মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) দাসী নাকি স্ত্রী?


বিষয়ঃ মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) দাসী নাকি স্ত্রী?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

=================

ভূমিকাঃ হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) নবীজি (সা) এর দাসী ছিলেন নাকি স্ত্রী এই বিষয় আজকে লেখার চেষ্টা করবো। মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) নবীজি এর স্ত্রী ছিলেন এমন মর্মে প্রমাণ রয়েছে কিন্তু এই প্রমাণ গুলোকে নাস্তিকরা অস্বীকার করে স্রেফ দাসী ছিলেন এই বিষয়কে বেশি প্রচার করে ইসলামের বদনাম করার পয়তারা করে। মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) নবীজি (সা) এর দাসী হলেও আমার যেমন কোনো সমস্যা নেই তেমনি স্ত্রী হলেও আপত্তি নেই। কারণ উনি দাসী ছিলেন নাকি স্ত্রী এই বিষয় মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি উনি নবীজি (সা) দাসীও হলেও নাস্তিকদের অভিযোগ করার ভিত্তি নেই।

ইসলামের দৃষ্টিতে দাসী আসলে কি?

দাসী শব্দ পড়লে অনেকের মনে এক প্রকার খারাপ চিন্তার উদয় হয় যে দাসী মানে যাকে নির্যাতন করা হয়, অত্যাচার করা হয় কি অমানবিক কাজ দাসীদের সাথে করা হয় কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিকে দাসীকে নির্যাতন করা তো দূরে থাক বরং দাসীর খাবারের দায়িত্ব, পোশাকের দায়িত্ব,সম্মানের দায়িত্ব, এমনকি দাসীর যৌন চাহিদা পূর্ণ করার দায়িত্ব ইসলামের দৃষ্টিতে মুনিবের। তবে এই ক্ষেত্রে দাসীর বিপরীতে বাদীপত্নী শব্দ ব্যাবহার করলে সেই খারাপ চিন্তা আসবে না। তাই বাদীপত্নী অথবা দাসী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জেনে নিতে হবে।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২০৪৮ হাসান সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ বিবাহের আগে তালাক নাই এবং মালিকানা লাভের আগে দাসমুক্তি নাই। -ihadis.com

পাঠক খেয়াল করুন,এখানে বিবাহের সাথে তালাক এবং মালিকানা লাভের সাথে দাসমুক্তি তুলনা করা হয়েছে। এই হাদিস থেকে এটা পরিস্কার যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যেমন মুনিবের সাথে দাসীর সম্পর্ক ইসলামে তেমন। হাদিসটি পড়ুন। 

মিশকাতুল মাহাবিহ,হাদিসঃ১৮৯৮,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন,রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃপ্রত্যেক ‘তাসবীহ’ অর্থাৎ সুবহা-নাল্ল-হ বলা সদাক্বাহ্, প্রত্যেক ‘তাকবীর’ অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলা সদাক্বাহ্, প্রত্যেক ‘তাহমীদ’ বা আলহামদুলিল্ল-হ বলা সদাক্বাহ্। প্রত্যেক ‘তাহলীল’ বা ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্।নেককাজের নির্দেশ দেয়া,খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা সদাক্বাহ্।নিজের স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাও সদাক্বাহ্সাহাবীগন আরয করলেন,হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নিজের কামভাব চরিতার্থ কতে তাতেও কি সে সাওয়াব পাবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আমাকে বলো,কোন ব্যক্তি যদি হারাম উপায়ে কামভাব চরিতার্থ করে তাহলে সেকি গুনাহগার হবে না? ঠিক এভাবেই হালাল উপায়ে স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে কামভাব চরিতার্থকারী সাওয়াব পাবে।-ihadis.com

ইসলামের বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ খণ্ড, ৫০২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

