নাস্তিকান্ধদের হাট্টিমাটিম টিম যুক্তি

বিষয়ঃ নাস্তিকান্ধদের হাট্টিমাটিম টিম যুক্তি

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

=========================

 

নাস্তিকরা বলে থাকে,

স্রষ্টা বলে আসলে কিছু নাই। স্রষ্টার কথা হচ্ছে হাট্টিমাটিম টিমের মতো। এসব যেমন কাল্পনিক তেমনি স্রষ্টাও কাল্পনিক। হাট্টিমাটিম টিম বলতে আসলে কিছুই নেই এসব মানুষের অন্ধবিশ্বাস। আমরা নাস্তিকরা এটা মানি যে হাট্টিমাটিম টিম বলতে যেমন কিছুই নেই ঠিক স্রস্টা বলতেও কিছু নেই। হাট্টিমাটিম টিম যে যাই এটা কিভাবে প্রমাণ করা যাবে? এটা যেমন প্রমাণ করা যায় না স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই এটাও প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু মুমিনরা এসব না বুঝেই আমাদের কাছে প্রমাণ চায় আর বলে স্রষ্টা নাই সেই প্রমাণ কোথাও?

নাস্তিকদের এই হাট্টিমাটিম টিম যুক্তিতে অনেক দুর্বলতা আছে যা কলকাতা হারবাল সেবন করালেও সেই যুক্তিটা সক্ষম হয়ে উঠবে না। ফিরে পাবে না হারানো শক্তি। যেই লোক এই হাট্টিমাটিম টিম কবিতা লিখেছে সে নিজেও এই কাল্পনিক প্রাণীকে বিলিভ করে না। অন্যকেও কখনো দাবি করে বলেনি এই প্রাণীর অস্তিত্ব বা নাই। কিছুই বলেনি। আমরা মুসলিমরা সেই হাট্টিমাটিম টিম, সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান এসব আছে বা নাই কিছুই কখনো দাবি করিনি। কারণ এগুলোর যে অস্তিত্ব নেই সেটা কবি ও পরিচালকরা নিজেরাই বলে দিয়েছেন।

 

আমাদের আলোচনার বিষয়টি এটা নয়। আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে মহাবিশ্বকে স্রষ্টা বানিয়েছে কিনা। আমরা যেমন দাবি করি মহাবিশ্বকে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছে এবং আমরা আমাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ পর্যন্ত পেশ করি। কিন্তু নাস্তিকরা “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” বিশ্বাস করলেও তারা এটা মানতে চায় না যে তাদেরকেও তাদের বিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ দিতেই হবে। তারা নিজেদেরকে প্রমাণ দেয়া থেকে বিরত রাখতে চায়। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? প্রমাণ না দিতে পেরেই Straw man fallacy-কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তির আশ্রয় গ্রহণ করে। এই কুযুক্তিতে অন্য কারো কথাকে নিজের মতো করে ঘুরিয়ে-সাজিয়ে অথবা বিকৃত করে বলা হয় যেন আক্রমণ করা সহজ হয় একেই যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে Straw man fallacy বা কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তি বলা হয়।

 

“স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” দাবিটি প্রমাণ করতে না পেরে অপ্রাসঙ্গিক আলাপ টেনে আনে নাস্তিকরা। যেহেতু দুটো দেখতে একই রকম মনে হচ্ছে তাই দুটো একই জিনিস। একে Correlation is causation fallacy বলা হয়। সাদৃশ্য আছে মানেই একটার সাথে অন্যটার সম্পর্ক আছে এরকম ভুল চিন্তা করা। নাস্তিকদের প্রায় সকল অভিযোগ দাবি গুলোই এমন ফ্যালাসিতে ভরপুর। আমি নাস্তিকদের কাছে তাদের বিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ চাইছি আর তারা প্রমাণ না দিয়ে কুযুক্তির তোলে নিজেদেরকে প্রমাণ দেয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, এমন নাস্তিকও রয়েছে যারা নিজেদের নাস্তিক্যবিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু যেই সব নাস্তিকরা বলে “নাই জিনিসের” প্রমাণ হয় না তারা সংশয়হীন ভাবেই প্রতারক। নাস্তিকরা যেহেতু নিশ্চিত বিশ্বাস করছে “মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করেনি” তাহলে এই বিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ কি তাদের দেয়া উচিত না?

