মুতা বিয়ে ইসলামে বৈধ?


বিষয়ঃ মুতা বিয়ে ইসলামে বৈধ?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

—--------------------------------------------

ভূমিকাঃ একটা সময় নাস্তিকরা বলতো মুতা বিয়েকে ইসলাম জায়েজ করেছে কিন্তু যখন দেখলো মুতা বিয়েকে ইসলাম নিষিদ্ধ করে দিয়েছে আর মুমিনদের সামনে জায়েজ ছিলো’র হাদিস গুলো দেখালে নাকানিচুবানি খেতে হয় তখন ইসলামকে বদনাম করার জন্য মিথ্যাচারের কৌশল বিবর্তন করে ফেলল। কিভাবে? বলে নবী মহাম্মদ (সা) ও সাহাবীরা মুতা বিয়ে করেছিলেন তো। আরে গাধা নাস্তিক, করেছে তো কি হইসে? পরে তো নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল। বৈধ ছিল তখন বৈধভেবে করেছে কিন্তু অবৈধ করা হয় তখন অবৈধভেবে আর করেন নাই। এই সহজ বিষয় বুঝার জন্য কমনসেন্সটুকুও মুক্তমনা আন্দোলন বাহিনীদের নেই নাকি? আসলে কমনসেন্স থাকলে তো আর নাস্তিক হতো না। ইসলামের দৃষ্টিতে যেখানে কোনো সমস্যা নাই এমনকি নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতেও যেখানে সমস্যা নেই সেখানে মুক্তচিন্তা আন্দোলনের সস্তা নাস্তিকরা কি বলল সেটা নিয়ে আমার কিছুই আসে যায় না। পাঠক, আজকের লেখাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, নাস্তিকদের কৌশলপূর্ণ প্রতারণার মুখোশ সত্যসন্ধানী মানুষদের সামনে পরিস্কারভাবে তুলে ধরা। তাই আগেই বলে নিচ্ছি, আমার পুরো লেখাটি মন দিয়ে না পড়লে অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন না কারণ সব দিকের আলোচনা এখানে তুলে ধরেছি আমি। তাই সময় নিয়ে, প্রয়োজনে অল্প অল্প করে হলেও পুরোটা বুঝে নেবার চেষ্টা করতে হবে আপনাকে।

সুরা নিসা ৪ঃ২৪ আয়াতের প্রকৃত মর্মার্থঃ

ইসলামকে অনুধাবন করতে হলে প্রথমে মানুষ হতে হবে। চতুস্পদ জানোয়ার প্রজাতিতে আটকিয়ে থেকে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানুষের মতো বিবর্তিত হয়ে গেলেই প্রকৃত অর্থে মানুষ হওয়া যায় না। নাস্তিকরা ইসলামকে কেন সঠিকভাবে বুঝতে পারে না? এর যৌক্তিক কারণ হচ্ছে তারা এখনো মানুষের মতো ভাবতেই শেখেনি। নাস্তিকদের মানুষের মতো ভাবতে হয়তো আরো সময় লাগবে কিন্তু আমরা যারা যৌক্তিকচিন্তা করার যোগ্যতা রাখি তারা কি বসে থাকবো? অবশ্যই না। ইসলাম নিয়ে নাস্তিক প্রাণীদের মিথ্যা কথার যৌক্তিক জবাব দিতেই থাকবো। নাস্তিক প্রাণীরা যতোই মিথ্যুকবাজ হোক না কেন সত্যময় যুক্তির সামনে নিয়ে আসলে এরা কখনো টিকতে পারবে না।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ২৪ আয়াত থেকে বর্ণিত,

এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান করতোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।

আয়াতের এতটুকু “অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর” অংশ নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন এখানে মুতা বিয়ের কথা বলা হয়েছে আবার কেউ বলেছেন এখানে বিয়ের কথা বলা হয়েছে। পাঠক আপনাদের সামনে আমি বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরছি মন দিয়ে পড়ুন কারণ মিথ্যুকবাজ নাস্তিকরা যাতে আপনাদেরকে ইসলাম বিষয় ভুল বুঝাতে না পারে। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।  তাফসীরে তাবারী শরীফ, ৭ খণ্ড, ১৬০,১৬১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হাসান (র) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন “ফামাআস্তামতা’তুম বিহি মীনহুন্না”(فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ) - এর মানে বিবাহমুজাহিদ (র) হতে বর্ণিত এর অর্থ বিবাহ। মুজাহিদ (র) হতে অপর এক সুত্রে বর্ণিত তিনি বলেছেন এর অর্থ বিয়ের আগ্রহ। ইবন যায়দ (র) হতে বর্ণিত তিনি ( فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ) “ফামাআস্তামতা’তুম বিহি মীনহুন্না ফা আতু হুন্না উজুরোহুন্না ফারিদোতা” আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন এর অর্থ নিকাহ বা বিয়ে করাপবিত্র কুরআনে বিয়ের কথাই বলা হয়েছে। যখন বিবাহ করবে এবং তার সাথে মিলন হবে তখন তাকে তার মহর প্রদান করার পর সে যদি তোমাকে সেচ্ছায় কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তবে তমার জন্য তা খুশীর ব্যাপার। আল্লাহ তা’লা তার জন্য ইদ্দত (নির্দিষ্ট সময়) নিরধারন করে দিয়েছেন এবং সে স্বামীর সম্পদে উত্তরাধিকারী হবে। তিনি আরো বলেন “আ’ইস্তিমতা” অর্থ নিকাহ করা এবং স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করা

অন্যান্য ব্যাখ্যাকারগণ বলেছেন উক্ত আয়াতাংশের অর্থ হল নিকাহ মুতা। যারা এমত পোষণ করেন, সুদ্দী (র) আলোচ্য আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেছেন এখানে নিকাহ মুতার কথা বলা হয়েছে। আর তা হল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুজন সাক্ষীর সামনে ওলীর অনুমতিতে বিয়ে হওয়া। নির্দিষ্ট সময় হলে ঐ নারীর মুক্ত হয়ে যায়। তবে তার উপর দায়িত্ব থাকে সে যেন তার গর্ভে যা আছে তা হতে পবিত্র হয়ে যায় এবং তাদের কেউ একে অপর উত্তরাধিকারী হবে না। মুজাহিদ (র) হতে বর্ণিত তিনি আলোচ্য আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন এর অর্থ মুতা বিবাহ।……আবু নাদরা (র) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নারীদের মুতা বিয়ে সম্পর্কে ইবন আব্বাস (রা) কে প্রশ্ন করি। উত্তরে তিনি আমাকে বলেন তুমি কি সুরা নিসা পাঠ কর না? আমি বললাম, হ্যাঁ! পড়ি, তখন তিনি বললেন, তবে তুমি কি তাতে “ফামাআস্তামতা’তুম বিহি মীনহুন্না ইলা আজালিম মুসাম্মা” পাঠ করনি? আমি বললাম না! যদি তা এভাবে পাঠ করতাম তাহলে আপনাকে প্রশ্ন করতাম না। তিনি বললেন তা এরকমই

তাফসীরে ইবনে আব্বাসে যা বলা হয়েছে। তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ১ খণ্ড, ২২৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আরো বলা হয় তোমরা চাইবে তোমাদের অর্থ ব্যয়ে তাদের লজ্জাস্থান। অর্থাৎ মুতআ এর মাধ্যমে পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে গিয়েছে।  

সুরা নিসা ৪ঃ২৪ আয়াতের মর্মার্থ কি মুতা বিয়ে নাকি বিয়ে? অথবা কোন ব্যাখ্যা বেশি শক্তিশালী বা উত্তম? জানতে পড়ুন তাফসীরে তাবারী শরীফ, ৭ খণ্ড, ১৬১,১৬২ পৃষ্ঠায় যেখানে বর্ণিত হয়েছে,

ইমাম তাবারী (র) বলেন, বর্ণিত ব্যাখ্যা দুটির মধ্যে উত্তম হল এই ব্যাখ্যা যে, যাদেরকে তুমি বিয়ে করেছ এবং তার সাথে মিলিত হয়ে তাদের মহর আদায় কর। যেহেতু আল্লাহ পাক মুতা হারাম করে দিয়েছেন, তথা সঠিক পন্থায় কোন নারীকে বিয়ে না করে তার সাথে মিলিত হওয়া আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন যার দলিল প্রিয় নবী (সা) এর হাদিসে রয়েছে। বরী সাবরাতুল জুহানী (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (রা) এরশাদ করেছেন তোমরা এই নারীদেরকে বিয়ে কর। বর্ণনাকারী বলেন আমরা সে সময় “ইস্তিমতা” দ্বারা বিয়ের অর্থই গ্রহণ করতাম। ইমাম আবু জাফর তাবারী (র) বলেন আমি অন্যত্র সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি যে, কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে প্রমাণ করেছি যে, মুতা হারাম। তার পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। মহান আল্লাহর বাণী (মহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর রাযী হলে তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।) ইমাম এর ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবু জাফর তাবারী (র) বলেন, ব্যাখ্যাকারগণ উক্ত আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় একাধিক মত পোষণ করেনঃ তাঁদের কেউ বলেছেন এর অর্থ হে পতিগণ! তোমরা বিবাহে যে মহর নির্ধারণ করেছ, তার একটি অংশ তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের প্রদান করার পর বাকী অংশ তাদেরকে দিতে কষ্টকর হলে এবং তোমরা পরস্পর সন্তুষ্টচিত্তে তা থেকে অব্যাহতি নিলে কোন দোষ নেই।

যেসব ব্যাখ্যাকারগণ সুরা নিসার উক্ত অংশ থেকে মুতা বিয়ে অর্থ নিয়েছেন তাঁদের ব্যাখ্যা ভিত্তিহীন। এর প্রমাণ হচ্ছে তাফসীরে তাবারী শরীফ, ৭ খণ্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ইমাম আবু জাফর তাবারী (র) বলেন আলোচ্য আয়াতাংশের ব্যাখ্যাসমূহের মধ্যে প্রথম ব্যাখ্যাটি ঠিক এবং উত্তম। আর তার নজীর আল্লাহ তা’লার এ বানীর মধ্যে নিহিত রয়েছে (এবং তোমরা নারীদেরকে তাঁদের মহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে; সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মহরের কিয়দাংশ ছেড়ে দিলে তোমরা স্বচ্ছন্দে তা ভোগ করবে।

ইমাম তাবারী (র) আরো বলেন সুদ্দী (র) যা বলেছেন তা ভিত্তিহীন। কেননা বিবাহ বন্ধন ব্যতীত এবং দাসী ব্যতীত কোন নারী বা দাসীর সাথে মেলামেশা করা কিছুতেই বৈধ নয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩ খণ্ড,২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

মুজাহিদ (র) বলেন, ইয়া মুতআ বিবাহ সম্পর্কে অবতীর্ণ হইয়াছে। কিন্তু জমহুর এই মতের বিরোধী। তবে আমীরুল মুমিনীন হজরত আলী ইবন আবু তালিব (রা) হইয়ে সহিহদ্বয়ের বর্ণিত হাদিসটিই সর্বাপেক্ষা উত্তম। সেই হাদিসে আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবু তালিব (রা) বলিয়াছেন যে রাসুল (রা) খায়বার যুদ্ধের সময় মুতাআ বিবাহ করিতে এবং পালিত গাধার গোশত খাইতে নিষেধ করিয়াছেন

তাফসীরে মাজহারী, ৩ খণ্ড, ৩৪,৩৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

এই আয়াতকে অধিকাংশ তাফসীরকার মুতা বিষয়ক বলেননি। বরং বলেছেন এখানে বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে সহবাসের উপকার এবং আস্বাদের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, যেহেতু তোমরা তাদেরকে উপভোগ করো তাই তাঁদের মহোরানা পরিশোধ করে দাও। হাসান এবং মুজাহিদের বক্তব্য এরকমই। ইবনে জারীহ, ইবনে মুনজির এবং ইবনে আবী হাতেম কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস বলেছেন- এই আয়াতটি বিবাহের মাধ্যমে উপকার প্রাপ্তি এবং মোহোরানা হুকুম সম্পর্কিত আয়াত। এখানে বয়াল হয়েছে আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাঁদের মোহর সন্তুষ্টচিত্তে দিয়ে দাও।

ইমাম আবু জাফর আবু তাবারী (র) এর কথা যে শক্তিশালী এর আরো প্রমাণ হিসেবে বলা যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা) প্রথমে যেই মিতা বিয়ের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন পরবর্তীতে উনি নিজের ফতোয়া থেকে তওবা করে ফিরে আসেন। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই উক্ত আয়াত মুতা বিয়েই বুঝানো হয়েছে এরপরেও বিন্দুমাত্র কোনো সমস্যা নেই।পাঠক সামনে এগুলো নিয়ে দলিল ভিত্তিক আলোচনা করেছি পড়তে থাকুন সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। এমন এমন তথ্য আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি যা নাস্তিকরা কখনো চাইবে না মানুষ এগুলো জেনে যাক। সত্য গ্রহণের তীব্র সাহস নিয়ে পড়তে থাকুন। এছাড়া বিভিন্ন তাফসীর পড়লে জানা যায় মুতা বিয়ে সম্পূর্ণ নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল। চলুন তাফসীর থেকে বিস্তারিত জেনে নেই। তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান,৪ খণ্ড, ৩৪৬, পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুতআ শরীয়তেরই বিধান ছিল। পরে তা রহিত হয়ে যায়। ইমাম শাফিই (র) এবং উলামা-ই-কিরামের একটি দল বলেন যে মুতআ দুবার বৈধ করা হয়, অতপর রহিত করা হয়। কেউ কেউ বলেন যে তার চেয়েও বেশীবার বৈধ হয়েছে ও রহিত হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে একবার মাত্র বৈধ হয়েছে, তারপরে রহিত হয়ে গেছেএরপরে আর বৈধ হয়নিহযরত ইবনে আব্বাস (রা) এবং অন্যান্য কয়েকজন সাহাবী হতে প্রয়োজনের সময় এর বৈধতার কথা বর্ণিত আছে।

সহিহ বুখারী, ও সহীহ মুসলিমের হজরত আলী (রা) হতে বর্ণিত হাদিসটি এর উত্তম মীমাংসা করেছে যাতে রয়েছে যে, রাসুল (রা) খাইবারের যুদ্ধে মুতআর বিবাহ হতে এবং পালিত গাধার মাংস হতে নিষেধ করেছেন। এ হাদিসের শব্দগুলো আহকামের গ্রন্থসমূহে বিস্তারিতভাবে রয়েছে। সহিহ মুসলিম শরিফে হযরত সুবরা ইবনে মাবাদ জুহনী (রা) হতে বর্ণিত আছে যে মক্কা বিজয়ের যুদ্ধে তিনি রাসুল (রা) এর সাথে ছিলেন। তিনি এরশাদ করেন, হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের মুতআর অনুমতি দিয়েছিলাম। জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা’লা কিয়ামত পর্যন্ত ওটাকে হারাম করে দিয়েছেন যার নিকট এ প্রকারের স্ত্রী রয়েছে সে যেন তাকে পরিত্যাগ করে এবং তোমরা যা কিছু তাদেরকে দিয়ে রেখেছো তা হতে কিছুই গ্রহণ করো না।

