ইসলাম নারীদের অন্যায়ভাবে প্রহার করার অনুমতি দেয় ?


বিষয়ঃ ইসলাম নারীদের অন্যায়ভাবে প্রহার করার অনুমতি দেয়?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

=========================

ভূমিকাঃ ইসলামের দুশমনরা কখনো ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা করতে চাইবে না। তারা কেন চাইবে মানুষ ইসলাম বিষয় সঠিকটা জানুক? তথ্যের বিকৃতি করা ওদের নতুন কোনো অভ্যাস নয়। 

তারা বলে ইসলাম নাকি নারীদেরকে নির্যাতন করতে অনুমতি দেয়, অত্যাচার করতে অনুমতি দেয়। অথচ ইসলামের তথ্যগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করলে, বিশ্লেষণ করলে তেমন কিছুই পাওয়া যায় না। এরপরেও মিথ্যুকবাজ মুক্তমনারা কুরআনের আয়াত দেখিয়ে,তাফসীরে দাগাদাগি করে নিজেরা বানিয়ে বানিয়ে অপব্যাখ্যা দেয় যার সাথে কুরআনের আয়াতের নেই সম্পর্ক, নেই তাফসীরের, নেই হাদিসের। সাধারণ মানুষদেরকে এভাবেই ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে ধান্দাবাজ নাস্তিকরা।

নাস্তিকদের বিভিন্ন ভ্রান্ত অযৌক্তিক দাবির তদন্ত করা হবে আজকের লেখায়। পুরো লেখাটি না পড়লে হয়তো অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন না। তাই মনোযোগ দিয়ে পুরো লেখাটি পড়তে থাকুন।

নাস্তিকরা সূরা নিসা ৪:৩৪ নিয়ে কেন অভিযোগ করে?

নাস্তিকরা চায় সবাই ওদের মতো নির্লজ্জ বেহায়া হয়ে যাক। এই কারণে যেভাবেই হোক ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা বদনাম করে হলেও মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পয়তারা করে যাচ্ছে নাস্তিকগোষ্ঠী। নাস্তিকরা নৈতিকতার ক্ষেত্রে যে বিধান বর্ণনা করে থাকে তা হচ্ছে, 

নিজের ক্ষতি ও অন্যের ক্ষতি না করে যা ইচ্ছে সেটাই করা নৈতিক কাজ বা ভালো কাজ

নাস্তিকদের বানানো এই নৈতিকতার দৃষ্টিতে কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের মায়ের সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারবে। নিজের বাবার সাথে সমকামীতা চর্চা করতে পারবে। নিজের দাদার সাথে, নানার সাথে, সমকামীতার চর্চা করতে পারবে। নিজের চাচার সাথে, মামার সাথে মুক্তমনা সঙ্গম চর্চা করতে পারবে। শুধু কি তাই? কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের সন্তানদের সাথেও যৌনসঙ্গম করতে পারবে। কোনো নাস্তিক পিতা যদি চায় নিজের কন্যাকে দিয়ে নিজের শিশ্নের আরাম গ্রহণ করবে এটাও করতে পারবে। কোনো নাস্তিক মা যদি চায় নিজের ছেলে সন্তানকে দিয়ে নিজে মজা নিবে সেটাও পারবে। 

এমন নির্লজ্জ-বেহায়াযুক্ত যৌন নীতিমালা নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাসী নাস্তিকদের কাছে খারাপ কিছু নয়। কোনো নাস্তিকের কাছে এগুলো খারাপ বলে মনে হলে সেটা একান্ত তার ব্যাপার তবে কোনো নাস্তিক চাইলেই যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারবে।

নাস্তিকরা এমন মুক্তচিন্তার পরিবারে বিশ্বাস করে যেই পরিবারে বাবা চাইলে যে কারো সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারবে, মা চাইলে যে কারো সাথে রাত কাটাতে পারবে। বাবা চাইলে নিজের কন্যার সাথে সঙ্গম করতে পারবে তেমনি মা চাইলে নিজ ছেলের সাথে সঙ্গম করতে পারবে। এমন স্বাধীন পরিবারে নাস্তিক মুক্তমনারা বিশ্বাস করে থাকে। নাস্তিকরা চায় সবাই এমনভাবে মুক্তচিন্তা করতে শিখুক। বিবর্তিত মূর্খ প্রাণীরাই এমন নির্লজ্জ নীতিমালায় বিশ্বাস রাখতে পারে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা আমি নাস্তিকদের বই থেকেই সরাসরি প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি আপনারা যাচাই করে দেখে নিয়েন।

বিজ্ঞান লেখক, অভিজিৎ রায়ের লিখিত বই “সমকামিতা” এই বইয়ের ৮৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

যে কোনো বিচারে হ্যাভলক এলিস এবং তার স্ত্রী এডিথ লীজের বিয়ে ছিল সে সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই ব্যতিক্রমী। এলিসের স্ত্রী এডিথ লিজ ছিলেন নারীবাদী কবি (তাঁর অন্য চার বোনেরা ছিলেন আবার সবাই অবিবাহিত) তাঁরা পারস্পারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও দুজনেই সাড়াজীবন মুক্ত সম্পর্কে (open relationship) আস্থাশীল ছিলেন, এবং একে অন্যের যৌন স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেন নাযৌনতার ব্যাপারে তাঁরা ছিলেন সমস্ত সামাজিক সংস্কারের উর্ধে

যৌন স্বাধীনতায় কোনো বিধি বিধান থাকতে পারে? যদি থাকে তাহলে যুক্তি অনুযায়ী সেটি আর যৌন স্বাধীনতা থাকবে না। একে অন্যের যৌন স্বাধীনতায় বাধা না দেয়া কি প্রমাণ করে? এটাই প্রমাণ করে মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে কোনো নাস্তিক চাইলেই যে কারো সাথে সঙ্গম করতে পারবে। 

বিখ্যাত মুক্তমনা নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের লিখিত বই “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিত সংকীর্ণ; আমার কোনো কাজ যেনো অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে-এটুকু;

এই মুক্তচিন্তার নৈতিকতার দৃষ্টিতে মুক্তমনা পরিবারে কোনো নারী অন্য কাউকে ক্ষতি না করে নিজে মদ সেবন থেকে ইয়াবা সেবন পর্যন্ত সব কিছুই করতে পারে। সন্তান চাইলে ইয়াবার বিজনেস পর্যন্ত করতে পারে। আপনারা খারাপের লিস্ট করে এখানে যুক্ত করে দিতে পারেন সব কিছুই মুক্তচিন্তা করা যাবে। কোনো বাধা নিষেধ নেই এসব নৈতিকতায়। কিন্তু নাস্তিকরা মানুষকে এসব বলতে চায় না কারণ যুক্তিশীল সভ্য মানুষরা নাস্তিক্যবাদ ও মুক্তচিন্তা থু থু দিবে বলে।

এখন আপনাকেই প্রশ্ন করছি,

যারা এরকম অসভ্য নির্লজ্জ যৌন সঙ্গমের ফ্রিডমে বিশ্বাস রাখে সেসব মুক্তমনারা কিভাবে কুরআনের আয়াতে বিশ্বাস করতে পারে বলুন? কুরআনের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে এবং নবী মোহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটাই কি মুক্তমনাদের জন্য ভালো নয়?

স্ত্রী যদি অপরাধ করে, স্ত্রী যদি মদ খায়, স্ত্রী যদি সন্তানদেরকে ভালো না বাসে তাহলে একজন আদর্শবান স্বামী স্ত্রীকে শাসন করবে স্ত্রীকে সভ্য করে তোলার জন্য। পরিবারকে সুন্দর করার জন্য ইসলাম অনেক বিধি বিধান দিয়েছে কিন্তু নাস্তিক্যধর্মে তো নারীদের মদ খাওয়া, পরকীয়া করা, নিজের মাকে নিয়ে পতিতাবৃত্তি করিয়ে অর্থ উপার্জন করা ইত্যাদি অন্যায় কিছু নয় তাই ইসলামের বিধানকে নাস্তিকরা খারাপ হিসেবে দেখে। কোনো নাস্তিক পুরুষ যদি নিজে ইয়াবা খেতে পছন্দ না করে কিন্তু তার নাস্তিক স্ত্রী যদি ইয়াবা খেতে ভালোবাসে তাহলে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে সেই পুরুষ তার স্ত্রীকে কিছু বলতে পারবে না কারণ স্ত্রী যা ইচ্ছে করবে। যা ইচ্ছে তাই। কিন্তু ইসলাম এসব বর্বরতা সমর্থন করে না। ইসলাম বলে স্বামী স্ত্রীকে বর্বরতা থেকে মুক্ত করে সভ্যতার কাতারে নিয়ে আসবে। প্রয়োজনে কোঠর হবে এরপরেও স্ত্রীকে বর্বর হতে দেয়া যাবে না মুক্তমনাদের মতো। বুঝতে পেরেছেন?

