বিষয়ঃ মুক্তবুদ্ধির যুক্তিতে বর্ণবাদ
লিখেছেনঃ এমডি আলী
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
আজকের লেখায় পড়বো মুক্তবুদ্ধির যুক্তি একজন মানুষকে যেভাবে বর্ণবাদের দিকে ঠেলে দেয়। মানুষে মানুষে ঘৃণাবোধ যে “ব্যক্তি নৈতিকতার অংশে” সমর্থনযোগ্য সেটাই নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে পুরো বিশ্লেষণ করা হবে। ইসলাম বিন্দুমাত্র বর্ণবাদ সমর্থন করে না সেসব প্রমাণ দেয়া হবে। কুরআন হাদিস দেখিয়ে কিছু নাস্তিক দাবি করতে চায় ইসলামে বর্ণবাদ আছে। সেই দাবি গুলোর সত্যতা যাচাই বাছাই করা হবে। এই লেখাটি পুরো পড়ে শেষ করতে পারলে আপনি অনেক অজানাকেই জেনে নিতে পারবেন। তাই লেখাটি আপনাকে পড়তে হবে। আপনি এই লেখাটি খুবই মন দিয়ে পড়তে থাকুন।
জাতিভেদ বা বর্ণবাদের সংজ্ঞা নিয়ে সংশয়ঃ
বর্ণবাদ সেই দৃষ্টিভঙ্গি বা ধারণা বা চর্চা এবং সেইসবের ভিত্তিতে পরিচালিত ক্রিয়াকলাপ, যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবেই অনেকগুলো গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং কোনো কোনো গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য উঁচু অথবা নিচু; কিছু জাতি বা গোত্র অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী; অথবা বেশি যোগ্য কিংবা অযোগ্য, অথবা কোন কোন গোত্র জন্মগতভাবেই শাসন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, অন্যরা যারা এই গোত্রের অন্তর্ভূক্ত নয় তারা শাসিত হওয়ার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। বর্ণবাদ কখনো গায়ের চামড়ার রং দিয়ে হতে পারে, কখনো আঞ্চলিকতা দিয়ে হতে পারে, কখনো গোত্র দিয়ে হতে পারে, কখনো বর্ণ (caste) দিয়ে হতে পারে। সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো মানুষের অধিকার যদি তার জাতি বা বর্ণ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেটি অন্য কারো জন্য ক্ষতিকর না হলেও তাকে বর্ণবাদ বলা হবে।
বর্ণবাদের এটাই যদি চুরান্ত সংজ্ঞা হয় তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই সংজ্ঞা কোন মানুষ নির্ধারণ করে দিয়েছে? একজন মানুষ যেই সংজ্ঞা দেবে সেটাই কেন সবাইকে বিশ্বাস করে নিতে হবে? কোনো নাস্তিক যদি এই সংজ্ঞা অবিশ্বাস করে নিজের ব্যক্তিগত সংজ্ঞা দেয় যে বর্ণবাদ আসলে যৌক্তিক কারণ বিবর্তনবাদই আমাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন করেছে সেহেতু একজন আরেকজনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবেই এটাই স্বাভাবিক,অন্য নাস্তিকরা কিভাবে এই সংজ্ঞাকে খারাপ প্রমাণ করতে পারে যুক্তি দিয়ে? তাছাড়া আপনি যদি বর্ণবাদ লিখে সার্চ করেন তাহলে উইকিপিডিয়াতে লেখা পাবেন বর্ণবাদের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করাটা কঠিন। কারণ, গবেষকদের মধ্যে গোষ্ঠী (race) ধারণাটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এছাড়াও কোনটি বৈষম্য এবং কোনটি বৈষম্য নয় সেটি নিয়েও সবাই একমত নয়।
যেখানে সামান্য সংজ্ঞা নিয়েই মারাত্মক সংশয় রয়েছে সেটাকে চুরান্তভাবে বর্ণবাদের সংজ্ঞা বলা যাবে কিভাবে? আর নাস্তিকতায় চুরান্ত সংজ্ঞা বলেও কিছু আছে? সমস্ত নাস্তিকরা কি বর্ণবাদের এই সংজ্ঞা বিশ্বাস করতে বাধ্য? কেউ যদি নিজের মুক্তচিন্তায় বর্ণবাদের সংজ্ঞাকে অস্বীকার করে তার কি পাপ হবে? কেউ যদি নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছায় বর্ণবাদকে সমর্থন করে তার কি শারীরিক ক্ষতি হবে? কেউ যদি নিজেই আলাদা বর্ণবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তাতে বিশ্বাস করে তার কি সমস্যা হবে ও কেন?
কোন নৈতিকতার ভিত্তিতে বর্ণবাদ কাকে বলা হবে আর কাকে বলা হবে না? বর্ণবাদ খারাপ অথবা ভালো এই নৈতিকতা কোন প্রাণী নির্ধারণ করে দিবে ও কেন? কিসের ভিত্তিতে বর্ণবাদকে খারাপ প্রমাণ করা হবে? সেই ভিত্তি যে চুরান্ত সত্য সেটার প্রমাণ কিভাবে চুরান্ত বলে নির্ণয় হতে পারবে? একজন মানুষ যদি অন্য মানুষের দেয়া সংজ্ঞা বিশ্বাস করে তাহলে সবার ব্যক্তিগত ভাবে কি বর্ণবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করার অধিকার থাকবে না? আর সবার যদি বর্ণবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করার অধিকার থাকে তাহলে চুরান্ত ভাবে কিভাবে বর্ণবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যাবে? কারণ সবাই তো একমত হবে না? মুক্তচিন্তায় এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান কি? নাস্তিক্যধর্ম কিসের ভিত্তিতে এই প্রব্লেম গুলো ডিল করতে পারবে?
কোনো নাস্তিক যদি বর্ণবাদ সমর্থন করে আর এতে যদি অন্যের শারীরিক ক্ষতি না হয় তাহলে উক্ত নাস্তিকের বর্ণবাদে বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে গণ্য হবে না কেন? নাস্তিক হুমায়ন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন,
নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিত সংকীর্ণ; আমার কোন কাজ যেন অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, এটুকু।
এই যুক্তির ভিত্তিতে অন্যকে শারীরিক ক্ষতি না করে বর্ণবাদকে কোনো নাস্তিক ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করতে চাইলে সেটা করার অধিকার তার থাকবে না কেন? ব্যক্তিগতভাবে বর্ণবাদকে খারাপ প্রমাণ করার কোনো যৌক্তিকতা নাস্তিক্যধর্মে আছে কিভাবে? খেয়াল করলে দেখবেন নাস্তিকরা মাদ্রাসার ছাপ বলে, মধ্যযুগীও ইসলামিক বর্বরতা বলে মুসলিমদের সাথে বর্ণবাদী আচরণ করে। এই নাস্তিকরাই আবার বাক স্বাধীনতা চায়।
ডারউইনের বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে বর্ণবাদঃ
উপরের দেয়া বর্ণবাদের যেই সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেটাকে যদি চুরান্ত হিসেবে ধরে নেয়া হয় তবে বলাই যায় বিবর্তনবাদ জাতিভেদ বা বর্ণবাদ সম্পূর্ণ সমর্থন করে। নাহলে প্রশ্ন আসে যে কেন সবাই বিবর্তিত হয়ে আলাদা আলাদা প্রাণী হয়ে গেল? আলাদা আলাদা প্রজাতি হয়ে গেল? সাপ পিঁপড়াকে শ্রেষ্ঠ মনে করে না দেখেই পিঁপড়াদের হত্যা করে ফেলে। সাপ যখন পিঁপড়াদের বাসা দিয়ে যায় পুরো বাসাকে তসনস করে ফেলে। বাঘ হরিণকে মূল্যায়ন করে না দেখেই হত্যা করে চিবিয়ে চিবিয়ে খায়। বিবর্তনবাদ সবার জন্য একই নৈতিকতা নির্ধারণ করেনি? মানুষের কাছে যে নৈতিকতা সেটা বাঘের কাছে ভিত্তিহীন। তিমি মাছ সমুদ্রে হাজার হাজার ছোট-ছোট মাছ হত্যা করে খেয়ে ফেলে এটা তার কাছে নৈতিক হলেও কিছু কিছু মানুষের কাছে আবার অনৈতিক। এভাবে প্রাণীজগতের মধ্যে নৈতিকতার ভিন্নতা বলতে থাকলে আলাদা একটি বই রচনা করা যাবে।
যদি কোনো নাস্তিককে প্রশ্ন করা হয় নাস্তিক প্রাণী বেশি বুদ্ধিমান নাকি বান্দর? কি জবাব দেবে? যদি বলে নাস্তিক প্রজাতি তাহলে বান্দরের সাথে অপমানজনক আচরণ করা হয়ে যাচ্ছে যদি বলেন বান্দর তাহলে উত্তরটি যে মিথ্যা সেটা আপনি নিজেও জানেন। এখানে কিন্তু প্রশ্নকেও ভুল বলার সুযোগ নেই। আবার একইভাবে যদি নাস্তিককে প্রশ্ন করা হয় শূকর বেশি সভ্য নাকি নাস্তিক? আপনি যে কোনো যুক্তিতে যদি নিজেকে সভ্য বলে দাবি করেন তবে শূকরকে ছোট করে আপনি পক্ষান্তরে বর্ণবাদী আচরণ করে ফেলছেন আর যদি বলেন শূকর নাস্তিকদের চেয়ে বেশি সভ্য তবে আপনি নিজেও জানেন এই উত্তরটি ভুল। আর যদি যুক্তির খাতিতে ধরেও নেই নাস্তিকদের থেকে শূকর বেশি মুক্তচিন্তার অধিকারী তথা সভ্য তবে নাস্তিক নামক মনুষ্য প্রাণীর সাথে বর্ণবাদী আচরণ করা হচ্ছে। যদি নাস্তিককে প্রশ্ন করা হয় শূকর প্রজাতি উত্তম নাকি নাস্তিক প্রাণীরা উত্তম? যদি সে উত্তরে বলে আমরা উভয় সমান তাহলে এখানে আর আমার কিছুই বলার নেই। এটা চিন্তাশীল পাঠকদের কাছেই ছেড়ে দিলাম। কিন্তু যদি বলে আমি নাস্তিক সভ্য তাহলে কি এটা শূকর প্রজাতির জন্য অপমান নয়? বস্তুবাদী দৃষ্টিতে এর উত্তর কি?
ইউভাল নোয়া হারারির “সেপিয়েন্স-মানুষের ইতিহাস” ভাষান্তর করেছেন, সুফিয়ান লতিফ, শুভ্র সরকার, রাগিব আহসান, সম্পাদনা মোস্তাক আহমেদ। ৩৫৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বিজ্ঞানীরা মানুষের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশ্লেষণ করেও আত্মার অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। বরং দেখা গেছে যে মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে ইচ্ছা নয়, হরমোন,জিন ও নিউরনের সংযোগ-ঠিক শিপ্পাঞ্জি, নেকড়ে কিংবা পিপড়ার মতোই। আবার এই বইয়ের ৫৬২ ও ৫৬৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, ফরাসি দার্শনিক জা জ্যাক রুশো তো সোজাসুজিই বলেছেন যেটা আমার কাছে ভালো, সেটাই ভালো,আর যা আমার কাছে খারাপ,তা-ই খারাপ।
রবার্ট রাইট (Robert Wright) একজন বিবর্তনবাদী হওয়া সত্ত্বেও তার বই The Moral Animal - এ মানব জাতিকে বিবর্তনবাদ কিভাবে এক মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন করেছে তা বর্ণনা করেছেন এভাবে,
বিবর্তনবাদ প্রকৃত পক্ষে মানবীয় কর্মকাণ্ডের ইতিহাসে একটি দীর্ঘ ও নীতিজ্ঞানহীন অপপ্রয়োগ। এই শতাব্দীর শেষের দিকে রাজনৈতিক মতবাদের সাথে মিলে মিশে একটি অবোধ্য রাজনৈতিক মতবাদ সৃষ্টি করে এটি “সামাজিক ডারউইনবাদ” হিসাবে পরিচিত লাভ করে এবং তখন থেকেই এই জঘন্য মতবাদ, বর্ণবাদী, ফ্যাসিবাদী ও সবচেয়ে হৃদয়হীন পুঁজিপতিদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
James Joll দীর্ঘ দিন যাবত অধ্যাপক হিসাবে অক্সফোর্ড, স্ট্যানফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন। তিনি তার EUROPE SINCE 1870 গ্রন্থ যা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমূহের পাঠ্যপুস্তক হিসাবে পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত আছে। এ পুস্তকে
তিনি ডারউইনবাদ, বর্ণবাদ, সাম্রাজ্যবাদের পারস্পারিক সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন,সাম্রাজ্যবাদীদের প্রধান উৎসাহব্যঞ্জক মতবাদ হলো সাধারণভাবে যাকে সামাজিক ডারউইনবাদ হিসাবে শ্রেণী বিন্যাস করা যায়। এ মতবাদে রাষ্ট্রসমূহ অস্তিত্বের জন্য এক চিরস্থায়ী সংগ্রামে লিপ্ত কোন কোন মনুষ্য প্রজাতিকে অন্যদের চেয়ে বিবর্তনবাদী প্রক্রিয়ায় শ্রেষ্ঠ হিসাবে বিবেচিত এবং এ সংগ্রামে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজাতি বল প্রয়োগের মাধ্যমে সবসময় তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখে।
ফরাসী লেখক Count Joseph Arthur Gobineau ১৮৫৩ সালে An Essay on the Inequality of Human Races নামক পুস্তক প্রকাশ করেন। তিনি তার পুস্তকে জোর দাবি করেন যে, মানব সমাজে সেই মনুষ্য প্রজাতির “শ্রেষ্ঠত্ব” বেশি বজায় থাকে, যে প্রজাতি অধিক জাতিগত বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে সমর্থ হয়।
তুর্কী জাতি সম্পর্কিত ডারউইনের অভিমত ১৮৮৮ সালে The Life and Letters of Charles Darwin নামক পুস্তকে দেখা যায়। ডারউইন মতামত প্রকাশ করেন যে, তথাকথিত অনুন্নত প্রজাতি প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন হয়ে মানব সভ্যতা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বিবর্তনবাদের ঘোর বর্ণবাদী তাত্ত্বিক,Henry Fairfield Osborn তার The Evolution of Human Races শীর্ষক প্রবন্ধে বর্ণনা করেছেন, একজন বয়স্ক নিগ্রো মানুষের গড়পড়তা বুদ্ধি বৃত্তি সাধারন জনগোষ্ঠীর এগার বৎসর বয়স্ক মানব শিশুর সমান।-এ যুক্তিতে কালোরা মানবই নয়। অন্য একজন বিখ্যাত বর্ণবাদের সমর্থনকারী বিবর্তনবাদী Carleton Coon, ১৯৬২ সালে তার প্রকাশিত বই The Origins of Race এ বর্ণনা করেছেন সাদা ও কালো দুটি আলাদা প্রজাতি। Homo Erectus যুগে এ বিভাজন সম্পন্ন হয়েছে। এই বিভাজনের পর শ্বেতকায় প্রজাতি বিবর্তনের মাধ্যমে অধিকতর উন্নত হয়েছে। কালো মানুষদের এই বর্ণ বৈষম্যের চিন্তাধারার ধারক-বাহকরা এই তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দীর্ঘ দিন যাবত তাদের মতাদর্শে ব্যাবহার করে আসছেন।
১৮৭০ সালে বিবর্তনবাদী নৃতত্তবিদ মাক্স মুলার Anthropological Review of London নামক পত্রিকার এক নিবন্ধে মানব সম্প্রদায়কে ৭ টি প্রজাতিতে শ্রেণী বিন্যাস করেন। এই শ্রেণী বিন্যাসে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজাতি হিসাবে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গকে নির্ধারণ করা হয় এবং সর্বনিন্ম প্রজাতি হিসাবে অস্ট্রেলিয়ান অধিবাসীদের চিহ্নিত করা হয়।
The Origin of Species বইতে বর্ণিত আছে যে ডারউইনের দাবি মানুষ্য প্রজাতি ও বানর একই গত্র থেকে উদ্ভূত। পরবর্তীতে এ দাবির সমর্থনে জীবাশ্ম অনুসন্ধানের হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু কিছু সংখ্যক বিবর্তনবাদী বিশ্বাস করতেন “অর্ধ বানর-অর্ধমানব” প্রজাতির শুধু জীবাশ্মই নয় বরং এ ধরণের জীব পৃথিবীর কোন অঞ্চলে জীবিত অবস্থায় বিদ্যমান। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই Missing Link অনুসন্ধানের কারণে বহু বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড ঘটে। এ সব ঘটনার মধ্যে একটি হলো পিগমী Ota Benga। ১৯০৪ সালে বিবর্তনবাদী গবেষক Samuel Verner, কঙ্গো থেকে Ota Benga কে বন্দী করেন। মাতৃভাষায় এই নামের অর্থ হলো বন্ধু। Ota Benga ছিলেন বিবাহিত ও তার দুইজন সন্তান ছিল। অথচ তাকে পশুর মত শিকল পড়ানো হয় ও খাঁচার মধ্যে বন্দী করে আমেরিকায় পাঠানো হয়। আমেরিকায় St Louies World Fair এ বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা তাকে বিভিন্ন প্রজাতির বানরদের সাথে খাঁচায় বন্দী করে মনুষ্য প্রজাতির “সবচেয়ে নিকটতম প্রাণী” হিসাবে প্রদর্শন করেন। দুই বছর পর তারা Ota Benga কে নিউইয়র্কের Bronx চিরিয়াখানায় প্রেরণ করা হয় যেখানে তাকে খাঁচায় বন্দী করে Dinah নামের একটি গরিলা, Dohung নামের একটি ওরাং ওটাং ও কিছু শিপ্পাঞ্জীর সাথে মানুষের সবচেয়ে প্রাচীনতম পূর্বসুরী হিসাবে প্রদর্শন করা হয়।
চিড়িয়াখানার বিবর্তনবাদী পরিচালক Dr.Willam T Horniday মনুষ্য প্রজাতির মিসিং লিং সংগ্রহ করার বিরল কৃতিত্ব বর্ণনা করে দর্শনার্থীর উদ্দেশ্যে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। দর্শনার্থীরা খাঁচায় বন্দী Ota Benga এর সাথে পশুর ন্যায় আচরণ করেন। New York Times পত্রিকায় দর্শনার্থীদের মনোভাব প্রকাশ পায় এভাবে, চিরিয়াখানায় ৪০,০০০ দর্শনার্থী উপস্থিত হয়। প্রায় প্রত্যেকটি মানুষ মহিলা ও শিশু প্রধান আকর্ষণ হিসাবে আফ্রিকার এই বন্য মানুষকে প্রত্যক্ষ করে। দর্শনার্থীরা Ota Benga কে সমস্ত দিন মাঠে তাড়া করে, চিৎকার করে, বিদ্রূপ করে, তীব্র চিৎকার ও হট্টগোল করতে থাকে। কেউ কেউ তার পাজরে গুতা মারে, কেউ কেউ নাচতে থাকে, সবাই তাকে উদ্দেশ্য করে হাস্য পরিহাস করতে থাকে।
ইতিহাসের অধ্যাপক Jacques Barzun তার বই “DARWIN,MARX,WAGNER” বর্তমান বিশ্বের নৈতিকতার অধঃপতনের কারণ অনুসন্ধান ও মূল্যায়নের প্রেক্ষাপটে বৈজ্ঞানিক, সমাজতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করেছেন। এ বইতে সমাজে ডারউইনবাদের প্রভাব বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বর্ণনা করেন,১৮৪০ সাল থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে ইউরোপের প্রত্যেকটি দেশের যুদ্ধবাজ রাজনৈতিক দল চাচ্ছিল অস্ত্র, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদী দল চাচ্ছিল নিষ্ঠুর প্রতিযোগীতা, রাজতন্ত্রবাদী দলের দাবী ছিল অনগ্রসর জনগোষ্ঠির উপর প্রাধান্য বিস্তার, সমাজতান্ত্রিক দলের ছিল দাবী-ক্ষমতা দখল, বর্ণবাদী দলের দাবী বিরোধীদের আভ্যন্তরীণ বহিস্কার/ আবসায়ন। এ দকল মতাদর্শীই কোন না কোনভাবে তাদের চিন্তাধারায় স্বপক্ষে ডারউইনবাদকে ব্যাবহার করেন।
