স্ত্রী সহবাসে জবরদস্তি ইসলামে বৈধ?


বিষয়ঃ স্ত্রী সহবাসে জবরদস্তি ইসলামে বৈধ?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

==================

ভূমিকাঃ নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা বৈধ। প্রতিটি নাস্তিকই নিজের নৈতিকতা নিজেই তৈরি করাতে মুক্তচিন্তা করতে পারবে। কোনো নাস্তিক যদি এই মুক্তচিন্তা করে যে আমি নিজের কন্যা সন্তানের সাথে যৌন সঙ্গম করবো এটাই আমার মুক্তচিন্তা তাহলে অন্য মুক্তমনারা এই মুক্তচিন্তায় বাধা প্রদান করবে না। সভ্য মানুষদের কাছে এমন মুক্তচিন্তার কথা বললে তো সহজে গিলতে চাইবে না তাই নাস্তিকিস্টরা যা করলো তা হচ্ছে মুক্তমনে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে অভিযোগ করে বসলো যে আসলে ইসলামেই নাকি ধর্ষণ করার বৈধতা দেয় যাকে বৈবাহিক ধর্ষণও বলা হয়। আমার আজকের লেখায় নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগটির বিরুদ্ধে যৌক্তিক দলিল পেশ করবো। পড়তে থাকুন।

ইসলামে বৈবাহিক ধর্ষণ?

প্রথমে নাস্তিকদের দাবিটি পুরো মনোযোগ দিয়ে পড়ে এরপরেও ইসলামের দৃষ্টিতে যাচাই করবো যে আসলেই নাস্তিকদের দাবিটি সঠিক নাকি ইসলাম নিয়ে নাস্তিকরাই অন্ধবিশ্বাস করে যাচ্ছে। নাস্তিকরা বলে থাকে,

হাদিসে যেহেতু এটা বলা আছে স্বামী যৌন সহবাসের জন্য স্ত্রীকে আহ্বান করলে স্ত্রী যদি রাজি না হয় তাহলে সারা রাত ফেরেশতারা অভিসাপ দিবে এই থেকেই প্রমাণ হয় স্বামী তার স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি করে যৌন সঙ্গম করতে পারবে।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৪৩২,সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রান। কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহ্বান করে কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি না হয়, ততক্ষণ আসমানবাসী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৪৩৩,সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন, স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে এবং সে না আসে তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে ,সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতারা ভোর হওয়া পর্যন্ত লানত করতে থাকে।-ihadis.com

পাঠক সচেতনতার সাথে যদি আপনি উপরে দেয়া দুটো হাদিসকে পড়েন তাহলে সহজেই দেখতে পারবেন যে উপরের হাদিসে কোথাও এই কথা বর্ণিত নেই যে স্বামী স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি যৌন সংগম করতে পারবে। হাদিসটি পড়লে এটা পরিস্কার যে স্বামী স্ত্রীকে সহবাসের জন্য আহ্বান করলে স্ত্রী রাজি না হলে ফেরেশতারা সেই স্ত্রীকে অভিশাপ দিবে কিন্তু স্ত্রীর সাথে স্বামী জবরদস্তি করবে এই কথা তো হাদিসের মধ্যে বলা নেই তাহলে এই কথা হাদিসের মধ্যে মিশিয়ে দিয়ে নাস্তিকরা ইসলামের মিথ্যা সমালোচনা করতে চাইছে কেন? স্ত্রী যদি সহবাস করতে রাজি না হয় তাহলে স্বামী ধৈর্য ধারণ করবে।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ২৮, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনু সিনান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।-ihadis.com

