বিষয়ঃ আদম (আ) আসলেই কি প্রথম মানুষ?
লিখেছেনঃ এমডি আলী।
====================================
ভূমিকাঃ ইসলাম নিয়ে ভ্রান্ত অভিযোগ করতে করতে নাস্তিকরা এটাই ভুলে যায় ইসলামকে সঠিকভাবেই শিখতে হবে। কিন্তু বিবর্তিত প্রাণীদের মস্তিস্কে অনুধাবন করার ক্ষমতা হয়তো এখনো হয়ে উঠেনি! কুরআনের আয়াত, হাদিসের বাণীকে নাস্তিকরা মানুষের সামনে যেভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করে এগুলো যে মুক্তমনা মিথ্যাবুদ্ধির চর্চা না সেটার নিশ্চয়তা কি? ইসলাম নিয়ে কেন সঠিক তথ্য নাস্তিকরা মানুষকে দেবে না? কেন ইসলামকে নিয়ে নাস্তিকরা মানুষকে ভুল ও মিথ্যা বোঝাতে চায়? এমনই মিথ্যা অভিযোগ হযরত আদম (আ) নাকি প্রথম মানুষ ছিলেন না। নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ গুলো পড়লে মনে হয় এরা বিবর্তিত প্রাণী দেখে সত্য-সঠিক তথ্য একজন মানুষ কিভাবে বলে এটা তাদের জানাই নাই। নাহলে মিথ্যাচার করার অর্থ কি হতে পারে? একজন চিন্তাশীল যুক্তিবাদী মানুষ কি জেনে-বোঝে সত্যকে বিকৃত করতে পারে? না। তবে নাস্তিকরা কিভাবে পারে? নাস্তিকরা কেন যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারে না? কেন ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের মিথ্যাচার করতে হবে? কেন হযরত মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে ডাহামিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে নাস্তিকদের? নাস্তিক্যমস্তিস্ক এখনো মানুষের কাতারে যাবার জন্য বিবর্তিত হতে পারে নি?
পাঠক নাস্তিকদের অভিযোগ গুলোর ধরণ বুঝার চেষ্টা করবেন। এতে আপনি নিজেও নাস্তিকদের জালিয়াতি ধরতে পারবেন। ইসলাম যা বলেই নাই সেটা ইসলামের দিকে চাপিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে নাস্তিক সম্প্রদায়। তাহলে নাস্তিকরাই যে ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করছে এটা প্রমাণ করতে আরও প্রমাণ লাগবে আপনার? ইসলামের সস্তা সমালোচকরা আদম (আ)কে নিয়ে যেভাবে মিথ্যাকথা বলে এবং বানিয়ে ব্যাখ্যা করে আমি সেগুলো হুবহু তুলে ধরেছি যাতেআমি যখন সঠিক ও সত্য তথ্য তুলে ধরবো তখন চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী মানুষদের সত্য মিথ্যার পার্থক্য করতে সহজ হয়। তো চলুন শুরু করা যাক।
নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ (পর্ব ১)
সুরা বাকারা ২ঃ৩০ = আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্ গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে বলে, আল্লাহ বলছেন, তিনি পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি বানাচ্ছেন। তো এই প্রতিনিধি কার কাছে আসছে, কাদের কাছে আসছে? খেলোড়ার ছাড়া খালি মাঠের কি কোন দাম আছে? ধরুন আমি করিম সাহেবকে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বানিয়ে দিলাম কিন্তু সেই স্কুলের কোন ছাত্রই নেই! বিষয়টা কেমন হাস্যকর একটিবার কি আমরা চিন্তা করছি। ছাত্র ব্যতীত যেমন শিক্ষকের কোন মূল্য নাই তেমনি মানুষ ছাড়া প্রতিনিধি হওয়ারই কোনই ভিত্তি নাই।
নাস্তিকরা কুরআনের উক্ত আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে এটা নিয়ে সংশয় নেই আমার। কারণ আদম (আ)কে প্রতিনিধি করে বানিয়েছেন পরবর্তীতে আসা মানুষের জন্য। খেলোয়াড় ছাড়া খালি মাঠের দাম নেই কিন্তু মাঠে কি কখনো খেলোয়াড় খেলবে না? আদম (আ) দুনিয়াতে আসার পরে আর কি দুনিয়াতে মানুষ আসে নাই? তাহলে? করিম সাহেবকে আপনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বানিয়ে দিলেন কিন্তু সেই স্কুলের কোনো ছাত্র নেই কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই স্কুলে কি কখনো ছাত্র যাবেই না? যদি যায় তাহলে আগে কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে ক্ষতি কি? তাহলে মানুষ যেখানে হযরত আদম (আ)এর পরে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে আসতে থাকবে এটা জানা সত্ত্বেও নাস্তিকরা কেন এই মিথ্যাকথা বললো যে আগে প্রতিনিধি হবার ভিত্তি নেই? এটা কি নাস্তিকদের মূর্খতা না? যুক্তিবাদী চিন্তাশীল মানুষ কি এরকম জালিয়াতি করতে পারে? ধরুন কেউ একটি স্কুল তৈরি করতে চাচ্ছে, সে চাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করার আগে শিক্ষক নিয়োগ দেবে কারণ শিক্ষকদের গুণাবলী দেখে সবাই এখানে ভর্তি হবে। প্রশ্ন হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী না থাকার ফলে আগে শিক্ষক নিয়োগ দেয়াতে এখানে কি ক্ষতি হয়েছে? আর কেন-ই বা এটা ভুল হতে যাবে? যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়তে আসবে, ভর্তি হবে, সেখানে আগে শিক্ষক নিয়োগ দিলে সমস্যা কি? একইভাবে আল্লাহ আগে হযরত আদম (আ)কে প্রতিনিধি করে বানিয়েছেন পরবর্তীতে আসা মানুষদের জন্য যেমনি ভাবে আপনি আগে শিক্ষক নিয়োগ করলেন পরবর্তীতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করার জন্য। এখন বুঝতে পেরেছেন নাস্তিকরা ঠিক কোন জাগায় মিথ্যাচার করেছে? নাস্তিকদের এমন ভয়ংকর জালিয়াতি ধরতে হলে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে একইসাথে ইসলাম নিয়ে সঠিক পড়াশোনা করতে হবে।
ডঃ মোঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ খণ্ড, ২১৭ পৃষ্ঠায় সুরা বাকারা ২ঃ৩০ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
অর্থাৎ আল্লাহ যেন নবী (সা) কে সম্বোধন করে বলেছেন যে, হে মোহাম্মদ (সা)! তুমি মানব সৃষ্টির ঘটনাটি স্মরণ কর এবং তোমার উম্মতকে জানিয়ে দাও।
তাফসীরে জালালাইন, ১ খণ্ড, ১৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,
হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রা) বলেন, আল্লাহ তা’লা যখন হযরত আদম (আ)কে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন মাটিকে অবহিত করে বললেন, হে মাটি! আমি তোমার হতে এমন এক জাতি সৃষ্টি করবো, যাদের মধ্যে আমার অনুগত ও নাফরমান উভয় ধরণের লোক হবে। যে আমার আনুগত্য করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে আমার নাফরমানি করবে, তাকে জাহান্নামে দিব। তখন মাটি বলল, হে আল্লাহ! আপনি আমার দ্বারা এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। আল্লাহ তা’লা বলবেন, হ্যাঁ। তখন মাটি কাঁদতে শুরু করে। তার কান্নার আস্রুধারা থেকেই পৃথিবীতে ঝর্নাসমূহ বয়ে চলছে।- [তাফসীরে খাজিনের সুত্রে হাশিয়ায়ে জামাল খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৬]
উক্ত আয়াত থেকে এটা পরিস্কার যে ইসলামের দৃষ্টিতে হযরত আদম (আ)ই হলেন প্রথম মানুষ। এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। এটা জানা সত্ত্বেও নাস্তিকরা অন্য দাবি করলে নাস্তিকরা মিথ্যাবাদী হিসেবেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। আরও প্রমাণ দিচ্ছি নিজ দায়িত্বে মন দিয়ে পড়ুন।
আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ১৮৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,
তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। অতঃপর পুরুষ যখন নারীকে আবৃত করল, তখন, সে গর্ভবতী হল। অতি হালকা গর্ভ। সে তাই নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। তারপর যখন বোঝা হয়ে গেল, তখন উভয়েই আল্লাহকে ডাকল যিনি তাদের পালনকর্তা যে, তুমি যদি আমাদিগকে সুস্থ ও ভাল দান কর তবে আমরা তোমার শুকরিয়া আদায় করব।
তাফসীরে আহসানুল বয়ানে সুরা ৭ঃ১৮৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
অর্থাৎ আদম (আ) হতে সৃষ্টির সূচনা। সেই কারণে তাঁকে প্রথম মানব বা মানব-পিতা বলা হয়।
আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু'জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।
ডঃ মোঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত “তাফসীরে ইবনে কাসীর” ৪ খণ্ড, ২৭৫ পৃষ্ঠায় সুরা নিসা ৪ঃ১ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে,
আল্লাহ তা’লা স্বীয় বান্দাদেরকে মুত্তাকী হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে এবং অন্তরে যেন তাঁরই ভয় রাখে। অতঃপর তিনি স্বীয় ব্যাপক ক্ষমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছেন- আল্লাহ তোমাদের এসকলকে একই ব্যক্তি হতে অর্থাৎ হযরত আদম (আ) হতে সৃষ্টি করেছেন। এবং ঐ ব্যক্তি হতেই তিনি হযরত হাওয়া (আ)-কেও সৃষ্টি করেছেন।……..অতঃপর আল্লাহ তা’লা বলেন- ‘দু’জন হতে অর্থাৎ হযরত আদম (আ) ও হযরত হাওয়া (আ) হতে বহু নর ও নারী সৃষ্টি করতঃ দুনিয়ার চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন, যাদের প্রকারে, বিশেষণে, রঙ্গে, আকারে এবং কথাবার্তায় বিভিন্নতা রয়েছে। এ সমস্ত যেমন পূর্বে আল্লাহ তা’লারই অধিকারে ছিল, তিনি তাদেরকে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন ঠিক তেমনই এক সময়ে তিনি সকলকে একত্রিত করে পুনরায় নিজের দখলে নিয়ে নেবেন এবং একটি মাঠে জমা করবেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা’লাকে ভয় করতে থাক, তাঁর আনুগত্য ও ইবাদত করতে থাক।
কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) লিখিত “তাফসীরে মাযহারী” ২ খণ্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠায় সুরা নিসা ৪ঃ১ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে,
হে মানব বলে এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন এবং যারা পরে আসবেন-সকলকে সম্বোধন করা হয়েছে। তারঃপর বলা হয়েছে, তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, অর্থাৎ তাঁর শাস্তির কথা স্মরণে রেখে তাঁর নির্দেশসমূহ পালনে ব্রতী হও। তিনি সেই প্রতিপালক, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে। সেই ব্যক্তিটি হচ্ছেন হযরত আদম (আ)। তিনিই সকল মানুষের প্রথম পিতা। আর তাঁর থেকে সৃষ্টি করেছেন হযরত হাওয়াকে তিনিই সকল মানুষের প্রথম মাতা। ……হযরত আদম এবং হযরত হাওয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট হয়েছে মানুষের বংশধারা। পৃথিবীর পুরুষ ও রমণী তাঁদের বংশেই এসেছেন, আসছেন , আসবেন।
আল কুরআন,সুরা হুজরাত ৪৯ঃ১৩ আয়াত থেকে বর্ণিত,
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।
ডঃ মোঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত “তাফসীরে ইবনে কাসীর” ১৭ খণ্ড, ৪১ পৃষ্ঠায় সুরা হুজরাত ৪৯ঃ১৩ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
আল্লাহ তা’লা বলছেন যে, তিনি সমস্ত মানুষকে একটি মাত্র প্রাণ হতে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ হযরত আদম (আ) হতে। হযরত আদম (আ) হতেই তিনি তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আ)কে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর এ দু’জন হতে তিনি সমস্ত মানুষ ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে দিয়েছেন।-তাফসীরে মাযহারী,১১ খণ্ড, সুরা হুজরাতের ৪৯ঃ১৩ আয়াতের একই রকম ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ (পর্ব ২)
নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে, উক্ত আয়াত থেকে বলা যায়, আদম (আ) ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি বা প্রথম নবী। কিন্তু তাঁকে পৃথিবীর প্রথম মানব হিসাবে চিন্তা করলে উপরোক্ত আয়াতের মাঝে বৈপরীত্য তৈরি হয়। আবার দেখুন হযরত আদম (আ.) কে বলা হয় প্রথম নবী। নবী শব্দের অর্থ হচ্ছে যিনি সংবাদ বহন করেন। এখন আদম (আ.) কার কাছে সংবাদ বহন করবেন, কাদের কাছে স্রষ্টার সংবাদ পৌঁছাবেন যদি কোন মানুষেরই অস্তিত্ব না থাকে? যদি বলা হয়, তিনি পৃথিবীতে আসলেন, পরে অনেক বৎসর একাকী থাকলেন, পরে আল্লাহ তার একাকীত্ব দেখে তাঁর পাজড়ের হাড় থেকে হাওয়া সৃষ্টি করলেন তারপর সন্তানদের কাছেই আল্লাহর সংবাদ পৌছালেন তাহলে হযরত আদমের এই পৃথিবীতে আগমনের, প্রতিনিধি হবার সম্পূর্ণ বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়!
