ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার দেয়া হয়নি?


বিষয়ঃ ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার দেয়া হয়নি?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

=======================

ভূমিকাঃ ইসলামের দুশমনরা ইসলামকে খারাপ প্রমাণের জন্য যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই মিথ্যা কথা বলে যায়। একবার চিন্তা করেও দেখে না আমি যে ইসলামের বিরুদ্ধে বলছি ইসলাম কি আসলেই সেরকম নাকি আমার ব্রেনে ইসলামের দুশমনরা যেই ব্যাখ্যা ঢুকিয়ে ব্রেনওয়াশ করেছে তার ফলাফল মাত্র। নাস্তিক্যধর্ম প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য সকল প্রকার আস্তিকদের খুন করেছিল নাস্তিক কমিউনিস্টরা। এমনকি চায়নার নাস্তিকরা মুসলিম মা, বোন এক কথায় সকল প্রকার মুসলিমদেরকে মুক্তচিন্তায় নির্যাতন করে যাচ্ছে। সন্দেহ নাই নাস্তিক্যধর্ম মানুষকে নিজের ক্ষমতা ব্যাবহারের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়। তাই কোনো নাস্তিক লিডার যদি নিজের ক্ষমতার মুক্ত ব্যাবহার করে তাহলে এতে তার কিছুই আসে যায় না। মুক্তমনা নাস্তিকরাই আবার অভিযোগ করছে ইসলামে নাকি অমুসলিমদের অধিকার দেয় না- হাস্যকর না। এরা ক্ষমতায় গেলে শুধু মুসলিম না বরং সকল আস্তিকদেরকে যে গণহত্যা করবে না সেটার গ্যারান্টি কি? নাস্তিকরা বিশ্বাস করে নৈতিকতা আকাশ থেকে আসে না বরং মানুষই নিজের নৈতিকতা নিজেরা বানায়। তো চলুন দেখি ইসলাম আসলেই অমুসলিমদেরকে অধিকার দিয়েছে কিনা।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ নিচে দেয়া প্রতিটি শিষ্টাচার বিষয়ক হাদিস মুসলিমদের ক্ষেত্রেই নয় শুধু বরং শান্তিপূর্ণ অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করাঃহোক সে অমুসলিম

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না  তাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও দয়া করেন না।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৩, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবুল কাসিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।-ihadis.com

প্রতিবেশীর অধিকারঃ হোক সে অমুসলিম

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এতে আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।-ihadis.com

 জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট সঙ্গীদের মাঝে উত্তম সঙ্গী হল সেই ধরনের ব্যক্তি যে তার নিজ সঙ্গীর নিকট উত্তম। আল্লাহ্‌ তা‘আলার দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের মাঝে উত্তম হল সেই ধরনের প্রতিবেশী যে তার নিজের প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৭২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় নীরব থাকে।-ihadis.com

উপহার আদান-প্রদান করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাঃ হোক সে অমুসলিম

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপহার নিতেন এবং বিনিময়ে উপহার প্রদান করতেন।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের প্রতি যে লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রতিও সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

নাবী সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অথবা যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৬১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, (অধ্যায়ের নামঃ মুশরিকদের হাদিয়া প্রদান করা)

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তিকে রেশমী বস্ত্র বিক্রি করতে দেখে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বললেন, এ জোড়াটি খরিদ করে নিন। জুমুআর দিনে এবং যখন আপনার নিকট কোন প্রতিনিধি দল আসে, তখন তা পরিধান করবেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এসব তো তারাই পরিধান করে, যাদের আখিরাতে কোন হিস্‌সা নেই। পরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কয়েক জোড়া রেশমী কাপড় এল। সেগুলো হতে একটি জোড়া তিনি ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বলেন, এটা আমি কিভাবে পরিধান করব। অথচ এ সম্পর্কে আপনি যা বলার বলেছেন। এতে তিনি বললেন, এটা তোমাকে আমি পরিধান করার জন্য দেইনি। হয় এটা বিক্রয় করে দিবে, নতুবা কাউকে দিয়ে দিবেতখন ‘উমার (রাঃ) সেটা মক্কার বাসিন্দা তাঁর এক ভাইকে ইসলাম গ্রহণের আগে হাদিয়া পাঠালেন।-ihadis.com