রাসুল (সা) বনু কুরাইজার রায়হানাকে বাদীপত্নী রুপে গ্রহণ করলেন। পরে তাঁকে মুক্তি দিয়ে দিলে তিনি তাঁর পরিবার পরিজনের সাথে মিলিত হলেন। ……রাসুল (সা) এর দুই জন বাদীপত্নী ছিলেন; মারিয়া কিবতীয়া এবং রায়হানা বিনতে শামউন

ইসলামের দৃষ্টিতে বাদী হচ্ছে স্ত্রীর মতো অথবা বলা যায় এক প্রকার বৈবাহিক বন্ধনের মতো। নাস্তিকরা বলে থাকে ইসলামে দাসী মানে নাকি যৌনদাসী- কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। কারণ যদি দাসীকে স্রেফ যৌন কর্মের জন্য রাখা হতো তাহলে দাসীর দায়িত্ব মুনিবকে নেয়ার কথা ইসলামেই থাকতো না। এটাই প্রমাণ করে যৌনদাসীর ধারণা ইসলামের দৃষ্টিতে বাতিল।

সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৫১৬১,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদেরকে খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তাই পরতে দাও। আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না। -ihadis.com

যদি শুধু যৌনকর্মই আসল উদ্দেশ্য হয় তাহলে বাদীর খাবাদের দায়িত্ব, পোশাকের দায়িত্ব নেবার দরকার কি? ইসলাম কেন বাদীপত্নীর দায়িত্ব নিতে বলছে? যেই সময়ে দাসীদেরকে নির্যাতন করা অত্যাচার করা ছিল একেবারেই স্বাভাবিক সেই সময় ইসলাম দাসীকে বাদীপত্নী হিসেবে গ্রহণ করে সকল মানবিক প্রয়োজনের দায়িত্ব অর্পণ করছে মুনিবের উপর, ভাবা যায়? এখানেই না শুধু, দাসীর সাথে উত্তম আচরণ ও আদম শিখাতে বলেছে ইসলাম। ইসলাম বাস্তবে কি বলে আর নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে কিভাবে অন্ধবিশ্বাস করছে? মুসলিমরা নয় বরং নাস্তিকরাই ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করে।

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ১১১৬, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃতিনি (আবূ মূসা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার লোকের সাওয়াব দ্বিগুণ করা হবে। যে গোলাম আল্লাহ ও তার মনিবের হাক্ব সঠিকভাবে আদায় করেছে। তার সাওয়াব দ্বিগুণ করা হবে। যে লোকের সুন্দরী বাঁদীঁ ছিল, সে তাকে উত্তম আচরণ ও আদব-কায়দা শিখিয়েছে এবং তাকে পরবর্তীতে মুক্ত করে বিয়ে করেছে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্য তার সাওয়াবও দ্বিগুণ করা হবে। পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি যে লোক ঈমান এনেছে, তারপর পরবর্তী কিতাব (কুরআন) আসার পর তার উপরও ঈমান এনেছে, তাকেও দ্বিগুণ সাওয়াব প্রদান করা হবে।-ihadis.com

মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) দাসী ছিলেনঃ

সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ৩৯৫৯,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর কাছে একটি বাঁদি ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর সাথে লেগে থাকলেন।পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বাঁদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌পাক নাযিল করেনঃ (আরবি) “হে নবী আল্লাহ্‌আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীমঃ ০১) নাযিল করেন।-ihadis.com

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তাফা (সা)”, ৩ খণ্ড, ৩০৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত মারিয়া (রা) দাসী ছিলেন। মহানবী (সা)-এর ছেলে হযরত ইব্রাহীম তাঁর উদর থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন। ইসকান্দারিয়ার রাজা মুকাওকাশ হাদিস সরূপ মহানবী (সা) কে হযরত মারিয়াকে দান করেছিলেন। তিনি হিজরী ১৬ সনে হযরত উমর (রা) এর খিলাফতকালে ইন্তেকাল করেন। “জান্নাতুল বাকী” গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