 

নাস্তিকরা বলে হাট্টিমাটিম টিম নাই সেটার প্রমাণ পারলে মুমিনরা দিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা মুমিনরা কবে দাবি করলাম যে হাট্টিমাটিম টিম আছে বা নাই? আমরা তো কখনো দাবি করিনি মহাবিশ্বকে হাট্টিমাটিম টিম বানিয়েছে অথবা বানায় নাই। কোনো দাবিই তো আমরা করিনি। যদি আপনি নাস্তিক হয়ে এই বিশ্বাস করেন যে মহাবিশ্বকে হাট্টিমাটিম টিম বানিয়েছে তাহলে আপনি প্রমাণ দিন আর যদি এটাও দাবি করেন হাট্টিমাটিম টিম বানায় নাই তাহলে সেটার প্রমাণও আপনি দিন। কারণ আমরা তো এই হাট্টিমাটিম টিম নিয়ে কিছুই দাবি করিনি। তাহলে আমরা কেন প্রমাণ দিব? অন্যের কথা জানি না, নিজের ব্যাপারে আমি এটা বলতে পারি যে আমি কখনো হাট্টিমাটিম টিম নিয়ে এই ধরণের কিছুই দাবি করিনি যা নাস্তিকরা আমার দিকে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দিতে চাইছে। এটাকে Red herring তথা প্রসঙ্গ ঘোরানোর লজিকাল ফ্যালাসি বলা হয়। যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে নাস্তিকদের ভ্রান্ত কথাবার্তা গুলো আসলে আলোচনার যোগ্যতাই রাখে না। তাই নাস্তিকদের এই ফালতু হাট্টিমাটিম টিমের গোঁজামিলটি সম্পূর্ণ বাতিল ও মিথ্যা। এই একই ধরণের যতো গোঁজামিল নাস্তিকরা দেয় সমস্ত কথাবার্তা গুলো সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে।

 

নাস্তিকরা বলে, স্রষ্টার জায়গায় হাট্টিমাটিম টিম নাম দেয়া যায়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকরা যে দাবি করে থাকে তাদের মাথায় বুদ্ধি আছে তবে সেই বুদ্ধির জায়গায় হাট্টিমাটিম টিম নাম রেখে দিচ্ছেন না কেন? নাস্তিকরা কেন নিজেদের চেতনার নামের জায়গায় হাট্টিমাটিম টিম রেখে দিচ্ছে না? নাস্তিকদের মধ্যে কি শক্তি আছে? যদি নাস্তিকরা বলে “হ্যাঁ‘ তাহলে “শক্তি” নামটির জায়গায় হাট্টিমাটিম টিম নাম রেখে দিন না কেন? হাট্টিমাটিম টিম যেমন নাই তেমনি স্রষ্টা নাই- এই যদি হয় নাস্তিকদের কথা তাহলে একইভাবে চেতনা শক্তিও আসলে হাট্টিমাটিম টিমের মতোই কাল্পনিক যাকে প্রমাণ করাই যাবে না। নাস্তিকদের নিজেদের যুক্তিতে নাস্তিকরা কি মেনে নিচ্ছে যে নাস্তিকদের মধ্যে চেতনা শক্তি নাই? নাস্তিকদের যুক্তি ধরেই কথা বললে,তারা কি আমাকে নিজেদের চেতনা শক্তির আকৃতি এই মুহূর্তে সরাসরি দেখাতে পারবেন? পারবেন না। তাহলে নাস্তিকদের যুক্তিটি যদি এভাবে বলা হয় হাট্টিমাটিম টিম যেমন সরাসরি আছে অথবা নেই কোনটিই প্রমাণ করা যায় না ঠিক নাস্তিকদের একই যুক্তিতে চেতনা শক্তিও আছে বা নেই সেটাও প্রমাণ করা যাবে না। তখন নাস্তিকদের কি কথা থাকবে?

