বিষয়ঃ ইসলামে ইহুদীবিদ্বেষ আছে?
লিখেছেনঃ এমডি আলী।
------------------------------------------
ইসলাম নিয়ে পর্যাপ্ত লেখাপড়া না থাকার কারণে কিছু লোক দাবি করে থাকে যে ইসলামে নাকি ইহুদীবিদ্বেষ রয়েছে। তারা কুরআন-সুন্নাহ থেকে কিছু তথ্য দেখালেও সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা করতে সেই গোষ্ঠী নারাজ। মানুষকে যেভাবেই হউক এমনকি মিথ্যাচার করে হলেও ইসলামের সত্যতা থেকে বের করে নাস্তিকতার শেকলে বন্দী করাই যেন ঐ লোকদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। ইসলাম নিয়ে মার্জিত সমালোচনা করতে চাইলে আমরা সাধুবাদ জানাবো। কিন্তু এরমানে এই না যে লাল দাগ দিয়ে অর্ধেক অংশ দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিলে সেটা আমরা মেনে নিব। আমার লেখাগুলো পড়লে আপনি নিজেই ধরতে পারবেন তারা ঠিক কোন জাগায় তথ্যকে সরিয়ে ফেলে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে, করছেও। তাদের মিথ্যাচার দেখে সংশয় হয় যে কুরআন-সুন্নাহর মিথ্যা-ব্যাখ্যা করা কি মুক্তচিন্তায় বৈধ? এখন কেউ যদি নিজের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় এটাকে বৈধতা মনে করেই থাকে তাহলে অন্যরা কি করবে জানি না তবে আমার নৈতিক দায়িত্ব মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে সচেতন করা,সতর্ক করা আর আমি করছিও।
সংশয়পূর্ণ ভাবনাঃ
সাধারণ অর্থে যদি বলি বিদ্বেষ মানে হিংসার সাথে তীব্র-ঘৃণা বোধকে বিদ্বেষ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিদ্বেষ করা কেন অনৈতিক? কোন যুক্তিতে খারাপ? ধরুন মগাচিফ নামের একজন লোক যে কিনা চরম পর্যায়ের নবী মোহাম্মদ (সা) বিদ্বেষী। এখন নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এটা যে খারাপ এর যুক্তি গুলো কি কি হবে অথবা কি দিয়ে খারাপ প্রমাণ করা যাবে? নাকি বিদ্বেষপোষণ করা ব্যক্তিগত অধিকার নাস্তিক্যধর্মে?
সংশয় হচ্ছে, ইহুদীধর্মে ইসলামবিদ্বেষ যদি থাকেও অথবা ইসলামে ইহুদীবিদ্বেষ আছে কি নেই এই বিষয় কি নাস্তিক্যধর্ম অথবা নাস্তিক্যবাদ ডিল করে কিনা? যখন সংশয়ের সাথে নাস্তিকদের প্রশ্ন করা হয় যে, নাস্তিক্যধর্মে ধর্ষণের জন্য ধর্ষকের শাস্তি কোন যুক্তিতে নির্ধারণ করা হবে? কেন হবে? নাস্তিক্যধর্মে একজন মানুষের জীবন কেমন হবে? তখন উত্তরে তারা বলে নাস্তিকতা কোন ধর্ম না, আপনি কার সাথে রাত কাটাবেন বা কার সাথে কিভাবে কথা বলবেন এসব নিয়ে নাস্তিকতা ডিল করে না। এরপরে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, যেমন ফুটবল খেলায় ধর্ষণের শাস্তি আছে কি নেই এটা নিয়ে ফুটবল খেলা ডিল করে না ঠিক একইভাবে নাস্তিকতায় ধর্ষণের শাস্তি আছে কি নেই এটা নিয়েও নাস্তিক্যবাদ ডিল করে না। নাস্তিকদের এরকম কথাবার্তা স্বয়ং নাস্তিক্যবাদ নিয়েই সংশয়ে ফেলে দেবার জন্য যথেষ্ট।
কারণ নাস্তিকতা যদি ধর্ষণ-জীবনবিধান-নির্দিষ্ট নৈতিকতা-সত্য-মিথ্যা-অপরাধ- ইত্যাদি নিয়ে ডিল না করেই থাকে তাহলে নাস্তিকরা কিসের ভিত্তিতে অন্যের সমালোচনা করতে পারে? ধরুন একজন মানুষ নিজেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করলো এবং কোটি-কোটি মানুষ নিজ স্বাধীন ইচ্ছায় সেই মানুষকেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকার করে নিল এখন এই মানুষদের এরকম মুক্তচিন্তাকে নাস্তিক্যদৃষ্টিতে অনৈতিক প্রমাণ করার যুক্তি আছে কি? নাস্তিকতা যদি যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েই থাকে তাহলে প্রত্যেক মানুষের নিজের যুক্তিতে চলার অধিকার থাকবে না?
আবার ধরুন একজন নাস্তিক দাবি করলো ইহুদীধর্মে ইসলাম বিদ্বেষ আছে। এখন সে ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ বের করে দেখানোর চেষ্টা করলো যে ইহুদীধর্মে ইসলাম বিদ্বেষ আছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যেই নাস্তিকতা ইহুদীধর্ম নিয়েই ডিল করার যোগ্যতা রাখে না সেখানে একজন নাস্তিক কিভাবে এই দাবি করলে যৌক্তিক হবে যে ইহুদীধর্মে ইসলাম বিদ্বেষ আছে? বোঝা গেছে? অর্থাৎ নাস্তিকতায় চুরান্ত অথবা নির্দিষ্ট করে নৈতিকতার কিছুই বর্ণনা করা নেই। তাহলে ইহুদীধর্মে ইসলামবিদ্বেষ থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি আসে যায়? বোঝা গেছে এইবার? নাস্তিকদের নৈতিকতার চূড়ান্ত সত্যতা কি তারা প্রমাণ করতে পেরেছে?
নাস্তিক্যবাদ নিয়ে আরো সংশয় হচ্ছে নাস্তিকতায় বিদ্বেষ কাকে বলা যাবে এবং কাকে বলা হবে না? কাকে কিসের ভিত্তিতে হিংসা করা যাবে বা যাবে না? এই ভিত্তির চুরান্ত সত্যতার প্রমাণ কি হবে? একজন নাস্তিক কোন যুক্তির ভিত্তিতে এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারবে? আপনি একজন নাস্তিক হয়ে যেই নৈতিকতা বর্ণনা করবেন যে “ইহুদীবিদ্বেষ রাখা যাবে না” এই নৈতিকতার চুরান্ত সত্যতার প্রমাণ আপনি কিভাবে নির্ধারণ করে ফেললেন? যদি বলেন আপনার বিবেক দিয়ে তাহলে অন্য লোকদের কাছে তাদের বিবেক অনুযায়ী যদি আপনাকে চতুষ্পদ জানোয়ার বলা হয় তাহলে সেটা তার বিবেক অনুপাতে সঠিক বলে কি আপনি মেনে নিচ্ছেন? আপনার নাস্তিক্যবিবেক অনুযায়ী যদি ইহুদীবিদ্বেষ অনৈতিক হয়ে থাকে তাহলে অন্য নাস্তিকের কাছে তার বিবেক অনুযায়ী ইসলামবিদ্বেষ পোষণ করা সঠিক হিসেবে আপনি বিশ্বাস করবেন না কেন? যদি বলেন তার বিবেক দিয়ে আপনি চলেন না তাহলে একই বিবেক দিয়েও সেও আপনার বিবেক দিয়ে চলতে বাধ্য নাকি?
নাস্তিকতা যদি যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে একজন নাস্তিক আরেকজন মানুষকে ঘৃণা করলে সেটা কেন খারাপ হবে? ধরুন ডারউইন নামের একজন লোক দাবি করেছে মানুষের পূর্বপুরুষ বানর। ধরুন একজন যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে কেউ নিজের পূর্বপুরুষকে বান্দর হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি না তাই সে ডারউইন নামের কথিত বিজ্ঞানীকে নিজের মুক্তচিন্তায় ঘৃণা করে, রাখে বিদ্বেষ এখন আপনি কোন যুক্তিতে এই ঘৃণা করাকে বা বিদ্বেষ রাখাকে অনৈতিক হিসেবে প্রমাণ করবেন? আরেকটি কথা, আপনার নাস্তিকতা যদি এসব নিয়ে ডিল না করে তাহলে আপনি এসব নিয়ে ডিল করতে চান কোন লজ্জায়?
একটি ঘটনা পড়া যাক,হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১৮০৫, সহিহ হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) সম্পর্কে এসেছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে খায়বারের ইয়াহুদীদের নিকট পাঠালেন, সেখানকার ফলসমূহ ও ফসলাদি অনুমান ক’রে দেখে আসার জন্য। ইয়াহুদীরা তাঁকে ঘুষ পেশ করল; যাতে তিনি তাদের ব্যাপারে একটু শিথিলতা প্রদর্শন করেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তাঁর পক্ষ হতে প্রতিনিধি হয়ে এসেছি, যিনি দুনিয়ায় আমার কাছে সব থেকে বেশী প্রিয়তম এবং তোমরা আমার নিকট সর্বাধিক অপ্রিয়। কিন্তু স্বীয় প্রিয়তমের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং তোমাদের প্রতি আমার শত্রুতা আমাকে তোমাদের ব্যাপারে সুবিচার না করার উপর উদ্বুদ্ধ করতে পারবে না।’ এ কথা শুনে তারা বলল, ‘এই সুবিচারের কারণেই আসমান ও যমীনের শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে।’ (ইবনে কাষীর ১/৬৯৮, আহসানুল বায়ান)
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৩১৩,সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।-ihadis.com
ধরুন নাস্তিকরা চরম ইসলামবিদ্বেষী আর ইহুদীদের থেকে ঘুষ নেয়া কেন ইসলামে হালাল করা হলো না এই জন্য চিন্তা করলো আমরা নিজেরা যেহেতু ইসলামবিদ্বেষী তাই এই দুর্গন্ধ মুসলিমদের দিকে চাপিয়ে দিয়ে গোঁজামিল দিয়ে প্রমাণ করবো ইসলামেই ইহুদীবিদ্বেষ আছে। সংশয় হচ্ছে নাস্তিকদের এরকম চিন্তাভাবনাকে নাস্তিক্যধর্ম দিয়ে কি অনৈতিক প্রমাণ করা যাবে? তাছাড়া ইহুদীরা ঘুষদাতা হলে এখনকার সময়ে নাস্তিকরা মুক্তমনে ঘুষখোর হয়ে থাকলে ইহুদীদের থেকে ঘুষ খেয়ে ইসলামবিদ্বেষ ছড়ায় কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় যে নেই সেটার গ্যারান্টি কি?
ধরা যাক আপনার বাবা একজন ডাক্তার। সে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। কল্পনা করুন যে আপনার বাবা করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেছে এবং এরফলে দুনিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। আচ্ছা কেউ যদি মুক্তচিন্তার নাম করে আপনার বাবার পুরো মানবিক কর্মকে নিরর্থক বলে আপনার কি কষ্ট লাগবে না? কেউ যদি বলে আপনার বাবা ডাক্তার ছিল এটা নিরর্থক, আপনার বাবা আপনার মাকে ভালবাসতেন এসব অর্থহীন, আপনি আপনার মাকে যেই শ্রদ্ধা করছেন এটাও নিরর্থক- আপনার মনে যদি এই প্রশ্ন আসে যে, হয়তো সেই লোকটি মানুসিক ভাবে অসুস্থ তাই সব কিছুইকেই অর্থহীন দাবি করছে,এই প্রশ্ন আসা কি অন্যায়? না। অথচ নাস্তিকদের কাছে খুবই প্রিয় একজন মুক্তচিন্তক নাম হুমায়ুন আজাদ। উনি এমনটিই বিশ্বাস করতেন।
উনার লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক,আইনস্টাইন নিরর্থক,ওই গোলাপও নিরর্থক, ভোরের শিশিরও নিরর্থক,তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক,দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক,রাষ্ট্রপতি নিরর্থক,কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।
"আমার অবিশ্বাস" ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, এই যে আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে সুখ পাচ্ছি । আমি মরে যাবো, এই হাস্যকর নিরর্থকতাকে কিভাবে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি ? আমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার কোনো পূর্বনির্ধারিত উপায় নেই । কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোন মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না । তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ , নিজেদের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পথঃ আমি তাদের পথে চলতে পারি না। আমি খুজতে চাই আমার পথ। নিজের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে আমার নিজের।
“আমার অবিশ্বাস” ২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, কোনো পূর্বনির্ধারিত পথ নেই মানুষের জন্যে।কোনো গ্রন্থ পথ দেখাতে পারে না,কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক তার জন্যে পথ প্রস্তুত করতে পারেন না, ওই মহাপুরুষেরা তৈরি করেছেন নিজেদের পথ, অন্যদের নয়।প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে হয় নিজেদের পথ, তৈরি করতে হয় নিজেদের রাস্তা, অনেকের পথ আমাকে আলোড়িত করেছে, অনেক গ্রন্থ আমাকে আলো দিয়েছে, কিন্তু আমি ওইসব পথে চলি নি, ওই আলোতে পথ দেখি নি।
উনার কথা সত্য হয়ে থাকলে কিছু সংশয় উদয় হওয়া স্বাভাবিক যেমন, নিজের জীবনকে অর্থহীন দাবি করা মুক্তচিন্তায় নৈতিক? কেউ যদি কাউকে পথ দেখাতে না পারে তাহলে অন্য মতবাদ নিয়ে সমালোচনা করার অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্য কি? স্কুলে পড়াশোনা করা কিভাবে যৌক্তিক? ছোট বাচ্চারা শিক্ষকদের শিক্ষা নেবে কোন যুক্তিতে? কেননা তারা তো এটা প্রমাণ করতে পারেনি যে যারা তাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে তারা আসলেই শিক্ষক হবার জন্য যোগ্য কিনা? এটা কি অন্ধবিশ্বাস না? ছোট বাচ্চারা কিভাবে যাচাই করবে? নাকি স্রেফ অন্ধবিশ্বাস করবে?