গবেষক P.J.এর Darlington তার Evolution for Naturalists নামক বইতে উল্লেখ করেছেন যে, বর্বরতা বিবর্তনবাদের একটি অপরিহার্য স্বাভাবিক প্রবণতা ও ফসল। তাই এ ধরণের আচরণ খুবই যুক্তি সংগত। সর্বপ্রথম যা প্রণিধানযোগ্য তা হলো স্বার্থপরতা ও সংঘাত মানব চরিত্রে জন্মগতভাবে তার পশুপূর্বপুরুষ থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে লাভ করেছে। তাই দ্বন্দ্ব সংঘাত ও সংগ্রাম মানুষের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক যা বিবর্তনেরই সৃষ্টি।
ইউভাল নোয়া হারারির “সেপিয়েন্স-মানুষের ইতিহাস” ভাষান্তর করেছেন, সুফিয়ান লতিফ, শুভ্র সরকার, রাগিব আহসান, সম্পাদনা মোস্তাক আহমেদ। ৩৫৩,৩৫৪ ও ৩৫৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
নাৎসিরা যে উদার মানবতাবাদ, মানবাধিকার ও সাম্যবাদের বিরোধী ছিল, তার কারণ এই নয় যে তারা মানবতাকে ঘৃণা করত। বরং তাদের চোখে মানবতা ছিল এক মহাঘ্র বস্তু, যা মানবজাতির বিপুল সম্ভাবনার আধার। কিন্তু ডারউইনের বিবর্তনবাদের যুক্তি দেখিয়ে তারা দাবি করত, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অযোগ্যদের বাদ পড়া উচিত, শুধু যোগ্যরাই টিকে থাকবে আর বংশবিস্তার করবে। উদারনীতি ও সাম্যবাদ অনুসরণ করলে এই অযোগ্য মানুষেরা শুধু টিকেই থাকবে না, যারা যোগ্য তাদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। অযোগ্য মানুষেরাও যদি সমানভাবে বংশবিস্তার কওে, তাহলে অযোগ্যদের ভিড়ে যোগ্যতা আসতে আসতে হারিয়ে যাবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষ আরো অনুন্নত হতে হতে হয়তো একদিন বিলুপ্তই হয়ে যাবে।
১৯৪২ সালের জার্মানির জীববিজ্ঞান বইয়ের “প্রকৃতি ও মানুষ যে নিয়মে চলে” অধ্যায়ে বলা হতো, টিকে থাকার জন্য নিরন্তর অনুশোচনাহীন সংগ্রামই প্রকৃতির সর্বোচ্চ নিয়ম। মাটির দখলের জন্য গাছের সংগ্রাম, কিংবা সঙ্গী পাওয়ার জন্য পোকামাকড়ের সংগ্রামকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে এসব বইয়ে বলা হতোঃ
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষমাহীন কঠিন লড়াইই জীবন ধারণের একমাত্র পথ। এ লড়াই অযোগ্যদের নির্মূল করা, আর টিকিয়ে রাখার জন্য বেছে নেয় যোগ্যদের। এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় নেই, প্রতিটি জীব টিকে থাকার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণ করে। এ লড়াইয়ে কোনো ক্ষমার অবকাশ নেই। যে-ই এ নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সে-ই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জীববিজ্ঞানের এই শিক্ষা কেবল উদ্ভিদ ও প্রাণী নয়, বরং আমাদের জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই লড়াইই আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা জাগায়। জীবন মানেই যুদ্ধ- এ যুদ্ধে যে নামবে না, তার জন্য থাকবে অপরিসীম দুর্দশা।
ইউভাল নোয়া হারারির “সেপিয়েন্স-মানুষের ইতিহাস” ভাষান্তর করেছেন, সুফিয়ান লতিফ, শুভ্র সরকার, রাগিব আহসান, সম্পাদনা মোস্তাক আহমেদ। ৫৫৩পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
জীববিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের মানসিকতা ও আবেগঘটিত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে কিছু জৈবরাসায়নিক পদার্থ। এই ব্যবস্থাটা লাখ লাখ বছর ধরে তৈরি হয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে। অন্যান্য সব মানসিক অবস্থার মতোই আমাদের ভালো লাগার অনুভূতিও বাহ্যিক কোনো কিছু প্রভাবে হয় না। ভালো বেতন, সুন্দর সামাজিক সম্পর্ক বা রাজনৈতিক অধিকার - এর কোনটাই আমাদের ভালো লাগার জন্য দায়ী নয়, দায়ী হলো একটা জটিল স্নায়ুতন্ত্র যা গড়ে ওঠে কোটি কোটি নিউরন, সেগুলো যেখানে জোড়া লাগে সেই সব সিনাপস আর সেরোটনিন, ডোপামিন ও আক্সিটোসিনের মতো কিছু জৈবরাসায়নিক পদার্থের সমন্বয়ে।
নাস্তিকরা এসব তথ্য প্রমাণকে অস্বীকার করতে পারবে না। তাই তারা যেই আশ্রয় গ্রহণ করে এই বলে যে সেসব তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেসবের সাথে বিবর্তনবাদের সম্পর্ক নেই। কারণ এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে পুরো প্রানিজগতের সৃষ্টি এখানে নৈতিকতার ধারণা পবেশ করালে হবে না। কারণ বিবর্তনবাদ আমাদেরকে নৈতিকতা দেয় না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে যেই বিবর্তনবাদের মাধ্যমে আমরা বিবর্তিত মগজ পেলাম সেই বিবর্তনবাদ যদি আমাদেরকে নৈতিকতা না দেয় তাহলে সেই বিবর্তিত মগজ দিয়ে যদি আমরা নিজেরাই নৈতিকতা ঠিক করে নেই সেটা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? প্রশ্নটা বুঝেছেন তো? ডারউইনবাদ থেকে কোনো মুক্তমনা চাইলে নৈতিকতা নেবে কেউ চাইলে নেবে না। কথা সোজা। আপনি যেমন বলছেন বিবর্তনবাদ নৈতিকতার ন্যায্যতা দেয় না অন্য কেউ বলবে যে দেয়। যেমন উপরেই তো কত কত প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ আসলে কনডমের মতো যার মনে চায় ব্যাবহার করবে যার মনে চায় ব্যাবহার করবে না। মুক্তচিন্তার আন্দোলন বলে কথা।
The LIe; Evolution এর লেখক Ken Ham ডারউইনবাদের ধর্মহীনতা সম্পর্কে লিখেছেন যে যদি আপনি সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করেন এবং স্রষ্টার জায়গায় অন্য কোন বিশ্বাস-যা হঠাৎ বা এলোপাথাড়ি কোন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস স্থাপন করেন, এই ক্ষেত্রে ন্যায় ও অন্যায়ের কোন ভিত্তি থাকে না। আইন বলতে তাই বুঝায় যা আপনি তৈরি করতে চান। এখানে কোন নীতি বা অনুশাসনের কোন বালাই নাই। জনগণ নিজেরাই নিজেদের আইন প্রণয়ন করবে।
মুক্তবুদ্ধির যুক্তিতে ঘৃণাবোধঃ
কোনো নাস্তিক যদি গোটা দুনিয়াকেই অর্থহীন বলে দেয় এটা কতো ভয়াবহ ধরণের জাতিভেদ হয়ে যাচ্ছে ভাবতে পারেন? শুধু কি তাই? নাস্তিক ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ বিশ্বাস করতেন যে সব কিছুই নিরর্থক, আমাদের পুরো দুনিয়াটাই পরিপূর্ণ অর্থহীন। নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস" ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক,আইনস্টাইন নিরর্থক,ওই গোলাপও নিরর্থক, ভোরের শিশিরও নিরর্থক,তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক,দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক,রাষ্ট্রপতি নিরর্থক,কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।
ধরুন হুমায়ুন আজাদকে যদি চীনের প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দেয়া হয় আর সে যদি তার কথা অনুযায়ী এরকম আইন বানায় যে যেহেতু দুনিয়া পুরো নিরর্থক তাই আমার জাতির নিয়ম আমি তৈরি করবো। আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। অসহায় মুসলিম পুরুষদেরকে উইঘুরদের মতো হত্যা করবো, অসহায় নারীদের ধর্ষণ করবো যেহেতু বিবর্তনবাদ অনুযায়ী আমি নাস্তিক শক্তিশালী আর মুসলিমরা মুক্তমনা ক্ষমতার কাছে দুর্বল তাই আমার অধিকার দুর্বলদের দমন করে টিকে থাকা। আর সকল কালো রঙের বিশ্বাসে ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীদেরকে হত্যা করা হবে। এই ক্ষেত্রে নাস্তিক্যধর্ম কি কি সমাধান দিবে এবং কেন? কোনো নাস্তিকের কাছে এমন কি যুক্তি আছে উক্ত কর্মকে ভুল প্রমাণ করবার?
রবিন্দ্রনাথ,আইনস্টাইন এনাদের মতো বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের পুরো জীবনকে অর্থহীন দাবি করা কতটুকু খারাপ? এগুলো কি বর্ণবাদের চেয়ে বেশি নাকি কম খারাপ? আচ্ছা কেউ যদি বলে কোনো মানুষ আমাকে পথ দেখাতে পারে না। এই কথা বলার দ্বারা কি মানুষকে অপমান করা হলো না? ধরুন আপনার সামনে আপনার বাবা এসে আপনাকে মানবতা শিখাচ্ছে আর আপনি মুক্তমনে বলে দিলেন তুমি তো দূরে থাকো বরং কোনো মানুষই আমাকে পথ দেখাতে পারবে না। এটাকে অপমান বলা হবে কি?
নাস্তিক হুমায়ুন লিখিত "আমার অবিশ্বাস" ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
এই যে আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে সুখ পাচ্ছি । আমি মরে যাবো, এই হাস্যকর নিরর্থকতাকে কিভাবে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি ? আমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার কোনো পূর্বনির্ধারিত উপায় নেই। কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোন মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না। তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ , নিজেদের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পথঃ আমি তাদের পথে চলতে পারি না। আমি খুজতে চাই আমার পথ। নিজের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে আমার নিজের।
হুমায়ুন আজাদ লিখিত 'আমার অবিশ্বাস' ২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
কোনো পূর্বনির্ধারিত পথ নেই মানুষের জন্যে।কোনো গ্রন্থ পথ দেখাতে পারে না,কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক তার জন্যে পথ প্রস্তুত করতে পারেন না, ওই মহাপুরুষেরা তৈরি করেছেন নিজেদের পথ, অন্যদের নয়।প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে হয় নিজেদের পথ, তৈরি করতে হয় নিজেদের রাস্তা, অনেকের পথ আমাকে আলোড়িত করেছে, অনেক গ্রন্থ আমাকে আলো দিয়েছে, কিন্তু আমি ওইসব পথে চলি নি, ওই আলোতে পথ দেখি নি।
নাস্তিকরা বলবে এসব হুমায়ুন আজাদের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। হ্যাঁ, কথা সেটাই। মানে কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যা ইচ্ছে তাই ভাবতে পারে। সে বর্ণবাদী মুক্তচিন্তা করতে পারে। যে চুরি করবার মুক্তচিন্তা করতে পারে। সে ডাকাতি করবার মুক্তচিন্তা করতে পারে। সে নৈতিকতার বাইরে মুক্তচিন্তা করতে পারে। সে খুন করবার মুক্তচিন্তা করতে পারে। সে শিশু ধর্ষণ করবার মুক্তচিন্তা করতে পারে। কিন্তু সে নাইলে এসবের মুক্তচিন্তা নাও করতে পারে। এসব যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। নাস্তিক্যধর্মে কোনো নির্দিষ্ট নৈতিকতা নেই। যার যেভাবে ইচ্ছা সে নিজের জীবন সেভাবেই পরিচালিত করতে পারে, পারবে। যেমন নাস্তিকরা ইসলাম না মানার মুক্তচিন্তা করে। নাস্তিকরা ইসলামে অবিশ্বাস করবার মুক্তচিন্তা করে। নাস্তিকরা আল্লাহকে না মানার মুক্তচিন্তা করে। নাস্তিকরা নবীজি মোহাম্মদ (সা)কে নবী হিসেবে না মানার মুক্তচিন্তা করে।
ইসলাম বর্ণবাদকে সমর্থন করে না সেই প্রমাণঃ
নাস্তিকান্ধরা নিজেদের দুর্গন্ধ ইসলামের দিকে চাপানোর জন্য কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে মিথ্যাচার করে দাবি করে ইসলামে নাকি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কিছু ভালো কথা থাকলেও বর্ণবাদের পক্ষেও নাকি অনেক খারাপ কথা আছে - দাবিটি পড়ে আমার কাছে হাস্যকর লেগেছে কারণ ইসলাম স্পষ্টভাবেই বর্ণবাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। প্রমাণ তো দিবই পাশাপাশি প্রশ্ন-উত্তর পর্বে নাস্তিকান্ধদের শিশু সুলভ অভিযোগের জবাবও দিব। আমরা মুসলিমরা ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করি না বরং নাস্তিকরাই ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করে। ইসলাম বর্ণবাদকে সমর্থন করে - একথা নিঃসন্দেহে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস। কেননা ইসলাম বর্ণবাদ সমর্থন করে না। তাই ইসলাম যার বৈধতাই দেয় না সেটাকে বৈধ মনে করাটা নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস নয় তো কি? আপনিই বলুন তো?
আল কুরআন, সুরা হুজরাত ৪৯:১৩ আয়াত থেকে বর্ণিত,
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি,যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ,সবকিছুর খবর রাখেন।
আল কুরআন, সুরা সাজদা ৩২:৭-৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,
যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে। অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
আল কুরআন, সুরা রুম ৩০: ২১,২২ আয়াত থেকে বর্ণিত,
আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
আল কুরআন, সুরা হুজুরাত ৪৯:১১ আয়াত থেকে বর্ণিত,
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয়, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম ও অধিক মর্যাদাবান।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ৯০৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইয়াযীদ ইবনুল আসাম্ম (র) থেকে বর্ণিতঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তোমরা কাদের সম্ভ্রান্ত গণ্য করো? আল্লাহ অবশ্যই সম্ভ্রান্ত কে তা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সবচাইতে সম্ভ্রান্ত সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশী আল্লাহভীরু”। (৪৯ : ১৩) তোমরা কাকে মর্যাদাবান গণ্য করো? যার স্বভাব-চরিত্র সর্বোত্তম সে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৪১৪৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চেহারা ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং তিনি তোমাদের কার্যকলাপ ও অন্তরের দিকে লক্ষ্য রাখেন।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ৪০৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও।-ihadis.com
হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১৯৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
জাবের বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায়ী হজ্জের ভাষণে বলেছেন, “হে লোক সকল! শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবীর উপর অনারবীর এবং অনারবীর উপর আরবীর, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল ‘তাক্বওয়ার’ কারণেই।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২০৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ মালিক আল আশ‘আরী (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলী যুগের চারটি কু-প্রথা রয়ে গেছে যা লোকেরা পরিত্যাগ করতে চাইবে না। (১) বংশের গৌরব, (২) অন্যকে বংশের খোঁটা দেয়া, (৩) নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য প্রার্থণা করা, (৪) মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা। তিনি আরও বলেন, বিলাপকারী যদি মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্ না করে তাহলে ক্বিয়ামাতের দিন তাকে এভাবে উঠানো হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার (চাদর) খসখসে চামড়ার ওড়না থাকবে।-ihadis.com
ইসলামের দৃষ্টিতে এটা বাস্তব সত্য যে ইসলামে বর্ণবাদের কোনো ভিত্তি নেই। প্রমাণ হিসেবে উপরের তথ্যপ্রমাণ গুলোই যথেষ্ট। কিন্তু নাস্তিকদের ইসলাম বিরোধী বিশ্বাস তো টিকিয়ে রাখতে হবে এই কারণে অর্ধেক তথ্য দেখিয়ে নাস্তিকরা বুঝাতে চায় ইসলামেও বর্ণবাদ রয়েছে। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে রাখি। আমি নাস্তিকদের প্রশ্ন হুবহু তুলে ধরে এরপরে ওদের মিথ্যাচার গুলো ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করেছি এই জন্যে যে পাঠকরা যাতে সহজেই নাস্তিকান্ধদের ভণ্ডামি এক অর্থে চুরি করাকে নিজেরাই ধরতে পারেন। কেউ অভিযোগ করলেই চিল কান দিয়ে গেছে ভেবে দৌড় দেবেন না বরং সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে এরপরে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করুন।
হাবশীকে নেতা বানানোর হাদিসের মর্মার্থ কি?
