বিষয়ঃ বনু কুরাইজাদের মৃত্যুদণ্ড বর্বর অমানবিক?
লিখেছেনঃ এমডি আলী
====================================
ভূমিকাঃ কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে নারীপাচারকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক কাজ? দুর্নীতিবাজদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক? দেশদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক? ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক কাজ? এসব প্রশ্ন থেকে দুটো দিক প্রকাশ পায়। একটি হলো হয়তো যেই লোক প্রশ্নটি করেছেন সে মূর্খ এমনকি মানবিক আর অমানবিকতা বিষয় বিন্দুমাত্র জ্ঞান তার নেই। দ্বিতীয় দিক হলো সে নারীপাচারকারী,দুর্নীতি,দেশদ্রোহীতা,ধর্ষকের মত ভয়াবহ অপরাধকে সমর্থন করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ এসব অপরাধকে অমানবিক বলা যাবে না বুঝাতে চাচ্ছে। আপনি যদি বিবেকবান মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে ভয়ংকর অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া মোটেও অমানবিক কাজ নয় বরং শ্রেষ্ঠ মানবিক কাজ।
নাস্তিকরাগোষ্ঠীরা অভিযোগ করে থাকে যে নবী মোহাম্মদ (সা) বনু কুরাইজাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মারাত্মক অমানবিক কাজ করেছেন। আমরা সমস্ত তথ্য সামনে রেখে যাচাই করে দেখবো, তদন্ত করে দেখবো নাস্তিকদের অভিযোগ আসলেই সঠিক নাকি নাস্তিকদের কোথাও ভুল হচ্ছে। নাকি নাস্তিকরা নিজেদের অজ্ঞতার কারণে অজান্তেই মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে নিয়েছে। নাস্তিকদের সকল অভিযোগ গুলো যাচাই করে দেখাই আজকের লেখার উদ্দেশ্য। তাই এই যাচাইয়ে আমার সাথে আপনিও অংশ নিন। আপনাকে মন দিয়ে পড়তে হবে, প্রতিটি কথা বুঝতে হবে। নিজের মনুষ্য চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
দেশ বা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শাস্তি কি?
কোনো দেশে বা রাষ্ট্রে যদি কোনো লোক নিজের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায় এমনকি দেশের মানুষ ও ভাবমূর্তি নষ্ট বা ধ্বংস করতে চায় এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে একে দেশদ্রোহীতা বা রাষ্ট্রদ্রোহীতা বলা হয়। এই ভয়ংকর অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা রাষ্ট্রদ্রোহ বলতে এক ধরনের অপরাধকে বোঝায়, যেখানে অপরাধী প্রত্যক্ষ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে, যেমন অবৈধ উপায়ে নিজরাষ্ট্রের স্বীকৃত সরকারের পতন, বা সার্বভৌম রাষ্ট্রপ্রধানের দৈহিক ক্ষতিসাধন, অথবা শত্রুরাষ্ট্রকে নিজ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা প্রদান জাতীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে বা করার চেষ্টা করে এবং ফলশ্রুতিতে নিজরাষ্ট্রের প্রতি তার আনুগত্য ভঙ্গ করে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা একটি অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ এবং বিশ্বের বহু দেশে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ সম্পাদন করেন, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়। রাষ্ট্রদোহিতার সমার্থক পরিভাষা হিসেবে দেশদ্রোহিতা, রাজদ্রোহিতা শব্দগুলিও প্রচলিত(১)।
ব্রিটিশদের হাই ট্রিজন আইন অর্থাৎ দেশদ্রোহীতার শাস্তির আইন অনুযায়ী দেশদ্রোহীকে ঘোরাতে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে শহরের মধ্যেখানে এনে মৃতপ্রায় অবস্থা পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়। তারপর পেট থেকে নাড়ি-ভূরি বের করে, মাথা কেটে সারা শরীর চার চুকরো করে লন্ডন ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয় যাতে এই অবস্থা দেখে কেউ সপ্নেও দেশদ্রোহীতার কথা চিন্তা না করে(২)।
Capital punishment in Japan is a legal penalty. It is applied in practice only for aggravated murder, although it is also a legal penalty for certain crimes against the state, such as treason and military insubordination, as well as kidnapping resulting in death. Executions are carried out by long drop hanging, and take place at one of the seven execution chambers located in major cities across the country.
ভাবানুবাদঃ জাপানে মৃত্যুদণ্ড একটি আইনি শাস্তি। এটি ব্যবহারিকভাবে শুধুমাত্র উত্তেজিত হত্যার জন্য প্রয়োগ করা হয়, যদিও এটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু অপরাধের জন্য একটি আইনি শাস্তি, যেমন রাষ্ট্রদ্রোহ এবং সামরিক অবাধ্যতা, সেইসাথে অপহরণ যার ফলে মৃত্যু হয়। ফাঁসি কার্যকর করা হয় লং ড্রপ হ্যাংগিংএর মাধ্যমে, এবং সারা দেশের প্রধান শহরগুলিতে অবস্থিত সাতটি ফাঁসির চেম্বারগুলির মধ্যে একটিতে সঞ্চালিত হয় (৩)
তাছাড়া আমাদের বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ১২১ ধারায়ও বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্যোগ বা যুদ্ধ ঘোষণায় সহায়তা করলে সে ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং অর্থ দন্ডেও দণ্ডিত হবেন।
রাষ্ট্রদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এটা নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। আপনার দেশের বিরুদ্ধে কেউ যদি যুদ্ধ করতে আসে অথবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে আপনি একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অবশ্যই নাস্তিকদের মতো মূর্খের কথা শুনবেন না অর্থাৎ রাষ্ট্রদ্রোহীদের জন্য মায়াকান্না দেখাবেন না। অবশ্যই আপনি এটা মনে করবেন না যে কে কোন দেশের পক্ষে থাকবে নাকি থাকবে না সেটা সেই লোকের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি অবশ্যই এটা মনে করবেন না যে কোনো মানুষ চাইলেই নিজের দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার মুক্তচিন্তা করার অধিকার রাখে।
বনু কুরাইজা গোত্রের কোনো অপরাধই ছিল না?
পাঠক আপনি যদি সততার সাথে নিরপেক্ষ হয়ে এই দলিল প্রমাণ গুলো পড়েন তাহলে আপনি নিজেই টের পাবেন কেমন উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী ছিল সেই বনু কুরাইজারা। এই সকল প্রমাণ গুলোকে ইসলাম বিরোধীরা তেমন একটা হাইলাইট করে দেখাতে পছন্দ করে না অথবা সোজা কথায় ধামাচাপা দিয়ে রেখে দেয়। কারণ এসব প্রমাণ দেখালে তো তারা নবী মোহাম্মদ (সা)কে খারাপ প্রমাণ করতে পারবে না। হ্যাঁ, নাস্তিকরা এভাবেই ইসলামের ব্যাপারে সমালোচনা করে থাকে। কারণ মুক্তচিন্তায় তথ্য গোপন করা, মিথ্যাচার করা, নিজের মন মতো ব্যাখ্যা করে মানুষকে ধোঁকা দেয়া খারাপ কাজ নয়।
পাঠক আসুন এখন সত্যকে জেনে নেই। প্রমাণ গুলো মন দিয়ে পড়ে নেই। কি সেই প্রমাণ যা নাস্তিকরা গোপন রেখে ইসলামকে খারাপ হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে? পড়া শুরু করুন।
নাসরুল বারী শরহে সহিহ আল বুখারী, বাংলা, ৮ খণ্ড,১৯৮ পৃষ্ঠা। মূলঃশায়খুল হাদিস মাওলানা মোঃ উসমান গনী। অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মাও নোমান আহমদ। এই সুত্রে বর্ণিত হয়েছে,
রাসুল (সা) ও বনু কুরাইজার মাঝে আগে থেকেই চুক্তি ছিল। কুরাইজারা ১০ হাজারের সৈন্যবাহিনী নিয়ে মদীনায় আক্রমণ চালানোর জন্য আসলে, বনু কুরাইজা রাসুল (সা)এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে। রাসুল (সা)এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশদের সাথে মিলে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বয়ান, ৭২৯ পৃষ্ঠা। মূলঃ মাওলানা সালাহুদ্দীন ইউসুফ। সাত জন শায়েখ মিলে এই তাফসীরটি অনুবাদ করেন। সম্পাদনা করেছেন আবুল হামীদ মাদানী,ইসলামিক সেন্টার আল মাজমাআহ সউদি আরব। এই সুত্রে বর্ণিত হয়েছে,
(সুরা আহযাব ৩৩:৯) উক্ত আয়াত সমূহে ৫ম হিজরীতে সংঘটিত আজযাব যুদ্ধের কিছু বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।এই যুদ্ধকে ‘আহযাব’ এই জন্য বলা হয় যে এই সময় ইসলামের সকল শত্রুবাহিনী একত্রিত হয়ে মুসলিমদের ঘাটি মদীনার উপর আক্রমণ করেছিল। ‘আহযাব’ ‘হিযব’ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ বাহিনী বা দল।একে খন্দকের যুদ্ধও বলা হয়,কারন মুসলিমগণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মদীনার একপাশে খাল খনন করেন। যাতে শত্রুবাহিনী মদীনা শহরের ভিতর প্রবেশ করতে না পারে। খন্দক মানে খাল বা পরিখা। উক্ত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এইরূপ যে,ইহুদী গোত্র বনু নাযীর যাদেরকে বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গ করার ফলে রাসুল (সা) মদীনা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারা খয়বারে গিয়ে বসবাস শুরু করে। তারা মক্কার কাফেরদেরকে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করার জন্য তৈরি করলো। অনুরূপ গাতফান ইত্যাদি গোত্র নাজদের গোত্রগুলোকে সাহায্যের আশ্বাস গিয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্ধুদ্ধ করল। সুতরাং ইহুদীরা অনায়াসে ইসলাম ও মুসলীমদের সকল শত্রুদেরকে একত্রিত করে মদীনার উপর আক্রমন করতে সফল হল। মক্কার মুশরিকদের কমান্ডার ছিল আবু সুফিয়ান।
সে উহুদ পর্বতের আশেপাশে শিবির স্থাপন করে পুরো মদীনাকে পরিবেষ্টন করে নিল। তাদের সম্মিলিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার,আর মুসলিমগণ ছিলেন মাত্র ৩ হাজার। এ ছাড়াও মদীনার দক্ষিন দিকে ইহুদীদের তৃতীয় গোত্র বনু কুরাইজা বাস করত। যাদের সাথে সেই সময় পর্যন্ত মুসলিমদের চুক্তি ছিল এবং তারা মুসলিমদের সাহায্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু বনু নাযীরের ইহুদী সর্দার হুয়াই বিন আখতাব মুসলিমদেরকে সমুলে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ফুসলিয়ে নিজেদের সাথে করে নিল।এদিকে মুসলিমগণ সর্বদিক দিয়ে শত্রুবাহিনীর পরিবেষ্টনে পড়ে গেলেন। সেই সংকটাবস্থায় সালমান ফারসী (রা) এর পরামর্শে পরিখা খনন করা হল। যার ফলে শত্রুবাহিনী মদীনার বাইরেই থাকতে বাধ্য হল। তারপরেও মুসলিমগণ সেই পরিবেষ্টন ও সম্মিলিত শত্রুবাহিনীর আক্রমণের ভয়ে ভীত ছিলেন। প্রায় একমাস যাবৎ এই পরিবেষ্টনে মুসলিমগণ কঠিন ভয় ও দুশ্চিন্তায় কালাতিপাত করেন।