নাস্তিক্যদৃষ্টিতে একজন মানুষ যেহেতু অন্য মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে না সেহেতু কোনো নাস্তিক নিজেদের জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে যদি এটা বিশ্বাস করে যে আমি আমার মুক্তচিন্তায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে দুনিয়ার সকল মুসলিমদেরকে হত্যা করবো এবং বাকি সব আস্তিকদেরকে আমার দাস বানানো এবং সকল নারীদেরকে আমার দাসী বানাবো যারা আমার মুক্তচিন্তার আইন মানবে না তাদেরকে আইন করে দিব যে নিজের হত্যা নিজেই করুক। পুরো দুনিয়া আমার মুক্ত ইশারাতে চলবে। আমি যেহেতু ক্ষমতাবান তাই আমার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা স্বয়ং বিবর্তনবাদ। আমার নৈতিকতায় আমি চলবো অন্যের ক্ষতি হলে আমার কি? অন্যের ক্ষতিকে গুরুত্ব দিলে আমার নিজের ক্ষতি তাই অন্যের ক্ষতি হলেই সেটা আমার কাছে ক্ষতি হতে বাধ্য না, এই ক্ষেত্রে নাস্তিক্যধর্ম কি সমাধান দিবে? তাছাড়া হুমায়ুন আজাদের কথাকে সত্য হিসেবে ধরে নিলে উদাহরণের নাস্তিকের কথাকে অনৈতিক প্রমাণ করার যৌক্তিকতা থাকছে কিভাবে? এসব সংশয় থেকে কিভাবে নাস্তিক্যবাদ মানুষকে মুক্ত করবে?
ভদ্র-মার্জিত ইহুদীদের সাথে যেমন আচরণ করা হয়েছে ইসলামেঃ
যারা মানুষের জন্য ক্ষতিকর না তাদের সাথে রহমপূর্ণ আচরণ করতে ইসলাম শিক্ষা দেয়। তাই যারা উগ্রবাদী ইহুদী ছিল না তাদের সাথে ইসলাম মানবিক আচরণ করতে শিক্ষা দেয়। সহিহবুখারী,হাদিসঃ ৭৩৭৬,সহিহ হাদিসঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন না,যে মানুষের প্রতি রহম করে না।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৯৯০,সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা দয়াময় রহমানের ইবাদত করো, মানুষকে আহার করাও এবং সালামের বহুল প্রচলন করো, তাহলে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করতে পারবে।-ihadis.com
মানুষকে আহার করাতে বলে ইসলাম আর এখানে এমন কথা নেই যে অমুসলিম ক্ষুধার্তকে খাদ্য দিবে না। তাই একজন ইহুদী যদি ক্ষুধার্ত হয় অবশ্যই তাকে খাবার দিয়ে সাহায্য করতে হবে। নবীজি (সা) ইহুদীদেরকে স্বাধীনতাও দিতেন,ফলে ইহুদীরা ২০ হাজার ওয়াসক দিয়ে ফল তাদের অধিকারে নিয়ে নেয়। যদি নবী মোহাম্মদ (সা) ইহুদীদেরকে ঘৃণা করতেন তাহলে এরকম সুযোগ দিতেনই না। সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৩৪১৫,সহিহ হাদিসঃজাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) খায়বারের বাগানে ফলের পরিমাণ অনুমানে নির্ধারণ করেন চল্লিশ হাজার ওয়াসক। এরপর তিনি সেখানকার ইয়াহুদীদের ইখতিয়ার দিলে তারা বিশ হাজার ওয়াসক দিতে রাজি হয় এবং ফল তাদের অধিকারে নিয়ে নেয়।-ihadis.com
নবী মোহাম্মদ (সা) ইহুদীদের নিকট বর্মও বন্ধক রেখেছিলেন ও খাদ্যও কিনেছিলেন,সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ২০৯৬, সহিহ হাদিসঃ ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,আল্লাহর রসূল (রাঃ) জনৈক ইয়াহূদী হতে বাকীতে খাদ্য ক্রয় করেন এবং নিজের লৌহ বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।-ihadis.com
নবী মোহাম্মদ (সা) এর খাদেম ছিল ইহুদী যুবক জানতেন কি? সেই যুবক অসুস্থ হলে তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে সে সেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে। নবী মোহাম্মদ (সা) যদি সেই ইহুদী যুবককে ঘৃণা করতেন তাহলে অবশ্যই নির্যাতন-অত্যাচার করতেন কিন্তু এরকম কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া নবী মোহাম্মদ (সা) যদি মিথ্যাবাদী নবী হতেন তাহলে কিন্তু যুবকের বাবাকে খুশি করার জন্য এটা বলতেন যে তোমার ছেলে ইহুদী হওয়া সত্ত্বেও জান্নাতে যাবে এখন তুমি আমাকে এতো টাকা দেও কিন্তু এই ধরণের কিছুই নবীজি (সা) বলেন নাই। এটা প্রমাণ যে উনি আসলেই সত্য নবী ছিলেন।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ১৫৭৪, সহিহ হাদিসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী যুবক নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমাত করতেন। তাঁর মৃত্যুশয্যায় নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৯০৫, সহিহ হাদিস।-ihadis.com
তাছাড়া নবীজি মোহাম্মদ (সা) যদি ইহুদীযুবকের সাথে অমানবিক আচরণ করতেন তাহলে ইহুদীর পিতা কখনোই তাকে ইসলাম গ্রহণ করতে দিতেন না। ইসলামবিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে পারলে নাস্তিকরা সহজেই ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করতে পারতো।
ইহুদীদের সাথে স্বাভাবিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও মার্জিত ভাষায় কথা বলতেন নবী মোহাম্মদ (সা) এবং উনার সাথীরা। যদি উনি ইহুদী বিদ্বেষ হতেন তাহলে ইহুদীকে বন্দী করে নির্যাতন করতো আর পাওনা দেয়া তো দূরে থাক কিন্তু উনি কি এরকম কিছু করেছিলেন? সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ ৩৬৩৯,সহিহ হাদিসঃ জাবির ইৱ্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমার পিতা এক ইয়াহুদি হতে খেজুর ধার নিয়েছিলেন। তার দেনা আদায় না হতেই তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন এবং দু’টি বাগান রেখে যান। ইয়াহুদির (পাওনা) খেজুর দুই বাগানের সব ফলকে পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিকে বললেনঃ তুমি কি এরূপ করতে পার যে, তোমার খেজুরের অর্ধেক এ বছর এবং বাকি অর্ধেক আগামী বছর নিবে? ইয়াহুদি এতে অস্বীকৃত জানালো। তিনি জাবির (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি খেজুর কাটার সময় আমাকে সংবাদ দিতে পারবে? আমি খেজুর কাটার সময় তাঁকে খবর দিলাম। তিনি আবু বকর (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে আসলেন এবং খেজুরের নিচের দিক হতে মেপে মেপে ও কেটে দেওয়া শুরু করা হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরকতের জন্য দু’আ করতে থাকলেন। ফলে তার সমস্ত পাওনা (আম্বারের বর্ণনা অনুসারে) আমাদের ছোট বাগানের খেজুর দ্বারাই আদায় হয়ে গেল। (আর বড় বাগান এমনই রয়ে গেল), জাবির (রাঃ) বলেনঃ পরে আমি তাঁদের নিকট তাজা খেজুর এবং পানি পেশ করলাম। (সকলের পানাহার শেষ হলে) পরে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম বললেনঃ এগুলো সেই নিয়ামত, যে সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।-ihadis.com
ইহুদীর লাশ দেখে উনি দাড়িয়ে গিয়েছিলেন এই ভেবে যে এটা একজন মানুষের দেহ। এটাও প্রমাণ করে যে উনি ইহুদীবিদ্বেষী ছিলেন না বরং একজন মানবতাবাদী নেতা ছিলেন। সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ১৩১২,সহিহ হাদিসঃ আবদুর রহমান ইব্নু আবূ লাইলাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সাহ্ল ইব্নু হুনাইফ ও কায়স ইব্নু সা’দ (রাঃ) কাদিসিয়াতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল। (তা দেখে) তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটা তো এ দেশীয় জিম্মী ব্যক্তির (অমুসলিমের) জানাযা। তখন তারা বললেন, (একদা) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, এটা তো এক ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি এরশাদ করলেনঃ সে কি মানুষ নয়?-ihadis.com
ইহুদী প্রতিবেশিকে খাবার পাঠাতে উৎসাহ দিতেন নবী মোহাম্মদ (সা)। যারা বলে অমুসলিমদেরকে খাদ্য দিতে নিষেধ করে ইসলাম তারা কত ভয়ংকর মিথ্যাবাদী কল্পনা করা যায়? জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১১১, সহিহ হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয়।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১২৭, সহিহ হাদিসঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ১২১, সহিহ হাদিসঃ আমর ইবনে মুআয আল-আশহালী (র) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেনঃ হে মুমিন নারীগণ! তোমাদের মধ্যকার কোন নারী যেন তার প্রতিবেশীকে যৎসামান্য দান করাকেও তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা রান্না করা বকরীর বাহুর সামান্য গোশতও হয়।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ১২৭, সহিহ হাদিসঃ জাহিদ (র) থেকে বর্ণিতঃআমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে গোশত দিবে। এক ব্যক্তি বললো, ইহুদী! আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে শুনেছি। এমনকি আমাদের আশংকা হলো বা আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১০৪, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তার জন্য একটি ছাগল যবেহ করা হলে তিনি তার গোলামকে বলতে লাগলেন, তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল (আবু দাউদ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অবিরত নসীহত করতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি তাকে হয়তো ওয়ারিস বানাবেন।-ihadis.com
ইহুদীদেরকে চাষাবাদ করার অনুমতি দিয়েছিলে নবী মোহাম্মদ (সা)। এটা ইহুদীবিদ্বেষের প্রমাণ হলে অর্ধেক তাদেরকে কেন দিতে বললেন? সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ২৪৯৯,সহিহ হাদিসঃ ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের জমি এ শর্তে ইয়াহুদীদের দিয়েছিলেন যে, তারা নিজেদের শ্রমে তাতে চাষাবাদ করবে, তার বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তাদের হবে।-ihadis.com
সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩৯২৯, সহিহ হাদিসঃ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বরের ইয়াহুদীদেরকে সেখানকার খেজুরগাছ গাছ দান করলেন এবং জমিও দান করলেন; যেন তারা নিজ খরচে সেখানে চাষাবাদ করে। যা সেখানে উৎপন্ন হবে, তাতে আমাদেরও অর্ধাংশ থাকবে।-ihadis.com
মুয়ায ইবনে জাবাল (রা) কে ইহুদীদের কাছে পাঠানোর জন্য নবী মোহাম্মদ (সা) যে উপদেশ দিয়েছেন পড়ুন। উনি যদি ইহুদীবিদ্বেষ হতেন তাহলে বলতেন ওদের যাদেরকে যেভাবে পাবে আগে কুপিয়ে হত্যা করবে,ওদের সব টাকা পয়শা হাতিয়ে নেবে অথচ এরকম কিছুই কিন্তু বলেন নাই। এটা কি প্রমাণ করে না যে যারা উগ্রবাদী ইহুদী না তাদের সাথে মানবিক আচরণ করতে শিক্ষা দেয় ইসলাম? এগুলো অস্বীকার করার উপায় আছে কি?
সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ২৫২২, সহিহ হাদিসঃ ইব্ন আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মু’আয ইব্ন জাবাল (রহঃ)- কে ইয়ামানে পাঠালেন এবং বললেন যে, তুমি আহলে কিতাব আসমানী কিতাবধারী ইয়াহুদী ও খৃস্টান সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। “আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবূদ নাই এবং আমি আল্লাহ্ তায়ালার প্রেরিত রাসূল”-এর সাক্ষ্য প্রধানের জন্য তুমি তাদেরকে আহবান জানাবে। যদি তারা তোমার আনুগত্য করে (এ আহবানে সাড়া দেয়) তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তায়ালা তাদের উপর প্রত্যেক দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। এতে যদি তারা তোমার আনুগত্য করে তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তায়ালা তাদের উপর তাদের মালে তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন যা (তাদের) স্বচ্ছল ব্যক্তিদের থেকে নিয়ে অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এতে যদি তারা তোমার আনুগত্য করে তাহলে তুমি তাদের উৎকৃষ্ট মাল নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর অত্যাচারিতের বদ দু’য়াকে ভয় করবে। কেননা, মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তায়ালা এবং তার তাদের (দু’য়ার) মধ্যে কোন পর্দা নেই।-ihadis.com
এক জঙ্গিইহুদী এক নারীর মাথা দু’টি পাথরের মাঝে রেখে তা থেঁতলে ফেলে, ফলে নবী মোহাম্মদ (সা) উক্ত সন্ত্রাসী ইহুদীকে সন্ধান করে ধরে এনে তাকে একইভাবে শাস্তি দেন। খেয়াল করুন নবী মোহাম্মদ (সা) নারী বিদ্বেষী হলে কিন্তু এই বিচার করতেন না তাহলে যারা দাবি করে উনি নারীবিদ্বেষী ছিলেন তারা কত মারাত্মক ইসলামবিদ্বেষী চিন্তা করুন তো? সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ২৭৪৬, সহিহ হাদিসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ইয়াহূদী একটি মেয়ের মাথা দু’টি পাথরের মাঝে রেখে তা থেঁতলে ফেলে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তোমাকে এমন করেছে? কি অমুক, না অমুক ব্যক্তি? অবশেষে যখন সেই ইয়াহুদীর নাম বলা হল তখন মেয়েটি মাথা দিয়ে ইশারা করল, হ্যাঁ। অতঃপর সেই ইয়াহূদীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে সে স্বীকার করল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন। তখন পাথর দিয়ে তার মাথা থেঁতলিয়ে দেয়া হলো।-ihadis.com
সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৪০৪৪, সহিহ হাদিসঃ আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ইয়াহুদী এক আনসারীর কন্যাকে অলঙ্কারের লোভে হত্যা করে তাকে কূপে নিক্ষেপ করে এবং পাথর মেরে তার মাথা চূর্ণ করে দেয়। এরপর সে ধৃত হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মৃত না হওয়া পর্যন্ত পাথর মারার নির্দেশ দেন।-ihadis.com
যেই সন্ত্রাসী ইহুদী নিজের মুক্তচিন্তায় নারীকে অলঙ্কারের লোভে হত্যা করেছিল এটা নাস্তিক্যধর্মে কিভাবে অনৈতিক? নাস্তিকরা হয়তো বলবে সেই নারীর ক্ষতি হয়েছে কিন্তু সংশয় হচ্ছে যে খুন করেছে তার তো ক্ষতি হচ্ছিল না বরং ইহুদীর যুক্তি অনুযায়ী যদি সে সেই নারীর অলঙ্কার হত্যা করে নিতে সফল হতো তাহলে তার উপকার হতো এখানে সে নারীর ক্ষতি দেখতে যাবে কেন? অথচ নবী মোহাম্মদ (সা) উক্ত নারীকে হত্যা করার অপরাধে সন্ত্রাসীকে কঠিন শাস্তি প্রদান করেন মানবতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ইহুদীরা নারীদের হায়েজ হলে ঘর থেকে বের করে দিতো এবং তাদের সাথে খানাপিনায়ও শরীক করতো না এবং তাদের সাথে একই ঘরে অবস্থান করতে দিতো না। এরকম অমানবিক নৈতিকতার বিরুদ্ধে নবী মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর হুকুমে এর বিরোধিতা করেন। ফলে ইহুদীরা তাকে ধমক দেয় এরপরেও নবীজি (সা) রাগ করেন নাই। অথচ উনি কিন্তু ইহুদীদের খারাপ ব্যাবহারের ফলে নিজেও রাগ দেখাতে পারতেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৬৫, সহিহ হাদিসঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইয়াহুদীদের মধ্যে কোন নারী ঋতুবতী হলে তারা তাদের ঘর থেকে বের করে দিতো এবং তাদের সাথে খানাপিনায়ও শরীক করতো না এবং তাদের সাথে একই ঘরে অবস্থান করতে দিতো না। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলে, মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “লোকজন আপনাকে হায়িয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুন, তা অপবিত্রতা। সুতরাং তোমরা হায়িয চলাকালে সঙ্গম বর্জন করো ..। “অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা তাদেরকে নিয়ে একই ঘরে থাকো এবং সঙ্গম ছাড়া সবই একত্রে করো। এ কথা শুনে ইয়াহুদীরা বললো, এ ব্যক্তি তো আমাদের কাজগুলোকে শুধুমাত্র বর্জনই করে না, বরং স্বেচ্ছায় এর বিরোধিতাও করে। তখন উসাইদ ইবনু হুদাইর ও ‘আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ) রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! (ইয়াহুদীরা) এরূপ বলেছে। সুতরাং আমরা কি হায়িয অবস্থায় সঙ্গম করবো? একথা শুনে রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। আমরা মনে করলাম, তিনি এদের উপর রাগান্বিত হয়েছেন। এমন সময় তারা সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। ঠিক তখন তাদের সামনে দিয়ে কিছু দুধ উপঢৌকন হিসাবে রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাছে আসলে তিনি তাদের খোঁজে লোক পাঠালেন। তখন আমরা বুঝতে পারলাম, তিনি তাদের উপর রাগান্বিত হননি।-ihadis.com
ধরুন একজন নাস্তিক পিতা যদি তার নিজের কন্যার হায়েজের রক্ত দেখে ঘৃণা করে মেয়েকে দরজায় তালা লাগিয়ে বন্দী করে রাখে তাহলে এটা কি নাস্তিক্যবাদে খারাপ বলে গণ্য করা যাবে? না। উক্ত পিতা যদি এই যুক্তি পেশ করে যে আমার সন্তানকে আমি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যাবহার করবো এটা আমার স্বাধীনতা এখানে আপনি আমাকে খারাপ প্রমাণ করার কে? এই ক্ষেত্রে নাস্তিক্যধর্ম কি বলবে? ইহুদীরা যেভাবে হায়েজ হলে তাদের নারীদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়, খাবার প্রদান করে না এটা নাস্তিক্যদৃষ্টিতে কেন অনৈতিক হবে?
প্রশ্ন-উত্তর পর্ব > ইসলামের (কথিত) ভুল ধরার জন্য ইসলামের মুল দৃষ্টিভঙ্গিকে সরিয়ে ফেলে নিজেদের মতো বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যাচারপূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা করে সরলমনা মানুষদেরকে নিজেদের নাস্তিকতায় সাইলেন্ট মুডে আমন্ত্রণের অপচেষ্টা করে নাস্তিক্যসম্প্রদায়। নাস্তিকতার জালে বন্দী করার জন্য ইসলাম নিয়ে কিছু অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগ গুলো আবার করাও হয় ইসলামের তথ্যকে গোপন করে অথবা লাল দাগের সাথে অর্ধেক দেখিয়ে বাকি অংশকে লুকিয়ে বা সরিয়ে ফেলে। চলুন বিবর্তনবাদী গোষ্ঠীর গোঁজামিলযুক্ত অভিযোগের যৌক্তিক উত্তর দিয়ে মানুষকে সচেতন করি।
অভিযোগ ১ = কুরআন বলছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইহুদীরা কারো প্রতি সন্তুষ্ট হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাদের ধর্ম অনুসরণ করে। এটা ইহুদীবিদ্বেষের প্রমাণ।কুরআন এই ধরণের কথা কেন বলবে?
সুরা বাকারা ২:১২০ = ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।
কোরআনের এ আয়াতটি যে ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় আছে? একই কথা যদি আমি মুসলিমদের সম্পর্কে বলি, তাহলে কি তারা আমরা কথায় মুসলিমবিদ্বেষ খুঁজে পাবে না? তারা কি আমাকে মুসলিমবিদ্বেষী বলবে না? আমি যদি বলি, মুসলিমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কারো প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাদের ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে আমার কথাটি মুসলিম পরিচয়ের সকল মানুষের প্রতিই বিদ্বেষ প্রকাশ করবে।
জবাবঃ প্রথম কথা হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এটি অভিযোগ হিসেবেই ধর্তব্য না। কারণ একজন নাস্তিক যদি মুসলিমবিদ্বেষ মনে লালন করে তবে এটা নাস্তিকতা সমর্থন করে। কারণ কাউকে নিয়ে বিদ্বেষ রাখা নাস্তিক্যধর্মে ব্যক্তিস্বাধীনতার অংশ। তাই নির্দিষ্টভাবে বিদ্বেষ রাখা নাস্তিকতায় খারাপ না। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই উক্ত আয়াতে ইহুদীদেরকে নিন্দা করে বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়েছে তাহলেও এটা নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে অনৈতিক বলে প্রমানিত হবেই না কারণ “ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই সন্তুষ্ট হবে না,যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন-এই কথা বিদ্বেষ তাই অনৈতিক” এটা যে অনৈতিক সেটার চুরান্ত প্রমাণ নাস্তিক্যধর্মে নেই। আরো সহজ করে বললে “ইহুদীবিদ্বেষ অনৈতিক” এরকম নির্দিষ্ট করে নৈতিকতা নাস্তিকতায় যেহেতু নেই সেহেতু এটাকে নাস্তিক্যদৃষ্টিতে খারাপ প্রমাণ করা যাচ্ছে না। নাস্তিক্যধর্মে একজন মানুষ অন্য মানুষকে নিয়ে বিদ্বেষপোষণ করার স্বাধীনতা রাখবে না কেন?
ইসলামের দৃষ্টিতে আসলেই উক্ত আয়াত যেই উদ্দেশ্যে বলা সেটা পড়লে আপনি নিজেও চমকে যাবেন। তাফসীরে জালালাইন,১ খণ্ড, ৩০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে, আপনি তাদের যতই মন যুগিয়ে চলুন না কেন এবং তাদের সাথে সমবেদনা ও সহমর্মিতা আচরণই করুন না কেন তারা কিছুতেই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। কেননা তাদের অসন্তুষ্টির কারণ হলো বিদ্বেষ এবং হিংসা। এর কোনো চিকিৎসা নেই। আপনি তাদের মনতুষ্টির জন্য বায়তুল মুকাদ্দাসের অভিমুখী হয়ে নামাজ পড়েছেন। এতে তাদের হিংসা ও বিদ্বেষের সীমা বৃদ্ধি হওয়া ছাড়া আর কোনো ফল হয়নি। তাদের অসন্তুষ্টির কারণ তো এটা নয় যে তারা প্রকৃত সত্যের সন্ধান করছে আর আপনি তাদের সামনে সত্য প্রকাশ করতে কৃপণতা করছেন; বরং তাদের মনোবাসনা হলো আপনিও তাদের রঙে রঞ্জিত হয়ে যান। আপনিও তাদের চরিত্রে চরিত্রবান হয়ে যান। তবেই তারা আপনাকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। সুতরাং যারা প্রকাশ্য মুশরিক এবং ইসলামি আকিদা-বিশ্বাস যাদের সঙ্গে কোনো স্তরেই সমদর্শিতা-সংযোগ নেই, তাদের তুষ্টি কামনা ও তাদের সঙ্গে আপস-মিল রক্ষা করে চলার চেষ্টা সম্পর্কে কি বিধান হতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কি অবাক হলেন তো? যেখানে কুরআনের উক্ত আয়াতটি ইহুদী-খ্রিস্টানদের বিদ্বেষ-হিংসা গুলো প্রকাশ করেছে সেখানে কুচালাকি করে বাদরমস্তিকের নাস্তিক সম্প্রদায় ইহুদীবিদ্বেষের সাথে গুলিয়ে ইসলামের বদনাম করতে চাচ্ছে। এরকম ডাহা মিথ্যাচার ইসলামবিদ্বেষ লালন না করে কি করা সম্ভব? এটাকে কিভাবে অস্বীকার করবে নাস্তিক সম্প্রদায়?
অভিযোগ ২ = সুরা নিসা ৪:১৫৭ = আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।
কোরআনে দাবি করা হয়েছে যে, ঈসাকে আল্লাহর নবী জেনেই ইহুদীরা তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। আল্লাহর নবী জেনেও ইহুদীরা ঈসাকে হত্যা করার কথা ভাববে কেনো? তারা কি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো, সেরকম কথা কোথাও লেখা আছে? মানসিকভাবে সুস্থ একজন ব্যক্তি কিভাবে একজন আল্লাহর নবী ও রাসূলকে হত্যা করার কথা ভাবতে পারে? কেউ জেনে-বুঝে কেনো অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়তে চাইবে? তাহলে কোরআন কেনো দাবি করেছে যে, ঈসাকে আল্লাহর নবী জেনেও ইহুদীরা তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন? কারণ, কোরআনের লেখক ইহুদী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে চেয়েছিলেন এই কারণে।
জবাবঃ ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তর দেবার আগে প্রথমে নাস্তিক্যদৃষ্টিতে কিছু বিষয় প্রথমে সংশয়মুক্ত হওয়া যাক। কাকে হত্যা করা যাবে এবং কাকে হত্যা করা যাবে না এই বিষয় নাস্তিক্যধর্মের নির্দিষ্ট নৈতিকতা কেমন? এসব নৈতিকতার চুরান্ত যৌক্তিক প্রমাণ কেমন হবে? বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে প্রাণীজগতের নৈতিকতা আলাদা-আলাদা তাহলে হত্যা করা এক নাস্তিকের কাছে খারাপ হলেও অন্য নাস্তিকের কাছে ভালো হতেই পারে? নাস্তিকতায় হত্যার নৈতিকতা বিষয়ক বিধান কেমন হবে ও কিসের ভিত্তিতে হবে? কোন হত্যা ভালো বা কোন হত্যা খারাপ এই সংজ্ঞা কোন নাস্তিক নির্ধারণ করতে পারবে এবং কেন?