একই ধরণের জালিয়াতি এখানেও করা হয়েছে নাস্তিকদের দ্বারা। আয়াতের মধ্যে বিন্দুমাত্র বৈপরীত্য তৈরি হয় নাই। তাছাড়া আদম (আ) প্রথম নবী যে সংবাদ বহন করেন। আদম (আ) উনার পরবর্তীতে যারা আসবে সেসব মানুষের কাছে আল্লাহর সংবাদ পৌঁছাবেন। আদম (আ)এর পরে মানুষ কি পরবর্তীতে আসে নাই? অবশ্যই এসেছে। নিজের সন্তানদের কাছে আল্লাহর দেয়া সংবাদ পৌঁছালে সেটা কিভাবে ভুল হবে? নিজের সন্তানরা কি মানুষ নয়? তাছাড়া দুনিয়াতে আল্লাহ হযরত হাওয়া (আ)কে তৈরি করেন নাই বরং দুনিয়াতে আসার আগেই হযরত আদম (আ) এরপরে হাওয়া (আ)কে তৈরি করেছিলেন। তাই দুনিয়াতে হযরত হাওয়া (আ)কে তৈরি করা হয়েছে এটা নাস্তিকদের মিথ্যাচার পূর্ণ বর্ণনা। এর প্রমাণ আল কুরআন সুরা বাকারা ২:৩৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,
আমি বললাম। হে আদম তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং তা থেকে আহার করো সাচ্ছন্দে, তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না তাহলে তোমরা যালিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
তাছাড়া আদম (আ)এর পৃথিবীতে আগমন হবার কথা মোটেও প্রশ্নবিদ্ধ হয় না বরং নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ গুলোই বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে,হতে থাকবে।
নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ (পর্ব ৩)
নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে, খলীফা বানানোর কথার মধ্যে কখনোই এই ফলাফল বের হয় না যে, আদমই প্রথম মানব। বরং খলীফা শব্দ তো পবিত্র কোরআনে হযরত দাউদ (আ.)-এর জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে।সুতরাং খলীফা শব্দ দেখেই আদমকে প্রথম মানুষ মনে করা একটি মারাত্মক ভুল।
সুরা সাদ ৩৮ঃ২৬ = হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশী র অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাবদিবসকে ভূলে যায়।
নাস্তিকিস্টকরা এটা দেখাতে পেরেছে হযরত আদম (আ)এর আগে আরও মানুষ তখন পৃথিবীতে ছিল? অথবা হাদিসের ঠিক কোথায় এটা বর্ণিত আছে যে আদম (আ)এর আগে আরও অনেক অনেক মানুষ দুনিয়াতে ছিল? আমি এরকম কোনো তথ্য পাইনি। তবে হযরত আদম (আ)ই প্রথম মানুষ এরকম প্রচুর তথ্য আছে। তাছাড়া ইসলামের সকল তথ্যের আলোকে যেখানে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় হযরত আদম (আ)ই হলেন প্রথম মানুষ সেখানে ফলাফল বের করার কথা আসে কিভাবে? তাছাড়া হযরত দাউদ (আ) এর যুগে আল্লাহ উনাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে বানিয়েছেন এখানে এটা কিভাবে প্রমাণ হয় উনিও মানুষ জাতির প্রথম? তাছাড়া এমন কোনো তথ্য আমি পাইনি যেখানে এটা উল্লেখ আছে হযরত দাউদ (আ) হলেন মানুষ জাতির প্রথম, আদম (আ) নয়। আর নাস্তিকিস্টরাও এমন প্রমাণ দেখাতে পারে নাই, কেন? তাছাড়া বিশাল এক হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে হযরত আদম (আ) হলেন মনুষ্য জাতির পিতা অর্থাৎ উনিই গোটা মানব জাতির পিতা। পুরো হাদিসের অংশ বিশেষ তুলে ধরেছি আপনারা চাইলে পুরো হাদিসটি পড়ে নিতে পারেন।
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৭৪৪০, সহিহ হাদিসঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমানদারদেরকে ক্বিয়ামাতের দিন আবদ্ধ করে রাখা হবে। অবশেষে তারা অস্থির হয়ে যাবে এবং বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের নিকট কারো দ্বারা শাফায়াত করাই যিনি আমাদের স্বস্তি দান করেন। তারপর তারা আদাম (আঃ) -এর কাছে এসে বলবে, আপনিই তো সে আদম, যিনি মনুষ্য জাতির পিতা, স্বয়ং আল্লাহ্ আপন হাত দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তাঁর জান্নাতে, ফেরেশতাদের দিয়ে আপনাকে সাজদাহ করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের এ জায়গা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আপনার সেই রবের কাছে শাফাআত করুন।………….ihadis.com থেকে পুরো হাদিসটি পড়ুন।
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৪৩৪, সহিহ হাদিসঃ
সূর্য তাদের খুব নিকটে এসে যাবে। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ ও সামর্থ্যের অতীত দুর্ভাবনায় পড়ে যাবে এবং ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়বে। তারা পরস্পরকে বলবে, তোমরা কি এ দুঃসহ বিপদ দেখতে পাচ্ছ না? তোমাদের প্রভুর নিকট তোমাদের জন্য সুপারিশ করতে পারে এরূপ কাউকে খুঁজে দেখছ না কেন? লোকেরা একে অপরকে বলবে, তোমাদের উচিত আদম (আ:)-এর কাছে যাওয়া। অতএব, তারা আদম (আ:)-এর নিকট গিয়ে বলবে, আপনি তো মানব জাতির আদি পিতা।……..পুরো হাদিস পড়ুন ihadis.com থেকে
