ইসলাম একজন মানুষকে কি শিক্ষা দেয়?

ইসলাম একজন মানুষকে কি শিক্ষা দেয়?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

= বাবা মায়ের সাথে উত্তম আচরন করাঃ এমনকি তাঁদের বন্ধু বান্ধুবিদের সাথেও ভাল ব্যাবহার করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ১৮৯৭, হাসান হাদিসঃ বাহ্‌য ইবনু হাকীমের দাদা [মু‘আবিয়া ইবনু হাইদা (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! কোন্‌ ব্যক্তির সাথে আমি উত্তম আচরণ করব? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তারপর তোমার বাবার সাথে, তারপর নিকটাত্মীয়তার ক্রমানুসারে উত্তম আচরণ করবে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৮৯৯, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯০৬, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লা্ল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সন্তান কোন অবস্থাতেই তার বাবার সম্পূর্ণ অধিকার আদায়ে সক্ষম নয়। কিন্তু সে তার বাবাকে গোলাম অবস্থায় পেলে এবং তাকে কিনে মুক্ত করে দিলে তবে সামান্য অধিকার আদায় হয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯০৩, সহিহ হাদিসঃ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ সর্বাধিক সাওয়াবের কাজ হচ্ছে বাবার বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও সম্পর্ক বজায় রাখা।

=খালার সাথে উত্তর ব্যাবহার করাঃআত্মীয়তা বজায় রাখাঃ

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ১৯০৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খালা হলো মাতৃস্থানীয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯০৮, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সমানুরুপ ব্যবহারের মনোভাব নিয়ে সম্পর্ক রক্ষাকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, বরং কেউ কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলেও সে যদি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে তবে সে-ই হচ্ছে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯০৯, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে যেতে পারবে না।

= সন্তানদের প্রতি ভালবাসা, আদর করা এবং বড়দের সম্মান করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯১১, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল-আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলেন যে, তিনি হাসানকে চুমু খাচ্ছেন। ইবনু আবী উমার তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, তিনি হাসান অথবা হুসাইনকে চুমু খেয়েছেন। আল-আকরা (রাঃ) বলেন, আমার দশটি সন্তান আছে কিন্তু আমি তাদের কাউকে কখনো চুমু দেইনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি দয়া-অনুগ্রহ করে না সে দয়া-অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয় না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯১৯, সহিহ হাদিসঃ যারবী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ একজন বয়স্ক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে আসে। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২০, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের সন্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

= এতিমদের সাহায্য করা, বিধবা ও মিসকিনদের ভরণ পোষণ দেয়া

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯১৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী এই দুই আঙ্গুলের অনুরুপ একসাথে জান্নাতে বসবাস করব। এই কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখান।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৬৯, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীনদের ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টা সাধনকারী আল্লাহ্‌ তা‘আলার পথে জিহাদকারী অথবা সারাদিন রোযা পালনকারী ও সারারাত নামায আদায়কারী সমান সাওয়াবের অধিকারী।

=এক মুসলিম আরেক মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করাঃ একত্রে থাকা, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের প্রাসাদ স্বরূপ,মান সম্মান হেফাজত করা, মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা বলা পরিত্যাগ করা নিষেধ,

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৫, সহিহ হাদিসঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে নামায বাস্তবায়ন, যাকাত আদায় এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার শপথ (বাই‘আত) করেছি।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৬, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধর্ম হচ্ছে কল্যাণ কামনার নাম। একথাটি তিনি তিনবার বললেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! কার কল্যাণ কামনা করা? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌, তাঁর গ্রন্থের, মুসলমানদের নেতৃবর্গের এবং মুসলমান সবর্সাধারণের।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৭, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার সাথে কোনরকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তার প্রসঙ্গে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমান করবে না। প্রত্যেক মুসলমানের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্তের (জীবনের) উপর হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলমানের উপর হারাম। তাক্বওয়া এখানে (অন্তরে)। কেউ মন্দ বলে প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজন মু’মিন ব্যক্তি অন্য মু’মিনের জন্য একটি সুদৃঢ় প্রাসাদস্বরূপ, যার একটি অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৩১, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মানের উপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার মুখমন্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৩২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির জন্য তিনদিনের বেশি সময় ধরে তার ভাইয়ের সাথে কথা-বার্তা ও মেলামেশা ত্যাগ করা জায়িয নয়। তাদের দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, অথচ একজন এদিকে এবং অন্যজন আরেক দিকে মুখ সরিয়ে নেয়। তাদের দুজনের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দেয় সে-ই উত্তম।

= হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করা এবং মানুষকে ভাল উপদেশ দ্বারা সংশোধন করা,বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা না করা,অহংকার না করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৩৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা একজন অন্যজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না, পরস্পরে শত্রুতা পোষণ করো না, পরস্পরকে ঘৃণা করো না, পরস্পর হিংসা করো না, বরং আল্লাহ্‌ তা‘আলার বান্দাহগণ! পরস্পর ভাই হয়ে থাকো। কোন মুসলমান ব্যক্তির পক্ষেই বৈধ নয় তার ভাইকে তিনদিনের অধিক সময় ধরে ত্যাগ করে থাকা।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৩৬, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুধু দুই প্রকারের লোকই হিংসাযোগ্য। (এক) যে লোককে আল্লাহ্‌ তা‘আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা হতে দিন-রাত আল্লাহ্‌ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। (দুই) যাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন এবং সে দিন-রাত এর বাস্তবায়নে নিযুক্ত থাকে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৩৮, সহিহ হাদিসঃ উম্মু কুলসুম বিনতু উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি লোকদের মাঝে সংশোধন করার চেষ্টা করে সে মিথ্যাবাদী নয়। সে (যা বলেছে) ভাল বলেছে অথবা ভালকাজের অগ্রগতি ঘটিয়েছে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৩৯, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়। (এক) স্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তার সাথে স্বামীর কিছু বলা, (দুই) যুদ্ধের সময় এবং (তিন) লোকদের পরস্পরের মাঝে সংশোধন করার জন্য মিথ্যা কথা বলা। অধঃস্তন রাবী মাহমূদ তার হাদীসে বলেছেন, তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা ঠিক নয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪০, হাসান হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। যে লোক অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৯৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সরিষার দানা সমপরিমাণ অহংকারও (সামান্যতম) যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর সরিষার দানা সমপরিমান ঈমানও যার অন্তরে আছে সে জাহান্নামে যাবে না।

=মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করাঃ হক সে অমুসলিম

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না তাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও দয়া করেন না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৩, হাসান হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবুল কাসিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

= খাদেমদের সাথে ভাল ব্যাবহার করা, ভাল পরামর্শদাতাকে সম্মান করা, কোন নারীকে এবং কোন খাদেমকে মারধর না করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৯, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তার কথা শুনে রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। সে আবার বললঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তিনি বললেনঃ প্রতিদিন সত্তরবার।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭৪৫, সহিহ হাদিসঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরামর্শদাতা হলো আমানতদার।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭৪৬, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, তাকে বিশ্বস্ততা রক্ষা করতে হবে ।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৭৮৬, সহিহ হাদিসঃ আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন খাদেমকে এবং কোন মহিলাকে মারধর করেননি।

=প্রতিবেশির অধিকার হক সে অমুসলিম

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এতে আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট সঙ্গীদের মাঝে উত্তম সঙ্গী হল সেই ধরনের ব্যক্তি যে তার নিজ সঙ্গীর নিকট উত্তম। আল্লাহ্‌ তা‘আলার দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের মাঝে উত্তম হল সেই ধরনের প্রতিবেশী যে তার নিজের প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৭২, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় নীরব থাকে।

=উপহার আদান প্রদান করা,উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হক সে অমুসলিম

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৩, সহিহ হাদিসঃ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপহার নিতেন এবং বিনিময়ে উপহার প্রদান করতেন।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের প্রতি যে লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রতিও সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮১১, সহিহ হাদিসঃ নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অথবা যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।

= সবার সাথে এমনকি অমুসলিমদের সাথে ভাল ব্যাবহার করা, মানুষদের পানি পান করানো

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮৭, হাসান হাদিসঃ আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভয় কর, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৮৪, হাসান হাদিসঃ সা’দ বিন উবাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন প্রকারের দান সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ পানি পান করানো ।

= কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত মানুষ এলে তাঁকে সম্মান করা হক সে অমুসলিম

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭১২, হাসান হাদিসঃ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের নিকট কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি এলে তোমরা তাকে যথাযথ সম্মান করো ।

= মানুষের সাথে মিলে মিশে বসবাস করা,ঝগড়া না করা হক সে অমুসলিম

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তখন তাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করবে, কঠিন করবে না।

=অনুমতি নিয়ে বসা, দয়া করা, হক সে অমুসলিম

* সুনানে আবু দাউদ। হাদিসঃ ৪৮৪৪, হাসান হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উভয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ দু’ব্যক্তির মাঝখানে বসবে না ।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৪১, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দয়াশীলদের উপর করুণাময় আল্লাহ্‌ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