আমরা জানি নাস্তিক্যধর্মের কোনো বিধানমালা বা নাস্তিক্যবিধিগ্রন্থ নেই। তাহলে ইহুদীরা ইসা (সা)কে হত্যা করার কথা ভাবুন অথবা হত্যা করুক এগুলো যে অনৈতিক এটা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করবে নাস্তিকরা? যদি বলে বিবেকের মাধ্যমে তাহলে আবার ঘুরেফিরে একই সংশয়যুক্ত প্রশ্ন আসবে যে সবার বিবেকের নৈতিকতা কি একই? যে ধর্ষণ করে তার বিবেকে এটা ভালো দেখেই সে করে তাহলে নাস্তিক্যবিবেকের যুক্তিতে ধর্ষণ করা ভালো হয়ে যাচ্ছে? ডাকাতরা তাদের বিবেকে ডাকাতি করাকে ভালো মনে করে দেখেই কিন্তু ডাকাতি করে নাহলে কি ডাকাতি করতে পারতো? তাই নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এটা অভিযোগ হিসেবেই ধর্তব্য হচ্ছে না।
আল্লাহর নবী জেনেও ইহুদীরা ইসা (সা)কে হত্যা করার কথা ভেবেছিল ইসলামের দৃষ্টিতে এর কারণ হলো,তাফসীরে মাযহারী, ৩ খণ্ড, ৩৪২ ও ৩৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে, ইহুদীরা হযরত ইসাকে আল্লাহর রসুল বিশ্বাস করতো না। অথচ আয়াতে তাদের উক্তি হিসেবে উদ্ধৃত হয়েছে “আমরা আল্লাহর রসুল মরিয়ম তনয় ইসা মসীহকে হত্যা করেছি”। এতে করে বুঝা যায়, তারা তাঁকে রসুল বলতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে।- নাস্তিকরা যেমন হযরত মোহাম্মদ (সা) একজন নবী ছিলেন এটা জেনেও মিথ্যাচার করেই যাচ্ছে, উগ্রবাদী ইহুদীরাও একইভাবে ইসা (আ)কে হত্যা করার কথা ভেবেছিল।
ইসলামের দৃষ্টিতে, ইহুদীরা ইসা (আ)কে যে হত্যা করতে চেয়েছিল সেটার আরো কারণ হচ্ছে, তাফসীরে মাযহারী, ৩ খণ্ড, ৩৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে, একদল ইহুদী হযরত ইসা এবং তাঁর পুত-পবিত্রা জননীকে গালি দিলো। তিনি তখন তাদের জন্য বদদোয়া করলেন। তাঁর বদদোয়ার কারণে আল্লাহপাক গালিদাতাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দিলেন। এই ঘটনা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো ইহুদী সম্প্রদায়। তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শক্রমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, হযরত ইসাকে হত্যা করতে হবে। আল্লাহপাক তখন হযরত ইসাকে জানালেন তমাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হবে। - এরথেকে এটা স্পষ্ট যে হযরত ইসা (আ) এর বদদোয়ার ফলে তাকে উগ্রবাদী ইহুদীরা বিদ্বেষবশত হত্যা করতে চেয়েছিল। প্রাচীনকালে কমিউনিস্ট নাস্তিকরা বিদ্বেষবশত যেভাবে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছিল সেভাবেই আরকি।
কুরআনের লেখক মানে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুপাতে হযরত মোহাম্মদ (সা) ইহুদী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে চেয়েছিলেন তাই এমনটি লিখেছেন- যদি তাই হয় তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে ইহুদীবিদ্বেষ করে উনার লাভ কি হয়েছে? নাকি ক্ষতিই হয়েছে? বরং উনি যদি মিথ্যাবাদী নবীই হতেন তাহলে তো ইহুদীদের সাথে মিলে নিজের স্বার্থ সহজেই হাসিল করতে পারতেন অথচ এরকম করেন নাই কেন? উনি কেন এরকম কিছু লিখলেন না কুরআনে যে, ইহুদীরা ইমান না আনলেও বিনা হিসেবে জান্নাতে চলে যাবে? উনি এগুলো লিখলেই ইহুদীদের থেকে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতেন কিন্তু করেন নাই যে? নাস্তিক্যদৃষ্টিতে এসব সংশয়পূর্ণ কথার উত্তরমালা কি? নবী মোহাম্মদ (সা) যে ইহুদীবিদ্বেষী ছিলেন না সেটার প্রমাণ কিন্তু উপরে আগেই বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তাই নাস্তিকদের মিথ্যা ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।
অভিযোগ ৩ = কোরআনে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ইহুদীদের জন্য তাদের অপরাধের শাস্তি হিসেবে অনেক উত্তম খাবার হারাম করেছিলেন যা একসময় হালাল ছিলো।
সুরা নিসা ৪:১৬০ = বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন।
অপরাধ করলে নিশ্চয় কিছু ইহুদী অপরাধ করেছিলো! শাস্তি পেলেও নিশ্চয় সেই ইহুদীদেরই শাস্তি প্রাপ্য ছিলো যারা অপরাধ করেছিলো! একজন সুবিচারক ঈশ্বর কিভাবে একটি জাতির কিছু মানুষের অপরাধের জন্য পুরো জাতিকেই শাস্তি দিতে পারেন? স্পষ্টতই, এ আয়াতে পুরো ইহুদী সম্প্রদায়কে অপরাধপ্রবণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে?
জবাবঃ আয়াতে কিছু ইহুদী অপরাধ করেছিল এই কথা বলা নেই অর্থাৎ নাস্তিকরা নিজের অন্ধবিশ্বাস কুরআনের সাথে মিশিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই, এখানে কিছু সংখ্যক ইহুদী অপরাধ করেছিল আর বাকি ইহুদীধর্মের লোকেরা নাস্তিকদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল এরপরেও মহাবিশ্বের স্রস্টা আল্লাহকে সুবিচারক না এটা প্রমাণ করা যাবে না কারণ মহাবিশ্বের স্রস্টা আল্লাহ নিজেই উক্ত আয়াতে এটা বলে দিয়েছেন যে ইহুদীরা অপরাধ করেছিল ও ইহুদীরা আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দিয়েছে বিধায় উনি ইহুদীদের জন্য উক্ত শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহকে অবিচারক প্রমাণ করার যৌক্তিকতাই থাকছে না নাস্তিক্যধর্মে।
নাস্তিকরা যেখানে স্রস্টার অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না সেখানে মহাবিশ্বের স্রস্টা কি করলে সুবিচারক হবে আর কি করলে অবিচারক হবে-এসব নির্ধারণ করে দিচ্ছে কোন বিবর্তিত মস্তিষ্কের যুক্তির ভিত্তিতে? সেই যুক্তি দিয়ে কি নাস্তিকরা নিজেরাই স্রস্টার অস্তিত্বকে প্রমাণ করে ফেলেছে নাকি? নাস্তিকরা নিজেরাই যদি আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রমাণ করে ফেলে এটা নির্ধারণ করতে পারে যে আল্লাহ যেহেতু আছে তাই আল্লাহ যদি ইহুদীদেরকে ইমান না আনার কারণে জান্নাতে দেয় তাহলে সুবিচার হবে তাহলে নাস্তিকরা নাস্তিক থাকে কোন যুক্তিতে? নাস্তিকতা নিয়ে সংশয় জন্মেনি এই প্রশ্নে?
স্রস্টা উক্ত আয়াতে অবিচার করেছেন- এই কথা যদি কোনো নাস্তিক বিশ্বাস করে অথবা স্বীকার করে তাহলে সে নাস্তিকই থাকতে পারবে না কারণ নাস্তিকতার অর্থ স্রস্টার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা। আর যদি কেউ এই কথা অবিশ্বাস করে তাহলে তো আর অভিযোগই বা থাকছে কিভাবে? তাহলে ফলাফল দাঁড়াচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে ও নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে “স্রস্টা অবিচার করেছেন” এই কথাই বিশ্বাস করা যাবে না। তাছাড়া কুরআনে সুরা নিসার ৪ঃ ১৬০ ও ১৬১ আয়াত পড়লে স্পষ্ট হবে যে ইহুদীরা জুলুম করতো,মানুষকে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে বাধা প্রদান করতো, সুদ গ্রহণ করতো, মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষন করতো - তাই আল্লাহ এদেরকে শাস্তি স্বরূপ যা বর্ণনা করেছেন তা সম্পূর্ণ সঠিক।
অভিযোগ ৪ = কোরআনে দাবি করা হয়েছে যে, ইহুদীরা মিথ্যা শুনতে ভালোবাসে।
সুরা মায়েদা ৫:৪১ = আর যারা ইহুদী তারা মিথ্যা অধিক শ্রবণকারী।
আয়াতটি কি ইহুদীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করছে না? আমি যদি বলি, ‘মুসলিমরা মিথ্যা শুনতে ভালোবাসে’,তাহলে কি মুসলিমরা আমাকে মুসলিমবিদ্বেষী বলবে না? অবশ্যই বলবে।
জবাবঃ ইহুদীধর্মের কোন লোক যদি এই প্রশ্ন করতো আমি সাধুবাদ জানাতাম কিন্তু একজন নাস্তিক যেহেতু এই প্রশ্ন করেছে তাই এখানে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। একজন নাস্তিক যদি এটা বলে যে মুসলিমরা মিথ্যাশুনতে ভালোবাসে তাহলে এটা নিঃসন্দেহে মুসলিমবিদ্বেষীই হবে এবং মুসলিমদের নিয়ে মিথ্যাচার হয়ে যাবে। কেননা একজন নাস্তিক কোনো যুক্তির ভিত্তিতেই এই কথা বলতে পারে না যে মুসলিমরা মিথ্যাশুনতে ভালোবাসে কারণ নাস্তিকতা দিয়ে আগে মিথ্যা কাকে বলা হবে? এটা প্রমাণ করতে হবে। যদি নাস্তিকরা বলে “মিথ্যা বলা খারাপ” এটার প্রমাণ হচ্ছে বিবেক। তাহলে সংশয়যুক্ত প্রশ্ন এখানে আবার আসবে যে প্রাণীজগতে সবার বিবেক একই? যদি উত্তর না হয়ে থাকে তাহলে নাস্তিকদের দেয়া নৈতিকতার প্রমাণের চূড়ান্ত ভিত্তি কি যে প্রাণীজগতে সবাই সেটা বিনা প্রমাণে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে? মিথ্যা বলা যে অনৈতিক এটা নাস্তিকতায় নির্দিষ্ট করে বলা নেই। নাস্তিক্যধর্মে মিথ্যাকথা বলা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার। কিন্তু একজন ইহুদী যদি বলে “মুসলিমরা মিথ্যাশুনতে ভালোবাসে” তাহলে এই কথা সে বলতেই পারে কারণ ইহুদীধর্মে মুসলিমদের নিয়ে এরকম কথা থাকতেই পারে বরং থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা মুসলিমরা তাদের দাবিকে ইসলামের মাপকাঠি দিয়ে যাচাই করে দেখবো ইহুদীদের কথা সঠিক কিনা।
সঠিক তথ্যকে সঠিকভাবে পেশ না করে যদি উলটো করে পেশ করা হয় তবে একেই মিথ্যা বলা হবে- খেয়াল করুন এটা মানুষের দেয়া একটি সংজ্ঞা আর বিবর্তিত হয়ে প্রাপ্ত মস্তিষ্কের ভিত্তিতে যে এই সংজ্ঞা চূড়ান্ত সত্য, এটার প্রমাণ কিভাবে সংশয়মুক্তভাবে চূড়ান্ত করা যাচ্ছে? যদি কোন নাস্তিক নিজের উপকারের জন্য,নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য সঠিক তথ্যকে উলটো করে দেখানোই সঠিক এবং এটাই মানবিক বলে বিশ্বাস করে তাহলে এই কথাকে কোন যুক্তি দিয়ে ভুল প্রমাণ করা যাচ্ছে? যারা দুর্নীতিবাজ তারা কিন্তু উপকারী মনে করেই দুর্নীতি করে যেহেতু যুক্তি হচ্ছে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করা যায় তাহলে দুর্নীতি যে খারাপ এটার ব্যক্তিগত যৌক্তিক ভিত্তি গুলো কি কি? নাস্তিক্যদৃষ্টিতে দুর্নীতিবাজদের স্বাধীনতা হরণ করা হবে? তাদের ব্যক্তিগত নৈতিকতা থাকার অধিকার থাকবে না? তারা স্বাধীনভাবে মুক্তচিন্তা করতে পারবে না? নাস্তিক্যবিবেক যদি সত্য-মিথ্যার চূড়ান্ত মাপকাঠি হয়ে থাকে তবে সবাইকে কি নিজের মুক্তবিবেকবুদ্ধি দিয়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই করার অধিকার থাকবে না? একজন নাস্তিক হিসেবে নাস্তিক্যধর্ম নিয়ে এই সংশয়যুক্ত প্রশ্ন গুলোকে অস্বীকার করার কি কি ভিত্তি আছে আপনার বিবেকের কাছে?
ইসলামের দৃষ্টিতে যেই প্রেক্ষাপটে ইহুদীদেরকে অধিক মিথ্যা শ্রবণকারী বলা হয়েছে সেই মুল ঘটনা ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকগোষ্ঠী ধামাচাপা দিয়েছে নাহলে তো যেভাবে মিথ্যাচার করার দরকার সেভাবে করা যাবে না। তো চলুন মূল ঘটনা পড়ি। তাফসীরে আহসানুল বয়ান, সুরা মায়েদা ৫:৪১ আয়াতের ব্যাখ্যায় ১৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে,সুরা মায়েদার ৪১ থেকে ৪৪ নং আয়াতগুলির অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে দুটো ঘটনা উল্লেখ করা হয়।
(ক) বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনী ইহুদীর ঘটনা। এমনিতে তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের মধ্যে বহু পরিবর্তন সাধন করেছিল, তার উপর তার অনেক বিধান অনুযায়ী আমল করতো না। তার মধ্যে (একটি বিধান) রজম বা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার দণ্ডবিধান যা তাদের গ্রন্থে বিবাহিত ব্যভিচারী নারী-পুরুসের জন্য বিদ্যমান ছিল এবং যা আজও বিদ্যমান আছে। সুতরাং যেহেতু তারা এই শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে চাচ্ছিল সেহেতু তারা আপোষে সিদ্ধান্ত নিয়ে বলল যে, চল আমরা মুহাম্মদের নিকট যাই। তিনি যদি আমাদের মনগড়া শাস্তি দানের মতই চাবুক মেরে লাঞ্চিত করার শাস্তির নির্দেশ দেন তাহলে আমরা তা মান্য করে নিব। অন্যথা তিনি যদি রজম বা পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন তাহলে আমরা তা মান্য করবো না।আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) বলেন ইহুদীগণ রাসুল (সা) এর নিকট উপস্থিত হল। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের তাওরাতে রজমের ব্যাপারে কি নির্দেশ রয়েছে? তারা বলল তাওরাতে ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে তাকে চাবুক মারা ও লাঞ্চিত করার কথা উল্লেখ আছে। এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা) বললেন তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে পাথর ছুড়ে হত্যার নির্দেশ রয়েছে। যাও, তাওরাত নিয়ে এসো দেখি! তারা তাওরাত নিয়ে এসে পড়তে শুরু করলো বটে, কিন্তু রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে নিয়ে পূর্বাপর সমস্ত পড়ে শুনালো। আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা) বললেন, হাত সরিয়ে নাও! হাত সরালে দেখা গেল যে, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তখন তাদেরকেও স্বীকার করতেই হল যে, মোহাম্মদ (সা) সত্যিই বলেছেন, তাওরাতে রজমের আয়াত আছে। অতপর রাসুল (সা) এর নির্দেশক্রমে ব্যভিচারীদ্বয়কে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করে দেওয়া হল। (বুখারী ও মুসলিম এবং অন্যান্য হাদিসগ্রন্থ দ্রষ্টব্য)
(খ) একটি অন্য ঘটনাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, ইহুদীদের একটি গোত্র অন্য গোত্র অপেক্ষা বেশি সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন মনে করতো। আর এই কারণেই নিজেদের লোক খুন হলে অপর গোত্রের নিকট হতে একশ অসাক রক্তপণ দাবি করতো। পক্ষান্তরে অন্য গোত্রের কেউ খুন হলে পঞ্চাশ অসাক রক্তপণ নির্ধারণ করতো। যখন নবী (সা) মদীনায় আগমন করলেন তখন ইহুদীদের দ্বিতীয় দল যাদের রক্তপণ অর্ধেক ছিল তারা উৎসাহ পেল। (অর্থাৎ তারা ভাবল যে, এবার নবী (সা) আমরা ন্যায় বিচার পাবো।) এবং তারা একশ অসাক রক্তপণ দিয়ে অস্বীকার করলো। আর এ নিয়ে তাদের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার উপক্রম ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন বুদ্ধিমান লোক রাসুল (সা) এর নিকট বিচার পার্থী হওয়ার ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে ঐ সময় এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়। আর মধ্যে একটি আয়াতে রক্তপণের বিধান সকলের জন্য সমান বলা হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ ১/২৪৬, আহমাদ শাকের হাদিসটির সুত্রকে সহিহ বলেছেন)। ইবনে কাসীর (রহ) বলেন সম্ভবত উভয় ঘটনাই একই সময়ের এবং উক্ত সকল কারণের জন্যই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়েছে।-তাফসীরে ইবনে কাসীর। (বিস্তারিত সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ৪৪৯৪,সহিহ হাদিস-ihadis.com থেকেও পড়তে পারেন)
প্রাক্ষাপট জানার পড়ে স্পষ্ট হয়েছে যে আয়াতে সেসব ইহুদীদের কথা বলা হয়েছে যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করতো এবং সত্যকে মিথ্যায় বদল করে দিত। তাই এদেরকে অথিক মিথ্যা শ্রবণকারী বলাটা ন্যায়বিচারের প্রকাশ পেয়েছে এবং অন্যায়ের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে। পাঠক, নিজেরাই দেখেলন তো মুক্তমনারা কিভাবে তথ্যকে লুকিয়ে ইসলামের ভুল ধরে? হাস্যকর না?
