কুরআন হাদিসের দাবি চাঁদের নিজস্ব আলো?

বিষয়ঃ
কুরআন হাদিসের দাবি চাঁদের নিজস্ব আলো?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

===========================

ভূমিকাঃ ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখবার জন্য মুক্তমনা নাস্তিকরা মুক্তবুদ্ধিতে কুরআন হাদিস দেখিয়ে নানান দাবি ও অভিযোগ করে থাকে। অনেক মানুষই যাচাই ছাড়াই, তদন্ত ছাড়াই সেই সব কথা বিশ্বাসও করে নেয়। আমার মতো খুব কম মানুষই আছেন যারা নাস্তিকদের দাবি গুলোর সত্য বিষয়ে তদন্ত করে। উনারা দাবি করে থাকেন কুরআন ও হাদিসে নাকি স্পষ্ট দাবি করা আছে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। তাই আজকে আমি চাঁদের নিজস্ব আলো আছে,নাকি নাই-ইসলাম এই ব্যাপারে কি বলে ইত্যাদি সব কিছুই বিস্তারিত তদন্ত করবো। নাস্তিকদের সকল ইসলামবিরোধী বিশ্বাস গুলোকে বিচার করে দেখবো তারা আসলেই সত্যকথা বলে নাকি।

কুরআনের সেই আয়াত গুলোঃ

নাস্তিকরা প্রশ্ন করে,

কুরআনের এই আয়াত সমূহ যেমনঃ সূরা ইউনুস ১০:৫ = তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময়। সূরা ফুরকান ২৫:৬১ = বরকতময় সে সত্তা যিনি আসমানে সৃষ্টি করেছেন বিশালকায় গ্রহসমূহ। আর তাতে প্রদীপ ও আলো বিকিরণকারী চাঁদ সৃষ্টি করেছেন। সূরা নূহ ৭১:১৬ = আর এগুলোর মধ্যে চাঁদকে সৃষ্টি করেছেন আলো আর সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন প্রদীপরূপে’। 

এই আয়াত গুলো প্রমান করে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে কারন তিনটি আয়াতের দুটি আরবি শব্দ নুর যার অর্থ আলো বা অনেক ক্ষেত্রে আলোর উৎস ও “মুনির” যার অর্থ উজ্জ্বল, দীপ্তিমান, জ্যোতির্ময়, প্রতিফলিত আলো নয়।

এখানে এই শব্দ দুটির কোনটিই চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত আলো হিসাবে ব্যাখ্যা করে না বরং নূর শব্দের দ্বারা এটাই উল্টো প্রমানিত হয় যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। কারণ আল্লাহর ৯৯টি নামের একটি হলো “আন্-নূর” যার অর্থ “আলো” আর আল্লাহর নুর তো অবশ্যই ধার করা নয় তাই কোনভাবেই চাঁদেরও প্রতিফলিত আলো হতে পারে না। ২৪ নং সূরা নূর এর অনুবাদকৃত বাংলা নাম “আলো” ও ইংরেজি নাম “The Light. সুতরাং প্রমান করে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো, ধার করা আলো নয়?

পাঠক প্রশ্নকর্তার দাবির সাথে দলিল গুলা নিজেরাই মিলান। দেখুন তো কোনো মিল পান কিনা। দাবির সাথে প্রমাণের বিন্দুমাত্র কোনো সাদৃশ্য নেই। উপরের তিনটি আয়াতেই বলা হচ্ছে "চাঁদকে আলোময়" "আলো বিকিরনকারী চাঁদ" "চাঁদকে আলো রুপে সৃষ্টি করেছেন" আচ্ছা এই শব্দ সমূহ থেকে স্পষ্ট অথবা অস্পষ্ট কোনো ভাবেই কি প্রমাণ হয় যে "চাঁদের নিজস্ব আলো আছে"? অবশ্যই না। বোঝার জন্য উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন মোমবাতির আলো আলোময়, মোমবাতি থেকে আমরা আলো পাই, আমি মোমবাতিকে এমনভাবে তৈরি করেছি যেন সে আলো দেয়। পাঠক খেয়াল করুন, এই মোমবাতির আলো কি তাঁর নিজস্ব আলো, এই কথা প্রমাণিত হয়? একদম নাহ। তেমনি উপরের আয়াত গুলো থেকে প্রমাণ হয় না চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।

আরও গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন উপরের ব্যাখ্যা গুলো কোনো মুহাদ্দিস দেন নাই। কোনো সাহাবী দেন নাই। এমনকি হাদিস থেকেও এমন কিছুই পাওয়া যায় না। তাহলে উপরের ব্যাখ্যা গুলো কাদের? মুক্তমনা নাস্তিকদের। আর আমরা জানি নাস্তিকধর্মের মুক্তচিন্তায় মিথ্যাকথা বলা জায়েজ। তাহলে নাস্তিকরা যে উক্ত ব্যাখ্যায় মিথ্যাচার করে নাই সেটার গ্যারান্টি কি? কিন্তু আপনি যদি যৌক্তিক দৃষ্টিতে দেখেন তাহলে আপনি এটা নিশ্চিত হতে পারবেন যে নাস্তিকরাই ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। আসুন আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। আপনিও আমার সাথে একমত হতে বাধ্য হবেন।

নুর অর্থ আলো, কথাটি সত্য কিন্তু এরমানে এই না যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো। নাস্তিকরা কিভাবে ত্যানা প্যাঁচায় দেখেন। আল্লাহর ৯৯ টি নামের মাঝে একটি হল নুর এর অর্থ আলো আর এই আলো প্রতিফলিত আলো হতে পারে না,এই কথার এর সাথে আমিও একমত কিন্তু এই নুর আর চাঁদের নুর যে একই নুর সেটার প্রমাণ কোথায়? সূর্যের আলোও কিন্তু আলো আর আপনার মোবাইলের আলোও কিন্তু আলো তাহলে সূর্যের আলো আর মোবাইলের আলো কি এক? না। ঠিক একইভাবে আল্লার ৯৯ টি নামের মাঝে নুর একটি নাম এবং এর অর্থ আলো, এই আলো ধার করা আলো নয় কথা সত্য কিন্তু এরমানে এই না যে চাঁদের সেই নুরও একই অর্থে ব্যাবহার হবে। চাঁদের আলো আর আল্লাহর আলো কি এক হতে পারে? চাঁদের আলো আর আল্লাহর আলো হুবহু এক নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন। কুরআন থেকেই স্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছি।

আল কুরআন,সুরা শূরা ৪২:১১ আয়াতে বলা আছে, 

কোনো কিছুই আল্লাহর সাদৃশ্য নয়। 

আল কুরআন, সূরা ইখলাস ১১২:১ থেকে ৪ আয়াতে বলা আছে, 

বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি,এবং তার সমতুল্য কেউ নেই

যেহেতু চাঁদ আল্লাহর একটি সৃষ্টি তাই চাঁদের এই আলো কখনোই আল্লাহর নুর হতে পারে না কারণ চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো। সুতরাং আল্লাহর নুর আর চাঁদের নুর এক নয় তাহলে প্রশ্নকর্তা যে দাবি করেছেন চাঁদের নুর ও আল্লাহর নুর একই এটা কি স্পষ্ট জালিয়াতি নয়?

আরও হাস্যকর গোঁজামিল দিয়েছে নাস্তিকরা সেটি হল কুরআনের ২৪ নং সূরার নাম হল নুর এই নুরের দ্বারাও নাকি প্রমাণ হয় যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো। মজার ব্যাপার হল এই সুরার নুরের অর্থ আলো, আমিও একমত কিন্তু এই নুর কোন প্রেক্ষাপটে ব্যাবহার করা হয়েছে সেটা নাস্তিকরা মুক্তচিন্তায় ধামাচাপা দিয়েছে।

তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ৪ খণ্ড, ৩১২ পৃষ্ঠা এবং তাফসীরে জালালাইন ৪ খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, 

হযরত ওমর (রা) কুফাবাসীদের নামে একটি ফরমান জারি করেছিলেন। যার অর্থ তোমাদের স্ত্রী লোকদের সূরা নুর শিক্ষা দাও , যাতে করে তারা অবহিত হয় যে চরিত্রের পবিত্রতাই হল নুর এবং চরিত্রের পবিত্রতাই হল অন্ধকার। আরও আছে যে সূরা নুর অর্থ আলো। আর এই আলো হল সমাজকে সুন্দর করার আলো।-বিস্তারিত দেখুন তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন ২ খণ্ড, ৪১৮ পৃষ্ঠা । "সূরা নুর পরিচিতি"। 

সুতরাং এইখান থেকে স্পষ্ট যে সুন্দর চরিত্রকে আলো বলা হয়েছে এই আলো অর্থাৎ এই সূরা নুর দ্বারা চাঁদের আলো মোটেও বুঝানো হয়নি তা স্পষ্ট। এরপরেও কি আপনি বিশ্বাস করেন নাস্তিকরা সততার সাথে ইসলামের সমালোচনা করে? কি মনে হয় আপনার? আচ্ছা, বাদ দেন। সামনে পড়তে থাকুন।

সুরা কিয়ামার আয়াত প্রমাণ করে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে?

