শিশু ধর্ষণ করলে আল্লাহ রক্ষা করে না কেন?

বিষয়ঃ
শিশু ধর্ষণ করলে আল্লাহ রক্ষা করে না কেন?

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

==========================

ভূমিকাঃ 

নাস্তিকরা আল্লাহকে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের অন্ধবিশ্বাস করে থাকে যেমন আল্লাহ নাকি শয়তান, আল্লাহ নাকি দুর্বল, আল্লাহ নাকি কিছু করতে পারে না এমনকি আল্লাহ নিজেই নাকি নাই। কিন্তু ইসলাম আমাদেরকে এসব শিক্ষা দেয় না। তাহলে বলাই যায় নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করে। মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহকে নিয়ে নাস্তিকদের একটি অভিযোগ হচ্ছে, আল্লাহ যদি দয়ালু হয়, ভালো হয়  তাহলে শিশুকে যখন ধর্ষণ করা হয়য় তখন আল্লাহ কেন বাঁধা দেন না? আল্লাহ কেন শিশুটিকে রক্ষা করতে পারেন না? এরপরে নাস্তিকরা বলে আল্লাহ আসলে নাই এই কারণে শিশুকে রক্ষা করতে পারে না, যদি থাকতো তাহলে অবশ্যই রক্ষা করতো।

অনেক নাস্তিকই এভাবে নিজেরা নিজেরা আল্লাহ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা করে নিজেরাই নিজেদেরকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলাম কি আসলেই এই দর্শন বলে? ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ কি আসলেই দুনিয়াতে সরাসরি সব কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করে? শিশুকে হত্যা করার সময়,ধর্ষণ করার সময় আল্লাহ কেন কিছু করেন না এই ব্যাপারে ইসলাম আসলেই কি বলে? এসব প্রশ্ন নিয়েই আজকের লেখাটি। 

যেসব নাস্তিকরা সত্যিটা জানতে চায় তারা পুরো লেখাটিই বুঝে বুঝে পড়বে কিন্তু সেসব নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার ডিউটি পালন করতেছে তারা লেখাটি সততার সাথে পড়বার সাহস করে উঠতে পারবে না হয়তো। তাই আপনি যদি আসলেই সত্যিটা জানতে চান তাহলে পড়তে হবে।

নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে শিশুদের সাথে ঘটে যাওয়া কষ্ট কেমন?

আল্লাহ ধর্ষকের হাত থেকে শিশুটিকে সরাসরি রক্ষা করেন না,আল্লাহর উচিৎ শিশুটিকে রক্ষা করা সেহেতু উনি এমন করে নাই তাই আল্লাহ অপরাধী-এই বিশ্বাস ইসলাম পোষণ করতে বলে না। কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে কেউই এমন প্রমাণ দেখাতে পারবে না যেখানে বলা আছে আল্লাহ অপরাধী, আল্লাহ দোষী। তাই নাস্তিকদের এই কথা বলার সুযোগ নেই যে “আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে বলেছি”। তাহলে এই ব্যাখ্যা বা বিশ্বাস কাদের? নাস্তিকদের। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে নাস্তিকরা এই বিশ্বাস করলে নাস্তিক থাকে কিভাবে? নাস্তিকরা যদি বিশ্বাস করে আল্লাহ অপরাধী তাহলে এই বিশ্বাস কি নাস্তিক্যবাদের সাথে বৈপরীত্য হয়ে যাচ্ছে না? কারণ নাস্তিক্যবাদ বলে স্রষ্টা বলে কিছুই নাই তাহলে নাস্তিকদের বিশ্বাস বা ব্যাখ্যা বা দাবি কিভাবে নাস্তিকরা মেনে নেবে? কোনো নাস্তিক কিসের ভিত্তিতে বলবে মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ কি করতে পারবেন? আর কি করতে পারবেন না? এসব কি যৌক্তিক নাস্তিকদের কাছে? আল্লাহ কি দিয়ে পরিক্ষা নিবে আর কি দিয়ে নিবেন না সেটা কি নাস্তিক্যধর্মের নাস্তিকান্ধরা বলে দিবে?

ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক ব্যাখ্যাটি সামনে আসবে তার আগে নাস্তিক্যধর্মের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা কতটুকু যৌক্তিক সেটা নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতেই জেনে নেয়া যাক। কোনো ধর্ষক যদি শিশুকে ধর্ষণ করে এই অপরাধের ভ্যালু নাই,নেই অর্থ, নেই কারণ, সব কিছুই নিরর্থক কারণ আমাদেরকে একদিন মরে যেতে হবে। সন্তানের মা বাবা যদি কান্না করে তাদের সন্তানের জন্য এটাও নিরর্থক,অর্থহীন আর অর্থহীন কিছু যে, মানবিকতা হয় না সেটাও আমাদের জানা। তারমানে নাস্তিকতায় একজন শিশুর দুঃখ,কষ্ট,মৃত্যু স্রেফ অর্থহীন কেমিক্যাল রিয়েকশন ছাড়া কিছুই নয়। বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ সেটাই বলে।

বাতাসে একটি গাছের পাতা ছিঁড়ে পরা এটা যেমন অর্থহীন ঠিক একইভাবে কোনো নাস্তিক যদি মুক্তচিন্তায় কাউকে হত্যা করে অথবা কোনো শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যা করে ফেলে সেটাও অর্থহীন। কোনো নাস্তিক এই কথা এখানেই বলতেই পারে যে শিশু ধর্ষণ করা ঠিক না, এটা অমানবিক কিন্তু তাই বলে সব নাস্তিকদের কাছেই বিশ্বাস গ্রহণযোগ্য হবে সেটা ঠিক নয়। কারণ প্রতিটি নাস্তিকদেরই এই অধিকার আছে নিজের নৈতিকতা নিজের নির্ধারণ করে নেবার। নাস্তিকরাই নিজেদের বই পত্রে পরিস্কার স্বীকার করে নিয়েছে। আসুন জেনে নেই নাস্তিকদের বই থেকেই।

হুমায়ুন আজাদ যিনি একজন বিজ্ঞানমনস্ক,নারীবাদী,কবি,চেতনাধারী,প্রগোতিশীল,লেখক। উনার বিখ্যাত বই “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় বলা আছে,

তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক , আইনস্টাইন নিরর্থক, ওই গোলাপও নিরর্থক, ভোরের শিশিরও নিরর্থক, তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক, দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।

