বিষয়ঃ মুক্তমনাদের ধর্ষণের মুক্তচিন্তা
লিখেছেনঃ এমডি আলী
=====================
নাস্তিকিস্টরা নিজেদেরকে এমন ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে যেন তারা মানবতার চ্যাম্পিয়ন। আসলেই কি তাই? তারা দাবি করে নৈতিকতার গোল্ডেন রুল হচ্ছে “নিজের জন্য যা ভালো মনে করবে অন্যের জন্য সেটাই ভালো মনে করতে হবে” সংশয় হচ্ছে এটা কি আসলেই নৈতিকতার সোনালী বিধান হতে পারে? এই বিধানে অবিশ্বাস করার স্বাধীনতা নাস্তিকের থাকবে না? যারা এই বিধান তৈরি করেছে তারা নিজস্ব ধারণা থেকে এটা তৈরি করেছে তাহলে একইভাবে অন্য নাস্তিকরা যদি নিজের ধারণা থেকে মুক্তচিন্তায় এর বিপরীত নৈতিকতা তৈরি করে যেমন “নিজের জন্য যা ভালো তা সবার জন্য ভালো হতে বাধ্য না” তাহলে একেও কি একই যুক্তিতে গোল্ডেন বিধান ঘোষণা করা যাবে? অন্যের জন্য কেন সেটা ভালো মনে করতে হবে যা আমার জন্য আমি ভালো মনে করবো? যারা মুক্তমনে গাজা-ইয়াবা সেবন করে তারা কিন্তু নিজের জন্য ঠিকই একে ভালো মনে করে তাহলে এখন যদি তারা মনে করে এটা সবার জন্য উত্তম তাহলে নৈতিকতার গোল্ডেন রুল অনুযায়ী সবার জন্য গাজা-ইয়াবা সেবন করা সোনালী নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে মুক্তমনারা গণ্য করবে? যারা চুরি করে তারা কিন্তু নিজের জন্য চুরি করাকে ভালো মনে করে দেখেই কিন্তু চুরি করে। এতে নিজের অনেক উপকারও হয় যেমন কেউ যদি ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা চুরি করতে পারে তাহলে এই মুক্তমনা চোর তো রাতারাতি বড়লক্স হয়ে যাবে। তাহলে একজন চোর যদি এটা মনে করে যে আমার জন্য যেহেতু চুরি করা ভালো তাই সবার জন্যই চুরি করাকে আমার ভালো মনে করতে হবে, এই ক্ষেত্রে নাস্তিকরা কেন চুরি করাকে মহৎকাজ হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছে না? এসব ভয়াবহ সমস্যা সমাধানে কি কি বিধান দেয়া আছে মুক্তমনাদের বিবর্তিত মস্তিস্কে?
নাস্তিক্যধর্ম মানুষকে কখনোই নির্দিষ্ট নৈতিকতা প্রদান করে না তাই কোনো নাস্তিক যা ইচ্ছা তাই চিন্তা করতে পারে, সে অনুযায়ী প্রয়োগও করতে পারে। এই কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করবে এরকম মুক্তমনা খুজে পাওয়া মুশকিল কিন্তু কেউ দ্বিমত করলে তাতে অন্য নাস্তিকদের কিছুই আসে যায় না। মিথ্যা কথা বলা যাবে না, চুরি করা যাবে না, ডাকাতি করা যাবে না, নারীদেরকে অসম্মান করা যাবে না,পিতামাতাকে গালাগালি করা যাবে না,ধর্ষণ করা যাবে না, ঘুষ খাওয়া যাবে না, সুদ খাওয়া যাবে না,পর্ণোগ্রাফির বিজনেস করা যাবে না ইত্যাদি কোনো নৈতিকতাই নাস্তিক্যধর্ম মানুষকে নির্দিষ্ট করে প্রদান করে না অথবা এগুলো নাস্তিকদেরকে মানতেই হবে বা না মানলে গুনাহ হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নাস্তিকতার মধ্যে নেই। তাই কোনো নাস্তিক চাইলে যেমন এগুলো না করতে পারে আবার চাইলে করতেও পারে কিন্তু কেউ যদি করে তাহলে তাকে অনৈতিক বলার ভিত্তি নাস্তিক্যধর্মে নেই যেহেতু সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। দেহ তার সিদ্ধান্তও তার। অন্যদিকে কোনো মুসলিম কখনো চাইলেই ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতে পারবে না কারণ ইসলাম তাকে সেই অনুমতিই প্রদান করে না। যদি কোনো মুসলিম কাউকে ধর্ষণ করে বা ধর্ষণ করার চিন্তা করে তাহলে সেটার বিন্দুমাত্র অনুমতি ইসলাম কখনো দিবেই না বরং উক্ত মুসলিমকে অপরাধী গণ্য করবে ও শাস্তির আইন প্রয়োগ করবে কিন্তু নাস্তিক্যধর্মে এরকম কোনো বিধি-বিধান নেই, যেখানে এটা লিখা আছে যে কোনো নাস্তিক ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতে পারবে না। যদি লেখা থাকেও তাহলেও সেটা কোনো নাস্তিক মানতে বাধ্য না। যে কোনো নাস্তিকের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে সে তার মুক্তচিন্তা থেকে নিজের জন্য নৈতিকতা তৈরি করবে, সুযোগ পেলে প্রয়োগও করে ফেলবে।
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৬১২৪,৬১২৫,সহিহ হাদিসঃ
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নম্র হও এবং কঠোর হয়ো না। শান্তি দান কর,বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪৮৯, সহিহ হাদিসঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা অবশ্যই যুলুম করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। তোমরা অবশ্যই অশ্লীলতা বর্জন করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীলভাষী ও অশ্লীলতার প্রসারকারীকে পছন্দ করেন না। তোমরা অবশ্যই কৃপণতা পরিহার করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে এবং হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করতে উদ্যত করেছে।-ihadis.com
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৬৯৪৯,সহিহ হাদিসঃ
লায়স (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সুফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমর (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না।যুহরী (রহঃ) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল,বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জারিমানা নেই।কিন্তু তার উপর ‘হদ’ জারি হবে।-ihadis.com
রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ ৮৫১,সহিহ হাদিসঃ
আবূ উমারা বারা ইবনে আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কর্ম করতে আদেশ করেছেনঃ(১) রোগী দেখতে যাওয়া,(২) জানাযার অনুসরণ করা,(৩) হাঁচির ছিঁকের জবাব দেওয়া,(৪) দুর্বলকে সাহায্য করা,(৫) নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা,(৬) সালাম প্রচার করা,এবং (৭) শপথকারীর শপথ পুরা করা।’-ihadis.com
উপরের প্রমাণ গুলো স্পষ্ট করে ইসলাম কখনোই ধর্ষণ করা সমর্থন করে না। তাই কোনো মুসলিম কখনো এর বাইরে চিন্তা করার অধিকার রাখতেই পারবে না,নৈতিক গ্রন্থ থাকার বড় উপকারীতার মধ্যে এটি অন্যতম বলা যায়। “ধর্ষণ করা জঘন্যতম খারাপ অপরাধ” এই বিবেকবোধের শিক্ষা ইসলাম আমাকে শিখিয়েছে তাই আমি কখনোই একে ভালো বলার বিন্দুমাত্র চিন্তা করতেই পারি না। ধর্ষণ করাকে আমি তীব্র ঘৃণা করি,করি বিরোধিতা। এটা ইসলামই আমাকে শিখিয়েছে। ইসলাম আমাকে শিখিয়েছে দুর্বলকে সাহায্য করতে, নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করতে। মুসলিম হিসেবে আমি কখনোই ধর্ষণকে ভালো বলার মুক্তচিন্তা করতেই পারি না আর কখনো পারবোও না কিন্তু কোনো নাস্তিক চাইলেই ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতে পারে কেননা তার নিজস্ব নৈতিকতা বানানোর ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে সে কোনো নৈতিক গ্রন্থ মানতে বাধ্য না। এছাড়া নিজের স্বার্থে মিথ্যাকথা বলা,চুরি করা ও ঘুষ-সুদ সেবন সহ ইত্যাদি কাজকে নিজের জন্য ভালো-এ হিসেবে মুক্তচিন্তা করতেই পারে।
পর্ণোগ্রাফির ব্যবসায় সফল মুক্তমনাঃ
কোনো মুক্তচিন্তার অধিকারী নাস্তিকের যদি কোটি কোটি ডলার থাকে তাহলে সে চাইলেই নারীদের দিয়ে পর্ণগ্রাফির ব্যবসা করতে পারে। মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে এই ব্যবসা করার স্বাধীনতা প্রতিটি লোকেরই রয়েছে। এরকমই একজন বিখ্যাত মুক্তচিন্তকের নাম ল্যারি ফ্লাইন্ট (Larry Flynt)। উনি নারীদেরকে নগ্ন করে পুরুষদের সাথে মুক্তঙ্গমক্রিয়া করাতেন। হ্যাঁ,এটাই মুক্তমনা ব্যবসা। সস্তা নাস্তিকদের দাবি একাধিক নারীকে বিয়ে করা নাকি ভালো না কিন্তু মজার কথা হচ্ছে নাস্তিকতার দৃষ্টিতে এই কথা ঠিক নয় কারণ প্রতিটি নাস্তিকই একাধিক নারীকে বিয়ে করার স্বাধীনতা রাখে। ক্ষতি না করে যতো ইচ্ছা ততো নারীকে বিয়ে করার স্বাধীনতা রাখে নাস্তিকরা। একাধিক বিয়ে করা ভালো না এই বিধান কেন নির্ধারণ করে দিতে চায় নাস্তিকরা? নাস্তিকরা মানুষকে বিধান ঠিক করে দেবে? মানুষের স্বাধীনতা থাকবে না? উইকিপিডিয়ার সুত্রে এটাও জানা যায় যে উনি ৫ জন নারীকে বিয়ে করেছিলেন। শুধু ৫ জন কেন উনি চাইলেই ৫০০ নারীকেও উনার দৈহিক চাহিদার পূর্ণের জন্য রাখতে পারতেন। নাস্তিকতায় ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কথা।
বিস্তারিত জানতে Larry Flynt লিখে সার্চ করে উইকিপিডিয়াতে দেখতে পারেন। আমি সরাসরি ছবি তুলে দিয়েছি কেননা নাস্তিকরা এসব তথ্য ধামাচাপা দিয়ে সরিয়ে ফেলতে পারে। ল্যারি ফ্লাইন্ট হয়তো গিনেজ বুকের রেকর্ডে নাম উঠাতে পারেন নি কিন্তু উনার চেয়েও বড় মাপের সফল পর্ণ ব্যবসায়ী আছেন নাম হচ্ছে “মি. জেরেমির”।এই লোকটি মুক্তমনে এতো শরীর চর্চা করেছেন যে উনার নাম গিনেজ বুকের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে যেই মুক্তমনা এতো এতো শরীরচর্চা করতে পারে তার বিরুদ্ধে কিভাবে ধর্ষণ ও যৌন হামলার অভিযোগ আসতে পারে? “BBC NEWS।বাংলা” তে ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে “পর্ন তারকা রন জেরেমির বিরুদ্ধে আরও ধর্ষণ ও যৌন হামলার অভিযোগ” এই শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছেঃ(১)
ব্লু ফিল্ম হিসেবে পরিচিত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত ছবির তারকা রন জেরেমির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তিনি তেরজন নারীর ওপর যৌন সহিংসতা চালিয়েছেন, যাদের মধ্যে তের বছরের এক কিশোরীও রয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলসের সরকারি আইনজীবীরা এই তথ্য জানিয়েছেন। আইনজীবীরা বলছেন,এই যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২০০৪ সালের দিকে। ৬৭ বছরের এই পর্ন তারকার বিরুদ্ধে এর আগেই ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারজন নারীকে ধর্ষণ অথবা হামলার অভিযোগ রয়েছে।পর্নোগ্রাফির জগতে রন জেরেমি খুব বড় একটি নাম,যিনি চার দশক জুড়ে ১৭০০'র বেশি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্মিত ছবিতে অভিনয় করেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ২৫০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রন জেরেমির আসল নাম রোনাল্ড জেরেমি হায়াত। তাকে গত জুন মাসে আদালতে হাজির করা হয়।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে,তিনি ২৫ ও ৩০ বছর বয়সী দুইজন নারীকে ধর্ষণ করেছেন।এছাড়া আরও ৩৩ ও ৪৬ বছরের আরও দুজন নারীর ওপর হামলা করেছেন।সেই সময় এসব অভিযোগ নাকচ করে তার আইনজীবী বলেছিলেন যে, তার মক্কেল 'চার হাজারের বেশি নারীর উপপতি' এবং 'নারীরাই তার প্রতি নিজেকে বিলিয়ে দেয়'।তবে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস জানিয়েছে,তাকে আদালতে হাজির করার পরবর্তী কয়েক দিনে তার বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার আরও কিছু অভিযোগ পেয়েছেন আইনজীবীরা।নতুন অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ১৩ জন নারীর ওপর অন্তত ২০ বার ধর্ষণ এবং যৌন হামলার মতো অভিযোগ।ভুক্তভোগীদের বয়স হবে ১৫ থেকে ৫৪ বছর। সর্বশেষ যৌন হামলার ঘটনা ঘটেছে এই বছর নববর্ষের দিনে হলিউডের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।২০১৭ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে, মি. জেরেমির বিরুদ্ধে অনেক নারী যৌন অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন,যার মধ্যে রয়েছে আপত্তিকর স্পর্শ,ডিজিটাল মাধ্যমে যৌন হয়রানি এবং যৌন হামলা।তবে ম্যাগাজিনকে তিনি বলেছিলেন যে,'তিনি কখনোই কাউকে ধর্ষণ করেননি।'সবচেয়ে বেশি পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করার জন্য গিনেজ বুকের রেকর্ডে নাম উঠেছে মি. জেরেমির।২০০১ সালে তাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করা হয়। বেশ কিছু কম্পিউটার গেম,হলিউডের সিনেমা এবং মিউজিক ভিডিওতেও তিনি অভিনয় করেছেন।
যেই লোক শত শত নারীর সাথে মুক্তমনে শরীরচর্চা করতে পারে সেই লোক হয়তো শরীরচর্চা করার আনন্দে এতোই ডুবে ছিল হয়তো নারীর সম্মতি নেবার সুযোগই পান নাই এই কারণে কি তাকে ধর্ষক বলা যেতে পারে? শরীরচর্চা শেষ হলে পরে ঠাণ্ডা মাথায় সম্মতি কি নেবার বিধান মুক্তচিন্তায় নেই? উনি যেহেতু অস্বীকার করছেন আর যেহেতু নারীরা নিজের ইচ্ছাতেই উনার সাথে শরীরচর্চা করতে চেয়েছিল সেখানে ধর্ষণের অভিযোগ কেন আনা হলো? যেসব নারীরা ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন তারা কি মিথ্যুক? নারীরা কেনই বা তার নামে অভিযোগ দিতে যাবে? এরকম বিখ্যাত মুক্তচিন্তক যার শরীরচর্চার রেকর্ড গিনেজ বুকে এসেছে তাকে নিয়ে এরকম অভিযোগ কি মুক্তমনা আন্দোলনের সভাপতিরা মেনে নিবে? সে যদি ধর্ষণ করেও থাকে তাহলেও মুক্তচিন্তায় তার কর্মকে অনৈতিক বলার কোনো যুক্তি আছে?
মুক্তচিন্তকদের দ্বারা ধর্ষণের হুমকিঃ
একজন নাস্তিক কার সাথে কিভাবে কথা বলবে? অথবা বলবে না সেটা সে নিজেই ঠিক করে নিতে পারে? অন্য কারো কাছে যদি সেটা হুমকি হিসেবে গণ্য হয় তাহলে সেটা অন্য মুক্তচিন্তকদের কাছে ধর্তব্য নয়? আমার নৈতিকতা নিয়ে যেমন আপনি চলেন না একইভাবে আপনার নৈতিকতা নিয়ে আমিও চলতে বাধ্য নই? কাকে খারাপ হিসেবে ধরতে হবে আর কাকে খারাপ হিসেবে ধরতে হবে না? কে ঠিক করে দেবে এই বিধান? অবিশ্বাস করার স্বাধীনতা এখানে থাকবে না? আমার জীবন আমি সিদ্ধান্ত নিবো না? এই প্রশ্নময় কথা গুলো মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীদের কাছে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কোনো নাস্তিক নারীর সাথে অন্য নাস্তিক মুক্তমনারা এরকম কোনো আচরণ করে যা উক্ত নারীবাদীর ভালো লাগেনি তাহলে সে যদি মুক্তমনাদের নিয়ে সমালোচনা করে তাহলে কি অন্য মুক্তমনাদের তাতে কিছু যায় আসে? না। কারণ নাস্তিকতার দৃষ্টিতে আপনার কাছে যা ভালো লাগে তা সবার কাছে ভালো লাগা বাধ্যতামূলক না। সবাই সবার মুক্তচিন্তা করবে আর আপনার কাছে ঘেন্না লাগলে সেটাকে কেন অনৈতিক বলে গণ্য করতে হবে? আপনি বিদানদাতা নাকি? পপুলার একজন নারীবাদী নাম রেবেকা ওয়াটসোন (Rebecca Watson)। এনি একই সাথে নাস্তিক আবার সংশয়বাদীও। উনার সাথে মুক্তচিন্তক নাস্তিকরা যেই আচরণ করেছিল সেটা উনি উনার এক আলোচনায় বর্ণনা করেছিলেন। ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান নাস্তিক সম্মেলনে উনি বর্ণনা করেন,(২)
Hundreds of atheists have informed me that either they wanted to rape me, someone should rape me so that I will loosen up or that no one would ever rape me because I am so ugly"
অর্থঃ শত শত নাস্তিক আমাকে জানিয়েছে যে তারা আমাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এমনকি কেউ যাতে আমাকে ধর্ষণ করে দুর্বল করে ফেলে। আবার কেউ কেউ আমাকে ধর্ষণ করতে চায় না কারণ আমি নাকি খুবই বিশ্রী।
রেবেকা নামক নাস্তিক নারীটি কি ভুলে গিয়েছিল নাস্তিকরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী? রেবেকার কাছে যা হুমকি বলে গণ্য এটা কি অন্য মুক্তচিন্তকদের কাছে হুমকি হিসেবে গণ্য হতে বাধ্য? তাদের নিজস্ব চিন্তায় যেমন রেবেকা চলে না একইভাবে তারাও রেবেকার মতো চিন্তা করতে বাধ্য নয়? মুক্তমনারা স্পষ্ট বলেছে যে তারা রেবেকাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এমনকি দুর্বল করে ফেলতে চেয়েছিল। আবার কিছু মুক্তমনারা এটাও স্বীকার করেছে যে তাদের কাছে নাকি রেবেকা বিশ্রী তাই তারা তাকে ধর্ষণ করতে চান না। মুক্তচিন্তকরা যে ধরণের মত প্রকাশ করেছে তাতে রেবেকার কি শারীরিক ক্ষতি হয়েছে? না। তাহলে এরকম মত প্রকাশ করা হলে মুক্তচিন্তায় সেটাকে কেন খারাপ বলে মনে করতে হবে? এসব মুক্তমনাদের মুক্তচিন্তাকে অনৈতিক প্রমাণ করার কি কি যুক্তি রয়েছে সংশয়বাদী নাস্তিক রেবেকার কাছে? রেবেকা যাই যুক্তি দিক অথবা যেই বিধানই বানিয়ে দিক সেটা কি মুক্তমনারা বিশ্বাস করতে বাধ্য? রেবেকার বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ষণ করা খারাপ কিন্তু ধর্ষণ করা যে খারাপ এটা রেবেকার নিজস্ব তৈরি করা- এই বিধানকে অবিশ্বাস করে মুক্তচিন্তায় কি এটা চিন্তা করা যাবে না যে ধর্ষণ করা ভালো? রেবেকাকে যারা ধর্ষণ করতে চেয়েছিল তারা কি ধর্ষণ করাকে ভালো-এই মুক্তচিন্তা করেনি? মত প্রকাশ করলে যেহেতু শারীরিক ক্ষতি হয় না সেহেতু কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের নারীবাদী মাকেও ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে? বোনকেও পারে? ভাইয়ের সাথে জবরদস্তি সমকামীতার ইচ্ছাও প্রকাশ করতে পারে? নিজের বাবার সাথেও পারে?
মুক্তচিন্তক হুমায়ুন আজাদকে কে না চিনে? সে তো নাস্তিকদের কাছে খুবই পছন্দের। হুমায়ুন আজাদকে নাস্তিক্যধর্মের অবতার ঘোষণা করলে নাস্তিকদের হয়তো ভুল হবে না। এই মুক্তচিন্তক একজন নারীকে, নারী বললে ভুল হবে, একজন অসহায় তরুণীকে সারা সন্ধ্যা ধর্ষণ করতে চেয়েছিল। ধর্ষণের থেকেও বেশি কিছুই করতে চেয়েছিল, আমি বানিয়ে বানিয়ে এগুলো বলছি না। তার লেখা বই পড়লেই পরিস্কার হয়ে যাবে। তার বিখ্যাত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
যখন শিশু ছিলাম,কিশোর হয়ে উঠেছি যখন,তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি,আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছা করে। ছেলেবেলা ভরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরো গুলোকে চুষে দেখতে,ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হয়ে জ্বলজ্বল করতো,সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছা হতো,কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মতো এক তরুণীকে।
হ্যাঁ, একজন নাস্তিক এই মুক্তচিন্তা করতেই পারে যে নারীরা চুইংগামের মতো, যাদেরকে চাবানো যায়, যায় চুষা তাও আবার সারা সন্ধ্যা। একবার কল্পনা করুন আপনার মা-বোন অথবা স্ত্রীকে কেউ যদি এই ধরণের হুমকি দিতো সেটা আবার বইতে লিখে আনন্দবোধ করতো আপনি তাকে কি শাস্তি দিতে চাইতেন? কোনো সভ্যমনা লোক এই মুক্তচিন্তা করতে পারে? নাস্তিকান্ধরা মানবতাকে কোন দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে? হুমায়ুন আজাদ আসলে বিশ্বাস করতেন অন্যের ক্ষতি না করে যা কিছু করা হবে সেটাই নৈতিক। এই যুক্তিতে যেহেতু সেই তরুণীকে সারা সন্ধ্যা ধর্ষণ করতে চাওয়ায় তার শারীরিক ক্ষতি হয় নাই সেহেতু যে কাউকেই ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা একজন নাস্তিক করতেই পারে। স্বয়ং নাস্তিকদের লজিক অনুযায়ী হুমায়ুন আজাদের ধর্ষণ করার ইচ্ছা প্রকাশ যৌক্তিক। “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিত সংকীর্ণ; আমার কোনো কাজ যেনো অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে,এটুকু।
যেহেতু হুমায়ুন আজাদের ধর্ষণ করার ইচ্ছার কথা সেই অসহায় তরুণীকে শারীরিক ক্ষতিগ্রস্ত করে নাই সেহেতু সেই নারীকে সারা সন্ধ্যা চুষে চাবানোর ইচ্ছার কথা খারাপ না বরং নৈতিক? হুমায়ুন আজাদের বর্ণিত নৈতিকতার সীমার বিধানই এই কথার বাস্তব প্রমাণ। অন্যকে ক্ষতি না করে তারমানে গালাগালি করা যাবে? কোনো মুক্তচিন্তক যদি নিজের নাস্তিক পিতামাতাকে মুক্তমনে গালাগালি করে আর এরফলে যদি কোনো ক্ষতি না হয় তাহলে এই গালাগালি করা হুমায়ুন আজাদের লজিক অনুযায়ী নৈতিক? যারা হুমায়ুন আজাদের মতো মুক্তচিন্তা করে তাদের কাছে নারীরা কতটুকু নিরাপদ? আপনার মা নিরাপদ? আপনার বোন? আপনার স্ত্রী? আপনার খালা? আপনার নানী? আপনার দাদী? মুক্তমনা আজাদের “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” কিতাব পাঠ করলে ওর রুচিবোধ যে চতুষ্পদ প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে পারে সেটার প্রমাণ মেলে! নাস্তিকরা সব সময় চায় ওদের অনুসারীদের ইসলামের সমালোচনায় মগ্ন রাখতে যাতে নাস্তিক্যধর্মের লুকায়িত সত্য গুলোকে ধামাচাপা দেওয়া যায় অর্থাৎ একজন নাস্তিকের মনে যদি ইসলামে প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করে দেওয়া যায় তাহলে নাস্তিক্যধর্ম যতোই শুকরের মতো হউক না কেন এটাকে অনুসারীরা অবিশ্বাস করতে পারবে না। ব্যবসাটা কোন দিক থেকে করা হচ্ছে বুঝতে পেরেছেন?