ভালো ব্যাবহার করা,মানুষকে পানি পান করানোঃ হোক সে অমুসলিম

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৮৭, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভয় কর, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৮৪, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

সা’দ বিন উবাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন প্রকারের দান সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ পানি পান করানো।-ihadis.com

কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ এলে সম্মান করাঃ হোক সে অমুসলিম

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭১২, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি এলে তোমরা তাকে যথাযথ সম্মান করো।-ihadis.com

মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস, ৮৫৭৬,৮৭৭৪, হাদিস সহিহ থেকে বর্ণিত

হযরত হাসান বলেন, যখন সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি রাসূল (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়, তখন তারা মসজিদের শেষ প্রান্তে অবস্থিত গম্বুজের কাছে অবস্থান করে। যখন নামাযের সময় হলো, দলের একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নামাযের সময় হয়েছে অথচ এরা একদল অমুসলিম মসজিদে আছে। তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘অমুসলিমদের কারণে জমিন নাপাক হয় না।’

মানবিক হওয়াঃ হোক সে অমুসলিম

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তখন তাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করবে, কঠিন করবে না।-ihadis.com

অনুমতি নিয়ে বসা, দয়া করাঃ হোক সে অমুসলিম

সুনানে আবু দাউদ। হাদিসঃ ৪৮৪৪, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ উভয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ দু’ব্যক্তির মাঝখানে বসবে না।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৪১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দয়াশীলদের উপর করুণাময় আল্লাহ্‌ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।-ihadis.com

ঝগড়া বিবাদ না করাঃ হোক যে অমুসলিম

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ২৪১১, সহিহ হদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি একে অপরকে গালি দিয়েছিল। তাদের একজন ছিল মুসলিম, অন্যজন ইয়াহূদী। মুসলিম লোকটি বলল, তাঁর কসম, যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত প্রদান করেছেন। আর ইয়াহূদী লোকটি বলল, সে সত্তার কসম, যিনি মূসা (‘আঃ)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত দান করেছেন। এ সময় মুসলিম ব্যক্তি নিজের হাত উঠিয়ে ইয়াহূদীর মুখে চড় মারল। এতে ইয়াহূদী ব্যক্তিটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গিয়ে তার এবং মুসলিম ব্যক্তিটির মধ্যে যা ঘটেছিল, তা তাঁকে অবহিত করলনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে মূসা (‘আঃ)-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তাদের সাথে আমিও বেহুঁশ হয়ে পড়ব। তারপর সকলের আগে আমার হুঁশ আসবে, তখন (দেখতে পাব) মূসা (‘আঃ) আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তিনি বেহুঁশ হয়ে আমার আগে হুঁশে এসেছেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা যাঁদেরকে বেহুঁশ হওয়া হতে রেহাই দিয়েছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪৫৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে।-ihadis.com

ব্যবসার সময় কাউকে ধোঁকা না দেয়াঃ হোক সে অমুসলিমঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪১৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে এক ব্যক্তিকে ধোঁকা দেয়া হত। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি যখন বেচা-কেনা কর তখন বলে দেবে যে, ধোঁকা দিবে না। অতঃপর সে অনুরূপ কথাই বলত।-ihadis.com