=সমাজের উন্নতির জন্য সকল প্রকার ভাল কাজ করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৬, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথ হতে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৭, সহিহ হাদিসঃ বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সম-পরিমাণ সাওয়াব।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৮, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন এক সময় একজন লোক পথ দিয়ে চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেল। সে তা তুলে ফেলে দিল। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার এ কাজকে ক্ববূল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৬০, সহিহ হাদিসঃ বিনতু আবূ বাক্‌র তনয়া আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! যুবাইর (রাঃ) আমাকে যা কিছু দেন তা ব্যতীত আমার কাছে কিছু নেই। আমি কি তা হতে দান করব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তুমি থলের ফিতা বেঁধে রাখবে না, অন্যথায় তোমার জন্যও (আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ হতে) বেঁধে রাখা হবে (তোমার রিযিকের থলে)।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৯, হাসান হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক কোন কথা বলার পর আশেপাশে তাকালে তার উক্ত কথা (শ্রবণকারীর জন্য) আমানাত বলে গণ্য।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৮১, সহিহ হাদিসঃ আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের পথনির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারি। তিনি বলেনঃ মুসলমানদের যাতায়াতের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলো।

=নিজের চরিত্র উন্নত করা, পরিবারের কাছে সম্পদ খরচ করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৬৪, হাসান হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মু’মিনের দাঁড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোন জিনিস হবে না। কেননা, আল্লাহ্‌ তা‘আলা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০১০, হাসান হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম আচরণ, দৃঢ়তা-স্থিরতা ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে নাবুওয়াতের চব্বিশ ভাগের একভাগ।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ মুখ ও লজ্জাস্থান।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০১৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম তোমাদের মধ্যে সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামাত দিবসেও আমার খুবই নিকটে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামাত দিবসে আমার নিকট হতে অনেক দূরে থাকবে তারা হলোঃ বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! বাচাল ও ধৃষ্ট-দাম্ভিকদের তো আমরা জানি কিন্তু মুতাফাইহিকূন কারা? তিনি বললেনঃ অহংকারীরা।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ সদাচার ও উত্তম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) বলেন, তা হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, উত্তম জিনিস দান করা এবং কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৬৫, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যক্তির ধন-সম্পদ ব্যয় সাদকারূপে গণ্য।

=মেহমানদারিতা করা, তাদেরকে সর্বচ্চ সম্মান দেয়া

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৬৭, সহিহ হাদিসঃ আবূ শুরাইহ্‌ আল ‘আদাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার উভয় চোখ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছে এবং আমার উভয় কান তাঁকে বলতে শুনেছে। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ ও আখিরাতের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে, তাকে জা-ইযা দেয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, জা-ইযা কি? তিনি বলেনঃ একদিন ও একরাতের পাথেয় সাথে দেয়া। তিনি আরো বলেনঃ মেহমানদারী তিনদিন পর্যন্ত। এর অতিরিক্তটুকু সাদকারূপে গণ্য। আল্লাহ্‌ তা‘আলা ও আখিরাতের উপর সে লোক ঈমান রাখে যে যেন উত্তম কথা বলে, আর না হয় চুপ থাকে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৬৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মেহমানদারী তিনদিন পর্যন্ত এবং জা-ইযা হল একদিন ও একরাতের পাথেয় প্রদান। এরপর তার জন্য যা ব্যয় করা হবে তা সাদকারূপে গণ্য। অতিথিসেবক বিরক্ত হতে পারে-কোন মেহমানের পক্ষেই এতটা সময় সেখানে থাকা বৈধ নয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৬, সহিহ হাদিসঃ আবুল আহ্‌ওয়াস (রহঃ) হতে তার বাবা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি কোন লোককে অতিক্রম করি, সে আমাকে পানাহার করায় না, মেহমানদারীও করে না। যদি ঐ লোকটি আমাকে অতিক্রম করে, আমি কি একইভাবে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারি? তিনি বললেনঃ না, তুমি তার মেহমানদারী কর। (বর্ণনাকারী বলেন) আমাকে খুবই পুরাতন পোশাক পরে থাকতে দেখে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার ধন-দৌলত আছে কি? আমি বললাম, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাকে উট, ছাগল-ভেড়া প্রভৃতি সকল প্রকার সম্পদই দিয়েছেন। তিনি বললেঃ তা তোমার শরীরে পরিলক্ষিত হওয়া উচিত।