এখানেই শেষ না। সিমোন দ্য বোভোয়ার যিনি ছিলেন একাধারে নারীবাদী আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এনাদের মুক্তমনা চরিত্রের চেহারা কেমন জানেন? নাস্তিকদের কিতাব গুলোতেই এসব তথ্যের বর্ণনা থাকে। আমি শুধু আপনাদের সামনে তুলে ধরছি মাত্র। অন্যতম প্রসিদ্ধ মুক্তমনা নাস্তিক নাম প্রবীর ঘোষ, উনার লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
নারীবাদী আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিমোন দ্য বোভোয়ার।তার সঙ্গে জঁ-পল সার্ত্রের বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ছিল।‘দ্যা ডেঞ্জারাস লিয়াজো’ বইটি থেকে আমরা জানতে পারি,জঁ-পল সার্ত্র ও সিমোন দ্য বোভোয়ার তাদের ছাত্রী ও ছাত্রদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তেন বা গড়তে বাধ্য করতেন।এমনকী সার্ত্রে তার ছাত্রদের পাঠাতেন বোভোয়ারের সঙ্গে মিলনের জন্য।বিনিময়ে বোভোয়ারও তার ছাত্রীদের পাঠাতেন সার্ত্রের কাছে।সেই সময়কার বুদ্ধিজীবীরা ওদের বিরুদ্ধে নষ্ট চরিত্রের অভিযোগ এনেছিলেন।কিন্তু নারী স্বাধীনতা,ক্ষমতায়ন ও চেতনামুক্তি অভিযাত্রায় সিমোন দ্য বোভোয়ার আজ প্রাতঃস্মরণীয়।
চিন্তা করুন একজন নারীবাদী আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অথচ ছাত্র ছাত্রীদেরকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে সঙ্গম করার জন্য বাধ্য করতেন আর সঙ্গম করার জন্য আদান প্রদান করতেন? এমনকি বাধ্য করতেন! আচ্ছা এই বাধ্য করাকে ধর্ষণ বলা কেন যাবে না? বুদ্ধিজীবীরা তাদের বিরুদ্ধে নষ্ট চরিত্রের অভিযোগ করলেই কি সেটা তাদের কাছে নষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য? না। কারণ তাদের জীবন,তাদের দেহ,তাদের ক্ষমতা আপনি এখানে বলার কে? তাদের নৈতিকতায় তাদের ছাত্রী-ছাত্রদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে বাধ্য করবেন নাকি করবেন না সেটা নিয়ে আপনি বলার কেন? মুক্তচিন্তায় জবরদস্তি করেও সম্মতি নেয়া যায় ও সম্মতি ছাড়াও যে সঙ্গম করা যায় এই প্রমাণ কি এখনো পাওয়া যায় নি? নাস্তিক প্রবীর ঘোষ, উনার লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠাতেই বলেছেন যেঃ
বোভোয়ার ও সার্ত্রের জীবনে যত উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল,তা সবই তাদের ব্যাক্তিজীবনে আবদ্ধ। তাদের সৃষ্টিতে তা নগ্ন রুপ পায়নি।এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি অবশ্য তাদের বা অন্য কারও ব্যাক্তিজীবনের যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা বা বহুগামিতালে সামান্যতম সমর্থন করছি না।বরং নিন্দা করছি, এই নিন্দনীয় কাজের চেয়ে তসলিমার কাজ বহুগুণে বেশি নিন্দনীয়।
নাস্তিক মুক্তমনা প্রবীর ঘোষ সাহেব যদিও নিন্দা প্রকাশ করেছেন কিন্তু উনার নিন্দা প্রকাশ করার কারনেই কি উপরে যৌন বর্বরতা খারাপ প্রমানিত হয়ে যাবে? কারন উপরে যারা যৌন কাজ করেছে তারা কিন্তু ভালো আর ব্যাক্তিস্বাধীনতা মেনেই করেছে আর মুক্তমনা প্রবীর ঘোষ প্রথমে সেটা স্বীকারও করে নিয়েছেন যে সেসব কাজ তাদের ব্যাক্তিজীবনে আবদ্ধ। তাহলে ফলাফল পরিস্কার, একজন মুক্তমনার কাছে একটি বিষয় অনৈতিক মনে হতেই পারে কিন্তু তারমানে এটা নয় যে সেটা অন্য মুক্তমনাদের কাছে অনৈতিক হতে বাধ্য? একইভাবে যেসব নাস্তিকরা এটা বিশ্বাস করে যে ধর্ষণ করা খারাপ তারমানে এটা না যে অন্য নাস্তিকদের কাছে ধর্ষণ করাকেও খারাপ বলে বিশ্বাস করতেই হবে বরং অন্য কোনো মুক্তমনা নাস্তিক চাইলেই অবিশ্বাস করতে পারে “ধর্ষণ করা খারাপ” এই স্বাধীনতা তার রয়েছে। মুক্তমনা প্রবীর ঘোষ লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠাতে এও বর্ণিত যেঃ
প্রবীর ঘোষকে প্রশ্ন করা হয় যে তসলিমা একজন ধর্মহীন,মানবতাবাদী মানুষ এটা তো স্বীকার করবেন? উত্তরে নাস্তিক প্রবীর ঘোষ বলেন তসলিমা কতটা মানবতাবাদী আসুন দেখি।কারন ধর্মহীন বা নাস্তিক হলেই মানবতাবাদী, ভালো মানুষ হবেন এমনটা সত্যি নয়।নাস্তিক লম্পট,দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ আমরা অনেক দেখেছি।
নাস্তিক মুক্তমনাদের এসব জঘন্য ঘটনা আপনি যে কোনো মুক্তচিন্তকদের সামনে পেশ করবেন তারা বলবে এগুলো তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। একই যুক্তিতে প্রতিটি মুক্তমনাদের ধর্ষণ করার ব্যক্তিগত অধিকার রয়েছে এই সত্যকথা অস্বীকার করা হয় কেন তাহলে? মুক্তচিন্তায় কি এরকম কোনো বিধিনিষেধ আছে যে সবাইকে সেটা বিশ্বাস করতেই হবে? মুক্তচিন্তা কি স্বাধীনচিন্তা নয়? অবতার সিস্টেম অথবা পোপ সিস্টেম কি মুক্তচিন্তায় রয়েছে? তাহলে মুক্তচিন্তা আসলে মুক্তচিন্তা থাকবে কিভাবে? ধরুন আপনি এক হাতে কলা আরেক হাতে টক নিলেন। এখন আপনি কি সবার জন্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন যে সবাইকেই এই দুটোই বেছে নিতে হবে? না। আপনি এমন কেউ নোন যে আপনাকে সবার মেনে নিতেই হবে। মুক্তচিন্তায় কেউ চাইলে যেমন কলা পছন্দ করতে পারে আবার কেউ টক পছন্দ করতে পারে। একইভাবে কেউ চাইলে মুক্তমনে ধর্ষণ করাকে নিজের জন্য ভালো মনে করতে পারে আবার খারাপও মনে করতে পারে। কোনো কিছু কারো কাছে জঘন্য লাগলেই সেটাকে অনৈতিক কেন মনে করতে হবে? আর কেনই বা এটা বেআইনি হবে? মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে ভালো-খারাপের বিধি-বিধান মানতে সকল মুক্তমনা বাধ্য না কারণ সবাই সবার নিজের মুক্তচিন্তা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে?
ধর্ষণ বৈধ-এ মুক্তচিন্তা করা যাবে না,এরপক্ষে কোনো যুক্তিই নাই?
কোনো লোক যদি নির্ধারণ করে দেয় কি কি মুক্তচিন্তা করা যাবে? কি কি মুক্তচিন্তা করা যাবে না? তাহলে উক্ত লোকের নির্ধারণ করা বিধি-নিষেধ মেনে মুক্তচিন্তা করলে কি মুক্তমনা হওয়া যাবে? প্রতিটি মানুষ যদি নিজের মতো মুক্তভাবে চিন্তাই না করতে পারে তাহলে এরকম চিন্তাকে কিভাবে মুক্ত বলা যায়? অথবা এরকম বিধি-নিষেধ মেনে মুক্তমনা হলেই বা কি আসে যায়? ইসলাম ত্যাগ করে স্বাধীনভাবে চিন্তা করা হলে যদি মুক্তমনা হওয়া যায় তাহলে স্বাভাবিক ভাবে মানুষ যাকে ভালো হিসেবে বিশ্বাস করে সেগুলোকে অবিশ্বাস করে ত্যাগ করলে কেন মুক্তমনা হওয়া যাবে না? লোকে বিশ্বাস করে সত্য বলা ভালো তাহলে এই বিধান ত্যাগ করে মিথ্যা বলাই ভালো-এরকম মুক্তচিন্তা কেন করা যাবে না? লোকে মনে করে চুরি করা খারাপ-তাহলে এই বিধান অবিশ্বাস করে নিজের স্বার্থে ‘চুরি করা ভালো’ চিন্তা করা কেন মুক্তচিন্তার অংশ হবে না? লোকে মনে করে ধর্ষণ করা খারাপ কিন্তু এই বিধানকে অবিশ্বাস করে কেন এই মুক্তচিন্তা একজন নাস্তিক করতে পারবে না যে ধর্ষণ করা ভালো? নাস্তিকিস্টরা বলে থাকে নাস্তিকতা নাকি যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রশ্ন হলো, প্রতিটি মানুষের যুক্তি কি একইরকম হয়? না। অথবা নাস্তিকদের মধ্যে এরকম কোনো বিধান দেয়া থাকে যে সবাইকে একই যুক্তিতে বিশ্বাস করতে হবে? না। অর্থাৎ একেকজনের কাছে যুক্তির ধরণ ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। ধর্ষণ করা খারাপ এই কথা বিশ্বাস করার স্বাধীনতা যেমন নাস্তিকদের রয়েছে একইভাবে ধর্ষণ করা ভালো এই কথাও বিশ্বাস করার স্বাধীনতা নাস্তিকদের রয়েছে। ধরা যাক ধর্ষণ করা খারাপ- এরপক্ষে নাস্তিকরা যে যুক্তি গুলো তুলে ধরতে পারেঃ
নারীর অনুমতি ছাড়া সেক্স করা হয়েছে তাই ধর্ষণ করা খারাপ।
নারীর সাথে জবরদস্তি সেক্স করা হয়েছে তাই ধর্ষণ করা খারাপ।
ধর্ষণ করলে অন্যের ক্ষতি হয় তাই ধর্ষণ করা খারাপ।
মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে প্রশ্ন হচ্ছে নারীর অনুমতি ছাড়া সেক্স করলে সেটাকে কেন ধর্ষণই বলা হবে? কেন “স্বাধীন দেহ ভোগ” নাম দেয়া হবে না? কোনো মুক্তমনা যদি “নারীর অনুমতি ছাড়া তার সাথে জবরদস্তি সেক্স করা ভালো কারণ এটি স্বাধীনভাবে দেহ ভোগ করাকে বোঝায় তাই এটি খারাপ না”- এই মুক্তচিন্তা করে তাহলে এই মুক্তচিন্তা করা কেন নাস্তিকদের কাছে খারাপ বলে ধরতে হবে? কি মুক্তচিন্তা করা যাবে? কি মুক্তচিন্তা করা যাবে না? এসব বিধি-নিষেধ কি নাস্তিকরা একজন আরেকজনকে ঠিক করে দেবে? পাঠক খেয়াল করুন, উপরের তিনটি পয়েন্টে যে বর্ণনা করা হয়েছে সেই নৈতিকতা গুলো নাস্তিকদের নিজস্ব বানানো অর্থাৎ যে নাস্তিকরা দাবি করছে “ধর্ষণ করা ভালো না” তারা কি এই কথা এই কারণে বলছে যে ইসলাম এই কথা বলে? একদম না। তাহলে কেন বলছে? তারা বলছে নিজস্ব ধারণা থেকে,নিজস্ব মুক্তচিন্তা থেকে। আপনি কি কখনো শুনেন নি এই কথা নৈতিক হতে আবার ইসলাম লাগে নাকি? শুনেন নাই কখনো? তাহলে যেসব মুক্তচিন্তকরা নিজস্ব বিবেক থেকে এটা বানিয়েছে যে ধর্ষণ করা খারাপ তাহলে একই বিবেক থেকে অন্য নাস্তিক মুক্তমনা মুক্তচিন্তকরা যদি এটা বানায় ধর্ষণ করা ভালো তাহলে এটা মুক্তচিন্তায় কেন অনৈতিক বলে গণ্য হবে? কিভাবে? আপনার নিজস্ব বিবেক থেকে নৈতিকতা বানানোর স্বাধীনতা থাকলে অন্যের সেটা থাকতে পারবে না কেন? রেবেকাকে ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা নাস্তিকরা করে নি? হুমায়ুন আজাদ সারা সন্ধ্যা তরুণীকে ধর্ষণ করতে চান নাই? প্রতিটি নাস্তিক কি স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকার রাখবে না? তাহলে নির্দিষ্ট ভাবে ধর্ষণ করাকে খারাপ দাবি করা মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য না?আবার ধরা যাক ধর্ষণ করা ভালো-এরপক্ষে মুক্তচিন্তকরা যে যুক্তি গুলো তুলে ধরতে পারেঃ
যে কাজে অন্যের ক্ষতি হয় না সেটা নৈতিক,যে কাজে অন্যের ক্ষতি হয় তা অনৈতিক - এটা কে ঠিক করে দিল? অন্যের ক্ষতি হলেই সেটা অনৈতিক কেন হবে?
নারীর যেহেতু নিজস্ব অনুমতি প্রদানের স্বাধীনতা আছে একই যুক্তিতে একজন ধর্ষকেরও নিজস্ব অনুমতিতে ধর্ষণ করার স্বাধীনতা রয়েছে। থাকবে না কেন?
নারীর সম্মতির বিরুদ্ধে তার সাথে সেক্স করলে ধর্ষণ করা যদি খারাপ হয় একই যুক্তিতে পুরুষের সম্মতির বিরুদ্ধে যাবার কারণে পুরুষ নিজের সম্মতির মুক্তচিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে নারীর সাথে সেক্স করলে এই ধর্ষণ করা ভালো প্রমাণিত হবে না কেন?
মানুষ চতুষ্পদ জানোয়ার থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে সেহেতু মানুষের মধ্যে চতুষ্পদ প্রকৃতির আচরণ থাকা স্বাভাবিক। যেহেতু নারী দুর্বল সেহেতু আত্মরক্ষার অভাবে মুক্তমনাদের হাতে ধর্ষিত হওয়াও প্রাকৃতিক। এটা নারীদের মেনে নিতে হবে না কেন?
ইঁদুর হত্যার ঔষধ,তেলাপোকা হত্যার ঔষধ,মশা হত্যার জন্য কয়েল। এসব প্রাণীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এদেরকে হত্যা করে বিজনেস করে যাচ্ছে কোম্পানি গুলো, কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে নিজের স্বার্থে তাহলে একই যুক্তিতে নিজের স্বার্থে, নিজের আনন্দের জন্য অসহায় নারীকে মুক্তমনে ধর্ষণ করা কেন খারাপ মনে করতে হবে? একই যুক্তিতে ধর্ষণ করা ভালো প্রমাণিত হচ্ছে না? একজন নাস্তিক যদি মুক্তচিন্তায় নারীদের ইঁদুর,মশার মতো মনে করে তাহলে সেটা কোন যুক্তিতে অন্যায় প্রমাণিত হবে? নারীরা চুইংগামের মতো যাদের চাবানো যায় এই মুক্তচিন্তা করা গেলে নারীদের ইঁদুর,মশার মতো মনে করা কেন যাবে না?
একজন নাস্তিকের যদি ধর্ষণ করা খারাপ এই নৈতিকতা বানানোর স্বাধীনতা থাকে তাহলে অবশ্যই অন্য নাস্তিক মুক্তমনাদের ধর্ষণ করা ভালো এই নৈতিকতা বানানোর স্বাধীনতা থাকতে হবে।
চীনের নাস্তিকরা উইঘুর মুসলিমদেরকে মুক্তমনে ধর্ষণ করছে তারা মানবিক মনে করেই ধর্ষণ করছে।অন্য নাস্তিকদের কাছে এগুলো ব্যক্তিগত খারাপ মনে হলেও একই সুত্রে ধর্ষক নাস্তিকদের কাছে এগুলো ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে গণ্য হবে।
ধর্ষণ করা খারাপ এই নৈতিকতাকে অবিশ্বাস করি কারণ আমি এই নৈতিকতা মানতে বাধ্য না। আমার বানানো নৈতিকতাতে মানুষ যেমন চলতে বাধ্য না- এরকম মুক্তচিন্তা করার স্বাধীনতা একজন নাস্তিকের থাকতে পারবে না কেন?
অন্যের ক্ষতি হলে সেটাকে খারাপ বলে ধরতে হবে এটাকে নৈতিকতা হিসেবে যদি বানানো হয় তাহলে একই যুক্তিতে অন্যের ক্ষতি হলে সেটাকে খারাপ বলে ধরতে হবে না - এটাকে কেন নৈতিকতা বানানোর যাবে না? প্রতিটি মুক্তমনা কি নিজস্ব নৈতিকতায় জীবন পরিচালনা করার স্বাধীনতা রাখতে পারবে না?
নাস্তিকান্ধরা এখানে বলতে পারে মুসলিমদের মধ্যেও তো অনেকে ধর্ষণ করে, তাহলে? এর জবাব আমি উপরে আগেই দিয়ে রেখেছি, ইসলাম কখনোই ধর্ষণ করতে শিক্ষা দেয় না বরং নারীদেরকে সম্মান করতে শিক্ষা দেয়। নারীকে সম্মান করবে কি করবে না এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার-এরকম চিন্তা কোনো মুসলিম কখনোই করতে পারবে না কিন্তু নাস্তিকরা পারবে। তাই কোনো মুসলিম যদি ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধ করে তাহলে তার অপরাধের শাস্তি রয়েছে। ইসলাম মুসলিমের এরকম নোংরা কর্মের জন্য শাস্তি প্রদানের আইন রেখেছে একইসাথে এই বিধান নির্ধারণ করে রেখেছে যা যা করা যাবে আর যা করা যাবে না। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় এরকম কোনো আদেশ-নিষেধ নেই। অর্থাৎ একজন মুসলিম যদি ধর্ষণের অপরাধ করে তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এমনকি উক্ত মুসলিম যে অপরাধ করেছে সেটা সে স্বীকার করতেও বাধ্য।কিন্তু নাস্তিক্যধর্ম “ধর্ষণ করা” সম্পূর্ণ সমর্থন করে কারণ মুক্তচিন্তায় যে কোনো কিছুই চিন্তার স্বাধীনতা রয়েছে, রয়েছে প্রয়োগ করার স্বাধীনতা,এমনকি ধর্ষণেরও আবার নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে প্রতিটি লোকের নিজস্ব নৈতিকতা বানানোর স্বাধীনতাও রয়েছে। অর্থাৎ একজন মুসলিম যদি ধর্ষণের মতো অপরাধ করে তাহলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং এই শাস্তি সে মেনে নিতে বাধ্য কিন্তু কোনো মুক্তমনা নাস্তিক যদি ধর্ষণ করে তাহলে মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে তার শাস্তি হতে পারে না যেহেতু সে তার মুক্তচিন্তাতেই ধর্ষণ করেছে আর নাস্তিক্যধর্মে মানুষকে অপরাধের জন্য শাস্তি দিতে হবে এরকম কোনো বিধান নেই, যদি কেউ এরকম বিধান চাপিয়ে দিতে চায় তাহলে মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে কেন বলা যাবে না সে মুক্তচিন্তা-বিদ্বেষী অথবা মুক্তমনা-বিরোধী?
কিছু সস্তা ইসলামের সমালোচক রয়েছে যাদের কাছে নাস্তিক্যধর্মে ধর্ষণ করা কেন খারাপ? প্রশ্ন করা হলে তারা নিজেদের নাস্তিকান্ধতা লুকানোর জন্য বলে নাস্তিকতা ধর্ষণ নিয়ে ডিল করে না আর নাস্তিকতা কোনো ধর্মও নয়। তখন প্রশ্ন আসে “নাস্তিকতা ধর্ষণ নিয়ে ডিল করতে পারে না আর নাস্তিকতা কোনো ধর্ম না” এই নির্দিষ্ট বিধান কি নাস্তিকতাকে নালায়েক একইসাথে নাস্তিকতাকে ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করছে না? “নাস্তিকতা ধর্ষণ নিয়ে ডিল করবে না” এই বিধান অবিশ্বাস করার স্বাধীনতা থাকবে না? “নাস্তিকতা ধর্ম না” এই বিধান নির্দিষ্ট করে দেয়াটাই কি এটা প্রমাণ করছে না যে নাস্তিকতাও এক প্রকার ধর্ম? ইসলামের দেয়া বিধান যদি কোনো নাস্তিক ত্যাগ করে মুক্তমনা হতে পারে তাহলে যেসব নাস্তিকরা এটা প্রয়োগ করতে চায়, সবাইকে মুক্তচিন্তক হতে হবে-তাদের দেয়া এই বিধান ত্যাগ করে একজন নাস্তিক কেন মুক্তমনা হতে পারবে না? কোনো নাস্তিক নিজস্ব মুক্তবুদ্ধিতে চিন্তা করার স্বাধীনতা রাখতে পারবে না কেন? অন্যকে ক্ষতি না করে যা ইচ্ছা তাই করা ভালো এরকম বিধান বিশ্বাস করতে কি নাস্তিকরা বাধ্য?
