ইরামের খবর কুরআনে কিভাবে?


বিষয়ঃ
ইরামের খবর কুরআনে কিভাবে?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

==========================


সূচনাঃ নাস্তিকরা নিজেদেরকে বুঝ দেয় যে তারা কুরআনের মোজেজা খণ্ডন করে ফেলেছে। কিন্তু যখন তাদের যুক্তিহীন কথাগুলোকে ঘাড় ধরে যুক্তির সামনে নিয়ে আনা হয় তখন সেসব ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়। আজকে কুরআনের অন্যতম অকাট্য মোজেজা চিন্তাশীল মানুষদের সামনে তুলে ধরবো। নাস্তিকরা ধরেই নিয়েছে যে কুরআনে কোনো মোজেজা থাকতে পারে না। নাস্তিকরা ধরেই নিয়েছে কুরআন নবী মোহাম্মদ (সা) লিখেছেন। নাস্তিকরা ধরেই নিয়েছে কুরআন আল্লাহর কিতাব নয়। কিন্তু এগুলো সবই নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস। নাস্তিকরা নিজেদের বিশ্বাসের পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারে না। অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকসম্প্রদায় কুরআনের সত্যতাকে সরিয়ে রাখার জন্য যে প্রমাণহীন দাবি গুলো করে সব গুলো যাচাই করে দেখবো।

 

ইরাম গোত্র নিয়ে কুরআনের সেই আয়াতটিঃ

 

আল কুরআন, ৮৯ঃ৬,৭, আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে, বন্ধুত্ব কায়েম

 

তুমি কি দেখো নাই তোমার প্রতিপালক কি করেছিলেন আদ বংশের ইরাম গোত্রের প্রতি যারা অধিকারী ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের?- (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত)

 

আয়াতটির শাব্দিক অনুবাদ করলে হয়,

 

(  إِرَمَ = ইরাম গোত্রের / ذَاتِ = অধিকারী / ٱلْعِمَادِ = সুউচ্চ স্তম্ভের ) -শব্দে শব্দে আল কুরআন,১৪ খণ্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা দেখুন।

 

সুরাটিতে আদ জাতির সম্পর্কে বলা হয়েছে। আদ জাতির কথার মধ্যে ইরাম নামে একটি শব্দ চলে এসেছে। প্রকৃত অর্থে যা কেউই জানতো এটা আসলে কি। আপনি যদি তাফসীর গুলো পড়ে দেখেন, সেখানে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। উনারা কেউই নিশ্চিতভাবে বলেননি ইরাম আসলে কি। যেমন এটাকে আদ জাতির বীর পালোয়ানদের নাম মনে করেছে। আবার কেউ বলেছে ইরাম ছিল রাজধানী। আবার কেউ কেউ বলেছে ইরাম একটি শহর। এভাবে বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলেননি। এক কথায় এই ইরাম আসলে কি সেটার পরিস্কার ব্যাখ্যা কেউই দিতে পারেনি তখন। এমনকি গোটা পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে ইরাম নিয়ে কিছুই বলা ছিল না। 

 

কিন্তু ১৯৭০ এর পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সিরিয়ায় মাটির নিচে একটি শহরের সন্ধান পায়। শহরটি প্রায় তেতাল্লিশ শত বছরের প্রাচীন। ম্যাগাজিনটি আরও লিখেছে, শহরটিতে একটি লাইব্রেরি ছিল। তাতে পাশ্ববর্তী শহরগুলির একটি তালিকা ছিল, যাদের সঙ্গে এলবার অধিবাসীরা বাণিজ্য করত। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হল, সেই শহরগুলির তালিকায় ‘ইরাম’ নামক একটি শহরের নামও লিপিবদ্ধ ছিল। নবী মুহাম্মদ (সা) কিভাবে ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এমন একটি নাম সম্পর্কে জানতে পারেন যা ছিল তেতাল্লিশ শত বছরের পুরনো এবং যা অতি সম্প্রতি ১৯৭০ সালের পরবর্তী সময়ে ভূতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে? নবী মোহাম্মদ (সা)কে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কে তাঁকে এই জ্ঞান দান করেছেন? 