তাফসীরে জালালাইন,১ খণ্ড, ৮০০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) সাহাবায় কেরামের সামনে তাঁর খোতবার মধ্যে মুতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেনতাঁর এ নিষেধের উপর একজন সাহাবীও প্রতিবাদ করেননি। এতে বুঝা গেল, সাহাবাদের মুতা হারাম হওয়ার ব্যাপারটা জানা ছিল। নতুবা অবশ্যই কেউ না কেউ প্রতিবাদ করতেন। এতে করে ইজমায়ে সাহাবা দ্বারাও মুতা হারাম প্রমাণিত হয়েছে। চারো মাজহাবের ইমামসহ সকল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ওলামাদের ঐক্যমতে মুতা হারাম। ইমাম সারখসী ও হেদায়া প্রণেতা মালেক (র) এর প্রতি যে মুতার বৈধতার সম্পর্ক করেছেন, ইবনে হুমাম প্রমুখ ওলামাদের মতে তাদের এ সম্পর্ক করাটা ঠিক নয়। বরং ইমাম মালেক (র) এর মতেও মুতা হারাম। তার মাজহাবই এর প্রকৃষ্ঠ প্রমাণ। কেবলমাত্র শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরাই বলে মুতা জায়েজ। আর হযরত ইবনে আব্বাস (রা) প্রথমে জায়েজ ফতোয়া দিয়ে থাকলে পরবর্তীতে তিনি তার সেই মত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর এ মত থেকে তওবা করেছেন। বিস্তারিত জানতে হলে তাফসীরে ইবনে কাবীর দেখুন খণ্ড ৫, ৫১-৫৩ পৃষ্ঠা।

তাফসীরে জালালাইন,১ খণ্ড, ৮০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

অতঃপর নিকাহে মুতা হারাম হওয়ার প্রথম ঘোষণা হয়েছে খায়বার যুদ্ধে, দ্বিতীয়বার হারাম হওয়ার ঘোষণা হয়েছে আওতাস যুদ্ধে, তৃতীয়বার হয়েছে তাবুক যুদ্ধে, অতঃপর বিদায় হজের মধ্যে মুতা হারাম হওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে আম-খাছ সব ধরনের লোকেরাই এই মুতার অবৈধতা জেনে নিতে পারে। হুজুরে পাক (সা) মুতা হারাম হওয়ার ব্যাপারে এই বারংবার ঘোষণা ঐ প্রথমবারের ঘোষণারই তাকিদ হিসেবে ছিল।

মুতা বিয়ে পতিতাবৃত্তির মতো?

মিথ্যুকবাজ নাস্তিকরা বলে, পতিতাবৃত্তি হচ্ছে এমন একটি পেশা, যেই পেশায় নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুইজন মানুষের মধ্যে যৌন সম্পর্কের একটি চুক্তি হয়, সেই সময়টি এবং কাজটি শেষ হলে তাদের চুক্তিটি বাতিল বলে গণ্য হয়। একইভাবে মুতা হল এক ধরনের সাময়িক বা অস্থায়ী বিবাহ, অথবা বলা ভাল একটি যৌনচুক্তি, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু অর্থের বিনিময়ে হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময় সীমা অতিক্রম হওয়ার সাথে সাথে আপনা হতে এ বিবাহ চুক্তি ভঙ্গ হয়ে যায়। এর জন্য আলাদাভাবে তালাকের দরকার হয় না। পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা আর মুতা বিয়ে একই বা মুতা বিয়ে পতিতাবৃত্তির মতো। তাই  সত্যিকার অর্থে মুতাবিয়েকে পতিতাবৃত্তিই বলতে হয়।

পতিতাবৃত্তিকে আমরা কখনোই বিয়ে বলি না কিন্তু মুতাকে সাময়িক বিয়ে বলা হয়। তাই গোঁজামিল দিয়ে মুতা বিয়েকে পতিতাবৃত্তির সাথে মিলানো অযৌক্তিক। হাদিস গুলো পড়ুন।

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ৯৯৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

সালামাহ বিন আল-আক্‌ওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আওতাস’ অভিযানকালে তিন দিনের জন্য ‘মুত্‌আহ’ বা সাময়িক বিবাহ-এর অনুমতি দিয়েছিলেন, তারপর তিনি তা নিষিদ্ধ করে দেন।-ihadis.com

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ৯৯৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধাভিযানের সময় ‘মুত্‌আহ’ (সাময়িক বিবাহ) নিষিদ্ধ করেন।আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়েদের সাথে মুত্'আহ বিবাহ করা, গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া, খাইবার যুদ্ধে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।-ihadis.com

তাছাড়া পতিতাবৃত্তিতে আলাদা করে কোনো ধরণের চুক্তি করা হয় না বরং কোনো মুক্তমনা যদি পতিতালয়ে যায় তাহলে সেখানে যে কোনো নারীকে উপযুক্ত টাকা দিলেই সে মুক্তমনে দেহ বিলিয়ে দিতে বাধ্য কারণ এটি তার বিজনেস। এটি করেই সে তার জীবিকা নির্বাহ করে। টাকা না পেলে খাবে কি? তাই সে বাধ্য থাকে দেহ বিক্রি করে যৌনকর্মের জন্য। বেশ্যাদের মাইনসেট এমন থাকে যতো বেশি দেহ বিলাতে পারবে তত বেশি টাকা কামাতে পারবে তাই এখানে আসল হচ্ছে টাকা, চুক্তি নয়। শুধু কি তাই? যদি কোনো মুক্তমনা নাস্তিক বেশ্যা নারীকে বলে তোকে আমি জবরদস্তি করে ধর্ষণ করবো এর বিনিময়ে তুই যা চাশ এরচেয়ে বেশি টাকা দিব তুই কি রাজি? যদি যেই বেশ্যা রাজি থাকে তাহলে তাকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করাও বৈধ হয়ে যায় নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে। এখন এরকম সম্মতিতে কেউ যদি চুক্তি বলতে চায় তাহলে সেটা তার ব্যাপার এমনকি কোনো নাস্তিকের মুক্তমনা মা-বোনরা যদি বেশ্যাগিরিতে চুক্তি করে তাহলে সেটা তাদের একান্ত ব্যাপার। কিন্তু গরীব বেশ্যাদের ক্ষেত্রে চুক্তির প্রয়োজনই হয় না, টাকার প্রয়োজন হয়।

নাস্তিকদের গোঁজামিল সুত্রে মুতা বিয়েকে যদি পতিতাবৃত্তির মতো বলতেই হয় তাহলে একইভাবে পুরো বিয়ে ব্যবস্থাকে পতিতাবৃত্তির সাথে মিলানো যায়। কিভাবে? নাস্তিকদের গোঁজামিল ফলো করে আমি মিলিয়ে দেখাচ্ছি। পতিতাবৃত্তির মধ্যে যেমন সেক্স করা হয়, একটি সময় পর্যন্ত দুইজনে দুইজনকে ভোগ করে এরপরে উভয় চাইলে আলাদা হয়ে যায় তেমনি বিয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে দুইজনে দুইজনের সাথে যৌনমিলন করে এরপরে যদি উভয় চায় তাহলেও আলাদা হয়ে যেতে পারে সুতরাং নাস্তিকদের গোঁজামিল সুত্রে বিয়ে ও পতিতাবৃত্তি একই। এখন নাস্তিকরা কি নিজেদের দেয়া যুক্তিতে এটা স্বীকার করবে যে নাস্তিকদের মা’রা তাদের বাবাদের সাথে বেশ্যাগিরি করে তাদেরকে পয়দা করেছে? আমি আসলে এই প্রশ্নটি নাস্তিকদের জন্য করবো না কারণ নাস্তিক্যধর্মে পতিতাবৃত্তি করে অর্থ উপার্জন করা বৈধ কাজ এমনকি কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের মা-বোনদের দিয়ে যৌনকর্ম করে টাকা কামাতে পারে অথবা এমন দোকান ওপেন করতে পারে যেখানে নাস্তিকের মা ও বোন থাকবে অন্য মুক্তমনারা এসে সেই নারীবাদীদের সাথে যৌনকর্ম করবে। তাই কোনো নাস্তিকএর মা-বোন যদি কোনো পুরুষের সাথে যৌনকর্ম করে অর্থ উপার্জন করে তাহলে সেই টাকা নাস্তিকদের ভোগ করতে অসুবিধা নেই। 

আমি প্রশ্ন করতে চাই চিন্তাশীল মানুষদের কাছে, নাস্তিকদের গোঁজামিল অনুযায়ী পুরো দুনিয়াতে যতো গুলো বিয়ে হয়েছে সব নারীরা কি বেশ্যাগিরি করে সন্তান জন্ম দিয়েছে? কারণ পতিতাবৃত্তির সাথে বিয়ের কিছু অংশ মিলে? অবশ্যই না। কারণ বিয়েরকর্ম পতিতাবৃত্তির সাথে কিছুটা মিল থাকলেও বিয়েকে তা বলা যায় না অথবা বিয়ে পতিতাবৃত্তির মতো এটাও বলা যাবে না ঠিক তেমনি পতিতাবৃত্তির সাথে মুতা বিয়ের কিছু অংশ মিল থাকলেও মুতা বিয়েকে পতিতাবৃত্তির মতো বলা যাবে না। কেন বলা যাবে না? আমি নাস্তিকদের গোঁজামিল অনুসরণ করে আপনাদেরকে আরো কিছু নমুনা দেখাই। নিজেরাই ধরতে পারবেন যে নাস্তিকরা কিভাবে গোঁজামিল দিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। আমি যদি বলি, ধর্ষকরা যখন মুক্তমনে ধর্ষণ করে তখন হাত, পা, মুখ ও শিশ্নের সাহায্যে করে আর নাস্তিকরা যখন নারীদের সাথে যৌনকর্ম করে ভোগ করে তখনও হাত, পা, মুখ ও শিশ্নের সাহায্যে করে দুটোর সাথেই সাদৃশ্য রয়েছে তাই নাস্তিকদের শিশ্নকে ধর্ষকের শিশ্নের মতো বলতেই হবে। আবার যদি বলা হয়,সোভিয়েত ইউনিয়নের কম্যুনিস্টরা নাস্তিক্যধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য যেভাবে গণহত্যা করেছে তাদের শারীরিক অবয়ব বঙ্গীয় নাস্তিকদের মতো কারণ দুইজনেই দেখতে মানুষের মতো তাই গণহত্যাকারীদেরকে নাস্তিকদের মতো বলতে হবে। আবার যদি বলা হয় চোররা যেমন চুরি করার জন্য নিজের স্বাধীন চিন্তার আশ্রয় নেয় তেমনি নাস্তিকরাও ইসলামের বদনাম করার জন্য নিজেদের মুক্তচিন্তার আশ্রয় নেয় সুতরাং চোর ও নাস্তিকরা উভয় একই বলতে হবে। নাস্তিকদের গোঁজামিল সুত্র ব্যাবহার করে এরকম হাজারটা বলা যাবে। কিন্তু এগুলো কি একটিও যৌক্তিক কথা? অবশ্যই না।

নবী মোহাম্মদ (সা) ও সাহাবাগণ মুতা বিয়ে করেছিলেন যখন এটি বৈধ ছিল কিন্তু যখন অবৈধ হয় তখন জানা থাকা অবস্থায় আর কেউ করেন নাইঃ

মুসনাদে আহমাদ, হাদিসঃ ৩৫১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু মূসার ছেলে ইবরাহীম বর্ণনা করেন, আবু মূসা (রাঃ) মুত’আ (অস্থায়ী) বিয়ের পক্ষে ফতোয়া দিতেন। এক ব্যক্তি আবু মূসাকে বললেন, আপনার কিছু কিছু ফতোয়া নিয়ে একটু ধীরে চলুন। কারণ আপনার পরে আমীরুল মু’মিনীন হজ্জের ব্যাপারে কী নতুন ধারা প্রবর্তন করেছেন তা আপনি জানেন না। অবশেষে আবু মূসা উমার (রাঃ) এর সাথে দেখা করে জিজ্ঞাসা করলেন। উমার (রাঃ) তাকে বললেনঃ আমি অবহিত হয়েছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ এটা করেছেন। তবে আমার কাছে এটা অপছন্দনীয় যে, লোকেরা তাদের (মুত’আ বিয়ের) স্ত্রীদের সাথে বাসর করতে থাকবে, আর হজ্জে যাবে এমন অবস্থায় যে, তখনো তাদের মাথার চুল গড়িয়ে ফোটা ফোটা পানি টপকাচ্ছে। (মুসলিম-১২২২)- hadithbd.com

মুসনাদে আহমাদ, হাদিসঃ ৩৪২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু মূসা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, উমার (রাঃ) বলেছেনঃ ওটা অর্থাৎ মুত’আ (অস্থায়ী বিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। তবে আমার আশঙ্কা হয় যে, লোকেরা এই সব স্ত্রীকে নিয়ে বাবলা গাছের নিছে বাসর করবে, তারপর তাদেরকে নিয়ে হজ্জে যাবে।-hadithbd.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩০৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও সালামাহ্‌ ইবনুল আক্‌ওয়া’ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতারা উভয়ে বলেন, আমাদের সামনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘোষক বেরিয়ে এসে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের মুত্‌’আহ্‌ বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছেন-ihadis.com 

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩০৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

সালামাহ্‌ ইবনুল আক্‌ওয়া’ (রাযিঃ) ও জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট এলেন এবং আমাদের মুত্‌’আর (সাময়িক বিবাহের) অনুমতি দিলেন।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

সাবরাহ আল জুহানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে স্ত্রীলোকদের সাথে মুত্’আহ্ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু অচিরেই আল্লাহ্ তা‘আলা তা হারাম করেছেন ক্বিয়ামাতের দিন পর্যন্ত। অতএব যার নিকট এ ধরনের বিবাহ সূত্রে কোন স্ত্রীলোক আছে, সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয়। আর তোমরা তাদের যা কিছু দিয়েছ তা কেড়ে দিও না।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আবদুল মালিক ইবনু রাবী’ ইবনু সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদা থেকে বর্ণিতঃতিনি(দাদা) বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমাদের মাক্কায় প্রবেশকালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মুত্‌’আহ্‌ বিবাহের অনুমতি দান করেন। তিনি আমাদের তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত (নারী সঙ্গ ত্যাগ করে) বের হয়ে আসিনি।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩২১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাবী’ ইবনু সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্র থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুত্’আহ্ নিষিদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন, সাবধান! আজকের এ দিন থেকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত মুত্’আহ্ হারাম। যে কেউ (ইতোপূর্বে) মুত্’আহ্ বাবদ যা কিছু দিয়েছে, সে যেন তা ফেরত না দেন।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩২২,৩৩২৪,৩৩২৬ সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন মুত্‌’আহ্‌ ও গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত নিষিদ্ধ করেছেন-ihadis.com