নৈতিকতার দর্শনে ‘ইমোটিভিসম’ (Emotivism) নামে এক ধারণা আছে। ইমোটিভিসম বলে নৈতিক অবস্থানগুলো আসলে লোকের আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আমরা যখন বলি- ‘ক’ কাজ খারাপ, তখন আসলে বলছি ‘ক’ কাজটি আমার খারাপ লাগে। অর্থাৎ আমার খারাপ লাগাটাই এখানে মুখ্য। আর অনুভূতি- ভালো লাগা, খারাপ লাগা- এগুলো আপেক্ষিক। আমার কাছে ‘ক’ কাজ খারাপ লাগে কিন্তু আরেকজনের কাছে ভালো লাগতেই পারে। কেউ যদি দাবি করে ‘ক খারাপ’ হওয়াটা সার্বজনীনভাবে সঠিক তাহলে এটি আসলে ভুল হবে কারণ সবাই আপনার ভালো লাগাতে মেনে নিতে বাধ্য নয়। ধরুন আমার চকলেট খেতে ভালো লাগে না। এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি যদি বলি চকলেট খাওয়া অন্যায়-তাহলে সেটা হাস্যকর একটা কথা হবে। এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমার কাছে খারাপ লাগতেই পারে কিন্তু অন্য সবার ওপর আমি সেটা চাপিয়ে দিতে পারি না। ইমোটিভিসম নিয়ে অনেক ভয়াবহ রকমের সমস্যা আছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো লিবারেলরা ইমোটিভিসমের যুক্তি ব্যাবহার করে। সব সময় করে না, ওদের প্রয়োজন অনুপাতে করে। যেসব নৈতিক অবস্থানের ব্যাপারে লিবারেলদের দ্বিমত আছে সেগুলোর বিষয় তারা ইমোটিভিসমের যুক্তি দেখায়। যেমন সমকামীতার ক্ষেত্রে বলতে দেখা যায়- শুধু তোমার ঘেন্না লাগার কারণে সমকামীতাকে খারাপ বলা যায় না। কিন্তু যেসব কাজ বা নৈতিক অবস্থানে লিবারেলরা নিজেরা বিশ্বাস করে সেগুলোর ক্ষেত্রে তারা ইমোটিভিসমের যুক্তি দেখায় না। যেমন ক্ষতি নীতি বা Harm principle এর ব্যাপারে তারা বলে, অন্যের ক্ষতি করা হলো অনৈতিকতার মূল নির্যাস। আইনের শক্তি ব্যাবহার করে হলেও একে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
এখানে কিন্তু ইমোটিভিসমের যুক্তি এনে ক্ষতির নীতিকে তারা নাকচ করে না। এই দুমুখো সাপ কেন? নিজেরাই যখন বলে একজন মানুষের স্বাধীনতা আছে যা ইচ্ছা তাই মুক্তচিন্তা করার সেখানে কোনো ধর্ষক নাস্তিক যদি বলে ধর্ষণ করা তার মুক্তচিন্তার অংশ- একে কিভাবে অনৈতিক বলা যাবে? অন্যের ক্ষতি করাকে অনৈতিক বিশ্বাস করতে হবে কেন? ‘অন্যের ক্ষতি হলেই সেটা অনৈতিক’ এই কথাকে যদি নৈতিকতা হিসেবে বিশ্বাস করতে হয় তাহলে প্রশ্ন হলো এটা কি আসলেই যৌক্তিক? ধরুন মাতুদাস নামের এক মুক্তচিন্তক যে টয়লেটে সিসি ক্যামেরা গোপনে যুক্ত করে দিয়েছে। লপা রহমান ও কানিজ ফাতেমা নামের দুই নারীবাদী সেই টয়লেটে গিয়েছিল। তাদের দেহের কিছু মুক্ত ছবি মাতুদাস নামের লোকটি রেকর্ড করে রেখে ইন্টারনেটে আপলোড করে দেয় এবং অনেক মানুষ সেই মুক্ত দেহ দেখে মুক্তহস্তের কাজ করে অনেকে আনন্দ পায় সাথে ভিউ বেশি হবার কারণে অনেক ডলারও পায়। কিন্তু সেই নারীবাদীরা এই ঘটনা জানতেও পারে নি। যেহেতু ভিডিওতে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয় ও চেহারা ঝাপসা করে দেয়া হয়। এখানে কিন্তু কারো ক্ষতি হয় নাই বরং ক্ষতির থেকে আনন্দ-মজা-সুখই বেশি হয়েছে। তাহলে নাস্তিকদের লজিক অনুযায়ী বলাই যায় কাজটি নৈতিক? অন্যের ক্ষতি হলে সেটাই খারাপ- যুক্তির মানদণ্ডে মাতুদাসের কর্মকে অনৈতিক প্রমাণ করার কোনো লজিক আছে? ধরা যাক মগাচিফ নামের এক নাস্তিক লোক যে নিজের সন্তানকে বলেছে তুমি যদি আমার শিশ্ন চুষে দেও তাহলে তোমাকে দশটি কিটকাট চকলেট গিফট দিব। নাস্তিকের সেই ছেলেটি নিজের মুক্তমনা বাবার শিশ্ন চুষে দেয় এবং নাস্তিক বাবা এতে অনেক আনন্দ পায়। বাবা ছেলে কারোই বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয় নাই বরং উভয় স্বাদ পেয়েছে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে অন্যের ক্ষতি হলে সেটাই খারাপ- যুক্তির মানদণ্ডে এই কর্মকে অনৈতিক প্রমাণ করার কোনো যৌক্তিক সুযোগ আছে?
নৈতিকতার উৎস কি? প্রশ্নের জবাবে যখন কোনো নাস্তিক এটা বলে নীতি-নৈতিকতা আকাশ থেকে এসে পড়ে না। আমরাই নীতি নৈতিকতার উৎস, আমরাই নীতি নৈতিকতা নির্ধারণ করি। তখন আর এই কথা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ধর্ষকের ব্যক্তিস্বাধীনতায় এই অধিকার রয়েছে মুক্তমনে ধর্ষণ করার? কারণ যখন কোনো ধর্ষক মুক্তমনে ধর্ষণের কর্ম সম্পন্ন করে তখন সে লোক এই কর্মকে ভালো মনে করেই করে। যদি ধর্ষক তার কাজকে খারাপ মনে করতো তাহলে তো এই কাজটি করতে পারতো না-তাই না? নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে একজন লোকের এই অধিকার রয়েছে যে সে ধর্ষণকে ভালো হিসেবে ধরে নিতেই পারে? এখানে মুক্তচিন্তক ধর্ষকের সুখ হচ্ছে? একজন মুক্তচিন্তক ধর্ষক নিজের স্বাধীনতায় যাকে ইচ্ছা তাকে ধর্ষণ করার স্বাধীনতা রাখে? সে কেন অন্যের বানানো নৈতিকতায় চলবে? একজন ধর্ষকের মুক্তচিন্তা করার অধিকার থাকবে না? সে কেন এটা ধরে নেবে যে অন্যের ক্ষতি হলেই সেটা অন্যায়? তার কি অবিশ্বাস করার স্বাধীনতা থাকবে না? চুরি করা কেন খারাপ? প্রশ্নের জবাবে নাস্তিকরা একটি জবাব দেবার চেষ্টা করে কিন্তু জবাবটি পড়ে আমি অনেকক্ষণ হেসেছিলাম, এই ভেবে যে পশুদের থেকে বিবর্তিত মস্তিস্ক চুরি করা কেন খারাপ? এর জবাব দিতে চাইছে। তো চলুন দেখি কি সেই জবাবটি। জবাবটি এরকমঃ
ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে হেটে যাচ্ছেন এবং একজন চোর আপনার কান থেকে ফোন থাবা দিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে চোরটি যা করেছে তা একটি অপরাধ, অন্যায় কাজ এবং অবশ্যই খারাপ একটি কাজ। প্রশ্ন হলো, আপনি কেন তা বুঝতে পারবেন? তার কারণ এটি নয় যে কোনো এক গ্রন্থে লেখা আছে “চুরি করা খারাপ”। তার কারণ আপনি জানেন, ফোন চুরি হওয়ার কারণে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ আপনি চান না আপনার কোনো জিনিস আপনার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ ভোগ করুক। আর তাই, চুরি করা বা এজাতীয় কাজ “ভুল বা অন্যায়” বলে বিবেচিত।
কোনো চতুষ্পদ প্রজাতির প্রাণী কি-ই বা আর যুক্তি দেবে বলুন? হাস্যকর কথা হলেও এটাই সত্যি যে একই যুক্তিতে চোরের চুরি করা বিবেচিত বলে গণ্য হয়ে যায়। কিভাবে? আপনি যেমন আপনার ক্ষতি হচ্ছে বলে চুরি করাকে অন্যায় বলে গণ্য করলেন একই যুক্তিতে মুক্তমনা ফোন চোর, চুরি না করলে তার ক্ষতি হবে বলেই সে আপনার ফোনটি চুরি করেছে। সে যদি আপনার ফোনটি চুরি না করতো তাহলে সে বিক্রি করতে পারতো না,আর যদি বিক্রি করতে না পারতো তাহলে সে টাকাও ইনকাম করতে পারতো না এতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতো তাই একজন মুক্তমনা চোরের কাছে চুরি করাটাই নৈতিক সাথে এজাতীয় সকল কর্মই ভালো এবং মানবিক বলে বিবেচিত। আপনি যেমন কোনো গ্রন্থে বিশ্বাস করেন না অথবা এটি বিশ্বাস করতে আপনি বাধ্য নন একইভাবে একজন চোরও আপনার বলে দেয়া কোনো নৈতিকতায় বিশ্বাস করতে বাধ্য না। যে চুরি করবে কি করবে না সেটি আপনি নাস্তিক কেন বলে দেবেন? আপনি একজন নাস্তিক, আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো গ্রন্থ যেমন আপনার নৈতিকতার উৎস হতে পারে না একই যুক্তিতে একজন চোরের, একজন ধর্ষকের, একজন মিথ্যুকের কাছে,একজন সন্ত্রাসীর কাছে আপনার বানানো বা আপনার বলে দেওয়া কথাও তাদের কাছে নৈতিকতার উৎস হতেই পারে না। আপনি আপনার বিবেক দিয়ে নৈতিকতা বানাতে চাচ্ছেন তারাও চায়। সার্বিক মুক্তবুদ্ধির যুক্তি সামনে রাখলে বলাই যায় চোর, ডাকাত ধর্ষক,মিথ্যাবাদী,খুনি,লম্পট,লুচ্চা,হিংসুকদের আচরণ আর নাস্তিকদের মুক্তচিন্তার বিশ্বাস একই সুত্রে গাথা। কথায় আছে “চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী” পাঠক খেয়াল করেছেন চোরদের সাথে মুক্তমনাদের গুণাবলী কিভাবে মিলে যাচ্ছে? চমৎকার সাদৃশ্য তাই না?
কোনো মুসলিম নারী যদি সেচ্ছায় কোনো আদর্শবান মুসলিম পুরুষের দ্বিতীয়, তৃতীয় অথবা চতুর্থ স্ত্রী হতে চায় তাহলে নাস্তিকরা এটা নিয়ে কটূক্তি করে যেনো মনে হয় নাস্তিক্যধর্মে একজন পুরুষের চারটি স্ত্রী রাখার বিধান নেই তাই এটি করা যাবে না। যেসব নাস্তিকরা ইসলামের সমালোচনা করার চেষ্টা করে তারা কি তাদের নাস্তিক্যধর্ম নিয়ে কখনো মুক্তচিন্তা করতে পেরেছে? নাস্তিকরা কি আসলেই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে পারে? মুক্তবুদ্ধিতে একজন নাস্তিক যতো ইচ্ছা ততো যৌনসঙ্গিনী রাখতে পারবে আবার একজন নারীও যতোজন ইচ্ছা ততোজন শিশ্নধারীদের রাখতে পারবে নাস্তিক্যধর্মে এসবের লিমিট নেই। আপনি একজন নাস্তিক পুরুষ। আপনার শিশ্নে ৪২০ জন নারীর সাথে সহবাসের ক্ষমতা থাকলে এই কর্ম করা আপনার ব্যক্তিস্বাধীনতা আবার আপনি একজন নাস্তিক নারী, যদি আপনার ৪২০ জন পুরুষের শিশ্ন নিজের মধ্যে প্রবেশের নারীক্ষমতা থাকে তাহলে এই কর্মকাণ্ড করা আপনার নারীস্বাধীনতা। মুক্তচিন্তায় কোনো বাধা-নিষেধ নেই? থাকা উচিত না? বোঝা গেছে? মুক্তিচিন্তক অভিজিৎ রায়ের “সমকামিতা” বইয়ের ৮৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
যে কোনো বিচারে হ্যাভলক এলিস এবং তার স্ত্রী এডিথ লীজের বিয়ে ছিল সে সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই ব্যতিক্রমী। এলিসের স্ত্রী এডিথ লীজ ছিলেন নারীবাদী কবি (তার অন্য চার বোনেরা ছিলেন আবার সবাই অবিবাহিতা)। তারা পারস্পারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও দুজনেই সারাজীবন মুক্ত সম্পর্কে (open relationship) আস্থাশীল ছিলেন, এবং একে অন্যের যৌনস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেন না। যৌনতার ব্যাপারে তারা ছিলেন সমস্ত সামাজিক সংস্কারের ঊর্ধ্বে।
এটা তো স্পষ্ট হচ্ছে যে হ্যাভলক এলিস এবং তার স্ত্রী এডিথ লীজ অর্থাৎ তারা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে থাকলেও স্বামী যদি চাইতো অন্য যে কোনো নারীর সাথে সঙ্গম করলে স্ত্রী সেটা নিষেধ করতো না একইভাবে স্ত্রীও যদি অন্য যে কোনো পুরুষের সাথে সঙ্গম করলে স্বামীও সেখানে বাধা দিতো না? এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যদি স্ত্রী এডিথ লীজ নিজের ছেলের সাথে সম্মতিতে সঙ্গম করতে চাইতো তাহলে কি স্বামী হ্যাভলক এলিস সেটা মেনে নিতো? অথবা স্বামী হ্যাভলক এলিস যদি নিজের কন্যার সাথে সম্মতিতে সঙ্গম করতে চাইতো তাহলে স্ত্রী এডিথ লীজ সেটা মেনে নিতো? যেহেতু মুক্ত সম্পর্কে তারা বিশ্বাসী ছিলেন সেহেতু মনে হয় না যে তারা নিষেধ করতো? এই সংশয়ের কি জবাব আছে নাস্তিক মুক্তমনাদের মুক্তচিন্তায়? আপনি জানলে অবাক হতে পারেন কোনো নাস্তিক একই সাথে নারী আবার একই সাথে সমকামী ছেলের সাথেও যৌনসম্পর্ক করতে পারে। এরকম তথ্য পাওয়া যায় মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়ের “সমকামিতা” নামক বইতে। বইয়ের ৬০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
দিল্লিতে বসবাসরত দণ্ড চিকিৎসক। নাম রমেশ মণ্ডল। নিজে সমকামী। কিন্তু পারিবারিক চাপে পড়ে তাকে এক সময় বিয়ে করতে হয়। কিন্তু স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক স্রেফ যান্ত্রিক। তিনি তার যৌনচাহিদা নিরসন করেন গোপনে তার এক সমকামী বন্ধুর সাথে। কখন জব্বলপুর, কোলাপুরেও চলে যান। তার স্ত্রী আজও এ ব্যাপারটি জানেন না। সম্পূর্ণ মিথ্যার উপরে দাঁড়িয়ে আছে রমেশের দাম্পত্য জীবন। আরেক সমকামী ভদ্রলোক নীতিন দেশাই স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই চলে যান মুম্বই এর চৌপাট্টির সমুদ্র সৈকতে। কারণ সহজেই অনুমেয়।
এখানে মুক্তমনা রমেশ ও নীতিনরা যেই কর্ম করেছে সেটা পুরো স্বাধীন মুক্তচিন্তারই অংশ ।কোনো নারীকে ধোঁকা দিয়ে নিজস্ব সমকামী বন্ধুর সাথে সঙ্গম করতে চাওয়ার মুক্তচিন্তা যে কোনো নাস্তিক চাইলেই করতে পারে। কোনো লোক যদি নিজের সুবিধার জন্য অন্যদের সাথে মিথ্যাচার অথবা প্রতারণা করে ও এটাকেই নিজের নৈতিকতা হিসেবে তৈরি করে তাহলে নাস্তিকতার দৃষ্টিতে এটা কোন যুক্তিতে খারাপ বলে গণ্য হবে? কেন এই মুক্তচিন্তা করতে পারবে না? প্রতিটি লোকের নিজস্ব মুক্তমন দিয়ে কর্ম করার স্বাধীনতা থাকবে না? কোনো নাস্তিকের মিথ্যাচার করার স্বাধীনতা কেন থাকতে পারবে না? সমকামী বন্ধুর সাথে সঙ্গম করার জন্য কি স্ত্রীর অনুমতি নিয়েছিল? না। তাহলে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া যেখানে সমকামী বন্ধুর সাথে সঙ্গম করা নৈতিক হতে পারে এই যুক্তিতে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বয়ং স্ত্রীর সাথেই সঙ্গম করা মুক্তচিন্তায় কেন অযৌক্তিক হবে? রমেশের দাম্পত্য জীবন মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে অথচ রমেশ সেটার পরোয়াই করে না কারণ কি? মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা সম্পর্ক তৈরি করার মুক্তচিন্তা করা যায় তাই? মুক্তচিন্তার আন্দোলনের কমিটির লোকেরা এসব ভয়াবহ সমস্যার সমাধানে কি কি বিধান নির্ধারণ করে দিতে যাচ্ছে? মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়ের “সমকামিতা” বইয়ের ২০২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত, মুক্তমনা সাইটে বছর কয়েক আগে পিঙ্ক নামের এক ভদ্রলোক তার নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখেছিলেন, তার প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘Gays and Lesbians the hidden minorities of Bangladesh’ তার সেই প্রবন্ধটির উপসংহার ছিল এরকম -
আমি বহু সমকামী লোকজনদের জানি যারা বিয়ে করে স্ত্রী-পুত্র কন্যা নিয়ে সংসার করে চলেছেন। অধিকাংশ সময়েই তারা জীবনভর গোপনীয়তা অবলম্বন করে কাটান। তারা এমনকি তাদের খুব ঘনিষ্ঠজন - স্ত্রী, বন্ধু বান্ধব, অভিভাবক, সন্তান - সবার থেকেই নিজের প্রবৃত্তি সারাটা জীবন ধরে গোপন করে চলতে বাধ্য হন।আসলে তারা বেড়ে উঠেন একদম একাকী হয়ে। তাদেরকে কেউ জানে না, যদিও চেনে তাদের সবাই। অন্তত এভাবেই আমাদের সমাজ তাদেরকে চিনতে হয়।
কোনো নারীর সম্মতি ছাড়া সেক্স করলে যদি সেটাকে ধর্ষণ বলে তাহলে একজন সমকামীর ইচ্ছা নেই নারীর সাথে সঙ্গম করার এরপরেও নিজস্ব মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সেক্স করেছে-একে কেন স্বয়ংক্রিয় ধর্ষণ বলা যাবে না? একে স্বয়ংক্রিয় ধর্ষণ বলা উচিত নয় কেন? এই প্রকারের ধর্ষণ কি রমেশ করেনি? নীতিন করেনি? সমকামী হবার ফলে স্ত্রীর সাথে সেক্স করতে চায়নি এরপরেও কিন্তু করেছে? মিথ্যার আশ্রয়ে যদি নিজের সমকামীতাকে গোপন করতেই হবে তাহলে একজন নারীর জীবন কেন ধ্বংস করতে হবে? কেন স্ত্রীর সাথে ভালোবাসার নাটক করতে হবে? কেন নিজের সন্তানদের সাথে নাটক করতে হবে? কেন নিজের সন্তানদেরকে আজীবন মিথ্যায় ডুবিয়ে রাখতে হবে? কোনো নাস্তিক কিভাবে এরকম কর্মকে খারাপ বলতে পারে? পারে না। কেননা মুক্তচিন্তায় নিজের স্ত্রীকে ধোঁকা দিয়ে অন্য পুরুষের সাথে সমকামীতা করা ব্যক্তিস্বাধীনতা। নিজে সমকামী হওয়া সত্ত্বেও একটি নারীকে বিয়ে করে তার সাথে একাধিকবার আনন্দের সাথে সেক্স করে বাচ্চা পয়দা করে অথচ মুক্তচিন্তক এটা নিয়ে দুঃখ পাচ্ছে যে সে কেন অন্য মুক্তচিন্তক পুরুষের পায়ুপথে শিশ্নের যাত্রা করাতে পারলো না? হায়রে মুক্তচিন্তা! সেই স্ত্রী জানতেই পারলো না কখনো যে তার স্বামী অন্যের শিশ্ন নিজের মধ্যে প্রবেশ করাতে পারছে না দেখে কষ্টে আফসস করছে অথচ নিজেই আবার স্ত্রীর সাথে সেক্স করে বাচ্চা পয়দা করছে। হ্যাঁ, একজন মুক্তচিন্তক যেমন নিজে সমকামী হওয়া সত্ত্বেও নিজের স্ত্রীর সাথে প্রতারণা,নিজের শিশু সন্তানদের সাথে প্রতারণা করার ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার রাখে একইভাবে নিজের স্বার্থের জন্য অন্য নারীকে ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তাও করতে পারে এগুলো নাস্তিক্যধর্মে নিষেধ নয় অর্থাৎ যার ভালো লাগে করবে, যার ভালো লাগে না সে করবে না।-আমি এমডি আলী মুসলিম হিসেবে এরকম বর্বর,জঘন্য ও নিকৃষ্ট মুক্তচিন্তাকে অবিশ্বাস করি ও ঘৃণা করি।
মুক্তবুদ্ধির চেতনায় ধর্ষণের বৈধতাঃ
এমন কিছু প্রমাণ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো-যারা মুক্তমনে বিশ্বাস করে ধর্ষণ করা ভালো।এরকম মুক্তচিন্তা করার নির্লজ্জ মুক্তমনও রয়েছে, ভাবা যায়? এদের এসব বর্বর মুক্তচিন্তাকে আমি তীব্র ঘৃণা করি। কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক লোকও হয়তো এসবের মুক্তচিন্তা করতে পারে না। অনলাইনে অন্যতম সংবাদ মাধ্যমের নাম হচ্ছে “বাংলা ট্রিবিউন”। নিয়মিত খবর প্রচারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে নিয়মিত জরিপ পরিচালনা করে এই সংবাদ মাধ্যমটি। তো এই সংবাদ মাধ্যমে ১২ মে ২০১৭ তারিখে “ধর্ষণকে অপরাধই মনে করে না সাফাত!” এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছেঃ
ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যে অপরাধ, তা মনে করে না বলে দাবি করেছে সাফাত আহমেদ। তার ভাষ্য, তারা ‘মেয়ে বন্ধুদের’ সঙ্গে প্রায়ই পার্টিতে ‘এমনটা’ করে থাকে। জন্মদিনের পার্টির এই ঘটনা যে এত বড় হতে পারে, তা তার ধারণাতেই ছিল না। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অকপটে দুই তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কথাও স্বীকার করে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে। জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা এতে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাদের ভাষ্য, ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে সাফাত উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন করতো। অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে তার স্বাভাবিক বলেই মনে হতো। জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান,সাফাত ও সাদমান স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই সকল কিছু স্বীকার করে। তাদের প্রশ্ন করা হয়,তোমরা পালিয়ে ছিলে কেন? জবাবে সাফাত জানায়,পুলিশ তাদের খুঁজছে এমন খবর পেয়ে পালিয়ে যায় তারা। পুলিশ কেন খুঁজছে জানতে চাইলে তারা বলে,এই বিষয়টিই তারা বুঝতে পারছে না।তারা দুই তরুণীর অভিযোগকে ধর্ষণ বলে মনেই করছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সাফাত ও সাদমানরা এমন পরিবেশে বড় হয়েছে যে, তাদের কাছে ‘ধর্ষণ’ কোনও বড় বিষয় নয়।তাদের অনেক মেয়েবন্ধু রয়েছে এবং তাদের ভাষায় মাঝেমধ্যেই মেয়েবন্ধুদের সঙ্গে তারা ‘আনন্দ-ফূর্তি’ করে। পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, সাফাতের জন্মদিন উপলক্ষে তারা সেইরাতে গভীররাত পর্যন্ত মদ্যপান করে বলে জানিয়েছে। দুই তরুণীর সঙ্গে সম্মতিক্রমেই মিলিত হয়েছিল বলে সাফাত ও সাদমানের দাবি।পরবর্তীতে কী কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তা তারা বুঝতে পারছে না। এমনটি হওয়ার কথা ছিল না বলেও জানায় সাফাত ও সাদমান।
