কবি কাব বিন আশরাফকে এবং কেনানাকে কেন মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নবী মুহাম্মদ (সা) ?

প্রশ্নঃ কবি কাব বিন আশরাফকে কেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল এবং কেনানাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ কবি কাব বিন আশরাফকে হত্যাঃ

* বাংলাদেশের কেউ যদি পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উস্কানি দেয় তবে তার ব্যাপারে শাস্তি হল ব্রিটিশদের হাই ট্রিজন আইনের মতো শাস্তি, মানে দেশ দ্রোহিতার শাস্তি । এই আইন মতাবেক দেশদ্রোহীকে ঘোড়াতে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে শহরের মধ্যে এনে মৃতপ্রায় অবস্থায় পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয় , তারপর পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে, মাথা কেটে, সারা শরীর চার টুকরা করে লন্ডন ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয় - যাতে এই অবস্থা দেখে কেউ সপ্নেও দেশদ্রোহিতার কথা চিন্তা করতে না পারে । অ্যামেরিকায় দেশদ্রোহিতার শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড অথবা ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং সাথে সর্বনিন্ম ১০০০০ ডলার অর্থদণ্ড ।

* মহানবী (সা) যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন মদিনার সকলেই মুহাম্মদ (সা) কে সাদরে গ্রহণ করে । রাসুল (সা) কে তাদের যোগ্য নেতা হিসেবে মেনে নেন । বাংলাদেশের স্বাধীন হবার এক বছরের মাথায় যেমন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় একই ভাবে নবী (সা) মদিনায় যাবার পর "মদিনা সনদ" নামে একটি সংবিধান প্রণয়ন করে যা মদিনাবাসী সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে । মদিনা সনদের ৪৭ টি ধারা ছিল । এর মধ্যে একটি হল "কোন সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদিনা বা মদিনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কোন রুপ সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবে না" - এই ধারাটি বর্তমান সময়ের ট্রিজন অ্যাক্টের মত।

* সুনানে আল কুবরা - বায়হাকি ৯/১৮৩ এবং যুরকানি ২/১০ পৃষ্ঠা আছেঃ ইহুদি কবি কাব আল আশরাফ ছিল মদিনার অধিবাসী । বনী নাদির গোত্রের নেতা । আরবের লোকদের অন্যতম পেশা ছিল বিজনেস আর কাব আল আশরাফ নিজের ছিল অস্রের বিজনেস । বদর যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় দেখে সে হিংসায় ফেটে পড়ে এবং বুঝতে পারে তার অস্ত্র বিজনেসে ধস নামবে । এ জন্য সে পালিয়ে মক্কার কুরাইশদের কাছে চলে যায় । সেখানে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশদের স্বজনদের সাথে সহমর্মিতা পোষণ করে এবং নবী (সা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উস্কানি দেয় ।

* এ ছাড়া "মোস্তফা চরিত্র" লিখেছেনঃ মোঃ আকরাম খা, পৃষ্ঠা ৪৪৭, কাকলী প্রকাশনীঃ কাব বিন আশরাফ এর অপরাধঃ

১/ বদর যুদ্ধের পূর্ব হতেই মক্কার কুরাইশদের ও মদিনার ইহুদীদের মধ্যে যে গুপ্ত ষড়যন্ত্র চলছিল, কাব আল আশরাফ সেই ষড়যন্ত্রের প্রধান ছিল ।

২/ এমন উস্কানি মূলক কবিতা রচনা করত যাতে নবীর বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ বাধে ।

৩/ কাব কাফের নেতা ও পণ্ডিতদের সাথে শপথ, ওয়াদা করে যে তারা এক হয়ে সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের ধ্বংস করে ফেলবে।

৪/ মদিনার মুসলিম নারীদের নিয়ে নোংরা কুটুক্তি করত এই কবি কাব আল আশরাফ ।

৫/ কাব আল আশরাফ দেশদ্রোহী ছিল এবং বিশেষ করে রাসুল (সা) কে হত্যা করতে সে বেশি আগ্রহী ছিল ।

উপরোক্ত কারন সামনে রেখে রাষ্ট্রনায়ক নবী মুহাম্মদ (সা) কবি কাব আল আশরাফকে গোপনে হত্যা করার আদেশ দেন। গোপনে কেন হত্যা করা হয়ঃ

* ধরেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর "বাংলাদেশের একজন পাকিস্তান পন্থী কবি" পাকিস্তানে গিয়ে পাকিস্তানকে উস্কানি দিচ্ছে যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করার জন্য । এবং বিভিন্ন ভাবে উস্কানি দিচ্ছে । এ অবস্থায় যদি বাংলাদেশের সরকার কোন কমান্ডকে নির্দেশ দেয় যে পাকিস্তানে গিয়ে লুকিয়ে ঐ দেশদ্রোহী কবিতে হত্যা করতে - এতে করে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সে আর উস্কানি দিতে পারবে না আর তাছাড়া দেশে এনে শাস্তি দেয়াও পসিবল না যেহেতু পাকিস্তানের মনে এখনো পরাজয়ের তাজা ক্ষত বিদ্যমান । তাই গুপ্ত হত্যাই ভাল সমাধান , পালিয়ে যাওয়া দেশদ্রোহীর ক্ষেত্রে । এতে করে দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগবে না । গুপ্ত ভাবে হত্যা বেষ্ট সমাধান ।

এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে অনেকেই বলে যে ইসলাম নাকি কবি বিদ্বেষ - এটা ভুল দাবী । আসলে ইসলাম কবি অথবা কবিতা বিদ্বেষ না । কারন হযরত হাসান সাবিত (রা) যাকে বলা হয় "শায়িবুর রাসুল" মানে রাসুল (সা) এর কবি । এছাড়াও কাব ইবনে মালিক (রা) , হযরত আলী (রা) যার কাব্য "দিওয়ানি আলী" নামে সংকলন করা হয়েছে । এরকম বড় বড় কবি রাসুল (সা) এর সাহাবী ছিল তাহলে ইসলাম কিভাবে কবি বা কবিতা বিদ্বেষী হতে পারে ? ইসলাম কখনো ভাল কবিতা, দেশ প্রেম এবং সমাজের উন্নতির কবিতার বিপক্ষে নাঃ

* ই,ফাঃ সহিহ বুখারি ১০/৬৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৬০৪৫, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ সর্বাধিক সত্য কবিতা যা এক কবি বলেছেনঃ "তোমরা জেনে রেখো আল্লাহ্‌ ছাড়া সব কিছুই বাতিল"

* ই,ফাঃ সহিহ বুখারি ৯/৪৬৯, হাদিস নং ৫৭১৪, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ নিশ্চয় কোন কোন কবিতার মধ্যে জ্ঞানের কোথাও রয়েছে ।

* ই,ফাঃ সহিহ বুখারি ৯/৪৬৯ , হাদিস নং ৫৭১৫, সহিহ হাদিসঃ জুনদুব (রা) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন, একবার নবী (সা) এক জিহাদে হেটে যাচ্ছিলেন । হটাত তিনি একটি পাথরের হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন এবং তাঁর একটা আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে গেল । তখন তিনি কবিতার ছন্দে বললেন "তুমি একটি রক্তাক্ত আঙ্গুল ছাড়া কিছুই নও, আর যে কষ্ট ভোগ করছ তা তো একমাত্র আল্লাহ্‌র পথেই"

প্রশ্নঃ কেনানাকে কেন হত্যা করা হয় ?

উত্তরঃ ই,ফাঃ সিরাত বিশ্বকোষ ৭/ ২৫০ পৃষ্ঠাঃ আল্লামা সুহায়িল বলেন, কিনানা ইবনুর রাবির কাছে বনু নাযিরের সম্পদের সম্ভার ছিল । তাকে রাসুল (সা) এর নিকট আনা হলে তিনি তাকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন । ইহুদি নেতা এই সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানালেন। রাসুল (সা) এর কাছে এক ইহুদি এসে বলল, আমি কিনানাকে একটি অনাবাদী স্থানে প্রতিদিন ভোরে ঘুরাফিরা করতে দেখেছি। রাসুল (সা) কিনানাকে বললেন, যদি আমরা এটা তোমার কাছে পাই তাহলে কি তোমাকে হত্যা করব ? সে বলল হ্যাঁ, ঠিক আছে । রাসুল (সা) এই অনাবাদী স্থানটিতে সন্ধান করার আদেশ দেন। সেখান থেকে কিছু সম্পদ উদ্ধার করা হল , অতপর কিনানাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হল, অবশিষ্ট সম্পদ কথায় ? সে তা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানালো । রাসুল (সা) এই সময় জুবায়র ইবনুল আওয়াম (রা) এর নিকট তাকে সোপর্দ করে বললেন এই লোকটির নিকট যা আছে তার সন্ধান লাভ না করা পর্যন্ত তাকে শাস্তি প্রদান করো । জুবায়র (রা) তাকে বউকে চকমকি পাথর দিয়ে আঘাত করতে থাকে । এতে সে মুমূর্ষু হয়ে পড়লে রাসুল (সা) কিনানাকে মোঃ ইবনে মাসলামা (রা) এর কিসাস সরূপ কিনানাকে হত্যা করলেন ।

উপরের বিশুদ্ধ ঘটনা থেকে আমরা জানলাম

১/ কিনানা যে আগে মোঃ ইবনে মাসলামা (রা) কে হত্যা করে ।

২/ কিনানা যে সম্পদ চুরি করে সেগুলা কথায় এই কথা বার বার নবী মুহাম্মদ (সা) তাকে জিজ্ঞাসা করেন কিন্তু কিনানা বার বার মিথ্যা কথা বলেই যায় ।

৩/ এরপরেই নবী মুহাম্মদ (সা) তাকে সাহাবী হত্যার কিসাস স্বরূপ মৃত্যুদণ্ড দেয় ।



এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post