প্রশ্ন আসতে পারে, স্ত্রী, সহবাসে রাজি না হলে ফেরেশতারা কেন সারারাত অভিশাপ দিতে যাবে? উত্তর খুবই সোজা,অন্যান্য হাদিস গুলো সামনে রাখলে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে,স্ত্রী যাতে স্বামীর প্রয়োজনে বিনা কারণে অবহেলা না করে অর্থাৎ একজন আদর্শবান স্ত্রী এটা মনে করবে যে আমি যদি আমার প্রিয়তম স্বামীর প্রতি আমার দায়িত্ব পালন না করি তাহলে ফেরেশতারা আমাকে অভিশাপ দিবে। স্ত্রী যাতে স্বামীর প্রতি তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা না করে এই কারণে এই সিস্টেম করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি কি কি দায়িত্ব ও কর্তব্য তাও পরিস্কার করে বর্ণনা করা হয়েছে। পুরো লেখাটি পড়তে থাকুন। খেয়াল করুন, স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ায় স্বামী মনে কষ্ট পেয়েছে কিন্তু এরপরে কি করেছে? স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি করতে বলেছে? অবশ্যই না। তাহলে হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা কেন দিচ্ছে মুক্তমনারা? মিথ্যা কথা না বলে ইসলামের সমালোচনা নাস্তিকরা করতে পারছে না তাই? নাস্তিক্যধর্ম অনুযায়ী ফেরেশতাদের অস্তিত্ব নেই এমনকি অভিশাপ বলেও কিছু নেই তাহলে নাস্তিকরা কেন স্ত্রী যদি রাজি না হয় তবে ফেরেশতাদের অভিশাপে নাস্তিকরা কেন কষ্ট পাচ্ছে? সুতরাং যৌক্তিকভাবে এটা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে যে নাস্তিকরা উপরের হাদিস গুলোর মিথ্যা ব্যাখ্যা করছে ইসলামের বদনাম করার জন্য এবং নাস্তিক্যধর্মের নির্লজ্জ মুক্তচিন্তা গুলোকে ধামাচাপা দেবার জন্য। সরাসরি হাদিস দেখিয়ে দিচ্ছি আপনাদেরকে,পড়ে দেখুন নবীজি মোহাম্মদ (সা) কেমন ভালো মানুষ ছিলেন? হাদিসটি পড়ুন।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫২৫৬, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


সাহ্‌ল ইবন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ (ভিন্ন সনদে) সাহ্‌ল ইব্‌ন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমাইয়া বিনতু শারাহলীকে বিবাহ করেনপরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেনসে এটি অপছন্দ করল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দুখানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌছে দেবার নির্দেশ দিলেন-ihadis.com

একজন নারী নবীজি (সা) কে অপছন্দ করলে নবীজি (সা) কি জবরদস্তি করেছিলেন? অবশ্যই না। তাহলে ইসলামে যদি স্ত্রীদের প্রতি জবরদস্তি করার অনুমতি থাকতো তাহলে নবীজি (সা) কেন জবরদস্তি করলেন না? এই থেকে কি প্রমাণ হচ্ছে না যে নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে? ইসলাম স্ত্রীদের প্রতি সম্মান করতে বলে এই হাদিস কি সেটার প্রমাণ নয়? তাহলে?

স্ত্রীর সাথে স্বামীকে কেমন আচরণ করতে হবে?

ইসলাম স্বামীকে স্ত্রীর সাথে যেমন আচরণ করতে হুকুম দেয় তা জেনে নিলেই উপরের হাদিসের মর্মার্থ গুলো পরিস্কার হয়ে যাবে। অথচ মূল প্রেক্ষাপট লুকিয়ে রেখে নাস্তিকরা কিভাবে ইসলামের সমালোচনা করে যাচ্ছে তা কি এখনো দেখতে পাচ্ছেন না? আমি যেই প্রমাণ গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো এগুলো নাস্তিকরা কখনো চাইবে না মানুষ জানুক কারণ এগুলো জেনে গেলে নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে মিথ্যা বলে তেমন সুবিধা অর্জন করতে পারবে না। মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন আর নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন মুক্তমনারা মূল ঘটনাকে সরিয়ে ফেলতে চায়?  

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। আর তোমরা তাদের অপছন্দ করো তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ্‌ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।

জামে আত তিরমিজি হাদিসঃ ১১৬২, হাসান হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসুল (সা) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তি উত্তম যে তার নিজের স্ত্রীর কাছে উত্তম।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ৩৫৫৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ‘আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬০৩৫, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ একবার আমরা 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আম্‌র (রাঃ) -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বভাবগতভাবে অশালীন ছিলেন না এবং তিনি ইচ্ছে করে অশালীন কথা বলতেন না। তিনি বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪১৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেনঃ মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে-ihadis.com

