দেনমোহর ও পতিতাবৃত্তির টাকা একই?


বিষয়ঃ দেনমোহর ও পতিতাবৃত্তির টাকা একই?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

=====================================


ভূমিকাঃ ইসলামবিরোধীরা সব সময় দাসী সহবাস করা, আয়েশা (রা)কে অল্প বয়সে বিয়ে করা, একাধিক স্ত্রীর বিধান ইত্যাদি নিয়ে আপত্তি করে থাকে অথচ নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় কোনো নাস্তিক চাইলেই যে নিজের জন্য দাসী রাখতে পারে এমনকি ছোট বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে পারে শুধু এখানেই নয় বরং নিজের সন্তানদের সাথেও পর্যন্ত যৌনকর্ম করতে পারে ইত্যাদি এভাবে হাজার হাজার নারীদের সাথে সহবাস করতে পারে ইত্যাদি মুক্তচিন্তা কোনো নাস্তিক চাইলে যে করতে পারে এসব বিষয় নাস্তিকরা লুকোচুরি করে। ধামাচাপা দিয়ে রাখে। নাস্তিকদের বই পত্র থেকেই এসব জানা যায়। সামনে আসছে।


শুনলে আপনার বমি আসতে পারে, ছেলে যদি নিজের মায়ের সাথে সম্মতিতে যৌনকর্ম করে এবং এতে যদি অন্যের ক্ষতি না হয় তাহলে এই যৌনকর্ম করাও নাস্তিক্যধর্মে খারাপ কিছু নয়। যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার এসব। দুর্বলবিশ্বাসী নাস্তিকরা এসব কথা স্বীকার করতে লজ্জা পেলেও অন্য নাস্তিকরা এসব কথা লাইভেই বলে বেড়ায়।


নাস্তিকরা নিজের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে মিথ্যাকথা বলতে আবার লজ্জা পায় না ঠিকই। নাস্তিকরা দাবি করে থাকে ইসলামে দেনমোহর এর টাকা নাকি বেশ্যাবৃত্তি করে টাকা নেয়ার মতো। এভাবে নানা ভাবে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে নাস্তিকগোষ্ঠী। নাস্তিকদের অভিযোগ গুলো আসলেই সঠিক কিনা এবং যৌক্তিকভাবে তাদের দাবির ভিত্তি রয়েছে কিনা তা আজকে যাচাই বাচাই করে দেখার চেষ্টা করবো।


ইসলামে নারী ভোগ্যপণ্য?


নাস্তিকরা আয়াত ও হাদিস দেখিয়ে যা অভিযোগ করে হুবহু তুলে ধরছি এরপরে পয়েন্ট ধরে ধরে মিথ্যাচার গুলো বলছি।


সুরা আল বাকারা ২ঃ ২২৩ আয়াতে আছে, তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।


সুরা আরাফ ৭ঃ১৮৯ আয়াতে আছে, তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। 


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৫৩৫, সহিহ হাদিস, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযিঃ)-এর সূত্র থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার উপভোগের উপকরণ (ভোগ্যপণ্য) এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ পুণ্যবতী নারী


নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে বলে, নারীরা নাকি শস্যক্ষেত্রের মত যাতে পুরুষেরা তাদের কাছে সুখ এবং স্বস্তি পেতে পারে। এটি নারীদের জন্য চরমভাবে অমর্যাদাকর। নারীর সৃষ্টি যদি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য হয়ে থাকে, তা অবশ্যই নারীকে একটি স্বাধীন এবং স্বাভাবিক সত্ত্বা হিসেবে চিহ্নিত করে না, বরঞ্চ পুরুষের জন্য একটি উপভোগ্য বস্তু হিসেবে নির্দেশ করে, একটি যৌনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে


পাঠক, নাস্তিকরা খুব কৌশলে এখানে নিজেদের মিথ্যা ব্যাখ্যা ঢুকিয়ে দিয়েছে। আপনারা নিজেরাই টের পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে শস্যক্ষেত্র কি খারাপ কোনো কিছু? নাস্তিকরা কি জীবনে শস্যক্ষেত্র দেখেনি? যারা শস্যক্ষেত্র দেখেছেন তারা বুঝবেন কতো সুন্দর সেই ক্ষেত্র সেখানে শস্য উৎপাদন করা হয়। শস্য বলতে চাষাবাদযোগ্য উদ্ভিদ অথবা কৃষিজাত উৎপাদিত ফসলকে বুঝায়। আমরা সবাই জানি এসব আমাদের জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একজন কৃষকের জীবনের তার শস্যক্ষেত্র যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষক যেমন শস্যক্ষেত্র ছাড়া অচল একইভাবে স্বামীর জন্য স্ত্রীর অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রী ছাড়া স্বামী অচল। কথায় আছে না প্রতিটি পুরুষের উন্নতির পিছে নারীর অবদান রয়েছে। কুরআন সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছে আর নোংরাবাজ নাস্তিক গুলো কিভাবে অপব্যাখ্যা দিয়ে ধোঁকা দিচ্ছে। এরকম একটি সুন্দর শস্যক্ষেত্রে সাথে নারীদেরকে উদাহরণ দেয়া হয়েছে এটা খারাপ কিভাবে হয়? একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে স্বস্তি পাবে না তো কোথায় স্বস্তি পাবে? এতটুকু বুঝার মতো মস্তিস্কও নাস্তিকদের কাছে মজুত নেই? আসলে নাস্তিকদের যৌননীতিমালা খুবই নির্লজ্জ ও নিকৃষ্ট এটাকে ধামাচাপা দিতেই মূলত ইসলামের সাধারণ বিষয়কে নাস্তিকরা খারাপ ভাবে দেখানোর চেষ্টা করে।  


নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কোনো নাস্তিক মা যদি চায় তাহলে নিজের ছেলের সাথে সম্মতিতে যৌনকর্ম করতে পারবে যদি কারও ক্ষতি না হয়। শুধু এখানেই না বরং,কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের ছেলে সন্তানের সাথে সমকামীতার চর্চা থেকে নিয়ে নিজের ভাইয়ের সাথে ডিংডং সবই মুক্তচিন্তায় করতে পারবে। ভাই ভাইয়ের সাথে, বোন বোনের সাথে , পিতা মেয়ের সাথে, মা ছেলের সাথে অর্থাৎ পরিবারের যে কারও সাথেই সম্মতিতে যৌনকর্ম করা নাস্তিক্যধর্মে বৈধ। প্রতিটি নাস্তিকের স্বাধীনতা রয়েছে এমন যৌনকর্ম করবার। এখন আপনারাই বলুন যাদের যৌননীতিমালার এই চেহারা তারা “স্বামী স্ত্রীর কাছে স্বস্তি পাবে” এই ভালোবাসা পূর্ণ কথাকে খারাপ হিসেবে দেখাবে না তো কি করবে? শিয়ালের লেজ কাটা গল্পটি পড়েন নাই আপনারা? নাস্তিকদের মায়া কান্না সেই লেজকাটা শিয়ালের মতো।


এই হাদিসটি মন দিয়ে খেয়াল করুন যেখানে বলা হয়েছে “দুনিয়া উপভোগের উপকরণ ভোগ্যপণ্য এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ পুণ্যবতী নারী” এই হাদিসের মধ্যে কিন্তু দুনিয়ার সব কিছুকেই উপভোগের উপকরণ বা ভোগ্যপণ্য বলা হয়েছে অথচ নাস্তিকরা শুধু নারীকেই হাইলাইট করে দেখায়ে নিজেরা বানায়ে ব্যাখ্যা করে যায়। কি হাস্যকর ব্যাপার। স্বামীর জন্য যেমন স্ত্রী ভোগ্যপণ্য তেমনি স্ত্রীর জন্য স্বামীও ভোগ্যপণ্য। স্বামী কি স্ত্রীর সাথে সহবাস করার সময় স্ত্রীকে ভোগ করে না? একইভাবে স্ত্রীও কি স্বামীকে ভোগ করে না? আসলে নবীজি (সা) বাস্তব সত্য কথাটিই বলেছেন হাদিসের মধ্যে নাস্তিকদের মস্তিস্কের দুর্বলতার কারণে তারা হাদিসটির প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারেনি।


দুনিয়ার সব কিছুই তো আমরা ভোগ করি। দুনিয়ার মধ্যে যা রয়েছে সব কিছুই তো আমাদের কোনো না কোনোভাবে অবশ্যই প্রয়োজন। এখানে খারাপের কি আছে? নাস্তিকরা কি দুনিয়ায় ভোগ করছে না? নাস্তিকরা কি বিয়ে করে না? নাস্তিকরা বিয়ে করে সন্তান পয়দা করেনি? প্রশ্ন হচ্ছে বিয়ের পর কি নাস্তিকটি স্ত্রীর সাথে সহবাস করে না? ভোগ না করলে, সহবাসে আনন্দ না পেলে নাস্তিকদের সন্তান গুলো কাদের তাহলে? এই সাধারণ বিষয় গুলো নাস্তিকদের মগজ বুঝতে অক্ষম? বিবর্তিত মগজ বলে নাকি? মনুষ্য চিন্তাশীল মগজ থাকলে হয়তো সহজেই বুঝতে পারতো। আমরা সবাই জানি যে নারী যেমন পুরুষের জন্য তৈরি হয়েছে তেমনি পুরুষও নারীর জন্য তৈরি হয়েছে। একজন স্বামীর জন্য আপন হচ্ছে তার স্ত্রী। স্বামী স্ত্রীকে ভালোবাসে। 


রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ২৮৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’-ihadis.com

 

দুনিয়াতে আমরা যা কিছুই ভোগ করি না কেন তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী। পাঠক খেয়াল করেছেন যেসব নারীরা ভালো,যেসব নারীরা মানবতার কাজ করে। যেসব নারীরা স্বামীকে ভালোবাসে, ইত্যাদি উত্তম কাজ করে এক কথায় যারা পুণ্যময়ী তারাই হচ্ছে দুনিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ উপভোগ্য সামগ্রী। বস্তুবাদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সব কিছুই বস্তু ছাড়া কিছু নয়। তাই “উপভোগ্য সামগ্রী” শব্দটিকে নাস্তিকরা যেভাবে খারাপ হিসেবে দেখায় সেটার ভিত্তি নাই। নবীজি (সা) কি এটা বলেছেন যে নারীরা নিকৃষ্ট সামগ্রী? এটা উনি বলেন নাই। নবীজি (সা) খারাপ অর্থে কথাটি বলেনই নাই। এটা পরিস্কার। তাছাড়া স্ত্রীও যে স্বামীকে উপভোগ করে সেই বিষয়েও সহিহ হাদিস রয়েছে কিন্তু নাস্তিকরা তো এসব তথ্যকে ধামাচাপা দিয়ে রাখে।