 

যে ইরাম শহরের সন্ধান পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাসে ছিল না। কোনো ভূগোলবিদ, ইতিহাসবিদই এই শহর সম্পর্কে কিছুই জানতো না। প্রায় ৪৩ শত বছর আগের এতো প্রাচীন সময়ের একটি নাম কুরআনেই কেন এসে গেলো? যেটা আবিস্কার হয়েছেই ১৯৭০ এর পরবর্তী সময়ে সেটা আরবের মরুভূমিতে বসে ইতিহাস না পড়া একজন লোক, ভূগোল না পড়া একজন লোক কিভাবে জানতে পারলেন যে ইরাম নামের অস্তিত্ব আছে? এবং এটাও কিভাবে নিশ্চিত করলেন যে তারা ছিল উঁচু উঁচু প্রাসাদের অধিকারী? বিবর্তিত মগজওয়ালারা হয়তো আমার এই পয়েন্ট সমূহ বুঝতে পারবে না বা বুঝেও এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে থাকবে। জোর করে নিজের মনকে বুঝ দিতে চাইবে যে ইসলাম ঠিক নয়,যেভাবে হোক কুরআনের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এই দায়িত্ব পূরণের জন্য। আমি নাস্তিকদের ভাবনা দেখে আশ্চর্য হয়ে ভাবি যে তারা নিজেদের এতোটা বিভ্রমে কিভাবে রাখতে পারে? তারা কি নিজেদের বিভ্রমে রাখতে এতোটাই ভালবাসে? বিষয়টা সত্যিই দুঃখজনক। সত্য দেখেও মেনে না নেবার প্রবণতা কাজ করে নাস্তিকান্ধদের মধ্যে কারণ সত্য মেনে নিলে ইসলামকে সত্য হিসেবে সাক্ষ্য দিতে হবে।

 

ইসলামের সমালোচকরা কুরআনের সত্যতাকে ধামাচাপা দিতে বলে,

 

একটি শহর, আবারও বলছি একটি শহর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং সেই ব্যাপারে কেউই কিছু জানতেন না? এটি কি নিতান্তই একটি হাস্যকর কল্পনা নয়? একটি শহরের ধ্বংস হওয়াটা বিশাল একটি ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ এবিষয়ে কথা বলবে, নিজেদের সন্তানদের এবিষয়ে গল্প শোনাবে। এটি কল্পনা করা খুবই অর্থহীন যে আরবরা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল যে তাদের একটি শহর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল! কুরআনে কোনো ইংগিত প্রদান করা হয়নি যে শহরটি কোথায় অবস্থিত ছিলো, কুরআন এমন কোনো ইংগিত দেয়নি যে শহরটি কোন স্থানের কাছে। কুরআনে কেবল একটি শহরের নাম আসাটা কুরআনকে ঐশ্বরিক প্রমাণ করে না।

 

জন্তু থেকে হাওলাত করা বিবর্তিত মগজে এটা হাস্যকর মনে হতেই পারে কিন্তু চিন্তাশীল মানুষ হলে মোটেও হাস্যকর লাগতো না বরং চিন্তা করতে বাধ্য হবে যে শত শত বছরের এতো প্রাচীন গোত্র বা শহরের নাম কুরআনেই কিভাবে এসে গেলো? তাছাড়া সিরিয়ায় ৪৩ শত বছরের প্রাচীন ইরামের নাম মরুভূমিতে বসে একজন লোক কিভাবে নিশ্চিত করে বলতে পারে? কুরআনের সত্যতাকে যেভাবেই হোক ধামাচাপা দিতেই হবে- এই দায়িত্ব পালনের জন্য কুরআন নিয়ে গভীরভাবে সততার সাথে চিন্তা করার সময়টুকু হয়তো মুক্তমনাদের হয় না, তাই না? নবী মোহাম্মদ (সা) সারা জীবনে ১০০ পৃষ্ঠার কিছু লিখেছেন কিনা অথবা কখনো ইতিহাসের বই ঘেঁটেছিলেন কিনা তার কোনোই প্রমাণ নেই। তাহলে কুরআনে এমন একটি নাম কিভাবে আসতে পারলো যার কথা প্রাচীন ইতিহাসে কোথাও পাওয়া যায় না? আরও যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, নবী মোহাম্মদ (সা) এর আশে পাশে বসবাস করা কোন কোন মানুষ ইরাম ধ্বংসের বিষয় কথা বলেছে সেটার কোনো প্রমাণ নাস্তিকরা দেখায়নি। কেন? ইরাম কোন স্থানের কাছে বা কোথায় অবস্থিত এগুলো কুরআন উল্লেখ করেনি কিন্তু ইরাম নামে কিছুর যে অস্তিত্ব ছিল এটা কুরআন ঠিকই নিশ্চিত করে বলেছে। তাই ইরামের নাম কুরআনে আসাটা নিঃসন্দেহে আশ্চর্যের কথা। অস্বীকার করার উপায় নেই।