নাস্তিকরা যদি এখানে বলে, আমার যে চেতনা আছে সেটার প্রমাণ আমি সুস্থ ভাবে আপনার সাথে কথা বলছি। আমি সব কিছুই বুঝতে পারতেছি। এটাই তো প্রমাণ যে আমার চেতনা শক্তি আছে। তাহলে আমার কথা হলো, চেতনা শক্তিকে সরাসরি না দেখে যদি আপনার সুস্থতা প্রমাণ করে সেটার অস্তিত্ব আছে তাহলে একই যুক্তির আর প্রমাণের ভিত্তিতে স্রস্টাকে না দেখেও মহাবিশ্বের সুশৃংখল নিয়ম যে সুষ্ঠুভাবে চলছে এটাও স্রস্টার অস্তিত্বের প্রমাণ হবে না কিভাবে? নাস্তিক যদি বলে, আমি এই প্রমাণ মানি না তাহলে একইভাবে এই কথাও বলা যায়,আপনার সুস্থতা প্রমাণ করে না আপনার মধ্যে মধ্যে চেতনা শক্তি আছে। আপনি সরাসরি হাতে ধরে দেখান তো। তাই সততার সাথে বুঝলে এটা স্পষ্ট যে “মহাবিশ্বকে স্রষ্টা সৃষ্টি করেনি” বিশ্বাসের দাবিটির প্রমাণ নাস্তিকদেরকে দিতে হবে। 

ডারুউইনের বিবর্তনবাদ অনুপাতে হাট্টিমাটিম টিম প্রাণীর দৈহিক যে ছবি আমরা দেখতে পাই সেটা একজিস্ট করে কিনা সেটা আপনারা নাস্তিকরাই ভেবে দেখুন। হাট্টিমাটিম টিম প্রাণীর মাথায় দুটো শিং, দেহ মুরগীর মতো আর পা হাসের মতো। এই প্রাণী গরু, মুরগী আর হাসের বিবর্তনের হারানো মধ্যম ফসিল হতে পারে কিনা সেটা নিয়ে শাহবাগে তদন্ত কমিটি গঠন করুন আপনারা।

ডারউইনবাদীদের কাছে আরও কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি। এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে ধাপে ধাপে মশা এরপরে কোটি কোটি বছর ধরে হাতি প্রশ্ন হচ্ছে মশা নামক প্রাণী পরিপূর্ণ মশায় বিবর্তিত হতে যে ধাপ গুলোয় বিবর্তিত হয়েছিল সেই ধাপ গুলোর প্রমাণ কথায়? আবার হাতির দেহ সম্পূর্ণ বিবর্তিত হবার আগের প্রাণীর বিবর্তিত দেহ গুলো কথায় সংরক্ষণ করে রাখা আছে এবং কিভাবে? মশার নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রসেস আর হাতির নিশ্বাস নেওয়ার প্রসেস এর ভিন্নতার বিবর্তন ঠিক কখন থেকে শুরু হওয়া আরম্ভ করলো এবং কিভাবে? এই প্রমাণ গুলো কথায় পাওয়া যাবে? মশার চোখের গঠন এবং হাতির চোখের গঠনের ভিন্নতার বিবর্তন কিভাবে এবং কখন থেকে শুরু হয়েছে? মশা থেকে হাতি নাকি হাতি থেকে মশার বিবর্তন হয়েছে? মশার পা এবং হাতির পায়ের ভিন্নতা ঠিক কখন এবং কিভাবে বিবর্তিত হয়েছিল? বিবর্তিত দেহ কথায়? মশা প্রথম কোন ব্যাকটেরিয়া থেকে বিবর্তিত হয়েছিল? কিভাবে হয়েছিল? মশার আগের ব্যাকটেরিয়া দেখতে কেমন ছিল অথবা অস্তিত্বের প্রমান কিরকম হবে? হাতির লিঙ্গ বিবর্তিত হওয়ার আগে মশার প্রজনন সিস্টেম কেমন ছিল এবং কিভাবে ছিল? যখন বিবর্তিত হচ্ছিল তখন কি প্রজননে সমস্যা হয় নাই? হঠাৎ করে কি বিবর্তন হয়ে গেল? যদি বলেন ধাপে ধাপে তাহলে সেটা কিভাবে? মশার দেহ থেকে ধাপে ধাপে প্রজাতির এলোমেলো সিলেকশন হাতির দেহ অবধি কিভাবে গেল? যোগসুত্র গুলো কেমন ছিল?