"আমার অবিশ্বাস" ১৯ পৃষ্ঠায় বলা আছে, 

আমরা এই নিরর্থক পুনরাবৃত্তি থেকে একটুও এগোইনি , কামু বলেছেন আমাদের জীবন একই রোববারের পর সোমবার, সোমবারের পর মঙ্গলবার, মঙ্গলবারের পর বুধবার, একই নিরর্থক পুনরাবৃত্তি । এই নিরর্থকতার মুখোমুখি কিভাবে দাড়াতে পারি ? কামুর মতে একটিই সত্যিকার দার্শনিক সমস্যা রয়েছে তা হচ্ছে আত্মহত্যা। জীবন কি যাপন করার উপযুক্ত ? বেঁচে থাকার কি কোন মানে হয় ? কোন অর্থ কি আছে নিরুদ্দেশ যাত্রা লেখার বা মহাকাশে নভোযান পাঠানোর বা নারীর নগ্ন স্তন চুম্বনের বা জন্মদানের? ...................মানুষের প্রশ্নের শেষ নেই , হাজার হাজার প্রশ্ন তার , সেগুলোর কোন উত্তর নেই । মানুষ চায় সমাধান , কিন্তু সমাধান চাইতে গিয়েই মানুষ জাগিয়ে তোলে নিরর্থকতা। মানুষ যখন জীবনের অর্থ খুজতে চায় , বুঝতে চায় জীবনের অর্থ কি , তখন সে মুখোমুখি হয় নিরর্থকতার। জীবনের কোন অর্থ নেই । কোন মহৎ উদ্দেশ্য নেই। সুধীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন তার সার কথা পিশাচের উপজীব্য হওয়া।

আমার অবিশ্বাস, ১৮ পৃষ্ঠায় বলা আছে, 

এই যে আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে সুখ পাচ্ছি । আমি মরে যাবো, এই হাস্যকর নিরর্থকতাকে কিভাবে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি ? আমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার কখন পূর্বনির্ধারিত উপায় নেই। কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোন মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না। তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ , নিজেদের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পথঃ আমি তাদের পথে চলতে পারি না। আমি খুজতে চাই আমার পথ। নিজের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে আমার নিজের।

নাস্তিকদেরকে বলবো উপরের বক্তব্য গুলো মনোযোগ দিয়ে আরেকবার পড়ুন। এরপরেও নাস্তিকরা নিজেদের জীবনকে অর্থপূর্ণ কোন লজ্জায় বলে? কোনো নাস্তিক যদি ধর্ষণ করে তাহলে তার ধর্ষণ করাটা যেমন অর্থহীন তেমনি, শিশুর মৃত্যুটি অর্থহীন তেমনি শিশুটির পরিবার কষ্ট পাবে এটাও অর্থহীন। নাস্তিকরা চাইলেই মুক্তচিন্তায় এটা বিশ্বাস করতে পারে যে যে কেক ইচ্ছে তাকে ধর্ষণ করতে পারবে কারণ নৈতিকতা ব্যাপারটাই তো অর্থহীন। ধর্ম মানুষ তৈরি করে বানিয়েছে তাই সকল ধর্ম ভুয়া তেমনি এই যুক্তিতে নৈতিকতাও মানুষের তৈরি তাই নৈতিকতাও ভুয়া হবে না কিভাবে? নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে শিশু ধর্ষণকারীকে কিভাবে অপরাধ বলা যাবে? সেই নাস্তিক যদি যুক্তি দেখায় যে আমার কথা মতো যেমন আপনি চলেন না তেমনি আপনার কথা মতো আমিও চলতে বাধ্য নই। আমার দেহ আমার সিদ্ধান্ত তাই মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা আমার কাছে মন্দ নয় তাই আমার অপরাধ কেন হবে? ইসলামকে আমি যেমন অবিশ্বাস করি তেমনি নাস্তিকদের বানানো নৈতিকতাকেও আমি মুক্তমনে অবিশ্বাস করি-আমার স্বাধীনতায় আপনি বাধা কেন দিবেন? আমি নাস্তিক বিশ্বাস করি এই দুনিয়াই শেষ এবং সব কিছুরই মূল্য নেই কারন  দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ। আমি নাস্তিক মনে করি এটাই আমার পথ কারন  কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোন মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না । তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ,নিজেদের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পথঃ আমি তাদের পথে চলতে পারি না।আমি খুজতে চাই আমার পথ।নিজের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে আমার নিজের। আপনি নাস্তিক বাবা বেশি কষ্ট পেলে আত্মহত্যা করুন। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে কেন ও কিভাবে উক্ত নাস্তিক ভুল কথা বলেছে?

নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ ধর্ষণের মুক্তচিন্তা করতেন?

নাস্তিকদের জন্য সব চেয়ে কষ্টকর দমবন্ধ করা খবর হচ্ছে নাস্তিকরা চাইলে ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতে পারবে। নাস্তিক্যধর্মে এসব মুক্তচিন্তা জায়েজ আছে। নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ মাঝে মাঝে ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করতেন। অনেক নাস্তিকই এই কথাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চায় কারণ সেই নাস্তিক নিজেই হয়তো হুমায়ুন আজাদের বই পড়ে কোনো এক কালে ইসলাম ত্যাগ করেছিল হয়তো।

আমার অবিশ্বাস, ১৫ পৃষ্ঠায় বলা আছে, 

যখন শিশু ছিলাম, কিশোর হয়ে উঠেছি যখন , তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি । আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছে করে । ছেলেবেলা ভরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরোগুলোকে চুষে দেখতে, ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হয়ে জ্বলজ্বল করতো , সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছে হতো, কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মত এক তরুণীকে।

কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কি ইচ্ছা করে তরুণীকে চুষতে,চাবাতে, তাও আবার চুইংগামের মতো? আশে পাশে মানুষ থাকায় হয়তো সেই অসহায় মেয়েটিকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করতে পারেন নাই। এখন যারা এই হুমায়ুনের আদর্শে বিশ্বাসী নাস্তিক তাদের থেকে আপনার মা,আপনার বোন কতটুকু নিরাপদ? আর কোনো নাস্তিক যদি সমকামী হয় তাহলে আপনার বাবা, আপনার ভাই যে নিরাপদ সেই গ্যারান্টি কি? আজকে থেকেই সাবধান হয়ে যেতে হবে আমাদেরকে। নাহলে কবে আমাদের মা বোনরা এসব মানসিক ভারসাম্যহীনদের দ্বারা আক্রান্ত হবে বলা যায় না।

শুধু কি তাই? হুমায়ুন আজাদের “ধর্মানুভূতির উপকথা” বইতে বলেছেন,

পৃথিবীর সব কিছুই চলে যুক্তিতে;গণিত,পদার্থবিদ্যা,রসায়ন প্রভুতি থেকে শুরু করে সব কিছুই চলে যুক্তির সাহায্যে,কোনো জ্ঞানই যুক্তি ছাড়া সম্ভব না,কোনো সত্যই যুক্তি ছাড়া উদ্ঘাটন করা সম্ভব না। অন্ধ বিশ্বাস দিয়ে আমরা ধান উৎপাদন করতে পারি না,বিশ্বাস দিয়ে আমরা গাড়ি চালাতে পারি না বা খালের উপর একটি বাঁশের সাঁকোও তৈরি করতে পারি না;কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস দিয়ে আমরা একটি অসামান্য কাজ করতে পারি;মৃত্যুর পর যেতে পারি চিরসুখের জগতে।

