের জন্য তাহলে কি এটাকে নাস্তিকরা ভালো মেনে নিবে? সময় টিভি তে দেখানো হয়েছে (২৯) কিছু লোক নিজেকে সেচ্ছায় বিক্রি করার জন্য লাইন ধরে বসে থাকে এরপরে যারা কিনতে চায় দামাদামি করে তাদেরকে একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কিনে নিয়ে যায়। এখানে যেহেতু সম্মতি আছে উভয়ের তাহলে নাস্তিকদের যুক্তিতে এটাকে তো তারা অস্বীকার করতে পারবে না। নাস্তিকদেরকে এতটুকু হলেও স্বীকার করতেই হবে যে শর্ত অনুযায়ী, সিচুয়েশন অনুযায়ী মানুষ কেনা বেচাকে যৌক্তিক কারণেই সব সময়ের জন্য খারাপ বলা যাবে না।


এটি একটি মুখোমুখি বাস্তবতা যে বর্তমান সময়েও সারা বিশ্বে পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা আধুনিক দাসত্বের শিকার। তাদেরকে পাবলিক মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয় এবং "বিয়ের" আড়ালে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়, প্রায়ই আটকে রাখা বেতনের প্রতিশ্রুতিতে গোপন কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করা হয়, বা মাছ ধরার নৌকায় যেখানে পুরুষ এবং ছেলেরা সহিংসতার হুমকির মধ্যে পরিশ্রম করে(৩০)। তারা নির্মাণ সাইটে, দোকানে, খামারে বা গৃহপরিচারিকা হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়। বল প্রয়োগ, জবরদস্তি বা হুমকির মাধ্যমে শ্রম আহরণ করা হয় যা আমরা খাই, আমরা যে পোশাক পরিধান করি এবং যে ফুটবলে আমরা লাথি খাই তার কিছু উৎপাদন করে। পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের খনি থেকে আহরণের জন্য যে খনিজগুলি তৈরি করা হয়েছে তা প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক্স এবং গাড়িতে আরও অনেক পণ্যের মধ্যে তাদের পথ খুঁজে পায়।


দাসপ্রথাকে প্রায়শই অতীতের একটি প্রাচীন, অমানবিক অনুশীলন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তা নয়, যতটা আমরা চাই। দাসপ্রথা এখনও একটি ভয়াবহ বাস্তবতা, যার মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আটকা পড়েছে৷ 2016 সালে, গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স 167টি দেশে 45.8 মিলিয়ন ক্রীতদাস লোককে গণনা করেছে, যার শিকার চারজনের মধ্যে একজন শিশু৷ এখনও, অগ্রগতি হচ্ছে; এই মাসের শুরুতে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায় যেখানে দাসপ্রথা একটি চলমান সমস্যা, আদালত দুই ক্রীতদাস মালিককে 10 এবং 20 বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে, দাসপ্রথার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত দেশের কঠোরতম রায় চিহ্নিত করেছে, রয়টার্স রিপোর্ট করেছে। আজ, দাসত্ব অনেক রূপ নেয়, যৌন পাচার এবং জোরপূর্বক বিবাহ থেকে জোরপূর্বক এবং বন্ধন শ্রম। ওয়াশিংটন পোস্ট শুধুমাত্র এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 60,000 ক্রীতদাস লোককে গণনা করে — যদি আপনি কারাগারের শ্রম গণনা না করেন(৩১)।


ধরুন কোনো এক নাস্তিক এমন এক জায়গায় গেলো যেখানে সে দেখতে পেলো মানুষ কিনা বেচা হচ্ছে। তার পক্ষে কি সম্ভব সবাইকে একত্রে মুক্ত করে দেয়া? উত্তর হচ্ছে না। কারণ তার ক্ষমতাই নেই। এখন সে যদি মুক্তচিন্তায় কিছু দাস কিনে তাদেরকে মুক্ত করে দেয় এটা কিভাবে খারাপ হতে পারে? অথবা নিজে যদি দাসদেরকে কিনে নিজের কাজে লাগায় এবং প্রতিদিন খাদ্য, পোশাক এক কথা সকল মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করে দেয় তাহলে এটাও কিভাবে অযৌক্তিক বলা যাবে? এখানে কেউ কেউ বলতে পারে আপনি তো তার স্বাধীনতাকেই কেড়ে নিচ্ছেন তাই এটা ঠিক নয় তাহলে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যদি দেখা যায় তাদেরকে মুক্ত করে দিলে তাদের কাজের সুযোগ নেই তারা বিপদে পরবে এখন তারাই যদি বলে আমরা আপনার দাস হয়ে থাকতে চাই বিনিময়ে আমাদেরকে খাবার পোশাক দিবেন-এই ক্ষেত্রেও কি খারাপ বলার সুযোগ রয়েছে? এখন আপনি বলতে পারেন তাদেরকে তো মুক্ত করে দিয়েও তাদের দ্বারা কাজ কোরানো যায় তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে “দাস” নামটি মুছে দিয়ে দাসের সকল কাজ কোরানো তাহলে বৈধ হয়ে যাবে?

মায়ের স্তন নিয়ে নাস্তিকদের বইতে মুক্তচিন্তাঃ

ভাষাবিজ্ঞানী নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের অন্যতম একটি বই হচ্ছে “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ”। বইটিকে “যৌনমিলনের চিন্তার মুক্তির আন্দোলন” নাম দিলেও হয়তো ভুল হতো না। পুরো বইটি পড়লে যেকোনো সভ্য মানুষের বমি আসতে পারে। নাস্তিকরা চাইলে কি ধরণের মুক্তচিন্তা করতে পারে সেটার নমুনা এই বই থেকে পাওয়া যায়। পাঠক, আপনার বমি আসতে পারে এরপরেও পড়তে হবে কারণ আপনাকে জানতে হবে মুক্তমনারা কেমন নির্লজ্জ-বেহায়া ও ইতর প্রকৃতির মুক্তচিন্তা করতে পারে। সিদ্ধান্ত এখন আপনার আপনি মুক্তচিন্তা করবেন নাকি যৌক্তিক চিন্তা? আপনি নাস্তিক থাকবেন নাকি যৌক্তিক মানুষ? আপনি মুক্তবুদ্ধির চর্চা করবেন নাকি সুস্থবুদ্ধির চর্চা করবেন?

মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদের লিখিত কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, বইয়ের ৪০,৪১,৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

দুটি অ্যাডের স্ক্রিপ লেখার দায়িত্ব পরের দিনই লাফিয়ে পড়ে হাসানের ওপর। অ্যাড ১ঃ মাতৃদুগ্ধের গুণকীর্তন করে অ্যাড লিখতে হবে, চোখে খোঁচা দিয়ে দেখাতে হবে মাতৃদুগ্ধের কোনো বিকল্প নেই। অ্যাড ২ঃ ‘রাধিকা’ নামের একটি অস্ট্রেলীয় গুড়োদুধের অ্যাড লিখতে হবে, চোখে মায়াজাল ছড়িয়ে দেখাতে হবে এটা মাতৃদুগ্ধ থেকেও পুষ্টিকর, আর মায়ের দুধ বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু রাধিকার ধারা অফুরন্ত।……প্রথম অ্যাডটা সরকারি, জাতিসংঘফংঘ হয়তো বিশ্বমায়েদের ঝোলা স্তনের দিকে তাকিয়েছে দয়া করে, ফোলা স্তন দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, এবং বিশ্বের কোনো সম্পদকেই নষ্ট হতে দেবে না বলে মায়ের দুধের গুণকীর্তনের শ্লোগান তৈরি করে ফেলেছেহাসানকে তার অ্যাড লিখতে হবে। বেশ, সে লিখবে। দ্বিতীয়টা প্রাইভেট; ‘রাধিকা’র পিতৃপুরুষেরা মায়ের স্তনকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পুষ্টিকর খাদ্য মনে করে, শিশুর নয়, শিশুকালের স্তন নিয়ে টানাটানি ইত্যাদিতে কোমলমতি শিশুদের চরিত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে, দুধ খাওয়া ছেড়ে চোষাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়তে হবে, যা জাতির জন্য শুভ নয়; তাছাড়া মায়ের দুধ বিনেপয়সায় পাওয়া যায়, কিন্তু বিনেপয়সায় জিনিশে বিশ্ব চললে বিশ্ব চলতো না। ব্যবসা থেকে যেতো, ধস নামতো বাজারে। অন্য দিকে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন ব্যয়বহুল, আধলিটার মাতৃদুগ্ধের পেছনে খরচ হয় একশো টাকা, সেখানে এক লিটার রাধিকা পাওয়া যায় পাঁচ টাকায়। হাসানকে তার অ্যাড লিখতে হবে। বেশ,সে লিখবে।

প্রথম অ্যাডটি নিয়েই প্রথম বসে হাসান, সে মাতৃদুগ্ধ পান করাবে সবাইকেপ্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মহাপতি উপপতি অতিপতি যুগ্নপতি বিচারপতি আমলা মামলা অধ্যাপক পুলিশক এনজিওকে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ধর্ষক ধর্মক কর্মক চর্মক সবাইকেমাতৃদুগ্ধ পান করে তারা সুস্থ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠবে, তাদের অকল বিকল মাথাগুলো ঠিকভাবে কাজ করবে, রাস্তাঘাট ধানক্ষেত পাটক্ষেতে তার বিকাশ দেখা যাবে। ওহ, তারা এখন আর মাতৃদুগ্ধ পান করে না? ওই দুধের গন্ধে তাদের বমি আসে? তারা স্তন্য পান করতে পছন্দ করে না? তারা পছন্দ করে শুধু স্তন পান করতে? মায়ের না?, অন্য কারো? তাহলে শুধু শিশুদেরকেই পান করাতে হবে মাতৃদুগ্ধ? কিন্তু কেনো শুধু শিশুদেরই পান করাতে হবে মাতৃদুগ্ধ? হাসান একবার চোখ বুজে দেশ জুড়ে গোয়ালঘর দেখতে পায়, তাতে রাশিরাশি দুগ্ধবতী গাভী দেখতে পায়, তাদের বাট ফেটে পড়তে চাচ্ছেপরমুহূর্তে সে রাশিরাশি দুগ্ধবতী মাতাদের দেখতে পায়, তাদের বাঁট ফেটে পড়তে চাচ্ছে। মাতাদের জন্যে অমন গোয়ালঘর দরকার। মাতৃদুগ্ধ বিশ্বের সম্পদ, তার এক ফোঁটাও নষ্ট করা চলবে না, এর প্রতি ফোঁটা সম্মিলিতভাবে চুষে খেতে হবে; ফুরিয়ে আসছে গরিব বিশ্বের সম্পদ, নিশ্চিত করতে হবে তার সম্পদের চূড়ান্ত ব্যাবহার। সে মাতৃদুগ্ধ পান করাবে সবাইকে, দারোগা থেকে জেনারেল সবাইকে। মাতৃদুগ্ধের কোনো বিকল্প নিই, এর পুষ্টিকরতার সীমা নেই। এটা বিনিয়োগের শতাব্দী, মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এটা এক আশ্চর্য ঔষধ। এতে সারাক্ষণ লাফালাফি দৌড়াদৌড়ি কুচকাওয়াজ গোলাগুলি করছে এমন এক জীবন্ত কোষ, যা দেশরক্ষী বাহিনীর মতোই অতন্দ্র-এটা কোনো বিদেশি বাহিনীকে ঢুকতে দেয় না ত্রিসীমার মধ্যে; এটা খেলে ঘনঘন হাগু হয় না, বাতাসের নালি জ্বালাপোড়া করে না, দাঁতগণ আর মাঢ়ি হিমালয়ের পাথরের মতো শক্ত থাকে, মাথাটা মগজটা থাকে ঝকঝকে,যে খাবে সে নিউটন আইনস্টাইন রবিন্দ্রনাথ না হয়ে যাবে না। বেশি করে মাতৃদুগ্ধ খাও, জাতিসংঘ বলে দিয়েছে খাও, মাতৃদুগ্ধ খাও, এমন বিনিয়োগ আর হয় না

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, বইয়ের ৪২,৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

হাসান দেশের প্রধান নারীবাদীটির সাথে একটু কথা বলতে চায়। ইচ্ছে করে এখনি তাকে ফোন করে; তবে ফোন না করে মনে মনে ফোনে তার সাক্ষাৎকার নিতে থাকে। এর নাম সে দেয় মানসিক সাক্ষাৎকার। হাসান জিজ্ঞেস করে, একটু বলুন তো মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা কি? এভাবে প্রশ্ন করা কি ঠিক হলো বিখ্যাত নারীবাদীকে? সে ভাষা বদলে আবার জিজ্ঞেস করে, দয়া করে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা কি সে সম্পর্কে আপনার মতামত জানালে খুশি হবো। নারীবাদী হা হা হা হা হা হা করে হেসে উঠে বলেন, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলটির প্রতিদিন এক লিটার মাতৃদুগ্ধ খাওয়া উচিত, তাহলে তার মাথা সুস্থ থাকবে, পাগলামো করবে না। হাসান জিজ্ঞেস করে, আপনি কি তাহলে মাতৃদুগ্ধ খাওয়া বা খাওয়ানো পছন্দ করেন না? নারীবাদী হা হা হা করে বলেন, ওরা মনে করে নারীরা দুগ্ধবতী গাভী, নারীদের ওলানের দিকে এবার ওদের চোখ পড়েছে, আগামী বছর হয়তো ওরা উন্নত জাতের দুগ্ধবতী নারী উৎপাদনের জন্যে উন্নত মানের গোয়ালঘর বানানোর পরিকল্পনা নেবে, নারীদের উন্নত মানের ফিড দেবে, যাতে দেশে বেশি পরিমানে নারীদুগ্ধ মাতৃদুগ্ধ উৎপাদিত হয়।হাসান জিগেস করে, মাতৃদুগ্ধ থেকে কি আমরা আমাদের অতি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো? নারীবাদী বলেন, হ্যাঁ, তা খুবই পারা যাবে। বছরে যদি আমরা কয়েক কোটি লিটার মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন করি, তাহলে তা পলিথিনের ব্যাগে ভরে বেচা যাবে, ওই দুগ্ধ থেকে বাটার চিজ ঘি কন্ডেস্নড মিল্ক আইস ক্রিম উৎপাদন করা যাবে, হা হা হা হা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে, তখন নিজেরা অবশ্য খেতে পাবো না। হাসান বলে, আপনার কথা বেশ নেগেটিভ বলে মনে হচ্ছে। নারীবাদী বলেন, কোথায় নেগেটিভ? আমি তো খুবই পজিটিভ কহা বলছি। ব্যাপারটি হচ্ছে ওরা নারীদের ঘরে আটকে রাখার নতুন নতুন ফর্মুলা বের করছে। ওরা নারীর মগজ চায় না ওলান চায়, মেধা চায় না দুগ্ধ চায়, আর নারীর ঐতিহাসিক দেহখানা তো আছেই। মাতৃদুগ্ধ পান করানো হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে নতুন সুন্দর ফর্মুলা নতুন সুন্দর চক্রান্ত। হাসান জিজ্ঞেস করে, মাতৃদুগ্ধ পানে কি কোনোই উপকার হয় না? নারীবাদী বলেন, দেশে কোটি কোটি বাচ্চা মায়ের দুধ খাচ্ছে, তাতে কি তাদের স্বাস্থ্য মেধা অতুলনীয় হচ্ছে? আর মায়ের দুধে প্রতিভা? মায়ের দুধে নৈতিকতা? রবীন্দ্রনাথ তো মায়ের দুধ না খেয়েই প্রতিভাবান হয়েছেন, আর বস্তির বাচ্চাগুলো মায়ের দুঘ খেতে খেতে মরে যাচ্ছেওই দারোগা পুলিশ মাস্তানগুলো তো মায়ের দুধ খেয়েছে, ওই জেনারেলগুলোও মায়ের দুধ খেয়েছিলো। তাতে কি তারা নৈতিক হয়েছে? হা হা হা হা। হাসান জিজ্ঞেস করে, বুড়োদের মাতৃদুগ্ধ খাওয়ালে উপকার হতে পারে? নারীবাদী বলে, হ্যাঁ ওই বদমাশ বুড়োগুলোকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো দরকার; তাহলে হয়তো বদমাশি কিছুটা কমবে

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, বইয়ের ৪৩,৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

হাসান নারীবাদীটির সাথে কথা বন্ধ করে তার সামনে একগুচ্ছ দৈনিক পত্রিকার একটির পাতা উল্টোতে শুরু করে; দ্বিতীয় পাতায় একটি সংবাদ তাকে যারপরনাই স্বস্তি দেয়। বাক্স করে সংবাদটি ছাপা হয়েছে, যার শিরোনাম স্ত্রীর স্তন্য পান করে বেঁচে আছেন মোহাম্মদ ফজর আলি’। সংবাদে বলা হয়েছে মোহাম্মদ ফজর আলি বছর বছর বিয়ে করে চলছেন, তার ঘরে সব সময়ই কমপক্ষে একটি করে গর্ভবতী স্ত্রী থাকে, এবং থাকে একটি নতুন সন্তানবতী স্ত্রী। মোহাম্মদ ফজর আলি তার শিশু সন্তানকে মায়ের স্তন্য পান করতে দেন না, তিনি নিজেই স্ত্রীকে চেপে ধরে সকাল দুপুর বিকেলে চারবেলা স্ত্রীর দুগ্ধ পান করেন। স্ত্রীর পুষ্টিকর দুগ্ধ পান না করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার গর্দান সরু হয়ে যায়; তাই এই কাজ তিনি করে আসছেন তিরিশ বছর ধরে। এবার তিনি গোলমালে পড়েছেন, তিনি নতুন বউটির স্তন্য পান করতে গেলে বউটি তাকে বাধা দেয়, তিনি জোর করে তিন মাস ধরে স্ত্রীর স্তন্য পান করেন, শিশু কন্যাটিকে স্তন্য পান করতে দেন না। মোহাম্মদ ফজর আলি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠলেও শিশুটি দিন দিন রোগাপটকা হয়ে পড়তে থাকে। স্বামীর স্তন্যপাননেশা বন্ধ করতে না পেরে অবশেষে বউটি গিয়ে থানায় মামলা দায়ের করে; এবং নীতিপরায়ণ পুলিশ ফজর আলিকে গ্রেফতার করে। হসান সংবাদটি পড়ে অভিবাদন জানায় মোহাম্মদ ফজর আলিকে। হাসান এবার আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করে যে নারীদের স্তন্য জাতীয় সম্পদ, তা নষ্ট হতে দেয়া যায় না। গরিব দেশে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি লিটার মাতৃদুগ্ধ; কিন্তু ওই মূল্যবান জাতীয় সম্পদ নষ্ট হতে দেয়া যায় না। মোহাম্মদ ফজর আলিকে হাসানের পথপ্রদর্শক বলে মনে হয়- আবার অভিনন্দন জানায় সে মোহাম্মদ ফজর আলিকে। জাতিসংঘ কি তাকে নেবে?

পুরো বইটি পড়লে এমন বর্বর, নির্লজ্জ ও বেহায়ামার্কা মুক্তচিন্তার নমুনা আপনারা দেখতে পাবেন। এদেরকে জুতালেও জুতাকে অসম্মান করা হবে। অন্যদিকে মায়ের প্রতি সন্তানের কি দায়িত্ব তা সুন্দর করে বর্ণনা করেছে ইসলাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মা খুবই সম্মানের। ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো সন্তানের এই অধিকার নেই মা নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বলার, অধিকার নেই মা নিয়ে মুক্তচিন্তা করবার। এমনকি কোনো সন্তান যদি মা-বাবার সেবা যত্ন না করে তাহলে সেই সন্তান জাহান্নামে যাবে।

 

উপদেশ, হাদিস, ৭৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না-ihadis.com

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১৭১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকিয়ে দেখবেন না; পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষবেশিনী বা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারিণী মহিলা এবং মেড়া পুরুষ; (যে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের চরিত্রহীনতা ও নোংরামিতে চুপ থাকে এবং বাধা দেয় না।) আর তিন ব্যক্তি বেহেশ্তে যাবে না; পিতা-মাতার নাফরমান ছেলে, মদপানে অভ্যাসী মাতাল এবং দান করার পর যে বলে ও গর্ব করে বেড়ায় এমন খোঁটাদানকারী ব্যক্তি।”-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৩, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সদ্ব্যবহার পেতে কে অগ্রগণ্য? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা, তারপর ক্রমান্বয়ে আত্মীয়ের সম্পর্কের নৈকট্যের ভিত্তিতে-ihadis.com 

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে আমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে তাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলো। এতে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগলে আমি তাকে হত্যা করি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বলেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি মহামহিম আল্লাহর নিকট তওবা করো এবং যথাসাধ্য তার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও। আতা (র) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তার মা জীবিত আছে কিনা তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করলেন? তিনি বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নাই।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃইয়া রাসূলাল্লাহ! সদাচার প্রাপ্তির অগ্রগণ্য ব্যক্তি কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা-ihadis.com

 

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ৬ , সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, আপনি আমাকে কি আদেশ করেন? তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে একই কথা বললে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে পুনরায় একই কথা বললে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে চতুর্থবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে পঞ্চমবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমার পিতার সাথে সদাচার করবে।-ihadis.com

 

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ ৩৩০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আসমা বিন্‌তে আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা (ইসলাম) অপছন্দ করা অবস্থায় আমার সম্পদের লোভ রেখে আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।’’(বুখারী ও মুসলিম)-ihadis.com

প্রাচীনকালে দাসদের প্রতি বর্বর আচরণঃ

বহু কাল পূর্ব হইতেই সারা বিশ্বে দাসপ্রথা চলিয়া আসিতেছিল। দাস-দাসীদের প্রতি যথেষ্ট দূরব্যাবহার করা হইত। তাহাদেরকে মানব সমাজের মধ্যেই গণ্য করা হইত না। অতি ইতর শ্রেণীর হিসাবে তাহাদের সহিত পাশবিক আচরণ করা হইত। তাহাদের ব্যাপারে মানবাধিকারের কোন প্রশ্নই উঠিত না। ঘটনাচক্রে কেহ একবার দাস হইলে পরবর্তী কালে সে আযাদ হইয়া গেলেও কলংকের তিলক তাহার ললাট হইতে মুছিত না। কাহারও পূর্বপুরুষের কেহ ক্রীতদাস হইলে পরবর্তী বংশধররাও দাসরূপে গণ্য হইত। দাস-দাসীদিগকে ভোগ্য পণ্য হিসাবে ব্যাবহার করা হইত। তাহারা ছিল মনিবগণের মনোরঞ্জনের পাত্র(৩২)।

প্রাচীন গ্রিসে দাস প্রথা এক সার্বজনীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। দাসরা কোন প্রকার সামাজিক বা রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করত না। এথেন্সের জনগণ সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য তেমন কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করে নি বরং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য তারা দাস প্রথাকে অপরিহার্য মনে করত। মধ্যযুগে যেমনি সামন্ত প্রথাকে (Feudalism) অপরিহার্য বলে মনে করা হত এবং বর্তমানকালে যেমন মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্ককে স্বীকার করে নেয়া হয়, ঠিক তেমনি এথেন্সে দাসদের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয়া হত(৩৩)।

দাসত্বে নিক্ষিপ্ত মানুষ কখনোই দাস জীবনকে মেনে নিতে চায় নি। দাসত্ব মানুষকে কেবল অধস্তন জীবেই পরিণত করতো না, মানুষের সকল মর্যাদা ও অধিকার থেকেও বঞ্চিত করতো। দাসদের জীবন মরণ নির্ভর করতো একান্তভাবে দাস মালিকের মর্জির উপর। মালিকেরা চরম নিষ্ঠুর আচরণ করতো দাসদের সাথে(৩৪)।

দাসদেরকে যে নির্যাতন করা, অত্যাচার করা ঠিক না- এই বিধানে তৎকালীন মানুষ মুক্তচিন্তায় অবিশ্বাস করতো। তারা যে এই বিধানে অবিশ্বাস করতো সেটা তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার অংশ ছিল। নাস্তিকরা যেমন ইসলামের বিধানকে মুক্তচিন্তায় অবিশ্বাস করে ঠিক সেভাবেই তারাও মুক্তচিন্তায় এই বিধান অবিশ্বাস করতো যে দাসদেরকে নির্যাতন করা ঠিক না। কিছু কিছু নাস্তিক চাইলে এই বিধানে বিশ্বাস করতে পারে কিন্তু তাদেরকে এটাও বিশ্বাস করতে হবে যে অন্য নাস্তিকরা চাইলে এসব বিধানে অবিশ্বাসও করতে পারবে। কিন্তু বঙ্গীয় নাস্তিকরা এই সত্য কথাটি কেন জানি স্বীকার করতে চায় না।

ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে দাসপ্রথাঃ

সমকামীতা যে ভিত্তিতে প্রাকৃতিক একই ভিত্তিতে দাসপ্রথাও ন্যাচারাল। নাস্তিকদের বই থেকেই কিছু যুক্তি তলে ধরছি যেই যুক্তির দৃষ্টিতে দাসপ্রথা বৈধ প্রমাণ হয়ে যায়। বুঝে বুঝে পড়তে থাকুন।

নাস্তিক অভিজিৎ রায় “সমকামিতা” নামে একটি বই লিখেছেন। “বিবর্তনের দৃষ্টিতে সমকামিতা” নামে শিরোনামও দিয়েছেন। উনি সমকামিতাকে ন্যাচারাল প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে যে সমকামিতা উপস্থিতি এসব প্রমাণ সামনে নিয়ে এসেছেন।

“সমকামিতা” বইয়ের ৬৭ ও ৬৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

ভেড়ার জীবন যাত্রা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা সমকামি প্রবণতার প্রচুর উদাহরণ পেয়েছেন। তবে মেষপালকেরা ভেড়ার এই প্রবণতার কথা অনেক আগে থেকেই জানতেন। এই ধরণের ভেড়ার পাল সবসময়ই মেষপালকদের জন্য হতাশা বয়ে আনে। কারণ এরা বংশবিস্তারে কোনো সাহায্য করে না। তারা প্রথম থেকেই ভেড়ীদের প্রতি থাকে একেবারেই অনাগ্রহী। এদের আগ্রহের পুরোটা জুড়েই থাকে আরেকটি ভেড়া বা মেঘ। অরেগন হেলথ এন্ড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস রসেলির মতে শতকরা ৮ ভাগ ভেড়া এরকম সমকামী প্রবৃত্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে।…………...ভেড়া ছাড়াও সমকামী আচরণ লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী জীবের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়না, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, জিরাফ, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মোষ, জেব্রা উল্লেখযোগ্য।পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন, ধুসর পাতিহাস, কানাডা পাতিহাস,কালো রজহাঁস, বরফী পাতিহাঁস, মিউট রাজহাঁস, শকুন সহ অনেক প্রাণীর মধ্যে সমকামিতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সরীসৃপের মধ্যে সমকামিতার আলামত আছে কমন অ্যামিভা, অ্যানোল, গিরগিটি, স্কিনক, গেকো মাউরিং, কচ্ছপ, রাটেল স্নেক প্রভুতিতে। সমকামিতার অস্তিত্ব আছে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, সালাম্যান্ডারের মতো উভয়চর এবং বিভিন্ন মাছেও।

সমকামিতা বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা প্রাণীজগতে ১৫০০’রও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার সন্ধান পেয়েছেন। আর মেরুদণ্ডী প্রাণীর তিনশ’রও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব খুব ভালভাবেই নথিবদ্ধ।

সমকামিতা বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এত কিছু পরও সমকামিতার পুরো ব্যাপারটিকে “প্রাকৃতিক” বলে মেনে নিতে অনেকেরই প্রবল অনীহা আছে। প্রাণীজগতের অসংখ্য উদাহরণ হাজির করা হলেও মানুষকে এগুলো থেকে আলাদা রাখতেই পছন্দ করেন সবাই। কিন্তু যতই আলাদা করে রাখি না কেন, আমরা “সৃষ্টির সেরা জীব” বলে কথিত গর্বিত মানুষেরাও কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই প্রকৃতিরই (আরো ভালোভাবে বললে প্রাইমেটদের) অংশ। ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবিন ডানবার এ প্রসঙ্গে বলেন - সব কথার শেষ কথা হলো, অন্যান্য প্রাইমেটদের মধ্যে বিশেষতঃ এ পদের মধ্যে কোনো কিছু ঘটলে এর একটা বিবর্তনীয় ধারাবাহিকতা হয়ত মানুষের মধ্যেও থাকবে বলে ভেবে নিলে হয়ত সেটা অযৌক্তিক হবে না।-পাঠক আপনারা সমকামিতা বইটির চতুর্থ অধ্যায়,”বিবর্তনের দৃষ্টিতে সমকামিতা” ৫৭ পৃষ্ঠা থেকে ৭৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।

প্রাণীজগতে সমকামীতার উপস্থিতির অস্তিত্ব আছে বিধায় সমকামীতা যদি ন্যাচারাল হতে পারে একই যুক্তিতে প্রাণীজগতে দুর্বলদের প্রতি শক্তিমানদের শক্তি প্রয়োগের অস্তিত্বও পাওয়া যায় দেখে দাসপ্রথাও একই ভিত্তিতে ন্যাচারাল হতে পারবে না কেন? এখানেও শক্তিমানরা দুর্বলদের প্রতি নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। তাই যৌক্তিকভাবে বলাই যায় যে, বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে দাসপ্রথা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।

ইউভাল নোয়া হারারির “সেপিয়েন্স-মানুষের ইতিহাস” ভাষান্তর করেছেন, সুফিয়ান লতিফ, শুভ্র সরকার, রাগিব আহসান, সম্পাদনা মোস্তাক আহমেদ। ৩৫৩,৩৫৪ ও ৩৫৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

নাৎসিরা যে উদার মানবতাবাদ, মানবাধিকার ও সাম্যবাদের বিরোধী ছিল, তার কারণ এই নয় যে তারা মানবতাকে ঘৃণা করত। বরং তাদের চোখে মানবতা ছিল এক মহাঘ্র বস্তু, যা মানবজাতির বিপুল সম্ভাবনার আধার। কিন্তু ডারউইনের বিবর্তনবাদের যুক্তি দেখিয়ে তারা দাবি করত, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অযোগ্যদের বাদ পড়া উচিত, শুধু যোগ্যরাই টিকে থাকবে আর বংশবিস্তার করবে। উদারনীতি ও সাম্যবাদ অনুসরণ করলে এই অযোগ্য মানুষেরা শুধু টিকেই থাকবে না, যারা যোগ্য তাদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। অযোগ্য মানুষেরাও যদি সমানভাবে বংশবিস্তার কওে, তাহলে অযোগ্যদের ভিড়ে যোগ্যতা আসতে আসতে হারিয়ে যাবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষ আরো অনুন্নত হতে হতে হয়তো একদিন বিলুপ্তই হয়ে যাবে।

১৯৪২ সালের জার্মানির জীববিজ্ঞান বইয়ের “প্রকৃতি ও মানুষ যে নিয়মে চলে” অধ্যায়ে বলা হতো,

টিকে থাকার জন্য নিরন্তর অনুশোচনাহীন সংগ্রামই প্রকৃতির সর্বোচ্চ নিয়ম। মাটির দখলের জন্য গাছের সংগ্রাম, কিংবা সঙ্গী পাওয়ার জন্য পোকামাকড়ের সংগ্রামকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে এসব বইয়ে বলা হতোঃ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষমাহীন কঠিন লড়াইই জীবন ধারণের একমাত্র পথ। এ লড়াই অযোগ্যদের নির্মূল করা, আর টিকিয়ে রাখার জন্য বেছে নেয় যোগ্যদের। এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় নেই, প্রতিটি জীব টিকে থাকার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণ করে। এ লড়াইয়ে কোনো ক্ষমার অবকাশ নেই। যে-ই এ নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সে-ই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জীববিজ্ঞানের এই শিক্ষা কেবল উদ্ভিদ ও প্রাণী নয়, বরং আমাদের জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই লড়াইই আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা জাগায়। জীবন মানেই যুদ্ধ- এ যুদ্ধে যে নামবে না, তার জন্য থাকবে অপরিসীম দুর্দশা।

পাঠক এইবার আপনারা নিজেরাই বুঝে নিন যে ক্ষমতাশীল মানবপ্রাণীরা যে দুর্বল দাসদেরকে অত্যাচার, নির্যাতন, কোঠর পরিশ্রম এমনকি যা ইচ্ছা তাই করাতো এসব ডারউইনের বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ সমর্থন যোগ্য। দাসপ্রথা প্রাচীন মানুষের কাছে ভালো লাগতো এই ভালো লাগাটা অথবা যারা দাসপ্রথাকে খারাপ মনে করে উভয়টাই আসলে জৈবরাসায়নিক পদার্থের কারণে যা লাখ লাখ বছর ধরে তৈরি হয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে। নিচে দেয়া বর্ণনা গুলো পড়ুন।

ইউভাল নোয়া হারারির “সেপিয়েন্স-মানুষের ইতিহাস” ভাষান্তর করেছেন, সুফিয়ান লতিফ, শুভ্র সরকার, রাগিব আহসান, সম্পাদনা মোস্তাক আহমেদ। ৫৫৩পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

জীববিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের মানসিকতা ও আবেগঘটিত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে কিছু জৈবরাসায়নিক পদার্থ। এই ব্যবস্থাটা লাখ লাখ বছর ধরে তৈরি হয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে। অন্যান্য সব মানসিক অবস্থার মতোই আমাদের ভালো লাগার অনুভূতিও বাহ্যিক কোনো কিছু প্রভাবে হয় না। ভালো বেতন, সুন্দর সামাজিক সম্পর্ক বা রাজনৈতিক অধিকার - এর কোনটাই আমাদের ভালো লাগার জন্য দায়ী নয়, দায়ী হলো একটা জটিল স্নায়ুতন্ত্র যা গড়ে ওঠে কোটি কোটি নিউরন, সেগুলো যেখানে জোড়া লাগে সেই সব সিনাপস আর সেরোটনিন, ডোপামিন ও আক্সিটোসিনের মতো কিছু জৈবরাসায়নিক পদার্থের সমন্বয়ে।

ইতিহাসের অধ্যাপক Jacques Barzun তার বই “DARWIN,MARX,WAGNER” বর্তমান বিশ্বের নৈতিকতার অধঃপতনের কারণ অনুসন্ধান ও মূল্যায়নের প্রেক্ষাপটে বৈজ্ঞানিক, সমাজতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করেছেন। এ বইতে সমাজে ডারউইনবাদের প্রভাব বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বর্ণনা করেন,

১৮৪০ সাল থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে ইউরোপের প্রত্যেকটি দেশের যুদ্ধবাজ রাজনৈতিক দল চাচ্ছিল অস্ত্র, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদী দল চাচ্ছিল নিষ্ঠুর প্রতিযোগীতা, রাজতন্ত্রবাদী দলের দাবী ছিল অনগ্রসর জনগোষ্ঠির উপর প্রাধান্য বিস্তার, সমাজতান্ত্রিক দলের ছিল দাবী-ক্ষমতা দখল, বর্ণবাদী দলের দাবী বিরোধীদের আভ্যন্তরীণ বহিস্কার/ আবসায়ন। এ দকল মতাদর্শীই কোন না কোনভাবে তাদের চিন্তাধারায় স্বপক্ষে ডারউইনবাদকে ব্যাবহার করেন

গবেষক P.J.এর Darlington তার Evolution for Naturalists নামক বইতে উল্লেখ করেছেন,

বর্বরতা বিবর্তনবাদের একটি অপরিহার্য স্বাভাবিক প্রবণতা ও ফসল। তাই এ ধরণের আচরণ খুবই যুক্তি সংগত। সর্বপ্রথম যা প্রণিধানযোগ্য তা হলো স্বার্থপরতা ও সংঘাত মানব চরিত্রে জন্মগতভাবে তার পশুপূর্বপুরুষ থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে লাভ করেছে। তাই দ্বন্দ্ব সংঘাত ও সংগ্রাম মানুষের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক যা বিবর্তনেরই সৃষ্টি।

ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে শুধুই কি দাসপ্রথা বৈধ? উত্তর হচ্ছে না। বরং চুরি করা, ডাকাতি করা, খুন করা,ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের মিথ্যাচার করা, নারী-শিশু পাচার করা,ধর্ষণ করা, নিজের পিতা-মাতাকে মুক্ত ভাষায় গালাগালি করা ইত্যাদি একই যুক্তিতে সম্পূর্ণ বৈধ। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য নাস্তিকান্ধরা এসব অস্বীকার করবে তাতে আমার সংশয় নেই। কিন্তু চুরান্ত নৈতিকতা দিয়ে, বিবর্তনবাদের সুত্রে,নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এসব কাজকে অনৈতিক প্রমাণ করার কোন ভিত্তি নেই অথবা নেই কোনো যুক্তি। মুক্তচিন্তাতেও এসব বৈধ।

ফেরাউনরা দাসপ্রথার চর্চা করতোঃ

সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” ৪৭ ও ৪৮  পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

প্রাচীন মিশরের শাসক ফেরাউনরা তাদের সৃতিস্তম্ভ হিসেবে অনেক পিরামিড তৈরি করেছিল। ফেরাউনদের মৃতদেহ মমি করে এইসব পিরামিডের অভ্যন্তরে রাখা হতো। এই সব পিরামিড তৈরি করতে দাসদের নিয়োজিত করা হতো। এই কাজটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। এক একটি পিরামিড তৈরিতে হাজার হাজার দাস শ্রমিকের প্রয়োজন হতো।

তাদের একদল হয়তো পাহাড় থেকে পাথরের চ্যাঁই ভেঙ্গেছে, আরেকদল হয়তো তা টেনে টেনে নিয়ে গেছে নির্মাণকেন্দ্রে। আরেকদল হয়তো সেই সব প্রস্তরখণ্ডও কেটে-ঘষে-মেজে নির্দিষ্ট আকার দিয়েছে। নির্দিষ্ট স্থানে সেগুলো পরপর সাজিয়ে রেখেছে। দাস শ্রমিকদের তদারকির জন্য কঠিন হৃদয় পরিদর্শকরা সব সময় পিছু লেগে থাকতো।তারা বেত ও লাঠি হাতে মারধর অত্যাচার সইতে না পেরে অনেক দাস মারা যেত।

প্রাচীন মিশরে অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে দাস-দাসী উপঢৌকন দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। ফেরাউন, আঞ্চলিক প্রশাসক, আমলা ও পুরোহিতগণের মধ্যে দাস দাসী উপঢৌকন দেয়ার প্রথা চালু ছিল। একে অপরের প্রতি আনুগত্য ও সৌজন্য প্রদর্শনের জন্য পরস্পরের মধ্যে দাস দাসীদের প্রদান করা হতো। উপঢৌকন হিসেবে দাস প্রাপ্তিকে তারা সম্মানের বিষয় মনে করতো। অভিজাতরা তাদের সন্তানদের বিয়ে শাদীতেও দাস-দাসীদের উপহার হিসেবে প্রদান করতেন। তাদের সকলেরই অনেক সংখ্যক দাস-দাসী ছিল।

ফেরাউনদের শাসনামলের এক পর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী একটি জনপদ পুরো জনগোষ্ঠীকে দাস বানিয়ে মিশরে নিয়ে এসেছিল। ইবরানি নামে পরিচিত এই জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল মিশরে দাস জীবন যাপন করেছে। তারা কষ্টকর নির্মাণ কাজকের শ্রমিক হিসেবে মানবেতর জীবন যাপন করেছে

দাস মানুষদের কোনরূপ মর্যাদা ছিল না। তাদের স্ত্রী সন্তানেরাও ছিল মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাদের সকলের জীবন ছিল এক কথায় দুর্বিষহ। এই অবস্থায় কখনো কখনো তারা বিদ্রোহ করেছে। বিদ্রোহ ছিল মালিকের কাছে ভীষণ অপ্রিয়। বিদ্রোহী দাসদের তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু মনে করতো। তাই  তাদের নীতি ছিল বিদ্রোহীদের দমন করায়। এ ক্ষেত্রে ফেরাউনদের কোঠর নির্দেশ ছিল- বিদ্রোহীদের একেবারে ক্ষতম করো, হত্যা করো ওদের, শেষ করো ওদের ঘনিষ্ঠ লোকজনদেরকেও, অন্যদের সৃতি থেকে পর্যন্ত ওদের মুছে দেও। ফেরাউনদের শাসনকালে তাদের আমলাদের হাতে বিদ্রোহী বহু দাসকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

মুক্তচিন্তক প্রাণীদের যুক্তির সুত্রে দাসপ্রথার সমর্থনঃ

বিখ্যাত নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ বিশ্বাস করতেন যে সব কিছুই নিরর্থক, আমাদের পুরো দুনিয়াটাই পরিপূর্ণ অর্থহীন। নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস" ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক , আইনস্টাইন নিরর্থক, ওই গোলাপও নিরর্থক, ভোরের শিশিরও নিরর্থক, তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক, দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।

নাস্তিক হুমায়ুন লিখিত "আমার অবিশ্বাস" ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এই যে আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে সুখ পাচ্ছি । আমি মরে যাবো, এই হাস্যকর নিরর্থকতাকে কিভাবে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি ? আমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার কখন পূর্বনির্ধারিত উপায় নেই । কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোন মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না । তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ , নিজেদের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পথঃ আমি তাদের পথে চলতে পারি না । আমি খুজতে চাই আমার পথ । নিজের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে আমার নিজের।

উনার কথার যুক্তির ভিত্তিতে একজন সবল মানুষ যদি অন্য দুর্বল মানুষকে দাস বানায় তাহলে এখানে কিছুই আসে যায় না কারণ আমাদের দুনিয়া পরিপূর্ণ নিরর্থকতায় আবদ্ধ। যেহেতু মৃত্যুর পরেই মানুষের শেষ সমাপ্তি তার কথা মতে সেহেতু একজন মানুষকে যদি দাস বানিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায় এবং নিজে আনন্দ, মজা, স্বাদ সব স্বার্থ হাসিল করা যায় তাহলে এটাকে ভালো অথবা খারাপ বলার কোন যৌক্তিকতাই থাকছে না।

কোন নাস্তিক অথবা যে কোন মানুষ যদি মনে করে আমার দেহ, আমার সিদ্ধান্ত, আমার বুদ্ধি, আমার যুক্তি , আমার ইচ্ছা,আমার মুক্তচিন্তা, আমার নৈতিকতা তাহলে এখানে অন্য নাস্তিকদের কিছুই বলার থাকছে না। কারণ সবার কাছে নাস্তিক্যদৃষ্টিতে চিন্তা এক নয়, যুক্তি এক নয়, বুদ্ধি এক নয়, সিদ্ধান্ত এক নয়, দেহ এক নয়। এই কারণে কোন নাস্তিকের কাছে সারা সন্ধ্যা নারীকে চুইংগামের মতো চুষতে চাবাতে ইচ্ছা করে আবার কারো কাছে ইচ্ছা করে না, কারো কাছে নাস্তিক মায়ের সাথে সম্মতিতে সন্তান যৌনকর্ম করা ব্যক্তিগত ইচ্ছা আবার কারো কাছে না। এটাই তো মুক্তচিন্তার কথিত মানুষদের আদর্শ! নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের আরেকটি ফতোয়া পড়লে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেতে পারবেন।

হুমায়ুন আজাদ লিখিত 'আমার অবিশ্বাস' ২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কোনো পূর্বনির্ধারিত পথ নেই মানুষের জন্যে। কোনো গ্রন্থ পথ দেখাতে পারে না,কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক তার জন্যে পথ প্রস্তুত করতে পারেন না, ওই মহাপুরুষেরা তৈরি করেছেন নিজেদের পথ, অন্যদের নয়। প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে হয় নিজেদের পথ, তৈরি করতে হয় নিজেদের রাস্তা, অনেকের পথ আমাকে আলোড়িত করেছে, অনেক গ্রন্থ আমাকে আলো দিয়েছে, কিন্তু আমি ওইসব পথে চলি নি, ওই আলোতে পথ দেখি নি।

ইউভাল নোয়া হারারির “সেপিয়েন্স-মানুষের ইতিহাস” ভাষান্তর করেছেন, সুফিয়ান লতিফ, শুভ্র সরকার, রাগিব আহসান, সম্পাদনা মোস্তাক আহমেদ। ৩৫৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

বিজ্ঞানীরা মানুষের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশ্লেষণ করেও আত্মার অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। বরং দেখা গেছে যে মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে ইচ্ছা নয়, হরমোন,জিন ও নিউরনের সংযোগ-ঠিক শিপ্পাঞ্জি, নেকড়ে কিংবা পিপড়ার মতোই। আবার এই বইয়ের ৫৬২ ও ৫৬৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, ফরাসি দার্শনিক জা জ্যাক রুশো তো সোজাসুজিই বলেছেন যেটা আমার কাছে ভালো, সেটাই ভালো,আর যা আমার কাছে খারাপ,তা-ই খারাপ।

নাস্তিক্যদৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষেরই জীবনের উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা কারণ নাস্তিক্যবাদ কখনো কোন মানুষকে নির্দিষ্ট নৈতিকতা অথবা জীবনের উদ্দেশ্য নির্ণয় করে দেয়া না, দিতেও অক্ষম। চুরান্ত সঠিক উদ্দেশ্যের সত্যতার প্রমাণ গুলো কি কি বা যুক্তি গুলো কি? চুরান্ত নৈতিকতার যুক্তি গুলো কি? এসব যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে নাস্তিকরা হিমশিম খায়, খাচ্ছেও। বড় বড় সেলেব্রেটি নাস্তিকরা এসব প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে উল্টো নাস্তিকতা যে ভিত্তিহীন সেটার প্রমাণ ফাঁস হয়ে যেতে দেখা যায়। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে চুরান্ত সত্য বলে আসলেই দুনিয়াতে কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা? এই প্রশ্নটি নাস্তিক্যবাদ নিয়ে চুরান্তভাবে সংশয়ে ফেলে দেবার যথেষ্ট অথচ নাস্তিকরা এসব নিয়ে চিন্তা করতে চায় না আর করলেও নিজেদের প্রবৃত্তির অনুকরণে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করে। এরকম ভিত্তিহীন অসাড়, দুর্বল নৈতিকতা নিয়ে “ইসলামের ভুল ধরতে পেরেছি” এরকম হাস্যকর দাবি করে কিভাবে ওরা? একটি বান্দর যদি আপনাকে বলে ডারউইন নানা যা বলেছে সব সত্য আপনি বিশ্বাস করবেন? করবেন না তাই না? হুম। কারণ আপনি জানেন বান্দর কথাই বলতে পারে না সেখানে সত্যর অস্তিত্ব কিভাবে থাকতে পারে? ঠিক একইভাবে নাস্তিকদের দৃষ্টিতে সত্যের অস্তিত্বই নেই, চুরান্ত নৈতিকতার নেই ভিত্তি তাহলে এরকম দুর্বলমনা চিন্তা-চেতনাকে যতোই মুক্তচিন্তার আন্দোলন নামে মার্কেটিং করা হউক না কেন দিন শেষে সেটা অক্ষমই রয়ে থাকবে।

সত্য কাকে বলা হবে এবং কাকে বলা হবে না? সত্যকে কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে? কোন মানুষ সত্যর সংজ্ঞা ঠিক করে দেবে? যেই মানুষ এই সংজ্ঞা দেবে সে কিসের ভিত্তিতে দেবে? তার দেয়া যুক্তিই যে চুরান্ত হবে সেটার প্রমাণ কেরকম হতে পারবে আর কেরকম হতে পারবে না? বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে তাহলে প্রাণীজগতে চুরান্ত সত্য বলে কিছু আছে কি? মৃত্যুই যদি আমাদের শেষ ঠিকানা হয় তাহলে সত্য জানেলেই বা কি যায় আসে অথবা না জানলেই বা কি ক্ষতি হয়ে যাবে?