নাস্তিকদের প্রশ্নটি হুবহু এরকম,
যদি হাবশীকেও নেতা বানিয়ে দেয়া হয় তবুও তার আনুগত্য করো- এ হাদিসে আসলে ক্রীতদাসকে অপমান করা হয়েছে বা অপমানের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। তাই ইসলামে বর্ণবাদ নেই কিভাবে?
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৬৭১, সহিহ হাদিসঃ আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘শাসকদের কথা শোনো এবং তাদের আনুগত্য কর; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো ক্রীতদাসকে নেতা নিযুক্ত করা হয়; যেন তার মাথাটা কিশমিশ। অর্থাৎ কিশমিশের ন্যায় ক্ষুদ্র ও বিশ্রী তবুও! - সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৬৯৩,৩৯৬ সহিহ হাদিস।- ihadis.com
সহজ দরসে ইবনে মাজাহ (আরবী-বাংলা),১২২,১২৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত, এক হাদিসে বলা হয়েছে একজন হাবশী ক্রীতদাসকে নেতা বানিয়ে দিলে সকলের জন্য তার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তার আনুগত্য করা জরুরি অথচ প্রসিদ্ধ হাদিসে রয়েছে অর্থাৎ নেতা সর্বদাই কুরাইশ বংশ থেকেই হবে। বুঝা গেল, খলিফা বা নেতা হওয়ার জন্য কুরাইশ বংশের হওয়া জরুরি। সুতরাং বাহ্যত দুই হাদিসের মধ্যে বিরোধ দেখা যায়। এর সমাধান কি? জবাব প্রশ্নে উল্লেখিত বিরোধ দূর করতে “নেতা সর্বদা কুরাইশ বংশের থেকেই হবে” হাদিসকে তার বাহ্যিক অর্থের উপর রেখে বলতে হবে- হ্যাঁ খিলিফা হওয়ার জন্য কুরাইশ বংশ থেকে হওয়া জরুরি, যা এ হাদিসে বলা হয়েছে তবে এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা হবে আর এ ব্যাখ্যা তিনভাবে করা যেতে পারে। যথা- ১/ হাদিসে আমীরের হুকুম মান্য করার প্রতি বিশেষ তাকিদ করার লক্ষ্যেই এ কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যদি ধরে নেওয়া হয়, কোনো হাবশী ক্রীতদাসকেও তোমাদের আমীর বানিয়ে দেয়া হল, যে কিনা আমীর হওয়ার যোগ্যতা রাখে না, তার আনুগত্য করাও তোমাদের জন্য জরুরি। এ অর্থ করা হলে ক্রীতদাস কর্তৃক আমীর হওয়ার বৈধতা প্রমাণিত হয় না। কাজেই তা এ হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। ২/ সাধারণভাবে কোনো ক্রীতদাস আমীর হতে পারে না, তবে যদি জোর পূর্বক সে তোমাদের আমীর হয়েই যায়, তবে তার আনুগত্য করাও তোমাদের উপর একান্ত কর্তব্য। তা না হলে ফিতনা সৃষ্টি হবে। ৩/ হাদিসে আবদ হাবশী বলতে প্রকৃত অর্থে হাবশী ক্রীতদাস উদ্দেশ্য নয় বরং রুপক অর্থে আবদ বলতে এমন ব্যক্তি উদ্দেশ্য, যার জ্ঞান-বুদ্ধি ও যোগ্যতা একেবারেই সামান্য। আর হাবশী বলতে কুৎসিত ও কদাকৃতির ব্যক্তি উদ্দেশ্য। সুতরাং মর্ম হবে - তোমাদের উপর যদি এমন কাউকে আমীর বানিয়ে দেয়া হয়,যার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কোনো যোগ্যতা নেই অর্থাৎ সে যেমনিভাবে কুৎসিত, তেমনিভাবে সল্পবুদ্ধি সম্পন্ন, তবুও তোমাদেরকে তার আনুগত্য করে যেতে হবে এবং তাকে বরখাস্ত করার জন্য আন্দোলনে নামা যাবে না। কারণ এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
এখানে উক্ত হাদিসের যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেটা অত্যন্ত দুর্বল কারণ আমরা স্পষ্ট এমন অনেক হাদিস পাই যেখানে যোগ্যতার জন্য ক্রীতদাসকে আমীর বানিয়ে দেয়া হয়েছিল অর্থাৎ হাদিসে নবীজি (সা) ক্রীতদাস যদি আমীর হয় ও সঠিক নেতৃত্ব দেয় তবে তাকেও মানতে হবে এই উদ্দেশ্যই বলা হয়েছে। অন্য হাদিসে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে কালো গোলাম যদি কুরআন সুন্নাহ মতাবেক নেতৃত্ব দেয় তাহলে তার কথা শুনতে ও আনুগত্য করতে হবে। হাদিস গুলো পড়ুন তাহলেই বুঝতে পারবেন।
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৭০৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
উম্মুল হুসাইন আল-আহ্সামিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে খুতবা দিতে শুনেছি। তখন তাঁর গায়ে একটি চাদর ছিল। তিনি তাঁর বগলের নিচে এটা পেচিয়ে রেখেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর বাহুর গোশতপিন্ডের দিকে আমি তাকিয়ে দেখলাম তা দোল খাচ্ছে। আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ উপস্থিত জনমন্ডলী! আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় কর। যদি তোমাদের নেতা হিসাবে কোন নাক-কান কাটা হাবশী ক্রীতদাসকেও নিযুক্ত করা হয়, তবে সে তোমাদের জন্য যে পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলার কিতাবের ফায়সালা প্রতিষ্ঠিত রাখবে সে পর্যন্ত তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর-।ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৬৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়ন-এর দাদী উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাবী ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়ন বলেন যে, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি- আমি বিদায় হজ্জে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জ আদায় করি। তিনি (রাবী) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন অনেক কথাই বলেছিলেন। এরপর আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, যদি তোমাদের উপর কোন হাত-পা কাটা গোলামকেও ‘আমীর নিযুক্ত করা হয় ইয়াহ্ইয়া ইবনু হুসায়ন বলেন- আমার ধারণা হয় তিনি (দাদী আরও) বলেছেন- কালো অর্থাৎ- কৃষ্ণকায় হাবশী গোলাম আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালিত করে তবে তোমরা তার কথা শুনবে এবং মানবে।- ihadis.com
সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৪১৯২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইয়াহ্ইয়া ইব্ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি আমার দাদীকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বিদায় হজ্জের সময় বলতে শুনেছিঃ যদি তোমাদের কোন উপর হাবশী দাসকেও শাসক নিযুক্ত করা হয়, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহ্র কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করেন, তখন তোমার তার কথা শুনবে; তার আনুগত্য করবে।-ihadis.com
মূর্খ নাস্তিকদের কাছে প্রশ্ন থাকবে। এসব হাদিসে কি এটা বলা হয়েছে যে হাবশি কালো রঙের তাই আজ থেকে আমরা সমস্ত হাবশিদেরকে ঘৃণা করবো তাদেরকে হত্যা করবো, নির্যাতন করবো? না। বরং আমরা উলটো দেখতে পাচ্ছি হাদিসে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করার দিকেই বুঝানো হয়েছে অর্থাৎ তোমাদেরকে সঠিক নেতৃত্ব যদি কালো হাবশিও দেয় তবে তার কথা শুনবে মানে সে কালো বলে ঘৃণা না করে বরং তার আনুগত্য করবে। হাদিসে যে কালো হাবশিকে অপমানের উদ্দেশ্যে বলা হয়নি সেটার স্পষ্ট প্রমাণ এই হাদিস গুলো যেখানে যোগ্য ক্রীতদাসকে আমীর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। হ্যাঁ মূর্খ নাস্তিকরা এসব হাদিস ভালো করে পাঠ করে সত্যিটা জেনে নেও। আর কতো ইসলাম নিয়ে ভুল বুঝবা?
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১৭৮২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
'আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃনাফি ইবনু 'আবদুল হারিস (রাঃ) 'উসফান নামক স্থানে 'উমার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। 'উমার (রাঃ) তাকে মাক্কায় রাজস্ব আদায়কারী নিয়োগ করলেন। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন:তুমি প্রান্তরবাসীদের জন্য কাকে কাজে নিয়োগ করেছ? সে বলল- ইবনু আব্যা-কে। 'উমার (রাঃ) বললেন, ইবনু আব্যা কে? সে (নাফি) বলল, আমাদের আযাদকৃত ক্রীতদাসের একজন। উমার (রাঃ) বললেন, তুমি একজন ক্রীতদাসকেও তাদের জন্য তোমার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করেছ? নাফি বললেন- সে (ক্রীতদাসটি) মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিতাবের একজন ভাল ক্বারী বা 'আলিম। আর সে ফারায়িয শাস্ত্রেও অভিজ্ঞ। তখন 'উমার (রাঃ) বললেনঃ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,আল্লাহ তা’আলা এ কিতাব দ্বারা অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন আর অন্যদের অবনত করেন। অর্থাৎ যারা এ কিতাদের অনুসারী হবে তারা দুনিয়ায় মর্যাদাবান এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। আর যারা একে অস্বীকার করবে তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত ও পরকালে জাহান্নামে পতিত হবে।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২১৮,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
উমর (রা) থেকে বর্ণিত,নাফি’ বিন আবদুল হারিস, তিনি উস্ফান নামক স্থানে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। উমার (রাঃ) তাকে মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, গ্রামবাসী বেদুঈনদের জন্য তুমি কাকে প্রশাসক নিয়োগ করেছ? তিনি বলেন, আমি বিন আবযা (রাঃ)-কে তাদের প্রশাসক নিয়োগ করেছি। উমার (রাঃ) বলেন, বিন আবযা কে? তিনি বলেন, সে আমাদের একজন মুক্তদাস। উমার (রাঃ) বলেন, তুমি একজন মুক্তদাসকে কেন জনগণের প্রশাসক নিয়োগ করলে? তিনি বলেন, সে তো মহান আল্লাহ্র কিতাবের বিশেষজ্ঞ আলিম, ফারায়িয সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং উত্তম ফয়সালাকারী। উমার (রাঃ) বলেন, শোন! তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা এই কিতাবের দ্বারা কতক লোককে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং কতককে অবনমিত করেন।-ihadis.com
আমীরের কোন কিছু পছন্দ না হলেও ধৈর্য ধরার কথা বলা হয়েছে যাতে ঐক্যতার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি না হয়।
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৭০৫৩,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে, নবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যদি ‘আমীরের কোন কিছু অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে লোক সুলতানের আনুগত্য থেকে এক বিঘতও সরে যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলী যুগের মৃত্যুর মত।-ihadis.com
তাহলে পরিস্কার যে কালো হাবশির রঙকে অপমান করা হয়নি বরং সে যদি সঠিক নেতৃত্ব দেয় তাহলে সবার উচিত হবে তার নেতৃত্বকে অনুসরণ করা এটাই হাদিসের সঠিক অর্থ। যেখানে নবীজি (সা) এটা বলেছেন যে আরবদের উপর অনারবদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই সেখানে উনি ক্রীতদাসকে অপমানের উদ্দেশ্য কখনোই কোনো কথা বলবেন না। এটা নিয়ে সংশয় নেই। তাছাড়া সুরা হুজুরাত ৪৯:১১ আয়াতে বলা আছে যে, মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে- এই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। সুতরাং নবীজি (সা) কালো গোলামকে অপমানিত করার উদ্দেশ্য সেরকমটা বলবেন এটা ভুল কথা বরং সঠিক কথা হচ্ছে উনি বুঝিয়েছেন যদি নিগ্রো কালো হাবশিও যদি ও সঠিক নেতৃত্ব দেয় তাহলে তাকে কালো বলে ঘৃণা না করে বরং তার কথা সকল মুসলিমকে মানতে হবে। নাস্তিকরা যদি মনুষ্য বিবেক খাটাতে পারে তাহলে এই সহজ বিষয় বুঝতে পারবে।
কুরাইশ বংশের থেকে নেতা হবে এই হাদিস বর্ণবাদের উদাহরণ?
নাস্তিকদের প্রশ্নটি এই,
মেধা যোগ্যতা বুদ্ধিমত্তা নেতৃত্ব দেয়ার গুণ ইত্যাদির চাইতে যদি কোন কোন গোত্র জন্মগতভাবেই শাসন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, এরকম ধারণাবশত শাসন ক্ষমতায় কোন নির্দিষ্ট গোত্র বা বংশের মানুষকেই বসাতে হয়,এটি বর্ণবাদের অন্তর্ভূক্ত। তাহলে ইসলামে বর্ণবাদ নেই কিভাবে?
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৪৪৯৫,৪৪৯৬,সহিহ হাদিসঃআবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “জনগণ প্রশাসনিক ব্যাপারে কুরায়শদের অনুসারী। মুসলিমরা তাঁদের মুসলিমদের এবং কাফিররা তাঁদের কাফিরদের অনুসারী।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৪৫৯৭,সহিহ হাদিসঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকজন ভাল-মন্দ উভয় ব্যাপারেই কুরায়শদের অনুসারী।-ihadis.com
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৭১৪০,সহিহ হাদিসঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ খিলাফাতের এই বিষয়টি সব সময় কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে,যতদিন তাদের থেকে দু’জন লোকও অবশিষ্ট থাকবে।সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৪৫৯৮,সহিহ হাদিসঃ-ihadis.com
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৭১৩৯,সহিহ হাদিসঃ মুহাম্মাদ ইব্নু যুবায়র ইব্নু মুতঈম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বর্ণনা করেন যে, তারা কুরাইশদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে মু’আবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট ছিলেন। তখন মু’আবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট সংবাদ পৌছল যে, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আম্র (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, অচিরেই কাহতান গোত্র থেকে একজন বাদশাহ্ হবেন। এ শুনে তিনি ক্রুদ্ধ হলেন এবং দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আল্লাহ্ তা’আলার যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন, তারপর তিনি বললেন, যা হোক! আমার নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, তোমাদের কিছু লোক এমন কথা বলে থাকে যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই এবং যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত নেই। এরাই তোমাদের মাঝে সবচেয়ে জাহিল। সুতরাং তোমরা এ সকল মনগড়া কথা থেকে যা স্বয়ং বক্তাকেই পথভ্রষ্ট করে- সতর্ক থাক। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, (খিলাফতের) এ বিষয়টি কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যদ্দিন তারা দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকবে। যে কেউ তাদের বিরোধিতা করে তবে আল্লাহ্ তাকেই অধোমুখে নিপতিত করবেন।-ihadis.com
যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কুরাইশ হওয়ার কারণে নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকবে-এই কথা কি নবীজি (সা) অথবা উনার কোন সাহাবীগণ বলেছিলেন? অথচ সহিহ বুখারী,হাদিস ৭১৩৯,সহিহ হাদিসে যেখানে বলা হচ্ছে খিলাফতের বিষয়টি কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে,যদ্দিন তারা দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকবে। তাহলে এই হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট যে কুরাইশরা ইসলামের শরিয়া মোতাবেক নেতৃত্ব দিতে এক্সপার্ট ছিল বিধায় নবীজি (সা) নেতৃত্ব দেবার কঠিন দায়িত্বটি তাদের হাতে দিয়েছেন। তাই শুধুমাত্র কুরাইশ হওয়ার কারনেই তাদেরকে নেতৃত্ব দিতে বলেছেন এটা নাস্তিকদের বানানো ব্যাখ্যা ও বিবর্তনবাদীদের হাদিস না বুঝার মূর্খতা।
আরেকটি হাদিস পড়ুন। কুরাইশরা যদি সঠিক ভাবে নেতৃত্ব না দেয় এই ক্ষেত্রে নবীজি (সা) কুরাইশদের যে যে হুমকি দিয়েছেন। হাদিস সম্ভার,হাদিসঃ১৮০৩,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“এই নেতৃত্ব থাকবে কুরাইশদের মাঝে। যতক্ষণ তাদের কাছে দয়া ভিক্ষা করা হলে তারা দয়া করবে,বিচার করলে ইনসাফ করবে,বিতরণ করলে ন্যায়ভাবে করবে। তাদের মধ্যে যে তা করবে না,তার উপর আল্লাহ,ফেরেশতামণ্ডলী এবং সমস্ত মানবমণ্ডলীর অভিশাপ। তার নিকট থেকে নফল-ফরয কোন ইবাদতই কবূল করা হবে না।”-ihadis.com
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে যে যদি কুরাইশরা মানুষের প্রতি দয়া না করে, ইনসাফ না করে, ন্যায়ভাবে বিতরণ না করে তাদের নেতৃত্ব তো বাতিল হবেই সাথে সাথে আল্লাহ,ফেরেশতামণ্ডলী এবং সব মানুষের অভিশাপ আর তাদের ইবাদত কবুলও হবে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এসব হাদিস পড়াশোনা না করেই যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কুরাইশ হওয়ার কারণে নেতৃত্ব তাদের হাতে দেয়া অন্যায়- এরকম মিথ্যা দাবি করে ইসলামের সাথে মিশিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য কি? আরেকটি হাদিসে নবীজি (সা) আরো বদদোয়া দিয়েছেন যে কেউ উম্মতের দায়িত্ব নিয়ে যদি কষ্টে ফেলে তাহলে যে দায়িত্ব নিয়েছে সেও যেন কষ্ট পায়। এখানে কি এটা বলা আছে যে জন্মগত কুরাইশ হওয়ার কারণে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই নেতৃত্ব দিতে পারবে?
