অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না?


বিষয়ঃ অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

==============================

নাস্তিকিস্টদের মিথ্যা অভিযোগঃ নিচের আয়াত গুলো প্রমাণ যে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না। তাই ইসলাম অমানবিক।

*সুরা মায়েদা ৫:৫১ = হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। (১)

*সুরা ইমরান ৩:২৮ = মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। (২)

*সুরা নিসা ৪:৮৯ = তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।(৩)

*সুরা নিসা ৪:১৩৯ = যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।(৪)

*সুরা নিসা ৪:১৪৪ = হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে? (৫)

*সুরা মুমতাহিনা ৬০:১৩ = মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে। (৬)

সঠিক যৌক্তিক উত্তরঃ আয়াতের প্রেক্ষাপটকে ধামাচাপা দিয়ে মূল ভাবার্থকে লুকিয়ে ফেলে শুধুমাত্র আয়াত দেখিয়ে এটা দাবি করা কিভাবে যৌক্তিক হতে পারে যে ইসলাম অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছে? নাস্তিকরা সততার সাথে কুরআনের আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা না দেখালেও কিভাবে আয়াত নিয়ে মুক্তমনে মিথ্যাচার করতে হয় এটা খুব ভালো বোঝে। যৌক্তিক কথা হচ্ছে সবার সাথে আসলে বন্ধুত্ব হয় না। যেমন,যারা সমাজের ক্ষতি চায় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? যারা আপনার পরিবার নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? যারা আপনাকে অপমান করে, আপনার দেশ নিয়ে অপমান করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? যারা আপনার খুশিতে কষ্ট পায় আর আপনার কষ্টে আনন্দিত হয় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? আপনি কি ধর্ষকদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? যারা দেশের আইন মানে না আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? যারা চোর, ডাকাত , লুইচ্চা আপনি কি এদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? যারা আপনাকে ওয়াদা দিয়ে কথা রাখে না আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবেন? যারা সর্বদা মিথ্যা কথা বলে,মানুষকে ধোঁকা দেয় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন?

কুরআন নিয়ে যারা মিথ্যাকথা বলে আমি কেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবো? হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গিকে যেভাবে নাস্তিকরা পরিবর্তন করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে আমি কেন নাস্তিকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে যাবো? হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে যারা বানিয়ে বানিয়ে ডাহামিথ্যে কথা প্রচার করছে এমন মুক্তমনাদেরকে আমি কিভাবে বন্ধু বানাবো? যাদের সাথে সত্যের সম্পর্ক নাই এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করলে তারা যে আমার ক্ষতি করবে না এটার গ্যারান্টি কি? এদের সাথে বন্ধুত্ব করার তো প্রশ্নই আসে না বরং এদের মিথ্যাচার গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারলেই মানবতার সাথে বন্ধুত্ব হবে বলে আমি মনে করি। এখন আপনি নিজেই চিন্তা করুন আপনি মানবতার সাথে বন্ধুত্ব করবেন নাকি নাস্তিকদের মতো মিথ্যুক প্রাণীদের সাথে? যাই হউক,আমার পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন নিজেরাই টের পেয়ে যাবেন। প্রথমে আমি উপরে বর্ণিত আয়াতের আসল উদ্দেশ্য দেখাবো এতেই নাস্তিকদের অভিযোগ যে মিথ্যা সেটা প্রকাশিত হয়ে যাবে।

সুরা মায়েদা ৫:৫১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,(১)

হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় (সুরা মায়েদা ৫:৫১) ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত,  তাফসীরে ইবনে কাসির, ৪ খণ্ড, ৮৫১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

এখানে আল্লাহ্‌ ইসলামের শত্রু ইহুদী ও খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন তারা কখনো তোমাদের বন্ধু হতে পারে না। কেননা তোমাদের ধর্মের প্রতি তাদের হিংসা ও শত্রুতা রয়েছে।হ্যাঁ,তারা নিজেরা একে অপরের বন্ধু বটে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।

তাফসীরে জালালাইন,২ খণ্ড,১৪৯ ও ১৫০ পৃষ্ঠায় সুরা মায়েদা ৫:৫১ আয়াতের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে যে,

