বিষয়ঃ কুরআন পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা বলে?
লিখেছেনঃ এমডি আলী।
======================
ভূমিকাঃ চ্যাপ্টা সমতল পৃথিবীর ছবি এবং কুরআন থেকে কিছু আয়াত দেখিয়ে ইসলামবিরোধীরা বুঝাতে চায় কুরআনে নাকি পৃথিবীকে চ্যাপ্টা সমতল বলা হয়েছে। অনেকেই যাচাই ছাড়াই কথাটি বিশ্বাসও করে নেয়। কিন্তু যারা বুদ্ধিমান, যারা চিন্তাশীল তারা তদন্ত করবে। তারা যাচাই করে দেখবে আসলেই ইসলামবিরোধীদের দাবি সত্যিটা। কুরআনে আসলেই বৈজ্ঞানিক ভুল আছে কিনা। কিন্তু কয়জনে যাচাই করে? কয়জনে সততার সাথে বিশ্লেষণ করতে পারে? ইসলামবিরোধী মুক্তমনাদের দাবিটি আসলেই সত্যি কিনা সেটা তদন্ত করবো। তারা কুরআন-হাদিস থেকে যা যা দাবি করে সমস্ত কিছুই আজকে যাচাই বাছাই করা হবে। প্রশ্নটা হচ্ছে আপনার মধ্যে সত্যিটা গ্রহণ করবার হিম্মত আছে কি?
সেই আয়াত গুলো যা থেকে দাবি করা হয় পৃথিবীর আকৃতি নাকি সমতলঃ
আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:২২ আয়াতে বলা আছে,
যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।
আল কুরআন, সুরা হিজর ১৫:১৯,২০ আয়াতে বলা আছে,
আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি। আমি তোমাদের জন্যে তাতে জীবিকার উপকরন সৃষ্টি করছি এবং তাদের জন্যেও যাদের অন্নদাতা তোমরা নও।
আল কুরআন, সুরা ত্বা-হা ২০:৫৩ আয়াতে বলা আছে,
তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।
আল কুরআন, সুরা যূখরুফ ৪৩:১০ আয়াতে বলা আছে,
যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে তোমাদের জন্যে করেছেন পথ, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।
আল কুরআন, সুরা ক্বাফ ৫০:৭ আয়াতে বলা আছে,
আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।
আল কুরআন, সুরা যারিয়াত ৫১:৪৮ আয়াতে বলা আছে,
আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।
আল কুরআন, সুরা নূহ ৭১:১৯,২০ আয়াতে বলা আছে,
আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা। যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে।
আল কুরআন, সুরা নাবা ৭৮:৬,৭ আয়াতে বলা আছে,
আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক?
আল কুরআন, সুরা নাজিয়াত ৭৯:৩০,৩১,৩২,৩৩ আয়াতে বলা আছে,
পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।
আল কুরআন, সুরা গাশিয়াহ ৮৮:১৮,১৯,২০ আয়াতে বলা আছে,
এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
আল কুরআন, সুরা শামস ৯১:৬ আয়াতে বলা আছে,
শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর ।
আল কুরআন, সুরা রহমান ৫৫ঃ১০ আয়াতে বলা আছে,
আর যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টজীবের জন্য।
উক্ত আয়াত গুলো থেকে ইসলামবিরোধীরা দাবি করে থাকেন কুরআনে পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা বলা হয়েছে।
আসলেই কি কুরআনে পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা সমতল?
পাঠক আপনাদেরকে আমি অনুরোধ করবো আপনারা ভালো করে সব আয়াত গুলো পাঠ করে দেখুন তো কোথায় এই কথা লিখা আছে “আল্লাহ পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা সমতল করেছেন”? যে কেউই সততার সাথে সব গুলো আয়াত পড়লে সেও বলতে বাধ্য হবে কুরআনে এমন কিছুই দাবি করা হচ্ছে না। উক্ত আয়াত গুলো পাঠ করলে এটা স্পষ্ট হয় যে উক্ত আয়াত গুলোতে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠকে টার্গেট করে বলা হয়েছে। পৃথিবীর আকার আকৃতিকে নয়। প্রতিটি আয়াতেই স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে আমাদের চলাফেরা করবার জন্য, আমাদের সুবিধার জন্য ভূপৃষ্ঠকে সমতল করা হয়েছে, বিছিয়ে দেয়া হয়েছে ইত্যাদি। আয়াতে কোনো দিক থেকেই এটা বুঝা যায় না যে পৃথিবীর আকার আকৃতি চ্যাপ্টা সমতল বলা আছে। ভূমিকে সমতল করা করা হয়েছে পৃথিবীর আকৃতিকে নয়। ভুমিকে বিছিয়ে সেটাতে পাহাড় গেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভুমিকে বিছিয়ে সেটাকে চলার পথ তৈরি করেছেন মানুষের সহজের জন্য। তাই এটা স্পষ্ট যে ইসলাম বিরোধীরা কুরআন নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।
পাঠক আপনি যদি উপরের সমস্ত আয়াতের তাফসীর পড়েন আপনি কোথাও এই কথা পাবেন না যে কুরআনের আয়াত বলছে “পৃথিবীর আকার আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা”। কারণ কুরআনে এমন কিছুই দাবি করা হয় নাই। উপরক্ত আয়াতের সত্য এবং সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে আল্লাহ পৃথিবীর ভুমিকে মানুষের জন্য বিছিয়ে দিয়েছেন। মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করছে ,সহজে চলাফেরা করছে, খাদ্য উৎপাদন করছে ইত্যাদি। আমরা কিন্তু নিজে চোখেই এসব দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের জন্য ভুমিকে বিছিয়ে দিয়েছেন সেটার কথাই বলা হচ্ছে আয়াতে গুলোতে ভুমিকে বিছিয়ে দেয়া আর পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা দুটি আলাদা বিষয়। বিবর্তিত মগজধারীরা এই পার্থক্য কিভাবে বুঝতে পারবে?
আসুন তাফসীর থেকে জেনে নেই।
তাফসীরে ইবনে কাসীর, সুরা বাকারা ২:২২ আয়াতের ব্যাখ্যা, ড মুজিবুর রহমান ১ খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
আল্লাহই যমীনকে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন এবং আকাশকে ছাঁদ করেছেন। যেমন অন্য আয়াতে আছে, আমি আকাশকে নিরাপদ চাঁদোয়া বা ছাঁদ বানিয়েছি এবং এতদসত্ত্বেও তারা নির্দেশনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে রাখে। আকাশ হতে বারিধারা বর্ষণ করার অর্থ হল মেঘমালা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করা এমন সময়ে যখন মানুষ ও পূর্ণ মুখাপেক্ষী থাকে । অতপর ঐ পানি থেকে বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল উৎপন্ন করা, যা থেকে মানুষ এবং জীবজন্তু উপকৃত হয় । যেমন কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এর বর্ণনা এসেছে। এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেছেন তিনি আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানা ও আকাশকে ছাঁদ স্বরূপ বানিয়েছেন,সুন্দর সুন্দর কমনীয় আকৃতি দান করেছেন, ভাল ভাল এবং স্বাদে অতুলনীয় আহার্য পৌঁছিয়েছেন।
তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন, ১ খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
শাব্দিক অনুবাদ, তিনি এমন, যিনি করেছেন, তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানাস্বরূপ এবং আসমানকে ছাঁদ স্বরূপ আর বর্ষণ করেছেন আসমান হতে পানি,উৎপন্ন করেছেন তা দ্বারা ফলসমূহ, তোমাদের খাদ্যরুপে......
তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড, ৮৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
পৃথিবীতে মানুষের সাচ্ছন্দে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করেছেন। পৃথিবীকে বিছানার মতো আরামদায়ক ও নিরাপদ অবস্থান স্থল বানিয়েছেন। আল্লাহ পেতে দেয়া এই বিছানাটার কথা মানুষ ভুলে যায়। কারণ এটি তাদের চোখে অনেক দীর্ঘ ও বিস্তৃত । জীবন যাপনের উপকরণ সরবরাহের জন্য আল্লাহ তা"লা এ পৃথিবীতে যে সমন্বয় ও সাযুজ্য সৃষ্টি করেছেন , আরাম আয়েশ, বিশ্রাম ও আনন্দের যে উপকরণ তার করায়ত্ত করে দিয়েছেন ,তাকে সে বিস্তৃত হয়। এই সাযুজ্য ও সামঞ্জস্য যদি সৃষ্টি না করা হতো তাহলে এই গৃহে এত সহজে ও সাচ্ছন্দে জীবন যাপনের কোন সুযোগ থাকতো না।
তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
আল্লাহ তা"লা পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন শয্যারুপে। শয্যা অর্থ এমন বিছানা যা বসোপযোগী। অতি শক্ত নয়। অতি কমলও নয়।
কোথাও কিন্তু বলা হচ্ছে না পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা। পৃথিবীর অর্ধেক চ্যাপ্টা, আধা চ্যাপ্টা বাকিটুকু গোল, একটুখানি গোল এই ধরণের কিছুই বলা হচ্ছে না কিন্তু। যমিনকে বা ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছেন বলার পরেই কিন্তু সাথে সাথে এটাও বলে দেয়া হয়েছে যে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং ফসল উৎপাদন করেছেন যাতে আমরা খাদ্য পাই , বৃষ্টি কিন্তু উপর থেকেই পরে আর আমরা কিন্তু ভুমিতে বসবাস করছি এটি কিন্তু আমরা নিজ চোখেই দেখছি তাহলে কুরআনের আয়াত কিভাবে বলতে পারে যে পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা?