ই,ফাঃ সীরাত বিশ্বকোষ, দ্বাদশ খণ্ড (১২ খণ্ড), ১৮৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

মারিয়া বিনত শামউন কিবতিয়া- নবী নন্দন ইব্রাহীমের গর্বধারিণী যাহার সম্পর্কে নবী কারীম (সা) বলেন, “তাহাঁর পুত্রই তাহাঁকে স্বাধীন করিয়া দিয়াছে”

আর রাহীকুল মাখতুম, গ্রন্থে ৪৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

দাসীদের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, রাসুল (সা) এর দুজন দাসী ছিলেন। এদের একজন হচ্ছেন মারিয়া কিবতিয়া। মিসরের শাসনকর্তা মকাওকিস তাকে উপঢৌকন হিসাবে প্রেরণ করেন। তার গর্ভ থেকে রাসুল (সা) এর সন্তান হযরত ইব্রাহীম জন্ম নেন। 

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (হাঃফি)  “নবীয়ে রহমত” ৪১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

রাসুল (সা) এর ইনতিকালের সময় তাঁর দুজন দাসী বর্তমান ছিলেন যাদের মধ্যে মারিয়া (রা) বিনতে শামউন ছিলেন অন্যতম। ইনি জাতিতে ছিলেন মিসরীয় কিবতী পরিবারের খ্রিষ্টান। মিসরের শাসনকর্তা মুকাওকিস তাঁকে রাসুল (সা) এর খেদমতে উপহার হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। সায়িদুনা ইব্রাহীম (রা) ছিলেন হযরত মারিয়া (রা) এর গর্ভজাত।

মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) স্ত্রী ছিলেনঃ

পাঠক এখন আপনাদের সামনে সেসব প্রমাণ তুলে ধরবো যেখান থেকে প্রমাণ হয় যে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) নবীজি (সা) এর স্ত্রী ছিলেন। এই প্রমাণ গুলো পেশ করার উদ্দেশ্য নাস্তিকরা এগুলোকে যাতে অস্বীকার করতে না পারে। আমরা জানি যে মিশরের রাজা হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া (রা)কে নবীজি (সা)এর কাছে উপকার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) সাথে যদি নবীজি (সা) বিয়ে না হতো তাহলে এই হাদিসে নবীজি (সা) কেন বলবেন মিশরদের সাথে উনার বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে? এটা থেকে পরিস্কার প্রমাণ পাওয়া যায় যে হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) এর সাথে নবীজি (সা) বিয়ে হয়েছিল।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৩৩৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা অদূর ভবিষ্যতে এমন এক এলাকা জয় করবে, যেখানে ক্বীরাত্ব (এক দ্বীনারের ২০ ভাগের একভাগ স্বর্ণমুদ্রা) উল্লেখ করা হয়।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা অচিরে মিসর জয় করবে এবং এটা এমন ভূখণ্ড যেখানে কীরাত্ব (শব্দ) সচরাচর বলা হয়। (সেখানে ঐ মুদ্রা প্রচলিত।) তোমরা তার অধিবাসীদের সাথে ভাল ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং আত্মীয়তা রয়েছে।’’অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সুতরাং যখন তোমরা তা জয় করবে, তখন তার অধিবাসীর প্রতি সদ্ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং আত্মীয়তা রয়েছে।’’ অথবা বললেন, ‘‘দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে।’’-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৬৩৮৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্রই তোমরা মিশর বিজয় লাভ করবে। সেটা এমন একটি দেশ, যেখানে ‘কীরাত’ নামে মুদ্রা খ্যাত। তোমরা যখন সে দেশ বিজয় লাভ করবে তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। কারণ তাদের জন্য দায়িত্ব ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। কিংবা তিনি বলেছেনঃ যিম্মাদারী ও বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে। তোমরা যখন সেখানে দু’জন লোককে একটি ইটের স্থান নিয়ে বিবাদ করতে দেখবে তখন সেখান থেকে চলে আসবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তারপর আমি যখন ‘আবদুর রহমান ইবনু শুরাহ্বীল ইবনু হাসান ও তাঁর ভাই রাবী’আকে একটি ইটের স্থান নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করতে দেখলাম তখন আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।-ihadis.com

