স্রষ্টা নিজেই কি নাস্তিক?


বিষয়ঃ স্রষ্টা নিজেই কি নাস্তিক?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

==========================


শুরুর কথাঃ  আজকের লেখাটি দুটো অংশ থাকবে। প্রথমটি হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে জবাব সেকেন্ডটি হচ্ছে নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে জবাব।


ইসলামের দৃষ্টিতে জবাবঃ


আল কুরআন, সুরা কাহফ ১৮ঃ২৬ আয়াত থেকে বর্ণিত,

আল্লাহই তা ভালো জানেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তারই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।


এই আয়াতের দৃষ্টিতে আল্লাহ যেহেতু সবই জানেন। তাই মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে আনতে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো স্রস্টার প্রয়োজন নেই সেটাও আল্লাহ পারফেক্টভাবেই জানেন সেহেতু আল্লাহ নিজেই এই মহাবিশ্বের স্বয়ংসম্পূর্ণ একমাত্র স্রস্টা। তাই আল্লাহ নাস্তিক এই কথাটি সঠিক নয় বরং ভুল। আরো কিছু আয়াত পড়া যাক।


আল কুরআন,সুরা ইখলাস ১১২ঃ৪ আয়াতে থেকে বর্ণিত,

তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।


আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ২৫৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,

তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং ঘুমও নয়। সবই তাঁর, আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে। কে আছ এমন- যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? চোখের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানের সীমা থেকে কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারবে না, কিন্তু ‘হ্যাঁ’, তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। সমগ্র আসমান এবং জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে তাঁর সিংহাসন। আর সেগুলোকে ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা তাঁর জন্য কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।


উপরের আয়াত গুলো আমাদেরকে আল্লাহর পরিচয় শিখাচ্ছে। এটা বলছে না যে আল্লাহ নাস্তিক তাই মুসলিমরাও নাস্তিক হয়ে যাও। মহানবী (সা) থেকে শুরু করে উনার সাহাবারা আরো যারা গবেষক রয়েছেন কেউই এসব বাজে ভ্রান্ত ধারণা আমাদেরকে শিখাননি বরং কুরআন সুন্নাহ আমাদেরকে আল্লাহ বিষয় যেই সুত্র বর্ণনা করে দিয়েছে সেটার বাইরে আমরা মুসলিমরা এক চুল পরিমানও সরবো না। ইসলাম আল্লাহর পরিচয় বিষয় যা বিলিভ রাখতে বলেছে আমরা মুসলিমরাও তাই রাখতে থাকবো। আল্লাহকে যদি কেউ সৃষ্টি করতো তাহলে আল্লাহ স্রষ্টা হতেন না উল্টো তিনিও সৃষ্টি হয়ে যেতেন তাই আল্লাহকে কেউ সৃষ্টি করেছেন বা আল্লাহর স্রষ্টা থাকতে পারে এই ধরণের কথা যৌক্তিকভাবেই ভুল।


আল্লাহর বিষয় জানতে কুরআনের এই আয়াত গুলো পড়ে নিতে পারেন। সুরা শুরা ৪২ঃ১১ > সুরা নিসা ৪ঃ৫৮ > সুরা: হজ্জ ২২ঃ৬১ > সুরা: তওবা ৯ঃ১০৫ > সুরা আলাক ৯৬ঃ১৪।


নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে জবাবঃ


অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা যখন স্রস্টার অস্তিত্বকে বাতিল প্রমাণ করতে পারে না। ঠিক তখনই মিথ্যা, ভুল, ভুয়া, কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। নাস্তিকদের (কু)যুক্তিটি এরকম,


মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা নিজেই একজন নাস্তিক। কারণ মহাবিশ্বের স্রষ্টা নিজে বিশ্বাস করেন উনাকে কেউ সৃষ্টি করেনি একইসাথে বলেন আমার কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। একই কথা নাস্তিকরাও বলে সুতরাং মহাবিশ্বের স্রষ্টা এবং নাস্তিকরা উভয়ই নাস্তিক।