অমুসলিমদের সাথে কেনা-বেচা জায়েজ,অমুসলিমদের কাছে কিছু ধার নিলে তা ফিরিয়ে দেয়াঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪১৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আবদুল্লাহ্‌ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলিমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে, তা হলে সে আল্লাহর সমীপে এমন অবস্থায় হাযির হবে যে, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। আশ‘আস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! এটা আমার সম্পর্কেই ছিল, আমার ও এক ইয়াহূদী ব্যক্তির সাথে যৌথ মালিকানায় এক খন্ড জমি ছিলসে আমার মালিকানার অংশ অস্বীকার করে বসলআমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলাম। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? আমি বললাম, না। তখন তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ইয়াহূদিকে বললেন, তুমি কসম কর। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে তো কসম করবে এবং আমার সম্পত্তি নিয়ে নেবে। তখন আল্লাহ তা’আলা (এ আয়াত) নাযিল করেন: “যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে …. আয়াতের শেষ পর্যন্ত”- (আল্‌ ইমরান ৭৭)।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৩৯৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁর পিতা একজন ইয়াহুদীর কাছে হতে নেয়া ত্রিশ ওসাক (খেজুর) ঋণ রেখে ইন্তিকাল করেন। জাবির (রাঃ) তার নিকট (ঋণ পরিশোধের জন্য) সময় চান। কিন্তু সে সময় দিতে অস্বীকার করে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কথা বললেন, যেন তিনি তার জন্য ইয়াহুদীর কাছে সুপারিশ করেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এলেন এবং ইয়াহুদীর সাথে কথা বললেন, ঋণের বদলে সে যেন তার খেজুর গাছের ফল নিয়ে নেয়। কিন্তু সে তা অস্বীকার করল। এরপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাগানে প্রবেশ করে সেখানে গাছের (চারদিকে) হাঁটাচলা করলেন। তারপর তিনি জাবির (রাঃ)-কে বললেন, ফল পেড়ে তার সম্পূর্ণ প্রাপ্য আদায় করে দাও। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে আসার পর তিনি ফল পাড়লেন এবং তাকে পূর্ণ ত্রিশ ওসাক (খেজুর) দিয়ে দিলেন এবং সত্তর ওসাক (খেজুর) অতিরিক্ত রয়ে গেল। জাবির (রাঃ) আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে বিষয়টি অবহিত করার জন্য ইচ্ছা করলেন। তিনি তাঁকে আসরের সালাতরত অবস্থায় পেলেন। তিনি সালাত শেষ করলে তাঁকে অতিরিক্ত খেজুরের কথা অবহিত করলেন। তিনি বললেন, খবরটি ইবনু খাত্তাব (উমর)- কে পৌঁছাও। জাবির (রাঃ) ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে খবরটি পৌঁছালেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বাগানে প্রবেশ করে হাঁটাচলা করলেন, তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম যে, নিশ্চয় এতে বরকত দান করা হবে।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪০০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা যুলুম।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪০১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এক লোক (ঋণ পরিশোধের) তাগাদা দিতে আসল এবং কড়া কথা বলল। সাহাবীগণ তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হাক্বদারের (কড়া) কথা বলার অধিকার আছে।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৫১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ইয়াহুদী হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।-ihadis.com

অন্যায়ভাবে কারো কাছ থেকে কিছু নেয়া নিষেধঃ হোক সে অমুসলিমঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪০৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়,  অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা।-ihadis.com

অনুমতি ছাড়া কারো জিনিস ধরা যাবে নাঃ হোক সেটা অমুসলিমেরঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪৩৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অনুমতি ব্যতীত কারো পশু কেউ দোহন করবে না। তোমাদের কেউ এটা কি পছন্দ করবে যে, তার (তোশাখানায়) ভান্ডারে কোন ব্যক্তি এসে ভান্ডার ভেঙ্গে ফেলে এবং ভান্ডারের শস্য নিয়ে যায়? তাদের পশুগুলোর স্তন তাদের খাদ্য সংরক্ষিত রাখে। কাজেই কারো পশু তার অনুমতি ব্যতীত কেউ দোহন করবে না।-ihadis.com

সবার সাথে এমনকি অমুসলিমদের সাথে এই ৪ টি কাজ করা যাবে নাঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৪৫৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে মুনাফিক অথবা যার মাঝে এ চারটি স্বভাবের কোন একটা থাকে, তার মধ্যেও মুনাফিকির একটি স্বভাব থাকে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে। (১) সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে (২) যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে (৩) যখন চুক্তি করে তা লঙ্ঘন করে (৪) যখন ঝগড়া করে অশ্লীল বাক্যালাপ করে।-ihadis.com