যেসব নব্য নাস্তিকরা মুক্তচিন্তার যৌননীতি পছন্দ করেন না তাদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে তাহলে পরিবার কাকে বলা হবে? এবং কেন বলা হবে? কে নির্ধারণ করবে পরিবার কাকে বলা হবে? পরিবার কিভাবে চলবে? পরিবারে কিভাবে যৌননীতিমালা নির্ধারণ করা হবে? স্বামী কি কি করতে পারবে আর কি কি করবে পারবে না? স্ত্রী কি কি করতে পারবে আর কি কি করতে পারবে না? সন্তানরা কি কি করতে পারবে আর কি কি করতে পারবে না? আপনি যেই বিধান দিবেন সেই বিধানে কি অন্য নাস্তিকরা সংশয় প্রকাশ করতে পারবে? নিজের মতো করে নৈতিকতা বানাতে পারবে তারা? আপনার ব্যক্তিগত মতামত কেন মেনে চলবে অন্য মুক্তমনারা?

স্ত্রীকে প্রহার করা বিষয় আয়াত ও যাবতীয় অভিযোগের দলিল ভিত্তিক জবাবঃ

আয়াতটি হচ্ছে, আল কুরআন, সুরা নিসা ৪:৩৪,৩৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,

পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এই কারণে যে, আল্লাহ্‌ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে । সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত তারা লোক চক্ষুর অন্তরালে তার হিফাজত করে আল্লাহ্‌র হিফাজত অনুসারে । স্ত্রীদের মধ্যে তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশংকা করো তাদের ভাল উপদেশ দেওতারপরে তাদের বিছানা ত্যাগ করো , শেষে তাদের প্রহার করো, এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করো না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ উচ্চ মর্যাদাশীল মহান । যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে । তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।

আয়াতের প্রেক্ষাপট গুলো তাফসীর থেকে পড়বো। তাফসীরে জালালাইন,১ খণ্ড,৮১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

মুকাতিল বর্ণনা করেন, এই আয়াত নাজিল হয় সাদ ইবনে রাবী ইবনে ওমর এবং তাঁর স্ত্রী হাবীবাহ বিনতে জায়েদ ইবনে আবি জেহাইর সম্পর্কে। আর কলবী বলেছেন, সাদ এর স্ত্রীর নাম হলো খাওলা বিনতে মুহাম্মদ ইবনে……। ঘটনার বিবরণ এই যে, সাদের স্ত্রী তাঁর মর্জির খেলাফ কোনো কাজ করেছিলএই জন্য সাদ তাকে একটি চাপড় মারে। স্ত্রী ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বীয় পিতাকে এ সম্পর্কে অবগত করে। পিতা প্রিয়নবী (সা) এর নিকট এ সম্পর্কে অভিযোগ করে। প্রিয়নবী (সা) স্বামীর নিকট থেকে স্ত্রীকে প্রতিশোধ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেনঠিক এমন সময় আলোচ্য আয়াতটি নাজিল হয়। তখন প্রিয়নবী (সা) সাদের স্ত্রীকে প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বারণ করে ইরশাদ করেন- আমি চেয়েছিলাম এক কিন্তু আল্লাহ পাকের মর্জি অন্য। আর আল্লাহ পাকের ইচ্ছাই যে সর্বোত্তম এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এই ঘটনা বর্ণনার পর আল্লামা আলুসী (র) লিখেছেন, একটি বর্ণনায় রয়েছে আয়াতখানি নাজিল হয়েছে জামিলা বিনতে আব্দুল্লাহ এবং তার স্বামী সাবেত ইবনে কায়েস সম্পর্কে

ইবনে আবি হাতেম হাসানের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, একজন স্ত্রী লোক পিরনবী (সা) এর খেদমতে তার স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করলো যে, সে তাকে প্রহার করেছে। তখন প্রিয়নবী (সা) ইরশাদ করলেন, স্বামীর নিকট থেকে প্রতিশোধ নিতে পার, তখন এই আয়াত নাজিল হয় ইবনে মারদাবিআহ হযরত আলী (রা) এর বর্ণনার উল্লেখ করেছেন যে, একজন আনসারী সাহাবী তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রিয়নবী (সা) এর খেদমতে হাজির হয়ে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে যে, সে আমাকে এত বেশি প্রহার করেছে যে, আমার চেহারায় এখনো তার চিহ্ন রয়েছেপ্রিয়নবী (সা) এরশাদ করলেন এভাবে প্রহার করার কোনো অধিকার তার নেই। তখন এই আয়াত নাজিল হয়।-[নুরুল কুরআন ৫ খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা]

এই আয়াতে নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব কর্তৃত্ব ও অভিভাবকত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। পুরুষদের নারীদের উপর প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্বের দুটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। একটি আল্লাহ প্রদত্ত, তাতে পুরুষদের কোনো চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও কোনো রকম অর্জনের দখন নেই। এটা কেবল সৃষ্টিগত। পুরুষকে ধী শক্তি, চেষ্টা-তদবীরের ক্ষমতা, জ্ঞানের প্রশস্ততা, দৈহিক শক্তি এবং যোগ্যতা বিশেষভাবে প্রদান করা হয়েছে। আর এসব নিয়ামত এভাবে নারীদেরকে প্রদান করা হয়নি। এ কারণেই পুরুষকে এমন কিছু বৈশিষ্ট প্রদান করা হয়েছে যা নারীদেরকে দেয়া হয়নি। যেমন- নবুয়ত ইমামত, হুকুমত বা রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার ক্ষমতা, বিচক্ষণতা, জিহাদ ওয়াজিব হওয়া,জুমা ওয়াজিব হওয়া, দুই ইদের নামাজ, আজান, খোতবা, নামাজের জামাত, উত্তরাধিকারে অধিকতর অংশলাভ, একাধিক বিয়ে করার ক্ষমতা, তালাক প্রদানের এখতেয়ার প্রভুতি। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে কসবী বা প্রচেষ্টা লব্ধ। আর তা হলো এই যে, পুরুষ তথা স্বামী নারী তথা স্ত্রীর মোহরসহ যাবতীয় খরচ-পত্র, ভরণ-পোষণ, খোরপোষ, বাসস্থান সর্ব প্রকার ব্যয় ভার বহন করে চলে। এই দুই কারণে আল্লাহ পাক নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব, প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব দান করেছেন। এই প্রাধান্যের কারণেই প্রিয়নবী (সা) এরশাদ করেছেন যদি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম তবে স্ত্রী লোককে আদেশ দিতাম যেন তার স্বামীকে সেজদা করে।[আহমদ, তিরমিযি, আবু দাউদ]

এমনি অবস্থায় স্ত্রীর কর্তব্য হলো স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে চলাএটিই আলোচ্য আয়াতের মর্ম কথাস্বামীর কর্তৃত্ব মেনে চলার এই বিধান অমান্য করলে সমূহ অকল্যাণ এবং অমঙ্গলের সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে।-[নুরুল কুরআন ৫ খণ্ড, ৩৩ থেকে ৩৪ পৃষ্ঠা]

এরপরে তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৪ খণ্ড,৩৮৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেন যে, পুরুষ হচ্ছে স্ত্রীর নেতাসে স্ত্রীকে সোজা ও ঠিক-ঠাককারী কেননা, পুরুষ স্ত্রীর উপর মর্যাদাবান। এ কারণেই নবুয়ত পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অনুরূপভাবে শরীয়তের নির্দেশ অনুসারে খলীফা একমাত্র পুরুষই হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (রা) বলেন, ঐ সব লোক কখনো মুক্তি পেতে পারেন না যারা কোন নারীকে তাদের শাসনকত্রী বানিয়ে নেয়। (সহীহ বুখারী) এরুপভাবে বিচারপতি প্রভুতি পদের জন্যেও শুধু পুরুষেরাই যোগ্য। নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা লাভের দ্বিতীয় কারণ এই যে পুরুষেরা নারীদের উপর তাদের মাল খরচ করে থাকে, যে খরচের দায়িত্ব কিতাব ও সুন্নাহ তাদের প্রতি অর্পণ করেছে। যেমন মোহরের খরচ, খাওয়া পরার খরচ এবং অন্যান্য খরচসুতরাং জন্মগতভাবেও পুরুষ স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম এবং উপকারের দিক দিয়েও পুরুষের মর্যাদা স্ত্রীর উপরে। এ জন্যেই স্ত্রীর উপর পুরুষকে নেতা বানানো হয়েছে। 