তাফসীর থেকে আরও জানতে পড়ুনঃ
সূরা বাকারা ২:২২ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড,৮৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৭০ পৃষ্ঠা।
সূরা হিজর ১৫:১৯ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৩ খণ্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন ২ খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ৬ খণ্ড ৪৩২ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১২ খণ্ড, ৩২ , ৩৩ পৃষ্ঠা।
সূরা তাহা ২০:৫৩ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৪ খণ্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ৭ খণ্ড, ৪৭৬ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১৩ খণ্ড, ৮৯ পৃষ্ঠা ।
সূরা নুহ ৭১:১৯,২০ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৭ খণ্ড, ৬৭৭ পৃষ্ঠা । তাফসিরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৫৬৪,৫৬৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২১ খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আহসানুল বয়ান ১০২৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১২ খণ্ড , ১২৫ পৃষ্ঠা ।
সূরা নাবা ৭৮:৬,৭ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ১৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬১২ পৃষ্ঠা। তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২২ খণ্ড, ১৭ , ২০ পৃষ্ঠা।তাফসীরে মাযহারী ১২ খণ্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা । তাফহিমূল কুরআন, সূরা নাবা আয়াত ৬,৭ ।
সূরা যুখরুফ ৪৩:১০ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৬ খণ্ড, ৫৫৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ২৬৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১৮ খণ্ড , ২০২ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১০ খণ্ড, ৪৭১ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আহসানুল বয়ান ৮৫৪ পৃষ্ঠা । তাফহিমূল কুরআন, সূরা যুখরুফ আয়াত ১০, ১০৪ পৃষ্ঠা ।
সূরা ক্কাফ ৫০:৭ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৭ খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা । তাফসীরে জালালাইন ৬ খণ্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৩৬০ পৃষ্ঠা ।
সূরা যারিয়াত ৫১:৪৮ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৭ খণ্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৩৭৭ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১১ খণ্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১৯ খণ্ড, ২২২ পৃষ্ঠা।
সূরা নাজিয়াত ৭৯:৩০ - ৩৩ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ৪২ , ৪৪ পৃষ্ঠা । তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ৩১৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬২৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলালিল কুরআন ২২ খণ্ড(আমপারা), ৩২ পৃষ্ঠা ।
সূরা গাশিয়া ৮৮:১৯,২০ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬৬৭ পৃষ্ঠা । তাফহিমূল কুরআন, সূরা গাশিয়া ১৯,২০ আয়াত, ৯৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২২ খণ্ড(আমপারা), ১৭৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আহসানুল বয়ান ১০৮০ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১২ খণ্ড, ৪৪৮ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ওসমানী ৭ খণ্ড, ৩৭৭ পপৃষ্ঠা ।
সূরা শামস ৯১:৬ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬৮০ পৃষ্ঠা।তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২২ খণ্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা ।তাফসীরে ওসমানী ৭ খণ্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা।
দাহাহা শব্দ দিয়ে আসলেই কি বুঝায়?
আল কুরআন,সুরা নাজিয়াত - ৭৯:৩০, আয়াতে বলা আছে,
পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।
এই আয়াতে دَحٰٮهَا দাহাহা শব্দ দিয়ে কি পৃথিবীর আকৃতি উট পাখির ডিমের মত বুঝানো হয়েছে? নাকি পৃথিবীকে বিস্তীর্ণ করেছে, বা প্রসারিত করা হয়েছে বুঝিয়েছে? পবিত্র কুরআনের এই আয়াত দেখে অনেকেই মনে করে এই আয়াতে আল্লাহ বলেছে পৃথিবী সমতল। কিন্তু বিজ্ঞান এখন বলে পৃথিবী গোলাকার। তাহলে কি এই আয়াতে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে?
আসুন সততার সাথে বিশ্লেষণ করে দেখি। আরবি ভাষাতে একটা শব্দের অনেকগুলা অর্থ রয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষা ও ইংরেজি ভাষাতেও একই শব্দের আলাদা আলাদা অর্থ আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক।
খেয়াল করুন, যেমন বলা হলো,
“উত্তর” দিক থেকে বাতাস এসেছে।”
“সে পরীক্ষাই সব গুলো প্রশ্নের “উত্তর” দিয়েছে।”
এখানে দুইটা বাক্যে “উত্তর” শব্দটি আছে। কিন্তু শব্দের অবস্থান অনুযায়ী দুইটা শব্দ আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশ করেছে। আবার ইংরেজিতে,
“The doctors said she had only six months to live”
“The match will be televised live.”
এখানে “ live“ শব্দটি দুইটা বাক্যে আছে, তবে অবস্থান অনুযায়ী আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশ করেছে। তেমনিভাবে আরবিতে “দাহাহা” শব্দের অনেক গুলো অর্থ আছে (১)। যেমন,
যার মধ্যে রয়েছে ,বিস্তিত, প্রসারিত ,ডিমের আকারের,সম্প্রসারিত,ছড়িয়ে পড়া,বৃত্তাকার তৈরি,সুষম।
আল কুরআন, সুরা নাজিয়াত ৭৯:৩০,৩১,৩২,৩৩ আয়াতে বলা আছে,
পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।
আপনি যদি এই আয়াতকে ভূমির কথা ধরে বলেন আল্লাহ পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করেছেন তাহলেও যেমন সঠিক হবে তেমনি যদি আল্লাহ পৃথিবীকে বৃত্তাকার তৈরি করেছেন ধরেন এটাও রাইট হবে। দুইভাবেই আয়াতটিকে ব্যাখ্যা করা হয় এবং দুইভাবেই সঠিক বলে গণ্য হয়। কারণ আমাদের পৃথিবী যেমন সম্পূর্ণ গোলাকারও নয় আবার সম্পূর্ণ সমতলও নয়। আবার গোলাকারও আবার কিছুটা সমতলও। তাই শুধুমাত্র একটিকেই ধরে নিয়ে বাকি সব গুলোকে বাদ করে দেয়াটা অযৌক্তিক হবে। কিন্তু কুরআনের দৃষ্টিতে আপনাকে অবশ্যই এই কথাটি মনে রাখতে হবে যে কুরআন আপনাকে কখনো ভুল তথ্য দেবে না।
আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ২ আয়াতে বলা আছে,
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই।
তাই কেউ যদি ইচ্ছে করের জন্য কুরআন নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে কুরআনকে ভুল প্রমাণ করতে চায় তাহলে সেটা সেই ব্যক্তির অজ্ঞতা নিজের স্বার্থে বলে গণ্য হবে। কুরআন ভুল বলে প্রমাণ হবেই না।
তাফসীরে জালালাইনে পৃথিবীকে সমতল দাবি করা হয়েছে?
নাস্তিকরা বলে,পৃথিবীর সমতল হওয়ার ব্যাপারে তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে যা ১০০৪ হিজরি সালে লিখিত হয়েছিল। মুমিনরা এর কি জবাব দেবে?
তাফসীরে জালালাইনের, ৭ খণ্ড, ৪৪৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,আর ভুতলের দিকে কিরূপে তাকে সমতল করা হয়েছে? সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সারকথা, এ সকল বস্তুর প্রতি লক্ষ্য করে আল্লাহর কুদরত ও একত্বের প্রতি ঈমান আনাই বাঞ্ছনীয় ছিল। সর্বপ্রথম উষ্ট্রের উল্লেখ এ জন্য করা হয়েছে, যেহেতু এটা তাদের সাথে অন্যগুলাের তুলনায় অধিক সম্পৃক্ত। “সুতিহাত” শব্দ দ্বারা বাহ্যত এটাই প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী সমতল। শরিয়তের আলিমগণের মতও এটাই, ভূতত্ত্ববিদদের মতানুরূপ গােলাকার নয়। যদিও তাদের সে দৃষ্টিভঙ্গি শরিয়তের কোনাে আহকামের জন্য বিপত্তিকর নয়। - (সুরা গশিয়া ৮৮ঃ২০)
নাস্তিকরা তো আর পুরো বিষয়টা স্পষ্ট করে সবাইকে দেখাতে চাবে না। কারণ পুরো বিষয়টি দেখালে তো আর নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে সঠিক দাবি করতে পারবে না। আসুন তাফসীরে জালালাইনের উক্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পরবর্তী পৃষ্ঠাতে বলা হয়েছিল কিন্তু নাস্তিকরা সেগুলো দেখাতে চায় নি। তাফসীরে জালালাইনে সমন্বয় নিয়েও বলেছে কিন্তু সেটা দেখানো হয়নি। তাহলে আসুন জেনে নেই কি লেখা আছে পরবর্তী পৃষ্ঠা গুলোতে।
তাফসীরে জালালাইন,৭ খণ্ড, ৪৫২ পৃষ্ঠায় বলা আছে,