পাঠক খেয়াল করুন একেক মানুষের কাছে একেরকম যুক্তি। সবার যুক্তি কিন্তু একই রকম হবে না। কোনো ধর্ষক যখন শিশু ধর্ষণ করে তখন তাকে হুমায়ুনদের কথা মতো যুক্তি ঠেকাতে পারে না? কোনো ধর্ষক যদি এটা মানে যে ধর্ষণ করা অপরাধ এটা আমি বিশ্বাস করি না কারণ এটা একটি অন্ধবিশ্বাস তখন কোন যুক্তি দিয়ে তাকে আপনি বুঝতে যাবেন যে এটা অপরাধ? আপনি সেই নাস্তিককে যাই বলেন না কেন সে যদি বলে আপনার দেয়া যুক্তি আমি বিশ্বাস করি না আমি আমার যুক্তিতে চলি তখন? আরও যে বড় প্রশ্ন থেকে যায় সেটা হচ্ছে নাস্তিকরা কি অবিশ্বাস দিয়ে ধান উৎপাদন করতে পারে? অবিশ্বাস দিয়ে গাড়ি চালাতে পারে? অবিশ্বাস দিয়ে খালের উপর একটি বাঁশের সাঁকোও তৈরি করতে? কিন্তু নাস্তিকরা অবিশ্বাস দিয়ে একটি অসামান্য কাজ করতে পারে সেটা হচ্ছে নিজেদের পূর্বপুরুষ জন্তু জানোয়ার ছিল দাবি করতে পারে। পাঠক আপনারা নিশ্চয় ধরতে পেরেছেন যে নাস্তিকরা আসলেই কতটুকু মুক্তচিন্তার অধিকারী? নাস্তিকরা কখনো এসব নিয়ে সততার সাথে ভেবে দেখে না কারণ তারা নিজেদের জ্ঞানকে নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় সীমাবদ্ধ করতে চায়, নিজের বুদ্ধিকে ডারউইনবাদের মতো ফালতু অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আড়ষ্ট করতে। সেখানে মুক্তি কিভাবে সম্ভব হবে? আপনারাই বলুন।

কোনো শক্তিশালী নিরীহ মানুষকে খুন করা এবং হাসপাতালের নিরীহ রোগীকে খুন করা কোনটি বেশি বর্বর? অবশ্যই সেই রোগী মানুষটিকেই হত্যা করা বেশি অপরাধ। তাহলে নাস্তিকরা যে জীবিত শাকসবজির কল্লা কেটে খুন করে ভক্ষণ করে ক্ষুধার্তের দোহাই দিয়ে এটা কি সন্ত্রাসী না নাস্তিকদের নিজেদের যুক্তিতে? সেই রোগী মানুষটি হয়তো নিজেকে রক্ষা করার জন্য পালানোর চেষ্টা করতে পারে কিন্তু শাকসবজির তো সেটারও সুযোগ নেই অথচ এই অসহায় প্রাণীদের হত্যা করে খাচ্ছে দিনের পর দিন। নাস্তিকদের নিজেদের যুক্তিতে এই সব কাজ ভয়ংকর সন্ত্রাসী কাজকাম নয়? তাহলে মুসলিমদের কুরবানীর ঈদে গরু ছাগল ভেড়াদের নিয়ে নাস্তিকরা এতো জানোয়ার প্রেম দেখায় কেন?

যেই সব নাস্তিকদের বিশ্বাস পদ্ধতি এতো খারাপ, এতো দুর্গন্ধময় এরাই আবার অভিযোগ করে শিশুকে ধর্ষণ করার সময় আল্লাহ রক্ষা করে না কেন, আল্লাহ যেহেতু রক্ষা করেন না সেহেতু আল্লাহ দোষী। তর্কের খাতিরে যদি নাস্তিকদের এই যুক্তিতে ধরে নেয়া হয় তাহলে নাস্তিকদেরকে আগে স্বীকার করতে হবে নাস্তিকরা নিজেরাই ভয়ংকর অপরাধী। কিভাবে? শিশুর থেকে ছোট হচ্ছে মশা। আর নাস্তিকরা মশাকে হত্যা করেছে, এখনো মাঝে মাঝে করে তাহলে একই যুক্তিতে নাস্তিকরা মশাকে হত্যা করার কারণে সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি হবে না কেন? এটা ঠিক যে নাস্তিকরা হয়তো মশাকে ধর্ষণ করতে পারে না নাহলে চীনের নাস্তিকদের মতো সেটাও করতো। উইঘুরে নিরীহ মুসলিমদের সাথে নাস্তিক চীনদের আচরণ পড়ুন।

দুনিয়াতে এমন কোনো নাস্তিক নেই যে মশা হত্যা করেনি তাই সকল মশা হত্যা করার অপরাধে নাস্তিকরা অপরাধী এবং সন্ত্রাসী আর জঙ্গি এবং এই অপরাধের জন্য দুনিয়ার সব নাস্তিকদের ফাসির শাস্তি দেয়া অবশ্যই মানবতার শ্রেষ্ঠ কাজ হবে না কেন? নাস্তিকরা মশা হত্যার বিরুদ্ধে শাহবাগে কোনো আন্দোলন করেছে কিনা আমার জানা নেই, কেউ জানলে আমাকে জানায়েন আমি অপেক্ষায় থাকবো? শিশুর প্রান আছে মশার নেই? যদিও নাস্তিকরা আত্মা বা প্রানে বিশ্বাসী না? কৃষকরা ধান ক্ষেতে পোকামাকড় হত্যা করে ভয়ংকর কীটনাশক ব্যাবহার করে, এসব কি অমানবিক নয় নাস্তিকদের যুক্তিতে? পোকামাকড়ের প্রান নেই? কাঁকড়া হত্যা করে খাওয়া অন্যায় না নাস্তিকদের যুক্তিতে? শিশুর প্রান আছে শিশু কষ্ট পায় সেসব প্রাণীদের প্রান নেই তারা কি রোবট? ধরুন একজন ভাল মানুষ যে কিনা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী।এখন নাস্তিকদের ধোঁকায় নাস্তিকতায় আক্রান্ত হয়ে গেছে।আরও ধরুন একদিন তার ছোট মেয়ে যার নাম তরুণী।বয়স ১৫। সন্ধ্যা বেলায় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হুমায়ুন নামের নাস্তিকটি ধর্ষণ করে ফেলল। এই মুহূর্তে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে মেয়েটির বাবা আধ্যাত্মিক কি সমাধান পাবে এই সমস্যার? সে যদি এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে তাহলে কি সেটা অন্যায় হবে?নাস্তিক মুক্তমনা ধর্ষককেই বা কোন যুক্তিতে শাস্তি দেয়া হবে?

