বিষয়ঃ নবী মুহাম্মদ (সা) কি লিখতে ও পড়তে পারতেন?
লিখেছেনঃ এমডি আলী ।
—------------------------------------------------------------------------
ভূমিকাঃ কিছু নাস্তিক দাবি করে থাকে উনি জ্ঞান বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন এই কারণেই তো কুরআনের মতো একটি কিতাব উনি বলতে পেরেছেন আর তা আল্লাহর নামে চালিয়ে দিয়েছেন। আরেক শ্রেণীর নাস্তিক আবার বলে থাকে, এই কথা শতভাগ নিশ্চিত করে বলবার উপায় নেই যে, মুহাম্মদ নিরক্ষর ছিলেন, কিংবা তিনি লিখতে পড়তে জানতেন। উনি নিরক্ষর ছিলেন বলেও যেমন বেশ কিছু বিবরণ পাওয়া যায়, আবার একই সাথে, উনি লিখতে পড়তে পারতেন বলেও অনেক প্রমাণ মেলে। তাই আমিও শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে কিছু দাবী করছি না।
তাহলে সত্যি কোনটা? ইসলাম বিরোধীদের বিভিন্ন দাবি ও প্রশ্ন গুলোকে তথ্য প্রমাণ সামনে নিয়ে যাচাই বাছাই করে দেখবো আসলেই সত্য কি বলে? আপনি কি প্রস্তুত সত্য জানার জন্য? তাহলে পুরো লেখাটিই পড়ুন মন দিয়ে।
ফেরেশতা কেন নবীজি (সা)কে পড়তে বলবেন?
ইসলাম বিরোধীদের প্রশ্নটি হচ্ছে,
আল্লাহ পাক যদি ফেরেশতা জিব্রাইলকে পাঠিয়েই থাকেন, আল্লাহ এবং ফেরেশতা জিব্রাইলের তো জানার কথা যে, মুহাম্মদ পড়তে জানেন না। আল্লাহ পাক এবং তার ফেরেশতা সেই শুরুতেই এমন ভুল কীভাবে করেন যে, একজন নিরক্ষর লোককে তারা পড়তে বলবেন?
সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৩, সহিহ হাদিস,এভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওয়াহী আসলো। তাঁর নিকট ফেরেশতা এসে বললো, ‘পাঠ করুন’। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ [“আমি বললাম, ‘আমি পড়তে জানি না।] তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অতঃপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ‘পাঠ করুন’। আমি বললামঃ আমি তো পড়তে জানি না’। সে দ্বিতীয় বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ‘পাঠ করুন’। আমি উত্তর দিলাম, ‘আমি তো পড়তে জানি না’। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ড থেকে, পাঠ করুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু”- (সূরা আলাক্ব ৯৬/১-৩)।-ihadis.com
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬৯৮২, সহিহ হাদিস, সেখানে ফেরেশতা এসে তাঁকে বলল, আপনি পড়ুন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি বললামঃ আমি তো পাঠক নই। তখন তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে চেপে ধরলেন। এমনকি এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি পাঠক নই। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন। এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পাঠক নই। এরপর তিনি তৃতীয়বার আমাকে শক্ত করে এমন চেপে ধরলেন যে, এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন......যা সে জানত না (সূরাহ আল-ইনশিরাহ ৯৪/১-৫) এ আয়াত পর্যন্ত।-ihadis.com
নাস্তিকরা আসলে এখানে হাদিসের উদ্দেশ্য এমনকি মর্মার্থ কিছুই বুঝতে পারে নাই। না বুঝেই বিবর্তিত মগজ নিয়ে যা তা বলে ফেলে। ইসলামের দৃষ্টিতে সেই প্রশ্নের জবাব নির্ভরযোগ্য হাদিস ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকেই জেনে নেয়া যাক। নবীজি (সা)কে জিব্রাইল (আ) এর পড়তে বলা ও চাপ দেয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বড় বড় মুহাদ্দিসদের জবাব জানতে পড়ুন-নাসরুল বারী শরহে সহীহ আল বুখারী,(বাংলা ১ খণ্ড), ১৭২ থেকে ১৭৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। আমি কিছু অংশ বুঝার সহজের জন্য তুলে ধরছি।
নাসরুল বারী শরহে সহীহ আল বুখারী,(বাংলা ১ খণ্ড), ১৭২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
এ নির্দেশ তাকলীফী তথা দায়িত্ব চাপানাের জন্য নয়। বরং এটি হল তালকীনী বা শিক্ষামূলক! এর উদ্দেশ্য হল, আমি পড়ছি, আপনিও আমার সাথে সাথে পড়ুন। অতএব, হযরত জিবরাঈল আ. এখানে পাঠ নির্দেশ দেননি বরং পাঠ শেখার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিক শব্দের প্রতি লক্ষ্য করেছেন যে, এখানে পাঠের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। তাই উত্তরে বললেন “আমি পড়তে জানি না”। যেহেতু বুঝতে পারলেন; এটি তালকীনী নির্দেশ, তাই এর এই অনুবাদ করা ঠিক নয় যে, আমি তাে পড়ুয়া নই। কারণ, মৌখিক শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষণের শব্দগুলাে পড়া উম্মী হওয়ার পরিপন্থী নয়। যেমন মকতব, মাদরাসাগুলােতে রাত-দিন প্রত্যক্ষ দর্শন হচ্ছে। (আরবি) এর যথার্থ তরজমা হল, ওহীর কাঠিন্য ও ভারিত্বের কারণে আমার জবান চলে না। অর্থাৎ, আমি পড়তে পারি না।
নাসরুল বারী শরহে সহীহ আল বুখারী,(বাংলা ১ খণ্ড), ১৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বুখারী শরীফে বিভিন্ন স্থানে এ রেওয়ায়াতটি আছে যে, হযরত যায়েদ রা. বলেন- (আরবি) শব্দটি যখন অবতীর্ণ হয়েছিল, তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাটু মুবারক আমার হাটুর উপর ছিল। তখন আমার কাছে অনুভূত হচ্ছিল যেন আমার হাটু টুকরাে টুকরাে হয়ে যাবে। অতএব, ধারণা করুন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কতটা ভারী ও ওজনী হয়ে থাকবে! তাছাড়া এ (আরবি) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে বদর যুদ্ধ সম্পর্কে। আর মক্কা মুয়াজ্জমায় ১৩ বছর পর্যন্ত ওহী অবতীর্ণ হতে থাকে। এরপর মদীনা মুনাওয়ারায় বদর পর্যন্ত ওহী নাযিল হয়। যখন এ সময়ের ওজনের এ অবস্থা, তখন প্রথমবারে কতটা ভারী মনে হবে? সম্পূর্ণ স্পষ্ট বিষয় যে, কোন উম্মত সে বিষয়টি ধারণাও করতে পারে না। বাস্তবতা হল, কালামের আজমত আল্লাহ তা'আলা হিকমতের ভিত্তিতে গােপন রেখেছেন। অন্যথায় কুরআনে আজীম তিলাওয়াত করা কঠিন হয়ে পড়ত। আল্লাহর কালামের আধ্যাত্মিক ওজনের আন্দাজ কোন উম্মতের কি হতে পারে? কিন্তু রাসূলের কালামের ওজনের একটি ঝলকের আন্দাজ একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা দ্বারা হতে পারে।
নাসরুল বারী শরহে সহীহ আল বুখারী,(বাংলা ১ খণ্ড), ১৭৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বাস্তবতা হল, হযরত জিবরাঈল আমীন আ. আল্লাহর নির্দেশে বক্ষ বিদারণের মাধ্যমে আধ্যাত্রিক বিদ্যুতের সুমহান পাওয়ার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তর মুবারকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। অতঃপর ভারী কালাম মহান বানী পাঠ করার নির্দেশ দেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এটা ছিল ভীষণ ভারী। হযরত জিবরাঈল আ.এর চাপ ছিল ভার সহজ করার জন্য।
নাসরুল বারী শরহে সহীহ আল বুখারী,(বাংলা ১ খণ্ড), ১৭৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
আল্লামা কাসতাল্লানী র. বলেন, প্রথমবার চাপ প্রয়ােগ ছিল সর্বদিক থেকে মনােযােগ হটানাের জন্য। দ্বিতীয়বার ওহীয়ে ইলাহী থেকে নফসকে মনােযােগী করার জন্য। আর তৃতীয়বার হল, সুসম্পর্ক গড়ার জন্য।
নাসরুল বারী শরহে সহীহ আল বুখারী,(বাংলা ১ খণ্ড), ১৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বাহজাতুন নুফুস গ্রন্থকার লিখেছেন- রাসূলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজের সীনার সাথে মিলিয়ে চাপ দেয়া দ্বারা হযরত জিবরাঈল আ.-এর উদ্দেশ্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে নূরানী একটি জবরদস্ত শক্তি সৃষ্টি হওয়া। যার ফলে তিনি ওহীয়ে ইলাহী বহনে সক্ষম হন।
উপরের সার্বিক তথ্য প্রমাণের দৃষ্টিতে এটা স্পষ্ট যে জিব্রাইল (আ) আল্লাহর বানী নবীজি (সা)কে বলেন পড়ুন কিন্তু ওহীর কাঠিন্য ও ভারিত্বের কারণে নবীজি (সা) এর জবান চলছিল না। এই কারণেই উনি স্বাভাবিক ভাবেই বলে দেন আমি পড়তে জানি না। এরপরে জিব্রাইল (সা) উনাকে প্রাথমিক চাপ দেন যাতে উনি কিছুটা প্রভাব সহ্য করে নিতে পারেন এরপরে এভাবে একাধিক বার করা হলে সম্পূর্ণভাবেই নবীজি (সা) কুরআনের প্রভাব সহ্য করতে সক্ষম হোন। এবং জিব্রাইল (আ) এর সাথে উনিও পাঠ করতে সক্ষম হোন তাই নাস্তিকরা যে দাবি করতে চাইছে অর্থাৎ আল্লাহ হয়তো জানতেন না অথবা জিব্রাইল (আ)কে আল্লাহ জানান নাই যে নবী পড়তে জানেন না এসব দাবির কোনো ভিত্তি নাই। ইসলাম বিরোধীদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে কোন কোন মুহাদ্দিস এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে আল্লাহ এটা জানতেন না যে নবীজি (সা) পড়তে জানেন না? কোন কোন মুহাদ্দিস এটা বলেছেন যে আল্লাহর ভুল হয়েছিল? জিব্রাইল ফেরেশতার ভুল হয়েছিল?