জমিনের আকারের ব্যাপারে ভূ-তত্ত্ববিদ ও আয়াতে কুরআনীর বক্তব্য কিভাবে সমন্বয় সাধন করা যায়? ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে জমিন গোলাকার। অথচ শরিয়তের আলিমগণের মতে এটা সমতল। কুরআনে কারীমের বাহ্যিক প্রকাশ্য অর্থ হতেও এটা সমতল হওয়ার প্রতীয়মান হয়। এ উভয় মতবাদের মধ্যে কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করা যাবে? মুফাসসিরগণের কয়েকটি জবাব দিয়েছে,
(ক) অসীম জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তা’লার বক্তব্যের মোকাবিলায় সসীম জ্ঞানের অধিকারী ভূ-বিজ্ঞানীদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। (খ) যদিও প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী গোলাকার তথাপি বিশালকায় হওয়ার কারণে সাধারণের দৃষ্টিতে সমতল বলেই মনে হয় আর কুরআন মাজীদের বক্তব্য, দৃষ্টিতে সমতল বলেই এভাবে পেশ করা হয়েছে। যাতে সাধারণের দৃষ্টিকোণ বুঝতে সুবিধা হয়। (গ) অথবা এটা বস্তুতই সমতল। অন্যথায় কোনো অবস্থাতেই মানুষ ও জীব-জন্তু এতে বসবাস করতে পারতো না। (ঘ) অথবা, যদিও আহলে হাইয়াত (ভূবিজ্ঞানীগণ) বলে থাকেন যে, পৃথিবী গোলাকার তথাপি তাদের একদলের মতে ঝড়, বন্যা ইত্যাদির কারণে পৃথিবী ক্রমান্বয়ে সমতল হয়ে গেছে। (ঙ) একদল বিজ্ঞানীর মতে পৃথিবী কমলালেবুর মতো গোল। আর কমলালেবুর উপরের অংশ চ্যাপ্টা ও সমতল হয়ে থাকে কাজেই আয়াতের বক্তব্যের সাথে তাঁদের বক্তব্যের বিরোধ নেই। (চ) সমতল হলে যেরূপ জীবন-যাপন সহজ গোলাকার হয়েও তদ্রূপ জীবন ধারণ সহজ হওয়ার কারণে একে সমতল বলা হয়েছে।
এতো এতো স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে অথচ এসব মুক্তচিন্তায় নাস্তিকরা দেখায় নাই। সততার সাথে বলতে গেলে উপরের সব গুলো বক্তব্যই সঠিক। কারণ বিজ্ঞানে আপেক্ষিকতা বলে কথা আছে। কিন্তু কেউ যদি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটিকে ধরে নিয়ে সব গুলোকে ভুল বলে তাহলেই এখানে বুঝতে হবে সেই লোকের বিজ্ঞান না বুঝতে পারা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইংরেজিতে 6 সংখ্যার এর কথা। আপনি যদি একপাশে দাঁড়িয়ে বলেন এটা সিক্স এটা যেমন সঠিক তেমনি একই সংখ্যার অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে যদি বলেন এটা নাইন সেটাও সঠিক। কিন্তু কেউ যদি এক প্রান্তেই দাঁড়িয়ে বলে এটা সিক্স এটা কখনো নাইন হতে পারে না তাহলে সেটা সেই লোকের অজ্ঞতা হবে। তেমনিভাবে আমরা যদি বলি এই দুনিয়ার নাস্তিকরা কেমন যারা দুনিয়াতে দাঁড়িয়ে নিজেদের দাবিকে সঠিক প্রমাণ করবার জন্য মুক্তচিন্তায় মিথ্যা বলে- এখন কেউ যদি বলে আমি দাবি করেছি পৃথিবী সমতল কথাটি অবশ্যই ভুল হবে। কারণ সেটা বুঝাইনি। আমি এখানে পৃথিবীতে দাঁড়ানো বলতে ভূপৃষ্ঠকে বুঝিয়েছে।
আল কুরআন, সুরা গাশিয়াহ ৮৮:১৮,১৯,২০ আয়াতে বলা আছে,
আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
আয়াতটি খেয়াল করুন। এই আয়াতের কেন্দ্রবিন্দু হলেন আপনি কারণ আপনাকে দেখতে বলা হচ্ছে। আপনি আয়াতে যা যা কমান্ড করা হচ্ছে ফলো করতে থাকুন। আকাশে দিকে তাকালেন দেখলেন সেটা অনেক উচ্চ এরপরে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন কতো মজবুত ভাবে স্থাপন করা এরপরে পৃথিবী অর্থাৎ ভূমির দিকে দেখলেন আসলেই ভূমিকে সমতল বিছানো হয়েছে। এটা তখনই সম্ভব যখন দুনিয়ার শেইপ গোলাকার। না হলে আকাশের উচ্চতার কথা কেন বলা হবে?
আর কুরআন অনুযায়ী দুনিয়ার শেইপ যদি সমতল চ্যাপ্টাই হতো তাহলে আকাশের উচ্চতার দিকে কখনোই আল্লাহ তাকাতে বলতেন না। কারণ তখন দুনিয়া আর আকাশ স্যান্ডউইচের মতো হতো,মিশ্রন। কিন্তু কুরআন এমন কিছুই বলছে না। কুরআন আপনাকে আকাশের উচ্চতার দিকে তাকাতে বলেছে, পাহাড়ের দিকে তাকাতে বলেছে, ভূমির দিকে তাকাতে বলেছে।
হাদিসে পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা বলা হয়েছে?
নাস্তিকরা বলে থাকে, হাদিসে স্পষ্ট রয়েছে যে পৃথিবীর ডানে এবং বামে একটি শেষ প্রান্ত রয়েছে। সুতরাং হাদিস থেকেও প্রমাণ হয় যে পৃথিবীকে সমতল বলা হয়েছে। কারণ গোল পৃথিবীর তো শেষ প্রান্ত হতে পারে না।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৯২১, সহিহ হাদিস,সাহল বিন সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তিই তালবিয়া পাঠ করে, সাথে সাথে তার ডান ও বাম দিকের পাথর, গাছপালা অথবা মাটি, এমনকি দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত উভয় দিকের সবকিছু তালবিয়া পাঠ করে।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ৮২৮, সহিহ হাদিস, সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়।-ihadis.com
কেউ যদি Straw man fallacy-র উদাহরণ দেখতে চায় সে যেন নাস্তিকদের এই অভিযোগটির দিকে তাকায়। আমরা জানি এই কুযুক্তিতে অন্য কারো কথাকে নিজের মতো করে ঘুরিয়ে-সাজিয়ে অথবা বিকৃত করে বলা হয় যেন আক্রমণ করা সহজ হয় একেই যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে Straw man fallacy বা কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তি বলা হয়।
এখানে হাদিসে দুনিয়ার আকৃতি কেমন সেটা নিয়ে কিছুই বলা হচ্ছে না। পাঠক খেয়াল করুন তো এই হাদিসে কি নবী মোহাম্মদ (সা) পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার নাকি চ্যাপ্টা এমন কিছু বলেছেন? অথবা পৃথিবীর আকৃতি নিয়েই বা কিছু বলতে চেয়েছেন? বা এমন কিছু বুঝিয়েছেন? উত্তর হচ্ছে না। হাদিসটি স্পষ্ট হচ্ছে তালবিয়া পাঠ নিয়ে। নবীজি (সা) নিজেই বলেছেন, যে ব্যক্তিই তালবিয়া পাঠ করে, সাথে সাথে তার ডান ও বাম দিকের পাথর, গাছপালা অথবা মাটি, এমনকি দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত উভয় দিকের সবকিছু তালবিয়া পাঠ করে। এখানে পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে কথা কেন আসবে? অথবা কিভাবে আসে? সুতরাং যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে নাস্তিকদের অভিযোগটিই বাতিল। নাস্তিকদের অন্যান্য অভিযোগের মতো এখানেও নাস্তিকরা লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই এখানে পৃথিবীর শেষ প্রান্তই বুঝানো হয়েছে তাহলেও এটা ভুল হবে না। কারণ গোলাকার জিনিসেরও শেষ প্রান্ত হয়। ধরুন আমাদের পৃথিবীকে যদি ফুটবলের মতো গোলাকার ধরে নেই তাহলে এর কি শেষ প্রান্ত থাকবে না ভিতর থেকে দেখলে? বুঝার চেষ্টা করুন। আরেকটু সহজ করে বলি। আপনি যদি এখন রুমে বসে থাকেন তাহলে কল্পনা করুন আপনার রুমটি সম্পূর্ণ গোলাকার। এখন আপনি যদি রুম থেকে বের হয়ে আসতে চান তাহলে কি এর শেষ প্রান্ত অতিক্রম হয়ে আপনাকে আসতে হবে না? অবশ্যই। তেমনিভাবে হাদিসে যেখানে বলা আছে “পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ওপ্রান্ত পর্যন্ত” অথবা “দুনিয়ার শেষ প্রান্ত” এটা থেকে এটা প্রমাণ হয় না যে দুনিয়া গোলাকার নয় কারণ গোলাকার জিনিসেরও শেষ প্রান্ত থাকতেই পারে এটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার ইয়ামাল পেনিনসুলা এলাকা। আবার পৃথিবীর শেষ মাথা হিসেবে পরিচিত নরওয়ের রোগাল্যান্ডের একটি পাহাড়ি পর্যটন এলাকা। তারমানে কি পৃথিবীকে সমতল বলা হয়? উত্তর হচ্ছে না। তেমনিভাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত বলতেও পৃথিবীকে সমতল বুঝানো হয় না। তাছাড়া হাদিসটিতেই স্পষ্ট করে ডান ও বাম দিকের পাথর, গাছপালা অথবা মাটির কথা বলা হয়েছে এরপরে দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত উভয় দিকের কথা বলা হয়েছে এটা থেকে স্পষ্ট যে এখানে ভূমিকেই পৃথিবী হিসেবে ধরে নিয়ে বলা হয়েছে।
আরও আরও সহজ করে বুঝিয়ে বলছি। কারণ নাস্তিকদের মস্তিস্ক এতো দুর্বল যে সহজ বিষয় গুলো সহজে বুঝতে চায় না। মানুষের মতো চিন্তাশীল মগজ হলে সহজেই বুঝতে পারতো যদিও। কথা গুলো খেয়াল করুন।
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (International Date Line) পৃথিবীর পৃষ্ঠে অঙ্কিত একটি কাল্পনিক রেখা যা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং একটি পঞ্জিকা দিবস এবং পরের দিনটির মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে ১৮০ দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে, তবে কিছু অঞ্চল এবং দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি এটিকে বিচ্যুত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা যা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং একটি পঞ্জিকা দিবস এবং পরের দিনটির মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে। এই কথা থেকে কি এটা বলা যাবে যে পৃথিবীকে সমতল বলা হয়েছে? কারণ এখানে তো উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত বলা হয়েছে, তাহলে? শুধু কি তাই?
