ইসলাম অমুসলিমদের হেয় করেছে ?

বিষয়ঃ ইসলাম অমুসলিমদের হেয় করেছে ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

টিকাঃ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন । মুল পয়েন্ট বুঝার চেষ্টা করুন, মনে রাখার চেষ্টা করুন । তাহলে অন্ধ বিশ্বাসী খগেনরা আর ধোঁকা দিতে পারবে না ।

প্রশ্ন ১/ সুরা বাকারা ২:১৭১ = বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না। - এই আয়াতে থেকে প্রমান হচ্ছে অমুসলিমরা বয়রা,অন্ধ এবং মূর্খ এটি তো অন্যায় ?

উত্তরঃ প্রশ্নকর্তা হয়ত চোখে সমস্যা কারন আপনি যেই আয়াত দিয়ে প্রশ্ন করেছেন এর উত্তর আগের আয়াতেই আল্লাহ্‌ বলে দিয়েছেন ।

যেমনঃ সুরা বাকারা ২:১৭০ = আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কে দেখেছি। যদিও তাদের বাপ দাদাদের কোন জ্ঞানই ছিল না এবং তারা সত্য পথে ছিল না তবুও ?

খেয়াল আল্লাহ্‌ কুরানের বলেছেন যে তোমরা আল্লাহ্‌র আইন মেনে চল তখন কাফেররা বলল যে আমরা মানব না কারন আমাদের বাপ দাদারা যেই পথে ছিল সেই পথে আমরাও চলব। এরপরেই আবার কুরআন বলছে যদি তোমাদের বাপ দাদারা ভুল পথে চলে এরপরেও > এর মানে হল কাফেরদের বাপ দাদারা মূর্তি পূজা করতো এবং আরও অনেক নোংরা কাজ করত যা কুরআন সরাসরি নিষেধ করেছে এরপরেও তারা জেনে বুঝেও করত । সুতরাং এইসব কাফেরদের উদাহরণ দিতে গিয়েই কুরান বলেছে তারা বধির, মূর্খ তারা কিছুই বুঝে না ।

উদাহরণঃ ধরুন একজন লোকের নাম আসিফ মহিউদ্দিন । তাকে বার বার বলা হচ্ছে যে তুমি চুরি করো না । এটি খারাপ । সে বলল আমার বাপ দাদাদের নীতিমালায় যা পেয়েছি আমি তাই করব । জবাবে ঐ ভদ্র লোকটি বলল যদি তোমার বাপ দাদা খারাপ পথে থাকে এরপরেও ? ফলে লোকটি বলল আসলে জনাব আপনার উদাহরণ ঐ গাধার মত যে গাধাকে পানির কাছে নিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু পানি খাওয়ানো যায় না । আচ্ছা আমার প্রশ্ন হল এই লোক যে আসিফ নামের লোকটিকে গাধার সাথে উদাহরণ দিয়েছে সে কি ভুল করেছে ? উত্তর হচ্ছে না । কারন আমরা সবাই জানি চুরি করা একটি খারাপ কাজ । আর যে জেনে বুঝেও চুরি করে সে আর সভ্য মানুষ হতে পারে না ।

প্রশ্ন ২/ সুরা বাকারা ২:২৫৪ = হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। - এই আয়াতে কাফেরদের জালেম বলেছেন কেন এটি তো অমানবিক ?

উত্তরঃ হাস্যকর প্রশ্নই । চোরকে চোর বলা কি অমানবিক ? ডাকাতকে খারাপ বলা কি অন্যায় ? ধর্ষককে অপরাধী বলে কি অপরাধ ? যারা দেশের বিরুদ্ধে বেইমানী করে তাদেরকে দেশদ্রোহী পাপী বলা কি অমাবিক ? যারা সন্ত্রাস তাদেরকে কি সন্ত্রাসী বল খারাপ ?

যেমন ধরুন কোন পিতা ৫ কোটি টাকা তার কোন এক ছেলেকে আমানত রাখতে দিলেন এখন সে ছেলে টাকাটি খেয়ানত করেছেন এখন পিতা রেগে দিয়ে ছেলেকে ধমক দিলেন যে তুই একটি জালেম । কারন তুই খেয়ানত কারী । একই যুক্তিতে আল্লাহ্‌ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এখন কেউ যদি আল্লাহকে না মেনে বরং তাঁর বিরোধিতা করে আবার মনে করে সে আল্লাহ্‌ ছাড়া পরকালে নাজাত পেয়ে যাবে এখন এই টাইপের বলদদের যদি আল্লাহ্‌ জালেম বলেন এখানে অন্যায়ের কি হয়েছে ? বুঝান তো একটু !