এখানে নাস্তিকরা প্রশ্ন করতে পারে, পুরুষকে নেতা বানিয়ে, পুরুষকে মর্যাদা দিয়ে নারীদেরকে অপমান করা হয়েছে কেন? উত্তর হচ্ছে, নারীদেরকে মোটেও অপমান করা হয়নি বরং তাফসীরে বাস্তব সত্য কথা গুলোই বর্ণনা করা হয়েছে মাত্র। জবাবে আমি আরো বলবো, পুরুষকে নেতা বানানো অথবা পুরুষকে মর্যাদা দেয়া অর্থ এই নয় যে নারীদেরকে অপমান করা হয়েছে।  কিভাবে? উদাহরণ দিয়ে বলছি। ধরুন কেউ একজন বলল, দেশের জন্য যোগ্য নেতা নির্ধারণ করা দরকার। যিনি যোগ্য তিনিই দেশের সকল মানুষকে ঠিক-ঠাক করতে পারবে। এখানে কি এই কথা বলে দেশের পুরো মানুষকে অপমান করা হয়েছে? অবশ্যই না। আবার ধরুন কেউ বলল, ক্রিকেট খেলায় নারী পুরুষ কখনো এক সাথে খেলানো উচিত নয় কারণ নারীরা শক্তিতে দুর্বল। এবং UFC ফাইটেও নারী পুরুষ একত্রে খেলানো উচিত নয় কারণ নারীরা যদি পুরুষদের সাথে মারামারি করে তাহলে নারীরা চরম মাইর খাবে অর্থাৎ পরাজয় মেনে নিতে হবে। খেয়াল করুন এখানে এসব কথার দ্বারা কি নারীদেরকে অপমান করা হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না কারণ যা সত্য সেটাই তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। তেমনিভাবে আল্লাহ পুরুষদেরকে নারীদের নেতা বানিয়েছেন। পুরুষদেরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। পুরুষরা নারীদের থেকে শক্তিশালী সন্দেহ নাই। কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে নারীদেরকে অপমান করা হয়েছে। তাফসীরে বলা হয়েছে তা সত্যিই বলা হয়েছে। এই অর্থে নয় যে নারীদেরকে অপমান করা হয়েছে। তাফসীর থেকেই পড়ব যে পুরুষকে নেতা বানিয়ে কি নারীদেরকে অপমান করা হয়েছে কিনা? পড়তে থাকুন।

পড়ুন তাফসীরে জালালাইন, ১ খণ্ড, ৮১৩,৮১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

সুরা বাকারার এক আয়াতে এরশাদ হচ্ছে অর্থাৎ স্ত্রী লোকদের অধিকার পুরুষদের উপর ততটুকুই ওয়াজিব যতটুকু স্ত্রী লোকদের উপর পুরুষের অধিকারএখানে উভয়ের প্রতি উভয়ের অধিকার সমান বলে ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নের নিয়ম পদ্ধতি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের অধীন করে দেওয়া হয়েছে। এতে জাহিলিয়াতের যুগ থেকে নারীদের ব্যাপারে যেসব অমানবিক আচরণ করা হতো সে সবের উৎখাত করা হয়েছে। অবশ্য এটা জরুরি নয় যে, অধিকার বাস্তবায়নের পদ্ধতি একই ধরণের হবে। নারী ও পুরুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ধরন অবশ্যই স্বতন্ত্রকিন্তু অধিকারের সীমা সংকুচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেমন- নারীর প্রতি গৃহের কর্তৃত্ব, সন্তান লালন-পালন প্রভুতি বিশেষ কতগুলো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনি পুরুষের প্রতি নারীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য জীবিকার্জনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। অনুরূপ নারীদের প্রতি যেমন পুরুষের সেবা ও আনুগত্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তেমনি পুরুষের উপরও তাদের মোহর ও খোরপোষের দায়িত্ব ফরজ করা হয়েছে। মোটকথা এ আয়াতের নারী এবং পুরুষের মধ্যে অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা বিধানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য নারী জাতির উপর পুরুষ জাতির প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যা আয়াতের শেষাংশে অর্থাৎ স্ত্রী জাতির উপর পুরুষদের একস্তর প্রাধান্য রয়েছে। সে সেই প্রাধান্য স্তরটি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা ক্ষেত্রে পুরুষ শাসক, অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক। আর নারীগণ পুরুষদের কর্তৃত্বাধীন পরিচালিত। -[মারিফুল কুরআন ২ খণ্ড,৪৩৬,৪৩৭ পৃষ্ঠা]

উপরের বাস্তব সত্য কথা গুলোতে যদি কারো এলারজি থাকে তাহলে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আমাকে বলতে হচ্ছে নারী পুরুষ কখনো সমান নয়। যারা বলেন নারী পুরুষ সমান তারা আসলে অবৈজ্ঞানিক কথা বলে বৈজ্ঞানিক ভুল কথা বলে থাকেন। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বলতে গেলে বলতে থাকতে হয় নারীদের উচ্চতা পুরুষের চেয়ে গড়ে ৯% ছোটো। নারীদের মস্তিস্কের আয়তন পুরুষের তুলনায় ১১% কম। হৃৎপিণ্ড ১৫% কম। লিভার ১২% কম। কিডনি দুটো ১৬% কম। ফুসফুস দুটো ২০% কম। রেফারেন্সটি যেখানটি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে,

মস্তিস্কের হিসাবটার রেফারেন্সঃ Results from a 1994 study published in Der Pathology- and based on more than 8000 autopsies / বাকি গুলো এখান থেকে, In 2001, French researcher Grandmaison and co- authors published a paper in Forensic science International analyzing organ Weights from 684 autopsies performed on whites between 1987 and 1991. ডঃ শামসুল আরেফিন লিখিত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.0, বই থেকে উক্ত রেফারেন্সটি নেয়া হয়েছে। মুক্তমনা নারীবাদীদের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার গুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান দেয়া হয়েছে। বইটি খুবই উপকারী।

টিকাঃ নারী পুরুষ কখনো সমান নয়। নারীর দ্বারা যেই কাজ হয় সেটা পুরুষের দ্বারা হয় না আবার পুরুষের দ্বারা যেই কাজ হয় সেটি নারীর দ্বারা হয় না। সুতরাং দুইজনেই দুইজনের স্থানে সমান বলা গেলেও দুইজনে হুবহু কখনো সমান নয়। তাই ইসলাম যেটা করেছে পুরুষকে নারীর অভিভাবক বানিয়ে কঠিন কাজ গুলো পুরুষের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে নারীর জন্য সহজ ও সুবিধা করে দিয়েছে

তাছাড়া নারী পুরুষের দৈহিক গঠন দেখেই বলে দেয়া যায় পুরুষ নারীর চেয়ে বেশি শক্তিশালী। নারীদের চামড়া পুরুষদের তুলনায় হয় পাতলা নরম। কিন্তু এসব বাস্তব সত্য কথা কি নারীদেরকে অপমান করে? উত্তর হচ্ছে না। কারণ যেটা সত্য সেটা সত্যিই। এখানে অপমানের প্রশ্নই আসে না।

স্ত্রীর প্রতি ভালো আচরণকারী,স্ত্রীর প্রতি সততাবান,স্ত্রীকে ভালোবাসা দানকারী এমন একজন আদর্শবান পুরুষকে স্ত্রীর নেতা বানিয়ে ইসলাম কি স্ত্রীর ক্ষতি করেছে? যুক্তিযুক্ত জবাব হচ্ছে না। উল্টো যুক্তিযুক্ত ভাবে নারীদের জন্য সহজ ও সুবিধাজনক করে দিয়েছে ইসলাম। সংসারের কঠিন কঠিন কাজ গুলো ইসলাম স্বামীর কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে। স্ত্রী থেকে শুরু করে সন্তানদের পোশাকের চাহিদা, খাদ্যের চাহিদা, অর্থনৈতিক চাহিদা এমনকি যাবতীয় প্রয়োজনীয় চাহিদা স্বামী পূরণ করতে বাধ্য। ইসলাম স্ত্রীদেরকে সংসারের যাবতীয় মৌলিক টেনশন ও কষ্ট থেকে দূরে সরিয়ে রেখে নারীদের জন্য সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বয়ান, সুরা নিসা, ১৪৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এই আয়াতে পুরুষদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বশীলতার দুটি কারণ বলা হয়েছে। প্রথমটি হল, আল্লাহ প্রদত্ত। যেমন পুরুষোচিত শক্তি ও সাহস এবং মেধাগত যোগ্যতায় পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই নারীর তুলনায় অনেক বেশি। দ্বিতীয়টি হল, স্ব-উপার্জিত এই দায়িত্ব শরিয়ত পুরুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। মহিলাদেরকে তাদের প্রাকৃতিক দুর্বলতার কারণে এবং তাদের সতীত্ব, শ্লীলতা এবং পবিত্রতার হিফাজতের জন্য ইসলাম বিশেষ করে তাদের জন্য অতীব জরুরী যে বিধিবিধান প্রণয়ন করেছে সেই কারণেও উপার্জনের ঝামেলা থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের নেতৃত্ব দানের বিরুদ্ধে কুরআন কারীমের এটা এক অকাট্য দলীল। এর সমর্থনে সহিহ বুখারির সেই হাদিস দ্বারাও হয় যাতে নবীজি (সা) বলেছেন, এমন জাতি কখনো সফলকাম হবে না, যে জাতি তাদের নেতৃত্বের দায়িত্বভার কোন মহিলার উপর অর্পণ করবে। 