উলামাগণ রাসুল (সা) এর বৈবাহিক সম্পর্ক এভাবেও বর্ণনা করেছেন, হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১৭৫৩, সহিহ হাদিসে একই হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেই হদিসের নিচে বর্ণিত হয়েছে,

উলামাগণ বলেন, তাদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্মীয়তা এভাবে যে, ইসমাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা হাজার (বা হাজেরা) তাদেরই বংশের ছিলেন। বৈবাহিক সম্পর্ক এভাবে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুত্র ইব্রাহীমের মা মারিয়াহ তাদের বংশের ছিলেন।

এমন প্রমাণ পাওয়া যায় যেখানে সরাসরি এটা বর্ণিত হয়েছে যে মারিয়া আল কিবতিয়াকে নবীজি (সা) বিয়ে করেছিলেন। ই;ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, দ্বাদশ খণ্ড, (১২ খণ্ড), ১৮৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কালক্রমে মারিয়া নবী সহধর্মিণীর মর্যাদা লাভ করেন………

নিন্ম লিখিত রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পারি, মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কে নবী (সা) বিয়ে করেছিলেন,

আবদুল্লাহ আল-জুবাইরি থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: এর পরে নবী শামউনের কন্যা মারিয়াকে (তাজাওয়াজু) বিয়ে করেছিলেন। এটি সেই মারিয়া যাকে আলেকজান্দ্রিয়ার শাসক মাকাউকিস উপহার হিসেবে নবীর কাছে পাঠিয়েছিলেন।(১) 

আইনের অধ্যাপক খালেদ আবু এল ফাদলের কাছেও নবী মুহাম্মদের সঙ্গী থেকে একটি প্রতিবেদন রয়েছে যে তিনি তাকে মুক্ত করেছিলেন এবং তারপর মারিয়াকে বিয়ে করেছিলেন,

মারিয়াহ যিনি উম্মে ইব্রাহিম নামে পরিচিত। আনাস (রা) বর্ণনা করেছেন যে তিনি নবীর নিকটতম ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন কপ্টিক কুমারী যা আলেকজান্দ্রিয়ার মিশরীয় গভর্নর আল-মুকাকিসের কাছ থেকে উপহার হিসাবে নবী মুহাম্মদ (সা)কে দেওয়া হয়েছিল। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ) তাকে মুক্ত করে দেন এবং তারপর তাকে বিয়ে করেনমারিয়াহ নবীকে তার পুত্র ইব্রাহিমের জন্ম দেন, যিনি নবীর নিজের মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে শিশু অবস্থায় মারা যান। কথিত আছে, সাহাবী হাতিব ইবনে আবি বালতা মারিয়াহর ইসলাম গ্রহণে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। নবীর মৃত্যুর পর, মারিয়া উমরের খিলাফতের সময় মারা না যাওয়া পর্যন্ত মদিনায় বসবাস করতে থাকেন।"(২) 

ডাক্তার সাউকি আবু খালিল (al-Tabaqat Al-Kubra, volume 1, page 260) সুত্রে বর্ণনা করেছেন,

আল্লাহর রসূল মারিয়াহ আল কিবতিয়াকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি তার ছেলে ইব্রাহিমের মা হয়েছিলেন এবং হাসান ইবনে সাবিত শিরিনকে বিয়ে করেছিলেন। আল-মুকাকিসের বাকী উপহারের মধ্যে ছিল ধূসর খচ্চর দুলদুল যারা মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের সময় পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তিনি বিনহা থেকে কিছু মধু, কিছু সুগন্ধি, সূক্ষ্ম মিশরীয় লিননের বিশটি পোশাক এবং একটি কাঁচের পেয়ালা পাঠিয়েছিলেন যা থেকে নবী পান করতেন। তিনি তার কাছে একজন ডাক্তারও পাঠান, কিন্তু নবী তাকে বললেন: 'তুমি তোমার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে যাও, কারণ আমরা এমন একটি জাতি যারা ক্ষুধার্ত না হওয়া পর্যন্ত খাই না এবং যখন আমরা খাই তখন তৃপ্ত হয় না। (৩) 