আমরা জানি জাপানকে সূর্য উদয়ের দেশ বলা হয়ে থাকে (Japan-the Land of the Rising Sun) (২)। জাপান, নিপ্পন, নিহন শব্দের অর্থ হল "সূর্যের উৎপত্তি" অর্থাৎ যেখানে সূর্য উদিত হয় এবং এই কারণেই দেশটিকে প্রায়শই উদীয়মান সূর্যের দেশ বলা হয়। চীনা জনগণের চোখে, জাপানের যে দিকে সূর্য ওঠে সেদিকে (জাপান চীনের পূর্বে অবস্থিত) । এখন কেউ নিজের মূর্খতাকে প্রকাশ করবার জন্য যদি বলে জাপানকে যেহেতু সূর্য উদয়ের দেশ বলা হয় সেহেতু এটা থেকে প্রমাণ হয় পৃথিবী সমতল তাহলে কি কথাটি সঠিক হবে?
এছাড়া পৃথিবীর কোন প্রান্তে কি আছে কতটুকু আছে, কত মিটার আছে,কত কিলোমিটার আছে, কত মাইল আছে ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে “land area of the world” এই নামে সার্চ করলেই বিস্তারিত সব পেয়ে যাবেন (৩)। এখন নাস্তিকদের মতো কোনো মূর্খ যদি বলে এখান থেকে প্রমাণ হয় পৃথিবী সমতল তাহলে কি এটা ঠিক হবে?
তেমনিভাবে নবী মোহাম্মদ (সা) যে দুনিয়ার শেষ প্রান্তের কথা বলেছেন এটা থেকে প্রমাণ হয় না যে পৃথিবী সমতল কারণ উনি এই নিয়ে কিছুই বলেনও নাই, বুঝানও নাই। অথচ নাস্তিকরা কিভাবে মুক্তচিন্তায় মিথ্যাচার করলো দেখলেন তো?
নাস্তিকদের আরও মিথ্যাচারপূর্ণ দাবি ও প্রশ্নের জবাবঃ
নাস্তিকরা এই আয়াত দেখিয়ে দাবি করে
পৃথিবীকে যেহেতু কার্পেট ও বিছানার সাথে তুলনা করা হয়েছে, তাই কুরআন পৃথিবীকে সমতল বলেছে।
সুরা গাশিয়াহ ৮৮:১৮,১৯,২০ = এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
সুরা শামস ৯১:৬ = শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর ।
সুরা নাজিয়াত ৭৯:৩০,৩১,৩২,৩৩ = পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।
এসব আয়াতে "সমতল বিছানো হয়েছে" বা “পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন” লেখা আছে বিধায় নাস্তিকরা বলতে চায় এখানে “পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা” কিন্তু আয়াত গুলো যদি একটু মনোযোগের সাথে পড়েন , দেখতে পাবেন পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বলার পরেই আরও সাথে বলে দেয়া হয়েছে এর মধ্য থেকে পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন। পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে। আয়াতে পরিষ্কার বলাই হচ্ছে তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারের জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা পৃথিবীর কোথায়? অবশ্যই ভুমিতে। আয়াতের উদ্দেশ্য সুস্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এখানে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বলতে আসলে ভুমিকেই বিস্তৃত করেছেন বুঝানো হয়েছে। পৃথিবীর পুরো আকৃতিতে নয়। ধরুন আমি বললাম গাড়িতে আমি চাকা তৈরি করেছি। এর মানে এই না যে গাড়িটি চাকার মত গোল। আমি বললাম আমি গাড়িটিকে এমন ভাবে তৈরি করেছি যেমন গাড়িটি বিছানার উপরে চলতে পারে। জ্ঞানী মানুষরা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে এখানে গাড়িটিকে বিছানায় চলতে বলা মানে মাটির উপরে অথবা ভুমির উপরে চলাই বুঝানো হয়েছে এরমানে এই না যে গাড়িটির আকৃতি মাটির মতো বিছানো।
তেমনিভাবে আল্লাহ ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছেন বলা হয়েছে এরমানে এই না যে পৃথিবীর আকৃতির শেইপ চ্যাপ্টা সমতল এটা বুঝানো হয়েছে বরং মানুষ যে সেখানে বসবাস করে সেটার কথাই বলা হচ্ছে আর সেটা বিছানোই। আমরা নিজেরাও সেটা দেখতে পাচ্ছি। কুরআনে এমন কোনো আয়াত নেই যেখান থেকে কেউ পৃথিবীর আকারকে অকাট্য যুক্তি দিয়ে সমতল দাবি করতে পারে। আপনি যদি কুরআনের বিছানা বা কার্পেট সংক্রান্ত আয়াতগুলো দেখেন- তাহলে দেখবেন- ভূমিকে বিছানো হয়েছে- এই কথা বলার সাথে সাথেই তোমরা চলাফেরা করতে পারো, ফসল উৎপন্ন করতে পারো- এই কথাগুলো বলা হয়েছে। কথাগুলো দিয়ে ভুমির ব্যাপারটাই নিশ্চিত করা হয়েছে।
এরপরে নাস্তিকরা প্রশ্ন করে,
অনেক অনুবাদে আরদ শব্দের অর্থ “পৃথিবী” আবার আরদ শব্দের অর্থ “ভূমি” বলা হয়েছে-এরকম কেন?
আরবি “আরদ” শব্দের দুটো অর্থ হয়। প্রথমটি হচ্ছে ভূমি বা ভূপৃষ্ঠ, দ্বিতীয়টি হচ্ছে পৃথিবী। অন্যান্য অবস্থাতেও ব্যাবহার হতে পারে। এখন আমাদেরকে দেখতে হবে কোন প্রেক্ষাপটে কোন শব্দ ব্যাবহার হবে। যেখানে যেই শব্দ ব্যাবহার করা দরকার সেখানে যদি সেই শব্দ ব্যাবহার না করে ভুল শব্দ ব্যাবহার করা হয় তাহলে তো এটা ঠিক নয়।
যেমন উর্দুতে “যামিন” শব্দের দুটো ভিন্ন অর্থ করা যায় অথচ শব্দ কিন্তু একই। যেমন আমি যদি বলি “আমি যমিন কিনেছি” তাহলে এখানে অবশ্যই ভূমি বা ভূপৃষ্ঠ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু আমি যদি বলি “আকাশ ও যমিন থেকে আমার আকাশকেই বেশি ভালো লাগে” তাহলে এখানে যমিন বলতে পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে। তেমনিভাবে কুরআনে যেখানে অনুবাদ করা হয়েছে “পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছেন” এইসব আয়াতের পুরো প্রেক্ষাপট দেখলেই বুঝা যায় সেখানে আসলে ভূমি বা ভূপৃষ্ঠকেই বুঝানো হয়েছে। পৃথিবীর আকৃতিকে নয়।
পবিত্র কুরআনে “আরদ” শব্দটি ৪৬১ বার ব্যাবহার করা হয়েছে। উহার অধিকাংশ ব্যাবহার সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহ তা”লার চরম ক্ষমতার বিবরণ সংক্রান্ত এবং তাঁহার সৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত। কোন কোন স্থলে এই শব্দটি স্পষ্টই ব্যাবহার করা হয়েছে দেশ বা এলাকা বুঝাইতে । যেমনঃ সুরা আরাফ ৭:১১০ / সুরা ইব্রাহীম ১৪:১৩ / সুরা তাহা ২০:৫৭ / সুরা তাহা ২০:৬৩ / সুরা শুয়ারা ২৬:৩৫ / সুরা কাসাস ২৮:৫৭ । আবার অন্যত্র উপমা হিসাবে পার্থিব জীবন বুঝাইতে ব্যাবহার করা হয়েছে। যেমনঃ সুরা তওবা ৯:৩৮।
যে সকল আয়াতে ইহার আকৃতি ও প্রকৃতি বর্ণনা করিতে ব্যাবহার হইয়াছে তাহা দুই শ্রেণীর । এক শ্রেণীতে ইহা বর্ণিত হইয়াছে মিশ্রিত হইয়া অথবা পর্বত ও নদীর সহিত তুলনা করিতে গিয়া। এই স্থলে পৃথিবী মানুষের জন্য অন্যান্য প্রাণীর জন্য কিরুপ উপযুক্ত ও বাসযোগ্য তাহার উদাহরণের দেওয়া হইয়াছে । এখানে শ্রোতা অথবা পাঠক এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইয়াছে তাহার প্রতি এবং প্রকৃতির সেই সকল বস্তুর প্রতি এবং ভূতলের প্রতি যাহা তাহার সম্মুখে দৃশ্যমান। অন্যভাবে যদি বলা যায় এই আরদ বা পৃথিবী বলিতে বুঝানো হইয়াছে ভুমি বা ভূপৃষ্ঠ যাহা দর্শকের সম্মুখে রহিয়াছে পর্বত ও নদীর, সমগ্র পৃথিবী নহে। দ্বিতীয় শ্রেণীর আয়াতে আরদ বা পৃথিবী শব্দটি সাধারনভাবে সূর্য, চন্দ্র , আকাশ এবং সমগ্র মহাবিশ্বের প্রেক্ষিতে রহিয়াছে। এখানে পৃথিবীকে একটি একক হিসাবে বলা হইয়াছে এবং বর্ণনায় ইহার আকৃতি সম্পর্কে , অবস্থান সম্পর্কে এমনকি মহাশুন্যে ইহার চলাচল সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হইয়াছে। ……আরদের প্রকৃত অর্থ হইবে সম্মুখস্ত ভূমি, প্রান্তর বা মাটি।…… অধিকাংশ আয়াতে যে আরদ শব্দটি ব্যাবহার করা হইয়াছে তাহার অর্থ দর্শকের দৃষ্টিতে ভিতরে যে ভূপৃষ্ঠ তাহা, পৃথিবী নামক গ্রহ নহে ।
বিস্তারিত পড়ুনঃ সীরাতে বিশ্বকোষ, ৮ খণ্ড , পৃষ্ঠা ৩৪২ – ৩৪৪। আরও বিস্তারিত জানতে সীরাতে বিশ্বকোষ, ৮ খণ্ড ৩৪২ থেকে ৩৬২ পৃষ্ঠা সম্পূর্ণ পাঠ করুন।
নাস্তিকরা প্রশ্ন করে,
এমন কোনো স্পষ্ট প্রমাণ আছে নবীজি (সা) বা উনার সাহাবীরা বলেছেন দুনিয়ায় গোলাকার?