নাস্তিকরা বলে থাকে,

কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যা প্রমান করে যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৮ = আর চাঁদ কিরণহীন হবে। এ আয়াতের তাফসীরে একটি ব্যাপার খুবই লক্ষনীয় এই যে, সকল তাফসীরকারকগন একমত যে কেয়ামতের পূর্বে চন্দ্রকে জ্যোতিহীন বা আলোকহীন করে নেয়া হবে। পরের আয়াতেই বলা হচ্ছে যে চন্দ্র এবং সূর্যকে একত্রিত করা হবে। তাফসীরকারক বলেছেন সূর্যও আলোকহীন হয়ে যাবে এবং তাদেরকে একত্রে লেপটিয়ে দেয়া হবে বা একত্রিত করা হবে যার বর্ণনা সহিহ হাদীসেও আছে। 

অর্থাৎ এই আয়াতের তাফসীরে এই বিষয়টি স্পষ্ট যে কেয়ামতের পূর্বে প্রথমে চাঁদকে আলোকহীন করা হবে যা সরাসরি প্রমান করে যে কোরআন অনুযায়ী চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। এখানে কোন ভাবেই মুসলিমরা এটা দাবি করতে পারবে না যে চাঁদ আলোকহীন হবে সূর্যকে আলোকহীন করার মাধ্যমে যেহেতু কোরআন এবং তাফসীর কারকদের ব্যাখা অনুযায়ী সূর্য এবং চন্দ্রকে একত্রিত করার আগেই চন্দ্রকে আলোকহীন করা হবে।

নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য কিভাবে ত্যানা প্যাঁচায় দেখলেন তো? পাঠক আসুন সততার সাথে বিচার করে দেখি নাস্তিকরা সত্যি বলছে কিনা। সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৮ আয়াতে বলা হচ্ছে চাঁদ কিরণহীন হবে। এই আয়াতে কি বলা হচ্ছে যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে? না। তাহলে এই আয়াত কিভাবে "চাঁদের নিজস্ব আলো আছে" দাবিটির পক্ষে বড় প্রমান হয়? কিয়ামতের সময় যদি প্রথমে চাঁদ আলোকহীন হয় তাহলে কিভাবে প্রমাণিত হয় যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো? একটুও তো প্রমাণ হচ্ছে না। ধরুন আপনি বললেন, মোমবাতি যখন ফু দেয়া হবে তখন তার বাতি আলোকহীন হয়ে যাবে-এই কথা থেকে প্রমাণিত হয় যে মোমবাতির আলো তার নিজস্ব আলো? নাহ। ঠিক একইভাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ চাঁদকে আলোকহীন করে দিবেন কিন্তু এর দ্বারা প্রমাণ হয় না চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো। “চাঁদের আলো নিজস্ব আলো” এই ব্যাখ্যা উক্ত আয়াত থেকে কোন মহাদ্দিস করেছেন? কোন সহিহ হাদিসে এমন কথা আছে? কোন তাফসীরে আছে? নাস্তিকরা এসব প্রমাণ দেয় নাই কেন চাঁদের আলোর ক্ষেত্রে? আসুন জেনে নেই তাফসীরে আসলেই কি বলা আছে।

তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ২০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

উক্ত আয়াতের কিয়ামতের ধ্বংসলীলা সম্পর্কে বলা হয়েছে।আল্লাহ তা'লা বলেন কেবল চন্দ্রই আলোকহীন হবে না বরং সূর্যও আলোকহীন হয়ে পড়বে। এ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকগনের অভিমত হলো চন্দ্রের আলোক সূর্য হতে এসে থাকে। চন্দ্রের নিজস্ব কোন আলো নেই । সুতরাং যখন চন্দ্র আলোকহীন হবে, সূর্যও আলোকহীন হয়ে পড়া আবশ্যক আর চন্দ্র ও সূর্য উভয় সেদিন একত্র হয়ে যাবে।

তাফহীমুল কুরআন, সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৮, ১২৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

এটা কিয়ামতের প্রথম পর্যায়ে বিশ্ব-জাহানের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরন। চাঁদের আলোকহীন হয়ে যাওয়া এবং চাঁদ ও সূর্যের পরস্পর একাকার হয়ে যাওয়ার অর্থ এও হতে পারে যে সূর্য থেকে প্রাপ্ত চাঁদের আলোই শুধু ফুরিয়ে যাবে না। বরং সূর্য নিজেও অন্ধকার হয়ে যাবে এবং আলোকহীন হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উভয়ের অবস্থা হবে একই।

তাফসীরে মাযহারী ১২ খণ্ড, ২৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

যখন চন্দ্র হয়ে পড়বে জ্যোতিহীন অর্থ যখন উধাও হয়ে যাবে চন্দ্রের কিরণ প্রকাশ ক্ষমতা। এছাড়াও আরও তাফসীর যেমন তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৫৯০ পৃষ্ঠা , তাফসীরে আহসানুল বয়ান, সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৮, ১০৩৮ পৃষ্ঠা। 

একই ধরণের কথা বলা হয়েছে যে চাঁদ আলোকহীন হবে অর্থাৎ আমাদেরকে যে চাঁদ ধার করে আলো দেয় এই সিস্টেমই কিয়ামতের দিন নষ্ট হয়ে যাবে। সূর্যের থেকে চাঁদ যে আলো পায় এই আলো পাওয়ার সিস্টেমটিই কিয়ামতের দিন নষ্ট হয়ে যাবে অর্থাৎ চাঁদ সূর্য থেকে আলো আর নিতেই পারবে না। কারণ তখন তো চাঁদই থাকবে না। আচ্ছা চাঁদ যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি সে আলো নিতে পারবে? তাহলে চাঁদকে কিরণহীন করে দেয়া হবে বলার দ্বারা কিভাবে এটা প্রমাণ হচ্ছে যে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো?

উদাহরণ দিচ্ছি আশা করি সহজে বুঝে নিবেন। মোমবাতিতে যে আগুন জ্বলে সেটা কেন জ্বলে? মোমবাতির মধ্যে বিদ্যমান সুতাতে আগুন লাগালে তখন আগুন জ্বলে। আচ্ছা যদি বলা হয় আমি মোমবাতিকে আলোহীন করে দিব, সকল ম্যাচ পানিতে ফেলে দিব যাতে ম্যাচ থেকে আগুন ধরানো না যায়। এই কথা গুলো থেকে কি প্রমাণ হয় মোমবাতির আলো নিজের আলো? না। এখানে মোমবাতিকে আলোহীন করার মানে হচ্ছে মোমবাতির মধ্যে সুতোটি এমনকি মোমবাতিই থাকবে না তাহলে সে কিভাবে আলো পাবে? এই উদাহরণ বুঝে থাকলে চাঁদ ও সূর্যের আলোহীন ব্যাপারটাও বুঝবেন। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন চাঁদকে পুরো নষ্ট করে ফেলা হবে মানে সূর্য থেকে সে যেই আলো পায় এই সিস্টেমটিই সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। মানে চাঁদই থাকবে না সেখানে আলো কিভাবে পাবে? আমরা সবাই জানি কিয়ামতের দিন সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।

নাস্তিকদের জন্য যে প্রশ্ন গুলো থেকে যাবে। 

তাফসীরে মাযহারী, ৫ খণ্ড, ৫৬৬ পৃষ্ঠাঃ সূরা ইউনুস ১০:৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে চাঁদ আলো পায় সূর্য থেকে এই ব্যাখ্যাকে অন্য যে কোন তাফসীর দিয়ে কিভাবে নাস্তিকরা ভুল প্রমাণ করতে পারবে? তাফসীরে আহসানুল বয়ান, পৃষ্ঠা ৬৩৭, সূরা ফুরকান ২৫:৬১ আয়াতের ব্যাখ্যা স্বীকার করা হয়েছে চাঁদের আলো ধার করা আলো এই অর্থ কেন ভুল হবে? তাফসীরে মাযহারী, ৮ খণ্ড, ৫৭০ পৃষ্ঠা = সূরা ফুরকান ২৫:৬১ আয়াতের ব্যাখ্যায় স্বীকার করা হয়েছে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো নয় এখন এই অর্থ যে ভুল সেটার প্রমাণ নাস্তিকরা কেন দেখাচ্ছে না? তাফসীরে ফতহুল মাজীদ, সূরা ইউনুস ১০:৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় স্বীকার করা হয়েছে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো নয় এই অর্থ ভুল কেন? তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ২১ খণ্ড, ১৪৪ পৃষ্ঠায় সরাসরি স্বীকার করা হয়েছে চাঁদ আলো গ্রহন করে আর সূর্য আলো দেয়। তাফসীরে মাযহারী,১২ খণ্ড,১২৪ পৃষ্ঠায় সূরা নুহ ১৬ আয়াতে ব্যাখ্যা স্বীকার করা হয়েছে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো নয় এমনকি তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ২০১ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াত তথা সূরা কিয়ামাহ ৮ নং আয়াতে পরোক্ষভাবে স্বীকার করা হয়েছে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। তাফসীরের এই অর্থ গুলো যে ভুল এটা কোন তাফসীর থেকে নাস্তিকরা পেয়েছে?

নাস্তিকরা বলে এসব তো আধুনিক তাফসীর, প্রাচীন তাফসীর অথবা নির্ভরযোগ্য কোন সোর্স থেকে পারলে প্রমাণ দেখাক মুমিনরা যে চাঁদের আলো ধার করা আলো না। এই মূর্খ নাস্তিকরা আসলে জানেই না একটি শব্দের একাধিক অর্থ হয় তাহলে আধুনিক তাফসীরে যদি কেউ নতুন অর্থ করে তাহলেও সেটা কিভাবে ভুল হবে? একটি শব্দের যদি একাধিক অনুবাদ হয় আর কেউ যদি নতুন গ্রহণযোগ্য অর্থ নেয় তাহলে যৌক্তিক কারণে কি নতুন অর্থ নেয়াকে ভুল বলে যায়?

সহিহ হাদিস থেকেও প্রমাণ হয় “চাঁদের নিজস্ব আলো আছে”?