এক হাদিসে দেখা যায় নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করেছেন তো অন্য হাদিসে দেখা যাচ্ছে সাহাবায় কেরাম মুতা বিয়ে করেছিলেন এরকম কেন? নবীজি (সা) যখন নিষেধ করে দিয়েছিলেন এই কথা সেই সাহাবারা জানতেন না তাই। যদি জানতেন তাহলে অবশ্যই করতেন না। হাদিস গুলো পড়ুন। তাহলে বুঝতে পারবেন যে যেসব সাহাবীরা নবীজি (সা) থেকে শুনেছিলেন মুতা বিয়ে নিষেধ তারা পরবর্তীতে এটি আর করেন নাই।

 সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাবী’ ইবনু সাবরাহ্ আল জুহানী (রহঃ) থেকে তাঁর পিতা সাবরাহ (রাযিঃ)–এর সুত্র থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মুত্’আর অনুমতি দিলেন। অতঃপর আমি ও অপর এক ব্যক্তি বানূ ‘আমির গোত্রের একটি মহিলার নিকট গেলাম। সে ছিল দেখতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট তরুণ উষ্ট্রীর ন্যায়। আমরা নিজেদেরকে তার নিকট (মুত্’আহ্ বিবাহের জন্য) পেশ করলাম। সে বলল, আমাকে কী দিবে? আমি বললাম ,আমার চাদর। আমার সাথীও বলল আমার চাঁদর। আমার চাদরের তুলনায় আমার সঙ্গীর চাদরটি বেশি উৎকৃষ্টতর; কিন্তু আমি ছিলাম তুলনায় কম বয়সের যুবক। সে যখন আমার সঙ্গীর চাদরের প্রতি তাকায় তখন তা তার পছন্দ হয় এবং বলল, তুমি এবং তোমার চাদর ই আমার জন্য যথেষ্ট। অতএব আমি তার সাথে তিন দিন অতিবাহিত করলাম। অতপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ কারো কাছে মুত্’আহ্ বিবাহের সূত্রে কোন স্ত্রী লোক থাকলে সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয় (ত্যাগ করে)-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাবী’ ইবনু সাব্‌রাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁর পিতা মক্কা বিজয়াভিযানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমরা তথায় ১৫ দিন অর্থাৎ পূর্ণ ১৩ দিন এবং এক দিন ও এক রাত অবস্থান করি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মুত্‌’আর অনুমতি দিলেন। তখন আমি এবং আমার গোত্রের এক ব্যক্তি বেরিয়ে পড়লাম। আমি তার তুলনায় আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী ছিলাম এবং সে ছিল প্রায় কুৎসিত। আমাদের উভয়ের সাথে একটি করে চাদর ছিল। আমার চাদরটি ছিল পুরাতন এবং আমার চাচাত ভাইয়ের চাদরটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন। অবশেষে আমরা মাক্কার নিম্নভূমিতে অথবা উচ্চভূমিতে পৌঁছে একটি যুবতী মেয়ের সাক্ষাৎ পেলাম, যাকে দেখতে উঠতি বয়সের চালাক এবং লম্বাঘাড় বিশিষ্ট উষ্ট্রীর মত। আমরা প্রস্তাব দিলাম, আমাদের দু’জনের কারো সাথে তোমার মুত্‌’আহ বিবাহ কি সম্ভব? সে বলল, তোমরা কী বিনিময় দিবে? তাদের প্রত্যেকে কে নিজ নিজ চাদর মেলে ধরল। সে তাদের উভয়ের দিকে তাকাতে লাগল। আমার সঙ্গীও তার দিকে তাকাল। যখন স্ত্রীলোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, তার এ চাদর পুরাতন এবং আমার চাদর একেবারে নতুন। স্ত্রীলোকটি তিনবার কি দু’বার বলল, তার চাদরটি গ্রহনে কোন ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি তাকে মুত্‌’আহ বিবাহ করলাম এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা হারাম ঘোষণা না করা পর্যন্ত ফিরে আসিনি।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

সাব্‌রাহ্‌ ইবনু মা’বাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর তাঁর সাহাবীগণকে স্ত্রীলোকদের সাথে মুত্‌’আর অনুমতি দেন। সাব্‌রাহ্‌ (রাঃ) বলেন, তখন আমি এবং সুলায়ম গোত্রের আমার এক সাথী বের হয়ে পড়লাম এবং শেষ পর্যন্ত আমি গোত্রের এক যুবতীকে পেয়ে গেলাম। সে ছিল দীর্ঘাঙ্গী যুবতী উটনীর ন্যায়। আমরা তার নিকট মুত্‌’আহ্‌ বিবাহের প্রস্তাব দিলাম এবং আমাদের চাদর তার সামনে পেশ করলাম। তখন সে তাকিয়ে দেখল এবং আমাকে আমার সঙ্গীর তুলনায় সুন্দর দেখতে পেল, অপরদিকে আমার চাদরের তুলনায় আমার সঙ্গীর চাদর উৎকৃষ্টতর দেখল। সে মনে মনে কিছুক্ষণ চিন্তা করল। অতঃপর আমার সঙ্গীর চাইতে আমাকে অগ্রাধিকার দিল। তারা আমাদের সাথে তিনদিনের মুত্‌’আহ্‌ করল অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিদায় করে দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন।-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩৩৬৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রবী ইবন সাবরা জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুত্’আর অনুমতি দিলে আমি এবং এক ব্যক্তি বনূ আমরের এক মহিলার কাছে গেলাম এবং তার নিকট নিজেদের উপস্থাপন করলাম। সে বললঃ আমাকে কি দিবে? আমি বললামঃ আমার চাদর। আমার সাথীও বললেনঃ আমার চাদর দিব। আর আমার সাথীর চাদরখানা ছিল আমার চাদর হতে উত্তম। আর আমি ছিলাম আমার সাথী হতে অধিক যুবক। যখন সে আমার সাথীর চাদরের প্রতি লক্ষ্য করলো, তখন ঐ চাদর তার নিকট ভালো লাগলো। আর যখন আমার দিকে লক্ষ্য করলো, তখন আমি তার চোখে ভালবোধ হলাম। এরপর সে বললেনঃ তুমি এবং তোমার চাদরই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি তার সঙ্গে তিন রাত অবস্থান করলাম, পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যার নিকট এ মুতআর নারী আছে, সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয় (মুক্ত করে দেয়)।-ihadis.com

মুতা বিয়ে কেন হালাল করা হয়েছিল?

নাস্তিকরা হাদিস দেখায় একটা আর নিজেরা বানায়ে বানায়ে ব্যাখ্যা করে আরেকটি যার সাথে হাদিসের কোনো সম্পর্কই নেই। নাস্তিকরা যে মিথ্যুকবাজ সংশয় আছে এরপরেও? আসুন দেখি নাস্তিকরা কিভাবে অভিযোগ করে।

নাস্তিকরা বলে,নিচের হাদিসটি থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ মুতা বিবাহ হালাল করেছিলেন নারী স্বল্পতার কারণে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন গনিমতের মাল হিসেবে যুদ্ধবন্দী নারীরা মুহাম্মদের সৈন্যদের হস্তগত হয় নি, তাদের সাথে সহবত করা যায় নি, সেই সময়ে নবী মুতা বিবাহ হালাল করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন মুহাম্মদের সেনাবাহিনী প্রচুর সংখ্যক যুদ্ধবন্দী নারী গনিমতের মাল হিসেবে বন্দী করে ধরে আনে, তখন তাদের ধর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট নারী ছিলতাই মুতা বিবাহ পরিবর্তীতে হারাম করা হয়। কারণ এর আর প্রয়োজনই ছিল না। বিনা পয়সায় যুদ্ধবন্দী নারীদের ধর্ষণ করা গেলে পয়সা দিয়ে আর মুতা বিবাহের প্রয়োজনই বা কী!

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫১১৬, সহিহ হাদিসঃ আবূ জামরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি মহিলাদের মুত’আহ বিয়ে সম্পর্কে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করতে শুনেছি, তখন তিনি তার অনুমতি দেন। তাঁর আযাদকৃত গোলাম তাঁকে বললেন যে, এরূপ হুকুম নিতান্ত প্রয়োজন ও মহিলাদের স্বল্পতা ইত্যাদির কারণেই ছিল? ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হাঁ।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩০১, সহিহ হাদিসঃ ক্বায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করতাম এবং আমাদের সঙ্গে আমাদের স্ত্রীগণ থাকত না। আমরা বললাম, আমরা কি খাসী হব না? তিনি আমাদের তা থেকে নিষেধ করলেন। অতঃপর তিনি পরিধেয় বস্ত্র দানের বিনিময়ে আমাদের নির্দিষ্ট কালের জন্য নারীদের বিবাহ করার রুখ্‌সত দিলেন। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) পাঠ করলেনঃ “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন, সে সমুদয়কে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না”- (সূরা আল মায়িদাহ্‌ ৫:৮৭)।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৬২, সহিহ হাদিসঃ সাবরাহ বিন মা’বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীহীন অবস্থায় থাকা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছেতিনি বলেনঃ তাহলে তোমরা এসব মহিলার সাথে মুতআ করো (সাময়িকভাবে উপকৃত হও)। অতএব আমরা তাদের সান্নিধ্যে পৌঁছলাম, কিন্তু তারা আমাদের এবং তাদের মাঝে নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ ব্যতিত আমাদের সঙ্গে বিবাহ বসতে অস্বীকার করলো। সাহাবীগণ বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ তাহলে তোমাদের ও তাদের মাঝে মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নাও। অতএব আমি ও আমার এক চাচাত ভাই (এই উদ্দেশে) বের হলাম। তাঁর সাথে ছিল একটি চাদর এবং আমার সাথেও ছিল একটি চাদর। তার চাদরটি ছিল আমার চাদর থেকে বেশি সুন্দর। আর আমি ছিলাম তার চাইতে অধিক যুবক। আমরা দু’জন এক নারীর নিকট আসলাম। সে বললো, চাদর দু’টি তো একই মানের। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম এবং তার কাছেই ঐ রাত কাটালাম। ভোরে আমি ফিরে এলাম, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা ঘরের দরজা ও রুকনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলছিলেনঃ হে লোক সকল! আমি তোমাদের মুতআ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। এখন তোমরা শুনে নাও যে, আল্লাহ্‌ কিয়ামাত পর্যন্ত এই প্রকার বিবাহ হারাম করেছেন। অতএব তোমাদের কারো কাছে এ ধরণের কোন নারী থাকলে সে যেন তাকে ছেড়ে দেয় এবং তোমরা তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না।-ihadis.com

পাঠক গভীর চিন্তার সাথে লক্ষ্য করুন তো। উপরের হাদিস গুলোতে কি এই কথা বলা হয়েছে যে “যুদ্ধবন্দী নারী গনিমতের মাল হিসেবে বন্দী করে ধরে আনা হতো ধর্ষণ করার জন্য? উপরের হাদিসে নবী মোহাম্মদ (সা) কোথায় বলেছেন যুদ্ধবন্দিনী নারীদের ধর্ষণ করো? আমি তো পেলাম না, পাঠক আপনারা আরেকবার উপরের হাদিস গুলো পড়ুন তো, নিজেরাই যাচাই করে দেখে নিন তো নাস্তিকরা যেই দাবি করেছে তার সাথে হাদিসের আসলেই সম্পর্ক আছে কি? কোন হাদিসে নবীজি (সা) এই কথা বলেছেন যে মুতা বিয়ে পরবর্তীতে হারাম করা হয় কারণ তখন আর নারীদের ধর্ষণ করার দরকার ছিল না? মিথ্যুকবাজ নাস্তিকরা উপরে তাদের দাবির পক্ষে যেই হাদিস পেশ করেছে সেখানে তো এরকম কিছুই বলা হয়নি তাহলে কেন নাস্তিকদেরকে মুক্তমনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হলো? আসলেই তো,কেন? নবীজি (সা) কোথায় বলেছেন তোমরা যুদ্ধবন্দিনী নারীদেরকে ধর্ষণ করতে থাকো কারণ মুতা বিয়ে পরবর্তীতে আমি নিষেধ করে দিব? কুরআনেরই বা কোথায় বলা আছে তোমরা নারীদের ধর্ষণ করতে থাকো?