সাপ আর জিরাফের বিবর্তনের আগের কোষ গুলো দেখতে কেমন? পার্থক্য গুলো কেমন ছিল? এই প্রজাতি সাপ আর এই প্রজাতি জিরাফ হবে মাঝখানের প্রজাতির গুলো কই? জিরাফের গলা কি সাপ থেকে বিবর্তিত হয়েছে? জিরাফের গলা লম্বা আবার সাপ নিজেই লম্বা তাহলে? বিবর্তন প্রসেসটা কিভাবে হলো? পীপিলিকা আর উটের বিবর্তনের মাঝখানের কোষগুলো দেখতে কেমন ছিল? পিপিলিকা আর উটের আলাদা ভাবে বিবর্তিত নাকি এক সাথে? আলাদা হবে কিভাবে আলাদা আর একত্রে হলে কিভাবে? পিপিলিকা প্রজাতির আর উটের পুরো দেহের বিবর্তিত শুরু রুপটা কেমন ছিল? মধ্যবর্তী ধাপ গুলোই বা কেমন ছিল?

প্রথম এককোষী প্রাণীটি কি স্বাধীন নাকি পরাধীন? যদি বলেন পরাধীন তাহলে কে এক কোষী প্রাণীকে পরাধীন করে রেখেছে? সেই প্রাণীটিও কি পরাধীন? এককোষী প্রাণীটি বিবর্তনই বা কেন হওয়া প্রয়োজন হলো? এককোষী প্রাণী নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারেনি কেন? এককোষী প্রাণীর মধ্যে কি এমন শক্তি কাজ করেছে যার মাধ্যমে বহুকোষী এরপরে তহুকোশী এরপরে মাহুকোষী প্রাণী হতেই হলো? সেই এককোষী প্রাণী কি বুদ্ধিমান ছিল? যদি বুদ্ধিমান না হয়ে থাকে তাহলে বুদ্ধিহীন জড় পদার্থ থেকে কিভাবে বুদ্ধিমান জিনিস হওয়া সম্ভব? একটি মোবাইলকে মরুভূমির মধ্যে কোটি কোটি বছর রেখে দিয়ে আসলে সেখান থেকে কি বিমান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? একটি মেমোরি কার্ড থেকে কোটি কোটি বছর ধরে গাছ তৈরি হওয়া কিভাবে সম্ভব?

বিবর্তনবাদীদের বিশ্বাস অনুযায়ী আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগে বিশেষ একটি ‘ম্যাজিক ব্যাকটেরিয়া’ থেকে পুরো জীবজগতের বিবর্তন শুরু হয়েছে। বিবর্তনবাদীদের প্রতি প্রশ্ন হচ্ছে:–কোটি কোটি বছর আগে যে ‘ম্যাজিক ব্যাকটেরিয়া’ থেকে পুরো জীবজগতের বিবর্তন শুরু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই ‘বিশেষ ব্যাকটেরিয়া’-র অস্তিত্বের পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে কি? যদি থেকে থাকে তাহলে সেই নির্দিষ্ট একটি ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব ঠিক কীভাবে প্রমাণ করা হয়েছে? আর যদি না থাকে তাহলে বিবর্তনবাদীরা কী করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, ব্যাকটেরিয়া থেকেই পুরো জীবজগতের বিবর্তন শুরু হয়েছে এবং সেই ব্যাকটেরিয়ার আগে জীব বলতে কিছুই ছিল না? নাস্তিকদের দাবি অনুযায়ী কোনো কিছুর অস্তিত্বের পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকা মানে সেটি যদি এমনি এমনি ‘কাল্পনিক’ হয়ে যায় তাহলে সেই ‘বিশেষ ব্যাকটেরিয়া’ কাল্পনিক হবে না কেন? আর কোনো তত্ত্বের শুরুই যদি হয় কাল্পনিক কিছু একটা দিয়ে তাহলে সেটিকে কি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, নাকি কাল্পনিক তত্ত্ব বলা হবে?–সেই ‘বিশেষ ব্যাকটেরিয়া’ থেকে ‘এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন’-এর মাধ্যমে কবে, কোথায়, কেন, কতদিনে ও কীভাবে পরের জীব বিবর্তিত হয়েছিল? এক সাথে একটি নাকি একাধিক জীব বিবর্তিত হয়েছিল? প্রথম ব্যাকটেরিয়া ও দ্বিতীয় জীবের মধ্যে কী কী পার্থক্য ছিল? দ্বিতীয় জীব দেখতে কেমন ছিল? মধ্যবর্তী ধাপগুলোই বা কেমন ছিল? দ্বিতীয় জীব বিবর্তিত হওয়ার পর প্রথম ব্যাকটেরিয়া বেঁচে ছিল নাকি মারা গিয়েছিল? একটিমাত্র ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’-ই বা হয়েছিল কেমন করে?

