স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নাই?


বিষয়ঃ স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নাই?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

====================================

যারা বলে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নাই তারা মিথ্যা কথা বলে। স্রষ্টার অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমাণ আছে। স্রষ্টার অস্তিত্বের তথ্য ভিত্তিক প্রমাণ রয়েছে। স্রষ্টার অস্তিত্বের সৃষ্টিগত প্রমাণ আছে। স্রষ্টার অস্তিত্বের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ আছে। আজকের লেখায় নিরপেক্ষভাবে যাচাই বাচাই করে দেখানো হবে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নেই নাকি আসলেই আছে। নাস্তিকদের বিশ্বাস করা বিভিন্ন দাবি গুলোকে আজকে যুক্তি ও প্রমাণের সামনে দাড় করানো হবে।

যখন নাস্তিক্যধর্মের অনুসারীরা আমাকে জিজ্ঞেস করে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ কি? তখন আমি তাদেরকে প্রশ্ন করি আপনি স্রষ্টার অস্তিত্বের আসলে কেমন প্রমাণ চাচ্ছেন? কারণ আপনি যদি বলেন স্রস্টাকে সরাসরি চোখে দেখতে চাই তাহলে এটা সম্ভব না কারণ আমাদের চোখ তাঁকে দেখার শক্তি রাখে না। কিন্তু চোখে দেখা যায় না অর্থ এটা নয় যে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। চোখে দেখা যায় না তাই সেটা নেই- এমন কথা আসলে ভুল। কিভাবে? আমরা এমন অনেক বিষয় আছে যা সরাসরি চোখে দেখি না কিন্তু এরপরেও স্বীকার করে নেই অথবা বিশ্বাস করি। যেমনঃ

মানুষের মাথায় বুদ্ধি,জ্ঞান আছে কিন্তু সেটার আকৃতি কেমন তা না দেখেও আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের শীত, গরম, ব্যাথা ,ক্ষুধা লাগে, দেহের শক্তি,খাবারের স্বাদ গ্রহণ,গ্রান গ্রহণ,আমরা যে আনন্দ-দুঃখ অনুভব করি,আমাদের ইচ্চা শক্তি, ভয় এসব অদৃশ্য জিনিসকে না দেখেও বিশ্বাস করি।চোখে দেখার ক্ষমতা,কথা বলার ক্ষমতা,চিন্তা করার ক্ষমতা,নিজ শক্তি,মানুষ কিভাবে কার কাছ থেকে নিলো? চিন্তা করার ক্ষমতা কেন সৃষ্টি হলো? এসব অদৃশ্য শক্তি আমরা চোখে না দেখেই বিশ্বাস করে নেই। আমরা প্রাই বলি যে মন খারাপ বা এখন মন ভালো না। কেন এই "মন" আমরা দেখাতে পারি না? এর অর্থ মনের অস্তিত্ব নেই? না। বরং না দেখেই আমরা বিশ্বাস করে নেই। যদি এগুলা না দেখা যায় তাহলে কি এগুলো অস্তিত্বহীন? দুনিয়াতে কয়জন নাস্তিক আছে যে DNA টেস্ট করিয়ে এরপরে নিজের বাবাকে বাবা হিসেবে বিশ্বাস করে? যদি DNA টেস্ট পর্যন্ত করা হয় এরপরেও আরজ আলী মাতাব্বর টাইপের নাস্তিকরা ডাক্তারের রিপোর্টে সংশয় প্রকাশ করতে পারে যে আপনিই যে সঠিক টেস্ট করেছেন সেটার প্রমাণ কি? এই টাইপের বুড়ো নাস্তিকদের তো আর ডাক্তার হবার সময় নেই এই ক্ষেত্রেও কিন্তু ডাক্তারের টেস্টে বিশ্বাস করতে হয় বা হবে। না হয় নাস্তিকদের পিতামাতার বাসর রাতের ভিডিও দেখে এরপরে নাস্তিকরা বিশ্বাস করবে কে বাবা আর কে মা? কিন্তু আমরা যারা স্বাভাবিক আছি খেয়াল করে দেখবেন স্বাভাবিকভাবে টেস্ট ছাড়াই কিন্তু নিজের বাবাকে বাবা ডাকি কেন? কারণ নিজের মাকে আমরা বিশ্বাস করি এমনকি নিজের বাবাকেও। যা আমাদের সাথে ঘটেই নাই এমন ভবিষ্যৎ কাল, এমনকি অন্যের অতীত কালকেও আমরা না দেখেও বিশ্বাস করে থাকি।

উপরে বর্ণিত যা যা অদৃশ্য বিষয় গুলো তুলে ধরা হয়েছে সব গুলোর অস্তিত্ব যদি আপনাকে প্রমাণ করতে হয় তাহলে আপনি সেই জিনিসের কারণ দেখাবেন অথবা ফলাফল দেখাবেন অথবা এফেক্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন কিন্তু কারণ আর ফলাফল ছাড়া আপনি সেই জিনিসকে সরাসরি দেখাতে পারবেন না। অথবা সরাসরি প্রমাণ করতে পারবেন না। এই পয়েন্টটি মনোযোগ দিয়ে বুঝুন। একটি উদাহরণ দিলে আরও সহজ হবে। ধরুন একটি ঘরে একজন মানুষকে ও একাধিক বাদর রেখে বলা হলো, যে আগে ঘরের মধ্যে চাবি সন্ধান করে দরজা খুলে বের হয়ে আসতে পারবে সে জয় প্রাপ্ত হবে। সময় দশ মিনিট। এখন আপনি বাদরদেরকে টক্কর দিয়ে আগেই বের হয়ে আসলেন। এটা থেকে কি প্রমাণ হলো? প্রমাণ হলো যে আপনার বুদ্ধি, জ্ঞান বেশি। কিন্তু আপনি কি সরাসরি পারবেন এই নিদর্শন অথবা চিহ্ন ছাড়া আপনার বুদ্ধির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে? সম্ভব? কাগজ হাতে ধরা যায়, বুদ্ধি কি হাতে ধরা যায়? এখানে কোনো লোক যদি বলে সামান্য চাবি খুঁজে দরজার তালা খুলে নেয়া বুদ্ধির প্রমাণ হতে পারে না আমি এগুলো অবিশ্বাস করি এগুলো লজিকাল ফ্যালাসির কারসাজি। আমাকে সরাসরি বুদ্ধিকে দেখাতে হবে। আমি ইট, বালু সিমেন্ট যেভাবে দেখতে পারি, হাতে ধরতে পারি, ছুতে পারি সেভাবে আমাকে আপনার বুদ্ধিকেও ধরে দেখাতে হবে, হাতে ধরিয়ে দিতে হবে।- এই মুক্তমনা টাইপের কথাবার্তা লোকগুলোকে আপনি কি বলবেন? আপনি কি বলবেন জানি না কিন্তু আমি বলবো যে আপনার বুদ্ধির অস্তিত্বের প্রমাণ লাগবে না আপনি আগে মানুসিক ডাক্তার দিয়ে নিজেকে বৈজ্ঞানিকভাবে চেকাপ করান।

নাস্তিকরা উদাহরণে দেয়া মুক্তমনা লোকটির মতোই। স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ যতো দেয়াই হোক না কেন তারা সেই কারণ এবং ফলাফল গুলো অস্বীকার করে বলার চেষ্টা করে আমাকে সরাসরি দেখান। অথবা এটা সরাসরি স্বীকার না করলেও এমনভাবে গোঁজামিল দেবে যার ফলাফল হবে চোখে দেখি না তাই বিশ্বাস করি না টাইপের। যেমন ভুতের উদাহরণ এনে বলবে মহাবিশ্বকে ভুত বানাইসে আপনি সেটা মানেন না কেন? মহাবিশ্বকে স্পাইডারম্যান,সুপারম্যান, আয়রোনম্যান বানাইসে আপনি মানেন না কেন? এসব নিন্মমানের ফালতু প্রশ্নের জবাবে আমি বলবো আমি তো দাবিই করিনি ভুতে অথবা স্পাইডারম্যানে মহাবিশ্ব বানাইসে বা বানায় নাই। যা আমি দাবিই করিনি সেটা আমি কেন প্রমাণ করতে যাবো? আমি দাবি করেছি মহাবিশ্বকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বুদ্ধিমান স্রস্টা সৃষ্টি করেছেন। যেহেতু এটা আমার দাবি সেহেতু আমি এর পক্ষেই যুক্তি-প্রমাণ দিয়েই কথা বলবো। তাই না? অন্যদিকে নাস্তিকদের বিশ্বাস হচ্ছে মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করে নাই- এর পক্ষেও নাস্তিকদের প্রমাণ দেয়া অবশ্যক।

নাস্তিকরা কি সাক্ষ্যের প্রমাণকে বিশ্বাস করে? খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটি। যেমন বলা হয়ে থাকে যে বিজ্ঞানী নিউটন সাহেবের মাথায় আপেল পরেছিল। আপেলটি কেন নিচেই পড়লো উপরে কেন গেলো না? ব্যাস এটা নিয়ে গবেষণা করতে করতে মধ্যকর্ষণ শক্তির আবিষ্কার করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমানে কোনো নাস্তিক কি ঐ ঘটনা বাস্তবে দেখেছে? বলতে পারে সেটা তো অতীতের ঘটনা তাই দেখা যাবে কিভাবে? কথা এখানেই সেটা কিন্তু আপনি বাস্তবে দেখতে পারবেন না। কিন্তু এর অর্থ কি এটা যে সেই ঘটনার অস্তিত্ব নেই? অথবা মধ্যকর্ষণ শক্তির অস্তিত্ব নাই? না। মধ্যকর্ষণ শক্তি তো এখনো আছে কিন্তু আপনি কি পারবেন কারণ, এফেক্ট বা ফলাফল ছাড়া সরাসরি মধ্যকর্ষণ শক্তিকে দেখাতে? তাহলে সেই ঘটনাকে কিভাবে বিশ্বাস করলেন? সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। আপনি কিন্তু সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই এই ঘটনাকে বিশ্বাস করে নিচ্ছেন। আপনার পক্ষে টাইমমেশিন বানানো ছাড়া এই ঘটনার সত্যতার পক্ষে দ্বিতীয় কোনো প্রমাণ নেই। সত্য সাক্ষ্যের মাধ্যম যে প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যায় সেটা বুঝা যায় বিশুদ্ধ ইতিহাসে বর্ণিত ইতিহাসবিদদের কথাকে বিশ্বাস করে। এমনকি নিউটনের যে ছবি পাওয়া যায় সেটা যে আসলেই উনার ছবি এর বাস্তব প্রমাণ নেই কিন্তু সাক্ষ্য দ্বারা আমরা বুঝে নেই যে হ্যাঁ এটা উনার ছবি। একইভাবে যতো প্রাচীন বিজ্ঞানী আছেন তাদের লিখিত বই, গবেষণাপত্র , তাদের পরিক্ষা নিরিক্ষা, ইত্যাদির প্রমাণ আমরা সবাই বাস্তবে দেখি না কিন্তু সরাসরি চোখে না দেখেও ইতিহাসের সাক্ষ্য থেকে বিশ্বাস করে নেই। এখানে বিবর্তিত কোনো গাধা যদি বলে আমি কেন এসবে বিশ্বাস করতে যাবো, নিউটনের অথবা ডারউইনের কোনো ছবিকে এডিট করে বলে আপনি কি সরাসরি নিউটনকে দেখেছেন, ডারউইনকে দেখেছেন? না। যেহেতু দেখেন নাই তাই আমি আপনাকে যেই ছবি দেখাচ্ছি সেটাই আসলে উনার ছবি। চিন্তাশীল পাঠক হয়তো ধরতে পেরেছেন এই বিবর্তিত প্রাণীর প্রয়োজন আগের মুক্তমনা লোকটির মতো একই ডাক্তার দিয়ে নিজের চেকাপ করানো।

উপরের কথাগুলো বুঝে থাকলে এটা বুঝতে সহজ হবে হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা) পর্যন্ত যতো নবী রাসুল এসেছিলেন উনাদের নবুয়তের সত্যতাকে যাচাই করে,পর্যবেক্ষণ করে উনাদের সত্য সাক্ষ্যকে বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে উনারা আসলেই আল্লাহর নবী ও রাসুল ছিলেন এবং এটাই সত্যে পরিপূর্ণ কথা ও পরিপূর্ণ সঠিক। অন্যদিকে বিগবাং,কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন,ডার্ক ম্যাটার,মধ্যকর্ষণ শক্তি এগুলো সরাসরি না দেখে, স্রেফ ফলাফল দেখে যদি এসব অদৃশ্যের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় তাহলে যে স্রস্টা এসব অদৃশ্য জিনিস শুন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন সে কেন প্রমাণিত হতে পারবে না? তাই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত এটাই যে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণিত অপরিহার্য সত্য কারণ সৃষ্ট বস্তু কাজ করছেই সৃষ্টিকর্তার কারণে।

মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীলের কারণ হিসেবে যতো গুলো সম্ভাব্য কারণ পাওয়া যায় সব গুলোর যৌক্তিক বিশ্লেষণ করে শেষ সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করবো। এবং নিরপেক্ষভাবে দেখবো মহাবিশ্বের অস্তিত্বের আসল কারণ আসলে কি? আপনি যদি নাস্তিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বলবো কিছু সময়ের জন্য স্রস্টাবিদ্বেষ নামক চশমাটি খুলে রেখে দিয়ে লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। বুঝার চেষ্টা করুন।

সম্ভাব্য কারণ ১ > মহাবিশ্ব শুন্য থেকে নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে।

যেসব নাস্তিকরা বিশ্বাস করে মহাবিশ্ব এমনে এমনেই শুন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে তাদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে মহাবিশ্ব শুন্য থেকে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? আর শুন্যতা হলো সকল কিছুর অনুপস্থিতি। সকল পদার্থ,স্থান,শক্তি এবং কার্যকারণ যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে তবে সে অবস্থাকে শুন্যতা বলা হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পাথর যা সপ্ন দেখে তাই শুন্যতা অর্থাৎ পাথর যেহেতু নির্জীব বস্তু তাই তার স্বপ্ন দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না। এমন শুন্যতা থেকে মহাবিশ্ব এমনে এমনে তৈরি হতে পারে? অবশ্যই না। কারণ নাই নাথিং থেকে নাই নাথিং ছাড়া আর কিছুই আসবে না। এটি চূড়ান্ত সত্য কথা। ০+০=? ৫৫ নাকি? এটা যে ভুল উত্তর সেটা একটি বাচ্চাও বুঝতে পারবে কিন্তু বিবর্তিত প্রাণীরা কেন জানি বুঝতে পারে না হয়তো এখনো মানুষের মতো চিন্তা করার মতো পর্যাপ্ত মস্তিস্ক এখনো এদের হয়ে উঠেনি। আপনার পকেটে যদি নাথিং থাকে তবে সেই পকেট থেকে ৫৫ কোটি টাকার অস্তিত্ব এমনে এমনেই তৈরি হতে পারবে? না।

যে সংশয়যুক্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে,

শুন্যতা থেকেই কেন মহাবিশ্ব এমনে এমনে তৈরি হতে পারলো? শুন্যতা থেকে মহাবিশ্ব নিজে নিজেই তৈরি হয়ে সাথে সাথেই কেন ধ্বংস হলো না? মহাবিশ্ব কিভাবে দৃশ্যম্যান হতে শুরু করেছিল? শুন্যতা থেকে এতো বিশাল মহাবিশ্ব এমনেই তৈরি হতে পারলো তাহলে পৃথিবীতে কেন আরেকটি মহাবিস্ফোরণ হয়ে এমনেই আরেকটি মহাবিশ্ব হতে পারছে না? কোন বস্তু থামিয়ে রাখছে এসব? যে বস্তু থামিয়ে রাখছে তাকে কোন বস্তু থামিয়ে রাখছে? তাকে কোন থামিয়ে রাখছে? সেই বস্তুকে কে থামিয়ে রাখছে? যারা থামিয়ে রাখছে এরা কি স্বাধীন না? স্বয়ংসম্পূর্ণ বুদ্ধিমান কেউ না? যদি বলেন কেউই থামিয়ে রাখে নাই তাহলে একা একা কিভাবে বস্তু নিয়ন্ত্রিত হতে পারে? বস্তু নিজে কি স্বাধীন? পরাধীন হলে কার অধীনে আছে?

উপরে বর্ণিত সংশয়যুক্ত প্রশ্ন তো নাস্তিকদের জন্য থেকেই যাচ্ছে কিন্তু আমরা যারা যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারি এবং চিন্তাশীল আমাদের কাছে পরিস্কার স্পষ্ট যে শুন্যতা থেকে নিজে নিজেই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হবার বিশ্বাসটি আসলে অবিশ্বাসযোগ্য একইসাথে উক্ত সম্ভাব্য কারণটি পূর্ণ বাতিল।

মজার একটি ঘটনা এখানে না বললেই নয়।  ‘Ali Dawah“ নামে ইউটিউব চ্যানেলে MUSLIM PRANKS ATHEIST EXPERIMENT শিরোনামে Apr 1, 2015 তারিখে একটি এক্সপেরিমেন্ট দেখানো হয়। যেখানে বিভিন্ন ধরণের নাস্তিকদের কাছে গিয়ে একটি খালি বাক্স নিয়ে তাদেরকে বলা হলো এই বাক্সটি ওপেন করতে। তারা ভয় পেলো কিন্তু আলী ভাই তাদেরকে কথা দিলো এই খালি বক্সে এমন কিছু নেই যা আপনাকে ক্ষতি করবে। যখন একে একে নাস্তিকরা বাক্সটি ওপেন করলো তারা দেখলো পুরো বাক্সটি নাথিং অর্থাৎ বাক্সে কিছুই নেই। আলী ভাই সেই নাস্তিকদের জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি বিশ্বাস করেন যে মহাবিশ্ব নাথিং থেকে এসেছে? সে উত্তর দিলো হ্যাঁ আমি বিশ্বাস করি। তখন আলী ভাই বললেন, আপনার সামনেই তো নাথিং আছে তো এই নাথিং থেকে মহাবিশ্ব তৈরি হতে পারবে কিভাবে? কি মনে হয় আপনার? যেই নাস্তিক বললো এটা হতে পারে তখন আলী ভাই বললেন আপনার সামনেই তো পুরো নাথিং বাক্স আছে তো এখান থেকে মহাবিশ্ব হতে পারে? তখন সেই নাস্তিকটি বললেন আসলে নাথিং থেকে হতে পারে না বরং তখনই এটা সম্ভব যখন কেউ এই খালি বাক্সে কিছু তৈরি করবে। তখন আলী ভাই বললেন এই তো আপনি বুঝেছেন। কিছু কিছু নাস্তিক পুরো চুপ হয়ে গিয়েছিল মনে হচ্ছিল নিজের নাস্তিক্যবিশ্বাস নিয়েই সংশয়ে ভুগেগেছে এমনকি নাথিং কিছু নাই থেকে মহাবিশ্ব হতে পারে এই হাস্যকর বিশ্বাসের কারণে অনেক নাস্তিক নিজের প্রতিই হেঁসে দিয়েছিল। আবার অনেকে নিজের এমন নাস্তিক্যবিশ্বাস সাথে সাথেই ছেড়ে দিয়েছিল(ক)। এক্সপেরিমেন্টটি অবশ্যই দেখবেন মজা পাবেন সাথে এটাও দেখতে পারবেন নাস্তিকদের গিলুর দৃশ্যপট যেমন হয়।

সম্ভাব্য কারণ ২> মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে বা মহাবিশ্ব অসীম, তাই স্রষ্টার প্রয়োজন নেই মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে আনতে।

অনেক নাস্তিককে দেখা যায় “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” প্রমাণ করার জন্য যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই ফতোয়া দিয়ে দেয় যে আমাদের মহাবিশ্ব অসীম তাই মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে আনতে স্রষ্টার প্রয়োজন নেই। প্রথম কথা হচ্ছে মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে কেন তৈরি করতে হবে? যেখানে সে নিজেই আগে থেকে অস্তিত্বশীল? কোনো কিছু কেন তৈরি করা হয়? যখন সেটার অস্তিত্ব আগে থেকে থাকে না তখন। ধরুন একটি বাড়ি আমি তৈরি করেছি। কিন্তু কেউ যদি বলে বাড়িটি নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে কথাটি অবশ্যই মিথ্যা কারণ বাড়িটি নিজেই যদি নিজেকে তৈরি করে তাহলে বাড়িটি আগে থেকে অস্তিত্বে ছিল না তাহলে যে বাড়ির অস্তিত্ব আগে থেকে ছিলই না সে বাড়ি নিজেকে আবার কিভাবে তৈরি করবে? "নিজেকে সৃষ্টি করা” দ্বারা কথাটির অর্থ কোনো কিছুর আগে অস্তিত্ব ছিল না,পরে তা অস্তিত্বে এসেছে। সুতরাং সহজেই বুঝা যাচ্ছে মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে এটা অযৌক্তিক চিন্তা। কারণ কোনো কিছুর যদি অস্তিত্ব না থাকে তা হলে সেটি নিজেকে সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ক্ষমতা পাবে কোথায়?

মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে কথাটি এরকম যে একজন মা নিজেই নিজেকে জন্ম দিয়েছে। সত্য কথা হচ্ছে মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে দাবিটি আসলে মিথ্যা ও ভুল কারণ একটি অপরকে বাতিল করে দিচ্ছে। দ্বিতীয় যে কথাটি তা হচ্ছে মহাবিশ্ব অসীম। প্রশ্ন হচ্ছে মহাবিশ্ব বুদ্ধিমান কোনো সত্ত্বা? যদি নাস্তিকরা বলে “হ্যাঁ” তাহলে নাস্তিকরাও সৃষ্টিকর্তাকে মেনে নিচ্ছে একটু ভিন্ন ভাবে অর্থাৎ সরাসরি সৃষ্টিকর্তা না বলে বরং স্রষ্টার স্থানে মহাবিশ্বকে বসিয়েছে এই আর কি! কিন্তু যদি নাস্তিকরা বলে “না” তাহলে বুদ্ধিহীন,অর্থহীন, এলোমেলো মহাবিশ্ব থেকে এতো এতো প্রাণী অস্তিত্বেই আসতে পারে না। সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝানর চেষ্টা করছি। একটু কল্পনা করার চেষ্টা করুণ।

ধরুন একটি টিয়া পাখিকে অসীম বয়স দেয়া হলো। এই টিয়া পাখিটি কি মানুষ তৈরি করতেই থাকতে পারবে? বা একটি ২০০ তোলা বাড়ি বারবার বানাতে থাকতে পারবে যেখানে অটোম্যাটিক মানুষ তৈরি হতে থাকবে একইসাথে আলাদা আলাদা রুম, দরজা, সুন্দর সুন্দর খাট, আলমারি, আয়না, আরও প্রয়োজনীয় বস্তু তৈরি হতেই থাকবে? আপনি যদি বুদ্ধিমান ও যৌক্তিক চিন্তাশীল মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উত্তর হবে এটা সম্ভব না। এইবার আপনার আশে পাশে যদি খালি গ্লাস থাকে সেই শুন্য গ্লাসের দিকে তাকান। দেখুন সেখানে কিছুই নেই। নিজেকে সেই দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করুন তো এই খালি গ্লাস থেকে অটোম্যাটিক হাতি তৈরি হতে থাকবে, মানুষ তৈরি হতে থাকবে, সূর্য,নক্ষত্র, চাঁদ ,বড় বড় গাড়ি তৈরি হতে থাকবে। এটা কি সম্ভব? আপনার নিজের করা এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে বাস্তবে আপনি সহজেই এই সিদ্ধান্তে আসতে পারেন যে এটি কখনোই সম্ভব না। ঠিক একইভাবে মহাবিশ্ব নামক বস্তুকে অসীম সময় দিয়ে দেয়া হলে অথবা মহাবিশ্বকে অসীম হিসেবে বিশ্বাস করা হলেও বাকি সব কিছুর সৃষ্টির উপকরণ নিজে নিজেই তৈরি হতেই পারবে না। এটা যৌক্তিকভাবেই ও প্রমাণিতভাবেই অসম্ভব। সুতরাং সার্বিকভাবেই বস্তু মহাবিশ্ব অসীম অথবা মহাবিশ্ব নামক বস্তু নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে নাস্তিকদের এমন বিশ্বাসকে অন্ধবিশ্বাস বা মিথ্যা ও ভুলে ভরা বিশ্বাস ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।

 সম্ভাব্য কারণ ৩ > মহাবিশ্বকে এমন কেউ সৃষ্টি করেছে যে নিজে সৃষ্ট।

মহাবিশ্বকে এমন কেউ সৃষ্টি করেছে যে নিজে সৃষ্ট। তখন প্রশ্ন আসবে তাকে কে সৃষ্টি করেছে? তাকে যে সৃষ্টি করেছে আবার তাকে কে সৃষ্টি করেছে? এভাবে চলতেই থাকবে। - যেসব নাস্তিকরা প্রশ্ন করে স্রস্টাকে কে সৃষ্টি করেছে? অথবা যারা এটা বিশ্বাস করে যে মহাবিশ্বকে এমন কেউ সৃষ্টি করেছে যে নিজে সৃষ্ট তাহলে প্রথম কথা হচ্ছে নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতেই এই কথা মিথ্যা। নাস্তিক্যবাদ মতে মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করে নাই তাই মহাবিশ্বকে এমন কেউ সৃষ্টি করেছে যে নিজে সৃষ্ট এই দাবি নাস্তিক্যবাদ অনুযায়ী গলদমিথ্যা। তাছাড়া যৌক্তিকভাবেও “মহাবিশ্বকে সৃষ্ট কেউ সৃষ্টি করেছে” কথাটি মিথ্যা। কিভাবে? ধরুন আমি মোবাইল সৃষ্টি করতে চাই। এখন মোবাইল সৃষ্টি করার আগে আমি দ্বিতীয় জনকে জিজ্ঞাসা করলাম আমি কি মোবাইল তৈরি করতে পারবো? সে আবার তৃতীয়জনকে জিজ্ঞাসা করলো যে, সে কি মোবাইল তৈরি করতে পারবে? তৃতীয়জন আবার চতুর্থজনকে জিজ্ঞাসা করলো আমি কি তাকে অনুমতি দিতে পারবো? এভাবে যদি চলতেই থাকে, চলতেই থাকে তাহলে আসলেই কি প্রথম মানুষ মোবাইল সৃষ্টি করতে পারবে? অবশ্যই না। একইভাবে যে ঈশ্বর মহাবিশ্ব তৈরি করবে সে যদি আরেকজন ঈশ্বরের অনুমতি নেয় যে আমি কি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করবো? এরপরে সেই ঈশ্বর যদি আবার আরেকজন ঈশ্বরের কাছে গিয়ে বলে আমি কি মহাবিশ্ব তৈরি করতে পারবো? এরপরে সেও আবার আরেক ঈশ্বরের কাছে গিয়ে বলল আমি কি মহাবিশ্ব তৈরি করতে পারবো? এভাবে যদি চলতেই থাকে, চলতেই থাকে তাহলে মহাবিশ্ব কি আসলেই অস্তিত্বে আসা সম্ভব? না। তাই এ ক্ষেত্রে এমন একজন প্রয়োজন যে স্বয়ং সিদ্ধান্ত নিতে পারে,অন্য কারো অনুমতির মুখাপেক্ষী না। নিজেই সব দিক থেকে পারফেক্ট। 