Al-Fawz al-Kabir fi Usul al-Tafsir – Shah Waliyullah সুত্রে বর্ণিত হয়েছে, 

মারিয়াহ ছিলেন একজন কপ্টার মেয়ে, যাকে মিশরের রোমান গভর্নর আল-মুকাকিস দ্বারা মহানবীকে পেশ করেছিলেন। মহানবী (সা.) তাকে বিয়ে করেন এবং তার থেকে তার পুত্র ইব্রাহিমকে আশীর্বাদ করা হয় যে শৈশবেই মারা যায়।(৪) 

শায়েখ আল্লামা শিবলি নোমানি (রহ) থেকে বর্ণিত,

নবী মুহাম্মদ (সা) কাছে দুজন মেয়েকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। একজন ছিলেন মারিয়া আল কিবতিয়া যার সাথে রাসুল (সা) এর বিয়ে হয়েছিল এবং অন্যজন হল শিরিন যার বিয়ে হয়েছিল হাসান বিন সাবেত এর সাথে। ইমাম তাবারি (রহ) বলেন মারিয়া আল কিবতিয়া এবং শিরিন প্রকিত বোন ছিলেন পক্ষান্তরে হাতিব ইবনে আবি বালটার থেকে জানা যায় নবী (সা) এর কাছে যাওয়ার আগেই তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এখানে উল্লেখ্য যে তাঁরা কৃতদাস মেয়ে ছিলেন না এবং তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। অতএব আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত করা উচিৎ যে মারিয়া আল কিবতিয়া নবিজির পরিবারের সাথে বিবাহিত স্ত্রী হিসেবেই প্রবেশ করেছিলেন বরং কৃতদাসী হিসেবে নয়।(৫) 

একজন আইরিশ বাইবেলের পণ্ডিত ও ধর্মতত্তবিদ, রবার্ট হেনরি চার্লস উল্লেখ করে লিখেছেন,

মুহাম্মদ এই কপটদের সাথে যোগাযোগ করতে এসেছিলেন এবং তাঁদের কাহিনী শুনেছেন । তিনি মারিয়া নামে এক কপট মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর অনুসারীদের বিবেচনা করে মিশরের কপটদের প্রতি বিশেষভাবে সদয় হতে পরামর্শ দিয়েছেন।(৬)

আরও পড়ুন মারিয়া আল কিবতিয়া (রা)কে নবীজি (সা) পরবর্তী সময়ে বিয়ে করে নেনঃ

https://discover-the-truth.com/2016/07/14/prophet-muhammeds-wife-mariyah-maria/

https://discover-the-truth.com/2016/07/20/maria-the-copt-wife-of-prophet-muhammed/

যৌক্তিক সিদ্ধান্তঃ

যদিও ইসলামের আইন অনুযায়ী বাদীপত্নীর সাথে সম্পর্ক বৈধ কিন্তু উপরের সার্বিক প্রমাণ সামনে রাখলে এটা পরিস্কার বুঝা যায় যে নবী মুহাম্মদ (সা) মারিয়া আল কিবতিয়া (রা)কে প্রথমে দাসী হিসেবে গ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে মুক্ত করে বিয়ে করে নেন। হাদিসটি পড়ুন।