মুসলিম হিসেবে আমি এরকম ভয়ংকর ঘটনাকে তীব্র ঘৃণাবোধ জানাই। ইসলাম আমাকে শিক্ষা দেয়, সুরা আনআম ৬ঃ১৫১ = প্রকাশ্য বা গোপন কোনো অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না।- এর বাইরে যাবার সুযোগ আমার নেই, নেই বিরোধিতা করার। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মে মুক্তচিন্তায় প্রতিটি মানব প্রজাতি নিজের নৈতিকতা বানানোর ব্যক্তিস্বাধীনতা রাখে সেহেতু উপরে ধর্ষকের কর্মটি নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে অনৈতিক বলার নির্দিষ্টতা নেই। কারণ ধর্ষক সাফাত নিজস্ব মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করাকে অনৈতিক বলে মনে করে না এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। নাস্তিকদের নৈতিকতার উৎস যেমন সে নিজেই একইভাবে মুক্তমনা ধর্ষণ সাফাতের নৈতিকতার উৎস সে নিজেই। ইসলাম অনুসরণ করলে সে ‘ধর্ষণ করা ভালো’ এই মুক্তচিন্তা করার সুযোগই পেতো না আর চিন্তা করলেও সেই চিন্তাকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর। যেসব ধর্ষকরা ধর্ষণ করে তারা কেন করে? এই বিষয়ে খবর প্রকাশ করা হয়। Jagonews24.com সুত্রে ১২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে “কেন তারা ধর্ষণ করে?” নামে শিরোনাম দেয়া রয়েছে। সেখানে বর্ণিত হয়েছেঃ
অপরাধবিজ্ঞানীরা বলেন, ধর্ষকরা সবসময়ই ধর্ষণের পর অস্বীকার করে এবং বিভিন্ন ধরনের যুক্তি উত্থাপনের চেষ্টা করে। তবে ধর্ষণ এমনই একটি অপরাধ যার কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না এবং এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে অনেক ধর্ষণের শিকার নারীই তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় সম্পর্কে সমাজ এবং লোকের ভয়ে বলতেও পারেন না। অন্যদিকে ধর্ষকরা বীরচিত্তে অন্য কাউকে ধর্ষণের পাঁয়তারা করে বেড়ায়।
আরও জানতে পুরো খবরটিই আপনারা পড়তে পারেন। ধর্ষকরা তাদের পক্ষে যুক্তিও উপস্থাপন করে, ভাবা যায়? মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা ভালো-এটা হয়তো জানা গেলো কিন্তু মুক্তচিন্তার পাশাপাশি যুক্তিও পেশ করে মুক্তমনা ধর্ষকরা! কোনো নাস্তিক যেমন যুক্তি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে একইরকম মুক্তমনা ধর্ষকরাও যুক্তি দিয়ে তাদের কর্মকে যৌক্তিক প্রমাণের চেষ্টা করে। ধর্ষকের কি শাস্তি হওয়া উচিত? প্রশ্নে নারীবাদী তসলিমা নাসরিন বলেছিল ‘ধর্ষকরাও মানুষ তাদেরও বেঁচে থাকার থাকার অধিকার রয়েছে’। আপনি এই বিষয় গুগোলে সার্চ করলেই বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। এখানে তসলিমা যদি দুটো শব্দ যুক্ত করে দিতেন তাহলেই ফাঁস হয়ে যায় আসল তথ্য! সেটি কি? ধর্ষকরাও মানুষ,তাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে,ধর্ষকদেরও ব্যক্তিস্বাধীনতা রয়েছে,ধর্ষকদেরও মুক্তচিন্তা করার অধিকার রয়েছে! ধর্ষকদেরও যুক্তি পেশ করার স্বাধীনতা রয়েছে। তসলিমা এগুলো বলে নাই, কিন্তু যদি বলতো তাহলে কি নাস্তিক্যধর্মে এসব কথা ভুল হতো? না। এক্স সংশয়বাদী ড. রাফান আহমেদ তার "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" ১৭৯,১৮০ পৃষ্ঠায় "In an interview with Stone Phillips, Dateline NBC (29 November 1994)" সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ
নাস্তিক সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমারের নিজের অবস্থানের পক্ষে বলেছিলেন যে, যদি কোনো মানুষ এটা মনে না করে যে, স্রষ্টার নিকট তাকে জবাবদিহি করতে হবে,তা হলে গ্রহনযোগ্য সীমায় রাখার জন্য নিজের আচরণকে পরিবর্তন করার দরকারটা কি? আমি এমনটাই ভেবেছিলাম। আমি সবসময় বিবর্তন তত্ত্বকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। বিশ্বাস করেছি আমরা সবাই স্রেফ থকথকে কাদা থেকে এসেছি,যখন আমরা মরে যাব, ব্যাস শেষ। এরপরে আর কিছুই নাই।
মুক্তচিন্তায় সমস্ত কিছু করার স্বাধীনতা যে নাস্তিকদের আছে এটা স্বীকার করে নিয়েছে সন্ত্রাসী নাস্তিক সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমার। জেফরি যে সিরিয়ালে কিল করে এটা কিন্তু তার মুক্তবুদ্ধিতে ভালো ভেবেই সে কাজগুলো করে। তার কাছে যদি এসব খারাপ বলে মনে হতো তাহলে কি করতো? এই কর্মগুলো কি ব্যক্তিস্বাধীনতার অংশ নয়? ভারতে হাইকোর্টের বিচারক এন কে চন্দ্রবংশীর মুক্তবুদ্ধিতে স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি সেক্স করলে সেটাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হবে না। এরকম মুক্তবুদ্ধিকে ভুল বলার সুযোগ আছে নাস্তিকদের? একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে। ধরা যাক আসিফ মহিউদ্দিন নামের এক নাস্তিক লোক কানিজ ফাতিমা নামে এক নারীবাদীকে পটিয়ে বিয়ে করেছে। একদিন উভয় মাতাল থাকার কারণে সম্মতি নিতে ভুলে গিয়েছিল আসিফ। কিন্তু কি আর করার? আনন্দের সাথে সঙ্গম করা শেষ হলে যখন হুশ ফিরে আসে তখন এই কর্মকে ধর্ষণ বলা যাবে কি না এই বিষয় সংশয়ে ভুগে উভয়ই। হুঁশ ফিরে আসলে একে অপরকে সম্মতি দিয়ে দেয়। সম্মতি ছাড়া সেক্স করলে সেটাকে ধর্ষণ বলা হয় কিন্তু হুঁশ আসার পরে সম্মতি নিলে সেটাকে যদি ধর্ষণ না বলা হয় তাহলে স্ত্রীকে কি ‘অর্ধেক ধর্ষিতা’ আর ‘অর্ধেক ধর্ষিতা না’ বলা যাবে? অর্থাৎ হাপ ধর্ষিতা বলা যাবে? আর স্বামীকে কি হাপ ধর্ষক বলা হবে? যাই বলা হোক না কেন মুক্তমনা চন্দ্রবংশীর মুক্তচিন্তায় স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি করে সঙ্গম করা যাবে এবং একে ধর্ষণ বলাও যাবে না।“কালের কণ্ঠ” পত্রিকায় ২৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে “জোরপূর্বক হলেও স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক ধর্ষণ নয়: আদালত” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়। সেই সংবাদে বর্ণিত হয়েছেঃ(৩)
বৈধ স্ত্রীর বয়স যদি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে হয় তাহলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক জোরপূর্বক হলেও তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না বলে রায় দিয়েছেন ভারতের ছত্তিশগড় হাইকোর্টের বিচারক এন কে চন্দ্রবংশী। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।এ সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে বিচারক চন্দ্রবংশী উল্লেখ করেন, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কোনো স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক হলে তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না।আইনগতভাবে স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের পর জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক শাস্তিযোগ্য নয়।
ধর্ষণ কাকে বলা যাবে অথবা যাবে না? প্রশ্নে সংশয় রয়েছে কারণ একই খবরে বলা হয়েছে কেরালার হাইকোর্টের এক রায়ে নাকি এটাও বলা হয়েছে, নারী ইচ্ছার বিরুদ্ধে দৈহিক সম্পর্ককে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ বলা যেতে পারে। এখানে কথা হচ্ছে মুক্তচিন্তকের এই স্বাধীনতা রয়েছে এই রায়কে অবিশ্বাস করার। তাই এই রায় তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বহন করে না মুক্তচিন্তায়। কোনো কোর্ট যদি এই রায় দেয় সমকামীতা করা খারাপ তখন যেমন মুক্তমনারা এটা মেনে নিতে পারে না ঠিক একই ব্যাপার ঘটবে এই ক্ষেত্রেও,বোঝা গেছে? ভারতে একজন অন্যতম মুক্তচিন্তক রয়েছেন। নাম বললে আপনিও হয়তো চিনতে পারেন। নাস্তিকরা যেমন চায় দুনিয়া থেকে ইসলাম নির্মূল হোক,উনিও চান যে ইসলাম না শুধু সাথে মুসলিমদেরকেও সমানে নির্মূল করতে হবে,এটা যেভাবেই হউক। নরেন্দ্র মোদীই উনার নাম। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। উনি মুক্তবুদ্ধিতে যা ইচ্ছা তাই করেন মুসলিমদের সাথে। উনার মতো একজন মুক্তমনা এটা বিশ্বাস করেন যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কে ধর্ষণের অপরাধ হয় না বলে অবস্থান নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। উনার মুক্তবুদ্ধিতে একজন স্বামী যদি স্ত্রীকে ধর্ষণ করে তাহলে সেটা অপরাধ নয়। “আনন্দ বাজার পত্রিকা অনলাইন” থেকে ৩০ অগস্ট ২০১৭ তারিখে “বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়, আদালতে সওয়াল কেন্দ্রের” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণনা করা হয়ঃ(৪)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কে ধর্ষণের অপরাধ হয় না বলে অবস্থান নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সরকারের যুক্তি, এতে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানেই অস্থিরতা তৈরি হবে। স্বামীদের হেনস্থা করার জন্যও এটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে।বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণকে অপরাধের তকমা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কয়েকটি সামাজিক ও মহিলা সংগঠন। তাতেই আপত্তি তুলে মোদী সরকার হলফনামা দিয়ে বলেছে, ‘‘যদি স্ত্রী-র সঙ্গে স্বামীর সহবাসকে ধর্ষণের তকমা দেওয়া হয়, তা হলে ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি, তা শুধুমাত্র স্ত্রী-ই বলতে পারবেন। প্রশ্ন হল, কোন প্রমাণের উপর আদালত ভরসা করবে? কারণ স্বামী ও স্ত্রী-র মধ্যে সহবাসের স্থায়ী কোনও প্রমাণ থেকে যায় না।সরকারের আরও যুক্তি, ভারতের মতো দেশে সাক্ষরতা, আর্থিক ক্ষমতার অভাবের মতো সমস্যা রয়েছে। সমাজের মানসিকতা, বৈচিত্র্য, দারিদ্রও সমস্যা। তাই এ বিষয়ে পশ্চিমের দেশগুলিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা যায় না।
মুক্তমনা নরেন্দ মোদীর এই অবস্থানের ঘোরতর সমালোচনা করেছেন নারী অধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারীরা। তাঁদের যুক্তি, সরকারের এই অবস্থানের অর্থ স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সহবাসে অনিচ্ছা থাকলেও না বলতে পারেন না। এসব কথিত নারীবাদীরা যাই বলুক না কেন তাতে নরেন্দ মোদীর মতো একজন মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীর কিছুই আসে যায় না। এটাই সাফ কথা। আপনি নরেন্দ মোদীর নৈতিকতা মানতে চাচ্ছেন না তাহলে আপনার দেয়া নৈতিকতা উনি কেন বিশ্বাস করতে যাবেন? আপনার যেমন সমালোচনা করার স্বাধীনতা রয়েছে অনুরূপ মোদীরও মুক্তবুদ্ধিতে কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে। যেহেতু ক্ষমতা উনার সেহেতু এটা বাস্তবায়ন অথবা জবরদস্তি প্রয়োগও উনি করতেই পারেন। নরেন্দ্র মোদী চাইলেই এই মুক্তচিন্তা কেন করতে পারবেন না? বলুন।
মায়ানমারে মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন অত্যাচারের কথা কার অজানা? সেখানে অসহায় মুসলিম নারীদেরকে কিভাবে মুক্তমনে ধর্ষণ করা হয়েছে তার বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সেখানে অং সান সুচি যে নৈতিকতা তৈরি করে মুসলিমদেরকে দুনিয়া থেকে ঘুম করতে চেয়েছে সেটা কার অজানা? মুক্তচিন্তায় সুচি যদি মুসলিম পুরুষকে গণহত্যা একইসাথে মুসলিম নারী-শিশুদেরকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করাকে নৈতিকতা হিসেবে তৈরি করে তাহলে নাস্তিকদের এমন কি যুক্তি আছে এটাকে অনৈতিক প্রমাণ করার? নাস্তিকরা কোনো কিছু খারাপ বললেই কি সেটাকে খারাপ হিসেবে মেনে নিতে হবে? “ধর্ষণ এখন আর কোনো অপরাধ নয় সু চি’র দৃষ্টিতে” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করা হয়েছে “বাংলা সংলাপ” সংবাদ মাধ্যমে ২ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে,এখানে বর্ণিত হয়েছেঃ
অবশ্য সু চি মায়ানমারের সেনাবাহিনী যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নারীদের ধর্ষণ করে তা ক্ষমতায় আরোহনের আগে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে বারবার তা বলেছেন এবং অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সু চির এধরনের অবস্থান ও অভিব্যক্তি মায়ানমারের সেনাদের কাছে এই বার্তাই দিচ্ছে যে ধর্ষণ আর কোনো অপরাধ নয় এবং এধরনের ধর্ষণের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে সু চির চোখের সামনেই। যা তিনি অবহিত। ২০১৫ সালে মায়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে প্রচার অভিযান শুরু করার পূর্বে সু চিকে মনে হচ্ছিল নারী অধিকার রক্ষায় একজন আদর্শবান ও চ্যাম্পিয়ন যোদ্ধা। তিনি ইতোমধ্যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার হস্তগত করেছেন। তিনি মায়ানমারে পিতৃতন্ত্রের যথেষ্ট সমালোচনা করতেন, এমনকি সেনাবাহিনীরও। ২০১১ সালে অং সান সু চি নোবেল বিজয়ী নারীদের একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমার দেশে নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়, যারা শান্তিতে বাস করতে চায়, সেই সব নারী যারা শুধুমাত্র তাদের মৌলিক মানবাধিকার টুকু চায়। বিশেষ করে সেই সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের ধর্ষণ করা হয় এবং ধর্ষণ কেবলি বদলা হিসেবে বহুল প্রচলিত। ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সেনাবাহিনী কারণ তারা ধর্ষণ করে জাতিগতভাবে তাদের নিধন করতে চায় এবং আমাদের দেশকে বিভক্ত করে তোলে।’সেই সু চি ধর্ষণ সম্পর্কে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন তা ভুলে গেছেন। অথবা তিনি যেন ধর্ষণের কথা আদতেই কোনোদিন শোনেননি, এমন ভাব করছেন। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সু চির অবস্থান পাল্টে যাওয়ায় তিনি খুব শীঘ্রই তার ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছেন যা নারীর অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় জয়গান গাইত।
পৃথিবীতে বেশি সংখ্যক নাস্তিক রয়েছে এমনই একটি দেশের নাম সুইডেন(৫)। আপনারা মনে করতে পারেন নাস্তিক প্রদান দেশ সেহেতু এখানে মানবতার সোনার খনি রয়েছে হয়তো! কিন্তু কথাটি আসলে ভুল। এখানে মুক্তমনে ধর্ষণ চর্চার সংখ্যা অনেক অনেক বেশি।এখানে যারা ধর্ষক তারা মুক্তমনেই ধর্ষণ চর্চা করে থাকে কিন্তু আইনে বলা হয়েছে ধর্ষণ করা যাবে না কিন্তু আইন কি নাস্তিকদের কাছে নৈতিকতার উৎস হতে পারে? নাস্তিকরা কেন আইনে বিশ্বাস করতে যাবে? আইন বানিয়ে কি আর মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে থামানো যাবে? তাদেরকে কেন আইনের শেকলে বন্দী করে ফেলা হবে? তাদের নিজেদের মুক্তবুদ্ধি চর্চা করতে দেয়া হবে না? তাছাড়া আইনে নিষিদ্ধ থাকলেই কি ধর্ষণ করা মুক্তমনাদের কাছে খারাপ হয়ে যাবে? তাছাড়া আইন তো মানুষই বানায় সেখানে অন্য মানুষ অন্যরকম আইন বানিয়ে চললে কেন বেআইনি হবে? মুক্তচিন্তায় ধর্ষণের স্বাধীনতা কেন থাকতে পারবে না? এটা নির্ধারণ করে দিলে স্বাধীনভাবে মুক্তচিন্তা করা যাবে কিভাবে? The International Business Times reported in 2014:(৬)
Sweden has the highest rate of rape in Europe, with the UN reporting 69 rape cases per 100,000 inhabitants in 2011, according to author and advocate of power feminism Naomi Wolf on opinion website Project Syndicate.Sweden has the highest rate of rape in Europe, with the UN reporting 69 rape cases per 100,000 inhabitants in 2011, according to author and advocate of power feminism Naomi Wolf on opinion website Project Syndicate."According to rape crisis advocates in Sweden, one-third of Swedish women have been sexually assaulted by the time they leave their teens. According to a study published in 2003, and other later studies through 2009, Sweden has the highest sexual assault rate in Europe, and among the lowest conviction rates," Wolf wrote.A 2010 Amnesty report said: "In Sweden, according to official crime statistics, the number of reported rapes has quadrupled during the past 20 years. In 2008, there were just over 4,000 rapes of people over 15, the great majority of them girls and women.
অর্থঃ সুইডেনে ইউরোপে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি, জাতিসংঘ ২০১১ সালে প্রতি 100,000 জন বাসিন্দার মধ্যে 69টি ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করেছে, মতামত ওয়েবসাইট প্রকল্প সিন্ডিকেট-এর লেখক ও নারীবাদী শক্তির প্রবক্তা নাওমি উলফের মতে, ইউরোপে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি। মতামত ওয়েবসাইট প্রজেক্ট সিন্ডিকেটের লেখক ও নারীবাদী শক্তির উকিল নাওমি উলফের মতে, ২০১১ সালে জাতিসংঘ প্রতি 100,000 জন বাসিন্দার প্রতি 69টি ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করেছে।" সুইডেনে ধর্ষণ সংকটের সমর্থকদের মতে, সুইডেনের এক-তৃতীয়াংশ নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তারা তাদের কৈশোর ত্যাগ করে। 2003 সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা এবং 2009 সালের পরবর্তী অন্যান্য গবেষণা অনুসারে, সুইডেনে ইউরোপে যৌন নিপীড়নের হার সবচেয়ে বেশি এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার সবচেয়ে কম, "উলফ লিখেছেন। 2010 সালের অ্যামনেস্টি রিপোর্টে বলা হয়েছে: "সুইডেনে , সরকারী অপরাধ পরিসংখ্যান অনুসারে, গত 20 বছরে রিপোর্ট করা ধর্ষণের সংখ্যা চারগুণ বেড়েছে। 2008 সালে, 15 বছরের বেশি বয়সী লোকদের মাত্র 4,000 জনেরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে এবং নারী।
যারা বলে আমাদেরকে প্রগতিশীল হতে হবে তারা আসলে কি ধরণের প্রগতিশীল হতে চায় সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। যারা ইসলামের সমালোচনা করে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে চান তাদের আদর্শ আসলে কোনটা হবে? সেটা যে আসলেই শ্রেষ্ঠ তার প্রমাণ কি হবে? তার নৈতিক ভিত্তি কেমন হবে? এরাও কি বিশ্বাস করে? নিজেদেরকে শিপ্পাঞ্জির বংশধর হিসেবে বিশ্বাস করা কি সভ্যতা? নাস্তিকরা সভ্যতা আসলেই বোঝে? সনাতনী নাগাসাধুদের দেখলে নাস্তিকদের থেকে বেশি মুক্তমনা মনে হবে। নাগাসাধুরা পোশাকই পরিধান করে না সেখানে আপনি কয়জন বঙ্গীয় নাস্তিককে দেখেছেন পুরো নগ্ন হতে? নাস্তিকরা তাহলে নাগাসাধুদের মতো পোশাক থেকে মুক্ত হতে পারেনি? মুক্তচিন্তায় বাধা-নিষেধ থাকতে হবে কেন? মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলে হুমায়ুন আজাদের মতো সারাসন্ধ্যা তরুণীকে ধর্ষণ করার মত প্রকাশের ফ্রিডম থাকতে পারবে না কেন? বাক স্বাধীনতার লাগাম থাকা উচিত নাকি না? এই সীমা কে ঠিক করে দেবে?