বুলগুল মারাম, হাদিসঃ১০১৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পরকালে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর নিকটে ঐ লোকেরা হবে যে স্ত্রীকে উপভোগ করে এবং তার স্ত্রীও তাকে উপভোগ করে  তারপর তার স্ত্রীর গুপ্ত রহস্য অন্যের নিকটে ফাস করে দেয়।-ihadis.com

 

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫২৬৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ত্বলাক্ব দিলে সে (স্ত্রী) অন্য স্বামীকে বিবাহ করে। পরে সেও তাকে ত্বলাক্ব দেয়। তার লিঙ্গ ছিল কাপড়ের কিনারা সদৃশ। সুতরাং মহিলা তার থেকে নিজের মনকামনা পূর্ণ করতে পারল না। দ্বিতীয় স্বামী অবিলম্বে ত্বলাক্ব দিলে সে (মহিলা) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার প্রথম স্বামী আমাকে ত্বলাক্ব দিলে আমি অন্য স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হই। এরপর সে আমার সঙ্গে সঙ্গত হয়। কিন্তু তার সঙ্গে কাপড়ের কিনারা সদৃশ বৈ কিছুই নেই। তাই সে একবারের অধিক আমার নিকটস্থ হল না এবং আপন মনস্কামনা সিদ্ধ করতে সক্ষম হল না। এরূপ অবস্থায় আমি আমার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হব কি? রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তোমার কিছু স্বাদ উপভোগ করে, আর তুমিও তার কিছু স্বাদ আস্বাদন কর।-ihadis.com


স্ত্রীরাও যে নিজের স্বামীকে উপভোগ করে। আনন্দ পায়। মজা পায়। স্বামীর মাধ্যমে তৃপ্তি পায় এসব বিষয় তথ্য গুলো নাস্তিকরা গোপন করে। বুঝতেই পারছেন এসব হাদিস দেখালে তো আর বানিয়ে বানিয়ে ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে রক্ষা করা যাবে না। এরপরেও কেউ যদি বলে নাস্তিকরা সততার সাথে ইসলামের বিরোধীতা করে তাহলে এটা হাস্যকর কথা ছাড়া আর কিছুই হবে না। ধর্মহীনরা নারীদের নিয়ে যেভাবে মুক্তচিন্তা করে সামনে বিস্তারিত আলোচনায় আসবে। পড়তে থাকুন।


সুরা আরাফ ৭ঃ১৮৯ আয়াতে আছে, তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। 


তাফসীর থেকে উক্ত আয়াতটির বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা জেনে নিলেই আপনারা বুঝতে পারবেন নাস্তিকরা নিজেদের নোংরা মিথ্যা দাবি গুলো আয়াতের সাথে মিশিয়ে ফেলে যাতে সাধারণ মানুষরা কুরআনের আয়াতকে খারাপ মনে করে। নাস্তিকরা এতো অসৎ কেন?


তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, ৮ খণ্ড, ৪৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


ইরশাদ হচ্ছে যে, দুনিয়া জাহানের সমস্ত মানুষই আদম (আঃ)-এর বংশের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বয়ং তার স্ত্রী হাওয়া তারই মাধ্যমে সৃষ্ট হয়েছেন। তাদের দু'জনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে লােক সকল! আমি তােমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি। আর তােমাদেরকে এমনভাবে বাড়িয়েছি যে, তােমরা বংশে বংশে ও  গােত্রে গােত্রে পরিণত হয়েছো। এখন তােমাদের একে অপরের হকের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। নিশ্চয়ই আল্লাহর দৃষ্টিতে তােমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই বেশী সম্মানিত যে বেশী মুত্তাকী।” -এর অর্থ হচ্ছে- যে সে (পুরুষ) তার (স্ত্রীর) কাছে প্রশান্তি লাভ করে। এ জন্যেই আল্লাহ পাক অর্থাৎ তিনি তােমাদের পরস্পরের মধ্যে প্রেম-প্রীতি ও মায়া-মহব্বত সৃষ্টি করেছেন। (৩০ঃ ২১) দু’ আত্মার মধ্যে যে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা জন্মে, এর চেয়ে অধিক ভালবাসা আর কোথায়ও হতে পারে না। তাই তাে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যাদুকর তার যাদুর মাধ্যমে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় যে, কি করে সে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতে পারে। মােটকথা, স্বামী যখন তার প্রকৃতিগত প্রেমের ভিত্তিতে স্বীয় স্ত্রীর সাথে মেলা মেশা করে তখন তার স্ত্রী প্রথমতঃ তার গর্ভাশয়ে একটা হালকা বােঝার অস্তিত্ব অনুভব করে।


তাফসীরে জালালাইন, ২ খণ্ড, ৫২১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


তিনিই আল্লাহ তা'আলাই তােমাদেরকে এক ব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আদম (আ.) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার সঙ্গিনী হযরত হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করেন যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়প্রেম ও ভালােবাসাপূর্ণ হয় তাদের সম্পর্ক। অতঃপর যখন সে তাকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। অর্থাৎ তার সাথে সঙ্গত হয় তখন সে (স্ত্রী) হালকা গর্ভ অর্থাৎ শুক্রকীট ধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে কাল অতিবাহিত করে হালকা হওয়ায় তা নিয়ে চলাফেরা করে। পেটে শিশুটির বৃদ্ধির দরুন গর্ভ যখন গুরুভার হয় এবং উভয়ের আশঙ্কা হয় যে গর্ভটি পঙ্গু হয়ে পড়ে নাকি তখন তারা উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে।


তাফসীরে মাজহারী, ৪ খণ্ড, ৬৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


প্রথমে উদ্ধৃত আয়াতটির মর্মার্থ হচ্ছে- হে মানুষ! আল্লাহ্তায়ালা তােমাদেরকে হজরত আদম থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তার বক্ষপিঞ্জর থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জীবনসঙ্গিনী হজরত হাওয়াকে, যাতে আদম তার সঙ্গিনীর নিকট থেকে পান সঙ্গসুখ ও ভালােবাসা। এরপর তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সংগত হলেন। ফলে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লেন হাওয়া। সে গর্ভ ছিলাে অনায়াসে বহনযােগ্য লঘু। এক সময় সে গর্ভ হয়ে উঠলাে গুরুভার। তখন স্বামী-স্ত্রী দু'জনে আল্লাহ্তায়ালার দরবারে প্রার্থনা জানালেন, হে আমাদের প্রভুপ্রতিপালক! আমাদেরকে যদি সুঠাম, সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করাে, তবে অবশ্যই আমরা হবাে তােমার উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী।


আপনি কি চান না আপনার বাবা আপনার মাকে ভালোবাসুক? আপনি কি চান না আপনার মা আপনার বাবাকে ভালোবাসুক? আপনি কি চান না উনারা একে অপরকে ভালোবাসুক? একে অপরের কাছে গিয়ে শান্তি পাক? স্বস্তি পাক? আনন্দ পাক? মজা পাক? তাহলে? এইবার আপনি নিজেই বলুন নাস্তিকরা কিভাবে ইসলাম সম্পর্কে সত্য বলে?


সুরা বাকারা ২ঃ২২৩ আয়াতে আছে, তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্রতোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।


স্পষ্ট যে এই আয়াতটিতে স্বামী স্ত্রীর সহবাস এবং সন্তান জন্মদানের কথা বলা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সহবাস করবার মুহূর্তে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই ব্যাবহার করতে পারবে এই বাস্তব সত্য কথাটিই আয়াতে বলা হয়েছে। এখানে সমস্যা কোথায়? নাস্তিক্যধর্মে কি নাস্তিকদের জন্য এমন বিধান দেয়া আছে নাকি যে স্ত্রীর সাথে অমুকভাবে সহবাস করা যাবে অথবা তুমুকভাবে করা যাবে না?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে অনূদিত মুসলিম শরীফে আলোচ্য হাদিসে مَتَاعٌ (মাতা’) শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে ‘উপভোগের উপকরণ (ভোগ্যপণ্য)’। مَتَاعٌ (মাতা’) শব্দ দ্বারা কী বোঝানো হয় তা আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম কুরতুবী(র.) বলেছেন, পৃথিবীতে উপকারী যে কোনো কিছুই ‘মাতা’ (متاع)।  আবু জাফর নাহহাস [প্রখ্যাত মিসরীয় ব্যাকরণবিদ] বলেছেন, এটিই মুসলিম উম্মাহর ইমামদের মধ্য থেকে একজন ইমাম প্রদত্ত উত্তম ব্যাখ্যা। এটিই (আরবি) ভাষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরবিভাষীদের কথামালায় ‘মাতা’ (متاع) এর মানে হলোঃ “উপকারী জিনিস”। উদাহরণঃ “আল্লাহ তোমাকে উপকৃত/সুখী করুন।” আরো একটি উদাহরণঃ “তোমরা তাদের উপকার করো।”(১) আমরা আরবি ভাষায় শব্দটির ব্যবহার দেখলাম। যা থেকে উপকার লাভ করা যায়, আরবি ভাষায় সেটিই হচ্ছে مَتَاعٌ (মাতা’)। হাদিসে বোঝানো হয়েছেঃ একজন পুণ্যবতী নারী হচ্ছেন এমন একজন যার থেকে পৃথিবীতে সব থেকে বেশি উপকার লাভ করা যায়। হাদিসে পুরো পৃথিবীকেই ‘মাতা’ (متاع) বলা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর সব কিছুই এর মাঝে শামিল (২)।