 

পাঠক খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করে দেখুন তো নাস্তিকরা যা দাবি করেছে তারা কোনো প্রমাণ পেশ করতে পেরেছি কিনা। তারা কি এমন কোনো ইতিহাস গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছে সেখানে বর্ণিত হয়েছে ইরাম শহরের বিষয় আলোচনা? কোন কোন আরব মানুষ ইরাম শহরের ব্যাপারে সন্তানদের গল্প বলেছিল সেটার প্রমাণ কেন পেশ করা হয়নি? তারা যদি আসলেই জানতো তাহলে কি এর প্রমাণ অবশ্যই থাকতো না? জানলে অবশ্যই প্রাচীন ইতিহাসের পাতায় লিখা থাকতো। এতো বড় শহর মাটির নিচে চাপা হয়ে ছিল-এই খবর প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থে তো থাকার কথা নাস্তিকদের দাবি যদি সঠিক হয়। তাহলে নাস্তিকরা সেই ইতিহাস গ্রন্থের থেকে প্রমাণ দেখিয়ে দিলেই তো হয়। আর কথা থাকে না। এতো বড় শহর ধ্বংস হয়ে গেছে তাহলে কেন ইতিহাস গ্রন্থে এই বিষয় কিছুই লিখা নেই? নাস্তিকরা যদি এমন একটি প্রমাণও দেখাতে পারতো যেখানে ইরাম শহরের আলোচনা করা হয়েছে এবং সেই আলোচনা নবী মোহাম্মদ (সা) নিজে শুনেছেন,যাচাই করছেন এরপরে নিশ্চিত হয়ে কুরআনে লিখে দিয়েছেন তাহলেই মুসলিমদের দাবি ভুল প্রমাণ করা যেত। কিন্তু সত্যকে ধামাচাপা দেয়া নাস্তিকগোষ্ঠী কি পেরেছে নিজেদের দাবির পক্ষে একটি প্রমাণও পেশ করতে?

 

এরপরে ইসলামের সমালোচকরা যে দাবি করে থাকে তা হচ্ছে,

 

সবচেয়ে বড় কথা, কুরআন ‘ইরাম’ শব্দটি কোনো শহরের নাম বুঝাতে উল্লেখ করা হয়নি। কুরআন যেখানে ‘ইরাম’ শব্দটিকে একটি শহর হিসেবেই উল্লেখ করে না, সেখানে মুসলিমদের দাবি কুরআন ‘ইরাম’ শহরের নাম উল্লেখ করে যা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং সেব্যাপারে কেউ কিছু জানতেন না। কি হাস্যকর! কুরআনে একটি গোত্রের নাম হিসেবে ইরাম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, একটি শহরের নাম হিসেবে নয়।

 

মানুষের মতো চিন্তাশীল মগজ থাকলে হয়তো এমন অযৌক্তিক কথা বলতে পারতো না। কুরআনের আয়াতেই যে পরিস্কার করে উঁচু উঁচু দালান বা প্রাসাদের কথা বলা হয়েছে এই কথা গুলো মগজহীন নাস্তিকটি দেখেনি? প্রশ্ন হচ্ছে উঁচু উঁচু স্তম্ভ বা দালান কই থাকে? ইরাম গোত্রের কথা কুরআন বলেছে কিন্তু ইরাম যে একইসাথে শহর হতে পারে না এই কথা তো কুরআন অস্বীকার করেনি বরং কুরআনে তো পরিস্কার বর্ণনা করা হয়েছেই যে ইরাম গোত্রের লোকদের উঁচু উঁচু দালান ছিল, প্রাসাদ ছিল, স্তম্ভ ছিল। তাহলে? সুতরাং বলাই যায় মুক্তমনারা এখানে পরিস্কার সত্যকে লুকানোর চেষ্টা করেছে।

 