নাস্তিকরা বলে,

সহীহ্ হাদীস থেকেও প্রমান করা যায় যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। 

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩২০০, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র দু’টিকেই গুটিয়ে নেয়া হবে।-ihadis.com

মানে কিয়ামতের দিন চন্দ্র এবং সূর্যকে লেপটিয়ে দেওয়া হবে যাতে তাদের উভয়ের আলো নিঃশেষ হয়ে যাবে যা আবার প্রমান করে যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। হাসান বসরি একইভাবে ব্যাখ্যাটি করেন যে হাসান বসরী বলেন কিয়ামতের দিন লেপটিয়ে দেয়া হবে, যাতে তার জ্যোতি নিঃশেষ হয়ে যাবে। হাদিসের অনুবাদে “তার জ্যোতি” না হয়ে তাদের উভয়ের জ্যোতি হবে কারন এখানে দুটি বস্তু তথা চন্দ্র এবং সূর্য উভয়ের কথা বলা হচ্ছে। হাদীসের ব্যাখ্যায় আরেকটি বিষয় বলা হচ্ছে যে চন্দ্র এবং সূর্য একটির জ্যোতি অপরটিকে ডাকতে পারে না আর তাদের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এই দাবিটিও প্রমান করে যে চন্দ্র এবং সূর্য উভয়ের জ্যোতি রয়েছে কারন সেটা না হলে চন্দ্রের জ্যোতি সূর্যকে ডাকতে পারে না এ দাবিটি করা হতো না। অন্যদিকে আমরা জানি যে সূর্য তার আলো দিয়ে চাঁদকে ডেকে ফেলে। বিস্তারিত পড়তে দেখুনঃ hadithbd.com,সহিহ বুখারি (ই,ফা),পরিচ্ছেদঃ ১৯৮৬,হাদিস নং ২৯৭৩। সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়। 

আবার বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “নসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারী” ৭ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৫ পরিচ্ছেদ ১৯৮৮, তে বলা হচ্ছে (চাঁদ সূর্য) উভয়টির আলো অপরটির আলোকে গোপন করতে পারে না আর না তা করা উভয়ের তরে যতাচিত্ত। 

এই দাবিটিও আগের দাবির মতোই যা প্রমান করে চাঁদের আলো সূর্যের আলোকে গোপন করতে পারে না। অর্থাৎ চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। তাফসীর ইবনে কাসিরের সুরা ইউনুস এর (১০:৫-৬) আয়াতের তাফসিরেও একই রকম দাবী করা হচ্ছে। সুতরাং প্রমান হচ্ছে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো.

একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই নাস্তিকদের এসব ভণ্ডামি যে কেউই সহজে ধরতে পারবে। দাবি করেছে "সহিহ হাদিস থেকে প্রমান চাঁদের নিজস্ব আলো আছে" আর প্রমাণ দিচ্ছে "কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র দু’টিকেই গুটিয়ে নেয়া হবে " এটা কি দাবির পক্ষে প্রমাণ হল? যদি নাস্তিকরা এমন হাদিস দেখাতে পারতো যেখানে বলা হচ্ছে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে তাহলে নাস্তিকদের দাবি সঠিক হতো। কিন্তু হাদিসে তো এমন কিছুই বলা নাই। ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের সকল সমালোচনা গুলো পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায় নাস্তিকরা যে মূর্খ ও মিথ্যুকবাজ। হাদিসে সূর্য ও চন্দ্র দু’টিকেই গুটিয়ে নেয়া হবে এটা দ্বারা মোটেও প্রমাণ হয় না যে চাঁদের নিজস্ব আছে। কোন হাদিস ব্যাখ্যাকার বলেছেন এই হাদিসের ব্যাখ্যায় যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো? একটি প্রমাণ দেখান তো?

হাদিসের ব্যাখ্যায় একটি লাইনে বলা আছে "চন্দ্র এবং সূর্য একটির জ্যোতি অপরটিকে ডাকতে পারে না আর তাদের পক্ষে এটা সম্ভব নয়" এটা দিয়েও প্রমাণ হয় না যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। কারণ সূর্যের থেকে যখন চাঁদ আলো পায় ঠিক সেই আলো পরিবর্তন হয়ে যায় ফলে চাঁদের আলো হয় ঠাণ্ডা আলো যা আমরা রাতে দেখতে পাই আর এই আলো কখনোই সূর্যকে ডাকতে পারে না আবার এর উল্টা সূর্যের আলো কিন্তু তার গরম আলো সরাসরি চাঁদকে প্রদান করতে পারে না কারণ সূর্য আলো দেয় আর সেই আলো চাঁদ গ্রহন করে ঠাণ্ডা করে ফেলে এই ক্ষেত্রে সূর্যের আলো চাঁদকে ডেকে ফেলতে পারে না। হাদিসের ব্যাখ্যায় যা বলা হচ্ছে সেটি সঠিক বরং চাঁদের নিজস্ব আলো আছে এটি মোটেও হাদিসের ব্যাখ্যা দাবি করছে না আর এরকম কিছু বুঝাও যাচ্ছে না। এখানে নাস্তিকরা পরিস্কার Straw man fallacy-র আশ্রয় নিয়েছে। উপরের অভিযোগ ও দাবি গুলোতেও একই ধরণের কুযুক্তির উপস্থিত আছে।

নসরুল বারী শরহে সহিহ বুখারিতে যেটা বলা হচ্ছে সেটিও সঠিক। চাঁদের আলো সূর্যের আলোকে লুকাতে পারে না আবার সূর্যের আলো কিন্তু চাঁদের আলোকে লুকাতে পারে না। বিষয়টি সহজ ভাবে বুঝুন। ধরুন এখন বাংলাদেশে সকাল এখানে সূর্যের আলো আছে ঠিক আমেরিকাতে রাত সেখানে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। এখন এই সময়ে কি চাঁদের আলো সূর্যের আলোকে গোপন করতে পারছে অথবা সূর্যের আলো চাঁদের আলোকে লুকাতে পারছে? উত্তর হচ্ছে না। ঠিক এই সহজ বিষয়টিই বুঝানো হয়েছে কিন্তু নাস্তিকদের তো নিজেদের বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সত্যের মাথা খেয়ে হলেও। ব্যাখ্যায় বুঝানো হচ্ছে যে চাঁদ আর সূর্য আলাদা এসবের আলো আলাদা একটির আলো অন্য আলোর সাথে কোনো সম্পর্ক নাই অর্থাৎ চাঁদের আলো ঠাণ্ডা আর সূর্যের আলো গরম কিন্তু এর মানে এই না যে সূর্যের থেকে চাঁদ আলো নেয় না এই কথা কিন্তু ব্যাখ্যায় বিন্দুমাত্র বলা হয়নি বরং এই কথা নাস্তিকরাই বলতেছে।

তাফসীরে ইবনে কাসীরে নাকি একই ব্যাখ্যা করা হয়েছে কেমন বড় মিথ্যাবাদী এই নাস্তিকরা কল্পনা করা যায়? পাঠক আপনারা তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৮ খণ্ড, ৮৬৩ পৃষ্ঠায় দেখুন। সেখানে সূরা ইউনুস ১০:৫, ৬ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে যে,

সূর্যের কিরণ হতে বিচ্ছুরিত আলোকমালাকে তিনি তোমাদের জন্যে দীপ্তি বানিয়েছেন আর চন্দ্রের কিরণকে তোমাদের জন্যে নুর বানিয়েছেন । সূর্যের কিরণ এক রকম এবং চন্দ্রের কিরণ অন্যরকম। একই আলো, অথচ দুটোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। একটির কিরণ অপরটির সাথে মোটেই খাপ খায় না বা একটির কিরণের সাথে অপরটির কিরণ মিলিত হয় না। দিবসে সূর্যের রাজত্ব আর রাত্রে চন্দ্রের কর্তৃত্ব দুটোই আসমানী আলোকবর্তিকা। 

খেয়াল করুন পাঠক এখানে চাঁদের আলো আর সূর্যের আলো যে আলাদা সেটাই বুঝানো হয়েছে আর চাঁদ আলো কিসের মাধ্যমে নেয় এটা কিন্তু বুঝানো হয়নি অর্থাৎ সূর্যের কিরণ এক রকম এবং চন্দ্রের কিরণ অন্যরকম। এই সহজ বিষয় গুলো বিবর্তিত মগজ বুঝতে সক্ষম হবে না এটাই স্বাভাবিক।

মুনির শব্দের অর্থ নিয়ে মুমিনরা মিথ্যা কথা বলে?

নাস্তিকদের কথা গুলো হুবহু তুলে ধরছি,

“মুনির” শব্দের মাধ্যমে অনেক মুসলিম চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত প্রমান করতে চান। মুনির শব্দের অর্থও কোন ভাবেই প্রতিফলিত আলো না। প্রতিফলিত আলো দাবি করার জন্য নুর বা মুনির শব্দের আগে প্রতিফলিত, ধার করা কিংবা এসম্পর্কিত অর্থে কোন শব্দ থাকা প্রয়োজন যা কোরআনে নেই। সুরা ৭১ নুহ এর ১৬ নং আয়াতে নূর শব্দের আগে থাকা “ফিহিন্না” শব্দের অর্থ (তারমধ্যে বা তারমাঝে) যা মুসলিমদের দাবির বিপক্ষে যায়।

মুনির শব্দের অর্থও যে প্রতিফলিত আলো হয় না সেটি সূরা আল-আহযাব ৩৩ এর ৪৬ নং আয়াতের অনুবাদগুলো লক্ষ্য করলেই নিশ্চিত হওয়া যায় যেখানে মুনির শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত এ আয়াতে নবী মুহাম্মাদ (সা) কে উদ্দেশ্যে করে আরবিতে বলা হয়েছে “ ওয়া সিরাজান মুনিরা“। উল্লেখ্য “সিরাজ” শব্দের অর্থ বাতি, প্রদীপ বা ল্যাম্প এবং প্রদীপের আলো কখনো প্রতিফলিত আলো হয় না কারন প্রদীপ বা বাতি সরাসরি আলোর উৎস। সুরা আল-আহযাব আয়াত ৪৬ = আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে।

এ দেশের প্রখ্যাত বাংলা অনুবাদগুলোর মধ্যে কোথাও চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত বা ধার করা আলো বলা হয়নি। অন্যদিকে কোরানের প্রখ্যাত এবং পুরনো ইংরেজি অনুবাদক ( Yusuf Ali, Pickthall, Shakir,Sarwar) সহ কেউই চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত আলো অনুবাদ করেন নি, কিন্তু তুলনামূলক নতুন এবং সাম্প্রতিক অনুবাদক Sahih International তার অনুবাদে “নুর” শব্দের অনুবাদ করেছেন (derived light -10:5) এবং (reflected light – 71:16) যা একটি ভুল এবং অসাধু অনুবাদ। হযরত জাকির নায়েকও একই ধরনের দাবি করেন। তাদের দাবি অনুযায়ী “নুর” শব্দটিকে (Reflected Light) বা প্রতিফলিত আলো অনুবাদ করলে ২৪ নং সুরা নুর এর ৩৫ নম্বর আয়াত এর ইংরেজি অনুবাদ দাড়ায়, Allah is the (Reflected Light) of the heavens and the earth বাংলা অনুবাদ দাড়ায় “আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিফলিত আলো” ( নাউজুবিল্লাহ)।