অধ্যাপক এ কে এম নাজির আহমদ লিখিত “আদর্শ মানব মোহাম্মদ (সা)” আহসান পাবলিকেশন, ৪২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বনু নুদাইর মদীনা থেকে চলে যাবার কালে বনু কুরাইজার ইহুদীরা নতুনভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মদীনায় থাকাই পছন্দ করে। আল্লাহর রাসুল (সা) তাদেরকে সেই সুযোগ করে দেন। আহযাব যুদ্ধের সময় বাইরের ইহুদী গোত্রগুলোর পরামর্শে বনু কুরাইজা কুরাইশদের সাথে মিলিত হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাঁরা মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির কোন তোয়াক্কাই করলো না। আহযাব যুদ্ধ শেষে এই বিশ্বাসধাতকদেরকে শায়েস্তা করার জন্য মুসলিমরা বনু কুরাইজার দুর্গ অবরোধ করেন।এই অবরোধ প্রায় একমাস স্থায়ী হয়।অবশেষে মুসলিমরা ইহুদীদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা ভাংগতে সক্ষম হন।এই গোত্রের অপরাধী যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হয় ও বাকীদেরকে বন্দী করে রাখা হয়।এইভাবে ষড়যন্ত্রকারী ইহুদী খতম হয়।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এর জীবনচরিত;আসাহহুস সিয়ার। লিখেছেনঃহযরত মাওঃ হাকীম আবুল বারাকাত আবদুর রউফ দানাপুরী (রহ)। ভাষান্তরঃ মাওঃ আ.ব.ম.সাইফুল ইসলাম। ৮০,৮১ পৃষ্ঠা আর সহজ ইন আমুলবারী;শরহে বুখারী (মাগাযী ও তাফসীর অংশ) ১৩৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
তাদের ঘটনা এই যে ইহুদীরা মুসলমানদের ধ্বংস সাধনের জন্য এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেমতে তাদের বড় বড় নেতা সাল্লাম ইবনে আবুল হুকায়ক,সাল্লাম ইবনে মিশকাম ও কিনানা ইবনুর রাবী আরবের সমস্ত গোত্রে ঘুরে ঘুরে তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে।তারা কুরাইশ,বনু সুলায়ম,গাতফান,বনু আসাদ,আশজা,ফাযারা ও বনু মুররা সহ সকল গোষ্ঠীকে একযোগে মদীনায় হামলা করার জন্য প্রস্তুত করে ফেললো। মহানবী (সা) সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে পরামর্শ করলেন।সিদ্ধান্ত হলো যে মদীনার ভেতরে থেকে তাদেরকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।তাই নারী ও শিশুদেরকে মদীনায় রেখে বাইরে নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে।সেমতে সকল পুরুষ সালা পর্বতের পাদদেশে সমবেত হলো।পর্বতকে পেছনে রেখে সম্মুখ দিকে পরিখা খনন করা হলো।মুসলিম জনগণ পরিখার এ পাশে অবস্থান করলো আর শত্রু সৈন্যরা এসে পরিখার ওপারে শিবির স্থাপন করলো।মুসলিম বাহিনী পরিখার এ পাশে স্বেচ্ছা অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় খবর এলো,বনু কুরাইজা চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেছে।তারা হুয়াই ইবনে আখতাবের ফুসলানিতে পড়ে কাফিরদের সংগে একাত্ম হয়ে গেছে।এ সংবাদ পেয়ে মুসলিমগণ বিচলিত হয়ে পড়লো।কেননা মদীনায় নারী ও শিশুদের রেখে আসা হয়েছে।অর্থ সম্পদ সব সেখানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।কেবল অন্ধ সাহাবী হযরত ইবনে উম্মু মাখতুম (রা) কে খলিফা হিসেবে রেখে আসা হয়েছে।তাদের হেফাযতের কোনও ব্যাবস্থা ছিল না।পুরুষেরা সকলে এখানে অবরুদ্ধ।অপরদিকে বনু কুরাইজা মদীনার সন্নিকটেই অবস্থান করতো।তাই যে কোন সময় তাদের পক্ষ হতে আক্রমণের আশংকা ছিল।বনু কুরাইজা প্রকৃতই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখার জন্য মহানবী (সা) হযরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) ও খাওওয়াত ইবনে জুবায়র (রা) প্রমুখকে প্রেরণ করলেন।তারা এসে যখন জানালেন খবর সঠিক, তখন তিনি বনু হারিছার কজন যুবককে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন।তথাপি মুসলিমগণ উদ্বেগের ভেতর ছিল।
আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৪৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বনু কুরাইজা মুসলমানদের জীবন ক্লান্তিলগ্নে যে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল সেটা তো ছিলোই এছাড়া মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারুক না পারুক তারা ছিল বদ্ধপরিকর। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার জন্য তারা দেড় হাজার তলোয়ার, দুই হাজার বর্শা, তিনশত বর্ম এবং পাঁচশত ঢাল মজুদ করে রেখেছিল। বিজয়ের পর মুসলমানরা সেসব অস্ত্র উদ্ধার করেন । ......... এরা মুসলমানদের সাথে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিল। মুসলমানদের নির্মূল করার জন্য তারা নাযুক সময়ে শত্রুদের সাথে সহযোগিতা করে মারাত্মক যুদ্ধাপরাধ করেছিল। মৃত্যুদণ্ডই ছিল এ গুরুতর অপরাধের একমাত্র সাজা। তাদের প্রতি কোনই অবিচার করা হয়নি।
আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৪৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
হযরত আলী (রা) বনু কোরায়যার দুর্গের কাছে পৌছার পর সেই গোত্রের ইহুদীরা আল্লাহর রাসুলকে গালাগাল দিতে শুরু করলো। আল্লাহর রাসুল কিছুক্ষণ পরই মোহাজের ও আনসার সাহাবাদের সাথে নিয়ে সেখানে হাযির হলেন। প্রথমে তিনি আনা নামক একটি জলাশয়ের কাছে থামলেন। মুসলমানরাও যুদ্ধের ঘোষণা শুনে বনু কুরাইজা গোত্র অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত "তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৬৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
সুতরাং রাসুল (সা) কে হত্যা ও তাঁর দ্বীনকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা ইত্যাদি সব কিছুই তারা করেছে।
মদিনা সনদের একটি দ্বারার মধ্যে এই চুক্তি ছিল যে মদিনাতে বাইরের শত্রু আক্রমণ করলে মোকাবেলায় সবাই এক থাকবে । রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া কেউ গোপনে চুক্তি করতে পারবে না কিন্তু এই দুটি চুক্তিই বনু কুরাইজা ভঙ্গ করে বরং তারা মক্কার কাফেরদের সাথে এক ছিল এবং মুসলিমদের ধ্বংস করতে চাইত তারা। প্রমাণ দেখুন।
ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত "তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৬৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
যখন মুশরিক ও ইহুদীদের সেনাবাহিনী মদীনায় আসে ও অবরোধ সৃষ্টি করে তখন বনু কুরাইযা গোত্রের ইহুদীরা যারা মদীনার অধিবাসী ছিল এবং যাদের সাথে রাসুল (সা) এর চুক্তি হয়েছিল তারাও ঠিক এই সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলো এবং সন্ধি ভেঙে দিলো। তারা চোখ রাঙাতে শুরু করলো।
তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩ খণ্ড, ৭৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বনু কুরাইজা ছিল ইহুদীদের একটি গোত্র। এ গোত্রটি মহানবী (সা) এর সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল । কিন্তু আহযাবের যুদ্ধকালে তারা চুক্তি ভঙ্গ করে হানাদারদের সাথে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারা পিছন দিক থেকে মুসলিমদের উপর আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছিল। সঙ্গত কারনেই আহযাবের যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র মহানবী (সা) আল্লাহর হুকুমে তাদের উপর আক্রমন চালান ।
আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত "সীরাতুল মুস্তফা (সা)" ২৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
হযরত আনাস (রা) বলেন বনু কুরাইজা এবং রাসুল (সা)এর মধ্যে পারস্পারিক চুক্তি পূর্বে থেকেই বিদ্যমান ছিল। যখন কুরাইশরা ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমন করতে আসে, তখন বনু কুরাইজা রাসুল (সা) এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশদের সাথে গিয়ে মিলিত হয়।
আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত "সীরাতুল মুস্তফা (সা)" ২৭৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
রাসুল (সা) হযরত আলী (রা) কে ইসলামের ঝাণ্ডাসহ রওয়ানা করলেন। হযরত আলী (রা) যখন সেখানে পৌঁছলেন তখন ইহুদীরা নবী করীম (সা) কে প্রকাশ্যে এমনভাবে গালি দেয় যা ক্ষমার অযোগ্য একটি অপরাধ।
মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ (হাঃফি)বলেনঃ(৪)
বনু কুরাইযার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে হিজরী ৫ম সনের শেষ দিকে। আর মদীনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রথম হিজরীতে। এ পাঁচ বছর বনু কুরাইযার লোকজন মুসলমানদের মতো একই সুযোগ-সুবিধা নিয়েই মদীনায় বসবাস করেছে। বরং বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের মদীনা রক্ষার জন্য জিহাদ করতে হলেও তাদেরকে তা করতে হয়নি। কিন্তু মদীনার অন্যান্য ইয়াহুদী গোত্রের মতো বনু কুরাইযার লোকজনও রাষ্ট্রের দেওয়া নিরাপত্তা ও শান্তির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা ঐতিহাসিক খন্দক যুদ্ধের সময় কাফেরদের বহুজাতিক বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। বনু কুরাইযার সর্দার শুধু নিজেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়নি; বরং অন্য গোত্রের লোকদেরও এ হীন ষড়যন্ত্রের অংশিদার করেছে। তারা মনে করেছিল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবার অবশ্যই কাফের-মুশরিকদের কাছে পরাজিত হবেন। তাই এই গোপন আঁতাত তাদেরকে পরবর্তীতে কাফেরদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি বা তাদের নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দিবে। এ কাজটি ছিল তাদের সাথে কৃত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, গুপ্তচরবৃত্তি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং দীর্ঘ ৫ বছর থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের দেওয়া শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