নাস্তিকরা আমাদেরকে কখনো সম্পূর্ণ তথ্য প্রমাণ দেখায় না, শুধু তটটুকুই দেখাবে যতটুকু দেখালে মানুষকে ইসলাম নিয়ে সংশয়ে ফেলা যায়। মনে হয় যেন সংশয়বাদী নাস্তিকদের এটা চাকরি যে ইসলাম সত্যিই সংশয় মক্ত হোক না কেন তারা সাধারণ পাবলিকদের ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখবেই। নাস্তিক্যধর্মে মানুষের সাথে প্রতারণা করা বৈধ। নাস্তিকরা ইসলামের সোর্স থেকেই অভিযোগ করে আর আমরা মুসলিমরা ইসলামের সোর্স থেকে জবাব দিলে বলে গোঁজামিল। নাস্তিকদের এসব মূর্খতার শেষ কোথায়?
পাঠক একটা জিনিস খেয়াল করেছেন? জিব্রাইল (আ) নবীজি (সা)কে পড়তে বলা, চাপ দেয়া ইত্যাদি সবই ছিল যাতে আল্লাহর বানীর প্রভাবের ভার নবীজি (সা) নিতে পারেন, সহ্য করতে পারেন অথচ নাস্তিকরা কিভাবে মানুষকে উল্টোটা বুঝাচ্ছে? কিছু কিছু মূর্খ নাস্তিক তো এভাবেও বলে যে,বুকে জড়িয়ে ধরে চাপাচাপি করাতে কোনো নিরক্ষর লোক পড়তে শিখে যায়, এরকম কখনো শুনি নি। এরকম হলে, স্কুল কলেজে তো এই পদ্ধতিতে পড়তে শেখানো যায়। আচ্ছা নবীজি (সা) কি কখনো বলেছে শিশুদেরকে চাপ দিয়ে লেখাপড়া শেখাও? তাহলে?
আল্লাহর বানীর প্রভাব ছিল খুবই ভারী যা নবীজি (সা) নিতে পারছিলেন না এমনকি জিব্রাইল (আ) এর সাথে সাথে পড়তেও পারছিলেন না এই কারণেই জিব্রাইল (আ) নবীজি (সা)কে একাধিকবার চাপ দেন যাতে উনি ভার বা চাপ সহ্য করতে পারেন এবং সেই বানী জিব্রাইল (আ) এর সাথে সাথে পড়তে পারেন। সহজে বুঝার জন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি। দেখবেন যারা মার্শালআর্ট প্র্যাকটিস করে তারা হাত, পায় এমনকি নিজের দেহকে বিভিন্ন ভাবে একাধিকবার জোরে জোরে আঘাত করে শক্ত করে যাতে বেশি আঘাতে তেমন একটা ক্ষতি না হয়। তেমনভাবে জিব্রাইল (আ) নবীজি (সা)কে জোরে জোরে শক্ত চাপ দেন এবং উনার সাথে পাঠ করতে বলেন যাতে কুরআনের প্রভাবের চাপ নবীজি (সা) গ্রহণ করে নিতে পারেন এবং জিব্রাইল (আ) এর সাথে পড়ে পড়ে কুরআনের ভার সহ্য করতে সক্ষম হোন।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই জিব্রাইল (আ) জানতেন না (আল্লাহ জানবেন না এটা তো হতে পারে না) এই কারণেই নবীজি (সা)কে পড়তে বলেছিলেন তারপরেও সমস্যা নেই কারণ এই ক্ষেত্রে তাহলে বলাই যায় যে আল্লাহ জিব্রাইল (আ)কে এটা বলেছিলেন যে সে পড়তে জানেন না তুমি তাকে ধাপে ধাপে অর্থাৎ আয়াতের প্রভাব সহ্য করবার মতো পঠন শেখানোর জন্য পড়তে বলবে সে যখন পড়তে পারবে না তুমি চাপ দেবে এভাবে সে কুরআনের আয়াতের প্রভাব সহ্য করে পাঠ করে শিখে যাবে। তারপরেও এই কথা প্রমাণ করবার সুযোগ নেই যে আল্লাহ জানতেন না। বোঝা গেছে?
নাস্তিকরা আসলে বুঝাতে চায় নবী মোহাম্মদ (সা) ওহি নাজিলের কাল্পনিক গল্প তৈরি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিকদের এই অন্ধবিশ্বাস যদি আসলেই সত্য হয় তাহলে উনি কেন এতো কষ্ট করে উচু হেরা পাহাড়ে উঠতে যাবেন? উনি তো চাইলেই ঘরে বসে এমন কাহিনী বানাতে পারতেন? যারা হজ্জ করতে যায় তারা জানে হেরা পাহাড়ে উঠা কেমন মারাত্মক কষ্টকর একটি ব্যাপার। যুবকদের হাওয়া টাইট হয়ে যায় সেই বিশাল পাহাড়ে উঠতে। সেখানে ৪০ বছরের একজন লোক সেই পাহাড়ে নিয়মিত উঠবে এসব গল্প লেখার জন্য? যেই গল্প লেখার কারণে উনার নিজের লোকেরাই উনার বিরোধীতা করবে? যেই গল্প বলার কারণে উনার নিজের লোকেরাই উনাকে দেশ থেকে বের করে দেবে? উনার সব সম্পদ কেড়ে নেবে?
বিবর্তিত মগজ এই যৌক্তিক প্রশ্ন বুঝার যোগ্যতাই রাখে না।
হযরত মোহাম্মদ (সা) পড়েছেন? উনি লিখে রেখেছেন? কানসর্বস্ব কেন বলতো নবীকে?
নাস্তিকদের প্রশ্ন হচ্ছে,
আল্লাহ পাক কোরআনে উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মদের পড়ে নেয়ার কথা। এই কথাটি আল্লাহ বলেছেন কাফেরদের এইটি জবাব দেয়ার জন্য, যেন কাফেররা মনে না করে যে, মুহাম্মদ এগুলো আগেই পড়ে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আরবের পৌত্তলিক কাফেরদের তো জানা থাকার কথা যে, মুহাম্মদ নিরক্ষর। তাহলে, তারা কেন মনে করবে, মুহাম্মদ আগেই কিছু একটা পড়ে নিয়েছে ?
সুরা আনআম ৬ঃ১০৫ আয়াতে আছে, এমনি ভাবে আমি নিদর্শনাবলী ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বর্ণনা করি যাতে তারা না বলে যে, আপনি (মুহাম্মদ) তো পড়ে নিয়েছেন এবং যাতে আমি একে সুধীবৃন্দের জন্যে খুব পরিব্যক্ত করে দেই।
হায়রে বাংলা নাস্তিক! বাংলা পড়েও এতটুকু বুঝতে পারে নাই যে কাফেররা যাতে এই ভুল ধারনা না করতে পারে এবং এই মিথ্যা অভিযোগ না করতে পারে যে নবীজি (সা) এসব আগে কখনো পড়েছেন। নাস্তিকটি আবার দাবিও করছে যে “আল্লাহ পাক কোরআনে উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মদের পড়ে নেয়ার কথা” আসলে এসব মিথ্যা বলে বলে নাস্তিকরা নিজেদের অন্ধভক্তদের মনে ইসলাম নিয়ে সংশয় ফেলে যাতে তাদের ভক্তরা কখনো সত্যিটা জেনে গেলেও ইসলাম গ্রহণ করতে না পারে। কুরআনের কোথায় এই দাবি লেখা আছে যে নবীজি (সা) লিখতে ও পড়তে জানতেন? অথবা নবীজি (সা) কোথায় দাবি করেছেন উনি লিখতে ও পড়তে জানেন?
এরপরের নাস্তিকদের অভিযোগটি আরও হাস্যকর। পাঠক আগে এই হাস্যকর অভিযোগটি পড়ুন। হয়তো আমার জবাব দেবার আগে আপনি নিজেই জবাব জেনে নিবেন।
নাস্তিকরা বলে,
মুহাম্মদ সম্পর্কে কাফেরদের অভিযোগ ছিল, মুহাম্মদ পুরাকালের রূপকথাগুলো লিখে রেখেছে। এই কথাটি আবার কোরআনেও চলে এসেছে, কাফেরদের অভিযোগের বিবরণ হিসেবে। ধরে নিচ্ছি, কাফেরদের অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু মক্কার কাফেরদের তো জানার কথা যে, মুহাম্মদ পড়তে বা লিখতে জানেন না। তাহলে তারা কেন মুহাম্মদের ওপর এই অভিযোগ আরোপ করবে যে, মুহাম্মদ পুরাকালের রূপকথাগুলো লিখে রেখেছে? তাদের তো বলা উচিৎ ছিল, মুহাম্মদ পুরাকালের রূপকথাগুলো মুখস্ত করে রেখেছে?
সুরা ফুরকান ২৫ঃ৫ আয়াতে আছে, তারা বলে, এগুলো তো পুরাকালের রূপকথা, যা তিনি (মুহাম্মদ) লিখে রেখেছেন। এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর কাছে শেখানো হয়।
বাংলার নাস্তিকরা যেমন জানে নবী মোহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন না এরপরেও যেমন নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে নবীর নামে মিথ্যা অভিযোগ করতে থাকে এই বলে যে নবী শিশুকামি ছিল, ধর্ষক ছিল, বাইবেল থেকে কপি করতো ব্লা ব্লা ব্লা একইভাবে তৎকালীন কাফেররাও জানতো যে উনি লিখতে ও পড়তে জানতেন না এরপরেও এই মিথ্যা অভিযোগ করতো যে “মোহাম্মদ লিখে রেখেছে”-বোঝা গেছে? পাঠক চিন্তা করে দেখুন মিথ্যুকবাজ নাস্তিকদের ইসলামের জ্ঞান কতটুকু?