নবী মোহাম্মদ (সা) বলেছেন দুনিয়ার আকৃতি গোলাকার অথবা উনার সাহাবীরা কেউ এমন কথা বলেছেন মর্মে আমি কোনো হাদিস বা বিশুদ্ধ তথ্য পাই নাই। আমি মনে করি এটা জানা তেমন জরুরিও কিছু নয়। আর নবীজি (সা) কে দুনিয়াতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষকে হেদায়েত করার জন্য দুনিয়ার শেইপ মানুষকে জানানোর জন্য নয়। একজন মানুষ যদি মানবিক এবং সত্য পথে চলে আর সে যদি দুনিয়ার শেইপ গোল এটা নাও জানে তারপরেও ক্ষতি হবে না। কিন্তু এই প্রশ্নটি থেকে এটা প্রমাণ করা যায় না যে কুরআনে পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা সমতল দাবি করা হয়েছে।
নাস্তিকরা এরপরে প্রশ্ন করে,
কুরআনে পৃথিবীকে সরাসরি স্ফেরিক্যাল ও ঘূর্ণায়মান অথবা সম্পূর্ণ গোলাকার উল্লেখ না করার কারণ কি?
কুরআন যদি এটা স্পষ্ট বলেও দিতো যে পৃথিবীর আকৃতি সম্পূর্ণ গোলাকার তাহলে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই আয়াতকে নাস্তিকরা মেনে নিতে পারতো না। কারণ পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে বিজ্ঞান জগতে বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রচুর মতভেদ আছে। তাই বলা যায় কুরআন সরাসরি সেই কথা বলা জরুরি মনে করে নি। যেহেতু কুরআনের মধ্যে পরোক্ষ প্রমাণে বুঝা যায় দুনিয়া গোলাকার সেহেতু বলা যায় যে সরাসরি গোলাকার বলা জরুরি না। আর বললেও বা কি হতো? সবাই এই সত্য মেনে নিত? কুরআনের হাজার হাজার অলৌকিক মোজেজা দেখেও ইসলামের বিদ্বেষীরা এসব হিংসাবশত মানতে চায় না সেখানে দুনিয়ার আকৃতি গোল এটা সরাসরি বললেই কি সবাই মুসলিম হয়ে যেতো? বড় বড় সেলিব্রিটি কাফেররা নিজের চোখে চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত হতে দেখার পরেও ইসলাম গ্রহণ করেনি সেখানে এই কথা সরাসরি লেখা থাকলেও ওরা মানতো না। তবে যারা বুদ্ধিমান সত্যবাদী তারা কুরআনের পরোক্ষ প্রমাণ গুলো দেখে তারাই ইসলাম বিরোধী বিশ্বাস ত্যাগ করে ইসলামকে গ্রহণ করে নেয়। আসুন জেনে নেই স্বয়ং বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে যা যা তথ্য দিয়েছে।
নাসার বিজ্ঞানীদের থেকে জানা যায় আমাদের দুনিয়া গোলাকার কিন্তু পারফেক্ট গোলাকার নয়। নাসার অসিফিয়াল সাইটে What Is Earth? শিরোনামে বিস্তারিত পৃথিবী সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে (৪),
How Do We Know Earth Is Round? Humans have known that Earth is round for more than 2,000 years! The ancient Greeks measured shadows during summer solstice and also calculated Earth's circumference. They used positions of stars and constellations to estimate distances on Earth. They could even see the planet's round shadow on the moon during a lunar eclipse. (We still can see this during lunar eclipses.) Today, scientists use geodesy, which is the science of measuring Earth's shape, gravity and rotation. Geodesy provides accurate measurements that show Earth is round. With GPS and other satellites, scientists can measure Earth's size and shape to within a centimeter. Pictures from space also show Earth is round like the moon. Even though our planet is a sphere, it is not a perfect sphere. Because of the force caused when Earth rotates, the North and South Poles are slightly flat. Earth's rotation, wobbly motion and other forces are making the planet change shape very slowly, but it is still round.
ভাবানুবাদঃ যদিও আমাদের গ্রহ একটি গোলক কিন্তু এটি একটি নিখুঁত গোলক নয়। পৃথিবী ঘোরার সময় সৃষ্ট শক্তির কারণে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু কিছুটা সমতল হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণন, নড়বড়ে গতি এবং অন্যান্য শক্তি গ্রহটির আকার পরিবর্তন করছে খুব ধীরে ধীরে, তবে এটি এখনও গোলাকার।
আমাদের পৃথিবী গোলাকার কিন্তু সম্পূর্ণ পারফেক্ট গোলক নয়। গাণিতিক ভাবে আমাদের পৃথিবী সম্পূর্ণ সব দিকে গোলাকার নয়। একটু হলেও উনিশ বিশ আছে। বিজ্ঞানীদের থেকে এমন গবেষণাও রয়েছে উনারা দাবি করছেন পৃথিবীর আকৃতি ধিরে ধিরে পরিবর্তন হচ্ছে। National Ocean Service (National Oceanic and Atmospheric Administration) সুত্র থেকে জানা যায় (৫)
While the Earth appears to be round when viewed from the vantage point of space, it is actually closer to an ellipsoid. However, even an ellipsoid does not adequately describe the Earth’s unique and ever-changing shape….
Additionally, the shape of the Earth is always changing. Sometimes this change is periodic, as is the case with daily tides that affect both the ocean and the crust; sometimes the change is slow and steady, as with the drift of tectonic plates or the rebound of the crust after a heavy sheet of ice has melted; and sometimes the shape of the planet changes in violent, episodic ways during events such as earthquakes, volcanic eruptions, or meteor strikes.
ভাবানুবাদঃ মহাকাশের সুবিধার দিক থেকে দেখলে পৃথিবীকে গোলাকার বলে মনে হয়,এটি আসলে একটি উপবৃত্তাকারের কাছাকাছি। যাইহোক, এমনকি একটি উপবৃত্তাকারও পর্যাপ্তভাবে পৃথিবীর অনন্য এবং চির-পরিবর্তনশীল আকৃতি বর্ণনা করে না।
উপরন্তু, পৃথিবীর আকৃতি সর্বদা পরিবর্তিত হয়। কখনও কখনও এই পরিবর্তন পর্যায়ক্রমিক হয়, যেমন প্রতিদিনের জোয়ারের ক্ষেত্রে যা সমুদ্র এবং ভূত্বক উভয়কেই প্রভাবিত করে; কখনও কখনও পরিবর্তনটি ধীর এবং স্থির হয়, যেমন টেকটোনিক প্লেটের প্রবাহ বা বরফের একটি ভারী চাদর গলে যাওয়ার পরে ভূত্বকের রিবাউন্ডের সাথে; এবং কখনও কখনও ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বা উল্কা আঘাতের মতো ঘটনার সময় গ্রহের আকৃতি হিংসাত্মক, এপিসোডিক উপায়ে পরিবর্তিত হয়।
নাস্তিকদেরকে বলবো আপনি লিংকে গিয়ে পুরো লেখাটি দেখে আসুন। যেখানে আধুনিক বিজ্ঞান আমাদেরকে এই তথ্য দিচ্ছে সেখানে কুরআন কেন নির্দিষ্ট করে বলতে যাবে পৃথিবীর আকৃতি সম্পূর্ণ গোলাকার? চার্লস কিউ চোই যিনি একজন বিজ্ঞানমনস্ক। উনি লিখেছেন (৬),
As countless photos from space can attest, Earth is round—the "Blue Marble," as astronauts have affectionately dubbed it. Appearances, however, can be deceiving. Planet Earth is not, in fact, perfectly round.This is not to say Earth is flat. Well before Columbus sailed the ocean blue, Aristotle and other ancient Greek scholars proposed that Earth was round.
ভাবানুবাদঃ মহাকাশের অসংখ্য ছবি থেকে এইটা দেখা যায় যে পৃথিবী গোলাকার যেন নীল মার্বেল। ছবি গুলো দেখতে তেমন হলেও বাস্তবে তা নয়। পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকারও না। আমি বলছি না যে পৃথিবী সমতল। কলম্বাস সমুদ্রের নীলে যাত্রা করার আগে, অ্যারিস্টটল এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রীক পণ্ডিতরা প্রস্তাব করেছিলেন যে পৃথিবী গোলাকার।
যেই মূর্খরা প্রশ্ন করে কুরআনে কেন সরাসরি পৃথিবী গোলাকারের কথা বলে নাই তারা হয়তো জানেই না বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি এই ব্যাপারে আসলে কেমন। যদি জানতো তাহলে কি মূর্খতাসুলভ প্রশ্ন করতো? কুরআনে যদি এটা স্পষ্ট লেখাও থাকতো যে পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার এরপরেও নাস্তিকরা এই আয়াতকে বৈজ্ঞানিক ভুল বলতো তখন এই মূর্খরা আব্র বলতো বিজ্ঞান তো বলে পুরোপুরি গোলাকার না কিন্তু কুরআনে কেন পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার বলা থাকবে? এখানে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমানদের জন্য অনেক চিহ্ন আছে। এতো প্রাচীনকালে কুরআন কিভাবে এতো নির্ভুল তথ্য দিতে পারলো? কুরআন পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে সরাসরি কিছু না বলাটাই প্রমাণ করে কুরআন মহাবিশ্বের একমাত্র সত্যি স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে। নবী মোহাম্মদ (সা) নিজে কুরআন বানিয়ে লিখলে উনি এই সুক্ষতা টেরই করতে পারতেন না। চাইলেই গ্রীকদের থেকে কপি মারতে পারতেন যদিও গ্রীকদের সাথে উনার জীবনে দেখা হয়েছিল কিনা তার কোনো হদিসই নেই। আরও অনেক কিছু জানতে এই ভিডিওটি দেখুন(৭)।
পৃথিবীর আকৃতির ব্যাপারে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি আসলেই কেমন?