= সবসময় হাসি মুখে কথা বলা এবং মিথ্যা পরিত্যাগ করা সব সময় সত্য কথা বলা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭০, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি ভালকাজই সাদকারূপে গণ্য। তোমার ভাইয়ের সাথে সহাস্য মুখে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের পাত্র ভর্তি করে দেয়াও ভাল কাজের অন্তুর্ভূক্ত।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিস ১৯৭১, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে। কেননা, সততাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোন মানুষ প্রতিনিয়ত সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের প্রতি মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। তোমরা মিথ্যাকে অবশ্যই পরিহার করবে। কেননা, মিথ্যা (মানুষকে) পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। কোন বান্দাহ প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ্‌ সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মন্দ ধারণা পোষণ করা হতে তোমরা দূরে থাক। কেননা, মন্দ ধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭৩, সহিহ হাদিসঃ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মিথ্যা হতে অধিক ঘৃণিত চরিত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আর কিছুই ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে কেউ মিথ্যা বললে তা অবিরত তার মনে থাকত, যে পর্যন্ত না তিনি জানতে পারতেন যে, মিথ্যাবাদী তাঁর মিথ্যা কথন হতে তাওবাহ করেছে।

= অশ্লীল কাজ পরিত্যাগ করা, লজ্জাশীল হওয়া, অকারণে অভিশাপ না দেয়া

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোন বস্তুর শুধুমাত্র কদর্যতাই বাড়িয়ে দেয়। আর লজ্জা কোন জিনিসের সৌন্দর্য তাই বাড়িয়ে দেয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বোত্তম চরিত্রবান ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (বর্ণনাকারী বলেন,) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশ্লীলভাষীও ছিলেন না এবং অশ্লীলতার ভানও করতেন না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭৭, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিস্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০২৭, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুইটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের (মুনাফিকীর) দুইটি শাখা।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৯, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের (ঈমানদারের) জায়গা জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা হচ্ছে দুর্ব্যবহারের অঙ্গ, আর দুর্ব্যবহারের (দুর্ব্যবহারকারীর) জায়গা জাহান্নামে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০১৯, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তি কখনো অভিশাপকারী হতে পারে না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭৮, সহিহ হাদিসঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে একজন লোক বাতাসকে অভিসম্পাত করে। তিনি  বললেনঃ বাতাসকে অভিশাপ প্রদান করো না, কারণ, সে তো হুকুমের গোলাম। কোন ব্যক্তি অপাত্রে অভিশাপ প্রদান করলে তা অভিশাপকারীর উপর ফিরে আসে।

= নিজের বংশধারা সম্পর্কে জেনে রাখা,জ্ঞান অর্জনের জন্য ভাল কবিতা পাঠ করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭৯, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের বংশধারার ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন কর, যাতে করে তোমাদের বংশীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে পার। কেননা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় থাকলে নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালবাসা তৈরী হয় এবং ধন-সম্পদ ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭৫৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নিশ্চয় কোন কোন কবিতায় প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা আছে।

* সুনানে ইবেন মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭৫৬, হাসান হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন : কোন কোন কবিতায় অবশ্যই প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা থাকে।

=গালাগালি না করা,মৃতদের পর্যন্ত গালি দেয়া নিষেধ এমনকি বাতাসকে গালি দেয়াও নিষেধ

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮১, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুইজন লোক একে অপরকে গালি দেয়ার অপরাধ প্রথমে গালি প্রদানকারীর উপর এসে পড়ে, যতক্ষন পর্যন্ত নির্যাতিত ব্যক্তি (দ্বিতীয় ব্যক্তি) সীমালংঘন না করে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮২, সহিহ হাদিসঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিদেরকে তোমরা গালি দিও না, (যদি দাও) তাহলে জীবিতদেরই কষ্ট দিলে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮৩, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী ও নাফারমানীমূলক কাজ এবং তাকে মেরে ফেলা বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা কুফরীমূলক কাজ।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭২৭, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। কারণ তা আল্লাহর রহমাতের অন্তর্ভুক্ত, তা রহমাত ও শাস্তি বয়ে আনে। তোমরা আল্লাহর নিকট এর মধ্যে নিহিত কল্যাণের প্রার্থনা করো এবং তার মধ্যে নিহিত অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।