মূর্খ নাস্তিকটিকে আমি বলবো “তাদের কি বলা উচিত ছিল” এটা তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করুন। আমাদেরকে কেন করছেন?
এরপরে কাফেররা নবীকে কানসর্বস্ব লোক বলে ঠাট্টাতামাশা করতো বলে মূর্খ নাস্তিক প্রশ্ন করে যে এমন কী কারণ থাকতে পারে, যার কারণে চোখ নাক মুখ বাদ দিয়ে তাকে কান সর্বস্ব লোক বলে ডাকা হতো?
সুরা তওবা ৯ঃ৬১ আয়াতে আছে, আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ নবীকে ক্লেশ দেয়, এবং বলে, এ লোকটি তো কানসর্বস্ব। আপনি বলে দিন, কান হলেও তোমাদেরই মঙ্গলের জন্য, আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে এবং বিশ্বাস রাখে মুসলমানদের কথার উপর। বস্তুতঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের জন্য তিনি রহমতবিশেষ। আর যারা আল্লাহর রসূলের প্রতি কুৎসা রটনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
এই আয়াতের মধ্যেই স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে তারা কুৎসা রটনা করে। কাফেররা মিথ্যা রটায় যেভাবে বর্তমান নাস্তিকরা রটাচ্ছে। যেই নাস্তিক মুক্তচিন্তার নামে ইসলাম নিয়ে জালিয়াতি করে মিথ্যাচার করে সেই নাস্তিকই এই প্রশ্ন করছে কাফেররা কেন নবীকে কানসর্বস্ব লোক বলতো। কি হাস্যকর ডাবল স্ট্যান্ডার্ড না? নাস্তিকদের এসব নিন্মমানের ফালতু মিথ্যা অভিযোগ গুলো আমি যখন পড়ি তখন প্রচুর হাঁসি পায় আমার।
পাঠক এইবার কাফেরদের একটা পরামর্শের কথা বিস্তারিত বলি যেখানে তারা নবী মোহাম্মদ (সা)কে কোন মিথ্যা অপবাদ দিলে মানুষ সত্য বলে খাবে সেই পরামর্শ করে। বর্তমানে নাস্তিকরা যেমন লাইভ করার আগে নিজেরা পরামর্শ করে যে কিভাবে কথা বললে মানুষ নাস্তিকদের মিথ্যাকথা গুলোকে সত্য মনে করে বিশ্বাস করবে তেমন প্রাচীন কাফেররাও পরামর্শ করতো।
আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তফা (সা)” ১ খণ্ড, ১৫৮-১৫৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
কুরায়শগণ যখন দেখলো যে, দৈনন্দিন ইসলামের প্রসার বেড়েই চলছে, তখন একদিন তারা ওলীদ ইবন মুগীরার নিকট একত্রিত হলো, যে ছিল তাদের মধ্যে বয়োঃবৃদ্ধ ও প্রবীণ ব্যক্তি, তারা বলল হজ্জের মৌসুম তা সমাগত, আর তাঁর (নবী (সা)এর) উল্লেখ ও চর্চা তো সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে, এ উপলক্ষে দেশের আনাচে কানাচে থেকে সব লোক আসবে আর আপনাকে ঐ ব্যক্তি (মোহাম্মদ (সা)) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কাজেই তাঁর সম্পর্কে আমাদের একটা সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত থাকা দরকার এবং সবাই এ ব্যাপারে একই সিদ্ধান্ত দেয়া দরকার যাতে পরস্পর বিরোধী না হয়। অন্যথায় আমাদের মধ্যেই একজনের কথায় অপরেরটা মিথ্যা ও পরস্পর বিরোধী প্রতিপন্ন হবে, যা মোটেই সমীচীন হবে না। কাজেই হে আবু আবদুশ শামস (ওলীদের উপাধি)। আপনি আমাদের জন্য একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিন যার উপর আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব।
ওলীদ বলল,তোমরা প্রস্তাব কর, আমি শুনি, এরপরে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তারা বলল ইনি গণক। ওলীদ বলল এটা মিথ্যা কথা, আল্লাহর কসম তিনি গণক নন। আমি যথেষ্ট গণক দেখেছি। তাঁর মধ্যে না গণকের কোন চিহ্ন আছে, আর না তাঁর বক্তব্যে গণকদের মত গোঙ্গানো কথার সাথে কথা জড়ানো। লোকেরা বলল, তিনি মোহাম্মদ (সা) পাগল। ওলীদ বলল, তিনি পাগলও নন। আমি পাগল ও উম্মাদদের প্রকৃতিও জানি, আমি তাঁর মধ্যে এ ধরণের কোন আলামত পাই না। লোকেরা বলল, তিনি কবি। ওলীদ বলল, আমি নিজেও কবি, এর সমস্ত শাখা-প্রশাখা যেমন রাজায ও হাযাজ, মাকবুয ও মাবসুত ইত্যাদি সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত। তাঁর বক্তব্যের সাথে কবিতার কোনই সম্পর্ক নেই। লোকেরা বলল তিনি জাদুকর। ওলীদ বলল তিনি জাদুকরও নন। তিনি জাদুকরদের মট ঝাড়ফুঁকও করেন না আর তাদের মত গিরাও বাঁধেন না। লোকেরা বলল ওহে আবু আবদুশ শামস, তা হলে আপনি বলুন শেষ পর্যন্ত তা হলে কি?
ওলীদ বলল আল্লাহর কসম মোহাম্মদ (সা) এর কথা এক আশ্চর্য ধরণের মিষ্টি ও মাধুর্যমণ্ডিত। আর এর এক আশ্চর্য ধরণের চমক রয়েছে। এ বক্তব্যের উৎস মূল অত্যন্ত সজীব এবং এর শাখা প্রশাখা অত্যন্ত ফলবান (অর্থাৎ এই ইসলাম একটি পবিত্র বৃক্ষের ন্যায় যা অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে শক্ত জমি থেকে উদ্গত এবং এর শাখা প্রশাখা আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত যা ফলে ফুলে পরিপূর্ণ)। কাজেই যা কিছু তোমরা বললে আমি ভাল্ভাবেই জানি যে তা সবই বাতিল ও ভিত্তিহীন। আমার বিবেচনায় এটা বলা সব চেয়ে উপযুক্ত হবে যে এ ব্যক্তি জাদুকর এবং তাঁর কথাও জাদু যা স্বামী-স্ত্রীতে, পিতা-পুত্রে, ভাইয়ে-ভাইয়ে এবং গোত্রে-গোত্রে বিভেদ সৃষ্টি করে- যেটা জাদুরই বৈশিষ্ট। এ সব কথার পর সভা ভঙ্গ হলো।
যখন হজ্জের মৌসুম এলো লোকজন আসতে শুরু করলো, কুরায়শরা পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়ল এবং যে ব্যক্তিই সেদিক দিয়ে যেত, মোহাম্মদ (সা) এর ব্যাপারে তাকেই বলতে থাকল, ঐ ব্যক্তি জাদুকর, তোমরা তাঁর থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু কুরায়শদের এ প্রচেষ্টা ইসলামের কোনই ক্ষতি করতে সক্ষম হলো না (বরং এ ব্যাপারে আগ্রহ আরো বেড়ে গেল)। দেশের আনাচে কানাচে আগত লোকজন মোহাম্মদ (সা) সম্পর্কে ভাল্ভাবে অবহিত হয়েছে।
এই ঘটনা থেকে এটা পরিস্কার বর্তমান সময়ে নাস্তিকগোষ্ঠী থেকে খ্রিস্টান মিশনারিরা যেমন নবী মোহাম্মদ (সা) সম্পর্কে বানায়ে বানায়ে মিথ্যাচার করে এবং সেই মিথ্যা কথা যাতে মানুষ সত্য মেনে খায় সেই চেষ্টা করে তেমনি তৎকালীন কাফেররাও বানায়ে বানায়ে পরামর্শ করে করে নবীর নামে মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে দিতো। এই যুগে যেমন চিন্তার মুক্তির আন্দোলন নামে ইসলামের নিয়ে জালিয়াতি করা হয় তেমনি সেই যুগে নবীকে জাদুকর,পাগল,কবি,গনক,কানসর্বস্ব ইত্যাদি বলে অপবাদ দেয়া হতো যার যৌক্তিক কোনো ভিত্তিই নেই।
কোন অংশে “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” এই কথাটি লিখিত আছে বুঝলেন কিভাবে? উনি লিখলেনই বা কিভাবে? লিখতে ইচ্ছা কবেনই বা কেন?
নাস্তিকরা এই হাদিস দেখিয়ে প্রশ্ন করে যদি নবী মোহাম্মদ (সা) লিখতে ও পড়তে না জানবেন তাহলে নিজের নামের অংশটুকু মুছলেন কিভাবে?
আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১১৬৭, সহিহ হাদিস,বারা’ ইব্নু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদাইবিয়াহ্তে (মক্কাহ্বাসীদের সঙ্গে) সন্ধি করার সময় ‘আলী (রাঃ) উভয় পক্ষের মাঝে এক চুক্তিপত্র লিখলেন। তিনি লিখলেন, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। মুশরিকরা বলল, ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’ লিখবে না। আপনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলে আপনার সঙ্গে লড়াই করতাম না?’ তখন তিনি ‘আলীকে বললেন, ‘ওটা মুছে দাও’। ‘আলী(রাঃ) বললেন, ‘আমি তা মুছব না।’ তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে তা মুছে দিলেন এবং এই শর্তে তাদের সঙ্গে সন্ধি করলেন যে, তিনি এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা তিন দিনের জন্য মাক্কায় প্রবেশ করবেন এবং জুলুব্বান جُلُبَّانُ السِّلاَحِ ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। তারা জিজ্ঞেস করল, جُلُبَّانُ السِّلاَحِ মানে কী? তিনি বললেন, ‘জুলুব্বান’ মানে ভিতরে তরবারিসহ খাপ।’ সহিহ বুখারি,হাদিসঃ২৬৯৮।-ihadis.com / ই,ফাঃ সহিহ বুখারি, ৫/ ৩০, ৩১ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২৫১৮।
নাস্তিকদের পুরাতন অভ্যাস তথা পুরো ঘটনাকে কৌশলে ধামাচাপা দেয়া। নাস্তিকরা এই একটি হাদিস দেখিয়ে প্রশ্ন করে কিন্তু সেই হাদিস নাস্তিকরা ভুলেও জানতে চাইবে না যেখানে নবীজি (সা) স্পষ্ট হযরত আলী (রা)কে বলেছিলেন যে আমাকে দেখিয়ে দেও। আসুন পড়ে নেই সেই হাদিসটি।
সহিহ বুখারি ৫/ ৩৪৮ পৃষ্ঠা , হাদিসঃ ২৯৫৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
বারা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুল (সা) যখন উমরা করার ইচ্ছা করেন , তখন তিনি মক্কায় আসার অনুমতি চেয়ে মক্কায় কাফিরদের নিকট দ্যূত পাঠান । তারা শর্তারোপ করে যে , তিনি সেখানে তিন রাতের অধিক থাকবেন না । এবং অস্ত্রকে কোষাবদ্ধ না করে প্রবেশ করবেন না । আর মক্কাবাসীদের কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিবে না । বারা (রা) বলেন , এ সকল শর্ত আলী (রা) লেখা আরম্ভ করলেন এবং সন্ধিপত্রে লিখলেন "এটা সে সন্ধিপত্র যার উপর আল্লাহ্র রাসুল মুহাম্মদ ফয়সালা করেছেন" তখন কাফিররা বলল আমরা যদি এ কথা মেনে নিতাম যে আপনি আল্লাহ্র রাসুল তবে তো আমরা আপনাকে বাধাই দিতাম না এবং আপনার হাতে বায়াত করে নিতাম । কাজেই এরুপ লিখুন, এটি সেই সন্ধিপত্র যার উপর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ফয়সালা করেছেন । তখন রাসুল (সা) বললেন আল্লাহ্র কসম আমি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ এবং আল্লাহ্র কসম আমি আল্লাহ্র রাসুল । বারা (রা) বলেন, রাসুল (সা) লিখতেন না , তাই তিনি আলী (রা) কে বললেন "রাসুলুল্লাহ" শব্দটি মুছে ফেল । আলী (রা) বললেন আল্লাহ্র কসম ! আমি কখনো তা মুছবো না । তখন রাসুল (সা) বললেন "তবে আমাকে দেখিয়ে দেও" তখন আলী (রা) তাঁকে "সে স্থান দেখিয়ে দিলেন এবং রাসুল (সা) তা "নিজ হাতে মুছে ফেললেন"। এরপর যখন তিনি মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং সে দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে গেল তখন আলী (রা) এর নিকট এসে বলল তোমার সঙ্গিদের বল যেন তিনি চলে যান । আলী (রা) রাসুল (সা) কে তা বলল । তিনি বললেন ঠিক আছে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন।-ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা পরিস্কার যে নবী মোহাম্মদ (সা) লিখতে ও পড়তে জানতেন না এই কারণেই আলী (রা)কে লেখাটি দেখিয়ে দিতে বলেছিলেন। এরপরে নাস্তিকরা আরেকটি হাদিস দেখিয়ে প্রশ্ন করে, যদি নবী মোহাম্মদ (সা) লিখতে না জানবেন তাহলে উনি সন্ধিপত্র লিখলেন কিভাবে?
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৬৯৯, সহিহ হাদিস,বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, যিলকাদ মাসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরাহ্র উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করলেন যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, ‘আল্লাহ্র রসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।’ তারা (মুশরিকরা) বলল, ‘আমরা তাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি জানতাম যে, আপনি আল্লাহ্র রসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, ‘আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ।’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহ্র রসূল এবং ‘আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ।’ অতঃপর তিনি আলী (রাঃ)–কে বললেন, আল্লাহ্র রসূল শব্দটি মুছে দাও। তিনি বললেন, ‘না। আল্লাহ্র কসম, আমি আপনাকে কখনো মুছব না।’ আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, ‘এ সন্ধিপত্র মুহাস্মদ ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ সম্পন্ন করেন- খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে নিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না।’ তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলী (রাঃ)-কে বলল, ‘তোমার সঙ্গীকে আমাদের এখান হতে বের হতে বল। কেননা নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রওয়ানা হলেন ৷ তখন হামযাহ্র কন্যা হে চাচা, হে চাচা, বলে তাদের পেছনে পেছনে চলল। আলী (রাঃ) তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাহকে বললেন, ‘এই নাও, তোমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি।’ ‘আলী, যায়দ ও জা‘ফর (রাঃ) তাকে নেয়ার ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। ‘আলী (রাঃ) বললেন, ‘আমি তার অধিক হক্দার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জা‘ফর (রাঃ) বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী।’ যায়দ (রাঃ) বললেন, ‘সে আমার ভাইয়ের মেয়ে।’ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খালার পক্ষে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, ‘খালা মায়ের স্থান অধিকারিণী।’ আর ‘আলীকে বললেন, ‘আমি তোমার এবং তুমি আমার।’ জা‘ফরকে বললেন, ‘তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ। আর যায়দকে বললেন, ‘তুমি তো আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গোলাম।’-ihadis.com
কোনো নেতা কোনো চুক্তিপত্রে নিজে কিছু না লিখলেও কাউকে দিয়ে লিখালেও সেটা উনিই লিখেছেন বলা যায়। এই সাধারণ বিষয়টা মাথামোটা মুক্তমনারা ধরতে পারে নাই। নবী মোহাম্মদ (সা) নিজে লিখেন নাই বরং উনি অন্যকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন। হাদিসটি পড়ুন।
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪১৮০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি মারওয়ান ইবনু হাকাম এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) উভয়কে হুদাইবিয়াহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘উমরাহ্ আদায় করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছেন। তাঁদের থেকে ‘উরওয়াহ (রহ.) আমার (মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনু শিহাব) নিকট যা বর্ণনা করছেন তা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহায়ল ইবনু ‘আমরকে হুদাইবিয়াহর দিন সন্ধিনামায় যা লিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সুহায়ল ইবনু ‘আমরের শর্তগুলোর একটি শর্ত ছিল এইঃ আমাদের থেকে যদি কেউ আপনার কাছে চলে যায় তাকে আমাদের কাছে ফেরত দিতে হবে যদিও সে আপনার ধর্মের উপর থাকে এবং তার ও আমাদের মধ্যে আপনি কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। এ শর্ত পূর্ণ করা ছাড়া সুহায়ল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সন্ধি করতেই অস্বীকৃতি জানায়। এ শর্তটিকে মু’মিনগণ অপছন্দ করলেন এবং এতে তারা ক্ষুব্ধ হলেন ও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করলেন। কিন্তু যখন সুহায়ল এ শর্ত ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে চুক্তি করতে অস্বীকার করল তখন এ শর্তের উপরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধিপত্র লেখালেন এবং আবূ জানদাল ইবনু সুহায়ল (রাঃ)-কে ঐ মুহূর্তেই তার পিতা সুহায়ল ইবনু ‘আমরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সন্ধির মেয়াদকালে পুরুষদের মধ্যে যারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চলে আসতেন, মুসলিম হলেও তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতেন। এ সময় কিছু সংখ্যক মুসলিম মহিলা হিজরাত করে চলে আসেন। উম্মু কুলসুম বিনত ‘উকবাহ ইবনু আবূ মু‘আইত (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হিজরাতকারিণী একজন যুবতী মহিলা। তিনি হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছলে তার পরিবারের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন মহিলাদের সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার তা অবতীর্ণ করলেন।-ihadis.com
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪১৮১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.) থেকে বর্ণিতঃতিনি মারওয়ান ইবনু হাকাম এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) উভয়কে হুদাইবিয়াহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘উমরাহ্ আদায় করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছেন। তাঁদের থেকে ‘উরওয়াহ (রহ.) আমার (মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনু শিহাব) নিকট যা বর্ণনা করছেন তা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহায়ল ইবনু ‘আমরকে হুদাইবিয়াহর দিন সন্ধিনামায় যা লিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সুহায়ল ইবনু ‘আমরের শর্তগুলোর একটি শর্ত ছিল এইঃ আমাদের থেকে যদি কেউ আপনার কাছে চলে যায় তাকে আমাদের কাছে ফেরত দিতে হবে যদিও সে আপনার ধর্মের উপর থাকে এবং তার ও আমাদের মধ্যে আপনি কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। এ শর্ত পূর্ণ করা ছাড়া সুহায়ল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সন্ধি করতেই অস্বীকৃতি জানায়। এ শর্তটিকে মু’মিনগণ অপছন্দ করলেন এবং এতে তারা ক্ষুব্ধ হলেন ও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করলেন। কিন্তু যখন সুহায়ল এ শর্ত ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে চুক্তি করতে অস্বীকার করল তখন এ শর্তের উপরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধিপত্র লেখালেন এবং আবূ জানদাল ইবনু সুহায়ল (রাঃ)-কে ঐ মুহূর্তেই তার পিতা সুহায়ল ইবনু ‘আমরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সন্ধির মেয়াদকালে পুরুষদের মধ্যে যারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চলে আসতেন, মুসলিম হলেও তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতেন। এ সময় কিছু সংখ্যক মুসলিম মহিলা হিজরাত করে চলে আসেন। উম্মু কুলসুম বিনত ‘উকবাহ ইবনু আবূ মু‘আইত (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হিজরাতকারিণী একজন যুবতী মহিলা। তিনি হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছলে তার পরিবারের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন মহিলাদের সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার তা অবতীর্ণ করলেন।-ihadis.com
নাস্তিকরা এই হাদিস দেখিয়ে প্রশ্ন করে উনি যদি লিখাতে ও পড়তে না জানতেন তাহলে কেন কিছু লিখতে ইচ্ছা পোষণ করবেন? বা লিখতে চাইবেন?