হাদিস সম্ভার,হাদিসঃ ১৮১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার এই ঘরে বলতে শুনেছি, “হে আল্লাহ! যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে কষ্টে ফেলবে, তুমি তাকে কষ্টে ফেলো। আর যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদের সাথে নম্রতা করবে, তুমি তার সাথে নম্রতা করো।”-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৪৬১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ন্যায় বিচারকগণ কিয়ামাতের দিন আল্লাহর নিকটে নূরের মিম্বারসমূহে মহামহিম দয়াময় প্রভুর ডানপার্শ্বে উপবিষ্ট থাকবেন। তাঁর উভয় হাতই ডান হাত (অর্থাৎ- সমান মহিয়ান)। যারা তাদের শাসনকার্যে তাদের পরিবারের লোকদের ব্যাপারে এবং তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বসমূহের ব্যাপারে সুবিচার করে।-ihadis.com
যদি যোগ্যতাহীন হওয়া সত্ত্বেও স্রেফ কুরাইশ হওয়ার কারণে নেতৃত্ব প্রদান করার কথা উক্ত হাদিসের অর্থ হতো তাহলে নবীজি (সা) কখনোই কুরাইশদেরকে ইনসাফ করার কথা বলতেনই না। এমনকি নেতৃত্বের লোভ করলে তাকেও নেতা বানানো যাবে না। এসব কথা নবীজি (সা) বলতেন না। হাদিস গুলো পড়ুন।
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৪৬১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,একদা আমি এবং আমার দু’চাচাত ভাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম। দু’জনের একজন বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সমস্ত রাজ্যের কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন তার কতক অংশে আমাদেরকে প্রশাসক নিযুক্ত করুন। অপরজনও অনুরূপ বলল। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমরা এমন কাউকে নেতৃত্বে বসাই না, যে সেটির জন্য প্রার্থী হয় এবং যে তার জন্য লালায়িত হয়।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৩৫৭৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমরা কখনো আমাদের কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ করবো না যে উক্ত পদের জন্য লালায়িত হয়।-ihadis.com
কুরাইশরা নেতৃত্ব নেবার জন্য এক্সপার্ট ছিল বিধায় তাদেরকে রাজত্বের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে আর রাজত্ব থেকে আজান দেয়া সহজ বিধায় হাবশী বা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কারণ তারা ক্রীতদাসরা তেমন নেতৃত্ব নেবার জন্য উপযুক্ত ছিল না। তবে যেসব ক্রীতদাস উপযুক্ত ছিল তাদেরকে যোগ্যতার জন্য আমীর বানিয়ে দেয়া হয়ছিল এসব হাদিস তো আগেই পড়েছেন। আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে যদি কালো রঙের কারণে ক্রীতদাসদের ঘৃণা করা হতো তাহলে আজান দেবার মতো একটি মহান কাজ নবী মোহাম্মদ (সা) তাদেরকে কেন দিলেন?
জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ৩৯৩৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ রাজত্ব কুরাইশদের মাঝে, বিচার–বিধান আনসারদের মধ্যে, সুমধুর সুরে আযান হাবশীদের মাঝে এবং আমানতদারী আয্দ অর্থাৎ ইয়ামানবাসীদের মাঝে।-ihadis.com
তাই একজন বাঙালি মানুষ নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বেশি যোগ্য। অথচ, যোগ্যতা থাকার পরেও সে কুরাইশ না হওয়ার কারণে খলিফা হতে পারবে না- এই ধরণের নিন্মমানের ফালতু গোঁজামিল দিয়ে নাস্তিকান্ধরা মানুষকে ধোঁকা দেবার তেমন কোনো সুবিধা আদায় করার সুযোগ নেই। তাছাড়া উপরে এমন হাদিস আমি পেশ করে দেখিয়েছি যে কুরাইশরা যদি যোগ্য নেতৃত্ব না দিতে পারে তাহলে তাদের জন্য অভিশাপ রয়েছে আর একজন কৃতদাস যদি যোগ্য হয় এবং সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে আর তাকেও যদি নেতা বানানো হয় তবে তাকেই নেতা হিসেবে মেনে নিতে সবাই বাধ্য। এসব হাদিসের সাথে বর্ণবাদের বিন্দুমাত্র লেনদেন নেই।
নবী মোহাম্মদ (সা) বংশের প্রশংসা করে বর্ণবাদী আচরণ করেছেন?
নাস্তিকরা বলে,
বর্ণবাদ শুধুমাত্র যে কোন বংশ বা গোত্র বা জাতিকে নিচু দেখালে হয় তা নয়, কোন জাতিকে অন্য জাতির চাইতে কোন না কোন ভাবে শ্রেষ্ঠ এরকম বলা হলেও সেটি বর্ণবাদ। হাদিসে নবী মোহাম্মদ (সা)এর বংশের প্রশংসা করা হয়েছে, এবং তার বংশকে সবচাইতে উঁচু স্থান দেয়া হয়েছে। নিচের হাদিসটি পড়ুন-
জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ৩৯০৫,হাসান হাদিসঃ মুহাম্মাদ ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে তাঁর বাবা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ কুরাইশদেরকে অপদস্ত করার ইচ্ছা করবে,আল্লাহ তাকে অপদগ্রস্ত করবেন।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৫৮৩২, সহিহ হাদিসঃ আবূ ‘আম্মার শাদ্দাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি ওয়াসিলাহ্ ইবনু আসকা’ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেনঃ মহান আল্লাহ ইসমা’ঈল (‘আঃ)-এর সন্তানদের থেকে ‘কিনানাহ্’-কে চয়ন করে নিয়েছেন, আর কিনানাহ্ (’র বংশ) হতে,‘কুরায়শ’-কে বাছাই করে নিয়েছেন আর কুরায়শ (বংশ) হতে বানূ হাশিমকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং বানূ হাশিম হতে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন।-ihadis.com
আগেই বলা হয়েছে সে বর্ণবাদের সংজ্ঞা চুরান্ত নয় সেহেতু একটি সংজ্ঞাকে চুরান্ত হিসেবে ধরে নিয়ে সেটা ইসলামের দিকে চাপিয়ে প্রয়োগ করা মিথ্যা ছাড়া কিছু না। বংশের প্রশংসা করার অর্থ কি এটা যে অন্য সব বংশ খারাপ? উক্ত এখানে কি অন্য বংশকে খারাপ বলা হয়েছে? না। ধরুন আমি বললাম আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি এর অর্থ কি এটা যে দুনিয়ার বাকি সব দেশকে আমি ঘৃণা করি? না। ঠিক একইভাবে এখানে কুরাইশ বংশের প্রশংসা করা হয়েছে এর অর্থ এটা নয় যে বাকি বংশকে খারাপ বা নিচু বলা হয়েছে। যেহেতু হাদিসে অন্য বংশকে অপমান করা হয়নি ,খারাপ বলা হয়নি এমনকি অন্য কোন বংশকে ঘৃণা করতে হবে এই কথাও উক্ত হাদিসে নেই সেহেতু এই হাদিস দিয়ে ইসলাম বর্ণবাদকে সমর্থন করে এই মিথ্যাকথা বলার সুযোগ নেই। কেউ কুরাইশদেরকে অপদস্ত করার ইচ্ছা করবে,আল্লাহ তাকে অপদগ্রস্ত করবেন এর অর্থ এটা কিভাবে হয় যে কুরাইশ বংশ শ্রেষ্ঠ আর সব বংশ নিকৃষ্ট? আর অন্য বংশ থেকে যদি কুরাইশকে বাছাই করে নেয়াও হয় এরথেকেও এটা কিভাবে প্রমাণ হয় যে অন্য বাকি সব বংশ নিকৃষ্ট? নাস্তিকান্ধদের দাবির সাথে প্রমাণের বিন্দুমাত্র সাদৃশ্য নেই কেন?
ধরুন একটি এলাকায় বিজ্ঞানীরা যেমন আছে আবার সাধারণ মানুষরাও রয়েছে। ধরুন একজন মানুষ নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবি করে এবং তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো আপনি বিজ্ঞানী নাকি সাধারণ মানুষকে পছন্দ করবেন? যে জবাবে বলল আমি বিজ্ঞানীদেরকে প্রছন্দ করবো। আচ্ছা পাঠক বলুন তো উক্ত বিজ্ঞানমনস্ক লোকের বিজ্ঞানীদের পছন্দ করে বেছে নেয়া কি এটা বুঝায় যে বাকি সাধারণ মানুষদের সবাইকে ঘৃণা করে? অথবা বিজ্ঞানীদেরকে পছন্দ করার কারণে সে অন্য সবাইকে ঘৃণা করতে বলেছে অথবা নিজে ঘৃণা করেছে? উত্তর হচ্ছে না। আবার উদাহরণ স্বরূপ ধরুন আপনি আপনার মাকে বেশি ভালোবাসেন এর অর্থ কি এটা যে বাবাকে বেশি ঘৃণা করেন অথবা বেশি ভালোবাসেন না? উত্তর হচ্ছে না।
ঠিক একইভাবে কুরাইশ বংশকে বেছে নেয়া অর্থ এটা নয় যে অন্য বংশ নিকৃষ্ট তাই সব বংশকে ঘৃণা করতে হবে। কুরআন-হাদিসে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না সেখানে এটা বলা আছে যে কুরাইশ বংশ যেহেতু উত্তম তাই অন্য বংশ নিকৃষ্ট আর সেই বংশের সব মানুষ নিকৃষ্ট জাহান্নামী।
নবী মোহাম্মদ (সা) অন্য বংশকে অপমান করেন নাই সেটার স্পষ্ট প্রমাণ এটা,সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ১৩০, সহিহ হাদিসঃ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দু’টো স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যা কুফ্র বলে গণ্য বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করা।-ihadis.com
গ্রামের মানুষ কখনোই সাক্ষ্য দিতে পারবে না?
নাস্তিকরা বলে,
ইসলাম একইসাথে গ্রামের মানুষ এবং শহরের মানুষের মধ্যে পার্থক্য করে। গ্রামবাসী যদি কোন আদালতে সাক্ষ্য দেয়, তার বিপরীতে যদি কোন শহরবাসী সাক্ষ্য দেয়, শহরবাসী ব্যক্তির সাক্ষ্যই সেখানে গ্রহণ করা হবে, শুধুমাত্র তার শহরবাসী হওয়ার কারণে। এর অর্থ কী? একজন গ্রামবাসী হলেই মিথ্যাবাদী, আর আরেকজন শহরবাসী হলেই সত্যবাদী, কোথায় বসবাস করে তার ওপর ভিত্তি করে তার সাক্ষ্যের সত্যতা নির্ধারণ অযৌক্তিক নয়?
সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৩৬০২,সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন: শহরে বসবাসকারী লোকের জন্য জঙ্গলে, গ্রামে বা মরুভূমিতে বসবাসকারী লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩৬৭, সহিহ হাদিস।-ihadis.com
বিবর্তিত প্রাপ্ত মস্তিস্ক এসব হাদিসের মর্মার্থ ধরতেই পারবে না এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। হাদিসটি আবার পড়ুন শহরে বসবাসকারী লোকের জন্য জঙ্গলে, গ্রামে বা মরুভূমিতে বসবাসকারী লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। এই হাদিসের মর্মার্থ হচ্ছে গ্রাম্য বা মরুভূমিতে বসবাসকারী লোকদের তো শহরের বসবাসকারী লোকদের বিষয় বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। ধারণা নেই। খেয়াল করুন এখানে কিন্তু এটা বলা হচ্ছে না যে তোমরা যারা শহরে থাকো তাদের আত্মীয়স্বজন গ্রামের বা মরুভূমিতে বসবাসকারী মানুষ হলে তাদের সাক্ষ্য নেয়া যাবে না। যেহেতু শহরে বসবাসকারী লোকদের বিষয় গ্রামের বা মরুভূমিতে বসবাসকারী লোকদের জানা সম্ভব না সেহেতু তাদের সাক্ষ্য নেয়া যাবে না।এই হাদিসে কি এটা বলা হয়েছে যে শহরে বসবাসকারী গ্রাম্যলোকের সাক্ষ্য নেয়া যাবে না? তাহলে উক্ত হাদিসটি নিয়ে মিথ্যাচার করার উদ্দেশ্য কি?
এমন কিছু হাদিস পড়া যাক যেখানে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়াকে বড় পাপ বলে গণ্য করা হয়েছে আর বাদীকে সাক্ষ্য প্রমাণ করতে হাজির করতে বলা হয়েছে অথচ স্রেফ গ্রামের লোক বলে সাক্ষ্য দেয়া যাবে না বা প্রমাণ হাজির করা যাবে না এমন কথা হাদিসে বলা নেই। এর অর্থ একজন গ্রামের মানুষের নিঃসন্দেহে সুবিচার পাওয়ার অধিকার ইসলাম প্রদান করবে।
বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ১৪০৪, সহিহ হাদিসঃ
নাবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকে বড় পাপ বলে গন্য করেছেন।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৩৪১, সহিহ হাদিসঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এক ভাষণে বলেছেনঃ বাদীর দায়িত্ব হচ্ছে সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা এবং বিবাদীর দায়িত্ব হচ্ছে শপথ করা।-ihadis.com
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ২৬৫৩,সহিহ হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে কাবীরাহ গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।-ihadis.com
নাস্তিকান্ধদের মিথ্যা ব্যাখ্যা অনুযায়ী শহরের লোক হওয়া মানেই সত্যবাদী ও গ্রামের লোক মানেই যদি মিথ্যাবাদী - এটাই যদি উক্ত হাদিসের অর্থ হয়ে থাকে তবে এসব হাদিসে কেন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়াকে বড় গুনাহের মধ্যে গণ্য করা হলো? আরেকটি হাদিস পড়ুন যেখানে আলী (রা) কে বিচার কিভাবে করতে হবে সেটা স্পষ্ট শিক্ষা দিচ্ছেন নবী মোহাম্মদ (সা)। অথচ শহরবাসী হলে সত্যবাদী আর গ্রামের মানুষ হলেই মিথ্যাবাদী এরকম কিছুই বলেন নাই। কেন? তাহলে এটা কি স্পষ্ট না যে যেসব গ্রামেরবাসী শহরবাসীদের বিষয় স্পষ্ট ধারণা রাখতো না তাদের সাক্ষ্য নেয়া যাবে না? পাঠকদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৫৮২,হাসান হাদিসঃ
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ইয়ামানে বিচারক হিসাবে প্রেরণ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি আমাকে বিচারক করে ইয়ামানে পাঠাচ্ছেন, অথচ আমি একজন নব যুবক, বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমার অন্তরকে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে পথ দেখাবেন এবং তোমার কথাকে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। যখন তোমার সামনে বাদী-বিবাদী বসবে তখন তুমি যেভাবে এক পক্ষের বক্তব্য শুনবে অনুরূপভাবে অপর পক্ষের বক্তব্য না শোনা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নিবে না। এতে তোমার সামনে মোকদ্দমার আসল সত্য প্রকাশিত হবে। ‘আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সন্দেহে পতিত হইনি।-ihadis.com
গ্রামবাসী হলেই মিথ্যাবাদী ও শহরবাসী হলেই সত্যবাদী যদি এটাই উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা হয় তাহলে এই হাদিসের মিথ্যা অর্থ কিভাবে করবে নাস্তিকান্ধরা? সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৩২০, সহিহ হাদিসঃ
বনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো যুলুমমূলক মামলায় সহযোগিতা করে অথবা যুলুমে সহায়তা করে, তা থেকে নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বদাই সে আল্লাহর গযবে নিপতিত থাকে।-ihadis.com
অন্য হাদিসে একজন বিচারক কিভাবে বিচার করবেন সেই বিষয় বলা হয়েছে, সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৩৫৭৩, সহিহ হাদিসঃ
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতী এবং অপর দুই প্রকার বিচারক জাহান্নামী। জান্নাতী বিচারক হলো, যে সত্যকে বুঝে তদনুযায়ী ফায়সালা দেয়। আর যে বিচারক সত্যকে জানার পর স্বীয় বিচারে জুলুম করে সে জাহান্নামী এবং যে বিচারক অজ্ঞতা প্রসূত ফায়সালা দেয় সেও জাহান্নামী।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৩৫৮৯, সহিহ হাদিসঃ
আবূ বাক্রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি তার পুত্র ‘আবদুর রহমানকে এ মর্মে লিখলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন বিচারক যেন রাগান্বিত অবস্থায় দু’পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দেন।-ihadis.com
যদি কোনো বিচারক তার বিচার কাজে গ্রামের লোকের সাক্ষ্য চায় যেই সাক্ষ্যর ফলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে তাহলে অবশ্যই গ্রাম্যলোকের সাক্ষ্য নেয়া যাবে। এই হাদিস গুলো পড়ুন। কারণ নাস্তিকরা কখনো পুরো হাদিস গুলো আপনাদেরকে জানতে দিতে চাইবে না।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ২৯৭, সহিহ হাদিসঃ
মুআবিয়া (রাঃ) মুগীরা (রাঃ)-কে লিখে পাঠান, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যে হাদীস তুমি শুনেছো তা আমাকে লিখে পাঠাও। মুগীরা (রাঃ) লিখেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গুজব ছড়াতে, সম্পদ ধ্বংস করতে, অধিক যাঞ্চা করতে, অপরের প্রাপ্য অধিকার বাধাগ্রস্ত করতে, মাতাদের অবাধ্যাচারী হতে এবং কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করতে নিষেধ করেছেন।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ২৩২৯, সহিহ হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনু বুস্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ কোন এক গ্রাম্য লোক প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? তিনি বললেনঃ যে দীর্ঘ জীবন লাভ করেছে এবং তার কর্মকান্ড সুন্দর হয়েছে।-ihadis.com
তাহলে যেখানে নবীজি (সা) নিজে এই শিক্ষা দিচ্ছেন যে অপরের প্রাপ্য অধিকারে বাধাগ্রস্থ না করতে এবং শ্রেষ্ঠ মানুষ সেই লোক যার জীবনের কর্মকান্ড সুন্দর সেখানে গ্রাম্যলোক মানেই মিথ্যাবাদী তাই তার সাক্ষ্য নেয়া যাবে না এই কথার কোন ভিত্তি নেই। নাস্তিকান্ধরা যে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যাব্যাখ্যা করেছে সেটার আরো প্রমাণ এই হাদিস গুলো, সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৩৬০০,হাসান হাদিসঃ
আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খিয়ানতকারী ও খিয়ানতকারীনীর সাক্ষ্য এবং নিজের ভাইয়ের সাথে শত্রুতা পোষণকারীর সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি কোন পরিবারের অধীনস্থ খাদেম ও আশ্রিত ব্যক্তির সাক্ষ্যও বর্জন করেছেন, তবে অন্যের পক্ষে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য বলেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, গিম্র অর্থ হলো শত্রুতা; কানি' অর্থ আশ্রিতজন, অধীনস্থ, বিশেষ ভৃত্যের মত।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৩৬০১,হাসান হাদিসঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: খিয়ানাতকারী ও খিয়ানাতকারীনী, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারীনী এবং কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি হিংসা পোষণকারীর সাক্ষ্য বৈধ নয়।-ihadis.com
হাদিসের অর্থ যদি শহরবাসী মানেই সত্যবাদী হতো তাহলে এসব হাদিসে এটা বলাই হতো না যে খেয়ানতকারী, মিথ্যুক, হিংসুক, একে অপরের সাথে শত্রুতা পোষণকারীর সাক্ষ্য বাতিল বরং এটা বলা হতো যে শহরবাসী মিথ্যুক হলেও তার সাক্ষ্য নেয়া যাবে, শহরবাসী হিংসুক হলেও তার সাক্ষ্য নেয়া যাবে। অথচ এরকম হাদিসে বলাই নেই। এসব সহজ কথাও যদি বিবর্তিত মস্তিস্ক গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এর দায়ভার আমি নিতে যাবো কেন?