খেয়াল করুন একজন মানুষের যা যা মৌলিক অধিকার প্রয়োজন সেই প্রয়োজন গুলো যদি বাধ্যতামূলকভাবে অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া যায় তাকে নেতা বানিয়ে তাহলে কি তাকে নেতা বানানোতে অন্যকে অপমান করা হয়েছে নাকি তার জন্য সহজ করা হয়েছে? অবশ্যই সহজ করা হয়েছে। ইসলামের সংসারনীতিমালা সহজে বুঝে নেবার জন্য একটি উদাহরণ কল্পনা করা যেতে পারে। একটি রিকশার কথা চিন্তা করুন। যেই রিকশাটি চালাবে স্বামী কিন্তু পিছে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে চালাবে। এখানে মুল কষ্ট কার বেশি হচ্ছে? অবশ্যই স্বামীর। তেমনিভাবে একটি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কঠিন দায়িত্ব ইসলাম স্বামীর কাঁধে বসিয়ে দিয়েছে এবং স্ত্রীদেরকে সেই কঠিন কাজ করা মোটেও বাধ্যতামূলক নয়। তাই যৌক্তিকভাবে এই কথা বলার সুযোগ নেই যে পুরুষকে বা স্বামীকে নেতার দায়িত্ব দিয়ে স্ত্রীকে অপমান করা হয়েছে বা অবহেলা করা হয়েছে। সুতরাং ইসলাম যেই সিস্টেম দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত এবং একইসাথে কল্যাণকর।

তাছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রী সকলেই সকলের প্রতি দায়িত্বশীল। তাই বলা যায় পুরুষকে পরিবারের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বশীল করা এবং স্ত্রীকেও ঘরের যাবতীয় কাজে দায়িত্বশীল করে দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে দুটোই সম্মানের। স্বামী এবং স্ত্রী সকলেই সকলের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল। হাদিসটি পড়ুন।

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ২১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা সকলেই অভিভাবক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমীর (শাসক, অধিনায়ক) একজন পৃষ্ঠপোষক। তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। পুরুষলোক তার পরিবারের অভিভাবক। তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসারের পৃষ্ঠপোষক, তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক এবং প্রত্যেককেই তার অভিভাবকত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৩০৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীলঅতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৩০০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট যে, সে তাদের অধিকার নষ্ট করবে অর্থাৎ তাদের ভরণ-পোষণে কার্পণ্য করবে যাদের জীবিকার জন্য সে দায়িত্বশীল।’’-ihadis.com 

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৫৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীলকাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর ক্রীতদাস আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’-ihadis.com 

পুরুষ নারীর নেতা হওয়ায় বা অভিভাবক হওয়াতে যেই ফজিলত নারী ঘরের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে নারীর কাজ কর্মে একই ফজিলত। প্রমাণ পেশ করছি। পড়ুন।

শুআবুল ইমান, বায়হাকী, হাদিসঃ ৮৩৬৯,মুসনাদে বাযযার, হাদিসঃ ৫২০৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে, 

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ (রা) নবীজি (সা) এর দরবারে গিয়ে আরজ করলেন, নারীদের পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছে আগমন করেছি। আল্লাহ তা’লা আপনাকে নারী ও পুরুষ সবার কাছেই রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আমরা আপনার উপর ও আপনার প্রতিপালকের উপর ইমান এনেছি। আমরা নারীরা তো ঘরের কাজ কর্ম আঞ্জাম দেই। সন্তান গর্ভে ধারণ করি। তাদের লালন পালন করি। আমাদের উপর বিভিন্ন ইবাদতের ক্ষেত্রে পুরুষদের ফজিলত রয়েছে। তারা জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে। রোগী দেখতে যায়। জানাজায় শরিক হয়। একের পর এক হজ করে। সব চেয়ে বড় ফজিলতের ব্যাপার হলো তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করতে পারে। তো আমরা কিভাবে তাদের মতো ফজিলত ও সওয়াব লাভ করতে পারবো? নবীজি (সা) তখন সাহাবায়ে কেরামের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোনো দীনী বিষয়ে তোমরা কি কোনো নারীকে এরচেয়ে সুন্দর প্রশ্ন করতে শুনেছ কখনো? এরপরে নবীজি সে নারীকে লক্ষ করে বললেন, তুমি আমার কথা ভালোভাবে অনুধাবন করো ও অন্যান্য মহিলাদেরকেও একথা জানিয়ে দেও যে, স্বামীর সাথে সদাচারণ করা, তার সন্তুষ্টি কামনা করা, ও তার পছন্দনীয় কাজ করা এসকল আমলের সমতুল্য সওয়াব ও মর্যাদা রাখে। 

উসুদুল গাবাহ,ইবনুল আসীর,১ খণ্ড,১৩১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

নবীজি (সা) বলেছেন, পুরুষ হজ-ওমরা-জানাজা-জুমআ-জিহাদ সব মিলিয়ে বাইরে যে সওয়াব অর্জন করে, নারী ঘরে স্বামীর আনুগত্য করার দ্বারা সমান পরিমাণ প্রতিদান লাভ করে

ইসলামের দৃষ্টি আদর্শবান ভালো স্ত্রী সেই যে স্বামীকে ভালোবাসে। যে স্বামীর কথা মেনে চলে। যে স্বামীকে খুশি রাখে। কেউ কি চাইবে তার স্ত্রী তার কথা না শুনুক? কেউ কি চাইবে তার স্ত্রী তাকে কষ্ট দিক? কেউ কি চাইবে তার স্ত্রী নেশায় আসক্ত হয়ে যাক? কেউ কি চাইবে তার স্ত্রী অপরাধ করুক? কেউ কি চাইবে তার স্ত্রী পুরুষকে ধর্ষণ করুক? কেউ কি চাইবে তার স্ত্রী নিজের ছেলে সন্তানদের সাথে যৌনমিলন করুক? হ্যাঁ চাইবে যারা নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাস করে তারা চাইবে। কিন্তু আমরা যারা সভ্য চিন্তাশীলরা রয়েছি তারা কখনো চাইবো না। মানুষকে কিভাবে সভ্য ও আদর্শবান হিসেবে তৈরি করতে হয় এসব নাস্তিকরা জানেই না। না জানাটাই স্বাভাবিক। কারণ বিবর্তিত জানোয়ার থেকে উঠে আসা প্রাণীরা মানুষদেরকে সভ্যতা শেখাতেই বা পারে কিভাবে?

পুণ্যবান নারীরা আল্লাহ্‌র আইন মানবে আর তারা পর্দা করবে নিজেদের রক্ষা করবে যেভাবে আল্লাহ্‌ তাদের বলেছেন। এরপরে স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা যেমন ধরুন আপনার স্ত্রী পরকীয়া করে অথবা মদে নেশায়, গাঞ্জা বিড়িতে আসক্ত। আপনার স্ত্রী অমানবিক হয়ে যাচ্ছে আপনার ভালো ভালো মানবিক কথা গুলো সে শুনতে চাইছে না। এই ক্ষেত্রে আপনি তাকে উপদেশ দিলেন যে এইসব অসভ্যতা নাস্তিক্যধর্মে জায়েজ হলেও আমাদের ইসলামে এসব নিষিদ্ধ। তুমি এইসব অবৈধ কাজ করতে পারো না। এখন আপনার স্ত্রী আপনার ভালো কথা মানছে না।

এখন আপনি কি করবেন? আপনি এই ক্ষেত্রে যা করবেন তা হলঃ

>প্রথমে তাকে ভালো উপদেশ দিয়ে বুঝাতে হবে

>এরপরে কাজ না হলে বিছানা ত্যাগ করতে হবে অর্থাৎ এক সাথে ঘুমাবেন না

>এরপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে তখন শেষে আপনি হালকা প্রহার করতে পারেন

>এরপরেও কাজ না হলে দুই পক্ষের পরিবার এনে বিচার বিবেচনা করে সমস্যা সমাধান করতে হবে

ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের অযৌক্তিক দাবি সামনে আনার সময় প্রথম ধাপ ও শেষ ধাম গুলো দেখায় না, না দেখিয়ে মাঝখান থেকে অর্থাৎ প্রহার করতে পারবে এতটুকু তুলে ধরে। আচ্ছা আপনারাই বলুন তো এভাবে অর্ধেক দেখিয়ে সমালোচনা করা কি সততাবানদের পরিচয় হতে পারে? না। কিন্তু মিথ্যুকবাজদের পক্ষেই এরকম করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

স্ত্রীর অবাধ্যতার পরিসীমা কতটুকু?