অভিযোগ ৫ = কোরআনে মুসলিমদের জন্য ইহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুরা মায়েদা ৫:৫১ = হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
আয়াতটি যে ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করছে সেটা কি অস্বীকার করা যায়? একজন হিন্দু ধর্মীয় নেতা যদি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বলেন ‘তোমরা মুসলিমদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না’, তাহলে কি তার কথায় মুসলিমবিদ্বেষ প্রকাশ পাবে না?
জবাবঃ নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এটাও অভিযোগের মধ্যে ধর্তব্য না। কারণ কাকে বন্ধু বানানো যাবে আর কাকে যাবে না এই বিষয় নাস্তিকতায় নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নাই। একজন নাস্তিক যদি নিজের ইচ্ছায় দুনিয়ার সব মানুষকে ঘৃণা করে একটি শূকরকে বন্ধু রুপে গ্রহণ করে তাহলে এটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা হিসেবে গণ্য করা হবে আর এটা অন্য নাস্তিকদের কাছে ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবে ধর্তব্য হবে। তাই বলা যায় যে ইহুদী-খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না- এই বিধানকে খারাপ প্রমাণ করার কোন যুক্তি নাস্তিকতায় নেই। যদি ইহুদী-খ্রিস্টানদেরকে কোন মুক্তচিন্তক বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে আপনি কোন যুক্তি দিয়ে তার ব্যক্তিগত নৈতিকতাকে অনৈতিক প্রমাণ করবেন?
নাস্তিকরা এই আয়াতের প্রেক্ষাপট ধামাচাপা দিয়ে শুধু আয়াত দেখিয়ে ভুল দৃষ্টিভঙ্গিতে ইসলাম নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেবার চেষ্টা করেছে-আমরা জানি এরকম জালিয়াতি করা পুরাতন অভ্যাস তাদের। পাঠক, আসুন এখন ইসলামের দৃষ্টিতে আয়াতের মূল প্রেক্ষাপট জেনে নেই। তাফসীরে জালালাইন,১৪৯ ও ১৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,তাফসীরবিদ ইবনে জারীর (রহ) হযরত ইকরিমা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, এ আয়াতটি একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে। ঘটনাটি এই যে, রাসুলুল্লাহ (সা) মদিনায় আগমনের পর পার্শ্ববর্তী ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাথে এ মর্মে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যে, তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিজেরা যুদ্ধ করবে না বরং মুসলমানদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করবে। এমনিভাবে মুসলমানরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না এবং কোনো বহিরাক্রমণকারীর সাহায্য করবে না বরং আক্রমণকারীকে প্রতিহত করবে। কিছুদিন পর্যন্ত এ চুক্তি উভয় পক্ষেই বলবৎ থাকে কিন্তু ইহুদীরা স্বভাবগত কুটিলতা ও ইসলাম বিদ্বেষের কারণে বেশি দিন এ চুক্তি মেনে চলতে পারলো না এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে মক্কার মুশরিকদের সাথে ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে স্বীয় দুর্গে আহবান জানিয়ে পত্র লিখল। রাসুল (সা) এ ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে একটি মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করলেন। বনী কুরাইজার এসব ইহুদী একদিকে মুশরিকদের সাথে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং অপরদিকে মুসলমানদের দলে অনুপ্রবেশ করে অনেক মুসলমানের সাথে বন্ধুত্বের চুক্তি সম্পাদনা করে রেখেছিল। এভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের জন্য গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত ছিল। এ কারণে আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং মুসলমানদেরকে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপন করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়,যাতে শত্রুরা মুসলমানদের বিশেষ সংবাদ গ্রহণ করতে না পারে।
মূল তথ্যকে লুকিয়ে রেখে অর্ধেক তথ্যকে দেখিয়ে কিভাবে ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করে মুসলিমবিদ্বেষী প্রাণীরা দেখলেন তো? এরপরেও আপনি বিশ্বাস করবেন নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে সঠিক ব্যাখ্যা করে?
সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮,৯ = ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।
আয়াতটি পড়ে চমকে গেলেন তো? নাস্তিকরা কি এসব আয়াত পড়ে না? পড়ে। কিন্তু মানুষ যেন ইসলামের সঠিক তথ্য জানতে না পারে এই কারণে এসব আয়াতকে সরিয়ে রেখে মানুষের সাথে প্রতারণা করে যেন মানুষ নাস্তিকদের গ্যাংএ যোগদান করে। সত্য জানতে পারলে তো দলে দলে নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগের বন্যা হইবে। বোঝেন নাই ব্যাপারটা?
অমুসলিমদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখার অনুমতি ইসলামে আছে কিন্তু শর্ত হচ্ছে নিজের ক্ষতি করা যাবে না। আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ২৫, সহিহ হাদিসঃ আসমা বিনতে আবু বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমার মা নবী (সাঃ)-এর যুগে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট অবস্থায় আমার কাছে আসেন। আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি তার সাথে আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখবো? তিনি বলেনঃ হাঁ। ইবনে উয়ায়না (র) বলেন, এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না”(৬০ : ৮)। -ihadis.com
তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, সুরা মায়েদা ৫:৫১ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লামা শানকীতী (রহ) বলেন, বিভিন্ন আয়াত থেকে এটাই বুঝা যায় যে, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি ঐ সময়ই হবে, যখন ব্যক্তির সেখানে ইচ্ছা বা এখতিয়ার থাকবে। কিন্তু যখন ভয়-ভীতি বা সমস্যা থাকবে, তখন তাদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কস্থাপনের অনুমতি ইসলাম শর্তসাপেক্ষে দিয়েছে। তা হচ্ছে, যতটুকু করলে তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও আন্তরিক বন্ধুত্ব থাকতে পারবে না। (আদওয়াউল বয়ান)
জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ২৩৭৮,হাসান হাদিসঃ সূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।-ihadis.com
উপদেশ,হাদিসঃ ২১৯,সহিহ হাদিসঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ভাল এবং মন্দ লোকের সাথে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত যথাক্রমে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাঁপরে ফুঁক দানকারীর মত। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু আতর দিতে পারে অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছু কিনে নিতে পার, অন্যথা তুমি তার সুঘ্রাণ পাবেই। আর কামারের হাঁপরের ফুলকি তোমার জামা-কাপড় জ্বালিয়ে দিতে পারে। এটা না হলেও তুমি তার ধোঁয়ার গন্ধ পাবেই’।-ihadis.com
একজন হিন্দু ধর্মীয় নেতা যদি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বলেন ‘তোমরা মুসলিমদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না’ তাহলে আমি প্রথমে যাচাই করে দেখবো যে সে কোন উদ্দেশ্যে কথাটি বলেছে।আমি নাস্তিকদের মতো যাচাই ছাড়াই হিন্দুবিদ্বেষ রেখে তার কথা নিয়ে মিথ্যাচার করবো না। যদি উক্ত নেতা এমন মুসলিমদের কথা বোঝায় যারা অপরাধের সাথে যুক্ত তাহলে আমি উক্ত নেতার কথায় আপত্তি করবো না কারণ নামে মাত্র মুসলিম এমন রয়েছে যারা ইসলামকে সঠিকভাবে অনুসরণ করে চলে না বরং ইসলামের খেলাফ অনেক কাজ করে যা অবশ্যই খারাপ। আর যদি উক্ত নেতা বিনা কারণে মুসলিমদের নিয়ে এরকম কথা বলে তাহলে অবশ্যই আমি আপত্তি জানাবো। তাই নাস্তিকরা আয়াতের প্রেক্ষাপট সরিয়ে রেখে হিন্দু নেতাদের উদাহরণ দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেবার চেষ্টা করে লাভ নেই। তাই সমস্ত তথ্যকে একত্র করলে ইসলামের দৃষ্টিতে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা হচ্ছে নিজেদের ক্ষতি করে ইহুদী-খ্রিস্টান কেন এমনকি কোনো অসৎ মুসলিমকেও বন্ধু বানানো যাবে না। আপনি কি মিথ্যুক- ধোঁকাবাজ নাস্তিকদের নিজের বেস্ট-ফ্রেন্ড হিসেবে নির্ধারণ করবেন?