যে ব্যক্তি এমন জিনিস দাবি করবে যা তার নয় তাহলে সে জাহান্নামে যাবে তাহলে বুঝা যাচ্ছে একজন গ্রাম্যলোক যদি শহরবাসীর পক্ষে মিথ্যা সাক্ষী দেয় অথবা শহরবাসী যদি গ্রাম্যলোকের বিরুদ্ধেও মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে কিছু দাবি করে তাহলে এরা কেউই নবীজি (সা) এর দলের অন্তরভুক্ত হবে না বরং জাহান্নামে যাবে। হাদিসটি পড়ুন।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৩১৯, সহিহ হাদিসঃ
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন জিনিস দাবি করে যা তার নয়। সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান বানিয়ে নেয়।-ihadis,com
বদদোয়া করেছিলেন নবী মোহাম্মদ (সা) এটি বর্ণবাদী আচরণ?
নাস্তিকরা বলে,
দুর্ভিক্ষ একটি ভয়াহব ব্যাপার। একজন সভ্য মানুষ হিসেবে আমি আমার চরম শত্রুকেও দুর্ভিক্ষের অভিশাপ দিতে পারি না। কারণ কোন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ হলে সেখানে দলে দলে শিশুরা মারা যায়, নারী এবং বৃদ্ধরা মারা যায়, প্রতিবন্ধীরা মারা যায়। এমনকি, কেউ চিহ্নিত অপরাধী হয়ে থাকলেও, দুর্ভিক্ষে না খেতে পেয়ে কেউ তিলে তিলে মারা যাক, এমনটাও আমি কখনো কামনা করি না। আমার চরম শত্রুও যদি দুর্ভিক্ষের সময় আমার কাছে একটু খাদ্য চায়, আমি তাকে খাদ্য দেবো; যদি আমার কাছে থাকে। ধর্ম বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তাকে সাহায্য করবো না। তার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে মাথাই ঘামাবো না। তাদের অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ হোক, এমনটা কামনা করা বা এমনটা অভিশাপ দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
নিচের হাদিস দুইটি পড়ুন, যেখানে নবী মুহাম্মদ মুযার গোত্রের ওপর অভিশাপ দিচ্ছে, যেন তাদের অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ হয়। তর্কের খাতিরে ধরে নিই, মুযার গোত্রের কোন একজন খুব চরম কোন অন্যায় করেছিল। কিন্তু সেই একজন বা কয়েকজনার অপকর্মের দায়ে পুরো গোত্র সুদ্ধ মানুষকে অভিশাপ দেয়া, যেখানে নারী শিশু প্রতিবন্ধী মানুষ সকলেই আছে, তাদের সকলকে দুর্ভিক্ষের অভিশাপ দেয়া যেন, তারা সকলে মিলে খাবার অভাবে কষ্ট পেয়ে তিলে তিলে মারা যায়, এগুলো কীভাবে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে,আমি জানি না।
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ১০০৬,সহিহ হাদিসঃআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শেষ রাকআ’ত হতে মাথা উঠালেন, তখন বললেন, হে আল্লাহ্! আইয়্যাশ ইব্নু আবু রাবী’আহ্কে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ্! সালামাহ্ ইব্নু হিশামকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ্! ওয়ালীদ ইব্নু ওয়ালীদকে রক্ষা কর। হে আল্লাহ্! দূর্বল মুমিনদেরকে মুক্তি কর। হে আল্লাহ্! মুযার গোত্রের উপর তোমার শাস্তি কঠোর করে দাও। হে আল্লাহ্! ইউসুফ (আ)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর মত (এদের উপরে) ও কয়েক বছর দুর্ভিক্ষ দাও। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বললেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা কর। আর আসলাম গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে নিরাপদ রাখ। ইব্নু আবু যিনাদ (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বলেন, এ সমস্ত দু’আ ফজরের সালাতে ছিলো।-ihadis.com
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ১০০৭,সহিহ হাদিসঃ ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন লোকদেরকে ইসলাম বিমুখ ভূমিকায় দেখলেন, তখন দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ (আ.)-এর সময়ের সাত বছরের (দুর্ভিক্ষের) ন্যায় তাদের উপর সাতটি বছর দুর্ভিক্ষ দাও। ফলে তাদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ আপতিত হল যে, তা সব কিছু্ই ধ্বংস করে দিল। এমন কি মানুষ তখন চামড়া, মৃতদেহ এবং পচা ও গলিত জানোয়ারও খেতে লাগল। ক্ষুধার তাড়নায় অবস্থা এতদূর চরম আকার ধারণ করল যে, কেউ যখন আকাশের দিকে তাকাত তখন সে ধোঁয়া দেখতে পেত। এমতাবস্থায় আবূ সুফিয়ান (ইসলাম গ্রহণের পূর্বে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! তুমি তো আল্লাহ্র আদেশ মেনে চল এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ দান কর। কিন্তু তোমার কওমের লোকেরা তো মরে যাচ্ছে। তুমি তাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট দু‘আ কর। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ “তুমি সে দিনটির অপেক্ষায় থাক যখন আকাশ সুস্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে...সেদিন আমি প্রবলভাবে তোমাদের পাকড়াও করব”- (সূরা দুখান ৪৪/১০-১৬)। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, সে কঠিন আঘাতের দিন ছিল বদরের যুদ্ধের দিন। ধোঁয়াও দেখা গেছে, আঘাতও এসেছে। আর মক্কার মুশ্রিকদের নিহত ও গ্রেফতার হওয়ার যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তাও সত্য হয়েছে। সত্য হয়েছে সূরা রূম-এর এ আয়াতও (রুমবাসী দশ বছরের মধ্যে পারসিকদের উপর আবার বিজয়ী হবে)।-ihadis.com
একইসাথে, কোন বিশেষ মানুষ বা কয়েকজন মানুষের ভাল কোন কাজের জন্য পুরো গোত্রের মানুষের জন্য নবী মুহাম্মদ দোয়া করতেন। এটিও তো অবিচার। কারণ সেই অঞ্চলে একজন চরম অপরাধীও থাকতে পারে। সেই অপরাধীও শুধুমাত্র ঐ গোত্রে জন্ম নেয়ায় কিছু না কিছু বরকত পেয়ে গেল। যা তার আসলে প্রাপ্য ছিল না। কাউকে বিনা অপরাধে শাস্তি দেয়াও যেমন অন্যায়, একইভাবে কাউকে বিনা কর্মে পুরষ্কৃত করাও তো অন্যায়?
জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ৩৯৫৩, সহিহ হাদিসঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ্! আমাদের শামদেশে বারাকাত দান করুন, হে আল্লাহ্! আমাদের ইয়ামানদেশে বারাকাত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নাজদের জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি পুনরায় বলেনঃ হে আল্লাহ্! আমাদের সিরিয়ায় বারাকাত দান করুন, আমাদের ইয়ামানদেশে বারাকাত দান করুন। এবারও লোকেরা বলল, আমাদের নাজদের জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি বললেনঃ সেখানে ভূমিকম্প, বিশৃঙ্খলা বা বিপর্যয় রয়েছে অথবা তিনি বলেছেনঃ সেখান হতেই শাইতানের শিং আবির্ভাব হবে।-ihadis.com
চতুষ্পদ জানোয়ার থেকে ধাপে ধাপে বিবর্তিত প্রাপ্ত মস্তিষ্কের নাস্তিক নিজেকে সভ্য মানুষ কোন যুক্তিতে দাবি করতে পারে? এটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমার চরম দুশমনকেও দুর্ভিক্ষের অভিশাপ দিতে পারি না-বলা কথিত বিজ্ঞানমনস্ক নাস্তিক লোকটির কাছে আমার প্রশ্ন হলো অভিশাপ দেয়া কি নাস্তিকদের কাছে বৈজ্ঞানিক? কাউকে দুর্ভিক্ষের অভিশাপ দিলে নাস্তিকতায় কি কবিরা গুনাহের সিস্টেম রাখা আছে নাকি? নাকি আপনি গোঁজামিল দিয়ে ইসলামের ভুল ধরবেন এজন্য অভিশাপ দিবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন? নাস্তিকরা যেহেতু দোয়া করাতে বিশ্বাস করে না সেহেতু একজন মানুষ পুরো দুনিয়ার মানুষের বিরুদ্ধেও যদি দোয়া করে সেটাও নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কিছু আসে যায় না। সুতরাং নাস্তিকতার দৃষ্টিতে উক্ত হাদিস গুলো নিয়ে অভিযোগ করাটাই ধাপ্পাবাজ নাস্তিকতার প্রমাণ।
নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ২২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধরে দেখা দিয়েছে মহামারীরুপে। পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস।
পাঠক আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন তবে মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদের কথা অনুযায়ী আপনি এই মুহূর্তেও মহামারীতে আক্রান্ত! শুধুই কি আপনি? পুরো দুনিয়াতে কোটি কোটি মানুষ যারা ধর্মে বিশ্বাস করে তারা সবাই একইসাথে বিশ্বাসের মহামারীতে আক্রান্ত- যাদের বইতে এই ধরণের কথাবার্তা পাওয়া যায় তারা নবী মোহাম্মদ (সা) এর দোয়া নিয়ে কষ্ট পেয়ে অভিযোগ করলে তাদের নাস্তিকতা নিয়ে সংশয় উঠে কারণ নাস্তিক্যবিশ্বাস মতে তো ভালো অথবা খারাপ যাই দোয়া করুক না কেন সেটার অস্তিত্ব নেই। অবিচারের আলাপ তো দূর কি বাত। তাহলে নাস্তিকরা নবীজি (সা)কে এর বদদোয়াকে এতো ভয় কেন পাচ্ছে?
ধরুন একজন নাস্তিকের নাম মগাচিফ। এখন একজন সনাতন ধর্মের লোক ওর জন্য পার্থনা করলো যে ওর যেন শূকরের গোস্ত ও ৫০ বোতল মদ খেতে খেতে টয়লেটে মৃত্যু হয়। এই ক্ষেত্রে উক্ত নাস্তিক যদি অভিযোগ করে যে এরকম পার্থনা কেন করা হলো এটা তো অবিচার? আমি তো আমার শত্রুকেও এরকম পার্থনা করবো না। - পাঠক খেয়াল করুন যেখানে এসব প্রার্থনা নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাসই করা হয় না সেখানে এসব পার্থনাকে অবিচার বলা বা কষ্ট পাওয়ার কোন যৌক্তিকতাই নাস্তিকতায় নেই। তাই নাস্তিক হিসেবে কোনো মানুষ দুর্ভিক্ষের জন্য দোয়া করেছে এসব নিয়ে কষ্ট পেয়ে অভিযোগ করার ভিত্তি নেই। বরং মুসলিমদেরকে ঘৃণা করার প্রমাণ। তাছাড়া নাস্তিক্যধর্মে কিন্তু গালাগালি করা বৈধতা রয়েছে।
পাঠক এবার আপনাকে ইসলামের দৃষ্টিতে উপরের হাদিস গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছি। নবীজি (সা) যে বদদোয়া করেছিলেন সেটার মুল কারণ ছিল,সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬২০০, সহিহ হাদিসঃ
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সলাতের রুকু থেকে মাথা তুলে দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি ওয়ালীদ, সালামাহ ইবনু হিশাম, আইয়্যাশ ইবনু আবী রাবী‘য়া এবং মক্কাহর দুর্বল মুসলিমদের শত্রুর জ্বালাতন থেকে মুক্তি দাও। আর হে আল্লাহ! মুযার গোত্রকে শক্তভাবে পাকড়াও করো। হে আল্লাহ্! তুমি তাদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ দাও, যেমন দুর্ভিক্ষ ইউসুফ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে দিয়েছিলে।
নাসরুল বারী শরহে বুখারী, ৯ খণ্ড,২০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
রাসুলে আকরাম (সা) চতুর্থ হিজরিতে সে সব কমজোর অসহায় মুসলমানদের মুক্তির জন্য দোয়া করেছিলেন যারা ছিলেন মক্কার কাফেরদের জুলুম-নির্যাতনের শিকার, যাদেরকে হিজরত করতে বারণ করা হয়েছিল। এতে প্রথমে বিশেষভাবে তিনজনের জন্য পরে সমস্ত দুর্বলদের জন্য ব্যাপক আকারে দোয়া করেছেন। আইয়াশ ইবনে রাবিয়া ছিলেন আবু জাহেলের মা শরীক (বৈপিত্রেয়) ভাই। সালামা ইবনে হিশাম ছিলেন আবু জাহেলের আপন ভাই আর ওলীদ ইবনে ওলীদ ছিলেন হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রা)এর ভাই। মক্কার অধিবাসী এ তিনজন যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন মক্কার কুরাইশ তাদেরকে হিজরতে বাধা দেয় এবং তাদেরকে কষ্ট দেয়। পরবর্তীতে নবীজি (সা) দোয়ার বরকতে তাদের মুক্তি হয়। তাঁরা হিজরতের সুযোগ লাগে ধন্য হন।
এসব তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে উগ্রবাদী কাফেররা মুসলিমদেরকে নির্যাতন-অত্যাচার করছিল এই ক্ষেত্রে তাদের জন্য বদদোয়া করা অবশ্যই অন্যায় হবে না। একটা জিনিস খেয়াল করেছেন ইসলামের বদনাম করার জন্য মুসলিমদেরকে যে নির্যাতন করা হয়েছিল এই তথ্যগুলো নাস্তিকরা ধামাচাপা দিয়েছে। এরপরেও অভিযোগ করেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ১৪২৮,সহিহ হাদিসের সুত্রে জানা যায় যখন উক্ত নির্যাতিত সাহাবীদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় তখন নবীজি (সা)ও দোয়া করা বন্ধ করে দেন।
এখন শেষের হাদিসের বিষয় বলি। প্রশ্ন হচ্ছে কোনো বিশেষ মানুষ বা কয়েকজন মানুষের ভাল কোনো কাজের জন্য পুরো গোত্রের মানুষের জন্য নবী মুহাম্মদ (সা) দোয়া করতেন এটি তো অবিচার - এই বিধান নাস্তিক্যধর্মের কোথায় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে? উক্ত হাদিসে নাজদের জন্য দোয়া করা হয়নি কিন্তু এই দোয়া কি করা হয়েছে যে ওদের খারাপ কাজের জন্য উপহার দেয়া হবে দুনিয়াতে? তাহলে কাউকে বিনা কর্মে পুরষ্কৃত করাও তো অন্যায়?- এই ধরণের নিন্মমানের গোঁজামিলযুক্ত প্রশ্নের মানে কি?
পাঠক একটি হাস্যকর বিষয় খেয়াল করেছেন, উপরে দেয়া হাদিসে হযরত মোহাম্মদ (সা) নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় যাই দোয়া করুক না কেন সেটা থেকে “ইসলামে বর্ণবাদ আছে” এটা কি নাস্তিকান্ধরা প্রমাণ করতে পেরেছে? না। নবী মোহাম্মদ (সা) কি উনার জীবনে কখনো এই দোয়া করেছেন যে হে আল্লাহ কালো রঙের মানুষদের কালো রঙ্গের কারণে জাহান্নামে দিয়ে দিন? এরপরেও কি বুঝতে পারেন নি নাস্তিকান্ধদের ভণ্ডামির মুক্তমনা কলাকৌশল গুলো? নাস্তিকরা সব সময় এভাবেই অর্ধেক তথ্য দেখিয়ে বাকি তথ্যকে ধামাচাপা দিয়ে ইসলামের সমালোচনা করে যাচ্ছে। এসব প্রতারণার শেষ কোথায়?
হযরত মোহাম্মদ (সা) নিজে সাদা ছিলেন তাই কালো রঙের মানুষকে ঘৃণা করতেন?
আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ৭৯৫, সহিহ হাদিসঃ আল-জুরাইরী (র) থেকে বর্ণিতঃ আমি আবুত তুফাইল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি নবী (সাঃ)-কে দেখেছেন? তিনি বলেন, হাঁ। আমার জানামতে যারা তাঁকে দেখেছেন আমি ছাড়া তাদের কেউ ভূপৃষ্ঠে বেঁচে নাই। তিনি ছিলেন ফর্সা ও লাবণ্যময় চেহারার অধিকারী।-ihadis.com
এই হাদিসের কোথাও এই কথা বলা নেই যে উনি সাদা ছিলেন দেখে কালো রঙের মানুষকে ঘৃণা করতেন। এমন একটি প্রমাণ দেখান যে নবীজি (সা) নিজে ফর্সা হওয়ার কারণে কালো রঙের মানুষ দেখে ঘৃণা করতেন বা সবাইকে ঘৃণা করতে বলেছেন অথবা কালো রঙের মানুষকে ঘৃণা করলে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে এরকম কিছু বলেছেন। কি পারবে তো নাস্তিকরা?
পাপ হিসেবে কালো রঙকে চিহ্নিত করা বর্ণবাদ?