স্ত্রীর অবাধ্যতা হওয়া যেমন স্ত্রী যদি পরকীয়া করে, মদের নেশায় আসক্ত থাকে , বিড়িখোর হয় , সন্তানদের আদর্শ হতে শিক্ষা না দেয়,নিজের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করে না, বিনা কারণে স্বামীকে ঘৃণা করে,অন্যায়ভাবে স্বামীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, পরিবারের দায়িত্ব পালন না করে , আল্লাহর হুকুম পালন করে না তাহলে এমন স্ত্রীর বেলায় বা অবাধ্য স্ত্রী হলে তাকে শাসন করার অর্থে মৃদু প্রহার করা যাবে।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২৮৪০ ,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবীজি (সা) বলেছেনঃ তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ করযদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের হাক্ব রয়েছে।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১৬৩, নির্ণীত নয়ঃ হাদিস থেকে বর্ণিত,

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাওতোমাদের নিকট তারা বন্দীর মত। তাছাড়া তোমাদের আর কোন অধিকার নেই তাদের উপর, কিন্তু তারা যদি সুস্পষ্ট চরিত্রহীনতায় লিপ্ত হয় তবে ভিন্ন কথাতারা যদি তাই করে তাহলে তাদের বিছনাকে আলাদা করে দাও এবং সামান্য প্রহার কর, মারাত্মক প্রহার নয়। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে তাদেরকে নির্যাতনের অজুহাত খুঁজতে যেও না। জেনে রাখ! তোমাদের যেমন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি অধিকার আছে, তাদেরও তোমাদের প্রতি ঠিক সেরকমই অধিকার আছে। তাদের প্রতি তোমাদের অধিকার এই যে, তোমরা যাদেরকে পছন্দ কর না তারা যেন সেসব লোককে দিয়ে তোমাদের বিছানা পদদলিত না করায় এবং যেসব লোককে তোমরা মন্দ বলে জান তাদেরকে যেন অন্দর মহলে ঢুকার অনুমতি না দেয়। জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে।-ihadis.com

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে স্ত্রীরা স্বামীর কাছে বন্দীর মতো দ্বারা কি স্ত্রীদের অপমান করা হয়নি? উত্তর হচ্ছে না। পুরো হাদিসটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে বুঝা যায় এখানে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কের বন্ধন অর্থে বলা হয়েছে। অথবা একজন স্ত্রী যে স্বামীর সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ এই অর্থ বুঝাতে বন্দীর মতো শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। তাছাড়া হাদিসেই কিন্তু পরিস্কার করে বলে দেয়া হয়েছে তোমাদের যেমন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি অধিকার আছে, তাদেরও তোমাদের প্রতি ঠিক সেরকমই অধিকার আছে। সুতরাং ভুল বুঝার সুযোগ নেই।

তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, খণ্ড ৪, ১৪৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কোন স্ত্রীর মধ্যে যখন আনুগত্যহীনতা ও বিদ্রোহাত্মক মনোভাব দেখা দেবে এবং বুঝা যাবে কোন অবস্থাতেই সে আনুগত্য স্বীকার করবে প্রস্তুত নয় একমাত্র তখনই পরিবারকে চরম ধ্বংস থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে কিছু শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে পর্যায়ক্রমে অর্থাৎ সূরা নিসা ৪:৩৪ অনুযায়ীকিন্তু মনে রাখতে হবে এসব সিস্টেম একমাত্র সংশোধনী প্রচেষ্টা হিসেবেই গ্রহন করতে হবে, বিদ্রোহাত্মক ব্যাবহার ও কার্যকলাপের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নয়

তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ৪ খণ্ড, ১৫১ ও ১৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

সূরা নিসা ৪:৩৪ = "স্ত্রীদেরকে প্রহার করো" ব্যাকের এ শেষ কথাটির অর্থ ভাল করে বুঝতে হলে পূর্ববর্তী দুটি প্রক্রিয়ার অর্থ ও উদ্দেশ্যের সাথে মিলিয়েই তাকে বুঝতে হবে।প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে শাস্তি দান বা ব্যাক্তিগত কারো তৃপ্তি লাভ করার জন্যে নয় , এ প্রক্রিয়া অবলম্বন । স্ত্রীকে বশীভূত করার উদ্দেশ্যে লাঞ্ছিত করা ও অবমাননার জন্যেও নয়এ পদক্ষেপ দ্বারা এটাও চাওয়া হয়নি যে একজন স্ত্রী তার স্বামীর সাথে থেকে সন্তুষ্ট নয়,তবুও জবরদস্তি করে সেই স্বামীর সাথে জীবন যাপন করতে তাকে বাধ্য করা হবে । এ মারধর করার উদ্দেশ্য হবে আদব শেখানো,যেমন উদাহরণ স্বরূপ কোন মরুব্বি ব্যাক্তি আদব শেখানোর উদ্দেশ্যে মারেন বা কোন বাপ সন্তানদেরকে আদব - কায়দা শেখানোর জন্যে মারধর করেন অথবা আদব কায়দা শেখানোর জন্যে কোন শিক্ষক তার ছাত্রদেরকে মারধর করেন

তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন, ১ খণ্ড, ৬২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত,

যদি স্ত্রী নিজের অবাধ্যতা ও দুষ্কর্ম থেকে ফিরে না আসে তাহলে তৃতীয় পর্যায়ে সাধারনভাবে মারধর করারও অনুমতি রয়েছে । আর তার সীমা হল এই যে শরীরে যেন সে মারধরের প্রতিক্রিয়া কিংবা জখম না হয় কিন্তু পর্যায়ের শাস্তি দানকেও রাসুলে করীম (সা) পছন্দ করেননি বরং তিনি বলেছেন ভাল লোক এমন করে না

সুতরাং স্ত্রীর অবাধ্য হওয়ার পরিসীমা উপরের তথ্য অনুযায়ী আমরা পেলাম যথাক্রমে যদি স্ত্রী স্বামীর সাথে দুশমনি করে, মদ খায়, গাজা খায়, ইয়াবা খায়, পরকীয়া করে, আল্লাহর কথা অমান্য করে, বড়দের সম্মান করে না , ছোটদের স্নেহ করে না , নিজের সন্তানদের ভালো কিছু শিখায় না ইত্যাদি এসব অপরাধের ক্ষেত্রে ইসলাম স্বামীকে তার স্ত্রীকে হালকা প্রহারের অনুমতি দেয়।

নাস্তিকরা একটি প্রশ্ন করে থাকে এভাবে যে, এখানে স্বামীর সাথে সঙ্গম না করাকে অবাধ্য কাজ বলা হয়েছে তাহলে এখান থেকে কি বুঝা যায় না যে স্বামী ইচ্ছা করলে জবরদস্তি সঙ্গম করবে এবং এর জন্য প্রহারও করতে পারবে?

কারণ, ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীরের, ৪ খণ্ড, ৩৮৬ ও ৩৮৭ পৃষ্ঠায় বুখারি ও মুসলিম শরীফে নবীজি (সা) বলেছেন যখন কোন লোক তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে এবং সে অস্বীকার করে তখন সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। তাই এখানে হচ্ছে - এরুপ অবাধ্য নারীদেরকে প্রথমে বুঝাতে চেষ্টা করো অথবা বিছানা হতে পৃথক রাখো । হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন অর্থাৎ শয়ন তো বিছানার উপরেই করাবে কিন্তু পার্শ্ব পরিবর্তন করে থাকবে এবং সঙ্গম করবে না।তার সাথে কথা বলাও বন্ধ রাখতে পারো এবং স্ত্রী জন্য এটাই হচ্ছে বড় শাস্তি । কোন কোন তাফসীরকারকের মতে তাকে পার্শ্বে শুতেও দেবে না। 

বিবর্তিত মস্তিস্কধারীরা ইসলাম কিভাবে বুঝতে পারবে বলুন? ইসলামকে বুঝতে হলে গভীর চিন্তাশীলতার প্রয়োজন। আর গভীর চিন্তাশীল হতে হলে চিন্তা করার মতো ধারালো একটি মগজ প্রয়োজন যা নাস্তিকদের এখনো বিবর্তিত হয়ে উঠেনি। নাস্তিকরা যে দিন পরিপূর্ণ মানুষে বিবর্তিত হয়ে যাবে সেই দিন ইসলাম বুঝতে আর অসুবিধা হবে না।

নাস্তিকরা আগের পৃষ্ঠার লেখা না দেখিয়ে প্রশ্নটি করেছে। যদি আগের লেখা দেখাতো তাহলে এভাবে মিথ্যা প্রশ্ন করতে পারতো না। অর্থাৎ সূরা নিসা ৪:৩৪ ভাবার্থ তাফসীরে ইবনে কাসীরের, ৪ খণ্ড, ৩৮৬ পৃষ্ঠায় বলাই হয়েছে যে আল্লাহ তা"লা বলেন যেসব নারীর দুষ্টামিকে তোমরা ভয় করো অর্থাৎ যারা তোমাদের উপরে হতে চায় । তোমাদের অবাদ্ধতাচরন করে, তোমাদেরকে গুরুত্ব দেয় না এবং তোমাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে। তাদেরকে তোমরা প্রথমে মুখে উপদেশ প্রদান করো, নানা প্রকারে তাদের অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করো, স্বামীর অধিকারের কথা তাদেরকে বুঝিয়ে দাও । তাদেরকে বল - দেখো স্বামীর এত অধিকার রয়েছে যে রাসুল (সা) বলেছেন যদি কাউকে আমি এ নির্দেশ দিতে পারতাম যে সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদাহ করবে তবে নারীকে নির্দেশ দিতাম যে সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে কেনন তার উপর সবচেয়ে বড় হক তারই রয়েছে ।