আমি কিন্তু একটাও আমার নিজের যুক্তি দেই নি। নাস্তিকদের বানানো দৃষ্টি থেকেই যুক্তি গুলোর ভয়ংকর দৃশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। শিশু হত্যা করা নাস্তিক্যধর্মে জায়েজ। প্রমাণ দিচ্ছি।

এক্স সংশয়বাদী ড রাফান আহমেদ তার "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" (প্রথম প্রকাশ), ১৭৮ পৃষ্ঠায় "The Telegraph.25 jan.2004" সূত্রে বর্ণনা করেছেন,

শুধু পেটের শিশু নয়, জীবন্ত শিশু হত্যার ব্যাপারেও পরামর্শ আসছে কিছু নাস্তিক পণ্ডিত থেকে, এর নাম দেয়া হয়েছে জন্ম পরবর্তী গর্ভনিরোধ (after birth abortion) । বিভিন্ন দেশে যেমন নেদারল্যান্ড কানাডা বংশগত রোগে আক্রান্ত বা গুরতর অসুস্ত বাচ্চাকে জন্মের পর হত্যার অনুমতি রয়েছে । তাদের যুক্তির একটি হল ভ্রূণ বা নবজাতক যৌক্তিক চিন্তার ক্ষমতা রাখে না টাই তারা "ব্যাক্তি"র পর্যায়ে পড়ে না । সুতরাং এদের হত্যা করা যেতে পারে । এই ধারনার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এথিকস কমিটির সম্মানিত সদস্য নাস্তিক জন হেরিস

আরেক নাস্তিক গবেষক আলবার্টো গিউবিলিনি ও ফ্রান্সেসকো মিনারভা  আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে "After birth abortion:why should the baby live ?" শিরোনামে "Journal of med Ethics. vol.vol 39.page 261-263.February 2012" জার্নাল পেপারে বলতে চেয়েছেন,

নবজাতক সুস্থ হোক বা অসুস্ত তাদের হত্যা করা যেতে পারে কারন এরা "ব্যাক্তি"র পর্যায়ে পড়ে না।

হুমায়ূন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইটিকে যাকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন সেই বার্ট্রান্ড রাসেলের চরিত্রের কি ভয়াবহ অবস্থা। এক্স সংশয়বাদী  ড রাফান আহমেদ তার "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" ২১৪ পৃষ্ঠায় "Brilliant Men Always Betray Their Wives. The Telegraph,13 july 2006" সূত্রে বর্ণনা করেছেন,

গোটা চারেক স্ত্রী আর অজস্র নারীর স্বাদ আস্বাদনে অভ্যস্ত এই নাস্তিক অথবা সংশয়বাদী বলতেন কোন যৌনসঙ্গীকে তার কয়েক বছরের বেশি আবেদনময়ী মনে হত না। তারপর নতুন কাউকে বশ করার পঁয়তারা চলত। বলা হত তিনি Galloping Satyriasis অর্থাৎ দ্রুতবর্ধমান কামুকতায় আক্রান্ত ছিলেন। তার যৌনসঙ্গীর লম্বা তালিকায় ছিল সেক্রেটারি তরুণী, মন্ত্রীর স্ত্রী , সার্জন কন্যা,নারী গবেষক, অভিনেত্রী , নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনের কর্মী, বেশিকিছু শিক্ষিকা, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষকের স্ত্রী, এমনকি তার সন্তানের গৃহশিক্ষিকা ইত্যাদি ইত্যাদি মাত্র ! 

এইবার চিন্তা করুন নাস্তিক্যধর্মে চেতনাধারীরা কত ভয়ংকর যৌন অপরাধী হতে পারে। এসব মিডিয়াতে খুবই কম আসে আর নাস্তিকান্ধরাও এসব গোপন করে রাখতে চায় এবং এসব গোপন রেখেই মানুষদের বোকা বানায়,বানাচ্ছে। কোনো কোনো নাস্তিক এখানে বলতেই পারে যে সেসব তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু এই কথা থেকে এটা প্রমাণ হয় না যে তাদের নৈতিকতা আপনি নির্ধারণ করে দিবেন। তারা নিজেরাই নিজেদের নৈতিকতা মুক্তচিন্তায় নির্ধারণ করে নেয়। তাই আপনার কথাকে সেই সব নাস্তিকদের কিছু আসে যায় না,সেভাবে তাদের কাজকর্ম আপনার কিছু আসে যায় না। বুঝেছেন? তাই আপনি যদি নাস্তিক হয়ে আমার লেখাটির এই পর্যন্ত এসে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রশ্ন করছি নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে নাস্তিকদের কি এই প্রশ্ন করার অধিকার আসলেই আছে যে মহাবিশ্বের স্রষ্টা অপরাধ করেছেন?

নাস্তিকদের দ্বারা মুক্তচিন্তায় শিশু বলৎকারঃ

যেসব দেশে মুক্তবুদ্ধিতে ধর্মহীনতা চর্চা করা হয়ে থাকে সেই সব দেশের মধ্যে অন্যতম এটি দেশ হচ্ছে ফ্রান্স(১)।

নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস থেকে মুক্তবুদ্ধি চর্চা, এই চর্চা থেকে আরও কি কি করে যাচ্ছে এই ধর্মহীন মানুষরা আসুন জেনে নেই। আপনার গা শিউরে উঠবে জানতে। নাস্তিকদেরকে সব সময় ইসলামবিরোধী বিশ্বাসের দিকেই আটকিয়ে রাখতে চাওয়া হয় যাতে নাস্তিকরা নিজেদের আদর্শ, নিজেদের বিশ্বাস, নিজেদের ভিত্তি, নিজেদের নীতি নৈতিকতা নিয়ে তেমন একটা ভাব্বার সুযোগ না পায়। কিন্তু কারা এটা করে? এই প্রশ্নের জবাব আমি নাস্তিকদের কাছেই রেখে যাচ্ছি। সারা আসলেই সত্যসন্ধানী তারা ঠিকই এটা সন্ধান করে ফেলবে। এবং নিজের ভুল বুঝতে জানবে। 

আসুন জেনে নেই মুক্তবুদ্ধিতে ধর্মহীনতা চর্চার চেহারা (২),

আমার আংকেল আমাকে যৌন নির্যাতন করেছিলো, তখন আমার বয়স ছিলো ৮ বছর’‘আমি আমার বাবার হাতেই যৌন নির্যাতনের স্বীকার হই, ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে বাবা আমাকে যৌন নির্যাতন করেন’।‘ছুটিতে মজা করার কথা ছিলো আমাদের,কিন্তু কে জানত খুব দ্রুতই তা আমার জন্য দুঃস্বপ্নে রূপ নেবে’এরকম অসংখ্য টুইটের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে টুইটার। বাবা,চাচা এমন নিকট আত্মীয়দের হাতে যৌন নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলেছে ফ্রান্সের হাজারে হাজারে নাগরিক। 

তিন বছর আগে ইন্টারনেট ভরে গিয়েছিলো Metoo হ্যাশট্যাগে। সেই সময় একে একে বের হয়ে আসছিলো ইউরোপ আমেরিকা হলিউড, বলিউডে যারা নারী স্বাধীনতার গান গাইতো তাদের হাতেই নারীদের যৌন নির্যাতনের গা শিউরে ওঠা কাহিনী। বিশ্ববাসীর সামনে একদম খুলে পড়েছিলো নারী স্বাধীনতা, প্রগতি আর সমানাধিকারের বুলি আউড়ানো ইউরোপ আমেরিকা আর মিডিয়ার মুখোশ। এই হ্যাশট্যাগ Metoo movement এর আদলেই ফ্রান্সে শুরু হয়েছে  #Metooinceste আন্দোলন। এর শুরুটা হয় বেশ জঘন্য এক ঘটনা দিয়ে। 