তাফহিমুল কুরআনে সুরা বাকারার ঐ আয়াতের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে, এখানে কুফুরি নীতি অবলম্বনকারী বলতে বুঝানো হয়েছে এমন সব লোককে যারা আল্লাহ্‌র হুকুম মেনে চলতে অস্বীকার করে । আল্লাহকে খুশি করার পরিবর্তে নিজেদের ধন সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে । কিয়ামতকে বিশ্বাস করে না । তারা আরও ভিত্তিহীন চিন্তা করে যে পরকালে তারা নিজেদের মুক্তির জন্য নাজাত কিনে নিতে সক্ষম হবে ।

সুতরাং আল্লাহ্‌ তাদেরকে জালেম বলেছেন যারা কুফুরি অবলম্বন করেছেন এবং আল্লাহকে অস্বীকার করেছেন আর আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের জালেম বলতেই পারেন যেহেতু তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা ।

প্রশ্ন ৩/ সুরা জুম’য়া ৬২:৫ = যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। - এখানে অমুসলিমদের গাধা ও নিকৃষ্ট বলা হচ্ছে ?

উত্তরঃ আয়াতেই উত্তর দেয়া আছে , আল্লাহ্‌র দেয়া কিতাব তাওরাত অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহ্‌র আয়াতকে মিথ্যা বলেছে তাই আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের গাধার সাথে উদাহরণ দিয়েছেন এবং নিকৃষ্ট বলেছেন ।

উদাহরণঃ অনেক সময় ক্লাসের পড়া না পারার কারনে অথবা ক্লাসে পরিক্ষায় বার বার ফেল করলে টিচার আমাদের বলেন কিরে তুই কি গাধা নাকি যে পড়াশোনা করিস না নাহ! তুই অনেক নিকৃষ্টরে । এখানে কি টিচার ছাত্রকে অপমান করেছে নাকি ছাত্রর ভালর জন্য শাসন করেছেন ।

একই ভাবে আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের ভাল চান তাই আল্লাহ্‌ তাদেরকে গাধা ও নিকৃষ্ট বলে শাসন করলেন যারা তাকে অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর দেয়া আইন মেনে চলে নাই ।

প্রশ্ন ৪/ সুরা ফুরকান ২৫:৪৪ = আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত । - এই আয়াত অমুসলিমদের পশু বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ আয়াতের আগের আয়াতে বলা হয়েছে যে, সুরা ফুরকান ২৫:৪৩ = আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?

ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদক, তাফসীরে ইবনে কাসিরে ১৫ খণ্ড, ২৬০ থেকে ২৬২ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, নবী (সা) কে নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করত । নবী মুহাম্মদ (সা) কে কাফেররা ছোট করে কথা বলব । অপমান করত । কাফেররা এত বর্বর ছিল যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ অজ্ঞতার যুগে একজন লোক কিছু কাল সাদা পাথরের ইবাদর করত । আবার যখন দেখত ঐ পাথরের থেকে অন্যটি আরও উৎকৃষ্ট তখন প্রথম পাথরের পূজা ছেড়ে দ্বিতীয় পাথরের পূজা করত ।

যেহেতু কাফেররা নবী মুহাম্মদ (সা) কে নিয়ে ঠাট্টা করত , অপমান করত , ছোট করত এবং তৎকালীন যুগে কাফেররা পাথর পূজা করত এবং সত্যকে অস্বীকার করত তাই আল্লাহ্‌ তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর মত বলেছেন । কারন একজন মানুষ হয়ে কিভাবে একটি পাথরের পূজা করে তাদেরকে বুঝানোর পরেও তারা বুঝতে চায় না যেমন একটি চতুষ্পদ প্রাণী তাকে আপনি যতই উপদেশ দেন সে মানতে চাইবে না ।

এখানে আমার একটি প্রশ্ন তৎকালীন সময়ে কাফেররা পাথরের পূজা করত , কন্যা সন্তানদের জীবিত কবর দিত আরও অনেক আকাম করত এখন কুরানের কাফেরদের সমালোচনা করা হয়েছে সে তারা যা করট সেটি অন্যায় । এখন নাস্তিকরা যে দাবি করছে যে কুরআনে অন্যায় ভাবে অমুসলিমদের খারাপ বলা হয়েছে তাহলে আমরা কি বলতে পারি না যে নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা পরোক্ষ ভাবে কাফেরদের নিকৃষ্ট অপরাধ প্রমোট করছেন ?

প্রশ্ন ৫/ সুরা তাওবা ৯:২৮ = হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হার ামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্রে?র আশংকা কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। - এই আয়াতে মুশরিক বা অমুসলিমদের নাপাক বলা হচ্ছে ?

