যে দান করে ফিরিয়ে নেয় , সে বমি করে তা কুকুরের মত গিলে খায়, এই কাজ করেছিল নবী মুহাম্মদ (সা) ?

প্রশ্নঃ হাদিসে আছে, যে দান করে ফিরিয়ে নেয় , সে বমি করে তা কুকুরের মত গিলে খায়, এই কাজ করেছিল নবী মুহাম্মদ (সা) , কারন সে দাহিয়াকে দান করে আবার ফিরিয়ে নিয়েছিল সাফিয়া (রা) কে ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ ইসলাম বিদ্বেষী মিথ্যুকদের দাবির পক্ষে হাদিস সমূহ আগে জেনে নেইঃ

* ই,ফাঃ আবু দাউদ ৪/৪২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৫০০, হাদিস সহিহঃ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন, দানে প্রদত্ত বস্তু ফেরত নেয়া প্রদানকারী ব্যাক্তি নিজের বমি নিজে ভক্ষণকারীর সমতুল্য ।

* ই,ফাঃ আবু দাউদ ৪/৪২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৫০১, হাদিস সহিহঃ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা) বলেন, কেবল পিতা তার পুত্রদের কিছু দিয়ে তা ফেরত নিতে পারবে । এছাড়া আর কারো জন্য কোন জিনিস কাউকে দিয়ে তা ফেরত নেয়া জায়েজ নয় । আর এ ব্যাক্তির উদাহরণ, যে কাউকে কিছু দিয়ে তা আবার ফেরত চায় , সে ঐ কুকুরের মত যে পেট পুরে খাওয়ার পর বমি করে, পরে তা আবার নিজে ভক্ষণ করে ।

পাঠকবৃন্দ এখন আসুন হযরত সাফিয়া (রা) কে কি দায়িয়া (রা) কে দান করে ফিরিয়ে নিয়েছিল নাকি অন্য কোন কারন আছে ?

* সিরাতুল রাসুল (সা),লেখক মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব, পৃষ্ঠা ৪৯৪। এছাড়াও ভিবিন্ন সিরাত গ্রন্থে যেমন আর রাহীকুল মাখতুম, ইবনে হিশাম, সিরাতুন্নবি (সা) পাবেনঃ খয়বর যুদ্ধ শেষে যখন যুদ্ধবন্দীদের একত্রিত করা হয় তখন দাহিয়া কালবি (রা) এসে বলল ,হে আল্লাহ্‌র রাসুল (সা) আমাকে বন্দীদের থেকে একটা দাসী প্রদান করুন । নবীজি (সা) বললেন যাও একজন দাসী নিয়ে যাও । তখন তিনি সাফিয়া (রা) নিয়ে যান । এক ব্যাক্তি রাসুল (সা) কে বললেন, আপনি কি সাফিয়াকে দাহিয়া কালবিকে প্রদান করলেন ? সাফিয়া বিনতে হুয়াই ছিলেন কুরাইজা ও নাজীর গোত্রের সর্দারের কন্যা , তিনি তো আপনারই যোগ্য । তখন রাসুল (সা) দাহিয়াকে ডেকে এনে বলল তুমি এর বদলে তথা সাফিয়া ছাড়া অন্য যে কোন দাসী নিয়ে নাও । পরিশেষে নবী (সা) সাফিয়াকে ইসলামের দাওয়াত দেন । সাফিয়া (রা) কবুল করেন ও নবীজি তাঁকে মুক্ত করে বিয়ে করেন ।

= যেহেতু সাফিয়া (রা) সর্দারের কন্যা ছিলেন তাই একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাসুল (সা) এর যোগ্য হলেন সাফিয়া (রা) । মুলত এই কারনে দাহিয়া (রা) দায়িত্তে পরা সাফিয়া (রা) কে রাসুল (সা) নিজ দায়িত্তে নেন। আর এখানে দাহিয়া (রা) এর কোন বিন্দু মাত্র আপত্তি ছিল না ।

নাস্তিক ধর্মান্ধরা উপরের দুইটি হাদিস দেখিয়ে সরলমনা মুসলিমদের সাথে মিথ্যা কথা বলে আর ভুল দাবি করে কিন্তু তারা একটি হাদিস জীবনেও বলবে না সেটা হল পরের হাদিস গুলা । কারন যেই হাদিসে দাবি করা হয়েছে যে "দান করে ফিরিয়ে নেয়া যাবে না" কিন্তু এর পরের হাদিসেই আছে "কি কি কারনে ফিরিয়ে নেয়া যাবে" । আসুন এখন আমরা জানব কোন গুরুত্বপূর্ণ কারন হলে দান ফিরিয়ে নেয়া বৈধঃ

* ই,ফাঃ আবু দাউদ, ৪/ ৪২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৫০২, হাদিস সহিহঃ আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত । রাসুল (সা) বলেছেন, যদি কেউ কোন বস্তু দান করে তা আবার ফেরত নেয়, তবে তার উদাহরণ এরুপ যে , কোন কুকুর যেন বমি করে তা আবার ভক্ষণ করে , যদি কোন ব্যাক্তি তার দানকৃত কোন বস্তু ফেরত নিতে ইচ্ছা করে, তখন দান-গ্রহীতা ব্যাক্তি তাকে এর কারন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে । যদি বিশেষ কোন কারনে দানকারী তা ফেরত চাইতে বাধ্য হয় । তখন তাকে তা ফেরত দেবে ।

উপরের তথ্য প্রমান থেকে আমরা বুঝলামঃ

১/ দান করে তা অযথাই ফেরত চাইলে তার উদাহরণ তার মত যে বমি করে পুনরায় কুকুরের মত ভক্ষণ করে ।

২/ বিশেষ কারনে ফেরত চাইলে, তা ফেরত দিলে উপরের উদাহরণ প্রযোজ্য না । পরিষ্কার কথা । বিশেষ কারনে দান পুনরায় ফেরত চাইলে তা ফেরত নেয়া যাবে ।

৩/ নবী মুহাম্মদ (সা) বিশেষ কারনেই সাফিয়া (রা) নিজের দায়িত্তে নেন আর এখানে যেহেতু দাহিয়া কলবি (রা) এর বিন্দুমাত্র আপত্তি ছিল না তাই প্রশ্নকর্তার দাবি যে ভুল এখানেই প্রমানিত হয়ে যাচ্ছে ।

৪/ আমরা এখানে পরোক্ষভাবে বুঝতে পারি "দান করে ফিয়ে নেয়ার হাদিসের উদাহরণ ঐ সব লোকের জন্য যারা সমাজের মাঝে দান করে অহংকার করে, মানুষের কাছে বলে বেড়ায় যে সে একজন বিরাট দানশীল ।পরে আবার তার বিরুদ্ধে কোন কথা গেলেই সে দান সে পুনরায় নিয়ে নেয় । এমন মানুষ সমাজে বহু আছে । সোজা কথা দান করে খোটা দেয় আবার বিনা কারনেই ফিরিয়ে নেয় এমন মানুষের জন্য কুকুরের উদাহরণ প্রযোজ্য । কিন্তু একজন সৎ লোক যে কিনা দান করেছে কিন্তু পরে তার বিশেষ কারনে অথবা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারনে ফেরত নিয়েছে এমন সৎ ভাল মানুষের জন্য উপরের উদাহরণ গ্রহণ যোগ্য হবে না ।



এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post