তাফসীরবিদ ইবনে জারীর (র) হযরত ইকরিমা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, এ আয়াতটি একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে। ঘটনাটি এই যে, রাসুল (সা) মদিনায় আগমনের পর পার্শ্ববর্তী ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাথে এ মর্মে একটি চুক্তি সাক্ষর করেন যে, তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিজেরা যুদ্ধ করবে না; বরং মুসলমানদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করবে। এমনকি মুসলমানরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না এবং কোনো বহিরাক্রমণকারীর সাহায্য করবে না, বরং আক্রমণকারীকে প্রতিহত করবে। কিছুদিন পর্যন্ত এ চুক্তি উভয় পক্ষেই বলবৎ থাকে, কিন্তু ইহুদীরা স্বভাবগত কুটিলতা ও ইসলাম বিদ্বেষের কারণে বেশি দিন এ চুক্তি মেনে চলতে পারলো না এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে মক্কার মুশরিকদের সাথে ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে স্বীয় দুর্গে আহ্বান জানিয়ে পত্র লিখল। রাসুল (সা) এ ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে একটি মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করলেন। বনী কুরাইজা এসব ইহুদী একদিকে মুশরিকদের সাথে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং অপরদিকে মুসলমানদের দলে অনুপ্রবেশ করে অনেক মুসলমানের সাথে বন্ধুত্বের চুক্তি সম্পাদন করে রেখেছিল। এভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের জন্য গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত ছিল। এ কারণে আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং মুসলমানদেরকে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপন করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়, যাতে শত্রুতা মুসলমানদের বিশেষ সংবাদ গ্রহণ করতে না পারে।

এতো বিশাল প্রেক্ষাপটকে নাস্তিকরা লুকিয়ে রেখে মানুষকে বুঝাচ্ছে যে ইসলাম অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করে তাই ইসলাম ভালো না। এমন সরাসরি মিথ্যাচার করার উদ্দেশ্য কি? নাস্তিকদের মতো এমন মিথ্যাকথা কি গরু ছাগল শুয়োরদের বলতে শুনেছেন কখনো? এটা একেবারেই সহজ কথা যে আপনার সাথে যারা দুশমনগিরি করবে আপনি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে চাইবেন না। একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। ধরুন আপনার বাবা সমাজের ভালো মানুষ। সে গরীবদের দান করে, সত্য কথা বলে, বড়দের সম্মান করে ছোটদের স্নেহ করে ইত্যাদি। সমাজের মানুষ আপনার বাবার কথা মান্যগণ্য করে এখন এটা দেখে সমাজের এক প্রকার মুক্তমনা লোকরা হিংসা করে আপনার বাবার বিরুদ্ধে অপবাদ এমনকি নোংরা নোংরা কথা বানিয়ে মিথ্যারের আশ্রয় নিয়ে মানুষের সামনে আপনার বাবাকে খারাপ প্রমাণ করার পয়তারা করে। এই ক্ষেত্রে আপনি কি চাইবেন আপনার বাবার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যাচার করছে অথবা দুশমনের সম্পর্ক রাখছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে? আপনি যদি স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করতে পারেন তাহলে যে কেউই বুঝবে যে কোনো সন্তানই তার বাবার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যাচার করে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিবে না। তেমনি উপরে আয়াতে যেসব ইহুদী খ্রিস্টানদের কথা বলা হয়েছে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে হিংসা এমনকি ইসলামকে ধ্বংসের পয়তারা করতো তাই এই টাইপের ইহুদী খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করা ইসলামে নিষেধ। এমন যৌক্তিক কথা কিভাবে অযৌক্তিক হতে পারে?

তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়ায় (সুরা মায়েদা ৫:৫১) আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা শানকীতি (রহ) থেকে বর্ণিত আছে যে,

বিভিন্ন আয়াত থেকে এটাই বুঝা যায় যে, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি ঐ সময়ই হবে, যখন ব্যক্তির সেখানে ইচ্ছা বা এখতিয়ার থাকবে। কিন্তু যখন ভয়-ভীতি বা সমস্যা থাকবে, তখন তাদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কস্থাপনের অনুমতি ইসলাম শর্তসাপেক্ষে দিয়েছে। তা হচ্ছে, যতটুকু করলে তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও আন্তরিক বন্ধুত্ব থাকতে পারবে না।-আদওয়াউল বায়ান। 

এরপরে যেই আয়াত আসে, সুরা ইমরান ৩:২৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,(২)

মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।

 এই আয়াতের মর্মার্থ বোঝার জন্য সুরা ইমরান ৩:১১৮ আয়াতটি দেখা যাক, যেখানে বর্ণিত হয়েছে,

হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।

কেউ যদি আপনার ক্ষতিতে আনন্দ পায় তাহলে আপনি এই ধরণের লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না এটাই স্বাভাবিক। কোনো নেতা যদি বলে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে এবং আমাদের দেশের জনগণ কষ্টে থাকুক এটা চায় সেই লোকদের সাথে কখনো বন্ধুত্ব করা যাবে না। এখানে এই দেশপ্রেমিক নেতার কথা কি অযৌক্তিক? নাস্তিকদের কাছে অযৌক্তিক লাগতে পারে কিন্তু আপনার সুস্থচিন্তা কি বলে?