নাস্তিকরা বলে, নবী মোহাম্মদ (সা) অনেক জায়গাতেই পাপ হিসেবে কালো রঙকে চিহ্নিত করেছে। আর পুন্য হিসেবে সাদা রঙকে চিহ্নিত করেছেন। যেমন ধরুন, হাজরে আসওয়াদ নামক পাথরটি জান্নাত থেকে যখন অবতীর্ন হয়েছিল, তখন সেটি ছিল দুধের থেকেও শুভ্র, মানে হচ্ছে পবিত্র এবং পাপমুক্ত। কিন্তু পৃথিবীর মানুষের পাপের কারণে এটি কালো রঙ ধারণ করে। তাছাড়া আরো হাদিসে আরো অনেকগুলো হাদিসে পাপকে কালো রঙের সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে, আর সাদাকে করা হয়েছে পুন্যের সাথে - এগুলো প্রমাণ করে ইসলাম কালো রঙকে ঘৃণা করে তাই ইসলামে কালো রঙের মানুষকে ঘৃণা করতে বলে তাহলে ইসলামে বর্ণবাদ নেই কিভাবে?
জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ৮৭৭,সহিহ হাদিসঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত হতে হাজরে আসওয়াদঅবতীর্ণ হয়েছিল দুধ হতেও বেশি সাদা অবস্থায়। কিন্তু এটিকে আদম সন্তানের গুনাহ এমন কালো করে দিয়েছে।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ৪২৪৪,হাসান হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুমিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার কলবে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর সে তওবা করলে, পাপ কাজ ত্যাগ করলে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার কলব পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। সে আরও গুনাহ করলে সেই কালো দাগ বেড়ে যায়। এই সেই মরিচা যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন (অনুবাদ) : “কক্ষনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং (মরিচা) ধরিয়েছে” (সূরা আল-মুতাফফিফীনঃ ১৪)। জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ৩৩৩৪, হাসান হাদিস / সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ২৬৪, সহিহ হাদিস।-ihadis.com
বর্ণবাদের সংজ্ঞার সাথে এসব হাদিস গুলোকে মিলান তো পাঠক। নাস্তিক প্রশ্নকর্তা নিজেই কিন্তু বলেছেন নবী মোহাম্মদ (সা) অনেক জাগায় পাপ হিসেবে কাল রঙকে চিহ্নিত করেছেন, এরমানে নবীজি (সা) কালো রঙের মানুষ খারাপ এই হিসেবে কালো রঙকে পাপ হিসেবে চিহ্নিত করেন নাই এটা নাস্তিকান্ধর প্রশ্ন থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া পাপকে কালো রঙ আর পুণ্যকে সাদা রঙ হিসেবে চিহ্নিত করা থেকে কি এটা প্রমাণ করা যায় যে একজন মানুষ সাদা হওয়ার জন্য জান্নাতে যাবে আর কালো হওয়ার জন্য জাহান্নামে? আর পাপকে কালো রঙ চিহ্নিত করার দ্বারা কি কোন মানুষের কালো রঙ হওয়ার জন্য ইসলাম তাকে ঘৃণা করতে বলেছে? একটি কুরআনের আয়াত অথবা হাদিস পেশ করতে পারবেন? আর পাপকে কালো রঙ আর সাদা কে পুণ্য হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে কি ইসলাম কালো রঙের মানুষদের জাহান্নামী হিসেবে গণ্য করেছে? তাহলে বেলাল (রা)এর মতো কালো রঙের মানুষকে আজান দেয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমলে কেন অংশ গ্রহণ করতে দেয়া হয়েছিল? কালো গোলাম যদি নেতা হয় তাহলে তার আনুগত্য করতে হবে কেন বলা হয়েছিল? মানুষের দেহকে কালো বলে ঘৃণা করা আর অপরাধকে কালো বলে চিহ্নিত করা কি একই ব্যাপার?
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ২৯৫৫, সহিহ হাদিসঃ
নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ স্বহস্তে স্পর্শ করে তাতে চুমু খেতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে যে দিন তা করতে দেখেছি- তখন থেকে আমি তা কখনো পরিত্যাগ করিনি।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ২৯৫৭,২৯৫৮,সহিহ হাদিসঃ
সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতাঁর পিতা তাঁকে বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন যে, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। আমি যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ২৯৫৯,২৯৬০,সহিহ হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি লৌহ মানব অর্থাৎ ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কৃষ্ণ পাথর হাজারে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে চুম্বন করব এবং আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর, তুমি কারও ক্ষতিও করতে পার না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ২৯৬১,২৯৬২,সহিহ হাদিসঃ
সুওয়ায়দ ইবনু গাফালাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে এবং তা জড়িয়ে ধরতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, আমি তোমার প্রতি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গভীর ভালোবাসা লক্ষ্য করেছি।-ihadis.com
যেখানে হাজারে আসওয়াদ পাথরটি কালো হওয়া সত্ত্বেও নবীজি (সা) এমনকি সাহাবীগণ এই পাথরকে চুমা দিতেন, ভালবাসতেন সেখানে এই কালো পাথরকে টার্গেট করে নিন্ম গোঁজামিল দিয়ে ইসলামে মধ্যে বর্ণবাদ আছে প্রমাণ করার মানে কি? নাস্তিকদের অন্যান্য মিথ্যাচারের মতো কি এটাও স্পষ্ট মিথ্যাচার নয়? পাঠক নাস্তিকান্ধদের মিথ্যাচার ধরতে পেরেছেন কি? ইসলাম নিয়ে যেভাবে তথ্যকে চুরি করে তারা তা পড়ে যুক্তিবাদী মানুষরা এদেরকে ছিঃ ছিঃ করবে।
পাপ হিসাবে কালো রঙকে চিহ্নিত করা আর কালো মানুষকে কালো রঙের জন্য ঘৃণা করা একই? হজে আসয়াদ পাথর কালো বলে যদি তাকে ঘৃণা করা হতো তাহলে সেই পাথরকে চুমা কেন দেয়া হয়? কেন সেই পাথরকে কালো রঙ বলে ঘৃণা করা হয়নি? সাহাবায় কেরাম কেন সেই পাথরকে কালো রঙ দেখে ঘৃণা করলেন না? আমি আশ্চর্য হলাম যে একজন সুস্থ মানুষ কিভাবে হজে আসয়াদ অথবা পাপকে কালো আর পুণ্যকে সাদা রঙ হিসেবে চিহ্নিত করার সাথে কালো রঙের মানুষকে ঘৃণা করাকে শরবত বানিয়ে ইসলামের সাথে মিশিয়ে দিয়ে প্রতারণা করতে পারে? এরকম ডাহা মিথ্যাচার বিবর্তনবাদী প্রাণীদের পক্ষে করাই সম্ভব হয়তো। নাস্তিকদের মানুসিক ডাক্তার প্রয়োজন।
সপ্নে নবী মোহাম্মদ (সা) কালো মেয়ে দেখলেন?
নাস্তিকরা বলে, নবী মুহাম্মদ (সা) স্বপ্নে দেখলেন একজন এলোমেলো চুলের নারীকে, যার গায়ের রঙ কালো। সে আসলে ছিল মহামারী। অর্থাৎ, একটি অশুভ চরিত্রকে চিত্রিত করতে নবী কালো গায়ের চামড়ার একজন নারীকে স্বপ্নে দেখেছেন, তার সাহাবীরাও এর ব্যাখ্যা হিসেবে বুঝে নিয়েছে যে, সেই কালো রঙের মহিলাটি ছিল অশুভ মহামারী! এরমানে উনি সব নারীদের কালো রঙ দেখে ঘৃণা করতেন?
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৭০৩৮, সহিহ হাদিসঃ সালিমার পিতা ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি দেখেছি যেন এলোমেলো চুলওয়ালা একজন কালো মহিলা মাদীনাহ থেকে বের হয়ে মাহইয়াআ নামক স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আর এটিকে জুহ্ফা বলা হয়। আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলাম যে, মাদীনাহর মহামারী সেখানে স্থানান্তরিত হল। জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ২২৯০, সহিহ হাদিস।-ihadis.com
নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে সপ্নের ব্যাখ্যার কোনো ভিত্তি নেই সেই হিসেবে এই হাদিস নিয়ে অভিযোগ করা একইসাথে ধাপ্পাবাজ নাস্তিকতার প্রমাণ। সপ্নে কালো নারী দেখে অশুভ বলা খারাপ- এই নৈতিকতা কি নাস্তিকতা সমর্থন করে? যদি আপনার উত্তর না হয় তাহলে আপনি একজন নাস্তিক হয়ে কিভাবে এই সপ্নের ব্যাখ্যা নিয়ে আপত্তি করতে পারেন? আপনার নাস্তিকতা আপনাকে সপ্নের ব্যাখ্যার অস্তিত্বকেই যেখানে বাতিল করে দিচ্ছে সেখানে আপনি অভিযোগ করে বলছেন ওমুক লোকে কালো রঙের নারী দেখে অশুভ বলেছে যা খুব অন্যায় হয়েছে - এরকম দুমুখো সাপের মতো কেন নাস্তিকরা?
সপ্নে কালো মহিলা দেখার ফলে কি নবীজি (সা) এটা বলেছেন যে তোমরা এখন থেকে দুনিয়ার সব কালো নারীদের ঘৃণা করতে শুরু করো? না। অথবা সপ্নে কালো নারী দেখার ফলে যে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে অশুভ মহামারী এই ব্যাখ্যার ফলে কি উক্ত নারীর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়েছে যাকে সপ্নে দেখা হয়েছিল? যদি আপনার সুস্থ চিন্তায় উত্তর “না” হয়ে থাকে তবে এই হাদিসকে কেন্দ্র করে ইসলামে নারীদের কালো চামড়ার রঙকে পছন্দ করে না মিথ্যা দাবি করা হলো কেন? সুতরাং এই হাদিসকে কেন্দ্র করে ইসলাম দুনিয়ার সব নারীদের দেহের কালো রঙকে অপছন্দ করে দাবি করা ডাহা মিথ্যাচার এটা নিয়ে আমার সংশয় নিই।
কালো কুকুর শয়তান
নাস্তিকরা বলে, নবী (সা) বলেছেন, কালো কুকুর হচ্ছে শয়তান,সেগুলোকে হত্যা করতে হবে। মানব ইতিহাসে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যে, কালো রঙের কুকুর অসংখ্য মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। আমি নিজেই এরকম কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী। সেইসব কালো কুকুর শয়তান হয়ে থাকলে, এত এত মানুষের জীবন তারা কেন রক্ষা করলো? কালো কুকুর মাত্রই কেন শয়তান, কেন অশুভ, কেন খারাপ, কেন হত্যাযোগ্য, এর থেকে কী বোঝা যায় ?
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১০২৪, সহিহ হাদিসঃ আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায়, সে যেন হাওদার খুঁটির ন্যায় একটি কাঠি তার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। যদি সে তার সামনে হাওদার পিছনের খুঁটির ন্যায় একটি কাঠি দাঁড় না করায়- এমতাবস্থায় তার সামনে দিয়ে গাধা, মহিলা এবং কালো কুকুর চলাচল করলে তার সলাত নষ্ট হয়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) বলেন আমি বললাম, হে আবূ যার (রাঃ) ! কালো কুকুরের কি অপরাধ, অথচ লাল ও হলুদ বর্ণের কুকুরও তো রয়েছে? তিনি বললেন, হে ভাতিজা! তুমি আমাকে যে প্রশ্ন করেছ, আমিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে এ রকম প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছেনঃ কালো কুকুর হলো একটি শাইতান। জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ৩৩৮, সহিহ হাদিস। -ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ, ২৮৪৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্র সৃষ্টজীবের মধ্যে কুকুর এক প্রকার জীব না হলে আমি এগুলোকে হত্যা করতে আদেশ দিতাম। সুতরাং তোমরা গাঢ় কালো রঙের কুকুরগুলো হত্যা করো।-ihadis.com
বুদ্ধি থেকে থাকলে যদি তারা প্রয়োগ করতো তাহলে সহজেই বুঝে যেত যে, শয়তান হলো সে যে মানুষের ক্ষতি করে ঠিক একইভাবে কালো কুকুর শয়তান বলতে সেই কালো কুকুরকেই বুঝানো হয়েছে যে কালো কুকুর মানুষের ক্ষতি করে। বিবর্তিত হয়ে মানুষের মতো বুদ্ধি না পেয়ে হাদিসের সঠিক অর্থ না বুঝতে পারলে এর দায়ভার কে নেবে? আমি তো নিতে পারবো না আগেই বলে দিলাম। বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে যেখানে শুধুমাত্র কালো কুকুর কেন বরং মানুষ হত্যা করাকেও বৈধতা প্রদান করে সেখানে নাস্তিকরা কোন নৈতিকতার ভিত্তিতে এই অভিযোগ করে যে কালো কুকুর হত্যা করা অনৈতিক? ধরুন একজন নাস্তিক যদি দোকান থেকে কালো-সাদা যাই হউক না কেন কুকুর কিনে এনে জঙ্গলে গিয়ে হত্যা করলে এটা অন্য নাস্তিকদের কাছে অনৈতিক হবে? আর হলেও বা যে হত্যা করেছে তার কি? সে তো নিজের জন্য কুকুর হত্যা করাকে নৈতিক হিসেবে ধরে নিয়েছে? নাস্তিকরা মুরগী হত্যা করে চিকেন কাবাব খায় না? গরু হত্যা করে বিফ বার্গার খায় না? গাছের সম্মতি না নিয়ে ফল খায় না? পোকামাকড় কখনো হত্যা করেনি? মশা হত্যা করেনি?
যেই প্রশ্নকর্তা বলেছেন যে মানব ইতিহাসে কালো রঙের কুকুর মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে আপনি নিজেও নাকি সেই ঘটনার সাক্ষী- এগুলো বলে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো সহজ না বুঝেছেন মশাই? আপনাদের নাস্তিকতার মিথ্যা ভিত্তির কথা মানুষ এখন জেনে যাচ্ছে। নাস্তিক্যদৃষ্টিতে কুকুর হত্যা করা কেন অনৈতিক? কুকুর হত্যা করা যাবে না-এই নৈতিকতা কোন মানুষ প্রথম বানিয়েছে? যেই মানুষ প্রথম কুকুর হত্যা করা নিষেধ-নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে কিসের ভিত্তিতে চুরান্ত প্রমাণ করেছে এই নৈতিকতার সত্যতা? কালো-সাদা যাই হউক সব ধরণের কুকুর মুক্তচিন্তায় হত্যা করা বৈধ এমনকি কোনো নাস্তিক চাইলে পলাউ দিয়ে কুকুরের মাংস খেতেও পারবে। পাঠক, হাদিসে কালো কুকুর হত্যা করতে বলা হয়েছে মানে যেসব কালো কুকুর পাগলা অথবা হিংস্র তাদেরকে হত্যা করতে বলা হয়েছে। এই হাদিস গুলো মিথ্যুকরা কেন দেখায় নি ভেবে রাগ করছেন কি আপনি? রাগ করবেন না কারণ চোরদের দেখে রাগ করতে হয় না বরং তাদেরকে সভ্য করে তোলতে হয়। এরজন্য সকল মানবিক মানুষদের এক হওয়ার দাবি রাখে। চলুন হাদিস গুলো পড়ি।
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১৮২৮, সহিহ হাদিসঃ
আল্লাহ্র রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ প্রকার প্রাণী যে হত্যা করবে তার কোন দোষ নেই। যেমন কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর।-ihadis.com
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১৮২৯, সহিহ হাদিসঃ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহ্র রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণী এত ক্ষতিকর যে, এগুলোকে হারামের মধ্যেও হত্যা করা যেতে পারে। যেমন কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর।-ihadis.com
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩৩১৫, সহিহ হাদিসঃ
রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ প্রকারের ক্ষতিকারক প্রাণী যাদেরকে কেউ ইহরাম অবস্থায়ও যদি মেরে ফেলে, তাহলে তার কোন গুনাহ নেই। এগুলো হল বিচ্ছু, ইঁদুর, পাগলা কুকুর, কাক এবং চিল।ihadis.com
তাই বুঝা গেলো,যেহেতু হিংস্র ও পাগলা কুকুর হত্যা করলে দোষ নেই তাই যেসব কুকুর পাগল বা হিংস্র না এসব কুকুরকে হত্যা করলে দোষ আছে অর্থাৎ সুস্থ উপকারী কুকুরকে (সাদা-কালো যাই হোক) হত্যা করা ইসলামে নিষেধ। তাছাড়া হাদিসে ক্ষেত খামার কিংবা পশু পাল পাহারা দেয়ার কাজে নিযুক্ত শিকারী কুকুর পালা বৈধতা প্রদান করেছেন নবীজি (সা) আর মজার ব্যাপার হচ্ছে উনি এটা বলেন নাই যে কালো কুকুর পাহারা দেবার জন্য রাখা যাবে না। এরমানে কালো কুকুর যদি উপকারী হয় তবে পালা যাবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন নাস্তিকরা এই হাদিস লুকিয়ে রেখে কেন নবীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে?
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩৩২৪, সহিহ হাদিসঃ
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুকুর প্রতিপালন করবে, প্রত্যেক দিন তার ‘আমলনামা হতে এক ক্বীরাত করে সওয়াব কমতে থাকবে। তবে ক্ষেত খামার কিংবা পশু পাল পাহারা দেয়ার কাজে নিযুক্ত শিকারী কুকুর ছাড়া।-ihadis.com
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩৩২৫, সহিহ হাদিসঃ
সায়িব ইবনু ইয়াযীদ সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহাইর শানাভির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি কুকুর লালন পালন করে, যদ্দ্বারা না কৃষির উপকার হয়, না পশুপালনের, তার ‘আমল হতে প্রত্যহ এক কিরাত ‘আমল কমে যায়। সায়িব জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি তা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে শুনেছেন? তিনি বললেন, এই কিবলার (কা’বার) প্রতিপালকের শপথ!, অবশ্যই।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৮৬৭, সহিহ হাদিসঃ
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা এমন এক সম্প্রদায় যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দ্বারা শিকার করে থাকি। তখন তিনি বললেনঃ তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর আল্লাহর নাম নিয়ে ছাড়লে তাদের শিকার করা পশু খেতে পারো, যদিও তারা তা মেরে ফেলে। তবে কুকুর তার কিছু অংশ খেয়ে ফেললে তা খাবে না। কেননা আমার আশঙ্কা হচ্ছে,সে হয়তো এ শিকার নিজের জন্যই ধরেছে। আর যদি এ শিকারে অন্য কুকুর শারীক হয়ে থাকে তাহলে তুমি তা খাবে না।-ihadis.com
অর্ধেক তথ্য দেখিয়ে বাকি তথ্যকে ধামাচাপা দিয়ে ইসলাম নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা কি মুক্তচিন্তার আন্দোলনের বৈজ্ঞানিক অংশ নাকি? সঠিকভাবে ইসলাম নিয়ে লেখাপড়া করা কি মুক্তচিন্তায় নিষেধ? মিথ্যাচার করা কি মুক্তচিন্তার সহায়ক? মিথ্যাচার করা ব্যক্তি স্বাধীনতা মুক্তমনাদের কাছে? তাহলে নাস্তিকরা ঠাণ্ডা মাথায় এভাবে ইসলাম নিয়ে মিথ্যা ব্যাখ্যা, ভুয়া ব্যাখ্যা, জালিয়াতি কেন করে যাচ্ছে?