উগ্র সন্ত্রাসীরা নবী মুহাম্মদ (সা) সহ পুরা মদীনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং এদের সাথে যুক্ত হয়েছিল বনু কুরাইজার লোকেরা। আসাদুল্লাহ আল গালিব লিখিত "সীরাতুর রাসুল (সা)" ৪১৮ পৃষ্ঠায় যুদ্ধের কারণটি বিস্তারিত পড়ে নিজেই দেখে নিন। সিরাত থেকে নিজেই বিস্তারিত পড়ে দেখুন। আর এটা নিজেকে প্রশ্ন করুন নাস্তিকরা কিভাবে আসল ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে অর্ধেক তথ্য হাইলাইট করে ইসলামের বদনাম করে? হযরত মোহাম্মদ (সা) এর বদনাম করে? ইসলামের সকল সমালোচনা গুলো এভাবেই তথ্যকে ধামাচাপাকে দিয়ে মুক্তচিন্তার নামে করে থাকে নাস্তিক জাতের প্রাণীরা।
অপরাধীরা অপরাধ স্বীকার করে এবং তাদের শাস্তি কে দেবে সেটাও তারাই ঠিক করে তাহলে এখানে নাস্তিকদের সমস্যা কোথায়?
ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত "তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বনু কুরাইজা গোত্র স্বীকার করে নিয়েছে যে, হযরত সাদ (রা) তাদের যে মিমাংসা করবেন তা তারা মেনে নেবে এবং তাদের দুর্গ মুসলিমদের হাতে সমর্পণ করবে। রাসুল (সা) হযরত সাদ (রা) এর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, তিনি যেন এসে তাদেরকে তাঁর ফয়সালা শুনিয়ে দেন।
তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৭২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
হযরত সাদ (রা) বললেন ! তাহলে এখন আমার ফয়সালা শুনুন ! বনু কুরাইজার মধ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মত যত লোক রয়েছে তাদের সবাইকেই হত্যা করে দেয়া হবে । তাদের শিশু সন্তানদের বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন সম্পদ মুসলিমদের অধিকারভুক্ত হবে।
নিরপরাধ কাউকেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি শুধুমাত্র যারা মুক্তচিন্তায় মুসলিমদেরকে গণহত্যা করতে চেয়েছিল অর্থাৎ মুক্তচিন্তায় সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্মতি দিয়েছিল এমনকি গোটা মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করার জন্য, মুসলিম নারীদেরকে খুন করার জন্য, মুসলিম শিশুদের খুন করার জন্য প্রস্তুত ছিল তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয় আর যারা নিরপরাধ ছিল তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ইবনে হিশাম (রহ) লিখিত সীরাতুন নবী (সা) এর ৩ খণ্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
... বনু কুরাইজা যে রাতে রাসুল (সা) এর নির্দেশমত দুর্গ হতে নেমে এসে আত্মসমর্পণ করে,সে রাতে সালাবা ইবন সায়া,উসায়দ ইবনে সায়া ও আসাদ ইবনে উবায়দা ইসলাম গ্রহন করেন।তাঁরা বনু কুরাইজা বা বনু নাযীর গোত্রের লোক ছিলেন না।তাঁরা ছিলেন বনু হাদল গোত্রের লোক।উক্ত গোত্রদ্বয়ের আরও উপর থেকে তাদের বংশদ্বারা নেমে এসেছে। উভয়ের ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ এক।
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ৪৪৮৭,৪৪৮৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃবানূ কুরাইযার অবরুদ্ধ লোকেরা সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর নির্দেশ মেনে নিতে সম্মত হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সা’দ (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠালেন। সুতরাং তিনি একটি গাধার উপর আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি মাসজিদের কাছাকাছি আসলেন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার অথবা বললেন, উত্তম ব্যক্তির দিকে উঠে যাও। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ সমস্ত অবরুদ্ধ দুর্গবাসীরা তোমার নির্দেশ মান্য করতে সম্মত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, তাদের মধ্যেকার যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক) লোকদেরকে হত্যা করা হোক এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো। বর্ণনাকারী কখনো বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি রাজাবিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ। বর্ণনাকারী ইবনু মুসান্না (রহঃ) কোন কোন সময় তিনি বলেছেনঃ ‘তুমি রাজাধিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো’ কথাটি উল্লেখ করেননি।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ১৫৮৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
আতিয়্যা আল-কুরাযী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমাদেরকে বানূ কুরাইযার যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আনা হল। যাদের লজ্জাস্থানের লোম উঠেছে (বালেগদের) তাদেরকে হত্যা করা হল, আর যাদের তা উঠেনি (নাবালেগদের) তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হল। আমার লজ্জাস্থানে তখনও লোম উঠেনি। একারণে আমাকে মুক্ত করে দেওয়া হল।-ihadis.com
আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,
সেই রাতে অস্ত্র সমর্পণের পরে বনু কুরাইজার কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করে । এতে তাদের সর্বচ্চ সবাইকে নিরাপত্তা দেয়া হয় । সেই রাতে আমর নামের এক লোক বেরিয়ে আসে যে বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতকতায় যোগদান করেনি । প্রহরীদের নেতা হযরত মোহাম্মদ ইবনে মোসলামা (রা) তাকে চিনতে পারেন ও ছেড়ে দেন । পরে এই লোকটি নিরুদ্ধেশ হয়ে যায়। তার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি।
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ১৫৮২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মুআয (রাঃ) আহ্যাব যুদ্ধের দিন তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এতে তার বাহুর মাঝখানের রগ কেটে যায়। তার ক্ষতস্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগুনের সেঁক দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন। তারপর তার হাত ফুলে যায়। আগুনের সেঁক দেওয়া বন্ধ করলে আবার রক্তক্ষরণ হতে থাকে। আবার তিনি তার ক্ষতস্থানে আগুনের সেঁক দেন। তার হাত পুনরায় ফুলে উঠে। তিনি (সা’দ) নিজের এ অবস্থা দেখে বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার জীবনকে কেড়ে নিও না বানূ কুরাইযার চরম পরিণতি দেখে আমার চোখ না জুড়ানো পর্যন্ত। ” তার জখম হতে সাথে সাথে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আর একটি ফোঁটাও বের হয়নি। সা’দ ইবনু মুআয (রাঃ)-কে তারা (বানূ কুরাইযা) সালিশ মানতে রাজী হয়। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তার (সা’দের) নিকট লোক পাঠালেন (সমাধানের জন্য)। তিনি সমাধান দিলেন যে, বানূ কুরাইযা গোত্রের পুরুষদেরকে মেরে ফেলা হবে এবং মহিলাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা হবে। মুসলমানগণ তাদের দ্বারা বিভিন্ন রকম কাজ আদায় করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদের ব্যাপারে তোমার মত সম্পূর্ণ আল্লাহ্ তা’আলার মতের অনুরূপ হয়েছে। তারা (পুরুষগণ) সংখ্যায় ছিল চার শত। লোকেরা তাদেরকে মেরে ফেলা সমাপ্ত করলে, তার ক্ষতস্থান হতে আবার রক্ত পড়া আরম্ভ হল এবং তিনি মৃত্যু বরণ করলেন।-ihadis.com
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বললেন, ‘হে সা‘দ! এ সব লোকজন আপনার মীমাংসার উপর আস্থাশীল হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।’সা‘দ বললেন, ‘আমার মীমাংসা কি এদের উপর প্রযোজ্য হবে?’জবাবে লোকেরা বলল, ‘জী হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘মুসলিমগণের উপরেও কি?’লোকেরা বলল, ‘জী হ্যাঁ’।তিনি আবারও বললেন, ‘এখানে যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন তাদের উপরেও কি তা প্রযোজ্য হবে?’ তাঁর ইঙ্গিত ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’র অবতরণ স্থানের দিকে, কিন্তু সম্মান ও ইজ্জতের কারণে মুখমন্ডল ছিল অন্যদিকে ফেরানো। প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার উপরেও হবে।’সা‘দ বললেন, ‘তাহলে তাদের সম্পর্কে আমার বিচারের রায় হচ্ছে এই যে, পুরুষদের হত্যা করা হোক, মহিলা ও শিশুদের বন্দী করে রাখা হোক এবং সম্পদসমূহ বন্টন করে দেয়া হোক।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন) ‘আপনি তাদের ব্যাপারে ঠিক সেই বিচারই করেছেন যেমনটি করেছেন আল্লাহ তা‘আলা সাত আসমানের উপর।’সা'দের এ বিচার ছিল অত্যন্ত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক। কারণ, বনু কুরাইযা মুসলিমগণের জীবন মরণের জন্য অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে যা করতে চেয়েছিলেন তা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময়। অঙ্গীকার ভঙ্গের একটি জঘন্য অপরাধও তারা করেছিল। অধিকন্তু, মুসলিমগণকে নিঃশেষ করে ফেলার জন্য তারা দেড় হাজার তরবারী, দুই হাজার বর্শা, যুদ্ধে ব্যবহারোপযোগী তিন শত লৌহবর্ম এবং পাঁচ শত প্রতিরক্ষা ঢাল সংগ্রহ করে রেখেছিল। পরবর্তী কালে সেগুলো মুসলিমগণের অধিকারে আসে(৫)।
প্রাচীন সোর্স থেকে প্রমাণ হয় না যে বনু কুরাইজারা রাষ্ট্রদ্রোহী ছিল?