Olivier Duhamel নামের এক ফ্রেন্স প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবির নামে অভিযোগ ওঠে সে তার সৎ ছেলেকে বয়ঃসন্ধি অবস্থায় যৌন নির্যাতন করেছে। এই ঘটনার পর #Metooinceste এর বন্যা শুরু হয় টুইটারে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ২০ হাজার টুইট করা হয়। ফ্রান্সের নাগরিকরা একে একে বলতে শুরু করে কীভাবে তারা নিজেদের বাবা,চাচা, ভাই ইত্যাদি আপনজনের হাতে যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে ছোটো থাকতে। ফ্রান্সে ইনসেস্ট অর্থাৎ যাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ এমন মানুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ। অর্থাৎ বাবা মেয়ে দুজন বিছানায় যেতে পারবে, ভাই বোন , মা ছেলে যা খুশি তাই করতে পারবে। এগুলো কোনো সমস্যা না তাদের কাছে। কিন্তু যদি যৌনতায় আগ্রাসন প্রদর্শন করা হয় বা ১৫ বছরের কম বাচ্চাকে বিছানায় নেওয়া হয় তখন সেটা ফ্রান্সে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই চরম ঘৃণিত আইনের ফলাফল হয়েছে ভয়াবহ। ফ্রান্সের ঘরে ঘরে আজ ইনসেস্টের মাধ্যমে যৌন নির্যাতন চলছে। প্রতি ১০ জনের ১ জন বলছে তারা ইনসেস্টের স্বীকার।ইনসেস্টের মাধ্যমে যৌন নির্যাতিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থার নাম ফেসিং ইনসেস্ট। এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট Patrick Loiseleur বলছে, ইনসেস্ট হলো ঘরে থাকা একটা হাতির মতো যা কেউই দেখছেনা(মানে দেখেও না দেখার ভান করছে) ইনসেস্টের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশী যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে কিন্তু এটা নিয়ে সবচেয়ে কম কথা হয়’। বাহ ফ্রান্সে সভ্যতা, প্রগতিশীলতা, মানবাধিকারের কি অপূর্ব নিদর্শন!

আমাদের সুশীল প্রগতীশীলরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ইউরোপ আমেরিকাকে অন্ধু অনুসরণ করার কথা বলে। পিতার হাতে সন্তানেরা যৌন নির্যাতিত হয় এমন দেশের কাছ থেকে আমাদের সভ্যতা শিখতে হবে? ভাইয়ের কাছে বোন নিরাপদ নয় এমন দেশের কাছ থেকেই আমাদের মানবাধিকার শিখতে হবে? এমন দেশকে অনুসরণ করে প্রগতিশীলতা শিখতে হবে আমাদের? যারা এমন কাজ করেছে তারা ঠিকই মুক্তচিন্তা থেকেই কাজটি করেছে। নাস্তিকদের ধর্মীয় গ্রন্থ থাকলে হয়তো বলতে পারতো এসব তো নাস্তিক্যধর্মে জায়েজ নাই কিন্তু এই কথা বলার সুযোগ নাস্তিকদের নাই। কারণ নাস্তিকরা নিজেরাই বলে সবাই সবার মতো করে চিন্তার মুক্তি করতে পারবে। সেই শিশুরা ও নারীরা ডারউইনবাদের দৃষ্টিতে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে নাই দেখে রাষ্ট্রের কাছে বিচার দিয়েছে অথবা সম্মতি দিতে নারাজ কিন্তু শিশু ও নারীদের ক্ষতি হলেই যে সেটাকে মন্দ বলতে হবে এই বিধানে সেই ধর্মহীনরা অবিশ্বাস করতো বিধায় তারা কাজ গুলো করতে পেরেছে। নাহলে যদি বিশ্বাস করতো তাহলে কি করতো?

এক্স সংশয়বাদী ড রাফান আহমেদ তার (প্রথম প্রকাশ) "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" ২১১ এবং ২১২ পৃষ্ঠায় “Violent sexual crimes recorded in the Eu.Eurostat" সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ 

ইউরোস্টেট জানায় ২০১৫ সালে প্রায় ২১৫০০০ সহিংস যৌন অপরাধ সংঘটিত হয়ঃ যার মাঝে ৮০% অধিক হল ধর্ষণ। তালিকায় প্রথমেই আছে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস, দ্বিতীয় সাথে আছে জার্মানি তারপর ফ্রান্স,সুইডেন। "Euronews,24 November,2017" সূত্রে আরেক পরিসংখ্যানে সুইডেন দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। সুইডেন নাস্তিক প্রধান দেশ হওয়াতে নাস্তিক পাড়ায় এর খুব সুনাম শোনা যায় । কিছু কিছু নাস্তিকান্ধরা বলতে চেয়েছিলেন নাস্তিক হওয়ার পরও সুইডেন নাকি স্বর্গসম দেশ, কোন ক্রাইম নাই! কিন্তু গবেষণার পরিসংখ্যান তথা "The Independent,7 january 2016" সুত্র কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে ,পুরো ইউরোপের মাঝে সুইডেন ও ডেনমার্ক যৌন হয়রানির তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে

নাস্তিকরা কখনো এসব নিয়ে কথা বলতে চায় না। সারাদিন মাদ্রাসার কোন হুজুর শিশু বলৎকার করেছে সেটা নিয়েই বিজি থাকে। আমি দুটো ঘটনাকেই তীব্র নিন্দা জানাই। ইসলামের দৃষ্টিতে দুটো কাজটি অপরাধের শামিল কিন্তু নাস্তিকদের ক্ষেত্রে নয়। কারণ মানুষের মুক্তচিন্তার সুযোগ আছে। মাদ্রাসার যেসব হুজুররা শিশু বলৎকারের মতো নোংরা অপরাধ করে তারা মুক্তচিন্তার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে করে। নাহলে হুজুররা যদি ইসলামিক বিধানকে কোঠর ভাবে বিশ্বাস করতো তাহলে কি এই অপরাধ করতে পারতো? কুরআন ও সহিহ হাদিসের কোথায় বর্ণিত আছে এই কথা যে তোমরা শিশুদেরকে ধর্ষণ, বলৎকার করো? ইসলামে সম্পূর্ণভাবে এসব নিষিদ্ধ। তাই নাস্তিকরা বা অন্য কেউরা মুক্তচিন্তায় ইসলামের বিধানকে অমান্য করবার স্বাধীনতা রাখে। তাইনা নাস্তিকরা?