হাদিসের মাকসাদ যদি এমনই হতো যে নারীকে আলাদা করে একটা 'ভোগ্যপণ্য' বলা হবে, তাহলে পুরো দুনিয়ার (الدنيا) কথা বলা হতো না। এখানে হাদিসে পুরো পৃথিবীকেই উপকারের আধার (الدنيا متاع) বলা হয়েছে আর এর মাঝে সব থেকে উপকারী হচ্ছে পুণ্যবতী নারী, সে কথাটি বোঝানো হচ্ছে। এ হাদিসটিতে মোটেও নারীজাতিকে তুচ্ছ করার উদ্যেশ্য নেই বরং পূণ্যবতী নারীর গুণকেই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যে হাদিসে নারীজাতির গুণকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেই হাদিসকে উল্টো নারীর প্রতি অবমাননাকর বলে উল্লেখ করে নাস্তিক-মুক্তমনারা। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগগুলোর আসল অবস্থা কীরূপ। হ্যাঁ, চিন্তার মুক্তির নামে এভাবেই প্রতারণা করা হয়।


নারীদের নিয়ে ধর্মহীনদের মুক্তচিন্তাঃ


নারীদেরকে নিয়ে নাস্তিক মুক্তমনারা কেমন লেভেলের মুক্তচিন্তা করে আসুন এখন সেটা তাদের বই পত্র থেকেই পড়ব। নাস্তিকদের বইতে এসব নির্লজ্জ কথাবার্তার প্রমাণ রয়েছে। এরপরেও নাকি মুক্তচিন্তা নারীদেরকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে। স্বাধীনভাবে নারী মুক্তচিন্তা করতে পারলেই নাকি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। নাস্তিকরা যেভাবে মুক্তচিন্তা করে সেভাবে নারীরাও মুক্তচিন্তা করুক প্রতিটি নাস্তিকই এটা চায়। অনেকে স্পষ্ট বলে, অনেকে ইশারায়। বুঝে বুঝে মনে দিয়ে পড়তে থাকুন পাঠক। 

নাস্তিক, মুক্তমনা, বিজ্ঞানলেখক, বিজ্ঞানমনস্ক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ

যখন শিশু ছিলাম,কিশোর হয়ে উঠেছি যখন, তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি, আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছা করে, ছেলেবেলা ভোরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরোগুলোকে চুষে দেখতে, ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হতে জ্বলজ্বল করতো। সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছে হতো,কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মতো এক তরুণীকে।

সারা সন্ধ্যা এক অসহায় তরুণীকে ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ চুইংগামের মতো ভাবতেন। কল্পনা করতে পারেন একটু? শুধু চুইংগাম মনে করেই থেমে থাকেন নি বরং সারা সন্ধ্যা চুষতে চেয়েছিল। সারা সন্ধ্যা সেই নারীকে চাবাতে চেয়েছিল। হ্যাঁ, নাস্তিকদের এই স্বাধীনতা রয়েছে নারীদের নিয়ে এভাবে মুক্তচিন্তা করবার। হুমায়ুন আজাদ প্রথাবিরোধী নাস্তিক ছিলেন। হুমায়ুন আজাদ নারীদের নিয়ে আরও কত প্রকার মুক্তচিন্তা করতেন তা বলে হয়তো শেষ করা যাবে না।

আমার অবিশ্বাস, ১৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

আরও কিছুকাল আমি নক্ষত্র দেখতে চাই, নারী দেখতে চাই, শিশির ছুঁতে চাই, ঘাসের গন্ধ পেতে চাই, পানীয়র স্বাদ পেতে চাই, বর্ণমালা আর ধনীপুঞ্জের সাথে জড়িয়ে থাকতে চাই, মগজে আলোড়ন বোধ করতে চাই। আরও কিছু দিন আমি হেসে যেতে চাই

আমার অবিশ্বাস, ১৩ পৃষ্ঠায়, প্রথম পরিচ্ছেদ, আমার ইন্দ্রিয়গুলো, বর্ণিত হয়েছেঃ

আমার ভাল লাগতো ভোরের আকাশ, শ্রাবনের মেঘ, হেমন্ত, নদী বা নারী, কখনোই জানবো না আমি কবিতা পড়েছিলাম, এমনকি লিখেছিলামও, কেঁপে উঠেছিলাম কামনায়, অজস্র বার তৃপ্ত করেছিলাম আমার কামনা এবং বহুবার পরিতৃপ্ত করতে পারিনি।

আমার অবিশ্বাস, ১৬ পৃষ্ঠায় সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছেঃ

ছোঁয়া সবচেয়ে অন্তরঙ্গ অনুভূতি, আমাদের শরীর ছোঁয়া চায়, আমরা ছুঁতে চাই, আমিও ছুঁতে চেয়েছি, ছোঁয়া চেয়েছি এবং ছোঁয়া পেয়ে ও ছুঁয়ে সুখী হয়েছি।

হুমায়ুন আজাদ যিনি একাধারে যুক্তিবাদী, প্রথাবিরোধী, বিজ্ঞানমনস্ক, ভাষাবিজ্ঞানী, মুক্তমনা, মুক্তচিন্তক, নাস্তিক ছিলেন। উনি আল্লাহকে অবিশ্বাস করতেন। উনি ইসলামকে অবিশ্বাস করতেন। হযরত মোহাম্মদ (সা) যে সত্য নবী ছিলেন এই কথায় উনি অবিশ্বাস করতেন। এমনকি উনি নারীদের উচুনিচু অঙ্গ দেখে মজা মারতেন। হাত মারতেন কিনা সেটা বইতে স্পষ্ট করে বলা নেই। নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ, নারীদেরকে সব সময় দেখতে চাইতো, ছুঁতে চাইতো। তার দেখার ধরণ আসলে কেরকম সেটা চিন্তাশীল পাঠকদের হাতে ছেড়ে দিলাম। এক নারী নাস্তিকতা ও মুক্তচিন্তার বিশ্বাস ত্যাগ করলে, ছেড়ে দিলে সেই হুমায়ুন আজাদ উক্ত নারীকে নিয়ে কেমন মন্তব্য করেন আসুন পড়ে দেখি।


“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

 

এটাই দেখছি বাঙলাদেশঃ ষাটের দশকে এক উগ্র আধুনিকাকে সেদিন দেখলাম, এখন সে বিসর্জিত দুর্গার মতো ভেঙ্গেচুরে গেছে, মুখে এতোটুকুও আভা নেই, একদা কলাভবনের বারান্দায় যার শরীরের বিভিন্ন বাঁকের তরঙ্গভঙ্গ দেখা আমাদের জন্য সুখকর ব্যাপার ছিলো, যার সম্মুখ ও পশ্চাৎ ছিলো সমান জলভ্রমিপূর্ণ, এখন সে বোরকা হিজাব তাঁবু বিসমিল্লায় সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, কয়েকবার পবিত্র মক্কা মদিনা মনোয়ারা ঘুরে এসেছে, ধনসম্পদে নিজেকে ভরে ফেলেছে ও ভরে চলছে- এটা করতে ভুল করে নি ও পবিত্র উপায়ে করে নি, কিন্তু এখন অন্ধকারে ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লা ইনশাল্লা ছাড়া কথা বলে না, ইসলামের জয়গানে সারাক্ষণ মুখর, সে জানে না তার এসবই পশুশ্রম, ধর্মগ্রন্থ ও সহিহ হাদিসগুলো সে পড়ে নি- হুররা তাকে তার কাম্য প্রাসাদে ঢুকতে দেবে না, তার সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

কলাভবন, শরিফ মিয়ার ক্যান্টিন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস, নিউমার্কেটের নতুন ঝলমলে বইয়ের দোকান, এবং আরো নানা জায়গায় ছিলো আধুনিকতা সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক ও অনুপ্রাণিত হওয়ার স্থান; তখন অনাধুনিকতা, মধ্যযুগীয়তা, বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ জোব্বা বোরকা ছিলো হাস্যকর, হিজাবের কথা কেউ জানতোই না।

 

কলাভবনের বারান্দায় যেই নারীর দেহ দেখে, দেহের অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে মনে সুখ গ্রহণ করতো নাস্তিকটি সেই নারীই যখন সভ্যতা গ্রহণ করলো তখনই শুরু করে দিল তাকে পশ্চাৎপদ, মধ্যযুগীও, অনাধুনিক বলে সমালোচনা করা। “আমার দেহ আমার সিদ্ধান্ত” কথাটি হয়তো নাস্তিকের মগজ তখন ভুলে গিয়েছিল? তাই না? পাঠক আপনারা হয়তো এতক্ষণে ঠিকই বুঝে নিয়েছেন নাস্তিকগোষ্ঠীরা কেন চায় নারীরা ছোট ছোট খোলামেলা পোশাকে থাকুক? নারীরা বিকিনি পরিধান করে রাস্তায় নাস্তিকদের সামনে চলাফেরা করুক?