অভিযোগ ৬ = কোরআন এ-ও বলা হয়েছে যে, ইহুদীরাই মুসলিমদেরকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে।
সুরা মায়েদা ৫:৮২ = আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরেকদেরকে পাবেন এবং আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন, যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে, খ্রীষ্টানদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহঙ্কার করে না।
স্পষ্টভাবেই, আয়াতটি ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে। যদি একজন ইহুদী ব্যক্তি বলেন যে, ‘মুসলিমরাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু’, তাহলে তার সেই কথায় ইহুদীবিদ্বেষ প্রকাশ পাবে নাকি পাবে না? অবশ্যই পাবে। আয়াতটি ইহুদী সম্প্রদায়কে মুসলিম সম্প্রদায়ের শক্র হিসেবে উপস্থাপন করেছে। আয়াতটি পড়ে একজন মুসলিম কেবল ঘৃণার শিক্ষাই পাবে।
জবাবঃ আবারো তথ্যকে গোপন করে অভিযোগ তুলেছে। নাস্তিকরা কি কখনো মানুষ হবে না? তাফসীরে ইবনে কাসীর,৪ খণ্ড, ৮৯১ ও ৮৯২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, ইহুদীদের মুসলমানদের সাথে যে ভীষণ শত্রুতা রয়েছে তার কারণ এই যে, তাদের মধ্যে দুষ্টামি, বিরোধিতা ও অস্বীকার করার মাদদাহ বা মূল খুব বেশি আছে। তারা জেনে শুনে কুফুরি করে থাকে এবং জেদের বশবর্তী হয়ে অন্যায় আচরণ করে থাকে। তারা হকের মোকাবিলায় বিগড়ে যায়। হক পন্থীদের উপর তারা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায়। তাদের প্রতি হিংসা পোষণ করে। আলেমদের সংখ্যা তাদের মধ্যে খুবই কম। আলেমদের কোন প্রভাব তাদের উপর পড়ে না। এ কারণে তারা বহু নবীকে হত্যা করেছিল। স্বয়ং শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা)কেও তারা হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। একবার নয়,বার বার। তারা তাঁর খাদ্যে বিষ মিশ্রিত করে, তাঁর উপর যাদু করে এবং তাদের ন্যায় দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর উপর আক্রমণ চালায়।
তাফসীরে ওসমানী,২ খণ্ড, ৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, ইহুদীরা নবী (সা)কে অসতর্ক মুহূর্তে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাঁর খাদ্যে বিষ প্রয়োগের চেষ্টা চালায়। যাদু-টোনা করার চেষ্টা করে। মোট কথা এরা গযবের পর গযব এবং লানতের পর লানত হাসিল করে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩০০৫, সহিহ হাদিসঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীর ইয়াহুদী গোত্রদ্বয় রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনূ নাযীরকে উচ্ছেদ করলেন এবং বনূ কুরাইযার প্রতি অনুগ্রহ করে তাদেরকে উচ্ছেদ করেননি। অতঃপর বনূ কুরাইযা সংঘর্ষে অবতীর্ণ হলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের স্ত্রীলোক, সন্তানাদি ও সম্পদ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করলেন। কিন্তু তাদের কিছু লোক রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে মিলিত হলে তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দিলেন এবং তারা ইসলাম কবুল করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় বসবাসকারী সমস্ত ইয়াহুদী গোত্রকে উচ্ছেদ করলেন। যেমন মদিনায় বসবাসকারী অন্যান্য ইয়াহুদীদেরকে তিনি মাদীনাহ্ থেকে বিতাড়িত করেন।-ihadis.com
পাঠক যারা আপনাকে হত্যা করতে চাইবে, আপনাকে ঘৃণা করবে, আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে তারা আপনার কি হবে? শত্রু নাকি মানবতাবাদী বন্ধু? এই সাধারণ বিষয় গুলো নাস্তিকরা বুঝতে পারে না। এটাকে তাদের বিবর্তিত মস্তিষ্কের অপূর্ণতা বলবো নাকি ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার সেটা পাঠকদের বিবেচনায় রেখে দিয়েছি।
যদি কোন ইহুদী বলে মুসলিমরাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু তাহলে এখানেও আমার আপত্তি নেই কারণ সে এরকম মনে করতেই পারে কিন্তু একজন নাস্তিক এই কথা বলতে পারে না তার শত্রু মুসলিমরা কারণ নাস্তিকতায় শত্রুতা করা বৈধ অথবা ব্যক্তি স্বাধীনতার অংশ। আমি বার বার প্রমাণ করছি যে নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করছে। এটার কারণ কি ? ইসলাম নিয়ে বিদ্বেষ আর মুসলিমদেরকে ঘৃণা। এরকম করা নাস্তিক্যধর্মে অমানবিক না কারণ বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে নিজের বিবর্তিত মস্তিষ্কের চেতনায় সেচ্ছায় কেউ চাইলে তথ্য জালিয়াতি, মানুষের সাথে প্রতারণা ইত্যাদি সব করার স্বাধীনতা আছে। সেখানে ইসলাম নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়া তো সাধারণ ব্যাপার মাত্র মুক্তমনাদের কাছে।
অভিযোগ ৭ = কোরআনে মুসলিমদেরকে আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না তারা নত হয়ে জিজিয়াকর প্রদান করে।
সুরা তাওবা ৯:২৯ = তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
ইসলামে আহলে কিতাব বলে আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের অনুসারীদের নির্দেশ করা হয়। ইসলাম অনুযায়ী, ইহুদীরাও আহলে কিতাব, যারা আল্লাহ প্রদত্ত আসমানী কিতাব তাওরাতের অনুসারী। আয়াতটি বলছে, একটি রাষ্ট্রে সকল বিশ্বাসের মানুষ সমান মর্যাদা নিয়ে সবাই একসাথে মিলেমিশে বসবাস করবে সেটা হবে না। মুসলিমদেরকে আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণ না করার অপরাধে নত হয়ে জিজিয়া কর প্রদান করবে। অর্থ্যাৎ, নিরাপদে বেঁচে থাকতে চাইলে আহলে কিতাবদের হয় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে যেতে হবে নাহয় ইসলাম গ্রহণ না করার অপরাধে নত হয়ে জিজিয়া কর প্রদান করতে হবে। সন্দেহাতীতভাবেই, আয়াতটি আহলে কিতাবদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে।
জবাবঃ যুদ্ধ কাকে বলা হবে? অন্য গোষ্ঠীর উপর হামলা করাকে কি যুদ্ধ বলা যাবে? যদি উত্তর “হ্যাঁ” হয় তবে যাদের প্রতি হামলা করা হয়েছে তারাও তো পাল্টা হামলা করে তাহলে উভয় দিক থেকে যুদ্ধ করা অনৈতিক কিভাবে হচ্ছে? আপনাকে কেউ হত্যা করলে চাইলে আপনি কি করবেন? যুদ্ধের নৈতিকতা কি দিয়ে সত্য প্রমাণ করা যাবে এবং কেন? সব নাস্তিকের কি যুদ্ধের নৈতিকতা নির্দিষ্ট করে দেবার স্বাধীনতা থাকবে? যুদ্ধ কখন করলে নৈতিক হবে এবং কখন করলে অনৈতিক হবে? নাস্তিক্যধর্মে যদি একগোষ্ঠী অন্যগোষ্ঠীদের উপর মুক্তচিন্তায় হামলা করে তবে কোন যুক্তিতে এটা অনৈতিক হতে যাচ্ছে? যদি কোন নাস্তিক নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে অন্য নাস্তিকগোষ্ঠীর উপর আক্রমণ করে তাহলে বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে কেন এটা অন্যায় হবে? এটা যে অন্যায় সেটার ভিত্তি কি হবে? কোন যুক্তি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে? নাস্তিক্যধর্মের নৈতিকতায় এসব সংশয়যুক্ত প্রশ্নের সমাধান কেমন হবে?
নাস্তিকরা সুরা তওবার ৯:২৯ আয়াত পড়তে পেরেছে কিন্তু সত্যটা জানার জন্য যদি আরেকটু কষ্ট করে সুরা তওবা ৯ঃ৩২ এই আয়াতটি পড়তে পারতো তাহলেই মিথ্যা অভিযোগটি করতে পারতো না। কারণ যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে তারা ছিল সেই সব লোক যারা ইসলামকে দুনিয়া থেকেই পুরো ধ্বংস করতে চাইতো। তাফসীরে ইবনে কাসীর,৮ খণ্ড,৬৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে,আল্লাহ তা’লা বলেন সর্ব শ্রেণীর কাফিরদের মনের ইচ্ছা এটাই যে, তারা আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে নিবে এবং তাঁর হিদায়াত ও সত্য দ্বীনকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলবে। তাহলে তাদের চিন্তা করে দেখা উচিত যে,যদি কেউ তার মুখের ফুঁৎকারের দ্বারা সূর্যের বা চন্দ্রের রশ্মিকে নিভিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করে তবে তা কখনো সম্ভব হবে কি? কখনোই না। অনুরূপভাবে এ লোকগুলোও আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষে অপারগ হয়ে গেছে।
ধরুন একজন নেতা ঘোষণা করলো যে তোমরা পাকিস্তানীদের ঐ লোকদের সাথে যুদ্ধ করো যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করে এবং যারা তোমাদেরকে বাঙ্গালী হিসেবে গ্রহণ করতে চায় না। যদি তারা তোমাদের দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে এবং তোমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাহলে তোমরা যুদ্ধ করো না। যদি তারা এটা না মানে তাহলে তাদেরকে গুলি করতে থাকো।-পাঠক আপনি কিন্তু এই ঘটনার প্রেক্ষাপট জানেন দেখে আপনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এখানে নেতার কথাটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক।
প্রাক্ষাপট সরিয়ে দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য উদাহরণের নেতাকে কিন্তু পাকিস্তানবিদ্বেষী বানানো যায় কিন্তু যদি প্রেক্ষাপট জানা যায় তাহলে এটা স্পষ্ট যে যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে দুনিয়া থেকে মুছে দিতে চেয়েছে তাদের এই দুনিয়াতে থাকার অধিকার নেই। আর উক্ত নেতার কথা আসলে বাংলাদেশপ্রেমীতার প্রমাণ বহন করে ঠিক একইভাবে কুরআনে যেখানে এটা বলা হয়েছে যে সুরা তাওবা ৯:২৯ = তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।-প্রেক্ষাপট কিন্তু সামনের আয়াত পড়লেই জানা যায় যে সুরা তওবা ৯:৩২ = তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন,যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। অথচ প্রাক্ষাপটকে ধামাচাপা দিয়ে এই আয়াতকে সরিয়ে রেখে ইসলামের ভুল ধরতে পেরেছি “হুররে” এরকম অন্ধবিশ্বাসকে গ্রহণ করা কেন যৌক্তিক?
ইসলামের যুদ্ধনীতির মধ্যে অন্যতম নীতি হচ্ছে,সুরা তওবা ৯:৬ = আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।
উপরের লেখা গুলোতে কিন্তু পড়ে এসেছেন যে উগ্রবাদী অমুসলিমরা মুসলিমদেরকে হত্যা করতে চাইতো, সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো। সব উগ্রবাদী কাফেররাই চাইতো সব মুসলিমরা যেন দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাক যেমন বর্তমানে নাস্তিক প্রদান দেশ চীনে উইঘুরের মুসলিমদেরকে হত্যা করছে,মুসলিম নারীদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, শিশু বাচ্চাদের ব্যাপক কষ্ট দেয়া হচ্ছে- এগুলো সবই নাস্তিক্যধর্মে ব্যক্তি স্বাধীনতার অংশ।
অভিযোগ ৮ = মুসলিমরা যাকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব’ বলে দাবি করেন, সেই কথিত ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব’ মারা যাওয়ার আগে ইহুদী নাসারাদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন। মারা যাওয়ার আগে ইহুদী নাসারাদের প্রতি অভিশাপ দিয়ে তিনি ইহুদী নাসারাদের প্রতি তার বিদ্বেষই প্রকাশ করেছেন। সেইসাথে মুসলিমদেরকেও ঘৃণার শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪৩৫,সহিহ হাদিসঃ‘উবাইদুল্লাহ ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন ‘উত্বাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ ‘আয়িশা ও ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহ্র অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছেন। (এ বলে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা হতে তিনি সতর্ক করেছিলেন।
জবাবঃ তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই নবীজি (সা) ঘৃণার জন্য ইহুদীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন এরপরেও নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এটাকে খারাপ প্রমাণের কোনো ভিত্তি নেই। কারণ নাস্তিক্যদৃষ্টিতে অভিশাপ দেয়া ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অংশ। তাই একজন মানুষের যেমন এই অধিকার আছে মুক্তমনে নিজেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বলে দাবি করার ঠিক একইভাবে অন্য মানুষেরও এই অধিকার আছে যে মুক্তমনে সেই মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করার তাই আর যাই হউক নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এগুলোকে খারাপ প্রমাণ করা যাচ্ছে না।
পাঠক খেয়াল করুন, হাদিসের মধ্যেই কিন্তু লেখা আছে যে ইহুদীরা নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে এই কারণেই নবী মোহাম্মদ (সা) অভিশাপ দিয়েছেন অথচ এ কারণটি নাস্তিকতায় আক্রান্ত নাস্তিকরা পড়তে মর্মার্থ বুঝতে অক্ষম হয়েছে। মজার কথা হচ্ছে, অভিশাপ দেয়া খারাপ কারণ অভিশাপ দিলে মানুষের অকল্যাণ হবে- নাস্তিকতায় কি এসব বিশ্বাস করা যাবে? অভিশাপ দেয়া যাবে না এটা ক্ষতিকর এরকম কথা কি নাস্তিকতায় বৈজ্ঞানিক? ধরুন একজন লোক নিজের মুক্তমনে দুনিয়ার সব মানুষকে অভিশাপ দিলে কেন এটা নাস্তিকতায় খারাপ হবে? একজন মানুষের কি অভিশাপ দেবার মুক্তচিন্তা থাকা যাবে না? তার নৈতিকতা তার নির্ধারণ করার মুক্ত অধিকার থাকবে না? কেন? এভাবে বললে কেন ভুল হবে যে অভিশাপ দেয়া নাস্তিকতায় ব্যক্তিস্বাধীনতার অংশ?
একজন ইহুদী নিজের ব্যক্তিস্বাধীনতায় নবী মোহাম্মদ (সা)কে খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল এই মুক্তকর্ম নাস্তিক্যধর্মে কোন যুক্তিতে অনৈতিক? ইহুদীদের কি অন্যের খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দেবার অধিকার নেই? অন্যের ক্ষতি হবে তাই খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়া অনৈতিক এটাই যদি নাস্তিকদের যুক্তি হয় তাহলে এই যুক্তি কি ইহুদীরা মানতে বাধ্য? ইহুদীদের কাছে খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দিয়ে নবী মোহাম্মদ (সা)কে হত্যা করা নৈতিক মনে হয়েছে তাহলে আপনার নাস্তিক্যবিশ্বাস ইহুদীরা মানতে যাবে কোন যুক্তিতে? ইহুদীরা বিষ মিশিয়ে খারাপ কাজ করেছে নাস্তিক্যদৃষ্টিতে নির্দিষ্টভাবে এটা বলার যৌক্তিকতা আছে কি?
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৭৮১, সহিহ হাদিসঃ ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) একই সানাদ বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহুর গোশত অধিক পছন্দ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই বাহুর গোশতেই বিষ মিশানো হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন, ইয়াহুদীরা এতে বিষ মিশিয়ে ছিল।-ihadis.com
সব ইহুদীগোত্রই নবীজি মোহাম্মদ (সা) এবং উনার অনুসারীদেরকে হত্যা করতে চেয়েছিল বিধায় নবীজি (সা) সব সন্ত্রাসী ইহুদীদেরকে মক্কা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। পড়ুন হাদিসটি।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩০০৫, সহিহ হাদিসঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীর ইয়াহুদী গোত্রদ্বয় রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনূ নাযীরকে উচ্ছেদ করলেন এবং বনূ কুরাইযার প্রতি অনুগ্রহ করে তাদেরকে উচ্ছেদ করেননি। অতঃপর বনূ কুরাইযা সংঘর্ষে অবতীর্ণ হলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের স্ত্রীলোক, সন্তানাদি ও সম্পদ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করলেন। কিন্তু তাদের কিছু লোক রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে মিলিত হলে তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দিলেন এবং তারা ইসলাম কবুল করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় বসবাসকারী সমস্ত ইয়াহুদী গোত্রকে উচ্ছেদ করলেন। যেমন মদিনায় বসবাসকারী অন্যান্য ইয়াহুদীদেরকে তিনি মাদীনাহ্ থেকে বিতাড়িত করেন।-ihadis.com
তাই নবী মোহাম্মদ (সা) ইহুদীবিদ্বেষ ছিলেন এরকম ডাহা মিথ্যাচার করা মুক্তচিন্তায় মানবিকতা নাকি? বরং নাস্তিকান্ধদের কথিত অভিযোগে ইসলামবিদ্বেষের দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে,মানুষকে ধোঁকা দেবার দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তথ্য জালিয়াতি করার দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সত্য পড়ে কষ্ট পেলে সেটা আপনার বিষয়।
অভিযোগ ৯ = তিনি মুসলিমদের ইহুদীদেরকে আগে সালাম দিতে নিষেধ করেছেন এবং তাদেরকে রাস্তায় দেখলে রাস্তার কিনারা ঘেঁষে চলতে বাধ্য করতে বলেছেন। এটা কি ইহুদীবিদ্বেষ না?