নাস্তিকদের মূর্খতা দেখলে হাঁসতে হাঁসতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরা ইসলাম সম্পর্কে ঠিক মতো কিছু বোঝেই না তার উপরে আবার ইসলামের সমালোচনা করে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।
মূর্খ নাস্তিকরা দাবি করে থাকে যে,
বনু কুরাইজার সাথে আদৌ নবীর কোন চুক্তি ছিল, সেরকম কোন শক্তিশালী প্রমাণই পাওয়া যায় না। যাদের সাথে চুক্তিই নেই, তারা কীভাবে চুক্তি ভঙ্গ করলো সেটিই প্রশ্ন। মুহাম্মদ মদিনা যাওয়ার পরে কয়েকটি ইহুদি গোত্রের সাথে চুক্তি করেছিল, এ কথার প্রমাণ মেলে। কিন্তু সর্বাধিক প্রাচীন সিরাত গ্রন্থগুলোতে চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলোর মধ্যে বনু কুরাইজার নাম পাওয়া যায় না। হাজার বছর পরে লিখিত কিছু সিরাত গ্রন্থে ( যেমন আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলভি রচিত সিরাতুল মুস্তফা, যিনি ১৮৯৯ সালে জন্ম নেয়া একজন দেওবন্দ আলেম ) দাবী করা হয়, বনু কুরাইজা গোত্রের সাথে নাকি নবীর চুক্তি ছিল! অথচ প্রাচীন কোন সিরাত গ্রন্থে বনু কুরাইজার সাথে চুক্তির কোন দলিল মেলে না। সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)- ইবনে ইসহাক, অনুবাদঃ শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৭১, ২৭২ এই সোর্সে বনু কুরাইজা ইহুদী গত্রের নাম নেই।
নাস্তিকরা এখানে খুবই চালাকির সাথে সুক্ষ চুরিবিদ্যার আশ্রয় নিয়েছে। কারণ নাস্তিকরা খুবই ভালো করেই জানে যে তাদের অন্ধ মুক্তমনা ভক্তরা যাচাই করে দেখে না। ইসলাম বিরোধী তথ্য পেলেই সেটাকে গিলে নেয়। প্রাচীন সিরাত থেকে আমি প্রমাণ দিব তার আগে, পাঠক কিভাবে চুরি করেছে সেটা বলে নেই। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই প্রাচীন কোনো কিতাবে বনু কুরাইজাদের চুক্তির কথা নেই তার অর্থ কি এটা যে ইসলামের কোনো প্রাচীন সুত্রেই সেই তথ্য নেই? পয়েন্টটি বুঝতে পারলেন?
ইসলামের সব থেকে প্রাচীন তাফসীর হচ্ছে “তাফসীরে ইবনে কাসির” সেখানে এই কথা স্পষ্ট বলা হয়েছে যে বনু কুরাইজাদের সাথে রাষ্ট্রীয় চুক্তি হয়েছিল এবং সেই চুক্তি তারা লঙ্ঘন করেছিল। এই যে দেখুন প্রমাণ,
ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত "তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৬৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
যখন মুশরিক ও ইহুদীদের সেনাবাহিনী মদীনায় আসে ও অবরোধ সৃষ্টি করে তখন বনু কুরাইযা গোত্রের ইহুদীরা যারা মদীনার অধিবাসী ছিল এবং যাদের সাথে রাসুল (সা) এর চুক্তি হয়েছিল তারাও ঠিক এই সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলো এবং সন্ধি ভেঙে দিলো। তারা চোখ রাঙাতে শুরু করলো।
তাহলে যদি ধরেও নেই যে প্রাচীন সিরাতে বনু কুরাইজার চুক্তির কথা উল্লেখ নেই তারপরেও বিন্দুমাত্র সমস্যা হবে না এই তথ্য জানতে যে আসলেই ইহুদী বনু কুরাইজাদের সাথে মুসলিমদের রাষ্ট্রীয় চুক্তি হয়েছিল। এখন আসি অন্যতম প্রাচীন আরেকটি সিরাত গ্রন্থ নাম সিরাতে ইবনে হিশাম। এই সিরাত থেকে এটা জানা যায় যে বনু কুরাইজাদের সাথে মুসলিমদের রাষ্ট্রীয় চুক্তি হয়েছিল।
প্রমাণ গুলো দেখে নিন।
বনু কুরাইজা মদীনায় অবস্থানকারী একটি গোত্র। যাদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান্তি চুক্তি ছিল। কেউ কারো উপর আক্রমণ করবে না। বর্হিশত্রু আক্রমণ করলে পরস্পর সহযোগিতা করবে। [সীরাতে ইবনে হিশাম-১/৫০৩-৫০৪]
যখন বনী নজীরের সর্দার হুআই বিন আখতাব বনু কুরাইজার সর্দার কাব বিন আসাদ কুরাজীকে তার দলে টানতে আসে,তখন সে দৃঢ়তার সাথে বলেছিলঃ আফসোস তোমার জন্য হে হুয়াই! নিশ্চয় তুমি এক নিকৃষ্ট ব্যক্তি। নিশ্চয় আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ। সুতরাং আমার ও তার মাঝে যে চুক্তি রয়েছে তা আমি ভঙ্গ করতে পারবো না। আর আমি তাকে একজন ওয়াদা রক্ষাকারী এবং সত্যনিষ্টই পেয়েছি। [সীরাতে ইবনে হিশাম-২/২২০, গাযওয়ায়ে খন্দক অধ্যায়)
কিন্তু অবশেষে হুয়াইয়ের ফাঁদে পড়ে চুক্তি ভঙ্গ করে শত্রুপক্ষের সাথে মিলে যায়(৬)। যখন নবীজীর প্রতিনিধি তার সাথে সাক্ষাতে চুক্তির কথা স্মরণ করায় তখন সে তাচ্ছিল্যের সাথে বলেঃ
আল্লাহর নবী কে? মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আমাদের মাঝে কোন চুক্তি নেই। কোন সন্ধি নেই। [সীরাতে ইবনে হিশাম-২/২২২]
নাস্তিকরা যখন এটা বুঝতে পারে যে এসব দুর্বল অভিযোগ করে তেমন একটা সুবিধা করা যাবে না তখন একটি হাস্যকর প্রশ্ন করে। সেই হাস্যকর প্রশ্নটি হচ্ছে এই,
ইসলামিক এপোলোজিস্টরা বনু কুরাইজা গোত্রের ওপর যেই গণহত্যা চালায়, তাকে জায়েজ করতে বনু কুরাইজা গোত্রের চুক্তি ভঙ্গের কথা বারবার ব্যবহার করেন। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, বনু কুরাইজা চুক্তি ভঙ্গ করেছিল, কিন্তু সেটিও কী একটি গোটা গোত্রের সকল সাবালক পুরুষকে হত্যা, নারী ও শিশুদের যৌনদাসী এবং ক্রীতদাস বানানোকে জায়েজ করতে পারে?