সহিহ বুখারি ১/ ৫৪ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৬৫ এ বলা হয়েছে, আনাস (রা) থেকে বর্ণিত , "নবী করীম (সা) একখানি পত্র লিখলেন অথবা একখানি পত্র লিখতে মনস্থ করলেন" । তখন তাঁকে বলা হল যে , তারা (রোমবাসী ও অনারবরা ) সিলমোহর যুক্ত ছাড়া কোন পত্র পড়ে না । এরপর তিনি রুপার একটি আংটি তৈরি করালেন যার নকশা ছিল "মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ" - আমি যেন তাঁর হাতে সে আংটির উজ্জ্বলতা এখনো দেখতে পাচ্ছি।-ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬৫, সহিহ হাদিস,আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একখানি পত্র লিখালেন অথবা একখানি পত্র লিখাতে ইচ্ছে পোষণ করলেন। তখন তাঁকে বলা হলো যে, তারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীলমোহরযুক্ত ছাড়া কোন পত্র পড়ে না। এরপর তিনি রূপার একটি আংটি (মোহর) তৈরী করালেন যার নকশা ছিলো مُحَمَّدُ الرَّسُوْل الله ’ (মোহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্)। আমি যেন তাঁর হাতে সে আংটির ঔজ্জ্বল্য (এখনো) দেখতে পাচ্ছি [শু’বা (রহঃ) বলেন] আমি কাতাদা (রহঃ) কে বললাম, কে বলেছে যে, তার নকশা مُحَمَّدُ الرَّسُوْل الله’ ছিলো? তিনি বললেন, ‘আনাস (রাঃ)।’-ihadis.com
মাও শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ) লিখিত বুখারি শরীফ (বাংলা তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা)। হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড। ১১৬ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৫৮ । সুত্রে বর্ণিত হয়েছে,
আনাস (রা) বর্ণনা করেছেন নবী (সা) তৎকালীন বড় বড় রাজা বাদশাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত ও আহ্বান জানিয়ে পত্র পাঠাতে মনস্থ করলেন। তখন তাঁর কাছে আরজ করা হল যে রাজা বাদশাগন সিলমোহর যুক্ত লিপি না হলে গ্রহণ করে নাহ । তখন নবী (সা) রৌপ্যের একটি আঙ্গুরি বিশেষ সিলমোহর তৈরি করালেন । তাঁর উপর লেখা ছিল আল্লাহ্, রাসুল , মুহাম্মদ এই শব্দ তিন লাইনে অংকিত ছিল । আনাস (সা) বলেন আমি নবী (সা) আঙ্গুলে দেখেছি এখনো উহা আমার চোখে ভাসিতেছে ।
নবী মোহাম্মদ (সা) ইসলামের দাওয়াত পাঠানোর জন্য চিঠি লিখতে চাইলেন। আর আমরা বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ থেকে জানতে পারি উনি চিঠি লেখার জন্য আলাদা লোক ছিল। তাই এটা বললে অবশ্যই ভুল হবে না যে উনি চিঠি লিখাতেই চেয়েছিলেন। নিজে লিখতে চান নাই কারণ উনি তো লিখতে ও পড়তের জানতেনই না। এ ছাড়া ই,ফাঃ সহিহ বুখারি ১০/৪১৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৬৬৭৬: আনাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (সা) যখন চিঠি লিখতে চাইলেন ....... এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে রাসুল (সা) ইচ্ছা পোষণ করেছেন। নিজ হাতে লিখেন নাই। আর কেউ নিরক্ষর কোনো মানুষ যদি লিখতে চায় এরমানে এটা নয় যে উনি লিখতে পারেন। কেউ যদি টাইপ করতে ইচ্ছা করে এরমানে এই না যে সে টাইপিং বিষয় সম্পূর্ণ এক্সপার্ট।
এরপরে আরেকটি হাদিস থেকে নাস্তিকরা প্রশ্ন করে নবীজি (সা) কিভাবে লিখতে পারলেন?
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১২১৬, হাসান হাদিস,আবদুল মাজীদ ইবনু ওয়াহ্ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল-আদ্দা ইবনু খালিদ ইবনু হাওযা (রাঃ) আমাকে বললেন, যে চুক্তিপত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে লিখে দেন তা কি তোমাকে পড়ে শুনাব? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমার সামনে তিনি একটি পত্র বের করলেন। তাতে লিখা ছিলঃ “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে আল-আদ্দা ইবনু খালিদ ইবনু হাওযা একটি গোলাম বা দাসী কিনলো (এটি তার দলীল), যার কোন অসুখ নেই, যা পলায়নপর নয় এবং চরিত্রহীনও নয়। এ হলো এক মুসলমানের সাথে অন্য মুসলমানের ক্রয়-বিক্রয়”।-ihadis.com
সকল তথ্য প্রমাণ সামনে রেখে এটা বলা যায় নবীজি (সা) উনাকে লিখিয়ে দিয়েছিলেন আর আমরা আগেই জেনেছি অন্যের দ্বারা লিখি নিলেও সেটা নেতারই লেখা হয়ে যায়। এটা আর বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। বাকি তাফসীর জালালাইন থেকে সহজে বুঝে নিন।
তাফসীরে জালালাইন,৫ খণ্ড, ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
নিরক্ষর হওয়া রাসূলুল্লাহ (সা) -এর একটি বড় শ্রেষ্ঠত্ব ও বড় মােজেজা। আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সা) এর নবুয়ত সপ্রমাণ করার জন্য যেসব সুস্পষ্ট মােজেজা প্রকাশ করেছেন, তন্মধ্যে তাঁকে পূর্ব থেকে নিরক্ষর রাখাও অন্যতম। তিনি লিখিত কোনাে কিছু পাঠ করতে পারতেন না এবং নিজে কিছু লিখতেও সক্ষম ছিলেন না। এ অবস্থায়ই জীবনের চল্লিশটি বছর তিনি মক্কাবাসীদের সামনে অতিবাহিত করেন। তিনি কোনাে সময় কিতাবধারীদের সাথেও মেলামেশা করেন নি যে, তাদের কাছ থেকে কিছু শুনে নেবেন। কারণ মক্কায় কোনাে কিতাবধারী বাস করত না। চল্লিশ বছর পূর্তির পর হঠাৎ তার পবিত্র মুখ থেকে এমন কালাম উচ্চারিত হতে থাকে, যা বিষয়বস্তু ও অর্থের দিক দিয়ে যেমন ছিল মােজেজা তেমনি শাব্দিক বিশুদ্ধতা ও ভাষালঙ্কারের দিক দিয়েও ছিল অতুলনীয়।
কোনাে কোনাে আলেম প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি প্রথম দিকে নিরক্ষর ছিলেন। এরপর আল্লাহ তা'আলা তাঁকে লেখাপড়াশিখিয়ে দেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা হুদায়বিয়া ঘটনার একটি হাদীস উদ্ধৃত করেন, যাতে বলা হয়েছে, সন্ধিপত্র লেখা হলে তাতে প্রথমে (আরবি) লিখিত ছিল। এতে মুশরিকরা আপত্তি তুলল যে, আমরা আপনাকে রাসূল মেনে নিলে এই ঝগড়া কিসের? তাই আপনার নামের সাথে রাসূলুল্লাহ' শব্দটি আমাদের কাছে গ্রহণীয় নয়। লেখক ছিলেন হযরত আলী মুর্তাজা (রা.)। রাসূলুল্লাহ ও তাকে শব্দটি মিটিয়ে দিতে বললেন। তিনি আদবের খাতিরে এরূপ করতে অস্বীকৃত হলে রাসূলুল্লাহ - নিজে কাগজটি হাতে নিয়ে শব্দটি মিটিয়ে দিলেন এবং তদস্থলে (আরবি) লিখে দিলেন। এ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ নিজে লিখে দিয়েছেন' বলা হয়েছে। এ থেকে তারা বুঝে নিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ - লেখা জানতেন। কিন্তু সত্য এই যে, সাধারণ পরিভাষায় অপরের দ্বারা লেখানােকেও “সে লিখেছে" বলা হয়ে থাকে। এছাড়া এটাও সম্ভবপর যে, এ ঘটনায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মােজেজা হিসেবে তিনি নিজের নামও লিখে ফেলেছেন। এতদ্ব্যতীত নামাজের কয়েকটি অক্ষর লিখে দিলেই কেউ নিরক্ষরতার সীমা পেরিয়ে যায় না। লেখার অভ্যাস গড়ে না উঠা পর্যন্ত তাকে অক্ষরজ্ঞানহীন ও নিরক্ষরই বলা হবে। রাসূলুল্লাহ লেখা জানতেন- বিনা প্রমাণে এরূপ বললে তার কোনাে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না; বরং চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নিরক্ষর হওয়ার মধ্যেই তার বড় শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত রয়েছে।
নাস্তিকরা আরেকটি হাদিস দেখিয়ে প্রশ্ন করে নবী মুহাম্মদ মৃত্যুর সময় কিছু লেখার জিনিস নিয়ে আসতে বলেছিলেন, সেখানে তিনি কিছু লিখে যেতে চেয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, উনি লিখতে পড়তে না জানলে কেন লেখার জিনিস চাইবেন?