কুরআনের অস্তিত্ব দানকারী আল্লাহ ঠিকই জানতেন পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে। এই কারণে উনি কুরআনে ভাবেই বলেছেন যাতে পরবর্তী যুগের লোকেরা গবেষণা করে জেনে নিতে পারে। কুরআনের এমন অনেক আয়াত আছে যেখান থেকে আমরা সহজেই বুঝে নিতে পারি যে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গিতে পৃথিবীর আকৃতি গোলাকারই। তবে তার আগে আপনার কাছে আমার একটা জিজ্ঞাসা,পৃথিবীর আকার গোলাকার- এটা কি কুরআনে বলা খুব জরুরি? বলে রাখি কুরআন কোনো ভূগোলের কিতাব নয় যে, তাতে ভৌগলিক সব তথ্য নির্দিষ্ট করেই থাকবে। তেমনি কুরআন শুধু কবিতার গ্রন্থও নয়,ইতিহাসের গ্রন্থও নয়,নয় শুধু বিজ্ঞানের গ্রন্থ বরং কুরআন এমন এক গ্রন্থ যা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে। কুরআন মানুষকে সভ্য মার্জিত করে তোলে আধ্যাত্মিক ও প্র্যাকটিসগত ভাবেও।
মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করানো এবং সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়াই কুরআনের দায়িত্ব। এজন্য কুরআন সর্বকালের সর্বোন্নত মানের সাহিত্যিক ভাষায় কখনো ইতিহাস,কখনো বায়োলজি আবার কখনো ভূগোল আবার কখনো বিজ্ঞানের অন্যান্য তথ্যের নিদর্শন পেশ করেছে । কুরআনে যা পেশ করা হয়েছে, তার সবকিছুর মধ্যেই মানুষের জন্য শিক্ষার আলো ও পথের দিশা রয়েছে। মানবজাতির চরিত্রকে আদর্শ করে তুলতে দিক নির্দেশনার জন্য কুরআন নাযিল হয়েছে, আমাদেরকে Geography, Astronomy শেখাতে নয়। যাই হোক, আমরা আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে যাই।
১ নং প্রমাণঃ
আল কুরআন, সূরা রাহমান ৫৫:১৭ আয়াতে বলা আছে,
“তিনি দুই পূর্বের প্রভু, আর দুই পশ্চিমেরও প্রভু।
কুরআনে যদি পৃথিবীকে সমতলই বলা হতো তাহলে দুইবার পূর্ব আর দুইবার পশ্চিমের কথা বলা হল কেন? পৃথিবী যদি সমতল হতো তাহলে সমগ্র পৃথিবীতে সূর্যের উদয় ও অস্ত একবার করে হতো। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হওয়ায় এমনটা হয় না। কারণ আপনি যখন দেখছেন সূর্য উঠছে, তখন আসলে অন্য জায়গায় সূর্য ডুবছে। আর যখন দেখছেন সূর্য ডুবছে, তখন আসলে অন্য অবস্থানে সূর্য উঠছে (প্রকৃতপক্ষে সূর্য অস্ত বা উদয় কোনোটাই হয় না। বুঝানোর সুবিধার্থে এভাবে বললাম)। মোট দুইটা পূর্ব, দুইটা পশ্চিম।
তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, সুরা রাহমান ৫৫ঃ১৭, তে বলা হয়েছেঃ
অনুরূপ পৃথিবীর এক গোলার্ধে যখন সূর্য উদয় হয় ঠিক সে সময় অন্য গোলার্ধে তা অস্ত যায়। এভাবেও পৃথিবীর দুটি উদয়াচল ও অস্তাচল হয়ে যায়। [ইবন কাসীর; আততাহরীর ওয়াততানিওয়ীর]
২ নং প্রমাণঃ
আল কুরআন, সূরা যুমার ৩৯:৫ আয়াতে বলা আছে,
তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।
উপরের আয়াতটিতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো “ ﻳُﻜَﻮِّﺭُ ”। যার অর্থ কোন জিনিসকে প্যাঁচানো বা জড়ানো, যেমনটা মাথার পাগড়ির ক্ষেত্রে বুঝানো হয়। অবিরত প্যাঁচানোর পদ্ধতি- যাতে এক অংশ আরেক অংশের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। আমরা ভালোভাবেই জানি, পাগড়ি কিভাবে গোলাকারভাবে প্যাঁচানো হয় অথবা টেনিস বলে কসটিপ কিভাবে প্যাঁচানো হয়। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, রাত ধীরে ধীরে ক্রমশ দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিনও ধীরে ধীরে রাতে রূপান্তরিত হয়। এ ঘটনা কেবল পৃথিবী গোলাকার হলেই ঘটতে পারে। পৃথিবীকে যদি চ্যাপ্টা বা সমতল কুরআন দাবি করতো তাহলে রাত্রি থেকে দিনে এবং দিন থেকে রাত্রিতে এই কথা কুরআন বলতো না। তাছাড়া আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে সবাই বিচরণ করছে সূর্য চাঁদ এমনকি পৃথিবীও তাই কুরআনের এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে পৃথিবীও ঘুরছে
এছাড়া দেখুন আরও দুইটা আয়াত-
আল কুরআন, সূরা নূর ২৪:৪৪ আয়াতে বলা আছে,
“আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে ‘অর্ন্তদৃষ্টি-সম্পন্নগণের’ জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।
আল কুরআন, সূরা আল ইমরান ৩:১৯০ আয়াতে বলা আছে,
নিশ্চয়ই মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’ জ্ঞানবান লোকদের জন্য।
আল্লাহ্ কেন বললেন অন্তর্দৃষ্টির কথা? কেন বললেন না বাহ্যিক দৃষ্টির কথা? আমরা বাহ্যিকভাবে দেখি, সূর্য উদিত হয় বা অস্ত যায়। আসলেই কি তাই? ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’- কি এমন ‘বিশেষ’ জিনিস রয়েছে যাতে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দিতে হবে? অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখার আর পাগড়ির মত প্যাঁচানোর কথা বলে এখানে ইঙ্গিতে পৃথিবীর স্ফেরিক্যাল শেপ এবং ঘূর্ণায়মানতার কথা বলা হচ্ছে না তো?
৩ নং প্রমাণঃ
তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ৩৯৩ পৃষ্ঠা, সুরা ইনশিকাক ৮৪:৩ আয়াতের অনুবাদ,
আর যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে এর প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা হবে, যেমন চামড়াকে টেনে দীর্ঘ করা হয়। আর তার উপর কোন পাহাড় বা দালান-কোঠা থাকবে না।
“পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে চামড়াকে টেনে দীর্ঘ করার মত” এর মানে এখন পৃথিবী চামড়ার মত সম্প্রসারিত নয় অর্থাৎ এখন পৃথিবী গোল। যদি আল্লাহ্ পৃথিবীকে সমতলই বলতেন, তাহলে আবার সমতল করার কথা বলবেন কেন? এই আয়াত থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায়, কুরআনে পৃথিবীকে সমতল বলা হয় নি।
তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠায় বলা আছে,
কিয়ামতের দিন আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল করে বিস্তৃত করবেন। এর তাৎপর্য হলো যে সমুদ্র ও নদী-নালা ভর্তি করে দেয়া হবে।......হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বলেন নবীজি (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন পৃথিবীকে দস্তরখানের ন্যায় বিছিয়ে দেয়া সম্প্রসারিত করা হবে। সেখানে মানুষদের জন্য শুধু পা রাখারই জাগা হবে।
একদম সহজ ব্যাপার, পৃথিবী এখন সমতল না দেখেই আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমতল করে বিস্তৃত করে দিবেন।
তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৩ খণ্ড, ৬৪৯ পৃষ্ঠায় বলা আছে,
যখন পৃথিবী সস্থান থেকে অপসারিত হবে এবং সমান করা হবে। একই ধরনের তথ্য তাফসীরে মাজহারী ১২ খণ্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠায় দেয়া আছে।
উদাহরণটি খেয়াল করুন, আমি ভাত খাব। ভাত কেন খাওয়া হয়? যখন ক্ষুধা লাগে তখন। ক্ষুধা না লাগলে ভাত খাওয়ার কথা আসবে না। ঠিক একইভাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ চামড়ার মত টেনে পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করবেন এর মানে এখন পৃথিবী চামড়ার মতো নেই। তাহলে কিভাবে আছে? উত্তরটি আশা করি আপনি নিজেই এখন জানেন।
প্রাচীন ইসলামিক আলেমগণ কি বলেছেন?