সুনানে আন নাসায়ি, হাদিসঃ ৩৫৯৪ এবং ৩৫৯৫ সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আমর ইবনে হারিস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুল (সা) দিনার দিরহাম, (স্বর্ণ মুদ্রা টাকা পয়সা), দাসদাসি কিছুই রেখে যান নি ,একটি সাদা খচ্চর ছাড়া, যাতে তিনি আহরন করতেন আর তাঁর হাতিয়ার রেখে যান । আর তাঁর জমিন যা তিনি আল্লাহ্‌র রাস্তায় দান করে যান।-ihadis.com

এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হয়েছে তিনি তাঁর কোনো দাস অথবা দাসী রেখে কিছুই রেখে যাননি এর মানে তাঁর সব দাসীদের তিনি মুক্ত করে দেন অথবা মুক্ত করে বিয়ে করে নেন। আর উপরে বর্ণিত প্রমাণ থেকে পরিস্কার যে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা)কে নবীজি (সা) বিয়ে করেছিলেন পরবর্তী সময়ে। একটি প্রশ্ন এখানে আসতে পারে যে যদি মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) নবীজি (সা) এর স্ত্রী হবেনই তাহলে উনি কেন উনাকে নিজের জন্য হারাম করে নিতে যাবেন?

সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ৩৯৫৯,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর কাছে একটি বাঁদি ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর সাথে লেগে থাকলেন।পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বাঁদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌পাক নাযিল করেনঃ (আরবি) “হে নবী আল্লাহ্‌ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীমঃ ০১) নাযিল করেন।-ihadis.com

এর উত্তরে বলা হয়, যদি মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) আসলেই নবীজি (সা) স্ত্রী না হয়ে থাকেন তাহলেও আমার কোনো আপত্তি নেই। আর নবীজি (সা)কে উনার সকল স্ত্রী পছন্দ করতেন। আর আয়েশা (রা) ও হাফসা (রা) এর ঘটনা আগের হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ নবীজি (সা) মৃত্যুর আগে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা)কে মুক্ত করে বিয়ে করে নিয়েছিলেন এটাও যৌক্তিক হতে পারে যেহেতু হাদিসে স্পষ্ট যে উনি কোনো দাসী রেখে যান নাই। তবে যাই হউক না কেন, দাসী হোক অথবা স্ত্রী কোনো ক্ষেত্রেই নাস্তিকদের অভিযোগ করার সুযোগ নেই। পড়তে থাকুন।


মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) এর সাথে নবীজি (সা) কখনো জবরদস্তি করেছিলেন?


মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কে নবীজি (সা) কখনো কোনো বিষয় জবরদস্তি করেছিলেন এমন মর্মে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। আর নবীজি (সা) কখনো মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) সাথে খারাপ আচরণ করেন নাই এর প্রমাণ রয়েছে। হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) নবীজি (সা) ভালবাসতেন এমন মর্মেও প্রমাণ রয়েছে।


ই,ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, দ্বাদশ খণ্ড, (১২ খণ্ড) , ১৮৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


মুকাওকিসের পত্রে উল্লিখিত বালিকাদ্বয় মারিয়া ও সিরীন মদিনার পথে রওয়ানা হওয়ার পর পথিমধ্যেই হাতিব (রা) এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করেনমদিনায় উপনীত হওয়ার পর মারিয়া নবী করীম (সা) এর হারেমে প্রবেশ করিলেন এবং নবী নন্দন ইব্রাহীমকে গর্ভে ধারণ করিয়া ইব্রাহীম জননী নামে অভিহিত হন। সীরিনকে নবী দরবারের নন্দিত কবি হযরত হাসসানের হাতে তুলিয়া দেওয়া হয়। উক্ত দুই বালিকা ছিলেন সহোদরা।


যদি নবী মোহাম্মদ (সা)কে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) ঘৃণা করতেন তাহলে উনি কেন ইসলাম গ্রহণ করতে যাবেন? মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কি কখনো ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করেছিলেন? অথবা নবী মোহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর পরে কি উনি ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করেছিলেন? তাছাড়া নবী মোহাম্মদ (সা) কেমন মানবিক মনের মানুষ ছিলেন জানেত হাদিসটি পড়ুন।