মুক্তচিন্তার ব্যক্তি স্বাধীনতার যুক্তিতে দাস প্রথাকে কিভাবে খারাপ প্রমাণ করবেন আপনি? আপনার যুক্তিতে যা ঠিক দাস প্রথা সমর্থনকারীদের কাছে তা বেঠিক। আবার তাদের যুক্তিতে যা ঠিক আপনার যুক্তিতে সেটা ঠিক নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে একেক মানুষের কাছে একে করকম চিন্তা,চেতনা,যুক্তি,বুদ্ধি,নৈতিকতা,অনৈতিকতা ইত্যাদির-মাপকাঠি। তাই আপনি একজন নাস্তিক হয়ে থাকলে ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে দাসপ্রথা ভালো বা খারাপ যাই লাগুক না কেন সেটার কোন ভিত্তিই রাখে না বরং অন্য নাস্তিকের কাছে একই ব্যাপারটি উল্টো সমর্থনযোগ্য করে তোলে।

আধুনিক যুগেও দাসপ্রথার অস্তিত্ব আছেঃ

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষে মানুষে চরম বৈষম্য বিরাজ করায় গরীব মানুষের উপর বিত্তশালীদের প্রভুত্ব সর্বত্র রয়েছে। এক মানুষের উপর অপর মানুষের কর্তৃত্ব বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই কর্তৃত্বের বলে এখনো কিছু মানুষ অপর মানুষকে দাস হিসেবেই ব্যাবহার করে। তাদের ব্যাবহার করে নিজেদের বিত্তবাসনা চরিতার্থ করে। এই প্রেক্ষিতেই আর্লেন্দো প্যাটারসেন তার গ্রন্থ Slavery and Social Death এ বর্ণনা করেছেন যে - দাসত্ব বা দাস প্রথার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।মানবসভ্যতার সেই শুরু থেকে দাসত্ব ও দাস প্রথা বিদ্যমান ছিল। সেই আদিম মানুষের সমাজে যেমন এর অস্তিত্ব ছিল, তেমনি অতি আধুনিক সভ্য সমাজেও তা বহাল ছিল। 

এমনকি বিংশ শতাব্দীতে কোন না কোন ধরণের দাসত্ব অব্যাহত রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোন অঞ্চল নেই যেখানে কোন না কোন সময় দাস প্রথার লালন পালন হয়নি। সম্ভবত মানুষের এমন কোন দল নেই যাদের পূর্বপুরুষেরা কেউ কোন এক সময়ে দাস কিংবা দাস মালিক ছিলেন না। ১৯৯৯ সালে আমেরিকায় কেভিন বেলস নামক এক গবেষক দাস প্রথার উপর তার গবেষণালব্ধ তথ্য পরিবেশন করে উল্লেখ করেন যে, সমসাময়িক সময়েও দাস প্রথা বিভিন্নরূপে ও ধরনে সমাজে বিরাজ করছে। তার গবেষণাকর্মের প্রথম অধ্যায়ে তিনি উল্লেখ করেন (ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত তার Disposable People: New Slavery গ্রন্থে) 

দাস প্রথা কেবল অতীতের ভয়াবহ চিত্র নয়। এই প্রথা সারা পৃথিবীতে এখনো অব্যাহত রয়েছে। এমনকি ফ্রান্স ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও তা আছে। পৃথিবীতে এখন ২৭ মিলিয়ন মানুষ দাস মানুষের জীবন যাপন করছে(৩৫)।

আমরা হয়তো অনেকেই জানি না যে, সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ দাসপ্রথার শিকার হয়ে আছে। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান Walk Free Foundation এর The Global Slavery Index ২০১৬ এর রিপোর্ট অনুযায়ী (যা ১৬৭টি দেশের ওপর চালানো হয়েছে), তাতে দেখা যায় ৪৫.৮ মিলিয়ন লোক বিভিন্নভাবে দাসত্বের শিকার হয়ে আছে (৩৬)। মানবপাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে পুরুষ, নারী, শিশুদেরকে নিয়ে আনা হয়। যার জন্য মানবপাচার বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সুসংগঠিত ও লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। ILO (International Labor Organization) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মানবপাচার থেকে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থ উপার্জিত হয়(৩৭)। 

পাচারের পরবর্তী সময়ে তাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করা হয়। যেমন, জোরপূর্বক কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়, কখনো নারীদেরকে পতিতালয়ে কাজ করার জন্য বলপ্রয়োগ করা হয় বা যৌনদাসী/রক্ষিতারূপে রেখে দেওয়া হয়, কখনো বা অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হয়। ২০১২ সালের International Labor Organization এর রিপোর্ট মতে, প্রায় ২০.৯ মিলিয়ন লোককে জোরপূর্বক কাজে (ফোর্সড লেবার) যুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪.৫ মিলিয়নকে (২২%) যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানো হয়।১৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৯৯ বিলিয়ন ডলারই সেক্সুয়াল এক্সপ্লোয়েটেশন খাত থেকে আসে(৩৮)। অপরদিকে UNODC (United Nations Office on Drugs and Crime) এর ২০১১ এর রিপোর্ট মতে, পাচারকৃতদের মধ্যে প্রায় ৪৯%-ই হলো নারী (৩৯)। মোট পাচারককৃত নারীদের ৫৩%-ই যৌন হয়রানীর জন্য হয়ে থাকে (৪০)। ২০১২ এর রিপোর্ট এর মতে, ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে(৪১)। সমস্ত আধুনিক দাসত্বের শিকারের 71% নারী ও মেয়েরা। শিশুরা 25% এবং বিশ্বব্যাপী সমস্ত ক্রীতদাসের মধ্যে 10 মিলিয়নের জন্য দায়ী (৪২)। 2018 সালের হিসাবে, সবচেয়ে বেশি দাস থাকা দেশগুলি হল: ভারত (8 মিলিয়ন), চীন (3.86 মিলিয়ন), পাকিস্তান (3.19 মিলিয়ন), উত্তর কোরিয়া (2.64 মিলিয়ন), নাইজেরিয়া (1.39 মিলিয়ন), ইন্দোনেশিয়া (1.22 মিলিয়ন) ), গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (1 মিলিয়ন), রাশিয়া (794,000) এবং ফিলিপাইন (784,000)।(৪৩)

নাস্তিকরা ধর্ষণ নিয়ে যেভাবে মুক্তচিন্তা করেঃ

নাস্তিকরা সব সময় চায় মানুষ তাদের মতো করে মুক্তচিন্তা করতে শিখুক। এই কারণেই দেখবেন বিভিন্ন ভাবে নাস্তিকরা তাদের বই পত্র মানুষকে পড়তে বলে থাকে। কারণ সেই সকল নাস্তিকিও বই পড়লে মানুষ বিশুদ্ধ উপায়ে মুক্তচিন্তা করা জানতে পারবে। শিখতে পারবে। বুঝতে পারবে। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে নাস্তিকদের বই পড়লে এমন এমন বিষয় সম্পর্কে জানা যায় যা কোনো যৌক্তিক সভ্য মানুষরা বিশ্বাস করতে চাইবে না। নাস্তিকদের বই থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়, যেকোনো নাস্তিক চাইলেই ধর্ষণ করতে পারবে এমনকি ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতে পারবে। আমি মুক্তমনাদের বই থেকেই প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি আপনি মিলিয়ে নিয়েন।

অন্যতম প্রসিদ্ধ একজন মুক্তমনা নাস্তিক নাম প্রবীর ঘোষ, উনার লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

নারীবাদী আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিমোন দ্য বোভোয়ার।তার সঙ্গে জঁ-পল সার্ত্রের বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ছিল। ‘দ্যা ডেঞ্জারাস লিয়াজো’ বইটি থেকে আমরা জানতে পারি, জঁ-পল সার্ত্র ও সিমোন দ্য বোভোয়ার তাদের ছাত্রী ও ছাত্রদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তেন বা গড়তে বাধ্য করতেন। এমনকী সার্ত্রে তার ছাত্রদের পাঠাতেন বোভোয়ারের সঙ্গে মিলনের জন্য। বিনিময়ে বোভোয়ারও তার ছাত্রীদের পাঠাতেন সার্ত্রের কাছে। সেই সময়কার বুদ্ধিজীবীরা ওদের বিরুদ্ধে নষ্ট চরিত্রের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু নারী স্বাধীনতা,ক্ষমতায়ন ও চেতনামুক্তি অভিযাত্রায় সিমোন দ্য বোভোয়ার আজ প্রাতঃস্মরণীয়।

শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করাকে কি ধর্ষণ করা বলে না? নারীবাদী আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যারা উনারা মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করতেন। নাস্তিকদেরকে এসব নিয়ে তেমন একটা কথা বলতে দেখবেন না কারণ নাস্তিকরা জানে এসব যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মুক্তমনা প্রবীর ঘোষ ধর্ষক নাস্তিকদের সমালোচনা করেছেন কিন্তু সে সমালোচনা করলেই সব নাস্তিকরা তার দেয়া কথাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য নয়। অথবা প্রবীর ঘোষ এমন কেউ নয় যে সে যদি কিছুকে খারাপ বলে তাহলে সেটাই খারাপ মনে করতে হবে নাস্তিকদেরকে।

নাস্তিক প্রবীর ঘোষ, উনার লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠাতেই বলেছেন,

বোভোয়ার ও সার্ত্রের জীবনে যত উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল, তা সবই তাদের ব্যাক্তিজীবনে আবদ্ধ। তাদের সৃষ্টিতে তা নগ্ন রুপ পায়নি। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি অবশ্য তাদের বা অন্য কারও ব্যাক্তিজীবনের যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা বা বহুগামিতালে সামান্যতম সমর্থন করছি না। বরং নিন্দা করছি, এই নিন্দনীয় কাজের চেয়ে তসলিমার কাজ বহুগুণে বেশি নিন্দনীয়।

এখানে আমি নাস্তিক প্রবীর ঘোষ সাহেবের সমালোচনাকে সাধুবাদ জানাই কিন্তু উনার এই নিন্দা প্রকাশ করার কারণে কি উপরে বর্ণিত ছাত্রছাত্রীদেরকে যে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা হতো সেটাকে খারাপ প্রমাণ করা যাবে? কারণ যারা ধর্ষণ গুলো করেছে তাদের মুক্তচিন্তায় সেই যৌনকর্মকে ভালো মনে হয়েছে দেখে তারা করেছে। সেই মুক্তমনারা ব্যাক্তিস্বাধীনতা মেনেই করেছেন আর প্রবীর ঘোষ প্রথমে সেটা স্বীকারও করেছেন যে সেসব কাজ তাদের ব্যাক্তিজীবনে আবদ্ধ। নাস্তিকদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে বুঝতে হবে। আসলে নাস্তিকরা নিজেদের বই পত্র ঠিক মতো বুঝে বুঝে পড়ে দেখে না। যদি পড়তো তাহলে আর নাস্তিক্যবাদে অথবা নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাস রাখতে পারতো না।

এখানেই শেষ নয়। আরও আছে। আরও আছে। নাস্তিকদের বই থেকেই প্রমাণ মেলে যে ভাষাবিজ্ঞানী, মুক্তচিন্তক, নাস্তিক, প্রথাবিরোধী হুমায়ুন আজাদ এক তরুণীকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। আসুন মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদের বই থেকেই প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি। অস্বীকার করবার কোনো সুযোগ নেই কারণ প্রমাণ একদম স্পষ্ট।

বিজ্ঞানমনস্ক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

যখন শিশু ছিলাম,কিশোর হয়ে উঠেছি যখন, তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি, আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছা করে, ছেলেবেলা ভোরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরোগুলোকে চুষে দেখতে, ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হতে জ্বলজ্বল করতো। সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছে হতো,কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মতো এক তরুণীকে

হুমায়ুন আজাদের মুক্তচিন্তায় এসবই ভ্রমণ করতে থাকতো। নারীকে যে সম্মান দিতে হয়, নারীরা যে চুইংগাম না, নারীদেরকে যে চাবানো যায় না সেটা হুমায়ুন আজাদের বিবর্তিত মগজে ঢুকতে পারেনি। একবার কল্পনা করুন তো যদি এই নাস্তিকটি সুযোগ পেতো আর সারাসন্ধা সেই অসহায় তরুণীকে চুষতে থাকতো আর চাবাতে থাকতো তাহলে কি অবস্থা হতো সেই তরুণীর? হুমায়ুন আজাদের মুক্তবুদ্ধিতে আরও কত প্রকারের মুক্তচিন্তা ভ্রমণ করতে থাকতো সেটা তার বই থেকেই দেখে নেই।

আমার অবিশ্বাস, ১৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

আরও কিছুকাল আমি নক্ষত্র দেখতে চাই, নারী দেখতে চাই, শিশির ছুঁতে চাই, ঘাসের গন্ধ পেতে চাই, পানীয়র স্বাদ পেতে চাই, বর্ণমালা আর ধনীপুঞ্জের সাথে জড়িয়ে থাকতে চাই, মগজে আলোড়ন বোধ করতে চাই। আরও কিছু দিন আমি হেসে যেতে চাই।

আমার অবিশ্বাস, ১৩ পৃষ্ঠায়, প্রথম পরিচ্ছেদ, আমার ইন্দ্রিয়গুলো, বর্ণিত হয়েছেঃ

আমার ভাল লাগতো ভোরের আকাশ, শ্রাবনের মেঘ, হেমন্ত, নদী বা নারী, কখনোই জানবো না আমি কবিতা পড়েছিলাম, এমনকি লিখেছিলামও, কেঁপে উঠেছিলাম কামনায়, অজস্র বার তৃপ্ত করেছিলাম আমার কামনা এবং বহুবার পরিতৃপ্ত করতে পারিনি

আমার অবিশ্বাস, ১৬ পৃষ্ঠায় সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছেঃ

ছোঁয়া সবচেয়ে অন্তরঙ্গ অনুভূতি, আমাদের শরীর ছোঁয়া চায়, আমরা ছুঁতে চাই, আমিও ছুঁতে চেয়েছি, ছোঁয়া চেয়েছি এবং ছোঁয়া পেয়ে ও ছুঁয়ে সুখী হয়েছি।

নাস্তিক মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ নারীদেরকে যে কিভাবে দেখতে চাইতো, কিভাবে ধরতে চাইতো কিভাবে নিজেকে অজস্র বার তৃপ্তি করতে চাইতো সেটা আর এখানে বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। এক নারী নাস্তিক্যবাদ, মুক্তচিন্তা ত্যাগ করেছিল দেখে হুমায়ুন আজাদ রেখে গিয়েছিলেন এবং প্রচুর তিব্র সমালোচনা করেছিলেন। পশুশ্রম বলে গালিও দিয়েছিল নারীটিকে। হুমায়ুন আজাদ এটা ভুলেই গিয়েছিলেন যে সে নিজেই ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা মারায় তার বইতে।

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এটাই দেখছি বাঙলাদেশঃ  ষাটের দশকে এক উগ্র আধুনিকাকে সেদিন দেখলাম, এখন সে বিসর্জিত দুর্গার মতো ভেঙ্গেচুরে গেছে, মুখে এতোটুকুও আভা নেই, একদা কলাভবনের বারান্দায় যার শরীরের বিভিন্ন বাঁকের তরঙ্গভঙ্গ দেখা আমাদের জন্য সুখকর ব্যাপার ছিলো, যার সম্মুখ ও পশ্চাৎ ছিলো সমান জলভ্রমিপূর্ণ, এখন সে বোরকা হিজাব তাঁবু বিসমিল্লায় সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, কয়েকবার পবিত্র মক্কা মদিনা মনোয়ারা ঘুরে এসেছে, ধনসম্পদে নিজেকে ভরে ফেলেছে ও ভরে চলছে- এটা করতে ভুল করে নি ও পবিত্র উপায়ে করে নি, কিন্তু এখন অন্ধকারে ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লা ইনশাল্লা ছাড়া কথা বলে না, ইসলামের জয়গানে সারাক্ষণ মুখর, সে জানে না তার এসবই পশুশ্রম, ধর্মগ্রন্থ ও সহিহ হাদিসগুলো সে পড়ে নি- হুররা তাকে তার কাম্য প্রাসাদে ঢুকতে দেবে না, তার সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

কলাভবন, শরিফ মিয়ার ক্যান্টিন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস, নিউমার্কেটের নতুন ঝলমলে বইয়ের দোকান, এবং আরো নানা জায়গায় ছিলো আধুনিকতা সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক ও অনুপ্রাণিত হওয়ার স্থান; তখন অনাধুনিকতা, মধ্যযুগীয়তা, বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ জোব্বা বোরকা ছিলো হাস্যকর, হিজাবের কথা কেউ জানতোই না

কলাভবনের বারান্দায় যেই নারীর দেহ দেখে, দেহের অঙ্গভঙ্গি দেখে মুক্তচিন্তায় সুখ গ্রহণ করতো নাস্তিকটি সেই নারীই যখন নাস্তিক্যবাদ ও মুক্তচিন্তার ভাইরাস ত্যাগ করলো তখনই শুরু করে দিল তাকে পশ্চাৎপদ, মধ্যযুগীও, অনাধুনিক বলে সমালোচনা করা। “আমার দেহ আমার সিদ্ধান্ত” কথাটি হয়তো নাস্তিকের মগজ তখন ভুলে গিয়েছিল? তাই না? পাঠক আপনারা হয়তো এতক্ষণে ঠিকই বুঝে নিয়েছেন নাস্তিকগোষ্ঠীরা কেন চায় নারী ছোট ছোট খোলামেলা পোশাকে থাকুক? নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের যদি এই মুক্তচিন্তা হয় তাহলে যারা তার বই পড়ে তার কথা বিশ্বাস করে নাস্তিক্যধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের মুক্তচিন্তার কিরকম চিত্র হতে পারে? শিপ্পপাঞ্জিরা লেংটা থাকে তাই নাস্তিকরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের আদর্শ এখনো ধরে রাখতে চাইছে নাকি?

ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ নগ্ন শিশুদের দেখেও মুক্তচিন্তায় সুখ নিতেন। জানতেন এটা?

আমার অবিশ্বাস, ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

উলঙ্গ শিশুরা, ওদের পরার কিছুই নেই, মাঘের শীতে পাতার আগুনের উম নিচ্ছে দেখে সুখ নেই, সুখ পেয়ে নিজেকে অপরাধী বোধ করি।আমার ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে চোখ দুটিই শ্রেষ্ঠ। এ দুটি দিয়ে আমি দূর থেকে ভেতরে টেনে আনি দৃশ্যের পর দৃশ্য,সৌন্দর্যের পর সৌন্দর্য। অন্য কোনো ইন্দ্রিয় দিয়ে এভাবে টানতে পারি না বাহিরকে।

আপনি সেখানে হলে কি করতেন অবশ্যই সেই শিশুদেরকে শীতের জামা কাপড় কিনে দিতেন। কিন্তু মুক্তমনা লোকটির মতো অবশ্যই সেই শিশুদের নগ্ন দেখে সুখ নিতেন না আর নিজেকে অপরাধীও মনে করতেন না। আসলে হুমায়ুন আজাদ তো শুধু অন্যের নগ্ন শিশু দেখে মুক্তমনে আনন্দ পেতেন। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের শিশু সন্তানদের সাথে যৌনকর্ম করতে পারে এমনকি নিজের শিশ্ন পর্যন্ত সারা সন্ধান চুষাতে পারবে। একটি উদাহরণ কল্পনা করুন।

ধরুন একজন নাস্তিকদের নাম আসিফ মহিউদ্দিন। তার একটি ছোট ছেলে সন্তান রয়েছে। সেই নাস্তিকটি নিজের ছেলেকে বলল,এই যে বাবা আমার শিশ্ন যদি তুমি চুষে দেও তাহলে তোমাকে চকলেট উপহার দিব। ছেলেটি বাবার আদেশ পেয়ে বাবাকে সুখ দেয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই নাস্তিক কি কোনো খারাপ কাজ করেছে নাস্তিক্যধর্ম অনুযায়ী? উত্তর হচ্ছে না। কারণ সেখানে বাপ পুতের কারওই কোনো ক্ষতি হয় নাই। আর নাস্তিকদের নৈতিক বিশ্বাস হচ্ছে নিজের ও অন্যের ক্ষতি না করে যা করা হবে সেটাই ভালো কাজ। এই হিসেবে কোনো নাস্তিক যদি নিজের ছেলেকে দিয়ে নিজের শিশ্ন চাটায় তাহলে নাস্তিকদের নৈতিক যুক্তি অনুযায়ী এটাকে অন্য খারাপ বলতে পারবে না। সুযোগ নেই। 

হুমায়ুন আজাদ নারী ধরতে চাইতো। পশু ধরতে চাইতো। এসবকে না ধরতে পেরে বেচারা কত আফসস করতো পড়ুন তার বই থেকেই।

আমার অবিশ্বাস, ১৬ পৃষ্ঠায় পরিষ্কার বর্ণিত হয়েছেঃ 

আকাশ আর আগুন ছুঁয়ে ফেলেছি কতোবার, ঘাস দেখলে এখনো ছুঁতে ইচ্ছা করে, পশু দেখলে ছুঁতে ইচ্ছা করে, কোনো কোনো নারী দেখলে ছুঁতে ইচ্ছা করে, কিন্তু ছুঁই না। সব কিছু ছোঁয়া অনুমোদিত নয়। ওষ্ঠ দিয়ে ছোঁয়া নিবিড়তম ছোঁয়া, আমি যা কিছু ওষ্ঠ দিয়ে ছুঁয়েছি তারাই আমাকে সুখী করেছে সবচেয়ে বেশি। আমাদের সমাজে ছোঁয়া খুবই নিষিদ্ধ ব্যাপার । আমরা খুব কম মানুষকেই ছুঁতে পারি, খুব কম মানুষকেই ছোঁয়ার অধিকার আছে আমাদের। ছোঁয়া এখানে পাপ, কোনো নারী যদি কোনো পুরুষকে ছোঁয়, কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে ছোঁয়, তাতে সূর্য খ'সে পড়ে না , আকাশে হুলস্থূল শুরু হয়ে যায় না। কিন্তু আমরা মনে করি মহাজগত তাতে খেপে উঠেছে । শরীর খুবই আপত্তিকর আমাদের কাছে, একে অজস্র পাপের উৎস ভেবে আমরা ভয় পাই, পবিত্র বইগুলো সব সময় মনে করিয়ে দেয় যে আমরা পাপী তাই আমাদের সুখ নয়, শাস্তি প্রাপ্য । কিন্তু আমি ছুঁয়েছি, ছোঁয়া পেয়েছি তাতে চাঁদতারা খ'সে পড়ে নি । ছুঁয়ে ও ছোঁয়া পেয়ে আমি যে সুখ পেয়েছি, তা আর কিছুতে পাইনি।

পশু ও নারী ছুঁতে না পেরে যে কত রেগেছিল হুমায়ুন আজাদ সেটা তার লেখা থেকেই পরিস্কার। সামাজিক কারণে সে কতকিছু করতে পারেনি। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে তারা চতুষ্পদ প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে এই কারণে তারা মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে কিছু ভাবতে পারে না। যেসব নাস্তিকরা নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবি করে থাকেন তারা কেন বললেন না যে "আকাশ আর আগুন ছুঁয়ে ফেলেছি কতোবার" আকাশ কি কখনো ছুঁয়ে দেখা যায়? নাস্তিকরা কি এখানে বৈজ্ঞানিক ভুল সন্ধান করে দেখে না? নাস্তিকতা কিভাবে মানুষকে মুক্তি দেখাবে? মুক্তচিন্তা মানুষকে কিভাবে সভ্য করবে? মুক্তবুদ্ধি কিভাবে মানুষকে নৈতিক বানাতে পারে? প্রশ্ন গুলোও ভাবিয়ে তোলে।

শুধু কি মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ এমন মুক্তচিন্তা করতেন? উত্তর হচ্ছে না। আরও অনেক নাস্তিকই নারীদের নিয়ে বিভিন্ন মুক্তচিন্তা করতেন।

পপুলার একজন নারীবাদী নাম রেবেকা ওয়াটসোন (Rebecca Watson)। এনি একই সাথে নাস্তিক আবার সংশয়বাদীও। উনার সাথে মুক্তচিন্তক নাস্তিকরা যেই আচরণ করেছিল সেটা উনি উনার এক আলোচনায় বর্ণনা করেছিলেন। ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান নাস্তিক সম্মেলনে উনি বর্ণনা করেন,(৪৪)

Hundreds of atheists have informed me that either they wanted to rape me, someone should rape me so that I will loosen up or that no one would ever rape me because I am so ugly"

ভাবানুবাদঃ শত শত নাস্তিক আমাকে জানিয়েছে যে তারা আমাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এমনকি কেউ যাতে আমাকে ধর্ষণ করে দুর্বল করে ফেলে। আবার কেউ কেউ আমাকে ধর্ষণ করতে চায় না কারণ আমি নাকি খুবই বিশ্রী।

 এই নাস্তিক সংশয়বাদী নারীটি যখন এই কথা ফাঁস করা দেয় তখন অনেক নাস্তিক তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এই বলে যে সে যা বলেছে সব ভুল। অথচ যার তার বিরুদ্ধে গিয়েছিল তারা না ঠিক মতো নাস্তিক্যবাদ বুঝতো আর না ঠিক মতো চিন্তার মুক্তির বিষয় বুঝতো।

আমি এখানে অল্প কিছুই প্রমাণ দিলাম। নাস্তিকদের মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ বিষয় বিস্তারিত দলিল প্রমাণ সহ আমার অন্য লেখা গুলো আপনারা পড়ুন। নারীবাদীদের আইডল মনে করে অনেক নারী তসলিমা নাসরিনকে অথচ সেও নারীদেরকে ধর্ষণ করতে বলেছিল। এমন অনেক তথ্য যা নাস্তিকরা লুকিয়ে রাখতে চায় সেই সব তথ্য প্রমাণ আমি সবার সামনে নিয়ে এসেছি। যাই হোক। এটা তো স্পষ্ট যে মুক্তচিন্তায় যে কোনো নাস্তিক চাইলে নারীদের নিয়ে ধর্ষণের মুক্তচিন্তা করতে পারবে।