উত্তরঃ ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরের, ৮ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৬৭৩ এখানে বলা হয়েছে যে, সহিহ হাদিসে আছে, মুমিন অপবিত্র হয় না। বাকি থাকলো এই কথাটি যে মুশরিকদের দেহ ও সত্তাও কি অপবিত্র ? এই ব্যাপারে জমহুরের (বেশির ভাগ) উক্তি এই যে তাদের দেহ নাপাক বা অপবিত্র নয় । কারন আল্লাহ্‌ আহলে কিতাবদের জবেহ করা প্রাণী হালাল করেছেন ।

মুশরিক মানে হচ্ছে যে, আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক করে । ধরুন একটি পিতার ৭ টি সন্তান । একটি সন্তান তার বাবাকে পিতা বলে পরিচয় দেয় না , অন্যলোককে নিজের বাপ বলে সম্বোধন করে । এখন এই কথা পিতা জানতে পেরে তার ছেলেকে বললেন তুই হলি একটি নোংরা নাপাক বাজে ছেলে । আচ্ছা এখানে কি পিতা তার ছেলের দেহকে নোংরা বলেছেন নাকি তার ছেলের বাজে চিন্তা বা বাজে কাজকে নোংরা বলেছে ? উত্তর হচ্ছে ছেলের বাজে চিন্তাকে নোংরা বলেছেন কারন নিজের পিতাকে বাবা না বলে অন্যকে বাপ বলে ডাকা তো অন্যায় এবং অপরাধ বটে । 

সুতরাং এখানে মুশরিকদের যেহেতু তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আরও হাজার দেব দেবির উপাসনা করত তাই এদের আকিদা বা বিশ্বাসকে অপবিত্র বলা হয়েছে তাদের দেহ বা সত্তাকে নয় ।

প্রশ্ন ৬/ সুরা আনফাল ৮:৫৫ = সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি। আবার সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৬ = আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। - এই দুই আয়াতে অমুসলিমদের নিকৃষ্ট বলা হচ্ছে ?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌র কাছে নিকৃষ্ট হল তারা যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, ইমান আনে নি এবং কাফের । আবার আল্লাহ্‌র কাছে সব থেকে শ্রেষ্ঠ হল তারা যারা, সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৭ = যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।

ধরুন আমি একটি দেশের প্রধান । আমি আইন করলাম যারা দেশের জন্য কাজ করবে দেশকে ভাল বাসবে তারা আমার কাছে শ্রেষ্ঠ এবং যারা নিজ দেশকে অস্বীকার করে, নিজ দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে, অন্যায় করে তারাই আমার কাছে সব থেকে নিকৃষ্ট । এখানে কি আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি ? আমি কি কাউকে মন্দ বলেছি ? উত্তর হচ্ছে , আমি সঠিক কথাই বলেছি ।

একই ভাবে আল্লাহ্‌ যেহেতু আমাদের সৃষ্টিকর্তা তাই তাঁকে কেউ অস্বীকার করলে আল্লাহ্‌ অবশ্যই সেসব মানুষদের নিকৃষ্ট বলতেই পারেন এতে ঐ মানুষের কেন কষ্ট লাগবে যেখানে সে আল্লাহকে নিজেই মানছে না ? আল্লাহ্‌র নিকৃষ্ট বলাতে যদি সেই লোক কষ্ট পায় তাহলে আল্লাহ্‌র খুশির জন্য অথবা সৃষ্টির সেরা হওয়ার জন্য সে আল্লাহকে মানলেই তো হয় ? বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে তেসপাতা ।

প্রশ্ন ৭/ সুরা তাওবা ৯:২৯ = তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবে র ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। - এই আয়াতে অসম্মান করে অমুসলিমদের জিজিয়া কর দিতে বলা হচ্ছে কেন ?

উত্তরঃ ধরুন এম ডি আলী নামের একজন দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা । সে ঘোষণা করলেন যে , তোমরা যুদ্ধ করো ঐ বর্বর পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে চায় না এবং বাংলাদেশে একজন দেশপ্রেমী শাসন করুন এটি চায় না এবং তারা বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশীরা দুর্বল । যদি পাকিস্তানীরা বিনয় এবং করজোড় করে আমাদের দাবি মেনে নেয় এবং ক্ষতি পূরণ দেয় তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ করো না । আপনারাই এখন বলুন এখানে কি পাকিস্তানীদের অসম্মান করা হয়েছে ?

সুরা তওবাতে যাদের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছিল তাদের অপরাধ সমূহ জানলে আপনারাই তাদের জুতা দিয়ে সাইজ করতেন । আসুন দেখে আসি কাফেররা কত বড় বেইমানী করেছিল মুসলিমদের সাথে । সুরা তওবার আগের আয়াত সমূহ যেমনঃ
সুরা তওবার ৯:৫ আয়াতে কি কাফেরদের অন্যায়ভাবে যুদ্ধ করতে বলা হলা হয়েছে ? সুরা তওবার ৯:৫ আয়াত হলঃ তোমরা মুশরিকদের যেখানেই পাও হত্যা করো এবং তাদের পাকড়াও করো, তাদেরকে অবরোধ করো এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাটিতে বসে থাক ।