পাঠক এসব তথ্য কি নাস্তিকরা দেখাতে চাইবে আপনারাই বলুন? যেখানে নবীজি (সা) সরাসরি এই শিক্ষা দিচ্ছেন সেই স্বামী উত্তম যে নিজের স্ত্রীর কাছে উত্তম সেখানে নাস্তিকরা বলতেছে ইসলাম নাকি স্বামীকে স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি সহবাস করার বৈধতা দেয়- এরকম নির্লজ্জ মিথ্যাচার মুক্তমনারা করবে না তো কারা করবে বলুন? যাদের মধ্যে ভদ্র চিন্তাশীলতা আছে, রয়েছে বোধগম্যতা এরকম মানুষ কি নাস্তিকদের মতো জালিয়াতি করতে পারবে? কি মনে হয় আপনার? সত্য সন্ধান করার জন্য হিংসাহীন একটি হৃদয়ের প্রয়োজন যা নাস্তিকদের কাছে নেই।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২০৯৩, হাসান সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াতীম কুমারী মেয়ে থেকে সরাসরি সম্মতি নিতে হবে। তার চুপ থাকাই তার সম্মতি। সে অসম্মতি প্রকাশ করলে তার উপর কোন জবরদস্তি করা চলবে না-ihadis.com

বিয়ের ক্ষেত্রে যেখানে ইয়াতীম মেয়ের অনুমতি নিতে বলেছে নবীজি (সা) এমনকি সে রাজি না হলে জবরদস্তি পর্যন্ত করতেও নিষেধ করে দিয়েছেন সেখানে যেসব নারীর পিতামাতা রয়েছে সেসব স্ত্রীকে বিয়ে করে জবরদস্তি যৌন সংগম করতে নবীজি (সা) আদেশ দিবেন এই মিথ্যা কথা নাস্তিকরা বললেই আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? নাস্তিকরা ওদের দুর্গন্ধময় বিশ্বাস থেকে কবে মুক্তি পাবে? শুধু কি এটাই? ইসলাম দাসীর সাথে পর্যন্ত নম্র এবং মানবিক আচরণ করতে হুকুম দেয় অথচ নাস্তিকরা বলে ইসলামে নাকি দাসীদেরকেও ধর্ষণ করতে বলে, আচ্ছা মিথ্যাচার করতে কি নাস্তিকদের বুক কাঁপে না? নাস্তিকদের নৈতিকতা কি পেছন দিক থেকে উদয় হয়? এদের মাথায় মস্তিস্ক তাহলে কোথায়?

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ১১১৬, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃতিনি (আবূ মূসা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার লোকের সাওয়াব দ্বিগুণ করা হবে। যে গোলাম আল্লাহ ও তার মনিবের হাক্ব সঠিকভাবে আদায় করেছে। তার সাওয়াব দ্বিগুণ করা হবে। যে লোকের সুন্দরী বাঁদীঁ ছিল, সে তাকে উত্তম আচরণ ও আদব-কায়দা শিখিয়েছে এবং তাকে পরবর্তীতে মুক্ত করে বিয়ে করেছে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্য তার সাওয়াবও দ্বিগুণ করা হবে। পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি যে লোক ঈমান এনেছে, তারপর পরবর্তী কিতাব (কুরআন) আসার পর তার উপরও ঈমান এনেছে, তাকেও দ্বিগুণ সাওয়াব প্রদান করা হবে।-ihadis.com

নাস্তিক্যধর্মে মিথ্যাকথা বলা ব্যক্তিগত অধিকার যদি এটা সঠিক না হয় তাহলে নাস্তিকরা কিভাবে ডাহামিথ্যে চর্চা করে যাচ্ছে? চিন্তার মুক্তির আন্দোলন এভাবে না করলে আর কিভাবে করছে নাস্তিকরা? নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে যেভাবে অন্ধবিশ্বাস পোষণ করে যদি আসলেই ইসলাম তেমন হতো তাহলে কুরআন হাদিসে এমন অসংখ্য প্রমাণ থাকতো যেখানে বর্ণিত হতো তোমরা স্ত্রীদেরকে নির্যাতন করো, অত্যাচার করো, তাদের সাথে জবরদস্তি করে যৌন সংগম করতে থাকো যতক্ষণ না তারা মারা যায় এমন প্রমাণ কি আছে? যে স্বামী স্ত্রীকে যতো বেশি কষ্ট দিতে পারবে যে তত আগে জান্নাতে যাবে এমন হাদিস হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার পুরো জীবনে একবার হলেও বলেছিল কি? যে স্বামী তার স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি এমনকি তার ইচ্ছার প্রতি লক্ষ্য রাখে না,সে কি স্ত্রীর কাছে উত্তম স্বামী হতে পারে? যে স্বামী তার স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধা প্রতি লক্ষ্য না রেখে যখন তখন স্ত্রীর সাথে সহবাস লিপ্ত হয় সে কি স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে? অথচ ইসলাম কি বলে স্বামীকে বলে নি স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে? এরপরেও আর মিথ্যার সুযোগ আছে নাস্তিকদের? নাস্তিকরা বিশ্বাস করে ইসলামে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি যৌন সংগম করতে পারবে অথচ ইসলামে তা কখনোই করতে বলে না বরং ইসলাম বলে স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করে স্ত্রীর কাছে উত্তম স্বামী হতে তাহলে নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করছে না কিভাবে?

হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার স্ত্রীর সাথে কিভাবে আচরণ করতেন? মনোযোগ দিয়ে পড়ুন কারণ নাস্তিকরা চায় আপনারা যাতে ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে ও অনুধাবন করতে না পারেন। আপনারা যদি ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝে ফেলেন তাহলে তো নাস্তিকরা হাজার মিথ্যাচার করলেও কোনো লাভ হবে না। যারা ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝে না তারাই নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাসের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে, তাই এখন থেকেই সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬০৩৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলামঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ গৃহে কী কাজ করতেন? তিনি বললেনঃ তিনি পারিবারিক কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। যখন সালাতের সময় উপস্থিত হত, তখন উঠে সালাতে চলে যেতেন।-ihadis.com

প্রতিটি স্বামীরই এমন হওয়া উচিত যে নিজের ঘরের কাজ কর্ম নিজে করবে। আপনার কাজ কর্ম স্ত্রী ভালোবাসার খাতিরে করতে চাইলেও আপনার উচিত হবে না তাকে কষ্ট দেয়া তাই ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীরা কেমন হয় সেটা এই হাদিসেই স্পষ্ট। নবীজি (সা) কি কখনো বলেছেন “হে আয়েশা তুমি আমার সব কাজ করে দিবা নাইলে তোমাকে দিয়ে কিন্তু আমি জবরদস্তি সব কাজ করাবো? যদি কারো রাগ আসে তাহলে ইসলাম রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলে তাই একজন স্বামী যদি স্ত্রীর কোনো কাজে রাগ করে তাহলে জবরদস্তি করা তো দূরে থাক উল্টো ইসলাম স্বামীর রাগ কন্ট্রোল করতে বলে। শুধু স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রেই নয় বরং সব ক্ষেত্রেই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৬১১৪, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 

রাসুল (সা) বলেন, প্রকৃত বীর সে নয় ,যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়,বরং সেই আসল বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে-ihadis.com

স্ত্রীর সাথে স্বামীর আচরণ কেমন হবে তা পরিস্কার করে বর্ণনা করে দিয়েছেন হযরত মোহাম্মদ (সা)। হাদিস গুলো পড়ুন। ইসলাম সব সময় শান্তি চায়। ইসলাম চায় আদর্শবান পরিবার তৈরি হোক। আদর্শবান পরিবার তৈরি হলে, আদর্শবান সমাজ তৈরি হবে আদর্শবান সমাজ তৈরি হলে একটি মানবিক রাষ্ট্র তৈরি হবে। হ্যাঁ, ইসলাম এটাই চায়। এইবার বুঝেছেন কেন ইসলাম সত্য ও শান্তির পথ? 

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৪, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসুল (সা) বলেন তোমরা যা খাবে স্ত্রীদেরকেও তাই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে,তাদেরকেও তা পরিধান করাবে।তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৬,সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

নবী (সা) বলেছেনঃ যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম না।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৫, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসুল (সা) বলেছেনঃমানুষ স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদাক্বাহ হয়ে যায়।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৬, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসুল (সা) বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩৯৩৯ এবং ৩৯৪০, হাসান সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসুল (সা) বলেছেনঃ পার্থিব বস্তুর মধ্যে স্ত্রী ও সুগন্ধী আমার নিকট পছন্দনীয় করা হয়েছে এবং নামাযে রাখা হয়েছে আমার নয়নের প্রশান্তি।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২২৬৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

নবী (সা) বলেন, সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম যার নিকট কল্যাণ কামনা করা যায় এবং যার ক্ষতি হতে মুক্ত থাকা যায়। আর সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট যার নিকট কল্যাণের আশা করা যায় না এবং যার ক্ষতি হতেও নিরাপদ থাকা যায় না-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৬, সহিহ হাসিসে বর্ণিত হয়েছে।,

ইয়াস ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনু আবূ যুবাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌-র দাসীদেরকে মারবে না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট এসে বললেন, মহিলারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হচ্ছে। এরপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মৃদু আঘাত করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর অনেক মহিলা এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদের কাছে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। সুতরাং যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৯৭৭, সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।-ihadis.com 