সুরা ইমরান ৩:১১৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন।

সুরা ইমরান ৩:১২০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।

আমি যেই আয়াত গুলো দেখালাম অর্থাৎ যেখানে পুরো কারণ সহ বলা আছে সেই আয়াত গুলো নাস্তিকরা দেখিয়েছে? সেই আয়াত গুলো কি তুলে ধরেছে? উত্তর হচ্ছে না। কেন? কারণ অন্য আয়াত গুলো দেখালে নাস্তিকরা মিথ্যাচার করার সুযোগ পাবে না এই কারণে। বোঝা গেছে মুক্তমনে মিথ্যাচার করার নাস্তিক্য কৌশল যেমন হয়? প্রমাণ পেলেন তো? যারা আপনার ক্ষতি করতে চায়, আপনার বিপদের সময় খুশি হয়, আপনার বিরুদ্ধে প্রতারণা করার পয়তারা করে এমন লোকদের সাথে আপনি বন্ধুত্ব করবেন কি? এমন লোকদের আপনি মানবতাবাদী বলে ঘোষণা দেবেন? এমন লোকরা সততাময়?

এরপরে যে আয়াত আছে,সুরা নিসা ৪:৮৯ আয়াত থেকে বর্ণিত, (৩)

তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।

তাফসীরে জালালাইন,৫ খণ্ড,৮৬০ পৃষ্ঠায় (সুরা নিসা ৪:৮৯) আয়াতের বিস্তারিত প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে,

আয়াতটি তাদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছে যারা মক্কায় নিজেদেরকে মুসলমান বলে প্রকাশ করেছিল। অথচ তারা গোপনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সহায়তা করতো। তাদের সম্বন্ধে মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ হয়ে গেলো। একদল বলে তারা মুসলমান আর অপর দল বলে তারা কাফের মুশরিক। ফলে তাদের এ বিরোধ মীমাংসার উদ্দেশ্যে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে।- এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রা) ও কাতাদা (রা) এর উক্তি। ……আয়াতটি নাজিল হয়েছে ঐ সব লোকদের সম্পর্কে, যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং মুসলমানদের সম্পদ লুণ্ঠন করে ইয়ামামার দিকে পালায়ন করেছিল। অতঃপর তাদের সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ দেখে দিলে আলোচ্য আয়াতটি নাজিল হয়। এটা হচ্ছে ইকরামার উক্তি।

তাছাড়া আয়াতটি পড়লে এটা বুঝা যায় যে কাফেররা যেহেতু চায় মুসলিমরা তাদের মতো হয়ে যাক এই কারণে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে আর বাকি কারণ গুলো তো অন্য আয়াত দেখে দেখালামই। সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলছি। নাস্তিকরা চায় মুসলিমরা যাতে তাদের মতো হয়ে যাক, এখন খেয়াল করুন কোনো মুসলিম যদি নাস্তিকদের মতো হয়ে যায় তাহলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে তার পূর্বপুরুষ চতুষ্পদ জানোয়ার ছিল,দুনিয়ার সব মানুষ এককোষী ব্যাকটেরিয়া এভাবে গরু ছাগল, শুয়োর, কুকুর, বান্দর ,শিপ্পাঞ্জি থেকে এরপরে মানুষরা হয়েছে আধুনিক জানোয়ার, তাকে বিশ্বাস করতে হবে কোনো নাস্তিক চাইলে নিজের মায়ের সাথে সম্মতিতে সেক্স করতে পারবে,নাস্তিক চাইলে সম্মতিতে নিজের পিতার সাথে, দাদার সাথে, নানার সাথে সমকামীতার চর্চা করতে পারবে। কোনো নাস্তিক পিতা চাইলে নিজের মেয়ের সাথে সম্মতিতে সেক্স করতে পারবে। আরও বিশ্বাস করতে হবে নৈতিকতা আকাশ থেকে আসে না বরং মানুষরাই নৈতিকতার উৎস তাহলে নাস্তিক চাইলে ব্যক্তিগত ইচ্ছায় সুদ খেতে পারবে, ঘুষ খেতে পারবে, এমনকি মুক্তচিন্তায় কাউকে ধর্ষণ করতে পারবে, নিজের স্বার্থের জন্য চুরি করতে পারবে। এখন আপনি নিজেই বলুন কোনো যুক্তিবাদী মানুষ, চিন্তাশীল মানুষ এমন নাস্তিক্যধর্ম কেন বিশ্বাস করতে চাইবে? এরচেয়ে বরং প্রাচীন কালের নিজের দাসীকে ভালোবেসে তার সাথে সহবাস করা অনেক ভালো, নিজের একাধিক স্ত্রীর সাথে সুবিচার করা, স্ত্রীদের ভালোবাসা হাজার গুনে ভালো। নাস্তিক্যবাদ আসলে যুক্তির উপর নয় বরং মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।