মানুষ-সহ বড় বড় প্রাণীর দেহে যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, সেগুলোর কিছুই ব্যাকটেরিয়ার দেহে নেই। ব্যাকটেরিয়া মূলতঃ এককোষী আণুবীক্ষণিক জীব। তাহলে অতিরিক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কীভাবে প্রাণীদের দেহে প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে সংযোজিত (?) বা বিবর্তিত (?) হলো? অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কি যুগপৎভাবে (Simultaneously) নাকি আলাদা আলাদা করে (Separately) বিবর্তিত হয়েছে? উল্লেখ্য যে, প্রাণীদের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যুগপৎভাবে এবং প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে যেমন বিবর্তিত হতে পারে না (কেননা কিছু কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় না থাকলে প্রাণীরা বাঁচতেই পারবে না), তেমনি আবার আলাদা আলাদা করেও বিবর্তিত হওয়া বাস্তবে সম্ভব নয় (কেননা হৃৎপিণ্ড-বিহীন বা মাথা-বিহীন বা এমনকি হাত-পা-বিহীন মনুষ্য প্রজাতি বাস্তবে কখনোই ছিল না)। এর মধ্যে আবার বিশাল উদ্ভিদজগতের বিবর্তন-ই বা হলো কোথা থেকে?

মানব প্রজাতি-সহ অনেক প্রজাতির প্রাকৃতিকভাবে বংশবৃদ্ধি হয় পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ থেকে নির্গত যথাক্রমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের মাধ্যমে। এই ধরণের প্রাণীদের দেহে স্রেফ শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর কোনো একটি না থাকলে বংশবৃদ্ধিই হবে না। এমনকি মেডিক্যাল সায়েন্স অনুযায়ী কিছু শর্ত পূরণ করলেই তবে একজন পুরুষকে প্রজননে সক্ষম হিসেবে ধরা হয়। তবে যায়গোট (Zygote) তৈরির জন্য যেহেতু একটি শুক্রাণু ও একটি ডিম্বাণুই যথেষ্ট সেহেতু আমি সেদিকে যাচ্ছি না। কিন্তু শর্ত হচ্ছে একটি শুক্রাণু ও একটি ডিম্বাণুকে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গরূপে ও পুরোপুরি কার্যক্ষম থাকতে হবে, অন্যথায় যায়গোট বা ভ্রুণ তৈরি হবে না এবং যার ফলে কোনো প্রজননও হবে না। 

এবার প্রশ্ন হচ্ছে:–প্রথম ব্যাকটেরিয়ার দেহে যেহেতু শুক্রাণু বা ডিম্বাণু বলে কিছুই ছিল না (বর্তমানেও নেই!) সেহেতু ঠিক কোন্‌প্রাণী থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু বিবর্তিত হওয়া শুরু করেছে, এবং কেন? একদম শুরুতেই শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কেমন ছিল? পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় ছিল নাকি আংশিক অবস্থায় ছিল? পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় থাকলে হঠাৎ করে একটি প্রাণীর দেহে শুক্রাণু বা ডিম্বাণু এলো কোথা থেকে? আর যদি আংশিক অবস্থায় থাকে তাহলে সেই অবস্থায় যায়গোট বা ভ্রুণ তৈরি হয়েছিল কেমন করে? তাছাড়া শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কী করে প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হওয়া সম্ভব? এই অবস্থায় প্রাণীদের বংশবৃদ্ধি হবে কী করে? অধিকন্তু, প্রাণীদের দেহে পাশাপাশি বা সমান্তরালে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু বিবর্তিত হলো কীভাবে? সর্বোপরি, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছাড়া কিংবা আংশিক শুক্রাণু বা ডিম্বাণু থেকে যদি প্রজনন-ই না হয় তাহলে মানুষ-সহ বিশাল প্রাণীজগত এলো কোথা থেকে in the first place?!

