প্রশ্নঃ ইসলাম মতে, স্বামী স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারলে কিয়ামতের দিন তার বিচার হবে না ,এটি তো অন্যায় ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী ।
উত্তরঃ আসুন প্রথমে হাদিসটি জেনে নেইঃ
* ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৭ , দুর্বল হাদিসঃ উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে (শালীন শিক্ষার উদ্দেশে) আঘাত করলে এজন্য সে দোষী হবে না। (কোন কোন অনুবাদে আছে কিয়ামতের দিন সে জিজ্ঞাসিত হবে না )
আমরা খগেনদের এই প্রশ্ন দেখে খুশি হয়েছি কারন তারা একটি দুর্বল হাদিস দিয়ে আপত্তি করার চেষ্টা করে কারন সহিহ হাদিস দিয়ে তো আর মিথ্যাচার তারা করতে পারে না আর করলেও ধরা খায় । আচ্ছা বাদ দিলাম সেই আলাপ । যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম হাদিসটি সহিহ । এখন আপনি আমাকে বলেন তো হাদিসে কি অন্যায়ভাবে স্ত্রীকে মারার কারনে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিচার করবে না অথবা স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারার কথা কি বলা হয়েছে ? বরং হাদিসে কিন্তু পরিস্কার করেই বলছে যে শালীন শিক্ষার উদ্দেশ্যে কেউ যদি তার স্ত্রীকে প্রহার করে এতে সে দোষী হবে না।
ধরুন আপনার স্ত্রী মদ খায়, গাঞ্জা খায় , পরকীয়া করে , শুধু তাই নয় ইয়াবা সেবন করে এখন আপনি এটি জানতে পারলেন আপনি একজন সভ্য এবং ভদ্র স্বামী হিসেবে আপনার স্ত্রীকে হাজার বুঝানোর পরেও সে তার অপরাধে অটল থাকল এখন আপনি তাকে অপরাধ থেকে তার জীবন ধ্বংস হচ্ছে এর থেকে রক্ষা করার জন্য যদি তাকে প্রহার করেন তাহলে এটি কেন অন্যায় হবে ? আর এই অধিকার ইসলাম স্বামীকে দিয়েছে এবং এটি মোটেও অন্যায় না । এই শর্তে যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে শাসন করে তাহলে এর জন্য সে দোষী অথবা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার বিচার করবেন না ।
নষ্টাকিজম ধর্মে ভিটামিন যুক্ত মদ খাওয়া! , স্বাস্থ্যকর পরকীয়া করা! , সুষম গাঞ্জা সেবন করা! , পুষ্টিকর বিড়ি খাওয়া এসব কোন অন্যায় কাজ নয় বরং খগেনিজমে এসব হালাল আর ইসলামে এসব সম্পূর্ণ নিষেধ । নষ্টাকিজম ধর্মে বিশ্বাস করা হয় কোন নারী যদি অপরাধ করে তাহলে সেটি তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা আর এখানে তার স্বামী তাকে বাধা দিতে পারবে না যদিও বিবাহ নীতি নাস্তিক ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না , তাই তাকে শাসন করার অধিকার স্বামীর নেই । ইসলাম কেন এর বিপরীত আইন দিল এখানেই তাদের যত চুলকানি এর জন্যই তারা ইসলামের এই সভ্য এবং সুন্দর আইনকে ভুল দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখানর চেষ্টা করে সরলমনা আমার মুসলিম ভাইদের ধোঁকা দেয় । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।
সুতরাং অন্যায়ভাবে কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে প্রহার করে তাহলে তার অবশ্যই গুনাহ হবে এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কঠিন শাস্তি দিবেন । কারন আল্লাহ মানুষের সাথে ন্যায় বিচার করতে বলেছেন আর আল্লাহ স্বয়ং ন্যায় বিচারকারী ।
নিজ স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে প্রহার করা ইসলামে হারামঃ
* সুরা নিসা ৪:৩৬ = পিতামাতা, আত্মীয় স্বজন এতিম, অভাব গ্রস্থ, কাছের প্রতিবেশি, দুরের প্রতিবেশি, সঙ্গী-সাথী,মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি উত্তম ভাল ব্যাবহার করবে । নিশ্চয় আল্লাহ্অহংকারীদের পছন্দ করেন না ।
* সুরা নিসা ৪:১৩৫ = হে ইমানদারগণ,তোমরা ইনসাফের উপর অটল থাকো এবং খুশিমনে আল্লাহ্র জন্য সাক্ষী দেও যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা ও নিকট আত্মীয়দের বিপক্ষে হয়।
* সুরা নিসা ৪:৫৮ = নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের প্রাপকদের কাছে পৌছে দিতে ।তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায়-পরায়নতার সাথে বিচার করবে ।
* ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৬ , সহিহ হাদিসঃ ইয়াস ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ যুবাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্-র দাসীদেরকে মারবে না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বললেন, মহিলারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হচ্ছে। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে মৃদু আঘাত করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর অনেক মহিলা এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীদের কাছে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। সুতরাং যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।
* ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৪৫ , হাসান হাদিসঃনবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমরা স্ত্রীদের অবাধ্য হওয়ার আশংকা করো, তাহলে তাদেরকে তোমাদের বিছানা থেকে পৃথক করে দাও। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ তাদের সাথে সহবাস বর্জন করো।
* ihadis.com, শামায়েলে তিরমিজি, হাদিসঃ ২৬৬, সহিহ হাদিসঃ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি।
* সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৪৪, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেন তোমরা যা খাবে স্ত্রীদেরকেও তাই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে , তাদেরকেও তা পরিধান করাবে । তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৫৯ এবং ৬০৩৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন নবী (সা) স্বভাবগত ভাবে অশালীন কথা বলতেন না,ইচ্ছা করে তিনি অশালীন কথা বলতেন না,অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না । তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব চরিত্র উত্তম সেই তোমাদের মধ্যে সর্বউত্তম।
কিছু দাবিঃ কিছু প্রশ্নঃ
১/ ইসলাম কখনো স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে মারার কথা বলে না ।
২/ ইসলাম কখনো কোন নারীকে নির্যাতনের কোথাও বলে না ।
৩/ নবী মুহাম্মদ (সা) নিজেও তাঁর কোন স্ত্রীকে নির্যাতন করেন নি ।
৪/ ইসলাম যেখানে অন্যায়ভাবে স্ত্রীকে প্রহার করা নিষেধ করেছে সেখানে প্রশ্নকর্তা কোন সততায় প্রশ্ন করলেন যে "ইসলাম মতে অন্যায়ভাবে স্ত্রীদের প্রহার করা জায়েজ ?"