এখান থেকে স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে যে কোনো অবাধ্য স্ত্রী অর্থাৎ স্বামীর উপরে হতে চায় মানে অহংকার করে এবং স্বামীকে গুরুত্ব দেয় না সাথে স্বামীর সাথে দুশমনি করে এবং স্বামীর আহ্বানে বিনা কারণে রাজি হয় না এই টাইপের অসৎ ক্ষতিকর স্ত্রীদের প্রথমে বুঝাতে হবে এরপরে না মানলে বিছানা ত্যাগ করতে হবে এরপরেও কাজ না হলে তাকে হালকা প্রহার করা যাবে। তবে রাসুল (সা) যেহেতু কখনো স্ত্রীদের মারে নাই তাই একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে স্ত্রীদের মারা উত্তম কাজ নয় বরং পরামর্শ করে এসব সমস্যা সমাধান করাই উত্তম। বিভিন্ন আরো অপশন রয়েছে।

পাঠক লেখাটি মনোযোগ দিয়ে আবার পড়েন। যেখানে ইবনে আব্বাস (রা) নিজেই বলছেন যে সঙ্গম করবে না সেখানে স্বামী জবরদস্তি করে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করবে এবং সঙ্গম করার জন্য প্রহার করবে এরকম কিছুই তো তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলাই হচ্ছে না। তাই মিথ্যুকবাজ নাস্তিকদের মিথ্যা বলার আর সুযোগ থাকছে না।

স্ত্রী যদি বিনা কারণে স্বামীর সাথে সঙ্গম করতে মানা করে এটি অবশ্যই অন্যায় হবে কারণ স্বামী স্ত্রী যৌন সঙ্গম এটি পবিত্র একটি সম্পর্ক । স্ত্রী যদি তার স্বামীর সাথে ইচ্ছা করেই সঙ্গম করতে না চায় এর মানে তো হল সে তার স্বামীকে ভালবাসে না । এটি অবশ্যই অপরাধ । এই ক্ষেত্রে একজন আদর্শ স্বামী তার স্ত্রীকে বুঝাবে অথবা কথা বলাও বন্ধ করতে পারে অভিমান করতে পারে এবং এরপরেও যদি স্ত্রী না বুঝে অর্থাৎ সে তার স্বামীর সাথে বিনা কারণে সঙ্গম করবে না এই ক্ষেত্রে তার স্বামী তাকে হালকা প্রহার করলে করতে পারে কিন্তু জবরদস্তি করে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করবে না। স্ত্রীর অপরাধের জন্য নরম প্রহার করলে করতেই পারে স্বামী কিন্তু এরপরেও নির্যাতন করে, অত্যাচার করে জবরদস্তি করে স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে না। তাছাড়া রাসুল (সা) যেহেতু বলেছেন কোনো ভাল মানুষ তার স্ত্রীকে মারে না তাই একজন আদর্শ স্বামী তার স্ত্রীকে মারবে না বরং পরামর্শ করে সমাধান করার চেষ্টা করবে। বিচারকের সাহায্য গ্রহণ করতে পারে। আপনি যদি ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪ খণ্ড, ৩৮৫ থেকে ৩৯১ পৃষ্ঠা পড়েন। স্পষ্ট বুঝে যাবেন যে অবাধ্য খারাপ স্ত্রীকে প্রহার করা যাবে কিন্তু সেটি হালকা প্রহার এবং জবরদস্তি করে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে পারবে না এটাই ইসলামের আদর্শ।

নাস্তিকরা বলে থাকে নবীজি (সা) নাকি স্বামীদেরকে অন্যায়ভাবেও স্ত্রীদেরকেও নির্যাতন করার অনুমতি দিয়েছেন।


তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৪ খণ্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠাঃ অন্য জায়গায় রয়েছে অর্থাৎ তাদের উপর (স্ত্রীদের) পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। (২ঃ২২৮) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন এ আয়াতের ভাবার্থ এই যে, নারীদেরকে পুরুষদের আনুগত্য (স্বীকার) করতে হবে এবং তাদের কাজ হচ্ছে সন্তানাদির রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং স্বামীর মালের হিফাজত করা ইত্যাদি। হযরত হাসান বসরী বলেন একটি স্ত্রীলোক নবী (সা) এর সামনে স্বীয় স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে তার স্বামী থাকে থাপ্পড় মেরেছে। রাসুলুল্লাহ (সা) প্রতিশোধ নেয়ার হুকুম প্রায় দিয়েই ফেলেছিলেন এমন সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সুতরাং প্রতিশোধ গ্রহণ হতে বিরত রাখা হয়। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে একজন আনসারী (রা) তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা) এর খিদমতে উপস্থিত হন। তাঁর স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা) আমার স্বামী আমাকে চড় মেরেছেওর চিহ্ন এখনো আমার চেহারায় বিদ্যমান রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা) তখন বলেন, তাঁর এ অধিকার ছিল না। সেখানেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন রাসুলুল্লাহ (রা) বলেন আমি চেয়েছিলাম এক রকম এবং আল্লাহ তা’লা চাইলেন অন্য রকম।


উপরের তথ্য থেকে প্রমাণ হয় না যে নবীজি (সা) স্বামীদেরকে স্ত্রী নির্যাতন করার আদেশ দিয়েছেন। বরং নবীজি (সা) সেই স্ত্রীকে উল্টো স্বামীকে প্রহার করতে বলেছিলেন কিন্তু আল্লাহ অন্য বিধান নাজিল করে দিলেন। এটাই প্রমাণ করে যে কুরআন নবীজি (সা) কখনো লিখেন নাই বরং কুরআন সত্যি সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হওয়া সত্য কিতাব। অস্বীকার করার উপায় নাই। তাছাড়া উপরের তথ্যে পরিস্কার যে স্ত্রী লোকটি এমন কোনো অন্যায় করেছিল যা তার স্বামীর কাছে খারাপ লেগেছে। সেহেতু সে স্ত্রীকে চড় মেরেছে। তাছাড়া তাফসীরে জালালাইন থেকে বুঝা যায় সেই স্ত্রী এমন কিছু করেছিল যা স্বামীর মর্জির খেলাফ। বা স্বামীকে রাগিয়ে দেয় এমন অপরাধ স্ত্রী করেছিল।

তাফসীরে জালালাইন,১ খণ্ড,৮১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে

ঘটনার বিবরণ এই যে, সাদের স্ত্রী তাঁর মর্জির খেলাফ কোনো কাজ করেছিল। এই জন্য সাদ তাকে একটি চাপড় মারে। স্ত্রী ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বীয় পিতাকে এ সম্পর্কে অবগত করে। পিতা প্রিয়নবী (সা) এর নিকট এ সম্পর্কে অভিযোগ করে। প্রিয়নবী (সা) স্বামীর নিকট থেকে স্ত্রীকে প্রতিশোধ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। ঠিক এমন সময় আলোচ্য আয়াতটি নাজিল হয়

সুতরাং নবীজি (সা) স্বামীদেরকে স্ত্রী নির্যাতনের অনুমতি দিয়েছেন এই দাবি নাস্তিকদের মিথ্যাচার। কোনো সংশয় নেই।

প্রহার করার সিমানা কতটুকু?