আরো সহজভাবে বলতে গেলে মহাবিশ্ব যদি এমন কেউ সৃষ্টি করে যে নিজেই সৃষ্ট তা হলে যতক্ষণ না পর্যন্ত এমন কিছু মিলবে যে নিজে সৃষ্টি হওয়া থেকে মুক্ত, স্বয়ংসম্পূর্ণ ততক্ষণ পর্যন্ত মহাবিশ্বের অস্তিত্ব সম্ভব না। যেহেতু মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আছে, তাই সার্বিক যৌক্তিক বিবেচনায় এই অস্তিত্বের পিছে একমাত্র যৌক্তিক কারণ হচ্ছে এমন কেউ এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছে যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, যে নিজে মহাবিশ্বকে অস্তিত্বকে আনার ক্ষমতা রাখে, যে নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ,যে নিজে সৃষ্ট হওয়া থেকে মুক্ত। কারো অনুমতির মুখাপেক্ষি না। ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন। ধরুন মহাবিশ্বকে এমন কেউ অস্তিত্ব দেবে যাকে অন্য আরেকজন অস্তিত্ব দেবে। আবার তাকে যে অস্তিত্ব দেবে, তাকে আরেকজন অস্তিত্ব দেবে, আবার একে যে অস্তিত্ব দেবে তাকে অন্যজন অস্তিত্ব দেবে। এভাবে চলছেই কোনো থামাথামি নেই- প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কি আসলেই মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসতে পারবে? না। কারণ মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে আনতে এমন একজন পারফেক্ট বুদ্ধিমান স্রষ্টা লাগবে যার শুরু নেই আবার শেষ নেই অর্থাৎ উনি এতো পারফেক্ট যে উনার অস্তিত্বের জন্য অন্যকোনো অস্তিত্বের উপর নির্ভর করতেই হবে না। স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদি স্রষ্টার অস্তিত্বের জন্য অন্য আরেকজন স্রষ্টার প্রয়োজন হতোই তাহলে যৌক্তিক কারণেই মহাবিশ্বই অস্তিত্বে আসতে পারতো না অথচ মহাবিশ্ব কিন্তু অস্তিত্বশীল। তারমানে এমন ক্ষমতাধর কেউ মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে এনেছে যার নিজের অস্তিত্বের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় না। স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বয়ংসম্পূর্ণ। উনার অস্তিত্ব শক্তিশালী। উনার অস্তিত্ব এতো নিখুত যে এই অস্তিত্বের জন্য অন্য কোনো অস্তিত্বের প্রয়োজনই নেই।স্রস্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করে তাহলে সে আর স্রস্টাই থাকবেন না বরং সৃষ্টি হয়ে যাবেন আর স্রষ্টার ক্ষেত্রে "সৃষ্টি" শব্দটি প্রযোজ্য না। কারণ স্রষ্টাই যখন "সব কিছু" সৃষ্টি করেছেন তখন তাঁকে আবার কে সৃষ্টি করবে যেহেতু স্রষ্টা হলেন তিনিই যিনি "সৃষ্ট নন"। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি নিজ দায়িত্বে বুঝে নিন।

উদাহরণ ১/ আপনি একটি লিখা লিখেছেন। যদি প্রশ্ন হয়, আপনাকে কে লিখেছে? তখন এর জবাব কি হবে? আসলে এ প্রশ্নটিই সঠিক নয়। কারণ আপনি হলেন মানুষ। আপনাকে যদি কেউ লিখতো তাহলে আপনি আর মানুষ হতেন না,আপনি "লিখা" হয়ে যেতেন। আপনি মানুষ আপনি লিখার উর্ধে। কারণ আপনি মানুষ। আপনার ক্ষেত্রে লিখা শব্দটি গ্রহণযোগ্য না তেমনি স্রষ্টার ক্ষেত্রে সৃষ্টি শব্দটিও গ্রহনযোগ্য না। মানুষ ও লিখার মধ্যে যেমন পার্থক্য স্রষ্টা আর সৃষ্টির মধ্যেও আরও বেশি পার্থক্য।

উদাহরণ ২/ ধরুন আপনার নাম রহিম। বলা হলো, রহিম সাইকেল চালায়। যদি প্রশ্ন হয়, রহিমকে কে চালায়? এ প্রশ্নটিও একই টাইপের ভুল। রহিমকে যদি কেউ চালাতো তবে রহিম আর রহিম থাকতো না রহিম সাইকেল হয়ে যেতো। ঠিক তেমনি স্রষ্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করতো তাহলে স্রষ্টা আর স্রষ্টাই থাকতেন না, তিনিও সৃষ্টি হয়ে যেতেন।স্রষ্টা, সৃষ্টি নন বলেই,তিনি স্রষ্টা।

উদাহরণ ৩/ ধরুন আপনি ছবি এঁকেছেন। যেমন গাছের ছবি, সুন্দর নদ-নদী, ফুল, চাঁদ, সূর্য গ্যালাক্সি, স্টার, গ্যালাক্সি,গ্রহ ইত্যাদি ইত্যাদি। ধরুন প্রশ্ন করা হল "আপনাকে কে এঁকেছে? আপনাকে কেউই আঁকে নাই। কারণ আপনাকে যদি কেউ আঁকত তবে আপনি আর মানুষ হতেন না আপনি ছবি হয়ে যেতেন। বাস্তব যুক্তি এটাই যে মানুষ ও ছবি গুলোর মধ্যে যে পার্থক্য তেমনি স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে অনেক পার্থক্য।

উদাহরণ ৪/ একটি তাসের সারি টোকা দেয়া হলো। প্রত্যেক তাস একে একে পরে গেলো। কেউ যদি প্রশ্ন করে প্রথম যে টোকা দিয়েছে সেও কি তাস? না। কারণ যে তাসকে প্রথম টোকা দিয়েছে সে মানুষ, যে নিজে তাস না। স্রস্টাও প্রথম সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন,যে নিজে সৃষ্ট নয়। তাই তাঁকে কে সৃষ্টি করেছেন? প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে তাঁকে কেউই সৃষ্টি করেননি যদি কেউ তাঁকে সৃষ্টি করতো তাহলে তিনি স্রষ্টাই হতেন না তিনিও সৃষ্টি হয়ে যেতেন। স্রষ্টা হল তিনি যিনি সৃষ্ট না।

উদাহরণ ৫/ আপনি কম্পিউটারে টাইপ করছেন। প্রশ্ন করা হলো আপনাকে কে টাইপ করেছে? একইভাবে যদি আপনাকে কেউ টাইপ করতো তাহলে আপনি আর মানুষ হতেন না আপনি হয়ে যেতেন কিবোর্ড।একইভাবে আপনার ক্ষেত্রে যেমন "কে টাইপ করেছে"  এই প্রশ্ন হাস্যকর তেমনি সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন স্রষ্টা, তাঁকে কে সৃষ্টি করেছে? প্রশ্নটিও মূর্খতাময় ও বাতিল।

উদাহরণ ৬/ ধরুন আপনি জুতা পরিধান করলেন। কেউ যদি প্রশ্ন করে আপনাকে কে পরিধান করলো? এখানেও একই ব্যাপার অর্থাৎ আপনাকে যদি কেউ পরতো তাহলে আপনি মানুষ হতেন না আপনি হয়ে যেতেন জুতা। তাই আপনাকে কে পরিধান করলো? এই প্রশ্নই সঠিক নয়। আপনার (মানুষ) আর জুতার মধ্যে যেই পার্থক্য স্রষ্টা আর সৃষ্টির মধ্যে এর থেকেও বেশি পার্থক্য।

উদাহরণ ৭/ বিগব্যাং থেকে জানতে পারি "মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে"। এখন আমরা সহজ সমীকরণ পদ্ধতিতে দেখবো স্রষ্টাকে সৃষ্টির প্রয়োজন আছে কিনা অথবা স্রষ্টার সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে কিনা। *সকল সৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে এবং শেষ আছেঃ ধরি এটা সমীকরণ ১ আবার *মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টিঃ এটা সমীকরণ ২। এখন সমীকরণ ১ আর ২ থেকে পাইঃ সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে। মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি, তাই এটারও একটা শুরু এবং শেষ আছে। এখন আমার ৩ নং সমীকরণ হচ্ছেঃ স্রষ্টা সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন। খেয়াল করুন, আমার প্রথম শর্তের সাথে কিন্তু তৃতীয় শর্ত ম্যাচ হচ্ছে না। আমার প্রথম শর্ত ছিলঃ সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে কিন্তু তৃতীয় শর্তে কথা বলছি স্রষ্টা নিয়ে। তিনি সৃষ্টি নন,তিনি স্রষ্টা। তাই এখানে প্রথম শর্ত খাটে না। তারমানে স্রষ্টার শুরু নাই,শেষও নাই। অর্থাৎ তাঁকে নতুন করে সৃষ্টিরও প্রয়োজন নাই।তারমানে স্রষ্টার আরেকজন স্রষ্টা থাকারও প্রয়োজন নাই। কারণ "শুরু" হওয়া সৃষ্টির কাজ আর স্রষ্টা সেই শুরুটা করেছেন। যেহেতু স্রষ্টার শুরু নাই এবং শেষও তাই তাঁকে সৃষ্টি করার দরকারও নাই।

অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা যেই ভুলটি করে সেটা হলো স্রষ্টা আর সৃষ্টিকে এক করে গুলিয়ে ফেলে যা ভুল। এরপরে নাস্তিকরা আরেক ধরনের প্রশ্ন করে। প্রশ্ন করে বলে দেয় “হ্যাঁ” অথবা “না” তেই জবাব দিতে হবে। প্রশ্নটি হচ্ছে, স্রষ্টা যদি সর্ব শক্তিমান হয় তাহলে তিনি কি এমন কিছু বানাতে পারবে যা তিনি উঠাতে পারবে না? জবাব দেবার আগে বলে নেই সব প্রশ্নই হ্যাঁ অথবা না- তে উত্তর দেয়া সম্ভব না। যেমন আপনার নাম কি? এই প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ অথবা না দিয়ে নাস্তিকরা জবাব দিতে পারবে না। আবার কোনো নাস্তিককে যদি আমি প্রশ্ন করি আপনি কি মুক্তমনে মানুষ হত্যা বন্ধ করেছেন? হ্যাঁ অথবা না- তে জবাব দিন তো। সে কিন্তু পারবে না। তাই স্রস্টা সর্বশক্তিমান হলে এমন কিছু বানাতে পারবে যা তিনি উঠাতে পারবে না? প্রশ্ন করে হ্যাঁ অথনা না-তে জবাব দেবার শর্ত নির্দিষ্ট করে দেয়া অর্থহীন। যেখানে প্রশ্নই ভুল সেখানে আবার হ্যাঁ অথবা না-তে জবাব দেবার শর্ত ঠিক করে দেয়াটাই তো অযৌক্তিক। সঠিক কথা হচ্ছে স্রস্টা যে জিনিস বানাতে পারবে সেই জিনিস সে উঠাতেও পারবে। বানাতে পারলে উঠাতে পারবে না নাস্তিকদের এমন কথা মিথ্যাকথা। ধরুন কোনো মানুষ একটি কাগজ তৈরি করলো এখন যে কাগজ সে তৈরি করেছে সে এই কাগজ অবশ্যই উঠাতে পারবে। কারণ কাগজ বানানো নিয়ে তার পূর্ণ ক্ষমতা আছে। কোনো মূর্খ যদি প্রশ্ন করে তুমি এমন কাগজ বানাতে পারবে যা তুমি উঠাতে পারবে না? এটা অযৌক্তিক ও হাস্যকর প্রশ্ন। কারণ একজন মানুষ কাগজ তৈরি করতে পারলে সেটা সে অবশ্যই উঠাতে পারবে। একটি কাগজের উপরে মানুষের যেমন ক্ষমতা এরচেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখেন স্রস্টা মহাবিশ্বের উপর অথবা যে কোনো কিছুর উপর। তাই স্রস্টা যে জিনিস বানাতে পারবে সেটা উনি অবশ্যই তুলতে পারবেন। এটাই সঠিক কথা। প্রশ্ন গুলো খেয়াল করুন।

আপনি কি এমন কিছু লিখতে পারবেন যা আপনি মুছতে পারবেন না?