পাঠক এরকম হাস্যকর যুক্তি চতুস্পদ প্রাণী থেকে কোটি কোটি বছরে বিবর্তিত হওয়া মানুষের মতো দেখতে কিছু নাস্তিককে বলতে শোনা যায়। এরকম (কু)যুক্তি আসলে তারাই দিতে পারে। আসলে কোটি কোটি বছরে বিভিন্ন প্রকার প্রাণী থেকে বিবর্তিত হবার কারণে এরকম কথা বলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পাঠক আসুন আমরা নিজেরাই এখন যাচাই করে দেখি নাস্তিক প্রাণীদের যুক্তিটি আসলেই যৌক্তিক কিনা।

স্রষ্টা নিজে নাস্তিক- এই কথা কি নাস্তিকরা নিজে বিশ্বাস করতে পারবে? উত্তর হচ্ছে না। কারণ নাস্তিকতা অর্থই স্রষ্টাকে অবিশ্বাস করা। তাহলে স্রষ্টাকে অবিশ্বাস করা নাস্তিকরা কিভাবে স্রষ্টা নিজে নাস্তিক এই কথা বিশ্বাস করতে পারে? অবশ্যই পারে না। তাই যুক্তিযুক্ত কথা হচ্ছে নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতেও স্রষ্টাকে নাস্তিক দাবি করা যায় না। স্রষ্টা নিজে নাস্তিক এই কথাটি নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে ভুল কথা। নাস্তিক প্রাণীটি যেভাবে যুক্তি দিয়েছে সেই যুক্তির দৃষ্টিতে যদি ধরেও নেই যে স্রষ্টা নাস্তিক তাহলেও কি স্রষ্টাকে নাস্তিক হিসেবে গণ্য করা যাবে? অবশ্যই না। কারণ স্রষ্টা নিজে বিশ্বাস করেন যে উনিই একমাত্র মহাবিশ্বের স্রষ্টা। সুতরাং স্রস্টাকে নাস্তিক বানানো যাচ্ছে না বরং স্রষ্টাকে নাস্তিক নয় বরং, স্বয়ং আস্তিক হিসেবে গণ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া স্রষ্টা কি বলেছেন উনি স্রষ্টা নন?


যখনই কোনো নাস্তিক উপরে দেয়া যুক্তি পেশ করবে সাথে সাথে সে আস্তিক হয়ে যাচ্ছে না? যদি সে তার নিজের যুক্তির প্রতি বিশ্বাস রাখে? নিজের যুক্তিতে নিজের বিশ্বাস না থাকলে সেই যুক্তি কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? এরপরে যেই প্রশ্ন আসবে সেটা হচ্ছে মহাবিশ্বের স্রষ্টা কি বলেছে মানুষকে নাস্তিক হতে? তাহলে স্রষ্টা নাস্তিক দেখে (কথার কথা আরকি) আমাদেরকেও কেন নাস্তিক হতে হবে?


নাস্তিকতা মানে স্রস্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস। তাই মহাবিশ্বের স্রস্টা অন্য স্রস্টায় বিশ্বাসী না তাই মহাবিশ্বের স্রস্টা নিজেই নাস্তিক - এই ভ্রান্ত কথাটি ঠিক তেমনই যেমন কেউ বলছে, এক মানুষ অন্য মানুষের গায়ে লাগতে পারে আর বাতাসও মানুষের গায়ে লাগতে পারে তাই বাতাসও মানুষ। আবার গাছ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে আর মানুষও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে সুতরাং গাছও মানুষ। আবার মাছ পানিতে সাতার কাটতে সক্ষম আবার মানুষও সক্ষম, তাই মাছও মানুষ। এই ধরণের গোজামিলমার্কা যুক্তি যেমন মিথ্যা কথা ঠিক তেমনইভাবে নাস্তিকরা নিজের স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে না আর মহাবিশ্বের স্রষ্টাও নিজের স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না তাই স্রষ্টাও নাস্তিক এটিও গোঁজামিলে ভরা মিথ্যাকথা।


নাস্তিকতার অর্থ হচ্ছে স্রস্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস। আমি নাস্তিকদেরকে বলবো, আপনি যে বিলিভ করলেন "মহাবিশ্বের স্রস্টা নিজেই নাস্তিক" তাহলে নাস্তিকতার অর্থের সুত্র দিয়ে প্রমাণ করুন এই মহাবিশ্বের একজন স্রস্টা আছেন তাকে সব নাস্তিকরাই মেনে নিয়েছে কিন্তু সেই স্রস্টা নাস্তিক দেখে, নাস্তিকরাও নাস্তিক। প্রমান করুন।