=কৌতুক করা, ভাল মানুষ হওয়া

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮৯, সহিহ হাদিসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের (ছোটদের) সাথে মিশতেন। এমনকি আমার ছোট ভাইটিকে তিনি কৌতুক করে বলতেনঃ হে আবূ উমাইর! কি করেছে নুগাইর (ছোট পোষা পাখি)।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৯০, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আপনিতো আমাদের সাথে কৌতুকও করে থাকেন। তিনি বললেনঃ আমি শুধু সত্য কথাই বলে থাকি (এমনকি কৌতুকেও)।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৮৭, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নম্র স্বভাব বঞ্চিত, সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৭৯৯, সহিহ হাদিসঃ নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মীযানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই।

=বন্ধুত্ব ও বিদ্বেষ উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা, অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৯৭, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ নিজের বন্ধুর সাথে ভালবাসার আধিক্য প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার শত্রু হয়ে যাবে। তোমার শত্রুর সাথেও শত্রুতার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭০৯, সহিহ হাদিসঃ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : কে? আমি বললাম, আমি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি! আমি (নাম বলতে পারো না)!

=রোগীদের দেখতে যাওয়া এবং নমনীয় আচরন করা

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৮, হাসান হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা্হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোন অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেনঃ কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলাও। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০১৩, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে নমনীয়তার অংশ দেয়া হয়েছে তাকে কল্যাণের অংশ দেয়া হয়েছে। নমনীয়তার অংশ হতে যে ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে কল্যাণের অংশ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০১৬, সহিহ হাদিসঃ আবূ আবদুল্লাহ আল-জাদালী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র-মাধুর্য সম্বন্ধে আইশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো অশ্লীল ও কটুভাষী ছিলেন না, অশ্লীল ব্যবহারও করেননি। তিনি কখনো বাজারে গিয়ে হট্টগোল করতেন না এবং অন্যায়ের দ্বারা অন্যায়ের প্রতিশোধ নেননি। বরং তিনি উদার মন নিয়ে ক্ষমা করে দিতেন।

= অকারণে রাগ না করা, রাগকে দমনা করা,বিনয়ী হওয়া

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০২০, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একজন লোক এসে বলল, আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, তবে আমাকে বেশি বলবেন না, যাতে আমি তা মুখস্থ করতে পারি। তিনি বললেনঃ ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না। লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই তিনি বললেনঃ ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০২৯, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকাত বা দানের কারনে কখনো সম্পদের কমতি হয় না। অবশ্যই ক্ষমা ও উদারতার দ্বারা আল্লাহ্‌ তা‘আলা মান-সম্মান বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে যে লোক বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে অতি মর্যাদা সম্পন্ন করেন।

= দুইমুখী মানুষ না হওয়া,চোগলখর না হওয়া,

* জামে আত তিরমিজি, হাদিস ২০২৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে দ্বিমুখী স্বভাবের মানুষেরা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গন্য হবে।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০২৬, সহিহ হাদিসঃ হাম্মাম ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)-কে একজন লোক অতিক্রম করে যাচ্ছিল। তাকে বলা হলো, এই লোক জনসাধারণের কথা প্রশাসকদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। (একথা শুনে) হুযাইফা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ চোগলখোর জান্নাতে যেতে পারবে না।

= বিপদ থেকে বাচার জন্য একাকি না চলা, ভাল বন্ধু নির্বাচন করা

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭৬৮, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি জানতো যে, একাকীত্বের মধ্যে কী (বিপদ) আছে, তবে সে রাতে একা চলাচল করতো না ।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৩, হাসান হাদিসঃ নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।

= রাস্তা পরিষ্কার রাখা

* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭৭২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রাস্তার উপর অবস্থান করো না এবং তাতে পেশাব-পায়খানায় করো না ।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ সদাচার ও উত্তম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) বলেন, তা হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, উত্তম জিনিস দান করা এবং কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৮, সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন এক সময় একজন লোক পথ দিয়ে চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেল। সে তা তুলে ফেলে দিল। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার এ কাজকে ক্ববূল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮১৫, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রাস্তার মাঝে বসা সম্পর্কে সতর্ক হও। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে না বসে আমাদের উপায় নেই। আমরা তথায় (বসে) আলোচনা করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যদি তোমাদের একান্তেই বসতে হয় তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা,
সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ নিষেধ করা।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিস, ৪৮১৬, হাসান হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এবং (রাস্তার হক হলো পথ হারাকে) পথ দেখানো।

* সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮১৭, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে এবং পথহারাকে পথ দেখাবে।