এখানে সাধারণ ইসলামি ডিফেন্সে মুসলিমরা বলে যে চন্দ্র ও সূর্যের আলো বর্ণনায় কোরআন পৃথক শব্দ ব্যবহার করেছে যা প্রমান যে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, যা একটি হাস্যকর দাবি কারন শুধুমাত্র চাদেঁর আলো বর্ণনায়ও কোরআন দুটি পৃথক শব্দ ব্যবহার করেছে যা কোনটির অর্থই প্রতিফলিত আলো না। এমনকি এই সম্পর্কিত তিনটি আয়াতের তাফসিরে কোন তাফসির কারক এই দাবি করেননি যে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। পাঠকদের সন্দেহ থাকলে এ সম্পর্কিত প্রত্যেকটি আয়াতের তাফসীর যাচাই করে দেখবেন। এত গুলো আয়াতের ভিন্ন ভিন্ন তাফসীরের বর্ণনা দিতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে তাই দিলাম না।

নাস্তিকদের অনুসারীরা এসব কথা সহজেই অন্ধবিশ্বাস করে নেয়।ভাবে যেহেতু ইসলামের বিরুদ্ধে বলেছে সেহেতু ঠিকই বলেছে। যদি একটু সততা নিয়ে বিচার করে দেখতো তাহলে বুঝতো নাস্তিকরা মিথ্যুকবাজ হয়। এই প্রশ্ন কি নাস্তিকরা কখনো করেছে যে,এ দেশের প্রখ্যাত বাংলা অনুবাদগুলোর মধ্যে কোথাও চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত বা ধার করা আলো বলা হয়নি যদি এই দাবি আপনাদের সত্য হয় তাহলে Sahih International তার অনুবাদে “নুর” শব্দের অনুবাদ করেছেন (derived light -10:5) এবং (reflected light – 71:16) এটি ভুল অনুবাদ হয় কিভাবে? ধরে নিলাম বাংলা অনুবাদে সেই অর্থ করা হয়নি কিন্তু Sahih International এ তো সেই অনুবাদ করা হয়েছে,নাস্তিকদের দাবিটিই সংঘর্ষ হচ্ছে এখানে। 

নাস্তিকরা যদি তাফসীরে মাযহারী পড়তো তাহলে এই দাবি করতে পারতো না কারণ সেই তাফসীরে নুর অর্থ প্রতিফলিত আলো ধার করা আলো বলা হয়েছে অনেক বার এছাড়া আরও নির্ভরযোগ্য তাফসীরে একাধিক বার বলা হয়েছে। সামনে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই ব্যাপারে।

মুনির শব্দের অর্থ “প্রতিফলিত আলো নয়” এই অর্থ নাস্তিকরা কই পেল? সুরা ৭১ নুহ এর ১৬ নং আয়াতে নূর শব্দের আগে থাকা “ফিহিন্না” শব্দের অর্থ তারমধ্যে বা তারমাঝে এখানে আমি যদি একমত হই তাহলেও চাঁদের মধ্যে তার নিজস্ব আলো আছে এটি তো প্রমাণ হচ্ছে না। প্রশ্নটি হল এই আলো সে কোথা থেকে পেয়েছে? যদি আরবির অর্থ হয় কোথা থেকেও পাইনি তাহলে কুরআন ভুল হতো কিন্তু এরকম কিছুই আরবির সেই অর্থ বলছে না। আর চাঁদের মধ্যে আলো আছে এর মানে এই না যে সেটি তার নিজস্ব। যেমন মোমবাতির মধ্যে আলো আছে এরমানে এই না যে মোমবাতির আলো তার নিজস্ব আলো। 

পরের অংশে আবারো প্রেক্ষাপট লুকিয়েছে নাস্তিকরা। এক প্রেক্ষাপটের অর্থ আরেক অর্থে সেট করে নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাস প্রমাণের অপচেষ্টা করেছে নাস্তিকরা। আফসস এদের জন্য যে এরা জেনে শুনে সত্য গোপন করে। সূরা আহযাব ৩৩:৪৬ আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। আয়াতটি খেয়াল করুন আল্লাহ নবীজিকে তাঁর পথে আহ্বান করতে বলছেন এখানে নবী হলেন আলো আর এই আলো দানকারী হলেন আল্লাহ। এতটুকু একটি ছোট শিশুও বুঝবে । 

আরও মজার কথা হল সুরা আহযাব ৩৩:৪৬ আয়াতের এই "ওয়া সিরাজাম মুনিরা" আয়াতের এখানে যে চাঁদের আলোর অথবা সূর্যের আলো বুঝানো হয়েছে এটার পক্ষে কিন্তু নাস্তিকরা একটি প্রমাণও দেখাতে পারেনি। কারণ আপনারা যদি তাফসীরে দেখেন স্পষ্ট বুঝে যাবেন যে নাস্তিকরা আসলে কোথায় মুক্তচিন্তায় তথ্য চুরি করেছে। নিচে আমি প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। নবীজি (সা) কে "ওয়া সিরাজাম মুনিরা" অর্থাৎ উজ্জ্বল প্রদীপরূপে" যে উদ্দেশে বলা হয়েছে তা হলঃ

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ, সূরা আহযাব ৩৩:৪৬ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা আছে,

"ওয়া সিরাজাম মুনিরা" অর্থাৎ উজ্জ্বল প্রদীপরূপে বলতে আসলে রাসুল (সা) কে প্রদীপের সাথে তুলনা করার কারন হল প্রদীপ দ্বারা যেমন অন্ধকার দূর হয় অনুরূপ নবী (সা) এর দ্বারাও কুফর ও শিরকের অন্ধকার দূর করা হয়েছে। তাই রাসুল (সা) কে উজ্জ্বল প্রদীপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তাফসীরে জালালাইন, ৫ খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

 "সিরোজা" অর্থ প্রদীপ । "মুনিরা" অর্থ জ্যোতিষ্মান , রাসুল (সা) এর অন্যতম গুণ ও বৈশিষ্ট এই যে , তিনি জ্যোতিষ্মান প্রদীপ বিশেষ।আবার কিছু মনীষী "সিরোজাম মুনিরো" এর মর্মার্থ কুরআনে পাক বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কুরআনে পাকের বর্ণনা ধারা প্রকাশভঙ্গি দ্বারা একথাই বোঝা যায় যে এটা হযরত রাসুলে করীম (সা) এর বৈশিষ্ট ও গুণ বিশেষ । সমসাময়িক কালের বায়হাকী বলে খ্যাত প্রখ্যাত মুফাসসির কাযী সানাউল্লাহ (রহ) "তাফসীরে মাযহারীতে" ফরমান যে তিনি রাসুলে করীম তো প্রকাশ্যভাবে ভাষার দিক দিয়ে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী । আর অভ্যন্তরীণ ভাবে হৃদয়ের দিক দিয়ে তিনি প্রদীপ্ত ও জ্যোতিষ্মান বাতি বিশেষ অর্থাৎ যেমনিভাবে গোটা বিশ্ব সূর্য থেকে আলো সংগ্রহ করে, তেমনইভাবে সমগ্র মুমিনের হৃদ্যয় তাঁর অন্তর রশ্মি দ্বারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে

তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ১৬ খণ্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

আল্লাহ তা'লার অনুমতিক্রমে তুমি হচ্ছো আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও (হেদায়েতের) এক সুস্পষ্ট প্রদীপ।

তাফসীরে মাযহারী, ১ খণ্ড, ৫১৭ পৃষ্ঠায় বলা আছে, 

এখানে উজ্জ্বল প্রদীপ বলে বুঝানো হয়েছে রাসুল (সা) কে। অর্থাৎ পথভ্রষ্টতার ঘোর অন্ধকারে হেদায়েতের সমুজ্জ্বল প্রদীপ।

পাঠক আশা করি আপনি নিজেই নাস্তিকদের চুরিবিদ্যাটি ধরে ফেলেছেন। মুনিরা দ্বারা “প্রতিফলিত নয়” এই অর্থ প্রমাণিত হচ্ছে না বরং প্রতিফলিত আলোই প্রমাণ করছে কারণ নবীজি হলেন উজ্জ্বল প্রদীপ আর এই উজ্জ্বল প্রদীপের স্রষ্টা হলেন আল্লাহ সুতরাং মুনির শব্দের অর্থ যৌক্তিকভাবেও প্রতিফলিত আলোই বুঝা যাচ্ছে। নাস্তিকরা শেষের দিকে আরেকটি বাচ্চাসুলভ কথা বলেছে। কেউ যদি কিছু অনুবাদ না করে এটার মানে এই হয় না যে সেটার আর কোনো অনুবাদ হতে পারে না সুতরাং কোনো অনুবাদক যদি চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো এই কথা নাও বলে তাহলেও প্রমাণ হয় না যে চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো নয়। 

Sahih International তার অনুবাদে “নুর” শব্দের অনুবাদ করেছেন (derived light -10:5) এবং (reflected light – 71:16) যা একটি ভুল এবং অসাধু অনুবাদ। প্রশ্ন হচ্ছে এই অনুবাদ যে ভুল অনুবাদ সেটি কোন তাফসীরকারক বলেছেন? নাকি শুধু নাস্তিকরাই বলেছে? অথবা কোন মুসলিম স্কলার বলেছেন যে এটি ভুল অনুবাদ? এর কোনো যৌক্তিক উত্তর মূর্খমনা নাস্তিকরা দেয়নি তাহলে পরিস্কার বুঝাই যাচ্ছে যে তাদের ভ্রান্ত দাবির বিপক্ষে গেছে বলে তারা এই সঠিক অনুবাদকে ভুল বলছে অথচ এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। নাস্তিকরা আরও মিথ্যা বলেছে। 

যেমন তারা বলেছে, এই অনুবাদ সঠিক ধরে নিলে নাকি কুরআনের অনুবাদ করলে ২৪ নং সুরা নুর এর ৩৫ নম্বর আয়াত এর ইংরেজি অনুবাদ দাড়ায়, Allah is the (Reflected Light) of the heavens and the earth বাংলা অনুবাদ দাড়ায় “আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিফলিত আলো”। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে এই অনুবাদ কে করেছে? কোন তাফসীরকারক করেছে? এই অনুবাদ আমি তো কোথাও পাই নি নাস্তিকরা কোন বিশুদ্ধ সোর্স থেকে এই অনুবাদ করেছে? সেই তাফসীরের নাম কি? লেখক কে?