অমুসলিমদের সাথে ন্যায় বিচার করাঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৭০৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের প্রতিটি হাতের জোড়ার জন্য তার উপর সদকা রয়েছে। সূর্য উঠে এমন প্রত্যেক দিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সদকা।’-ihadis.com

অমুসলিমরা মুসলিম রাষ্ট্রে কাজ করতে পারবেঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৭২০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার ইয়াহূদীদেরকে দিলেন এ শর্তে যে, তারা তাতে কাজ করবে এবং তাতে ফসল ফলাবে, তাতে যা উৎপন্ন হবে তার অর্ধেক তারা পাবে।-ihadis.com

ক্ষুধার্ত হলে খাদ্য দেয়াঃ হোক যে অমুসলিম

সহিহ বুখারি, ৫৬৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী (সা) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর।-ihadis.com

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ৬ আয়াত থেকে বর্ণিত,

আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।

অমুসলিম কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়াঃ

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৬৫৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ইয়াহূদীর ছেলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সেবা করত। ছেলেটির অসুখ হলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর অসুখের খোঁজ নিতে এলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে ইসলাম গ্রহণ করল। সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহ:) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ ত্বলিব মারা গেলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে এসেছিলেন।-ihadis.com

ইসলামিক রাষ্ট্রে অমুসলিমরা নিজের ধর্ম চর্চা করতে পারবেঃ

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ২৫৬ আয়াত থেকে বর্ণিত,

ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নাই।

আল কুরআন, সুরা কাফিরুন ১০৯ঃ৬ আয়াত থেকে বর্ণিত

তোমাদের ধর্ম তোমাদের কাছে আমাদের ধর্ম আমাদের কাছে

আল কুরআন, সুরা মুমতাহিনা ৬০ঃ৮ আয়াতে বর্ণিত,

মুশরিকদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজ দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন নাআল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন

তাফসীরে জালালাইন, ৬ খণ্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

যেসব কাফের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং মুসলমানদেরকে দেশ হতে বহিস্কাররেও অংশগ্রহণ করেনি; আলোচ্য আয়াতে তাদের সাথে সৎব্যাবহার ও ইনসাফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছেন্যায় ও সুবিচার তো প্রত্যেক কাফেরের সাথেও জরুরি। এতে জিম্মি কাফের, চুক্তিতে আবদ্ধও কাফের এবং শত্রু কাফের সবই সমান, বরং ইসলামে জন্তু-জানোয়ারদের সাথেও সুবিচার করা ওয়াজিব অর্থাৎ তাদের পৃষ্ঠে সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপানো যাবে না এবং ঘাস পানি ও বিশ্রামের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।-[মাআরেফুল কোরআন, কুরতুবী]

সবার সাথেই ন্যায় বিচার করা,মানবিক আচরণ করাঃ

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ৫৮ আয়াত থেকে বর্ণিত,

নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের প্রাপকদের পৌঁছে দিতে । তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায় পরায়নতার সাথে বিচার করবে।

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ১৯৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,

তোমরা তোমাদের নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেও না আর মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যাবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ভাল ব্যাবহারকারীদের ভালবাসেন।

জুলুম করা নিষিদ্ধঃ হোক যে অমুসলিম

সিলসিলা সহিহা, হাদিসঃ ৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইয়াজ ইবনু হিমার থেকে বর্ণিতঃইয়াজ ইবনু হিমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি নাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আমার কাছে ওহী প্রেরন করেছেন যে, তোমরা নম্রতা অবলম্বন কর। একজন যেন অন্যজনের উপর গর্ব-অহংকার না করে এবং একে অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার না করে।-ihadis.com

মুসনাদে আহমদ, হাদীসঃ ১২৫৭৭, ১২৫৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী করীম (সা.) কারো ওপর জুলুম করতে নিষেধ করেছেন,যদিও মজলুম অমুসলিম হয় : হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মজলুমের বদদু’আ থেকে বেঁচে থেকো, যদিও সে কাফের হয়। তার মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা নেই (অর্থাৎ তার বদদু’আ দ্রুত কবুল হয়ে যায়)।