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১১৪, সহিহ হাদিস,ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুখ যখন বৃদ্ধি পেলো তখন তিনি বললেনঃ ‘আমার নিকট লেখার জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরে তোমরা আর পথভ্রষ্ট হবে না।’ ‘উমার (রাঃ) বললেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের নিকট তো আল্লাহর কিতাব আছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ এতে সাহাবীগণের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলো এবং শোরগোল বেড়ে গেলো। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার নিকট ঝগড়া-বিবাদ করা অনুচিত।’ এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে।’-ihadis.com
নাস্তিকরা অন্য হাদিস গুলো না দেখিয়ে এই একটি হাদিস দেখিয়েছে মাত্র। অন্য হাদিসে স্পষ্ট বলাই আছে যে নবীজি (সা) আসলে লিখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর আমরা জানি নবীর লিখে দেয়া মানেও উনি কাউকে দিয়ে লিখিয়েই নিতেন কারণ উনি লিখতে ও পড়তে জানতেন না। তাই এসব হাদিস থেকে প্রমাণ হয় না যে উনি লিখতে পড়তে জানতেন।
আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১০৫৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বললেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! অতঃপর তিনি কাঁদতে শুরু করলেন, এমনকি তাঁর অশ্রুতে কঙ্করগুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলতে লাগলেন, ‘বৃহস্পতিবারে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে অতঃপর তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট না হও। এতে সাহাবীগণ পরস্পরে মতভেদ করেন। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)র সম্মুখে মতভেদ সমীচীন নয়। তাদের কেউ কেউ বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া ত্যাগ করছেন?’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহ্বান করছো তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি তা উত্তম।’ অবশেষে তিনি ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। (১) মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ হতে বিতাড়িত কর, (২) প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢৌকন দিয়েছি তোমরাও তেমন দিও (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গেছি। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৭৬ হাদীস নং ৩০৫৩; মুসলিম ২৫/৫ হাঃ ১৬৩৭)-ihadis.com
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩০৫৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বললেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! অতঃপর তিনি কাঁদতে শুরু করলেন, এমনকি তাঁর অশ্রুতে কঙ্করগুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলতে লাগলেন, ‘বৃহস্পতিবারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে অতঃপর তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট না হও। এতে সাহাবীগণ পরস্পরে মতভেদ করেন। অথচ নবীর সম্মুখে মতভেদ সমীচীন নয়। তাদের কেউ কেউ বললেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া ত্যাগ করেছেন?’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহ্বান করছো তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি তা উত্তম।’ অবশেষে তিনি ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। (১) মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ হতে বিতাড়িত কর, (২) প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢেৌকন দিয়েছি তোমরাও তেমন দিও (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গিয়েছি। আবূ আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইব্নু মুহাম্মদ (রহঃ) ও ইয়া’কূব (রহঃ) বলেন, আমি মুগীরাহ ইব্নু ‘আবদুর রহমানকে জাযীরাতুল আরব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, তাহলো মক্কা, মদীনা ও ইয়ামান। ইয়াকূব (রহঃ) বলেন, ‘তিহামাহ্ আরম্ভ হল ‘আরজ থেকে।’ihadis.com
নবীজি (সা) যদি লিখতে না জানতেন তাহলে লিখিয়ে কেন দেবেন?
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ১৫৭০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইবনু শিহাব (রঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত সম্পর্কে যে ফরমান লিখিয়েছেন এটা সেই পান্ডুলিপি যা ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) পরিবারে সংরক্ষিত আছে। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা আমাকে পড়িয়েছেন এবং আমি তা হুবহু মুখস্ত করি। পরবর্তীতে তা ‘উমার উবনু ‘আবদুল ‘আযীয় (রঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এবং সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে কপি করেন। তিনি বলেন, উটের সংখ্যা একশো একুশ থেকে একশো উনত্রিশ হলে তিনটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। একশো ত্রিশ থেকে একশো ঊনচল্লিশ হলে দু’টি বিনতু লাবূন ও একটি হিককাহ দিতে হবে। আর একশো চল্লিশ থেকে ঊনপঞ্চাশ হলে দু’টি হিককাহ ও একটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। একশো পঞ্চাশ থেকে একশো উনষাট হলে দিতে হবে তিনটি হিক্কাহ। একশো ষাট থেকে একশো উনসত্তর পর্যন্ত তিনটি বিনতু লাবূন ও একটি হিক্কাহ দিতে হবে। একশো আশি থেকে একশো ঊননব্বই পর্যন্ত দু’টি হিক্কাহ ও দুটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। একশো নব্বই হলে তা থেকে একশো নিরানব্বই পর্যন্ত তিনটি হিক্কাহ ও একটি বিনতু লাবূন। দুইশো হলে চারটি হিককাহ অথবা পাঁচটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। এ উভয় বয়সের মধ্যে যেটাই পাওয়া যাবে সেটাই নেয়া হবে। আর চরে বেড়ানো ছাগল (এর যাকাত সম্বন্ধে) ইবনু শিহাব ইতিপূর্বে সূফয়ান ইবনু হুসাইনের হাদীসে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে, যাকাত বাবদ অতিবৃদ্ধ ও দোষযুক্ত বকরী নেয়া হবে না, এবং পুরুষ জাতীয় (পাঠা)- ও না। অবশ্য যাকাত আদায়কারী প্রয়োজনে নিতে চাইলে নিতে পারে।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ৩৫২৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ রাশিদ আল-হুবরানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আম্র ইবনুল আস (রাঃ)-এর কাছে এসে আমি তাকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে যা কিছু শুনেছেন, তা হতে আমাদের কাছে কিছু বর্ণনা করুন। একখানা পান্ডুলিপি আমাকে দিলেন এবং বললেন, এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে লিখিয়ে দিয়েছেন। আবূ রাশিদ বলেন, তাতে আমি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম, তাতে লিখা আছে আবূ বাক্র আস-সিদ্দীক্ব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! এমন কিছু (দু’আ) আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি সকালে ও বিকালে উপনীত হয়ে বলতে পারি। তিনি বললেনঃ হে আবূ বাক্র! বলুন, হে আল্লাহ, আকাশসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞাতা! তুমি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই, তুমি প্রতিটি বস্তুর পালনকর্তা ও মালিক। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিজের অন্তরের অনিষ্ট হতে এবং শাইতানের ক্ষতি ও তার শির্কী হতে এবং আমি আমার নিজের জন্য ক্ষতিকর কিছু লাভ করা হতে কিংবা উক্ত অনিষ্টকর জিনিস কোন মুসলিমের কাছে টেনে নিয়ে যাওয়া হতে।-ihadis.com
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪১৮০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.) থেকে বর্ণিতঃতিনি মারওয়ান ইবনু হাকাম এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) উভয়কে হুদাইবিয়াহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘উমরাহ্ আদায় করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছেন। তাঁদের থেকে ‘উরওয়াহ (রহ.) আমার (মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনু শিহাব) নিকট যা বর্ণনা করছেন তা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহায়ল ইবনু ‘আমরকে হুদাইবিয়াহর দিন সন্ধিনামায় যা লিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সুহায়ল ইবনু ‘আমরের শর্তগুলোর একটি শর্ত ছিল এইঃ আমাদের থেকে যদি কেউ আপনার কাছে চলে যায় তাকে আমাদের কাছে ফেরত দিতে হবে যদিও সে আপনার ধর্মের উপর থাকে এবং তার ও আমাদের মধ্যে আপনি কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। এ শর্ত পূর্ণ করা ছাড়া সুহায়ল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সন্ধি করতেই অস্বীকৃতি জানায়। এ শর্তটিকে মু’মিনগণ অপছন্দ করলেন এবং এতে তারা ক্ষুব্ধ হলেন ও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করলেন। কিন্তু যখন সুহায়ল এ শর্ত ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে চুক্তি করতে অস্বীকার করল তখন এ শর্তের উপরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধিপত্র লেখালেন এবং আবূ জানদাল ইবনু সুহায়ল (রাঃ)-কে ঐ মুহূর্তেই তার পিতা সুহায়ল ইবনু ‘আমরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সন্ধির মেয়াদকালে পুরুষদের মধ্যে যারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চলে আসতেন, মুসলিম হলেও তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতেন। এ সময় কিছু সংখ্যক মুসলিম মহিলা হিজরাত করে চলে আসেন। উম্মু কুলসুম বিনত ‘উকবাহ ইবনু আবূ মু‘আইত (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হিজরাতকারিণী একজন যুবতী মহিলা। তিনি হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছলে তার পরিবারের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন মহিলাদের সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার তা অবতীর্ণ করলেন।