সাহাবীদের প্রয়োজন ছিল সহবাস করা তাই তারা মুতা বিয়ে করেছিলেন কিন্তু কোনো নারীর সাথে জবরদস্তি তো করেন নাই, করেন নাই নির্যাতন, তাহলে? সাহাবীদের কর্মকে খারাপ বলার কি যুক্তি আছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে? নাস্তিকরা কি এরকম সহিহ হাদিস দেখাতে পেরেছে যে সাহাবীরা নারীদের সাথে জবরদস্তি করে যৌনমিলন করেছে নবীজি (সা) এর আদেশে? অথবা কুরআন থেকে এরকম একটি মাত্র আয়াতও কি দেখাতে পেরেছে যেখানে বর্ণিত হয়েছে নারীদেরকে ধর্ষণ করতে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন? ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ৯,১২ ঘণ্টা লাইভ করে টাকা কামাই করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে চাইলে কি ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করাটা বাধ্যতামূলক? না হলে এরকম ডাহামিথ্যেচার করার উদ্দেশও কি মুক্তমনাদের? মিথ্যাকথা না বলে ইসলামের বিরোধীতা করা যায় না তাই না? ইসলামের দৃষ্টিতে যেখানে এটা পরিস্কার করে বলে দেয়া যে একান্ত প্রয়োজন অথবা স্ত্রী থেকে দূরে থাকলে যদি কোনো পুরুষের সমস্যা হতো তাহলে তাকে সাময়িক মুতা বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়েছিল যদি এটি পরবর্তীতে নিষেধ করে দেয়া হয় কিন্তু এখানে ধর্ষণ করার কথা নাস্তিকরা কিভাবে প্রবেশ করালো, হে? পাঠক খেয়াল করলে দেখবেন উপরের হাদিসে নবীজি (সা) থেকে পরিস্কার করে বলে দেয়া যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা ঘরের দরজা ও রুকনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলছিলেনঃ হে লোক সকল! আমি তোমাদের মুতআ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। এখন তোমরা শুনে নাও যে, আল্লাহ্‌ কিয়ামাত পর্যন্ত এই প্রকার বিবাহ হারাম করেছেন। অতএব তোমাদের কারো কাছে এ ধরণের কোন নারী থাকলে সে যেন তাকে ছেড়ে দেয় এবং তোমরা তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না। নাস্তিকরা কি একটিও  যুক্তি দেখাতে পেরেছে উপরের হাদিসের মধ্যে কি ভুল রয়েছে? অথবা ইসলাম নিয়ে নাস্তিকরা যেভাবে অন্ধবিশ্বাস করে যাচ্ছে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পেরেছে? তবে হ্যাঁ নাস্তিকরা উপরের হাদিস গুলো নিয়ে মুক্তমনে যে মিথ্যাচার করেছে সেটা আমি অস্বীকার করছি না, করবোও না।

মুতা বিয়ে সব সময়ের জন্য সুন্নাত? নবী (সা) নিষেধ করলে পরবর্তীতে কিভাবে বহাল থাকে? সাহাবীদের মধ্যে এখতেলাফ কেন? ইত্যাদি প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব

নাস্তিকরা বলে,ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের সংকলিত হাদিস গ্রন্থ থেকে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, নবী মুহাম্মদ নিজেও মুতা বিবাহ করেছিলেন। এমনকি, এটি রীতিমত নবীর সুন্নত। এসব হাদিস থেকে জানা যায়, মুতা বিবাহ ছিল স্বয়ং নবী মুহাম্মদের সুন্নত। নবী নিজেই সেই কাজটি করেছেন। তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই সুন্নাত পালন করে নবীর সুন্নাত জিন্দা করা।

মুসনাদে আহমাদ,হাদিসঃ ৩৫১, সহিহ হাদিসঃ আবু মূসার ছেলে ইবরাহীম বর্ণনা করেন, আবু মূসা (রাঃ) মুত’আ (অস্থায়ী) বিয়ের পক্ষে ফতোয়া দিতেন। এক ব্যক্তি আবু মূসাকে বললেন, আপনার কিছু কিছু ফতোয়া নিয়ে একটু ধীরে চলুন। কারণ আপনার পরে আমীরুল মু’মিনীন হজ্জের ব্যাপারে কী নতুন ধারা প্রবর্তন করেছেন তা আপনি জানেন না। অবশেষে আবু মূসা উমার (রাঃ) এর সাথে দেখা করে জিজ্ঞাসা করলেন। উমার (রাঃ) তাকে বললেনঃ আমি অবহিত হয়েছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ এটা করেছেন। তবে আমার কাছে এটা অপছন্দনীয় যে, লোকেরা তাদের (মুত’আ বিয়ের) স্ত্রীদের সাথে বাসর করতে থাকবে, আর হজ্জে যাবে এমন অবস্থায় যে, তখনো তাদের মাথার চুল গড়িয়ে ফোটা ফোটা পানি টপকাচ্ছে।-hadithbd.com

মুসনাদে আহমাদ, হাদিসঃ ৩৪২,সহিহ হাদিস,আবু মূসা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, উমার (রাঃ) বলেছেনঃ ওটা অর্থাৎ মুত’আ (অস্থায়ী বিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। তবে আমার আশঙ্কা হয় যে, লোকেরা এই সব স্ত্রীকে নিয়ে বাবলা গাছের নিছে বাসর করবে, তারপর তাদেরকে নিয়ে হজ্জে যাবে।-hadithbd.com

মুসনাদে আহমদ,ইসলামিক সেন্টার, প্রথম খণ্ড, ২৩২, পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, মুতা বিয়ে সুন্নাত।

হ্যাঁ এটা সত্য যে এটি সুন্নত কিন্তু নাস্তিকরা যেই সত্য কথা লুকিয়েছে তা হচ্ছে এটি সুন্নত ছিল কিন্তু নবীজি (সা) যেহেতু নিষেধ করে দিয়েছেন সেহেতু এটি আর করা যাবে না মানে এটি নিষিদ্ধ সুন্নত। সুন্নতের উসুল না বুঝে কিছুকে চলমান সুন্নাত হিসেবে পেশ করা নাস্তিকদের মূর্খতার প্রমাণই বহন করছে। নবীজি (সা) নিজেই যেখানে নিষিদ্ধ করে গেছেন সেটা কিভাবে পালনীয় সুন্নাত হয়? এরপরে ইসলাম না জানা নাস্তিকরা কি মিথ্যে অভিযোগ করে চলুন সেটা পড়ি।

নাস্তিকরা বলে,মুহাম্মদের পরে ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফা ছিলেন হযরত আবু বকর। মুহাম্মদ যদি মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ করে গিয়ে থাকেন, আবু বকরের আমলে মুতা বিবাহ কীভাবে চালু থাকে? মুতা বিবাহ মুহাম্মদ নিষিদ্ধ করে থাকলে, আবু বকরের আমলে কেউ কীভাবে মুতা বিবাহ করতো? হযরত উমরের কেন মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ করতে হলো?

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩০৬, সহিহ হাদিসঃ ‘আত্বা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃজাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ‘উমরাহ্ পালন করতে এলেন। তখন আমরা তাঁর আবাসে তাঁর নিকট গেলাম। লোকেরা তাঁর নিকট বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করল। অতঃপর তারা মুত’আহ্ সম্পর্কে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, হাঁ, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ)-এর যুগে মুত্’আহ(বিবাহ) করেছি।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩০৭, সহিহ হাদিসঃ আবু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি : আমরা এক মুঠো খেজুর অথবা ময়দার বিনিময়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর যুগে মুত’আহ্ বিবাহ করতাম। শেষ পর্যন্ত ‘উমার (রাঃ) ‘আম্‌র ইবনু হুরায়স–এর বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তা নিষিদ্ধ করেন।-ihadis.com

আমি একটি কথা প্রায় বলি যে “চিন্তাশীল হলে নাস্তিক হওয়া যায় না” আমার এই কথাকে আবার প্রমাণ করে দিয়েছে নাস্তিকদের ফালতু প্রশ্নটি। কিভাবে? পাঠক সুক্ষভাবে খেয়াল করুন উপরের দুই হাদিসেই পরিস্কার বলে দেয়া হয়েছে যে “আমরা রাসুল (সা) যুগে,আবু বকর ও উমার (রা) যুগে মুতা বিয়ে করেছি বা করতাম” এরমানে তারা এখন করেন না। কেন? কারণ তারা যখন জেনেছে নবীজি (সা) এটি নিষেধ করে গিয়েছেন তখন আর করেন নাই, এমনকি আবু বকর এবং উমার (রা) সময়েও তারা জানতে পারেন নাই কিন্তু যখন জেনেছেন এরপরে আর করেন নাই যেমন উপরের হাদিসেই বলে দেয়া হয়েছে উমর (রা) নিষিদ্ধ করে দেন। খেয়াল করুন তারা যদি নবীজি (সা) থেকে অথবা অন্য কারো থেকে জানতো তাহলে অবশ্যই মুতা বিয়ে করতেন না। যারা জানতেন না তাদের জন্য আম্‌র ইবনু হুরায়স এর বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মুতা বিয়ে নিষিদ্ধ করেন ব্যাস। না বুঝার কি আছে, হে? সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে ব্যাখ্যাতেই উল্লেখিত রয়েছে বিষয়টি।

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৩৩০৬,সহিহ হাদিসের নিচের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে

পরিভাষায় একটি নিদির্ষ্টি কালের জন্য মুহরের বিনিময়ে কোন মহিলার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা। নিদির্ষ্ট সময় পার হওয়ার সাথে সাথেই বিবাহের চুক্তি বাতিল গণ্য হয় এবং ত্বলাক্ব প্রদান ব্যতীতই স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে আরবদের মাঝে এ ধরনের বিবাহের ব্যাপক প্রচলন ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় ইসলামী শারী’আতেও এটা জায়িয ছিল। আরব সমাজে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য কুপ্রথার ন্যায় মুত্’আহ্ বিবাহের মতো কুপ্রথাকেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধীরে ধীরে বিলুপ্তি সাধন করেন। ৭ম হিজরীতে ১ম বার নিষিদ্ধ করেন, এরপর আওত্বাস যুদ্ধের সময় তিনদিনের জন্য অনুমতি দেন এবং পরে হারাম ঘোষণা করেন

অতঃপর বিদায় হজ্জের সময় চিরকালের জন্য ইহা হারাম ঘোষণা করেন। অথচ এ হাদিসে দেখা যাচ্ছে, লোকেরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে এবং আবু বকর (রাযিঃ) ও ‘উমার (রাযিঃ)-এর যুগে মুত’আহ বিবাহ করেছেন। এখানে উদ্দেশ্য হল যে সকল লোকদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর মুত্’আহ্ বিবাহ রহিত হওয়ার ফরমান পৌঁছেনি তারা মুত্’আহ্ বিবাহ করেছেনঅন্যথায় যাদের কাছে রহিত হওয়ার খবর পৌঁছেছিল তারা একে হারাম বিশ্বাস করতেন এবং এ থেকে পরহেয করতেনসুতরাং না জানার কারনে মুত্’আহ করা দলিল হতে পারে না, যদিও তারা জীবনের শেষ পর্যন্ত তা করুন না কেন বরং তাদের কথা ও কাজ দলিল হিসেবে গ্রহীত হবে যাদের নিকট বিদায় হজ্জের সময়কার নিষেধাজ্ঞা পৌঁছেছে। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল ফরমান এবং এ সময়ের মধ্যে তা বৈধ হওয়ার কথা বলেন নি আর এই অবস্থায় তিনি পরপারে পাড়ি জমান। সুতরাং এর প্রতি প্রত্যাবর্তন এবং আমল করা জরুরী।-ihadis.com

শুধু এখানেই নয় বরং সরাসরি হাদিসও রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে উমার (রা) নিষেধ করে দিলে তারা আর মুতা বিয়ে করেন নাই। নাস্তিকরা কিন্তু খুব কৌশলে এই হাদিস গুলো ঢেকে রেখে দেখায়। নিজেরাই হাদিসটি পড়ে দেখে নিন।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩০৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবূ নায্‌রাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকত উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু যুবায়র (রাঃ) দু’ প্রকারের মুত্‌’আহ্‌ (তামাত্তু’ হাজ্জ ও মুত্‌’আহ্‌ বিবাহ)নিয়ে পরস্পর মতবিরোধ করেছেন। তখন জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতে দু’ প্রকারের মুত্‌’আহ করেছিঅতঃপর ‘উমার (রাঃ) আমাদের উভয়টিই করতে নিষেধ করলেন। অতএব আমরা তা আর করেনি-ihadis.com 

হাদিসটি থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, না জেনে মুতা বিয়েকারীরা উমার (রা) নিষেধ করার ফলে উনারা আর মুতা বিয়ে করেননি। আর উমর (রা) নতুন করে মুতা বিয়ে নিষেধ করেন নাই বরং নবীজি (সা)এর হুকুমই উনি পুনরায় বর্ণনা করে দিয়েছেন বা জানিয়েছেন মাত্র ।পড়ুন,হাকীমুল উম্মত, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ) প্রণীত ‘বয়ানুল-কুরআন’ এর সরল বঙ্গানুবাদ ‘তাফসীরে আশরাফী’ ১ খণ্ড, ৬০০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

পূর্বকালের ওলামায়ে কেরাম হইতে কেহ কেহ যে হালাল বলিয়াছেন বোধ হয় তখন পর্যন্ত উহারা হারাম হইয়া যাওয়ার সংবাদ পান নাই। আর কেহ কেহ (সুরা নিসার ২৪) এই আয়াতের সঙ্গে অর্থাৎ এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বলিয়াছেন, তাহারাও রহিত হওয়ার অবগতির পূর্বে আয়াতের তাফসীর স্বরূপ এইরুপ বলিয়া দিয়াছেন। হযরত ওমর (রা) যে মুতা বিবাহ হারাম করিয়াছেন বলিয়া কথিত আছে, তাহার অর্থ এই যে, পূর্বকৃত হারামকে তিনি প্রকাশ করিয়াছেন মাত্র। তিনি হারাম করেন নাই। ইবনে আব্বাসের এক রেওয়ায়েতে মুতা বিবাহ হালাল বলিয়া বুঝা যায় বটে; কিন্তু উহাও গত্যন্তর না থাকা অবস্থায়। আবার তিরমিযী সেই ইবনে আব্বাস হইতেই অন্য রেওয়ায়েতে মুতা বিবাহ হারাম বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ইহাতে বুঝা যায় যে, মুতা বিবাহ হালাল হওয়া তাহার পূর্ব মত ছিল, পরে হারাম হওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় তাহার মতের পরিবর্তন ঘটিয়াছেআর এখন মুতা হারাম হওয়ার উপর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের এজমা রহিয়াছে।

আরো পড়ুন, প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ,হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (হা;ফি) সাহেবের লিখিত “তাফসীরে নুরুল কোরআন” ৫ খণ্ড, ৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


এবনে মাজাহ শরীফে রয়েছে, একবার খলিফাতুল মুসলেমীন হযরত ওমর (রা) একটি ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, প্রিয় নবী (সা) শুধু তিন দিনের জন্য মোতায়াহর অনুমতি দিয়েছিলেন। অতপর তা হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। যদি আমি কারো সম্পর্কে জানি যে সে মোতায়াহ করে তবে তাকে পাথর মেরে ধ্বংস করবো অর্থাৎ তাকে ব্যভিচার করার শাস্তি প্রদান করা হবে। হযরত সালমা এবনে আকওয়া (রা) বর্ণনা করেন, আওতাছের যুদ্ধে তিন দিনের জন্য প্রিয়নবী (সা)এর সঙ্গে ছিলাম। সিরিয়ার আকাবা নামক স্থানে পৌছার পর আমরা কয়েকজন মহিলাকে পেলাম, তাদের সঙ্গে মোতায়াহ করলাম। তারা আমাদের উষ্ট্রে আরোহণ করবে এমন সময় প্রিয়নবী (সা) আগমন করলেন। তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমরা আরজ করলাম এদের সঙ্গে আমরা মোতায়াহ করেছি। তখন তিনি এত রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর চেহারা মোবারক লাল হয়ে গেল। তিনি দণ্ডায়মান হয়ে ভাষণ দিলেন। আল্লাহ পাকের হামদ বর্ণনার পর মোতায়াহ বিবাহ হারাম বলে ঘোষণা করলেনঅতঃপর আর এমন কাজ করনি, ভবিষ্যতেও আর করবো না


এরপরে নাস্তিকরা বলে, মুয়াত্তা মালিকের এই হাদিস থেকে জানা যায়, হযরত উমর মুতা বিবাহকারীকে ব্যাভিচারের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেন নি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, যেহেতু তিনি এই বিষয়ে পুর্ব ঘোষণা দেন নি, সেই কারণে সেই মুতা বিবাহকারীকে তিনি হত্যা করেন নি। কিন্তু মুতা বিবাহ নিষিদ্ধের নির্দেশ আল্লাহর নবী মুহাম্মদই যদি দিয়ে গিয়ে থাকেন, সেইখানে তো তার ঘোষণা দেয়া না দেয়া কোন গুরুত্ব বহন করে না। মুহাম্মদ সেটি নিষিদ্ধ করে থাকলে, তার কেন আবারো ঘোষণার প্রয়োজন?