জান্নাতীদের দেহের রঙ ফর্সা হবে যা বর্ণবাদের উদাহরণ?
নাস্তিকরা বলে, ইসলামে মুমিনদের জন্য নির্ধারিত অনন্ত ভোগ বিলাস, আরাম আয়েসের স্থান জান্নাতে সকল মানুষের গায়ের রঙ হবে ফর্সা। কারণ, জান্নাতে কোন অপবিত্র কিছু থাকতে পারে না। এর দ্বারা এটি খুব পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায় যে, ইসলামে ফর্সা আসলে সৌন্দর্য্য বা পবিত্রতার প্রতিশব্দ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। আর কালো ব্যবহৃত হয় অশুভ বা খারাপ কিছু বোঝাতে। জাহান্নামে পাপীদের গায়ের রঙ কালো হয়ে যাবে, আর তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করালে তারা ফর্সা হয়ে যাবে। কালো বর্ণের মানুষকে ফর্সা করা হবে। এটা প্রমাণ করে কালো মানেই যেহেতু খারাপ সেহেতু দুনিয়ার কালো মানুষকেও খারাপ বলা হয়েছে?
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৩২৪৫, সহিহ হাদিসের সুত্রে থেকে জানা যায় যে দল প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বেনা, মল মূত্র ত্যাগ করবেনা। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের; তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মত সুগন্ধময় হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে যাদের সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর এক অন্তরের মত হবে। তারা সকাল- সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে থাকবে।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৩৬১,সহিহ হাদিসের সুত্রে জানা যায় যে, জাহান্নাম দগ্ধীভূত হয়ে যখন রোদে পোড়া তিল গাছের ন্যায় কালো বর্ণ ধারণ করবে, তখন তাদেরকে বের করে আনা হবে। এরপর তারা জান্নাতের একটি নহরে নেমে গোসল করবে। পরে সকলে কাগজের ন্যায় সাদা ধবধবে হয়ে সে নহর থেকে উঠে আসবে।-ihadis.com
এছাড়া তাফসীরে ইবনে কাসীরে ১৭ খণ্ডে, ৭৭৭ পৃষ্ঠায় আরেকটি হাদিসের কথা বলা রয়েছে, যেখানে পাওয়া যায়, কালো বর্ণের মানুষদেরকে জান্নাতে ফর্সা করে দেয়া হবে।
জান্নাতের মানুষদের গায়ের রঙ হবে ফর্সা আর জাহান্নামের মানুষদের গায়ের রঙ হবে কালো- প্রশ্ন হচ্ছে জাহান্নামী মানুষদের গায়ের রঙ কালো এই কারণে কি ইসলাম দুনিয়াতে কালো রঙের মানুষকে ঘৃণা করতে বলেছে? জান্নাত-জাহান্নাম দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা জগত। সেখানে মানুষের গায়ের রঙ সাদা-কালো যাই হউক না কেন এটা থেকে এটা কিভাবে প্রমাণ হয় যে ইসলাম দুনিয়ার মানুষদের কালো রঙকে ঘৃণা করতে বলেছে? অথচ আপনি কিন্তু উপরেই পড়ে এসেছেন যে ইসলাম বর্ণবাদকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, কি পড়েন নি? জাহান্নামে মানুষদের গায়ের রঙ কালো হবে এর মানে এই না যে দুনিয়াতে কালো রঙের মানুষদের ঘৃণা করতে বলেছে ইসলাম। তাছাড়া জাহান্নামের আগুনে অপরাধীদের পোড়ালে এমনিতেই দেহের রঙ কালো ছাই হয়ে যাবে।
ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ কৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১৭ খণ্ডে, ৭৭৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
কালো বর্ণের মানুষকে জান্নাতে সাদা বর্ণের করে দেয়া হয়ে যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেটি ইমাম তিররানী (রহ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা অত্যন্ত গরীব হাদিস।
এই লাইনটুকু পড়ার সময়ও পায়নি নাস্তিকান্ধরা? একটি গরীব হাদিস দিয়ে ইসলামের ভুল ধরতে আসা প্রাণীদের মস্তিস্ক নিয়ে আমার ব্যাপক সংশয় আছে। এরপরেও যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম জান্নাতে কালো বর্ণের লোককে সাদা বর্ণের করে দেয়া হবে তারপরেও এটা প্রমাণ হয় না যে দুনিয়াতে মানুষের দেহের কালো রঙ খারাপ তাই কালো রঙের মানুষকে ঘৃণা করতে হবে,এই শিক্ষা ইসলাম কখনো দেয় না। উপরে দেয়া হাদিসের কোথায় এটা বলা হয়েছে যে জান্নাতে যেহেতু মানুষকে সাদা করে দেয়া হবে তাই দুনিয়াতে কালো বর্ণের মানুষকে ঘৃণা করো বা দুনিয়াতে কালো রঙের মানুষরা কালো রঙের জন্য নিকৃষ্ট?
আল কুরআন, সুরা ফুসসিলাত ৪১:৩১ আয়াত থেকে বর্ণিত,
জান্নাতে তোমাদের মন যা চাইবে তাই দেয়া হবে এবং তোমরা সেখানে যা চাইবে তাই পাবে। এই আয়াত থেকে এটা বুঝা যায় যে যদি কোন মানুষ জান্নাতে কালো রঙের দেহের অধিকারি হতে চায় তাহলে সে কালো রঙের হতে পারবে।
জান্নাতে যা চাওয়া হবে তাই দেয়া হবে। এখন কেউ যদি জান্নাতে কালো হতে চায় তাকে সেটা করে দেয়া হবে। এখানে সমস্যা কোথায় তাহলে? জান্নাত যেহেতু আলোময় সুখের জায়গা সেখানে যেহেতু সবার চেহারা উজ্জ্বল আলো ময় ফর্সা হতেই পারে কিন্তু কেউ কালো চাইলে তাকে সেটা দেয়া হবে। ধরুন একটি কবিতার লাইনে বলা আছে,চারদিকে অন্ধকার একঝাক তরুণ আলোর মশাল জ্বালিয়ে সামনে এগুচ্ছে আমি তাদেরই একজন- ভণ্ড নাস্তিকরা এখনে কি বলবে এখানে চারদিকে অন্ধকার বলে আসলে কালো অন্ধকারকে অপমান করা হয়েছে সেহেতু কালো রঙের মানুষ খারাপ? অথবা ধরুন একটি কবি বলল,জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট মুক্তি সেখানে অসম্ভব - এখানে জ্ঞান সীমাবদ্ধ বলতে কি সাদা-কালো উভয় মানুষকে অপমান করা হয়েছে তাই সাদা-কালো উভয় মানুষ খারাপ যেহেতু তাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ? যদি নাস্তিকরা এরকম ব্যাখ্যা করেও আমি এসব সমর্থন করতে রাজি নই। কারণ এখানে চারদিকে অন্ধকার বলতে চারদিকের খারাপ বিষয়কে বুঝানো হয়েছে আর জ্ঞান সীমাবদ্ধ বলতে এরকম মানুষদের বুঝানো হয়েছে যাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত। নাস্তিকরা এটার বাস্তব উদাহরণ হিসেবে আমাদের সামনেই রয়েছে কিন্তু।
আরব থেকে ইহুদীদেরকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেনঃ
নাস্তিকদের প্রশ্ন, মহানবী (সা) ইহুদীদের ধর্মের ভিত্তিতে পুরো ইহুদী জাতি গোত্র ধরেই উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন এটা ইহুদী বিদ্বেষের প্রমাণ নয় কি?
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৭৩৪৮, সহিহ হাদিসের সুত্রে জানা যায় যে, নবীজি (সা) ইহুদীদেরকে একাধিকবার ইসলাম গ্রহণ করে শান্তিতে থাকতে বলেন কিন্তু ইহুদীরা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এরপরে নবীজি (সা) বলেন, আমি তোমাদেরকে এই এলাকা থেকে নির্বাসিত করতে চাই। কাজেই তোমাদের যাদের মালপত্র আছে, তা যেন সে বিক্রি করে দেয়। তা নাহলে জেনে রেখো যমীন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৪৪৮৬,সহিহ হাদিসঃজাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমার কাছে ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি ইয়াহূদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে আরব উপ-দ্বীপ থেকে বের করে দেবো। তারপর মুসলিম ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেবো না।-ihadis.com
রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ ১৮২৯,সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত মুসলিমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে। এমনকি ইহুদী পাথর ও গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলে পাথর ও গাছ বলবে ‘হে মুসলিম! আমার পিছনে ইহুদী রয়েছে। এসো, ওকে হত্যা কর।’ কিন্তু গারক্বাদ গাছ এরূপ বলবে না। কেননা এটা ইহুদীদের গাছ।-ihadis.com
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৩০৫৩, সহিহ হাদিসের সুত্রে পাওয়া যায় নবীজি (সা) ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। এর মধ্যে প্রথমে বলেন মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ হতে বিতাড়িত কর।-ihadis.com
এখানেও ইসলাম বিদ্বেষীরা একইভাবে পুরো তথ্যকে ধাপাচাপা দিয়ে স্রেফ অর্ধেক অংশ দেখিয়ে নবীজি (সা) কে ইহুদী বিদ্বেষী প্রমাণ করার হাস্যকর চেষ্টা করেছে। ইহুদীদের দেহের রঙ কালো ছিল দেখে কি নবীজি (সা) এদেরকে বের করতে চেয়েছিলেন? এই প্রশ্নেই কিন্তু নাস্তিকরা হাতেনাতে ধরা খেলো, দেখলেন তো? আমার প্রশ্ন হচ্ছে,পুরো ইহুদী জাতি নবীজি (সা)কে এবং উনার সাহাবীদেরকে যে হত্যা করতে চেয়েছিল এবং বার বার যুদ্ধ করেছিল এই হাদিস ইসলাম বিদ্বেষীরা কেন দেখালো না? ওদের নাস্তিকতাকে বাঁচানোর জন্য ও এসব তথ্য ওদের অনুসারীদের না দেখাতে চাইলেও আমি মানবতার খাতিরে দেখিয়ে দিচ্ছি। আশা করি যারা সত্যসন্ধানী তাদের জন্য উপকার হবে।
মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৪,সহিহ হাদিসঃ
ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বানু নাযীর এবং বানু কুরাইযাহ গোত্র দুটির ইয়াহূদীরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বানূ নাযীরকে দেশান্তর করেন। এবং বনূ কুরাইযাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। পরিশেষে বানূ কুরাইযাও যুদ্ধ করল। ফলে তিনি তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পদসমূহ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। কিন্তু তাদের কিছু সংখ্যক লোক যারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তাদেরকে তিনি নিরাপত্তা প্রদান করেন। তখন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদীনায় সকল ইয়াহূদীকে দেশান্তর করেন। বানূ কায়নুকা’ গোত্রের ইয়াহূদী ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালামের ইয়াহুদী গোত্র ,বানু হারিসাহর ‘ইয়াহুদী এবং মাদীনায় বসবাসরত সকল ইয়াহূদীকেই দেশ থেকে বহিষ্কার করেন।-ihadis.com
পাঠক এই তথ্য পড়ার পরে যখন আপনি নাস্তিকান্ধদের থেকে এই অভিযোগ শুনবেন যে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর মোহাম্মদ (সা) সেই শেষ সময়েও একটি অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক ওয়াসিয়ত করে গিয়েছেন। যা হচ্ছে, অমুসলিম মুশরিকদের আরব থেকে বিতাড়িত করতে। মৃত্যুর আগেই তিনি তার সাম্প্রদায়িকতার বিষ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। তখন আপনার মনে কি এই প্রশ্ন গুলো আসবে না যে, নাস্তিক্যধর্মে কেন মিথ্যাচার করা ভালো? কুরআন-সুন্নাহর ভুল ব্যাখ্যা করা নাস্তিকদের কাছে পরম মানবিকতা কেন? কুরআন-হাদিসের দলিল দেবার নামে নাস্তিকরা কেন তাদের অনুসারীদেরকে মিথ্যাকথা প্রচার করছে? নাস্তিকরা কেন ইসলাম বিদ্বেষীতার বিষ থেকে এখনো মুক্ত হতে পারছে না? একজন মানুষের মধ্যে যদি সততা থাকে সে কিভাবে ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের মতো ভণ্ডামি করতে পারবে? ইসলাম নিয়ে মুসলিমরা নাকি সত্যি সত্যিই নাস্তিকরাই বিশুদ্ধ অন্ধবিশ্বাসী?
যারা উগ্রবাদী অমুসলিম না তাদের সাথে ভালো আচরণ করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। পড়ুন।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ২৫, সহিহ হাদিসঃ
আসমা বিনতে আবু বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমার মা নবী (সাঃ)-এর যুগে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট অবস্থায় আমার কাছে আসেন। আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি তার সাথে আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখবো? তিনি বলেনঃ হাঁ। ইবনে উয়ায়না (র) বলেন, এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না” (৬০ : ৮)। -ihadis.com
ভণ্ড নাস্তিকরা যেই দৃষ্টিতে এখানে ইহুদী বিদ্বেষ খুজে পেল সেই দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধারা যে যুদ্ধ করে সব পাকিস্তানীদের বহিস্কার করেছিল তাহলে এখন নাস্তিকান্ধরা কি এটা বলবে যে মুক্তিযোদ্ধারা সব পাকিস্তান বিদ্বেষ ছিল?নিজের জাতিকে রক্ষা করার জন্য কোনো নেতা যদি উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদেরকে নিজ দেশ থেকে বহিস্কার করে দেবার ফলে গোত্রবিদ্বেষ হয়ে যায় তাহলে এখানে আমার আর কিছুই বলার নেই। বান্দরমনা ব্রেন নিয়ে নাস্তিকরা মুক্তমনে চললে আমার কি? আমার কিছুই আসে যায় না।
ইহুদীদেরকে রাস্তার কিনারা দিয়ে চলতে বাধ্য করা হতো?
নাস্তিকরা বলে,ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ ইয়াহুদী ও নাসারাদের রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাফেরা করতে দেখলে তাদের রাস্তার কিনারায় ঠেলে দিয়ে কিনারা ঘেষে চলতে বাধ্য করতে নির্দেশ দিয়ে গেছে?
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৫৫৫৪,সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারাদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না এবং তাদের কাউকে রাস্তায় দেখলে তাকে রাস্তার পাশে চলতে বাধ্য করো। জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ১৬০২,সহিহ হাদিস।-ihadis.com
ইহুদীদের নাসারাদের গায়ের রঙ কালো দেখে তাদেরকে এরকম করতে বলা হয়েছে? একটি প্রমাণ দেখান তো? নাস্তিকরা আসলে মিথ্যাচার করতে করতে এখন আর সত্যের কাছে টিকতে পারছে না।
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৫৫৫১,৫৫৫২,৫৫৫৩,সহিহ হাদিস,
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট কয়েকজন ইয়াহূদী আসলো। তারা বলল- (--) হে আবুল কাসিম! তোমার মৃত্যু হোক। তিনি বললেন, (--) তোমাদের উপরেও। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম- (--) বরং তোমাদের মৃত্যু ও অপমান হোক। সে সময় রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়িশাহ্! তুমি অশ্লীলভাষী হয়ো না। তিনি বললেন, তারা কি বলেছে, তা কি আপনি শুনেননি? তিনি বললেন, তারা যা বলেছিল, তা-ই কি আমি তাদের ফিরিয়ে দেইনি? আমি যা বলেছি- ‘ওয়া আলাইকুম’ তোমাদের উপরেও।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৫৫৪৫,৫৫৪৬,৫৫৪৭,৫৫৪৮,সহিহ হাদিসঃ
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা যে সময় তোমাদের প্রতি সালাম দেয়, সে সময় তাদের কেউ বলে “আস্সামু ‘আলাইকুম” তোমাদের মরণ হোক। তখন তুমি বলবে ‘ওয়া আলাইকা’- (তোমারও-হোক)।-ihadis.com
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬০২৪, সহিহ হাদিসঃ
নবী সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের একটি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললঃ السَّامُ عَلَيْكُمْতোমাদের উপর মৃত্যু উপনীত হোক। ‘আয়িশাহ রাঃ)বলেনঃ আমি এর অর্থ বুঝলাম এবং বললামঃ وَعَلَيْكُمْ السَّامُ وَاللَّعْنَة তোমাদের উপরও মৃত্যু ও লা’নত। ‘আয়িশাহ রাঃ)বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ থাম, হে ‘আয়িশাহ! আল্লাহ যাবতীয় কার্যে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি শোনেননি, তারা কী বলেছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো বলেছি عَلَيْكُمْ আর তোমাদের উপরও।-ihadis.com
পাঠক খেয়াল করুন এসব হাদিসের কোথাও ইহুদীদেরকে বাধ্য করে রাস্তার পাশে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দেবার কথা বলা নেই। বরং ইহুদীরা নবীজি (সা) কে খারাপ কটূক্তি করলে উনি শান্তভাবে তাদের প্রতিবাদ জানায়। ইহুদীদেরকে যদি বাধ্য হয়ে রাস্তায় পাশে ধাক্কা দেবার উদ্দেশ্যে কথা উনি বলতেনই তাহলে অবশ্যই উনাকে বকা দেবার কারণে ইহুদীদেরকে আগে নিজের বাড়ি থেকে এরপরে রাস্তার পাশে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন কিন্তু উনি এরকম কিচ্ছুই করেন নাই বরং আয়েশা (রা)কে উল্টো সংশোধন করে দিচ্ছেন যে তাদের মতো সেও যেন সেরকম কথা না বলে।
তাহলে ইহুদীদেরকে রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করা হাদিসের অর্থ হচ্ছে যদি কোনো মুসলিম লোক রাস্তা দিয়ে যায় আর উক্ত রাস্তায় যদি ইহুদীরা থাকে তাহলে তাদেরকে রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করা যাতে মুসলিম লোকটির রাস্তায় চলাচল করতে কষ্ট না হয়। রেসপন্স টু এন্টি ইসলাম ওয়েব ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত মুসলিম গবেষকরা এই হাদিসের কি ব্যাখ্যা করেছেন চলুন পড়া যাক।
মুফহাম লিমা আশকালা মিন কিতাবি তালখিসি মুসলিম-৫ খণ্ড ৪৯০ পৃষ্ঠয় বর্ণিত হয়েছে,
ইমাম কুরতুবী(র.) বলেছেন, যখন তাদের সাথে সাক্ষাত হয় এই অবস্থায় যে রাস্তায় ভিড় থাকে তাদেরকে কিনারায় যেতে বাধ্য করো এমন ভাবে যে তারা গর্তে না পতিত হয় এবং দেওয়াল ইত্যাদিতে আঘাত না পায় অর্থাৎ তাদের সম্মানে ও মর্যাদাদানের জন্য রাস্তার মধ্যখান ছেড়ে দিও না। এই কথা বাক্যটি অর্থ ও সহানুভূতি দিক থেকে প্রথম বাক্যের সাথে মিল রাখে। (তাদেরকে আগে সালাম দিও না এই বাক্য) এবং তার অর্থ এই নয় যে, আমরা যখন তাদের প্রশস্ত রাস্তায় সাক্ষাত পাব তাদেরকে কিনারায় নিয়ে যাবো যাতে তাদের উপর আমরা কঠোরতা প্রদর্শন করতে পারি। এটা তো আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিনা কারনে কষ্ট দেওয়া। আর আমাদেরকে তাদের কষ্ট দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইকমালুল মুয়াল্লিম-৭ খণ্ড ৫৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
কাজী ইয়াজ(র.)বলেন, আল্লাহ রাসুল (ﷺ) থেকে (এ রকম কোন বিষয় ) বর্ণিত নেই যে, রাস্তা যখন প্রশস্ত ছিল তিনি তাদেরকে বাধ্য করেছেন যেন তাদের জন্য তা সংকীর্ণ হয় এবং তাদেরকে সে (পথে চলতে) বাধা দিয়েছে যাতে তারা অন্য পথে চলতে বাধ্য হয়।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই ইহুদীদেরকে রাস্তার পাশে যেতে বাধ্য করাই হাদিসের উদ্দেশ্য নাস্তিকরা যেভাবে বুঝাচ্ছে এরপরেও সমস্যা নেই। কারণ কেউ আপনার মৃত্যু চাইলে, আপনার ক্ষতি চাইলে আপনি নিজেকে রক্ষা করবার জন্য তাদেরকে অবশ্যই রাস্তার পাশে দিয়ে যেতে বাধ্য করতেই পারেন।
মুসলিম ছাড়া কেউকে খাবার দিতে নিষেধ করেছেন নবী মোহাম্মদ?