আমি আগেও বলেছি আল্লাহর একটি নাম হল নুর কিন্তু এই নুরের অর্থ প্রতিফলিত হবে না কারণ যদি আল্লাহর ক্ষেত্রে নুর অর্থ প্রতিফলিত ধরা হয় তাহলে এটা ভুল হবে। এই ভুলটাই নাস্তিকরা করেছে। কুরআনেই স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে আল্লাহর মতো কেউ নন। উনার সমতুল্য কেউ নেই। তাহলে চাঁদের নুর ও আল্লাহর নুর এক কিভাবে হয়? তাই চাঁদের নুর আর আল্লাহর নুর কখনোই এক হবে না।

চাঁদের নুর প্রতিফলিত কারণ আল্লাহই চাঁদের মধ্যে আলোর আসার সিস্টেম করেছেন কিন্তু আল্লাহর নুর ধার করা নুর নয়। কারণ আল্লাহর শুরু বা শেষ নেই। আল্লাহ ধ্বংস হওয়া থেকে মুক্ত। এখন আরও স্পষ্ট মিথ্যাচার দেখাচ্ছি নাস্তিকদের। নাস্তিকরা সূরা নুরের ৩৫ আয়াত সম্পূর্ণ বর্ণনা করেনি বরং অর্ধেক দেখিয়েছে যা পরিস্কার জালিয়াতি।

আল কুরআন, সুরা নুর ২৪:৩৫ আয়াতে বলা হয়েছে,  

আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উদাহরণ যেন একটি কুলঙ্গি, যাতে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচপাত্রে স্থাপিত, কাঁচপাত্রটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। তাতে পুতঃপবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল প্রজ্বলিত হয়, যা পূর্বমুখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও তার তৈল যেন আলোকিত হওয়ার নিকটবর্তী। জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। 

এই আয়াতে স্পষ্ট যে আল্লাহর জ্যোতি কারো থেকে নেয়া নয় বরং স্বয়ং তাঁর নিজেরেই। যেখানে কুরআনে স্পষ্ট আল্লাহর নুরের অর্থ বর্ণনা করেছে সেখানে নাস্তিকরা নতুন করে ভুল অনুবাদ কেন করতে চাচ্ছে? পরিশেষে পাঠকদের বলব আপনারা নিজেরাই সকল তাফসীর চেক করেন আমার মতো আপনারাও অবাক হবেন যে কিভাবে এই ইসলামবিদ্বেষীরা তথ্য চুরি করে আমাদেরকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।

নাস্তিকদের জন্য যে প্রশ্ন গুলো থেকে যাবে। 

নাস্তিকরা বলে থাকে আপনি কার সাথে কি করবেন নাকি না করবেন সেটা নাস্তিকতা ডিল করে না তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে মুসলিমরা কি মানবে নাকি মানবে না সেটা তো নাস্তিকতা ডিল করে না তাহলে নাস্তিকরা কেন নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাস প্রচার করে মুসলিমদেরকে ধোঁকা দেয়? চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায় এই সিস্টেম শুন্য থেকে কেন সৃষ্টি হল? উল্টা সিস্টেম কেন শুন্য থেকে হতে পারলো না? চাঁদের ক্ষেত্রে নুর অর্থ ধার করা আলো অর্থ করা যাবে না কোন মুহাদ্দিস, তাফসীরকারক বলেছেন সেটার প্রমাণ নাস্তিকরা কেন দেখাতে পারে নাই? আল্লাহর একটি নাম নুর এই হিসেবে চাঁদের নুরও যে প্রফলিত আলো নয় সেটার ব্যাখ্যা কোন হাদিস ব্যাখ্যাকারক অথবা তাফসীরকারকগণ করেছেন? এর প্রমাণ না দিয়ে নাস্তিকরা নিজেদের মতো বানিয়ে বানিয়ে ব্যাখ্যা করলো কেন? সূরা কিয়ামাহ ৮ আয়াতে আছে আর চাঁদ কিরণহীন হবে। প্রশ্ন হচ্ছে এই আয়াতের কোথায় বলা হচ্ছে যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো? চাঁদকে কিয়ামতের দিন আগে আলোকহীন করা হবে এরপরে সূর্যকে এখান থেকে কিভাবে প্রমাণ হয় যে "চাঁদের আলো নিজস্ব আলো"?

 "কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র দু’টিকেই গুটিয়ে নেয়া হবে" এই হাদিসে কি দাবি করা হচ্ছে যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে ? বরং এই হাদিসে তো উল্টা প্রমাণ হচ্ছে যে চাঁদের আলো নিজস্ব নয় কারণ কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র দু’টিকেই গুটিয়ে নেয়া হবে এরমানে এখন গুটানো হচ্ছে না অর্থাৎ এখন সব ঠিক আছে এমনকি সূর্য চাঁদকে আলো দেয় এই সিস্টেমও তাই এই হাদিস থেকে তো প্রমাণ হচ্ছে যে চাঁদের আলো নিজস্ব নয়। এই কথা কি নাস্তিকরা মেনে নিবে একইভাবে? মুনির অর্থ “প্রতিফলিত আলো নয়” এই অর্থ কে করেছে? অথবা কোন ডিকশনারিতে আছে ? জাকির নায়েক স্যার তো সঠিক তথ্যই দিয়েছেন তাহলে নাস্তিকরা কেন উনার নামে মিথ্যাচার করলো? কেন নাস্তিকরা মুসলিমদেরকে ঘৃণা করে মুসলিমদের নামে মিথ্যাচার করে?

ইসলামের দৃষ্টিতে চাঁদের আলো কি আসলেই নিজস্ব নাকি ধার করা বুঝানো হয়েছে?

এখন আসুন তাফসীর থেকে এরপরে কুরআনের আয়াত থেকে এমন অনেক কিছুই জেনে নেই যা নাস্তিকরা আমাদেরকে দেখাতে চায় না। বলতে চায় না। ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চায়।

তাফসীরে মাযহারী, ৫ খণ্ড, ৫৬৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

সূরা ইউনুস ১০:৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে যে প্রথমোক্ত আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে। আল্লাহ তা'লাই সূর্যকে করেছেন তেজস্কর এবং চন্দ্রকে করেছেন সেই তেজস্কর সূর্যের আলোকে আলোকিত। আর তাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন কক্ষপথ ।

এখানে চাঁদকে দিপ্তময় যে আরবি শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে সেটি হল "দিয়াআ ওয়াল ক্কমার" এটার অর্থ হবে ধার করা আলো অথবা চন্দ্রকে করেছেন সেই তেজস্কর সূর্যের আলোকে আলোকিত। সুতরাং স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো নয় বরং ধার করা আলো।

আল কুরআন, সূরা নূহ ৭১: ১৬ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে। 

এখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোকরূপে আরবি শব্দ হল নুর। কুরআনে শব্দবচনের দিক থেকে অর্থগত দিক দিয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে চাঁদের আলো প্রতিফলিত (১),(২) কারণ Arabic (نُورًا) = Light/ A Reflected light। সুতরাং “চাঁদের আলো নিজস্ব আলো না” দাবিটিই সঠিক প্রমাণ হচ্ছে।

তাফসীরে আহসানুল বয়ান, ৬৩৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

সূরা ফুরকান ২৫:৬১ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বীকার করা হয়েছে যে সূরা ইউনুসের ৫ নং আয়াতের মত এ আয়াতেও প্রমান হয় যে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই । 

সুতরাং বিজ্ঞানের এ কথা বহু আগেই কুরআনে প্রমাণিত হয়েছে। এখানে আরবি "মুনির" শব্দের অর্থ যে ধার করা উজ্জ্বল আলো সেটি স্পষ্ট স্বীকার করা হয়েছে।

আল কুরআন, সূরা আরাফ ৭:৫৪ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর আদেশের অনুগামী সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি । জেনে রাখো সৃষ্টি ও আদেশ তাঁরই। 

খেয়াল করুন যেহেতু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি। এই সুত্র থেকে সূর্য চাঁদকে আলো দেয় এই সিস্টেমও আল্লাহ তৈরি করেছেন অতএব এ আয়াতও আমাদের ইশারা দিচ্ছে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো নয়। এবং এই সৃষ্টি আল্লাহর এবং আদেশও আল্লাহর। আয়াতে সূর্য , চাঁদ ও নক্ষত্র ইত্যাদির যে আল্লাহর হুকুমে চলে অর্থাৎ একটি নিয়মে আছে সেটা ইঙ্গিত দিচ্ছে আর আমরা জানি চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায় এই সিস্টেমের বাইরে তারা যেতে পারে না তাহলে যৌক্তিক দৃষ্টিতে বুঝা যাচ্ছে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো না কারন এই নিয়ম আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন।

তাফসীরে মাযহারী, ৮ খণ্ড, ৫৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

সূরা ফুরকান ২৫:৬১ আয়াতের ব্যাখ্যায় "সিরাজান" অর্থ আলোকময় প্রদীপ, অর্থাৎ সূর্য । যেমন এক আয়াতে বলা হয়েছে "ওয়া জাআ'লাশ শামসা সিরাজা"। ক্বারী কুসাই এবং ক্বারী হামযার কেরাতে উচ্চারিত হয়েছে শব্দটির বহুবচনরুপ "সুরুজান" । সুরুজান উচ্চারন করলেও এখানে শব্দটির অর্থ হবে সূর্য । অন্যান্য তারকা ও চন্দ্র এর অন্তর্ভুক্ত হবে না । আর চন্দ্র তো নিজস্ব আলোকে আলোকময় নয়সূর্যের আলোতেই সে আলোকময়রুপ দৃষ্ট হয় । আর এখানে চন্দ্রের উল্লেখও এসেছে আলাদাভাবে বলা হয়েছে = "ওয়া কামারাম মুনীরা" এবং জ্যোতির্ময় চন্দ্র।