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৫৫৫৪,সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারাদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না এবং তাদের কাউকে রাস্তায় দেখলে তাকে রাস্তার পাশে চলতে বাধ্য করো। জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ১৬০২,সহিহ হাদিস।-ihadis.com
জবাবঃ আসলে নাস্তিকদের এরকম অভিযোগ গুলো দেখলে আমার মায়া হয় কারণ এদের সুচিকিৎসার জন্য মানসিক ডাক্তার প্রয়োজন। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ এভাবে বারবার মিথ্যাচার করতে পারে না, যা নাস্তিকরা বারবার করেই যাচ্ছে। হয়তো অসুস্থ এই কারণে এরকম করছে অথবা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করার বৈধ যোগ্যতা নেই তাই বিকল্প পন্থা হিসেবে এই পথকেই মুক্তমনে গ্রহণ করে নিয়েছে।
নাস্তিক্যবাদ নিয়ে সংশয়ময় চেতনা রয়েছে। ধরুন একজন লোক যদি নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় ইহুদীদেরকে আগে সালাম না দেয় তাহলে নাস্তিকতায় কিভাবে একে খারাপ বলে প্রমাণ করা যাবে? অথবা ধরুন একজন শক্তিশালী নাস্তিক যুবক একজন নাস্তিক বৃদ্ধকে রাস্তার পাশে পিটিয়েছে আর রাস্তার পাশে ঘেঁষে যেতে বাধ্য করেছে তাহলে এমন কি যুক্তি আছে এটা প্রমাণ করার যে উক্ত নাস্তিক যুবক অন্যায় কাজ করেছে? আপনি একজন নাস্তিক হয়ে থাকলে আর এই যুবককে এটা প্রমাণ করতে যান যে এই কাজ অমানবিক আর আপনার বিপক্ষে যদি নাস্তিক যুবকটি নিজের মুক্তচিন্তায় এই যুক্তি পেশ করে যে আমার দেহে শক্তি বেশি আর উক্ত বৃদ্ধের দেহে শক্তি কম তাই আমি তাকে সম্মান করতে পারি না বরং আমার শক্তি প্রয়োগ করলাম আর সে নিজেও নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি তাই বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে এটাকে অনৈতিক প্রমাণ করা যায় না এমনকি মুক্তচিন্তার যুক্তিতেও একে খারাপ বলা যায় না। এই ক্ষেত্রে আপনি নাস্তিক হিসেবে কি যুক্তি দিয়ে তাকে খারাপ প্রমাণ করতে পারবেন এবং কেন? সেই বা আপনার দেয়া বিধিবিধান কেন মানতে যাবে? নাস্তিক্যদৃষ্টিতে বয়সের চেয়ে বড় হলেই সম্মান করতে হবে কেন?
ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদীদেরকে আগে সালাম না দেয়া এবং রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করা হাদিসের মর্মার্থ হচ্ছে,(রেসপন্স টু এন্টি ইসলাম ওয়েব ওয়েবসাইট থেকে দুটো তথ্য নেয়া) মুসলিম গবেষকরা এই হাদিসের ব্যাখ্যায় যা বলেছেন তা হলো,
মুফহাম লিমা আশকালা মিন কিতাবি তালখিসি মুসলিম-৫ খণ্ড ৪৯০ পৃষ্ঠয় বর্ণিত হয়েছে, ইমাম কুরতুবী(র.) বলেছেন, যখন তাদের সাথে সাক্ষাত হয় এই অবস্থায় যে রাস্তায় ভিড় থাকে তাদেরকে কিনারায় যেতে বাধ্য করো এমন ভাবে যে তারা গর্তে না পতিত হয় এবং দেওয়াল ইত্যাদিতে আঘাত না পায় অর্থাৎ তাদের সম্মানে ও মর্যাদাদানের জন্য রাস্তার মধ্যখান ছেড়ে দিও না। এই কথা বাক্যটি অর্থ ও সহানুভূতি দিক থেকে প্রথম বাক্যের সাথে মিল রাখে। (তাদেরকে আগে সালাম দিও না এই বাক্য) এবং তার অর্থ এই নয় যে, আমরা যখন তাদের প্রশস্ত রাস্তায় সাক্ষাত পাব তাদেরকে কিনারায় নিয়ে যাবো যাতে তাদের উপর আমরা কঠোরতা প্রদর্শন করতে পারি। এটা তো আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিনা কারনে কষ্ট দেওয়া। আর আমাদেরকে তাদের কষ্ট দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইকমালুল মুয়াল্লিম-৭ খণ্ড ৫৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, কাজী ইয়াজ(র.)বলেন, আল্লাহ রাসুল (ﷺ) থেকে (এ রকম কোন বিষয় ) বর্ণিত নেই যে, রাস্তা যখন প্রশস্ত ছিল তিনি তাদেরকে বাধ্য করেছেন যেন তাদের জন্য তা সংকীর্ণ হয় এবং তাদেরকে সে (পথে চলতে) বাধা দিয়েছে যাতে তারা অন্য পথে চলতে বাধ্য হয়।
আরও কিছু হাদিস পড়া যাক যার ফলে উক্ত হাদিসের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে,
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৫৫৫১,৫৫৫২,৫৫৫৩,আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট কয়েকজন ইয়াহূদী আসলো। তারা বলল- (--) হে আবুল কাসিম! তোমার মৃত্যু হোক। তিনি বললেন, (--) তোমাদের উপরেও। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম- (--) বরং তোমাদের মৃত্যু ও অপমান হোক। সে সময় রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়িশাহ্! তুমি অশ্লীলভাষী হয়ো না। তিনি বললেন, তারা কি বলেছে, তা কি আপনি শুনেননি? তিনি বললেন, তারা যা বলেছিল, তা-ই কি আমি তাদের ফিরিয়ে দেইনি? আমি যা বলেছি- ‘ওয়া আলাইকুম’ তোমাদের উপরেও।-ihadis.com
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬০২৪, সহিহ হাদিসঃ নবী সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের একটি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললঃ السَّامُ عَلَيْكُمْতোমাদের উপর মৃত্যু উপনীত হোক। ‘আয়িশাহ রাঃ)বলেনঃ আমি এর অর্থ বুঝলাম এবং বললামঃ وَعَلَيْكُمْ السَّامُ وَاللَّعْنَة তোমাদের উপরও মৃত্যু ও লা’নত। ‘আয়িশাহ রাঃ)বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ থাম, হে ‘আয়িশাহ! আল্লাহ যাবতীয় কার্যে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি শোনেননি, তারা কী বলেছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো বলেছি عَلَيْكُمْ আর তোমাদের উপরও।-ihadis.com
পাঠক খেয়াল করুন এসব হাদিসের কোথাও ইহুদীদেরকে বাধ্য করে রাস্তার পাশে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দেবার কথা বলা নেই। বরং ইহুদীরা নবীজি (সা) কে খারাপ কটূক্তি করলে উনি শান্তভাবে তাদের প্রতিবাদ জানায়। আর উনি এটাও বলেন যে আল্লাহ যাবতীয় কার্যে নম্রতা পছন্দ করেন। ইহুদীদেরকে যদি বাধ্য হয়ে রাস্তায় পাশে ধাক্কা দেবার উদ্দেশ্যেই উক্ত কথা উনি বলতেনই তাহলে অবশ্যই উনাকে বকা দেবার কারণে ইহুদীদেরকে আগে নিজের বাড়ি থেকে, এরপরে রাস্তার পাশে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন কিন্তু উনি এরকম কিচ্ছুই করেন নাই বরং আয়েশা (রা)কে উল্টো সংশোধন করে দিচ্ছেন যে তাদের মতো সেও যেন সেরকম কথা না বলে।
তাহলে ইহুদীদেরকে রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করা হাদিসের স্পষ্ট মর্মার্থ হচ্ছে যদি কোন মুসলিম লোক রাস্তা দিয়ে যায় আর উক্ত রাস্তায় যদি ইহুদীরা থাকে তাহলে তাদেরকে রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করা যাতে মুসলিম লোকটির রাস্তায় চলাচল করতে কষ্ট না হয়। হাদিসটি পড়ুন, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৮৭১, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘‘ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য করো।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ সদাচার ও উত্তম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) বলেন, তা হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, উত্তম জিনিস দান করা এবং কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা।
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৪৪১৭,৪৪১৮,৪৪২০,সহিহ হাদিসঃ আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে পাঠাতেন, তখন তাঁকে এ কথা বলতেন যে, তোমরা লোকদেরকে শুভ সংবাদ দেবে; ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াবে না, সহজ করবে; কঠিন করবে না।-ihadis.com
ইহুদীদেরকে প্রথমে সালাম দিতে নিষেধ করার আরেকটি কারণ এই পাওয়া যায় যে ওরা মুসলিমদের সালাম নিয়ে হিংসা করতো তাই ওরা যেন হিংসা করার সুযোগ না পায় তাই মুসলিমরা প্রথমে আগে সালাম দিবে না। হাদিসটি পড়ুন, সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ৮৫৬, সহিহ হাদিসঃ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইয়াহুদীরা তোমাদের কোন ব্যপারে এত বেশী ঈর্ষান্বিত নয় যতটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত।-ihadis.com
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৮৭2, সহিহ হাদিসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিতাবধারীরা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা জবাবে বল, ‘ওয়া আলাইকুম।-ihadis.com
ইহুদীরা সালামের নামে মুসলিমদের মৃত্যু চাইতো তাই ওদেরকে আগে সালাম দিয়ে লাভও নেই এটাও আরেকটি কারণ যে ইহুদীদেরকে আগে সালাম না দেয়া। কারণ আপনি যদি আমার খারাপ চান আমি কেন আপনাকে আগে সালাম দিতে চাইবো? বরং এরকম লোক থেকে দূরে থাকাই কি ভালো না?
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৫৫৪৫,৫৫৪৬,৫৫৪৭,৫৫৪৮,সহিহ হাদিসঃ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা যে সময় তোমাদের প্রতি সালাম দেয়, সে সময় তাদের কেউ বলে “আস্সামু ‘আলাইকুম” তোমাদের মরণ হোক। তখন তুমি বলবে ‘ওয়া আলাইকা’- (তোমারও-হোক)। -ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১১১৫, সহিহ হাদিসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ইহুদী নবী (সাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বলে, আসসামু আলাইকুম (তোদের মরণ হোক)। তাঁর সাহাবীগণ সালামের উত্তর দিলে তিনি বলেনঃ সে তো বলেছে, তোদের মরণ হোক। ইহুদীকে গ্রেপ্তার করা হলে সে স্বীকারোক্তি করে। তিনি বলেনঃ সে যেভাবে বলেছে তোমরা তদনুরূপ উত্তর দাও।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১১১৬, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইহুদী সম্প্রদায়ের কেউ তোমাদের কখনো সালাম দিলে অবশ্যই সে বলে, তোর মরণ হোক। অতএব তোমরাও বলো, তোরই মরণ হোক।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১১২০, সহিহ হাদিসঃ জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইহুদীদের একদল লোক নবী (সাঃ)-কে সালাম দিতে গিয়ে বলে, তোমার মরণ হোক। তিনি বলেনঃ তোমাদেরও। আয়েশা (রাঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন, আপনি কি শুনতে পাননি, তারা কি বলেছে? তিনি বলেনঃ হাঁ, অবশ্যই। আমার বিরুদ্ধে তাদের তাদের দোয়া কবুল হবে না।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ৯৯৭,সহিহ হাদিসঃআয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ ইহুদীরা তোমাদের কোন ব্যাপারে এতো বেশী ঈর্ষান্বিত নয় যতোটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬৯৯, সহিহ হাদিসঃ আবূ আবদুর রহমান আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আগামী কাল আমি জন্তুযানে করে ইহুদীদের লোকালয়ে যাবো। তোমরা আগে তাদের সালাম করো না। তারা তোমাদেরকে সালাম করলে তোমরা বলবে, ওয়া আলায়কুম (তোমাদের প্রতি)।-ihadis.com
ইহুদীরা সালাম দিলে মৃত্যু কামনা করতো মুসলিমদের আর ইহুদীদের থেকে এমন ঘটনা হয়েছে যে মুসলিমদেরকে হত্যা করতে চেয়েছিল বারংবার এই হিসেবে বলাই যায় ইহুদীদেরকে রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করার উদ্দেশ্য যদি এটাও হয় যে মুসলিমরা যখন রাস্তায় চলবে এমন মনোভাব নিয়ে চলা যদি ইহুদীরা রাস্তায় যদি ক্ষতি করতে আসে তাহলে ওদেরকে রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করতে হবে। এরপরেও ভুল হবে না বরং যৌক্তিক হবে। তাই সমস্ত তথ্য এক সাথে করলে প্রেক্ষাপট ধামাচাপা দিয়ে এই মিথ্যা অভিযোগ করার সুযোগ নেই যে ইহুদীদেরকে আগে সালাম দেয়া অনৈতিক বা রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করা অনৈতিক। ধরুন কোন নাস্তিক যদি সেচ্ছায় অন্য নাস্তিকদের দেখে এভাবে সম্বোধন করে বলে আপনার প্রতি বান্দরবাদ বর্ষিত হউক-এটা কি খারাপ হবে?
