মেঘের ওজন ও কুরআনের সত্যতা

বিষয়ঃ মেঘের ওজন ও কুরআনের সত্যতা।

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

=====================


ভূমিকাঃ কুরআন থেকে আমরা এমন এমন তথ্য পেয়ে থাকি যা হযরত মোহাম্মদ (সা)এর সময়ে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব ছিল না যদি না আল্লাহ উনাকে না জানিয়ে থাকেন। নবীজি (সা) কোনো বই থেকে কপি করে কুরআন লিখেছেন এরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। নাস্তিকরা কুরআন নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করে কারণ এই নাস্তিকান্ধরাই বলে থাকে, নবী মোহাম্মদ (সা) বাইবেল থেকে নাকি কুরআন কপি করেছিলেন কিন্তু এর পক্ষে তেমন কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নাস্তিকরা দেখাতে পারে না। আমি নিজেই অনেক সন্ধান করেছি কিন্তু এমন কোনো তথ্য পাইনি যেখানে বর্ণিত আছে হযরত মোহাম্মদ (সা) বাইবেল থেকে কুরআন কপি করেছে অথবা উনার সাহাবীদেরকে বলেছে তোমরা বাইবেল থেকে কুরআন নকল করে লেখে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেও কারণ কুরআনের পাণ্ডুলিপি বিক্রি করে আমি ধনী হবো।


কুরআন বলে মেঘের ওজন আছেঃ


আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭ঃ৫৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,


তিনি তাঁর রহমতের পূর্বে সুসংবাদের ঘোষক হিসেবে বায়ু প্রেরণ করেন, অতপর যখন তা মেঘের ভারী বোঝা বহন করে, তখন আমি তাকে মৃত ভূখণ্ডের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাই, যা থেকে আমি পানি বর্ষণ করি। অতপর তা থেকে আমি সর্ব প্রকার ফল উৎপন্ন করি। এভাবেই আমি মৃতকে জীবিত করি যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।


আল কুরআন, সুরা রাদ ১৩ঃ১২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,


তিনিই ভয় ও আশা সঞ্চার করার জন্য তোমাদেরকে বিজলী দেখান এবং তিনি ভারী মেঘমালা সৃষ্টি করেন


গভীর চিন্তার বিষয়ঃ


মেঘ সম্পর্কে কিছুই জানে না এমন লোকের কাছে নিশ্চিত ভাবে মেঘের ওজন থাকতে পারে এই তথ্য জানা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? মেঘের ওজন আছে কি নেই-এসব বিষয় নবী মোহাম্মদ (সা) কখনো গবেষণা করেছিলেন এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ আমি সন্ধান করে পাইনি। যদি কোনো নাস্তিক পেয়ে থাকে আমাকে অবশ্যই যেনো জানায়। “হযরত মোহাম্মদ (সা) মেঘের ওজন নিয়ে গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, মেঘের ওজন আছে এরকম কোনো তথ্যের প্রমাণ বিশুদ্ধ সুত্রে নাস্তিকরা পেয়ে থাকলে আমাকে যেনো জানায় কারণ এমন তথ্য আমাকে জানালে যেদিন দেখাবে আমি সেদিন আমার এই লেখাটি মুছে দিতে আপত্তি করবো না।