উপরের দলিল ভিত্তিক কথা থেকে এগুলো পরিস্কার যে ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রীর সাথে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করতে হবে। স্ত্রীদের এক কাজ স্বামীর প্রতি ভাল না লাগলেও অন্য কাজ ভাল লাগবে। স্ত্রীর কাজ কর্মে সাহায্য করতে হবে। স্ত্রীর কোন কাজে স্বামী রেগে গেলে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করা। এটাই বীর হওয়ার লক্ষণ। স্ত্রীদের খাওয়ানো, পোশাক কিনে দেওয়া স্বামীর দায়িত্ব। গালাগালি এবং প্রহার করা যাবে না স্ত্রীদের। যারা স্ত্রীদের প্রহার করে তারা ভাল স্বামী না। নিজ পরিবারের জন্য সম্পদ খরচ করা। মাঝে মাঝে স্ত্রীর মুখে খাবার খাইয়ে দেয়া, স্বামী স্ত্রীর রোম্যান্টিকতাকে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। নবী (সা) স্ত্রীদের পছন্দ করতেন তাই তার অনুসারীরাও স্ত্রীদের ভালবাসবেন, নারীদের সম্মান করবেন, নারীদের অধিকার আদায়ে লড়বেন এটাই ইসলামের শিক্ষা। যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী সেই উত্তম মুসলিম। পরিবারের কাছে যে ভাল সেই উত্তম মুসলিম। যার কাছে কল্যাণ কামনা করা যায় সে উত্তম আর যার কাছে কল্যাণ কামনা করা যায় না যে নিকৃষ্ট। আর স্ত্রী তার স্বামীর কাছে কল্যাণ চাইলে সে স্বামী তার জন্য উত্তম। 

সততার সাথে সমালোচনা করা আর মুক্তচিন্তার নামে মিথ্যা কথা বলে সমালোচনা করা এক নয়। যে কেউ সমালোচনা করতে পারে তাই বলে নাস্তিকরা যেভাবে মিথ্যা কথা বলে সেভাবে? ছিঃ। সত্যকে জানার পরেও নাস্তিকরা যদি ইসলাম নিয়ে এভাবেই অন্ধবিশ্বাস করতে থাকে তাহলে আমাদের মতো যারা চিন্তাশীল মানুষ রয়েছেন তারা আর কি-ই বা করতে পারেন মানুষকে সচেতন করা ছাড়া? নাস্তিকদেরকে শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব কে নিবে? আমাদেরকে সত্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে যাতে ইসলামবিদ্বেষীরা ধিরে ধিরে মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে সত্যকে হৃদয়ে ধারণ করে নিতে পারে।

উপসংহারঃ উপরের প্রমাণ ভিত্তিক আলোচনায় স্পষ্ট যে ইসলাম কখনোই স্ত্রীর সাথে স্বামীর খারাপ আচরণেরই সুযোগ দেয় না সেখানে জবরদস্তি করে সহবাসের অনুমতি দেয়া তো দূর কি বাথ। নাস্তিকরা নবীজি (সা) এর হাদিসকে বিকৃত করে মানুষের সামনে তুলে ধরে যেভাবে হযরত মোহাম্মদ (সা) এর যুগে কাফেররা এসব সরাসরি করতো। নাস্তিকদেরকে সুস্থভাবে চিন্তা করার আহ্বান জানাবো। ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করা থেকে যাতে নাস্তিকরা বিরত থাকে সেই কামনা করি। মূর্খ না হলে নাস্তিক হয় না কথাটিকে নাস্তিকদেরকেই ভুল প্রমাণ করে সত্যকে মাথা পেতে নিতে হবেই। নাস্তিকদেরকে নাস্তিকতার ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হবে। নিজের বিরুদ্ধে গেলেও সত্যকে মাথা পেতে নিব এই সাহস যেদিন নাস্তিকরা করতে পারবে আশা করা যায় সেই দিন থেকে নাস্তিকগোষ্ঠী ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করতে পারবে না।

==================

আরও পড়ুনঃ


নাস্তিক্যধর্মে ধর্ষণ বৈধ?

মুক্তমনাদের ধর্ষণের মুক্তচিন্তা

সমকামীদের চরিত্রহীনতা

নাস্তিক্যবাদ প্রচারকারীদের ক্যারেক্টার

বাইবেলের অশ্লীলতায় নাস্তিক্যধর্মের সমর্থন



এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post