তবে কোন মার্জিত-ভদ্র ইহুদী ভালো উদ্দেশ্যে সালাম দিলে তাকে যেভাবে স্বাগত জানানো যাবে। হাদিসটি পড়ুন,আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১১১৭, সহিহ হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তোমরা ইহুদী, খৃষ্টান বা অগ্নি উপাসকদের সালামের উত্তর দিও। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমাদের যখন অভিবাদন বাক্যে স্বাগত জানানো হয় তখন তোমরাও তদপেক্ষা উত্তম বাক্যে স্বাগত জানাও অথবা (অন্তত) তাই প্রত্যপণ করো”। (সূরা নিসা : ৮৬)।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১১১৮, সহিহ হাদিসঃ উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) জিনপোষের উপর ফাদাকের তৈরী চাদর বিছানো গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে এবং উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-কে তার পেছনে বসিয়ে অসুস্থ সাদ ইবনে উবাদা (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। তিনি এক জনসমাবেশের নিকট গিয়ে পৌছলেন, যেখানে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলও উপস্থিত ছিল। এটা আল্লাহর এই দুশমনের ইসলাম গ্রহণের আগেকার ঘটনা। উক্ত জনসভায় মুসলমান, মুশরিক ও মূর্তিপূজক সকলেই উপস্থিত ছিল। তিনি তাদের সালাম দেন।-ihadis.com
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৮৭৩, সহিহ হাদিসঃউসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সভা অতিক্রম করেন, যার মধ্যে মুসলিম, মুশরিক (মূর্তিপূজক) ও ইয়াহুদীর সমাগম ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সালাম করলেন।-ihadis.com
অভিযোগ ১০ = নবী বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না মুসলিমরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে হত্যা করবে। তখন মুসলিমদের ভয়ে ইহুদীরা গাছ কিংবা, পাথরের পেছনে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করবে, কিন্তু পারবে না। গাছ অথবা পাথর মুসলিমদেরকে ডেকে তাদের কাছে ইহুদীদেরকে ধরিয়ে দেবে।
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৭২২৯, সহিহ হাদিসঃ আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামাত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমদের সঙ্গে ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের যুদ্ধ না হবে।মুসলিমগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা গাছের পিছনে লুকিয়ে থাকবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, ‘ হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহূদী আমার পিছনে লুকিয়ে আছে। এসো, তাকে হত্যা কর।’ কিন্তু ‘গারকাদ’ নামক গাছ দেখিয়ে দিবে না। কারণ এটা হচ্ছে ইয়াহূদীদের সহায়তাকারী গাছ।-ihadis.com
জবাবঃ কিয়ামতের আগে মুসলিমদের সাথে ইহুদীদের যুদ্ধ হবে সেটাই ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে উক্ত হাদিসে। অন্য হাদিস গুলো পড়লেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, ইহুদীরাও সমানতালে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করবে। এবং এই যুদ্ধে মুসলিমরা জয়লাভ করবে।
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২২৩৬, সহিহ হাদিসঃ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তাতে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করবে। এমনকি পাথর পর্যন্ত বলবে, হে মুসলিম! এই যে আমার অন্তরালে এক ইয়াহুদী (লুকিয়ে) আছে, তাকে হত্যা কর।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৭২২৫, সহিহ হাদিসঃ ইবনু উমার (রাযিঃ)-এর সূত্রে নাবী (সা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, অবশ্যই ইয়াহূদীরা তোমাদের সঙ্গে লড়াই করবে এবং তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে। পরিশেষে পাথর (সন্ধান দিয়ে) বলবে, হে মুসলিম! এ-ই যে ইয়াহূদী। এসো, তুমি তাকে হত্যা কর।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৭২২৭, সহিহ হাদিসঃ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমরা এবং ইয়াহুদী সম্প্রদায় পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে। অবশেষে পাথর বলবে, হে মুসলিম! এই যে আমার পিছনে ইয়াহূদী লুকিয়ে আছে, এসো তুমি তাকে হত্যা কর।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৭২২৮, সহিহ হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ইয়াহূদী সম্প্রদায় তোমাদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হবে। তারপর তোমরা তাদের উপর জয়ী হবে। এমনকি পাথর বলে উঠবে, ‘হে মুসলিম!এই তো ইয়াহূদী আমার পিছনে আছে, তুমি তাকে হত্যা কর।-ihadis.com
এখানে সংশয় হচ্ছে নাস্তিকরা সেই যুদ্ধে ইহুদীদের পক্ষে থাকবে? কারণ নাস্তিকরা যেই পরিমাণে মুক্তমনে ইসলামবিদ্বেষ লালন করে,এই ক্ষেত্রে ইহুদীদের সাথে মিলে নাস্তিকরাও মুসলিমদেরকে গণহত্যা করা অস্বাভাবিক না। কিন্তু সেই যুদ্ধে মুসলিমরাই জয়লাভ করবে-এটা নিয়ে সংশয় নেই।
অভিযোগ ১১ = তিনি বলেছেন, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের কাছে একজন করে ইহুদী অথবা খ্রিস্টানকে দিয়ে বলবেন, ‘এ হচ্ছে তোমার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিপণ’। অর্থ্যাৎ, একজন মুসলিমের নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে হলে একজন ইহুদী অথবা খ্রিস্টানকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে হবে। এটা কি ইহুদীবিদ্বেষ নয়?
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৬৯০৪, সহিহ হাদিসঃ আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলিমের নিকট একজন খ্রীস্টান বা ইয়াহূদী দিয়ে বলবেন, এ হচ্ছে তোমার জন্যে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তিপণ।-ihadis.com
জবাবঃ ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদীদেরকে ঘৃণা করার কারণে তাদেরকে জাহান্নামে দেয়া হবে নাকি তারা ইমান আনে নি বা ইসলাম গ্রহণ করে নাই এই অপরাধে জাহান্নামে দেয়া হবে? যদি তারা ইমান এনে ইসলাম গ্রহণ করে খাটি মুসলিম হতো তাহলে কি তাদেরকে জাহান্নামে দেয়া হতো? অবশ্যই না। ইহুদী-খ্রিস্টানদেরকে ঘৃণা করার জন্য জাহান্নামে দেয়া হবে এটা মুক্তমনাদের মিথ্যাকথার অংশ। এছাড়া নাস্তিক্যদৃষ্টিতে এসব অভিযোগ অভিযোগের মধ্যেই ধর্তব্য না। কারণ নাস্তিক্যবিশ্বাসে পরকালকে অস্বীকার করা হয়। যেখানে পরকালকেই অস্বীকার করা হয় সেখানে নাস্তিক্যদৃষ্টিতে স্রস্টা ইহুদীবিদ্বেষ কাজ করেছেন এরকম বিশ্বাস করাটাই নাস্তিক্যবিশ্বাস বাতিল বলে গণ্য করে।
নাস্তিক্যধর্ম জবরদস্তি করে যদি মহাবিশ্বের স্রস্টাকেই নৈতিকতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিতে চায় তাহলে নাস্তিকরা নাস্তিক্যবাদ থেকেই মুক্ত হয়ে যাচ্ছে একইসাথে স্বয়ং নাস্তিক্যবাদের অস্তিত্বই মিথ্যা প্রমানিত হয়ে যাবে। কিভাবে? নাস্তিক্যব্যাখ্যায় যদি পরকালে স্রস্টা মুসলিমদেরকে রক্ষা করতে ইহুদী-খ্রিস্টানকে জাহান্নামে দিবে যা অনৈতিক তাই মহাবিশ্বের স্রস্টা খারাপ- এটাই যদি হয় তাহলে সংশয় হচ্ছে মহাবিশ্বের স্রস্টা খারাপ এটা বিশ্বাস করলে একজন নাস্তিক, নাস্তিক থাকে কোন যুক্তিতে? কেননা নাস্তিক্যবিশ্বাস হচ্ছে স্রস্টার অস্তিত্বই নেই। যা নেই তাকে খারাপ বলে বিশ্বাস করার অর্থ কি? যদি সমস্ত নাস্তিকরা স্রস্টাকে খারাপ বলে বিশ্বাস করে তাহলে নাস্তিক্যবাদ ভুল প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ নাস্তিক্যঅভিযোগের দৃষ্টিতে মহাবিশ্বের স্রস্টা আছে যে খারাপ। মহাবিশ্বের স্রস্টাকে খারাপ হিসেবে বিশ্বাস করা কি নাস্তিক্যবাদ সমর্থন করে? আর যদি বলেন মহাবিশ্বের স্রস্টা নেই তাহলে তো স্রস্টাকে খারাপ বলে স্বীকার করাই অগ্রহণযোগ্য। মহাবিশ্বের স্রস্টা আছে এই কথাকে অবিশ্বাস করা হলে মহাবিশ্বের স্রস্টা খারাপ এটা কিভাবে বিশ্বাস করা যায়?
তাছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে উক্ত হাদিসের মর্মার্থ পুরো স্পষ্ট আর তা হচ্ছে, ইমান না আনার কারণে ইহুদী-খ্রিস্টানরা জান্নাতে যাবে না আর ইমান আনার কারণে খাটি মুসলিমরা জান্নাতে যাবে। আর ইহুদী-খ্রিস্টানরা যে ইমান না আনার জন্য জান্নাতে যাবে না এটাই হচ্ছে একজন মুসলিমের জন্য মুক্তিপণ। এর অর্থ এটা নয় যে একজন মুসলিমকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ ইহুদী-খ্রিস্টানদেরকে অন্যায়ভাবেই জাহান্নামে দিচ্ছেন।
সুরা আল ইমরান, ৩:৯১ = নিশ্চয় যারা কুফুরী, করেছে এবং কাফের অবস্থায় মারা গেছে, তাদের কারো কাছ থেকে যমীন ভরা স্বর্ণ বিনিময়স্বরূপ প্রদান করলেও গ্রহণ করা হবে না,তাদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব, আর তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ২৭৯, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইয়াহুদী হোক আর খৃস্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ রিসালাতের খবর শুনেছে অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে।-ihadis.com
এটা কনফার্ম যে ইসলাম গ্রহণ না করে মারা গেলে জাহান্নামে যেতেই হবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইয়াহুদি অথবা খৃষ্টানকে দিয়ে বলবেন, এই তোমার জাহান্নাম থেকে বাঁচার মুক্তিপণ।’ এ কথার অর্থ আরেকটি হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে যে, সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ৪৩৪১, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দু’টি করে আবাস রয়েছে। একটি আবাস জান্নাতে এবং একটি জাহান্নামে। অতএব কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর জাহান্নামে প্রবেশ করলে তার জান্নাতের আবাস জান্নাতীরা ওয়ারিসী সূত্রে লাভ করবে। এটাই হলো আল্লাহ্র নিম্নোক্ত বাণীর তাৎপর্য (অনুবাদঃ “তারাই হবে ওয়ারিস” (সূরা মুমিনূনঃ ১০)।-ihadis.com
অর্থাৎ ইহুদী-খ্রিস্টানরা ইমান আনলে তাদের জন্য যেই জান্নাত আগে রেডি করা হয়েছিল সেই জান্নাতে যেহেতু তারা নিজেদের অপরাধের জন্য প্রবেশ করতে পারে নি তাই আল্লাহ খাটি মুসলিমদেরকে সেই জান্নাত মুক্তপন হিসেবেই মুসলিমদেরকে দিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া ইহুদী-খ্রিস্টানদের দৃষ্টিতে মুসলিমরা নরকে যাবে সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের ইমান না আনার কারণে জাহান্নামে যাওয়ার কথা আর একজন মুসলিমের মুক্তিপণ হিসেবে তাদেরকে ইসলামের দৃষ্টিতে জাহান্নামে দেয়ার কথাতে অবাক হবার কিছুই নেই। ইহুদী-খ্রিস্টান ও এদের নাস্তিক দালালরা ইসলামকেই অস্বীকার করে আর আল্লাহর বানানো জান্নাতে আল্লাহকেই অমান্য করে যেতে চাওয়াটার আশা করাই অযৌক্তিক এবং স্বয়ং নাস্তিক্যবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই যে একজন মুসলিমের নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে হলে একজন ইহুদী অথবা খ্রিস্টানকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে হবে এরপরেও সমস্যা নেই কারণ নাস্তিক্যবিশ্বাসে স্রস্টাকে খারাপ বলে বিশ্বাস করা হলে সেটা নাস্তিকতার সুত্রেই বাতিল হয়ে যাবে।
ধরুন পরিক্ষায় কিছু ছাত্র ফেইল করার কারণে তাদেরকে বহিস্কার করে দেয়া হয়েছে এবং তাদের জাগায় অন্য নতুন এমন ছাত্র যুক্ত করা হয়েছে যারা একই পরিক্ষায় পাশ করেছে। এখন শিক্ষক পাশ করা ছাত্রদের বলছে যারা ফেইল করেছে তারা তোদের পাশ করার মুক্তিপণ কারণ তারা ফেইল না করলে তোমরা পরিক্ষা দিতে পারতে না আর পাশও করতে পারতে না। একইভাবে ইহুদী-খ্রিস্টানরা তো ইমান না আনার কারণে জাহান্নামী হবেই আর খাটি মুসলিমরা ইমানের ফলে জান্নাতে যাবেই তাই আল্লাহ যদি মুসলিমের মুক্তিপণ হিসেবে ইহুদী-খ্রিস্টানদের গণ্য করে তাহলে এটা অযৌক্তিক না। যেভাবে উদাহরণের শিক্ষক পাশ করা ছাত্রদেরকে মুক্তিপণ হিসেবে ধরেছে ফেইল করা ছাত্রদের। আবার নাস্তিকরা নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে খাটি মুসলিম হয়ে গেলেই কিন্তু জাহান্নামে যাবার টেনশন থাকছে না।
উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, ইসলামে ইহুদীবিদ্বেষ নেই এবং ইহুদীদেরকে ঘৃণা করতেও শিক্ষা দেয় না বরং নাস্তিকরাই নিজেদের ইসলামবিদ্বেষীতাকে ধামাচাপা দেবার জন্য ইসলামকে “ইহুদীবিদ্বেষ” ধর্ম বানানোর হাস্যকর চেষ্টা করা সত্ত্বেও সব মিথ্যাচার প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। প্রেক্ষাপট সরিয়ে ফেলে অর্ধেক তথ্য পেশ করে নিজের মতো বানিয়ে ব্যাখ্যা করে ইসলামের ভুল ধরে ফেলেছি বিশ্বাস করা সপ্নে মিষ্টি সেবনের মতো মজা হলেও বাস্তবে খেতা চাবানোর মতোই। নাস্তিকরাই ইসলাম নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামোফবিয়া ছড়িয়ে দিতে অপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যদিও আমার মতো যুক্তিবাদী মুমিনদের জন্য তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেও না।মুক্তচিন্তার আন্দোলনের নামে তথ্যকে বিকৃত করে উলটো দেখিয়ে ইসলামের সমালোচনা করার নাম যদি নাস্তিকতা হয় তবে নাস্তিক্যবাদের অস্তিত্ব নিয়েই যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।