কানযুল আমাল, ৪ খণ্ড, ৪৫৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

একবার মিশরের এক মুসলিম শাসক একজন অমুসলিমকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিয়েছিল । এই খবর যখন খলিফা উমর (রা) জানতে পারলেন, তখন তিনি সেই অমুসলিমকে নির্দেশ দিলেন, মুসলিম শাসককে ঠিক সেইভাবেই শাস্তি দেয়ার জন্য যেভাবে অমুসলিম ব্যাক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। তিনি তখন রাগে মুসলিম শাসককে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন, কখন থেকে মানুষকে তুমি তোমার দাস ভাবা শুরু করেছ?

মৃতদের সম্মান করাঃ হোক যে অমুসলিম

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১৩১২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, ‘

আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ লাইলাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, সাহ্‌ল ইব্‌নু হুনাইফ ও কায়স ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) কাদিসিয়াতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল। (তা দেখে) তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটা তো এ দেশীয় জিম্মী ব্যক্তির (অমুসলিমের) জানাযা। তখন তারা বললেন, (একদা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, এটা তো এক ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি এরশাদ করলেনঃ সে কি মানুষ নয়?-ihadis.com

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ১৬৮০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, (একদিন) সাহ্‌ল ইবনু হুনায়ফ ও ক্বায়স ইবনু সা‘দ (রাঃ) ক্বাদিসিয়্যাহ্‌ নামক স্থানে বসেছিলেন। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানযাহ্‌ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তা দেখে তারা উভয়েই দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের (দাঁড়াতে দেখে) বলা হলো, এ জানযাহ্‌ জমিনবাসীর অর্থাৎ যিম্মির। তখন উভয় সাহাবী বললেন, (তাতে কি হয়েছে? এভাবে একদিন) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে দিয়েও একটি জানাযাহ্‌ যাচ্ছিল। তা দেখে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁকেও বলা হয়েছিল, ‘এটা একজন ইয়াহূদীর জানযাহ্।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, সে মানুষ নয়? (বুখারী, মুসলিম)-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ১৯২১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইসমাঈল ইব্‌ন মাসঊদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃসহল ইব্‌ন হুনায়ফ ও কায়স ইব্‌ন সা’দ ইব্‌ন উবাদাহ্‌ (রাঃ) কাদিসিয়ায় ছিলেন। তাঁদের নিকট দিয়ে একটি জানাযা যাওয়ার সময় তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন, এখন তাঁদেরকে বলা হলো, “এতো যিম্মীর (আশ্রিত বিধর্মী) লাশ” , তখন তারা বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, “সে তো ইয়াহুদী”, তিনি বললেন, সে কি মানুষ নয়?-ihadis.com

অমুসলিমদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা নিষিদ্ধঃ

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩১৬৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

‘আব্দুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে কতল করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যাবে।’-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিসঃ২৬৮৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রা) থেকে বর্ণিতঃরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ অবশ্যই চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিসঃ২৬৮৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হূরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিরাপত্তা লাভকারী কোন যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ সত্তর বছরের দূরত্ব থেকেও অবশ্যই তার সুগন্ধ পাওয়া যাবে।-ihadis.com 

সুনানে আবূ দাঊদ, হাদিসঃ ৩০৫২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীদের কিছু সন্তান তাদের পিতা সূত্র থেকে বর্ণিতঃ যারা ছিলেন পরস্পর ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেনঃ সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তির উপর যুলুম করবে বা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তাকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, ক্বিয়ামাতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হব।।-ihadis.com