উপরের বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান থেকে আমরা শিখলামঃ

১/ বাবা মায়ের সাথে উত্তম আচরন করা এমনকি তাঁদের বন্ধু বান্ধুবিদের সাথেও ভাল ব্যাবহার করতে হবে ।
২/ খালার সাথে উত্তর ব্যাবহার করা এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক ভাল বজায় রাখা ।
৩/ সন্তানদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন করা তাদেরকে আদর, স্নেহ করা এবং বড়দের সম্মান করা ।
৪/ এতিমদের সাহায্য করা, বিধবা ও মিসকিনদের ভরণ পোষণ দেয়া ।
৫/ হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করা এবং মানুষকে ভাল উপদেশ দ্বারা সংশোধন করা,বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা না করা,অহংকার না করা ।
৬/ মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করা হক সে অমুসলিম ।
৭/ প্রতিবেশির অধিকার পালন করতে চেষ্টা করা হক সে অমুসলিম ।
৮/ খাদেমদের সাথে ভাল ব্যাবহার করা, ভাল পরামর্শদাতাকে সম্মান করা, কোন নারীকে এবং কোন খাদেমকে মারধর না করা।
৯/ উপহার আদান প্রদান করা,উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হক সে অমুসলিম ।
১০/ সবার সাথে এমনকি অমুসলিমদের সাথে ভাল ব্যাবহার করা, মানুষদের পানি পান করানো ।
১১/ কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত মানুষ এলে তাঁকে সম্মান করা হক সে অমুসলিম ।
১২/ মানুষের সাথে মিলে মিশে বসবাস করা,ঝগড়া না করা হক সে অমুসলিম ।
১৩/ অনুমতি নিয়ে বসা, দয়া করা হক সে অমুসলিম ।
১৪/ সমাজের উন্নতির জন্য সকল প্রকার ভাল কাজ করা ।
১৫/ নিজের চরিত্র উন্নত করা, পরিবারের জন্য সম্পদ খরচ করা ।
১৬/ মেহমানদারিতা করা, তাদেরকে সর্বচ্চ সম্মান দেয়া ।
১৭/ সবসময় হাসি মুখে কথা বলা এবং মিথ্যা পরিত্যাগ করা সব সময় সত্য কথা বলা ।
১৮/ অশ্লীল কাজ পরিত্যাগ করা, লজ্জাশীল হওয়া, অকারণে অভিশাপ না দেয়া ।
১৯/ নিজের বংশধারা সম্পর্কে জেনে রাখা,জ্ঞান অর্জনের জন্য ভাল কবিতা পাঠ করা।
২০/ গালাগালি না করা,মৃতদের পর্যন্ত গালি দেয়া নিষেধ এমনকি বাতাসকে গালি দেয়াও নিষেধ ।
২১/ কৌতুক করা, ভাল মানুষ হওয়া ।
২২/ বন্ধুত্ব ও বিদ্বেষ উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা, অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা ।
২৩/ রোগীদের দেখতে যাওয়া এবং নমনীয় আচরন করা ।
২৪/ অকারণে রাগ না করা, রাগকে দমনা করা,বিনয়ী হওয়া ।
২৫/ দুইমুখী মানুষ না হওয়া এবং চোগলখর না হওয়া ।
২৬/ বিপদ থেকে বাচার জন্য একাকি না চলা, ভাল বন্ধু নির্বাচন করা ।
২৭/ রাস্তা পরিষ্কার করা ।

পরিশেষে কিছু কথা

নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা দাবী করে ইসলাম নাকি আমাদের মানবতা শিখায় না!, ইসলাম নাকি বর্বর জীবন বিধান! ইসলামী নাকি সব জামেলার মুল! উপরের বিশুদ্ধ প্রমান থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝে গেছি ইসলাম আমাদের কি আদর্শ শিখায় ।
নাস্তিক শব্দের অর্থ স্রস্টায় অবিশ্বাস এবং ইসলামই জীবন বিধান বর্জন - অনলাইনের নাস্তিকদের কাজকর্ম দেখলে নাস্তিকতার পরিষ্কার মানে এটাই দাড়ায় ।

তাই আমরা এখন শক্তিশালী ভাবে দাবী করছি কেউ যদি খাটি নাস্তিক হতে চায় তাহলে তাকে ইসলামের ব্যাপারে উপরের সব কয়টি কথা বর্জন করতে হবে নাইলে সে একজন খাটি নাস্তিক হতেই পারবে না ।
এখন সত্য আপনি মানবেন কি মানবেন না সেটা আপনার ব্যাক্তি স্বাধীনতা 🤔🤔🤔

🗣 উপরের হাদিস গুলা ihadis.com থেকে নেয়া।


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post