একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্পে দুজন নারীর সাক্ষ্য কেন বলল ইসলাম ? নারীদের কি জ্ঞান পুরুষের অর্ধেক ?

প্রশ্নঃ একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্পে দুজন নারীর সাক্ষ্য কেন বলল ইসলাম ? নারীদের কি জ্ঞান পুরুষের অর্ধেক ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ বাহ্যিক দৃষ্টিতে সাক্ষীদানের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের যে বৈষম্য দেখা যায় তা বিন্দুমাত্রও লিঙ্গ বৈষম্যের কারনে নয় । বরং সেটা ইসলামের বিবেচনায় সমাজ নারী ও পুরুষের প্রকৃতি ও ভূমিকার পার্থক্যের জন্য । তাই আসুন প্রথমে উক্ত আয়াতটি সম্পূর্ণ জেনে নেইঃ

* সুরা বাকারা ২:২৮২ = হে ইমানদারগণ যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তোমরা একে অপরের সাথে লেনদেন করো তাহলে তা লিখে রাখো । অতপর তোমাদের নিজেদের মধ্যের দুজন পুরুষকে সাক্ষী বানাও । তখন যদি দুজন পুরুষের আয়োজন না করা যায় তাহলে একজন পুরুষ ও যাদের সাক্ষীর ব্যাপারে তোমরা আস্থাশীল এমন দুজন নারী বেছে নেও যে একজন ভুল করলে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দিতে পারে ।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ফি যিলাযিল কুরানের খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০১ এ বলা হয়েছেঃ বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে দুইজন পুরুষ সাক্ষী পাওয়া দুর্লভও হতে পারে এই ক্ষেত্রে ইসলামের আইন কাজটি আরও সহজ করার জন্য নারীদেরকেও সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তলব করে । ইসলামের আইন পুরুষদের তলব করে শুদু এই জন্য যে একটি সুস্থ স্বাভাবিক মুসলিম সমাজে পুরুষরাই সাধারনত সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকে ।

তাফসীরে ফি যিলাযিল কুরানের খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০২ এ বলা হয়েছেঃ অবশ্য দুই জন পুরুষ পাওয়া না গেলে একজন পুরুষ এবং দুইজন নারীর সাক্ষী দিতে হবে । এখানে একটি প্রশ্ন আসে যে, দুইজন কেন নারী সাক্ষ্য দিবে ? এর কারন হলঃ একজন ভুলে গেলে অন্যজন যাতে স্মরণ করিয়ে দেয় । ভুলে যাওয়ার একাধিক কারন থাকতে পারে। চুক্তির বিষয় নারীর জ্ঞান কম থাকাও একটি কারন বটে, অভিজ্ঞতা কম থাকার কারনে চুক্তির সব বিষয় সম্পর্কে তার জানা নাও থাকতে পারে এটা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার । তাই প্রয়োজনের সময় নিরভুল সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যতটা পরিষ্কার বুঝ দরকার একজন নারীর তা নাও থাকতে পারে । এই ক্ষেত্রে একে ওপরকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সকল বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে । আরেকটি কথা হল নারীরা নমনীয় স্বভাবের হয় আবার বেশি আবেগ প্রবন হয় অনেক সময় আর চুক্তি বিষয় গুলা একটু শক্ত মানুষ হয়েই করতে হয় তাই একজন নারীর যেন ধোঁকার স্বীকার না হয় তাই তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে আরেকজন নারীর দরকার । এটা একটা সেফটির মতন অনেকটা ।

এই বিষয় হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমেদ এর "সাক্ষীর কাঠগড়ায় নারী" বইটি পড়তে পারেন । 

খেয়াল করুন আয়াতটি ব্যবসা টাকা পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত । এসব ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তির আদেশ দেয়া হয়েছে এবং সেখানে দুজন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে আর সে দুজনই পুরুষ হতে হবে কিন্তু যদি আস্থাভাজন দুজন পুরুষের মানুষের ব্যাবস্থা না করা যায় কেবল তখন অন্ততঃ একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা থাকতে হবে ।আর্থিক লেনদেন বিষয় যেখানে নারীরা বিজনেস সম্পর্কে অথবা যে নারীরা আর্থিক সংক্রান্ত লেনদেন বুঝে কম তাদের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্প হিসেবে দুইজন নারীর সাক্ষীকে রাখা হয়েছে ।

এখন প্রশ্ন আসতে পারেঃ যদি একজন নারী দক্ষ হয় অথবা পুরুষ আর্থিক সংক্রান্ত লেনদেন কম বুঝে সে ক্ষেত্রে কি সমাধান ? এর উত্তর সহজ । তাহলে উক্ত পুরুষ নারীর থেকে পরামর্শ নিতে পারবে কোন সমস্যা হবে না ।

= একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্প দুজন নারীর সাক্ষ্য সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য না । সাক্ষী প্রদান করার ক্ষেত্রে কুরানের কিছু আয়াত আছে যেখানে নারী এবং পুরুষের পার্থক্য বা তফাৎ করা হয়নি । যেমনঃ

১/ উত্তরাধিকার ওসিয়ত করার ক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে দুজন ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তির কথা বলা হয়েছে । সুরা মায়দা ৫:১০৬= তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মৃত্যুর দুয়ারে পৌছায় তখন ওসিয়ত করলে হলে তোমাদের মধ্যে থেকে সাক্ষী রেখো । তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তি অথবা বাইরের ।