বায়হাকী, হাদীস: ১৫৯৩৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইমাম বায়হাকি (রহ.) সুনানে কুবরা নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন,হযরত আবু জানুব আসাদি (রহ.) থেকে বর্ণিত, আলী (রা.)-এর দরবারে এক মুসলিমকে হাজির করা হয়, যে একজন অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করেছে। এ হত্যার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তখন তিনি তাকে কেসাস হিসেবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় মৃত ব্যক্তির ভাই এল এবং বলল, আমি তাকে ক্ষমা করছি।তখন তিনি বললেন, হয়তো তার পরিবার তোমাকে ধমক দিয়েছে, ভীতি প্রদর্শন করেছে, হুমকি দিয়েছে। সে বলল, না। কিন্তু তাকে হত্যা করলে আমার ভাই ফিরে আসবে না। আর তারা আমাকে ‘দিয়াত’ (রক্তপণ) দিয়েছে। তাই আমি রাজি হয়েছি। আলী (রা.) বললেন, ‘তুমি ভালো করেই জানো, যেসব অমুসলিম আমাদের রাষ্ট্রে নাগরিক হিসেবে থাকবে, তাদের জীবন আমাদের মতো, তাদের রক্তপণ আমাদের রক্তপণের মতো।’

মুসনাদে আহমদ, হাদীসঃ ২০৬৪৮,২০৩৭৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

হযরত আবু বাকারা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন।’-ihadis.com

পিতামাতার সাথে মানবিক ব্যাবহার করাঃ হোক যে অমুসলিম

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৭৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ বাক্‌র (রাঃ) -এর কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হাঁ। ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের ক’রে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।” (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৭৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।-ihadis.com

পরিশেষে কিছু কথাঃ

নাস্তিক্যধর্ম মানুষকে কখনোই নির্দিষ্ট নৈতিকতা প্রদান করে না। নিজের ইচ্ছা মতো জীবন পরিচালনা করার সুযোগ নাস্তিক্যধর্মে রয়েছে। সমকামীতা করাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে, মদ খাওয়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে, পুরুষকে দাড়ি রাখতে হবে, নামাজ আদায় করতে হবে ইত্যাদি আদেশ ইসলাম দিয়েছে কিন্তু নাস্তিকরা এগুলো মানে না। কেন? কারণ নাস্তিকরা বিশ্বাস করে ইসলাম তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে নষ্ট করে। কোনো নাস্তিক কি মদ খাবে কি খাবে না, সমকামীতা চর্চা করবে কি করবে না, দাড়ি রাখবে কি রাখবে না এগুলো একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ইসলাম এখানে কেন বাধা হয়ে দাঁড়াবে? এভাবে নাস্তিকরা যেমন ইসলামের বাইরে নিজেদের মতো করে চিন্তা করার স্বাধীনতা চায় ঠিক তেমনি অন্য কোনো নাস্তিকরা যদি প্রচলিত নাস্তিকদের বাইরে চিন্তা করার স্বাধীনতা চায় এবং তা করে তাহলে অবশ্যই নাস্তিকরা আবেগ দিয়ে অস্বীকার করলেও যৌক্তিকভাবে সমর্থন করতে বাধ্য। বুঝলাম না?

 

কোনো নাস্তিক যদি চায় আমার ক্ষমতা আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। আমি মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালাবো, মুসলিম নারীদের মুক্তমনে ধর্ষণ করবো। আমার সাথে কেউ একমত না হলে তার মা,বোনদেরকেও মুক্তমনে ধর্ষণ করবো। এটাই আমার বানানো আইন। আমি ইসলামের আইন যেভাবে অবিশ্বাস করি তেমনি “ধর্ষণ করা খারাপ” “গণহত্যা করা অমানবিক” এসব নৈতিকতাকেও আমি অবিশ্বাস করি। আমি নাস্তিকের কাছে ধর্ষণ করা ভালো, গণহত্যা করা মানবিক। এখানে আমার স্বার্থ হাসিল হচ্ছে। অন্যের ক্ষতি হলে আমার কি আসে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে এরকম নাস্তিক নেতার মুক্তচিন্তাকে অমানবিক বলার যুক্তি আছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টি? অবশ্যই নাই। যেকোনো নাস্তিক ক্ষমতায় গেলে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে গণহত্যা করার মুক্তচিন্তা করতেই পারে, চাইলেই আবার চাইলে নাও করতে পারে। এগুলো ব্যক্তিগত ব্যাপার।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post