জেলে বন্দী হওয়া কোনো মস্তিস্ক বিকৃত নাস্তিক যদি এই আইন তৈরি করতে চায় যে একজন মানুষ অন্য মানুষের দেহ স্বাধীনভাবে ভোগ করার অধিকার পাবে তাহলে বিষয়টি কেমন দেখায় বলুন তো? নাস্তিকরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার মুক্তচিন্তা করতে পারে, বাপ-ছেলের সমকামীতার মুক্তচিন্তা করতে পারে,নিজেদের নৈতিকতা নিজেরাই বানানোর মুক্তচিন্তা করতে পারে কিন্তু কোনো লোক যে অন্য নারীর দেহ অবাধে ভোগ করতে পারে এই মুক্তচিন্তা কেন করতে পারে না? কোনো নারী যে অন্য পুরুষের দেহ অবাধে ভোগ করতে পারে এই মুক্তচিন্তা কেন করতে পারে না? সম্মতি নিয়েই কেন দেহ ভোগ করতে হবে? ‘সম্মতি নিতেই হবে নাহলে সেক্স করা যাবে না’- এই বিধানকে অবিশ্বাসের স্বাধীনতা নাই? ধরুন ডকিন্স নামের এক লোক তার নিজের নারীবাদী খালাকে অজ্ঞান করে তার সাথে সেক্স করলো অথচ এখানে নারীবাদী খালার বিন্দুমাত্র কোনো ক্ষতি হয় নাই তাহলে এই সঙ্গমকে কিভাবে মুক্তচিন্তায় অনৈতিক প্রমাণ করা যাবে? খারাপ প্রমাণ করা সম্ভব? আমেরিকার সমাজবিজ্ঞানী পিটার এল বার্গার (Peter L. Berger) নাস্তিক মার্কুইস ডি সেড (Marquis de Sade) সম্পর্কে লিখেছেন:(৭)
The infamous Marquis de Sade was residing in a lunatic asylum when he penned his last work, a tract entitled “One More Effort and You will be True Republicans”. That effort was for a law that every citizen would have a right of free access to the body of every other citizen.
অর্থঃ একটি পাগলাগারতের আশ্রয়ে থেকে কুখ্যাত মারকুইস ডি সাদ তার শেষ পুস্তিকাটি লিখেছিলেন,যার শিরোনাম ছিল ‘একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা এবং আপনি হবেন সত্যিকারের রিপাবলিকান’। সেই প্রচেষ্টা ছিল এমন একটি আইনের জন্য যাতে প্রত্যেক নাগরিক একে অন্যের দেহের উপর অবাধ প্রবেশাধিকার থাকবে।
অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে নিজে মুক্তমনে যা ইচ্ছা সেটা করা যাবে-এই বিধান যথেষ্ট সংশয়যুক্ত। এই বিধান বিশ্বাস করে নিলে লাশের সাথে যৌনসঙ্গম করার বৈধতা মুক্তমনারা পেয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় ২০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে “মরদেহের সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ, ডোমের সহযোগী গ্রেপ্তার” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয় সেখানে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
পাঁচটি আত্মহত্যার ঘটনা। আত্মহত্যাকারী প্রত্যেকে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরী। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ এসেছিল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে। লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ছিল না ধর্ষণের আলামতও। অথচ সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডাক্তারের পাঠানো প্রতিটি মরদেহের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াবে (এইচভিএস) ’ পাওয়া গেল একই পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি। অনুসন্ধানে জানা গেলো, মরদেহগুলো মর্গে আসার পর সেগুলোর সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করেছিলেন ডোমের সহযোগী মুন্না ভক্ত (২০)। মুন্না ভক্তকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ শুক্রবার ঘটনাটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে তারা। মুন্নার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের জুরান মোল্লার পাড়ায়। তিনি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের কোনো কর্মচারী নন। হাসপাতালের ডোম শ্রী যতন কুমারের ভাগনে হওয়ার সুবাদে তিনি সেখানে কাজ করতেন। মর্গের চাবি তাঁর কাছে থাকত। মর্গে আসা মরদেহগুলো তিনি গ্রহণ করতেন, ময়নাতদন্তের সময় ডাক্তারদের সাহায্য করতেন এবং ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো স্বজনদের বুঝিয়ে দিতেন। সিআইডি বলছে, গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মুন্না অন্তত পাঁচজন মৃত কিশোরীর লাশ ধর্ষণ করেছেন বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে।
গভীরভাবে খেয়াল করুন। সম্মতি ছাড়া কারো সাথে সঙ্গম করলে বলা হয় ধর্ষণ আবার কাউকে ক্ষতি না করে যা ইচ্ছা সেটাই করা নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিত, প্রশ্ন হলো মুন্না ভক্ত লাশের সম্মতি নিতে পারেনি এই হিসেবে ধর্ষণ করেছে সে কিন্তু একইসাথে লাশের তো বিন্দুমাত্র কোনো ক্ষতি হয় নাই তাহলে একে কি নৈতিক বলা যাবে না? এই ভয়ংকর সাংঘর্ষিকতা থেকে মুক্তির উপায় কি মুক্তচিন্তায় আছে? এসব নেক্রোফিলিয়াদের মুক্তচিন্তা কিভাবে মুক্তবুদ্ধিতে খারাপ? “ঢাকা প্রতিবেদন” সংবাদ মাধ্যমে “লাশের সাথে যৌনাচার:মুন্না বলছে দোষের কি!” শিরোনামে ২৩ নভেম্বর ২০২০ তারিখে খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছেঃ
পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জবানবন্দিতে অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করলেও সে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয় বলে জানায়। মুন্না বলেছে, রাতে মর্গে সে একাই থাকত। নিরিবিলি পরিবেশ এবং কোনো লোকজন না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে।তার ভাষায়, ‘মৃত মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক দোষের কিছু না।’ তবে সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুন্না যে অপরাধ করেছেন সেজন্য তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
মুন্নার মুক্তচিন্তায় মৃত মানুষের সাথে শরীরচর্চা দোষের কিছু না। কি নির্লজ্জ মুক্তচিন্তা? এসব মুক্তচিন্তা মানুষকে চতুষ্পদ জানোয়ারে নামিয়ে নিয়ে আসে। আর নাস্তিক্যবিশ্বাস মতে মানুষ প্রজাতি জানোয়ারই। কথা গুলো বলতে আমার কষ্ট লাগছে কিন্তু সত্য আসলেই তিতা হয়। ধরুন একজন নাস্তিকের নিজের সন্তান মারা গিয়েছে। সে চাইলো যেহেতু আমার ছোট সন্তান মৃত তাই এর সাথে আমি যাই করি না কেন সেটা আমার মুক্তমনে ভালো। রাতে সে মদ খেতে খেতে নিজের মৃত সন্তানের মুখে শিশ্ন প্রবেশ করিয়ে দিয়ে আনন্দ সংগ্রহ করছে। প্রশ্ন হলো, কোনো মুক্তমনা নাস্তিক এই লোকের কর্মকে খারাপ দাবি করতে পারে? যুক্তি আছে কোনো? সন্তানকে দিয়ে শিশ্ন খেলার মুক্তচিন্তা কিভাবে অযৌক্তিক? পক্ষে যুক্তি নাই? প্রতিটি নাস্তিকদের কাছে সন্তান নিয়ে শিশ্ন খেলা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে গণ্য! এটা জানা আছে? ‘BBC NEWS। বাংলা” সংবাদ মাধ্যমে ‘মৃতদের সঙ্গে যৌনমিলন করেন ভারতের যে হিন্দু সাধুরা” শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয় ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে। সেখানে বর্ণিত আছেঃ (৮)
এরা ধ্যান করেন, খান, ঘুমান এবং শ্মশানে চারিদিকে চিতায় আগুনে পুড়তে থাকা লাশের পাশেই যৌনমিলনে লিপ্ত হন। এরা নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ান, মানুষের মাংস খান এবং নরকংকালের খুলি থেকে পান করেন। গাঁজায় টান দেন।
"যে পথ ধরে তারা আধ্যাত্মিক সাধনায় লিপ্ত হয়, সেটা পাগলামি এবং বিপদজনক বলে মনে হবে। এরা মানুষের মাংস খায়, এমনকি নিজেদের মল খায়। কিন্তু তারা মনে করে এই কাজ করে তারা চেতনার একটা উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছায়।"
"বেশিরভাগ মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায়। শ্মশান হচ্ছে মৃত্যুর প্রতীক। কিন্তু অঘোরিদের জন্য সেটাই হচ্ছে শুরু। তারা সাধারণ মানুষের নীতি এবং মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়", বলছেন মনোজ ঠাক্কার।
অনেক অঘোরি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে যে তারা মৃতদেহের সঙ্গে সঙ্গম করেছে। তবে তাদের সমাজেও যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু নিষেধের বেড়াজাল আছে। জেমস ম্যালিনসন জানান, এরা পতিতাদের সঙ্গে তাদের রীতি অনুযায়ী যৌনসঙ্গম করে। কিন্তু সমকামিতায় বিশ্বাসী নয় তারা, এটি অনুমোদনও করে না।"
আপনি যদি নিজেকে নাস্তিক মুক্তচিন্তক হিসেবে দাবি করে থাকেন তাহলে আপনার উচিত হবে এসব সাধুদের সাথে নিজের অবস্থান মিলিয়ে দেখা যে আসলেই আপনি মুক্তমনা হতে পেরেছেন কিনা? সাধুরা মুক্তমনে লাশের সাথে যৌনমিলন করে এবং এই কাজ নাস্তিকদের লজিক অনুযায়ী বৈধ কেননা লাশের কোনো ক্ষতিই হচ্ছে না এখানে। রিচার্ড ডকিন্স,সাম হ্যারিস, ডেন বারকার, ক্রিস্টোফার হিচেন্স, বার্ট্রান্ড রাসেলদের মতো বিখ্যাত নাস্তিকরা কি সাধুদের মতো মুক্তচিন্তা করতে সফল হয়েছে? এদের লেকচার শুনলে মনে হবে এরা পৃথিবী থেকে একদিনেই ইসলামকে গায়েব করে দেবে। এরা মানুষকে মুক্তচিন্তা করতে বলে অথচ এরা নিজেরাই আসলে কতটুকু মুক্তমনা হতে পেরেছে? নাস্তিকরা গাঁজায় টান দেয়ার মুক্তচিন্তা করতে পারে,বাপ-দাদার সাথে সমকামীতা করার মুক্তচিন্তা করতে পারে,পতিতাদের সাথে যৌনমিলন করার মুক্তচিন্তা করতে পারে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাস্তায় ল্যাংটা হয়ে ঘুরার মুক্তচিন্তা কেন করতে পারে না? মুক্তচিন্তায় কেন মানুষের মাংস খেতে পারে না? নিজের মল খাওয়ার মুক্তচিন্তা কেন করতে পারে না? তাহলে কারা আসলে বেশি মুক্তচিন্তা করতে সফল হচ্ছে নাস্তিকরা নাকি অঘোরি সাধুরা?
অঘোরি সাধুরা নাকি আবার সাধারণ মানুষের নীতি এবং মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জও করে,ভাবা যায়? এদের কাজকর্মকে এরা মনে করে এই কাজ করে তারা চেতনার একটা উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছায়। নাস্তিকদের কেন উচিত হবে না এদের চেতনা ধুয়ে পানি সেবন করা? জেমস ম্যালিনসনের ভাষায়, "অঘোরিদের এসব রীতির মূল কথা হচ্ছে, তারা অ্যাধাত্মিক মুক্তিলাভের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে এক হতে চান, আর সেজন্যে তারা বিশুদ্ধতার সূত্রের সীমা ছাড়িয়ে যেতে চান। পাঠক কল্পনা করতে পারেন এরা কোন লেভেলের মুক্তচিন্তা করে যে বিশুদ্ধতার সূত্রের সীমা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে চান? এদের নিজস্ব কিছু বিধি-নিষেধ থাকলেও এরা যেই উচ্চতার মুক্তচিন্তা করতে পারে নাস্তিকরা কি তা করতে পেরেছে? তবে নাস্তিকদের থেকে এসব মুক্তবুদ্ধির সাধুরাই বেশি মুক্তমনা-এটা বললে কেন ভুল হবে?
মুক্তচিন্তক নারীর দ্বারা অসহায় পুরুষও ধর্ষণের শিকার হতে পারেঃ
আরও অন্যরকম কিছু তথ্য আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি। সত্যিই অবাক করার মতো! কোনো পুরুষ কোনো নারীকে জোর করে সেক্স করলে সেটাকে ধর্ষণ বলা হয়। কিন্তু একজন নারী যদি পুরুষের সাথে জোর করে সেক্স করে একে কি ধর্ষণ বলা যাবে? ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের আইনে একে ধর্ষণ বলা হয় না। যদিও এই আইন সঠিক নাকি ভুল এটা নিয়ে তাদের মাঝেই যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। অনেক গবেষক বলেছেন এই আইন পরিবর্তন করতে হবে। মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে যে কোনো মানুষ যা ইচ্ছা নৈতিকতা বানাতে পারে এর স্বাধীনতা রয়েছে। BBC NEWS বাংলায় ২৫ জুলাই ২০১৯ এ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় যার শিরোনাম ছিল এই নামে “নারী যদি পুরুষকে যৌনমিলনে বাধ্য করে - তাকে কি ধর্ষণ বলা যায়?” উক্ত রিপোর্টে বর্ণিত হয়েছেঃ (৯)
একজন পুরুষ যদি একজন নারীর সাথে জোর করে যৌনমিলন করে তাকে ধর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যদি একজন নারী একজন পুরুষকে জোর করে তার সাথে যৌন মিলন করতে বাধ্য করে - তাহলে সেটাও কি ধর্ষণের পর্যায়ে পড়বে? ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের আইনে একে ধর্ষণ বলা হয় না। কিন্তু এ নিয়ে এক নতুন সমীক্ষা চালানোর পর একজন গবেষক বলছেন, হয়তো এখানে পরিবর্তন আনার সময় হয়েছে।
ব্রিটেনের ল্যাংকাস্টার ইউনিভার্সিটি ল' স্কুলের ড. সিওভান উইয়ার ২০১৬-১৭ সালে যুক্তরাজ্যে 'একজন পুরুষকে জোরপূর্বক যৌনমিলনে বাধ্য করার' ওপর প্রথম গবেষণা পরিচালনা করেন। ড. উইয়ার বলছেন, পুরুষকে জোর করে যৌন মিলনে বাধ্য করাকে ইংরেজিতে বলে 'ফোর্সড-টু-পেনিট্রেট' বা এফটিপি - এবং পুরুষের মনের ওপর এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে খুবই মারাত্মক।
কেস স্টাডি: জন নামে একজনের কথা (আসল নাম নয়) "আমি প্রথম যখন খেয়াল করলাম যে আমার সঙ্গিনী নিজেকে নিজে নির্যাতন করছে - তখনই আমি বুঝলাম যে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। তার এ জন্য কিছু চিকিৎসাও করা হয়।""ছয় মাস পরে যেটা ঘটলো, সে নিজেকে নিজে নির্যাতন করার পরিবর্তে এ জন্য আমাকে বেছে নিল।""হয়তো আমি বসার ঘরে বসে আছি, সে হঠাৎ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার নাকে খুব জোরে একটা ঘুষি মারলো, তারপর খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়ে পালিয়ে গেল।""আরেক দিন হয়তো সে কাজ থেকে ফিরে এসেই দাবি করলো, তার সাথে যৌনমিলন করতে হবে। এ জন্য সে হিংস্র হয়ে উঠতো। ব্যাপারটা এমন স্তরে চলে গেল যে তার কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় হলে আমি ভয়ে থাকতাম।"আরেকদিন জন রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে আবিষ্কার করলেন তার সঙ্গিনী তার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে তাকে খাটের ফ্রেমের সাথে বেঁধে রেখেছেন। তার পর একটা লাউডস্পিকার দিয়ে জনের মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন তিনি। জনের অন্য হাতটাও তিনি দড়ি দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে ফেললেন, এবং তার পর তার সাথে জোর করে যৌনমিলন করার চেষ্টা করতে লাগলেন আতংক এবং যন্ত্রণার কারণে জন তার সঙ্গিনীর ইচ্ছে পূরণ করতে পারলেন না। তখন সঙ্গিনী তাকে আবার মারধর করতে লাগলেন, এবং বাঁধা অবস্থায় আধঘন্টা ফেলে রাখলেন। তার পর তাকে মুক্ত করে দিলেও তার সাথে এ ব্যাপারে কোন কথাই বলতে চাইতেন না তিনি। এর মধ্যে জনের সঙ্গিনী গর্ভবতী হলেন, কয়েক মাসের জন্য তার হিংস্র আচরণ কমে গেল। কিন্তু তার সন্তান জন্মের কিছু কাল পরই জন এক রাতে আবিষ্কার করলেন - তাকে আবার বিছানার সাথে হাতকড়া দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।জনকে এবার জোর করে ভায়াগ্রা খাইয়ে দিয়ে তার মুখ বেঁধে রাখলেন সঙ্গিনী। সেদিন বাথরুমে গিয়ে অনেকক্ষণ একা বসে ছিলেন জন।জন বলছেন, পরে এসব ঘটনা নিয়ে তিনি অন্যদের সাথে কথা বলতে গেলে কেউ বিশ্বাসই করে নি।"অনেকে প্রশ্ন করেছে যে কেন আমি তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি না, বা কেন তাকে পাল্টা মার দিচ্ছি না। এর অনেক কারণ আছে, যেমন আমাদের সন্তান, অথর্নৈতিক বিষয় - এরকম অনেক কিছু।"
ড. উইয়ার বলছেন, "গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে ধর্ষণের সময় নারীদের পক্ষেও যৌন সাড়া দেয়া সম্ভব, কারণ তাদের দেহ এ ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয়ভাবে সাড়া দিতে পারে। ধর্ষণের শিকার হওয়া পুরুষ ও নারী - উভয়ের ক্ষেত্রেই এর স্পষ্ট প্রমাণ আছে কিন্তু এ ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয় না।"ড. উইয়ার আরো বলছেন, তিনি এমন কিছু এফটিপির শিকার পুরুষের অভিজ্ঞতা শুনেছেন - যারা অতিমাত্রায় মদ্যপান বা অন্য কোন নেশা করার পর নারীর হাতে জোরপূর্বক যৌনমিলনের শিকার হয়েছেন - কিন্তু তা ঠেকাতে পারেন নি।একটি ঘটনায় একজন নারী একটি সমকামী পুরুষকে যৌন মিলনে বাধ্য করেন - এবং তাকে হুমকি দেন - এতে রাজি না হলে পুরুষটি যে সমকামী তা সবার কাছে ফাঁস করে দেবেন তিনি।
উপরের ঘটনায় নারীদের কারবার দেখে নারীবাদীদের আইডল তসলিমা নাসরিনের কবিতার কথা না বর্ণনা করলেই নয়। কবিতার অর্থের সাথে উপরে বর্ণিত “নারী ধর্ষকীর” চরিত্র হুবহু সাদৃশ্যময়। কবিতার নাম হচ্ছে “নষ্ট মেয়ে”। কবিতাটি আমি লম্বা করে পেশ করলে লেখার কলেবর বড় হয়ে যাবে তাই আমি পাশাপাশি করে দিচ্ছি। তসলিমা নাসরিনের “নষ্ট মেয়ে” কবিতায় বর্ণিত হয়েছেঃ
ওরা কারো কথায় কান দেয় না, যা ইচ্ছে তাই করে,কারও আদেশ উপদেশের তোয়াককা করে না,গলা ফাটিয়ে হাসে, চেঁচায়, যাকে তাকে ধমক দেয়,নীতি রীতির বালাই নেই, সবাই একদিকে যায়, ওরা যায় উল্টোদিকে,একদম পাগল!কাউকে পছন্দ হচ্ছে তো চুমু খাচ্ছে, পছন্দ হচ্ছে না, লাত্থি দিচ্ছে,লোকে কি বলবে না বলবে তার দিকে মোটেও তাকাচ্ছে না।ওদের দিকে লোকে থুতু ছোড়ে, পেচ্ছাব করে,ওদের ছায়াও কেউ মাড়ায় না, ভদ্রলোকেরা তো দৌড়ে পালায়।নষ্ট মেয়েদের মাথায় ঘিলু বলতেই নেই, সমুদ্রে যাচ্ছে, অথচ ঝড় হয় না তুফান হয়,একবারও আকাশটা দেখে নিচ্ছে না।ওরা এরকমই, কিছুকে পরোয়া করে না,গভীর অরণ্যে ঢুকে যাচ্ছে রাতবিরেতে, চাঁদের দিকেও দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে! আহ,আমার যে কী ভীষণ ইচ্ছে করে নষ্ট মেয়ে হতে।
কি পাঠক? সাদৃশ্য পাচ্ছেন না? আপনি জানলে আরও অবাক হবেন তসলিমা নাসরিন কবিতার মাধ্যমে নারীদেরকে পুরুষকে ধর্ষণ করার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছেন। হ্যাঁ,এটাই বাস্তব সত্য। কোনো নাস্তিক কি অস্বীকার করতে পারবে তসলিমা নাস্তিক মুক্তচিন্তক না? নাসরিন নারীবাদী না? আমাদের সম্মানিত মা-বোনদেরকে এরা মুক্তচিন্তার নামে কি সেবন করাতে চাচ্ছে? “পারো তো ধর্ষণ করো” এই নামেও কবিতা লিখেছেন ইসলামবিদ্বেষী তসলিমা। একজন নারীকে যদি পুরুষ ধর্ষণ করে তাহলে উক্ত নারীরও নাকি উচিত উল্টো পুরুষকে ধর্ষণ করা।“পারো তো ধর্ষণ করো” কবিতায় বর্ণিত হয়েছে, আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না,আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে,কোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল।আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ,পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে। ধর্ষিতা হয়ো না, বরং ধর্ষণ করতে আসা পুরুষের পুরুষাঙ্গ কেটে ধরিয়ে দাও হাতে,অথবা ঝুলিয়ে দাও গলায়,খোকারা এখন চুষতে থাক যার যার দিগ্বিজয়ী অঙ্গ, চুষতে থাক নিরূপায় ঝুলে থাকা অণ্ডকোষ, গিলতে থাক এসবের রস,কষ। কবিতার এতটুকু পাঠ করে অনেকের মনে হতে পারে তসলিমা নাসরিন হয়তো আসলেই নারী অধিকারের পক্ষে কিন্তু বাকি অংশটুকু পাঠ করলে বুঝা যাবে আসল রহস্য। কবিতার পরের অংশে বর্ণিত হয়েছেঃ
ধর্ষিতা হয়ো না,পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,পতিত করো, পয়মাল করো,পারো তো ধর্ষণ করো,পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করো। লোকে বলবে, ছি ছি, বলুক।লোকে বলবে এমন কী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতই,বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভালো নও বলুক, কিছুতে কান দিও না, তোমার ভালো হওয়ার দরকার নেই,শত সহস্র বছর তুমি ভালো ছিলে মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও।চলো সবাই মিলে আমরা মন্দ হই,মন্দ হওয়ার মত ভালো আর কী আছে কোথায়!