প্রহার করাটা হলো আসলে অপশনাল একটি সিস্টেম। কেউ যদি ইচ্ছা করে সে এই প্রহার না করেও পরামর্শ করে সমাধান করতে পারে এটিও ইসলামের একটি আইন তবে প্রহার করতে চাইলে সেটি একেবারেই হালকা হবে এটাই ইসলামের শর্ত। ইসলাম বিদ্বেষী মিথ্যুকবাজরা এই শর্ত গুলোর কথা কখনোই আপনাকে বলতে চাইবে না যে স্ত্রীর ভয়ংকর অপরাধের জন্য ইসলাম একেবারে মৃদু হালকা প্রহার করতে বলে। প্রমাণ গুলো পড়ে যাক।

ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ৮ খণ্ড,৪৭৬ পৃষ্ঠার অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে,

স্ত্রীদের প্রহার করা নিন্দনীয় কাজ এবং আল্লাহ্‌ বলেন প্রয়োজনে তাদেরকে মৃদু প্রহার করো

তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ১ খণ্ড, ২৩৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

প্রহার করা অর্থাৎ এমন প্রহার যা তেমন অত্যধিক পীড়াদায়ক এবং ক্ষতদায়ক না হয়

সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৮৪০ , সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী (সা) বলেছেনঃ তোমরা স্ত্রীলোকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো , তোমরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহ্‌র কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ । তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের বিছানায় এমন কোন লোকের আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ করো। যদি তারা এরুপ করে তবে হালকাভাবে প্রহার করো।-ihadis.com

ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ৮ খণ্ড, ৪৭৭ পৃষ্ঠায় সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত

নবী (সা) বলেন তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মত প্রহার করো না, কেননা দিন শেষে তার সাথে তো মিলিত হবে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন, স্ত্রীদের মুখমণ্ডলে মারবে না , তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে চাইলে ঘরের মদ্ধেই রাখবে।-ihadis,com।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন স্ত্রীদের মারবে না এবং গালমন্দ করবে না।-ihadis,com।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪২, হাসান সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ “তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে।-ihadis,com।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ১৪২ ,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনু সাবরাহ (রা) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একজন স্ত্রী আছে। সে অশ্লীলভাষী। তিনি বললেনঃ তাহলে তাকে ত্বালাক দাও। লাক্বীত্ব বলেন, আমার সাহচর্যে সে দীর্ঘ দিন অতিবাহিত করেছে এবং তার গর্ভজাত আমার একটি সন্তানও রয়েছে। তিনি বললেনঃ তবে তাকে উপদেশ দাও। তার মাঝে কল্যাণ থাকলে সে উপদেশ গ্রহন করবে। জেনে রাখ, নিজের জীবন সঙ্গিণীকে ক্রীতদাসীদের মত প্রহার করবে না।-ihadis,com।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৮৩,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দিলেন, অতঃপর মহিলাদের উল্লেখ করে তাদের ব্যাপারে লোকজনকে উপদেশ দিলেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ কেন তার স্ত্রীকে দাসীর মত বেত্রাঘাত করে? অথচ দিনের শেষেই সে আবার তাঁর শয্যাসংগী হয়! - এই হাদিসের উপরেই অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে "স্ত্রীদের প্রহার করা নিকৃষ্ট কাজ"।-ihadis,com।

আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইয়াস ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনু আবূ যুবাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌-র দাসীদেরকে মারবে না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট এসে বললেন, মহিলারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হচ্ছে। এরপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মৃদু আঘাত করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর অনেক মহিলা এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদের কাছে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। সুতরাং যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।-ihadis,com।

তাফসীরে তাবারী,৭ খণ্ড, ২২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

দাহহাক (র) হতে বর্ণিত তিনি মহান আল্লাহর বাণী এর ব্যাখ্যায় বলেন, স্ত্রীর উপর পুরুষের প্রাধান্য রয়েছে। সে তাকে আল্লাহ পাকের আনুগত্যে তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলার জন্য নির্দেশ করবে। যদি স্ত্রী তা মেনে না চলে, তবে স্বামীর উচিত তাকে প্রহার করা। তবে এমনভাবে প্রহার করবে না যাতে সে আহত হয়। স্বামী স্ত্রীর জন্য অর্থ সম্পদ ব্যয় করে এবং স্ত্রীর বিভিন্ন কাজ কর্মের দায়িত্ব পালন করে স্ত্রীর উপর স্বামীর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে

তাফসীরে জালালাইন, ১ খণ্ড, ৮১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

যে স্ত্রী ভদ্রতাসুলভ সতর্কীকরণ দ্বারা দুরস্ত বা সংশোধিত না হয় অর্থাৎ আগের বলা পদ্ধতিতে যদি অবাধ্য স্ত্রী সংশোধন না হয় - তবে তাকে তৃতীয় পর্যায়ে হালকা প্রহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্বামী তাকে হালকা প্রহার করতে পারবে যাতে শরীরে কোন রকম চিহ্ন না পড়ে আর চেহারায় তো সম্পূর্ণ রুপে প্রহার নিষিদ্ধ। হালকা প্রহারের যদিও অনুমতি রয়েছে কিন্তু এর সাথে সাথে একথাও বিবৃত হয়েছে যে অর্থাৎ ভদ্র, ভালো লোকেরা তাদের স্ত্রীদের প্রহার করেবে না এবং হুজুরে পাক (সা) তার স্ত্রীকে প্রহার করেছেন বলে পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে কোন প্রমান পাওয়া যায় না

তাফসীরে ওসমানী, ১ খণ্ড, ৪২৫ ও ৪২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কোন নারী স্বামীর সাথে অসদাচরণ করলে প্রথম পর্যায়ে স্বামী তাকে মুখে বুঝাবে,তাতে কাজ না হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে একই গৃহে ভিন্ন শয্যায় থাকতে দিবে। এতেই কোন ফল না পেলে তৃতীয় পর্যায়ে তাকে মারবে। তবে এমনভাবে মারবে না ,যাতে মারার চিহ্ন থাকে, সকল অপরাধেরই পর্যায় ও স্তর আছে। তদনুযায়ী শাসনেরও অনুমতি আছে। আয়াতে এর তিনটি পর্যায় ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মার পিট হচ্ছে সর্বশেষ পর্যায়। সামান্য অপরাধের জন্য মারবে না, অবশ্য অপরাধ গুরতর হলে তা ভিন্ন কথা । এমন আঘাত করবে না,যার চিহ্ন বর্তমান থাকে। 

তাফসীরে তাবারী,৭ খণ্ড,২৪০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আতা (র) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা) কে জিজ্ঞাসা করলাম এমন কি দিয়ে প্রহার করা যাবে, যাতে আহত না হয়? জবাবে তিনি বললেন, মিসওয়াক বা এ জাতীয় কিছু দ্বারা তাকে প্রহার করবে। ……….রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁর এক ভাষণে বলেছেন, এমনভাবে মার যাতে আহত না হয়। তিনি বলেন, মিসওয়াক বা  জাতীয় কিছু দ্বারা তাকে প্রহার করবে

ইসলাম খুবই হালকাভাবে প্রকার করার অনুমতি দিয়েচে অথচ মিথ্যুকবাজ নাস্তিকরা এই মৃদু প্রহারকে নির্যাতন আর অত্যাচারের সাথে মিলিয়ে ইসলামের বদনাম করে ঘুরে। ভাবা যায়? নাস্তিকরা কবে ইসলাম বিষয় অন্ধবিশ্বাস করা ত্যাগ করবে,হে? কবে মানুষের কাতারে এসে দাড়াতে পারবে? 

স্বামী যদি খারাপ হয় বা অন্যায় কাজ করে স্ত্রী কি স্বামীকে প্রহার করতে পারবে?

অনেকেই না বুঝে এই প্রশ্নটি করে থাকে যে, স্ত্রীকে কেন এই অনুমতি দেয়া হয়নি স্বামীর অবাধ্যতায় স্বামীকে প্রহার করার? জবাবটি খুবই সহজ। সাধারণত স্ত্রীলোক পুরুষদের থেকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী কম হয়। এটা সবাই জানে এবং মানেও। এই কারণে নারী পুরুষ এক সাথে ক্রিকেট খেলে না, ফুটবল খেলে না,UFC ফাইটে একত্রে খেলে না। কারণ নারীরা এসব খেলায় পুরুষদের সাথে অংশগ্রহণ করলে নাকানিচুবানি খাবে। সংশয় নেই। নারীবাদীরা এই কারণেই এসব স্থানে নারী পুরুষ সমান বলে চিল্লাচিল্লি করে না। পাঠক এইবার বুঝে নেবার চেষ্টা করুন। 

স্বামী যদি মদ,গাঞ্জা, নেশা অথবা পরকীয়ায় আসক্ত থাকে এমন অপরাধী স্বামীকে যদি স্ত্রী প্রহার করে তাহলে একবার চিন্তা করে দেখতে পারেন স্ত্রীর জন্য এই বিধান কেমন ক্ষতিকর হয়ে যেতো? স্বামীকে প্রহার করতে গিয়ে উল্টো স্ত্রীই মাইর খেতো। স্ত্রী স্বামীকে প্রহার করতে গেলে স্বামীর হাতে উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হতো। তাই যৌক্তিকভাবে বলা যায় স্বামীর অপরাধের জন্য স্ত্রী স্বামীকে প্রহার না করাটিই বেষ্ট সমাধান। তাহলে স্ত্রী কি করবে এখন? স্বামী যদি স্ত্রীকে অপরাধমূলক কোনো কাজ করতে বলে তাহলে স্ত্রী স্বামীর কথা মানতে বাধ্য নয়। পড়তে থাকুন।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৭৪২৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আম্মাজান আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর বাণীঃ “কোন সহধর্মিণী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে স্বামী-স্ত্রী যদি সমঝোতা করতে চায় তাদের কোন দোষ নেই এবং সমঝোতা (সন্ধি) সর্বাবস্থায়ই উত্তম”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১২৮) তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতটি ঐ মহিলাদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যে এমন একজন পুরুষের কাছে ছিল, যার সাহচর্যে সে দীর্ঘদিন ছিল। এখন সে তাকে তালাক দিতে চায়। আর মহিলা বলে, আমাকে তালাক দিও না বরং আমাকে তোমার সাথে থাকতে দাও। তবে তোমার জন্য আমার পক্ষ হতে অন্য স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি থাকল। এ প্রসঙ্গে উপরোল্লিখিত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।-ihadis.com

ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ৮/ ৪৭৭, অনুচ্ছেদ ২৫১৮,বর্ণিত আছে,

অবৈধ কাজে স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করবে না এবং ৪৮২৫ নং হাদিসে আছে এক মহিলাকে তার স্বামী শরিয়ত বিরোধী কাজ করতে বলায় , রাসুল (সা) ঐ নারীকে সেটা পালন করতে নিষেধ করেন

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪:৩৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যদি তোমরা উভয়য়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশংকা করো তাহলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও যদি তারা মীমাংসা চায় তাহলে আল্লাহ্‌ উভয়ের মধ্যে মিল করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞানী

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১২৭৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবীজি মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে এবং তার হাত দিয়ে তা প্রতিহত করার সামর্থ্য থাকলে সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিহত করে। তার সেই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন মুখের ভাষায় তা প্রতিহত (বা প্রতিবাদ) করে। যদি মুখের ভাষায় প্রতিহত করার সামর্থ্য তার না থাকে তবে সে যেন তার অন্তরে তা প্রতিহত করে। এটা ঈমানের খুবই নিম্নস্তর।-ihadis.com

সুতরাং খারাপ স্বামীকে স্ত্রী খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ দিতে পারে স্বামীর সাথে অভিমানও করতে পারে কিন্তু যদি স্বামী মারাত্মক খারাপ হয় তাহলে স্ত্রী সেই খারাপ স্বামীকে মারবে না কারণ যদি মারে তাহলে সেও পাল্টা মার খাবে যেহেতু তার স্বামী ভালো না। তাই স্ত্রীর জন্য বিচারক এর কাছে যাওয়াই উত্তম হবে। কিন্তু অনেক সময় এরকম অবস্থা হয় যে খারাপ স্বামী মদ খেয়ে এসে স্ত্রীকে প্রচুর নির্যাতন করছে এমনকি তা স্ত্রীর জীবনের জন্য খুবই ভয়ংকর। হ্যাঁ, এরকম অবস্থায় স্ত্রী নিজের জীবনকে রক্ষা করার জন্য যা পদক্ষপ নিবে সেটি ইসলাম সমর্থন করে। স্ত্রী নিজের সাধ্য অনুযায়ী অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে। নিজেকে অন্যায় থেকে নিরাপদে রাখবে। চেষ্টা করবে নিজের সাধ্য অনুযায়ী।

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীর আচরণ যেমন হতে বাধ্যঃ

নাস্তিকরা সব সময় স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব কর্তব্য গুলো দেখিয়ে মানুষকে বুঝায় যে দেখুন স্ত্রীকে কিভাবে দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছি ইসলাম অথচ স্বামীকেও যে স্ত্রীর ব্যাপারে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে বাধ্য করে সেটি এরা কখনো দেখাবে না। জানতে দেবে না। স্বামীদেরকে ইসলাম স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণ করতে বাধ্য করে এই প্রমাণ গুলো জেনে নিলেই বুঝতে সহজ হয়ে যাবে ইসলাম কেমন শান্তিপূর্ণ পরিবার চায়। সব গুলো আমি দিয়ে দিচ্ছি পড়তে থাকুন।

আল কুরআন, সুরা তাওবা ৯:৭১ আয়াত থেকে বর্ণিত,

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা'আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪:১৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,

তোমরা তাদের স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। আর তোমরা তাদের অপছন্দ করো তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ্‌ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭:৫৬ আয়াত থেকে বর্ণিত,

দুনিয়াতে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিও না

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:১৯৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,

তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না আর মানুষের সাথে ভাল ব্যাবহার করো , নিশ্চয় আল্লাহ্‌ভাল ব্যাবহারকারীদের ভালবাসেন

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০৩৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

এক লোক আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করেন, নবী (সা) নিজ গৃহে কি কাজ করতেন? তিনি বলেন, তিনি পারিবারিক কাজকর্মে বাস্ত থাকতেন ।যখন সালাতের সময় উপস্থিত হত তখন উঠে সালাতে চলে যেতেন।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

রাসুল (সা) বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৫৯ এবং ৬০৩৫, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন নবী (সা) স্বভাবগত ভাবে অশালীন কথা বলতেন না,ইচ্ছা করে তিনি অশালীন কথা বলতেন না,অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব চরিত্র উত্তম সেই তোমাদের মধ্যে সর্ব উত্তম।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী (সা) বলেন, সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম যার নিকট কল্যাণ কামনা করা যায় এবং যার ক্ষতি হতে মুক্ত থাকা যায়। আর সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট যার নিকট কল্যাণের আশা করা যায় না এবং যার ক্ষতি হতেও নিরাপদ থাকা যায় না।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৮৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপরকে প্রহার করলে, কিয়ামতের দিন তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।-ihadis.com

শামায়েলে তিরমিজি, হাদিসঃ ২৬৬, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৪, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

মু’আবিয়াহ্‌ আল-কুশাইরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) সম্পর্কে আপনি কি বলেন? তিনি বললেনঃ তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তাই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৬, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌-র দাসীদেরকে মারবে না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট এসে বললেন, মহিলারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হচ্ছে। এরপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মৃদু আঘাত করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর অনেক মহিলা এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদের কাছে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। সুতরাং যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫২০৪, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে। - এই হাদিসের উপরে অধ্যায়ের নাম হলঃ স্ত্রীদের প্রহার করা নিন্দনীয় কাজ এবং আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ (প্রয়োজনে) “তাদেরকে মৃদু প্রহার কর।” (সূরাহ আন-নিসাঃ ৪/৩৪)-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৩, হাসান সহিহ  থেকে বর্ণিত,

বাহয ইবনে হাকীম (রাঃ) তার পিতার হতে তার দাদা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ একদা আমি বলি, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা আমাদের স্ত্রীদের কোন স্থানে সঙ্গম করবো, আর কোন স্থান বর্জন করবো? তিনি বললেনঃ তুমি যেভাবে ইচ্ছে করো তোমার ফসল উৎপাদন স্থানে (সম্মুখের লজ্জাস্থানে) সঙ্গম করো। আর তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি পরিধান করলে তাকেও পরিধান করাবে। তাকে গালমন্দ করবে না এবং মারবে না। ইমামা আবু দাউদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, শু’বাহ বর্ণনা করেছেন, যখন তুমি খাবে তাকেও খাওয়াবে, আর যখন তুমি পরিধান করবে, তখন তাকেও পরাবে।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৮৪, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৫৬, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা দাওয়াত দানকারীর ডাকে সাড়া দিও, উপহারাদি ফেরত দিও না এবং মুসলমানদেরকে প্রহার করো না।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১৮৫, সহিহ হাদিস  থেকে বর্ণিত,

নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করলে, কিয়ামতের দিন তার থেকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৫, হাসান হাদিস  থেকে বর্ণিত,

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমরা স্ত্রীদের অবাধ্য হওয়ার আশংকা করো, তাহলে তাদেরকে তোমাদের বিছানা থেকে পৃথক করে দাও। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ তাদের সাথে সহবাস বর্জন করো।-ihadis.com

স্বামী হবে তিনি যিনি স্ত্রীকে সম্মান করবেন। স্ত্রীকে মনে প্রাণে ভালবাসবেন। স্ত্রীর সকল প্রয়োজন পূরণ করবেন বিনয়ের সাথে। স্ত্রীকে খুশি রাখবেন। স্ত্রীকে আদর সোহাগ করবেন। স্ত্রী অভিমান করলে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করবেন। স্ত্রীর সাথে এমন এমন সুন্দর সুন্দর আচরণ করবেন যাতে স্ত্রী আপনাকেও ভালোবাসবে। ইসলাম এটাই শিক্ষা দেয়। ইসলাম এটাই করতে বলে। ইসলাম প্রতিটি স্বামীকে এভাবে মানবিক বানাতে চায়। কিন্তু নাস্তিকরা এই সত্য কথা কখনো কাউকে দেখাবে না। চাইবেও না।

উপসংহারঃ সার্বিক দলিল প্রমাণ সামনে রেখে নিরপেক্ষভাবে এটা বলতে বাধ্য হতে হচ্ছে যে ইসলাম কখনো একজন স্বামীকে তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতে আদেশ দেয় না। বরং স্ত্রী যদি অপরাধ করে তাহলে স্ত্রীকে সংশোধন করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে হালকা প্রহার করার নির্দেশ রয়েছে। এই প্রহার করাটি বাধ্যতামূলক নয় ঐচ্ছিক। নাস্তিকরা ইসলাম বিরুদ্ধে যেভাবে মিথ্যাচার করে সেগুলো ভ্রান্ত এবং অযৌক্তিক।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post