মুয়াত্তা মালিক, বিবাহ সম্পর্কিত অধ্যায়, পরিচ্ছেদঃ ১৮. মুত‘আ বিবাহ প্রসঙ্গ, রেওয়ায়ত ৪২. খাওলা বিনত হাকিম (রাঃ) উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হইয়া বলিলেনঃ রবি’আ ইবন উমাইয়া (রাঃ) এক মুওয়াল্লাদা নারীকে মুত’আ বিবাহ করেন এবং সে নারী গর্ভবতী হয়। উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) ইহা শুনিয়া ঘাবড়াইয়া গেলেন এবং আপন চাদর টানিতে টানিতে বাহির হইলেন। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ মুত’আ নিষিদ্ধলোকদের মধ্যে যদি এ বিষয়ে আমি পূর্বে ঘোষণা করিতাম তবে এই (মুত’আর কারণে) ব্যভিচারীর প্রতি রজম (প্রস্তর নিক্ষেপ) করিতাম


শিপ্পাঞ্জির আত্মীয় নাস্তিকরা যদি একটু উপরে দেয়া হাদিসটিই মনযোগ দিয়ে পড়তো তাহলে এমন প্রশ্ন করতেই পারতো না। পাঠক আপনারা নিজেরাই হাদিসটি আরেকবার দেখুন,পড়ুন । উপরের হাদিসেই বলা হচ্ছে যে উমর (রা) ঘাবড়াইয়া গিয়েছিলেন এটা থেকে বুঝা যায় নবীজি (সা) যে মুতা বিয়েকে নিষিদ্ধ করেছিলেন এটা উনি ঘোষণা করতে ভুলে গিয়েছিলেন অথবা জানিয়ে দিতে মনে ছিল না। না হলে কেন ঘাবড়ে যাবেন? বা কেন এটা বলবেন যে পূর্বে ঘোষণা না হলে আমি রজম করতাম? যেহেতু উনি এটা ঘোষণা করতে ভুলে গিয়েছিলেন সেহেতু না জেনে মুতা বিয়েকারীদের শাস্তি দেন নাই। এভাবেও বলা যায় যারা মুতাবিয়েকারী ছিলেন তারা নবীজি (সা) এর মুতা নিষেধের কথা জানতে পারেন নাই এমনকি উমার (রা) থেকেও জানিয়ে দিতে খেয়াল ছিল না তাই উমার (রা) ঘাবড়ে গিয়ে বলেন যে লোকদের মধ্যে যদি এ বিষয়ে আমি পূর্বে ঘোষণা করিতাম তবে এই (মুত’আর কারণে) ব্যভিচারীর প্রতি রজম (প্রস্তর নিক্ষেপ) করিতাম। তবে হ্যাঁ, নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে গেছেন এটা সবাইকে জানিয়ে দেয়া অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে আর উমার (রা) ভুলে গেলেও পরবর্তীতে সাধ্য অনুযায়ী মনে করিয়ে দেন বা জানিয়ে দেন যে মুতা বিয়ে নবীজি (সা) নিষেধ করে গেছেন। উপরে আমি হযরত ওমর (রা) এর একটি ভাষণের কথা কিন্তু আগেই বলেছি উনি নিজে থেকে নতুন করে মুতা বিয়ে নিষেধ করেন নাই বরং নবীজি (সা) এর কথাকেই প্রচার করে সবাইকে জানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। পড়ুন আপনারা। এর জবাবে আরও পড়ুন, তফহীমুল কুরআন, ২৩ খণ্ড,১২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


……এর হারাম হওয়ার বিষয়টি স্বয়ং নবী (সা) থেকেই প্রমানিত। কাজেই হযরত উমার (রা) একে হারাম করেছেন একথা বলা ঠিক নয়। হযরত উমার (রা) এ বিধিটির প্রবর্তক বা রচয়িতা ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন কেবলমাত্র এর প্রচারক ও প্রয়োগকারী। যেহেতু এ হুকুমটি রাসুল (রা) তাঁর আমলের শেষের দিকে দিয়েছিলেন এবং সাধারণ লোকদের কাছে এটি পৌঁছেনি তাই হযরত উমর (রা) এটিকে সাধারন্যে প্রচার ও আইনের সাহায্যে কার্যকারী করেছিলেন।… 

হাকীমুল উম্মত, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ) প্রণীত ‘বয়ানুল-কুরআন’ এর সরল বঙ্গানুবাদ ‘তাফসীরে আশরাফী’ ১ খণ্ড, ৬০০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

পূর্বকালের ওলামায়ে কেরাম হইতে কেহ কেহ যে হালাল বলিয়াছেন বোধ হয় তখন পর্যন্ত উহারা হারাম হইয়া যাওয়ার সংবাদ পান নাই। আর কেহ কেহ (সুরা নিসার ২৪) এই আয়াতের সঙ্গে অর্থাৎ এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বলিয়াছেন, তাহারাও রহিত হওয়ার অবগতির পূর্বে আয়াতের তাফসীর স্বরূপ এইরুপ বলিয়া দিয়াছেন। হযরত ওমর (রা) যে মুতা বিবাহ হারাম করিয়াছেন বলিয়া কথিত আছে, তাহার অর্থ এই যে, পূর্বকৃত হারামকে তিনি প্রকাশ করিয়াছেন মাত্র। তিনি হারাম করেন নাই। ইবনে আব্বাসের এক রেওয়ায়েতে মুতা বিবাহ হালাল বলিয়া বুঝা যায় বটে; কিন্তু উহাও গত্যন্তর না থাকা অবস্থায়। আবার তিরমিযী সেই ইবনে আব্বাস হইতেই অন্য রেওয়ায়েতে মুতা বিবাহ হারাম বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ইহাতে বুঝা যায় যে, মুতা বিবাহ হালাল হওয়া তাহার পূর্ব মত ছিল, পরে হারাম হওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় তাহার মতের পরিবর্তন ঘটিয়াছেআর এখন মুতা হারাম হওয়ার উপর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের এজমা রহিয়াছে।

নাস্তিকরা বলে, আল্লামা সাইয়েদ আবু আলা মওদুদির তাফহীমুল কুরআন থেকে মুতা বিবাহ সম্পর্কিত একটি আলোচনা পড়ে নিই,তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবু আলা মওদুদি, ২৩ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১, ১২ = যেখানে বলা হচ্ছে, মুতাহ বিবাহ কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে নয়, হাদিসের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর প্রদত্ত মুতাহের বিধান নবী নিষিদ্ধ করেন কীভাবে? সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াতটি রহিত হওয়ার আয়াত কোথায়?


ইসলাম নিয়ে সঠিকভাবে লেখাপড়া না থাকলে এরকম নিন্মমানের প্রশ্ন করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নাস্তিকরা যদি কুরআন ঠিক মতো পড়তো তাহলে নিজেরাই বুঝে যেত যে নবীজি (সা)এর কথাও ইসলামের দলিল। মুতা বিয়ে নবীজি (সা) নিষেধ করেছেন কথা সত্য কিন্তু নবীজি (সা) নিজের থেকে কোনো কথা বলেন না বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে যা আদেশ পান সেটাই জানিয়ে দেন তাই যৌক্তিকভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে বলাই যায় যে নবীজি (সা) মুতা বিয়েকে নিষেধ করেছেন আল্লাহর ইশারাতেই। আল্লাহ এই ক্ষমতা নবীজি (সা)কে দিয়েছেন। আমি  কুরআনের আয়াত গুলো পেশ করে দিচ্ছি একইসাথে হাদিস গুলো আপনারা মন দিয়ে পড়ুন।


আল কুরআন, সুরা নাজম ৫৩ঃ৩,৪ আয়াত থেকে বর্ণিত,

এবং তিনি (নবী মোহাম্মদ (সা)) মনগড়া কথাও বলেন না। এটা তো ওহি যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।


আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ৮০ আয়াত থেকে বর্ণিত,

যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। 


আল কুরআন, সুরা আল ইমরান,৩ঃ৩১,৩২ আয়াত থেকে বর্ণিত,

বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।


আল কুরআন, সুরা হাক্কাহ, ৬৯ঃ৪৪ থেকে ৪৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

কুরআন বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে (মোহাম্মদ [সা]) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।


আল কুরআন, সুরা হাশর ৫৯ঃ৭ আয়াত থেকে বর্ণিত,

আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্ব জনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।


আল কুরআন, সুরা শুরা,৪২ঃ৫২ আয়াত থেকে বর্ণিত,

এমনিভাবে আমি আপনার কাছে এক ফেরেশতা প্রেরণ করেছি আমার আদেশক্রমে। আপনি জানতেন না, কিতাব কি এবং ঈমান কি? কিন্তু আমি একে করেছি নূর, যাদ্দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করি। নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন


সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব, হাদিসঃ ৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ“যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু সৃষ্টি করবে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে তা প্রত্যাখ্যাত বা অগ্রহণ যোগ্য।”(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী, মুসলিম ও ইবনে মাজাহ) আবু দাউদের বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ “আমার নিদের্শ ব্যতিরেকে যে ব্যক্তি কোন কর্ম সম্পাদন করবে, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।” মুসলিমের অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যে ব্যাপারে আমার নির্দেশ নেই, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত”-ihadis.com


রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৬৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আব্দুললাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে এবং যারা উৎকীর্ণ করায় এবং সে সব নারীদের উপর, যারা ভ্রূ চেঁছে সরু (প্লার্ক) করে, যারা সৌন্দর্যের মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’ জনৈক মহিলা এ ব্যাপারে তাঁর (ইবনে মাসঊদের) প্রতিবাদ করলে তিনি বললেন, ‘আমি কি তাকে অভিসম্পাত করব না, যাকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং তা আল্লাহর কিতাবে আছে? আল্লাহ বলেছেন, ‘‘রসূল যে বিধান তোমাদেরকে দিয়েছেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক’’-ihadis.com


সুতরাং নবীজি (সা) কুরআনের বিরুদ্ধে গিয়ে মুতা বিয়ে নিষেধ করেছেন এই কথা বলার কোনো সুযোগই নেই কারণ নবীজি (সা) যেই বিধান বর্ণনা করেন তা আল্লাহর আদেশেই করেন। এখন আসি এই প্রশ্নে যে সুরা নিসা ২৪ নাম্বার আয়াত রহিত হবার আয়াত কোথায়? সুরা নিসার ২৪ নাম্বার আয়াত রহিত হবার দলিল হিসেবে বলা হয়, আল কুরআনের, সুরা মুমিনুন ২৩ঃ৫,৬,৭ নাম্বার আয়াত। এখানে বর্ণিত হয়েছে,


এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে। 

তাফসীরে মাজহারী, ৩ খণ্ড, ৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

তিরমিজি হযরত ইবনে আব্বাসের বক্তব্যরুপে উল্লেখ করেছেন, মুতা ইসলামের প্রথমদিকে ছিল। যখন কোনো ব্যক্তি কোনো বস্তি বা গ্রামে গিয়ে প্রয়োজনীয় কর্ম নির্বাহে অসমর্থ হয়ে পড়তো, তখন সে যে কয়দিন সেখানে থাকতো সে কয়দিনের জন্য কোনো মহিলাকে মুতা করে নিতো। ওই মহিলা তার জিনিসপত্র হেফাজত করতো এবং প্রাত্যহিক কাজকর্ম সেরে দিতো। তারপরে নাজিল হয় সুরা মুমিনুনের এই আয়াত-তবে তাঁদের পত্নী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না হলে তারা তিরস্কৃত হবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন এখন স্ত্রী ও কৃতদাসীরা ছাড়া অন্য সবাই হারাম।

এছাড়া একই পৃষ্ঠায় এরকম বর্ণনাও রয়েছে

বায়হাকী ও অন্যান্যরা হযরত ইবনে মাসউদের বক্তব্য এবং আবু দাউদ ও বায়হাকী হযরত সাইদ বিন মুসাইয়েবের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছেন- মীরাস সম্পর্কে আয়াত মুতাকে রহিত করে দিয়েছে।


সুতরাং মিথ্যুকবাজ নাস্তিকদের এই কথা বলার সুযোগই নেই যে মুতা হারাম হবার বা রহিত হবার আয়াত নেই। আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন তাফসীরে মাজহারী,৩ খণ্ড, ২৯ থেকে ৩৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে সুরা মুমিনুনের আয়াত গুলো মাক্কি অথচ মুতা হালাল হবার বিষয় মাদানি তাহলে কিভাবে সুরা নিসার আয়াত রহিত হয়? এর চমৎকার জবাব দরসে তিরমিযীতে দেয়া হয়েছে। পড়ুন। দরসে তিরমিযী, ৩ খণ্ডে, ৪৭৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে


প্রসিদ্ধ অর্থে মুতাকে কুরআনের ওপরোল্লিখিত [সুরা মুমিনুন ২৩ঃ ৫,৬,৭] আয়াত মক্কা-মুকাররমাতেই হারাম করে দিয়েছিলো এবং এটি রীতিমত হারামই ছিলো। অবশ্য অনেক যুদ্ধে ভীষণ প্রয়োজনের খাতিরে এটি সীমিত সময়ের জন্য এর অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো। যেটি ছিল অবকাশ, হালাল নয়। যেমন শুকরের গোশত হারাম কিন্তু অপারগতার ক্ষেত্রে তা খাওয়া বৈধ হয়ে যায়। এ জন্য নয় যে এটি হালাল হয়ে গেছে; বরং এই কারণে যে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শরিয়ত এটির সীমিত অবকাশ দান করেছে। সারকথা, এমন অবকাশ হারামের সংগে একত্রিত হয়ে যায়। এই অবকাশের কারণে এটা বলা যায় না যে, এটির হারাম হওয়ার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। এই জবাবটির সমর্থন এর  দ্বারাও হয় যে, মুতার অনুমতি প্রায় সবগুলো বর্ণনায় রুখসত শব্দ ব্যাবহার হয়েছেম হিল্লত নয়। 