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩৩২৭, সহিহ হাদিসঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। অতঃপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তারা পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হবে মিস্কের মত সুগন্ধযুক্ত। তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাষ্ঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্টা হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। তারা সবাই তাদের আদি পিতা আদম (‘আঃ)-এর আকৃতিতে হবেন। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ৫১১৬, হাসান হাদিসঃ
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেন, মহান আল্লাহ তোমাদের জাহিলী যুগের মিথ্যা অহংকার ও পূর্বপুরুষদের নিয়ে গর্ব করার প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। মুমিন হলো আল্লাহভীরু আর পাপী হলো দুর্ভাগা। তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম (আ) মাটির তৈরি। লোকদের উচিৎ বিশেষ গোত্রের ভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অহংকার না করা।এখন তো তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। অন্যথায় তোমরা মহান আল্লাহর নিকট ময়লার সেই কীটের চেয়েও জঘন্য হবে যে তাঁর নাক দিয়ে ময়লা থেকে নিয়ে যায়।-ihadis.com
ডঃ মোঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, “তাফসীরে ইবনে কাসীর” ১৭ খণ্ড, ৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
হযরত উকবা ইবনে আমির (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা) বলেছেন, তোমাদের এই নসবনামা বা বংশ-তালিকা তোমাদের জন্যে কোন ফলদায়ক নয়। তোমরা সবাই সমভাবে হযরত আদম (আ)-এরই সন্তান। তোমাদের কারো উপর কারো কোন মর্যাদা নেই। মর্যাদা শুধু তাকওয়ার কারণে রয়েছে। মানুষের মন্দ হওয়ার জন্যে এটাই যথেষ্ট যে, সে হবে কর্কশ ভাষী, কৃপণ ও অকথ্যভাবে উচ্চারণকারী।
এছাড়া হযরত আদম (আ) যে মানব জাতির আদি পিতা এর প্রমাণ মেলে, সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৭০৪১ ও,৭০৪২ সহিহ হাদিস / সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩৩৪০ ও ৩৮৮৭, সহিহ হাদিস / রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ১৮৬৩ ও ১৮৯১, সহিহ হাদিস / আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১৮০৫, সহিহ হাদিসে। তাহলে এটা তো স্পষ্ট যে হযরত আদম (আ)ই পুরো মানব জাতির আদি পিতা অর্থাৎ পুরো মানব জাতির মূল পিতা হযরত আদম (আ)ই। আর হযরত দাউদ (আ)কেও আল্লাহ পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন কিন্তু সেটা হযরত আদম (আ)এর অনেক অনেক পরে অর্থাৎ হযরত দাউদ (আ) এর যুগে। ইসলামের দৃষ্টিতে হযরত দাউদ (আ) মনুষ্য জাতির আদি পিতা নয় সেটা হচ্ছেন আদম (আ)। আদম (আ)ই যে প্রথম মানুষ এরপক্ষে এতো এতো তথ্য প্রমাণকে লুকিয়ে রেখে যদি এটা প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করা হয় যে আদম (আ) মানব জাতির আদি পিতা নয় তাহলে চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে আপনি মিথ্যুক নাস্তিকদেরকে কি বলবেন সেটা আপনার হাতেই রেখে দিলাম।
ইঃফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ১ খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত,
তাফসীর উছমানীতে বলা হইয়াছে, হযরত আদম (আ) হইতে প্রথমে হযরত হাওয়াকে তাহাঁর বাম পাঁজর হইতে সৃষ্টি করেন। তারপর তাহাঁদের দুইজন হইতে সমস্ত নরনারী সৃষ্টি করিয়া বিশ্বব্যাপী ছড়াইয়া দেন। ফলে মূলত এক অভিন্ন প্রান ও ব্যক্তি হইতেই আল্লাহ তা’লা সমস্ত মানবজাতিকে সৃষ্টি করিয়াছেন। (তাফসীরে উছমানী, পৃষ্ঠা ৫৮)
এছাড়া হযরত আদম (আ)ই যে মানব জাতির প্রথম মানুষ সেটার আরও প্রমাণ পেতে ই;ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ১ খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠা থেকে ৩৮ পৃষ্ঠা পড়তে পারেন। সেখানে বিস্তারিত সব বর্ণনা করা হয়েছে।
নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ (পর্ব ৪)
সুরা আল ইমরান ৩ঃ৩৩,৩৪ = নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম (আঃ) নূহ (আঃ) ও ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর এবং এমরানের খান্দানকে নির্বাচিত করেছেন। যারা বংশধর ছিলেন পরস্পরের। আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী।
নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে-যদি আদম (আ)-কে পৃথিবীর প্রথম সৃষ্ট মানুষ হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে এ আয়াতটির ক্রমবিন্যাস ভেঙ্গে যাবে। এ আয়াতে দেখা যায়, আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা নূহ (আ), ইব্রাহীম (আ), ইমরান (আ) -এর মতই কোনো একটি সমাজের জন্যে একজন নবী হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু আদম (আ) যদি পৃথিবীর প্রথম মানব-ই হতেন, তাহলে তাঁকে অন্যান্য নবীদের মত নির্বাচন করার প্রয়োজন ছিল না।