ইরামের অস্তিত্ব আছে এটা কুরআন নিশ্চিত ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে চিন্তাশীল মানুষদের জন্য। তাছাড়া কুরআনে নির্দিষ্ট করে ইরামকে শহর যেমন বলা হয়নি তেমনি গোত্রও বলা হয়নি। গোত্রের আরবি শব্দ হচ্ছে قبيلة (ক্কবিলাতুন) যা সুরা ফাজরের ৭ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ নেই। আবার আরবি قوم (কওম) শব্দের অর্থ গোত্র,জাতি,সম্প্রদায় বুঝায়। এই আরবি শব্দটিও উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়নি। বলা যায় ইরামকে গোত্র হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। তবে ইরামকে গোত্র বললেও ভুল হবে না। হ্যাঁ, বিস্তারিত বলছি। অর্থাৎ তারমানে এই না যে ইরামকে শহর বা গোত্র কিছুই বলা যাবে না। ইরামকে গোত্র বলাতে যেমন সমস্যা নেই তেমনি ইরামকে শহর বলাতেও সমস্যা নেই। ইরামকে গোত্র বলা হোক বা শহর যাই বলা হোক না কেন ইরামের অস্তিত্ব নেই এই দাবি করা সম্ভব নয়।

 

চিন্তার বিষয় হচ্ছে, কেউই যেখানে ইরামের অস্তিত্ব টের পায়নি সেখানে কুরআন ইরামের ব্যাপারে কথা বলেছে। ইরামের অস্তিত্বই প্রকাশ পেয়েছে ১৯৭০ এর পরবর্তী সময়ে সেখানে প্রাচীন ইতিহাসে এর কোনো কথা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আবার ধরেই নিলাম ইরাম একটি শহরও। আচ্ছা শহরে কি কেউ বাস করেনা? শহরে উঁচু উঁচু দালান থাকে না? স্তম্ভ থাকে না? তাহলে সেই শহরে যারা বসবাস করে তাদেরকে যদি ইরাম গোত্রের লোক বলা হয় তাহলে কেন এটি ভুল হবে? ইরামকে শহর বলা হলে গোত্র বলা যাবে না কথাটি ঠিক নয়। কারণ গোত্রের নামে শহরের নাম করণ করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেহেতু সেখানে ইরাম গোত্রের লোকেরা ছিল একইসাথে সেখানে উঁচু উঁচু দালান ছিল সেহেতু সেই শহরের নামও “ইরাম” হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়।

 

খুবই সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। মন দিয়ে বুঝে নেবার চেষ্টা করুন পাঠক। ধরুন বলা হলো, ঢাকার খেলার কথা চিন্তা করুন যারা উঁচু উঁচু বাড়ির অধিকারী।- এখানে কেউ যদি বলে,ঢাকা তো শহরের নাম তাই আপনি সেটা উল্লেখ না করে ভুল বললেন।-খেয়াল করুন এই কথা কি ঠিক হলো? অবশ্যই না। কারণ ঢাকার নামে শহর আছে কথাটি ঠিক কিন্তু এরমানে এই না যে ঢাকার নামে কোনো ক্রিকেট টিমের অস্তিত্ব নেই। আবার ঢাকা যে শহর এই কথাটিও কিন্তু অস্বীকার করা হয়নি কারণ বলা হয়েছে উঁচু উঁচু বাড়ির অধিকারী। উঁচু উঁচু বাড়ি কোথায় থাকে? অবশ্যই শহরে। তাই কেউ যদি বলে ঢাকাকে শহর বলা হয়নি দেখে কথা ভুল, এটা মিথ্যা কথা। এই উদাহরণটি সহজে বুঝে থাকলে এটা বুঝতে আর অসুবিধা হবে না যে, ইরাম নামে শহর আছে কথাটি যেমন ঠিক তেমনি সেখানে বসবাস করা গোত্রের নামও ইরাম ছিল কথাটিও তেমনি ঠিক। সুতরাং ইরামকে শহর বা গোত্র যেই নামেই বলা হোক দুটোই সঠিক কিন্তু ইরামের অস্তিত্ব নেই এটা কেউই বলতে পারবে না। 

