🤲 দোয়া কবুলের সময়
✍ এম ডি আলী।
আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়। হতাশা দূর হয়। বিপদে ধৈর্য ধরা যায়। ইত্যাদি অনেক বাস্তবিক উপকার রয়েছে। যারা সব বিষয় দোয়া করেন তারা ভাল করেই জানেন দোয়া করে কাজ করলে সেই কাজে আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করে।
দোয়া কখন দ্রুত কবুল হয় এবং কিভাবে করতে হবে সেই বিষয় আজকে লিখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
👉 দোয়া করার প্রতি উৎসাহঃ
* সূরা বাকারার ২ঃ১৮৬ = আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমার বান্দা যখন আপনার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে; আমি তো কাছেই আছি। আমি দোয়া কবুল করি, যখন সে আমার কাছে দোয়া করে।’
* সুরা আরাফ ৭ঃ৫৫,৫৬ = তোমরা মিনতিভরে ও সংগোপনে তোমাদের প্রভুকে ডাক। তিনি তো সীমালংঘন-কারীদের ভালবাসেন না। শান্তি প্রতিষ্ঠার পর তোমরা দুনিয়ায় (আবার) অশান্তি সৃষ্টি করো না এবং ভয় ও প্রত্যাশা নিয়ে তাঁকে (আল্লাহকে) ডাক। নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের কাছাকাছি আছে।
* সুরা মু'মিন ৪০ঃ৬০ = তোমার প্রভু বলেছেন, “তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিরত থাকে তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”
* আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু’আর চেয়ে কোন জিনিস বেশি সম্মানিত নয়। ( ihadis.com,জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৭০,হাসান হাদিস)
* আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে লোক চায় না, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নাখোশ হন।( ihadis.com, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিসঃ ৩৩৭৩, হাসান হাদিস)
* আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক বিপদাপদ ও সংকটের সময় আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ লাভ করতে চায় সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দের সময় বেশি পরিমাণে দু‘আ করে। ( ihadis.com, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিসঃ ৩৩৮২,হাসান হাদিস)
👉 অনেকে দোয়া করে সাথে সাথেই ফল পেতে চায় তাদের জন্য এই হাদিসঃ
* উবাদাহ ইবনে স্বামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ধরার বুকে যে মুসলিম ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে দুআ করে (তা ব্যর্থ যায় না); হয় আল্লাহ তা তাকে দেন অথবা অনুরূপ কোন মন্দ তার উপর থেকে অপসারণ করেন; যতক্ষণ পর্যন্ত সে (দুআকারী) গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দুআ না করবে।” একটি লোক বলল, ‘তাহলে তো আমরা অধিক মাত্রায় দুআ করব।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ সর্বাধিক অনুগ্রহশীল”।( ihadis.com রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৫০৯, সহিহ হাদিস / জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ৩৫৭৩, হাসান সহিহ)
* আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির দু‘আই ক্ববূল হয়ে থাকে, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে বলতে থাকে, দু‘আ তো করলাম অথচ আমার দু‘আ ক্ববূল হয়নি। ( ihadis.com, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিসঃ ৩৩৮৭, সহিহ হাদিস)
* আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দু'আ করলে দু'আর সময় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দু'আ করবে এবং এ কথা বলবে না হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে কিছু দিন। কারণ আল্লাহ্কে বাধ্য করার কেউ নেই।( ihadis.com, সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬৩৩৮, সহিহ হাদিস)
👉 দোয়া দ্রুত কবুল হবে যখনঃ
* আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “বান্দা সিজদার অবস্থায় স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা অধিক মাত্রায় (ঐ অবস্থায়) দুআ কর।” ( ihadis.com, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৫০৬, সহিহ হাদিস)
* আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবীজি (সা) বলেনঃ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ আমার নিকট দু'আ করবে কে? আমি তার দু'আ কবুল করবো। আমার নিকট কে চাবে? আমি তাকে দান করবো। আমার কাছে কে তার গুনাহ ক্ষমা চাবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। ( ihadis.com, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৩২১, সহিহ হাদিস)
* আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ( ihadis.com,জামে' আত-তিরমিজি, হাদিসঃ ৩৫৯৫, সহিহ হাদিস)
* কাসিম (রাঃ) হতে বর্ণিত নবীজি (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ্র ইসমে আযম, যার উল্লেখ করে দুআ’ করলে তা কবুল হয়, তা তিনটি সূরায় রয়েছেঃ সূরা বাকারা, সূরা আল ইমরান ও সূরা তাহা। ( ihadis.com,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৮৫৬, হাসান হাদিস)
* রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, কোন মুসলিম তার ভাইয়ের অবর্তমানে তার জন্য নেক দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য নেক দুআ করে, তখনই ফেরেশতা বলেন, ‘আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ।( ihadis.com, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৫০৩, সহিহ হাদিস)
* উমার (রাঃ) ও আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ‘প্রত্যেক দুআ ততক্ষণ পর্যন্ত আসমান ও যমীনের মাঝে লটকে থাকে, (আকাশে ওঠে না বা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না) যতক্ষণ না নবীর উপর দরূদ পাঠ করা হয়।’ ( ihadis.com, হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১৭০৩, সহিহ হাদিস)
* আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (ihadis.com সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৯৩৫, সহিহ হাদিস)
* আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কোন সময়ের দু’আ বেশী (শোনা) গ্রহণযোগ্য হয়? তিনি বললেন, শেষ রাতের মাঝ ভাগের এবং ফরয নামায গুলোর পরবর্তী দু’আ। (ihadis.com জামে' আত-তিরমিজি, হাদিসঃ ৩৪৯৯, হাসান হাদিস)
* বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেনঃ "হে আল্লাহ! অবশ্য আমি তোমার কাছে এ বলে প্রার্থনা করছি যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই ” তখন রাসূলুল্লাহ (র:) বললেন ? নিশ্চয় এ ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তার মহান নামের উসীলায় প্রার্থনা করেছে, যার উসীলায় প্রার্থনা করলে তিনি অবশ্যই দান করেন এবং যার উসীলায় দু'আ করলে তিনি অবশ্যই কবুল করেন। (ihadis.com, বুলুগুল মারাম, হাদিসঃ ১৫৬০, সহিহ হাদিস)