প্রশ্নঃ যারা ইসলামের দাওয়াত কখনোই পায়নি তাদের ফলাফল কি হবে আখিরাতে ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
উত্তরঃ প্রশ্নটি অনলাইনের সস্তা খগেনদের করতে দেখা যায় যারা বলে আল্লাহ বলে কিছুই নেই আবার তারাই মায়াকান্না করে জিজ্ঞাসা করছে ইসলামের দাওয়াত কখনোই যারা পায়নি তাদের ফলাফল কি হতে পারে ? হাস্যকর ফ্লপ সিনেমা । নিজে আল্লাহকে মানে না , সারাদিন অনলাইনে মুসলিমদের গালাগালি করে অনলাইনে আবার অন্য কোন মানুষ ইসলামের দাওয়াত না পেলে সেই লোকের কি পরিনতি হবে এই কষ্টে খগেনদের ঘুম আসে না ! জাহান্নামকে অস্বীকার করে তাহলে জাহান্নামের আজাব নিয়ে এত কষ্ট কেন ? এদের প্রশ্নের কষ্ট দেখে আমার হাসিরও হাঁসি পায় !
আধুনিক বিজ্ঞান বর্তমান বলে দিচ্ছে যে স্রষ্টার অস্তিত্ব সহজাত অথবা স্বাভাবিক একটি বিষয় । অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলোপম্যানটাল সাইন্টিস্ট ডঃ জাস্টইন এল বারেট শিশুদের উপর গবেষণা করেন । এ ব্যাপারে বেশ কিছু বইও লিখেছেন তিনি । বই গুলোর মাঝে একটি হল “বর্ণ বিলিভারস” যেখানে তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ শিশুরা জন্মগত ভাবেই স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, যাকে আমরা বলি সহজাত ধর্ম।
রেফারেন্সঃ Dr.justine L. barrett, Born Belivers: The Science of Childrens Religious Belief: page 136 (Simon and Schuster,mar 20,2012)
রেফারেন্সঃ Dr.justine L. barrett, Born Belivers: The Science of Childrens Religious Belief: page 136 (Simon and Schuster,mar 20,2012)
স্বাভাবিক ভাবে সকল মানুষরাই স্বীকার করে যে স্রষ্টা আছেন (যাদের পূর্বপুরুষ বান্দর তারা ছাড়া) তাই বুদ্ধিমান মানুষের উচিৎ স্রষ্টার কাছেই দোয়া করা অথবা আবেদন করা যে তিনি যেন আমাদেরকে সঠিক রাস্তা দেখান । তাহলে আশা করা যায় সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সঠিক রাস্তা দেখাবেন ।
ইসলামিক দৃষ্টিতে কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, সুরা ইনসান ৭৬:৩ = অবশ্যই আমি তাকে পথ দেখিয়েছি এখন হয় সে কৃতজ্ঞ অথবা অকৃতজ্ঞ । আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যেমনঃ সুরা বাকারা ২:১৮৬ = আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।
যারা এমন অঞ্চলে বসবাস করে যে তাদের কাছে কেউই ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যায়নি এমন মানুষ যদি স্রস্টাকে স্বীকার করে তাহলে তার উচিৎ স্রষ্টার কাছে আবেদন করা বা দোয়া করা । মানুষের দায়িত্ব ধৈর্য ধরে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকা আল্লাহর দায়িত্ব দোয়া কবুল করা ব্যাস । কারন সুরা বাকারা ২:২৮৬ = আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের চাপিয়ে দেন না ।
যাই হক এখন আমরা প্রশ্নের মূল উত্তরে আসি চলুন ।
যাই হক এখন আমরা প্রশ্নের মূল উত্তরে আসি চলুন ।
* সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:১৫ = যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।
তাফহীমুল কুরআন , ১২৩ পৃষ্ঠায় , সুরা বনী ইসরাইল ১৭:১৫ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে একজন বুদ্ধিমান মানুষের চিন্তা করা উচিৎ , তার নিজের কাছে তো ইলামের দাওয়াত পৌঁছে গেছে এখন তার অবস্থা কি হবে ? আর অন্যের ব্যাপারে বলা যায় , কার কাছে কিভাবে এবং কি পরিমান আল্লাহর পয়গাম পৌঁছেছে এবং সে তার সাথে কি আচরণ করেছে এবং কেন করেছে তা আল্লাহই ভাল জানেন । আলেমুল গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউই বলতে পারেন না যে কার ওপর আল্লাহর প্রমান পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং কার উপর হয়নি ।
* ইমাম বায়হাকীর "কিতাবুল ইতিকাদ" গ্রন্থে হযরত আসওয়াদ বিন সারী থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ সূত্রে সম্বলিত হাদিসে বলা হয়েছে নবীজি মুহাম্মদ (সা) বলেছেন কিয়ামতের দিন চার প্রকারের লোক আল্লাহর সাথে কথা বলবে । প্রথম হল বধির লোক যে কিছুই শুনতে পায় না , দ্বিতীয় হল নির্বোধ ও পাগল লোক, যে কিছুই জানে না । তৃতীয় হল অত্যন্ত বৃদ্ধলোক যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে । চতুর্থ হল এমন লোক যে ইসলামের দাওয়াত কখনোই পায়নি । বধির লোকটি বলবে ইসলাম এসেছিল কিন্তু আমার কাছে কোন শব্দ পৌছায় নাই , পাগল লোকটি বলবে ইসলাম এসেছিল বটে কিন্তু আমার অবস্থা এমন ছিল যে শিশুরা আমার