 

নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের যদি এই মুক্তচিন্তা হয় তাহলে যারা তার বই পড়ে তার কথা বিশ্বাস করে ইসলাম ত্যাগ করে নাস্তিক্যধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের মুক্তচিন্তার কিরকম চিত্র হতে পারে? শিপ্পপাঞ্জিরা লেংটা থাকে তাই নাস্তিকরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের আদর্শ এখনো ধরে রাখতে চাইছে নাকি? নাস্তিক্যধর্ম নাস্তিকদেরকে নারীদের নিয়ে এভাবেও মুক্তচিন্তা করতে স্বাধীনতা দিয়ে থাকে। আসুন ইসলাম নারীদের নিয়ে কি শিক্ষা দেয় তা জেনে নেই।

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৭১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক লোক নবী মুহাম্মদ (সা) কে প্রশ্ন করল হে আল্লাহ্‌র রাসুল,আমার কাছে কে উত্তম ব্যাবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন, তোমার মালোকটি বলল তারপর কে? নবীজি (সা) বললেন তোমার মালোকটি আবার বলল তারপর কে? নবী (সা) বললেন তোমার মা।সে আবার বলল তারপর কে? নবীজি (সা) বললেন তোমার বাবা।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৭২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

এক ব্যাক্তি নবী (সা)কে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি জিহাদে যাব? তিনি বললেন, তোমার কি পিতামাতা আছে ? সে বললঃ হ্যাঁ। নবী (সা) বলেন, তাহলে তাদের সেবা করার মাধ্যমে জিহাদ করো-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৭৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

আসমা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময় নবী (সা) এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী (সা) এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম । আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিমআমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যাবহার করবো? নবী (সা) বলেন, হ্যাঁ। তোমার মায়ের সাথে উত্তম ব্যাবহার করো।-ihadis.com

 

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,

 

তায়সাল ইবনে মায়্যাস (র) থেকে বর্ণিতঃ আমি যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিলাম। আমি কিছু পাপকাজ করে বসি যা আমার মতে কবীরা গুনাহর শামিল। আমি তা ইবনে উমার (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, এই এই ব্যাপার। তিনি বলেন, এগুলো কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত নয়। কবীরা গুনাহ নয়টিঃ (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) নরহত্যা, (৩) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন, (৪) সতী-সাধ্বী নারীর বিরুদ্ধে যেনার মিথ্যা অপবাদ রটানো, (৫) সূদ খাওয়া, (৬) ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, (৭) মসজিদে ধর্মদ্রোহী কাজ করা, (৮) ধর্ম নিয়ে উপহাস করা এবং (৯) সন্তানের অসদাচরণ যা পিতা-মাতার কান্নার কারণ হয়। ইবনে উমার (রাঃ) আমাকে বলেন, তুমি কি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি তাই চাই। তিনি বলেন, তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছেন? আমি বললাম, আমার মা জীবিত আছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তুমি তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললে এবং তার ভরণপোষণ করলে তুমি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকো (তাবারীর তাফসীর, আবদুর রাযযাক আল-খারাইতীর মাসাবিউল আখলাক)।-ihadis.com

 

নাস্তিকগোষ্ঠীকে সভ্য হতে হলে ইসলামের বিকল্প আদর্শ নাস্তিকদের কাছে নেই। তাই নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিকদের উচিত ইসলামে ফিরে আসা। ইসলাম নিয়ে সঠিকভাবে পুনরায় ভাবতে শেখা। কারণ ইসলাম নাস্তিক্যধর্মের চেয়ে শক্তিশালী। যেই নাস্তিক্যধর্মে নারীদের নিয়ে তেমন মুক্তচিন্তা করতে বৈধতা দেয় সেই নাস্তিকরাই মুসলিমদের জন্য এই নৈতিকতার বিধান দিতে চাইছে যে মুসলিমরা যাতে দেনমোহর প্রদান না করে। মুসলিম স্বামী যাতে স্ত্রীর কাছে গিয়ে শান্তি না পায়। এরপরেও নাকি নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম বলা যাবে না। নাস্তিকদের কথাবার্তা শুনলে হিরো আলমের কৌতুকও ফেল মারবে।


দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে ভোগ করার মূল্য যা পতিতাবৃত্তির মতো- আসলেই?


প্রথমে নাস্তিকরা যেসব হাদিস দেখায় সেসব মন দিয়ে পড়ব এরপরে যাচাই করে দেখবো আসলেই এসব অভিযোগ হবার জন্য যোগ্যতা রাখে কিনা।  


নাস্তিকরা বলে, কি ভয়ংকর কথা যে স্বামী স্ত্রীর যৌনাঙ্গ উপভোগ করবে এর জন্য অর্থ প্রদান করবে। এরপরে শরহে আবু দাউদ থেকে হাইলাইট করে দেখায়, শরহে আবু দাউদ গ্রন্থে বলা হয়েছে,শরিয়তের পরিভাষায় মোহর বলা হয়- স্বামী স্ত্রীর যৌনাঙ্গ উপভোগ করার বিনিময়ে তাকে প্রদত্ত নগদ বা বাকি অর্থ সম্পদকে মোহর বলে।


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৬৪০, সহিহ হাদিস,ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’জন লি’আনকারীর (লি’আন বাক্য পাঠের ব্যাপারে) তোমাদের দু’জনের হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে। তোমাদের দু’জনের একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আর তোমার (স্ত্রীর) উপর তোমার কোন করণীয় নেই। লোকটি বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার অর্থের (প্রদত্ত মাহর) কী হবে। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার অর্থ পাবে না। যদি তুমি তার ব্যাপারে সত্যবাদী হও তাহলে তোমার দেয়া সম্পদ ঐ বস্তুর বদলা বলে গণ্য হবে যা দ্বারা তুমি তার লজ্জাস্থান হালাল করেছ। আর যদি তুমি তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাক তাহলে তার থেকে মাল ফেরত পাওয়া দুরহ ব্যাপার। যুহায়র (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেছেন যে, সুফ্‌ইয়ান (রহঃ) সা’ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ)-এর সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বলতে শুনেছি।-ihadis.com


জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১০২, সহিহ হাদিস, আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন মহিলা বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। কিন্তু তার সাথে তার স্বামী সহবাস করলে তবে সে তার লজ্জাস্থান হালাল মনে করে সংগত হওয়ার কারণে তার নিকট মোহরের অধিকারী হবে। যদি অভিভাবকগণ বিবাদ করে তাহলে যে ব্যক্তির কোন অভিভাবক নেই তার ওয়ালী হবে দেশের শাসক।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ৫১৫১, সহিহ হাদিস, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সকল শর্তের চেয়ে বিয়ের শর্ত পালন করা তোমাদের অধিক কর্তব্য এজন্য যে, এর মাধ্যমেই তোমাদেরকে স্ত্রী অঙ্গ ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়েছে।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৩১২, সহিহ হাদিস, সা'ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি লি'আনকারীদ্বয় সম্পর্কে ইবনু 'উমারকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি'আনকারীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ তোমাদের হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ্‌রই। তোমাদের একজন অবশ্যই মিথ্যাচারী। স্ত্রীর উপর তোমার কোন অধিকার নেই। লোকটি বললঃ তবে আমার মালের কী হবে? তিনি বললেনঃ তুমি কোন মাল পাবে না। যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে এর বদলে তুমি তার লজ্জাস্থানকে হালাল করে নিয়েছিলে। আর যদি তার উপর মিথ্যারোপ করে থাক, তবে তা তো বহুদূরের ব্যাপার। সুফ্‌ইয়ান বলেনঃ আমি এ হাদীস 'আম্‌র (রাঃ)- এর নিকট হতে মুখস্থ করেছি। আইয়ুব বলেন, সা'ঈদ ইবনু যুবায়র-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি ইবনু 'উমার (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলামঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে লি'আন করল (এখন তাদের বিধান কী?) তিনি তাঁর দু আঙ্গুল ইশারা করে বললেন, সুফ্‌ইয়ান তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল ফাঁক করে বললেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ 'আজলানের এক দম্পত্তির বৈবাহিক সম্পর্ক এভাবে ছিন্ন করে দেন এবং বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা জানেন যে, তোমাদের একজন অবশ্যই মিথ্যাচারী। সুতরাং কেউ তাওবাহ করতে প্রস্তুত আছ কি? এভাবে তিনি তিনবার বললেন। সুফ্‌ইয়ান বলেনঃ আমি তোমাকে যেভাবে হাদীসটি শুনাচ্ছি এভাবেই আমি 'আমর ও আইয়ুব (রাঃ) থেকে মুখস্থ করেছি।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৩২৮১, সহিহ হাদিস, উকবা ইবন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শর্ত (চুক্তি)-সমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রতিপালনীয় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, তোমরা যা দ্বারা (মহিলার) লজ্জাস্থান হালাল করবে, (অর্থাৎ মোহর আদায় করা)।-ihadis.com


মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-১৩: বিবাহ, হাদিসঃ ৩১৩১, সহিহ হাদিস, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোনো নারী তার ওয়ালীর (অভিভাবকের) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে; তার বিয়ে বাত্বিল (না-মঞ্জুর, পরিত্যক্ত), তার বিয়ে বাত্বিল, তার বিয়ে বাত্বিল। যদি এরূপ বিয়েতে স্বামীর সাথে সহবাস হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীর মোহর দিতে হবে তার (লজ্জাস্থান) উপভোগ (হালাল) করার জন্যে। আর যদি তাদের (ওয়ালীগণের) মধ্যে আপোসে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে যার ওয়ালী নেই শাসক (প্রশাসন) তার ওয়ালী (বলে বিবেচিত) হবে।-hadithbd.com


নাস্তিকরা উপরের হাদিস গুলো থেকে নিজেরা বানিয়ে ব্যাখ্যা করে থাকে এভাবে, ইসলামে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর দেয় সেই নারীর লজ্জাস্থান ভোগের মূল্য হিসেবে। এখানে পুরুষটি সম্পূর্ণ ভাবে মাল ভোগকারী, বা নারীর লজ্জাস্থান নামক মালটির ক্রেতা। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী একজন খাদক বা শিকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ, আর স্ত্রী হচ্ছে তার খাদ্য বা শিকার স্বরূপ। যার মূল্য হিসেবে সে দেনমোহর পরিশোধ করছে। 


প্রশ্ন হচ্ছে উপরের হাদিস গুলোর কোন হাদিস ব্যাখ্যা গ্রন্থে এই ব্যাখ্যা বলা হয়েছে যে ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী একজন খাদক বা শিকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ, আর স্ত্রী হচ্ছে তার খাদ্য বা শিকার স্বরূপ? নাস্তিকরা কেন রেফারেন্স পেশ করে নাই? সেই হাদিস গ্রন্থের নাম কি? কত খণ্ডে, কোন পৃষ্ঠায় এই ব্যাখ্যা করা হয়েছে? পাঠক নাস্তিকরা শরহে আবু দাউদ থেকে যেখান থেকে রেফারেন্স দিয়েছে সেই শরহে আবু দাউদের মোহরের সেই কথার নিচেই এটা স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, মােহর প্রদানের মাধ্যমে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর গভীর ভালােবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, একারণে একে মোহর - বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর দ্বারা মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এ মােহরের ফলেই তার তাদের অসহায়ত্বের গ্লানি দূরীভূত করে অধিকার আর মর্যাদা নিয়ে সমাজের বুকে টিকে থাকে।