আপনি কি এমন কিছু টাইপ করতে পারবেন যা আপনি ডিলেট করতে পারবেন না?

আপনি এমনভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন যে আপনি সেটা কখনো ছাড়তেই পারবেন না?

আমার উপরের ৩ টি প্রশ্নের জবাব আপনি যদি হ্যাঁ দেন তাইলে না এর দিকে উত্তর চলে যাবে আবার না জবাব দিলে উত্তর হ্যাঁ এর দিকে চলে আসবে। এই ধরনের প্রশ্নে শব্দগত ধাঁধা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নাই। আপনি কোনো কিছু লিখতে পারলে তা অবশ্যই আপনি মুছতেও পারবেন বা নষ্ট করতে পারবেন। আপনি টাইপ করতে পারলে সেটা অবশ্যই ডিলেটও করতে পারবেন। আপনি নিঃশ্বাস নিতে পারলে সেটা আপনি ছাড়তেও পারবেন। আপনি লিখতে পারলে সেটা আপনি অবশ্যই মুছতেও পারবেন। আসলে শব্দগত ভাষা পেঁচিয়ে বাস্তবতা বিরোধী প্রশ্ন করে নাস্তিকরা মূলত প্রশ্নেরই অপমান করে। প্রশ্ন করতে হয় যৌক্তিকভাবে যা নাস্তিকরা পারে না। যদি পারতো তাহলে স্রস্টা নিয়ে এসব ভিত্তিহীন প্রশ্নই করতো না। স্রষ্টা যেহেতু সর্বশক্তিমান তাই তিনি কোনো বস্তু বানাতে পারলে সেটা অবশ্যই ধ্বংসও করতে পারবেন, তুলতে পারবেন যেমনি ভাবে আপনি কোনো গাড়ি সৃষ্টি করতে পারলে সেটা অবশ্যই চালাতে পারবেন। গাড়ি বানাতে পারলে,চালাতে পারবেন না এমন কথা অসুস্থ মানুষ ছাড়া কেউ বলবে না। নাস্তিকদের লজ্জা থাকলে এসব প্রশ্ন করা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবে যদিও এদের লজ্জা নেই। নাস্তিকরা যে ধরণের প্রশ্ন করে সেই একই ধরনের প্রশ্ন তাদেরকে করা হলে যেমন,

নাস্তিকরা কি মানুষ হত্যা বন্ধ করেছে?

নাস্তিকরা কি ধর্ষণ, চুরি ,ডাকাতি করা বন্ধ করেছে ?

নাস্তিকরা কি মুক্তমনে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করেছে?

সাধারণ মুসলিমদেরকে নাস্তিকরা ধোঁকা দেয়া বন্ধ করবে কবে কারণ এসব মিথ্যাচারের জন্য যেভাবে নাস্তিকরা নিজেরাই পারদর্শী মুসলিমদের কাছে যুক্তিতে নাকানিচুবানি খাচ্ছে?

আপনি কি বৃষ্টিতে গোসল করতে পারবেন যে আপনি ভিজতে পারবেন না?

নাস্তিকরা নাকি খাতায় সব লিখতে পারে,তাহলে তারা কি এমন কিছু খাতায় লিখতে পারবে যা তারা আসলে লিখতে পারবে না?

তাই সঠিক কথা হচ্ছে স্রস্টা যেহেতু সর্ব শক্তিমান সেহেতু তিনি যে পাথর বানাবেন সেটা তিনি অবশ্যই তুলতেও পারবেন। স্রস্টাকে কেউই সৃষ্টি করেন নাই কারণ উনি সৃষ্ট নন। আর এটাও প্রমাণিত হয়ে গেলো যে মহাবিশ্বকে এমন কেউ সৃষ্টি করেছে যে নিজে সৃষ্টি - দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

 সম্ভাব্য কারণ ৪ > মহাবিশ্বকে এমন কেউ সৃষ্টি করেছেন যে নিজে সৃষ্ট নয় বরং অসৃষ্ট ও স্বয়ংসম্পূর্ণ

উপরের তিনটি সম্ভাব্য কারণ গুলো যেহেতু যৌক্তিকভাবেই বাতিল প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে সেহেতু ৪ নং সম্ভাব্য কারণটিই সত্য প্রমাণিত হবে অথবা হয়ে গিয়ে মহাবিশ্বকে স্রস্টাই সৃষ্টি করেছেন এটাই অপরিহার্যভাবে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে এবং এটাই যৌক্তিকভাবে সত্য। যৌক্তিকভাবে এই সত্য প্রমাণকে যদি বিবর্তিত প্রাণীরা অস্বীকার করে তাহলে আমার কিছুই করার নাই কারণ বিবর্তিত প্রাণীরা মানুষের মতো চিন্তাশীল হবে,যৌক্তিক হবে এই বিশ্বাসকে আমি যৌক্তিকভাবেই অবিশ্বাস করি। সুতরাং সার্বিক যৌক্তিক বিশ্লেষণে এই ফলাফলে আসতে বাধ্য যে একমাত্র স্রস্টাই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। 

 নাস্তিকদের কিছু প্রশ্ন ও আমার জবাবঃ

 প্রশ্নঃ মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে একটি কারণই কেন হবে,একাধিক কারণও হতে পারে,একজন স্রস্টা কেন সৃষ্টি করবে,একাধিক স্রস্টাও তো এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে পারেন? একাধিক স্রস্টা মহাবিশ্বকে পরামর্শ করে তৈরি করেছে এমন কেন হতে পারবে না?

 উত্তরঃ বিস্তারিত উপরেই সব বলে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আপনি নাস্তিকতায় বিশ্বাস করেন নাকি অবিশ্বাস এটা আগে নিশ্চিত করুন। কারণ নাস্তিক্যবিশ্বাসে মহাবিশ্বের কোনো স্রস্টা নেই সেখানে আপনি একজন নাস্তিক হয়ে কিভাবে এই বিশ্বাস করতে পারেন যে মহাবিশ্বকে একাধিক স্রস্টা তৈরি করেছে? তর্কের খাতিরে যদি আপনার কথা মেনে নেয়া হয় তাহলে আপনি কি নাস্তিক থাকতে পারছেন? না। আপনার কথা অনুযায়ী মহাবিশ্বের যদি একাধিক স্রস্টা থাকে তাহলে আপনার নাস্তিক্যবিশ্বাস মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে। আর স্রস্টার স্বাধীন ইচ্ছা রয়েছে একইসাথে তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ তাই স্রষ্টার অন্য আরেকজনের সাথে পরামর্শ করে মহাবিশ্ব বানানোর প্রয়োজন নেই। তিনি একাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং উনার সিদ্ধান্ত সব সময়ই সঠিক। আপনি যদি বিশ্বাস করে থাকেন যে একাধিক স্রস্টা আছেন এবং উনারা পরামর্শ করে মহাবিশ্ব বানিয়েছেন তাহলে এই ক্ষেত্রে আমি বলবো আপনার বিশ্বাস করা স্রস্টা খুবই দুর্বল কারণ তিনি মহাবিশ্ব বানাবেন কি বানাবেন না সেটা আরেকজন স্রস্টার সাথে পরামর্শ করতে হয় - যা খুবই হাস্যকর কথা। আপনার কথাটি “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” দাবিটিকে সঠিক প্রমাণ করে না।

 প্রশ্নঃ আস্তিকরা বলে যে সব কিছুর স্রস্টা আছে তাই এই যুক্তিতে মহাবিশ্বের স্রস্টা আছে তাহলে এই আস্তিকদের যুক্তিতেই কেন সৃষ্টিকর্তার স্রস্টা থাকবে না?

 উত্তরঃ আমি কখনো বলি নাই যে “সব কিছুর স্রস্টা আছে”। আপনি আপনার যুক্তি বুঝতেই ভুল করেছেন। আমি বলেছি সৃষ্ট জিনিসের স্রস্টা আছে। আর স্রস্টা নিজে সৃষ্ট নয় দেখেই উনাকে কেউই সৃষ্টি করে নাই। স্রষ্টার শুরু নেই এই কথা আগেই ক্লিয়ার করেছি তাই স্রস্টাকে অস্তিত্বে আনতে আরেক স্রষ্টার দরকার নেই। স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যদিকে নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে বহুঈশ্বরবাদ বাতিল সেখানে আপনার প্রশ্নের ভিত্তি যদি এটা হয় যে একাধিক স্রস্টা মহাবিশ্ব বানিয়েছে তবে এটা নাস্তিকতা বিরোধী।

প্রশ্নঃ আসলে এই মহাবিশ্ব কোনো স্রস্টা সৃষ্টি করেনি যে সৃষ্টি করেছে তার নাম হল "ঘড়ার ডিম" এখন আস্তিকরা প্রমান করুক এই "ঘড়ার ডিম" মিথ্যা?

 উত্তরঃ আপনি যদি এটা বিশ্বাস করতে চান যে মহাবিশ্বকে ঘড়ার ডিমে, ভুতে,স্পাইডারম্যান, আয়রোনম্যান বানিয়েছেন তাহলে সেটা আপনার ব্যাপার কিন্তু আপনার এমন বিশ্বাস আপনার নাস্তিক্যবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিচ্ছে এটা কি খেয়াল করতে পারেন নাই? তাছাড়া হিন্দুধর্মের দৃষ্টিতে হাজার হাজার কোটি কোটি ভগবান আছে। হিন্দুরা সাপের পুজা করে,হনুমানের পুজা করে, হাতির পুজা করে সেখানে আপনি নাস্তিক হয়ে যদি ঘড়ার ডিম অথবা স্পাইডারম্যান, আয়রোনম্যানে বিশ্বাস করতে চান। তাদের পূজা করতে চান। আপনাকে কে বাধা দিচ্ছে? কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কি তাহলে নাস্তিকতা ছেড়ে দিচ্ছেন? অন্যদিকে আমি দাবিই করিনি যে মহাবিশ্বকে ঘড়ার ডিম তৈরি করেছে অথবা করে নাই। তাহলে আমি যা দাবিই করি নাই সেটা আমি কেন প্রমাণ করতে যাবো? আমি কোথায় বলেছি যে মহাবিশ্বকে ঘড়ার ডিম, স্পাইডারম্যান, আয়রোনম্যান বানিয়েছে অথবা বানায় নাই? তাই আমি যা বলিই নাই বা আমার যেটা দাবিই না সেটা আমাকে প্রমাণ করতে বলাটি আপনার মিথ্যাচার। 

 প্রশ্নঃ স্রস্টা আছে না হয় মহাবিশ্ব অসীম - হতে পারে এই দুইয়ের বাইরে তৃতীয় কোনো কারণ আছে তাই আমি জানি না বলাই যৌক্তিক?

 উত্তরঃ “স্রস্টা আছে না হয় মহাবিশ্ব অসীম” এই দুইয়ের বাইরে তৃতীয় যে কারণ থাকতে পারে হতে পারে সেটা আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন? আর মহাবিশ্ব অসীম হতেই পারে না সেটাও আমি পরিস্কার করে বুঝিয়ে বলেছি। বুদ্ধিহীন, চিন্তাহীন, শক্তিহীন, অর্থহীন অসীম মহাবিশ্বের মধ্যে কখনোই নিয়ন্ত্রিত নতুন নতুন বার বার সৃষ্টি হতেই পারে না। আর মহাবিশ্বকে অসীম দাবি করলে বিগব্যাং মিথ্যা হয়ে যায়। আপনি যেভাবে বললেন স্রস্টা আছে না হয় মহাবিশ্ব অসীম এর বাইরে তৃতীয় কারণ থাকতে পারে, আপনার বলা কথার সুত্রে এটাও তো হতে পারে যে “স্রস্টা নাই না হয় মহাবিশ্বই থাকতো না” তাই তৃতীয় কারণ স্বয়ংসম্পূর্ণ স্রস্টাই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন এই কারণ হতে পারে না কেন? তাছাড়া আপনি যদি বলেন তৃতীয় কোনো কারণ আছে যা আপনি জানেন না তাহলে একইসাথে এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে “স্রস্টা মহাবিশ্বকে বানায় নাই” দাবিটি নিয়েও আপনি নিশ্চিত না। কিন্তু এটা কি আপনারা নাস্তিকরা স্বীকার করছেন? নাস্তিক্যবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যাবার ভয়ে? “তৃতীয় কারণ থাকতে পারে” কথাটিও আপনাকে প্রমাণ করতে হবে। স্রস্টা আছে না হয় মহাবিশ্ব অসীম এর তৃতীয় কোনো কারণ হতে পারে এটা আপনি কিভাবে জানলেন? যদি বলেন আপনি জানেন না তাহলে প্রশ্ন আসবে যা আপনি জানেন না সেটা নিয়ে বিশ্বাস কেন করছেন? যদি উত্তরে বলেন আপনি কোন মাধ্যমে জেনেছেন তাহলে সেটা “হতে পারে না” অর্থাৎ আপনি নিশ্চিত যে তৃতীয় কারণ আছে। তো সেই তৃতীয় কারণের যুক্তি-প্রমাণ গুলো পেশ করে দিলেই তো হয়। এই কথা বলা কি আমার অপরাধ? আমি ভুল কোথায় বললাম? তাহলে স্রস্টা আছে না হয় মহাবিশ্ব অসীম এর বাইরে তৃতীয় নিশ্চিত কারণটির প্রমাণ আপনি করে ফেলুন। ব্যাস।

প্রশ্নঃ এমনও হতে পারে যে মহাবিশ্বের উৎপত্তির পিছনে কোনো কারণ নাই?