এক্স সংশয়বাদী ড রাফান আহমেদ তার "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" ১৭৯,১৮০ পৃষ্ঠায় "In an interview with Stone Phillips, Dateline NBC (29 November 1994)" সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ 

নাস্তিক সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমারের নিজের অবস্থানের পক্ষে বলেছিলেন যে, যদি কোন মানুষ এটা মনে না করে যে, স্রষ্টার নিকট তাকে জবাবদিহি করতে হবে , তা হলে গ্রহনযোগ্য সীমায় রাখার জন্য নিজের আচরণকে পরিবর্তন করার দরকারটা কি ? আমি এমনটাই ভেবেছিলাম । আমি সবসময় বিবর্তন তত্ত্বকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। বিশ্বাস করেছি আমরা সবাই স্রেফ থকথকে কাদা থেকে এসেছি, যখন আমরা মরে যাব, ব্যাস শেষ। এরপরে আর কিছুই নাই

উইঘুরের অসহায় মুসলিম নারী ও শিশুদের সাথে চীনের নাস্তিকরা কেমন মুক্তমনা আচরণ করছে গুগলে সার্চ করলেই দেখতে পারবেন। এই বিষয় আর কলম চালালাম না। আপনারা নিজেরাই যাচাই করে জেনে নিয়েন।

তাহলে ফলাফল দাঁড়াচ্ছে যেহেতু নাস্তিক্যধর্মে আমাদের দুনিয়ার কোনো উদ্দেশ্য নেই,নেই কোনো ভাল মন্দের পরিমাপ তাই একজন শিশুকে যদি কোনো নাস্তিক ধর্ষণ করে তাহলে সেটা স্রেফ কেমিক্যাল রিয়েকশনের ফলাফল এমনকি এটার কোনো পাপ নেই,নেই অপরাধবোধ। এটাই নাস্তিকতার বা নাস্তিকদের প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি। তবে নাস্তিকরা চাইলে ভিন্ন কিছু করতে পারে তবে সেটা সব নাস্তিকরা করতে বাধ্য না। নাস্তিকরাই বলে নাস্তিকতা ধর্ষণ নিয়ে নাকি ডিল করে না, আপনি কার সাথে কি করবেন নাকি করবেন না এসব নিয়ে নাস্তিকতা ডিল করে না। ফুটবল খেলার যেমন মানুষের জীবন নিয়ে ডিল করে না তেমনি নাস্তিকতাও ডিল করে না। তাই বলা যায় এই কারণে শিশু যদি মারা যায় সেটাও অর্থহীন এবং নিরর্থক হয়েই মারা গেল। যেমন কেউ যদি অনেক পানির বোতল খেয়ে বোতলটি ফেলে দেয় অথবা একটি কম্পিউটার কেউ যদি ভেঙ্গে ফেলে এটা যেমন কিছুই না তেমন একটি শিশুকে কোনো নাস্তিক মেরে ফেলল এটাও হুবহু একই। এবং এই কথা নাস্তিক্যবাদ, বিবর্তনবাদ এবং এই দুই বাদের বাপ নিহিলিজমও সমর্থন করে।

তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তর কি হবে?

হ্যাঁ, সেই জবাবই এখন পেশ করবো। পুরো পরিস্কার হয়ে যাবে জবাবটি জেনে নিলে। আসুন প্রথমে প্রশ্নটি আরেকবার পড়ে নেই।

অনেক শিশু নাবালেগ থাকা অবস্থায় হত্যার শিকার হয়। এইসব শিশুদের আল্লাহ কেমন পরিক্ষা নিচ্ছেন? কেনই বা পরিক্ষা নিচ্ছেন? 

প্রশ্নে বলা হয়েছে, শিশুটিকে কেন পরিক্ষা দিতে হলো। কিন্তু বাস্তবে শিশুটিকে কোনো পরিক্ষা দিতেই হইনি। একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটি সহজ করা যাক। যদি কোনো পরিক্ষার্থীর পরিক্ষা দিতে আসার পথেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটে, তবে সেই পরিক্ষার্থী পরিক্ষায় কতো নম্বর পেয়েছে সেটি জানতে চাওয়া অযৌক্তিক। কারণ সে পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একজন নয়। একইভাবে,নাবালেগ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা শিশু পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী নয়। কারণ–সাবালেগ হওয়ার পর পৃথিবী তার জন্য পরিক্ষা ক্ষেত্র হয়। এর আগে নয়। সাবালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুর পাপ পুন্যের হিসাব রাখা হয় না।

এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সে তার উত্তম প্রতিদান পেয়ে যাবে। যদিও সে পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী নয়। কিন্তু দুনিয়ার সাধারণ পরিক্ষায় এটি সম্ভব নয় যে,কেউ পরিক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে সর্বোচ্চ নম্বর দেওয়া হবে। এটিই হলো পার্থক্য। আর এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য নিহিত। সুতরাং,ইসলাম শিশুটির পরিক্ষা নিচ্ছে না, তবুও তাকে পুরস্কৃত করছে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে শিশুটির লস নেই। আমি জানি এখানে কিছু প্রশ্ন আসবে। হ্যাঁ, সব জবাব সামনে দিয়ে রেখেছি। আপনাকে বুঝে বুঝে সামনে আগাতে হবে।

বুলগুল মারাম,হাদিসঃ১০৮৫,সহিহ হাদিসঃ 

'আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছেঃ ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা সুস্থ হয়। -হাকিম সহীহ্‌ বলেছেন, ইবনু হিব্বানও বর্ণনা করেছেন।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ২০৪১, সহিহ হাদিসঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছেঃ ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষন না সে জাগ্রত হয়, নাবালেগ যতক্ষন না সে বালেগ হয় এবং পাগল, যতক্ষন না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা সুস্থ হয়। অধস্তন রাবী আবূ বাকর (রহঃ) এর বর্ণনায় আছেঃ বেহুঁশ ব্যক্তি যতক্ষণ না সে হুঁশ ফিরে পায়।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিসঃ২০৪২, সহিহ হাদিসঃ

আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নাবালেগ, পাগল ও ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে কলম তুলে নেয়া হয়েছে।-ihadis.com

এমনকি শিশুর যদি কোনো কারণে মৃত্যু হয় তাহলে ইসলাম আশাবাদ হতে বলে নাস্তিকদের মতো হতাশাগ্রস্ত, ডিপ্রেশন হয়ে আত্মহত্যার দিকে ইসলাম ধাবিত হতে বলে না। হাদিসটি পড়ুন।

মুয়াত্তা ইমাম মালেক,হাদিসঃ৫৪৩,সহিহ হাদিসঃ 

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদের কারো যদি তিনটি সন্তান মারা যায়, অতঃপর সে যদি তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে, তবে সন্তান তার জন্য (জাহান্নামের) আগুন হতে (রক্ষার) ঢালস্বরূপ হবে। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট জনৈকা মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! দু’টি সন্তানের মৃত্যু হলেও কি ? তিনি বললেন, দু’টি সন্তানের (মৃত্যু হলে)-ও।-ihadis.com

নাস্তিকরা এই হাদিস গুলো নিয়ে মিথ্যা ব্যাখ্যা করে বলে এখানে নাকি ইচ্ছা করে শিশুকে হত্যা করতে বলা হয়েছে কিন্তু এটা যে স্পষ্ট মিথ্যাচার সেটা সে কেউই বুঝতে পারবে। যদি হাদিসের ব্যাখ্যা এটাই হতো তাহলে তো নবীর কন্যা স্বয়ং ফাতেমা (রা) নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করতেন। করেন নাই কেন? এছাড়া সাহাবীরা সবাই তো নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করতে পারতেন কিন্তু করেন নাই কেন? নাস্তিকদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে এই প্রশ্ন গুলো ভয়ংকর চপেটাঘাত।

শিশুরা জান্নাতে যাবে এই ব্যাপারে এখানে বিস্তারিত দেয়া আছে (৩)। পড়ে জেনে নিন।

এরপরে যেই প্রশ্নটি আসা স্বাভাবিক সেটা হচ্ছে এটা,

ধর্ষকের পরিক্ষার জন্য একজন শিশুকে কেন মাধ্যম বানালেন আল্লাহ? এটা কি অন্যায় নয়? আল্লাহ না ন্যায় বিচারক তাহলে এমন অন্যায় উনি কিভাবে করেন? 