সুরা নিসা ৪:৯০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এভাবে আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে এবং স্বজাতির সাথেও যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদেরকে প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতঃপর যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদের কে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ দেননি। 

এই আয়াতে সরাসরি বলে দিচ্ছে যারা চুক্তি করতে চায় এবং যুদ্ধ করতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। এটাও পরিস্কার বুঝা যায় যে তাদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ অথবা মানবিক আচরণ করা যাবে। নাস্তিকরা এই আয়াতটিও কিন্তু না দেখিয়ে অভিযোগ করে নিজেদের মিথ্যা প্রমাণিত করে ফেলে। যারা শান্তিপূর্ণ আচরণ চায় তাদের সাথে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ আচরণ করা ইসলামের আইন। কিন্তু যারা যুদ্ধ করতে চায়, অশান্তি সৃষ্টি করেত চায় তাদেরকে শাস্তি দেবার জন্য কঠোর আইন গ্রহণ করাই যৌক্তিক নয়? অবশ্যই যৌক্তিক।

সুরা নিসা ৪ঃ৯১ আয়াতে থেকে বর্ণিত,

এখন তুমি আরও এক সম্প্রদায়কে পাবে। তারা তোমাদের কাছেও স্বজাতির কাছেও এবং নির্বিঘ্ন হয়ে থাকতে চায়। যখন তাদেরকে ফ্যাসাদের প্রতি মনোনিবেশ করানো হয়, তখন তারা তাতে নিপতিত হয়, অতএব তারা যদি তোমাদের থেকে নিবৃত্ত না হয়, তোমাদের সাথে সন্ধি না রাখে এবং স্বীয় হস্তসমূহকে বিরত না রাখে, তবে তোমরা তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে প্রকাশ্য যুক্তি-প্রমাণ দান করেছি। 

নাস্তিকরা আসলে মানুষের মতো এখনো চিন্তা করতে শেখেনি যার ফলে এসব সহজ কথাবার্তা এদের মস্তিস্কে ধারণ করতে পারে না। নাস্তিক প্রাণীদের পরিপূর্ণ মানুষে বিবর্তিত হতে আর কয় হাজার কোটি বছর লাগবে? কুরআনের সহজ কথা গুলো নাস্তিকরা ইচ্ছা করেই কেন বুঝতে চায় না? নাস্তিকরা কেন চিন্তা করতে পারছে না? নাস্তিকরা কি যুক্তি বোঝে না? নাস্তিকরা কেন সত্য গ্রহণ করতে চাচ্ছে না?

সুরা নিসা ৪:১৩৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,(৪)

যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।

ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসির, ৪ খণ্ড, ৫৯৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত আলী (রা) এই আয়াত পাঠ করে ধর্মত্যাগীদের বলতেন তওবা করে নেও?এরপরে আল্লাহ্‌ বলেন এই মুনাফিকদের অবস্থা এই যে শেষে তাদের অন্তরে মোহর লেগে যায়।তাই তারা মুমিনদের ছেড়ে কাফেরদের বন্ধু রুপে গ্রহণ করে।এই দিকে বাহ্যত মুমিনদের সাথে মিলামিশা করে ঐ দিকে কাফেরদের সাথে বসে মুমিনদের নিয়ে উপহাস মূলক কথা বলে বেশ আনন্দ উপভোগ করে।তাদেরকে বলে আমরা মুসলমানদের বোকা বানিয়ে দিয়েছি।আসলে আমরা তোমাদেরই সঙ্গী।