মুক্তমনারা যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিলঃ

নাস্তিকরা নাকি সব থেকে বেশি মানবিক। নাস্তিকরা নাকি বেশি ভালো হয়ে থাকে। নাস্তিকদের দ্বারা নাকি নাকি তেমন কোনো অপরাধ হয় না এমন হাস্যকর হাস্যকর কথা হুমায়ুন আজাদ মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করতেন। উনার বই থেকেই প্রমাণ দিচ্ছি।

নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস’ বইয়ের ৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, 

যে কোনো নির্বোধের পক্ষে ধার্মিক হওয়া সহজ,কিন্তু শুধু জ্ঞানী ও মানবিক ব্যাক্তিই হতে পারে নাস্তিক। নাস্তিক হত্যা আর ধ্বংস করে না, কিন্তু ধার্মিক সব সময় হত্যা ও ধ্বংসের জন্যে ব্যগ্রে থাকে। তারা ইতিহাসের পাতাকে যুগে যুগে রক্তাক্ত করেছে। প্রত্যেক ধর্মে রয়েছে অসংখ্য সন্ত,যারা ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের হত্যাকারী। নাস্তিক চায় মানুষের চেতনাকে বদলে দিতে,মানুষকে বিকশিত করতে,আর ধার্মিক চায় মানুষের চেতনাকেও নষ্ট করতে,মানুষকে রুদ্ধ করতে। ধার্মিকদের নৈতিকতাবোধ খুবই শোচনীয়।

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ৮৩,৮৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে, 

বাঙলাদেশে নাস্তিক আছে ক-জন? সবাই তো ধার্মিক। দেশে এতো খুন, করছে কারা? তারা কি নাস্তিক? না, তারা ধার্মিক, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। দেশে এতো ধর্ষণ, করছে কারা? তারা কি নাস্তিক? না, তারা সবাই ধার্মিক, তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। দেশে এতো ঘুষ খাওয়াখাওয়ি, এতো ঋণখেলাপি। তারা কি নাস্তিক? না, তারা ধার্মিক, পাজেরো হাকিয়ে তারা মসজিদে যায়, তাদের সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে। আমলারা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। দারোগাপুলিশরা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। কাস্টমসের লোকেরা, ব্যাংকের লোকেরা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। ডিসিরা, এসপিরা, জজরা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। হজ আর ওমরা কারা করে? তারা কি নাস্তিক, তারা আস্তিক, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। এমনকি পতিতারাও এখানে নাস্তিক নয়, তাদেরও আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। তবু বাঙলাদেশ কেনো এতো দুর্নীতিগ্রস্ত? বিশ্বে প্রথম? একটি নাস্তিকও দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, কিন্তু প্রতিটি ধার্মিকই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের দুর্নীতি মূলস্তম্ভ টাকা, ঘুষ ছাড়া, অবৈধ উপায়ে টাকা বানানো ছাড়া,বাঙলাদেশে আর কোনো পবিত্র কাজ নেই।

পাঠক দেখলেন তো নাস্তিক লোকটি কত কষ্ট করে নিজেদের নাস্তিকগোষ্ঠীর প্রশংসা করে নাস্তিক্যধর্মকে রক্ষা করার চেষ্টা করলো। তার অন্ধভক্তরা হয়তো হাত তালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করবে। কিন্তু আমরা যারা সত্যটা জানি আমাদের কাছে নাস্তিকদের তেমন কর্ম দেখে হাস্যকর লাগবে। কেন? নাস্তিকরা যে অপকর্ম করে, শিশু হত্যা করে, মানুষ খুন করে, মিথ্যা কথা বলে এগুলো স্বীকার করে নিয়েছেন নাস্তিকগোষ্ঠীর এক মুক্তমনা লোক। প্রবীর ঘোষ যার নাম। প্রবীর ঘোষ স্বীকার করে নিয়েছে নাস্তিকরা অপরাধ করে। উনি উনার বইতে পরিস্কার করে লিখেছেন।

প্রবীর ঘোষ লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠাতে,

প্রবীর ঘোষকে প্রশ্ন করা হয় যে তসলিমা একজন ধর্মহীন, মানবতাবাদী মানুষ এটা তো স্বীকার করবেন? উত্তরে নাস্তিক প্রবীর ঘোষ বলেন তসলিমা কতটা মানবতাবাদী আসুন দেখি। কারন ধর্মহীন বা নাস্তিক হলেই মানবতাবাদী, ভালো মানুষ হবেন এমনটা সত্যি নয়। নাস্তিক লম্পট,দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ আমরা অনেক দেখেছি।

নাস্তিক প্রবীর ঘোষ স্বীকার করে নিয়েছেন ঠিক আছে তারপরেও যেই কথা থেকে যায় যেটা হচ্ছে, ইসলাম আমাদেরকে কখনোই দুর্নীতি শিক্ষা দেয় না, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা শিক্ষা দেয় না, ঘুষ খাওয়া শিক্ষা দেয় না তাহলে যারা এসব কাজ করে তারা কেন করে? একটাই উত্তর। সেটা হচ্ছে তারা নিজেদের মুক্তচিন্তায় এগুলো করে। ইসলামের আইন অমান্য করে তারা নিজেদের মুক্তবুদ্ধিতে কুকর্মগুলো করে।

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ৮৪৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে, 

আবদুল্লাহ বিন্‌ ‘আম্‌র বিন্‌ আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৩৩৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে ঘুষখোর ও ঘুষ প্রদানকারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৪০১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে, 

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ কবীরা গুনাহ হলোঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতামাতার নাফরমানী করা, অন্যায়ভাবে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা।-ihadis.com

নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ আসলে নাস্তিকগোষ্ঠীদের খুশি করার জন্য এতো বানিয়ে বানিয়ে কথা বলেছেন যে ইতিহাস বিষয় হয়তো ঠিক মতো দেখার সুযোগটুকু পাননি। যদি ইতিহাস অধ্যায়ন করতেন তাহলে উনি নিজেই প্রমাণ পেয়ে যেতেন যে নাস্তিকরা নিজেদের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য কি পরিমাণ গণহত্যা করেছে। নাস্তিকদের ইতিহাস ঘাঁটলে প্রমাণ পেলে রক্তের হোলি খেলার। মানুষের রক্ত নিয়ে মুক্তচিন্তায় কিভাবে খেলেছে সেই নাস্তিকরা আসুন জেনে নেই।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত আলোচিত গ্রন্থ "The Black of Communism" থেকে জানা যায়,

নাস্তিকতা সমাজতন্ত্র ভিত্তিক সরকার কেবল বিংশ শতকেই ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে

ড রাফান আহমেদ তার "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" ১৬৮ পৃষ্ঠায় "Times of India, 8 sep. 2017" সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যেঃ 

নাস্তিক নেতা মাও সেতুং এর অনুপ্রেরণা স্টেলিন , যে চীনের সরকার আইন করে নাস্তিকতাকে চাপিয়ে দিয়েছিল। প্রায় ৯০ মিলিয়ন পার্টি মেম্বারকে বলা হয়েছিল হয় ধর্ম ছাড়ো অথবা শাস্তির সম্মুখীন হও এবং অবশ্যই তাদের মাক্সবাদী নাস্তিক হতে হবে, না হলে রক্ষা নেই।

"অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" লেখক  রাফান আহমেদ, পৃষ্ঠা ১৬৪,১৬৫ তে উল্লেখ করেছেন,ডেভিন প্যাট্রিক কেলি নামক এক মিলিটেন্ত নাস্তিক "Max Jaeger,Texas Church Shooter Was a Militant Atheist,New York Post, November 6, 2017" এর সুত্র অনুযায়ী,

ডেভিন প্যাট্রিক কেলি চার্চে খৃষ্টানদের উপাসনালয়ে ভয়ংকর হামলা চালায় এমন সময় যে খৃষ্টানরা তখন তাদের ধর্মীয় কাজে মগ্ন ছিল। টোটাল ২৬ জন মানুষ এই হামলায় মারা যায়, যাদের মাঝে ৮ জনই শিশু এবং সব থেকে ছোটজনের বয়স ছিল মাত্র ১ বছরএই নাস্তিক ফেসবুকে নাস্তিকদের সমর্থনে অনেক পোস্ট করত এবং ধর্মে বিশ্বাসীদের গালাগালি করত

বেইলর ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ববিদ্যার সহকারী অধ্যাপক পল ফ্রয়েস "Journal for the scientific study of religion.vol 43.issue 1.page 35 (2004) - এ লিখেন,

সোভিয়েত ইউনয়নের নাস্তিকেরা ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েছে। সমাজতান্ত্রিক এই দলটি ধ্বংস করেছে অগণিত চার্চ, মসজিদ ও মন্দির ,হত্যা করেছে অসংখ্য ধর্মগুরুকে। স্কুলে ও মিডিয়ার মাধ্যমে ধর্মবিরোধী পোপাগান্ডার বন্যা বইয়ে দিয়েছে এবং বৈজ্ঞানিক নাস্তিকতার নামে বিশ্বাস ব্যাবস্থার প্রচলন করেছে,যা পূর্ণ ছিল নানা নাস্তিকীয় আচার, ধর্মত্যাগকারীগন ও দুনিয়াবি মুক্তির প্রতিজ্ঞার দ্বারা।

লজ্জিত চেহারার নাস্তিকরা বলে থাকে যে তারা অন্যায় কাজ করেছেন কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আপনাদের দেয়া বিধান সেই নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় অবিশ্বাস করেছে এবং মুক্তচিন্তায় অন্যায়কাজ গুলোকে ভালো মনে করেই সম্পূর্ণ করেছে। এই যুগের নাস্তিকদের কাছে ধরে দিলাম গণহত্যা খারাপ (সব নাস্তিকদের কাছে খারাপ না) কিন্তু যেসব নাস্তিকরা হত্যা করে, গণহত্যা করে, মানুষ খুন করে তাদের মুক্তচিন্তায় সেসব ভালো। মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক নাস্তিক মাও সেতুং, জোসেফ স্টালিনরা যে ইতিহাসে রক্তের হোলি খেলেছেন শুধু কি তখন? একদম না। বর্তমান সময়েও চীনের নাস্তিকরা মুসলিমদের কল্লা ফেলে দিচ্ছে আর অসহায় মা বোনদের ধর্ষণ করছে আর ছোট শিশুদেরকে মেরে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে।

কিছু কিছু সস্তা নাস্তিকরা নিজেদের নাস্তিকতাকে বাঁচানোর জন্য বলে নাস্তিকরা খারাপ হতে পারে তারমানে নাস্তিকতাকে দায়ী করা যাবে না- এই কথাটি আসলে ডাহামিথ্যে। কারণ নাস্তিকরা বিশ্বাস করে থাকে মুক্তচিন্তায়। আর প্রতিটি নাস্তিকের এই ফ্রিডম আছে যে নিজের মতো করে নিজের জীবন পরিচালনা করবে। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই নাস্তিকদের কুকর্মের জন্য নাস্তিকতাকে দায়ী করা যাবে না তাহলে নাস্তিকদের এটা স্বীকার করে নিতে হবে যে নাস্তিকদের সকল কুকর্মের জন্য তাদের মুক্তচিন্তা এবং মুক্তবুদ্ধি দায়ী যা তারা বিবর্তনের মাধ্যমে পেয়েছে।

তাছাড়া নাস্তিক্যধর্মে নৈতিকতার কোনো সিমানা নেই, নেই কোনো নির্দিষ্ট রেখা, কোনো নাস্তিক যদি অন্যকে ক্ষতি না করে নিজে ইয়াবা সেবন করে, যদি অন্যকে ক্ষতি করে না নিজের মেয়ের সাথে, মায়ের সাথে, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে,বাবার সাথে সম্মতিতে সংগম করে তাহলে এসব নাস্তিকতায় ব্যাক্তিস্বাধীনতার অংশ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। আবার কোনো নাস্তিক যদি বিবর্তনবাদ মেনে অথবা দুনিয়ার সব কিছুই নিরর্থক এটা বিশ্বাস করে কাউকে হত্যা করে, ধর্ষণ করে তাহলে এটাও নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে মুক্তচিন্তায় বৈধ বলেই ধর্তব্য হবে। সুতরাং এটা বলে নাস্তিকদের কখনোই রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই যে নাস্তিকদের অপরাধের জন্য নাস্তিক্যধর্ম দায়ী না। এটা প্রমাণিত সত্য যে নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে মানুষ খুন করা, গণহত্যা করা, ধর্ষণ করা, নারীদের নিয়ে নোংরা নোংরা মুক্তচিন্তা করা,মানুষকে দাস বানানো, দাসী বানানো, যৌনদাসী রাখা , তাদেরকে নির্যাতন করা, অত্যাচার করা সম্পূর্ণ বৈধ। তবে হ্যাঁ, কোনো নাস্তিক চাইলে এমন মুক্তচিন্তা নাও করতে পারে তবে কেউ করলে তাকে বাধা দেয়া যাবে না তাহলে মুক্তচিন্তায় বাধা আসবে। আর নাস্তিকরা চায় সবাই মুক্তচিন্তা করতে শিখুক।

ইসলামের ক্ষেত্রে “দাসপ্রথা” নাকি দাস আইন বলবো?

দাসপ্রথা শব্দটি না বলে ইসলামে দাসবিধি আছে অথবা ইসলামে দাস আইন আছে বলাই বেশি উত্তম। কারণ প্রথা আর আইনের মাঝে অনেক তফাৎ রয়েছে। প্রথা ও আইনের কিছু মিল থাকলেও আসলে দুটো কখনো এক নয়। ইসলামে নিজস্ব দাস-আইন আছে কথাটি এই কারণেই বলা উত্তম কারণ ইসলামের সকল আইনের উৎস আল্লাহ তা'লা। সৃষ্টি যার আইন চলবে তার। দাস-দাসী বিষয় ইসলামের যে সকল বিধানমালা রয়েছে সব গুলোই ইসলামের আইনের অন্তর্ভুক্ত। প্রথা হিসেবে নয়। এখন কোন প্রেক্ষাপটে কোন আইন প্র‍য়োগ হবে সেটা দেখতে হবে। বুঝতে হবে। জানতে হবে।

মূর্খ নাস্তিকরা “ইসলামে দাসপ্রথা আছে” কথাটি পেলেই ইউরোপ অ্যামেরিকার বর্বর মুক্তচিন্তার দাসপ্রথার সাথে মিলিয়ে ইসলামকেও সেমন খারাপ হিসেবে দেখাতে চায় কিন্তু নাস্তিকরা এটা বোঝেই না যে মুক্তচিন্তার দাসপ্রথার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ইসলাম দাসদাসীদের নিয়ে বিভিন্ন আইন দিয়েছে। যা প্রতিটি মুসলিম মানতে বাধ্য। 

আসুন এখন জেনে নেই প্রথা ও আইনের মাঝে পার্থক্য সমূহ। প্রথা ও আইন সব সময় এক নয়। প্রথা ও আইনকে এক করা উচিতও নয়। প্রথা স্রেফ মানবরচিত, আর আইন দুটোই হতে পারে। কিন্তু আইন কখনো প্রথা হতে পারে না। কিভাবে? প্রথা যেটা সামাজিকভাবে চলে আসছে কিন্তু আইন সেটা যা রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত। প্রথা থেকে আইন আসতে পারে। কিন্তু তা আইনে রুপান্তর হয়ে গেলে তাকে তো আর প্রথা বলা যায় না। প্রথা কেউ চাইলে মানবে আর কেউ চাইলে মানবে না কিন্তু আইন সবাই মানতে বাধ্য। প্রথা হচ্ছে সুদীর্ঘকাল ধরে চলে আসা মানুষের কিছু আচার আচরণ কিন্তু আইন হলো মানুষকে সুষ্টু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত। প্রথা মানতে কেউ বাধ্য নয় কিন্তু আইন সকলের জন্য সমান। সকলেই আইন মানতে বাধ্য। তাই ইসলামে দাসদাসী আইন আছে বলাই বেশি উত্তম। যুদ্ধবন্দীনিদের ব্যাপারে আমার বিস্তারিত লেখা আছে সেটি অবশ্যই পড়বেন। তাই এখানে আর আলাদা করে ইসলামে যুদ্ধবন্দিনী আইন বিষয় কিছু লিখলাম না।

এখন আমাদেরকে বুঝতে হবে দাস বিষয় ইসলাম আমাদেরকে কেমন আইন দেয়? দুশমন পক্ষ যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস বানিয়ে নিয়ে আসা থেকে দাসমুক্তির বিষয় ইসলামের যতো কথা বর্ণিত আছে সব কিছুই আইনের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম বিভিন্নি প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন মুহূর্তে, বিভিন্ন সিচুয়েশনে যা যা আইন দেয় তা সকল মুসলিম মেনে নিতে বাধ্য। এরপরেও কেউ যদি "দাসপ্রথা" শব্দটি ইসলামের ক্ষেত্রে বলতে চায় সে বলতে পারে এটা নিয়ে অর্থহীন বিতর্ক করার মানে হয় না তবে উত্তম হচ্ছে "দাসপ্রথা" না বলে ইসলামে "দাসবিধি" বা "দাসআইন" শব্দটি চয়ন করা বা ব্যবহার করা। তবে যাই হোক না কেন আমাদের সামনে দাসপ্রথার কথা আসলে যে শিকলে বন্দী, অত্যাচার-নির্যাতন অথবা গণহত্যার ছবি ভেসে আসে এরকম নাস্তিক্যধর্মের বর্বর-অমানবিক দাসপ্রথার সাথে ইসলামের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। থাকতেই পারে না।

মুক্তচিন্তার দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ইসলাম যেমন দাস আইন দেয়ঃ

ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে বা মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে এক কোথায় বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দাস দাসীদেরকে অত্যাচার,নির্যাতন,যৌন হামলা,ধর্ষণ,গণধর্ষণ, হত্যা, খুন, গণহত্যা থেকে শুরু করে যা ইচ্ছা সব কিছুই বৈধ হয়ে গেলেও ইসলামের দৃষ্টিতে এসব সমর্থন যোগ্য নয়। ইসলাম প্রাচীন যুগের বর্বরতম দাসপ্রথা সমর্থন করে না। একজন মালিক যা ইচ্ছা তাই করবে নিজের দাসদের সাথে, অত্যাচার করবে, নির্যাতন করবে এসবই ইসলাম নিষিদ্ধ। দাসদের যাবতীয় মানবিক অধিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে,আছে মুক্তির অধিকার। ইসলাম এই দৃষ্টিভঙ্গিই পোষণ করে।

ইসলামের প্রতিটি বিধান কল্যাণকর এবং উপকারী। তাছাড়া ইসলাম আমাদেরকে জ্ঞান যুক্তিতর্ক ইত্যাদির সাথে বিতর্ক করবার শিক্ষা দেয়।

আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬:১২৫ আয়াতে বলে আছে,

তোমরা আল্লাহর দিকে আহ্বান করো জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে,উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো উত্তমপন্থায়। 

ইসলামের সস্তা সমালোচকরা প্রাচীন যুগের বর্বর দাসপ্রথার সাথে ইসলামে একজন মানুষকে দায়িত্বে নেয়া বা “দাসবিধির” আইনকে গুলিয়ে ফেলে। যা ঠিক। উপরে আপনারা আগেই মুক্তচিন্তার দাসপ্রথার ভয়াবহ চেহারা দেখেছেন। নাস্তিক্যধর্ম এসব সমর্থন করলেও ইসলাম এসব সমর্থন করে না। ইসলাম নাস্তিক্যধর্ম থেকে শ্রেষ্ঠ। ইসলাম মুক্তচিন্তা থেকে শ্রেষ্ঠ। ইসলাম ডারউইনবাদ থেকে শ্রেষ্ঠ।


কোন দাস যদি সত্যবাদী হতো তাহলে তাকে সত্যবাদী বলে প্রশংসাও করা হতো এটাই ইসলামের আদর্শ। হাদিসটি পড়ুন,সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৮৪২,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইব্‌নু 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, তাকবীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সালাত শেষ হয়েছে। আলী (রাঃ) বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আবূ মা‘বাদ (রহঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)–এর আযাদকৃত দাসসমূহের মধ্যে অধিক সত্যবাদী দাস ছিলেন। আলী (রহঃ) বলেন, তার নাম ছিল নাফিয।-ihadis.com

একজন মুনিব দাসের সকল মানবিক চাহিদা পূরণ করবে এর ফলে একজন দাস তার মুনিবের যেসকল দায়িত্ব আছে সেসব পালন করবে। আর এটা করলে দিগুণ পুণ্য অর্জনের মর্যাদা পাবে দাস। সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৫১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যে ক্রীতদাস আপন প্রতিপালকের উত্তমরূপে ইবাদত করে এবং আপন মনিবের যে হক আছে তা আদায় করে, তার কল্যাণ কামনা করে আর তার আনুগত্য করে, সে দ্বিগুণ পুণ্য অর্জন করবে।


দাস-দাসীদের নিকট-আত্মীয় হিসেবেও বলা হয়েছে এক হাদিসে এবং তাদেরকে ভরণপোষণ ও দান করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ৯৬৯,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সেই দানই উত্তম, যার পরে অভাব আসে না। উপরের দাতার হাত নিচের গ্রহীতার হাত অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার নিকট-আত্মীয় থেকে দান করা শুরু কর।”আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, মাল না থাকলে তোমার বিবি তোমাকে বলবে, ‘আমার খরচ দাও, নচেৎ আমাকে তালাক দাও।’ তোমার দাস বা দাসী বলবে, ‘আমার খরচ দাও, নচেৎ আমাকে বিক্রি করে দাও।’ তোমার ছেলে বলবে, আমাকে কার ভরসায় ছেড়ে যাবে?। আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৯৫, সহিহ হাদিস।-ihadis.com


শুধু তাই নয় যোগ্যতা অনুযায়ী একজন মুক্তদাসকে প্রেসিডেন্টও বানিয়ে দেয়া হয়েছিল ইসলামের ইতিহাসে, কি বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে হাদিসটি পড়ুন, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২১৮,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

উমর (রা) থেকে বর্ণিত,নাফি’ বিন আবদুল হারিস, তিনি উস্‌ফান নামক স্থানে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। উমার (রাঃ) তাকে মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, গ্রামবাসী বেদুঈনদের জন্য তুমি কাকে প্রশাসক নিয়োগ করেছ? তিনি বলেন, আমি বিন আবযা (রাঃ)-কে তাদের প্রশাসক নিয়োগ করেছি। উমার (রাঃ) বলেন, বিন আবযা কে? তিনি বলেন, সে আমাদের একজন মুক্তদাসউমার (রাঃ) বলেন, তুমি একজন মুক্তদাসকে কেন জনগণের প্রশাসক নিয়োগ করলে? তিনি বলেন, সে তো মহান আল্লাহ্‌র কিতাবের বিশেষজ্ঞ আলিম, ফারায়িয সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং উত্তম ফয়সালাকারী। উমার (রাঃ) বলেন, শোন! তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা এই কিতাবের দ্বারা কতক লোককে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং কতককে অবনমিত করেন।-ihadis.com


আরো আছে, যদি কোন ক্রীতদাসকেও নেতা বানানো হয় এরপরেও অন্য সবাইকে তার আদেশ মানতে বলেছেন নবীজি (সা)। রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৬৭১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘শাসকদের কথা শোনো এবং তাদের আনুগত্য কর;যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো ক্রীতদাসকে নেতা নিযুক্ত করা হয়; যেন তার মাথাটা কিশমিশ।অর্থাৎ কিশমিশের ন্যায় ক্ষুদ্র ও বিশ্রী তবুও!-ihadis.com


জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৭০৬,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

উম্মুল হুসাইন আল-আহ্‌সামিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে খুতবা দিতে শুনেছি। তখন তাঁর গায়ে একটি চাদর ছিল। তিনি তাঁর বগলের নিচে এটা পেচিয়ে রেখেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর বাহুর গোশতপিন্ডের দিকে আমি তাকিয়ে দেখলাম তা দোল খাচ্ছে। আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ উপস্থিত জনমন্ডলী! আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় কর। যদি তোমাদের নেতা হিসাবে কোন নাক-কান কাটা হাবশী ক্রীতদাসকেও নিযুক্ত করা হয়,তবে সে তোমাদের জন্য যে পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলার কিতাবের ফায়সালা প্রতিষ্ঠিত রাখবে সে পর্যন্ত তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর-।ihadis.com


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১৭৮২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

'আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃনাফি ইবনু 'আবদুল হারিস (রাঃ) 'উসফান নামক স্থানে 'উমার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। 'উমার (রাঃ) তাকে মাক্কায় রাজস্ব আদায়কারী নিয়োগ করলেন। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন : তুমি প্রান্তরবাসীদের জন্য কাকে কাজে নিয়োগ করেছ? সে বলল- ইবনু আব্‌যা-কে। 'উমার (রাঃ) বললেন, ইবনু আব্‌যা কে? সে (নাফি) বলল, আমাদের আযাদকৃত ক্রীতদাসের একজন। উমার (রাঃ) বললেন, তুমি একজন ক্রীতদাসকেও তাদের জন্য তোমার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করেছ? নাফি বললেন- সে ক্রীতদাসটি মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিতাবের একজন ভাল ক্বারী বা 'আলিম। আর সে ফারায়িয শাস্ত্রেও অভিজ্ঞ। তখন 'উমার (রাঃ) বললেনঃ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা এ কিতাব দ্বারা অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন আর অন্যদের অবনত করেন। অর্থাৎ যারা এ কিতাদের অনুসারী হবে তারা দুনিয়ায় মর্যাদাবান এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। আর যারা একে অস্বীকার করবে তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত ও পরকালে জাহান্নামে পতিত হবে।-ihadis.com


যেই যুগে দাসদেরকে নির্যাতন করা হতো, অত্যাচার করা হতো সেই যুগে ইসলাম দাস কে গভর্নর বানায়। কিন্তু নাস্তিকদের চোখে এসব সহ্য হয় না। যেভাবেই হোক ইসলামকে খারাপ প্রমাণ করতে হবে। ইসলাম যতোই মানবিক ও কল্যাণকর হোক মুক্তমন নাস্তিকরা ইসলামকে খারাপ দেখানোর চেষ্টা করতেই থাকবে। কারণ নিজেদের ইসলাম বিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে হবে তো।

নবীজি (সা) নিজে দাস কেনা-বেচা করেছেন?