এরপরেও যে প্রশ্নগুলো থেকে যাচ্ছেঃ


নাস্তিকতার অর্থ ঠিক থাকলে মহাবিশ্বের স্রস্টা আছে এটা একজন নাস্তিক নাস্তিকতার থেকে কিভাবে বিলিভ করতে পারে? যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই "মহাবিশ্বের স্রস্টা নাস্তিক" কিন্তু এই কথা নাস্তিকরা যদি মেনেই নেয় তাহলে সে নাস্তিক থাকে কিভাবে? যদি না মানে তাহলে যে কথা নাস্তিকতার দৃষ্টিতেই ঠিক না সেটা নাস্তিকরা কেন বলে মানুষকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছে?এই প্রতারণা শেষ হবে কবে? নাস্তিকরা মানুষের সাথে মিথ্যা কথা বলা কবে বন্ধ করবে? স্রস্টার কথা মেনে নাস্তিকরা যদি নাস্তিক হতে পারে তাহলে একইভাবে মহাবিশ্বের স্রষ্টা আছে এই কথা নাস্তিকগোষ্ঠী স্বীকার করে নিচ্ছে না কেন? বিজ্ঞানীরা কি গবেষণা করে প্রমাণ করেছে যে মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে আনতে স্রস্টার অস্তিত্ব রয়েছে যিনি নাস্তিক? সব নাস্তিকরা কি এই গবেষণায় একমত হয়েছে? সেটা কোথায়? নাস্তিকরা যেই যুক্তি দেয় এসব কি আসলেই যুক্তি? নাকি গোঁজামিলে ভরা? নাস্তিকরা যদি দাবি করেই থাকে তারা যুক্তির উপর রয়েছে তাহলে মিথ্যাযুক্তি কেন দেয়? নাস্তিকরা কেন মানুষের মতো চিন্তা করতে শিখতে পারছে না এখনো? নাস্তিকরা কি তাহলে এখনো মানুষের কাতারে বিবর্তন হতে পারেনি?


বাই দ্যা ওয়ে! হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্ম অনুপাতে নাস্তিকদের এই যুক্তি তো আগেই ইন্তেকাল করেছে কারণ এসব ধর্ম মতে তো ৩৩ কোটি স্রস্টা আর তিনজন স্রস্টাকে মানা হয় তাহলে স্রস্টা নাস্তিকদের যুক্তি অনুপাতে আর নাস্তিক থাকছে না তাই এই যুক্তি দিয়ে কেউ যদি দাবি করে যেহেতু স্রস্টারা আস্তিক তাই নাস্তিকদেরকেও উচিত এই মুহুর্তে স্রস্টাদের মতো আস্তিক হয়ে যাওয়া তাহলে কি এই যুক্তি নাস্তিকরা মানবে? আস্তিক হয়ে যাবে? অন্যদিকে স্রস্টা নিজে মানেন যে তিনিই একমাত্র মহাবিশ্বের স্রস্টা তাহলে স্রস্টা নাস্তিক হয় কিভাবে?

পরিশেষেঃ

আস্তিক বা নাস্তিক এই দুটো শব্দই আসলে স্রষ্টার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন ধরুন "বাতাসের সন্তান হয় না" কথাটি। সন্তান হওয়া বা না হওয়া কথাটি যেমন বাতাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কারণ সন্তান জন্ম হওয়া মানুষের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বাতাসের ক্ষেত্রে নয় কারণ বাতাস সম্পূর্ণ ভিন্ন। তেমনি স্রষ্টার ক্ষেত্রে আস্তিক বা নাস্তিক শব্দ গুলো প্রযোজ্য না কারণ আস্তিক হওয়া বা নাস্তিক হওয়া বিষয় গুলো মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সৃষ্টির স্রষ্টার ক্ষেত্রে নয়। এই কথা সহজেই আমি বা আপনি বুঝতে পারলেও বিবর্তিত প্রাণীরা কখনো বুঝতে বা অনুধাবন করতে পারবে না কারণ তারা এখনো মানুষে সম্পূর্ণ বিবর্তিত হতে পারেনি। মানুষের মতো চিন্তাশীল হলে কি আর গোঁজামিল দিতে পারতো? অবশ্যই না।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post