হৃৎপিণ্ড এমন একটি অঙ্গ যেটি পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় ও পুরোপুরি কার্যক্ষম না থাকলে প্রাণীরা বেঁচে থাকতেই পারবে না, বংশবৃদ্ধি হওয়া তো পরের কথা। অন্যদিকে প্রথম ব্যাকটেরিয়ার দেহে কোনো হৃৎপিণ্ড ছিল না, বর্তমানেও নেই। এই অবস্থায় প্রশ্ন হচ্ছে:–প্রথম ব্যাকটেরিয়ার দেহে যেহেতু কোনো হৃৎপিণ্ড ছিল না সেহেতু ঠিক কোন্‌প্রাণীর দেহে সর্বপ্রথম হৃৎপিণ্ড সংযোজিত (?) বা বিবর্তিত (?) হওয়া শুরু করেছিল? একদম শুরুতেই হৃৎপিণ্ডটা কেমন ছিল? সেই হৃৎপিণ্ড প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে কী করে বিবর্তিত হলো, যেখানে বর্তমান প্রাণীদের দেহে যে হৃৎপিণ্ড আছে সেটি পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় না থাকলে প্রাণীরা বাঁচতেই পারবে না? হৃৎপিণ্ডের মতো জীবন রক্ষাকারী কোনো মেশিন প্রজন্মের পর-প্রজন্ম-ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হতে থাকলে প্রাণীরা যদি বেঁচে থাকতেই না পারে তাহলে এই অবস্থায় আবার বংশবৃদ্ধি হবে কেমন করে? আংশিক (এক শতাংশ বা এক দশমাংশ) অথচ পুরোপুরি কার্যক্ষম হৃৎপিণ্ড বলে বাস্তবে কিছু আছে কি? প্রাণীদের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন ফুসফুস, পরিপাকতন্ত্র, যকৃত, অণ্ডাশয়, মূত্রথলি, অতি সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরা, ইত্যাদির ক্ষেত্রেও অনুরূপ প্রশ্ন ও যুক্তি প্রযোজ্য।

সরীসৃপ থেকে যখন পাখির বিবর্তন শুরু হয়েছিল সেই সময় এই পৃথিবীতে একটি নাকি অনেক সরীসৃপ ছিল? একটি থেকে থাকলে সেটি কোন্‌সরীসৃপ ছিল? সেটি এসেছিল কোথা থেকে? একটির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচন-ই বা হয়েছিল কী করে? আর অনেক থেকে থাকলে ঠিক কোন্‌সরীসৃপ থেকে বিবর্তন শুরু হয়েছিল এবং কেন? বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে সরীসৃপ থেকে পাখি বিবর্তিত হওয়ার আর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না কেন? সরীসৃপ থেকে কতগুলো ধাপ অতিক্রম করার পর পাখি হয়ে আকাশে উড়তে শিখেছিল? সেটি কোন্‌পাখি ছিল? সেই একটি (?) পাখি থেকে কেমন করে বংশবৃদ্ধি হয়েছিল? সরীসৃপ ও পাখির মধ্যবর্তী ধাপগুলোই বা কেমন ছিল? মধ্যবর্তী ধাপগুলোতে কী করে বংশবৃদ্ধি হয়েছিল? অতঃপর স্তন্যপায়ী বাদুড়-সহ অসংখ্য প্রকারের উড়ন্ত প্রজাতি কোথা থেকে ও কী করে বিবর্তিত হলো?

বিবর্তন তত্ত্ব সত্য হতে হলে অ-স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণী (কিংবা বিপরীতটা) বিবর্তিত হতে হবে কি-না? উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয় তাহলে ঠিক কোন্‌অ-স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে বিবর্তন শুরু হয়ে প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে প্রথম কোন্‌স্তন্যপায়ী প্রাণী বিবর্তিত হয়েছিল? একটি অ-স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে বিবর্তন শুরু হয়ে কতগুলো ধাপ অতিক্রম করার পর একটি পূর্ণাঙ্গ স্তন্যপায়ী প্রাণী হয়েছিল? মধ্যবর্তী ধাপগুলো কেমন ছিল? মধ্যবর্তী ধাপগুলোতে প্রজনন হয়েছিল কীভাবে?

এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন’-এর মাধ্যমে কোন্‌গাছ থেকে প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে ডালিম গাছ কিংবা আপনাদের তাল গাছ বিবর্তিত হয়েছে? দুটি গাছের মধ্যবর্তী ধাপগুলো কেমন ছিল?

বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের পূর্বপুরুষ এক পর্যায়ে মাছ জাতীয় জলজ প্রাণী ছিল! অর্থাৎ মাছ জাতীয় জলজ প্রাণী থেকে ধাপে ধাপে আপনারা বিবর্তিত হয়েছেন! তা-ই যদি হয় তাহলে যেকোনো যুক্তিবাদী মানুষ স্বীকার করতে বাধ্য যে, মাছ জাতীয় জলজ প্রাণী থেকে স্থলচর প্রাণীর বিবর্তনের চেয়ে মৎসকন্যার মতো আরেক জলজ প্রাণী বিবর্তিত হওয়াটা অধিকতর সহজ ও যৌক্তিক হওয়ার কথা। বিবর্তনবাদীদের প্রতি প্রশ্ন হচ্ছে:–আজ পর্যন্ত কোনো বিবর্তনবাদীকে বিশাল মহাসাগরে মৎসকন্যার অনুসন্ধান করতে দেখা যায়নি কেন? আমি অবশ্য নিশ্চিত না তারা আসলেই অনুসন্ধান করেছেন বা করছেন কি-না! যদি না করে থাকেন তাহলে তারা কোন্‌যুক্তিবলে নিশ্চিত হয়েছেন যে, মৎসকন্যা বলে বাস্তবে কিছু নাই বা থাকতে পারে না? 

পাঠকদের জন্য নোট: বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মৎসকন্যার অস্তিত্ব থাকাটা যৌক্তিক বা স্বাভাবিক হলেও মৎসকন্যার অনুসন্ধান করতে গেলে বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনী সাধারণ লোকজনের কাছেও উন্মোচিত হয়ে যাবে- এই ভয়ে বিবর্তনবাদীরা কখনো মৎসকন্যার অনুসন্ধান করবেন বলে মনে হয় না! এমনকি গোপনে গোপনে অনুসন্ধান চালানো হলেও তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে না!

পা-এর উপর ভিত্তি করে প্রকৃতিতে যেমন পা-বিহীন প্রাণী (সাপ, জোঁক, কেঁচো) আছে তেমনি আবার দ্বিপদী প্রাণী (মানুষ, পাখি), চতুষ্পদী প্রাণী (বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়া, গরু, ছাগল), ষষ্ঠপদী প্রাণী (কীট-পতঙ্গ), অষ্টপদী প্রাণী (মাকড়সা), এবং বহুপদী প্রাণীও (বিছা পোকা) আছে। বিবর্তনবাদীদের প্রতি প্রশ্ন হচ্ছে:–বর্তমানেই যেখানে অনেক প্রাণীর কোনো পা নেই, সেখানে ঠিক কী কারণে অন্যান্য প্রাণীদের দেহে পা গজানোর দরকার পড়লো? পা-বিহীন কিছু প্রাণীকে আলাদা করে বিশেষ কোনো পরিবেশে রেখে দেওয়া হলে তাদের দেহে ‘এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন’-এর মাধ্যমে পা গজানো শুরু করবে কি? কিংবা পা-ওয়ালা কিছু প্রাণীকে বিশেষ কোনো পরিবেশে রেখে দিলে তাদের পা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়া শুরু করবে? বিবর্তনবাদীরা কোথাও এই ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন কি-না? নিদেনপক্ষে পরীক্ষা শুরু করা না হয়ে থাকলে কেন শুরু করা হয়নি?–ষষ্ঠপদী প্রাণী থেকে চতুষ্পদী প্রাণী কিংবা চতুষ্পদী প্রাণী থেকে ষষ্ঠপদী প্রাণীর প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে মধ্যবর্তী ধাপগুলো-সহ কিছু প্রমাণ দেওয়া যাবে কি?

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post