কোনো স্থানে যদি দাস কেনা বেচার সিস্টেম থাকে আর আপনি যদি চান তাদেরকে মুক্ত করে দেবেন অথবা তাদেরকে নিজের দায়িত্বে নিয়ে আসবেন তাহলে কি করবেন ? আপনাকে অবশ্যই সেখান থেকে দাস কিনতে হবে এবং আপনার যদি নিজের কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি দাসের সাথে যে ভালো-আচরণ করবে তার কাছেও বিক্রি করে দিতে পারেন। এখন আপনি যদি বলেন দাস কিনা-বিক্রি করা অন্যায় তাহলে তো দাসকে কেনাও যাবে না আর মুক্তিও করে দেয়া যাচ্ছে না,তাই না? 


যেমন সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৩৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, বারীরাকে আমি আযাদ করার নিয়্যতে খরিদ করলাম, তখন তার পূর্বতন মালিক অভিভাবকত্বের শর্তারোপ করল। প্রসঙ্গটি আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে উত্থাপন করলাম। তিনি বললেন, তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। অভিভাবকত্ব সেই লাভ করবে, সে অর্থ ব্যয় করবে। তখন আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ডেকে তার স্বামীর ব্যাপারে ইখতিয়ার দিলেন। বারীরা (রাঃ) বললেন, যদি সে আমাকে এত এত সম্পদও দেয় তবু আমি তার কাছে থাকব না। অবশেষে তিনি তার ইখতিয়ার প্রয়োগ করলেন।-ihadis.com


সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৪০০৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদা একজন গোলাম এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট হিজারাতের উপর বাই‘আত করেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝতে পারেননি যে, সে লোকটি গোলাম। অতঃপর তার মনিব তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে চলে আসেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেনঃ আমার কাছে একে বিক্রি করে দাও। তারপর তিনি দু’জন কালো রং বিশিষ্ট গোলামের বিনিময়ে একে খরিদ করেন। এরপর থেকে তিনি বাই‘আত নিতেন না যতক্ষণ না জিজ্ঞেস করতেন যে, সে গোলাম কি-না ।-ihadis.com


খেয়াল করুন এই হাদিসে গোলাম যেন তার দেয়া কথা রাখতে পারে সেই কারণে নবীজি (সা) এই গোলামকে কিনে নেন। যদি না কিনতেন তাহলে উক্ত গোলাম যা কথা দিয়েছে তা রাখতে পারতো না কারণ গোলামদের মুনিবের কথাকে অনুসরণ করতে হয়। তাই নবীজি (সা) এরপরে গোলাম কিনা সেটা আগে জেনে এরপরে বায়াত, শপথ অথবা ওয়াদা নিতেন। 


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৩৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমাদের কোন একজন তার এক ক্রীতদাসকে মুদাব্বার মনিবের মৃত্যুর পর যে ক্রীতদাস মুক্ত বলে ঘোষিত হয় রূপে মুক্ত ঘোষণা করল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ক্রীতদাসকে ডেকে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, ক্রীতদাসটি সে বছরই মারা গিয়েছিল।- ihadis.com


সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৪১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি তার গোলাম আযাদ করে দিয়েছিল। তার কাছে এ ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার গোলাম আযাদ করে দেয়া প্রত্যাখ্যান করে দিলেন। পরে সে গোলামটি তার নিকট হতে ইবনু নাহ্‌হাম কিনে নিলেন।-ihadis.com


এই হাদিস গুলো দেখিয়ে মূর্খ নাস্তিকরা অভিযোগ করে বলে নবীজি (সা) নাকি দাসকে আজাদ করে দেয়াতে অখুশি হতেন এই কারণে দাস আজাদ করে দেয়ার ফলে উনি প্রত্যাখ্যান করেন। আসলে নাস্তিকান্ধতা নিয়ে ইসলামের ভুল ধরতে আসলে যা হয় আর কি! এখানে আসলে আংশিক ঘটনা দেয়া আছে পুরো হাদিসটি পড়ুন। সঠিক জবাব জেনে যাবেন।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২১৪১, সহিহ হাদিসঃ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরে তার গোলাম আযাদ হবে বলে ঘোষণা দিল। তারপর সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোলামটিকে নিয়ে নিলেন এবং বললেন, কে একে আমার নিকট হতে ক্রয় করবে? নু’আঈম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর কাছ হতে সেটি এত এত মূল্যে ক্রয় করলেন। তিনি গোলামটি তার হাওয়ালা করে দিলেন।-ihadis.com


গরীব-অভাবী লোক যার দাস ছাড়া আর কেউই নেই তার আজাদকৃত দাসকে কিনে আবার তার কাছেও দিয়ে দিয়েছেন যেন তার অভাবে কষ্ট না হয়। দাস যেন তার সেবা যত্ন করতে পারে।দাসকে বিক্রি করতে গিয়ে নিজে যেন অভাবের কষ্ট না পায় এই কারণে নবীজি (সা) উক্ত লোকটিকে বিক্রি করতে দেন নাই। এই হাদিসেও একই ব্যাপার ঘটেছে। পড়ুন।


সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ২৩৪৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইমরান বিন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তির ছয়টি গোলাম ছিল, এদের ব্যতীত তার আর কোন মাল ছিলো না। সে তার মৃত্যুর পূর্বে তাদেরকে দাসত্বমুক্ত করে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম লটারীর মাধ্যমে এদের মধ্যে দু'জনকে দাসত্বমুক্ত করে দেন এবং চারজনকে গোলাম হিসেবে বহাল রাখেন।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ ৫৪১৮,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক আনসারী তার মৃত্যুর পর তার দাসকে মুক্ত করে দিয়েছিল। সে ব্যক্তি ছিল অভাবগ্রস্ত এবং ঋণগ্রস্ত। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ দাসকে আটশত দিরহামে বিক্রি করে ঐ টাকা তাকে দিয়ে বললেনঃ তুমি এর দ্বারা তোমার ঋণ পরিশোধ কর এবং তোমার পোষ্যদের জন্য ব্যয় কর।-ihadis.com


এমন একটি হাদিস দেখান যেখানে বলা হচ্ছে দাসদেরকে কিনে অত্যাচার করো, নির্যাতন করো, যৌন হামলা করো,তাদের সাথে জবরদস্তি করো,তাদের সাথে যা ইচ্ছা তাই করো? অথবা কুরআন থেকেও এরকম কোন আয়াত পারলে দেখান তো? নাস্তিকান্ধরা নিচের দুটো হাদিস দেখিয়ে দাবি করে নবী (সা) কখনো কখনো দাসদাসী মুক্ত করতে নিরুৎসাহিত এবং খর্ব করতেন। নাস্তিকান্ধরা কোন হাদিস দেখিয়ে মিথ্যা দাবি করে চলুন হাদিস গুলো পড়ি,


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৯২,সহিহ হাদিসঃ মায়মূনাহ বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুমতি ব্যতীত তিনি আপন বাঁদীকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তার ঘরে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -র অবস্থানের দিন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কি জানেন না আমি আমার বাঁদী মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শুন! তুমি যদি তোমার মামাদেরকে এটা দান করতে তাহলে তোমার জন্য বেশি নেকির কাজ হত।-ihadis.com


এই হাদিসে নবীজি (সা) নিরুৎসাহিত করেন নাই বরং উনি বলেছেন যদি নিজের মামাদেরকে এটা দান করতে তাহলে বেশি ভালো হতো। নিজের কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অন্যকে দেয়ার চেয়ে নিজের পরিবারকে দেয়াই বেশি উত্তম। এটাই বুঝানো হয়েছে। এরপরের হাদিস পড়া যাক,


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪২২৭,সহিহ হাদিসঃ 

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যাক্তি তার মৃত্যুকালে নিজের ছয়জন গোলামকে আযাদ করল। অথচ গোলামগুলো ব্যতীত তার আর কোন সম্পদও ছিলও না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ডাকালেন এবং তাদেরকে তিনভাগে ভাগ করলেন। তারপর তাদের মধ্যে লটারী করে দু’জনকে সম্পূর্ণভাবে আযাদ করলেন এবং বাকী চারজনকে গোলাম বানিয়ে রাখলেন। আর তার (মৃতের) প্রতি শক্ত ভাষা প্রয়োগ করলেন।-ihadis.com


এখানেও স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে যে গোলাম ছাড়া উক্ত লোকের আর কোন সম্পদই ছিল না তাই কিছুকে আজাদ করে দিয়ে বাকিদের তার জন্য রেখে দিয়েছেন। এটা উক্ত লোকের উপকারের জন্য। আর মৃতের প্রতি শক্ত ভাষা প্রয়োগ করার দ্বারা অন্যদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে নিজে একেবারে অভাবী হয়ে যেন সব কিছুকে বিক্রি করে না দেয়। উক্ত লোকটি এই ভুলটাই করেছিল তাই শক্ত ভাষায় নিন্দা করেছেন।


নাস্তিকান্ধদের চেতনা এখনো বিবর্তিত হয়ে পুরোপুরি মানুষে রুপান্তর হয়তো হতে পারেনি এই কারণে এসব সহজ বিষয় গুলো নিয়েও ওদের অভিযোগ করতে হবে। আমরা ওদের চেতনার সুস্থ বিবর্তিত হওয়ার আশায় রইলাম।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫২২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি কোন ক্রীতদাস হতে নিজের অংশ মুক্ত করে আর ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকে, তবে তার উপর দায়িত্ব হবে ক্রীতদাসের ন্যায্য মূল্য নির্ণয় করা। তারপর সে শরীকদের তাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করবে এবং ক্রীতদাসটি তার পক্ষ হতে মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু সে পরিমাণ অর্থ না থাকলে তার পক্ষ হতে ততটুকুই মুক্ত হবে যতটুকু সে মুক্ত করেছে-ihadis.com


নাস্তিকান্ধদের অভিযোগ ক্রীতদাস এক মানুষ অথচ এর মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে যা অনৈতিক। প্রথম কথা হচ্ছে এটা যে অনৈতিক এটা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করে দিলেন? যদি বলে বিবেক তাহলে আপনার বিবেক দিয়ে দুনিয়ার মানুষ চলে না। সবার নিজের নিজের বিবেক আছে, আছে চিন্তা করার ক্ষমতা। যদি বলেন রাষ্ট্র তাহলে আগেই পড়ে এসেছেন যে পূর্বের রাষ্ট্রে দাসদেরকে নির্মম অত্যাচার করাকেই বৈধ হিসেব মনে করা হতো আর আপনাদের নাস্তিক্যধর্ম এবং বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে এসব অত্যাচার সম্পূর্ণ জায়েজ। সেখানে ইসলামে এসে এসবকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একজন দাসকে সঠিক মূল্য দিয়ে কিনে মুক্ত করার ইচ্ছা করে সেটা আর যাই হউক নাস্তিকরা এটাকে খারাপ প্রমাণ করতে পারবে না।

আপনি যদি এমন কোনো স্থানে যান যেখানে দাস প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এমনকি আপনার হাতে কোনো ক্ষমতা নেই এই ক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? অথচ আপনি চাচ্ছেন দাসদেরকে মুক্ত করে দিতে? আপনি যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই সেখান থেকে দাস কিনবেন কিছু দাসদেরকে সুযোগ করে মুক্তি দিয়ে দিবেন এবং কিছু দাস নিজের জন্য রেখে দিবেন যাতে আপনার টিম শক্তিশালী হয় এমনকি আপনার কেনা দাসদের মধ্যে যদি কেউ আপনার সাথেই গাদ্দারি করে আপনি অবশ্যই তাকে অন্যত্র বিক্রি করে দিবেন। এভাবে সব মিলিয়ে ধিরে ধিরে আপনি দাস সিস্টেমকে বিলুপ্ত করতে পারেন। সন্দেহ নেই এটা অনেক লম্বা প্রসেস কিন্তু এটাই যৌক্তিক। কিন্তু আপনি যদি সেই জায়গায় গিয়ে শুরুতেই বলে দেন আপনি দাস সিস্টেম পুরো বিলুপ্ত করে দিবেন এটা অযৌক্তিক কথা ছাড়া আর কিছুই হবে না।


ইসলাম বর্বর দাসত্ববাদকে আছে?

ইসলাম দাসকে দাসত্বে না বরং দায়িত্বে নিয়ে আসে। দাসত্ব বলতে মালিক ইচ্ছা করলে নির্যাতন অত্যাচার যা মনে চায় সবই করতে পারবে এরকম আচরণ ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। বরং ইসলাম যা করে একজন দাসকে কিনে নিজের দায়িত্বে নিয়ে আসে দাসত্বে নয়। একজন দাসের সব মানবিক প্রয়োজন তার মালিককে পূরণ করতে বাধ্য করেছে ইসলাম। একজন দাসের খাদ্য থেকে নিয়ে বিয়ে করা পর্যন্ত সব অধিকার মুনিবকে সম্পূর্ণ করতে হবে। এটাকে কিভাবে দাসত্ব বলা যায়? তাই এই মিথ্যাকথা বলার সুযোগ নেই যে ইসলাম দাসদের জন্য যতোই মানবিক বিধান দেক না কেন স্বয়ং দাসত্বটাই তো অমানবিক। একজন মানুষ কখনোই অন্য মানুষকে নিজের দাসত্বে নিয়ে আসতে পারে না কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে আমরা সবাই একমাত্র আল্লাহর দাস। হ্যাঁ, তবে একজন মানুষ অন্য মানুষকে নিজের দায়িত্বে নিয়ে আসতে পারে। এটা মোটেও দাসত্ব নয়।


ইসলামের দৃষ্টিতে দাসকে দাসই বলা যাবে না বরং বলতে হবে আমার বালক, আমার খাদেম চিন্তা করা যায়? যেই যুগে দাসদেরকে অত্যাচার নির্যাতন করা সম্পূর্ণ বৈধ সেখানে ইসলাম এসে বলছে দাসদেরকে দাসই বলা যাবে না। এটাকে কিভাবে অমানবিক বলবেন? চিন্তা করুন? আর কতো নাস্তিকান্ধতায় ভুগবেন? হাদিস গুলো পড়া যাক।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ২৫৫২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তোমাদের কেউ যেন এমন কথা না বলে “তোমার প্রভুকে আহার করাও” “তোমার প্রভুকে অযু করাও” “তোমার প্রভুকে পান করাও” আর যেন দাস ও বাঁদীরা এরূপ বলে, “আমার মনিব” “আমার অভিভাবক”, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে “আমার দাস, আমার দাসী”। বরং বলবে- ‘আমার বালক’ ‘আমার বালিকা’ ‘আমার খাদিম’।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ২০৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ ‘আমার বান্দা’ ‘আমার বান্দী’ বলবে না। তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা এবং তোমাদের সব মহিলা আল্লাহর বান্দী। বরং সে যেন বলে, আমার ছেলে, আমার মেয়ে, আমার যুবক, আমার যুবতী।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ২০৯,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন আমার দাস, আমার দাসী না বলে। ক্রীতদাসও যেন আমার প্রভু না বলে। সে বলবে, আমার যুবক, আমার যুবতী,আমার নেতা। তোমাদের প্রত্যেকেই দাস,কেবল মহামহিম আল্লাহই হচ্ছেন রব প্রভু।-ihadis.com


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৭৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ‘আমার দাস ও আমার দাসী’ না বলে এবং অধীনস্থরাও যেন ‘আমার রব, আমার রাব্বাতী’ না বলে। বরং মনিব তার দাসকে বলবে, ফাতায়া ও ফাতাতী আমার যুবক ও আমার যুবতী। আর অধীনস্থ লোকেরাও বলবে, আমার সাইয়িদ আমার সাইয়িদাহ আমার নেতা ও আমার নেত্রী। কেননা তোমরা সবাই গোলাম। মহান আল্লাহই হলেন একমাত্র রব।-ihadis.com


এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে এসব হাদিসে বলা হচ্ছে দাসদেরকে দাস বলা যাবে না অথচ অন্য হাদিসে দাস, ক্রীতদাস শব্দ পাওয়া যায়, এরকম কেন? প্রথম জবাব হচ্ছে, যেসব হাদিসে দাস-ক্রীতদাস, দাসী ইত্যাদি শব্দ আছে এসব সেই দাসদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে যারা এখনো মুসলিমদের দায়িত্বে আসেনি। দ্বিতীয় জবাব এভাবে বলা যায়, যেমন, দাস শব্দ দাসত্ব হিসেবে বলা যাবে না তবে নামে মাত্র বলা যেতে পারে। তাচ্ছিল্যতার সাথেও দাস দাসী বলা যাবে না এতে সে লোক কষ্ট পেতে পারে। যেসব হাদিসে দাস-দাসী বলা আছে সেখানে তাচ্ছিল্যতার সাথে বলা হয়নি বরং তাদের আগের পরিচয়ে সম্বোধন করা হয়েছে।


সিলসিলা সহিহা, হাদিসঃ ৫৬, সহিহ হাদিসঃ 

য়াজ ইবনু হিমার থেকে বর্ণিতঃ ইয়াজ ইবনু হিমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি নাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আমার কাছে ওহী প্রেরন করেছেন যে, তোমরা নম্রতা অবলম্বন কর। একজন যেন অন্যজনের উপর গর্ব-অহংকার না করে এবং একে অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার না করে। - ihadis.com


বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ১৫২৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইয়ায্ ইবনু হিমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ্ আমার প্রতি ওয়াহী (প্রত্যাদেশ) পাঠিয়েছেন যে, তোমরা আপোষে বিনয়-নম্রতার সাথে চলো। যাতে তোমাদের কেউ কারো উপর অত্যাচার-অনাচার করতে না পারে এবং তোমাদের একজন অপরের উপর ফখর (গর্ব) না করে।- ihadis.com


ইসলামে দাসদের নির্যাতনের আইন আছে?

নাস্তিকরা এই হাদিস দেখিয়ে দাবি করে ইসলামে দাসদেরকে নির্যাতন করবার বিধান আছে।

Sahih Al-bukhari, Vol-3, Page 421, Dr. Muhammad Muhsin khan, Darus salam Publications, Saudi Arabia. সুত্রে একটি অনুচ্ছেদ যেখানে লেখা আছে “ If somebody beats a slave, he should avoid his face” অনুচ্ছেদের নিচে এই হাদিসে বলা আছে, “If somebody fight (or beats somebody) then he should avoid (hitting) the face”


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ২৫৫৯, সহিহ হাদিস,অনুচ্ছেদঃ ক্রীতদাসের মুখমণ্ডলে মারবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা হতে বিরত থাকে।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৭৩, সহিহ হাদিস, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার খাদেমকে মারধর করলে সে যেন মুখমণ্ডল পরিহার করে।-ihadis.com 


পাঠক খেয়াল করুন ইসলাম যদি অন্যায়ভাবে নির্যাতনের আইনই দিতো তাহলে মুখে মারতে নিষেধ করলো কেন? মুখে মারলে কি এমন সমস্যা? তাই না? তবে ইসলামে দাস বা দাসী যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে তাদেরকে শাস্তি দেয়া যাবে। কিন্তু নির্যাতন অত্যাচার না। আসুন অন্য হাদিস থেকে স্পষ্ট জেনে নেই।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৫৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বাঁদী যিনায় লিপ্ত হলে তাকে চাবুক লাগাবে। আবার যিনা করলে আবারও চাবুক লাগাবে। তৃতীয়বার বা চতুর্থবার বলেছেন, একগাছি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে ফেলবে।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বাঁদী যিনায় লিপ্ত হলে তাকে চাবুক লাগাবে। আবার যিনা করলে আবারও চাবুক লাগাবে। তৃতীয়বার বা চতুর্থবার বলেছেন, একগাছি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে ফেলবে।-ihadis.com


নবী মোহাম্মদ (সা) কি এটা বলেছেন যে তোমরা দাসদাসীদেরকে নির্যাতন অত্যাচার করতেই থাকো? তাহলে নাস্তিকদের প্রতারণার উদ্দেশ্য কি? এরপরে নাস্তিকরা আরেকটি হাদিস দেখিয়ে প্রশ্ন করে যে স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করতে নিষেধ কেন করা হবে?


বুলগুল মারাম, হাদিসঃ১০৬৪, সহিহ হাদিস, আবদুল্লাহ বিন যাম’আহ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না।-ihadis.com


খুবই সহজ উত্তর। তৎকালীন সময়ে গোলামদেরকে প্রচুর নির্যাতন করা হতো আর সেভাবে নির্যাতন বা প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এই হাদিস থেকে তো এটা বলা হয়নি যে গোলামকে গোলামের মতো প্রহার করো? আসলে নাস্তিকদের এসব ভিত্তিহীন দাবি কারণ এই হাদিস থেকে প্রমাণ হয় না যে দাসদেরকে নির্যাতন করা যাবে। এরপরে নাস্তিকরা আরেকটি হাদিস দেখিয়ে দাবি করে হযরত আলী (রা) এক দাসকে মারধর করলে নবী মুচকি হেঁসে দেন- এই হাদিস কি প্রমাণ না যে ইসলামে দাসকে নির্যাতন করা জায়েজ?