পাঠক লক্ষ্য করুন, বাহ্যিকভাবে দেখলে কিন্তু মেঘকে একেবারে হালকা মনে হবে। আপনার বাড়ির আশে পাশে যেসব শ্রমিক রয়েছে তাদেরকে প্রশ্ন করুন তো আমরা যে আকাশে মেঘ দেখি সেটা কেন হালকা? পড়াশোনা করে নাই অথবা মেঘ নিয়ে কখনো গবেষণা করে নাই এমন যে কাউকে প্রশ্ন করুন তো মেঘ কেন হালকা? দেখবেন তারা এটা ধরতে পারবে না যে মেঘের ওজন থাকতে পারে। নবী মোহাম্মদ (সা) যেখানে কখনো মেঘের ওজন আছে কি নেই এসব নিয়ে গবেষণা করেন নাই সেখানে উনি যদি কুরআন লিখে থাকে তাহলে মেঘের ওজন ভারী বা মেঘের ওজন আছে নিশ্চিতভাবে কিভাবে লিখতে পারেন? মেঘ বাহ্যিকভাবে দেখতে তুলার মতো এমনকি মেঘকে দেখতে কিন্তু হালকা মনে হয় তাই হযরত মোহাম্মদ (সা) কুরআন লিখে থাকলে তো ভারী মেঘের কথা বলার কথা নয়। হয়তো বলতে পারেন বৃষ্টির যেহেতু পানি আছে সেহেতু পানিই তো উপরে গিয়ে মেঘের আকারে বৃষ্টি হয় তাই মেঘের ওজন আছে বলা কঠিন কিছু নয় কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পানিচক্রের তথ্য নিয়ে যেখানে হরেকরকম কথা রয়েছে, আছে মতভেদ সেখানে হযরত মোহাম্মদ (সা) নিশ্চিতরুপে কিভাবে জেনে ফেললেন? উনি কোন বই থেকে পানিচক্রের তথ্য পেয়েছিলেন এবং কে তাঁকে দেখেছিল সেই বই থেকে কুরআন কপি করে লিখতে? নাস্তিকরা যখন দেখে কুরআনের তথ্যকে তো খণ্ডন করা যাচ্ছে না তখন বান্দরের মতো একখানা হাঁসি দিয়ে বলে,


মেঘেরও যে ওজন আছে সেটা বোঝাটা সপ্তম শতাব্দীর একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোনোভাবেই কোনো অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না। তখনকার একজন সাধারণ মানুষের জন্য এটা অনুধাবন করতে পারাটা কঠিন ছিলো না যে, যেহেতু মেঘ থেকে আসা বৃষ্টির পানির ওজন আছে, সেহেতু মেঘেরও ওজন আছে। তখনকার মানুষ এতটাও বোধবুদ্ধিহীন ছিলেন না। কেননা, মেঘমালা থেকে আসা বৃষ্টির পানির ওজন থাকলে যে মেঘমালারও ওজন থাকবে সেটা তখনকার মানুষের জন্য বুঝতে পারাটা একেবারেই কঠিন ছিলো না।


আসলে মূর্খ না হলে নাস্তিক হওয়া যায় না। যেই সময়ে মানুষ পানিচক্র নিয়েই একেকজন একেকরকম মতবাদ দিয়েছিল সেখানে মানুষ নিশ্চিতভাবে মেঘের ওজন আছে এই সিদ্ধান্তে কিভাবে আসতে পারলো? নাস্তিকরা দাবি করেছে তখনকার মানুষের পক্ষে এটা জানা অসম্ভব ছিল না যে, মেঘের ওজন আছে, প্রশ্ন হচ্ছে সেই যুগের কোন কোন মানুষ এটা জানতো? এটার একটি লিস্ট নাস্তিকরা কেন দেখায় নি? তখনকার সময়ে কোন কোন মানুষ এটা অনুধাবন করেছিল যে, যেহেতু মেঘ থেকে আসা বৃষ্টির পানির ওজন আছে, সেহেতু মেঘেরও ওজন থাকবে? শুধু দাবি করলেই কি হবে? কুরআনের ভুল ধরে ফেলেছি বলে হে হে হে হে বান্দরের মতো হাসলে হবে? তখনকার সময়ে কোন কোন মানুষ বিশ্বাস করতো যে, মেঘের ওজন আছে? পাঠক মনোযোগ দিন, নাস্তিকরা স্রেফ দাবি করেছে যে তখনকার মানুষদের এটা জানা অসম্ভব কিছু ছিল না কিন্তু কোন কোন মানুষ এটা বিশ্বাস করতো অথবা কারা এই গবেষণা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে মেঘ থেকে আসা বৃষ্টির যেহেতু ওজন আছে সেহেতু মেঘেরও ওজন আছে? কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হবার আগে নবী মোহাম্মদ (সা) এর যুগের আশে পাশে যেসব মানুষ তখন বসবাস করতো সেই সব মানুষদের মধ্যে কারা কারা এটা বিশ্বাস করতো যে মেঘের ওজন আছে? যেখানে পানিচক্র নিয়েই হরেকরকম মতবাদ প্রচলিত ছিল(১) সেই সময়ে মানুষ, মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়, যেহেতু পানির ওজন আছে সেহেতু মেঘেরও ওজন আছে- এই চিন্তা করে একেবারে নিশ্চিতরুপে কারা কারা বিশ্বাস করতে পেরেছিল যে মেঘেরও ওজন থাকতে পারে? কুরআন যে আল্লাহর অবতীর্ণ সত্য কিতাব প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে না? হযরত মোহাম্মদ (সা) যে আল্লাহর সত্য নবী ও রাসুল ছিলেন সত্য প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে না? ইসলাম সত্য প্রমাণ হয়ে গেলো না?