নারীবাদী তসলিমারা যদি সুস্থচিন্তা করা জানতো তাহলে এটা অবশ্যই জানার কথা ছিল যে ধর্ষক পুরুষ তো নারীর সাথে সেক্স করতেই চাচ্ছে এখন নারীও যদি উল্টো পুরুষকে ধর্ষণ করতে যায় তাহলে তো এটা ধর্ষকের পক্ষেই যাচ্ছে কারণ সেও তো চাচ্ছে নারীটির দেহ মুক্তমনে ভোগ করতে। পুরুষ ধর্ষণ করতে চাইলে নারীর উচিত পুরুষকে ধর্ষণ করা এভাবে কি ধর্ষণ করা বন্ধ হবে নাকি সবাই আরও উৎসাহিত হবে? এসব নারীবাদীদের মাথায় দেখি গোবরও নাই! তাহলে তসলিমার ফতোয়া বিশ্বাস করে যদি কোনো নারী উল্টো ধর্ষক পুরুষকে ধর্ষণ করতে আগ্রহী হয় তাহলে এখানে ফলাফল কি হবে? একজন নারী কিভাবে ধর্ষণ থেকে নিজেকে সেফ থাকতে পারে এর জন্য “পারো তো মার্শালআর্ট শিখো” “পারো তো কুংফু ক্যারাতে শিখো” এরকম কবিতা লিখতে পারতো কিন্তু তা লিখতে যাবে কেন? বরং একজন মেয়েকে উল্টো ধর্ষণ করার দিকে উস্কানি দিচ্ছে মুক্তমনা তসলিমা নাসরিন।একজন পুরুষ যদি কোনো নারীকে ধর্ষণ করতে আসে তাহলে তাকেও উল্টো ধর্ষণ করে দিতে হবে-কোন লেভেলে গেলে এই মুক্তচিন্তা করা যায় ভাবতে পারেন?
পুরুষকে যে নারীরা ধর্ষণ করতে পারে এসব অভিযোগ নাকি অনেকেই বিশ্বাস করে না। পাঠক আপনারা নিজেরাই প্রমাণটি চেক করে বিস্তারিত জেনে নিবেন। আসল সত্য কথা হচ্ছে মুক্তমনা চিন্তাতে অসম্ভব বলে কিছু নাই। যে কোনো কাজকেই বিবেক দিয়ে নৈতিক বানিয়ে সেটা করে ফেলতে পারলেই হয়ে গেলো, ব্যাস। নাস্তিকান্ধরা যে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে এটা কি অনিচ্ছায় করে? না। ইচ্ছা করেই করে কেননা মুক্তচিন্তায় মিথ্যাচার করাটা তেমন কিছুই না ব্যক্তিস্বাধীনতা মাত্র। একজন নাস্তিকের মিথ্যাচার করার স্বাধীনতা থাকতে পারবে না কেন? একজন নাস্তিকের নিজের সুবিধার জন্য চুরি করার স্বাধীনতা কেন থাকতে পারবে না? মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করার মুক্তচিন্তা কেন করতে পারবে না? এসব কিছু করার ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিটি মুক্তমনা নাস্তিকদের রয়েছে।
সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব,হাদিসঃ১০৩,হাসান সহিহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের মর্যাদা বুঝে না সে আমাদের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”-ihadis.com
আমি মুসলিম হিসেবে নবী মোহাম্মদ (সা)এর আদেশের বাইরে কল্পনাও করি না কিন্তু একজন নাস্তিক সে চাইলেই এই মুক্তচিন্তা করতে পারে যে সে তার নিজের শিশু সন্তানকে নির্যাতন করবে? যুক্তিও দিতে পারে যেহেতু সন্তান তার নিজের তাই সন্তানের সাথে সহবাস করবে নাকি সন্তানকে চকলেট কিনে দিয়ে সন্তানের সম্মতি নিবে এসব নাস্তিকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। একজন নাস্তিক কি নিজের পিতামাতার সাথে ভালো আচরণ করতে বাধ্য? সে চাইলেই এই যুক্তি দিতে পারে যে যেহেতু তার পিতামাতা বুড়ো-বুড়ি হয়ে গেছে তাই তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করে দেবে কারণ সে সেবাযত্ন করতে বাধ্য না? বুড়ো-বুড়িরা দুর্বল সে নাস্তিক শক্তিশালী তাহলে যৌক্তিকভাবে শক্তিশালী কেন দুর্বলের সাথে সম্মানময় আচরণ করতে যাবে বরং দুর্বল শক্তিশালীকে সম্মান করবে? আবার নাস্তিক সন্তান এবং নাস্তিক পিতা যদি যুবক হয় তারা সম্মতিতে সমকামীতার লীলাখেলাও মুক্তমনে খেলতে পারে? নাস্তিক মা আর মেয়ের সম্পর্ক মুক্তমনাতে কি কি হতে পারে? এর উত্তর পাঠকদের হাতে ছেড়ে দিলাম!
বর্তমানের নাস্তিকিস্টরা নিজেদেরকে নৈতিকতায় সর্বকালের মহাশ্রেষ্ঠ মনে করলেও বাস্তব সত্য হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মে আসলে নীতি-নৈতিকতার অস্তিত্ব বলেই কিছু নেই। খেয়াল করলে দেখবেন যেসব নাস্তিকিস্টরা ইসলামের সমালোচনা করার সময় অভিযোগ তুলে যেমন “একজন পুরুষের ৪ জন স্ত্রী রাখা অমানবিক” এরপরে “দাসী যদি তার মুনিবের সাথে সহবাস করে এটা অনৈতিক” তারপরে “অল্পবয়স্কা একটি মেয়ে বয়স্কা পুরুষকে বিয়ে করেছে যা ঠিক হয় নি” “মারিয়া আল কিবতিয়া নামক একজন দাসীর সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) সহবাস করে ঠিক করেন নাই” এই টাইপের যে অভিযোগ গুলো নাস্তিকান্ধরা করে থাকে তারা কি আসলেই নাস্তিকতা বোঝে? এটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
কারণ নাস্তিক্যধর্মের কোথায় এই বিধান দেয়া আছে যে একজন পুরুষ সম্মতিতে চারজন স্ত্রী রাখতে পারবে না? অল্পবয়স্কা একটি মেয়ে যদি বয়স্কা পুরুষকে নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে এটি অনৈতিক এই বিধান নাস্তিক্যধর্মের কোথায় বর্ণিত হয়েছে? একজন দাসীর সাথে মুনিব সহবাস করা যাবে না এই বিধান নাস্তিক্যধর্মের কোথায় উল্লেখ করা আছে? একজন পুরুষ কি চারজন স্ত্রী রাখার স্বাধীনতা রাখবে না? একজন নারী কি পুরুষের দ্বিতীয় স্ত্রী হবার স্বাধীনতা রাখবে না? একজন বয়স্কা পুরুষ কি অল্পবয়স্কা নারীকে বিয়ে করার স্বাধীনতা রাখবে না? একজন মুনিব কি তার দাসীর সাথে সহবাস করার অধিকার রাখবে না? নাস্তিকদের এসব সস্তা সমালোচনা করার আগে নাস্তিকরা যদি তাদের নাস্তিক্যধর্মের বিধান আমাদেরকে বর্ণনা করে এবং কোন গ্রন্থে বর্ণিত আছে সেটা যদি উল্লেখ করে তাহলে কি আমাদের জন্য সুবিধা হবে না? যদি এটা সম্ভব না হয় তাহলে তারা যাকে খারাপ বলবে সেটাকেই কেন আমাদেরকে খারাপ বলে বিশ্বাস করতে হবে? নাস্তিকদের তৈরি করা নৈতিকতায় অবিশ্বাস করলে কি কবিরা গুনাহ হবে আমাদের? যেহেতু নাস্তিকান্ধরা এটা দাবি করছে যে নাস্তিকতা কোনো ধর্ম না তাহলে নিজেরা নৈতিকতা বানিয়ে মানুষকে সেগুলো বিশ্বাস করাতে চাচ্ছে কেন? নাস্তিকদের বানানো বিধান নাস্তিকতাকে ধর্ম প্রমাণ করে না কিভাবে?
“আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ থেকে বর্ণিতঃ
তবে সব কিছুই নিরর্থক,জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়,রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক,আইনস্টাইন নিরর্থক,ওই গোলাপও নিরর্থক,ভোরের শিশিরও নিরর্থক,তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক,দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।
“আমার অবিশ্বাস”বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠায় মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ থেকে বর্ণিতঃ
এই যে আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে সুখ পাচ্ছি । আমি মরে যাবো, এই হাস্যকর নিরর্থকতাকে কিভাবে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি ? আমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার কখন পূর্বনির্ধারিত উপায় নেই । কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোন মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না । তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ , নিজেদের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পথঃ আমি তাদের পথে চলতে পারি না । আমি খুজতে চাই আমার পথ। নিজের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে আমার নিজের।
“আমার অবিশ্বাস”বইয়ের ২০ পৃষ্ঠায় মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ থেকে বর্ণিতঃ
কোনো পূর্বনির্ধারিত পথ নেই মানুষের জন্যে। কোনো গ্রন্থ পথ দেখাতে পারে না,কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক তার জন্যে পথ প্রস্তুত করতে পারেন না, ওই মহাপুরুষেরা তৈরি করেছেন নিজেদের পথ, অন্যদের নয়। প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে হয় নিজেদের পথ,তৈরি করতে হয় নিজেদের রাস্তা, অনেকের পথ আমাকে আলোড়িত করেছে, অনেক গ্রন্থ আমাকে আলো দিয়েছে,কিন্তু আমি ওইসব পথে চলি নি,ওই আলোতে পথ দেখি নি।
উপরের বর্ণিত মুক্তবাণীর ফতোয়া পড়লে যে সংশয় মনে উদয় হওয়া স্বাভাবিক। সব কিছুই যদি নিরর্থক হয় তাহলে ইসলামের সমালোচনায় বই লিখার নিরর্থক অর্থ কি? সব কিছু অর্থহীন হলে আত্মহত্যা করে আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়া কি যৌক্তিক নয়? সকল নাস্তিক কিন্তু এটা বিশ্বাস করে যে পরকাল বলে কিছু নাই তাহলে এই দুনিয়া থেকে সবাই একত্রে আত্মহত্যা করলে কি সেটা খারাপ হবে? যেসব দেশে জনগণ বেশি সেখানে অবস্থান করা সকল নাস্তিক যদি আত্মহত্যা করে তাহলে অধিক জনসংখ্যার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? এই মানবিক কাজ নাস্তিকরা করে না কেন? প্রতিটি নাস্তিক যদি নিজের পথ নিজেই খুঁজে নেয় তাহলে প্রতিটি নাস্তিক নিজের পথে এগুলো কেন বানাতে পারবে না? যেমন চুরি করা নৈতিক,মিথ্যা বলা ভালো,ডাকাতি করলে দ্রুত ধনী হওয়া যায়, ব্যাংক লুটপাট করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া যাবে,ধর্ষণ করলে নিজের সুখ নিশ্চিত হবে। এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন করা যায় কিন্তু নাস্তিকরা কি সেই প্রশ্ন গুলো নিয়ে সঠিক চিন্তা করতে পারে? নাস্তিকরা আসলে কতটুকু মুক্তচিন্তা করতে পারে?
নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে নারী অধিকার কাকে বলা হবে? কাকে বলা হবে না? একজন নারীর সাথে কেমন আচরণ করা হবে ? কেন করা হবে? কেমন আচরণ করা যাবে না? কেন করা যাবে না? - এই প্রশ্ন গুলোর সমাধানে এমন কোনো নৈতিক গ্রন্থ রয়েছে যে সব নাস্তিক সেটা মানতে বাধ্য? অথবা কোনো নাস্তিক যদি এই প্রশ্ন গুলোর সমাধান পেশ করার চেষ্টা করে তাহলে সংশয় উঠবে তার দেয়া সমাধানকে কেন সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য? সবাই কিন্তু অন্য নাস্তিকের তৈরি করা নৈতিকতা পালন করতে বাধ্য না সেহেতু প্রত্যেক নাস্তিক নিজের সুবিধা মতো নৈতিকতা তৈরির স্বাধীনতা রাখে, রাখা উচিত? হুম। তাহলে প্রত্যেক লোকের নিঃসন্দেহে নারী নিয়ে নিজস্ব মুক্তচিন্তা করার অধিকার রয়েছে এবং এই অধিকার কেউ মানতে চাইলে সেও ইচ্ছা করলে নিজের স্বাধীনতায় মানতে পারে? অবশ্যই।
প্রাকৃতিতে মুক্তমনে ধর্ষণ করার স্বাধীনতা নেই?
নাস্তিক্যবিশ্বাস অনুযায়ী জানোয়ারদের আধুনিক চেহারা হচ্ছে আজকের মানুষ প্রজাতি। শিপ্পাঞ্জি নামক জানোয়ার থেকে নাকি মানুষ হয়েছে। শিপ্পাঞ্জি জানোয়ার থেকে নাস্তিকরা বিবর্তিত হয় নাই এই কথা নাস্তিকরা অবিশ্বাস করতে পারবে? খেয়াল করুন মানুষের মধ্যে যতো ধরণের আচরণ লক্ষ্য করা যায় সব কিছুই কিন্তু পূর্ব জানোয়ারদের থেকে পাওয়া।পৃথিবীর কোটি-কোটি প্রজাতির মধ্যে মানুষও রয়েছে। ডারউইনিয়ান বিবরতনবাদের দৃষ্টিতে গরু,ছাগলরা যেমন প্রাণী একইভাবে মানুষও প্রাণী। শারীরিক গঠনে আলাদা হলেও উভয়ই কিন্তু জানোয়ার। ফলে সামগ্রিক চৈতন্য থেকে সে একেবারে আলাদা হয়ে যেতে পারে না। অন্যান্য শ্রেণির প্রাণী অর্থাৎ অন্যান্য স্তন্যপায়ী, পাখি, পতঙ্গ, মাছ প্রভৃতি প্রাণীদের মধ্যে ‘জোরপূর্বক যৌনসম্ভোগের’ চরিত্র কী প্রকারের তা বিচার করলেই মানুষের মধ্যে যাকে ‘ধর্ষণ’ নামে অভিহিত করা হয় তার প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যাবে, বোঝা যাবে জীবনে টিকে থাকার সংঘর্ষে প্রাকৃতিক নির্বাচনে ‘জোরপূর্বক যৌনমিলনে’ মানুষ কতটা স্বীকৃত।
প্রথমে ধরা যাক, আর্থোপোডা শ্রেণিভুক্ত প্রাণী ওয়াটার স্ট্রাইডারের কথা। এদের মধ্যে যৌনমিলনের জন্য স্ত্রীলিঙ্গের প্রতি বলপ্রয়োগ করতে দেখা যায়। পুংলিঙ্গ পতঙ্গটি স্ত্রীলিঙ্গ পতঙ্গটিকে জোর করে আটকে রেখে জলের মধ্যে পদচালনার মাধ্যমে তরঙ্গ সৃষ্টি করতে থাকে, যাতে মাছের মত প্রাণীরা আকৃষ্ট হয়। ফলত স্ত্রীলিঙ্গের কাছে থেকে যায় দুটি উপায় – এক, মাছের খাদ্য হওয়া; দুই, পুংলিঙ্গের কাছে আত্মসমর্পন করা। স্ত্রীলিঙ্গের কাছে নির্বাচন স্পষ্ট, সে বেঁচে থাকতেই পছন্দ করবে। এছাড়াও বহু অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে, যেমন – ছারপোকা, মাকড়সা ইত্যাদি, ট্রমাটিক ইনসেমিনেশনের ঘটনা দেখা যায়। ট্রমাটিক ইনসেমিনেশন হল শরীরে ক্ষত করে শুক্রাণুর প্রবেশ ঘটানো। এর লাভ দুটো- এক, যেহেতু অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে মুক্ত-সংবহনতন্ত্র বর্তমান, ফলে শরীরে যেভাবেই শুক্রাণু প্রবেশ করুক তা সঠিক জায়গায় পৌঁছে যায়; দুই, শরীরের ক্ষত দেখে অন্যান্য পুরুষ প্রাণীরা আকৃষ্টও হয় না আর। অন্যদিকে পাখিদের মধ্যেও ‘জোরপূর্বক যৌনসম্ভোগের’ দৃষ্টান্ত কম নেই। একধরণের দলবদ্ধভাবে থাকা মাছরাঙাদের মধ্যে দেখা যায় যে, স্ত্রী-পাখি যদি একা কোথাও যায় তবে অন্য পুরুষ পাখিরা আক্রমণ করে। কিংবা ম্যালার্ড হাঁসের ক্ষেত্রে দম্পতি হাঁসের স্ত্রীটি গর্ভবতী হলে পুরুষদলের আক্রমণ দেখা যায় অন্য সঙ্গীহীন বা দুর্বল সঙ্গীযুক্ত স্ত্রী-হাঁসের ওপরে। ভোঁদড়ের ক্ষেত্রেও একইরকম অত্যাচারের ঘটনা দেখা যায়। আবার মানুষের সঙ্গে একই বর্গভুক্ত প্রাণী ওরাংওটাং বা শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে ‘জোরপূর্বক যৌনমিলনের’ ঘটনাই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। ডলফিনের মধ্যেও এই ধরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং,মানুষের মধ্যেও ‘জোরপূর্বক যৌনমিলনের’ প্রবৃত্তি থাকা প্রাকৃতিকভাবে অসম্ভব কিছু নয়।
কোনো নাস্তিক নিজের জন্য প্রাকৃতিক ভাবে ধর্ষণকে ভালো মনে করার মুক্তচিন্তা করতে পারবে না? এই স্বাধীনতা অন্য নাস্তিকরা তাকে কেন দিবে না? কোনো নাস্তিকের নিজস্ব স্বাধীনতায় এটা নির্ধারণ করার অধিকার থাকবে না যে, কি ভালো আর কি খারাপ? এরকম শক্তিশালী যুক্তি যখন নাস্তিকিস্টরা বাতিল প্রমাণ করতে পারে না তখন গোঁজামিল দিয়ে বলতে চায় অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে যাকে মানুষ ‘জোরপূর্বক যৌনসম্ভোগ’ বলে ব্যাখ্যা করে ধর্ষণকে বিচার করার কথা ভাবছে, সেক্ষেত্রে কি ওইসব প্রাণীদের যৌন-অভিব্যক্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষ সম্পূর্ণ অবহিত হতে পেরেছে? হতেই তো পারে মানুষের সংস্কৃতি যেটাকে ধর্ষণ বলছে সেটাই সেইসব প্রাণীদের স্বাভাবিক সম্মতি প্রদর্শনের প্রক্রিয়া। এখানে সংশয় হচ্ছে পুরুষ প্রাণীদের দ্বারা নারী প্রাণীরা যে মুক্তমনে ধর্ষিত হচ্ছে সেটা মানুষের দৃষ্টিতে ধর্ষণ হলেও তাদের দৃষ্টিতে এটা ধর্ষণ নাও হতে পারে তাহলে এই যুক্তির ভিত্তিতে যেসব নাস্তিকরা এটা বিশ্বাস করে যে ধর্ষণ করা খারাপ এটা তাদের দৃষ্টিতে খারাপ হলেও অন্য মুক্তমনা নাস্তিকদের কাছে খারাপ নাও হতে পারে অর্থাৎ একজন মুক্তমনা পুরুষ অন্য নারীবাদীর সম্মতি ছাড়াই তার দেহ ভোগ করেছে এটা তার দৃষ্টিতে ধর্ষণ না বরং মুক্তবুদ্ধিতে আনন্দের সাথে স্বাধীনভাবে দেহ ভোগ করাই বোঝায়।
“ভালো মানুষ হতে স্রস্টাকে লাগে না” যারা এই ধরণের কথা বিশ্বাস করে তারা বিবর্তনবাদের আলোকে নৈতিকতার উৎসের সন্ধান করার চেষ্টা করে থাকে। প্রাণীজগতের মধ্যে মানবতার অস্তিত্ব আছে সেখান থেকেই নাকি নৈতিকতার জন্ম। পশু পাখিদের মধ্যে কিছু মানবিক ঘটনা সামনে এনে দাবি করে আর বলে এই যে দেখো এদের মধ্যে মানবতা রয়েছে। এরা যেহেতু আমাদের পূর্বপুরুষ সেহেতু আমাদের মধ্যেও এদের গুণাবলী থাকাই স্বাভাবিক। ছোট এক ছেলে চিড়িয়াখানায় বিন্তি নামের এক গরিলার খাঁচায় পরে যায় মানুষ মনে করে গরিলাটি হয়তো ছেলেটিকে হত্যা করে ফেলবে কিন্তু সে এই কাজ করে না বরং দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যাতে মানুষ এসে ছেলেটিকে নিয়ে যেতে পারে। মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়ের “ভালোবাসা কারে কয়,মানব মনের জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা” বইয়ের ২৩৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
বিজ্ঞানী ফ্রেন্স ডি ওয়াল তার ‘আওয়ার ইনার এপ’ গ্রন্থে বিন্তির ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে অভিমত দিয়েছেন যে,নৈতিকতার ব্যাপার গুলোকে কেবল মানবসমাজের সাংস্কৃতিক অংগ বলে ভেবে নেওয়া হতো তা মোটেও ঠিক নয়;আসলে মানবসমাজে নৈতিকতার উদ্ভবের উৎস লুকিয়ে আছে আমাদের বিবর্তনীয় চাত্রাপথে।
নৈতিকতার উৎস যদি বিবর্তনের যাত্রাতে লুকিয়ে থাকে তাহলে সব কিছুই কেন ভালো নয় আবার সব কিছুই কেন খারাপ নয়? তারমানে নিজের স্বার্থের জন্য যা ভালো সেটাই ভালো? যা নিজের জন্য খারাপ সেটাই খারাপ? জন্তু-জানোয়ারদের থেকে নৈতিকতা নিতে মুক্তমনারা স্বাধীন? জানোয়ারদের মধ্যে কোনটি নৈতিক আর কোনটি অনৈতিক এটা নাস্তিক প্রাণীরা কিভাবে ঠিক করে দিচ্ছে? জানোয়াররা কি কখনো বলেছে আমরাই নৈতিকতার উৎস? নাকি নাস্তিক জন্তুরা বলেছে? তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রাণিজগতে কোন কাজ ভালো আর কোন কাজ মন্দ এটা নাস্তিকরা ঠিক করে দিতে চাচ্ছে,প্রশ্ন হচ্ছে কেন? সবাই সবার সুবিধা মতো বিবর্তনবাদ থেকে নৈতিকতা গ্রহণ করতে পারবে না কেন? বিবর্তনবাদ থেকে নৈতিকতা গ্রহণ করার জন্য বিধি-নিষেধ নির্ধারিত নাকি? মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়ের “ভালোবাসা কারে কয়,মানব মনের জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা” বইয়ের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই শিশু হাঙরেরা একজন আরেকজনকে আক্রমণ করে হত্যা করে এবং তাদের খেয়ে ফেলে যা তাদের পুষ্টি জোগায়। শুরুতে ২০ টির মতো শিশু মায়ের গর্ভে বড় হতে শুরু করলেও ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে একটি মাত্র সান্ড শার্কের শিশু বেঁচে থাকে। মার কাছে রাখা কোলের শিশু অরক্ষিত হয়ে পড়লে পুরুষ সিফাকা লিমারেরা শিশু লিমারটিকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পেট দুভাগ করে মাটিতে ফেলে দেয়।