নাস্তিকরা বলে, মুতা নিষেধ করার হাদিসগুলো আসলেই কী নবীর বক্তব্য, নাকি মুহাম্মদের পরবর্তীতে ইবনে আব্বাস এবং কয়েকজন প্রখ্যাত সাহাবী বাদে বাদবাকী উমর, আলী এবং অন্যান্যদের সম্মিলিত মতামত? হাদিসে হযরত আলী থেকে যেই বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে স্পষ্ট যে, হযরত আলী মুতাহ বিবাহকে হারাম বলছেন খায়বারের যুদ্ধের সময়কালের কথা। খায়বারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে। এরপরে মক্কা বিজয়ের সময় আবারো মুহাম্মদ মুতা বিবাহের অনুমতি দেন, যেটি হয়েছিল ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ । যেটি সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর ৩২৯৫ তে পাওয়া যায়। এর আরো পরে আবার হুনায়নের যুদ্ধের পরে ঘটা আওতাসের যুদ্ধের সময় আবারো মুতাহ বিবাহের অনুমতি দেন। আমরা জানি হুনায়নের যুদ্ধ হয়েছিল ৬৩০ সালে, মক্কা বিজয়ের পরে। এরও পরে আওতাসের যুদ্ধ হয়েছিল, তার রেফারেন্স পাবেন ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৪ তে,। তখন আবারো মুতাহ বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৪


নাস্তিকদের এমন নিন্মমানের প্রশ্ন থেকে বিন্দুমাত্র প্রমাণ হয় না যে নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে যান নাই। মিথ্যুকবাজদের প্রশ্ন করতে চাই উমার (রা) কি বলেছিলেন নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করেন নাই? আলী (রা) কি বলেছিলেন নবীজি (সা) কিয়ামত পর্যন্ত মুতা বিয়ে করতে বলেছিলেন? ইবনে আব্বাস (রা) যেখানে উনার পূর্বের ফতোয়া ত্যাগ করে এই কথায় একমত পোষণ করেছেন যে নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে গেছেন সেখানে নাস্তিকদেরকে কেন মিথ্যার আশ্রয় নিতে হচ্ছে? এরকম প্রতারণা না করলে কি নাস্তিকদের হয় না? নাস্তিকরা কেন সত্যের আশ্রয়ে ইসলামকে দেখতে পারছে না? সততার সাথে ইসলামের সমালোচনা কেন করতে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে নাস্তিকগোষ্ঠী? নাস্তিকদেরকেই প্রমাণ দিতে হবে নবীজি (সা) ঠিক কোথায় বলেছেন যে মুতা বিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে? একইসাথে আরো প্রমাণ পেশ করতে হবে যে “মুতা বিয়ে নিষেধ নবীজি(সা) করেন নাই বরং বাদবাকী উমর, আলী এবং অন্যান্যরা মিলে বানিয়েছে”? পাঠক মন দিয়ে বুঝুন,আমি যদি বলি বিজ্ঞানী ডারউইন বিবর্তনবাদের কনসেপ্ট চুরি করেছে হিন্দুদের রামায়ন গ্রন্থ থেকে এমনকি মানুষ এবং বান্দরের ফসিলের ধারনাটিও চুরি করেছে ভগবান হনুমানজির ছবি দেখে বা তত্ত্ব পড়ে তাহলে কি আমার এই দাবি সত্য হবে যদি না আমি প্রমাণ পেশ করতে পারি? তেমনি ইসলাম না জানা গণ্ডমূর্খ নাস্তিকদের দাবি সত্য হবে না প্রমাণ পেশ না করলে। পাঠক আপনাদের সামনে আমি হাদিস তুলে ধরছি যা পড়লে আপনারা নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে গিয়েছিলেন আর সাহাবীরা সেটাই সবাইকে জানিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন অথবা নবীজি (সা) যে মুতা বিয়ে নিষেধ করেছিলেন সেটাই সাহাবীরা প্রচারপ্রসার করার চেষ্টা করেছেন। হাদিস গুলো পড়ুন।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫১১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইব্‌নু আবূ যিব থেকে বর্ণিতঃআয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ তার পিতা সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে কোন পুরুষ এবং মহিলা উভয়ে (মুত‘আহ করতে) একমত হলে তাদের পরস্পরের এ সম্পর্ক তিন রাতের জন্য গণ্য হবে। এরপর তারা ইচ্ছে করলে এর চেয়ে অধিক সময় স্থায়ী করতে পারে অথবা বিচ্ছিন্ন হতে চাইলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা জানি না এ ব্যবস্থা শুধু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল, না সকল মানুষের জন্য ছিল।[মুসলিম ১৬/২, হাঃ ১৪০৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৪) আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) বলেন, ‘আলী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এটা পরিষ্কার করে ব’লে দিয়েছেন, মুতা‘আ বিবাহ প্রথা রহিত হয়ে গেছে। [মুসলিম ১৬/২, হাঃ ১৪০৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৪)-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫১১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

হাসান ইব্‌নু মুহাম্মাদ ইব্‌নু ‘আলী ও তাঁর ভাই ‘আবদুল্লাহ্‌ তাঁদের পিতা থেকে বর্ণিতঃ‘আলী (রাঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) - কে বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বর যুদ্ধে মুত’আহ বিয়ে এবং গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খাওয়া নিষেধ করেছেন-ihadis.com


জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১২১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ খাইবারের যুদ্ধের দিন নারীদের সাথে মুত্আ বিয়ে করতে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।-ihadis.com [এই হাদিসের নিচেই বর্ণিত হয়েছে]- সাবরা আল-জুহানী ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও ভাবিঈগণ আমল করেছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে ‘মুত্আর অনুমতি আছে’ বলে বর্ণিত আছে। কিন্তু এটা করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন বলে তাকে জানানো হলে তিনি তার মত প্রত্যাহার করেন। মুত্আ বিয়ে বেশিরভাগ আলিমের মতে হারাম। একথা বলেছেন সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ, আহ্মাদ ও ইসহাকও।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫১১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইব্‌নু আবূ যিব থেকে বর্ণিতঃআয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ তার পিতা সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে কোন পুরুষ এবং মহিলা উভয়ে (মুত‘আহ করতে) একমত হলে তাদের পরস্পরের এ সম্পর্ক তিন রাতের জন্য গণ্য হবে। এরপর তারা ইচ্ছে করলে এর চেয়ে অধিক সময় স্থায়ী করতে পারে অথবা বিচ্ছিন্ন হতে চাইলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা জানি না এ ব্যবস্থা শুধু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল, না সকল মানুষের জন্য ছিল।[মুসলিম ১৬/২, হাঃ ১৪০৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৪) আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) বলেন, ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এটা পরিষ্কার করে ব’লে দিয়েছেন, মুতা‘আ বিবাহ প্রথা রহিত হয়ে গেছে-ihadis.com 

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩০৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত

ইয়াস ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্র থেকে বর্ণিতঃতিনি(পিতা) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আওত্বাস যুদ্ধের বছর তিন দিনের জন্য মুত্’আহ্ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেনঅতঃপর তিনি তা নিষিদ্ধ করেন-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাবী’ ইবনু সাবরাহ (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্র থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুত্‌’আহ্‌ (বিবাহ) করতে নিষেধ করেছেন-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাবী’ ইবনু সাবরাহ (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্র থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন মুত্’আহ্ নিষিদ্ধ করেন-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাবী’ ইবনু সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্র থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাক্কাহ্ বিজয়ের কালে স্ত্রীলোকদের সাথে মুত্’আহ্ করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর পিতা দু’টি লাল চাদরের বিনিময়ে মুত্’আহ্ করেছিলেন।-ihadis.com

নাস্তিকরা বলে,  ইবনে আব্বাস কিন্তু মুতা বিবাহের পক্ষে বলেছিলেন এবং উমরের ফতোয়াকে মেনে নেন নি। ইবনে আব্বাসকে সেই কারণে হত্যা করার হুমকিও দেয়া হয়েছিল। অনেকগুলো তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, ইবনে আব্বাস নাকি শেষ জীবনে মুতা বিবাহকে হারাম করার উমরের ফতোয়া মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু এই তথ্যটি সঠিক কিনা তা নিয়ে প্রচুর সন্দেহ আছে। কারণ ইবনে আব্বাস খুব দৃঢ়ভাবেই মুতা বিবাহের পক্ষে কথা বলতেন উনার পক্ষে এরকম করাটি খুবই অস্বাভাবিক বিষয়। 


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩২০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, উরওয়াহ্‌ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) মাক্কায় (ভাষণ দিতে) দাঁড়িয়ে বললেন, কিছু লোক এমন আছে আল্লাহ্‌ তা’আলা যেমন তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন তেমনি অন্তরকেও অন্ধ করে দিয়েছেন। তারা মুত্‌’আর পক্ষে ফাতাওয়া দেয়। এ কথা বলে তিনি এক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করলেন। সে ব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)। তাঁকে ডেকে বললেন, তুমি একটি অসভ্য ও কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি। আমার জীবনের শপথ! ইমামুল মুত্তাক্বীন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মুত্‌’আহ্‌ প্রচলিত ছিল। ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি নিজে একবার করে দেখুন। আল্লাহর শপথ! আপনি যদি তা (মুত্‌’আহ্‌) করেন তাহলে আপনার জন্য নির্ধারিত পাথর দিয়েই আপনাকে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) করব।ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, খালিদ ইবনুল মুজাহির ইবনু সাইফুল্লাহ (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি এক ব্যক্তির নিকট বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি এসে তাকে মুত্‌’আহ্‌ সম্পর্কে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করে। তিনি তাকে মুত্‌’আর অনুমতি দিলেন। ইবনু আবূ ‘আম্‌রাহ্‌ আল আনসারী (রাঃ) তাকে বললেন থামুন। সে বলল, কেন? আল্লাহর শপথ! ইমামুল মুত্তাকীন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তা করা হত।ইবনু আবূ ‘আম্‌রাহ্‌ (রাঃ) বললেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নিরুপায় অবস্থায় তার অনুমতি ছিল (যেমন নিরুপায় অবস্থায়) মৃত জীব, রক্ত ও শূকরের (গোশ্‌ত ভক্ষণের) ন্যায়। অতঃপর আল্লাহ্‌ তার দীনকে শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করলেন এবং তা নিষিদ্ধ করলেন।ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাবী’ ইবনু সাব্‌রাহ্‌ আল জুহানী আমাকে জানিয়েছেন যে, তাঁর পিতা বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমি দু’টি লাল চাদরের বিনিময়ে ‘আমির গোত্রের একটি স্ত্রীলোকের সাথে মুত্‌আহ্‌ করেছিলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মুত্‌আহ্‌ করতে নিষেধ করেন।ইবনু শিহাব (রহঃ) আরও বলেন, আমি রাবী’ ইবনু সাব্‌রাহ্‌কে ‘উমার ইবনু ‘আব্‌দুল ‘আযীয (রহঃ)-এর নিকট তা বর্ণনা করতে শুনেছি, আমি তখন (সেখানে) বসা ছিলাম।-ihadis.com

পাঠক আপনারা কি মনে হয় নাস্তিকরা উপরে সম্পূর্ণ তথ্য বলেছে? অবশ্যই না। কিভাবে? ইবনে আব্বাস (রা) নবীজি (সা) যে মুতা বিয়ে নিষেধ করে গিয়েছিলেন এটা জানতেন না কিন্তু উনি যখন তাহকিক করে নিশ্চিত হোন মুতা বিয়ে তো নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল তখন উনি নিজের ফতোয়া প্রত্যাহার করেছিলেন। ইবনে আব্বাস (রা) যে নিজের ফতোয়া ত্যাগ করেছিলেন এই ঘটনা কৌশলে নাস্তিকরা ঢেকে রেখেছে শুধুমাত্র উপরের অভিযোগটি করার জন্য অথচ এই ঢেকে রাখার ঘটনা বুঝে গেলেই কিন্তু উপরের ভ্রান্ত অভিযোগটি করার সুযোগ নেই।

সাহাবীরা উনাকে বুঝিয়েছিলেন যে মুতা বিয়ে নবীজি (সা) নিষেধ করে গেছেন। যেহেতু উনি নিশ্চিত ছিলেন না এটা নিষেধ নাকি নিষেধ না তাই মতানৈক্য করেছিলেন। মুতা বিয়েকে একের অধিকবার বৈধ করা হয় এবং অবৈধ করা হয় এরপরে কিয়ামত পর্যন্ত নিষেধ করে দেয়া হয় এখান থেকে এটা কিভাবে প্রমানিত হয় যে নবীজি (সা) মুতা বিয়েকে নিষেধ করেন নাই? ইবনে আব্বাস (রা)কে হযরত আলী (রা) বুঝিয়েছেন যে নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। এমনকি ইবনে আব্বাস (রা) নিশ্চিত হয়ে গেলে উনি নিজের ফতোয়া ত্যাগ করে তওবা করেন। পড়ুন।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩২৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি শুনতে পেলেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নারীদের সাথে মুত্‌’আর ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। আলী (রাঃ) বললেন, থামো, হে ইবনু ‘আব্বাস! কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন মুত্‌’আহ্‌ ও গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত নিষিদ্ধ করেছেন-ihadis.com

দরসে তিরমিযী,৩ খণ্ড,৪৭৫ ও ৪৭৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

সায়িদ ইবনে জুবাইর (রহ) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা) কে বললাম, আপনার ফতোয়া নিয়ে আরোহীরা সফর করেছে। এ সম্পর্কে কবিগণ বিভিন্ন কাব্য উচ্চারণ করেছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তারা কি বলেছে? জবাবে আমি বললাম, তাঁরা বললেন,শায়খকে আমি বললাম, যখন তার মজলিস দীর্ঘ হলো, হে নেককার! ইবনে আব্বাস (রা) এর ফতোয়ার ব্যাপারে আপনার আগ্রহ আছে? বান্ধবী মহিলার (মুতআ বিয়ের ব্যাপারে) আপনার আকর্ষণ আছে? সে মহিলা আপনার আশ্রয়স্থল হবে লোকদের ফিরে আসা পর্যন্ত। ইবনে আব্বাস (রা) তখন বললেন, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি এ ফতোয়া দেইনিএটাতো মৃত, রক্ত এবং শুকরের মাংসের মতো। এটি অপারগ ব্যক্তি ব্যতীত আর কারো জন্য হালাল নয়।- নাসবুর রায়াঃ৩/১৮১

ইবনে জুরাইজ (রহ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রা) হতে মুতআ সম্পর্কে যা বর্ণনা করে হয়, এ ব্যাপারে তিনি ব্যাখ্যা দিতেন। তথা মুতআ বিয়ে বৈধ হওয়ার ব্যাখ্যা দিতেন তিনি সে অপারগ ব্যক্তির জন্য যে মুতআ বিয়ের জন্য বাধ্য। দীর্ঘদিন সফরের কারণে এবং অর্থবিত্ত কম হওয়ার কারণে। তারপর তিনি এ ব্যাপারে বিরত থেকেছেন এবং এ সক্রান্ত ফতোয়া হতে দূরে থেকেছেন। ইবনে জুরাইজের এই উক্তি দ্বারা অপারগতার অর্থও স্পষ্ট হয়ে যায় এবং ইবনে আব্বাস (রা) এর প্রত্যাহারও প্রমানিত হয়ে যায় 

আরো পড়ুন। আশরাফুল হিদায়া ৩ খণ্ড, ৪৭ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত হয়েছে,

……….একবার হযরত আলী (রা) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে বলেছিলেন আপনার কি জানা  নেই যে, রাসুল (সা) খায়বারের দিন মুতাকে হারাম করে দিয়েছেন? একথা শ্রবণে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) তাঁর পূর্বোক্ত অভিমত প্রত্যাহার করেছেন এবং মুতা জায়েজ হওয়ার পক্ষে নিজের মতামত হতে তওবা করেছেন। সুতরাং হযরত ইবনে আব্বাস (রা) ও যখন স্বীয় মত পরিত্যাগ করলেন তখন তো মুতা হারাম হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়ে গেল।…….