স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা প্রকাশের একটি মাধ্যম হচ্ছে এই দেনমোহর অথচ নাস্তিকরা নিচের তথ্যটুকু হাইলাইট না করে নিজের সুবিধা মতো ব্যাখ্যা করবার জন্য অর্ধেকটুকু দেখিয়েছে যাতে মানুষের কাছে নাস্তিকদের মিথ্যাচার ধরা না পড়ে। “দেনমোহর দিয়ে স্বামী তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান হালাল করে” কথাটি যেহেতু পড়তে একটু বিব্রতকর মনে হচ্ছে সেহেতু এটি নারীর জন্য অমর্যাদাকর। এমন দাবিটিতে  Argument from ignorance fallacy-র আশ্রয়। অজ্ঞতার আশ্রয় আরকি। কোনো কিছু পড়তে অথবা শুনতে বাহ্যিকভাবে বিব্রতকর মনে হলেই সেটা খারাপ নয়। নাস্তিকরা যেহেতু এখানে নারীর ক্ষতি দেখাতে পারছে না সেহেতু গোল্ডেন রুলের দৃষ্টিতে অর্থাৎ নাস্তিকরা যাকে নৈতিক ভিত্তি মনে করে সেটার অনুযায়ী কথাটিকে খারাপ বলা যায় না।


“দেনমোহরের অর্থ আর বেশ্যা বা দেহব্যবসায়ী নারীর সাথে ইসলামিক সমাজে স্ত্রী হিসেবে পরিচিত নারীদের খুব বেশী পার্থক্য নেই” কেমন মিথ্যুক হলে এমন কথা বলতে পারে? ভাবা যায়? ইসলাম সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণাই রাখে না এই মূর্খ নাস্তিক গুলো। এরা নাকি আবার জেনে বুঝে ইসলাম ত্যাগ করেছে-হা হা হা হা।


মোহরানা দিতে গেলে অবশ্যই পারিবারিক ভাবে আয়োজন হতে হয়। পতিতাবৃত্তিতে পারিবারিকভাবে আয়োজন দেখা যায় না। শুধু কি তাই? পার্থক্য বলে শেষ করা যাবে না। স্বামী স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করেই থেমে থাকে না বরং স্ত্রীর সকল প্রয়োজন পূর্ণ করতে স্বামী বাধ্য। অন্যদিকে পতিতাবৃত্তিতে এমন কিছুই নেই। দেনমোহর এর সকল কিছু বৈধ হতে হবে অন্যদিকে পতিতাবৃত্তিতে এসব কিছুই নেই। দেনমোহর দেবার ফলে এমন সম্পর্ক তৈরি হয় যার ফলে সন্তান পিতার সম্পদের ওয়ারিশ হয় অন্যদিকে পতিতাবৃত্তিতে এমন কোনো নিয়ম নেই। স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রে দেনমোহরের মাধ্যমে সন্তান বৈধ হয় অন্যদিকে পতিতাবৃত্তির ফলে যদি সন্তান হয়েও যায় সেই সন্তানের দায়িত্ব পুরুষ নিতে বাধ্য না। নাস্তিক্যধর্মে নিজের সন্তানকে খুন করবার স্বাধীনতা আছে সেই আলাপে আজকে যাবো না। যারা পতিতাবৃত্তি করে এটা তাদের পেশা কিন্তু যেসব নারীদেরকে দেনমোহর দেয়া হয় এটা তাদের পেশা নয়। পতিতাবৃত্তিতে একজন নারীকে হাজার হাজার পুরুষ সহবাস করে কিন্তু দেনমোহর দিয়ে যেই বিয়ে হয় সেখানে স্ত্রীর একজন স্বামীই থাকে। দেনমোহর দ্বারা স্ত্রী সংসারে প্রবেশ করে অন্য দিকে পতিতাবৃত্তি হচ্ছে বেশ্যাদের বিজনেস। দেনমোহর দ্বারা স্বামীর সম্পদের ওয়ারিশ হয়ে যায় কিন্তু পতিতাবৃত্তিতে এসব কিছুই নেই। পতিতাবৃত্তিতে স্বামী স্ত্রীর বন্ধন বলে কিছু নেই কিন্তু বিয়েতে স্বামী স্ত্রীর বন্ধন রয়েছে। বিয়েতে উভয় পরিবার অনুষ্ঠান করে থাকে কিন্তু পতিতাবৃত্তিতে এসব নেই। এভাবে বলতে থাকলে হয়তো শেষ হবে না।


যেসব নাস্তিক তথা এক্সমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে এই অন্ধবিশ্বাস পোষণ করে যে দেনমোহর এর অর্থ ও পতিতাদের অর্থ একই তারা কি এটা বিশ্বাস করে তাদের পিতারা তাদের বেশ্যা মায়ের দের সাথে সহবাস করে সেই সব নাস্তিকদেরকে অবইধভাবে পয়দা করেছে? পাঠক খেয়াল করেছেন কি নির্লজ্জ নাস্তিকদের চিন্তাভাবনা? তাছাড়া কুরআন ও সহিহ হাদিসের কোথাও এই কথা বলা নেই যে দেনমোহর ও পতিতাবৃত্তির অর্থ একই। সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন নাসায়ী, জামে আত তিরমিজি, মুসনাদে আহমেদ, সুনানে ইবনে মাজাহ ইত্যাদি হাদিস গ্রন্থ থেকে এমন কোনো প্রমাণ পেলাম না যেখানে এই কথা বর্ণিত আছে যে পতিতাবৃত্তির টাকা ও দেনমোহরের টাকা একইরকম।


নাস্তিকরা একটি প্রশ্ন করে যে,


স্বামী স্ত্রীকে ভোগ করবে দেখে টাকা দিতে হয় তথা দেনমোহর কিন্তু স্ত্রীও তো স্বামীকে ভোগ করে সেখানে কেন মেয়ের টাকা দিতে হয় না?


উত্তর খুবই সহজ। স্বামীকে ভোগ করতে হলে স্ত্রীর স্বামীকে দেনমোহর দিবে না। দেনমোহরের টাকা দেয়া থেকে ইসলাম নারীদেরকে ছাড় দিয়েছে বা সুবিধা দিয়েছে। নারীর জন্য যদি ইসলাম স্বামীকে দেনমোহর দিতে হবে এই বিধান দিতো তাহলে যৌতুকের ভয়াবহতা হয়তো আরও বৃদ্ধি পেতো। তাই যৌতুকের বিরুদ্ধে এক প্রকাশ্য আন্দোলন হচ্ছে দেনমোহর কথাটি বল্লেও ভুল হবে না। একজন পুরুষ বিয়ে করতে হলে স্ত্রীর দায়িত্ব সব কাঁধে নিতে হয় কিন্তু স্ত্রী স্বামীর দায়িত্ব নিতে বাধ্য নয়। ইসলামে স্বামী স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করবে এরপরে ভোগ করবে আর স্ত্রীর টাকা পয়সা অর্থাৎ দেনমোহর স্বামীকে দিতে হবে না। এটা অবশ্যই স্ত্রীর জন্য সহজ ব্যাপার যে সে স্বামীকে ভোগ করবে ফ্রি ফ্রি, কিছুই দিতে হবে না কিন্তু স্বামী স্ত্রীকে দেনমোহর দিচ্ছে। একইসাথে স্ত্রীর সকল দায়িত্ব ইসলাম স্বামীর কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে।


সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৮৫০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 


মুআবিয়াহ (বিন হায়দার) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, স্বামীর উপর স্ত্রীর কি অধিকার রয়েছে? তিনি বলেন, সে আহার করলে তাকেও (একই মানের) আহার করাবে, সে পরিধান করলে তাকেও একই মানের পোষাক পরিধান করাবে (অথবা তোমাদের ভরণপোষণের সাথে তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে এবং তোমাদের পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করার সাথে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদের ও ব্যবস্থা করবে)। কখন ও তার মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না, অশ্লীল গালমন্দ করবে না এবং নিজ বাড়ী ছাড়া অন্যত্র তাকে একাকী ত্যাগ করবে না।-ihadis.com


যৌক্তিকভাবেও স্ত্রীর কোনো দিক থেকেই ক্ষতি নেই। উল্টো স্ত্রীর লাভ বেশি। দেনমোহর দিয়ে স্বামী স্ত্রীর লজ্জাস্থান হালাল করে বা অঙ্গ ভোগ করে কথাটিকে নাস্তিকরা কেন খারাপ মনে করছে? নাস্তিকরা কি যুক্তি দিয়ে দেখাতে পারবে এটা কেন খারাপ? অথচ নাস্তিকদের বানানো গোলডেন রুল, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সম্মতি নামক যুক্তির দৃষ্টিতেও দেনমোহরকে খারাপ প্রমাণ করা যায়ই না। কারণ যুক্তি অনুযায়ী এখানে কাউকেই ক্ষতি করছে না। কোনটা মর্যাদার আর কোনটা মর্যাদার না নাস্তিকরা এই নৈতিকতা কি ঠিক করেছে? কে ঠিক করে দিয়েছে? নাস্তিকদের এই বিধান কি নির্দিষ্ট যে দেনমোহর দেয়া অন্যায়? এই বিধান অবিশ্বাস করা যাবে না? আসলে যেভাবেই হোক ইসলামকে, নবী মোহাম্মদ (সা)কে খারাপ দেখাতে হবে এই কারণে যুক্তির মান সম্মানের মাথা খেয়ে যত্তসব ফালতু হাস্যকর অযৌক্তিক কথাবার্তা বলতেও নাস্তিকরা দ্বিধা করে না। এভাবে বুজি মুক্তচিন্তা করে তারা?


আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ৪ আয়াত থেকে বর্ণিত,

আর তোমাদের স্ত্রীদের তাদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশি মনে অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহর কিছু অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশ ছেড়ে দিতে পারে।


আল কুরআন, সুরা আহজাব ৩৩ঃ ৫০ আয়াত থেকে বর্ণিত,

হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছো।


যেহেতু দেনমোহরের দায়িত্ব স্বামীর উপর সেহেতু স্ত্রীর পক্ষেরও উচিত কম ধার্য করা যাতে স্বামীর পক্ষের লোকদের বেশি চাপ না হয়। হাদিস থেকে জানা যায়, হযরত মুহাম্মদ স্বয়ং নারীদের উপদেশ দিয়ে বলেছেন, নারীরা যেন কম দেনমোহরে বিয়ে করে। অর্থাৎ একজন নারী যেন তার দেনমোহর বেশি ধার্য্য না করে। “সে নারী বরকতের মাঝে আছে যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প” (মুসনাদু আহমাদ; হাসান সানাদে)


“দেনমোহর ও পতিতাবৃত্তির টাকা একইরকম” দাবিটিতে মারাত্তক লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। যেহেতু দুটো দেখতে একই রকম মনে হচ্ছে তাই দুটো একই জিনিস। একে Correlation is causation fallacy বলা হয়। সাদৃশ্য আছে মানেই একটার সাথে অন্যটার সম্পর্ক আছে এরকম ভুল চিন্তা করা। যখন কেউ বলে যেহেতু দেনমোহর দেয়ার ফলে পুরুষ নারীকে ভোগ করে আর পতিতাদেরকেও টাকা দিয়ে ভোগ করতে হয় সেহেতু দুটো একইরকম তখন সেই লোক আসলে ফ্যালাসির আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি একইসাথে এখানে STRAW MAN FALLACY-কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তি ফ্যালাসিও করা হয়েছে। যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে এমন দাবি আসলে আলোচনা করার যোগ্যতাই রাখে না। নিচের উদাহরণ গুলো পড়ুন তাহলে আরও সহজে বুঝতে পারবেন।


ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন আপনার মতো চেহারার হুবহু একজন মানুষ। আপনি কি তাকে নিজের আপন ভাই বলবেন? অথবা আপনি কি আপনার বাবার সম্পত্তির ভাগ তাকে দিয়ে দিবেন শুধুমাত্র তার চেহারা আপনার সাথে মিলে দেখে? ধরুন একজন নারী প্রেগন্যান্ট। সাধারণত তার পেট মোটা দেখাবে এটাই স্বাভাবিক। এখন একজন ভোডকু পুরুষের পেটেও কিন্তু দেখতে একজন প্রেগন্যান্ট নারীর মতো দেখায় কিন্তু কেউ যদি নাস্তিকদের মত দাবি করে উক্ত পুরুষের পেট যেহেতু মোটা সেহেতু সেও প্রেগন্যান্ট কথাটি কি ঠিক? পুলিশের হাতের অস্ত্র আর ডাকাতের হাতের অস্ত্র দেখতে একই কিন্তু আমরা কি দুটোকেই একই বলি? না। কারণ অস্ত্র গুলো দেখতে এক হলেও পুলিশের অস্ত্র দেশের জন্য, মানবতার জন্য। আর ডাকাতের অস্ত্র দেশের বিরুদ্ধে,মানবতার বিরুদ্ধে যা অবৈধ। এখন কেউ যদি বলে অস্ত্র দেখতে একই সুতরাং উভয়ই খারাপ কথাটি কি সঠিক?


একইরকম দেখতে মনে হলেই যে দুটো একই এই কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। আপনার চেহারার মানুষ হলেই যে সে আপনার আপন ভাই হয়ে যাবে কথাটি যেমন ঠিক নেই। কোনো পুরুষের পেট মোটা হবার কারণেই সে প্রেগন্যান্ট বলা যেমন ঠিক নেই। পুলিশের অস্ত্র দেখেই সেটা ডাকাতের অস্ত্র বলা যেমন ঠিক নেই তেমনি দেনমোহরের মতো সুন্দর পবিত্র অর্থের পদ্ধতিকে অবৈধ পতিতাবৃত্তির অর্থের মতো বলা কথাটিও ঠিক নেই। নাস্তিকরা দেখতে মানুষের মতো। আবার সন্ত্রাসী,চোর ডাকাত দেখতেও কিন্তু মানুষের মতোই এখন নাস্তিকরা যেহেতু মানুষের মতো তাই সন্ত্রাসী মানুষ আর নাস্তিকরা একই কথাটি যেমন ঠিক নেই তেমনি নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে যেই অন্ধবিশ্বাস করে সেসব ঠিক নেই।

দেনমোহর নারীকে দেয়া হয় যাতে স্বামী তার সাথে এবং সেও স্বামীর সাথে সহবাস করতে পারে এছাড়াও দেনমোহর প্রদান করা হচ্ছে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য উপহার যা দ্বারা তাদের জৈবিক সম্পর্ক বৈধ প্রমাণ হয়। মুসলিম বিবাহ আইন থেকে জানা যায় (৩),


Maher (alternately transliterated as mahr, mahar, mehr, or mehrieh) is a contract some Muslims enter into upon marriage. In Islamic law, it is a gift or contribution made by the husband-to-be to his wife-to-be, for her exclusive property, as a mark of respect for the bride, and as recognition of her independence. It is not, however, a gift in the traditional sense, but is in fact obligatory and the wife-to-be receives it as a right.


ভাবানুবাদঃ মোহর (বিকল্প শব্দ,পর্যায়ক্রমে মাহর, মহর, মেহর, বা মেহরিহ হিসাবে প্রতিলিপি) হল একটি চুক্তি যা মুসলমান বিবাহের সময় প্রদান করে আবদ্ধ হয়। ইসলামিক আইনে, এটি একটি উপহার বা অবদান যা তার হতে হবে স্বামীর স্ত্রীকে, তার একচেটিয়া সম্পত্তির জন্য, কনেকে সম্মানের চিহ্ন হিসাবে এবং তার স্বাধীনতার স্বীকৃতি হিসাবে। তবে, এটি ঐতিহ্যগত অর্থে একটি উপহার নয়, তবে প্রকৃতপক্ষে বাধ্যতামূলক এবং স্ত্রীর অধিকার হিসাবে এটি গ্রহণ করা হয়।


বিয়ের সময় নারীকে দেনমোহর দেয়াটা হযরত মোহাম্মদ (সা) নবুয়তের আগেও প্রদান করতেন। নবীজি (সা)কে যেসব নাস্তিকরা খারাপ মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করে তাদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে যদি নবীজি (সা) আসলেই খারাপ মানুষ হতেন তাহলে নারীদেরকে কেন দেনমোহর দিতে যাবেন? এতে কি টাকার অপচয় হয় না? অর্থাৎ নারীকে বিয়ে করতে হলে দেনমোহর দিতে হবে শুধু এখানেই না বরং স্ত্রীর সকল প্রয়োজন স্বামীকে পূর্ণ করতে হবে এসব কি পুরুষের জন্য কষ্টকর না? নবীজি (সা) আসলে ভালো ও মানবিক মানুষ ছিলেন এই কারণেই নারীদের জন্য সকল সুবিধা করে রেখে গিয়েছেন। 


ইবনে হিশাম (র) এর সিরাতুন নবী (সা), ১ খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


রাসূল (সা) খাদীজার এই প্রস্তাব স্বীয় চাচাদেরকে জানালেন। চাচা হামযা রাসূল (সা)-কে সাথে নিয়ে তৎক্ষণাৎ খাদীজার পিতা খুওয়ায়লিদের কাছে চলে গেলেন। তার সাথে দেখা করে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিলেন এবং অবিলম্বে বিয়ে সম্পন্ন হল।  ইবন হিশাম জানান, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম খাদীজাকে বিশটি তরুণ উট মােহরানা হিসাবে দিয়েছিলেন। খাদীজাই ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রথমা স্ত্রী এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি।


এরাবিক ডিকশনারি অনুযায়ীঃ দেন মোহর শব্দটি আরবি মুল শব্দ "আজর" থেকে এসেছে যার অর্থ হল হল শর্ত মোতাবেক কর্ম সম্পাদনের উপর অতিরিক্ত মূল্যপ্রাপ্তি বা পুরস্কার। ইংরেজিতে এটি খুব সহজেই এটি প্রকাশ করা যায় যা আমরা "এক্সট্রা বোনাস" বলে জানি। দেনমোহরকে খারাপ হিসেবে দেখানোর কোনো যুক্তি নেই। বিবাহ বন্ধন উপলক্ষে স্বামী বাধ্যতামূলক ভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা রুপা, বা সম্পত্তি আকারে সেই মাল প্রদান করেন তাকেই মোহর বলে। দেন মোহর স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য (৪)। বিয়েতে মোহর নির্ধারণের নিয়ম করা হয়েছে, যাতে স্বামী বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক খতির ঝুঁকিতে থাকে এবং এমন কোন প্রয়োজনে যখন তখন স্বামী যেন নারীর উপর অবিচার না করে। এ জন্য মোহর নির্ধারণের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা আছে। মোহর দ্বারা বিয়ে ও ব্যাভিচারের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায় (৫)। মোহর নারীর অধিকার, তা চাওয়া দোষের নয় । একটি প্রচলিত ভুল হল, নারীরা মোহর চাওয়া বা চেয়ে নেয়াকে দোষের মনে করে আর ভাবে যদি কেউ এমন করে তাহলে তার বদনাম হয় । মনে রাখা উচিৎ,নিজের অধিকার চাওয়া বা আদায় করা যখন শরিয়তের দৃষ্টিতে দোষের নয় তখন শুদু প্রথা প্রচলনের কারনে তা দোষের ভাবা গুনাহ মুক্ত নয় (৬)। 


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫১৪৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু ‘আওফ (রাঃ) কোন এক মহিলাকে বিয়ে করলেন এবং তাকে মাহ্‌র হিসাবে খেজুর দানার পরিমাণ স্বর্ণ দিলেন। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মুখে বিয়ের খুশির ছাপ দেখলেন তখন তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন; তখন সে বললঃ আমি এক নারীকে খেজুর আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে বিয়ে করেছি। ক্বাতাদাহ আনাস থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘আবদুর রহমান বিন ‘আওফ (রাঃ) খেজুরের দানা পরিমাণ স্বর্ণ মাহ্‌র হিসাবে দিয়ে কোন মহিলাকে বিয়ে করেন।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫১৫০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি বিয়ে কর একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হলেও।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩৮০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবাহে মাহর কী পরিমাণ ছিল? তিনি বললেন, তাঁর বিবিগণের মাহরের পরিমাণ ছিল বারো উকিয়্যাহ্ ও এক নাশ্। তিনি বললেন, তুমি কি জান এক নাশ্ এর পরিমাণ কতটুকু? আমি বললাম, ‘না’। তিনি বললেন, এক নাশ্ এর পরিমাণ হল আধা উকিয়্যাহ্। সুতরাং মোট হল পাঁচশত দিরহাম। এ ছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণীগণের মাহর।- ihadis.com