মুশরিকদের কেন হত্যা করতে বলা হয় এর জবাব সুরা তওবা ৯:৭ আয়াতের তাফসীরে দেয়া আছে,ডঃমুজিবুর রহমান অনুবাদঃ তাফসীরে ইবনে কাসির ৮/৬৪৮ পৃষ্ঠাঃ মুশরিকদের চার মাসের অবকাশ দেয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি এই কারনে যে তাদের অপরাধ ছিলঃ

১/ তারা শিরক ও কুফুরি পরিত্যাগ করবে না এমনকি সন্ধি ও চুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিতও থাকবে না ।
২/ কাফের কুরাইশরা শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করেছিল ।
৩/ তাদের তথা কাফেরদের মিত্র বনু বকর রাসুল (সা) এর মিত্র খুযাআর ওপর আক্রমণ চালিয়ে দেয় । এমনকি হারাম শরিফের মধ্যেও তাদেরকে হত্যা করে।
৪/ এর উপরেই ভিত্তি করেই রাসুল (সা) কুরাইশদের উপর আক্রমণ চালান । 

সুতরাং বর্বর কাফেরদের অপরাধের জন্যই তাদেরকে করজোড় করে জিজিয়া দিতে বলা হয়েছে ।

প্রশ্নঃ ৮/ নিচের আয়াত সমূহ থেকে প্রমান হচ্ছে যে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না ?

* সুরা মায়েদা ৫:৫১ = হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।

* সুরা ইমরান ৩:২৮ = মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।

* সুরা নিসা ৪:৮৯ = তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।

* সুরা নিসা ৪:১৩৯ = যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।

* সুরা নিসা ৪:১৪৪ = হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে?

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:১৩ = মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে।

উত্তরঃ প্রথমে আমরা উপরের আয়াতেই মুল উদ্দেশ্য বর্ণনা করব এরপরে শেষে আমাদের দাবি উপস্থাপন করবঃ

= সুরা মায়েদা ৫:৫১ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরে, ৪ খণ্ড, ৮৫১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, এখানে আল্লাহ্‌ ইসলামের শত্রু ইহুদী ও খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন । তিনি বলেছেন তারা কখনো তোমাদের বন্ধু হতে পারে না । কেননা তোমাদের ধর্মের প্রতি তাদের হিংসা ও শত্রুতা রয়েছে । হ্যাঁ, তারা নিজেরা একে অপরের বন্ধু বটে । সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে ।

= সুরা ইমরান ৩:২৮ এই আয়াতের জবাব পরিষ্কার ভাবে বিস্তারিত দেয়া আছে, সুরা ইমরান ৩:১১৮ = হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।

এবং সুরা ইমরান ৩:১১৯ = দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন।

এবং সুরা ইমরান ৩:১২০ = তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।

আয়াত সমুহে পরিষ্কার হচ্ছে যে, যেহেতু অমুসলিমরা মুসলিমদের ভাল চায় না , মুসলিমদের ক্ষতিতে অমুসলিমরা খুশি হয়, ক্ষতি চায়, এবং মুসলিমদের ক্ষতি হলে অমুসলিমরা আনন্দিত হয় তাই আল্লাহ্‌ তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধু স্থাপন করতে নিষেধ করেছেন ।

= সুরা নিসা ৪:৮৯ আয়াতেই পরিষ্কার বলা হচ্ছে যে কাফেররা চায় মুসলিমরাও তাদের সাথে কাফের হয়ে যাক তাই আল্লাহ্‌ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন । তবে পরের আয়াতেই আবার আল্লাহ্‌ বলছেন তথা সুরা নিসা ৪:৯০ = কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এভাবে আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে এবং স্বজাতির সাথেও যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদেরকে প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতঃপর যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদের কে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ দেননি। - এই আয়াত থেকে এটি বুঝা যাচ্ছে যে যদি অমুসলিমরা শান্তি চুক্তি করে তাহলে তাদের সাথে চুক্তি করা যাবে ।

= সুরা নিসা ৪:১৩৯ = এই আয়াতের ব্যাখ্যা , ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসির, ৪ খণ্ড, ৫৯৮ পৃষ্ঠাঃ হযরত আলী (রা) এই আয়াত পাঠ করে ধর্মত্যাগীদের বলতেন তওবা করে নেও ? এরপরে আল্লাহ্‌ বলেন এই মুনাফিকদের অবস্থা এই যে শেষে তাদের অন্তরে মোহর লেগে যায় । তাই তারা মুমিনদের ছেড়ে কাফেরদের বন্ধু রুপে গ্রহণ করে ।এই দিকে বাহ্যত মুমিনদের সাথে মিলামিশা করে ঐ দিকে কাফেরদের সাথে বসে মুমিনদের নিয়ে উপহাস মূলক কথা বলে বেশ আনন্দ উপভোগ করে । তাদেরকে বলে আমরা মুসলমানদের বোকা বানিয়ে দিয়েছি । আসলে আমরা তোমাদেরই সঙ্গী । - সুতরাং আয়াতটি মুনাফিক মুরতাদদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে যারা মুসলিমদের ছাড়া কাফেরদের বন্ধু রুপে গ্রহণ করেছে । এবং মুসলিমদের নিয়ে হাঁসি তামাশা করেছেন ।