তাফসীরে মাজহারী, ৩ খণ্ড, ৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

রবী বিন সালমানের মাধ্যমে বাগবী বর্ণনা করেন , ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, হালাল করার পর হারাম করা হয়েছে-মুতা ব্যতীত এরকম কোনো হুকুম আমার জানা নেই। হালাল করা হয়েছে দুবার, হারামও করা হয়েছে দুবার। এরপর হারাম করা হয়েছে চিরদিনের জন্য। কোনো কোনো আলেম বলেছেন মুতা রহিত করা হয়েছে তিনবার। কেউ কেউ বলেছেন তিনবারের অধিক। তাবুক যুদ্ধের সময় নিষিদ্ধ করার বর্ণনা দ্বারা একথা বলা যাবে না যে, তাবুকের পূর্বে অনুমতি ছিল। বরং এটাই সত্য যে, মুতা যে চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে গিয়েছে একথা তখনকার মুতাকারীরা জানতেন না। তাই মুতার কথা শুনে রাসুল (রা) কুপিত হয়েছিলেন। তাঁর পবিত্র চেহারার রঙ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলো এবং তিনি ভাষণদানের মাধ্যমে মুতার নিষিদ্ধতা সম্পর্কে পুনঃ ঘোষণা দিয়েছিলেন।


হাদিস থেকে সরাসরি পড়ে নেই আসুন। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ,হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (হা;ফি) সাহেবের লিখিত “তাফসীরে নুরুল কোরআন” ৫ খণ্ড, ৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 


হযরত সালমা এবনে আকওয়া (রা) বর্ণনা করেন, আওতাছের যুদ্ধে তিন দিনের জন্য প্রিয়নবী (সা)এর সঙ্গে ছিলাম। সিরিয়ার আকাবা নামক স্থানে পৌছার পর আমরা কয়েকজন মহিলাকে পেলাম, তাদের সঙ্গে মোতায়াহ করলাম। তারা আমাদের উষ্ট্রে আরোহণ করবে এমন সময় প্রিয়নবী (সা) আগমন করলেন। তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমরা আরজ করলাম এদের সঙ্গে আমরা মোতায়াহ করেছি। তখন তিনি এত রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর চেহারা মোবারক লাল হয়ে গেল। তিনি দণ্ডায়মান হয়ে ভাষণ দিলেন। আল্লাহ পাকের হামদ বর্ণনার পর মোতায়াহ বিবাহ হারাম বলে ঘোষণা করলেনঅতঃপর আর এমন কাজ করনি, ভবিষ্যতেও আর করবো না


পাঠক, নাস্তিকরা উপরে যেই হাদিস দেখিয়েছে সেই হাদিসেরই শেষের দিকে বর্ণিত হয়েছে ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, খালিদ ইবনুল মুজাহির ইবনু সাইফুল্লাহ (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি এক ব্যক্তির নিকট বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি এসে তাকে মুত্‌’আহ্‌ সম্পর্কে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করে। তিনি তাকে মুত্‌’আর অনুমতি দিলেন। ইবনু আবূ ‘আম্‌রাহ্‌ আল আনসারী (রাঃ) তাকে বললেন থামুন। সে বলল, কেন? আল্লাহর শপথ! ইমামুল মুত্তাকীন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে তা করা হত।ইবনু আবূ ‘আম্‌রাহ্‌ (রাঃ) বললেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নিরুপায় অবস্থায় তার অনুমতি ছিল যেমন নিরুপায় অবস্থায় মৃত জীব, রক্ত ও শূকরের গোশ্‌ত ভক্ষণের ন্যায়। অতঃপর আল্লাহ্‌ তার দীনকে শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করলেন এবং তা নিষিদ্ধ করলেন। এখান থেকেও পরিস্কার হয়ে যায় যে নবীজি (সা) নিষেধ করে দেয়া কথা যেসব সাহাবীরা জানতেন না তারা মুতা বিয়েকে জায়েজ মনে করতেন কিন্তু যখন তাদেরকে থামিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়, বুঝিয়ে দেয়া হয় যে নবীজি (সা) এই মুতা বিয়ে নিষেধ করে দিয়েছেন তখন এটি আর সেই সাহাবীরা করেন নাই। ইবনে আব্বাস (রা) যখন নিশ্চিত হোন যে মুতা বিয়ে নিষেধ তখনই উনি উনার নিজের ফতোয়া ত্যাগ করেন। 


ইবনে আব্বাস (রা) ছিলেন সত্যবাদী এই কারণে সত্য পেয়ে মেনে নিয়েছেন। সেই সাথে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ছিলেন নবী মোহাম্মদ (সা)এর একজন বিখ্যাত সাহাবী এবং নবী মোহাম্মদ (সা) এর চাচা আব্বাসের জ্যেষ্ঠ ছেলে। ইবনে আব্বাস ছিলেন একজন বিশিষ্ট সুবিজ্ঞ ফকিহ ও আল-কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় মুফাস্‌সির। মুসলিম বিশ্বে তাকে রইসুল মুফাস্‌সিরিন বা সাইয়্যিদুল মুফাস্‌সিরিন বলা হয়। ইবনে আব্বাস (রা) নবী মোহাম্মদ (সা) এর বিখ্যাত সাহাবী, যার জ্ঞানের প্রশংসা খোদ নবী মুহাম্মদ (সা) করতেন। নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে গিয়েছিলেন নিশ্চিত হয়েই তো ইবনে আব্বাস (রা) নবীজি (সা) এর কথাই মাথা পেতে মেনে নেন। সুতরাং হযরত ইবনে আব্বাস (রা) নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাবার যোগ্য এই কথা নিয়ে কোনো সংশয় নাই।


এরপরে নাস্তিকরা প্রশ্ন করে বলে, আশরাফুল হিদায়া, খণ্ড ৩, ৪৭ পৃষ্ঠায় যেখানে দেখা যাচ্ছে, ইমাম মালিক মুতা বিয়ে সম্পর্কে ভিন্নমত দিয়েছেনসেই সাথে এটিও বলা হয়েছে, মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সম্মিলিত ইজমার মাধ্যমে। সেটি নবীর নির্দেশ হয়ে থাকলে ইজমার প্রয়োজন কেন হলো?


এই প্রশ্ন যেই নাস্তিকরা করেছে তাদেরকে বলতে চাই আপনারা চোখের ডাক্তার দেখান। আশরাফুল হিদায়াতে শুধুমাত্র এতটুকু কথা নেই। এই বিষয় পরিস্কার করে বর্ণিত করা হয়েছে অথচ আপনারা পুরো লেখা কৌশলে সরিয়ে রেখে প্রশ্ন করলেন আমি এতে অবাক হইনি কারণ এভাবে তথ্যকে ধামাচাপা দিয়ে ইসলামের সমালোচনা আপনাদের অভ্যাস। এই অভ্যাস আপনারা পরিত্যাগ করতে পারছেন না। আশা করি যেই দিন মানুষে সম্পূর্ণ বিবর্তিত হয়ে যাবেন সেই দিন এই নির্লজ্জ অভ্যাস থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। পাঠক আপনাদের সামনে আমি পুরো মর্মার্থ পেশ করছি পড়ুন।


আশরাফুল হিদায়াতেই ৩ খণ্ডের ৪৭ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে,

মুতা বিবাহ বাতিল। মুতা বিবাহের অর্থ- পুরুষ কোনো স্ত্রীলোককে বলল, আমি এ পরিমাণ মালের বিনিময়ে এতদিনের জন্য তোমাকে ভোগ করবো। ইমাম মালেক (রহ) বলেন, এটা জায়েজ আছে। কেননা মূলত এটা জায়েজ ছিল, সুতরাং রহিতকারী সাব্যস্ত হওয়া পর্যন্ত বৈধতা অব্যাহত থাকবে। আমাদের দলিল হলো, সাহাবায়ে কেরামের ইজমা এর মাধ্যমে [মুতার বৈধতা] রহিত হওয়া সাব্যস্ত হয়েছে। এর এ কথা বিশুদ্ধরুপে প্রমানিত হয়েছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) সাহাবায়ে কেরামের মতের অনুকূলে স্বীয় মত প্রত্যাহার করেছেন। সুতরাং ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


ইমাম মালেক (র) এর মতেও মুতা বিয়ে হারাম অথচ উনার পুরো কথা না দেখিয়ে নাস্তিকরা প্রশ্ন করে দিল উনি ভিন্ন মত দিয়েছেন হায়রে বিবর্তিত নাস্তিকগোষ্ঠী। ইমাম মালেক (র) এর মতটি যে ভিত্তিহীন এই কথা আশরাফুল হিদায়াতেই বলে দেয়া হয়েছে অথচ দাগাদাগি করে নাস্তিকরা এমন ভাবে দেখিয়েছে যাতে পাঠকদের সেই দিকে দৃষ্টিই না যায় আর পাঠক যাতে সত্য জানতে না পারে। হায়রে মিথ্যুকবাজ নাস্তিকগোষ্ঠী! এরা যদি সত্যবাদী হতো, যুক্তিবাদী হতো, সততাশীল হতো তাহলে কতই না উত্তম হতো? মিথ্যাচার করার নোংরা বন্দিত্বের অভ্যাস থেকে নাস্তিকরা এখনো বের হতে পারছে না। এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হলে তো সত্য মেনে নিতে হবে যা নাস্তিকদের পক্ষে সম্ভব না। ইসলামের বিরুদ্ধে লাইভ করা পেশাদার নাস্তিকরা ইসলামের পক্ষে সত্য কথা বলবে? নিজেকে এই প্রশ্নটি আরেকবার করুন তো পাঠক। আর সাহাবায় কেরাম যে ইজমা প্রকাশ করেছে মুতা বিয়ের বিরুদ্ধে এই কথাও নাস্তিকরা প্রশ্ন করার সময় ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে, ভাবা যায়? নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে গেছেন এটা সাহাবায় কেরামের ইজমা ছিল অর্থাৎ উনারা সবাই একমত ছিলেন তবে যারা জানতেন না যেমন ইবনে আব্বাস (রা) উনিও পরিশেষে মুতা বিয়ের বিপক্ষে চলে আসেন যখন নিশ্চিত জানতে পারেন মুতা বিয়ে নিষেধ। তাছাড়া পাঠক ইমাম মালেক (র) যে ভিন্ন মত পোষণ করতেন যে মুতা বিয়ে জায়েজ এটি আসলে দুর্বল কউল এবং ভিত্তিহীন। এই বিষয় বিস্তারিত লেখাই আছে । আমি তুলে দিচ্ছি আপনারা পুরোটা মন দিয়ে পড়ুন। নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকুন মিথ্যুকবাজ নাস্তিকরা কেন কৌশলে এগুলো হাইলাইট করতে চাচ্ছে না? আশরাফুল হিদায়া ৩ খণ্ড, ৪৭ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত হয়েছে,


সকল ইমাম মুতা হারাম হওয়ার প্রবক্তা। অবশ্য ইমাম মালেক (র) ভিন্নমত পোষণ করেন। হিদায়া গ্রন্থকারের বর্ণনা মতে, ইমাম মালেক (র) বলেন ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুতা জায়েজ ছিল। সুতরাং তার বৈধতা ততক্ষণ পর্যন্ত বাকি থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো রহিতকারী না পাওয়া যায়। আর যেহেতু রহিতকারী এখনো আসেনি তাই মুতা বৈধই থাকবে। কিন্তু হিদায়া গ্রন্থকার (র) এর জবাবে বলেন যে, মুতা হারাম হওয়ার উপর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা রয়েছে। সুতরাং এটাই রহিতকারী। কিন্তু এ জবাবের উপর এ প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, মুতা হারাম হওয়ার উপর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা বলা ঠিক নয়। কেননা ইজমা এর জামানায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা) মুতা জায়েজ হওয়ার অভিমত পেশ করেছিলেন? এর জবাব হলো, একবার হযরত আলী (রা) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে বলেছিলেন আপনার কি জানা  নেই যে, রাসুল (সা) খায়বারের দিন মুতাকে হারাম করে দিয়েছেন? একথা শ্রবণে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) তাঁর পূর্বোক্ত অভিমত প্রত্যাহার করেছেন এবং মুতা জায়েজ হওয়ার পক্ষে নিজের মতামত হতে তওবা করেছেন। সুতরাং হযরত ইবনে আব্বাস (রা) ও যখন স্বীয় মত পরিত্যাগ করলেন তখন তো মুতা হারাম হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়ে গেল। 


মুতা খায়বারের পূর্বে হালাল ছিল, কিন্তু খায়বারের দিন রাসুল (রা) গৃহপালিত গাধার গশত ও নারীদের সাথে মুতাকে হারাম করে দিয়েছেন। তারপর মক্কা বিজয়ের বছর আওতাসের দিনে তিনদিনের জন্য মুতা হালাল করা হয়েছিল। পরে চতুর্থবার কিয়ামত পর্যন্ত হারাম করে দিয়েছেন। এখানে এ কথাও জানা থাকা আবশ্যক যে, হিদায়া গ্রন্থকার ইমাম মালেক (র) এর মাজহাব বর্ণনা করতে গিয়ে ভ্রমতার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ মালেকীগনের কোনো কিতাবে মুতা বৈধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়নি। স্বয়ং ইমাম মালেক (র) তাঁর মুয়াত্তার মধ্যে হযরত আলী (রা) এর হাদিস বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ নবী করীম (সা) খায়বার দিবসে মুতা বিবাহ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন- [আইনী শরহে হিদায়া]