কোনো ভাবেই কুরআনের আয়াতের ক্রমবিন্যাস ভেঙ্গে যায় না বরং কুরআনের সঠিক বর্ণনাকে মিথ্যায় বিবর্তন করতে নাস্তিকদের জ্ঞানের সততাই ভেঙ্গে গিয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত এটা সব থেকে হাস্যকর অভিযোগ ছিল। যে এই অভিযোগ করেছে সে ঠিক মতো বাংলা পড়তে পারলে এটা বুঝতে পারতো এখানে হযরত আদম (আ), নুহ (আ) ও ইব্রাহীম (আ) এনারা একে অপরের বংশধর ছিল যাদেরকে আল্লাহ নির্বাচন করেছেন তাছাড়া এনাদের বংশধরদের থেকেও আল্লাহ নবী নির্বাচন করেছেন। এখানে হযরত আদম (আ)কে এমনকি আরও অনেককে যে নবী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন সেটার কথাই বলা হচ্ছে। এখান থেকে এটা কোনোভাবেই প্রমাণ হয় না যে আদম (আ) প্রথম মানুষ ছিলেন না। আর অন্যান্য নবীদের মতো আদম (আ)ও নবী ছিলেন এটাই বলা হয়েছে। কুরআন নিয়ে মিথ্যাকথা বলা নাস্তিক এটা কিভাবে ব্যাখ্যা করে কি প্রয়োজন ছিল আর কি ছিল না? নাস্তিকরা কবে নাস্তিক্যবিশ্বাস ত্যাগ করে চিন্তাশীল মানুষ হবে? উক্ত আয়াতে এই কথা-ও বলা হয় নাই যে আদম (আ)কে অন্য সমাজের জন্য আলাদা নবী করে পাঠানো হয়েছে অথবা অন্য এক সমাজের জন্য আদম (আ)কে নতুন করে নবী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আসলে এখানে খুব কৌশলে নাস্তিকরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। তাফসীর থেকে প্রমাণ দিলেই নাস্তিকান্ধদের মিথ্যাচার পরিস্কার হয়ে যাবে। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) লিখিত “তাফসীরে মাযহারী” ২ খণ্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠায় সুরা আল ইমরানের ৩ঃ৩৩ ও ৩৪ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে,
আদম (আ) সকল মানুষের পিতা। বেহেশতে ফেরেশতারা তাঁকে সেজদা করে সম্মান জানিয়েছিলো। তিনিই প্রথম নবী। সকল নবী রসুল তাঁরই অধস্তন পুরুষ। এরপর প্রেরিত হলেন হযরত নূহ (আ), যখন মানুষ হয়ে পড়েছিলো দ্বিধাবিভক্ত।আশ্রয় নিয়েছিলো পুরস্পরবিরোধী বলয়ে, বিশ্বাসে অথবা অবিশ্বাসে। হযরত নূহ (আ) এর বদদোয়ায় নেমে এসেছিলো মহাপ্লাবন। নিশ্চিহ্ন হয়েছিলো অবিশ্বাসীরা। অতপর হযরত ইব্রাহীম (আ) এর বংশধর এবং ইমরানের বংশধরের মধ্য থেকে আল্লাহ তা’লা মনোনীত করেছিলেন নবী ও রাসুল। হযরত ইব্রাহীম (আ) থেকে ইসমাইল (আ), ইসহাক (আ), ইয়াকুব (আ), ইসবাত (আ), ইমরান (আ) এবং সর্বশেষে হযরত মোহাম্মদ (সা)।
এটা স্পষ্ট যে উক্ত আয়াতে আল্লাহ আদম (আ)কে নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন তো ঠিকই সাথে আদম (আ) এর বংশধরদের থেকেও নবী বানিয়েছেন। তাই উক্ত আয়াত থেকে কোনো এঙ্গেলেই প্রমাণ হয় না যে আদম (আ) প্রথম মানুষ ছিলেন না। আয়াতটি আরেকটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ক্লিয়ার হয়ে যাবে। সুরা আল ইমরান ৩ঃ৩৩,৩৪ = নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম (আঃ) নূহ (আঃ) ও ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর এবং ইমরানের খান্দানকে নির্বাচিত করেছেন। যারা বংশধর ছিলেন পরস্পরের। আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। - এছাড়া উপরে পরিস্কার হযরত আদম (আ)ই যে দুনিয়ার প্রথম মানুষ সেই বিষয় আমি সরাসরি প্রমাণ দিয়েছি সেখানে নাস্তিকান্ধদের জালিয়াতিপূর্ণ ব্যাখ্যার বিন্দুমাত্র ভিত্তি নেই।
নাস্তিকরা মিথ্যা অভিযোগ (পর্ব ৫)
সুরা বাকারা ২ঃ২১৩ = সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা পয়গম্বর পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকরী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবর্তীণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন।
নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে, উপরোক্ত আয়াতে বোঝা যায় আল্লাহ তায়ালা আগে অনেক মানুষ তৈরি করেছেন, তারপর তাদের হেদায়েতের জন্যে নবী-রাসূলদেরকে কিতাব সহ পাঠিয়েছেন।যদি আদম (আ)-কে পৃথিবীর প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে উপরোক্ত আয়াতগুলো মত কোর’আনের অসংখ্য আয়াতের সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু আদম (আ)-কে যদি পৃথিবীর অন্য মানুষদের উপর খেলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম মানুষ বা প্রথম নবী হিসাবে গণ্য করা হয়, তাহলে কোর’আনের মাঝে আর কোনো বৈপরীত্য থাকে না।
নাস্তিকদের বানানো ব্যাখ্যাই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে কুরআনের আয়াতকে নাস্তিকরা বানিয়ে বানিয়ে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। কিন্তু চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে আমি তা হতে দিতে পারি না তাই আমি ইসলাম সম্পর্কে সত্য-সঠিক তথ্যের ব্যাখ্যা দেখিয়েই যাবো। আমি সচেতন আর আপনি আমার পাঠক হয়ে থাকলে আপনিও সচেতন হোন সাথে অন্যকে সচেতন করুণ। আমরা যদি তাফসীর খুলে দেখি তাহলেই কুরআনের উক্ত আয়াতটির সঠিক মর্মার্থ কি বোঝাচ্ছে সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে।
কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) লিখিত “তাফসীরে মাযহারী”,১ খণ্ড,৪৬০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত,