তারপর ধরুন পাখিদের মধ্যে বিদ্যমান নিষ্ঠুরতার উদাহরণগুলো। কোকিলের নিষ্ঠুরতার উদাহরণ তো আমাদের সবারই জানা। একে তো কোকিল প্রতারণা করে অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে না হয় কথা ছিল। কোকিল শিশু ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার সাথে সাথেই যে কাজটি করে তা হলো অন্য ডিম গুলোকে বাসা থেকে ফেলে দেয়া,এমনকি আশে পাশের ডিম ফুটে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাকেও। শিশু কোকিলের পিঠে বিশেষ ধরণের একটি খাঁজের মতো থাকে যেটা দিয়ে সে ডিমগুলোকে পাখির বাসার বাইরে ফেলে দিতে সাহায্য করে। বলা বাহুল্য, কোকিল শিশুরা এই কাজটি সহজাত প্রবৃত্তির বশেই করে থাকে। আবার, ব্লু ফুটেড বুবিস নামক পাখিরা খাদ্যস্বল্পতার সময় (যখন বাচ্চাদের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে ২০ ভাগের বেশি কমে যায়),বড় বাচ্চাটি তখন অন্য সহোদরদের ঠকোর দিয়ে মেরে ফেলে অথবা বাসা থেকে বের করে দেয়। ফলশ্রুতিতে ছোট বাচ্চাটি খাদ্যের অভাবে কিংবা অন্য প্রাণীদের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যায়।
কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রেও নিষ্ঠুরতা প্রবল। মৌমাছিদের কথাই ধরা যাক। রানি মৌমাছি যখন লার্ভা থেকে পিউপাতে পরিণত হয়, তখন প্রথম মৌমাছিটা সাথে সাথেই সে অন্যান্য সকল প্রতিদ্বন্দ্বী সহোদরাদের হুল ফুটিয়ে মেরে ফেলে। তার বোনদের একজনও তার হাত থেকে নিস্তার পায় না। তবে প্রকৃতির সম্ভবত সবচেয়ে চরম নিষ্ঠুরতার উদাহরণ পেয়েছিলাম যখন আমাদের মুক্তমনা সদস্য পৃথিবী একবার ইমেইল করে আমাকে ইকনিউমেন (Ichneumon) প্রজাতির একধরণের প্যারাসিটোয়েড বোলতার কথা জানিয়েছিলেন। এরা একটি শুয়োপোকাকে হুল ফুটিয়ে প্যারালাইজড করে ফেলে এবং সেটার দেহে ডিম পাড়ে। অর্থাৎ শিকারকে সরাসরি হত্যা না করে দৈহিকভাবে অবশ করে দিয়ে সেই শিকারের দেহের ভেতরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খেয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। স্ত্রী বোলতাগুলো তার শিকারের প্রত্যেকটি স্নায়ুগ্রন্থি সতর্কতার সাথে নষ্ট করে দেয় যাতে তাদের শিকার পক্ষাঘাতগ্রস্থ পড়ে।
প্রানিজগত থেকে মুক্তচিন্তা গ্রহণ করার কথা বলার আগে নাস্তিকান্ধদের কিছু হাস্যকর যুক্তির জবাব না দিয়ে পারছি না, এখানে। প্রানিজগতের এরকম নিষ্ঠুরতা দেখে বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এই ইকনিউমেন প্রজাতির বোলতার উদাহরণটিকে তার “গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ” বইতে উল্লেখ করেছেন। তিনি রবিন উইলিয়ামসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, “এই প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলোর নিষ্ঠুরতা দেখলেই বোঝা যায় যে পরম করুণাময় ঈশ্বরের মতো কোনো পরিকল্পনাকারী দ্বারা এই মহাবিশ্ব তৈরি হলে তিনি একজন স্যাডিস্টিক বাস্টার্ড ছাড়া আর কিছু হবেন না” আবার প্রকৃতির এই ঢালাও নিস্থুরতা দেখে এক সময় বিচলিত হয়েছিলেন ডারউইনও। তিনি প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলোর বীভৎসতা দেখে পরম করুণাময় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়েন; তিনি মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছিলেন- আমি ভাবতেই পারি না,একজন পরম করুণাময় এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কোনো ঈশ্বর এইভাবে ডিজাইন করে তার সৃষ্টি তৈরি করেছেন যে,ইকনিউমেনগুলোর খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য একটি জীবন্ত কিন্তু প্যারালাইজড শুঁয়োপোকার প্রয়োজন হয়।
স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই-প্রমাণ করার জন্য নাস্তিকান্ধরা এই ধরণের নেশাখোর মার্কা যুক্তি পেশ করার চেষ্টা করে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে অভিযোগের জবাব দেবার আগে বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে দেখবো যে এইসব কর্মকি আসলেই নিস্থুরতার মধ্যে পরে কিনা? রিচার্ড ডকিন্স,রবিন উইলিয়ামস আর মরা ডারউইন এসব স্যাডিস্টিক বাস্টার্ডরা যাকে নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য করেছে সেটা কি ইকনিউমেন প্রাণীদের কাছেও নিষ্ঠুরতা? ইকনিউমেন প্রাণীরা অন্য প্রাণীদের সাথে কিভাবে আচরণ করবে অথবা করবে না সেটা বাস্টার্ড নাস্তিকরা ঠিক করে দেবার কে? তাহলে? শুঁয়ো পোকা নিজেকে বাঁচাতে পারেনি এটা শুঁয়ো পোকার অসফলতা। বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে এই ধরণের ঘটনাকে আসলে নির্দিষ্টভাবে নিষ্ঠুরতা বলা যায় না। বাস্টার্ড রিচার্ড ডকিন্সের একটি ফতোয়া পড়লেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়ের “ভালোবাসা কারে কয়,মানব মনের জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা” বইয়ের ২৪২ ও ২৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ
“সেলফিশ জিন” গ্রন্থে অনুপম কাব্যিক ভঙ্গিমায় বলেন- আমরা সবাই একেকটি টিকে থাকার যন্ত্র (Survival Machine) - অন্ধভাবে প্রোগ্রাম করা একটি নিয়ন্ত্রিত বাহন মাত্র-যার উদ্দেশ্য কেবল স্বার্থপরভাবে এক ধরণের জৈবঅণুকে সংরক্ষণ করা।...তারা আমার ভেতরে আছে,তারা রয়েছে আপনার ভেতরেও;তারাই আমাদের সৃষ্টি করেছে,আমাদের দেহ আর আমাদের মন;আর তাদের সংরক্ষণশীলতাই আমাদের অস্তিত্বের চূড়ান্ত মৌলিকত্ত্ব। ওই অনুলিপিকারকেরা এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। এখন তাদেরকে জিন বলে ডাকা হয়,আর আমরা হলাম তাদের উত্তরজীবীতার যন্ত্র।
গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করুন-যারা বিশ্বাস করে যে সবাই নাকি একেকটি টিকে থাকার যন্ত্র - অন্ধভাবে প্রোগ্রাম করা একটি নিয়ন্ত্রিত বাহন মাত্র-যার উদ্দেশ্য কেবল স্বার্থপরভাবে এক ধরণের জৈবঅণুকে সংরক্ষণ করা। এরা কিভাবে বিশ্বাস করতে পারে নিষ্ঠুরতার অস্তিত্ব রয়েছে? এরা যে সঠিক চিন্তা করতে পারছে সেটাই বা কিভাবে সত্য? এলোমেলো যন্ত্র কিভাবে নিশ্চিত হতে পারে কি ভালো আর কি খারাপ? তারমানে ডকিন্স এটা নিজে তৈরি করেছে যে কোন পোকা যদি অন্য পোকাকে হত্যা করে খায় তাহলে এটা অমানবিক কিন্তু এই কথা যে সত্য সেটার প্রমাণ কি? বিবর্তনবাদ তো নৈতিকতার বিধান বর্ণনা করে না? নাস্তিকরা বানাচ্ছে? স্রস্টা এমন প্রাণী সৃষ্টি করতে পারেন না যা একে অপরকে হত্যা করে খাবে এই কথা যে সত্য সেটার প্রমাণ কি? স্রস্টা স্বাধীনভাবে উনার সৃষ্টিকে তৈরি করতে পারবেন না কেন? স্রস্টা দয়ালু হলে একইসাথে কেন কোঠর হতে পারবেন না? স্রস্টা তার সৃষ্টিকে বানাতে স্বাধীন থাকতে পারবেন না কিভাবে? তাহলে রিচার্ড ডকিন্স,রবিন উইলিয়ামস আর মরা ডারউইন এই তিন গাধারা কেন এই বিশ্বাস বানালো যে দয়াময় স্রস্টা এমন সৃষ্টি বানাতে পারেন না যে ইকনিউমেনগুলোর খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য একটি জীবন্ত কিন্তু প্যারালাইজড শুঁয়োপোকার প্রয়োজন হয়? স্রস্টা এরকম সৃষ্টি বানাতে পারেন না এর প্রমাণ কি? স্রস্টা কি নাস্তিক বিজ্ঞানীদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে বলেছেন যে উনি এরকম পোকা সৃষ্টি করতে পারেন না? তাহলে নাস্তিক অন্ধবিশ্বাসীরা যা বিশ্বাস করেছে সেটাকে কেন নাস্তিকদের বিশ্বাস করতে যাবে?
প্রানিজগতে নিষ্ঠুরতা থাকার কারণে যদি স্রষ্টার অস্তিত্বকে বাতিল করতে হয় একই যুক্তিতে বিবর্তনবাদের অস্তিত্বকেই কেন বাতিল করা হচ্ছে না? নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী যেহেতু তাদের দেহে স্বার্থপর জিন রয়েছে তাহলে তারা নিজেদের অস্তিত্বকে কেন বাতিল করে দিচ্ছে না আত্মহত্যা করে? যদি বলেন আমাদেরকে এভাবেই বেঁচে থাকতে হবে তাহলে স্রস্টা এভাবেও সৃষ্টি করতে পারেন সেটা কেন মেনে নিচ্ছেন না? নাস্তিকান্ধদের কাছে যা নিষ্ঠুরতা সেটা কি প্রাণীজগতের মধ্যেও নিষ্ঠুরতা বলে গণ্য? যে যুক্তিতে স্রষ্টার অস্তিত্বকে বাতিল করার পয়তারা করা হচ্ছে এখানে সেই একই যুক্তিতে খোদ বিবর্তনবাদকেও নিস্থুর হিসেবে গণ্য করে বাতিল প্রমাণিত করা যায়। এসব নিষ্ঠুরতা তো বিবর্তনবাদ থেকে নেয়া হচ্ছে? ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা যদি আপনার কাছে নিষ্ঠুরতা হয় তাহলে মুক্তচিন্তার অস্তিত্বকেই বাতিল কেন করা হচ্ছে না? ‘নিষ্ঠুরতা’ নামক এই শব্দের অস্তিত্বও বাতিল করে ফেলুন? “স্রস্টা পরম দয়ালু হলে এরকম কোনো সৃষ্টি করতে পারবেন না যেই সৃষ্টি নিজে বেঁচে থাকার জন্য অন্য সৃষ্টিকে হত্যা করতে হয়”-নাস্তিকদের বানানো এই বিশ্বাসে সত্যতার প্রমাণ কি? নাকি স্রেফ আবেগ? যুক্তি নেই? দাবির প্রমাণের ভিত্তি কি রকম হতে হবে? কোনটি ভুল ডিজাইন হবে আর কোনটি ভালো ডিজাইন সেটা কি স্রস্টা নির্ধারণ করবে নাকি নাস্তিকরা? নাস্তিকরা যেখানে স্রস্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে সেখানে স্রস্টা এমন প্রাণী সৃষ্টি করতে পারেন না যা অন্য প্রাণীকে হত্যা করবে এই বিশ্বাসের সত্যতার প্রমাণ কি? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে নিষ্ঠুরতা থাকার কারণে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই তাহলে এই একইযুক্তির ভিত্তিতে স্রষ্টার অস্তিত্বও প্রমাণিত হয়ে যায়। কিভাবে? স্রস্টাকে দয়ালু হিসেবে ধরে নিতে পারলে সৃষ্টি তৈরি করতে স্রস্টা স্বাধীন এটা ধরে নিয়ে স্রস্টা সেরকম প্রাণীও বানাতে পারেন এটা কেন মেনে নেয়া যাবে না? অবশ্যই যাবে। নাস্তিকরা এক অংশ মেনে স্রস্টাকে বাতিল করছে তো আরেক অংশ মানতে পারছে না স্রস্টার অস্তিত্ব প্রমাণ হবে বলে? নাস্তিকান্ধদের যুক্তির এরকম অবস্থা কেন? আর স্রস্টা দয়ালু এই হিসেবে প্রাণিজগতে তো দয়ার দৃষ্টান্তও দেখা যায় সেহেতু স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে। এটা মানবেন?
নাস্তিকরা কখনো শ্যাম্পু কোম্পানির বিরুদ্ধে মুক্তচিন্তার আন্দোলন করেনি কেন? এক পোকা আরেক পোকাকে প্যারালাইজড করে হত্যা করলে সেটা যদি অমানবিকতা হয় তাহলে অনেক বছর ধরে শ্যাম্পু কোম্পানিগুলো যে উকুন হত্যা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে এবং নাস্তিকরা সেটা ব্যাবহার করে নিজেদের মাথার উকুন হত্যা করে যাচ্ছে এটা কি অমানবিকতা নয়? যদি বলেন উকুন হত্যা না করলে তো আমার ক্ষতি তাহলে একইযুক্তিতে কোনো পোকা যদি অন্য পোকাকে নিজের স্বার্থে হত্যা করে প্যারালাইজড করে খায় সেটা কেন অমানবিকতা হতে যাবে? প্রতিটি পোকা নিজের স্বার্থে যাই করুক সেটাকে তো পোকাদের দৃষ্টিতে নির্দিষ্ট করে ভালো-মন্দ কিছুই বলা যায় না। স্রস্টার অস্তিত্বকে বাতিল করার জন্য আপনি অমানবিকতার বিশ্বাস টেনে আনছেন অথচ নিজেরাই আবার স্বার্থপর জিনের গল্প শোনাচ্ছেন! এই দুমুখো নীতি কেন মশাই? আসলে কোনো কিছুর মধ্যে নিষ্ঠুরতা থাকা অথবা না থাকা এটা প্রমাণ করে না যে উক্ত জিনিসের স্রস্টা নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ডাক্তার যখন রোগীর চিকিৎসা করে তখন কিন্তু ইনজেকশনের কষ্ট রোগীকে ভোগ করতে হয় এর অর্থ কি ডাক্তারের অস্তিত্ব নাই? কয়েক মাস আগেই আমি নিজেই করোনার ভ্যাক্সিন নিয়েছি, এরফলে আমার প্রায় তিন সপ্তাহের মতো শরীর ব্যথা ছিল একইসাথে প্রচণ্ড জ্বর হয়েছিল। এর অর্থ ডাক্তারের অস্তিত্ব বাতিল করে দিব? না। পরিক্ষায় শিক্ষক ছাত্রকে নকল করতে দেন না। উক্ত ছাত্র যদি বলে শিক্ষক আমার নকল করার ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে তাই শিক্ষক অমানবিক সুতরাং শিক্ষকের অস্তিত্ব নেই। এই কথা কি ঠিক হবে? না। আমি এসব সাধারণ উদাহরণ দিয়ে এটা বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে কোনো কিছুর মধ্যে নিষ্ঠুরতা থাকা বা না থাকা এটা প্রমাণ করে না যে উক্ত জিনিস সৃষ্টিকারীর অস্তিত্ব নাই। বোঝা গেছে?
ইসলামের দৃষ্টিতে উক্ত অভিযোগের জবাব খুবই সহজ। আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছেঃ
সুরা রুম ৩০ঃ৫৪ = আল্লাহ তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দূর্বলতার পর শক্তিদান করেন,অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ,সর্বশক্তিমান।
সুরা মায়দাহ ৫ঃ১ = হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো। তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হলো- সেগুলো ছাড়া যেগুলোর বিবরণ তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে আর ইহরাম অবস্থায় শিকার করা অবৈধ। আল্লাহ যা চান হুকুম দেন।
সুরা মায়দাহ ৫ঃ৩ = তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়,যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা,যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু জীবিত পেয়ে যা তোমরা যবেহ করেছো তা বাদে। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর।আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে;কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে,তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীল।
সুরা মায়দাহ ৫ঃ১৭ = তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।
সুরা কাসাস ২৮ঃ৬৮ = আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে।
সুরা শুরা ৪২ঃ২৯ = তাঁর নিদর্শনসমূহে অন্তর্গত হলো আসমান ও যমীনের সৃষ্টি,আর এ দুয়ের ভিতর যে প্রাণীকুল ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। আর যখন ইচ্ছা তিনি তাদেরকে একত্রিত করতে সক্ষম।
উপরের আয়াত গুলো এটা স্পষ্ট করছে যে আল্লাহ প্রানিজগতকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন একজন আরেকজনের প্রতি নির্ভরশীল হবে। তাই কোনো নাস্তিক যদি এই বিশ্বাস করে স্রস্টা দয়াময় তাই একপ্রাণী আরেক প্রাণীকে মেরে খেতে পারবে না - আমরা মুসলিমরা এই নাস্তিক্যবিশ্বাসকে অবিশ্বাস করি। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে স্রস্টা উনার প্রানিজগতকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন।আর হ্যাঁ, নিকনিউমেন প্রাণী নিজে টিকে থাকার জন্য শুঁয়োপোকাকে প্যারালাইজড করে নিজে হত্যা করে নিজে বেঁচে থাকতে পারেন এরকম সিস্টেমও আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। স্রষ্টার অস্তিত্ব বাতিল প্রমাণের জন্য নাস্তিকান্ধদের আবেগময় কথা মূল্যহীন। কারণ স্রস্টা তো ক্ষমতাধর তিনি যা ইচ্ছা সেভাবেই বানাতে পারেন। স্রষ্টার কোন ডিজাইন সঠিক আর কোন ডিজাইন ভুল?- এটা নাস্তিকরা কিভাবে ঠিক করে দিতে পারে? নাস্তিকদের বিশ্বাস কি হিন্দুদের মতো নাকি? যে এক ভগবান যা করেছে দ্বিতীয় ভগবান সেটার ভুল বের করে দিচ্ছে? অর্থাৎ নাস্তিকরা নিজে ঈশ্বর সেজে অন্য ঈশ্বরের ডিজাইন নিয়ে সমালোচনা করার চেষ্টা করছে? হাস্যকর না,নাস্তিকদের বিশ্বাস গুলো? “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ থেকে বর্ণিতঃ
তবে সব কিছুই নিরর্থক,জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়,রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক,আইনস্টাইন নিরর্থক,ওই গোলাপও নিরর্থক,ভোরের শিশিরও নিরর্থক,তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক,দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক,কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।
ধরুন কোনো নাস্তিক নিস্থুরতার অস্তিত্বে অবিশ্বাস করে যেহেতু সব কিছুই অর্থহীন এখন তাকে মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে কোন যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব যে নিস্থুরতার অস্তিত্ব আসলেই আছে? নৈতিকতার অস্তিত্ব স্রেফ বিশ্বাস না? তো নাস্তিকদের “মুক্তচিন্তায় ধর্ষণের স্বাধীনতা” নিয়ে বলছিলাম। উপরে বর্ণিত প্রমাণ গুলো থেকে এটা নিশ্চিত যে যদি কোনো নাস্তিক এটা দাবি করে যে নৈতিকতার উৎস বিবর্তনবাদ তাহলে এতটুকু তাকে স্বীকার করতেই হবে যে, কোনো নাস্তিক চাইলেই বিবর্তনবাদ থেকে ধর্ষণ করার বৈধতা নিজের জন্য বেঁছে নিতে পারে। এই মুক্তচিন্তা করার স্বাধীনতা তার রয়েছে। যদি এটা অস্বীকার করা হয় তাহলে কোনো নাস্তিক কিভাবে এটা ঠিক করতে পারে যে কোনটা বিবর্তনবাদে ভালো আর কোনটি অমানবিক? মুক্তবুদ্ধির আলোকে আমাদেরকে কেন এটাই বিশ্বাস করে নিতে হবে যে আমাদের ভালো অথবা মন্দ নির্ধারণ করে নিতে হবে? অন্ধকার কোনো যন্ত্র অথবা সব কিছুই যেখানে নিরর্থক সেখানে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই দাবি করা কিভাবে যৌক্তিক অর্থপূর্ণ হতে পারে? কোনো কিছু অমানবিক কিনা এটার সত্যতা কিভাবে যাচাই করার ক্ষমতা রাখতে পারে?
গোল্ডেন রুল বলা হয় “অন্যদের প্রতি সেরকম ব্যাবহার তুমি করো যা তুমি তাদের থেকে পেতে চাও” এটার অনুশীলন ছাড়া কোনো সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকবে না। আসলেই কি তাই? সমাজ ব্যবস্থা টিকে রাখলেই বা কি ? আর না থাকলেই বা কি? দিন শেষে মৃত্যুই যখন শেষ ঠিকানা? অন্যদের প্রতি কেন সেসব ব্যাবহার করা হবে যেই ব্যাবহার আমি তাদের থেকে আশা করি? নিজের স্বার্থে? খুব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এটা ফুটে উঠে যে কথিত এই গোল্ডেন রুল নিজের স্বার্থে তৈরি করা তাহলে একইভাবে অন্য কেউ যদি অন্যরকম নৈতিকতা তৈরি করে তাহলে সেটা কেন মেনে নিবেন না? সব থেকে আশ্চর্যের কথা হলো প্রাণীজগতে এই কথিত গোল্ডেন রুল কি সবাই প্রয়োগ করতে পারে? তারা কি টিকে নেই? তিমি মাছ , হাঙ্গর মাছ এরা হাজার হাজার ছোট মাছ সেবন করে এরমানে কি ছোট মাছদের সমাজ শেষ হয়ে গিয়েছে? চাইনিজ মানুষরা এমন কি প্রাণী আছে যা খায় না? প্রায় সব ধরণের প্রাণী যেমন কুকুর,শূকর,সাপ,বিচ্ছু,কেঁচো,ইঁদুর,গরু,ছাগল ইত্যাদি সব টাইপের প্রাণীকে হত্যা করে খাচ্ছে সেখানে প্রাণীদের সমাজ কি ধ্বংস হয়ে গেছে? ধরুন চাইনার সরকার এই বিধান দিলো যে মুসলিমদেরকে হত্যা করা হবে এবং সকল নারীদের ধর্ষণ করা হবে। যেই নীতি সেই কাজ ফলে হাজার হাজার কোটি কোটি মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। এতে কি মুসলিম জাতী ধ্বংস হয়ে গেছে? বিভিন্ন যুদ্ধেও তো কোটি কোটি মানুষ মারা গিয়েছে অথচ মানুষ প্রজাতি তো এখনো আছে? তাহলে কথিত গোল্ডেন রুলের গোল্ডেনত্ত্ব আসলে কোথায়?