মেঘের ওজন আছেঃ


সাম্প্রতিক বছরগুলিতে করা গবেষণা অনুসারে, মেঘের ওজন সম্পর্কে বেশ বিস্ময়কর পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কিউমুলোনিম্বাস মেঘ, যা বজ্র মেঘ নামে পরিচিত, এতে ৩০০০০০ টন জল থাকতে পারে। হ্যাঁ, আপনি ভুল পড়েন নি; আমরা ৩০০০০০ টন ভারী মেঘের কথা উল্লেখ করছি (২)।


‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় ২৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে “মেঘের ওজন কত” শিরোনামে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়। সেখানে বর্ণনা করা হয়,(৩)


কিউম্যুলাস মেঘের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত সচরাচর এক কিলোমিটার হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্চের গবেষক মার্গারেট লেমোন। মেন্টাল ফ্লস ডটকমকে বলেন, এমন মেঘের উচ্চতাও এক কিলোমিটারের কাছাকাছি হয়ে থাকে। সে হিসাবে ধরে নেওয়া যাক কিউম্যুলাস মেঘের আয়তন ১০০ কোটি ঘনমিটার। অলিম্পিক গেমসের সুইমিংপুলগুলো যদি আড়াই হাজার ঘনমিটার হয়ে থাকে তবে চার লাখ সুইমিংপুলের সমান। এবার দুটো গুণ করলেই মিলবে ওজন। অর্থাৎ পাঁচ লাখ কেজি। পাউন্ডের হিসাবে ১১ লাখ পাউন্ড। তুলনায় গেলে বলা যেতে পারে, ১০০টি হাতির মোট ওজনের সমান। যেহেতু মার্কিন নির্বাচনের মৌসুম, তাই হাতির সঙ্গে গাধার হিসাবটাও দেওয়া যেতে পারে। আড়াই হাজার গাধার ওজনও কিউম্যুলাস মেঘের কাছাকাছিই হবে।


উপসংহারঃ নাস্তিকরা যতোই কুরআনের ভুল ধরার নামে কুরআন নিয়ে মিথ্যাচার করুক না কেন, কুরআন সব সময়ই সত্য ছিল, আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। নাস্তিকদের অভিযোগ গুলোই আসলে ভ্রান্ত ও মিথ্যায় ভরা। কুরআন নবী মোহাম্মদ (সা) লিখেন নাই বরং কুরআন একমাত্র আল্লাহরই কিতাব। কুরআন নবীজি (সা) কোনো বই থেকে কপি করা তো দূরে থাক, কখনো উনি কুরআন কপির করার জন্য বই পর্যন্ত পড়েছিলেন কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।


রেফারেন্সঃ


(১) কুরআনে কি আসলেই অসম্পূর্ণ পানিচক্রের বিবরণ আছে? https://response-to-anti-islam.com/


(২) The Weight of Clouds: https://questionsonislam.com/article/weight-clouds?fbclid=IwAR1iG21Ikd5hgvpQuGsK8P-7RjZFpImLiWZ__ztEMChykpqYFz2UyIPLK7M


(৩) মেঘের ওজন কত https://www.prothomalo.com/education/science/%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%98%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%93%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%A4



এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post