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৫০৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বললেন, যার কোন লোককে হত্যা করা হয়েছে তার দু’টি বিকল্প ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের স্বাধীনতা আছে। হয়তো তাকে রক্তমূল্য দেয়া হবে, অন্যথায় কিসাস কার্যকর হবে। তখন ইয়ামানের অধিবাসী আবূ শাহ নামক এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! (এ নির্দেশ) আমাদের জন্য লিখিয়ে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আবূ শাহ-এর জন্য লিখে দাও। হাদীসের এ শব্দ ইমাম আহ্মাদ (রহঃ)-এর। আর ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, “আমাদের জন্য লিখিয়ে দিন” অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুত্ববাহটি।
বিভিন্ন সন্ধিপত্র লেখার জন্য লেখক থাকতোঃ
যতো হাদিসে নবীজি (সা) “লিখেছেন” “লিখলেন” “লিখতে ইচ্ছা করলেন” “লিখে দিব” কথা গুলো রয়েছে সেই সব একটি হাদিস থেকেও প্রমাণ হয় না যে নবীজি (সা) আসলেই লিখতে পড়তে জানতেন। কিভাবে? এই হাদিসটি পড়ুন একদম স্পষ্ট সব উত্তর পেয়ে যাবেন।
সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৭১৯৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত হয়েছে,
যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃযে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইয়াহূদীদের লিখন পদ্ধতি শিক্ষা করার জন্য আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেন, যার ফলে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে তাঁর চিঠিপত্র লিখতাম এবং তারা কোন চিঠিপত্র তাঁর কাছে লিখলে তা তাঁকে পড়ে শোনাতাম। ‘উমর (রাঃ) বললেন- তখন তাঁর কাছে হাজির ছিলেন ‘আলী, ‘আবদুর রহমান ও উসমান (রাঃ)- এ স্ত্রীলোকটি কী বলছে? ‘আবদুর রহমান ইব্নু হাতিব বলেন, আমি বললাম, এ স্ত্রীলোকটি তার এক সঙ্গীর ব্যাপারে আপনার নিকট অভিযোগ করেছে যে, সে তার সঙ্গে কুকাজ করেছে। আবূ জামরাহ বলেন, আমি ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) ও লোকদের মাঝে দোভাষীর কাজ করতাম। আর কেউ কেউ বলেছেন, প্রত্যেক শাসনকর্তার জন্য দু’জন করে দোভাষী অত্যাবশ্যকীয়।-ihadis.com
সহিহ বুখারি ১০/ ৪৩৭ , অনুচ্ছেদ ৩০৪৪ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে,
যায়েদ ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা) তাঁকে ইহুদীদের লিখন পদ্ধতি শিক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন । তিন বলেন যার ফলে আমি নবী (সা) এর পক্ষ থেকে তাঁর চিঠিপত্র লিখতাম এবং তারা কোন চিঠিপত্র তাঁর কাছে লিখলে তা তাঁকে পাঠ করে শোনাতাম।-ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬৪৫ , হাদিস সহিহ থেকে বর্ণিত হয়েছে,
যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সা) আমাকে ইহুদীদের লেখা (ভাষা) লিখার আদেশ দিলেন । আমি ইহুদীদের লেখা শিখলাম । নবী (সা) বললেন আল্লাহ্র শপথ, ইহুদীরা আমার পক্ষ থেকে সঠিক লিখবে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। সাবেত (রা) বলেনঃ ১৫ দিন যেতে না যেতেই আমি তাদের লেখা আয়ত্ত করে ফেললাম। তিনি চিঠিপত্র লেখানোর ইচ্ছা করলে আমি লিখে দিতাম এবং তাঁর নিকট চিঠি পত্র এলে আমি তা তাঁকে পড়ে শুনাতাম।-ihadis.com
এরপরেও কোনো ইসলাম বিরোধী যদি এই দাবি করতে চায় যে উনি জ্ঞানবিদ্যায় এক্সপার্ট ছিলেন তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে উনি কার কার থেকে লিখতে পড়তে শিখেছিলেন? সেই শিক্ষকের নাম কি? ঠিক কবে থেকে হযরত মোহাম্মদ (সা) সেই শিক্ষকের থেকে লেখা পড়া শিখেছিলেন? যেহেতু ইসলাম বিরোধীরা দাবি করছে উনি জানতেন তাহলে নিশ্চয় তাদের কাছে এর প্রমাণ থাকার কথা। সেই প্রমাণ গুলো কোথায় আছে? নাস্তিকরা প্রমাণ পেশ করুক। প্রমাণ পেশ না করে বলবে আমার আগ্রহ নাই অথচ হাদিসের কিছু দেখিয়ে বলবে উনি পড়তে জানতেন তা হবে না।
নবী মোহাম্মদ (সা) এর নিজের স্বীকারোক্তিঃ
সেইসাথে, এমন তো নয় যে, সেই সময়ে আরবে সব লোক খুব উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ছিল! নাস্তিকদের দাবি শুনলে মনে হয়, ১৪০০ বছর আগে মক্কায় সব মানুষ পিএইচডি ধারী এবং ইউনিভার্সিটি পড়া শিক্ষিত ছিলেন, শুধুমাত্র নবী মুহাম্মদ (সা) একলাই নিরক্ষর ছিলেন। প্রাচীন আমলে তো সেরকম স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় আরব অঞ্চলে থাকার কথা না। শুধু আরবেই কেন, গোটা পৃথিবীতেই থাকার কথা না। আজকের দিনেই অধিকাংশ মানুষ যেখানে নিরক্ষর, সেখানে প্রাচীন আমলে মক্কার আশেপাশে কে-ই বা এতো শিক্ষিত ছিল? স্বাভাবিকভাবেই প্রাচীন আরব জাতি উম্মী নিরক্ষর ছিল।
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২৪০১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
সা’ঈদ ইবনু ‘আমর ইবনু সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি ইবনু ‘উমারকে বলতে শুনেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা উম্মী (নিরক্ষর) জাতি। আমরা লেখিনা এবং হিসাবও করি না। মাসে দিনের সংখ্যা এত, এত এবং এত। তৃতীয়বার তিনি নিজ হাতের বুড়ো আঙ্গুলটি বন্ধ করে দু’হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন (অর্থাৎ তিনবার ইঙ্গিতে ঊনত্রিশ দিন প্রমাণ করলেন)। আর কোন কোন মাস এত, এত এবং এত দিনেও হয় (অর্থাৎ পূর্ণ ত্রিশ দিন হয়ে থাকে)।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ২৯৪৪, হাসান সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল (আঃ) এর সাক্ষাৎ পেয়ে বললেনঃ হে জিবরীল! আমি একটি নিরক্ষর উম্মাতের নিকট প্রেরিত হয়েছি। এদের মধ্যে প্রবীণ, বৃদ্ধ, কিশোর ও কিশোরী আছে এবং এমন লোকও আছে যে কখনো কোন লেখাপড়াই করেনি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! কুরআন তো সাত রীতিতে অবতীর্ণ হয়েছে।-ihadis.com
সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ ২১৪১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, আমরা হলাম (মা এর শিশু সন্তানের ন্যায়) অজ্ঞ উম্মাত, (ভাল করে) হিসাবও জানি না এবং (ভাল করে) লিখতেও জানি না। আর মাস এত দিনের হয়, মাস এত দিনের হয়, মাস এত দিনের হয়। এবং তৃতীয় বারে বৃদ্ধ আঙুল বন্ধ করে ফেললেন। (২৯ দিন বুঝাবার জন্য)। আর মাস এরকম, এরকম এরকম, পূর্ণ ত্রিশ দিনেরও হয়।-ihadis.com
সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৩১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা ‘উম্মী জাতি, লিখতে জানি না, হিসাব করতেও জানি না। তবে মাস এতো দিনে, এতো দিনে এবং এতো দিনে হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সুলায়মান তৃতীয় বারে আঙ্গুল গুটিয়ে নেন। অর্থাৎ মাস কখনো ঊনত্রিশ দিনে এবং কখনো ত্রিশ দিনে হয়।-ihadis.com
কুরআন থেকে প্রমাণঃ
আল কুরআন, সুরা আনকাবুত ২৯ঃ৪৮ আয়াত থেকে বর্ণিত,
আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত।
ইসলামের দৃষ্টিতে সব থেকে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে আল কুরআনই যথেষ্ট এটা বুঝার জন্য যে নবী মোহাম্মদ (সা) লিখতে ও পড়তে জানতেন না। আসুন তাফসীর থেকে বিস্তারিত জেনে নেই।
অনুবাদঃ ডঃ মুজিবুর রহমান, তাফসীরে ইবনে কাসির ১৫/৫৯১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
উপরের আয়াতের ব্যাখ্যায়ঃ রাসুল (সা) কাফেরদের মাঝে অনেক বছর অতিবাহিত করেছে আর কাফেররা ভাল ভাবেই জানতো যে রাসুল (সা) এর আক্ষরিক জ্ঞান ছিল না। এরপরেও যখন নবী জ্ঞান পূর্ণ কিতাব পাঠ করছে তখন তো তা প্রকাশ্য ব্যাপার যে এটা আল্লাহ্র পক্ষ হতেই এসেছে।