ধর্মহীনদের মুক্তচিন্তায় মা ছেলের সহবাসঃ


Khaskhobor.com অনলাইন পত্রিকায় “মা ও ছেলের মধ্যে যৌন সম্পর্ক, সঙ্গমের সময়ে ঢুকে পড়লেন স্ত্রী” শিরোনামে একটি খবর ২০২০/আগস্ট/২৮ তারিখে প্রকাশ করা হয়। সেই খবরে (৭) বর্ণিত হয়েছে,


একই ছাদের তলায় স্বামী ও স্ত্রীর বসবাস। কিন্তু দু’জনের মধ্যে নেই কোনও সম্পর্ক। স্বামীকে নিয়ে অনেকদিন থেকেই সন্দেহের বীজ দানা বেঁধেছিল লরি লাভোই-এর মনে। তৃতীয় কোনও মহিলার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হচ্ছেন স্বামী। কিন্তু এই তৃতীয় ব্যক্তি অন্য কেউ নন, স্বয়ং তাঁর স্বামী টনি লাভোই-এর মাএমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে বোস্টনে বসবাসকারী টনি লাভোই-এর পরিবারে। শাশুড়ি শেরিল লাভোইকে নিয়ে বহুদিন ধরেই সন্দেহ ছিল লোরির। কিন্তু কিছুতেই প্রমাণ করতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে যা দেখলেন তাতে হতচকিত হয়ে রয়ে গেলেন তিনি। 

বছর তেশট্টির শেরিল তাঁর ছেলে টনির সঙ্গে অনেকটাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন। এতটাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যে ছেলের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতে বাধ সাধেন না। এরকমই এক সঙ্গমের মূহুর্তেই হাতেনাতে ধরা পড়লেন ছেলে ও মালোরি লাভোই তাঁর বসার ঘরে ঢুকেই দেখেন শাশুড়ি নগ্ন অবস্থায় তাঁর স্বামীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত। আগে থেকেই সন্দেহ ছিল ঠিকই কিন্তু নিজের চোখে মা ও ছেলের এরকম কীর্তি দেখে কি করবেন বুঝতে পারেননি তিনি। 

স্বামী তাঁর নিজের মায়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে মত্ত, মেনে নিতে পারেননি লোরি। তারপরেই নিজের বোনকে ফোন করে সমস্ত ঘটনার কথা জানান তিনি। পুলিশ আধিকারিক কেডি ঘটনাস্থলে শীঘ্রই উপস্থিত হন। তারপরে লোরি ওই আধিকারিককে জানান, টোনি এবং তাঁর মা শেরিলকে সঙ্গমে লিপ্ত অবস্থায় তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন। ওই আধিকারিকও লোরিকে বেশ তাঁদের যৌন ক্রিয়া সম্পর্কে কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে টোনি তাঁর মায়ের সঙ্গে সঙ্গমের কথা স্বীকার করে নেনটোনি জানান, হঠাৎ করেই তাঁর মায়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। একদিন ভিডিও গেম খেলতে গিয়ে মা শেরিলের সঙ্গে টোনি চুম্বনে লিপ্ত হন। আর তারপর থেকেই এই সম্পর্কের শুরু। শেরিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সেও একই ঘটনার কথা জানায়। বর্তমানে ফিচবার্গ জেলা আদালতে এই মামলার শুনানি করা হবে বলে জানা গিয়েছে।


এই নারী হয়তো মুক্তচিন্তা বুঝতেন না। অথবা এটাও বুঝতেন না যে সম্মতিতে প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি সহবাস করে হতে পারে সেটা ভাই ভাই, বোন বোন এমনকি পরিবারের যে কেউই তাহলে তারা যৌনকর্ম করতে পারবে। এসব নাস্তিক্যধর্মে বৈধ।


“আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় ভাষা বিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ পরিস্কার বর্ণনা করেছে,


নৈতিকতা হওয়া উচিৎ সংকীর্ণ আমার কোন কাজ যেন অন্যের ক্ষতি না করে।এতটুকুই;

  

“ভালোবাসা কারে কয়, মানব মনের জৈববিজ্ঞানীও ভাবনা” লিখেছেন বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়। এই বইয়ের ২৭১ পৃষ্ঠায় গোল্ডেন রুলের কথা বর্ণিত হয়েছে এভাবেঃ


অন্যের প্রতি সেরকম ব্যাবহারই তুমি করো যা তুমি তাদের থেকে পেতে চাও।


অনেক নাস্তিকই হয়তো জানে না মুক্তচিন্তকের প্রকৃত অর্থ আসলে কি। তাদের বোঝার সুবিধার জন্য এখানে পরিস্কার প্রমাণ দিচ্ছি। ডিকশনারি (৮) থেকে ফ্রিথিংকার এর অর্থ জানা যায় এটি, 


a person who forms opinions on the basis of reason, independent of authority or tradition, especially a person whose religious opinions differ from established belief.


ভাবানুবাদঃ একজন ব্যক্তি যিনি যুক্তির ভিত্তিতে মতামত গঠন করেন, কর্তৃত্ব, ঐতিহ্য বা প্রথা থেকে মুক্ত, বিশেষত এমন একজন ব্যক্তি যার ধর্মীয় মতামত প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস থেকে আলাদা।


এই সংজ্ঞা নিয়ে বেশ কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। একজন কি নিজের জন্য নিজেই নৈতিকতা ঠিক করতে পারবে না? নাস্তিকদের নৈতিকতা কি নির্দিষ্ট নাকি নির্দিষ্ট নয়? একেকজনের যুক্তি একেক রকম সেখানে যুক্তির ভিন্নতার কারণে নাস্তিকদের নৈতিকতা ভিন্ন হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? নাস্তিকদের যদি ইসলাম ত্যাগের স্বাধীনতা থাকে তাহলে প্রচলিত নৈতিকতা ত্যাগের স্বাধীনতা কেন থাকবে না? নাস্তিকরা যদি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেই থাকে তাহলে মুসলিমদেরকে কেন নৈতিকতা নির্ধারণ করে চায়? মুসলিমদেরকে কেন ইসলাম ত্যাগ করা তে চায়? মুসলিমরা যাতে ইসলাম না মেনে নাস্তিকদের দেখানো পথে এটা কেন চায়? এতো এতো নৈতিক বিধান মুসলিমদের কাছে বর্ণনা করবার পরেও নাস্তিক্যবাদ কেন ধর্ম নয়?


ধর্মহীনদের বিশ্বাস তারা জন্ত জানোয়ারদের বংশধরঃ


প্রকৃত বস্তুবাদী ও ধর্মহীনরা এই কথা বলতে লজ্জা পায় না যে তারা জানোয়ার ছাড়া কিছু নয়। হাতে গোনা কিছু নাস্তিক সস্তা নাস্তিকরা এই কথা স্বীকার করতে লজ্জা পেতে পারে কিন্তু যারা বিশুদ্ধ বস্তুবাদী নাস্তিক তারা বুক উচু করে বলে যে তারা জন্তু জানোয়ার। প্রথমেই প্রমাণ দিচ্ছি যে তারা জানোয়ারদের নিকট আত্মীয়স্বজন।


নাস্তিক বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এর “দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ” বাংলা অনুবাদ করেছেন, কাজি মাহবুব হাসান, এই বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


এটা এখন সুস্পষ্ট সত্য যে আমরা শিপ্পাঞ্জিদের নিকটাত্মীয়, হয়তো বানরদের কিছুটা দূরের আত্মীয়, আর্ডভার্ক বা ম্যানিতিদের আরো খানিকটা দূরের আত্মীয়, আরো দূরের আত্মীয় কলা এবং শালগমদের…ক্রমশ যত ইচ্ছা দীর্ঘ করা যেতে পারে এই তালিকা।

 

এখানেই শেষ নয় আরও আছে।

 

“AMERICAN ATHEIST” নাস্তিকদের একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। সেখানে “Ethics Without Gods” শিরোনামে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল পাব্লিশ করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে (৯),


As human beings, we are social animals. Our sociality is the result of evolution, not choice. Natural selection has equipped us with nervous systems which are peculiarly sensitive to the emotional status of our fellows.


ভাবানুবাদঃ মানুষ হিসেবে আমরা সামাজিক জানোয়ার। আমাদের সামাজিকতা বিবর্তনের ফল, পছন্দ নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সজ্জিত করেছে যা আমাদের সহযোগীদের মানসিক অবস্থার প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।

 

শুধু কি তাই? “মুক্তমনা বাংলা ব্লগ” নামে নাস্তিকদের একটি সাইটে “দেখা যাচ্ছে নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নই” শিরোনামে একটি আর্টিকেল রয়েছে। সেখানে বর্ণিত হয়েছে (১০),


বানর” নামে ডাকা হলে আমরা অপমানিত হই, মন খারাপ করে এর প্রতিবাদ জানাই। অথচ, আমাদের যদি ডাকা হয় ইউথেরিয় স্তন্যপায়ী (mammal) কিংবা মেরুদণ্ডী (vertebrate) কর্ডেট, তাহলে কিন্তু আমরা অপমানিত বোধ করিনা। এমনকি আমরা যে ন্যাথান মাছ কিংবা অ্যামনিওট চতুষ্পদ (tetrapod) এই সত্য মেনে নিতেও আমাদের বেশিরভাগেরই কোন সমস্যা নেই। শুধু এক বানর নিয়েই আমাদের যতো সমস্যা। অথচ, আমরা যে নিছকই বানর বৈ কিছু নই এটা আমাদের জানা প্রায় তিনশো বছর ধরে। শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার (taxonomy) জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস প্রথম আমাদের অন্তর্ভুক্ত করেন প্রাইমেট ও এইপ এই শাখা (clade) দুটির, যাদের বাংলা আমি যথাক্রমে করবো বানর ও বনমানুষ।

 