উপর গোবর নিক্ষেপ করতো , বৃদ্ধ লোকটি বলবে ইসলাম এসেছিল কিন্তু আমার জ্ঞান সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছিল , আর আমি কিছুই বুঝতাম না । আর যেই লোকটির কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছায়নি তথা তার কাছে কোন রাসুল আসেনি এবং এই বিষয় কোন শিক্ষাও সে পায়নি, এই লোক বলবে আমার কাছে কোন রাসুল আসেনি আর আমি কোন হকও পায়নি তো আমি আমল করতাম কিভাবে ? এরপরে আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য বলবেন আচ্ছা ঠিক আছে । এখন আমি সরাসরি হুকুম দিচ্ছি তোমরা জাহান্নামে যাও । তারা জাহান্নামের দিকে যেতে থাকবে কিন্তু কাছে গিয়েই জাহান্নাম দেখে ভয় পেয়ে ফিরে আসবে । নবীজি মুহাম্মদ (সা) বলেন আল্লাহর কসম ! তারা যদি আল্লাহর আদেশ মেনে নিয়ে জাহান্নামে লাফ দিত তাহলে জাহান্নামের আগুন তাদের জন্য ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক হয়ে যেত । আর যারা লাফ দিতে অস্বীকার করেছিল তাদেরকে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে ।
এই বিশুদ্ধ হাদিসটি আরও বর্ণনা করা হয়েছেঃ
* ইমাম আহমদ (রহ) এর বিখ্যাত গ্রন্ত "মুসনাদে আহমদ" ।
* তাফসীরে আহসানুল বয়ান , ৪৯২ পৃষ্ঠায়, লিখেছেনঃ মাওলানা সালাহুদ্দিন ইউসুফ ।
* ইমাম বায়হাকী (রহ) এর বিখ্যাত গ্রন্ত "কিতাবুল ইতিকাদ" ।
* তাফসীরে মাযহারী , ৭ খণ্ড , ৫৮ পৃষ্ঠায় । লিখেছেনঃ কাযি ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) ।
* তাফসীরে ইবনে কাসীর , ১৩ খণ্ড , ৩২৭ পৃষ্ঠায় , ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত ।
* তাফসীরে আহসানুল বয়ান , ৪৯২ পৃষ্ঠায়, লিখেছেনঃ মাওলানা সালাহুদ্দিন ইউসুফ ।
* ইমাম বায়হাকী (রহ) এর বিখ্যাত গ্রন্ত "কিতাবুল ইতিকাদ" ।
* তাফসীরে মাযহারী , ৭ খণ্ড , ৫৮ পৃষ্ঠায় । লিখেছেনঃ কাযি ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) ।
* তাফসীরে ইবনে কাসীর , ১৩ খণ্ড , ৩২৭ পৃষ্ঠায় , ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত ।
=মহান আল্লাহ কারো প্রতি বিন্তুমাত্র অবিচার করবেন না কিয়ামতের দিন=
* সুরা ইউনুস ১০:৪৪ = আল্লাহ অবিচার করেন না মানুষের উপর, বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর অবিচার করে।
* সুরা হা-মীম সিজদা ৪১:৪৬ = যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না।
* সুরা আহক্বাফ ৪৬:১৯ = প্রত্যেকের জন্যে তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর রয়েছে, যাতে আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেন। বস্তুতঃ তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।
* সুরা নাজম ৫৩:৩৯,৪০ = মানুষ শুধু তাই পায় যা সে অর্জন করে এবং তার কর্ম শীঘ্রই তাকে দেখানো হবে।
* সুরা যিলযাল ৯৯:৭,৮ = কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে ।
পরিশেষে উপরের বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান হতে আমরা জানতে পারলাম যেঃ
১/ প্রত্যেক বুদ্ধিমান মানুষের উচিৎ স্রষ্টার কাছে সত্য পথের সন্ধানের জন্য দোয়া বা আবেদন করা।
২/ কেউই যদি বাইচান্স ইসলামের দাওয়াত কখনোই না পায় তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন আলাদা সিস্টেমে পরীক্ষা নেয়া হবে ।
৩/ কিয়ামতের সেই ভিন্ন সিস্টেমের পরীক্ষা পাশ করলে জান্নাত, ফেইল করলে জাহান্নাম ।
৪/ কোন মানুষ যদি স্রষ্টাকে স্বীকার করে কিন্তু ইসলাম বিষয়ে জানে না তাহলে তার জন্য উচিৎ হবে সৃষ্টিকর্তার কাছে সত্য পথ পাওয়ার জন্য আবেদন বা দোয়া করা।
৫/ আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন অবিচার করেন না । আল্লাহ ন্যায় বিচারক ।
৬/ কুরআন হাদিসে কোথায় বলা আছে যারা ইসলামের দাওয়াত কখনোই পায়নি তাদের প্রতি অবিচার করবে আল্লাহ ?
৭/ কুরআন হাদিসে কোথায় বলা আছে যে আল্লাহর কাছে সত্য পথ পাওয়ার জন্য দুয়া করা যাবে না ?
৮/ কোন মানুষ স্রস্টাকে স্বীকার করলে সে কেন সত্য পথের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে না?
৯/ বুদ্ধিমান মানুষের জন্য কি উচিৎ যে ইসলামের সত্য দাওয়াত পাওয়ার পরেও তা অস্বীকার করে আখিরাতে ভয়ংকর বিপদের মুখে যাওয়ার?
১০/ সুতরাং কে ইসলামের দাওয়াত পেল কি পেল না সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানর দরকার নেই, এটা আল্লাহ এবং তার ঐ বান্দাদের ব্যাপার বরং আমরা যারা ইসলামের দাওয়াত পেয়েছি আমাদের ফলাফল কি হবে সেটাই চিন্তা করার বিষয় ।