সেই সব লোকদের সাথেও বন্ধুত্ব করা নিষেধ যারা মুনাফিক অর্থাৎ মুসলিমদের সাথে যখন আসে তখন বলে মুসলিমদের সাথে আছি যখন কাফেরদের সাথে থাকে তখন বলে কাফেরদের সাথে আছি এমনকি কাফেরদের কাছে মুসলিমদের নিয়ে তামাশা করে আনন্দ উপভোগ করে বলে এরা নাকি মুসলিমদের বোকা বানিয়েছে। এই টাইপের ধাপ্পাবাজ কাফেরদের সাথে নাস্তিকরা বন্ধুত্ব করলেও আমি করবো না। উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলি। যারা রাজাকার তারা কিন্তু পাকিস্তানিদের সাথে মিলেমিশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করতো এই রাজাকাররা কিন্তু বাংলাদেশেই জন্মগ্রহণ করেছিল কিন্তু এরপরেও এরা পাকিস্তানিদের সাথে মিলেমিশে নিজে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এই ক্ষেত্রে কোনো বাংলাদেশি দেশপ্রেমিক যদি বলে রাজাকারদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না যারা পাকিস্তানিদের গিয়ে বলে আমরা আমাদের দেশের মানুষদের বোকা বানিয়েছি, এদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড- দেশপ্রেমিকের এই ঘোষণা কি অযৌক্তিক? উত্তর হচ্ছে না। নাস্তিকরা যদি বলে রাজাকাররাও মানুষ এদের মুক্তচিন্তা করার স্বাধীনতা আছে, আছে নিজের দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার স্বাধীনতা এদের রয়েছে সুতরাং মৃত্যুদণ্ডদের শাস্তি দেয়া অমানবিক? এরকম দেশদ্রোহী বেইমান নাস্তিকদের কি বলবেন আপনি? রাজাকারদের সাথে একত্রে এমন বেইমান নাস্তিকদেরও একই শাস্তি দেয়া উচিৎ নয়? তেমনি যারা মুনাফিক অর্থাৎ মুসলিমদের সাথে থেকেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতো, মুসলিমদের ক্ষতি করতে চাইতো এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করা ইসলামে নিষেধ এমনকি এমন মুরতাদদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যেমনি ভাবে মুক্তমনা রাজাকারদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যারা বলে মুরতাদদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অমানবিক এরা কি রাজাকারদের শাস্তির বিরুদ্ধে?

এরপরে যে আয়াত রয়েছে, সুরা নিসা ৪:১৪৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, (৫)

হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে?

ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত (সুরা নিসা ৪:১৪৪) আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসিরের, ৪ খণ্ড , ৬০৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ

কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে, তাদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা রাখতে, তাদের সাথে সর্বদা উঠাবসা করতে, মুসলিমদের গুপ্ত কথা তাদের নিকট প্রকাশ করতে, তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখতে আল্লাহ্‌ মুসলিমদের নিষেধ করেছেন।

যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের সাথে মুসলিমরা কেন বন্ধুত্ব করবে বলুন? উদাহরণ স্বরূপ আপনার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে যেমন আপনি সেই লোকদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইবেন না ঠিক তেমনি কোনো মুসলিম তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখবে না যারা ইসলামের বিরুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তাছাড়া তাফসীরে জালালাইন ১ খণ্ড, ৯১৯ পৃষ্ঠায় (সুরা নিসা ৪:১৪৪) আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,

অর্থাৎ এসব মুনাফিক তো সেই লোক, যারা হামেশা তোমাদের সাথে থাকে তোমরা জয়ী হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সাথী নই? গনিমতের মালে আমাদেরও শরিক রাখ, আবার রণক্ষেত্রে কাফেরদের নসীবে কিছু ঘটলে অর্থাৎ তারা জয়ী হলে তাদের কাছে গিয়ে বলে, আমরা কি তোমাদের ঘিরে রেখেছিলাম না? আমরা তোমাদের হেফাজত করিনি? আমরা মুসলিমগনের আঘাত হতে তোমাদের রক্ষা করিনি? কাজেই লুণ্ঠিত দ্রব্যে আমাদেরকেও অংশ দেও।

এমন ধান্দাবাজ ইতর লোকদের সাথে কে চাইবে বন্ধুত্ব করতে? তাহলে ইসলামে যে বিধান দিয়েছে এসব প্রতারক,ধোঁকাবাজদের সাথে বন্ধুত্ব মুসলিমরা করবে না এটা কিভাবে অযৌক্তিক হতে পারে? কিভাবে অনৈতিক হতে পারে? নাস্তিকরা কিভাবে তথ্য লুকিয়ে জালিয়াতি করে প্রমাণ পাচ্ছেন তো?