আল কুরআন, সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৩ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা একনিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন। 

এই আয়াত পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করছে যে সূর্যের থেকে চাঁদ আলো গ্রহন করে । সেটি কিভাবে ? সহজ উত্তর হল সূর্য এবং চাঁদ আমাদের জন্য কি সেবা করছে প্রথমে এটা জানা। আমরা জানি চাঁদ সূর্য থেকে আলো নিয়ে আমাদেরকে রাতে সেটি প্রদান করে এই দিক থেকে চাঁদ আমাদের সেবা করছে। যদি চাঁদের এই আলো নেয়ার সিস্টেম না থাকতো তাহলে তো চাঁদ আমাদের সেবাও করতো না, মানে আলো দিতে পারতো না। এ ছাড়াও আরও উপকার করে যেমন, 

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:১৮৯ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। 

আয়াতেই স্পষ্ট বলা হচ্ছে যে আল্লাহ আমাদের সেবার জন্য সূর্য ও চাঁদকে এক নিয়মে সৃষ্টি করেছেন এখন "চাঁদ সূর্য থেকে আলো নেয়" এটিও একটি নিয়মের মধ্যেই আছে। তাছাড়া আরবি শব্দ "দায়িইবাইনি" যার অর্থ যারা প্রতিনিয়ত একই নিয়মের অনুবর্তী। সুতরাং কুরআনের এই আয়াত সরাসরি পরোক্ষ স্বীকার করছে যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো নয় বরং সূর্য থেকে ধার করা আলো।

আল কুরআন, সূরা নাহল ১৬:১২ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

আল্লাহ রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তারকারাও তাঁর নির্দেশে কাজে নিয়োজিত। এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে। 

পাঠক খেয়াল করুন এখানে বলা হচ্ছে বুদ্ধিমান মানুষদের জন্য এখানে নিদর্শন আছে। বুদ্ধিমান মানুষ অবশ্যই বুঝে গেছে যে এখানে নিদর্শন সমূহ আসলে কি ? অনেক নিদর্শন এখানে আছে তবে অন্যতম নিদর্শন হল সূর্য যে চাঁদকে আলো প্রদান করে এটা আমরা আজকে জানতে পেরেছি কিন্তু এই কথা অনেক আগেই কুরআন আমাদেরকে জানিয়ে রেখেছে। এটা অবশ্যই অবাক করার মত কথা যে নবীজি (সা) এই সঠিক তথ্য কিভাবে জানলেন যদি না তাঁকে আল্লাহ জানায় ? এই আয়াতকেও আমরা প্রমান হিসেবে নিতে পারি যে চাঁদের আলো সূর্য থেকে ধার করা আলো ।

আল কুরআন, সুরা আম্বিয়া ২১:৩৩ আয়াতে বলা আছে, 

তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র । সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।

প্রশ হচ্ছে চাঁদ সূর্যের থেকে আলো নেয় এই সিস্টেমও কি চাঁদের এক প্রকার কক্ষপথ নয় ? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ । সুতরাং চাঁদ চাঁদের কক্ষপথে চলে এমনকি চাঁদ যে সূর্য আলো ছাড়া আলো পায় না অর্থাৎ চাঁদ সূর্যের মুখেপেক্ষি তাই এটিও চাঁদের এক প্রকার কক্ষপথ বা সিমানা । এখান থেকেও প্রমান হয় যে চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো নয়। চাঁদের আলো যদি নিজস্ব আলো বলা হয় তাহলে কুরআন ভুল হয় আর কুরআন তো আমাদের সবসময় সত্য কথাই বলে । আর কুরআনে কোন ভুল নেই এটার আরেক প্রমান হল সমকামীরা অনেক অচেষ্টা করেও কুরআনের মাত্র একটি ভুলও এখন পর্যন্ত প্রমান করতে পারেনি ।

আল কুরআন, সুরা লুকমান ৩১:২৯ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।

এখানেও একই বিষয় যে অর্থাৎ চন্দ্র ও সূর্য কাজে নিয়োজিত এখানে সূর্য চাঁদকে আলো দেয় এই কাজেও তারা নিয়োজিত? নাকি কি?

আল কুরআন, সুরা ফাতির ৩৫:১৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। 

সূর্যের কাজটি চাঁদকে আলো দেয়া নয়? এই সিস্টেমটি কাজ করছে না? তাহলে?

আল কুরআন, সূরা ইয়াসিন ৩৬:৪০  আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। 

খেয়াল করুন এখানে সূর্য আর চাঁদের কক্ষপথ বর্ণনা করা হয়েছে অর্থাৎ কেউ কারো নিয়ম ভাঙ্গে না। সূর্য যে চাঁদকে আলো দেয় এটা কি নিয়মের মধ্যে গণ্য হবে না? কিভাবে?

আল কুরআন, সুরা যুমার ৩৯:৫ আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে, 

তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। 

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১৬ খণ্ড, ৩০১ পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে,

যে আল্লাহ তা'লা সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মাধীন করেছেন। প্রত্যেকেই এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত পরিক্রমণ করবে। 

খেয়াল করুন সূর্য ও চন্দ্র একে অপরের নিয়মাধীন করা এখন প্রশ্ন হচ্ছে সূর্য চাঁদকে আলো দেয় এটি কি একটি নিয়ম বা সিস্টেম নয়? আর সূর্য ও চাঁদের অনেক কাজ আছে প্রশ্ন হচ্ছে সূর্য যে চাঁদকে আলো দেয় এটি কি কাজ?

আল কুরআন, সুরা হামীম সিজদা/ফুসসিলাত ৪১:৩৭ আয়াতে বলা হয়েছে, 

আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন। 

একটি আরবি শব্দ আছে "খোলাক্কো হুন্না" অর্থ হল তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন । আমরা জানি যে মহাবিশ্বের সকল কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এমনকি সূর্য চাঁদকে আলো দেয় এই সিস্টেমও "এগুলো সৃষ্টি করেছেন" এর মধ্যে "চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়" এই সিস্টেমও আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। 

আল কুরআন, সুরা আর-রহমান ৫৫:৫ আয়াতে বলা আছে, 

সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমত চলে। 

এই আয়াতের একটি আরবি শব্দ উচ্চারন হল "বিহুসবান" অর্থ একটি হিসাব অনুসরণ করেই চলে।  সূর্য ও চাঁদ হিসাব অনুসরণ করে চলে। সূর্য যে চাঁদকে আলো দেয় এটা কি হিসাবের মধ্যে গণ্য হবে না?

তাফসীরে ফতহুল মাজীদ, সূরা ইউনুস ১০:৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে যে,

চাঁদকে বলা হচ্ছে মুনির, কামার যার অর্থ স্নিগ্ধ আলো দানকারী। তাছাড়া চাঁদ হচ্ছে একটি নিষ্ক্রিয় জিনিস , যা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে , চাঁদের এ বৈশিষ্টের সাথে কুরআনের বর্ণনা হুবহু মিলে যায় । ....মুনির দ্বারা বুঝা যায় যে কুরআন সূর্যের আলো এবং চন্দ্রের আলোর পার্থক্যকে স্বীকার করে। এরুপ আয়াত সূরা ফুরকানের ৬১ নং এবং সূরা নুহের ১৬ নং এ উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো, যা বর্তমান বিজ্ঞান প্রমান করেছে অথচ কুরআন তা ১৪০০ বছর পূর্বেই প্রমান করেছে।

তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ২০১ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াত তথা সূরা কিয়ামাহ ৮ নং আয়াতে কিয়ামতের ধ্বংসলীলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, 

আল্লাহ তা"লা বলেন কেবল চন্দ্রই আলোকহীন হবে না বরং সূর্যও আলোকহীন হয়ে পড়বে । এ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকগনের অভিমত হলো চন্দ্রের আলোক সূর্য হতে এসে থাকে। চন্দ্রের নিজস্ব কোন আলো নেই। সুতরাং যখন চন্দ্র আলোকহীন হবে, সূর্যও আলোকহীন হয়ে পড়া আবশ্যক আর চন্দ্র ও সূর্য উভয় সেদিন একত্র হয়ে যাবে।

তাফসীরে মাযহারী, ১২ খণ্ড, ১২৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

সূরা নুহ ১৬ আয়াতে বলা আছে চন্দ্রকে স্থাপন করেছেন আলোরূপে আর সূর্যকে করিয়াছেন প্রদীপরূপে। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে লক্ষণীয়, এখানে চাঁদকে বলা হয়েছে আলো, জ্যোতি আর সূর্যকে বলা হয়েছে প্রদীপ। এতে করে একথাটিই প্রতীয়মান হয় যে, চাঁদ আলো গ্রহন করে সূর্য থেকে। কারন আলো পাওয়া যায় প্রদীপ থেকেই।

তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ২১ খণ্ড, ১৪৪ পৃষ্ঠায় সরাসরি স্বীকার করা হয়েছে এবং অনুবাদ করা হয়েছে যে,

সূরা নুহ ১৬ আয়াতের অনুবাদ করা হয়েছে যে কিভাবে এর মাঝে তিনি চাঁদকে আলো (গ্রহণকারী) ও সূর্যকে (আলোদানকারী) প্রদীপ বানিয়েছেন।

সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে কোনোভাবেই প্রমাণ হয় না যে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো। কুরআনে না এমন দাবি করা হয়েছে আর না হাদিসে এমন দাবি করা হয়েছে। সামনে ক্লাসিক্যাল ডিকশনারি এবং প্রাচীন আলেমদের বর্ণনা তুলে ধরবো। পড়তে থাকুন।

গ্রীকরাও তো জানতো তাহলে কুরআন কিভাবে অলৌকিক হয়? 