= সুরা নিসা ৪:১৪৪ এই আয়াতের ব্যাখ্যা , ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরের, ৪ খণ্ড , ৬০৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে, তাদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা রাখতে, তাদের সাথে সর্বদা উঠাবসা করতে, মুসলিমদের গুপ্ত কথা তাদের নিকট প্রকাশ করতে, তাদের সাথে গোপন সম্পর বজায় রাখতে আল্লাহ্‌ মুসলিমদের নিষেধ করেছেন ।

= সুরা মুমতাহিনা ৬০:১৩ সঠিক কথাই কুরআন বলেছে । আল্লাহ্‌ যে জাতির প্রতি অখুশি আমরা তাঁর বান্দা হয়ে কেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব করব। উদাহরণ স্বরূপ ধরুন কোন এক দেশের প্রধান ঘোষণা দিল যে আমি মায়ানমারের সরকারের প্রতি অখুশি কোন মানবতাবাদী যেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব না করে কারন তারা অন্যায়ভাবে মুসলিমদের হত্যা করেছেন । আচ্ছা এখানে কি আমরা মায়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে ভুল করেছি? উত্তর হচ্ছে না । একই উত্তর কুরানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌কে যারা অস্বীকার করে আবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে, মুসলিমদের হত্যা করতে চায় তাদের সাথে আমরা কেন বন্ধুত্ব করব ?

= সুরা মায়েদা ৫:৫৭ = হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। - যেহেতু অমুসলিমরা ইসলাম নিয়তে হাঁসি তামাশা করে, উপহাস করে তাই এদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না ।

= সুরা আন’য়াম ৬:৭০ = তাদেরকে পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। কোরআন দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দিন, যাতে কেউ স্বীয় কর্মে এমন ভাবে গ্রেফতার না হয়ে যায় যে, আল্লাহ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী নেই এবং যদি তারা জগতের বিনিময়ও প্রদান কবে, তবু তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। একাই স্বীয় কর্মে জড়িত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে-কুফরের কারণে।

আপনাকে নিয়ে , আপনার বাবা মাকে নিয়ে, আপনার দেশ নিয়ে যদি কেউ অন্যায় ভাবে হাঁসাহাঁসি করে, তামাশা করে, অপমান করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

সামাজিকতার খাতিরে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা,চলা ফেরা ইত্যাদি জায়েজঃ

* নবী মুহাম্মদ (সা) অমুসলিমদের সাথে রাষ্ট্রীয় শান্তি চুক্তি করেছেন যাকে আমরা "মদিনা সনদ" বলা হয় ।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে। - এখানে ইহুদীদের প্রতিবেশি বলা হয়েছে ।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৫১৩, সহিহ হাদিসঃ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইয়াহুদী হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮ = ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:৯ = আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।

* আল ইসাবা,৪/৩৪৭ এবং সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/৩০৬, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ): হযরত উমর (রা) বলেন সাফিয়ার এক দাসী হযরত উমর (রা) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলো যে, হযরত সাফিয়া ইহুদী সংস্কৃতি অনুকরনে শনিবারকে গুরুত্ব দেন এবং ইহুদীদের সাথে ভাল আচরণ করেন । হযরত উমর (রা) , হযরত সাফিয়া (রা) থেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন। হযরত সাফিয়া (রা) জবাবে জানালেন! যখন আল্লাহ্‌ তা'লা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দান করেছেন তখন থেকে আমি শনিবারকে আর পছন্দ করি না । অন্যদিকে আমার কিছু ইহুদী আত্মীয় আছে । আমি তাদের আত্মীয়তার হক অনুযায়ী ভাল আচরণ করি । তিনি হযরত উমর (রা) কে এই জবাব জানিয়ে পাঠালেন অন্যদিকে সেই বাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে আমার বিরুদ্ধে এই কাজে কে উস্কে দিয়েছে ? সে সত্যি সত্যি জবাব দিল শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে । হযরত সাফিয়া (রা) বললেন ঠিক আছে । আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম । - খেয়াল করুন হযরত সাফিয়া (রা) ইহুদীদের সাথে আত্মীয়তার অধিকার হিসেবে ভাল ব্যাবহার করেছেন ।

সুতরাং অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে, কি যাবে না এর কারন হিসেবে আমরা জানতে পারলামঃ

১/ ইহুদী খৃষ্টান এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মুসলিমদের ক্ষতি করতে চান । ইসলামের ধ্বংস চায় ।