এরপরে যে আয়াত রয়েছে অর্থাৎ সুরা মুমতাহিনা ৬০:১৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,(৬)

মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে।

এক্কেবারে সঠিক কথাই কুরআনে বলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে কুরআনে যা বলা আছে সমস্ত কিছুই সত্য। আল্লাহ্‌ যে জাতির প্রতি অখুশি আমরা তাঁর বান্দা হয়ে কেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব করব? সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করছি। ধরুন কোনো এক দেশের প্রধান ঘোষণা দিল আমি মায়ানমারের সরকারের প্রতি অখুশি কোনো মানবতাবাদী যেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব না করে কারণ তারা অন্যায়ভাবে মুসলিমদের হত্যা করেছেন।- আচ্ছা এখানে কি আমরা মায়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে ভুল করেছি? উত্তর হচ্ছে না। তেমনি কুরানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌কে যারা অস্বীকার করে আবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে, মুসলিমদের হত্যা করতে চায়, চেয়েছে এমনকি করেছেও তাদের সাথেও আমরা কখনো বন্ধুত্ব করবো না। এছাড়া তাফসীরে জালালাইন,৬ খণ্ড,৫০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কিছু সংখ্যক গরিব ইমানদারগণ জীবিকা নির্বাহের আশা ভরসায় ইহুদীগণের সাথে গভীর যোগাযোগ রাখতেন, এমনকি মুসলমানদের কিছু খোঁজ-খবর ইহুদীগণকে পৌঁছে দিতেন। তাদের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’লা উক্ত আয়াত নাজিল করেন।-[আশরাফী]

এই তাফসীরে জালালাইন ৬ খণ্ডের ৫০৪ পৃষ্ঠাতে বিভিন্ন মুফাসসিরগণের এর মতামত পেশ করে এক স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে,

আবার অনেকেই আয়াতকে সাধারণ নির্দেশ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। সুতরাং আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য সকল ইসলাম বিরোধী শক্তিসমুহ হবে। এটাই অতি উত্তম ব্যাখ্যা বলে বিবেচিত হয়। কারণ যখন যারাই মুসলম্যান তথা ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কিভাবে করা যাবে।

কুরআনের এই আয়াত গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন যেগুলো নাস্তিকরা আপনাকে পড়তে দিতে চাইবে না অথবা মিথ্যা অভিযোগ করার সময় লুকিয়ে রেখে দেবে। তাই আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

সুরা মায়েদা ৫:৫৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও।

সুরা আন’য়াম ৬:৭০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

তাদেরকে পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। কোরআন দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দিন, যাতে কেউ স্বীয় কর্মে এমন ভাবে গ্রেফতার না হয়ে যায় যে, আল্লাহ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী নেই এবং যদি তারা জগতের বিনিময়ও প্রদান কবে, তবু তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। একাই স্বীয় কর্মে জড়িত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে-কুফরের কারণে।

যারা ইসলাম নিয়ে হাঁসি তামাশা করবে ঠাট্টা উপহাস করবে এদের সাথে তো বন্ধুত্ব করা যাবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আপনাকে নিয়ে, আপনার বাবা মাকে নিয়ে, আপনার দেশ নিয়ে যদি কেউ অন্যায় ভাবে হাঁসাহাঁসি করে, তামাশা করে, অপমান করে,ষড়যন্ত্র করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? আপনি যেমন বন্ধুত্ব করবেন না তেমনি যেসব অমুসলিমরা ইসলাম নিয়ে তামাশা করবে, হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বলবে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে,মুসলিমদেরকে হত্যা করতে চাইবে- কোনো মুসলিম কখনোই এরকম উগ্রবাদী অমুসলিম বা নাস্তিকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না আর করবেও না। করা উচিৎও না।

স্বাভাবিক অবস্থায় বা ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকলে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা ইসলামে বৈধঃ

ইসলামকে ঘৃণাকারী নাস্তিকিস্টরা যারা বলে ইসলাম অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেয় না তাই ইসলাম অমানবিক- এই দাবি যে ডাহামিথ্যে এটা নিয়ে তো সংশয় নেই। সংশয় হচ্ছে নাস্তিকরা কেন মানুষের মতো এখনো সুস্থভাবে চিন্তা করতে পারছে না? নাস্তিকরা বার বার কুরআন নিয়ে হাদিস নিয়ে তাফসীর নিয়ে কেন মুক্তমনে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে? পাঠক এখন আপনাদেরকে আমি এমন আরও তথ্য দেখাবো যা দেখলে আপনারা পরিস্কার ধারণা পাবেন অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করো না আয়াত গুলো আসলে কোন প্রেক্ষাপটে। নিচে দেয়া তথ্য গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে গোশত উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।-ihadis.com