নাস্তিকরা বলে, 

গ্রীকরাও জানতো চাঁদের আলো নিজস্ব আলো না বরং সূর্যের থেকে ধার করা আলো। তাহলে কি গ্রীকদেরকেও কি নবী রাসুল বলে মেনে নেবে মুমিন সমাজ?

Thales (585 BC): The moon is lighted from the sun. 29; 360. Thales et al. agree with the mathematicians that the monthly phases of the moon show that it travels along with the sun and is lighted by it, and eclipses show that it comes into the shadow of the earth, the earth coming between the two heavenly bodies and blocking the light of the moon (Doxographi on Thales, Aet. ii. 1 ; Dox. 327) (6).

Anaxagoras (500-428 BC) considered the moon to be a false-shining star (255). The Doxographist elaborates further on this: The moon is below the sun and nearer us. The sun is larger than the Peloponnesos. The moon does not have its own light, but light from the sun (The Doxographists on Anaxagoras, Hipp. Phil. 8 ; Dox. 561) (260-1).

Empedocles (490-430): As sunlight striking the broad circle of the moon. 154. A borrowed light, circular in form, it revolves about the earth, as if following the track of a chariot (Empedocles, translations of the fragments I) (177).

Lucretius (100-50 BC): How then, if the sun is so small, can it give off such a flood of light (p.189)? The moon, too, whether it sheds a borrowed light upon the landscape in its progress or emits a native radiance from its own body. What then of the moon? It may be that it shines only when the sun’s rays fall upon it. Then day by day, as it moves away from the sun’s orb, it turns more of its illuminated surface towards our view till in its rising it gazes down face to face up the setting of the sun and beams with luster at the full. Thereafter, it is bound to hide its light bit by bit behind it as it glides around heaven towards the solar fire from the opposite point of the zodiac (192-193) (Lucretius, The Nature of the Universe).

মূর্খ না হলে যে নাস্তিক হয় না উপরের অভিযোগই তার প্রমাণ। গ্রীকরা গবেষণা করতো, গ্রীকদের গবেষণা যেমন ঠিক হতো আবার ভুলও হতো। তার চেয়ে বড় কথা নবী মোহাম্মদ (সা) কবে চাঁদ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন? কবে উনি গ্রীকদের সাথে চাঁদ নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলেছিলেন কুরআনে গ্রীকদের থেকে চাঁদের তথ্যটি কপি করবার জন্য? গ্রীকরা তো অনেক ভুল তথ্যও দিয়েছিল সেগুলো কুরআনে নেই কেন? নবী মোহাম্মদ (সা) কিভাবে সব কিছু যাচাই করলেন? কাদের সাহায্য নিয়েছিলেন? অথচ শক্তিশালি প্রমাণ আছে যে নবী মোহাম্মদ (সা) লিখতে ও পড়তে জানতেনই না তাহলে এতো কিছু কুরআনে কিভাবে এসেছে? হায়রে মূর্খমনা গ্রীকদেরকে নাকি নবী রাসুল বলতে হবে? গ্রীকরা কি নিজেদেরকে নবী রাসুল দাবি করেছিল? তাহলে এই কথাই বা কেন আসছে? গ্রীকরা গবেষণা করে বের করসে এমনকি তারা নিজেদেরকেও কখনো নবী রাসুল দাবি করে নাই কিন্তু নবীজি (সা) গবেষণা ছাড়াই, লেখাপড়া ছাড়াই কিভাবে নিশ্চিত করে বলতে পারলেন? তফাৎটা এখানেই। ক্লিয়ার?

অনেক নাস্তিকদেরকেই দাবি করতে দেখা যায় যে, নবী মোহাম্মদ (সা) নাকি কুরআন গ্রীকদের থেকে খ্রিস্টানদের থেকে কপি করে গোপনে গোপনে লিখতেন কিন্তু এই দাবি যৌক্তিক প্রমাণে ভিত্তিহীন এমনকি নবী মোহাম্মদ (সা) সম্পর্কে নাস্তিক মুক্তমনাদের অন্ধবিশ্বাস এটি। কারণ গ্রীকদের মতবাদ আরবদের কাছে প্রচলিত তো অনেক দূরের কথা সে সময় আরবি ভাষায় তো অনুবাদই ছিল না। এরপরেও যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় যে কোনো গ্রীক আগন্তুক সে সময় এসে মুহাম্মাদ (স) কে গ্রীকদের সমস্ত মতবাদ অনুবাদ করে দিয়ে গেছে যদিও এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাহলেও সেই বড় প্রশ্ন উঠে আসবে সেটা হচ্ছে গ্রীকদের ভুল গবেষণা গুলো নবী মোহাম্মদ (সা) কেন কুরআনে যুক্ত করে নাই? গ্রীকরা মনে করতো সূর্য স্থির কিন্তু কুরআনে এমন আয়াত নেই কেন? গ্রীকরা মনে করতো পৃথিবীর আকৃতি সমতল কিন্তু আল্লাহ পৃথিবীর আকৃতি সমতল করেছে মর্মে কোনো আয়াত নেই কেন?

সপ্তম শতাব্দীতে যখন কুরআন নাযিল হয়, তখন পানিচক্র নিয়ে মানুষের নানা ভ্রান্ত ধারণা ছিল। এ বিষয়ে ২জন বিশেষজ্ঞ জি গাসটানী ও বি ব্লাভোক্স বিশ্বকোষে (ইউনিভার্সালিস এনসাইক্লোপিডিয়া) প্রাচীনকালের পানিচক্র বিষয়ক মতবাদগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা বলেছেন - প্লেটো বিশ্বাস করতেন যে মাটির নিচে কোন গভীর সুরঙ্গপথ (টারটারাস) দিয়ে পানি মাটির নিচ থেকে সাগরে ফিরে যায়। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এ মতবাদের অনেক সমর্থক ছিলেন এবং তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ডেসকার্টেস। এরিস্টোটল মনে করতেন যে, মাটির নিচের পানি বাষ্প হয়ে পাহাড়ী এলাকার ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে ভূগর্ভে হ্রদ সৃষ্টি করে থাকে এবং সেই পানিই ঝর্ণার আকারে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ মতবাদ সেনেকা (১ম শতাব্দী) ও ভলগার এবং আরো অনেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত পোষণ করতেন। কুরআনে এসব নিয়ে কিছুই বলা হয় নাই কেন? নবী মোহাম্মদ (সা) কিভাবে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে এসব ভুল গবেষণা?

নাস্তিকদের মগজ যদি এসব প্রশ্নের গভীরতা বুঝতে পারতো তাহলে কি নাস্তিকরা নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে প্রমাণ ছাড়াই অন্ধবিশ্বাস করতে পারতো? নাস্তিকদের জন্য আরও ভয়ংকর রকমের সমস্যা তৈরি করবে এই তথ্যটি। জানি নাস্তিকরা এসব নিয়ে কখনো চিন্তা করতে চাবে না। নাস্তিকরা নিজেদের অন্ধভক্তদেরকে এসব চিন্তা করা থেকে বিরত রাখতে চাইবে কৌশলে। নাস্তিকদেরকে ইসলামবিরোধী নামক ডিলুশন থেকে মুক্ত হয়ে সততার সাথে চিন্তা করা জানতে হবে। মনোযোগ দিয়ে বুঝতে হবে।

গ্রীকদের থেকে এরাবিক-এ অনুবাদ বা ব্যাখ্যা শুরু হয় প্রায় উমাইয়া খিলাফতের সময় যা হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর মারা যাবার শত শত বছর পর (৩)। তাহলে নবী মোহাম্মদ (সা) গ্রীকদের থেকে তথ্য চুরি করেছিলেন বা কপি করেছিলেন এসব যে নাস্তিক মুক্তমনাদের অন্ধবিশ্বাস এটা আর আলাদা করে বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। নাস্তিকরা এরপরেও প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করবে নবী মোহাম্মদ (সা) গবেষণা করতো? এরপরেও বিশ্বাস করবে নবী মোহাম্মদ (সা) গ্রীকদের থেকে বাইবেল থেকে কুরআন কপি করেছে? অথচ এই নাস্তিকরাই দাবি করে তারা নাকি প্রমাণ ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করে না। কি ভণ্ডামিরে ভাই ! 

তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা আছে চাঁদের আলো নিজস্ব?

নাস্তিকরা বলে,

তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, ১৫ খণ্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠায়, সুরা ফুরকান ৬১ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আল্লাহ পাক বলেনঃ আর আমি সৃষ্টি করেছি জ্যোতির্ময় চন্দ্র। অর্থাৎ উজ্জ্বল ও আলােকময় করেছি সূর্যের আলাে ছাড়া অন্যের আলাে দ্বারা

আবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তাফসীরে ইবনে কাসীরে, ৮ খণ্ড, ২৩৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তা'আলা চন্দ্রকে সূর্যের আলাে ছাড়াই ভিন্ন আলােকে উজ্জ্বল করিয়াছেন

সুতরাং মুমিনদের এই কথা বলার আর সুযোগ নেই যে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো না। মুমিনরা কি ইবনে কাসির থেকে কুরআন বেশি বুঝে ফেলেছে?