উত্তরঃ মহাবিশ্বের উৎপত্তির পিছনে কোনো কারণ নাই এটা আপনি কিভাবে অথবা কিসের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারলেন? যদি বলেন আপনি নিশ্চিত না তাহলে যেটা নিয়ে আপনি নিজেই নিশ্চিত না সেটা আপনি কিভাবে বিশ্বাস করছেন? যদি বলেন আপনি নিশ্চিত তাহলে আপনার কথা আপনার কাছে নিশ্চিত অর্থাৎ আপনার কথা “হতে পারে” এর মধ্যে নেই। তাহলে মহাবিশ্বের পেছনে যে কারণ নাই আপনার বিশ্বাস মতে সেগুলোর যৌক্তিক কারণ পেশ করুন। প্রমাণ পেশ করুন। এমন ধরনের প্রমাণ পেশ করুন যেই ধরনের প্রমাণ আপনারা মুমিনদের কাছে চেয়ে থাকেন। বোঝা গেছে কথা?

প্রশ্নঃ আপনি তো ধরেই নিয়েছেন স্রস্টা আছে তাহলে আপনি তো এই দিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেনই তাই না?

উত্তরঃ ভুল ও একইসাথে হাস্যকর কথা বললেন। আমি যদি প্রথমেই ধরে নিতাম স্রস্টা আছে তাহলে সম্ভাব্য কারণ গুলো নিরপেক্ষভাবে এভাবে বিশ্লেষণই করতাম না। পুরো লেখাটি আপনি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে বুঝতে পারবেন যে আপনারা নাস্তিকরা যেসব বিশ্বাস করেন সেগুলো যদি যৌক্তিক হতো তাহলে আমি এই সিদ্ধান্তে আসতে পারতাম না যে মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করেছে। বরং আমি দেখিয়েছি যে নাস্তিকরা মহাবিশ্ব নিয়ে যা যা বিশ্বাস করে সব গুলোই যৌক্তিকভাবে বাতিল ভিত্তিহীন ও অন্ধবিশ্বাসে পরিপূর্ণ। তাই যৌক্তিকভাবে এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছি যে স্রষ্টার অস্তিত্ব অপরিহার্য চূড়ান্ত সত্য। এই সত্যকে অস্বীকার করার যৌক্তিক ভিত্তি নাই।

প্রশ্নঃ আমি যদি এভাবে বলি স্রস্টা তো সর্বশক্তিমান তাহলে স্রস্টা কি শুন্য থেকে আসতে পারবে? অথবা স্রস্টা কি নিজেকে নিজেই সৃষ্টি করতে পারবে? যদি পারে তাহলে স্রস্টা তো শুন্য হয়ে যাবে শুন্য থেকে আবার কিভাবে উনি অস্তিত্বে আসবে? যদি বলেন উনি পারবে না তাহলে তো স্রস্টা সর্বশক্তিমান হলেন না তাই স্রস্টার অস্তিত্বও নেই। এই ক্ষেত্রে আপনি কি জবাব দেবেন?

উত্তরঃ আপনি যে বললেন স্রস্টা শুন্য থেকে আসতে পারে এই কথাটিই ভুল। কেন ভুল সেটা বলার আগে যে প্রশ্ন গুলো এখানে আসবে সেটা হচ্ছে স্রস্টা কেন নিজেকে শুন্য থেকে অস্তিত্বে আনতে যাবেন? উনি কেন নিজেকে নিজেই তৈরি করতে যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তর গুলো আপনাকেই ক্লিয়ার করতে হবে। এইবার বলি কেন আপনার কথাটি ভুল। স্রস্টা সর্বশক্তিমান কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে তাঁকে শুন্য থেকে আসতে হবে। আবার “সৃষ্টি হওয়া” বা “অস্তিত্বে আসা” এগুলো স্রষ্টার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য না বরং সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। স্রস্টার অস্তিত্বে আসা কথাটি ভুল তেমনি স্রস্টার নিজেকে তৈরি করা কথাটিও ভুল। স্রষ্টার যেহেতু শুরু নেই আবার শেষ নেই সেহেতু উনার নিজেকে শুন্য থেকে আসারও দরকার নেই এমনকি নিজেকে নতুন করে তৈরি করারও প্রয়োজনই নেই। তবে আপনি যেভাবে বুঝাচ্ছেন যদি তর্কের খাতিরে যেভাবে ধরেও নেয়া হয় এরপরেও স্রষ্টার অস্তিত্ব বাতিল হবে না। কিভাবে? আপনার প্রশ্নের পুরো ভিত্তিটাই হচ্ছে স্রস্টা সর্বশক্তিমান। তাহলে আপনি স্রস্টাকে যেভাবেই ধরেন না কেন উনার সর্বশক্তি সর্বশক্তিমানই থাকবেন। যদি বলেন স্রস্টা কি নিজের সব শক্তি শেষ করতে পারবে যদিও এই প্রশ্নটি ভুল কিন্তু তর্কের খাতিরে সেভাবে ধরে নিলেও স্রষ্টার অস্তিত্ব বাতিল হবে না। কারণ যেহেতু স্রস্টা সর্বশক্তিমান সেহেতু উনি যদি উনার সব শক্তি শেষ করে ফেলেন এরপরেও উনার সর্বশক্তি বহালই থাকব। যেহেতু উনি পারফেক্ট উনার কোনো শুরু নেই উনার কোনো শেষ নেই। উনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। উনি অসীম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। তাই উনার সৃষ্টির মতো হবার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই।

প্রশ্নঃ আপনি যে প্রমাণ করলেন স্রস্টার অস্তিত্ব আছে এটা আপনি অনুভব করতে পারেন?

উত্তরঃ আমি যদি বলি আমি অনুভব করি আল্লাহকে এরপরেও আপনি আমার অনুভবকে অনুভব করতে পারবেন না। তাই আমি এটা বলা অথবা না বলাতে আপনার কিছুই আসে যায় না। আপনার কাছে স্টার ও চাঁদকে যদি খুবই ভালো লাগে যা আপনি অনুভব করেন কিন্তু আপনার এই ভালো লাগা তো আমি অনুভব করতে পারবো না, তাই না? যদি বলেন স্রস্টাকে অনুভব করা যায় না তাই স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই- কথাটি ভুল কারণ কিছু অনুভব করা যায় না দেখেই সেই জিনিসটি মিথ্যা হয়ে যায় না। যেমন ধরুন আমি যদি মিষ্টি খাই আর আপনি যদি কখনো মিষ্টি না খান তাহলে আমি মিষ্টি খেয়ে যেই স্বাদ অনুভব করেছি সেটি কিন্তু আপনি অনুভব করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি এই কথা বলতে পারেন না যে আপনি যেহেতু মিষ্টি খান নাই, স্বাদ কেমন তা অনুভব করেন নাই সেহেতু মিষ্টি বলে কিছু নেই। তাই একজনের অনুভূতি আরেকজন অনুভব করাটা মুশকিল ব্যাপার। কিন্তু এরমানে এই না যে সেই জিনিসের অস্তিত্ব নেই। বোঝা গেছে?

DNA - সৃষ্টি দেখেই বোঝা যায় স্রস্টাই এটি বানিয়েছে

ধরুন আপনার সামনে ১০০ তোলার ১০ টি বাড়ি রয়েছে। আপনি কাউকে প্রশ্ন করলেন যে এতো সুন্দর করে এই বাড়ি গুলো কে বানিয়েছে? সেই মুক্তচিন্তার লোকটি জবাবে বললো, এই বাড়িগুলো কেউই বানায় নাই, এগুলো আসলে ইট, বালু, সিমেন্ট, রোদ, পানির মিশ্রণে এমনে এমনেই তৈরি হয়ে গিয়েছে কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের ফলে। একটা মহাবিস্ফোরণ হয়েছিল সেখান থেকে এগুলো হয়ে গিয়েছে। আপনি কি এমন কথায় বিশ্বাস করবেন? না। কেন? কারন আপনার অনুধাবন শক্তি আপনাকে বলে দেবে এতো সুন্দর নিয়ন্ত্রিত বাড়ি নিজে নিজে হতেই পারে না। আপনি কিন্তু বাড়িগুলোকে তৈরি হতে দেখেন নাই, এটাও দেখেন নাই যে কে এই বাড়ি গুলো তৈরি করেছে কিন্তু আপনি অনুধাবন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এই বাড়িগুলো কেউ না কেউ বানিয়েছেন।

DNA এর কিছু পরিচয় জেনে নেয়া যাক নাস্তিকদেরই বইপত্র থেকে। “জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ” বইটির মূল ফ্রান্সিসকো জে, আয়ালা, ভাষান্তর করেছেন অনন্ত বিজয় দাশ ও সিদ্ধার্থ ধর। তৃতীয় অধ্যায়ে “ডিএনএ কি?” শিরোনামে বিস্তারিত ডিএনএ নিয়ে লেখা হয়েছে। ৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

ডিএনএ হলো ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের সংক্ষিপ্ত রুপ। ডিএনএ রাসায়নিকভাবে দুটি পেঁচানো দ্বিসূত্রক সিঁড়ির মতো গঠিত। এই সিঁড়ির পাটাতনের মধ্যে রয়েছে চারটি ভিন্ন ধরনের নিউক্লিক অ্যাসিডের দীর্ঘ সারিঃ অ্যাডেনিন (A), সাইটোসিন (C),গুয়ানিন (G), ও থায়ামিন (T)। ডিএনএ’র তিনটি বিশিষ্ট রয়েছে যেগুলো জীবনের অস্তিত্ব ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য। বংশগতির তথ্যাবলী ডিএনএ ধারণ করে, ফলেঃ (১) জীবের সকল জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য (২) জৈবিক উত্তরাধিকারের জন্য এবং (৩) জীববিবর্তনের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

প্রথমত বলা যায় ডিএনএ জীবের সকল জৈবিক প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী বংশগতির তথ্যগুলো ধারণ করে আছে। এই তথ্যাগুলো চারটি নিউক্লিওটাইডের দীর্ঘ সারিতে সংরক্ষিত রয়েছে অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালার বর্ণগুলোর অর্থপূর্ণ ধারাবাহিকতার মতো। ডিএনএতে সঞ্চিত বংশগতির তথ্যাগতিরর পরিমাণ বিশাল। একটি জীবের ডিএনএ অণুর দীর্ঘও অনেক বড়।

এ বিষয়টাকে আমরা এভাবে বলতে পারি মানুষের জিনোম অর্থাৎ উত্তরাধিকারসূত্রে মানুষ তার পিতা-মাতা থেকে যে সংখ্যক ডিএনএ পেয়ে থাকে, এর দীর্ঘ ৩ বিলিয়ন বর্ণের ক্রমের সমান। ফলে একজন মানুষের জিনোম যদি আমরা পুরোটা ছাপাতে চাই তবে ১০০০ বইয়ের দরকার হবে যার প্রতিটির পৃষ্ঠা সংখ্যা হবে ১০০০ এবং প্রতিটি পৃষ্ঠায় যার বর্ণ সংখ্যা হবে ৩০০০ (প্রায় পাঁচশ শব্দ)। বিজ্ঞানীরা কিন্তু মানুষ কিংবা অন্য জীবডের সম্পূর্ণ জিনোমের দীর্ঘ ছাপেন না। বরং ডিএনএ’র তথ্যগুলোকে কম্পিউটারে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়।

স্রস্টাবিদ্বেষ একটু সময়ের জন্য সরিয়ে দিয়ে এটা চিন্তা করুন যে সামান্য ডিএনএ এর মধ্যে এতো জটিল জটিল তথ্য কিভাবে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়ে থাকতে পারছে? একটু আগে যেই বাড়ির উদাহরণ দিয়েছিলাম সেই বাড়ি থেকে কি এই ডিএনএ আরও জটিল না? স্বয়ংসম্পূর্ণ বুদ্ধিমান সত্ত্বার অস্তিত্ব কি ডিএনএ এর সৃষ্টি দেখে অনুধাবন করা যাবে না? কে এই জটিল জীব সৃষ্টি করেছে? বিখ্যাত বায়োকেমিস্ট Francis crick – DNA আবিস্কার করেন। পরবর্তীতে নোবেল প্রাইজও পান। Francis crick অরিজিন অফ লাইফ সম্পর্কে তার বই “Life it self” – এ বলেছেনঃ যে মানুষ এখন পর্যন্ত যত জ্ঞান আছে তা আয়ত্ত করেছে,সে কেবল এটাই বলতে পারবে যে জীবনের উৎপত্তি মিরাকল ছাড়া কিছুই নয়। যিনি DNA এর আবিস্কারক তিনিই স্বীকার করেছেন জীবনের উৎপত্তি মিরাকল।

“মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসতে স্রষ্টার দরকার নেই” বাক্যটিও কখনোই নিজে নিজেই সৃষ্টি হতে পারে না। এর জন্য লেখক থাকতেই হবে। আর আমরা DNA বিষয়ে যা বুঝলাম মানুষের জিনোম যদি আমরা পুরোটা ছাপাতে চাই তবে ১০০০ বইয়ের দরকার হবে যার প্রতিটির পৃষ্ঠা সংখ্যা হবে ১০০০ এবং প্রতিটি পৃষ্ঠায় যার বর্ণ সংখ্যা হবে ৩০০০ (প্রায় পাঁচশ শব্দ)। এটা এমনে এমনেই হয়ে গিয়েছে? ধারালো যৌক্তিক চিন্তাশীল মগজের উত্তর হবে “না”। এটা এমনে এমনেই সৃষ্টি হয় নাই বরং নিঃসন্দেহে পারফেক্ট বুদ্ধিমান স্রস্টাই এই জটিল বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এটাই চূড়ান্ত সত্য। এই সত্যকে অস্বীকার করার বা অবিশ্বাস করার কোনো উপায় নেই মূর্খতা ও অন্ধবিশ্বাস ছাড়া। কতো কোটি কোটি ইনফরমেশন একটি DNA তে কোডিং করা থাকে। চিন্তা করেছেন কখনো? যদি DNA এর ১ বিলিয়ন ৭১৯ মিলিয়ন ৩৪৮ হাজার ৬৩২ তম বেজ পেয়ারের কোনো লেটার মিসকোডেড থাকে, তাহলে তা কোষের জন্য ক্ষতির কারন হবে। যার প্রভাব দেহের ওপর পরবে। অর্থাৎ কোডের মধ্যে বিন্দু মাত্র বিশৃঙ্খলা হলেই কোষের জন্য সেটা ক্ষতিকর। এই DNA গঠন এতই ক্ষুদ্র যে তা জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও দেখা যায় না। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের দরকার হয়। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, কোটি কোটি জীবের মধ্যে, হাজার হাজার কোটি জটিলতর এসব ইনফরমেশন এনকোডেড হয়ে আছে অতিক্ষুদ্র DNA মলিকুলের মধ্যে। এমনভাবে এনকোডেড হয়ে আছে যে কোনো বিশৃঙ্খলা নাই। একটি বাক্যও যেখানে নিজে নিজেই অর্থপূর্ণ হতে পারে না সেখানে এই জটিল, কমপ্লেক্স, DNA  কি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়ে যাওয়া সম্ভব? কোনো বুদ্ধিহীন শুন্যতা থেকে এমন জটিলতম কিছু সৃষ্টি হতে পারে? কে এই চমৎকার বস্তুটি সৃষ্টি করেছে?

শাণিত যুক্তিশীল ধারালো মগজের উত্তর একটা হবে আর তা হচ্ছেঃ সৃষ্টিকর্তাই এরকম বস্তু সৃষ্টি করতে পারেন। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে আমরা তো দেখি নাই DNA কে স্রস্টা সৃষ্টি করেছে তাহলে কিভাবে মেনে নিব? মানুষ কোনো কিছুর অস্তিত্ব সরাসরি না দেখেও সেটার কারণ ও ফলাফল দেখে মেনে নেবার যোগ্যতা রাখে। এই বিষয়ে উপরে আগেই বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। খেয়াল করলে দেখবেন নাস্তিকরা যাই বলুক না কেন সেই ঘুরেফিরে “যা দেখি না তা বিশ্বাস করি না” কথার মধ্যেই চলে আসে কিন্তু একজন যৌক্তিক চিন্তাশীল, বুদ্ধিমান মানুষের কাছে এই কথাটি সঠিক না। দেখি না তাই মেনে নিব কিভাবে? প্রশ্নের জবাবটি সহজে বুঝতে নিচের দুটি উদাহরণ খেয়াল করুন।

উদাহরণ ১/ আপনি জন্মেছেন ধরুন ১৯৫০ সালে। এখন আমি আপনাকে প্রশ্ন করলাম যে আপনি যে ঐ সালেই জন্মেছেন এটা কি আপনি নিজের চোখে দেখেছেন? না। আপনি নিজ চোখে দেখেন নি। কিন্তু অন্য সন্তানরা জন্ম গ্রহণ করে এটা আপনি দেখেছেন এর থেকে আপনি বুঝে নিয়েছেন আপনিও একই ভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন। খেয়াল করুন আপনি নিজে কিন্তু সরাসরি চোখে দেখেন নাই তাহলে নিশ্চিত হলেন কিভাবে? অন্যদের জন্মগ্রহণ করা দেখে। এইভাবে যৌক্তিকচিন্তা মানুষ করতে পারে। তাহলে বলা যায় আপনি অন্যজনের জন্মগ্রহণ করা দেখে যেমন এটা বুঝে গিয়েছেন আপনিও যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন এভাবেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন যা আপনি তখন সরাসরি চোখে দেখে বুঝে যান নাই একইভাবে ছিড়ে ফেলা এলোমেলো কাগজ থেকে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” এই অর্থপূর্ণ বাক্যটি যেখানে নিজে নিজে হতে পারে না এমনকি আপনি দেখেছেন এই লেখা লিখার জন্য বুদ্ধিমান লেখক অপরিহার্য সেভাবে একটি ক্ষুদ্র DNA একটি বাক্য থেকেও বিশাল বিশাল জটিল এটা নিজে নিজে হতে পারে না, এটা তখনই অস্তিত্বশীল হতে পারা সম্ভব যখন কোনো পারফেক্ট বুদ্ধিমান স্রস্টা একে অস্তিত্বশীল করে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকবে।

উদাহরণ ২/ “১৬৭৭” সালের অস্তিত্ব অথবা এই সালের কোনো প্রমাণ আপনার কাছে নাই কারণ আপনি নিজ চোখে ঐ সাল দেখেননি। আপনি সেখানে ছিলেনই না কিন্তু আপনি মেনে নিয়েছেন এই সালের অস্তিত্ব আছে। এটা কিভাবে বুঝলেন? আপনি দেখেছেন ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল। এখন এই দেখা থেকেই আপনি বুঝে গেছেন যে হুম এইভাবে পিছনে গেলে ১৬৭৭ সালের প্রমাণ আছে যদিও আপনি সেটা “নিজ চোখে দেখেনি”। আপনি যদি ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল দেখে ১৬৭৭ সালের অস্তিত্ব নিজ চোখে না দেখে মানতে পারেন যে এর অস্তিত্ব আছে বা ছিল। সৃষ্টিজগতের এতো এতো অস্তিত্বশীল প্রাণী দেখে কি স্রষ্টার অস্তিত্ব এখনো বিদ্ধমান এই সত্য স্বীকার করে নেয়া কি খুবই কষ্ট? চিন্তাশীল মানুষ সরাসরি না দেখেই চিহ্ন দেখে, কারণ দেখে, নিয়ন্ত্রিত বস্তু দেখে, বিভিন্ন নিদর্শন দেখে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারে সেই জিনিসের অস্তিত্ব রয়েছে। একইভাবে আপনি ক্ষুদ্র DNA এর মধ্যে এতো বিশাল বিশাল নিয়ন্ত্রিত তথ্যভাণ্ডার দেখলেন যা যুগ যুগ ধরে নিয়মিত প্রবাহবান অবস্থায় আছে এটা নিজে নিজেই শুন্য থেকে হতেই পারে না অথবা স্বাধীন না থেকে নিজে নিজেই এভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। এটা সম্ভব না। তাহলে কিভাবে সম্ভব? শাণিত যৌক্তিক ধারালো মস্তিস্ক এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য যে পারফেক্ট স্রস্টাই এই বস্তুকে অস্তিত্বে এনেছেন। সৃষ্টিগজতের মাধ্যমেই বাস্তবভাবে স্রস্টার অস্তিত্বের চিহ্ন দেখা যায়। যেমন রাঙানো কাপড় দেখে চারুশিল্পীকে না দেখেও চারুশিল্পীর পরিচয় পাওয়া যায়। পত্র দেখে লেখককে না দেখেও লেখকের সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। তাহলে চিন্তাশীল মানুষ কেনো জমিন, আসমান, চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র, পানি, বাতাস, আগুন, গাছ, সমুদ্র ,পাথর, জীব,মানুষ , বাদল, বৃষ্টি, ফুল, ফল, অনুভূতি, চেতনা, ইত্যাদি সৃষ্টিজগত দেখে তাঁর স্রস্টাকে চিনবে না? অবশ্যই চিনবে। অবশ্যই চিনবে। অবশ্যই চিনবে।

আমার এই লেখাটি ধারালো যুক্তিবাদী চিন্তাশীল মানুষদের জন্য লেখা। তাহলে নাস্তিকরা কেন অনুধাবন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পায় না? উত্তর একেবারেই সোজা। নাস্তিকরা নিজেদেরকে মানুষ বলে বিশ্বাস করলে তো সত্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাবে তাই না? বুঝলাম না। আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়ের “ভালোবাসা কারে কয়,মানব মনের জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা” বইয়ের ২৪২ ও ২৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

“সেলফিশ জিন” গ্রন্থে অনুপম কাব্যিক ভঙ্গিমায় বলেন- আমরা সবাই একেকটি টিকে থাকার যন্ত্র (Survival Machine) - অন্ধভাবে প্রোগ্রাম করা একটি নিয়ন্ত্রিত বাহন মাত্র-যার উদ্দেশ্য কেবল স্বার্থপরভাবে এক ধরণের জৈবঅণুকে সংরক্ষণ করা।...তারা আমার ভেতরে আছে,তারা রয়েছে আপনার ভেতরেও;তারাই আমাদের সৃষ্টি করেছে,আমাদের দেহ আর আমাদের মন;আর তাদের সংরক্ষণশীলতাই আমাদের অস্তিত্বের চূড়ান্ত মৌলিকত্ত্ব। ওই অনুলিপিকারকেরা এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। এখন তাদেরকে জিন বলে ডাকা হয়,আর আমরা হলাম তাদের উত্তরজীবীতার যন্ত্র।

অন্ধভাবে প্রোগ্রাম করা যন্ত্র কিভাবে মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে? স্বার্থপর অন্ধযন্ত্র কিভাবে সততার সাথে যৌক্তিক বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা রাখতে পারবে? প্রশ্ন গুলো নিয়ে ভেবেছেন কখনো?কি মনে হচ্ছে আপনার? তাছাড়া নাস্তিকরা বিশ্বাস করে তারা এক কোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে ধাপে ধাপে কোটি বছর সময় নিয়ে কুকুর, ছাগল,ভেড়া,মহিষ, গরু,সাপ,শূকর,মশা, হাতি, গাধা,বিচ্ছু,শিয়াল,বান্দর, শিপ্পাঞ্জি এভাবে বিবর্তিত হতে হতে একটা সময় নাস্তিক প্রাণীরা অস্তিত্বে এসেছে। যাদের বিশ্বাসের চেহারা এমন তারা কিভাবে মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে? যেমন মোবাইল কি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে? একটি রোবট কি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে? অথবা মোবাইল অথবা রোবট নিজেই নিজেই তৈরি হয়ে মানুষের মতো চিন্তা করার ক্ষমতা রাখতে পারবে? তাহলে এইবার বুঝে নেন নাস্তিকরা কেন স্রষ্টার অস্তিত্বের এতো এতো শক্তিশালী প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা প্রমাণ দেখতে পায় না অথবা সত্যকে স্বীকার করতে যাচ্ছে না।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নাই?