৫/ নবী মুহাম্মদ (সা) কি কোন হাদিসে বলেছেন তোমরা অন্যায়ভাবে স্ত্রীদের মারধর করো,নির্যাতন করো ?
৬/ স্ত্রী অবাধ্য হলে তার সাথে সহবাস বর্জন করার কথা ইসলাম প্রথমে বলেছেন যদি নির্যাতন করাই ইসলামের উদ্দেশ্য হবে তাহলে কেন প্রথমে সহবাস নিষেধ করার আইন করা হল ?
৭/ ইসলাম যদি স্ত্রীদের নির্যাতনের পক্ষেই হয় তাহলে নবী মুহাম্মদ (সা) কেন বললেন যে "যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।" ?
৮/ যদি একজন স্বামী অন্যায়ভাবে তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে তাহলে আল্লাহ বলেছেন তোমরা সবার সাথে সুন্দর ব্যাবহার কর এবং ন্যায় বিচার করো তাহলে উক্ত স্বামী এই আয়াত অমান্য বা অস্বীকার করে মুসলিমই বা থাকে কি করে ?
৯/ কুরআনের কোন আয়াতে আছে যে "স্বামী তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতে পারবে" ?
১০/ একজন স্ত্রী যদি মদ গাজা হিরয়িন ইয়াবা এবং বিভিন্ন অপরাধ করে নিজের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে থাকে এবং একজন আদর্শ স্বামী যদি তার জীবন রক্ষার করার জন্য তাকে শাসন করে অথবা ধরে নেন কসায়ে দুটি থাপ্পরই মারলো, তারপরেও এটি কি অন্যায় হবে ?
১১/ যেখানে হাদিসে স্পষ্ট স্ত্রীকে প্রহার করতে , গালি দিতে নিষেধ করছে ইসলাম তাহলে ইসলাম কিভাবে মানে যে একজন ভাল স্বামী তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতে পারবে ?
১২/ নবীজি (সা) প্রায়ই বলতেন "যেই উত্তম যার স্বভাব সুন্দর" তাহলে নারী নির্যাতন ইসলাম কিভাবে সমর্থন করে আমাকে বুঝান খগেন মশাই?
১৩/ ধরুন আপনি একজন ভাল নাস্তিক , আপনি বিশ্বাস করেন মদ খাওয়া, বিড়ি খাওয়া , নেশা করা , পরকীয়া করা , পতিতার চাকরি করা এসব ভাল কাজ না । এখন আপনার নাস্তিক স্ত্রী এসব নোংরা কাজে জড়িত আপনি একদিন বুঝতে পারলেন । আপনি আপনার খগেন স্ত্রীকে বুঝানোর পরেও সে বলছে এসব তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা তুমি বাধা দেয়ার কে ? আপনি তাকে ডিভোর্স দিতে চাইলেন কিন্তু সে আপনাকে ডিভোর্স দিবে না আর এটিও তারই স্বাধীনতার অংশ । এই ক্ষেত্রে নাস্তিক ধর্মে সমাধান কি ?
১৪/ নাস্তিক ধর্মে "ভাল-খারাপ" নির্ণয়ের মূলনীতি সমূহ কি কি ?
১৫/ নাস্তিক ধর্মে "আদর্শ পরিবার" তৈরি করার মূলনীতি সমূহ কি কি ?
১৬/ আপনি যেইই মূলনীতি পেশ করেন না কেন, অন্যান্য মুক্তমনারা আপনার এই মূলনীতি মানতে বাধ্য কেন ?
১৭/ ধরে নিন একজন উগ্র নাস্তিক তার সেক্স পাটনারকে নির্যাতন করল এখন সেই নির্যাতিত নাস্তিক নারী বলছে তুমি আমাকে এভাবে প্রহার করো না , তখন যদি ঐ উগ্র নাস্তিক ধর্মের অনুসারী এটি আমার ব্যাক্তি স্বাধীনতা বলে দাবী করে তাহলে আপনি এখানে কি বলবেন ? আর আপনি যেই আইনই দেন না কেন সে যদি বলে আমি ইসলামের আইনই মানি না আবার তোমার মত খগেনদের আইন মানব কেন ? এই মুনাফিক মার্কা খগেনদের বিষয় নাস্তিক ধর্মের ফতোয়া কি ?