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ১৮১৮, হাসান হাদিস,আসমা বিনতু আবূ বাক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে রওয়ান হলাম। আমরা আল-আরজ নামক স্থানে পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাত্রাবিরতি করেন এবং আমরা ও যাত্রাবিরতি করি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাশে বসলেন আর আমি আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর পাশে বসি। আবূ বকর (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মালপত্র একত্রে একটি উটের পিঠে আবূ বকর (রাঃ) এর এক ক্রীতদাসের নিকট ছিলো। আবূ বকর (রাঃ) তার আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। এমন সময় সে হাযির হলো, কিন্তু তার সাথে উট ছিল না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার উট কোথায়? সে বললো, গত রাতে তা আমি হারিয়ে ফেলেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, একটিমাত্র উট, সেটাও হারিয়ে ফেললে? এই বলে তিনি তাকে মারধর করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে বললেনঃ তোমরা এই ইহরামধারী লোকটির দিকে দেখো, সে কি করছে? ইবনু আবূ রিযমা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে শুধু বললেন, তোমরা এ মুহরিম লোকটির দিকে দেখো, সে কি করছে”।-ihadis.com


এই হাদিসের উপরের অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছে যে “আদব শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে মুহরিম কর্তৃক নিজ চাকরকে শাস্তি প্রদান” আর ইসলামে দাস যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে শাস্তি দেয়া বৈধ। নির্যাতন নয়। মুক্তচিন্তায় দাস রেখে সেই দাসকে কারণ ছাড়াই নির্যাতন করা, অত্যাচার করা খুন করা, হত্যা করা বৈধ। কিন্তু ইসলামে এসব আইন নেই। পাঠক খেয়াল করলে দেখবেন, সেই দাসটি উট হারিয়ে ফেলেছিল এই কারণেই আলী (রা) তাকে শাস্তি দিয়েছিল। উদাহরণটি বুঝুন, ধরুন আপনি আপনার দারোয়ানকে বললেন আপনার একটিমাত্র গাড়ি পাহারা দিয়ে রাখতে । কিন্তু সে নিজের কাজকে অবহেলা করে যার কারণে আপনার গাড়ি ধরুন কোনো নাস্তিক মুক্তচিন্তায় চুরি করে নিয়ে গেলো। আপনার কি রাগ হবে না সেই দারোয়ানের উপর? এখন আপনি যদি রেগে গিয়ে দুটো পিঠে দুটো চর মারেন এটা কেন খারাপ হবে? ঠিক এই ব্যাপারটি ঘটেছে উক্ত হাদিসে। একটি মাত্র উট ছিল সেটাও হারিয়ে ফেলেছিল সেই দাস এই কারণেই শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু এখান থেকে প্রমাণ হয় না যে ইসলামে দাস নির্যাতন জায়েজ।


নবীজি (সা) দাসদেরকে মারধর করাটা পছন্দ করতেন না যদিও ইসলামে দাসদেরকে শাস্তি দেয়া জায়েজ আছে। এই হাদিসটি পড়ুন। যেখানে সাহাবিরা নবীকে খুশি করতে দাস মুক্ত করে নিতেন এবং দাসদেরকে মারধর করা বন্ধ করে নিতেন। এই হাদিসটি শক্তিশালী প্রমাণ যে ইসলামে অন্যায়ভাবে দাসদেরকে নির্যাতন করা জায়েজ নেই।


রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৬১২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ মাসঊদ বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি একদা আমার একটি গোলামকে চাবুক মারছিলাম। ইত্যবসরে পিছন থেকে এই শব্দ শুনতে পেলাম ‘জেনে রেখো, হে আবূ মাসঊদ!’ কিন্তু ক্রোধান্বিত অবস্থায় শব্দটা বুঝতে পারলাম না। যখন সেই (শব্দকারী) আমার নিকটবর্তী হল, তখন সহসা দেখলাম যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) । তিনি বলছিলেন, ‘জেনে রেখো আবূ মাসঊদ! ওর উপর তোমার যতটা ক্ষমতা আছে, তোমার উপর আল্লাহ তা‘আলা আরও বেশি ক্ষমতাবান।’ তখন আমি বললাম, ‘এরপর থেকে আমি আর কখনো কোন গোলামকে মারধর করব না।’এক বর্ণনায় আছে, তাঁর ভয়ে আমার হাত থেকে চাবুকটি পড়ে গেল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ওকে স্বাধীন ক‘রে দিলাম।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘শোন! তুমি যদি তা না করতে, তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে অবশ্যই দগ্ধ অথবা স্পর্শ করত।’’-ihadis.com


তাছাড়া ইসলামে জুলুম সম্পূর্ণ নিষেধ।

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ১৪৯৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ যার্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাঁর প্রভু আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেনঃ হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুম করাকে নিজের উপর হারাম করেছি! এবং ওটা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি। অতএব, তোমরা পরস্পরের প্রতি যুলুম করো না।-ihadis.com


বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ১৪৯৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, (ক্রয় করার ভান করে) মূল্য বৃদ্ধি করে ধোঁকা দিও না। একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না। একে অপরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন (অবজ্ঞা প্রকাশ) করবে না। তোমাদের একজনের সাওদা করা শেষ না হলে ঐ বস্তুর সাওদা বা কেনা-বেচার প্রস্তাব করবে না। হে আল্লাহ্‌র বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, অসম্মান করবে না, তুচ্ছ ভাববে না। ‘ধর্ম ভীরুতা এখানে’-এটা বলার সময় তিনি স্বীয় বক্ষস্থলের প্রতি তিনবার ইঙ্গিত করেছিলেন। কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করাটা মন্দ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট (অর্থাৎ এরূপ তুচ্ছ জ্ঞান প্রদর্শন দ্বারা পাপ কার্য হওয়া সুনিশ্চিত।) এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে খুন করা, তাঁর মাল গ্রাস করা ও সম্মানে আঘাত দেয়া হারাম।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৭০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি আমার এক গোলামকে প্রহার করছিলাম। আমি আমার পিছন থেকে ডাক শুনলামঃ হে আবু মাসউদ! নিশ্চয় আল্লাহ তোমার উপর, গোলামের উপর তোমার ক্ষমতার চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর ওয়াস্তে সে আযাদ। তিনি বলেনঃ তুমি যদি তা না করতে তবে দোযখ তোমাকে অবশ্যই স্পর্শ করতো অথবা দোযখ তোমাকে অবশ্যই গ্রাস করতো (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)।-ihadis.com


অপরাধ ছাড়া কোনো দাসকেই প্রহার করা যাবে না। যদি করে তাহলে এর বিনিময়ে সেই দাসকে আজাদ করে দিতে হবে। এই হাদিস গুলো প্রমাণ করে যে অন্যায়ভাবে দাসদেরকে মারা ইসলামে নিষেধ।


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৭৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

যাযান আবু উমার (র) থেকে বর্ণিতঃআমরা ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি তার এক গোলামকে ডাকলেন। তাকে তিনি প্রহার করেছিলেন। তিনি তার পিঠ উদলা করলেন এবং বললেন, তুমি কি ব্যথা অনুভব করছো? সে বললো, না। তিনি তাকে আযাদ করে দিলেন। অতঃপর তিনি মাটি থেকে এক খণ্ড কাঠ তুলে নিয়ে বলেন, এর দ্বারা এই কাষ্ঠ খণ্ডের ওজনের পরিমাণ সওয়াবও আমি পাবো না। আমি বললাম, হে আবদুর রহমানের পিতা! আপনি একথা বলেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নিজ গোলামকে বিনা অপরাধে প্রহার করলো অথবা তার মুখমণ্ডলে চপেটাঘাত করলো, তার কাফফারা হলো তাকে আযাদ করে দেয়া। (মুসলিম, আবু দাউদ)।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৮০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আম্মার ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃযে কেউ নিজ গোলামকে নির্যাতকরূপে প্রহার করবে, তাকে কিয়ামতের দিন শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৮৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করলে, কিয়ামতের দিন তার থেকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে (বাযযার, তাবারানী)।-ihadis.com


শামায়েলে তিরমিযি, হাদিসঃ ২৬৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৮৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি।-ihadis.com


এই হাদিস দেখিয়ে নাস্তিকরা দাবি করে নামাজি না হলে দাসদেরকে মারা যাবে তাহল?

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৬২, হাসান হাদিস, আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) দুইটি গোলামসহ আসলেন। এদের একটি আলী (রাঃ)-কে দিয়ে তিনি বলেনঃ তাকে মারধর করো না। কেননা নামাযীকে নির্যাতন করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। সে আমাদের নিকট আসার পর থেকে আমি তাকে নামায পড়তে দেখেছি। অপর গোলামটি তিনি আবু যার (রাঃ)-কে দিয়ে বলেনঃ তার সাথে সদয় ব্যবহার করো। তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ সে কি করছে? আবু যার (রাঃ) বলেন, আপনি আমাকে তার সাথে সদয় ব্যবহার করতে বলেছেন। তাই আমি তাকে দাসত্বমুক্ত করে দিয়েছি (আবু দাউদ)।-ihadis.com


এই হাদিসটিও একটি প্রমাণ যে ইসলামে দাসদেরকে নির্যাতন করা বৈধ নয়। অনেক নাস্তিক বলে থাকে সাহাবীরা নাকি দাসদেরকে নির্যাতন করে মজা নিতো। যদি তাই হতো তাহলে এখানে মারতে নিষেধ করা হয়েছে কেন? তাছাড়া স্পষ্ট হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে যে, সদয় ব্যাবহার করতে। আবু যার (রাঃ) বলেন, আপনি আমাকে তার সাথে সদয় ব্যবহার করতে বলেছেন। তাই আমি তাকে দাসত্বমুক্ত করে দিয়েছি। নাস্তিকদের অন্যান্য অভিযোগেও কোটি কোটি মিথ্যাচার রয়েছে। ইসলামের আইনকে নাস্তিকদের মুক্তচিন্তার আশ্রয়ে বিবর্তিত করে দেখাতেও লজ্জা করে না।


এরপরে নাস্তিকরা সিরাত থেকে এই তথ্য দেখিয়ে বলে আলী (রা) বারিরা নামে এক দাসীকে ভীষণ প্রহার করেন। এটাই প্রমাণ যে দাসীকে ধুমধাম মারধর করা ইসলামের বিধান। 

সিরাতুন নবী (সাঃ), ইবনে হিশাম, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৯, ৩১০ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়,আয়িশা (রা) বলেন,আলী ইবন আবু তালিব তার পাশে এসে দাঁড়ান। তারপর তিনি তাকে ভীষণ প্রহার করলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা)কে সত্য সত্য সব বলবি। 


ইসলাম নিয়ে নাস্তিকরা যেই অন্ধবিশ্বাস করে তার পক্ষে নাস্তিকরা জাল জইফ কিছু পেলে লুফে নেয়। হযরত আলী (রা) দ্বারা বারিরা নামের যেই দাসীকে প্রহার করার কথা এসেছে সেটা সহিহ নয়(৪৫)। তাই নাস্তিকদের কোনো সুযোগ নেই এই তথ্য দিয়ে ইসলামের বিধান বানিয়ে ফেলা। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই ঘটনাটি সহিহ এরপরেও কোনো সমস্যা নেই কারণ সেই দাসী যাতে সত্যি সত্যি সব বলে দেয় নাস্তিকদের মতো মিথ্যার আশ্রয় যাতে গ্রহণ না করে এই কারণে প্রহার করা হয়েছিল। ইসলামবিরোধীরা লাজলজ্জার মাথা খেয়ে এভাবেই তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকেন। আসুন আরও তথ্য জেনে নেই ইসলামে দাসদের সাথে আচরণের আইন কেমন হবে?


সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ২৫৫৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তোমাদের কারো খাদিম খাবার নিয়ে হাযির হলে তাকেও নিজের সাথে বসানো উচিত। তাকে সাথে না বসালেও দু’ এক লোকমা কিংবা দু’ এক গ্রাস তাকে দেয়া উচিত। কেননা, সে এর জন্য পরিশ্রম করেছে।- ihadis.com


সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৫১৫৭,৫১৫৮,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আল-মা’রূর ইবনু সুয়াইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদা আমি আর-রাবাযাহ নামক স্হানে আবূ যার (রাঃ) কে দেখতে পেলাম। তখন তিনি একটি চাদর পরিহিত ছিলেন এবং তার দাসও অনুরূপ চাদর পরিহিত ছিল। আল-মা’রুর (রাঃ) বলেন, লোকেরা বললো, হে আবূ যার ! আপনি যদি আপনার দাস যে কাপড় পরেছে তা নিয়ে নিতেন তাহলে আপনার জোড়া পুরা হতো আর আপনার দাসকে অন্য পোশাক পরাতেন তাহলে ভাল হতো। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি এক লোককে, (যার মা অনারব ছিলো) গালি দিয়েছিলাম এবং মন্দ ব্যবহার করেছিলাম। এতে সে আমার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! তুমি এমন ব্যক্তি যে, তোমার মধ্যে জাহিলিয়াত রয়েছে। তিনি আরো বললেনঃ এরা তোমাদের ভাই; আল্লাহ তাদের উপর তোমাদেরকে মর্যাদা দিয়েছেন। এদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল না লাগে তাকে বিক্রি করে দাও। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে শাস্তি দিও না। - ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ২৬৮০, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি চীৎকার করতে করতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার কী হয়েছে? সে বললো, আমার মনিব আমাকে তার এক দাসীকে চুমা দিতে দেখে আমার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলেছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ লোকটিকে আমার নিকট নিয়ে এসো। কিন্তু তাকে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেল না।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যাও, তুমি স্বাধীন। সে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কে আমাকে সাহায্য করবে? রাবী বলেন, সে বলছিল, আপনি কী মনে করেন, আমার মনিব যদি আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে আবার গোলাম বানায়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাকে সাহায্য করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য।-ihadis.com


সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ২১৭৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ২৯৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলো এবং দু’ রাকাআত নামায পড়লো, তা একটি ক্রীতদাসকে দাসত্বমুক্ত করার সমতুল্য।-ihadis.com


সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৩৬৬৫,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানাধীন ক্রীতদাসের বেলায় নিজের অংশ মুক্ত করে দিবে বাকী অংশ তার সম্পদ দ্বারাই মুক্ত করবে। আর যদি সে বিত্তশালী না হয় তাহলে সে ক্রীতদাসকে উপার্জনের মাধ্যমে মুক্ত হওয়ার চেষ্টায় নিযুক্ত করতে হবে। তবে তার উপর তার সামর্থ্যের বাইরে বোঝা চাপানো যাবে না।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মারুর (রহ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে।-ihadis.com


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৫১৬৭,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মু’আবিয়াহ ইবনু সুয়াইদ ইবনু মুক্বাররিন (রহঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি আমাদের এক দাসকে চড় মারলাম। আমার পিতা তাকে ও আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তার থেকে প্রতিশোধ নাও। আমার নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে মুক্বাররিন গোত্রের সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি খাদেম ছিল। আমাদের মধ্যকার একজন তাকে চড় মারলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ একে মুক্ত করে দাও। তারা বললো, এছাড়া আমাদের কোন খাদেম নেই। তিনি বললেনঃ এরা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সে তাদের সেবা করবে। তারা স্বাবলম্বী হলে তাকে যেন মুক্ত করে দেয়া হয়।-ihadis.com


জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ১৯৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট একজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তার কথা শুনে রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরব থাকলেন। সে আবার বললঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তিনি বললেনঃ প্রতিদিন সত্তরবার।-ihadis.com


উসমান (রা) একদিন তাঁর দাসের কান মলে দিলেন ।এরপর বললেন এসো, আমার কান মলে দাও ।দাস বললেন না মালিক, পারব না। উসমান (রা) বলেনঃ এসো বলছি, দাস কান মলে দিলো। উসমান (রা) বলেনঃ এত আস্তে না, জোরে কান মলে দাও আমি কিয়ামতের দিন এর সাজা সইতে পারব না । দাস বলল, মালিক আপনি যে দিনকে ভয় করেন আমিও তো সেই দিনকে ভয় করি(৪৬)। একলোক খানা খাচ্ছিল । পাশে দাস দাড়িয়ে ছিল।খলিফা ওমর (রা) কঠিন ধমক দিলেন, বললেন দাসকে নিয়ে খানা খাও।আরেকদিন গভর্নর সালমান ফারসি (রা) আটার খামির মাখাচ্ছিলেন। (একলোক বলল) আরে সার,আপনি করছেন? (সালমান (রা) বলেন) দাসকে কাজে পাঠিয়েছি। একসাথে দুটো কাজ দিতে চাই না(৪৭)।


ইসলাম দাসদের মুক্তি দিতে উৎসাহিত করেছেঃ

আল কুরআন, সুরা বালাদ, ৯০ঃ ১২ থেকে ১৬ আয়াত থেকে বর্ণিত,

আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি। অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান। এতীম আত্বীয়কে। অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকীনকে।


আল কুরআন, সুরা নিসা ৪: ৯২ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

যে লোক ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত তথা রক্তপণ দিতে হবে যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে।


আল কুরআন, সুরা মায়িদা ৫:৮৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,

প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছো তো দাস মুক্ত করো।


আল কুরআন, সুরা তওবা ৯:৬০ আয়াত থেকে বর্ণিত,  

যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।


আল কুরআন, সুরা নুর ২৪:৩৩ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জান যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে, অর্থ-কড়ি দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে দান কর। তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। যদি কেহ তাদের উপর জোর-জবরদস্তি করে, তবে তাদের উপর জোর-জবরদস্তির পর আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:১৭৭ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণে র উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্ব জন, এতীম-মিসকীন , মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।


আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬:৭১ আয়াত থেকে বর্ণিত,  

আর আল্লাহ রিযক তোমাদের কতককে কতকের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন; কিন্তু যাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তারা তাদের রিয্ক দাসদাসীদের ফিরিয়ে দেয় না। (এই ভয়ে যে,) তারা তাতে সমান হয়ে যাবে। তবে তারা কি আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করছে?


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫১৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ্‌ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত করবেন। সাঈদ ইবনু মারজানা (রাঃ) বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবনু হুসাইনের খিদমতে পেশ করলাম। তখন ‘আলী ইবনু হুসাইন (রাঃ) তাঁর এক ক্রীতদাসের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দীনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে মুক্ত করেদিলেন।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫১৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্‌ ‘আমল উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্‌ ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম? তিনি বললেন, যে ক্রীতদাসের মূল্য অধিক এবং যে ক্রীতদাস তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষণীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ যদি আমি করতে না পারি? তিনি বললেন, তাহলে কাজের লোককে তার কাজে সাহায্য করবে কিংবা বেকারকে কাজ দিবে। আমি আবারও বললাম, এও যদি না পারি? তিনি বললেন, মানুষকে তোমার অনিষ্টতা হতে মুক্ত রাখবে। বস্তুতঃ এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ হতে সাদাকাহ।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫১৯,২৫২০,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আসমা বিনতু আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় ক্রীতদাস মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আলী (রহঃ) দরাওয়ারদী (রহঃ) সূত্রে হিশাম (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় মূসা ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) -এর অনুসরন করেছেন।-ihadis.com


জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ১৫৪২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

সুয়াইদ ইবনু মুকাররিন আল-মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমরা সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মাত্র একজন খাদিম ছিল। আমাদের এক ভাই তাকে থাপ্পর মারে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হুকুম করলেন তাকে মুক্ত করেদেয়ার জন্য।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৩৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃআমার পিতা আমাকে অবগত করলেন যে, হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) জাহিলী যুগে একশ’ ক্রীতদাস মুক্ত করেছিলেন এবং আরোহণের জন্য একশ’ উট দিয়েছিলেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখনও একশ’ উট বাহন হিসেবে দান করেন এবং একশ’ ক্রীতদাস মুক্ত করলেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! জাহেলী যুগে কল্যাণের উদ্দেশে যে কাজগুলো আমি করতাম, সেগুলো সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার পিছনের ‘আমলগুলোর কল্যাণেই তো তুমি ইসলাম কবূল করেছ।-ihadis.com


আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৬২, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাঃ) দুইটি গোলামসহ আসলেন। এদের একটি আলী (রাঃ)-কে দিয়ে তিনি বলেনঃ তাকে মারধর করো না। কেননা নামাযীকে নির্যাতন করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। সে আমাদের নিকট আসার পর থেকে আমি তাকে নামায পড়তে দেখেছি। অপর গোলামটি তিনি আবু যার (রাঃ)-কে দিয়ে বলেনঃ তার সাথে সদয় ব্যবহার করো। তিনি তাকে মুক্ত করেদিলেন। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ সে কি করছে? আবু যার (রাঃ) বলেন, আপনি আমাকে তার সাথে সদয় ব্যবহার করতে বলেছেন। তাই আমি তাকে দাসত্বমুক্ত করে দিয়েছি।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ২৫৩১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবীজীর খিদমতে আগমনকালে আমি পথে পথে কবিতা বলতাম: হিজরতের সে রাত কত না দীর্ঘ আর কষ্টদায়ক ছিল- তবুও তা আমাকে দারুল কুফ্‌র হতে মুক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, পথে আমার এক ক্রীতদাস পালিয়ে গিয়েছিল। যখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর খিদমতে এসে তাঁর হাতে বায়’আত হলাম। আমি তাঁর খিদমাতেই ছিলাম, এ সময় ক্রীতদাসটি এসে হাযির হল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আবূ হুরায়রা! এই যে, তোমার ক্রীতদাস! আমি বললাম, সে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ। এই বলে তাকে মুক্ত করে দিলাম।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ২৬৭৯,হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

সালামাহ বিন ফারওয়াহ্ বিন যিনবা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতার দাদা (যিনবা‘ বিন রাওহ) (রাঃ), তিনি তার এক গোলামকে নির্বীর্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এই অঙ্গহানির কারণে দাসত্বমুক্ত করে দিলেন।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ১৪৩৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

হাকীম ইব্‌নু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ঈমান আনয়নের পূর্বে সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে আমি সদকা প্রদান, দাসমুক্ত করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ন্যায় যত কাজ করেছি, সেগুলোতে সওয়াব হবে কি? তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি যে সব ভালো কাজ করেছ তা নিয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছ তুমি সেসব কাজের সওয়াব পাবে।-ihadis.com


সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৪১৯০,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবূ 'উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি ইবনু 'উমার (রাঃ)- এর কাছে আগমন করলাম, ইতোমধ্যে একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠি অথবা অন্য কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে তার সমতুল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজ ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফ্ফারা হল তাকে মুক্ত করে দেয়া। সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ৫১৬৮, সহিহ হাদিস।


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩৬৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেনঃ আমার মাতা মান্নত অনাদায়ী রেখে ইনতিকাল করেছেন, আমি তাঁর পক্ষ হতে দাসমুক্ত করলে তা কি তার জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তুমি তোমার মাতার পক্ষ হতে গোলাম আযাদ কর।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৩৬৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এক লোক এলো এবং বললো আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ কেন? সে বললোঃ রমযান মাসে আমি দিনে স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ একটি দাস মুক্ত করে দাও। সে বললোঃ আমার কাছে কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে একাধারে দু’মাস সওম পালন কর। সে বললোঃ সে ক্ষমতাও আমার নেই। তিনি বলেনঃ তবে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াও। সে বললঃ সে সামর্থ্যও আমার নেই। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এক বস্তা খেজুর এল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বললোঃ আমি এখানে। রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এগুলো সদকা কর। সে বললোঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার চেয়ে অভাবগ্রস্তকে দিব। সেই সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, মদীনার প্রস্তরময় দু’পার্শ্বের মধ্যে আমাদের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কোন পরিবার নেই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন এমন কি তাঁর চোয়ালের দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল এবং বললেনঃ তবে তোমরাই তা নিয়ে যাও।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৩৭৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবীজি (সা) বলেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াও, রোগীর শুশ্রুষা করো এবং বন্দীকে মুক্ত করো।-ihadis.com


তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন (সংক্ষিপ্ত),১২৫৬,১২৫৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

ইসলাম দাসদেরকে শিক্ষাদীক্ষা অর্জনেরও যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছেখলীফা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ানের আমলে ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রায় সকল প্রদেশই জ্ঞান-গরিমায় যারা সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন দাসদের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রথাটি ক্রমে বিলীন করা অথবা হ্রাস করার জন্যে দাসদেরকে মুক্ত করার ফযিলত কুরআন ও হাদিসে ভুরি ভুরি বর্ণিত হয়েছে, যাতে মনে হয় যেন অন্য কোন সৎকর্ম এর সমকক্ষ হতে পারেনা। ফেকাহর বিভিন্ন বিধি-বিধানে দাসদেরকে মুক্ত করার জন্যে বাহানা তালাশ করা হয়েছে। রোযার কাফফারা, হত্যার কাফফারা, যেহারের কাফফারা ও কসমের কাফফারার মধ্যে দাস মুক্ত করাকে সর্বপ্রথম বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি হাদিসে একথাও বলা হয়েছে যে, কেউ যদি দাসকে অন্যায়ভাবে চপেটাঘাত করে, তবে এর কাফফারা হচ্ছে দাসকে মুক্ত করে দেয়া। সাহাবায় কেরামের অভ্যাস ছিল তাঁরা অকাতরে প্রচুর সংখ্যক দাস মুক্ত করতেন। আন্নাজমূল ওয়াহহাজ গ্রন্থকার কোন কোন সাহাবীর মুক্ত করা দাসদের সংখ্যা বর্ণনা করেছেন, হযরত আয়েশা (রা) ৬৯, হযরত হাকীম ইবনে হেযাম (রা) ১০০, হযরত ওসমান গণি (রা) ২০, হযরত আব্বাস (রা) ৭০, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) ১০০০। হযরত যুল কা’লা হিমইয়ারী (রা) ৮০০০ মাত্র একদিনে, হযরত আবদূর রহমান ইবনে আউফ (রা) ৩০,০০০। - এ থেকে জানা যায় যে, মাত্র ৭ জন সাহাবী ৩৯,২৫৯ জন দাসকে মুক্ত করেছেন। 


বলাবাহুল্য, অন্য আরও হাজারো সাহাবীর মুক্ত করা দাসদের সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি হবে। সাহাবায় কেরাম ইসলাম গ্রহণের পর ব্যাপকভাবে দাসদেরকে মুক্ত করে দেন। নাস্তিকরা এই অবদানকে দুর্বল করবার জন্য কিছু রেফারেন্স দিয়ে দেখায় যে আগেও তো দাস মুক্ত করে দেয়া হতো। হ্যাঁ, আগেও দাস মুক্ত করে দেয়া হতো কিন্তু সেটা ছিল কম। ইসলাম এসে বেশির চেয়ে বেশি দাস মুক্ত করবার জন্য উৎসাহিত করেছে। এটা অস্বীকার করবার সুযোগ নেই।