পৃথিবীর আকার যে গোলাকার- এ ব্যাপারে ইসলামিক স্কলারদের অসংখ্য ফতওয়া রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইয়িম্যার ফতওয়া রয়েছে। গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার শাইখ আব্দুল আজিজ ইবন বাযেরও এই ব্যাপারে ফতওয়া রয়েছে। কুরআনের আয়াত গুলো যে দুনিয়ায় গোলাকার সেই দিকে ইশারা করছে সেটা তিনিও স্বীকার করেছেন। (৮)।
গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার শাইখ আব্দুল আজিজ ইবন বাযেরও এই ব্যাপারে ফতওয়াটি দেখতে পারেন (৯)। এছাড়াও আপনি দেখতে পারেন IslamQA-র ফতওয়া। আরও দেখতে পারেন IslamWeb-এর ফতওয়া। সবাই স্বীকার করেছেন যে কুরআনে পৃথিবীর আকার গোলাকার বলা হয়েছে (১০),(১১)। ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হিঃ) সূরা যুমার ৫ আয়াত থেকে দলীল দিয়ে বলেন,
‘নেতৃস্থানীয় বিদ্বানগণের কেউই পৃথিবী গোলাকার হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। কিংবা এর বিরুদ্ধে তাদের কারু থেকে কোন বক্তব্য জানা যায়নি। বরং কুরআন ও হাদীছে এর গোলাকার হওয়ার পক্ষেই দলীল এসেছে (১২)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বিখ্যাত বিদ্বান আবুল হুসায়েন আহমাদ বিন জাফর (রহঃ)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন (১৩),
এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। তিনি বলেন, এর প্রমাণ হিসাবে বলা যায়, ‘পৃথিবীর কোন প্রান্তে সূর্য, চন্দ্র বা নক্ষত্ররাজি একই সময়ে উদিত হয় না বা অস্তও যায় না। বরং পশ্চিমের আগে তা পূর্বে উদিত হয়’
কোরআন সরাসরি না বললেও ইঙ্গিত দিয়েছে যে পৃথিবী গোলাকার। আধুনিক বিজ্ঞানের বহু আগে কোরআনের এ আয়াত পাঠ করে ইমাম ইবনে হাজম আন্দালুসি (রহ.) পৃথিবী গোলাকার হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি একাদশ শতাব্দীতে (৩৮৪-৪৫৬ হিজরি) ইন্তেকাল করেছেন (১৪)।
তিনি (আল্লাহ) রাত্রি দ্বারা দিবসকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিবস দিয়ে রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন...।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫)। এ আয়াতে রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনের বিষয়টিকে ‘ইকাউভিরু/ইউকাউ-ইরু’ শব্দ দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। কোরআনের অনুবাদকরা এ শব্দের জন্য ‘আচ্ছাদিত হওয়া’র অর্থ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এটি ওই শব্দের সরাসরি অনুবাদ নয়, ভাব-স্থানীয় বা সমার্থক শব্দ। ওই শব্দের মূল অর্থ কোনো কিছু গোল বানানো। যেমন—মাথায় পাগড়ি পেঁচানো। এ শব্দ পৃথিবী গোলাকার হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। কেননা রাতকে দিন দ্বারা ও দিনকে রাত দ্বারা এভাবে আচ্ছাদিত করা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবীর আকার গোল হবে। আমরা দেখি প্রথমে ভোর, এরপর আস্তে আস্তে দুপুর, এরপর বিকেল, এরপর গোধূলি, এরপর সন্ধ্যা। একসময় দিন রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, যেভাবে আস্তে আস্তে পাগড়ির একটা অংশ অন্য অংশের মধ্যে ঢুকে পড়ে। যদি পৃথিবী সমতল হতো, একটা লম্বা কাঠের মতো হতো, তাহলে এভাবে দিন-রাত্রি হতো না। তখন এই তো দিন, আবার চোখের পলকে রাত নেমে পড়ত। তাই এ আয়াতে মহান আল্লাহ রাতকে দিন দিয়ে, আর দিনকে রাত দিয়ে আচ্ছাদিত করার যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন, সেটা তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হবে।
একাধিক বিশেষজ্ঞ পৃথিবীর গোলক হওয়ার পক্ষে ইজমা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপঃ আবু মুহাম্মাদ ইবনে হাযম [রাহঃ] ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ] বলেন (১৫),
আবু মুহাম্মাদ বলেনঃ আমরা পৃথিবীর গোল হওয়ার বিপক্ষের কিছু দলিল নিয়ে আলোচনা করব। পৃথিবীর গোল হওয়ার পক্ষে স্পষ্ট দলিল রয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষেরা অন্যরকম বলে। আমাদের জবাব হল-আল্লাহ সকল ক্ষমতার উৎস- ইমাম বলে অভিহিত করার যোগ্যতা রাখে এবং জ্ঞানী এমন কোন বিশিষ্ট মুসলিম পৃথিবীর গোল হওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করেন নি, এবং তাদের থেকে অস্বীকার করার জন্য কোন বর্ণনা পাওয়া যায় নি। বরং, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বর্ণিত যে,এটা গোল… এবং তিনি এর পক্ষে দলিল দেন।
পৃথিবীর গোল হওয়ার ব্যাপারের দলিল হলঃ আল্লাহ বলেন,
তিনিই দিবসের উপর রাত্রিকে এবং রাত্রির উপর দিবসকে আবেষ্টনকারী বানিয়েছেন’ (যুমার ৫) ইবনে হাযম দলিল হিসাবে উপরের আয়াতটি উল্লেখ করেন। ইমাম আবু ইয়ালা [রাহঃ] বলেন, “মুসলিমদের ঐক্যমতে পৃথিবী গোল” (১৬)।
নাস্তিকরা এখানে বলতে পারে তারা গোল বলেছেন, গোলক বলেন নি। কিন্তু এসব হল শব্দের মারপ্যাঁচ। আমরাও কথায় কথায় পৃথিবীকে গোল বলি, গোলক বলি না। তারা গোল বলতে গোলকই বুঝিয়েছেন। এর প্রমাণ হল-
ইবনে হাযম অন্যত্র বলেন, “পৃথিবীর গোলক হওয়াই সুপ্রসিদ্ধ…এর প্রমাণ হল সূর্য পৃথিবীর বিশেষ স্থানের উলম্ব বরাবর থাকে” (১৭)।
আবুল হুসাইন ইবনে আল-মুনাদি [রাহঃ] থেকে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া [রাহঃ] [১৩২৮ খ্রিস্টাব্দ] বর্ণনা করেন (১৮),
যখন সে বললঃ আবুল হুসাইন আহমাদ ইবনে জাফর ইবনে আল-মুনাদি [রাহঃ] দ্বীনি বিষয়ে গবেষণা ও কর্মের জন্য সুপরিচিত বিশিষ্ট উলামা থেকে এবং ইমাম আহমাদের দ্বিতীয় স্তরের সাথীদের থেকে বর্ণনা করেন, যে উলামার মাঝে এ ব্যাপারে মতপার্থক্য ছিল না যে আকাশ হচ্ছে বলের মত।[এটা অনেকগুলো মতের একটি-অনুবাদক।] সে বললঃ একইভাবে, সর্বসম্মতিক্রমে জলভাগ ও স্থলভাগসহ সকল কিছু ধারণকারী এই পৃথিবী একটি বল [গোলক]-এর ন্যায়। সে বলল, এটা এই ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে একই সময়ে সূর্য,চাঁদ, নক্ষত্র অস্ত যায় না; বরং প্রাচ্যে পাশ্চাত্যের আগেই সূর্য অস্ত যায়।
মুসলিম বিজ্ঞানী আল বিরুনী তৎকালীন খলীফা-র নির্দেশে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মাপেন। সমতল পৃথিবীর ব্যাসার্ধ কি মাপা সম্ভব? বিশেষ করে, আল বিরুনী নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করলে, নিশ্চয়ই সমতল পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মাপা যেতো না (১৯)।
পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার নাকি সমতল এ ব্যাপারে আবুল হুসাইন ইবনুল মুনাদি(র.) উল্লেখ করেছেনঃ
“...একইভাবে তাঁরা (আলেমগণ) একবাক্যে একমত হয়েছেন যে, ভুপৃষ্ঠ এবং সমুদ্র ধারণকারী পৃথিবী একটি গোলকের ন্যায়। তিনি বলেন, এর ইঙ্গিত তো পাওয়া যায় এই ব্যাপারটি থেকে - সূর্য, চন্দ্র এবং তারকারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একই সাথে উদয় ও অস্ত যায় না। বরং এটি (উদয়-অস্ত) পশ্চিম দিকের চেয়ে পূর্বদিকে আগে ঘটে।” (২০)
আবুল হুসাইন ইবনুল মুনাদি(র.) মৃত্যুবরণ করেন ৩৩৬ হিজরী বা ৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে। আধুনিক বিজ্ঞানীরা যে সময়ে পৃথিবীর গোল আকৃতির ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, এর বহু শতাব্দী আগে আবুল হুসাইন ইবনুল মুনাদি(র.) তাঁর পূর্বের আলেমদের ঐক্যমত উল্লেখ করেছেন যে পৃথিবী গোলকের ন্যায়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আবুল হুসাইন ইবনুল মুনাদি(র.) ছিলেন ইমাম আহমাদ(র.) এর ছাত্রের ছাত্র। কাজেই এখানে গ্রীক দর্শন চর্চাকারী মুতাজিলাদের প্রভাবের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ছিলেন সুন্নাহর অনুসারী, ইমাম আহমাদ(র) এর আকিদার অনুসারী। আর ইমাম আহমাদ(র) যে মুতাজিলাদের সব থেকে বড় বিরোধী ছিলেন এটা সবাই জানে। এর পরের শতকেও ইমাম ইবন হাজম(র) পৃথিবী গোল হবার অভিমত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, (২১),
" (পৃথিবী গোল এ কথার) বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি দেয়া হয় আমরা এর কয়েকটির ব্যাপারে আলোচনা করব। তাঁরা বলেন, পৃথিবী গোল এ ব্যাপারে ভালো প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু আম জনতা এর বিপরীত কথা বলে। আল্লাহর তাওফিকে এ ব্যাপারে আমাদের জবাবঃ মুসলিম উম্মাহর কোনো ইমাম অথবা ইলমের দ্বারা যারা ইমাম অভিধা লাভের যোগ্য (আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন) – তাদের কেউই এ কথা অস্বীকার করেননি যে পৃথিবী গোল। তাঁদের থেকেই কথা অস্বীকার করে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি। বরং কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত হয় যে এটি (পৃথিবী) গোল।
ইমাম ইবন হাজম(র) আম জনতার মতের বিপক্ষে গিয়ে পৃথিবী গোল এই মতকে ধারণ করতেন কেননা তাঁর মতে এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে এবং এটিই কুরআন-সুন্নাহর অবস্থান (২২)।
নাস্তিকরা প্রশ্ন করে,
মুসলিমরা গ্রিকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল তাই সেখান থেকে কপি করে মুসলিমরা বলেছে দুনিয়া গোলাকার?