সীমাহীন মূর্খতা আর বিবর্তিত মগজধারী না হলে এমন প্রশ্ন কেউ করতে পারবে না। ধরুন আপনি নিজেই একজন রাষ্ট্রপ্রধান। এখন কোনো গোত্র যদি আপনার সাথে এই শান্তি চুক্তি করে যে যদি কোনো বাইরের দুশমন আপনার রাষ্ট্রের প্রতি হামলা চালায় তাহলে তারা আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো যখন আপনার প্রতি সত্যি সত্যি আপনার দুশমন পক্ষ হামলা চালিয়েছে তখন সেই চুক্তি করা গোত্র আপনার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার দুশমনদের দলে যোগ দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে আপনার দেশের বিরুদ্ধে আপনার দেশের পুরো জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। একটু সুযোগ পেলেই তারা আপনাকে খুন করে ফেলবে। আপনার স্ত্রীকে খুন করে ফেলবে আপনার সন্তানদেরকে খুন করে ফেলবে।
এমন অবস্থায় আপনি যদি তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেন তাদের সাথে কি কি আচরণ করবেন? সেই নারীরা আপনার পুরো দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করতে এসেছিল সেই নারীদেরকে আপনি যদি বন্দী করেন তাহলে এটি কেন অযৌক্তিক হবে? যদি দাসীও বানান তাহলেও বা কেন অযৌক্তিক হবে? সে তো এসেছিলই আপনাকে খুন করতে তাহলে? নিজের আত্মরক্ষার জন্য কাউকে দাসী বানানো কিভাবে অযৌক্তিক হবে?
বাকি রইলো শিশুদের কথা। বনু কুরাইজার শিশুদেরকে কি মুসলিমরা নির্যাতন করেছিল? উত্তর হচ্ছে না। তাহলে শিশুদেরকে বন্দীর নাম দিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দেয়াটাই ভালো অথবা অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়া। তাছাড়া সেই শিশুদেরকে আপনার দুশমন পক্ষের নারীরা আপনার দেশের বিরুদ্ধেই একটা সময় লাগিয়ে দিতে পারে। অথবা আপনি যদি মূর্খ নাস্তিকদের কথা শুনে আপনাকে হত্যা করতে আসা সেই নারী ও সেই নারীদের সাথে শিশুদেরকে এমনি ছেড়ে দেন তাহলে সেই নারীরা তাদের শিশুদেরকে এই বলে যদি বড় করে যে তারা যখন বড় হবে আপনাকে খুন করবে তখন কি হবে? যেহেতু তারা আপনাকে সহ আপনার পুরো দেশকে ধ্বংস করতে এসেছিল সেহেতু আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিলে তারা যে পুনরায় আপনার দেশের বিরুদ্ধে হামলা চালাবে না সেটার গ্যারান্টি কি?
নাস্তিকদের আসলে বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান খুবই কম। ইসলামের সমালোচনায় তারা যুক্তিহীন কথা পেলেই সেটাকে গিলে খায়। একবারের জন্য তারা নাস্তিকতার কাতার ছেড়ে মানুষের কাতারে এসে চিন্তা করে দেখে না তারা যে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে সেটা আসলেই যৌক্তিক কিনা? যে কোনো দেশেই যদি রাষ্ট্রদ্রোহীতার উপযুক্ত প্রমাণ মেলে তাহলে সেই রাষ্ট্রদ্রোহীর শাস্তি হতেই হবে। সেটা যেই হোক না কেন।
তর্কের খাতিরে যদি এটাও ধরে নেয়া হয় যে প্রাচীন সিরাত থেকে বনু কুরাইজাদের চুক্তির প্রমাণ নেই, এটাও ধরে যদি নেয়া হয় যে প্রাচীন তাফসীর থেকেও সেই চুক্তির প্রমাণ মেলে না তারপরেও এটা প্রমাণ হবে না যে বনু কুরাইজা গোত্র মুসলিমদের সাথে শান্তি চুক্তি করে নাই। কেন? কারণ সহিহ মুসলিম থেকেই পরিস্কার প্রমাণ পাওয়া যায় যে তারা মুসলিমদের সাথে শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল। এখন কি নাস্তিকরা এটা বলবে যে সহিহ মুসলিমের তথ্যও মানা যাবে না? কি?
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৭, ২২ অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি চুক্তি ভঙ্গ করে তাকে হত্যা করা বৈধ হওয়া এবং দুর্গের অধিবাসীদের কোন ন্যায়পরায়ণ ক্ষমতা প্রদত্ত বিচারকের নির্দেশে অবতরণ বৈধ হওয়া। সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বানূ কুরাইযার অবরুদ্ধ লোকেরা সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর নির্দেশ মেনে নিতে সম্মত হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সা’দ (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠালেন। সুতরাং তিনি একটি গাধার উপর আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি মাসজিদের কাছাকাছি আসলেন তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার অথবা বললেন, উত্তম ব্যক্তির দিকে উঠে যাও। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ সমস্ত অবরুদ্ধ দুর্গবাসীরা তোমার নির্দেশ মান্য করতে সম্মত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, তাদের মধ্যেকার যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক) লোকদেরকে হত্যা করা হোক এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো। বর্ণনাকারী কখনো বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি রাজাবিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ। বর্ণনাকারী ইবনু মুসান্না (রহঃ) কোন কোন সময় তিনি বলেছেনঃ ‘তুমি রাজাধিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো’ কথাটি উল্লেখ করেননি।-ihadis.com
আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১১৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেন, বনু নাযীর ও বনু কুরাইযাহ গোত্রের ইয়াহূদী সম্প্রদায় (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ শুরু করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনু নাযীর গোত্রকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন এবং বনু কুরাইযাহ গোত্রের প্রতি দয়া করে তাদেরকে থাকতে দেন। কিন্তু পরে বনূ কুরাইযাহ গোত্র (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ শুরু করলে কতক লোক যারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দলভুক্ত হওয়ার পর তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছিলেন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল তারা ব্যতীত অন্য সব পুরুষ লোককে হত্যা করা হয় এবং মহিলা সন্তান-সন্ততি ও মালামাল মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদীনাহ্র সব ইয়াহূদীকে দেশান্তর করলেন।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৫৭৬, হাসান সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ মহান আল্লাহ্র বানী : “যারা আল্লাহ্র অবতীর্ণ বিধান মোতাবেক বিচার ফায়সালা করে না, তারা কাফির... তারাই ফাসিক” (সূরা মায়িদাহ্ : ৪৫-৪৭) পর্যন্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এ তিনটি আয়াত ইয়াহুদীদের সম্পর্কে, বিশেষ করে বনু কুরাইযাহ ও বনু নাযীর গোত্রকে লক্ষ্য করে অবতীর্ণ হয়েছে।-ihadis.com
একজন মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত সরাসরি কোন অপরাধ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাস্তি দেয়া যায় না। এটি সকল স্থান কাল প্রেক্ষাপটে সরাসরি মানবতা বিরোধী। কিন্তু কেউ যদি আপনার দেশের বিরুদ্ধে হামলা করার জন্য তৈরি থাকে এবং আপনি যদি এটাও জানতে পারেন যে তারা আপনাকে ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আপনি একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কি করবেন? মূর্খ নাস্তিকদের কথা মানবেন নাকি যৌক্তিক কারণেই নিজের দেশকে রক্ষা করতে তারা যাতে হামলা করবার কথা পুনরায় চিন্তা করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিবেন? যুক্তি কি বলে? নাস্তিক টাইম মানুষের মগজে এসব সহজ কথা ঢোকে না।
প্রাচীন গ্রন্থ আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া থেকেও প্রমাণঃ
নাস্তিকরা শুধু একটি প্রাচীন সিরাতের কথা বলে এটা অস্বীকার করতে চায় যে বনু কুরাইজা গোত্ররা কোনো চুক্তি অথবা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ করে নাই কিন্তু সেই মুক্তমনা মূর্খদেরকে কে বুঝাবে যে শুধুমাত্র প্রাচীন গ্রন্থ ইসলামে একটিই না আরও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ রয়েছে? আসুন ইসলামের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থ আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া থেকে জেনে নেই। আসলেই বনু কুরাইজা গোত্র অপরাধী ছিল নাকি ছিল না?
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৪ খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
ইসলামের দুশমনদের কুফরী রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা এবং খন্দকের যুদ্ধে কাফির দলের সঙ্গে সহযােগিতা সহমর্মিতার শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে পরকালের কঠোর শাস্তি ছাড়াও দুনিয়ার জীবনেই মর্মন্তুদ শাস্তিতে নিপতিত করেছেন। কাফির দলের সঙ্গে তাদের সহযােগিতা কোন কাজেই আসেনি।
দেখবেন নাস্তিকরা বলে থাকে যে নবী ও সাহাবিরা নাকি যুদ্ধে নারী ধর্ষণ করতো অথচ এটি ডাহামিথ্যে কথা। প্রমাণ দেখুন।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৪ খণ্ড, ২৪০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
ইবন ইসহাক আরাে বলেন, রাসূল করীম (সা) বনূ কুরায়যার বন্দীদেরকে সাযা দিয়ে সাঈদ ইবন যায়দকে নাজদে প্রেরণ করে তার বিনিময়ে অশ্ব ও অস্ত্র ক্রয় করেন। রাসূল করীম (সা) বন্ কুরায়যার নারীদের মধ্যে রায়হানা বিনতে আমর ইবন খানাকাকে নিজের জন্য পছন্দ করেন। এ মহিলাটি ছিলেন বনূ আমর ইবন কুরায়যা গােত্রের। তিনি আমৃত্যু রাসূল করীম (সা)-এর মালিকানাধীন ছিলেন। রাসূল করীম (সা) তার কাছে ইসলাম পেশ করলে তিনি প্রথমে বিরত থাকেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল করীম (সা) অত্যন্ত আনন্দিত হন। তাকে মুক্ত করে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলে তিনি রাসূলুল্লাহ্র সুবিধার কথা বিবেচনা করে একজন দাসীরূপে থাকাই পছন্দ করেন। রাসূল করীম (সা)-এর ইনতিকাল পর্যন্ত তিনি তাঁর কাছেই ছিলেন। তারপর ইবন ইসহাক খন্দক যুদ্ধের কাহিনী প্রসঙ্গে সূরা আহযাবের প্রথম দিকের আয়াত সম্পর্কে আলােচনা করেন। সূরা আহযাবের তাফসীরে এ বিষয়ে আমরা বিশদ আলােচনা করছি। সমস্ত প্রশংসা আর সন্তুষ্টি আল্লাহর জন্য।
এখানে দুটো বিষয় খুব গভীরভাবে খেয়াল করুন। বনু কুরাইজাদেরকে নবীজি (সা) শাস্তি দেন। এটা থেকে স্পষ্ট যে নিশ্চয় তারা কোনো ভয়াবহ অপরাধ করেছিল। দ্বিতীয়ত রায়হানা বিনতে খানাকে নবীজি (সা) নিজের জন্য পছন্দ করেন। এমনকি উনাকে ইসলাম গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন কিন্তু উনি মানা করে দেন। গোমূর্খ নাস্তিকদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে নবীজি (সা) যদি যুদ্ধে নারী ধর্ষণ করতো তাহলে রায়হানাকে প্রস্তাব দেবার কি দরকার ছিল? উনি তো চাইলেই জবরদস্তি করতে পারতো? শুধু কি তাই? রায়হানাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত দেয়া হয়, কোনো খারাপ নিকৃষ্ট ধর্ষক কি ধর্ষণ করার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিবে? আর রায়হানা যদি নবীজি (সা)কে ঘৃণা করতেন তাহলে কেন উনি দাসীরুপে থাকাই পছন্দ করলেন নিজের জন্য?