ধরা যাক আসাদ নুর নামের একজন লোক যে নিজেকে মুক্তমনা দাবি করে। সে বিশ্বাস করে নৈতিকতার উৎস তার পূর্বপুরুষ আর চতুষ্পদ জানোয়ার শিপ্পাঞ্জি থেকে ধাপে ধাপে এক সময় আসাদ নুরদের জন্ম। সে চিন্তা করলো যেহেতু তার পূর্বপুরুষদের নির্দিষ্ট কোনো নৈতিকতা ছিল না তাই তারও থাকার দরকার নেই। সে চাইলেই নিজের জন্য নিজের নৈতিকতা তৈরি করতে পারে। একদিন বিয়াস বসু নামের এক নারীবাদীর সাথে তার দেখা হয়। কথার এক ফাকে সে বিয়াস বসুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে চাইলে বিয়াস নিষেধ করে দেয়। আসাদ অভিনয় করে হাসিখুশির থাকার চেষ্টা করে কারণ সে নিজেকে তখন বিশুদ্ধ নারীবাদী প্রমাণ করতে চেয়েছিল কিন্তু মনে মনে খুব রেগেছিল কারণ বিয়াস সম্মতি দেয় নাই আর বিয়াসের অসম্মতি আসাদ কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। সে ঠিক করলো নিকনিউমেন প্রাণী থেকে নৈতিকতা কপি করবে। যেমন মুক্তচিন্তা তেমনই কাজ। মুক্তচিন্তায় যে কোনো নাস্তিক যে কোনো কিছুই চিন্তা করার স্বাধীনতা রাখে।
একদিন সে বিয়াসকে নিজের বাড়িতে ডিনার পার্টিতে আমন্ত্রণ জানায়। বিয়াস সাধারণভাবেই বাসায় যায় এরপরে দুইজনে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে অনেক সময় ধরে। আসাদ চালাকি করে মদের একটি গ্লাসে কিছু নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে দেয় ফলে বিয়াস সেটা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। বিয়াস যখন অজ্ঞান হয়ে যায় ঠিক তখনই নাস্তিক আসাদ বিয়াসের সাথে মুক্তমনে সঙ্গম করে ফেলে বিয়াস অজ্ঞান থাকার ফলে কিছুই বুঝতে পারলো না,টেরই পায় নি সে। আসাদ আরও চালাকির সাথে ভিডিও রেকর্ড করে রাখে। বিয়াসের যখন জ্ঞান আসে তখন আসাদ তাকে সব ভিডিও দেখায়। বিয়াস অবাক হয়ে যায়। বলে, তুমি আমার সম্মতি ছাড়া এই কাজ কিভাবে করলে? আসাদ উত্তরে বলে মুক্তমনে করেছি। বিয়াস বলে এটা ঠিক না। আসাদ বলে কেন ঠিক না? তোমার তো শারীরিক কোনো ক্ষতিই হয় নাই তুমি অজ্ঞান ছিলে আর আমি আমার শিশ্ন স্রেফ প্রবেশ করে সুখ নিয়েছি এটা কখনো অনৈতিক না। নৈতিকতার সিমা এরকমই সংকীর্ণ হওয়া উচিত। আমরাই না প্রচার করি অন্যের ক্ষতি না করে যা ইচ্ছা তাই করা নৈতিকতার অংশ তাহলে তুমি এখন কেন সেটা মেনে নিচ্ছো না? তুমি কি মুক্তমনা নারী না? তুমি কি নাস্তিক না? তুমি কি মুক্তবুদ্ধি চর্চা করো না? দেখো বিয়াস তোমাকে কষ্ট না দিয়ে আমি নিজে সুখ নিয়েছি এটাকে তুমি কিভাবে অমানবিকতা বলতে পারো? কি যুক্তি আছে তোমার কাছে?
বিয়াস আসাদের মুক্তচিন্তার সাথে কুলাতে পারছিল না, ফলে রেগে মদের বোতল আসাদের দিকে ছুড়ে মারতে যায়, আসাদ সরে যায় বোতল পাশে ভেঙ্গে যায়। পাশের রুমে বসে হুমায়ন আজাদের লেখা “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইটি পড়ছিল আব্দুল্লাহ আল মাসুদ নামের আরেক মুক্তমনা। সে যখন আসাদের এরকম কর্ম সম্পর্কে জানতে পারলো তখন সে চালাকি করে বিয়াসের পক্ষে গিয়ে আসাদকে হুমকি দিল আর বলল তুই যদি নিজের ভুল স্বীকার না করিস তবে উত্তর কোরিয়ার পুলিশকে এই খবর জানিয়ে দিবে। আসাদ যখন বুঝতে পারলো এরা আসলে কেউই বিশুদ্ধ মুক্তমনা নাস্তিক হতেই পারেনি তখন কান্না করতে করতে বলল আমরা কি এই মুক্তমনাদের চেয়েছিলাম? আমরা কি এই মুক্তচিন্তকদের চেয়েছিল? আমরা কি এই মুক্তবুদ্ধির চর্চাই করতে চেয়েছিলাম? - বলতে বলতে আসাদ ধুতি শক্তিকরে বেধে সেখান থেকে চলে আসে।
যারা দুর্বলমনা নাস্তিক তারা এসব রূপক গল্প থেকে শিক্ষা নিতে পারেন কেননা এখানে যে যুক্তি ও অবিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে তা নাস্তিকিস্টরা হয়তো আপনার সামনে তুলে ধরতে চাইবে না। আপনার কি জানা আছে ফ্রান্সে আশ্রয় পেতে ইসলাম নিয়ে মুক্তচিন্তায় কটূক্তি করা হয়? জানানো হয় নি তাই তো? ‘THE DAILY CAMPUS’ সংবাদ মাধ্যমে “ফ্রান্সে আশ্রয় পেতে ইসলাম নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট দিতেন এই তরুণী” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করা হয়,৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে। এখানে বর্ণিত হয়েছেঃ (১০)
ফ্রান্সের অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে দেশে বসে ইসলাম ধর্ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তিমূলক পোস্ট দিতেন ১৯ বছর বয়সী তরুণী ইশরাত জাহান রেইলি। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) রাতে র্যাব-৪ -এর একটি দল মিরপুরের দারুসসালাম থানা এলাকা থেকে তাকে আটক করে। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।জানা গেছে, গত ৩ বছর যাবত ফেসবুক ও টুইটারে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে গত ২ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয় তার। এরপর ৩ বছর বয়সী ছেলে সন্তান নিয়ে মায়ের সঙ্গে রাজধানীর দারুসসালাম এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন রেইলি। কমিউনিটি পুলিশে নিম্ন পর্যায়ে চাকরিও ছিল তার। সম্প্রতি ফ্রান্সে ধর্মীয় অবমাননার ইস্যুতে যখন পুরো বিশ্ব উত্তাল হয়ে ওঠে, সে সময় রেইলি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রেইলির ৭টি আইডি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তার একটি আইডি নিষ্ক্রিয় করা হলে, আরেকটি আইডি খুলে সে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট অব্যাহত রাখে। এভাবেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে ‘চোর-পুলিশ’ খেলছিল এই বেপরোয়া তরুণী।
জানা গেছে, খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয় ইশরাত জাহান রেইলির। এইসএসসি শেষ করে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি রেইলি। তার প্রাক্তন স্বামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর আর বিয়ে করেননি রেইলি। তবে একাধিক অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে এই তরুণীর বিরুদ্ধে। উন্নত বিশ্বে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। যে পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার পথ সুগম হয়। ইসরাত জাহান রেইলি সে পথই অনুসরণ করছিলেন। তিনি যখন ফেসবুকে একের পর এক ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন, তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে তার ফেসবুক আইডিগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম হয়। তবে ৩২ হাজার ফলোয়ার সম্মিলিত তার টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে টুইটার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানালেও সাড়া মিলেনি। এমনটি কেবল রেইলির ক্ষেত্রে নয়, অন্যদের বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনুরোধ জানালে ফেসবুক তা আমলে নেয়। কিন্তু টুইটার কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করছে না, র্যাবের পক্ষ থেকে তাই জানানো হয়।
রেইলির টুইটারে অসংখ্য বিদেশিসহ ৩২ হাজার ফলোয়ার রয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট কেবল রেইলি নয়, তার মতো এমন একাধিক লোকজন রয়েছেন, যারা নিয়মিত উস্কানিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে আসছেন। তাদের আটক করতে তৎপরতা চালাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দারা। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে দেশ বিদেশে ধর্ম অবমাননার পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে রেইলিকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-৪ এর এসআই রাসেল মন্ডল বাদী হয়ে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় গতকাল শুক্রবার (৬ নভেম্বর) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮, ২৯ এবং ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৬। মামলাটি তদন্ত করছে দারুসসালাম থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, এই মামলায় রেইলিকে আজ শনিবার (৭ নভেম্বর) ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, রেইলি তার নিজের নামে ৭টি ফেসবুক আইডি, ২টি ব্যক্তিগত ব্লগ ভিত্তিক ফেসবুক পেজ এবং টুইটার আইডি থেকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট করে আসছিলেন। তার এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সে অ্যাসাইলাম পেতে এ ধরনের উগ্র ও উস্কানিমূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে আসছিলেন।
কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে নাস্তিকরা যে মুক্তচিন্তায় জালিয়াতি করতে পারে এটা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে? এরকম কতো হাজার মুক্তমনা রেইলি লুকিয়ে আছে ফেসবুকেরই অন্তরে তা কি আর সংশয়ের বাইরে? খবরটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিধায় পুরোটাই আপনাদের সামনে তুলে ধরতে বাধ্য হলাম। নাস্তিকতায় মুক্তবুদ্ধিতে যে জালিয়াতির মুক্তচিন্তা করা যায় তা নিয়ে কি আর সংশয় রয়েছে? না। কোনো নাস্তিক যদি এই কথার সাথে দ্বিমত পোষণকারী হয় তাহলে সে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করে সে কি আসলেই প্রকৃত মুক্তচিন্তা অথবা মুক্তমনা হতে সক্ষম কিনা? অথবা অন্যের মুক্তচিন্তার স্বাধীনতায় সে বিশ্বাসী কিনা?
কাল্পনিক ডিবেট
গল্পে বর্ণিত সকল চরিত্র এখানে রূপক। বাইচান্স কারো চরিত্রের সাথে বাস্তবে যদি মিলে যায় সেটা একান্ত কাকতালীয় ব্যাপার। মুক্তচিন্তায় এই ধরণের কথামালা অস্বাভাবিক কিছু না। বিশেষ করে প্রতিটি মুক্তমনাদের নিজস্ব মুক্তচিন্তা করার একইসাথে মুক্তবুদ্ধি চর্চা করার স্বাধীনতা রয়েছে সেটাই এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে,মুক্তমনা নাস্তিকদের যুক্তি গুলোর আলোকে।
ধরা যাক একজন নাস্তিকের নাম আসিফ মহিউদ্দিন। সে কানিজ নামক এক নারীবাদীকে পটিয়ে বৈবাহিক চুক্তিতে বন্দী করে রেখেছে। একদিন নাদিয়া নামের এক নারীবাদীর সাথে কানিজের ফেসবুকে কথা হয়, কথার এক সময় মুখ ফসকে নাদিয়াকে বলে এই জানিস আসিফ না আমার সাথে সেক্স করার সময় সম্মতি নেয় নি আর আমিও দিতে পারিনি কেননা আমি চরম পুল্কিত অবস্থায় ছিলাম।
নাদিয়া বলল, হায় হায় এটা তো ধর্ষণ! আমি এর বিরুদ্ধে ফেসবুকে-ইউটিউবে আন্দোলন করবো। কানিজ অনেক অনুনয় করে বলল, দয়া করে এসব কাউকে বলো না আমি কিন্তু পরে সম্মতি দিয়েছিলাম। নাদিয়া বলল, এখন আর কিছু বললে হবে না। আমি সবার কাছে মুক্তমনা ধর্ষক আসিফের কথা লিক করে দিব। কানিজ রেগে উঠলো। আসিফকে এই ঘটনা জানানো হলে, সে বলল, আমি ডিবেট করতে চাই নাদিয়ার সাথে। আমি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করবো মুক্তচিন্তা ধর্ষণ করার বৈধতা প্রদান করে। কানিজ তুমি নাদিয়াকে ডিবেটে রাজি করাও।
কানিজ নাদিয়াকে বিষয়টি জানালে, নাদিয়া বলল, আমি ডিবেট করতে রাজি কিন্তু আরিফুর রহমান আমাদের ডিবেটের সঞ্চালক থাকবেন। এই কথা কানিজ আসিফকে জানায়। তো যেই কথা সেই কাজ। ডিবেটের আয়োজন হয়। ডিবেট শুরুঃ
নাদিয়া যুক্তি দেয় যে ধর্ষণ করা খারাপ কারণ এতে অন্যের ক্ষতি হয়। একজন নারীবাদী হিসেবে আমি ধর্ষণকে সমর্থন করতে পারি না।
আসিফ বলল, অন্যের ক্ষতি হলেই যে সেটা খারাপ এই বিধান আমাকে কেন বিশ্বাস করতে হবে? আমি কেন এই বিধানকে অবিশ্বাস করতে পারবো না? অন্যকে ধর্ষণ করলে যদি ক্ষতি না হয় তাহলে কেন আপনি ধর্ষণকে মানবিক বলবেন না? ধরুন আমি আপনাকেই ধর্ষণ করলাম, কিন্তু আপনি প্রথমে সম্মতি না দিলেও পরে মজা পেয়ে গেলেন আর সম্মতি দিতে ভুলে গেলেন এখন আপনি নিজেই বলুন এই ধর্ষণ কোন যুক্তিতে খারাপ? আপনি কি পারবেন একে খারাপ প্রমাণ করতে? অজ্ঞান করার ফলে আপনার তো কোনো ক্ষতিও হয় নাই?
নাদিয়া বলল,আপনার এসব কথা আমাকে দমন করতে পারবে না। একজন নারীর অনুমতি ছাড়া আপনি কেন তার দেহ ভোগ করতে যাবেন? একজন মুক্তমনা আন্দোলনের সভাপতি হয়ে আপনি কিভাবে এই ধরণের কথা বলছেন?
আসিফ বলল, দেখুন নাদিয়া আপনি আসলে এখনো মুক্তমনা হতেই পারেন নাই। আপনি নিজেই তো একটি যুক্তি ফেসবুকে দিয়ে বেড়ান যে “আমার দেহ আমার ইচ্ছা” তো একই যুক্তিতে আমার দেহ আমার ইচ্ছা, আমি যাকে ইচ্ছা ধর্ষণ করবো, যাকে ইচ্ছা করবো না এটা তো একান্ত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কানিজের সাথে সেংকি-পেংকি করার সময় সে আনন্দে ছিল বিধায় সে আমাকে সম্মতি দিতে পারিনি আর আমিও তাকে নিয়ে মুক্তমনে শরীরচর্চায় বিজি ছিলাম, যখন তার হুঁশ ফিরে এসেছিল তখন তো সম্মতি দিয়েছিল। আপনি কি বোঝেন না আমার কথা?
নাদিয়া বলল,না না , প্রথমেই সম্মতি নিতে হবে। এটা ধর্ষণ। ধর্ষণ করা খারাপ এটাই নিয়ম। আসিফ তুমি ধর্ষক এতে সংশয় নেই।
আসিফ বলল, কোনটাকে ধর্ষণ বলা হবে আর কোনটাকে বলা হবে না? এই বিধান আপনি কেন আমার জন্য নির্ধারণ করে দিতে যাবেন? আমি একজন মুক্তচিন্তক। আমি আপনার বানানো নির্ধারিত নৈতিকতাকে কেন বিশ্বাস করতে যাবো? আমি আপনার নৈতিকতাকে অবিশ্বাস করে আমার নৈতিকতায় চলবো। আমার নৈতিকতায় ধর্ষণ করা ভালো, এতে আমার নিজের সুখ নিশ্চিত হয় এবং আমার মনে প্রচুর আনন্দের ঢেউ খেলা করে।
নাদিয়া বলল, সম্মতির বিরুদ্ধে কারো সাথে সেক্স করাই ধর্ষণ।
আসিফ বলল, এটা আপনার যেমন বানানো কথা একইভাবে আমার বানানো কথা হচ্ছে কেউ যদি আমার সম্মতিতে রাজি না হয় তাহলে আমি কেন তার সম্মতিতে রাজি হতে যাবো? অর্থাৎ একজন নারী সম্মতি দিয়েছে কি দেয় নাই সেটা আমি কেন চেক করতে যাবো? প্রকৃতির বিবর্তনের কারণে নারীরা পুরুষের থেকে কমজোর সেহেতু যদি সে নিজেকে কোনো মুক্তমনা ধর্ষক থেকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে এর জন্য সে নিজেই দায়ী,নাস্তিক ধর্ষক দায়ী নয়। ধর্ষণ করা খারাপ প্রমাণ করতে আপনি যেই ক্ষতি দেখাবেন সেই ক্ষতিতে আমার লাভ হয় এতে ধর্ষণ করা একইসাথে ভালো বলে গণ্য হয় এটাই মুক্তচিন্তার অংশ। এই যে নাদিয়া, মনোযোগ দিয়ে শুনুন আপনার মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা যেমন খারাপ ঠিক একইভাবে আমার মুক্তচিন্তাতে ধর্ষণ করা মানবিক , যৌক্তিক ও প্রাকৃতিক।
নাদিয়া আসিফের মুক্তচিন্তার সাথে কোন ভাবেই যুক্তি দিয়ে কুলাতে পারে নি । আরিফুর বিষয়টি বুঝতে পেরে বলল, আসিফ তোমাকে যদি আমি মুক্তমনে ধর্ষণ করতে চাই তুমি কি মেনে নিবে? আসিফ উত্তরে বলল আপনি সমকামী হিসেবে আমার সাথে জবরদস্তি করে ধর্ষণ করতে চান আমি নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবো কিন্তু যদি আমি না পারি তাহলে তো আমি আপনার ধর্ষণ করাকে খারাপ বলতে পারি না। ধর্ষণ করা তো আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই না? আপনার ব্যক্তিগত মুক্তচিন্তাকে আমি কিভাবে খারাপ প্রমাণ করবো?
আসিফের এরকম সরাসরি কথা শুনে মুক্তমনা আরিফুর খুব প্রাউড অনুভব করে এবং লাইভের মধ্যেই ঘোষণা দেয় আসিফ তুমি আমাদের মুক্তমনা আন্দোলনের সভাপতি হবার যোগ্য। নাদিয়া এটা দেখে কষ্ট পায় এবং বলে আরিফ ভাই এটা আপনি কি করলেন? আরিফ বলল যা করেছি ঠিকই করেছি আগে তুমি বিশুদ্ধ মুক্তমনা হতে শিখো এরপরে আমাদের সাথে কথা বলতে আসো। নাদিয়া লাইন কেটে চলে যায়।
আসিফ ডিবেটে বিজয় অর্জন করবে তা কানিজ কখনো কল্পনাতেও আনেনি কিন্তু নিজের যৌনসঙ্গীর এমন জয় সত্যিই কানিজকে খুব খুশি করে দিয়েছে। কানিজ আসিফকে বলল, তোমার মতো একজন মুক্তচিন্তক পেয়েছি তাতে আমি খুবই খুশি।
আসিফ কানিজকে বলল, আমি চাই সবাই নিজের মুক্তচিন্তা চর্চা করুক আর কেউ কাউকে বাধা না দিক! সবাই সবার নৈতিকতা বানাতে স্বাধীন,কেউ যদি মুক্তমনে মিথ্যাচার করে তাহলে অন্য মুক্তমনাদের এটা ঠিক নয় যে তার মুক্তমনা চর্চায় বাধা প্রদান করবে। আমি ইসলাম নিয়ে কিভাবে মুক্তমনে মিথ্যাচার করি সবাই কি দেখে না? সবাই কি শিখতে পারে না কিভাবে মুক্তমনে মিথ্যাচার করতে হয়? আমার থেকে কেন সবাই শিক্ষা নিতে পারে না? হ্যাঁ, আমিই মুক্তমনা আন্দোলনের সভাপতি। আমিই সেরা নাস্তিক।
উপসংহারঃ
গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না তেমনি নাস্তিকরা আজীবন নিজেদেরকে মানবতাবাদী দাবি করলেও তারা মানবতাবাদী কখনো হতেই পারবে না কারণ মানবতাবাদী হতে সকল নাস্তিক বাধ্য না। এর বাহিরেও মুক্তচিন্তার অধিকার থাকা উচিত? যখন কোনো নাস্তিককে বলতে শুনি নাস্তিকতা ধর্ষণ নিয়ে ডিল করে না তখন সূর্যের মতো এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে কোনো নাস্তিক চাইলেই মুক্তমনে ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতে পারে কেননা নাস্তিকতা এসব নিয়ে ডিল করে না। নাস্তিক্যধর্মকে প্রচুর প্রশ্ন করতে হবে। শাণিত যুক্তি ও প্রশ্নের পাথরে ‘নাস্তিকান্ধতা’কে আঘাত করতে হবে কারণ সত্য যে কঠিন তাই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। একজন নাস্তিক কাকে ধর্ষণ করবে? কাকে করবে না? এসব একান্ত তার নিজস্ব ব্যাপার। এসব ব্যাপারে অন্য মুক্তমনারা বাধা দিতে বাধ্য নন কেননা সবারই নিজস্ব নৈতিকতা বানানোর অধিকার রয়েছে থাকবে। এই গবেষণাময় লেখার সাথে যদি আপনি দ্বিমত পোষণ করেন তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি আসলেই মুক্তমনা? মুক্তচিন্তা আপনি করতে জানেন? নাকি নাস্তিকান্ধতার শেকলে এখনো আপনি বন্দী? তো বুদ্ধিমান পাঠকগণ, প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, শাণিত যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকার দায়িত্ব এখন আপনার। মৃত্যুর আগেই সিদ্ধানে আসার চেষ্টা করার অধিকার আপনার। এখন শুধুই আপনার পালা, আপনি কোন দিকে যেতে চাচ্ছেন, সত্যের কাছে নাকি নাস্তিকান্ধতায়?
রেফারেন্স সমূহঃ
(১) পর্ন তারকা রন জেরেমির বিরুদ্ধে আরও ধর্ষণ ও যৌন হামলার অভিযোগ
https://www.bbc.com/bengali/news-53980927
(২) Rebecca Watson-European Atheist Convention 2012 (১৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ১৬ মিনিট ৪০ সেকেন্তের অংশে উক্ত কথাটি বর্ণনা করেছে)
https://www.youtube.com/watch?v=Q985XL7G1F8
(৩) জোরপূর্বক হলেও স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক ধর্ষণ নয়:আদালত
https://www.kalerkantho.com/online/world/2021/08/27/1067539
(৪) বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়, আদালতে সওয়াল কেন্দ্রের
(৫) Most Atheist Countries 2021
https://worldpopulationreview.com/country-rankings/most-atheist-countries
(৬) Top 5 countries with the highest rates of rape by Ludovica Iaccino Updated November 5, 2015 15:09 GMT
https://www.ibtimes.co.uk/top-5-countries-highest-rates-rape-1434355
(৭) Have Secularists Won the Culture War?
https://www.the-american-interest.com/2016/04/27/have-secularists-won-the-culture-war/
(৮) মৃতদের সঙ্গে যৌনমিলন করেন ভারতের যে হিন্দু সাধুরা
https://www.bbc.com/bengali/news-46849926
(৯) নারী যদি পুরুষকে যৌনমিলনে বাধ্য করে - তাকে কি ধর্ষণ বলা যায়?
https://www.bbc.com/bengali/news-49111338
(১০) ফ্রান্সে আশ্রয় পেতে ইসলাম নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট দিতেন এই তরুণী
https://thedailycampus.com/national/56746/
================
প্রাসঙ্গিক আরও লেখা পড়তে ক্লিক করুনঃ
* নাস্তিক্যবাদ প্রচারকারীদের ক্যারেক্টার