পুরো দুনিয়াটাই তো পরিক্ষার কেন্দ্র। এখানে মানুষ যেমন ভালো কাজ করার সুযোগ পাবে তেমনি মন্দ কাজ করার সুযোগ পাবে। আল্লাহ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় এই দুনিয়াতে বাধা দিবেন না। তাই ধর্ষকের জন্য শিশুকে কেন মাধ্যম বানালেন প্রশ্নটি অযৌক্তিক। দুনিয়া যেহেতু পরিক্ষার হল সেহেতু কিয়ামতের দিবস হচ্ছে বিচার করার দিন। তাহলে আল্লাহ ন্যায় বিচার করবেন না কিভাবে? আল্লাহ অন্যায় করলেন কিভাবে? আসলে নাস্তিকরা কিয়ামতের বিচার দিবসের কথা বাদ দিয়ে প্রশ্নটি করে মানুষকে ধোঁকা দেয়। যেই লোক ধর্ষণ করেছে তাকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতে হবে এটা ইসলামের আইন। এই আইন আল্লাহর। আর যদি আল্লাহর আদেশ মতে মানুষ যদি অপরাধীকে শাস্তি দিতে না পারে তাহলে আল্লাহ নিজেই বিচার দিবসে শাস্তি দিবেন। তাই আল্লাহ অন্যায় করেছেন, বা ইনসাফ করেন নাই কথা গুলো ভুল।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পরিক্ষার কেন্দ্রে কখনো শিক্ষক ছাত্রের ভুলের জন্য বাধা দেন না। ছাত্র যাই লিখুক এমনকি খাতায় যদি শিক্ষককে নিয়ে গালাগালি লিখে এরপরেও শিক্ষক তাকে বাধা দিবে না কারণ ছাত্রকে তার স্বাধীন ইচ্ছা সম্পূর্ণ ভোগ করতে দেয়াটাই তো পরিক্ষা। কিন্তু যখন ফলাফলের ব্যাপার আসবে তখন শিক্ষক ফলাফল দিবেন। সব পরীক্ষার হলেই কিছু না কিছু রুলস থাকে। পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করা যাবে না। অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। নকল করা যাবে না। পরীক্ষককে হুমকী দেয়া যাবে না ইত্যাদি।এগুলো তো পরীক্ষার্থীর জন্য পালনীয় রুলস। এমনকি পরীক্ষকের কিছু রুলস থাকে। পরীক্ষক কাউকে প্রশ্নের উত্তর বলে দিতে পারবেন না। অযথা কারো খাতা নিতে পারবেন না। ধূমপান করতে পারবে না ইত্যাদি। পরীক্ষকের সামনে যদি কোন পরীক্ষার্থী ভুল আনসার দেয় তাহলে তিনি কি সে পরীক্ষার্থীকে বাঁধাপ্রদান করতে পারবেন? তিনি কি তাকে বলতে পারবেন যে, তুমি কেন ভুল উত্তর লিখছো? না। অবশ্যই না। যদি নীতিবিরুদ্ধ কোন কথা পরীক্ষার্থী খাতায় লিখতে থাকে আর পরীক্ষক সেটা দেখেন; তবুও না? না। তবুও না।

নীতিবিরুদ্ধ কথা খাতায় লিখার পরেও পরীক্ষার্থীকে বাঁধা না দেয়াটা কি পরীক্ষকের অন্যায় নয়? একদম না। কারণ এটাই তো পরীক্ষার রুলস। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একজন পরীক্ষার্থীকে কয়েকঘণ্টা সময়ের জন্য স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষার্থী খাতায় তার ইচ্ছানুযায়ী উত্তর লিখতে পারবে। এমনকি সে খাতায় ভুল কিংবা নীতিবিরুদ্ধ কথাও লিখতে পারবে। এজন্য পরীক্ষক তাকে বাঁধাপ্রদান করতে পারবে না। এমনকি তাকে সঠিক উত্তরটাও বলে দিতে পারবে না। অর্থাৎ পরীক্ষার্থী ভুল উত্তর খাতায় লিখা সত্ত্বেও পরীক্ষকের বাঁধাপ্রদান করা কিংবা তাকে সঠিক উত্তর জানিয়ে দেয়াটা অন্যায়। এটা কেউ অস্বীকার করবে না। কোনো ন্যায়নিষ্ঠ পরীক্ষক কি সে অন্যায় করবেন না। এই উদাহরণ বুঝে থাকলে বলুন তো তাহলে আমাদের স্রষ্টা যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারক। তিনি কীভাবে এ অন্যায়টা করতে পারেন? উনি কেন বাধা দিবেন? উনি কেন জবরদস্তি করবেন?

আল কুরআন,সূরা মুলক ৬৭:২ আয়াতেই বলা আছে,

“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

আল কুরআন,সূরা হুদ১১:৭ আয়াতে বলা আছে,

তোমাদের মধ্যে কে আমলে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।

আল কুরআন, সূরা মায়িদা ৫:৪৮ আয়াতে বলা আছে,

“আর আল্লাহ্‌ ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে এক উম্মত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। কাজেই সৎকাজে তোমরা প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহ্‌র দিকেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছিলে, সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।

আল কুরআন, সুরা জারিয়াত ৫১ঃ৫৬ আয়াতে বলা আছে,

আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে। 

স্রষ্টাকে কেবল তখনি দোষারোপ করা যেত যখন তিনি বিবেক-বুদ্ধি প্রদান ব্যতীত মানুষ সৃষ্টি করতেন এবং নীতিবিরুদ্ধ কাজ গুলোর শিক্ষা না দিয়েই পরীক্ষা শুরু করতেন। তিনি কি তা করেছেন? দুনিয়ার মধ্যে একমাত্র মানুষই সে সৃষ্টি যাকে স্রষ্টা বিবেক-বুদ্ধি প্রদান করেছেন। ভাল-মন্দ বুঝার মত ক্ষমতা প্রদান করেছেন। সাথে সাথে মন্দ কাজগুলো কি কি? তাও তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। কোন ধর্ষক যদি শিশুকে ধর্ষণ করতে থাকে হয়, আর স্রষ্টা যদি সে কাজে বাঁধা প্রদান না করেন তাহলে সেটা কি অন্যায়? সেটা কি তার ক্ষমতার দূর্বলতা নির্দেশ করে? নাকি পরীক্ষক হিসেবে এটা তার সঠিক দায়িত্ব পালনের ইঙ্গিত বহন করে?