ইরাম গোত্র বলা হলে ইরাম শহর অস্তিত্বহীন? কিংবা ইরামকে শহর বলা হলে ইরাম জনগোষ্ঠী অস্তিত্বহীন? যাদের ইতিহাস নিয়ে হালকা পড়াশুনো আছে তারা খুব সহজেই বুঝতে পারবে যে শুধুমাত্র জাতি/গোত্র/গোষ্ঠী ইত্যাদি ধরলেও ইরাম গোত্রের বসবাসের জায়গার নাম ইরাম হওয়া অত্যন্ত যৌক্তিক। কোনো স্থানে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস সবচেয়ে বেশি কিংবা একচ্ছত্র হলে সেই স্থান সাধারণত সেই গোষ্ঠীর নামেই হয়। কিছু উদাহরণ পেশ করছি। মন দিয়ে বুঝুন। যেমন, Miami শহরঃ এই শহরের নাম শোনেনি এমন কম মানুষই আছেন। এই শহরের নামও উপজাতি Mayaimi থেকে উদ্ভূত(১)। Osage শহরঃ এই শহরটির নাম Osage জাতি থেকে এসেছে (২)। Seneca শহরঃ এই শহরটির নাম Seneca River এর নাম থেকে করা হয়েছে, আর Seneca River এর নাম Seneca জনগোষ্ঠী থেকে করা হয়েছে (৩)। Alabama: এই রাজ্যের নাম অবশ্যই শুনে থাকবেন, ডিসকোভারি চ্যানেল খুললে প্রায়ই শোনা যায়। এই রাজ্যের নামও Alabama/Alabamas/Alibamons জনগোষ্ঠী থেকে এসেছে (৪)। ইত্যাদি ইত্যাদি। 

সুতরাং গোত্রের নামে শহরের নাম হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই বলা চলে ইরাম গোত্র যেখানে থাকবে, বসবাস করবে, সেখানের অধিকাংশই তারা হবে, অথবা একচ্ছত্র। তাই সেই স্থানের নাম অন্যকিছু বলা না থাকলে ইরাম হওয়াই অধিক যুক্তিপূর্ণ।

ইসলাম বিদ্বেষীরা এরপরে বলে থাকে,

সে সময়ের মানুষের কাছে ইরাম গোত্র বা শহরের কথা প্রচলিত ছিল না তা তার প্রমাণ কি? তারা ইরাম গোত্র বা শহরের কথা জানতো না সেটার প্রমাণ কি?

খুবই সহজ উত্তর। ইরাম যদি আরবে তখনকার মানুষদের কাছে পরিচিত কোনো ঘটনা হত তবে এর কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ অবশ্যই থাকতো কিন্তু নবী মুহাম্মদ(স) ছাড়া এর কথা তবে অন্য কেউ বা আসে পাশের দেশের লোকেদের কাছে কেন ছিলো না? ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রাচীন একটি বই থেকে এটা দেখিয়ে দিলেই তো হয় যে ইরাম বিষয় প্রাচীন বইতে আলোচনা ছিল এবং সেই বই নবী মোহাম্মদ (সা) নিজে পড়েছিল এবং যে দেখেছে নবী মোহাম্মদ (সা)কে সেই বইটি পড়তে তার দেখার ঘটনা বিশুদ্ধ? তাহলেই কিন্তু মুসলিমদের দাবিকে খণ্ডন করা যায়। কিন্তু নাস্তিকরা কি নিজেদের পক্ষে প্রমাণ পেশ করতে পরেছে? কোনো নাস্তিক যদি আমাকে প্রাচীনকালের কোনো বই পত্র থেকে ইরাম গোত্র বা শহর যাই হোক এই বিষয় আলোচনা দেখাতে পারে একইসাথে সেই বই নবী মোহাম্মদ (সা) নিজে পড়েছিলেন মর্মে বিশুদ্ধ সাক্ষ্য প্রমাণ দেখাতে পারে আমি এমডি আলী নিজে আমার আজকের এই বিষয়ে লেখাটি মুছে দিব। এবং আমি কখনো দাবি করবো না “ইরামের অস্তিত্ব আছে” এটা কুরআনের মোজেজা।

উপসংহারঃ  কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া শেষ কিতাব। নবী মোহাম্মদ (সা) সত্য ও শেষ নবী। ইসলামই একমাত্র সত্য জীবন বিধান। কুরআনের অকাট্য মোজেজা গুলো আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে সত্যের পথ দেখিয়ে দেয়। গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করলে ইসলামের সত্যতা অনুধাবন করা তেমন কঠিন কিছু নয়। আপনারা সততার সাথে চিন্তা করতে শিখুন সেটাই আমার কাম্য।

রেফারেন্সমালাঃ

[১] https://en.wikipedia.org/wiki/Miami

[২] https://en.m.wikipedia.org/wiki/Osage_City,_Kansas

[৩] https://en.m.wikipedia.org/wiki/Seneca,_South_Carolina

[৪]https://web.archive.org/web/20220329215827/https://www.bia.gov/as-ia/opa/online-press-release/origin-names-us-states

 

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post