পাঠক লক্ষ্য করুন ইবনে কাসীর এর উক্ত ব্যাখ্যায় কিন্তু এটা দাবি করা হচ্ছে না যে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো। বরং এই কথা বলা হচ্ছে চন্দ্রকে সূর্যের আলাে ছাড়াই ভিন্ন আলােকে উজ্জ্বল করিয়াছেন। অর্থাৎ ইবনে কাসিরের ব্যাখ্যা থেকেও এটা পরিস্কার যে চাঁদের আলো নিজস্ব না কিন্তু উনি শুধু এটা বলেছেন যে সূর্যের আলো ছাড়াই অন্যের আলো দ্বারা চাঁদ উজ্জ্বল। তবে আসলেই কি ইবনে কাসীর (রহ) সেটাই বুঝিয়েছেন? উত্তর হচ্ছে না। কারণ তাফসীরে ইবনে কাসীরেই স্পষ্ট বলা হয়েছে চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো। 

তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৮ খণ্ড, ৮৬৩ পৃষ্ঠায় সেখানে সূরা ইউনুস ১০:৫, ৬ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,

সূর্যের কিরণ হতে বিচ্ছুরিত আলোকমালাকে তিনি তোমাদের জন্যে দীপ্তি বানিয়েছেন আর চন্দ্রের কিরণকে তোমাদের জন্যে নুর বানিয়েছেন । সূর্যের কিরণ এক রকম এবং চন্দ্রের কিরণ অন্যরকম। একই আলো, অথচ দুটোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। একটির কিরণ অপরটির সাথে মোটেই খাপ খায় না বা একটির কিরণের সাথে অপরটির কিরণ মিলিত হয় না। দিবসে সূর্যের রাজত্ব আর রাত্রে চন্দ্রের কর্তৃত্ব দুটোই আসমানী আলোকবর্তিকা। 

তাই ইবনে কাসীরের বক্তব্যকে এভাবে বলা যায়, চাঁদে আলো যাওয়ার পর সেইটা চাঁদের মতো আলোতে মানে স্নিগ্ধ আলোতে রূপান্তরিত হয় তাই সেটাকে আর সরাসরি সূর্যের আলো বলা যাচ্ছে না। কিংবা, ধার করা আলো চাঁদ গ্রহণ করার পর সেটা আর সূর্যের আলো থাকে না। নিজের হয়ে যায় তার। এটাই আসলে উনি বুঝাতে চেয়েছেন। আসলে উক্ত স্থানে ইবনে কাসীর সংক্ষিপ্তভাবে একটা বাক্য লিখেছেন। যেটাতে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে কিন্তু তাফসীরে ইবনে কাসীরেই অন্য স্থানে পড়লে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায়। তবে এরপরেও যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেয়া হয় ইবনে কাসির বলেছেন চাঁদের নিজস্ব আলো আছে তাহলে উনার কথা প্রত্যাখ্যান করতে আমাদের সমস্যা হবে না। কারণ ইবনে কাসীরের সমপর্যায়ের আলেমগণ বলেছেন সূর্যের আলো থেকেই ধার করে চাঁদের আলো। কিংবা, বিরোধে দাঁড় করিয়ে ইবনু কাসীরের দলিলবিহীন ব্যাখ্যাকে পরিত্যাগ করা যায়। আর তাতে বিন্দুমাত্র সমস্যা নাই আমাদের। এখন আসুন জেনে নেই প্রাচীন আলেমগণ যা বলেছেন সেই কথা গুলো।

আল কুরআনের আয়াত গুলো পড়ে নেই,

সুরা ফুরকান - ২৫:৬১ আয়াতে বলা হচ্ছে,

তাতে রেখেছেন সূর্য (সিরাজ) ও দীপ্তিময় চন্দ্র (মুনির)

সুরা নূহ - ৭১:১৬ আয়াতে বলা হচ্ছে,

এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে (নুর) এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে (সিরাজ)।

সুরা ইউনুস - ১০:৫ আয়াতে বলা হচ্ছে,

তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময় (দিয়া), আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে (নুর)।

ফকিহ মুফাসসির, আবুল-হাসান আলি বিন মুহাম্মাদ বিন হাবিব আল-বাসরী আল-মাওরিদী (মৃত্যু-1058 খ্রি) বলেছেন (৪),

"এবং চাঁদকে করেছেন মুনির, অর্থাৎ আলোদানকারী। অর্থাৎ সুর্যকে করেছেন প্রদীপস্বরুপ এবং চন্দ্রকে মুনির স্বরুপ, কেননা চাঁদ সুর্যের দ্বিয়ার(আলোর) সংস্পর্শে আসে। "

ফকিহ মুফাসসির মুহাদ্দিস, মুহাম্মাদ বিন সালিহ বিন মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান বিন আব্দুর-রহমান আল-উসাইমিন আল-ওয়াহিবি আত-তামিমী (মৃত্যু-2001 খ্রি) বলেছেন (৫):

"সুর্যকে প্রদীপ (সিরাজ) ও চন্দ্রকে মুনির নামকরন করা হয়েছে। কেননা সুর্যের আলো হলো তার নিজস্ব ও শক্তিশালী, এবং চন্দ্রের আলো হলো সুর্যের নিকট হতে ধারকৃত। চাঁদ নিজেই আলো ধারনকারী সিরাজ নয়, চাঁদ আলো দানকারী বা আলো তা ঠিক, কিন্ত চাঁদ আলোটা ধারকৃত"।

উল্লেখ্য যে, শায়খ উসাইমিন রহ. কোনো বিজ্ঞানপন্থি আলেম ছিলেন না, তিনি বিজ্ঞান নিয়ে ঠিকমত জানতেনই না কিছু, তিনার অনেক অবৈজ্ঞানিক ফতুয়াও আছে। কাজেই উনার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে তিনি এটা বিজ্ঞান হতে দেখে বা জেনে বলেন নি।

ফকিহ উসুলবিদ চিন্তাবীদ মুহাদ্দিস মুফাসসির নাহুবিদ, নাসিরুদ্দিন আবু-সাইদ আবুল-খায়র আব্দুল্লাহ বিন আবিল-কাসিম উমার বিন মুহাম্মাদ বিন আবিল-হাসান আলি আল-বাইদ্বাভী আল-শিরাযী আশ-শাফেঈ (মৃত্যু-1286) বলেছেন (৬),

বলা হয় যে দউয়ুন হলো নিজস্ব আলো এবং নুর হলো ধার করা আলো, আল্লাহ তা'য়ালা এরদ্বারা জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি সুর্যকে নিজস্ব আলোর ধারক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, এবং সুর্যের বিপরীতে চাঁদকে সৃষ্টি করেছেন ধারকৃত আলোর বাহক হিসেবে এবং চাঁদ সুর্য হতে আলো লাভ করে।

এতো নির্ভরযোগ্য প্রাচীন আলেমদের থেকে প্রমাণ দেবার পরেও যদি নাস্তিকরা নিজেদেরকে আরও বেশি মূর্খ প্রমাণ করবার জন্য বলে, মুমিনরা আধুনিক তাফসীর থেকে অর্থ দেখায় সেসব মানি না অথবা ক্লাসিক ডিকশনারি থেকে কোনো মুমিন প্রমাণ দেখাতে পারবে না তাহলে আমার আর কিছুই বলার নেই। কারণ কেউ যদি নিজের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে অন্ধভাবে আটকে ধরে রাখতে চায় তাহলে সেই শেকল থেকে তাকে মুক্ত করা যাবে না যদি না সে সততার সাথে নিজেই মুক্ত হয়ে আসে। আপনারা আরও বিস্তারিত জানতে এই (৭) লেখাটি পুরোটা পড়তে পারেন।

তাছাড়া নাস্তিকদের জন্য আরও কষ্টকর তথ্য হচ্ছে লিসানুল আরবেও (৮) নুর শব্দের অর্থ হচ্ছে “ধার করা আলো”। এরপরে শাখর ডিকশনারিতেও (৯) প্রতিফলিত আলো বলা হয়েছে। (noor): بيّن (bayyan) reveal, reflect / (noor): be revealed, to be lighted, to receive light.

উপসংহারঃ কুরআনের কোনো আয়াত অথবা কোনো সহিহ হাদিস থেকে কোনোভাবেই প্রমাণ হয় না যেখানে দাবি করা হয়েছে চাঁদের আলো নিজস্ব আলো। সকল তথ্য প্রমাণ নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে যেই অন্ধবিশ্বাস পোষণ করে তার বিরুদ্ধে। এখন নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাস ত্যাগ করতে পারবে কিনা সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা যারা যাচাই বাছাই করি তাদের কাছে তো সত্যিটা একদম পরিস্কার। চাঁদ আলো দানকারী, চাঁদ আলোময়, চাঁদ আমাদেরকে স্নিগ্ধ আলো দেয় এসব কথা থেকে প্রমাণ হয় না যে চাঁদের আলো নিজস্ব। কুরআনে চাঁদের আলো নিজস্ব দাবি করা হয়েছে, সহিহ হাদিসে চাঁদের নিজস্ব আলো দাবি করা হয়েছে এসব আসলে নাস্তিক মুক্তমনাদের অন্ধবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়।

রেফারেন্স সমূহঃ

(১) https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/%D9%86%D9%8F%D9%88%D8%B1%D9%8B%D8%A7/

(২) The Quran states that the light of the moon is reflected light

https://www.answering-christianity.com/ahmed_eldin/light_of_moon.htm

(৩) WIKIPEDIA তে “Transmission of the Greek Classics” বিষয় (18) Rosenthal 2 এবং (19) Rosenthal 3-4 রেফারেন্স সহ বিস্তারিত দেয়া আছে।

(৪) আন-নুকতু ওয়াল-উয়ুন (4/153)

(৫) তাফসিরুল উসাইমিন,আল-ফুরকান (পৃ/263)

(৬) আনওয়ারুত তানযিল  (2/90)

(৭) কোর'আন অনুযায়ি চাঁদের আলো ধারকৃত হয়া সম্পর্কে আলোচনা

https://islamicauthors.com/

(৮) The Quran states that the light of the moon is reflected light / Lisan Al-Arab dictionary, Book 3, Pages 805, 808।  https://www.answering-christianity.com/ahmed_eldin/light_of_moon.htm?fbclid=IwAR1s_d78h1c_-sM9MtMckY-ogzKupZf2M09ClwtokFJjQr4DBPJFTMgK4jI

(৯) Rebuttal to Agniveer: Moonlight in the Noble Quran / Sakhr Dictionary 2006/2007:

https://vedkabhed.com/index.php/2015/06/23/rebuttal-to-agniveer-moonlight-in-the-noble-quran/?fbclid=IwAR3NglxjX55lxHPiZDQKk5c64jxQw5xqc9z0heiGwJb7WvVm06d0bswoXPw

(১০) পবিত্র কুরআনে কী বলা হয়েছে চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো?

https://islamicauthors.com/

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post