নাস্তিকরা বলে, নবী মুহাম্মদ এতটাই সাম্প্রদায়িক ছিলেন যে, মুসলিম ছাড়া অন্য কাউকে খাবার দিতেও তিনি নিরুৎসাহিত করে গেছেন। এই হাদিস গুলো কি প্রমাণ নয় যে উনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন?
জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ২৩৯৫, হাসান হাদিসঃ আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন,তুমি ঈমানদার লোক ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং আল্লাহ্ভীরু মুত্তাক্বী লোক ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৪৮৩২, হাসান হাদিসঃ আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মু’মিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়।-ihadis.com
প্রথমত অমুসলিম ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়া যাবে না এই কথা হাদিসে বলা নেই। হাদিসের প্রথম অংশে যেখানে বলা হচ্ছে যে তুমি ঈমানদার লোক ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এটার ব্যাখ্যা অন্য হাদিসে সুন্দর করে দেয়া আছে।
সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ৪৮৩৩, হাসান হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।
এছাড়া হাদিসের দ্বিতীয় অংশে যেখানে বলা হচ্ছে তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায় এটার অর্থ হচ্ছে পরহেজগার ভালো মানুষ যেন তোমার খাবার খায়। আমি একজন খারাপ মানুষকে কেন আমার খাদ্য খেতে দিব? একজন মানুষ ভালো না হলে তাকে খাবার দিব আর সে আমার উলটো ক্ষতি করবে।আর পরহেজগার মানুষ ভালো হয় আর আমি সাধারণ ভাবেই চাইব যে একজন ভালো মানুষ আমার খাদ্য খাক। মদ গাজা, ইয়াবা সেবনকারীরা নাস্তিকদের কাছে ভালো মানুষ হতে পারে কিন্তু আমার কাছে নয়। আমার নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি কখনো চাইবো না খারাপ মানুষ আমার খাদ্য খাক।
এমন একটি আয়াত বা হাদিস দেখান যেখানে বলা আছে অমুসলিম ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়া যাবে না? এমন একটি ঘটনা পেশ করুন যেখানে নবীজি (সা) অথবা উনার কোন সাহাবী নিরপরাধ অমুসলিমকে ক্ষুধার যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করেছেন? বিপদ গ্রস্থকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে এমনকি ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেবার কথা স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে এবং এখানে মুসলিম-অমুসলিম কাউকেই নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮১৭, সহিহ হাদিসঃ
নবী (সা) বলেছেনঃ বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে এবং পথহারাকে পথ দেখাবে / সহিহ বুখারি, ৫৬৪৯, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর।
সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ ৩২৫৩, সহিহ হাদিসঃ
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ ইসলাম উত্তম? তিনি বলেনঃ দরিদ্রদেরকে তোমার খাদ্যদান এবং তোমার পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।-ihadis.com
যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই যে এখানে অমুসলিমদেরকে খাদ্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে এরপরেও এটাকে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে খারাপ প্রমাণ করা যায় না কারণ আমার খাদ্য আমি কাকে দিব নাকি দিব না সেটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ইচ্ছা। খাদ্য দান করা নাস্তিকতার দৃষ্টিতে অযৌক্তিক কারণ খাদ্য দান করলে নিজের ক্ষতি কেননা অন্যকে খাদ্য দান করলে নিজের খাবার কমে যাবে যা ক্ষতিকর আর নিজের ক্ষতি করে অন্য কিছু করা যুক্তির খেলাফ তাই নাস্তিকতা যদি যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় আর খাদ্য দান যেহেতু যুক্তির খেলাফ তাই কাউকে খাদ্য না দেয়াই নাস্তিকতায় মানবিক। তাই ইসলামের সমালোচনা করবার নির্দিষ্ট কোনো নৈতিক ভিত্তি নাস্তিকদের কাছে নেই।
অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা নিষেধ?
নাস্তিকরা বলে, অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা নিষেধ এমনকি, মূর্তি পুজারী যেমন হিন্দুদের সাথে একই এলাকায় থাকাও মুহাম্মদ নিষিদ্ধ করে গেছেন।
সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ২৭৮৭, সহিহ হাদিসঃ সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কেউ কোন মুশরিকের সাহচর্যে থাকলে এবং তাদের সাথে বসবাস করলে সে তাদেরই মত।-ihadis.com
হাস্যকর লাগলো প্রশ্নটি। যারা নাস্তিক হয়ে যাওয়ার কারণে নিজের মুসলিম বাবা-মাকে ত্যাগ করে ইউরোপ অ্যামেরিকা, জার্মানে চলে যায় নামের আগে “এক্সমুসলিম” টাইটেল লাগায় তারাই নাকি আবার এরকম প্রশ্ন করছে। হাস্যকর। প্রথম কথা হচ্ছে হাদিসের প্রেক্ষাপট এখানে নাস্তিকান্ধরা ধাপাচাপা দিয়েছে এটা একটা মিথ্যাচার দ্বিতীয়ত এই হাদিসকে কেন্দ্র করে নিজেরা বানিয়ে ফতোয়া পেশ করেছে এটা দ্বিতীয় মিথ্যাচার। কারণ মুশরিকদের সাথে যদি একই এলাকাতে থাকা নিষেধ হতো তাহলে নবীজি (সা)এর প্রতিবেশি ইহুদী হতো না।
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ
মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।
এখন বলি প্রেক্ষাপট কিভাবে লুকোচুরি করেছে? পাঠক আপনারা যদি সুনানে আবু দাউদ,হাদিসঃ ২৭৮৭, সহিহ হাদিস-টি চেক করেন দেখবেন হাদিসটি জিহাদ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। আর হাদিসের শিরোনাম বলা হয়েছে “মুশরিকদের এলাকায় অবস্থান সম্পর্কে” তাহলে সার্বিক প্রেক্ষাপট সামনে রাখলে স্পষ্ট হয়েই যাচ্ছে যে হাদিসটি যুদ্ধ ক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বর্ণিত। আর আমরা জানি যুদ্ধের সময় দুশমনের সাথে থাকা এবং তাদের সাথেই বসবাস করা অবশ্যই ভালো লক্ষণ না। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ যদি পাকিস্তানের সিমানায় তাদের সাথে হাসিমুখে বসবাস করতো তাহলে এটা কি ঠিক হতো? অবশ্যই না।
পাঠক খেয়াল করুন কোনো সম্প্রদায়ের সম্মানিত লোক আসলে তাকে যথাযথ সম্মান করতে বলা হয়েছে এখানে কিন্তু মুসলিম-অমুসলিম কিছুই বলা হয় নাই। এরমানে ইসলাম অমুসলিম কোনো সম্প্রদায়ের লোককেও সম্মান করতে বলে। হাদিসটি পড়ুন।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৭১২, হাসান হাদিসঃ
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি এলে তোমরা তাকে যথাযথ সম্মান করো।-ihadis.com
এই হাদিসেও একই ব্যাপার ঘটেছে,লোকদেরকে দূরে ঠেলে দিতে মানা করেছে বরং সহজ এবং কঠিন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানেও মুসলিম-অমুসলিম নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় নাই।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৫, সহিহ হাদিসঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তখন তাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করবে, কঠিন করবে না।-ihadis.com
তাই বলাই যায় স্বাভাবিক ভাবে অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা যাবে। যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই এটা যুদ্ধের ক্ষেত্রে না স্বাভাবিক ক্ষেত্রেও এরপরেও সমস্যা নেই কারণ যেই এলাকাতে মুশরিক বেশি সেখানে একজন মুসলিমের নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করতে কষ্ট হবে, মুসলিম ভাইদের সাথে চলাফেরা করতে কষ্ট হবে তাই মুশরিক এলাকাতে না থেকে মুসলিমদের একালাতে থাকাটাই বেশি উত্তম। একজন মুসলিমকে মুসলিম এলাকাতে থাকতে বলার কারণে কি অন্য কারো ক্ষতি হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না. আর নাস্তিক্যধর্মের একটি নৈতিকতা হচ্ছে অন্যকে ক্ষতি না করে নিজে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে। এই যুক্তিতে একজন মুসলিম যদি নবীজি (সা) এর কথা নিজ ইচ্ছায় মেনে মুসলিম এলাকাতে থাকে এবং এতে অন্য কারো যদি ক্ষতি না হয় তাহলে এটা নাস্তিক্যদৃষ্টিতে কিভাবে খারাপ প্রমানিত হবে?
আল্লাহ অমুসলিমদেরকে খারাপ চোখে দেখে?
নাস্তিকরা বলে, আল্লাহ্ অমুসলিমদেরকে খারাপ চোখে দেখতেন এই আয়াত গুলো কি তাই বলছে না?
সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৬ = আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।
সুরা আনফাল ৮:৫৫ = সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি।
সুরা বাকারা ২:১৬১ = নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা'নত।
সুরা আরাফ - ৭:১৭৯ = আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।
প্রশ্ন হচ্ছে,অমুসলিমরা কালো তাই আল্লাহ তাদেরকে খারাপ বলেছেন? নাকি ইসলামের দৃষ্টিতে কেউ কুফুরি করলে তাকে মন্দ বলা হয়েছে? কোনটা? তাছাড়া ২০০ পৃষ্ঠার অধিক বিশ্বাসের ভাইরাস নামে যারা বই লিখেছে এটা প্রমাণ করার জন্য যে হিন্দু, খ্রিস্টান,বৌদ্ধ সহ কোটি-কোটি মানুষ যারা ধর্মে বিশ্বাস করে সবাই ভাইরাসে আক্রান্ত,সবাই মহামারীকে জর্জরিত,সবাই বিজ্ঞানবিরোধী ইত্যাদি তারা কোন লজ্জায় কুরআনের এই আয়াত গুলো নিয়ে অভিযোগ করলেন সেটা নিয়ে সংশয় আছে।তারা কি বিবর্তিত হয়ে এখনো পুরো মানুষের মস্তিস্ত ধারন করতে পারেনি? নাকি?
এই আয়াত গুলোর সঠিক মর্মার্থ বুঝার জন্য আগে কিছু কথা বলে নেয়া যাক। যেসব মুসলিমরা নাস্তিকতায় বিশ্বাস করে না সেসব সেসব মুসলিমের বিশ্বাস কি নাস্তিকদের কাছে শ্রেষ্ঠ ? হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার নবুয়তের পক্ষে যা যা বলেছেন সব কি নাস্তিকদের কাছে শ্রেষ্ঠ? আপনি যদি নাস্তিক হয়ে থাকেন আর আপনার উত্তর যদি না হয়ে থাকে তবে আপনি কি এখানে বর্ণবাদ করে ফেললেন? না। কারণ একজন মুসলিম নাস্তিক্যধর্মে অবিশ্বাস করতেই পারে আর আপনি এর জন্য মুসলিমদেরকে মন্দ বলতেই পারেন। ঠিক একই ভাবে উপরের আয়াতে যেখানে বলা হচ্ছে যারা মুশরিক ইমান আনে না তারা সৃষ্টির অধম,নিকৃষ্ট ইত্যাদি বলে নিন্দা করা হয়েছে। বোঝা গেছে?
আল্লাহ্র কাছে নিকৃষ্ট হল তারা যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, ইমান আনে নি এবং কাফের । আবার আল্লাহ্র কাছে সব থেকে শ্রেষ্ঠ হল তারা যারা,
সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৭ = যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।
ধরুন আমি একটি দেশের প্রধান।আমি আইন করলাম যারা দেশের জন্য কাজ করবে দেশকে ভালো বাসবে তারা আমার কাছে শ্রেষ্ঠ এবং যারা নিজ দেশকে অস্বীকার করে, নিজ দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে, অন্যায় করে তারাই আমার কাছে সব থেকে নিকৃষ্ট। এখানে আমি কি অযৌক্তিক কিছু বলেছি? না। আর এই নিন্দা করা খারাপ না। একই ভাবে আল্লাহ্ যেহেতু আমাদের সৃষ্টিকর্তা তাই তাঁকে কেউ অস্বীকার করলে,তাঁর আইনের বিরুদ্ধে গেলে আল্লাহ্ অবশ্যই সেসব মানুষদের নিকৃষ্ট বলতেই পারেন এতে ঐ মানুষের কেন কষ্ট লাগবে যেখানে সে আল্লাহকে নিজেই মানছে না? আল্লাহ্র নিকৃষ্ট বলাতে যদি সেই লোক কষ্ট পায় তাহলে আল্লাহ্র খুশির জন্য অথবা সৃষ্টির সেরা হওয়ার জন্য সে আল্লাহকে মানলেই তো হয়? এই সহজ বিষয় গুলো বুঝতে এতো কষ্ট লাগে কেন?
আপনি নাস্তিক হওয়া সত্ত্বেও আপনার যদি এই আয়াত পড়ে কষ্ট লাগে (যদিও নাস্তিকতায় এই কষ্টের কোনো ভিত্তি নেই) তাহলে আপনি আপনার নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে ভালো মুসলিম হয়ে আল্লাহর কাছে সৃষ্টির সেরা হয়ে যান তাহলেই তো হয়। অথচ সারাদিন ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করবেন, নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে গালাগালি করবেন আর অভিযোগ করবেন আল্লাহ কেন আমাকে নিন্দা করলেন? পাগলে শুনলে সেও হাসবেরে ভাই। আপনাদের কি একটুও কমনসেন্স নাই? এই সব আয়াতে কি এটা বলা আছে অমুসলিমরা কালো রঙের তাই তারা খারাপ? তাহলে এইসব আয়াত দিয়ে ইসলামে বর্ণবাদ কিভাবে প্রমাণ করা যাচ্ছে? বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে সকল মানুষই চতুষ্পদ জানোয়ার তাই নাস্তিকদের এইসব আয়াত নিয়ে কষ্ট পাওয়ার ভিত্তি নেই।
উপসংহারঃ উপরের দীর্ঘ আলোচনাতে এটি একদমই পরিষ্কার যে, মুক্তবুদ্ধি চিন্তার যুক্তিতে, বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে ও নাস্তিক্যধর্মে একইসাথে জাতিভেদ বা বর্ণবাদ সম্পূর্ণ সমর্থন যোগ্য। কেউ চাইলে করবে না। তবে নিজেদের মধ্যে এরকম বর্বরতা যেন প্রকাশ না পায় সেজন্যে সব দোষ ইসলামের দিকে তুলে ঢেকে দেয়ার অপ্রাণ চেষ্টা চালায় নাস্তিকান্ধগোষ্ঠীরা। কথিত মুক্তমনারা নিজেদেরকে মানবিক দাবী করলেও সেটা বিবর্তনবাদের মতোই একটি অন্ধবিশ্বাস ছাড়া কিছু নয়। সেটার প্রমাণ আপনারা নিজেরাও পড়লেন। আমার লেখায় কে আনন্দ পেলো আর কার নাস্তিক্যবিশ্বাসে আঘাত লেগেছে তা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ সত্য যে কঠিন তাই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। নাস্তিকতায় বর্ণবাদকে অনৈতিক বলার কোনো যুক্তি নেই আর কোন কোন নাস্তিক যদি মুক্তচিন্তায় বর্ণবাদে বিশ্বাসী হয় তাহলে তার শারীরিক ক্ষতি হতে পারে এরকম কথা বিজ্ঞান বলে কিনা সংশয় রয়েছে। তাই কোনো নাস্তিক চাইলে বর্ণবাদী মুক্তচিন্তা করতেই পারে এতে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে খারাপের কিছু নেই।