অনুবাদঃ ডঃ মুজিবুর রহমান, তাফসীরে ইবনে কাসির ১৫/৫৯২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বড় মজার কথা এইযে ,আল্লাহ্র নিষ্পাপ নবী মুহাম্মদ (সা) কে সব সময় এর জন্য লিখা হতে দূরে রাখা হয়। একটি অক্ষরও তিনি লিখতে পারতেন না। তিনি লেখক নিযুক্ত করেছিলেন। যারা আল্লাহ্র ওহী লিখতেন । প্রয়োজনের সময় দুনিয়ার বাদশাহর নিকট তারাই লিখতেন। পরবর্তী ফকিহদের মধ্যে কাজী আব্দুল ওয়ালি বাজী প্রমুখ গুরুজন বলেছেন যে, হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন " এ হচ্ছে ঐ শর্তসমূহ যেগুলোর উপর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সা) ফয়সালা করেছেন" - এ বাক্য রাসুল (সা) নিজ হাতে লিখেছিলেন । কিন্তু এ কথা সঠিক নয়। কাজী সাহেবের মনে এ ধারনা জন্মেছে বুখারির ঐ রেওয়ায়েত যাতে আছে "অতপর রাসুল (সা) ওটা নিলেন ও লিখলেন" কিন্তু এর ভাবার্থ হচ্ছে "অতপর তিনি হুকুম করলেন তখন লিখা হল" - পূর্ব ও পশ্চিমের সমস্ত আলেমদের এটাই মাযহাব তথা মত। এমনকি তারা বাজী (রহ) প্রমুখ গুরুজনের উক্তিকে কঠিনভাবে খণ্ডন করেছেন এবং তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন । কিন্তু এটাও স্মরণ রাখার বিষয় যে কাজী সাহেব প্রমুখ মনিষীদের এটা ধারনা মোটেই নয় যে "রাসুল (সা) ভালরুপে লিখতে পারতেন" বরং তারা বলতেন যে সন্ধিপত্রে তাঁর উপরোক্ত বাক্যটি লিখে নেওয়া তাঁর একটি মুজিজা ছিল । যেমন রাসুল (সা) বলেছেন যে , দাজ্জালের দু চোখের মাঝে "কাফির" লিখা থাকবে যা প্রত্যেক মুমিন পড়তে পারবে । অর্থাৎ লেখা পড়া না জানলেও সবাই পড়তে সক্ষম হবে । এটা মুমিনদের একটা কারামত হবে । একই ভাবে উপরোক্ত বাক্যটি লিখে ফেলা আল্লাহ্র নবীর এর মুজিজা ছিল এর ভাবার্থ এটা নয় যে তিনি লেখা পড়া জানতেন ।
তাফসীরে জালালাইন,৫ খণ্ড, ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
নিরক্ষর হওয়া রাসূলুল্লাহ (সা) -এর একটি বড় শ্রেষ্ঠত্ব ও বড় মােজেজা। আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সা) এর নবুয়ত সপ্রমাণ করার জন্য যেসব সুস্পষ্ট মােজেজা প্রকাশ করেছেন, তন্মধ্যে তাঁকে পূর্ব থেকে নিরক্ষর রাখাও অন্যতম। তিনি লিখিত কোনাে কিছু পাঠ করতে পারতেন না এবং নিজে কিছু লিখতেও সক্ষম ছিলেন না। এ অবস্থায়ই জীবনের চল্লিশটি বছর তিনি মক্কাবাসীদের সামনে অতিবাহিত করেন। তিনি কোনাে সময় কিতাবধারীদের সাথেও মেলামেশা করেন নি যে, তাদের কাছ থেকে কিছু শুনে নেবেন। কারণ মক্কায় কোনাে কিতাবধারী বাস করত না। চল্লিশ বছর পূর্তির পর হঠাৎ তার পবিত্র মুখ থেকে এমন কালাম উচ্চারিত হতে থাকে, যা বিষয়বস্তু ও অর্থের দিক দিয়ে যেমন ছিল মােজেজা তেমনি শাব্দিক বিশুদ্ধতা ও ভাষালঙ্কারের দিক দিয়েও ছিল অতুলনীয়।
কোনাে কোনাে আলেম প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি প্রথম দিকে নিরক্ষর ছিলেন। এরপর আল্লাহ তা'আলা তাঁকে লেখাপড়াশিখিয়ে দেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা হুদায়বিয়া ঘটনার একটি হাদীস উদ্ধৃত করেন, যাতে বলা হয়েছে, সন্ধিপত্র লেখা হলে তাতে প্রথমে (আরবি) লিখিত ছিল। এতে মুশরিকরা আপত্তি তুলল যে, আমরা আপনাকে রাসূল মেনে নিলে এই ঝগড়া কিসের? তাই আপনার নামের সাথে রাসূলুল্লাহ' শব্দটি আমাদের কাছে গ্রহণীয় নয়। লেখক ছিলেন হযরত আলী মুর্তাজা (রা.)। রাসূলুল্লাহ ও তাকে শব্দটি মিটিয়ে দিতে বললেন। তিনি আদবের খাতিরে এরূপ করতে অস্বীকৃত হলে রাসূলুল্লাহ - নিজে কাগজটি হাতে নিয়ে শব্দটি মিটিয়ে দিলেন এবং তদস্থলে (আরবি) লিখে দিলেন। এ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ নিজে লিখে দিয়েছেন' বলা হয়েছে। এ থেকে তারা বুঝে নিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ - লেখা জানতেন। কিন্তু সত্য এই যে, সাধারণ পরিভাষায় অপরের দ্বারা লেখানােকেও “সে লিখেছে" বলা হয়ে থাকে। এছাড়া এটাও সম্ভবপর যে, এ ঘটনায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মােজেজা হিসেবে তিনি নিজের নামও লিখে ফেলেছেন। এতদ্ব্যতীত নামাজের কয়েকটি অক্ষর লিখে দিলেই কেউ নিরক্ষরতার সীমা পেরিয়ে যায় না। লেখার অভ্যাস গড়ে না উঠা পর্যন্ত তাকে অক্ষরজ্ঞানহীন ও নিরক্ষরই বলা হবে। রাসূলুল্লাহ লেখা জানতেন- বিনা প্রমাণে এরূপ বললে তার কোনাে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না; বরং চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নিরক্ষর হওয়ার মধ্যেই তার বড় শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত রয়েছে।
আল কুরআন,সুরা আরাফ ৭:১৫৭ আয়াত থেকে বর্ণিত,
সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।
আল কুরআন, সুরা জুম’য়া ৬২:২ আয়াত থেকে বর্ণিত,
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।
আল-কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর (তাফসীরে আল কুরতুবি)তে এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন:"বলা হয়েছিল: 'অশিক্ষিত' মানে যারা লেখে না। এরা ছিল কুরাইশ। মনসুর ইব্রাহীম থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেছেন: 'আল-উম্মি (অশিক্ষিত) সেই ব্যক্তি যে পড়ে না বা লেখে না। নিজেদের মধ্য থেকে রসূল" মানে মুহাম্মাদ, যিনি নিরক্ষর ছিলেন এবং কখনো কোন বই পড়েননি বা শিখেননি।' আল-মাওয়ার্দী বলেন: 'আল্লাহ একজন নিরক্ষর নবীকে পাঠিয়েছেন এতে ভালো কী আছে? তিনটি জিনিস আছে: (i) তার বাণী পূর্ববর্তী নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করেছিল। (ii) এটি তাকে অন্যান্য নবীদের (নিরক্ষর) অনুরূপ এবং নিকটবর্তী করেছে। (iii) এটি সমস্ত সন্দেহ দূর করবে যে তিনি যে বই এবং লেখাগুলি পড়েছিলেন তা থেকে তিনি যে বার্তা প্রচার করেছিলেন তা তিনি শিখেছিলেন।"
নাস্তিকরা বলে থাকে,
ইতিহাসে এরকম মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়, যারা নবী মোহাম্মদ (সা) এর নিরক্ষর ছিলেন, এবং অসংখ্য কথা মুখে মুখে বলে গেছেন। সেগুলো পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে সংরক্ষিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে সহজেই বলা যায়, মহাকবি হোমারের নাম। ধ্রুপদি কিংবদন্তি অনুযায়ী, হোমার ছিলেন এক প্রাচীন গ্রিক মহাকাব্যিক কবি। জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন অন্ধ। তিনি ইলিয়াড ও ওডিসি মহাকাব্য এবং হোমারীয় স্তোত্রাবলির রচয়িতা। হোমারের মহাকাব্যগুলো থেকেই পাশ্চাত্য সাহিত্যধারাটির সূচনা হয়েছিল। কথাসাহিত্য ও সাহিত্যের সাধারণ ইতিহাসে এই দুই মহাকাব্যের প্রভাব অপরিসীম। হেরোডোটাসের মতে, হোমার হেরোডোটাসের জন্মের চারশো বছর আগে অর্থাৎ ৮৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ জীবিত ছিলেন।কিন্তু অন্যান্য প্রাচীন সূত্রে তাঁকে ট্রয় যুদ্ধের অনেক নিকটবর্তী সময়ের (১১৯৪-১১৮৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) মানুষ মনে করা হয়। তাঁর কবিতাগুলো বহু শতাব্দী ধরে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল, পরবর্তীতে তা মহাকাব্য হিসেবে অমর হয়ে যায়। এরপরে কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে আরো অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় খুব বেশি শিক্ষিত ছিলেন না। ইতিহাসে এরকম অসংখ্য মানুষই খুঁজে পাওয়া যায়, যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন, কিন্তু তাদের নিজস্ব ভাষায় কাব্য রচনা করে গেছেন। আমরা এরকম অনেক বাউল গায়ক, সাধক কিংবা লোককবি পাই যারা শিক্ষিত না হলেও অসংখ্য কবিতা বা গান রচনা করে গেছেন। সুতরাং নিরক্ষর হয়েও কুরআনের মতো কবিতার ছন্দে বলাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
নাস্তিকরা আসলে কুরআনের অকাট্য মোজেজা গুলো বুঝতেই পারে না। কুরআনের সত্যতার এভিডেন্স বিষয়ক আমার লেখা গুলো পড়ুন। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন “হোমার”দের এর সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) এর পার্থক্য কত বিশাল। তাছাড়া হোমারের কবিতায় এমন কোনো অকাট্য অলৌকিক কিছু নেই , কাজি নজরুল ইসলামের কবিতাতেও কিছু নেই এমনকি তারা এমনটা দাবিও কখনো করে নাই কিন্তু কুরআন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্পূর্ণ আলাদা। কথায় আছে না “কোথায় প্লাস্টিকের ফুল আর কোথায় আসল ফুল” সব দলিল প্রমাণ যাচাই বাছাইয়ের পর এই সিদ্ধান্তে আসা মোটেও কষ্টকর নয় যে হযরত মোহাম্মদ (সা) লিখতে ও পড়তে জানতেন না। কুরআনের অকাট্য মোজেজা গুলো জানতে আমার লেখা গুলো পড়ে দেখুন আর চিন্তা ভাবনা করুন। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে গিয়ে আফসস করে কোনো লাভ নাই যখন আপনি দেখতে পারবেন ইসলামই সত্যি ছিল।
কুরআন সত্যতার এভিডেন্সঃ
কুরআনে আবু লাহাবকে গালাগালি করা হয়েছে?
কুরআনের ভবিষ্যৎবাণীর নিশ্চিত সত্যতা
ক্ষমতাশীল কাফেরদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎবাণী
মক্কাবিজয়সহ সত্যময় ভবিষ্যৎবাণী
নবী মোহাম্মদ (সা) আসলেই উম্মী ছিলেন?
[১] The refusal of ‘Umar and those who were with him to bring writing materials to the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) during his illness;
[২] DID THE PROPHET MUHAMMAD (S) KNOW HOW TO READ AND WRITE? WHY?https://www.quranicconnection.tv/did-the-prophet-muhammad-know-how-to-read-or-write/?fbclid=IwAR29P2s52seOYnO2asFb5mW1Kin7WrnHL4i7TIXX0CBNawMvxMGBuOQDNQg
[৩] Is there any evidence that the Prophet Muhammad was unable to read or write?