ইসলামে দাস মুক্তি চুক্তির আইনঃ

আল কুরআন,সুরা নুর ২৪ঃ৩৩ আয়াত থেকে বর্ণিত,

যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জান যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে, অর্থ-কড়ি দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে দান কর। তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। যদি কেহ তাদের উপর জোর-জবরদস্তি করে, তবে তাদের উপর জোর-জবরদস্তি পর আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীরে মাজহারী,৮ খণ্ড, ৪১২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

শুরুতে বলা হয়েছে এবং তােমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চাইলে তার সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তােমরা জানাে এদের মুক্তিদানে কল্যাণ আছে'। এখানে চুক্তিতে আবদ্ধ হও' নির্দেশটি অবশ্যপালনীয় অর্থাৎ ওয়াজিব নয়। বরং এই নির্দেশটি অনুমােদনমূলক অর্থাৎ এরকম করা যেতে পারে কিন্তু এরকম করতেই হবে এমন নয়। হেদায়া প্রণেতাও এরকম লিখেছেন এবং এটাকেই সঠিক বলেছেন। তিনি একথাও বলেছেন যে, আমাদের কোন কোন সম্মানিত পূর্বসূরী চুক্তিতে আবদ্ধ হও' কথাটির অর্থ করেছেন এরকম করা জায়েয। কিন্তু তাঁদের ধারণা সঠিক নয়। সঠিক অর্থ হচ্ছে- এরকম করা মােস্তাহাব। কেননা জায়েয বললে ক্রীতদাসের যােগ্যতা-অযােগ্যতার প্রসঙ্গটি হয়ে যায় নিরর্থক।


নাস্তিকরা তাদের এই অভ্যাস কখনো ত্যাগ করতে পারবে কিনা আমি জানি না কিন্তু নাস্তিকরা কেন জানি ইসলামের অর্ধেক তথ্য দেখাতেই বেশি পছন করে। পাঠক নাস্তিকদেরকে দেখবেন ফকিহদের একটি মাত্র মত তারা তাফসীরে মাজহারী থেকে দেখিয়ে এটা নির্দিষ্ট করে দাবি করতে চাইবে যে আরে সেটা তো ওয়াজিব না এমনিতেই জায়েজ আরকি। সকল আলেমদের নাকি ইজমা আছে যে,এটি অনুমোদনমূলক, বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু আমি তাফসীরে মাজহারী ৮ খণ্ড, ৪১২ পৃষ্ঠা থেকে এমন মর্মে কোনো তথ্যই পেলাম না। নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় এখানে তথ্য নিয়ে কেন মিথ্যাচার করলো পাঠক? আসুন আরেকটি মত আপনাদের সামনে আমি তুলে ধরছি।


তাফসীরে মাজহারী, ৮ খণ্ড, ৪১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কোনাে কোনাে প্রাচীনপন্থি আলেম বলেছেন, এখানে কাতিবু' (চুক্তিতে আবদ্ধ হও) নির্দেশটি ওয়াজিব। আতা এবং ওমর ইবনে দীনারের অভিমতও এরকম। এক বর্ণনানুসারে ইমাম আহমদের অভিমতও এরকম। কিন্তু এ ওয়াজিবের একটি শর্তও রয়েছে। শর্তটি হচ্ছে, ক্রীতদাস বাজারদর অনুসারে চুক্তিবদ্ধ হবে অথবা পরিশােধ করতে চাইবে বাজারদর অপেক্ষা অধিক। বাগবী তার তাফসীরে লিখেছেন, ইবনে সিরীন তার প্রভু হজরত আনাস ইবনে মালেকের নিকট নিবেদন করলেন, আমাকে মুকতাব বানিয়ে দিন। হজরত আনাস তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বললেন না। তখন ইবনে সিরীন অভিযােগ পেশ করলেন হজরত ওমরের কাছে। হজরত ওমর ছড়ি হাতে হজরত আনাসের কাছে এসে বললেন, একে মুকতাব বানিয়ে দাও। হজরত আনাস তাই করলেন।

…………..মালিক যদি তার ক্রীতদাসকে বলে আমি তােমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদানের শর্তে মুকাতাব বানিয়ে দিলাম' এবং ক্রীতদাস যদি বলে আমি স্বীকার করলাম', তবে ইমাম আবু হানিফার মতে চুক্তি পূর্ণ হয়ে যাবে। মালিকের তখন আর একথা বলার প্রয়ােজন নেই যে, যদি তুমি এই পরিমাণ অর্থ প্রদান করাে, তবে তুমি মুক্ত'। ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদও এরকম বলেন। ইমাম শাফেয়ী বলেন, কেবল বর্ণিত কথাগুলাের দ্বারা মুকাতাবের চুক্তি পূর্ণ হবে না। বরং তাকে বলতে হবে আমি তােমাকে কিসতি অনুসারে এতাে টাকা প্রদানের শর্তে মুকতাব করলাম, তুমি যদি এই অর্থ এই নিয়মে পরিশােধ করাে, তবে তুমি মুক্ত'। একথাগুলাে মুখে না বলে মনে মনে নিয়ত করলেও চলবে। এরকম বলা হয়েছে মিনহাজ' পুস্তকে।


নাস্তিকরা ভালো করেই জানে তাদের অন্ধভক্তরা তথ্য গুলো যাচাই করে দেখে না। কারণ তাদের ভক্তরা এই বিশ্বাস করে নেয় যে যেহেতু বইয়ের স্কিন শর্ট তুলে দিয়েছে সেহেতু সঠিক তথ্যই বলবে। কিন্তু আমরা যারা নাস্তিকদেরকে জানি তথা তাদের চুরিবিদ্যা বিষয় আমরা যারা সচেতন তারা ভালো করেই জানি যে নাস্তিকরা আর যাই হোক ইসলামকে সঠিকভাবে মানুষকে জানতে দিতে চাইবে না। এটা নাস্তিকদের স্বভাব। নাস্তিকরা সব সময় ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করবেই।


তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, ষষ্ঠ খণ্ড, ৪৪৭ ও ৪৪৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে (দাস হোক কিংবা দাসী) যারা মােকাতাব হতে ইচ্ছুক (উত্তম এই যে,) তাদেরকে মোকাতব করে দাও যদি তাদের মধ্যে কল্যাণ (অর্থাৎ কল্যাণের চিহ্ন) দেখতে পাও। আর আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত অর্থসম্পদ থেকে তাদেরকেও দান কর (যাতে দ্রুত মুক্ত হতে পারে)। তোমাদের (অধিকারভুক্ত) দাসীদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করাে না (বিশেষত) যদি তারা সতী থাকতে চায় (এবং তোমাদের এই হীন কর্ম) শুধু এ কারণে যে, তোমরা পার্থিব জীবনের কিছু উপকার (অর্থাৎ ধনসম্পদ) লাভ করবে। যে ব্যক্তি তাদেরকে বাধ্য করবে এবং তারা বাঁচতে চাইবে,) আল্লাহ তা’লা তাদের ওপর জবরদস্তি করার পর (তাদের প্রতি) ক্ষমাশীল, করুণাময়। পূর্ববর্তী আয়াতে অধিকারভুক্ত গোলাম ও বাদীদের বিবাহের প্রয়োজন দেখা দিলে মালিকদেরকে বিবাহের অনুমতি দেওয়ার আদেশ করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে, তারা যেন নিজেদের স্বার্থের খাতিরে গোলাম ও বাদীদের স্বভাবজাত স্বার্থকে উপেক্ষা না করে। এটা তাদের জন্য উত্তম। এই আদেশের সার-সংক্ষেপ হচ্ছে অধিকারভুক্ত গোলাম ও বাদীদের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদেরকে কষ্ট থেকে বাঁচানো। এর সাথে সম্পর্ক রেখে আলোচ্য আয়াতে মালিকদেরকে দ্বিতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই যে, গোলাম ও বাদীর যদি মালিকদের সাথে মুক্তির উদ্দেশ্যে লিখিত চুক্তি করতে চায়, তবে তাদের এই বাসনা পূর্ণ করাও মালিকদের জন্য উত্তম ও সওয়াবের কাজ। হিদায়ার গ্রন্থকার এবং অধিকাংশ ফিকাহবিদ এই নির্দেশকে মুস্তাহাবই স্থির করেছেন। অর্থাৎ অধিকারভুক্তদের সাথে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া মালিকদের জন্য ওয়াজিব নয় কিন্তু মুস্তাহাব ও উত্তম। এই চুক্তির রূপরেখা এরূপ কোন গোলাম অথবা বাদী তার মালিককে বলবে, আপনি আমার ওপর টাকার একটি অঙ্ক নির্ধারণ করে দিন। আমি পরিশ্রম ও উপার্জনের মাধ্যমে এই টাকা আপনাকে পরিশোধ করে দিলে আমি মুক্ত হয়ে যাব। এরপর মালিক এই প্রস্তাব মেনে নিলে চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেল। অথবা মালিক স্বেচ্ছায় গোলামকে প্রস্তাব দেবে যে, এই পরিমাণ টাকা আমাকে দিতে পারলে তুমি মুক্ত হয়ে যাবে। গোলাম এই প্রস্তাব মেনে নিলে চুক্তি হয়ে যাবে। যদি প্রভু ও গোলামের মধ্যে প্রস্তাব ও পেশ গ্রহণের মাধ্যমে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়, তবে শরীয়তের আইনে তা অপরিহার্য হয়ে যায়। মালিকের তা ভঙ্গ করার অধিকার থাকবে না। যখনই গোলাম নির্ধারিত অঙ্ক পরিশোধ করে দেবে, তখনই আপনা-আপনি মুক্ত হয়ে যাবে।

 

তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে কিছু তথ্য প্রমাণ পড়ে নেই আসুন। নিরপেক্ষভাবে দেখলে দুটো অভিমতের কথাই পাওয়া যায়। কিন্তু নাস্তিকরা মাত্র একটি অভিমত দেখায় বাকি গুলো দেখাতে চায় না। মুকাতাবের আইনটি আসলে ইসলামের অপশনাল একটি আইন। অর্থাৎ মুনিব ও দাস যদি উভয় চুক্তিতে রাজি হয় তাহলে করতে পারে না চাইলে করবে না।


তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদঃ ১৫ খণ্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

অধিকাংশ আলেম বলেন যে, এ হুকুম জরুরী নয়। এটা ফরযও নয় এবং ওয়াজিবও নয়, বরং মুস্তাহাব। মনিবের এ অধিকার আছে যে, তার গােলাম কোন শিল্পকার্য জানলে যদি তাকে বলে যে, তাকে সে এতাে এতাে টাকা দিবে এবং এর বিনিময়ে সে তাকে আযাদ করে দিবে। তবে এটা মনিবের ইচ্ছাধীন। ইচ্ছা হলে সে তার সাথে চুক্তি করবে এবং না হলে না করবে। আলেমদের একটি জামাআত আয়াতের বাহ্যিক শব্দের প্রতি লক্ষ্য রেখে বলেন যে, গােলাম যদি তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তি করতে চায় তবে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া তার মনিবের উপর ওয়াজিব।  

বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ)-এর যুগে হযরত আনাস (রাঃ)-এর সীরীন নামক একজন সম্পদশালী গােলাম তাঁর কাছে আবেদন জানায় যে, তিনি যেন তার সাথে তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হন। কিন্তু হযরত আনাস (রাঃ) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তখন গােলামটি হযরত উমার (রাঃ)-এর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করেহযরত উমার (রাঃ) তখন হযরত আনাস (রাঃ)-কে ডেকে গােলামের সাথে চুক্তি করতে নির্দেশ দেন। এবারেও হযরত আনাস (রাঃ) অস্বীকৃতি জানান। তখন হযরত উমার (রাঃ) তাঁকে চাবুক মারেন এবং গােলামের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেন। অতঃপর তিনি কুরআনে কারীমের এ আয়াতটি তার সামনে তিলাওয়াত করেন।


বিভিন্নি ফকিহদের বিভিন্ন মতামত থাকলেও হযরত উমার (রা) এর হাদিসটি থেকে এটা বুঝা যায় যে দাস যদি নিজের মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করাতে চায় মালিকের উচিত হবে সেই চুক্তিতে সম্মতি দেয়া। হযরত উমার (রা) মুকাতাবের বিষয়টিকে কেমন পর্যায়ে গুরুত্ব দিলে মালিক চুক্তিতে রাজি না হলে উনি চাবুক মেরে বাধ্য করতেন চুক্তি করতে একবার ভাবুন তো। হযরত আলী (রা) থেকে হাদিস পাওয়া যে উনি চাইতেন দাসরা যাতে নিজের মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি হয়ে যাক।


রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৪৯৪, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একজন ‘মুকাতিব’ (লিখিত চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কৃতদাস) তাঁর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘আমি আমার নির্ধারিত অর্থ দিতে অপারগ, অতএব আপনি আমাকে সাহায্য করুন।’ (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, ‘তোমাকে কি এমন দুআ শিখিয়ে দিব না, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর পর্বত সমপরিমাণ ঋণও থাকে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেবেন। বল, ‘আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা আন হারা-মিক, অআগনিনী বিফায্বলিকা আম্মান সিওয়া-ক।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তোমার হালাল রুযী দিয়ে হারাম রুযী থেকে আমার জন্য যথেষ্ট কর এবং তুমি ছাড়া অন্য সকল থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী কর।-ihadis.com


মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ২৪৪৯, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদিন তাঁর কাছে একজন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস) এসে বললো, আমি আমার কিতাবাতের (মুনিবের সাথে সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের) মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না, আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে তিনি [‘আলী (রাঃ)] বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছেন? (এ দু‘আর মাধ্যমে) যদি তোমার ওপর বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝাও থাকে, আল্লাহ তা পরিশোধ করে দেবেন। তুমি পড়বে, ‘‘আল্ল-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন্ হারা-মিকা, ওয়া আগ্‌নিনী বিফাযলিকা ‘আম্মান্ সিওয়াক’’ অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হালাল [জিনিসের] সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখো এবং তুমি তোমার রহমতের মাধ্যমে আমাকে পরমুখাপেক্ষী হতে রক্ষা করো।-ihadis.com


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৬৭১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদিন বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, আমার মনিব আমাকে প্রতি বছর একটি করে নয় বছরে নয়টি ঊকীয়্যাহ্‌ (চল্লিশ দিরহামে এক ঊকীয়্যাহ্‌) আদায় করার শর্তে আমাকে মুক্তি দানের ব্যাপারে লিখিত চুক্তি করেছে। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি ['আয়িশাহ্‌ (রাঃ)] তাকে বললাম, তোমার মনিব যদি এ শর্তে রাজী হয় যে তোমার মুক্তিপণ এক সঙ্গে আদায় করে দিলে তোমার ‘ওয়ালা’ আমি পাব তাহলে আমি তোমাকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই। তখন বারীরাহ্‌ (রাঃ) এ বিষয়টি তার মুনিবের কাছে উঠালে তাদের জন্য ‘ওয়ালা’ ব্যতিরেকে তারা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এরপর সে আমার ['আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-এর] কাছে এসে তাদের কথা বলল। তিনি বলেন, আমি তাকে ধমক দিয়ে বললামঃ তাহলে আল্লাহর কসম ! আমি রাজী নই। 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষয়টি শুনলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। এরপর তিনি বললেনঃ হে 'আয়িশাহ্‌! তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও এবং তাদের জন্যে ওয়ালা’র শর্ত করে দাও। তবে নিশ্চয়ই ‘ওয়ালা’ সে পাবে যে মুক্তি দান করে। আমি ('আয়িশাহ্‌) তাই করলাম। রাবী বলেনঃ এরপর সন্ধ্যা বেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও তাঁর মহিমা ঘোষণা করলেন। এরপর বললেনঃ লোকের অবস্থা কেমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তারা এমন সব শর্ত দেয় যা আল্লাহর কিতাবে নেই। স্মরণ রাখ, যে শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল বলে গণ্য, যদিও একশতবার শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর কিতাবের শর্তই যথার্থ সঠিক, আল্লাহর শর্তই সর্বাধিক সুদৃঢ়। তোমাদের মধ্যে কতক লোকের কী হয়েছে যে, তারা অপরকে বলে অমুককে মুক্ত করে দাও আর ‘ওয়ালা’ গ্রহন করব আমরা? অথচ ‘ওয়ালা’ তো আসলে তারই পাওনা যে মুক্ত করে।-ihadis.com


নাস্তিকরা নবী মোহাম্মদ (সা)কে, উনার সাহাবাদেরকে, কুরআনকে এমনকি মুসলিমদেরকে ঘৃণা করে। আগের কালের কাফেররা যেমন চাইতো মুসলিমদেরকে হত্যা করে ফেলতে এই যুগের ইসলাম বিরোধীরাও সেটাই চায়। তাই আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। নাস্তিকরা চায় মানুষ ইসলামে বিশ্বাস না করুক। নাস্তিকরা চায় সবাই নাস্তিক হয়ে যাক। নাস্তিকরা চায় সবাই তাদের মতো করে চিন্তা করুক কিন্তু যৌক্তিক চিন্তাশীল মানুষ কিভাবে বিবর্তিত মগজধারীদের মতো চিন্তা করতে পারে? কি? পারে?


যুদ্ধবন্দী দাসদের ব্যাপারে ইসলামের আইনঃ

এই কথাটি ভাবুন তো। আপনার রাষ্ট্রে ধরুন আপনি রাষ্ট্রপ্রধান। আপনার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসছে দুশমন পক্ষ। তারা যদি আপনার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে আপনাকে খুন করবে। আপনার মা বোনদেরকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করবে। আপনার সন্তানদেরকে হত্যা করবে। আপনার দেশ তথা সার্বভৌমই তারা ছিনিয়ে যাবে। ধরুন এমন দুশমনদের সাথে আপনি যুদ্ধে বিজয় লাভ করলেন। আপনি তাদেরকে কি কি করবেন? যেহেতু তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল? ভেবে চিন্তা করে বলুন তো আপনি আসলেই কি কি করবেন? তাদেরকে ছেড়ে দিবেন? তাদের সাথে যেই নারীরা এসেছিল আপনার জাতিকে খুন করতে তাদেরকে ছেড়ে দিবেন? সেই সন্তানদেরকে ছেড়ে দিবেন? যদি ছেড়ে দেন তাহলে তো তারা আবার এসে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তখন কি আবার ছেড়ে দেবেন? বাস্তবতা কি বলে?


ইসলাম যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে কি কি আইন দেয় মন দিয়ে পড়ুন। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন ইসলাম যেই আইন দেয় সেটাই সব থেকে বেশি যৌক্তিক ও সেটাই বেস্ট সমাধান যুদ্ধবন্দীদের ক্ষেত্রে। নিজের জানের দুশমনদেরকে নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে এসে ইসলাম যেই বিধান দেয়, যেই আইন দেয় পড়তে থাকুন।


যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর জীবিত দুশমন পক্ষ যারা থাকবে তাদেরকে গোলাম হিসেবে নিজের দায়িত্বে নিতে হবে। ধরুন আপনি বার্মার সাথে যুদ্ধ করলেন, হেরে গেলে দাস হতে হবে, এই ভয়ও কিন্তু একটা যুদ্ধ এড়ানোর কৌশল কিন্তু। আচ্ছা তাও এড়ানো গেলো না। যুদ্ধ শেষ। যুদ্ধবন্দীদের কি করবেন? হয়তো বলবেনঃ কারাগারে বন্দী করে রাখবেন আর তো কিছুর করার নাই। আচ্ছা কতদিন পর্যন্ত রাখবেন? কারাগারে মানে কতদিন পর্যন্ত ফ্রি খাওয়াবেন এতো বন্দীদের? আরো ধরুন আপনার বিশাল বড় কারাগার নেই এই ক্ষেত্রে কি করবেন?


ফ্রি খাওয়ার প্রশ্নই আসে না তাও আবার দুশমন সেনাদের। কারাগারে পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলে সশ্রম করে দিয়ে প্রোডাকশনে লাগানো যেত। আবার ছেড়ে দিতে পারছেন না। সবাই এক হয়ে আপনার বিরুদ্ধে আবার ষড়যন্ত্র করবে। বার্মিজ গুলোকে বাঙ্গালীও বানাতে পারছেন না যে এখন নিজের লোক হয়ে গেছে আর ছেড়ে দিলেও যুদ্ধ করতে আসবে না। এখন কি করনীয়?


গোমূর্খ নাস্তিক মুক্তমনাদের কাছে এই সমস্যার সমাধান না থাকলেও ইসলামে ঠিকই সমাধান রয়েছে।এ সমস্যাটা সে যুগেও ছিল আর শ্রেষ্ঠ সমাধানটা ইসলামই দিয়েছিল। এখনও যদি যুদ্ধ যুদ্ধ সিচুয়েশন আসে তবে বেষ্ট সমাধান এটাই। সমাধানটি হচ্ছে ১০০০০ দুশমনকে ১০০০০ সৈন্যের মালিকানায় দিয়ে দেন। যে পালতে পারবে সে রাখবে আর যে পালতে পারবে না সে ধনী লোকের কাছে বিক্রি করে দিবে। ১০০০০ বন্দী শেষমেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তে কিছু পরিবারে ঠাই পাবে। জমিতে, কারখানায়,বাসায় কাজ করবে আবার দুশমন পক্ষ সবাই একত্রিত হওয়ার সুযোগই রইল না। এই সমাধানের ফলে কতগুলা মানবিক উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে খেয়াল করুন।

কারাগারের মতো আটকে থাকছে না। ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে, বাজারঘাটে যাচ্ছে যা লোহার গরাদের চেয়ে বেশি মানবিক।

কারাগারে থাকলে অনির্দিষ্টকাল পচে মরতে হতো কিন্তু এখন মুক্তির অনেক সুযোগ। দাসমুক্তি বিষয় উপরে আগেই লিখেছি।


তৃতীয় আরেকটি পজেটিব দিক হল, ইসলামের আল্টিমেট টার্গেট হলো সব মানুষ যেন ইসলামের ভিতর এসে যায়। এটা ইসলামের মুল উদ্দেশ্য। পরকালে যেন সবাই সফল হয় তাই সবাই যেন ইসলামে এসে যায়। দাসবিধির ভিতরও ইসলাম সেটাই চায়। মুসলমানদের চমৎকার মানবিক ব্যাবহারের কারণে যেন দাস সেচ্ছায় মুসলমান হয়ে যায় আর সে মুক্ত হলেও আর ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে না।


চার নাম্বার দিকটা হলঃ কারাগারে আটকে থাকবে, কতদিন থাকবে ঠিক নাই। গোলাম হিসেবে থাকলে ঘোরাঘুরি তো চলছেই সাথে বিয়ে শাদীও হবে। সামাজিক সম্মানও পাবে। প্রশ্ন জাগতে পারে দাসের আবার সামাজিক সম্মান? দেখুন যোগ্যতার কারণে মালিক দাসকে মুক্ত করে দেয়। তো দাস নিজ যোগ্যতায় সম্মানের স্থান হাসিল করে নিবে।


যায়দ ইবনে হারিছা (রা) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা) এর একজন দাস। নবীজি (সা) এই যায়দ ইবনে হারিছা (রা) কে মুতার যুদ্ধে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। তিন হাজার সম্ভ্রান্ত বংশীয় মুহাজির ও আনসারের নেতা নিযুক্ত হইলেন একজন সাবেক দাস(৪৮)। ইবনে উমর (রা) এর দাস নাফে (রহ) ছিলেন প্রোফেসর অফ হাদিস সায়েন্স অর্থাৎ মুহাদ্দিস(৪৯)।


মক্কাবাসী এক মহিলা দাস আতা ইবনে আবি রাবাহ (রহ) ছিলেন গ্র্যান্ড মুফতি মানে চীফ জাস্টিস অফ মক্কা(৫০)। ইবনে আব্বাস (রা) এর দাস ইকরিমা (রহ) কে তিনি পায়ে বেড়ি পরিয়ে লেখাপড়া শেখাতেন। দাস ইকরিমা (রহ) পরে হযরত ইকরিমা (রহ) হয়ে গেলেন তাঁর উপাধি হয়ে গেল 'বাহরুল উম্মাহ' জাতির বিদ্যাসাগর(৫১)। ইসলাম পূর্ব যুগে দাস বানানোর কয়েকটি উৎস ছিলঃ যুদ্ধবন্দী, ঋণ পরিশোধে অক্ষম হলে ,অপহরণ, দারিদ্র আর দাসের সন্তান। যেমন ইউরোপ আমেরিকায় দাস বিজনেসের একমাত্র সোর্সই হল আফ্রিকা থেকে নিগ্রোদের অপহরণ।আফ্রিকা থেকে ইউরোপ আমেরিকায় এই দাস বিজনেসকে  বলা হয়  ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবস্থা (৫২)। ইসলাম শুধু যুদ্ধবন্দী আর দাসের সন্তান রেখে বাকি গুলো নিসিদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলাম বর্বর দাসপ্রথাকে সম্পূর্ণ বিলোপ করে তার বিকল্প কিছু দাসবিধি দিয়েছে। বলতে গেলে বেশ যৌক্তিক দাস আইন দিয়েছে। কারণ হলোঃ


কাফির যুদ্ধবন্দীরা যাতে আবার যুদ্ধ করতে না পারে। সেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। বাবা-মা কাফের থাকলেও সন্তান গুলো যেন ইসলামিক পরিবেশে থেকে মুসলিম হয়ে যায়। আরেকটা কারণ হলো সে যুগে সব সভ্যতাই ছিল কৃষি নির্ভর ও অর্থনীতি ছিল দাস নির্ভর। আর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইসলামিক দাসবিধির বিকল্প কোনো সমাধান নেই যা আগেই বলেছিলাম।


তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন (সংক্ষিপ্ত),১২৫৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

এখানে একথাও স্মরণ রাখা দরকার যে যুদ্ধবন্দীদেরকে দাসে পরিণত করার বিধান কেবল বৈধতা পর্যন্ত সীমিত। অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্র যদি উপযুক্ত বিবেচনা করে, তবে তাদেরকে দাসে পরিণত করতে পারে। এরুপ করা মোস্তাহাব অথবা ওয়াজিব নয়। বরং কুরআন ও হাদিসের সমষ্টিগত বাণী থেকে মুক্ত করাই উত্তম বোঝা যায়। দাসে পরিণত করার এই অনুমতিও ততক্ষণ, যতক্ষণ শত্রুপক্ষের সাথে এর বিপরীত কোন চুক্তি না থাকে। যদি শত্রুপক্ষের সাথে যুক্তি হয়ে যায় যে, তারা আমাদের বন্দীদেরকে দাসে পরিণত কবে না এবং আমরাও তাদের বন্দীদেরকে দাসে পরিণত করব না, তবে এই যুক্তি মেনে চলা অপরিহার্য হবে। বর্তমান যুগে বিশ্বের অনেক দেশ এরূপ যুক্তিতে আবদ্ধ আছে। কাজেই যেসব মুসলিম দেশ এই যুক্তিতে সাক্ষর করেছে তাদের জন্যে যুক্তি বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত কোন বন্দীকে দাসে পরিণত করা বৈধ হবে না।


তাফসীরে আহসানুল বয়ান, ৮৮৬ পৃষ্ঠায়, সুরা মোহাম্মদ ৪৭:৪ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,

(যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবন্দীদের) কোনো বিনিময় না নিয়ে কেবল অনুগ্রহ করে ছেড়ে দেওয়াকিছু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া। যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে এই স্বাধীনতা বা এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে যে, পরিস্থিতি ও অবস্থা অনুপাতে যেটাই ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য সর্বাধিক উত্তম হবে সেটাই অবলম্বন করা যাবে।


ইসলামের আইন অনুযায়ী দাস কিভাবে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করবে?