২/ মুসলিমদের দুক্ষে অমুসলিমরা খুশি হত , মুসলিমরা যদি তাদের সাথে ভাল ব্যাবহার করত এরপরেও অমুসলিমরা তাদের অমঙ্গল চাইত ।

৩/ কাফেররা ইসলাম নিয়ে হাঁসি তামাসা করত মুসলিমদের অপমান করত, নবী মুহাম্মদ (সা) কে নিয়ে ব্যাঙ বিদ্রূপ করত ।

৪/ কাফেররা চাইত মুসলিমরাও তাদের মত কাফের হয়ে যাক, তাদের মত পাথরের পূজা করুক ।

৫/ কাফেররা মুসলিম সেজে , মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত এবং আবার কাফেরদেড় দলে যোগ দিয়ে বলত আমরা মুসলিমদের ধোঁকা দিয়েছি আসলে আমরা কাফেরদের দলের লোক ।

৬/ যেসব অমুসলিমরা শান্তি প্রিয় , তাদের সাথে সামাজিকতার সম্পর্ক , চলাফেরা করা ইসলামে বৈধ ।

৭/ ইসলাম উগ্র অমুসলিমদের সাথে সব রকমের বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছে । ব্যাস ।

প্রশ্ন ছুড়ে দিলামঃ

১/ যারা সমাজের ক্ষতি চায় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

২/ যারা আপনার পরিবার নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৩/ যারা আপনাকে অপমান করে, আপনার দেশ নিয়ে অপমান করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৪/ যারা আপনার খুশিতে, কষ্ট পায় আর আপনার দুক্ষে আনন্দিত হয় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ত করবেন ?

৫/ আপনি কি ধর্ষকদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৬/ যারা চায় আপনিও তাদের মত পাথর পূজা করেন এবং এর জন্য আপনাকে জবরদস্তী করে আপনি কি এদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন?

৭/ যারা দেশের আইন মানে না আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৮/ যারা চোর, ডাকাত , লুইচ্চা আপনি কি এদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৯/ যারা আপনাকে ওয়াদা দিয়ে , কথা রাখে না আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবেন ?

১০/ যারা সর্বদা মিথ্যা কথা বলে , মানুষকে ধোঁকা দেয় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

প্রশ্ন ৯/ নিচের আয়াত দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে অমুসলিম পিতামাতা বা আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না ?

* সুরা তওবা ৯:২৩ = হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী।

* সুরা আনকাবুত ২৯:৮ = আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।

* সুরা লুকমান ৩১:১৫ = পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।

উত্তরঃ উপরের কোন আয়াতেই এই কথা নাই যে অমুসলিমদের পিতামাতাদের সাথে আত্মীয়ার সম্পর্ক রাখা যাবে না বরং উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে যে অমুসলিম পিতামাতা যদি এমন কোন কাজ করতে বলে যেটা ইসলামের খেলাফ সেই কথা মানা যাবে না । উদাহরণ মুসলিম পিতা মাতা যখন কোন নাস্তিক সন্তানকে বলে যে বাবা ইসলামে ফিরে আয় তখন কি সে ইসলামে ফিরে আসে ? উত্তর হচ্ছে না । কারন নাস্তিকের বিশ্বাস হচ্ছে নাস্তিক ধর্ম সত্য ! একই ক্ষেত্রে ইসলামের ব্যাপারেও । ইসলাম মনে করে ইসলাম সত্য । তাই যদি কোন পিতা মাতা ইসলামের খেলাফ কিছু করতে জবরদস্তী করে তাহলে তাদের কথা মানা জানে না কিন্তু তাদের সাথে খারাপ আচরনও করা যাবে না । তাদের সাথে সর্বদা ভাল ব্যাবহার করতে হবে । যেমন সুরা আনকাবুত ২৯:৮ = আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি।

* সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৩ = তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহা র কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে `উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা ।

* সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৪ = তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।

* সুরা লুকমান ৩১:১৪ = আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৭৯, সহিহ হাদিসঃ আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।

পিতামাতার সাথে যদি সম্পর্ক করা না যায় তাহলে তাদের সাথে ভাল ব্যাবহার , তাদেরকে সেবা যত্নের কথা আসে কিভাবে ?

প্রশ্ন ছুড়ে দিলামঃ

১/ আপনার পিতামাতা যদি আপনাকে অন্যায় কাজ করতে বলে আপনি কি সেটা করবেন ?

২/ আপনার পিতামাতা যদি আপনাকে চুরি করতে বলে তাহলে কি আপনি করবেন?

৩/ আপনার পিতামাতা যদি আপনাকে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে বলে আপনি কি করবেন ?