২/ তালাকের ক্ষেত্রে দুজন ন্যায়পরায়ন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে । সুরা তালাক ৬৫:২ = সাক্ষীর জন্য তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তিকে নাও ।

৩/ নারীর প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগ করা হলে দাবী কারীর পক্ষে চারজন সাক্ষী দাড় করাতে হবে। সুরা নুর ২৪:৪ = যারা চরিত্রবান নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারপর তারা চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারবে না (অভিযোগ প্রমানের জন্য) তাহলে তাদেরকে আশিবার বেত্রাঘাত করো এবং আর কখনোই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না । আর এরাই হল ফাসেক ।

৪/ কুরআন পরিষ্কার করে দিয়েছে একজন নারীর সাক্ষী একজন পুরুষের সমান। সুরা নুর ২৪:৬ = যারা তাদের স্ত্রীদের সম্পর্কে অভিযোগ তুলবে অথচ তাদের কাছে তাদের নিজেদের ছাড়া অন্যকোন সাক্ষ্যদাতা নাই তাহলে তাদের একজনের সাক্ষ্যই চারবার আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে বললে গ্রহণ যোগ্য হবে ।

৫/ হযরত আয়েশা (রা) এর একক সাক্ষীই হাদিসের বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে । হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত ২২২০টি  হাদিস শুধুমাত্র তাঁর একার উপরেই বিশুদ্ধতার প্রমান । তিনি একজন নারী এবং  হাজার হাদিস বর্ণনা করেছেন । একজন নারীর সাক্ষীর যে যোগ্যতা আছে কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী এটাই বিশাল প্রমান হিসেবে বলা যায় ।

৬/ চাঁদ দেখার ব্যাপারে একজন ন্যায়পরায়ন নারীর সাক্ষীই এনাফ । এখানে মজার ব্যাপার আছে খেয়াল করেন । ইসলামের একটি স্তম্ভ রোজার কার্যকারিতার ব্যাপার সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠী মাত্র একজন নারীর সাক্ষীর উপরেই নির্ভর করতে পারে ।

৭/ আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শুদুমাত্র নারীর সাক্ষীই গ্রহণযোগ্য সেখানে পুরুষের কোন ভূমিকা নাই । যেমন কোন নারীর মৃতদেহের গোসল করানোর ক্ষেত্রে সাক্ষী শুদুমাত্র একজন নারীর পক্ষেই হওয়া সম্ভব ।

প্রশ্নঃ একজন নারীর জ্ঞান কি পুরুষের অর্ধেক ?

উত্তরঃ এই বিষয় হাদিস হলঃ

* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিস ৩০৪, সহিহ হাদিসঃ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমার সদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী কারণে, হে আল্লাহ্‌র রসূল? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তারা বললেনঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, হে আল্লাহ্‌র রসূল? তিনি বললেনঃ একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম হতে বিরত থাকে না? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি।

* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৫৮, সহিহ হাদিসঃ আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নারীদের সাক্ষ্য কি পুরুষদের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? উপস্থিতরা বললো, অবশ্যই অর্ধেক। তিনি বলেন, এটা নারীদের জ্ঞানের ক্রটির কারণেই।

উপরের হাদিস গুলো মনোযোগের সাথে পড়লে আমরা যা বুঝতে পারিঃ

১/ নারীরা জাহান্নামে বেশি যাবে কারন তারা মেক্সিমাম অভিশাপ দিয়ে থাকে , স্বামীর কথা অমান্য করে ।

২/ নারীদের বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি আছে ।

৩/ নারীদের এমন ক্ষমতা আছে যে নিজেদের থেকে বেশি দক্ষ একজন মানুষকেও বশ করতে পারে ।

৪/ একজন নারীদের সাক্ষী একজন পুরুষের সাক্ষীর অর্ধেক। হাদিসেই বলা আছে বুদ্ধির ত্রুটির কারনে (সব ক্ষেত্রে নয় বিস্তারিত উপরে লেখা আছে)

৫/ দ্বীনের ত্রুটির জন্য হায়েজ উল্লেখ করেছেন নবী মুহাম্মদ (সা) ।

৬/ নারীরা বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না এই কথা উপরের হাদিসে কথাও নাই ।

৭/ নারীরা জাহান্নামে যেই কারনে যাবে সেই কারন গুলি যদি নারীদের মধ্যে না থাকে তাহলে নারীরা জাহান্নামে যাবে না ।

৮/ আর নারীদের হায়েজ দ্বীনের ত্রুটি বলা হয়েছে এর মানে এই না যে নারীরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রিয় হতে পারবে না ।

৯/ সুরা ফাতির ৩৫:২৮ = বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে । - এখানে নারী যদি আল্লাহ্‌কে বেশি ভয় করে তাহলে নারী একজন পুরুষ থেকে আল্লাহর বেশি প্রিয় হতে পারবে যা একজন কম জ্ঞানী পুরুষ হতে পারবে না ।

১০/ একজন নারী যদি কঠোর পরিশ্রম করে জ্ঞান অর্জন করে , অভিশাপ না দেয় , স্বামীর ভাল কথা মান্য করে, ইসলাম মেনে চলে তাহলে আল্লাহ্‌ যদি তাকে মাফ করে তাহলে এই নারীরা জান্নাতে যাবে কোন সন্দেহ নাই ।

১১/ উপরের হাদিসে কথায় আছে "নারীরা জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না" ???

১২/ সেসব নারীদের জ্ঞানে ত্রুটি আছে তারা সেটি ঠিক করতে পারবে না এটা হাদিসের কথায় আছে ???



এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post