পাঠক আপনার কি মনে হয় নাস্তিকরা কি মানসিকভাবে সুস্থ? নাস্তিকরা এমন ঠাণ্ডা মাথায় কিভাবে মিথ্যাচার করে? তারা কি আসলেই নিজেদেরকে মানুষ মনে করা না? নাস্তিকরা কেন মানুষের মতো চিন্তা করতে পারছে না? নাস্তিকরা কেন সভ্য হচ্ছে না? নাস্তিকরা কেন ইসলাম নিয়ে জালিয়াতি বন্ধ করছে না? নাস্তিকদের মূর্খতার শেষ কোথায়? নাস্তিকদের প্রতারণার শেষ কোথায়? আর কিভাবে বললে নাস্তিকরা বুঝবে যে ইসলামই সত্য? আর কিভাবে বললে নাস্তিকরা বুঝবে যে নাস্তিকরা মিথ্যার পথে রয়েছে?
আরও নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ
কিতাবুস সিয়ার। তাফসীরে ইবনে আব্বাস, সুরা আহযাব, ৬২ ও ৬৩ পৃষ্ঠা। তাফসীরে জালালাইন, সুরা আহযাব ২৫ , ২৬ আয়াত এর তাফসীর। আর রাহীকুল মাখতুম, আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত। তাফসীরে ইবনে কাসীর।ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত।সুরা আহযাব ২৫,২৬ আয়াতের ব্যাখ্যা পড়ুন। তাফহীমুল কুরআন, সুরা আহযাব ২৫, ২৬ আয়াতের ব্যাখ্যা পড়ুন। তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন, ৫ খণ্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা পড়ুন। তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩ খণ্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা। আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত "সীরাতুল মুস্তফা (সা)" ২৭৮ পৃষ্ঠা থেকে পড়ুন। আসাদুল্লাহ আল গালিব লিখিত "সীরাতুর রাসুল (সা)" ৪১৮ পৃষ্ঠায় যুদ্ধের কারন পড়ুন। তাফসীরে মাযহারী, কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ), ৯ খণ্ড,৪৪৮ পৃষ্ঠা। তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ, সুরা আহযাব ৩৩ঃ৯ আয়াতের ব্যাখ্যা বিস্তারিত। তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, সুরা আহযাব ৩৩ঃ৯ আয়াতের ব্যাখ্যা বিস্তারিত।
কেন কাফেরদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল?
জ্ঞানহীন নাস্তিকরা দেখবেন বিভিন্ন তথ্য দেখিয়ে দাবি করে থাকে কাফেরদেরকে নবী মোহাম্মদ (সা) বিনা কারণেই অমানবিক ভাবে সব সময় চাইতো আরব উপদ্বীপ থেকে বহিস্কার করে দিতে। এর পক্ষে বেশ কিছু হাদিসও দেখায়। যেমন,
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একদা আমরা মাসজিদে বসা ছিলাম। হঠাৎ আমাদের দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেরিয়ে এলেন। তারপর তিনি বললেন, তোমরা ইয়াহুদীদের দিকে যাও। সুতরাং আমরা তাঁর সঙ্গে বের হলাম। পরিশেষে তাদের কাছে এলাম। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে (ধর্মের দিকে) আহবান করে বললেন, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহন কর, তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবুল কাসেম! নিশ্চয়ই আপনি (আল্লাহর নির্দেশ) প্রচার করছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ আমি এ কথাই শুনতে চেয়েছি। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন। তোমরা ইসলাম গ্রহন কর, তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবুল কাসেম! নিশ্চয়ই আপনি প্রচার করছেন। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তাই চেয়েছিলাম। এরপর তৃতীয়বার তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা জেনে রেখো! নিশ্চয়ই পৃথিবী আল্লাহ ও তাঁর রসূলের। আর আমার ইচ্ছা যে, তোমাদেরকে আমি এ ভূখণ্ড থেকে বহিস্কার করবো। অতএব তোমাদের মধ্যে হতে যদি কারো কিছু মালামাল থাকে তাহলে সে যেন তা বিক্রি করে দেয়। নতুবা জেনে রেখো যে, সমগ্র ভু-মণ্ডল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৬,সহিহ হাদিস,জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমার কাছে ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি ইয়াহূদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে আরব উপ-দ্বীপ থেকে বের করে দেবো। তারপর মুসলিম ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেবো না।-ihadis.com
কিন্তু কি কারণে সেই কাফেরদেরকে বহিস্কার করা হয়েছে বা হবে সেই কারণটি আপনাকে জানতে দিতে চাইবে না মুক্তমনা নাস্তিকরা। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সেই কারণটিকে লুকানোর চেষ্টা করতে থাকবে। তাই আসুন সত্য ঘটনাটি জেনে নেয়া যাক।
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৮৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বানু নাযীর এবং বানু কুরাইযাহ গোত্র দুটির ইয়াহূদীরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বানূ নাযীরকে দেশান্তর করেন। এবং বনূ কুরাইযাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। পরিশেষে বানূ কুরাইযাও যুদ্ধ করল। ফলে তিনি তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পদসমূহ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। কিন্তু তাদের কিছু সংখ্যক লোক যারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তাদেরকে তিনি নিরাপত্তা প্রদান করেন। তখন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদীনায় সকল ইয়াহূদীকে দেশান্তর করেন। বানূ কায়নুকা’ গোত্রের ইয়াহূদী (‘আবদুল্লাহ ইবনু সালামের ইয়াহুদী গোত্র) , বানু হারিসাহর ‘ইয়াহুদী এবং মাদীনায় বসবাসরত সকল ইয়াহূদীকেই দেশ থেকে বহিষ্কার করেন।-ihadis.com
আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১১৫৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেন, বনু নাযীর ও বনু কুরাইযাহ গোত্রের ইয়াহূদী সম্প্রদায় (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ শুরু করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনু নাযীর গোত্রকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন এবং বনু কুরাইযাহ গোত্রের প্রতি দয়া করে তাদেরকে থাকতে দেন। কিন্তু পরে বনূ কুরাইযাহ গোত্র (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ শুরু করলে কতক লোক যারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দলভুক্ত হওয়ার পর তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছিলেন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল তারা ব্যতীত অন্য সব পুরুষ লোককে হত্যা করা হয় এবং মহিলা সন্তান-সন্ততি ও মালামাল মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদীনাহ্র সব ইয়াহূদীকে দেশান্তর করলেন।-ihadis.com
পাঠক এইবার আপনি নিজেই বলুন তো যেই ইহুদীরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করে দিয়ে কিভাবে নবীজি মোহাম্মদ (সা) অমানবিক কাজ করলেন? নাস্তিকরা কেন জানি ইহুদী ও কাফেরদের অপরাধ গুলোকে ঢেকে রাখতে চায় এবং মুসলিমদেরকে তথা নবীজি (সা) থেকে নিয়ে উনার অনুসারীদেরকে খারাপ দেখাতে চায়। কি অবাক হলেন তো?
কোনো নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়নি?
নাস্তিকরা এই হাদিসটি দেখায়,
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৭১, হাসান হাদিস,‘আয়ীশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, বনী কুরাইযার কোন মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। তবে এক মহিলাকে হত্যা করা হয়। সে আমার পাশে বসে কথা বলছিল এবং অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজারে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তার নাম ধরে ডেকে বললো, অমুক মহিলাটি কোথায়? সে বললো, আমি। আমি (‘আয়ীশাহ) বললাম, তোমার কি হলো? (ডাকছো কেন?) সে বললো, আমি যা ঘটিয়েছি সেজন্য (সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়েছিলো)। ‘আয়ীশাহ (রাঃ) বলেন, তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হলো। আমি ঘটনাটি আজও ভুলতে পারিনি। আমি তার এ আচরণে অবাক হয়েছিলাম যে, তাকে হত্যা করা হবে একথা জেনেও সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো।-ihadis.com
এরপরে নকল মায়া কান্না দেখিয়ে বলে নবী মোহাম্মদ (সা) কেমন খারাপ মানুষ যে একজন নারীকে হত্যা করেছে। ইত্যাদি কথা বলে নাস্তিকরা ভে ভে করে কান্না করে কিন্তু পাঠক নাস্তিকরা এখানেও পুরো কথা দেখায় না। অর্থাৎ সেই নারী যে একজন খুনি ছিল এই তথ্য নাস্তিকদেরকে আপনারা বলতে দেখবেন না। আসুন বাস্তব ঘটনা জেনে নেই সেই নারী কাকে খুন করেছিল?
আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৪৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,
বনু কুরাইজার একজন মহিলাকে হত্যা করা হয় কারন ঐ মহিলা ইবনে ছুয়াইদের উপর গম পেশাইর চাক্কি ছুড়ে তাকে হত্যা করেছিল । সেই হত্যার বদলে তাকেও শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা হয় । আল্লাহর রাসুল আদেশ দিয়েছিলেন যে, যার নাভির নিচে চুল গজিয়েছে তাকে যেন হত্যা করা হয় । আতিয়া কারাযির নাভির নিচে তখনো চুল গজায়নি, এ কারনে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল । পরে তিনি ইসলামের ছায়াতলে এসে জীবন ধন্য করেছিলেন ।
এইবার পাঠক আপনি নিজেই বলুন একজন খুনি হোক সে নারী বা পুরুষ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া কিভাবে অপরাধ হতে পারে? নাস্তিকদের মগজ কতটা দুর্বল যে এই সহজ কথা তারা বুঝতে পারছে না। হায়! এরা যে কবে মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে।
ইসলামে নারী ও শিশু হত্যার বিধান কি?
আসলে নাস্তিকরা ইসলামের বিধান নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার করতে থাকে সেটা বলতে থাকলে হাজার হাজার পৃষ্ঠা হয়ে যাবে। নাস্তিকরা কিছু হাদিস দেখিয়ে দাবি করে ইসলামে নাকি নারী ও শিশুদেরকেও হত্যা করা যাবে। আসুন নাস্তিকদের দেখানো সেই হাদিস গুলো আগে দেখে নেই।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৮৩৯, সহিহ হাদিস, সা’ব বিন জাসসামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত।-ihadis.com
যুদ্ধে ইচ্ছাকৃত কোনো নারী ও শিশুকে হত্যা করা ইসলামে নিষেধ। তাই যুদ্ধে ইচ্ছাকৃত নারী ও শিশু হত্যা করা ইসলামে বৈধ এমন দাবি করার কোনো ভিত্তি নেই। নিজেদের আত্মরক্ষার ব্যাপার আসে বা অতর্কিত আক্রমণের ব্যাপার আসে তখন যদি সেই আক্রমণের কারণে নারী ও শিশু নিহত হয় সেটা আলাদা কথা। তাতে সমস্যা হবে না।
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩০১২,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
সাব ইবনু জাসসামা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (সা) আবওয়া অথবা ওয়াদ্দাত নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন । তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে । যদি রাত্রিকালীন আক্রমণে তাদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয় তবে কি হবে ? রাসুল (সা) বলেন তারাও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত আর আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি যে সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা) ছাড়া কারো জন্য হতে পারে না।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪৪১, জিহাদের নীতিমালা অধ্যায়ঃ শিরোনামঃ
রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশুর হত্যায় দোষ নাই ।-ihadis.com
যুদ্ধে অতর্কিত হামলা অথবা আক্রমণের ফলে যেই নারী ও শিশু নিহত হয় সেটা পেয়েই নাস্তিকরা বান্দরের মতো লাফাতে থাকে আর বলে এই যে দেখো ইসলাম কেমন অমানবিক। কিন্তু আসলেই কি ইসলাম যেমন আইন দেয়? উত্তর হচ্ছে না।
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩০১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
হযরত উমর (রা) হত্যে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা) এর কোন এক যুদ্ধে এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন রাসুল (সা) মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন।-ihadis.com
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৩০১৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
উমর (রা) বলেন, রাসুল (সা) এর কোন এক যুদ্ধে এক নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহ্র রাসুল (সা) নারী ও শিশুদের হত্যার অসন্তোষ প্রকাশ করেন।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৬৬৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
রাসুল (সা) বলেন যুদ্ধে নারী ও শ্রমিককে হত্যা করবে না।-ihadis.com
অমুসলিম কিছু পণ্ডিত যারা সত্যটা স্বীকার করেছেঃ
আর.ভি.সি. বোদলে এই ঘটনার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে লিখেছেন (৭)
“মুহাম্মাদ স. আরবের সে দেশে একা ছিলেন। এই দেশটি আয়তনের বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্টের তিনভাগের একভাগ এবং এর জনবসতি পঞ্চাশ লাখ। তাদের কাছে এমন বাহিনীও ছিল না, যা লোকজনকে আদেশ পালন ও আনুগত্যের জন্যে বাধ্য করতে পারে; শুধু একটিমাত্র সংক্ষিপ্ত সেনাদল ছাড়া, যার সৈন্যসংখ্যা ছিলো তিন হাজার। এই সেনাদলও সম্পূর্ণ অস্ত্রসজ্জিত ছিল না। এদিক বিবেচনায় মুহাম্মাদ যদি এক্ষেত্রে শৈথিল্য ও উদাসীনতার প্রশ্রয় দিতেন এবং বনি কুরাইজাকে তাদের চুক্তিভঙ্গের কারণে কোনোরূপ শাস্তি দেওয়া ছাড়াই ছেড়ে দিতেন, তবে জাযিরাতুল আরবে ইসলামের টিকে থাকা দুষ্কর হতো। সন্দেহ নেই যে, ইহুদিদের হত্যার বিষয়টি বেশ কঠোর ছিল। কিন্তু এটা ধর্মের ইতিহাসে কোনো আজনবি ও নতুন ঘটনা ছিল না এবং মুসলিমদের প্রেক্ষাপটে এ কাজের পূর্ণ বৈধতা বিদ্যমান ছিল। এর ফলে অন্যান্য আরব গোত্র ও ইহুদি গোষ্ঠী কোনোরূপ চুক্তিভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা করার পূর্বে বারবার ভাবতে বাধ্য হয়। কেননা, তারা এর করুণ পরিণতি দেখে নিয়েছিল, নিজ চোখে চাক্ষুস করেছিল, মুাহম্মাদ তার সিদ্ধান্ত কার্যকর করার শক্তি রাখেন।
স্যার স্ট্যানলি লেনপুল লিখছেন(৮)
“এটা স্মরণ রাখা উচিত যে, তাদের অপরাধ ছিল রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং তা-ও একটি অবরোধের মধ্যবর্তী সময়ে। যারা ইতিহাসে এটা পড়েছে যে, ওয়েলিংটনের সেনাদল যে পথ ধরে যেত, তাকে চিনিয়ে দিত পলাতক সৈন্য ও লুটেরাদের লাশগুলো; যেগুলো গাছে ঝুলানো থাকত—সেখানে তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোত্রের লোকদের একটি সাধারণ সিদ্ধান্তর বিচারে হত্যা করা নিয়ে আশ্চর্য হওয়া অসঙ্গত।
সুত্রঃ
ড. ইসরাঈল অলফিনসন বনি কুরাইজা যুদ্ধ পর্যালোচনা করতে গিয়ে সেই বাস্তবতার স্বীকারোক্তি এমন শব্দে দিয়েছেন (৯)
মোনাফেকদের সম্পর্ক যদ্দূর, তাতে বনি কোরাইজা যুদ্ধের পর তাদের আওয়াজ স্তিমিত হয়ে আসে এবং এরপর তাদের কথা ও কাজে এমন কিছু প্রকাশ পায় নি, যা নবীজি স. ও তার সাহাবিদের সিদ্ধান্তের বিপরীত হবে; যেমনটি এর আগে সম্ভাবনা ছিল।
নাস্তিক্যধর্মে যুদ্ধনীতিমালা কেমন হবে?
আসলে তৎকালীন ইহুদিরা ও উগ্রবাদী কাফেররা যেমন চাইতো মুসলিমদেরকে দুনিয়াতে থেকে বিদায় করে দিতে এখনকার নাস্তিকরাও সেটাই চায়। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না। তা না হলে কেন নাস্তিকরা বনু কুরাইজাদের পক্ষে কথা বলতে যাবে? তারা কি সন্ত্রাসী ছিল না? তারা কি অমানবিক ছিল না? তারা কি খুন করতে চেয়েছিল না? তারা কি নবী মোহাম্মদ (সা) থেকে নিয়ে উনার সকল অনুসারীদেরকে গণহত্যা করতে চেয়েছিল না? হত্যা করবার প্রস্তুতি নিয়েছিল না? এরপরেও তাহলে কেন নাস্তিকরা সত্যটা মেনে না নিয়ে ইসলামের বিরোধীতা করে যাচ্ছে? প্রশ্নটি কি ফেলে দেবার মতো?