সুস্থ উত্তর হচ্ছে না । আপনি তাদেরকে বুঝাবেন যে এসব অন্যায় কাজ । একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে এসব করা অন্যায় । এখান থেকে প্রমাণিত হল যে সব সময় পিতামাতার কথা মানা যায় না । ইসলামও তাই মনে করে । ইসলাম বিরুধি কাজে পিতামাতার কথা মানা যাবে না তবে এরপরেও তাদের সাথে উত্তম ব্যাবহার করা যাবে । ব্যাস ।

প্রশ্ন ১০/ সুরা কাসাস ২৮:৮৬ = আপনি আশা করতেন না যে, আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীর্ণ হবে। এটা কেবল আপনার পালনকর্তার রহমত। অতএব আপনি কাফেরদের সাহায্যকারী হবেন না। - এই আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে কাফেরদের সাহায্য করা যাবে না ?

উত্তরঃ কেন কাফেরদের সাহায্য করা যাবে না এই কারন আল্লাহ্‌ সামনের আয়াতেই বলেছেন যে, সুরা কাসাস ২৮:৮৭ = কাফেররা যেন আপনাকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিমুখ না করে সেগুলো আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হওয়ার পর আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি দাওয়াত দিন এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।

উপরের আয়াত সমুহের মুল ব্যাখ্যা বিস্তারিত, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরের, ১৫ খণ্ড, ৫৪৮ , ৫৮৯ পৃষ্ঠায় বলা হুয়েছেঃ আল্লাহ্‌ তালা তাঁর এক বড় নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে রাসুল (সা) এর উপরে ওহী আসার আগে তিনি এই কথা কখনো ভাবেননি যে তাঁর উপরে আল্লাহ্‌র ওহী অবতীর্ণ হবে এটি আল্লাহ্‌র একটি অনুগ্রহ । সুতরাং কাফেরদের সাহায্য করা হওয়া তাঁর জন্য মোটেও সমীচীন নয়।তাদের থেকে পৃথক থাকাই তাঁর জন্য উচিৎ । তাঁর ঘোষণা দেয়া উচিৎ যে তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধাচরনকারী । অতপর আল্লাহ্‌ বলেন, যে নবী (সা) তোমার প্রতি আল্লাহ্‌র আয়াত নাজিল হওয়ার পর এই কাফেররা যেন কিছুতেই তোমাকে সেগুলা থেকে বিমুখ না করে । অর্থাৎ এই লোক গুলো যে তোমার এবং তোমার দ্বীনের বিরুদ্ধাচারন করছে এবং তোমার অনুসরন হতে জনগণকে ফিরিয়ে রাখছে এতে তুমি যেন তোমার কাজ হতে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বিরত না হও । বরং তুমি তুমার কাজ চালিয়ে যাও । আল্লাহ্‌ তোমার কালেমাকে পুরোপুরি , তোমার দ্বীনের পৃষ্ঠপোষকতাকারী, তোমার রিসালাতকে জয়যুক্তকারী । এবং তোমার দ্বীনকে সমস্ত দ্বীনের উপর বুলন্দকারী । সুতরাং তুমি জনগণকে তোমার রবের দিকে আহ্বান করতে থাকো যিনি এক এবং শরীকবিহীন । তোমার জন্য এটি উচিৎ নয় যে তুমি কাফেরদের সাহায্য করবে।

সুতরাং যেহেতু কাফেররা নবী মুহাম্মদ (সা)কে ইসলাম প্রচারে বাধা দিত, নবী মুহাম্মদ (সা)এর ব্যাক্তি স্বাধীনতায় বাধা দিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিত তাই আল্লাহ্‌ নবী (সা) কে এইসব উগ্র কাফেরদেরকে সাহায্য করতে নিষেধ করেছেন । আচ্ছা আপনার কোন কাজে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে আপনি কি তাকে সাহায্য করবেন ? ধরুন একটি বিড়ির দোকান আপনি বন্ধ করতে চাইছেন এখন যারা বিড়িখর তারা আপনার এই কাজে বাধা দিচ্ছে এবং আপনাকে নিয়ে তারা ষড়যন্ত্র করছে এখন আপনি কি এই টাইপের উগ্র মানুষদের সাহায্য করবেন?

ভদ্র অমুসলিমদের বিপদে সাহায্য করা জায়েজঃ

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না তাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও দয়া করেন না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৩, হাসান হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবুল কাসিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৭০৭, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের প্রতিটি হাতের জোড়ার জন্য তার উপর সদকা রয়েছে। সূর্য উঠে এমন প্রত্যেক দিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সদকা।’

* সহিহ বুখারি, ৫৬৪৯, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর ।

* সুরা নিসা ৪:৫৮ = নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের প্রাপকদের পৌঁছে দিতে । তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায় পরায়নতার সাথে বিচার করবে ।

* সুরা তাওবা ৯:৬ = আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।

প্রশ্ন ১১/ সুরা ফাতাহ ৪৮:১৬ = গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। তখন যদি তোমরা নির্দেশ পালন কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। আর যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছ, তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন। - এই আয়াতে অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে যদি না তারা মুসলিম হয় ?