ইমাম মালেক (র) এর আদত বা বৈশিষ্ট হলো তিনি তাঁর মুয়াত্তায় সে হাদিসটিই আনয়ন করেন যা তাঁর মাজহাব। সুতরাং উক্ত হাদিসটিও মুয়াত্তাইয় স্থান পাওয়ায় এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, ইমাম মালেক (র) ও মুতা হারাম হওয়ার প্রবক্তা


ইমাম মালেক (র) এর নিজের গ্রন্থেও উনি হাদিস এনেছেন মুতা বিবাহের নিষেধ বিষয় আর উনার বইতে যা বর্ণিত হয়েছে সেটাই উনার মাজহাব তাই এই হিসেবে বলাই যায় ইমাম মালেক (র) থেকে যে কউল পাওয়া যায় সেটি ভিত্তিহীন। মুয়াত্তা মালেক গ্রন্থ থেকেই সরাসরি হাদিস পেশ করে দিচ্ছি।


মুয়াত্তা মালিক, হাদিসঃ ১১৪০, পরিচ্ছেদ ১৮, রেওয়াতের ৪১ থেকে বর্ণিত, 

আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বর দিবসে মুত'আ বিবাহ করিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং তিনি গৃহপালিত গাধার গোশত আহার করিতেও নিষেধ করিয়াছেন।-hadithbd.com


নাস্তিকরা প্রশ্ন করে, মুতা বিয়ের বিরুদ্ধে যদি সবাই একমত পোষণ করেন তাহলে ইসলামের চার মাজহাবের অন্যতম ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল মুতাহকে হারাম মনে করেন নি, প্রয়োজন সাপেক্ষে জায়েজ মনে করেছেন কিন্তু কেন? তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫


পাঠক আপনারা ভালো করেই জানেন নাস্তিকরা মিথ্যুকবাজ তাই পুরো তথ্য না দেখিয়ে কৌশলে অর্ধেক দেখিয়ে প্রশ্ন করা এদের কাছে কঠিন কিছু নয়। নাস্তিকরা যদি পরবর্তী পৃষ্ঠায় মন দিয়ে পড়তো তাহলেই বুঝে যেত যে শক্তিশালী মত কোনটি আর দুর্বল কোনটি । অথচ নাস্তিকরা না আপনাদেরকে সত্য কথা বলে আর না তথ্যের সঠিক ব্যাখ্যা দেয়। আসুন দেখি সেই পৃষ্ঠায় এবং পরবর্তী পৃষ্ঠায় কি বলা হয়েছে।

 

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) সহ সাহাবাদের একটি দল হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, প্রয়োজন ও পরিস্থিতি সাপেক্ষে উহা জায়েজ রহিয়াছে। ইমাম আহমদ (র) হইতেও উহা বর্ণিত হইয়াছে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩ খণ্ড,২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

মুজাহিদ (র) বলেন, ইয়া মুতআ বিবাহ সম্পর্কে অবতীর্ণ হইয়াছে। কিন্তু জমহুর এই মতের বিরোধী। তবে আমীরুল মুমিনীন হজরত আলী ইবন আবু তালিব (রা) হইয়ে সহিহদ্বয়ের বর্ণিত হাদিসটিই সর্বাপেক্ষা উত্তম। সেই হাদিসে আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবু তালিব (রা) বলিয়াছেন যে রাসুল (রা) খায়বার যুদ্ধের সময় মুতাআ বিবাহ করিতে এবং পালিত গাধার গোশত খাইতে নিষেধ করিয়াছেন

এটা পরিস্কার যে সবচেয়ে উত্তম ব্যাখ্যা হচ্ছে আলী (রা) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা) মুতা বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। আমরা জানি ইবনে আব্বাস (রা) নিজের ফতোয়া ত্যাগ করে এই মত পোষণ করেছিলেন যে মুতা বিয়ে ইসলামে সব সময়ের জন্য নিষেধ। তাই বলাই যায় যে, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই উপরে ইমাম আহমদ (র) মুতাকে হারাম মনে করেন নাই তাহলেও আসলে কিছু আসে যায় না কারণ ইবনে আব্বাস (রা)র নিজের ফতোয়া ত্যাগ করা অটোমেটিক ভাবে এটি প্রমাণ করে দেয় যে মুতা ইসলামে নিষিদ্ধ, এটাই চুরান্ত। আমরা এটাও জানি যে যেসব সাহাবীরা পরবর্তীতে জেনেছিলেন যে মুতা বিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত নিষেধ তারা এরপরে আর মুতা বিয়ে করেন নাই এমনকি জায়েজও বলেন নাই। সুতরাং নাস্তিকরা কৌশলে ইসলামের যেই বদনাম করার পয়তারা করেছে সেটারও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।


নাস্তিকরা বলে, সুন্নী ইসলামের একটি বড় অংশ মনে করে, সেই সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর আকীদা হচ্ছে, ইসলাম একে প্রাথমিক সময়ে হালাল ঘোষণা করলেও, পরবর্তী সময়ে হারাম ঘোষণা করে। তবে, বেশিরভাগ অংশ একে নিষিদ্ধ মনে করলেও কিছু কিছু মুসলিম স্কলার মুতা বিবাহকে বৈধ মনে করেছেন। তাফসীর আল কাবীরের লেখক ফখর আদ-দীন আর-রাযী বা ফখরুদ্দীন আল রাযি তার তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বেশিরভাগ সুন্নী আলেমই মুতা বিবাহকে অবৈধ মনে করলেও কিছু সুন্নী আলেম মুতাকে এখনো বৈধ মনে করেন। সেই সাথে, সুন্নী আলেমগণ মিসইয়ার নিকাহ এবং উর্ফি নিকাহকেও অনেক সময় বৈধতা দিয়েছেন, যেগুলো আসলে মুতা বিবাহের মতই। অনেকটা পশ্চিমা বিশ্বে প্রচলিত লিভিং টুগেদারের মত। শিয়া মুসলিমদের মধ্যে বড় অংশ মনে করে, এটি সর্বসময়ের জন্য হালাল, যেহেতু খোদ নবী নিজেই কাজটি করেছেন


কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত যেই মত যাবে সেটা বাতিল বলে গণ্য হবে। বেশি হোক বা কম। কে কি মনে করলো বা মনে করলো না সেটা দিয়ে ইসলামের কিছুই আসে যায় না। যেখানে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে মুতা বিবাহ কিয়ামত পর্যন্ত বাতিল সেখানে এর বিপরীত কেউ মত দিলে সেটাও বাতিল। শিয়াদের ধারনা মিথ্যা কারণ নবীজি (সা) থেকে এমন প্রমাণ নেই যেখানে উনি বলেছেন মুতা বিয়ে সব সময়ের জন্য বৈধ বরং উল্টো বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই নাস্তিক মুক্তমনাদের প্রিয় গোষ্ঠী শিয়াদের কথা দিয়ে যা বুঝাতে চেয়েছে তা মিথ্যাচারে ভরা। মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ) লিখিত  “বোখারী শরীফ,(বাংলা তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা)”, ৬ খণ্ড,১৯৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


হযরত নবী (সা) হইতে আলী (রা) সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়াছেন যে মুতা নিকাহের অনুমতি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল বটে, কিন্তু পরে স্বয়ং নবী (সা) উহা মানছুখ বা রহিত ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন। উল্লেখিত হাদিসখানা অতি চমৎকার। হাদিসখানা আলী (রা) কর্তৃক বিশেষভাবে বর্ণিত। শিয়া সম্প্রদায় আলী (রা) ভক্ত বলিয়া দাবী করে অথচ তাহারা মুতা বিবাহের পক্ষপাতি 


পাঠক নাস্তিকরা আরো যেভাবে মিথ্যাচার করে থাকে পড়ুন।


নাস্তিকরা বলে,যুদ্ধবন্দী গনিমতের মাল হিসেবে অসংখ্য দাসী পাওয়ায় মুহাম্মদের সাহাবীগণ সেইসব দাসীদেরই ধর্ষণ করতে পারতো তখন আর পয়সা দিয়ে মুতা বিবাহের দরকার হতো না। তাই পরিবর্তী সময়ে মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এরপরে আবারো মুতা বৈধ হয়, এভাবে কয়েকবারই বৈধ এবং অবৈধ হয়।


এমন একটি প্রমাণও কি মিথ্যুকবাজ নাস্তিকরা পেশ করতে পেরেছে যে দাসীদের ধর্ষণ করতো? অবশ্যই না। তাহলে কেন এই মুক্তমনা মিথাচার করতে হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা) ও উনার সাহাবীদেরকে খারাপ করে দেখাতে? কাদেরকে খুশি করতে? কাদেরকে বাঁচাতে? ইসলামের কোথায় বর্ণিত আছে যে নারীদেরকে ধর্ষণ করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে? নবী মোহাম্মদ (সা) কোন হাদিসে আদেশ দিয়েছেন তোমরা যুদ্ধবন্দিনী নারীদেরকে ধর্ষণ করো? কেন নবীজি (সা) বিষয় নাস্তিকদের মিথ্যাচার করতে হচ্ছে? কেন? নাস্তিকরা কবে অমানুষ থেকে মানুষে বিবর্তিত হবে আর ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝবে?


নাস্তিকরা বলে, এটি কোন মুসলিমই অস্বীকার করতে পারবে না যে, স্বয়ং নবী মুহাম্মদই এই কাজ করেছিলেন। আজকে যদি তারা মুতা বিবাহকে অনৈতিক এবং অসভ্য কাজ বলে মনে করেন, তারা কী মুহাম্মদের করা মুতা বিবাহটিকেও অসভ্য এবং অনৈতিক কাজ মনে করেন?


এসব প্রশ্ন নিয়ে আসে ইসলামের বিরুদ্ধে? হায়রে নাস্তিকগোষ্ঠী! নাস্তিকরা যদি মানুষের মতো বুদ্ধি প্রয়োগ করতে জানতো তাহলে আমাকে আর বলতে হতো না যে,যখন জায়েজ ছিল তখন নবী মোহাম্মদ (সা) করেছেন তাই সেটা বৈধই ছিল কিন্তু যখন জায়েজ ছিল না তখন করেন নাই ব্যাস। একটি উদাহরণ দিলে সহজে বুঝতে পারতেন। আমরা জানি শেখ মুবিজুর রহমান উনার স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন খুবই অল্প বয়সে কিন্তু আমরা জানি এখন বাংলাদেশের বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৮ তাহলে এখন নাস্তিকদের মতো কোনো গাধা যদি বলে শেখ মুজিবুর রহমান ভুল কাজ করেছেন বা বাল্যবিবাহ করেছেন তাহলে কি এই কথা অযৌক্তিক হবে না? অবশ্যই হবে। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান যখন বিয়ে করেছিলেন তখন বাংলাদেশে বিয়ের আইন মেয়েদের ১৮ করা হয় নেই তেমনি নবীজি (সা) যখন মুতা করেছিলেন তখন মুতা জায়েজ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে যখন মুতা জায়েজ করা হয় নাই তখন উনি করেন নাই ব্যাস। মুতা বিয়ে ইসলামে প্রথম যুগে বৈধ ছিল পরবর্তী সময়ে নিষেধ করে দেয়া হয় এটা তো ইসলামিক প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তাহলে নাস্তিকরা কোন যুক্তিকে এটা বুঝাতে চাইছে যে নবী মোহাম্মদ (সা) বা উনার সাহাবীরা মুতা বিয়ে করেছেন তা দেখাতে? আর দেখালেই কি যৌক্তিকভাবে খারাপ প্রমাণ করা সম্ভব? যখন জায়েজ ছিল তখন করেছে কিন্তু যখন অবৈধ করা হয়েছে তখন করেন নাই এখানে সমস্যা কোথায়? পরবর্তীতে নিষেধ করে দেয়া হয় দেখে প্রথমবার যে জায়েজ অবস্থায় করা হয়েছিল ইসলামের দৃষ্টিতে সেটাকে খারাপ বলার যুক্তি থাকছে না যেহেতু প্রথমবার জায়েজ ছিল। কিন্তু শেষের দিকে যেহেতু নিষেধ করে দেয়া হয়েছে সেহেতু এরপরে করলে তাহলে নিন্দা করা হবে। তবে না জেনে করে ফেললে সেটা ভিন্ন কথা। বোঝা গেছে? তাছাড়া নবীজি (সা) বা উনার সাহাবিগণ যারা প্রথম অবস্থায় মুতা বিয়ে করেছিলেন সেটাকে কি নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে খারাপ বলার ভিত্তি আছে? অবশ্যই না। নবীজি (সা) মুতা বিয়ে করুক বা না করুক, সাহাবায়কেরাম মুতা বিয়ে করুক বা না করুক, এটা জায়েজ থাকুক বা না থাকুক নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে তাতে কিছুই আসে যায় না এমনকি ইসলামের দৃষ্টিতেও এখানে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে নাস্তিকদের আসলে যৌক্তিক কোনো ভিত্তিই নাই এই মুতা বিয়ে নিয়ে সমালোচনা করার। 

উপসংহারঃ  ইসলামের দৃষ্টিতে পরিস্কার যে মুতা বিয়ে প্রথমে বৈধ হলেও পরবর্তীতে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। যখন মুতা বিয়ে বৈধ ছিল তখন করা হয়েছে আর যখন জানা গেছে এটি নিষেধ তখন করা হয় নাই। যারা জানতেন না মুতা বিয়ে নিষেধ ছিল তখন তাদেরকে নবীজি (সা) নিষেধ করেছেন বাণী শুনিয়ে দেয়া হয়। ইবনে আব্বাস (রা)ও যখন জানতে পারেন যে নবীজি (সা) মুতা বিয়ে নিষেধ করে দিয়েছিলেন তখন উনি নিশ্চিত হয়ে উনার পূর্বের ফতোয়া ত্যাগ করে একমত পোষণ করেন যে মুতা বিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত নিষেধ। তথ্যকে বিভিন্নভাবে দেখিয়ে নাস্তিকরা ইসলামকে বদনাম করার যেই পয়তারা করতে চাচ্ছিল তার উল্টো হলো মানে ইসলামের সমালোচনা তো করতে পারেইনি উল্টো নাস্তিকদের প্রতারণা, ভণ্ডামি, মূর্খতা, মিথ্যুকবাজীতা প্রকাশ পেতেই থাকছে, সামনেও থাকবে। নাস্তিকরা নিজেদেরকে যতোটা স্মার্ট মনে করে ওরা ঠিক ততটাই গাধা। নাস্তিকরা দ্রুত চিন্তাশীল মানুষে বিবর্তিত হোক এই কামনা করি। কারণ নাস্তিকরা মানুষে পরিপূর্ণভাবে বিবর্ততিত না হলে সত্যের মর্যাদা অনুধাবন করতে পারবে না।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post