নাস্তিকরাও নিজেদের মিথ্যাচার লুকাতে এভাবে বলে থাকে যে, ১৯৭১ সালে বাঙলাদেশে যখন পাক আর্মী গণহত্যা চালায়, তখন তারা এই গণহত্যাকে এই বলে জায়েজ করার চেষ্টা করেছিল যে, বাঙালি তাদের দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপরে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মুসলিম এপোলোজিস্টরাও সেই শুরু থেকেই, বনু কুরাইজা গণহত্যাকে জায়েজ করতে ঠিক একই কৌশল অবলম্বন করে গেছে। কেমন মিথ্যুক হলে এভাবে ঠাণ্ডা মাথায় মিথ্যা কথা বলতে পারে কল্পনা করতে পারেন? অথচ আমরা কিন্তু সরাসরি পরিস্কার প্রমাণ পেয়েছি যে বাস্তব অর্থেই বনু কুরাইজা গোত্র গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক, জঙ্গি, রাষ্ট্রবিরোধী ছিল। এরপরেও নাস্তিকরা বলে আমরা মুসলিমরা নাকি সঠিক উত্তর দিতে পারি না কি হাস্যকর কথাবার্তা নাস্তিকদের। এতো এতো প্রমাণ দেবার পরেও নাস্তিক অন্ধবিশ্বাসী নিজেকে বুঝ দেয় এটা বলে যে “বনু কুরাইজার সাথে আদৌ নবীর কোনো চুক্তি ছিল, সেরকম কোন শক্তিশালী প্রমাণই পাওয়া যায় না”। পাঠক এসব জোকার মাতাল নাস্তিকদের ব্যাপারে আপনার কি মতামত? আসলে কথায় আছে না “দুষ্টু ছলের অভাব হয় না”।
নাস্তিকদের অভিযোগের জবাব গুলো কোনো মুসলিম শুধুমাত্র কমেন্টে লিংক দিলে যেই নাস্তিকরা ব্লক করে দেয় সেই নাস্তিকরা এই অভিযোগ করছে যে বনু কুরাইজা গোত্রকে শাস্তি দেয়া ঠিক হয়নি। একবার কল্পনা করুন তো ফেসবুকে শুধুমাত্র ভিন্নমত পোষণকারী মুসলিমদেরকে ব্লক করে দেয় অথচ নাস্তিকরা যদি দেশের ক্ষমতায় থাকতো তাহলে মুসলিমদেরকে যে দুনিয়া থেকেই ব্লক করে যে দিতো না সেই গ্যারান্টি কি? ইতিহাস থেকে কিন্তু এর প্রমাণ রয়েছে যে নাস্তিকরা নিজেদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করবার জন্য বিনা কারণেই হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষের কল্লা ফেলে দিয়েছে, নারী ধর্ষণ করেছে। এই আলাপে আজকে গেলাম না থাক।
নাস্তিকরা বিভিন্ন সময়ে ইসলামের যুদ্ধ নীতিমালা নিয়ে অযৌক্তিক সমালোচনা করলেও নিজেরা এটা কখনো পরিস্কার করে বলে না নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদ নামক ধর্মে তাহলে যুদ্ধ নীতিমালা কেমন হবে? যদি কোনো রাষ্ট্র নাস্তিক রাষ্ট্রের উপর হামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে তখন নাস্তিকদের নেতারা কি করবে এবং কেন করবে? দুশমন পক্ষের নারী ও শিশুদের কি করা হবে? যদি নাস্তিকরা এখানে বলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে তাহলে তো তারা তাদের পুরুষদের এমনকি শিশুদেরকে প্রস্তুত করে আবার হামলার ছক আঁকতে পারে তখন? যেই নারীরা তাদের পুরুষদেরকে সাথে নিয়ে আপনার দেশের বিরুদ্ধে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে সেই নারীদেরকে কি করা হবে? আপনি কি করবেন? নাস্তিক্যধর্ম অনুপাতে কখন হত্যা করা বৈধ আর কখন হত্যা করা অবৈধ? এই নীতিমালা আসলে কে পেশ করবে?
ধরুন আপনি একটি দেশের সরকার । আর আপনি নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাস করেন । ধরুন মায়ানমারের বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা আপনার নাস্তিক দেশের উপর হামলা করার চিন্তা করছে শুধু তাই নয় বরং অস্ত্র,গোলাবারুদ,কামান সব রেডি করে রেখেছে-এই মুহূর্তে আপনি কি করবেন এবং কেন করবেন? কিভাবে করবেন ? আপনি কি আপনার জাতিকে রক্ষা করবেন, না নাকি বলবেন সন্ত্রাসীদের হামলার পাল্টা হামলা করা অমানবিক ? আপনি আসলে কি কি করবেন? বনু কুরাইজা জঙ্গি সন্ত্রাসী কাজ করে অন্যায় করেছিল সেই অপরাধের শাস্তি দিয়ে কিভাবে নবী মোহাম্মদ (সা) অমানবিক কাজ করলেন? বনু কুরাইজা সন্ত্রাসীরা তারা তাদের নিকৃষ্ট অপরাধ স্বীকার করে নেয় এবং তাদের শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড সেটাও তারা মেনে নেয় তাহলে এখানে সমকামী নাস্তিকদের সমস্যা কেন? অপরাধীরা যখন নিজের শাস্তি এবং অপরাধ মেনে নিয়েছে তখন আপনারা নাস্তিকরা কেন সেই সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের পক্ষে সাফাই গাইছেন?
যুদ্ধের নৈতিকতা কি হবে নাস্তিক্যধর্মে? নৈতিকতা কোন মহাপুরুষ নির্ধারণ করবে এবং কিভাবে? যুদ্ধে একজন নাস্তিক নেতার আদেশ বিশ্বাস করে মানা, অন্য নাস্তিকদের জন্য "মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে" হবে না কিভাবে? নাস্তিক নেতার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না কেন ? যুদ্ধে যারা বন্দী হবে তাদেরকে কি করা হবে ? শুধু কি বন্দী করে রাখা হবে ? নারী শিশুদের কি করা হবে এবং কেন ? এদের সবাইকে যদি সারা জীবন বন্দী করে রাখা হয় তাহলে এরা তো রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে যাবে? যদি বন্দী করে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে আবার এক সাথে হয়ে আবার যুদ্ধ করবে , তাহলে নাস্তিক্যধর্মে এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান কি? কিসের ভিত্তিতে সমাধান দেয়া হবে? সে সমাধান দিবে তাকে কিসের ভিত্তিতে সত্য বলে বিশ্বাস করা হবে?
সন্ত্রাসী বনু কুরাইজা লোকদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) অন্যায় করেন তাহলে এই দুনিয়ায় প্রত্যেক দেশে যুদ্ধের নিজস্ব আইন আছে সেগুলা কি নাস্তিকদের কাছে অমানবিক? ফ্রান্সে যুদ্ধের আইন নাই? জার্মানীতে যুদ্ধের আইন নাই? কানাডাতে যুদ্ধের আইন নাই? অস্ট্রেলিয়াতে যুদ্ধের আইন নাই? সুইজারল্যান্ডে যুদ্ধের আইন নাই? আমেরিকাতে যুদ্ধের আইন নাই? এসব আইন কি নাস্তিক্যধর্মে অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের কাছে বর্বর অমানবিক? নাস্তিকরা কবে কোথায় আন্দোলন করেছে এসব যুদ্ধের আইনের বিরুদ্ধে? তৎকালীন পাকিস্তানী উগ্র বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের দেশের সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধারা যেই যুদ্ধ করেছে সেটি কি নাস্তিক্যধর্মের নৈতিকতায় বৈধ? নাস্তিকরা দেশদ্রোহী হবে না কিভাবে? নিজের দেশকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একজন মানুষকে কি কি করতে হবে নাস্তিক্যধর্মের নৈতিকতায়? আর্মি অফিসারদের যেই কঠোর নিয়ম কানুন বিশ্বাস করতে হয় এবং সেসব মানতে হয় এসব নাস্তিক্যধর্মের আলোকে কতটা মানবিক? একটি আদর্শ দেশ গঠন করতে হলে কি কি নৈতিকতায় বিশ্বাস করতে হবে এবং কেন ? এসব জানতে হলে নাস্তিক্যধর্মের কোন বই আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে? যা সবাই বিশ্বাস করতে পারবে?
উপসংহারঃ সততার সাথে সার্বিক তথ্য প্রমাণ সামনে নিলে এটা স্বীকার করতে আমরা বাধ্য যে বনু কুরাইজাদের সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ নির্মূল করতে এবং আত্মরক্ষার জন্য অপরাধীদেরকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছিল। কোনো নাস্তিক মুক্তচিন্তায় যেভাবেই ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করুক না কেন এটা সেও স্বীকার করতে বাধ্য যদি তার মধ্যে মনুষ্য বিবেক থেকে থাকে। যেই বনু কুরাইজা গোত্র পুরো মুসলিমদেরকে খুন করার জন্য, ধ্বংস করবার জন্য তারা দেড় হাজার তলোয়ার, দুই হাজার বর্শা, তিনশত বর্ম এবং পাঁচশত ঢাল মজুদ করে রেখেছিল সেই অপরাধীদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নবীজি (সা) এবং উনার সম্মানিত সাহাবীরা শ্রেষ্ঠ মানবতার কাজটিই করেছেন। নবী মোহাম্মদ (সা) ও উনার সাহাবীদের কাজটি যৌক্তিক কারণেই অমানবিক বলার কোনো সুযোগ নেই।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
রেফারেন্স সমূহঃ
[১] উইকিপিডিয়া, রাষ্ট্রদ্রোহিতা / World Encyclopedia, Oxford University Press, ২০০৪.
[২] The Treason Act 1814, chapter 54, Geo lll c,146.
[৩] wikipedia: Capital punishment in Japan.
[৪] মদীনা রাষ্ট্র না মানার কারণে নয় বনু কুরাইযাকে পাকড়াও করা হয়েছিল বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সংসদসদস্যদের কাছে দায়িত্বশীল বক্তব্য কাম্য। https://www.alkawsar.com/bn/article/860/
[৫] বনু কুরাইযাহর যুদ্ধ https://hadithbd.com/books/link/?id=6295
[৬] বনু কুরাইজাবাসীকে শাস্তি দিয়ে কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যায় করেছেন? [নাউজুবিল্লাহ] https://ahlehaqmedia.com/6916/
[৭] ‘দ্য মেসেঞ্জার : দ্য লাইফ অব মুহাম্মাদ, লন্ডন ১৯৪৬, পৃষ্ঠা ২২০।
[৮] Selection From The Koran Indro. P. LXV
[৯] ‘আল-ইয়াহূদ ফি বিলাদিল আরব’, পৃষ্ঠা ১৫৫।