“মুক্তমনা বাংলা ব্লগ” সাইটে “মানুষ কি বানর থেকে এসেছে?” শিরোনামে একটি আর্টিকেলেও এটা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে (১১),


মানুষ মাঙ্কি নয়। মাঙ্কি থেকে মানুষের বিবর্তনও হয়নি। কিন্তু প্রাইমেটকে বানরের শব্দার্থ হিসেবে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষও একধরনের প্রাইমেট বা বানর জাতীয় প্রানী বৈ কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে মাঙ্কি একটি অধিবর্গ বা প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ, আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্সে প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ শক্তভাবে এড়িয়ে চলা হয়। আমরা কোন মাঙ্কি অবশ্যই নই, তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা প্রাইমেট। আমাদের পাশাপাশি অবস্থিত একজোড়া চোখ, ত্রিমাত্রিক, রঙ্গীন, স্টেরিও দৃষ্টি, চোখের পেছনে বিশাল বড় একটা মাথা, আড়াই শত দিনের কাছাকাছি গর্ভকালীন সময়, বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পূর্বে একটা অস্বাভাবিক রকম বিশাল শৈশব, ল্যাটেরাল থেকে ক্রমান্বয়ে স্ক্যাপুলার ডোর্সাল অক্ষে পিছিয়ে যাওয়া (regression), পেন্ডুলার পিনেস এবং টেস্টস, অস্বাভাবিক বিকাশপ্রাপ্ত প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্স আমাদের বানায় বানরজাতীয় জীব বা প্রাইমেট, এটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি। মানুষ সহ সব বনমানুষই স্তন্যপায়ী প্রানীর অন্তর্গত প্রাইমেট বর্গে পড়েছে। এখন পর্যন্ত  প্রাইমেটদের দু'শরও বেশি প্রজাতির সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। মানুষকে এই প্রাইমেট বর্গের মধ্যে হোমিনিডি অধিগোত্রের  অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। 

 

ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে আক্ষরিক অর্থেই দুনিয়ার সবাই চতুষ্পদ জানোয়ার। পাঠক হাস্যকর কি কথা কি জানেন? নাস্তিকরা এখানে অমর্যাদার কিছু পাবে না। একবার চিন্তা করে দেখেন আপনার পিতামাতা, আপনার মা, আপনার ভাই, আপনার বোন, আপনার দাদা, আপনার নানা, আপনার নানি, আপনার খালা, আপনার ফুফু, আপনার স্ত্রী এরা সবাই নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে চতুষ্পদ জানোয়ার ছাড়া কিছুই নয়। নাস্তিকরা যেই নৈতিকতার সিস্টেমে বিশ্বাস করে সেই নৈতিকতা অনুযায়ী কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের মাকে দিয়ে, বোনকে দিয়ে বেশ্যাগিরি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবে। নাস্তিক্যধর্মে নারীরা এভাবে অর্থ উপার্জন করা বৈধ। কোনো পুরুষ নাস্তিক চাইলে নিজেই সেই পেশা গ্রহণ করে নিতে পারে। নিজের মা, নিজের বোন, নিজের স্ত্রীদের দেহ দিয়ে নাস্তিকরা বিজনেস করতে পারবে। এরপরেও নাকি নাস্তিকরাই সভ্য। এরপরেও নাকি নাস্তিকরাই বিজ্ঞানমনস্ক। এরপরেও নাকি নাস্তিকরাই সত্যবাদী। এরপরেও নাকি নাস্তিকরাই মানবিক। এরাই আবার আপত্তি করছে দেনমোহর দেয়া নিয়ে, এরাই আবার আপত্তি তুলছে ইসলামের বিরুদ্ধে কি হাস্যকর তাই না?


পতিতাবৃত্তি ইসলামে চরমভাবে নিষিদ্ধঃ


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২২৮২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 


আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুরের মূল্য, পতিতার উপার্জন ও গণকের পারিতোষিক নিষিদ্ধ করেছেন।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৪২৯৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 


রাফে‘ ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ পতিতাদের উপার্জন, কুকুরের মূল্য এবং সিঙ্গা লাগানোর পারিশ্রমিক অতি নিকৃষ্ট।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৪৬৬৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 


আবূ মাসউদ উকবা ইব্ন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুরের মূল্য, পতিতার রোজগার এবং গণকের পারিতোষিক নিষিদ্ধ করেছেন।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৩৪৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 


আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বরেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুরের মূল্য, গণকের পারিশ্রমিক এবং পতিতার উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।-ihadis.com


হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ৯৯৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 


আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদা (বনী ইসরাঈলের) এক ব্যক্তি এক রাতে অজান্তে এক চোরকে সাদকাহ করল। সকালে সে জানতে পারল যে সে চোর ছিল। কিন্তু তাতে সে আল্লাহর প্রশংসা করল। তারপরের রাতে আবার অজান্তে এক বেশ্যাকে সাদকাহ করল। সকাল বেলায় তা জানতে পেরে তার জন্যও আল-হামদু লিল্লাহ পড়ল। তৃতীয় রাতেও অজান্তে এক ধনীর হাতে সাদকাহ দিল। সকালে তা জানতে পেরে আল্লাহর প্রশংসা করল। অতঃপর (নবী অথবা স্বপ্নযোগে) তাকে বলা হল যে, তোমার সাদকাহ কবুল হয়ে গেছে। আর সম্ভবতঃ তোমার ঐ দান নিয়ে চোর চুরি করা হতে বিরত হবে, বেশ্যা বেশ্যাবৃত্তি হতে তাওবাহ করবে এবং ধনী উপদেশ গ্রহণ করে দান করতে শিখবে।-ihadis.com


এরকম প্রচুর আরও সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে ইসলামে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ। এরপরেও নাস্তিকরা এই মিথ্যাচার করবার সাহস কিভাবে পায় যে পতিতাবৃত্তির টাকা ও দেনমোহরের টাকা একইরকম? আমি তাফসীরে ইবনে কাসির সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে জালালাইন সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে আহসানুল বয়ান সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে আশরাফী সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে ইবনে আব্বাস সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে তাইজুল কুরআন সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে মারেফুল কুরআন সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে মাজহারী সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে ওসমানী সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে তাবারী সন্ধান করেছি, আমি তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ সন্ধান করেছি এরপরেও এই মর্মে কোনো ব্যাখ্যা অথবা তথ্য বর্ণিত পেলাম যে ইসলামের দৃষ্টিতে দেনমোহর এর টাকা ও পতিতাবৃত্তির টাকা একইরকম অথবা সাদৃশ্যপূর্ণ। ইসলাম যেই দৃষ্টিভঙ্গিই পোষণ করে না সেখানে ইসলামের দিকে চাপিয়ে দিয়ে ইসলামকে খারাপ প্রমাণ দেখানোর উদ্দেশ্য কি? নাস্তিকদের অন্যান্য দাবির মতো এটাও ডাহামিথ্যে ছাড়া কিছু নয় সেটা আবার প্রমাণ হয়ে গেলো। 


উপসংহারঃ  নাস্তিক, তাই ইসলামবিরোধীতা করতে হবে কথাটি সেই অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের কাছে মনে হলেও আপনি তো বুদ্ধিমান। আপনার তো মনুষ্য বিবেক আছে। আপনি যাচাই কেন করছেন না? করেন না কেন? নাস্তিকদের মতো কেন আপনি অন্ধবিশ্বাসী হবেন? নাস্তিকরা যে জেনে বুঝেই ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে মানুষকে ধোঁকা দেয় সেটা বুঝিয়ে বলার আর প্রয়োজন নেই। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই নাস্তিকান্ধগণ।


রেফারেন্সসমূহঃ


[১] তাফসির কুরতুবী, সুরা নুরের ২৯ নং আয়াতের তাফসির, “হাদিসে কি নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য বলা হয়েছে?” response-to-anti-islam.com


[২]  “হাদিসে কি নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য বলা হয়েছে?” response-to-anti-islam.com


[৩] Muslim marriage contract - Maher: https://www.courthouselibrary.ca/how-we-can-help/our-legal-knowledge-base/muslim-marriage-contract-maher#:~:text=Maher%20(alternately%20transliterated%20as%20mahr,as%20recognition%20of%20her%20independence.


[৪] ই:ফা,দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম,পৃষ্ঠাঃ৪০২,দেন মোহর অধ্যায়।


[৫] মুসলিম বর-কণে ইসলামী বিয়ে,আশরাফ আলী থানভি (রহ)অনুবাদঃআতাউর রহমান খসরু,পৃষ্ঠাঃ১৫০,এবং আল মাসালিহুল আকলিয়া, পৃষ্ঠাঃ ২১০ দেখুন।


[৬] মুসলিম বর-কণে ইসলামী বিয়ে,আশরাফ আলী থানভি (রহ)অনুবাদঃআতাউর রহমান খসরু, পৃষ্ঠাঃ১৫৯।


[৭] “মা ও ছেলের মধ্যে যৌন সম্পর্ক, সঙ্গমের সময়ে ঢুকে পড়লেন স্ত্রীঃ

https://www.khaskhobor.com/world/wife-caught-her-mother-in-law-and-husband-in-intimate-situation/?fbclid=IwAR0T0GwiDywfIuSWZKFjIWipvPz1hiZnEapaz96V3r-HmKkYJ3sKmUJUlIY


[৮] Freethinker:

https://www.dictionary.com/browse/freethinking?fbclid=IwAR0gkr73WjtmkC6XVwfDriIQ0suwOuTx7JdFQxtyN6c7TzAGUupRN9hMUnM


[৯] Ethics Without Gods:

https://www.atheists.org/activism/resources/ethics-without-gods/

 

[১০] দেখা যাচ্ছে নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নইঃ

https://blog.muktomona.com/2010/07/02/7568/

 

[১১] মানুষ কি বানর থেকে এসেছে?

https://mm-gold.azureedge.net/evolution/QA/human_monkey_evolution.html



অতিরিক্তঃ


লাল অংশটি নাস্তিকরা হাইলাইট করে দেখায়। আমি সবুজ অংশটি আপনাদেরকে দাগ দিয়ে দেখালাম যে নাস্তিকরা পুরো তথ্য সঠিকভাবে আপনাদেরকে জানতে দিতে চায় না।






এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post