অনেক নাস্তিককে বলতে শোনা যায় বিজ্ঞান স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে নাই তাই বিজ্ঞান স্রষ্টার অস্তিত্বকে বাতিল করে। প্রশ্ন হচ্ছে বিজ্ঞান কি কোনো মানুষের নাম? না। তাহলে বিজ্ঞান নিজে চলে নাকি মানুষরা বিজ্ঞানকে চালায়? নাস্তিক বিজ্ঞানী যেমন আছে তেমনি আস্তিক বিজ্ঞানীও আছে। তাহলে নাস্তিকরা যদি বলে বিজ্ঞান প্রমাণ করে ফেলেছে স্রস্টার অস্তিত্ব বাতিল তাহলে আমি এই ক্ষেত্রে বলবো নাস্তিক বিজ্ঞানীরা স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই দাবি করলেও আস্তিক বিজ্ঞানীদের কাছে ঠিকই স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণিত সত্য। তাই নাস্তিক বিজ্ঞানীদের দাবি মিথ্যা। তাহলে এখানে নির্দিষ্ট করে এটা বলার সুযোগ আছে যে বিজ্ঞান প্রমাণ করে ফেলেছে স্রষ্টার অস্তিত্ব বাতিল? নাস্তিকরা নাস্তিক বিজ্ঞানীদের কথা গুলোকে যদি পুরো বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দিতে চায় বা দেয় এটা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানকে ডাকাতি করার মতো অবস্থা হবে। তাই নাস্তিকরা যদি নির্দিষ্ট করে বলে বিজ্ঞান স্রষ্টার অস্তিত্বকে বাতিল করে এটা ডাহামিথ্যে কথা বলে গণ্য হবে। এরপরেও যদি নাস্তিকরা না বুঝার ভান ধরে থাকে আর নাস্তিক বিজ্ঞানীদের কথা গুলোকে ধরে দাবি করতে চায় বিজ্ঞানে স্রষ্টার অস্তিত্ব বাতিল তাহলে আস্তিক বিজ্ঞানীদের স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষের গবেষণা গুলো প্রমাণ করে দেয় নাস্তিক বিজ্ঞানীদের সকল গবেষণা বাতিল ও মিথ্যা।

যুক্তিবিদ ও দার্শনিক অ্যালভিন প্ল্যানটিংগার গবেষণায়, স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস পুরোপুরি মৌলিক বা সহজাত একটি বিশ্বাস। তিনি দৃঢ় মত প্রকাশ করেন, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস অন্যান্য মৌলিক সত্যের প্রতি বিশ্বাস যেমন: চেতনা, অনুভব, স্মৃতি (যেমন অতীতে বিশ্বাস) ইত্যাদির অনুরূপ। এই সকল ক্ষেত্রেই মানুষ তার যৌক্তিক চিন্তার ক্ষমতাকে বিশ্বাস করে, যদিও পূর্বোক্ত বিশ্বাসের সত্যতা প্রমাণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। অনুরুপভাবে, মানুষ নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিশ্বাস (যেমন: বিশ্বজগতের অস্তিত্ব, ১+১=২ ইত্যাদি) মৌলিক হিসেবে গ্রহণ করে যা অন্যান্য বিষয়ের (যেমন: বিজ্ঞান) ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বিশ্বাসীরা স্রষ্টার অস্তিত্বকে এমনই মৌলিক বিশ্বাস হিসেবে গ্রহণ করে(১)। দার্শনিক রেলফ ম্যাক্ইনারন -এর গবেষণায়, মানুষের স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস সহজাত বা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর শৃঙ্খলা, বিন্যাস এবং সূত্রবদ্ধ প্রকৃতির কারণে(২)। ড. ডেবোরাহ কেলেমেন এর গবেষণায় জানা যায়, শিশুরা প্রাকৃতিক বস্তুসমূহকে পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট বা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে দেখে, যে দৃষ্টিভঙ্গি তাদের পিতামাতা কর্তৃক দেয়া শিক্ষাকেও অতিক্রম করে(৩)। সাম্প্রতিক কালে অনেক গবেষকদের গবেষণায় প্রতীয়মান হচ্ছে, ধর্মবিশ্বাস প্রাথমিকভাবে ব্যক্তির ভেতর থেকেই উৎপত্তি হয় … যা মৌলিকভাবে মানব মনের এক অংশ….(৪)

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলোপম্যানটাল সাইন্টিস্ট ডঃ জাস্টইন এল বারেট শিশুদের উপর গবেষণা করেন। এ ব্যাপারে বেশ কিছু বইও লিখেছেন তিনি। বই গুলোর মাঝে একটি হলো “বর্ণ বিলিভারস” যেখানে তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ শিশুরা জন্মগত ভাবেই স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, যাকে আমরা বলি সহজাত ধর্ম (৫)। এছাড়াও অনেক গবেষকদের গবেষণায় প্রতীয়মান হচ্ছে, ধর্মবিশ্বাস প্রথমিকভাবে ব্যক্তির ভেতর থেকেই উৎপত্তি হয় যা মৌলিক মানব মনের এক অংশ। তাদের সংগৃহীত তথ্য থেকে নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি তত্ত্ব হল “Strong Naturalness Theory” যা পূর্বের প্রভাবশালী “Anthropomorphism Theory” কে ছুঁড়ে ফেলেছে । Strong Naturalness Theory এর বক্তব্য হল, ধর্ম বিশ্বাসের উদ্ভব স্বয়ংক্রিয় ও অভ্যন্তরীণ এবং তা প্রকৃতপক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিশুদের মাঝে উৎপন্ন হয় (৬)। সাম্প্রতিক সময়ের আরও গবেষণায় জানা যায়, স্রষ্টার পাশাপাশি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসও মানুষের সহজাত প্রবণতার অন্তর্গত। The Cognition, Religion & Theology Project নামে ৩ বছর ব্যাপী আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন গবেষক ড. জাস্টিন ব্যারেট ও প্রফেসর রজার ট্রিগ-এর নেতৃত্বে। এতে অংশ নেন ৫৭জন গবেষক, যারা প্রায় ২০টি দেশের প্রথাগতভাবে ধর্মবিশ্বাসী ও নাস্তিক সম্প্রদায়ে ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন গবেষনা পরিচালনা করেন। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল স্রষ্টা ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস কি পুরোটাই পিতামাতার শিখানো (যেমনটা নাস্তিকেরা বলতে চায়) না মানুষের সহজাত প্রবণতা তা খুঁজে বের করা। বিশ্লেষণমূলক এবং প্রমাণ ভিত্তিক গবেষণার পর তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, স্রষ্টা ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস মানুষের সহজাত প্রবণতা। প্রজেক্ট এর সহ-পরিচালক প্রফেসর রজার ট্রিগ এর মতে, “ (এই গবেষণা) ইঙ্গিত বহন করে যে, ধর্মকে দমীয়ে রাখার প্রচেষ্টা ক্ষণস্থায়ী কারণ ধর্মবিশ্বাস মানব মনে গ্রথিত বলেই প্রতিয়মান হয়। অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্বকে মানা পুরাই ন্যাচারাল এবং যৌক্তিক এবং মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে বিশ্বাসও যৌক্তিক(৭)।

বিশ্বের অন্যতম প্রধান পদার্থ বিজ্ঞানবিধ “লর্ড কেলভিল” বলেছেনঃ আপনি যদি খুব গভীরভাবে চিন্তা করেন,তাহলে বিজ্ঞান আপনাকে স্রস্টাতে বিশ্বাস করতে বাধ্য করবে। “জন ক্লিভল্যান্ড কথরেন” (রসায়ন শাস্রের অধ্যাপক) বলেনঃ আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হচ্ছে যে আমিও তার এই উক্তির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত (৮)। এডওয়ার্ড লুথার কেসেল (প্রাণীতত্তবিদ ও কিটতত্তবিদ) তিনি বলেনঃ অনেকেই আছেন যারা “এই মহাবিশ্ব নিজে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে” এমনি একটি ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করে আসছেন। আবার অন্যান্যরা বলেন,আবহমানকাল থেকে এই মহাবিশ্ব বিরাজমান, এই কথাটি তাদের কাছে মনে করা যেমন সোজা,তেমনি সর্বকালে বিরাজমান স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করাও তাদের পক্ষে সহজ (৯)। মারলিন বুকস ক্রিডার (অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ প্রফেশনাল বায়োলজিস্ট, ন্যাশনাল স্পেলিওলজিকাল সোসাইটি সদস্য) তিনি বলেনঃ সাধারণ মানুষ হিসেবে এবং বিজ্ঞানের অধ্যায়ন ও গবেষণায় জীবন উৎসর্গকারী ব্যক্তি হিসেবে স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমার মনে আদৌ সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। স্রষ্টা অবশ্যই আছেন। প্রকৃতিতে তাঁর অস্তিত্বের যে অগণিত প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তা নিয়ে গবেষণা করতে পারি। আমার মনে হয় এসব প্রমাণ যেমন সুস্পষ্ট তেমনি বিশ্বাসজনক (১০)।

হুইটেকার চেম্বারস তাঁর “উইটনেস” নামক বইয়ে একটি মামুলী ঘটনার উল্লেখ করেছেন । সম্ভবতঃ এই ঘটনা তাঁর জীবনের (এবং সম্ভবত মানবজাতির ঘটনাবলির) মড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি তাঁর মেয়েকে নিবিষ্ট মনে দেখছিলেন এবং নিজের অজান্তেই তিনি মেয়েটির কানের আকারের প্রতি হটাত সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আপন মনে ভেবেছিলেন,কানে এমনি নাজুক কুন্দুলি দৈবক্রমে সৃষ্টি হওয়া কতই না অসম্ভব। একমাত্র পূর্ব কল্পিত নমুনা থেকেই এমনি অপরূপ জিনিস সৃষ্টি করা হতে পারে। কিন্তু এই চিন্তা তার মনে উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার অজ্ঞেয়বাদী মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন। কারন তিনি সেই সঙ্গে উপলব্ধি করেছিলেন যে, পর্যায়ক্রমে যুক্তিসিদ্ধ পরবর্তী ধাপই হবেঃ এই পরিকল্পনায় আগে থেকেই স্রষ্টার অস্তিত্ব মেনে নেওয়া – এমন একটি গবেষণামূলক বিষয় ,যা মেনে নেওয়ার জন্য তিনি তখনও তৈরি হননি(১১)। ইরভিং উইলিয়াম নবলচ (প্রকৃতি বিজ্ঞানী, উদ্ভিদের সাইটলজি মরফলজি ও অ্যাগরটলজি বিশেষজ্ঞ) তিনি বলেনঃ আমি স্রস্টাতে বিশ্বাস করি। এর কারন হলো আমি মনে করি না সর্বপ্রথম ইলেকট্রন বা প্রোটন অথবা পরমাণু বা প্রথম অ্যামিনো এসিড অথবা প্রথম প্রটোপ্লাজম অথবা প্রথম বীজ অথবা সর্বপ্রথম মস্তিষ্কটির জন্মের জন্য কেবলমাত্র দৈব দায়ী। আমি স্রস্টাতে বিশ্বাস করি তার কারন হল আমার কাছে এইসব কিছুর মুলে স্রষ্টার পবিত্র অস্তিত্বই একমাত্র যুক্তিসিদ্ধ ব্যাখ্যা হতে পারে(১২)।

 চিন্তাশীল মগজধারীদের জন্য আরো কিছু প্রমাণঃ

পৃথিবী তার নিজ অক্ষে প্রতিনিয়ত ঘুরছে। এই ঘূর্ণনের গতি প্রতি ঘন্টায় ১০০০ মাইল। অর্থাৎ পৃথিবীর সাথে সাথে আমরাও প্রতি ঘন্টায় এক হাজার মাইল বেগে ঘুরছি। এই ঘূর্ণনের গতি যদি প্রতি ঘন্টায় ২০০ বা ৩০০ মাইল হতো তাহলে রাত আর দিনের ব্যবধান অনেক বেশি বেড়ে যেত। ১২ ঘন্টার পরিবর্তে তখন দিন হতো ১২০ ঘন্টা দীর্ঘ। যার ফলে দিনের বেলা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে একসময় সবকিছু পুড়ে যেত। একইরকমভাবে অনেক দীর্ঘ রাত হতো, ফলে রাতেরবেলা তাপমাত্রা কমতে কমতে সবকিছু বরফ শীতল তাপমাত্রায় জমাট বেঁধে যেত। অনেক দীর্ঘ রাত এবং দিনের কারণে মানুষ তখন ঘুম, খাওয়া এবং কাজের নিয়ম রীতিতে হিমশিম খেয়ে যেতো। এই সুক্ষ জিনিসটা নিজে নিজেই হয়ে যাচ্ছে? সৃষ্টিকর্তা বলতে যদি কেউ না থাকে তাহলে কিভাবে রাত এবং দিন সুন্দর একটা নিয়ম-রীতির মধ্যে দিয়ে চলছে? একটি উদাহরণ কল্পনা করুন। ধরুন একটি সুই এর ওপর দশ তালা বাড়ি কাকতালীয় ভাবে দাড়িয়ে আছে,এটা কি সম্ভব? সম্ভবই না। ঠিক তেমনি নিজে নিজে এতো সুন্দর নিয়ম তৈরি হয়ে সেটা এতো এতো বছর ধরে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। যৌক্তিকভাবেই এই সিদ্ধান্তে আসতে আমরা বাধ্য যে এগুলো স্রস্টা তৈরি করে উনিই নিয়ন্ত্রিত করছেন।

সূর্যের তাপমাত্রা ১২ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ৯ কোটি ২৯ লক্ষ্য মাইল (৯২৯০০০০০ )। এই দূরত্বের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা জীবের বসবাস উপযোগী হয়ে থাকে। সূর্য এবং পৃথিবীর এই দুরুত্ব যদি অর্ধেক হতো তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর সমস্ত গাছপালা জীব জন্তু পুড়ে ছাই হয়ে যেত। আর এই দুরুত্ব যদি দ্বিগুন হতো তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে গিয়ে সবকিছু বরফে জমাট বেঁধে যেত।কোনো জীবের অস্তিত্ব থাকতোনা। প্রশ্ন হচ্ছে স্রস্টা যদি এই বস্তু গুলো তৈরি না করে থাকে তাহলে কার ইশারায় সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝে এই দুরুত্ব বজায় রয়েছে? অথবা শুন্য থেকে হটাত এমন জিনিস তৈরি হয়ে নিয়ম অনুযায়ীই কেন চলছে? কে চালাচ্ছে? প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে নিজে নিজে একটি মানুষ তৈরি হওয়া কতোটুকু সম্ভব? প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে একটি মানুষ তৈরি হওয়া থেকেই বেশি কঠিন এতো বড় সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব সঠিক ভাবে হয়ে যাওয়া যা পারফেক্ট স্রস্টাই বানাতে পারেন। একটি সুই থেকে মহাবিস্ফোরণ হলে সেখানে উট তৈরি হওয়া কিভাবে সম্ভব?

বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের মিশ্রণ রয়েছে। যেমন : নাইট্রোজেন (৭৮%) , অক্সিজেন (২১%), আর্গ, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নিয়ন, হীলিয়াম্ এবং মিথেন। আমাদের বেচে থাকার জন্য গ্যাসের এই বন্টন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সৃষ্টিকর্তা না থাকে তাহলে কেন এই গ্যাসের বন্টন এরকমভাবে করা হয়েছে যা প্রাণী জগৎকে বাঁচিয়ে রেখছে? প্রাণীজগত কেন অস্তিত্বশীল হয়েছে? মহাবিশ্ব সহ সমস্ত কিছু নিজে নিজে হয়েছে তবে আমরা দুনিয়াতে দেখি যে,পিতা মাতা ছাড়া নিজে নিজেই সন্তান হয় না, কেন? গাছ ছাড়া নিজে নিজেই ফল হয় না? অক্সিজেন ছাড়া মানুষ নিজে নিজেই বেঁচে থাকতে পারেনা কেন? প্রকৃতি কেন নিয়ম মানবে? চাঁদ,সূর্য,স্টার,ইত্যাদি মহাবিশ্ব সহ এত বড় বড় বিষয় গুলা যদি নিজে নিজেই হতে পারে তবে কেন ওই ছোট বিষয় গুলা নিজে নিজেই হতে পারে না? বা পারছে না? স্রস্টা যদি এসব সৃষ্টি করে না থাকে তাহলে এগুলো কিভাবে হটাত করে হয়ে এভাবে যুগের পর যুগ নিয়ন্ত্রিত হতে পারছে? এই সৃষ্টি নিজেরা কি স্বাধীন? যদি স্বাধীন হয় তাহলে অবশ্যই নিয়ম ভাংগার স্বাধীনতা রাখবে যদি সৃষ্টি স্বাধীন না হয় তাহলে কে এদেরকে নিয়মের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করছে? যৌক্তিক উত্তর হচ্ছে পারফেক্ট স্রস্টাই উনার সৃষ্টি এভাবে নিয়মের মধ্যে রেখে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

ধরা যাক আপনি চতুর্থতলায় থাকেন। যখন আপনি গোসল করেন তখন কি এটা ভেবে দেখেছেন যে পানিটা উপরে কিভাবে উঠে আসে? উত্তর খুবই সোজা পানির ট্যাংকি থেকে। পানির ট্যাংকি থেকে পানি কিভাবে আসে? রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে মোটর চলে সেখান থেকে উপরে পানি উঠে। এসব মাধ্যম ছাড়া নিজে নিজেই পানি ট্যাংকিতে উঠতে পারে? না এটা সম্ভব না। কারন মধ্যকর্ষণ শক্তি পানিকে উপরে উঠতে দেবে না। এইবার খেয়াল করুন নারিকেল গাছে নারিকেলের মধ্যে যে পানি তৈরি হয় সেটা কিভাবে তৈরি হয়ে যায় যে মধ্যকর্ষণ শক্তি পর্যন্ত সেই পানিকে থামাতে পারে না? এর পিছে কি বুদ্ধিমান সত্ত্বার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না? এতো সুন্দর নারিকেল গাছে নিজে নিজেই নারিকেল তৈরি হচ্ছে আবার নারিকেল পানি তৈরি হচ্ছে যুগ যুগ ধরে এটা কাকতালীয় ব্যাপার কিভাবে হতে পারে যদি না বুদ্ধিমান স্রস্টা এভাবে সৃষ্টি না করে থাকে? নারিকেল কেন নিয়ম মেনে চলছে এভাবে?আরও চিন্তা করুন আমরা শীতকালে যে খেজুরের রস খাই সেটা এমনে এমনে তৈরি হয়ে এতো লম্বা সময় ধরে কিভাবে নিয়ম মেনে রস দিয়ে যাচ্ছে? খেজুর গাছের যদি নিজের এই স্বাধীন শক্তি থাকতো নিজের মধ্যে খেজুরের রস তৈরি করার তাহলে অবশ্যই খেজুর গাছের মধ্যে আমের জুস তৈরি হবার যোগ্যতা থাকার কথা ছিল কিন্তু খেজুর গাছের রসে খেজুরের রস ছাড়া ভিন্ন কেন রস হতে পারে না তাও স্রেফ শীতকালেই? খেজুর গাছ যদি নিজে নিজেই রস দেবার ক্ষমতা রাখে তবে শীতকাল ছাড়া অন্য কোনো সময়ে কেন রস হতে পারে না? এর অর্থ খেজুর গাছকে এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে যে শীতকালে সে রস দিতে পারবে। যে এই প্রোগ্রাম সৃষ্টি করেছে তিনিই স্রস্টা। এসব নিদর্শন দেখেও যারা স্রস্টার ইশারাকে অনুধাবন করতে পারে না এদেরকে চিন্তাশীল মানুষ বলাটা অযৌক্তিক হবে।

পঁচনশীলতা স্রস্টার তৈরি একটি সিস্টেম যা পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে। কোনো কিছু যদি প্রয়োজনের তাগিদে হয়, তাহলে বুঝতে হবে তা একটা পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনেক রকমেরই হয়, তবে প্রয়োজনের তাগিদে পরিকল্পনা হলো একেবারে নিশ্চিত। এতে "পরিকল্পনা না" কথা বলার কোনই সুযোগ নাই। প্রয়োজনের তাগিদে কোনো কিছু  "বাই চান্স" এ হয় না,হয় পরিকল্পনায়।বাই চান্সে কয়টা হতে পারে? একটা? দুইটা?তিনটা? কিন্তু ১০০% হয় কি করে? এখন আসুন দেখি, বস্তু বা প্রানীর পঁচনের প্রয়োজন আছে কিনা এই পৃথিবীতে? সৌর জগতের ভিতর একমাত্র পৃথিবীকেই প্রাণী বসবাসের উপযুক্ত করে তৈরী করা হয়েছে। এখানে প্রতিনিয়তই একদিকে প্রাণী জন্ম নিচ্ছে, অন্যদিকে মারা যাচ্ছ। তাও চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। তো, কোনো একটা জায়গায় যদি কোনো কিছু অবিরত প্রডাক্ট (এখানে প্রডাক্ট মানে প্রানীর জন্ম) হতে থাকে তাহলে ওগুলোকে না সরালে ঐ প্রডাক্ট জমতে জমতে তো পাহাড় হতেই থাকবে,যা পরবর্তীতে স্থান সংকুলান হবে না অল্প কয়েক বছরেই, তাই না? আর সেখানে প্রাণী গাছপালা, মানুষের ক্রমাগত জন্ম ও বড় হওয়া কি ধরনের বিশাল বিশাল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, আঁচ করতে পারেন? মৃত্যু। হ্যা, মৃত্যুও একটা মহা পরিকল্পনার একটা অংশ। মৃত্যু দিয়েই কি প্রাণী সরানোর সমাধান হয়? হয় না, কারন, মৃত্যুতে তো প্রাণীর দেহের শুধু নড়া চড়া বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু হাওয়ায় মিলিয়ে যায় না,তাইনা? নড়াচড়া না করার কারনে বরং আরো বড় সমস্যার সৃষ্ট হবে। 

তাহলে দেখা যায়, এতে একটা প্রয়োজন অনুভূত হয়, সেটা হলো, প্রানীর মৃত্যু শুধু হলেই চলবে না, এর মিশে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। নইলে হাজার হাজার বছরের মৃত প্রাণী দেহের স্তুপকৃত পাহাড়ের জন্য কোনো প্রাণী টিকতে পারতো না। ভাবুন না, আপনার বাড়ীর সামনে স্তুপকৃত মৃত মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর বিশাল বিশাল পাহাড়, কেমন হবে? ত্যানা প্যাচিয়ে কি বলবেন? শিয়াল কুকুরে খেয়ে ফেলবে? শিয়াল কুকুরে খেলেও এটা একটা পরিকল্পনা। কিন্তু তাদের মলটা-ও তো পঁচনের প্রয়োজন আছে, তা না হলে কি হবে বলুন তো?  "ছোট বালুকনা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল" তো সাগর হবে ঠিকই,  তবে হাগুর সমুদ্র হবে, বা হাগুর মহাদেশ হবে, টিকতে পারবেন তো? তারপরও তো শিয়াল কুকুর তো আর সব খায় না,তাহলে দেহের বাকিটুকুতে মহাদেশ হয়ে যাবে। কথাগুলো গভীরভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করুন। প্রাণী দেহ প্রয়োজনের তাগিদের মিশে যাওয়ার প্রয়োজন, তাই পঁচিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়। এতে কি যৌক্তিকভাবে প্রমাণ হচ্ছে না যে বস্তু ও প্রানীর মৃত্যুর পর প্রানী দেহের এই পঁচন প্রক্রিয়া এক মহাব্যাবস্থা, যা পৃথিবীর প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে?

তাছাড়া তা তো এমনি এমনি পঁচে যায় না। এই পঁচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য নানান ধরনের প্রক্রিয়া ও প্রোগ্রাম সেট করা আছে। নইলে খেয়াল করে দেখুন, মানুষ বা প্রাণী না মারা যাওয়া পর্যন্ত তাদের পঁচনের নামও নাই। যেই মাত্র প্রানীটা মারা গেল, অমনি পঁচন প্রক্রিয়া সিমবায়োটিক নামের এক ধরনের জীবানু ছেড়ে দেওয়া আছে এই পৃথিবীতে। দেহ প্রাণহীন হলেই এরা দেহকে আক্রমন করে দেহকে পঁচানো শুরু করে দেয় বা শুরু হয়ে যায়। কোনো প্রক্রিয়াই এমনি এমনি শুরু হয়ে যায় না,ব্যাবস্থাপক ছাড়া। এই পঁচনশীলতা একটা প্রোগ্রাম, এটা কেউ না কেউ সেট করে দিয়েছে। এটা প্রকৃতির নিখুঁত একটা ভারসাম্য মূলক মহাব্যাবস্থা। সুতরাং স্রষ্টার অস্তিত্ব বুঝতে আর কতো প্রমাণ লাগবে? একটু একা একা বসে গভীরভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করুন।

রেফারেন্স সমূহঃ

[ক] MUSLIM PRANKS ATHEIST EXPERIMENT,Apr 1, 2015: https://www.youtube.com/watch?v=Zp-EUTdJlPc

[১] Alvin Plantinga, Is Belief in God Properly Basic?; p. 41-51 (Noûs, Vol. 15, No. 1, 1981 A.P.A Western Division Meetings-Mar., 1981.

[২] Antony Flew, There is a god, Page 55.

[৩] Science and the World’s Religions; vol. 02 (Persons and Groups), p. 217-219 (Publisher ABC-CLIO , July 2012

[৪] Science and the World’s Religions; vol. 02 (Persons and Groups), page: 206, 209।

[৫] (Dr.justine L. barrett, Born Believers: The Science of Children's Religious Belief: page 136 (Simon and Schuster,mar 20,2012)

[৬] Patrick McNamara Phd, Wesley j. Wildman, Science and the World's Religions, vol, 2 (Person and Groups), page: 206,209,210 . Publisher ABC-CLIO,july 19,2012 ) এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রামাণ্য ভিডিও দেখুনঃ http://callingtotheone.com/is-believe-in-god-natural / https://www.youtube.com/watch?v=8CH2Cra2auA

[৭] University of Oxford. Humans “predisposed” to believe in god and afterlife. “Science Daily” 14 july 2011.

[৮] The Evidence Of God In Expanding Universe,লিখেছেনঃ Jon Clover Monsma বাংলায়ঃ ৪০জন সেরা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব,অনুবাদঃ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান, ৩৪ পৃষ্ঠা।

[৯] The Evidence Of God In Expanding Universe,লিখেছেনঃ Jon Clover Monsma বাংলায়ঃ ৪০জন সেরা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব,অনুবাদঃ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান, ৪৪ পৃষ্ঠা।

[১০] The Evidence Of God In Expanding Universe,লিখেছেনঃ Jon Clover Monsma বাংলায়ঃ ৪০জন সেরা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব,অনুবাদঃ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান, ৫৪ পৃষ্ঠা।

[১১] The Evidence Of God In Expanding Universe,লিখেছেনঃ Jon Clover Monsma বাংলায়ঃ ৪০জন সেরা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব,অনুবাদঃ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান, ৬২ পৃষ্ঠা।

[১২] The Evidence Of God In Expanding Universe,লিখেছেনঃ Jon Clover Monsma বাংলায়ঃ ৪০জন সেরা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব ,অনুবাদঃ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান, ৭৪ পৃষ্ঠা।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post