কি বুঝলেন? ইহুদীকে প্রতিবেশী বলা হয়েছে এমনকি ইসলামে প্রতিবেশীদের কতো গুরুত্ব সেটা কি বুঝতে পারেন নাই? ইসলাম যদি অমুসলিমদের সাথে সর্ব অবস্থায় বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করতো তাহলে এখানে ইহুদী প্রতিবেশীদেরকে খাবার উপহার দেয়ার কথা আসে কিভাবে? “আমাদের ইহুদী প্রতিবেশী” কথায় আন্তরিকতা প্রকাশ পায় নাই? কারো সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীদের গোশত উপহার কেন দিলে না- কথাটি কেন আসবে? নাস্তিকরা যে বলে ইসলামে ইহুদী বিদ্বেষ আছে - এই একটি হাদিস কি নাস্তিকদের অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য যথেষ্ট না? নাস্তিকরা যে ডাহা মিথ্যুক এটা প্রমাণিত হয়ে গেলো না?

নবী মোহাম্মদ (সা) ইহুদীদের থেকে খাবার কিনেছিলেন এমনকি নিজের বর্ম বন্ধক পর্যন্ত রেখেছিলেন প্রশ্ন হচ্ছে উনি যদি ইহুদীদের ঘৃণা করতেন তাহলে কেন তাদের থেকে খাবার কিনতে যাবেন? অথবা নিজের বর্ম বন্দক রাখবেন? উনি তো এটা বলতে পারতেন যে ইহুদী মানেই খারাপ তাই তাদের থেকে খাবার এবং নিজের বর্ম বন্ধক রাখা নিষেধ?

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৫১৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ইয়াহুদী হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।-ihadis.com

নবী মোহাম্মদ (সা) মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার উপদেশ দিয়েছেন। এখানে অমুসলিমরাও গণ্য কারণ হাদিসে নির্দিষ্ট করে কাউকে মেনশন করে বলা হয় নাই। হাদিসটি পড়ুন।

সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।-ihadis.com

কুরআনে সরাসরি কি বলা হয়েছে পড়ুন নিজেরাই বুঝে নিন। সততার সাথে কুরআনের আয়াত অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। যে কোনো স্বাভাবিক সুস্থ মনের মানুষ কুরআনের এই আয়াত পড়ে বুঝে যাবে এখানে আসলে যা বলা হয়েছে অথচ নাস্তিক নামক প্রাণীরা এই আয়াত গুলো অনুধাবন করতে পারে না।

সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।

সুরা মুমতাহিনা ৬০:৯ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।

আমি বিস্তারিত না লিখে এই দুটো আয়াত দিয়েই নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগের জবাব শেষ করতে পারতাম কিন্তু বিস্তারিত এই কারণে লিখেছি যাতে চিন্তাশীল যৌক্তিক মানুষরা এটা বুঝতে পারে নাস্তিকরা নিজেরা বানিয়ে বানিয়ে কিভাবে কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করে মানুষকে ইসলাম বিষয় মিথ্যা বোঝায়।

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তফা (সা)” ৩ খণ্ড,৩০৬ পৃষ্ঠায় চমৎকার একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

হযরত উমর (রা) বলেন সাফিয়ার এক দাসী হযরত উমর (রা) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলো যে, হযরত সাফিয়া ইহুদী সংস্কৃতি অনুকরনে শনিবারকে গুরুত্ব দেন এবং ইহুদীদের সাথে ভাল আচরণ করেন ।হযরত উমর (রা) , হযরত সাফিয়া (রা) থেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন। হযরত সাফিয়া (রা) জবাবে জানালেন! যখন আল্লাহ্‌ তা'লা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দান করেছেন তখন থেকে আমি শনিবারকে আর পছন্দ করি না। অন্যদিকে আমার কিছু ইহুদী আত্মীয় আছে । আমি তাদের আত্মীয়তার হক অনুযায়ী ভাল আচরণ করি ।তিনি হযরত উমর (রা) কে এই জবাব জানিয়ে পাঠালেন অন্যদিকে সেই বাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে আমার বিরুদ্ধে এই কাজে কে উস্কে দিয়েছে? সে সত্যি সত্যি জবাব দিল শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে। হযরত সাফিয়া (রা) বললেন ঠিক আছে। আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম।- আল ইসাবা,৪/৩৪৭