এটি ডাহা মিথ্যা কথা। নাস্তিক হবার জন্য প্রথম শর্তই মনে হয় মিথ্যাকথায় পারদর্শী হতে হবে।
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী [রাহঃ] তার ‘ইসলামী জীবন ব্যবস্থা’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন,ইবনে তাইমিয়া তার সমকালীন যুগে তাফসীরকে গ্রীকদের প্রভাব থেকে রক্ষা করেছিলেন। আমার কথা হচ্ছে, যেহেতু ইবনে তাইমিয়াকে মুসলিমরা এ কারণে স্মরণ করে যে, তিনি গ্রীকদের প্রভাব থেকে ইসলামকে বাচিয়েছেন, সেহেতু রক্ষাকারী নিজেই শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয় কি করে? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? সারা পৃথিবী ইসলামের বিপক্ষে চলে যাবে, কিন্তু ইবনে তাইমিয়া একা ইসলামের পতাকা উড্ডীন রাখবেন। এটা হলো ইবনে তাইমিয়া। কখনও মিথ্যার ধার ধারেন না, আর কোথাকার গ্রীকদের কোন মূল্য তার কাছে নেই। আর ইবনে হাযম ও আবু ইয়ালা সম্পর্কে কি বলবেন? তারাও গ্রীক প্রভাবিত? অপযুক্তি আর কাকে বলে? আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতি [রাহঃ] এর পূর্বে, মানে ৯১১ হিজরীর আগে কেউ পৃথিবী সমতল বলেছেন কিনা সন্দেহ। তিনি (ইমাম ইবনে তাইমিয়া) গ্রীকদের বিরোধিতা করতেন এর প্রমাণ হল, ইবনে তাইমিয়া [রাহঃ] তার অসাধারণ রচনা ‘আল রিসালা আল আরশিয়াহ‘ গ্রন্থে নব্য-প্লেটোবাদী দার্শনিকদের যারা আল্লাহর আরশ নবম আকাশের গোলকে রয়েছে দাবি করে, তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। [মাজমু আল-ফাতওয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৫৪৬] ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ:) রচিত কিতাবের ইংরেজি অনুবাদ Against Greek Logicians শিরোনামে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। মোটকথা, উল্লিখিত সালাফদের ব্যাপারে গ্রীক প্রভাবিত তকমা দেয়া, নির্জলা অপবাদ ব্যতীত কিছুই নয়।
"মুসলিমরা গ্রিকদের থেকে কপি করেছে" প্রশ্ন হচ্ছে কোন মুসলিম কখন? কোন বই থেকে? কোন সময়ে? কবে? কোন গ্রিকদের থেকে? কপি করেছে এমন একটা চাক্ষুষ সাক্ষীর প্রমান নাস্তিকদেরকে দিতে হবে? প্রমানটি এমন হতে হবে অমুক লোক অমুক মুসলিমকে সরাসরি দেখছে গ্রিকদের থেকে কপি করে সাথে সাথে নিজের বইতে দাবি করে ফেলেছে, প্রমান করতে হবে? অনেক নাস্তিক দাবি করে নবীজি (সা) এবং উনার সাহাবীগন নাকি বিলিভ করেন যে " পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা"। আমার প্রশ্ন হচ্ছ এমন একটা মাত্র বিশুদ্ধ হাদিস সমকামী নাস্তিকরা দেখাক যেখানে নবীজি (সা) অথবা উনার কোন সাহাবি নিজে দাবি করেছেন যে "আমি বিলিভ করি পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা"। সরাসরি প্রমান করুন? কুরআন থেকে পরোক্ষভাবে স্পষ্টই যে কুরআন পৃথিবীকে গোলাকারই বলেছে কিন্তু নাস্তিকদের যুক্তি অনুপাতে যদি মুহাম্মদ (সা) কুরআন লিখেই থাকেন তাহলে তিনি এতো প্রাচীন হয়ে কিভাবে এই সঠিক তথ্য জানতে পারলেন? যদি বলেন কপি করেছে তাহলে কপি করেছে এমন চাক্ষুষ সাক্ষীর মজবুত প্রমাণ দিন? এবং সেটা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য সেটার প্রমান দিন? নবীজি (সা) কবে? কোন বই থেকে? কার থেকে? কপি করেছিল? যদি বলেন সাহাবীদের থেকে জেনেছে তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সেই সাহাবীর নাম কি? সেই সাহাবী কিভাবে শিওর হলেন যে এটাই সত্য? কার থেকে জেনেছে? কবে? কোথায়? কোন সময়? জেনেছে? কপি করে থাকলে সব গুলা কেন করেন নাই? অল্প অল্প কেন করেছেন?
উপসংহারঃ সকল তথ্যপ্রমাণ যাচাই করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে কুরআনের স্পষ্ট করে কোথাও এই দাবি করা হয় নাই যে পৃথিবীর আকার আকৃতি চ্যাপ্টা সমতল। বরং কুরআনের আয়াত গুলো ভালো করে দেখলে বুঝা যায় ভূপৃষ্ঠকে টার্গেট করে সমতল বলা হয়েছে। প্রাচীন মুসলিমরা পৃথিবীর আকৃতি গোলাকারই মনে করতেন এবং এই ব্যাপারে উনারা কুরআন থেকেই প্রমাণ গ্রহণ করেছিলেন। আর এটা সত্যি কথা যে কুরআনের দৃষ্টিতে পৃথিবী গোলাকারের দিকটাই পরোক্ষভাবে বুঝা যায়। তবে দৃষ্টিভঙ্গির আপেক্ষিকতার কারণে বিভিন্ন ব্যাখ্যা হবার সুযোগ রয়েছে কিন্তু ভুল ব্যাখ্যা গ্রহণ করবার যৌক্তিকতা নেই।
রেফারেন্স সমূহঃ
(১) https://www.wordsense.eu/%D8%AF%D8%AD%D8%A7%D9%87%D8%A7/
(২) Why is Japan called the “Land of the Rising Sun”?
(৩) Land Area of the World
(৪) What Is Earth?
https://www.nasa.gov/audience/forstudents/5-8/features/nasa-knows/what-is-earth-58.html
(৫) Is the Earth round?
https://oceanservice.noaa.gov/facts/earth-round.html
(৬) Strange but True: Earth Is Not Round
https://www.scientificamerican.com/article/earth-is-not-round/#
(৭) कुरान में दुनिया चपटी है ? Quran Me Duniya ki Shape Flat hai ?
https://www.youtube.com/watch?v=-9Yw_DA_SYs
(৮) Majmû` al-Fatâwâ (5/150), Majmû` al-Fatâwâ (6/546-567)
(৯) https://binbaz.org.sa/fatwas/5966/%D9%83%D8%B1%D9%88%D9%8A%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D8%A7%D8%B1%D8%B6
(১০) https://islamqa.info/en/118698,%20https://islamqa.info/en/211655
(১১) https://www.islamweb.net/en/
(১২) ইবনু হাযম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ১/৩৫২ ‘পৃথিবী গোলাকার হওয়া’ অনুচ্ছেদ
(১৩) ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১৯৫
(১৪) ইবনে হাজম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল : ১/৩৫২
(১৫) ইবনু হাযম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহ-ওয়া আল মিলাল ২/৭৮ ‘পৃথিবী গোলাকার হওয়া’ অনুচ্ছেদ
(১৬)ত্বাবাক্বাত আল-হাম্বলী
(১৭) আল ফাসল ফীল মিলাল, ২য় খন্ড, ৯৮ পৃ.
(১৮) মাজমু’ আল-ফাতাওয়া ২৫\১৯৫
(১৯) পৃথিবী গোল হওয়ার ইজমা
http://www.peaceinislam.com/mahir/19313/
(২০) মাজমু আল ফাতাওয়া ২৫/১৯৫
(২১) আল ফাসল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া’ ওয়ান নিহাল ২/৭৮
বিস্তারিত দেখুনঃ "Consensus that the Earth is round" - islamQA (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/answers/118698/consensus-that-the-earth-is-round
(২২) https://binbaz.org.sa/fatwas/5966/كروية-الارض
আরও জানতে লেখা গুলো পড়তে পারেনঃ
কু'রআন কি আদৌ পৃথিবীকে সমতল বলে?
আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিঃ কুরআন ও বিভিন্ন পৌরাণিক মতবাদের তুলনা
https://response-to-anti-islam.com/
সূর্য ঘোরে নাকি পৃথিবী ঘোরে? সূর্য কি আরশের নিচে সিজদা করে?
https://response-to-anti-islam.com/
কুরআন কি পৃথিবীকে সমতল বলছে?
https://response-to-anti-islam.com/
Does the Quran say the earth is flat? Islamic scholarship & the multiplicity of readings approach
Reconciling between the view that the Earth is round and the verse “And Allah has made for you the earth wide spread (an expanse)” [Nooh 71:19]
Answering lies about Islam and Prophet Muhammad / Answering the allegation that
the Holy Quran claimed that earth is flat