শামায়েলে তিরমিযি, হাদিসঃ ২৬৬, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৮৪, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি-ihadis.com

যেই যুগে নারীদের প্রতি জুলুম করা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার সেই যুগে নবীজি (সা) কখনো কোনো দাস বা দাসীদের এমনকি নিজের স্ত্রীদের প্রতিও কখনো প্রহার করেননি। এই থেকেই আপনারা বুঝে নিতে পারেন  উনি কেমন মানবিক মনের মানুষ ছিলেন। অথচ নাস্তিকরা কিভাবে হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে? নাস্তিকরা কি দেখাতে পারবে নবীজি (সা) মারিয়া আল কিবতিয়া (রা)কে কখনো অত্যাচার করেছিলেন? নির্যাতন করেছিলেন? যৌন সহবাসের জন্য জবরদস্তি করেছিলেন? নবীজি (সা) কখনো বলেছিলেন তোমরা দাসীদেরকে ধর্ষণ করো? যদি না পারে তাহলে মুক্তমনে নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে কেন? কাদেরকে খুশি করার ইসলাম নিয়ে এমন ভয়ংকর জালিয়াতি করে যাচ্ছে মুক্তমনারা? প্রশ্ন গুলো নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যাচ্ছে।


নাস্তিক্যধর্মে দাসী সেক্স নিষিদ্ধ?


প্রতিটি মুক্তমনা নিজের নৈতিকতা নিজেই তৈরি করতে যে কোনো ধরণের মুক্তচিন্তা করতে স্বাধীন। কোনো নাস্তিক যদি চায় নিজের মায়ের সাথে যেমন যৌন সংগম করতে পারে তেমনি নিজের কন্যা সন্তানের সাথে যৌন সংগমও করতে পারে। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে উক্ত নাস্তিককে যা করতে হবে তা হচ্ছে সম্মতি নিতে হবে এবং সেই নারীর যেন ক্ষতি না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই নৈতিকতা ঠিক রেখে যে কোনো নাস্তিক যার সাথে ইচ্ছা তার সাথেই যৌন সংগম করার ব্যক্তিস্বাধীনতা পাবে। সিদ্ধার্থ নামের কোনো নাস্তিক চাইলেই পারবে কানিজ নামক মায়ের সাথে সম্মতিতে যৌন সংগম করতে। এগুলো সবই নাস্তিকদের মুক্তচিন্তার অংশ।


নাস্তিকদের বিখ্যাত গ্রন্থ, “আমার অবিশ্বাস” লিখেছেন নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের। এই বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিত সংকীর্ণ; আমার কোনো কাজ যেনো অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, এটুকু। 


এই নীতি সামনে রেখে যে কোনো নাস্তিক চাইলেই নিজের জন্য দাসী রাখার অধিকার পাবে। প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকদের কাছে নিজের মায়ের সাথে যৌন সংগম করার বৈধতা দেয়, নিজের নাস্তিক বোনের সাথে যৌন সংগম করার বৈধতা দেয় সম্মতিতে, এমনকি কোনো সমকামী নাস্তিক পিতা চাইলে নিজের সমকামী নাস্তিক ছেলের সাথে যৌন সংগম করার ব্যক্তিগত অধিকার রাখতে পারবে, সেখানে হাতেগোনা কিছু নাস্তিকরা দাসী রাখা অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাকে কেন খারাপ হিসেবে দেখাতে চায় সেটাই তো এক বড় সংশয়? নাস্তিকরাই না বলে কে কার সাথে সহবাস করবে সেটা একান্ত তার ব্যাপার? নাস্তিকরা কি নিজেদের নাস্তিক্যধর্মের নীতি-নৈতিকতা বোঝে না? 