খেয়াল করেছেন এক দাসী হযরত ওমর (রা) সাথে সাফিয়া (রা) এর দন্দ লাগাতে চেয়েছিল কিন্তু এরপরেও সেই দাসীকে নির্যাতন করা তো দূরে থাক বরং মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। হ্যাঁ এটাই ইসলামের আদর্শ। অথচ নাস্তিকরা মিথ্যা কথা বলে যে ইসলাম নাকি দাসীদের সাথে জবরদস্তি, নির্যাতন করতে শিক্ষা দেয়। তাছাড়া হযরত সাফিয়া (রা) ইহুদীদের সাথে ভালো আচরণ করতেন এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখতেন। যদি ইসলামে এসব নিষেধ হতো তাহলে উনি এটা কখনো করতেন না। ইসলামে যদি দাসী নির্যাতনের বিধান থাকতো তাহলে হযরত সাফিয়া (রা) কেন সেই দাসীকে নির্যাতন করলেন না? কেন হযরত ওমর (রা) বললেন না যে সেই দাসীকে অত্যাচার করা হবে নির্যাতন করা হবে?

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৩৩০, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আসমা বিন্‌তে আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা ইসলাম অপছন্দ করা অবস্থায় আমার সম্পদের লোভ রেখে আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।’’-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৯৭৮, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আবূ বাক্‌র (রাঃ) -এর কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হাঁ। ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের ক’রে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।” (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৯৭৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।-ihadis.com

ইসলামে অমুসলিমদেরকে যদি ঘৃণা করার আদেশ দিতো তাহলে তো এখানে নবী মোহাম্মদ (সা) অমুসলিম মায়ের সাথে ভালো ব্যাবহার করতে আদেশ দিলেন কেন? যদি সব অবস্থায় অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা ইসলামে নিষেধ থাকতো তাহলে নবীজি (সা) অমুসলিম মায়ের সাথে ভালো ব্যাবহার করতে কেন বললেন? কোনো মুসলিম যদি তার অমুসলিম মা অথবা যে কেউই হউক তার সাথে ভালো আচরণ করে তাহলে কি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে না? ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম মানবিক ধর্ম, ইসলাম সত্যের ধর্ম, ইসলামই সঠিক সভ্যতা এসব প্রমাণিত সত্য। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে সব অবস্থায় অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে ইসলাম নিষেধ করে এরপরেও সমস্যা থাকতো না কারণ ইসলাম অমুসলিমদের সাথে মানবিক আচরণ করতে হুকুম দেয়। তবে সঠিক কথা হচ্ছে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্বময় আচরণ অথবা সম্পর্ক রাখা ইসলামে বৈধ কিন্তু উগ্রবাদী বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এমন অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে ইসলাম নিষেধ করে। ভালো লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করার ফায়দা এবং খারাপ লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করার ক্ষতি বিষয় হযরত মোহাম্মদ (সা) যা বলেছেন পড়ুন।

উপদেশ, হাদিসঃ ২১৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ভাল এবং মন্দ লোকের সাথে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত যথাক্রমে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাঁপরে ফুঁক দানকারীর মত। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু আতর দিতে পারে অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছু কিনে নিতে পার, অন্যথা তুমি তার সুঘ্রাণ পাবেই। আর কামারের হাঁপরের ফুলকি তোমার জামা-কাপড় জ্বালিয়ে দিতে পারে। এটা না হলেও তুমি তার ধোঁয়ার গন্ধ পাবেই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০১০)।-ihadis.com

উপসংহারঃ সার্বিক আলোচনায় অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে, কি যাবে না কারণ হিসেবে জানতে পারলাম শান্তিপূর্ণ অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে কিন্তু যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো অমুসলিম ষড়যন্ত্র করে, মুসলিমদেরকে ধ্বংস করার পয়তারা করে এমন টাইপের উগ্রবাদী অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে ইসলাম নিষেধ করে। এটা প্রমাণিত সত্য ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ধামাচাপা দিয়ে নাস্তিকরা কুরআন হাদিস নিয়ে মুক্তমনে মিথ্যাচার করে ইসলামের বদনাম করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাস্তিকরা ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের সামনে কখনো বলবে না বরং মানুষের মধ্যে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাসকে ঢুকিয়ে দিতে চাইবে। তাই আমাদেরকে সচেতন এবং সাবধান হতে হবে।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post