বাযযার তাঁর মসনদে, হাকেম তাঁর মুসতাদরাকে এবং ইবনে জারীর, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনে মুনজির তাঁদের বিশুদ্ধ সুত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন এরকম- হযরত আদম ও হযরত নূহ এর মধ্যে দশটি যুগের ব্যবধান ছিল। ওই সকল যুগের লোকেরা ছিল সঠিক ধর্মের অনুসারী। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়। হযরত কাতাদাহ থেকে ইবনে আবী হাতেম বলেছেন, দশটি যুগের ব্যবধানেই ছিলেন হযরত আদম (আ) ও হযরত নূহ। তাঁদের মধ্যবর্তী লোকেরা ছিলেন বিদ্ধান ও পথপ্রাপ্ত। পরে তাদের একতা বিনষ্ট হয়। তখন হযরত নূহকে আল্লাহপাক নবী হিসেবে প্রেরণ করলেন। তিনিই ছিলেন প্রথম প্রেরিত রসুল। আতা ও হাসান বলেছেন, হযরত আদমের মহাপ্রস্থানের পর থেকে হযরত নূহ (আ) এর আবির্ভাবকালে মধ্যবর্তী সময়ে মানুষেরা ছিল চতুষ্পদ জন্তুর মতো-অবিশ্বাসী। আল্লাহপাক তখন হযরত নূহ (আ)কে প্রেরণ করেন।
ডঃ মোঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীর ইবনে কাসীর, ১ খণ্ড, ৫৮৭ পৃষ্ঠায় সুরা বাকারা ২ঃ২১৩ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন যে, হযরত নূহ (আ) ও হযরত আদম (আ)এর মধ্যে দশটি যুগ ছিল। ঐ যুগসমূহের লোকেরা সত্য শরীয়তের অনুসারী ছিল। অতঃপর তাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। তখন আল্লাহ তা’লা নবীগণকে (আ) প্রেরণ করেন। তার কিরাআতও নিন্মরুপঃ অর্থাৎ মানব জাতি একই সম্প্রদায়ভুল ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করে (সুরা ইউনুস ১০ঃ১৯)। হযরত উবাই বিন কা’বের (রা) পঠন এটাই। কাতাদাহও (রহ) এর তাফসীর এরকমই করেছেন যে, যখন তাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়ে যায় তখন আল্লাহ তা’লা তাঁর প্রথম রাসুল অর্থাৎ হযরত নূহ (আ)কে প্রেরণ করেন। হযরত মুজাহিদ (রহ) এটাই বলেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) হতে একটি বর্ণনা রয়েছে যে, প্রথমে সবাই কাফির ছিল। কিন্তু প্রথম উক্তিটি অর্থ হিসেবেও এবং সনদ হিসেবেও অধিকতর সঠিক।
তাফসীরে জালালাইন,১ খণ্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠায় সুরা বাকারা ২ঃ২১৩ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
হযরত আদম (আ) থেকে কিছুকাল যাবৎ একই দিন চলে আসছিল। তারপর তার বংশধরগণ দীন নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি করে। তখন আল্লাহ তা’লা নবী-রাসুল প্রেরণ করেন। তারা মুমিন ও অনুগতদেরকে ছওয়াবের সুসংবাদ দিতেন এবং কাফের ও অবাধ্যদের শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করতেন। তাদের সঙ্গে সত্য কিতাবও অবতীর্ণ করা হয়, যাতে মানুষের মতবিরোধ ও কলহের নিরসন হয় এবং তাদের সে মতবিরোধ হতে সত্য দীন নিরাপদ ও প্রতিষ্ঠিত থাকে। তারপর আল্লাহ তা’লার বিধি-নিষেধ সম্পর্কে মতভেদ সেসব লোকই সৃষ্টি করে, যারা সে কিতাবসমূহ লাভ করেছিল। যেমন- ইহুদী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় তাওরাত ও ইঞ্জীল নিয়ে মতভেদ ও তাতে বিকৃতি সাধন করেছিল। তাদের সে মতভেদ অজ্ঞতাপ্রসূত ছিল না; বরং জ্ঞাতসারেই কেবল দুনিয়ার ভালোবাসা এবং হিংসা-বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে তারা তাতে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ তা’লা নিজ অনুগ্রহে মুমিনদেরকে সত্য-সঠিক পথ দেখান এবং বিভভ্রান্তিকর মতবিরোধ হতে তাদেরকে রক্ষা করেন। - [তাফসীরে উসমানী]
তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন,১ খণ্ড,২৯৮ পৃষ্ঠাতে, শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাববীর আহমদ ওসমানী (রহ) লিখিত “তাফসীরে ওসমানী”,১খণ্ড,১৬১ পৃষ্ঠাতে এমনকি তাফসীরে আহসানুল বয়ান এর ৫৮ পৃষ্ঠাতেও সুরা বাকারা২ঃ২১৩ আয়াতের ব্যাখ্যায় একই রকম তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে এটা স্পষ্ট যে হযরত আদম (আ)এর পরে সকল মানুষ একই সম্প্রদায়ভুল ছিল অর্থ একই মতাদর্শের ছিল পরবর্তীতে তারা নিজেদের কারণে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় সেখানে নাস্তিকরা এই মিথ্যা ব্যাখ্যা কেন করলো যে আল্লাহ তায়ালা আগে অনেক মানুষ তৈরি করেছেন, তারপর তাদের হেদায়েতের জন্যে নবী-রাসূলদেরকে কিতাব সহ পাঠিয়েছেন আর তাই আদম (আ) প্রথম মানুষ না? এরকম ভয়াবহ মিথ্যাচার করলে কি মানুষ নাস্তিক্যবিশ্বাস গ্রহণ করবে? অথবা নাস্তিক্যধর্ম সত্য প্রমাণ হয়ে যাবে? তাছাড়া কুরআনের একটি আয়াতের মধ্যেও বিন্দুমাত্র কোনো বৈপরীত্য নেই।
কোনো অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিক যদি প্রেক্ষাপট, মূল ঘটনা ,সঠিক মর্মার্থকে এমনকি তাফসীরের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যাকে ধামাচাপা দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যাকথা বলে “কুরআনের মধ্যে বৈপরীত্য আছে” দাবি করে তাহলে এরকম প্রতারক প্রাণীরা চিন্তা করতে পারে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে। আমি কেন ইসলামকে সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করতে পারবো না? কাউকে মিথ্যা কথা বলে ইসলাম সম্পর্কে ভুল বোঝানো কি নাস্তিক্যধর্মে বৈধ? মুক্তচিন্তায় বৈধ?
নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ (পর্ব ৬)
সুরা মরিয়ম ১৯ঃ১৭ = অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল।
নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে, আদম (আ)কে আল্লাহ রুহ ফুঁকে দিয়েছিলেন আর ইসা (আ)কেও রুহ ফুঁকে দিয়েছিলেন। ঈসা (আ)-কে পদ্ধতিতে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আদম (আ)-কেও সে পদ্ধতিতে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এ থেকে বলা যায়, ঈসা (আ) যদি মায়ের পেটে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আদম (আ)-ও মায়ের পেটে জন্ম গ্রহণ করেছেন।
আবার সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৯ = নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।
নাস্তিকরা ব্যাখ্যা করে বলে, ঈসা (আ)-এর জন্ম যদি আদম (আ)-এর মতই হয়ে থাকে, তাহলে বলা যায় যে, ঈসা (আ)-কে তাঁর মা মরিয়ম (আ) যেমন গর্ভধারণ করেছিলেন, আদম (আ)-কেও তাঁর মা গর্ব ধারণ করেছিলেন। কিন্তু কেউ যদি আদম (আ)-কে প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করে, তাহলে এ কথা বলা যাবে না যে, ঈসা (আ)-এর জন্ম আদম (আ)-এর মতই।
কুরআনের আয়াতকে কিভাবে ভুল ব্যাখ্যা করে নাস্তিকরা দেখলেন? আরও প্রমাণ লাগবে নাকি? যাদের সামান্যতম ইসলাম নিয়ে জ্ঞান আছে তারা এরকম মিথ্যা অভিযোগ করতে পারে না কারণ আয়াতে কি উদ্দেশ্য বলা হয়েছে সেটা আমাদের সবারই জানা। কুরআন ঠিক মতো না পড়ে, না বোঝে মুক্তমনে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েই এরকম জালিয়াতি করা নাস্তিকদের পক্ষেই সম্ভব।
নাস্তিকরা কুরআনের সহজ উদাহরণটি বুঝতেও ব্যর্থ হলো, কি চরম দুর্গতি এদের তাই না? প্রশ্ন হচ্ছে উপরে নাস্তিকরা যে ব্যাখ্যা করলো সেটা কোন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে? অথবা এমন কোনো হাদিস কি রয়েছে যেখানে এটা বর্ণিত হয়েছে যে ঈসা (আ)-কে তাঁর মা মরিয়ম (আ) যেমন গর্ভধারণ করেছিলেন,আদম (আ)-কেও তাঁর মা গর্ব ধারণ করেছিলেন? অথবা এমন কোনো হাদিস রয়েছে যেখানে এটা বলা হয়েছে যে ঈসা (আ)-কে পদ্ধতিতে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আদম (আ)-কেও সে পদ্ধতিতে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন? ঈসা (আ) যদি মায়ের পেটে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আদম (আ)-ও মায়ের পেটে জন্ম গ্রহণ করেছেন? তাহলে নাস্তিকরা কুরআনের মিথ্যা ব্যাখ্যা কেন করছে? কুরআনের অপব্যাখ্যা করে কি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় নাস্তিকগোষ্ঠীরা? আদম (আ)কে প্রথম মানুষ হিসেবে গণ্য করলে কেন এই কথা বলা যাবে না যে ইসা (আ)এর দৃষ্টান্ত আদমের মতো যদি ইসা (আ)কে পিতা ছাড়া আল্লাহ যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি আদম (আ)কেও পিতা ছাড়া আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন বোঝায়?
ধরুন আপনি আপনার বাবাকে সাহসী বলে জানেন এবং সিংহের সাথে উদাহরণ দিয়ে বললেন আমার বাবা সিংহের মতো সাহসী। কোনো লোক যদি বলে আপনার বাবার কি সিংহের মতো লেজ আছে? সিংহের যেহেতু লেজ আছে তাই আপনার বাবারও লেজ থাকতে হবে। সিংহ যেভাবে দৌড়িয়ে গিয়ে হরিণ, ইত্যাদি চতুষ্পদ জন্তু শিকার করে আপনার বাবারও সেভাবে জন্তু-জানোয়ার জঙ্গল থেকে শিকার করতে হবে। সিংহ যেমন জঙ্গলে থাকে আপনার বাবাকেও জঙ্গলে থাকতে হবে। - খেয়াল করুন এখানে এই লোকটি উদাহরণ না বুঝে যেই কথা বলে নিজের মূর্খতার পরিচয় দিল ঠিক একইভাবে উপরে বর্ণিত কুরআনের উদাহরণকে না বুঝে ঈসা (আ) মায়ের পেটে জন্ম হয়েছে দেখে আদম (আ)কে সেভাবেই জন্ম হতে হবে দাবি করাও নাস্তিকদের মূর্খতার প্রমাণ বহন করে। কেউ যদি কাউকে বলে তোমার চেহারা চাঁদের মতো সুন্দর তাহলে এখানে নাস্তিকরা এটা বলবে যে এর অর্থ সেই লোকটি সূর্যের কাছ থেকে আলো নিয়ে রাতে নিজের চেহারা থেকে আলো দেয়? হাহাহাহা। এখনো কি নাস্তিকরা এমন পর্যায়ে বিবর্তিত হতে পারেনি যে উদাহরণ কিভাবে বুঝতে হবে? তাহলে উদাহরণ বোঝার জন্য আর কয় হাজার কোটি বছর নাস্তিকদের বিবর্তিত হতে হবে?
আসল সত্য হচ্ছে নবী ঈসা (আ) এর দৃষ্টান্ত আদমের মতো কথা দ্বারা আল্লাহ এটাই বুঝিয়েছেন যে ঈসা (আ)কে আল্লাহ পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন যেমনভাবে আদম (আ)কে। আদম (আ)কে যেমন পিতা ছাড়া সৃষ্টি করা হয়েছে তেমনি ইসা (আ)কেও পিতা ছাড়া সৃষ্টি করা হয়েছে। কুরআনের সঠিক মর্মার্থ বোঝার জন্য তাফসীর থেকে পড়লেই সহজ হয়ে যাবে।
ডঃ মোঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৪ খণ্ড, ৭৬ পৃষ্ঠায় সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
এখানে আল্লাহ তা’লা স্বীয় ব্যাপক ক্ষমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- হযরত ঈসা (আ)কে আমি বিনা বাপে সৃষ্টি করেছি বলেই তোমরা খুব বিস্ময়বোধ করছো? তার পূর্বে তো আমি হযরত আদম (আ)কে সৃষ্টি করেছি, অথচ তার বাপও ছিল না, মা-ও ছিল না। বরং তাঁকে আমি মাটি দ্বারা দৃষ্টি করেছিলাম। আমি তাঁকে বলেছিলাম- হে আদম তুমি হও, আর তেমনি সে হয়ে গিয়েছিল। তাহলে আমি যখন বিনা বাপে-মায়ে সৃষ্টি করতে পেরেছি তখন শুধু মায়ের মাধ্যমে সৃষ্টি করা আমার কাছে কি কোন কঠিন কাজ?
তাফসীরে জালালাইন, ১ খণ্ড,৬৪৬ পৃষ্ঠায় সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
হযরত ঈসা (আ) মহান আল্লাহর বান্দা নয়; বরং তাঁর ছেলে - এ দাবি নিয়ে খ্রিস্টানরা রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাথে অনেক তর্ক করে। শেষে বলে, তিনি যদি আল্লাহর ছেলে না হন তবে আপনারাই বলুন। তিনি কার ছেলে? এরই জবাবে আল্লাহ তা’লা খ্রিস্টানদেরকে সম্বোধন করে এ উপমা উপস্থাপন করেছেন, ঈসা (আ)এর দৃষ্টান্ত তো আদমের অনুরূপ। তোমরা খ্রিস্টানরাও হযরত আদম (আ)কে একজন মানুষ বলেই বিশ্বাস করো, অথচ তাঁর জন্ম তো আরও অলৌকিক পদ্ধতিতে, মাতাপিতা ব্যতীতই তিনি সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে যদি সৃষ্ট ও মানুষ হিসেবে মেনে নিতে পার, তবে হযরত ঈসা (আ)কে মানুষ হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি কোথায়?
শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাববীর আহমদ ওসমানী (রহ) লিখিত তাফসীরে ওসমানী, ১ খণ্ড, ২৮৬ পৃষ্ঠায় সুরা আল ইমরানের ৩ঃ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
খ্রিস্টানরা হযরত নবী করীম (সা)এর সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়ে বলতো যে, ঈসা আল্লাহর বান্দাহ নয় বরং তার পুত্র। শেষ পর্যন্ত বলে যে, আল্লাহর পুত্র না হলে বল, তবে সে কার পুত্র। এর জবাবে আয়াতটি নাযিল হয়। এতে বলা হয় যে, আদমের তো মাতা-পিতা কেউই ছিল না। ঈসার পিতা না থাকলে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে। (মুযেহুল কুরআন) এ হিসাবে তো আদমকে আল্লাহর পুত্র প্রমাণ করার জন্য বেশি জোর দেওয়া দরকার। অথচ কেউই এটা স্বীকার করে না।
কাযী ছানাউল্লাহ পানিপাথী (রহ) লিখিত “তাফসীরে মাযহারী”, ২ খণ্ড, ২১২ পৃষ্ঠায় সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে,
হযরত আদম (আ) সৃষ্ট হয়েছেন পিতামাতা ব্যতিরেকেই । আর হযরত ঈসা (আ) সৃষ্ট হয়েছে পিতা ব্যতিরেকেই। দুজনেরই সৃষ্টি বিস্ময়কর। বরং হযরত ঈসা অপেক্ষা হযরত আদমের সৃষ্টি অধিক বিস্ময়কর। এই আয়াত নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলের বাদানুবাদের কারণে অবতীর্ণ হয়েছে। একবার তারা রাসুল (সা) এর সকাশে এসে বললো, আপনি নাকি ঈসা (আ) কে গালি দেন। তিনি বললেন, না তো। তারা বললো, আপনি যে তাঁকে বান্দা বলেন। রাসুল (সা) বললেন, নিশ্চয় তিনি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহর রাসুল এবং কালেমাতুল্লাহ (আল্লাহর একটি হুকুম)। আল্লাহ তাঁকে মরিয়মের উদরে স্থাপন করেছিলেন। খ্রিস্টানেরা রাগান্বিত হয়ে বললো, আপনি কি কখনো কোনো মানুষকে পিতা ছাড়া জন্ম নিতে দেখেছেন? তাদের প্রশ্নের জবাবে অবতীর্ণ হলো এই আয়াত। এরকম বর্ণনা করেছেন ইবনে আবী হাতেম, আউফ (রা) এর মাধ্যমে এবং হযরত ইবনে আব্বাসের বর্ণনা সুত্রে। ইবনে আবী হাতেম আরেকটি বর্ণনা করেছেন হাসান বসরীর মাধ্যমে বর্ণনাটি এই- নাজরানের দুজন পাদ্রী রাসুলুল্লাহ (সা) এর খেদমতে হাজির হলো। একজন জিজ্ঞেস করলো, নবী ঈসার পিতা কে? রাসুলে পাক (সা) এই প্রশ্নের জবাব আল্লাহ তা’লার নিকট থেকে কামনা করলেন। তখন নাজিল হলো এই আয়াত। হতবাক হয়ে গেলো পাদ্রীদ্বয়। তারা এমত মূর্খ যে, অহরহ দেখছে যে ছাগলের বাচ্চা মানুষ থেকে অথবা মানুষের বাচ্চা ছাগল থেকে কখনোই জন্মলাভ করেনা কারণ, জাত এখানে ভিন্ন। সৃষ্টির মধ্যেই যদি এরকম সম্ভব না হয়, তবে সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে তা সম্ভব হবে কিভাবে। আল্লাহ তা’লা একক, অমুখাপেক্ষী, চিরন্তন এবং আনুরুপাবিহীন। সুতরাং তিনি ঈসা (আ) এর পিতা হবেন কেমন করে। হযরত ঈসা তো শরীর বিশিষ্ট অবক্ষয়শীল এক সৃষ্টি, যিনি পানাহার করেন। শয়ন করেন। মৃত্যু তাঁর অমোঘ নিয়তি। সুতরাং আল্লাহ তা’লা কারো পিতা বা পুত্র নন। কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়।
উপরে নাস্তিকরা কুরআনে ঈসার দৃষ্টান্ত আদম (আ)এর মতো উদাহরণকে নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার করেছে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এরপরে কোনো নাস্তিকের সুযোগ নেই এই উদাহরণকে নিয়ে মুক্তমনে মিথ্যা বলার। মিথ্যা বাহ্যিক ভাবে দেখতে যতোই শক্ত মনে হোক না কেন সত্যের সামনে মিথ্যা কখনো টিকতে পারবে না একইভাবে নাস্তিকরা নিজেদের মতো বানিয়ে বানিয়ে কুরআন- হাদিস নিয়ে যতোই মিথ্যাকথা বলুক না কেন সত্যের সামনে এদের নির্লজ্জ মিথ্যাচার কখনোই টিকবে না।
উপসংহারঃ এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে ইসলামের দৃষ্টিতে হযরত আদম (আ)ই হলেন দুনিয়ার প্রথম মানুষ। এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করার যতো চেষ্টা নাস্তিকরা করেছে সব গুলো মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ একইসাথে এসব মিথ্যা ব্যাখ্যার সাথে ইসলামের কোনোই সম্পর্ক নেই। নাস্তিকদের অভিযোগ গুলো পেলেই সেটা গ্রহণ না করে যাচাই করা সচেতনতার পরিচয়। নাস্তিকদের অভিযোগ গুলো যখনই আমি তদন্ত করেছি, যাচাই করেছি তখনই নাস্তিকদের আসল চেহারা উন্মোচন হয়ে গেছে যে, কতো কৌশলে এরা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে মানুষকে ইসলাম বিষয়ে ধোঁকা দেয়, দিচ্ছে। নাস্তিক্যধর্মে মুক্তমনে মিথ্যাচার করা যায় সেটা নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ গুলো পড়লেই বোঝা যায়। আমার অন্যান্য লেখা গুলো পড়ুন নাস্তিকরা কিভাবে মুক্তমনে মিথ্যাচার চর্চা করে সেসবের আরও প্রমাণ পাবেন।