আল্লাহ অভাবগ্রস্থ না হলে ঋণ কেন চাইলেন ?



প্রশ্নঃ আল্লাহ অভাবগ্রস্থ না হলে ঋণ কেন চাইলেন ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
উত্তরঃ কুরআনের আয়াত
সুরা বাক্বারাহ ২:২৪৫ ,সুরা হাদীদ ৫৭:১১ ,সুরা তাগাবুন ৬৪:১৭, সুরা মুযাম্মিল ৭৩:২০ = কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে, এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।
আমার চিন্তাশীল পাঠকগণ আপনারা আয়াতটি খেয়াল করুন আর দেখুন তো আয়াতে কোথায় বলা হয়েছে যে আল্লাহ অভাব গ্রস্ত ? এরকম কিছুই বলা হয়নি বরং সকল মুসলিমরাই জানেন যে আল্লাহ হলেন শ্রেষ্ঠ তিনি অভাবমুক্ত তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন আর আল্লাহকে ঋণ দেয়া বলতে আসলে বুঝানো হয়েছে আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান করো এতে আল্লাহ সেই দান বহু গুনে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং আমাদেরকে আখিরাতে সম্মানিত পুরষ্কার দিবেন ব্যাস এতটুকুই অথচ চিন্তা করুন নাস্তিক ধর্মান্ধরা কিভাবে ভুল ব্যাখ্যা করে !

আল্লাহ অভাবগ্রস্থ ননঃ
সুরা ইমরান ৩:৯৭ = আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।
মায়েদাহ ৫:১২০= তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান বা ক্ষমতাবান ।
সুরা ফাতির ৩৫:১৫ = হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী । আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:৩৮ = শুন, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ।
সুরা মুলক ৬৭:১ = পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
সুরা ইখলাস ১১২:২ = আল্লাহ অমুখাপেক্ষী ।

আল্লাহকে ঋণ দেয়ার অর্থঃ
সুরা বাকারা ২:২৪৫ এর ব্যাখ্যা তাফসীরে ফাতহুল মাজীদে বলা হয়েছেঃ আল্লাহ তা"লাকে করযে হাসানা দেওয়ার অর্থ হল আল্লাহর পথে খরচ করা এবং আল্লাহকে সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অসহায় মানুষদের করযে হাসানা বা সাহায্য সহযোগিতা দেয়া ।
ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১৭ খণ্ড, ৩০৬ পৃষ্ঠায় সুরা হাদিদ ৫৭:১১ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ আল্লাহ নিজের উপর এবং নিজের রাসুল (সা) এর উপর ইমান আনয়ন ও ওর উপর দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকার হিদায়াত করছেন এবং তাঁর পথে খরচ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন।
তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ২০ খণ্ড , ২৫২ পৃষ্ঠায় সুরা তাগাবুন ৬৪:১৭ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ আল্লাহ কত মহৎ, কত উদার ! তিনিই বান্দাদের সৃষ্টি করেন , জীবিকা দেন, অতপর যা তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত তা দান করতে বলেন, দান করলে তাকে ঋণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, তার প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করেন , অতপর তার জন্য শোকরও করেন ।
তাফসীরে ওসমানী , ৭ খণ্ড , ১৮৩ পৃষ্ঠায় সুরা তাগাবুন ৬৪:১৭ ব্যাখ্যা বলা হয়েছে "আল্লাহকে ঋণ দেয়া" মানে নিষ্ঠা - আন্তরিকতা আর ভাল নিয়তে আল্লাহর রাস্তায় পাক পবিত্র সম্পদ ব্যয় করলে তিনি তার চেয়ে বেশি দান করবেন এবং তোমাদের দুর্বলতা ক্ষমা করে দিবেন ।
তাফসীরে আহসানুল বয়ানে, সুরা মুযাম্মিল ৭৩:২০ এর ব্যাখ্যা বলা হয়েছেঃ আল্লাহর রাস্তায় প্রয়োজন ও সাধ্যমত ব্যয় করো । এটাকে করযে হাসানা উত্তম ঋণ নামে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে , মহান আল্লাহ এর পরিবর্তে সাতশ গুন বরং তার থেকেও বেশি সওয়াব দান করবেন ।

আরও মজার বিষয় হল সুরা হাদিদ ৫৭:১০ নং আয়াতেই পরিস্কার করা হয়েছে যে তোমাদের কি হয়েছে যে আল্লাহর পথে ব্যয় করো না ! আসমান ও জমিনের উত্তরাধিকার তো আল্লাহরই এরপরে বিসস্তারিত আলোচনার শেষে পরের আয়তেই আল্লাহ বলেছেন যেমন সুরা হাদিস ৫৭:১১ = কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে, এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার। সুতরাং স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে এখানে আল্লাহকে ঋণ দেয়া বলতে আল্লাহর রাস্তায় দান করাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে ।

কৃপনতা না করে নিজ সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায় দান করাঃ
সুরা মুজাম্মিল ৭৩:২০ = তোমরা তোমাদের জন্য অগ্রিম যা প্রেরণ করবে, তার বিনিময় আল্লাহর নিকট পুরোপুরি পাবে। আর সেটাই শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম পুরস্কার। তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ ।
বাক্বারাহ ২:১৯৫ = তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ ।
বাক্বারাহ ২:২৬১ = যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের ন্যায়। যা থেকে সাতটি শিষ জন্মে। প্রত্যেকটি শিষে একশ’টি দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণ বর্ধিত করে দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ প্রশস্ত দাতা ও সর্বজ্ঞ’ ।
সুরা আলে ইমরান ৩:১৮১ = ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলে আল্লাহ ফকীর ও আমরা ধনী। তারা যা বলে এবং তারা যে অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করেছিল, সবই আমরা লিখে রাখব এবং তাদেরকে (ক্বিয়ামতের দিন) বলব, দহনজ্বালাকর শাস্তির স্বাদ আস্বাদন কর’।
সুরা আলে ইমরান ৩:৯২ = ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত থেকে দান করবে। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, আল্লাহ তা সবই জানেন’।

উপরের আলোচনায় আমরা যা শিখতে পারলামঃ
১/ হালাল সম্পদ উপার্জন করতে হবে ।
২/ নিজের সম্পদ থেকে দান করতে হবে ।
৩/ কৃপণা করা যাবে না ।
৪/ আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার মানে আল্লাহর রাস্তায় দান করা ।
৫/ কুরান হাদিস নিয়ে নাস্তিক ধর্মের অন্ধ বিশ্বাসীরা জালিয়াতি করে ।

আমাদের প্রশ্নঃ
১/ উপরের কুরআনের আয়াত দ্বারা আল্লাহকে অভাবগ্রস্থ বুঝানো হয়েছে এই মর্মে একটি বিশুদ্ধ হাদিস দেখান, পারবেন ?
২/ আল্লাহ আমাদেরকে সম্পদ দান করতে বলেছেন এটি ভাল নাকি খারাপ ?
৩/ কৃপণতা করা যাবে না এটি ইসলামের শিক্ষা , এটি কি অন্যায় ?
৪/ নাস্তিকরা কুরআন হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দেয় কেন ?
৫/ নবীজি (সা) অথবা সাহাবীরা কি কখনো বলেছেন যে আল্লাহ অভাব গ্রস্থ ?
এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post