আল কুরআন, সুরা নুর ২৪:৩২ আয়াত থেকে বর্ণিত,

তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দেও।

এই ক্ষেত্রে দাস তার মুনিবকে জানাবেন যে সে বিয়ে করতে চায়, জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চায় এতে মুনিব তাকে বিয়ে করিয়ে দেবেন। এভাবেই ইসলাম একজন দাসের জৈবিক চাহিদা পূরণ করার আইন দিয়েছে।

 

অধ্যায়ঃক্রীতদাসের সঙ্গে মুক্ত মহিলার বিয়ে। সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৫০৯৭,সহিহ হাদিসঃ

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘বারীরা’ থেকে তিনটি বিষয় জানা গেছে যে, যখন তাকে মুক্ত করা হয় তখন তাকে দু’টির একটি বেছে নেয়ার অধিকার (Option) দেয়া হয় সে ক্রীতদাস স্বামীর সঙ্গে থাকবে কি থাকবে না? রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্রীতদাসের ওয়ালার অধিকার মুক্তকারীর। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে চুলার ওপরে ডেকচি দেখতে পেলেন। কিন্তু তাকে রুটি এবং বাড়ির তরকারী থেকে তরকারী দেয়া হল। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, চুলার ওপরের ডেকচির তরকারী দেখতে পাচ্ছি না যে? উত্তর দেয়া হল, ডেকচিতে বারীরার জন্য দেয়া সদাকাহর গোশ্‌ত রয়েছে। আর আপনি তো সদাকাহ্‌র গোশ্‌ত খান না। তখন তিনি বললেন,এটা তার জন্য সদাকাহ আর আমাদের জন্য হাদিয়া।-ihadis.com


ই;ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ৩০ খণ্ড, ৪৩৮ পৃষ্ঠায় হয়েছে, 

রাসুলুল্লাহ (সা) তাহাঁর ফুফাতো বোন হযরত যয়নবকে স্বীয় মুক্ত দাস হযরত যায়দের সহিত বিবাহ দেন। এই বিবাহ স্থায়ী না হইলেও ইহাতে রাসুলুল্লাহ (সা) এর যে লক্ষ্য ছিল তাহা অর্জিত হইয়াছিল নিঃসন্দেহে। নিজ বংশের একজন মেয়েকে একজন দাসের সহিত বিবাহ দিয়া তিনি বিশ্ববাসীর নিকট এই সত্যই তুলিয়া ধরিয়াছেন যে, অত্যাচারী মানবগোষ্ঠী তাহাদেরই একটি শ্রেণীকে লাঞ্চনা ও অবমাননার যে গভীর পঙ্কে নিমজ্জিত করিয়াছে উহা হইতে বাহির হইয়া একজন দাসও কুরায়শ দলপতিদের ন্যায় ইজ্জত ও সম্ভ্রমের শীর্ষে আরোহণ করিতে পারে।

আবার মুনিব চাইলে নিজের দাসীর সাথে কৃতদাসের বিয়ের আয়োজন করতে পারেন। আর নিজের দাসী যদি কৃতদাসের স্ত্রী হয়ে যায় তাহলে মুনিব উক্ত দাসীর সাথে সহবাস করতে পারবে না। সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৪১১৩, হাসান হাদিসঃ

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ নিজ কৃতদাসীকে নিজ কৃতদাসের সাথে বিয়ে দিলে সে যেন তার গুপ্ত অঙ্গের দিকে না তাকায়।-ihadis.com

ইসলামে বাদীর জৈবিক নীতিমালা আর ক্রীতদাসের জৈবিক নীতি মালা একই সিস্টেমে করেনি। ভিন্ন ভিন্ন করা হয়েছে। একজন দাসকে অবশ্যই জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে হলে বিয়ে করতে হবে। এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, মুনিব যদি একাধিক দাসী রেখে তাদের সাথে সহবাস করতে পারে তাহলে একজন স্বাধীন নারী কেন একাধিক দাস রেখে সহবাস করতে পারবে না? এর সহজ জবাব হচ্ছে, ইসলামে দাসীদের যেমন যৌন নৈতিকতা দিয়েছে তেমন নৈতিকতা দাসদের ক্ষেত্রে দেয়নি। একজন স্বাধীন নারী কোনো দাসকে পছন্দ করে আর দাসও যদি তাকে পছন্দ করে তাহলে অবশ্যই তাকে মুক্ত করে বিয়ে করতে হবে।

একজন দাসী, মুনিবের সাথে যেমন দায়িত্বে এসে সহবাস করতে পারেন কিন্তু একজন দাস স্বাধীন নারীর সাথে দায়িত্বে এসে সহবাস করতে পারবে না। কোনো স্বাধীন নারী যদি চায় তার দাসের সাথে সহবাস করতে তাহলে অবশ্যই তাকে মুক্ত করে বিয়ে করতে হবে নাহলে সহবাস করা ইসলাম নিষেধ করেছে। দাস যেহেতু স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে পারবে না তাই স্বাধীন নারীকে বিয়ে করতে পারবে না। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যদি স্ত্রী ধনী হয় তখন? এর সহজ জবাব হচ্ছে, স্ত্রী ধনী হলে তো দাসকে আরও সহজে মুক্ত করে বিয়ে করতে পারবে। মুনিব তার বাদীর দায়িত্ব নিয়ে সহবাস করা ইসলামে যেভাবে বৈধ করেছে সেভাবে যদি স্বাধীন নারীর বেলায় করতো তাহলে একাধিক দাসের সাথে সহবাস বৈধ হয়ে যেত যা ইসলামে নিষেধ। এটাই ইসলামের আইন।


ইসলামে দাস আইনের কি দরকার সরাসরি বাতিল করলেই হতোঃ

তৎকালীন দাসরা মালিকের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করতো। এমনকি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক সিস্টেমই দাসদের উপর নির্ভর করতো। তাই এসেই সরাসরি বাতিল করে দেয়াটা অযৌক্তিক ছিল। এই হাদিসটি পড়ুন,যেখানে বলা হচ্ছে ক্রীতদাস আপন মুনিবের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণকারী,


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৫৪,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর ক্রীতদাস আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।-ihadis.com


দাসরা কাঠমিস্ত্রীর কাজও করতো।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪৪৮,৪৪৯ সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

সাহ্‌ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈকা মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে বললেনঃ তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠের মিম্বার বানিয়ে দেয় যাতে আমি বসতে পারি।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২০৯৪, সহিহ হাদিসঃ

আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, কিছু লোক সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-এর কাছে এসে মিম্বরে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন আনসারী মহিলা- সাহল (রাঃ) যার নাম উল্লেখ করেছিলেন- তার কাছে তিনি সংবাদ পাঠালেন যে, তোমার সূত্রধর গোলামকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠ দিয়ে একটি মিম্বর তৈরি করে দেয়। লোকদের সাথে কথা বলার সময় যার উপর আমি বসতে পারি। সে মহিলা তাকে গাবা নামক স্থানের কাঠ দিয়ে মিম্বর বানানোর নির্দেশ দিলেন। তারপর গোলামটি তা নিয়ে এল এবং সে মহিলা এটি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁর নির্দেশক্রমে তা স্থাপন করা হল, পরে তার উপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপবেশন করলেন।-ihadis.com


তাছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, ধরুন নবুয়াত পাওয়ার সাথে সাথেই যদি নবীজি (সা) সরাসরি দাস পদ্ধতিকে বাতিল করে দিতো তাহলে এটা কি কাফেররা মেনে নিতো? অবশ্যই না। কারণ কাফেররা যেখানে উনাকে মুক্তচিন্তায় হত্যা করার ষড়যন্ত্র করতেছিল সেখানে ইসলামের এই বিধানই তারা মেনে নিতো না। আর ইসলাম যদি সরাসরি দাস পদ্ধতিকে নিষেধ করে দিতো তাহলে তো আর কাফেরদের থেকে দাস কিনাই যেত না কারণ দাস কিনাও তখন হারাম হয়ে যেত। তাই ধাপে ধাপে বর্বর দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ইসলাম যেভাবে মানবিক দাসবিধি দিয়ে মুক্তির সিস্টেম করে দিয়েছে এটাই যৌক্তিক বেস্ট সিস্টেম। 

এমনকি ইসলামে যদি দাস বিষয় আইন না থাকতো তাহলে যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দুশমন পক্ষদের ব্যাপারে ইসলাম কোনো সমাধান দিতে পারতো না। কারণ যুদ্ধ যুদ্ধ সিচুয়েশনে ইসলামের দাস আইনই বেস্ট অপশন। এর বিকল্প যৌক্তিক আইন নেই। তাই ইসলাম বর্বর দাসপ্রথার বিরুদ্ধে “ইসলামিক দাসবিধি” বা “ইসলামিক দাস আইন” নিয়ে দাসদের মুক্তির সুবিধা করে দিয়েছে। দাস দাসীদের সাথে যতো প্রকার অন্যায় অমানবিক আচরণ করা হতো ইসলাম এসে সব গুলোকে নিষেধ করে দিয়েছে। এরপরে ইসলামে নিজস্ব কল্যাণকর ও উপকারী আইন নির্ধারণ করে দিয়েছে দাস দাসীদের সম্পর্কে। অনেকে বলে ইসলামে দাসপ্রথা আছে কথাটি সঠিক নয় বরং ইসলামে বর্বর দাসপ্রথার বিরুদ্ধে মানবিক কল্যাণকর দাসবিধি আছে। দাস নামক মানুষদের কিভাবে মানবিক উপায়ে মুক্ত করে দেয়া যায় সেই বিধি ইসলাম পেশ করে কিন্তু একজন স্বাধীন মানুষকে ইসলাম কখনোই দাস বানাতে বলে না।


কুরআনে আছে দাসরা কোনো কিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না?

নাস্তিকরা প্রশ্ন করে, কুরআনে এক আয়াত বলা হচ্ছে দাস কোনো কিছুর ওপর ক্ষমতা রাখে না এর কি বুঝা যাচ্ছে না যে বর্বর দাস প্রথাকে কুরআন সমর্থন করছে?


প্রথমে আয়াতটি পড়ে নেই, সুরা নাহল ১৬:৭৫ = আল্লাহ উপমা পেশ করেছেন; একজন অধিনস্ত দাস যে কোন কিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না। আর একজন যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে উত্তম রিযক দিয়েছি, অতঃপর সে তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। তারা কি সমান হতে পারে? সমস্ত প্রশংসা আল্লা্হর। বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।


ডঃ মুজীবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১৩ খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

ইবনে আব্বাস (রা) প্রভুতি গুরুজন বলেন যে এটা হচ্ছে কাফির ও মুমিনের দৃষ্টান্ত। অপরের অধিকারভুক্ত দাসের দ্বারা কাফির এবং উত্তম রিযিক প্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা মুমিনকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রা) বলেন যে, এই দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রতিমা ও আল্লাহ্‌ তা’লার মধ্যে প্রভেদ বুঝানোই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এটা ও ওটা সমান নয়/ এই দৃষ্টান্তের পার্থক্য এতো স্পষ্ট যে এটা বলার কোন প্রয়োজন হয় না। এজন্যেই আল্লাহ্‌ তা;লা বলেন যে প্রশংসার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ্‌। অথচ অধিকাংশই এটা জানে না।

আল কুরআন, সুরা নাহল ১৬:৭৩,৭৪ আয়াত থেকে বর্ণিত,

এবং তারা কি ইবাদত করবে আল্লাহ্‌ ছাড়া অপরের যাদের আকাশমণ্ডলী অথবা পৃথিবী হতে কোন জীবনপকরণ সরবরাহ করার শক্তি নেই এবং তারা কিছুই করতে সক্ষম নয়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সদৃশ স্থির করো না, আল্লাহ্‌ জানেন এবং তোমরা জান না। এই আয়াত গুলোও সুরা নাহলের ১৬:৭৫ আয়াতের ব্যাখ্যাকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে।


একজন দাস যে কোনো কিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না এই কথার অর্থ এটা নয় যে কুরআন বর্বর দাস প্রথাকে সমর্থন দিচ্ছে। যদি বর্বর দাসপ্রথাকে কুরআন সমর্থন করতো তাহলে দাসদেরকে নির্যাতন,অত্যাচার,যুলুম করা ইসলামে সওয়াবের কাজ হতো অথচ এরকম কোনো বিধানের অস্তিত্বই ইসলামে নেই। এই আয়াতকে টেনে বর্বর দাসপ্রথাকে সমর্থন করা দাবি করা নাস্তিকান্ধদের একটি মিথ্যাচার এবং মুক্তকচিন্তার দৃষ্টিতে যে, বর্বর দাসপ্রথা সমর্থনযোগ্য এটাকে ধামাচাপা দেবার পয়তারা মাত্র। নবীজি (সা) বা উনার কোনো সাহাবী কি এই আয়াতের ব্যাখ্যা এটা করেছে যে এর অর্থ ইসলাম বর্বর দাসপ্রথাকে সমর্থন করে? উত্তর হচ্ছে না। 

তাছাড়া এই আয়াতে উদাহরণ দেয়া হয়েছে একজন দাস এবং একজন স্বাধীন মানুষ যে গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে। এরা দুইজন সমান নয়। একজন দাস যে কোনো কিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না - এই কথাকে যদি আক্ষরিক অর্থে ধরে নেই এরপরেও সমস্যা নেই কারণ আমরা ইতিহাস থেকে আগেই জেনেছি যে একজন দাস আসলেই কোনো কিছুর উপর ক্ষমতা রাখতো না। আর ইসলাম দাসবিধি দিয়ে দাসদেরকে মানবিক অধিকার দিয়েছে যা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


উপসংহারঃ

মিথ্যুক নাস্তিকরা ইসলামের দাসবিধি বা দাস আইন নিয়ে সমালোচনা করে যার কোনো ভিত্তি নেই। মুক্তচিন্তায় বর্বর দাসপ্রথা বৈধ হলেও ইসলাম সেই দাসপ্রথাকে সমর্থন করে না। ইসলামের নিজস্ব কল্যাণকর দাস আইন রয়েছে। যাকে যৌক্তিক কারণেই খারাপ দাবি করা যায় না। দুশমন পক্ষের লোকদেরকে যারা আপনাকে খুন করতে এসেছিল তাদেরকে পরাজয় করে দাস বানানো অবশ্যই যৌক্তিক ভাবে খারাপ না। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে দাস কিনা, দাসী কিনা বিক্রি করা এমনকি তাদেরকে নির্যাতন করা, অত্যাচার করা বৈধ কিন্তু ইসলাম মুক্তচিন্তার বর্বর দাসপ্রথার মতো নয়। ইসলামের দাস আইন পুরো ভিন্ন। নাস্তিকরা যেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইসলামের দাস আইন দেখায় সেটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। তাই ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই ইসলামের দাস আইন জানতে হবে।


রেফারেন্স সমূহঃ

[১] Most Atheist Countries 2022:

https://worldpopulationreview.com/country-rankings/most-atheist-countries

[২] চীনে মুসলিম নারীদের যৌনদাসী করা হচ্ছে!

https://dailysangram.com/

[৩] চীনে উইঘুর নারীরা গণধর্ষণের শিকার শিনজিয়াংয়ের বন্দী শিবিরে - 'তাদের লক্ষ্য সবাইকে শেষ করা”

https://www.bbc.com/bengali/news-55891965

[৪] চীনে যৌন দাসত্বে বাধ্য করা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নারীদেরঃ

https://www.bbc.com/bengali/news-48345289?fbclid=IwAR1Fiwtu4L8SkpcxTO0JxcOXNd4S-vHWvelXJeRmx8fljj1upiaAD9N0sJ8

[৫] চীনা বন্দিশিবির থেকে ফিরে যা বললেন নির্যাতিত মুসলিম নারীঃ

https://www.ittefaq.com.bd/

[৬] উইঘুর নারীদের সঙ্গে রাত কাটাতে পাঠানো হয় চীনা পুরুষদেরঃ

https://www.risingbd.com/

[৭] চীনে উইঘুর নারীদের শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করা হচ্ছেঃ

https://www.jugantor.com/

[৮] চীনে মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা বানানো হচ্ছেঃ

https://www.jagonews24.com/international/news/520254?fbclid=IwAR1khY_E7RsmsaJpsoJvpi92qJj_1MTugEQCpvvXPyo8gOQcwOhR9gl6WyE

[৯] 6 Countries Where Slavery Still Exists

https://www.oxygen.com/very-real/6-countries-where-slavery-still-exists

[১০] রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১০২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। 

[১১] রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[১২] রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[১৩] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” পাক-কথনে বর্ণনা করা হয়েছে।

[১৪] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” পাক-কথনে xii তে বর্ণিত হয়েছে।

[১৫] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[১৬] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[১৭] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” বইয়ের ২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[১৮] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[১৯] রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[২০] রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[২১] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” বইয়ের ২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[২২] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” বইয়ের ২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[২৩] Ethics Without Gods:

https://www.atheists.org/activism/resources/ethics-without-gods/

[২৪] দেখা যাচ্ছে নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নইঃ

https://blog.muktomona.com/2010/07/02/7568/

[২৫] মানুষ কি বানর থেকে এসেছে?

https://mm-gold.azureedge.net/evolution/QA/human_monkey_evolution.html

[২৬] Modern Pig Farming Technology - Automatic Pork Cutting Line Machine - Pork Production Process:

https://www.youtube.com/watch?v=wUdfkDYGf38

[২৭] https://worldpopulationreview.com/country-rankings/most-atheist-countries 

[২৮]  https://www.youtube.com/watch?v=WtHuMzfPUxg

[২৯] দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনও হয় মানুষ কেনা-বেচাঃ

https://www.youtube.com/watch?v=MsUo36Fs4zI

[৩০] GLOBAL SLAVERY INDEX

https://www.globalslaveryindex.org/2018/findings/global-findings/

[৩১] 6 Countries Where Slavery Still Exists:

https://www.oxygen.com/very-real/6-countries-where-slavery-still-exists

[৩২] ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সীরাত বিশ্বকোষ,১০ খণ্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত।

[৩৩] রাখী বর্মণ লিখিত “পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা” বইয়ের ১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[৩৪] সিরাজ উদ্দিন সাথী লিখিত “দাস প্রথা” পাক-কথনে xiii -তে বর্ণনা করা হয়েছে।

[৩৫] সিরাজ উদ্দিন সাথি লিখিত “দাস প্রথা” বইয়ের ১৮ থেকে ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।

[৩৬] GLOBAL SLAVERY INDEX:

https://www.globalslaveryindex.org/2018/findings/highlights/

[৩৭] Human-trafficking-numbers:

https://humanrightsfirst.org/

[৩৮] International Labour Organization, ILO global estimate of forced labour:results and methododogy, 2012, p.13

[৩৯] United Nations Office on Drugs and Crime, Global Report on Trafficking in Persons, 2014, p.29

[৪০] United Nations Office on Drugs and Crime, Global Report on Trafficking in Persons, 2014, p.33

[৪১] united Nations Office on Drugs and Crime, Global Report on Trafficking in Persons, 2012, p.7

[৪২] One in 200 people is a slave. Why?:

https://www.theguardian.com/news/2019/feb/25/modern-slavery-trafficking-persons-one-in-200

[৪৩] wikipedia: Slavery in the 21st century.

[৪৪] Rebecca Watson-European Atheist Convention 2012 (১৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ১৬ মিনিট ৪০সেকেন্তের অংশে উক্ত কথাটি বর্ণনা করেছেঃ

https://www.youtube.com/watch?v=Q985XL7G1F8

[৪৫] আলী (রা) কি আয়েশাহ (রা) এর দাসি 'বারিরাহ' কে প্রহার করেছিলেন?

https://islamicauthors.com/

[৪৬] Slavery in Islam

https://islamqa.info/en/answers/94840/slavery-in-islam

[৪৭] Slavery in Islam

https://islamqa.info/en/answers/94840/slavery-in-islam

[৪৮ ]বিস্তারিত জানতে ই:ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ১০ খণ্ড, ৪১০ পৃষ্ঠা পড়ুন।

[৪৯] আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া ৯ খণ্ড, ৫০৭, ৫০৮ পৃষ্ঠা।

[৫০] ডঃ আব্দুর রহমান পাশা,তাবেইদের ইমানদীপ্ত জীবন, ২০ পৃষ্ঠা।

[৫১] আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া ৯ খণ্ড , ৩৮৮ পৃষ্ঠা।

[৫২] Slavevoyages

https://www.slavevoyages.org/


প্রাচীন কাল ও আধুনিক যুগেও যেভাবে দাসপ্রথার চর্চা করা হয়। জানতে পড়ুনঃ


(A) Slavery is not a crime in almost half the countries of the world – new research:

https://theconversation.com/slavery-is-not-a-crime-in-almost-half-the-countries-of-the-world-new-research-115596


(B) BUYING AND SELLING PEOPLE:

https://www.caritas.org/2014/01/buying-selling-people/


(C) Human Trafficking - When People are Bought and Sold to Make a Profit:

https://www.health.ny.gov/prevention/human_trafficking/


(D) 10 FACTS ABOUT HUMAN TRAFFICKING IN THAILAND:

https://borgenproject.org/tag/worst-countries-for-human-trafficking/


(E) Which countries have the highest rates of modern slavery and most victims?

https://reliefweb.int/report/world/which-countries-have-highest-rates-modern-slavery-and-most-victims


(F) Countries that Still Have Slavery 2022ঃ

https://worldpopulationreview.com/country-rankings/countries-that-still-have-slavery


আমার আরও কিছু প্রাসঙ্গিক লেখাঃ


বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল?


বনু কুরাইজাদের মৃত্যুদণ্ড বর্বর অমানবিক?


স্ত্রী সহবাসে জবরদস্তি ইসলামে বৈধ?


স্ত্রীকে নির্যাতন করা ইসলামে বৈধ?


মুক্তবুদ্ধির যুক্তিতে বর্ণবাদ


নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রকার মুক্তচিন্তা


নাস্তিক্যধর্মে ধর্ষণ বৈধ?


মুক্তমনাদের ধর্ষণের মুক্তচিন্তা


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post