উত্তরঃ পাকিস্তানীরা যখন বাংলাদেশের উপর নির্যাতন চালাচ্ছিল । তখন যদি কোন বাংলাদেশ প্রেমী সাহসী নেতা বলতেন যে , তোমাদেরকে খুব দ্রুত যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়া হবে , তখন ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তানীরা আমাদের কাছে পরাজয় স্বীকার না করে । আচ্ছা এই ঘোষণা কি অন্যায় ? নিজের দেশকে বাঁচানর জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়া কি অন্যায় হয়েছে ?

ইসলামে যুদ্ধনীতির আইন হলঃ

* সুরা বাকারা ২:১৯০ = তোমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সীমালঙ্ঘন করো না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করে না।

* সুরা বাকারা ২: ১৯৪= যে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে, তোমরাও তার উপর আক্রমণ করো। যেরূপ সে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে ।

* সুরা তওবা ৯:১৩= তোমরা কেন এমন কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না , যারা তাদের কসম ভঙ্গ করেছে এবং রাসুলকে বহিষ্কার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে । আর তারাই প্রথমে তোমাদের সাথে শুরু করেছে । তোমরা কি তাদের ভয় করছ ? অথচ আল্লাহ্‌ অধিক উপযুক্ত যে, তোমরা তাঁকে ভয় করবে । যদি তোমরা মুমিন হও ।

* সুরা তওবা ৯:৩৬= তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই করো যেমনিভাবে তারা সকলেই তোমাদের সাথে লড়াই করে।

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮ = দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি ঘর থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি সদয়,ভাল,উত্তম ব্যাবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ্‌ তোমাদের নিষেধ করেন না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ন্যায় পরায়ণদের ভালবাসেন ।

প্রশ্ন ১২/ নিচের আয়াত গুলো থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে আল্লাহ্‌ কাফেরদেরকে অন্যায় ভাবে অপমান করছেন ?

* সুরা বাকারা ২:১৬১ = নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা'নত।

* সুরা ইমরান ৩:১২ = কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান।

* সুরা আরাফ ৭:১৭৯ = আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।

* সুরা ইমরান ৩:১৫১ = খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।

উত্তরঃ আমাদের সহজ উত্তর হলঃ

১/ উপরের আয়াতে অন্যায় ভাবে মোটেও কাফেরদের অপমান করা হয়নি। তাদের উপযুক্ত সমালোচনা করা হয়েছে । আরও হলে ভাল হত।কারন,কাফেররা প্রচুর বেইমানী করেছে মুসলিমদের সাথে ।

২/ আপনি তো নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী তাই না , আপনি তো এসব লানতে বা আজাবে বিশ্বাস করেন না, যেখানে আপনি আল্লাহ্‌কেই মানেন না । তাহলে আল্লাহ্‌ যদি তাঁকে অস্বীকার করার জন্য তাঁর বান্দাদের উপর অভিশাপ দেন, জাহান্নাম দেন এখানে আপনি জনাব আপত্তি করার যে ? আপনার যদি এতই কষ্ট লাগে তাহলে আপনি এই আয়াতের উপর আমল করুন যেখানে আল্লাহ্‌ বলছেন । * সুরা বাকারা ২:১৬০ = যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।

৩/ কাফের মানে হল যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে । এখন আল্লাহ্‌র জাহান্নামের কথা শুনে যদি আপনার কষ্ট লাগে তাহলে আপনি ইমান এনে ফেলুন এখনি , জান্নাতে যেতে পারবেন তবে আপনাকে তওবা করতে হবে । নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা জাহান্নামের কথা বিশ্বাস করে না আবার জাহান্নামের কথা শুনলে ভয় পান কেন ? আপনারা কি সিজফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত নাকি ?

৪/ সুরা বাকারা ২:২৫৭ = যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। - এমান আনুন উপরের আজাব আপনি পাবেন না ।

৫/ সুরা আরাফ ৭:১৭৭ = তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে। - এই আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে কাফেররা আয়াত অস্বীকার করে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছে । তাই কাফেররা যদি তওবা করে তাহলে তারা মাফ পাবে ।

৬/ তাই আল্লাহ্‌র আজাবকে যদি ভয় পান বা আপনার কাছে অপমান মনে হয় তাহলে আপনি এখনি ইমান এনে তওবা করুন তাহলেই আল্লাহ্‌র প্রিয় হয়ে যাবেন ।আল্লাহ্‌র কাছে অনেক ভাল বান্দা হতে পারবেন ।আপনি ফেরেশতাদের কাছে সেলেব্রেটি হতে পারবেন। গ্যারান্টি দিলাম ।




এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post