পাঠক আপনারাই বলুন তো নিজের কন্যার সাথে পর্যন্ত যেখানে সেক্স করাকে নাস্তিক্যধর্ম অনুমতি প্রদান করে সেখানে নাস্তিকদের কাছে দাসীর সাথে যৌন সংগম কিভাবে অনৈতিক হতে পারে? নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কোনো মানুষ যদি নিজেকে অবতার দাবি করে এমনকি সে যদি দাসীকে ক্ষতি না করে সহবাস পর্যন্ত করে তাহলে নাস্তিকদের কাছে এটা কেন অনৈতিক হবে? ধরা যাক কোনো স্থানে দাসপ্রথা রয়েছে এখন কোনো নাস্তিক যদি চায় সেখান থেকে দাসী কিনে যৌন সংগম করবে এবং দাসীর কোনো ক্ষতি করবে না। প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে একে খারাপ বলার সুযোগ আছে? অবশ্যই না। কারণ দাসীর সাথে যৌন সংগম করা উক্ত নাস্তিকের ব্যক্তিগত অধিকার,অন্য নাস্তিকদের কাছে ভালো লাগুক অথবা না লাগুল সেটা সেই নাস্তিক কেন দেখতে যাবে? তাই না? কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের দাসীর সাথে যৌন সংগম করবে এই মুক্তচিন্তায় অন্য নাস্তিকরা কেন বাধা দিবে? তাই নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে দাসীর সাথে যৌন সংগম করা এমনকি দাসী রাখাও অন্যায় কিছু নয় বরং প্রতিটি নাস্তিক মুক্তমনার ব্যক্তিগত অধিকার।


উপসংহারঃ হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) স্ত্রী হোক অথবা দাসী, যাই হউক না কেন সেটা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই এমনকি নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কোনো নাস্তিক চাইলে দাসী রেখে তার সাথে সহবাস করার মুক্তচিন্তা করতে পারবে। নাস্তিকদের এটা বলার সুযোগ নেই যে দাসীর সাথে সহবাস করা অথবা দাসী রাখা অনৈতিক। তাই হযরত মোহাম্মদ (সা) এর দাসী ছিল অথবা উনি দাসীর সাথে সহবাস করতেন এসব ঘটনাকে অনৈতিক বলার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নাস্তিক্যধর্মে নেই।


রেফারেন্সঃ

(১) সহিহ আল মুস্তাদরাকে হাকিম, হায়দারাবাদ প্রকাশনী, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৬।


(২) The Search for Beauty in Islam: A Conference of the Books [Copyright 2006, by Rowman & Littlefield Publishers, Inc.], by Khaled Abou El Fadl, page 384.


(৩) Atlas on the Prophet’s Biography – Places, Nations, Landmarks (Al-sirah Al-Nabawiyah) [Darussalam, 2004] by Dr. Shawqi Abu Khalil, page 191.


(৪) Al-Fawz al-Kabir fi Usul al-Tafsir (Being a translation of Shah Waliyullah’s treatise on Principles of Quranic Exegesis) [Islamic Books Trust, 2013], by Shah Waliyullah, page 31, footnote 11. > Please bear in mind, we cannot confirm whether this was the opinion of Shah Waliyullah or the translator of the Book, who made this statement in regards to Mariya.


(৫) Sirat-Un-Nabi (The Life Of The Prophet) [Rendered into English by M. Tayyib Bakhsh Budayuni, Idarah-I Adabiyat-I Delli, 2009 Qasimjan St. Delhi (India)] by Shaykh Allama Shibli Nu’mani, volume 2, page 153.


(৬) R.H. Charles, “Vitae Adae et Evae,” The Apocrypha and Pseudepigrapha [Oxford, 1963] Volume 2, page 294, quote retrieved from one of br. Bassam’s article, http://www.answering-christianity.com/bassam_zawadi/rebuttaltoalisina9.htm


=================


আরও পড়ুনঃ


বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে দাসপ্রথা


দাসীকে জবরদস্তি করে সহবাস ইসলামে বৈধ?


বনু মুস্তালিকের যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল?


=================


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post