দুনিয়াতে আল্লাহ সবাইকে ভাল-মন্দ কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন। এখন কোনো মানুষ যদি সেই স্বাধীনতার অপব্যাবহার করে তাহলে সেটার দায় অবশ্যই আল্লাহর নয় বরং যে অপরাধ করেছে তার। আল্লাহ কি বলেছেন মানুষকে শিশু ধর্ষণ করতে? উত্তর হচ্ছে না। তাহলে আল্লাহকে কেন দোষারোপ করতে হবে? আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন ভাল -মন্দ কাজ করার। এখন মানুষ নিজের ইচ্ছায় যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে সেটার জন্য মানুষ দোষী,আল্লাহ নয়। নবীজি (সা) এমন কোনো হাদিস বলেন নাই অথবা কুরআনে এমন কোনো আয়াত নেই যেখানে বলা হচ্ছে মানুষের অপরাধের জন্য আল্লাহ দায়ী বা আল্লাহ মানুষকে দিয়ে জবরদস্তি অপরাধ করান। তাই নাস্তিকদের ব্যাখ্যা যে ইসলামের দৃষ্টিতে ভুল সেটা স্পষ্ট। মানুষকে জবরদস্তি পাপ কাজ থেকে রক্ষা করতে আল্লাহ বাধ্য না আবার মানুষকে ভাল কাজ করার দিকেও জবরদস্তি করতেও আল্লাহ বাধ্য না। একজন মানুষ চাইলে তার নিজের স্বাধীনতা অনুপাতে অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে পারেন। ইসলামের দৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ এবং আশাপূর্ণ সমাধান আছে যা নাস্তিক্যধর্মে নেই। ইসলাম আমাদেরকে বলে কারও যদি সন্তান মারা যায় এবং সে যদি ধৈর্য ধরে তাহলে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে জান্নাতে দিবে। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মে এমন কিছু নাই। এখানেই নাস্তিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের কাছে নাকানিচুবানি খায়।

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:২১৬ আয়াতে বলা আছে, 

কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ্‌ জানেন তোমরা জান না।

অথচ নাস্তিক্যধর্মে নিজের সন্তান যদি মারা যায় তার আশাবাদী কোনো সমাধান নেই,আছে শুধু হতাশা ও নিরাশা আর দুঃখ ও কষ্ট। নাস্তিকরা আশাহীন একটি জাতি যারা নিরর্থকতার কালো বস্তায় বন্দী। না নিজের শিশু মারা গেলে অমানবিক কিছু হবে, আর না সেই শিশুকে কোনো নাস্তিক ধর্ষণ করলে কোনো অপরাধ হবে। এই হচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের বেহাল অবস্থা। নাস্তিক্যধর্মে হতাশা নিয়ে উপরে লিখেছি সেটা পড়ুন আর নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তা নিয়ে আরও প্রচুর লেখা আছে আমার সেসব বুঝে পড়ুন। দুঃখ,কষ্ট, দুশ্চিন্তা আর ইত্যাদি বিপদ মোকাবেলায় ইসলাম আমাদেরকে যেভাবে ভিতর থেকে আত্মবিশ্বাসী এবং সাহস সৃষ্টি করে আসুন জেনে নেই। নাস্তিকদের আদর্শে সান্ত্বনা দেবার মতো কিছু আছে কি?

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ২৮,সহিহ হাদিসঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৪৪,

সহিহ হাদিসঃআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের) শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেবেন।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।-ihadis.com

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ৮৩,সহিহ হাদিসঃ 

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএকদা তিনি নিজের প্রয়োজনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট অভিযোগ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হে আবূ সাঈদ! ধৈর্য ধর। কারণ, আমাকে যে ভালোবাসে তার কাছে অভাব-অনটন ঐরূপ দ্রুত গতিতে আসবে, যেরূপ পানির স্রোত উঁচু উপত্যকা থেকে এবং পাহাড়ের উঁচু জায়গা থেকে নীচের দিকে দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হয়।”-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৯৩,সহিহ হাদিসঃ 

যুবাইর ইবনু আদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমরা আনাস ইবনু মালেক (রাঃ)-এর নিকটে এলাম এবং তাঁর কাছে হাজ্জাজের অত্যাচারের অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। কারণ, এখন যে যুগ আসবে তার পরবর্তী যুগ ওর চেয়ে খারাপ হবে, শেষ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (আনাস (রাঃ) বলেন,) ‘এ কথা আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শুনেছি।-ihadis.com

সহিহ হাদিসে কুদসী,হাদিসঃ ১০৪,সহীহ হাদিসঃ 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার মুমিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদান নেই যখন আমি দুনিয়া থেকে তার কলিজার টুকরা গ্রহণ করি, আর সে তার জন্য সওয়াবের আশা করে ধৈর্য ধারণ করে” - টিকাঃ কলিজার টুকরোর মত সন্তানকে মৃত্যু দিয়ে গ্রহণ করি।-ihadis.com

সহিহ হাদিসে কুদসী,হাদিসঃ ১০৬,সহীহ হাদিসঃ 

আবু উমামা থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম, যদি তুমি ধৈর্যধারণ কর ও প্রথম দুঃখের সময় অধৈর্য না হয়ে তাতে সওয়াবের আশা কর, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট হব না”।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ১৪৫,হাসান হাদিসঃ

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যার তিনটি সন্তান মারা গেছে এবং সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করেছে, সে বেহেশতে যাবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আর দুটি সন্তান? তিনি বলেনঃ এবং দুটিও? আমি (মাহমূদ) জাবের (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহর শপথ! আমার তো মনে হয় আপনারা যদি এক সন্তানের কথাও বলতেন তবে তিনি তাই বলতেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমার ধারণাও তাই।-ihadis.com

সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব,হাদিসঃ১৮৯,সহিহ হাদিসঃ 

নবীজি (সা) বলেছেনঃ ধৈর্য উজ্জলতা।-ihadis.com

মুয়াত্তা ইমাম মালেক,হাদিসঃ৫৪৩,সহিহ হাদিসঃ 

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুসলমানদের কারো যদি তিনটি সন্তান মারা যায়, অতঃপর সে যদি তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে, তবে সন্তান তার জন্য (জাহান্নামের) আগুন হতে (রক্ষার) ঢালস্বরূপ হবে। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট জনৈকা মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! দু’টি সন্তানের মৃত্যু হলেও কি ? তিনি বললেন, দু’টি সন্তানের (মৃত্যু হলে)-ও।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ৯৮৭,৯৮৮,সহিহ হাদিসঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রকৃত ধৈর্য হচ্ছে বিপদের প্রথম ধাক্কাতেই ধৈর্যধারণ করা।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ১৩২৭,সহিহ হাদিসঃ 

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃউম্মে রুবাইয়ে’ বিনতে বারা’ যিনি হারেসাহ ইবনে সূরাকার মা, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে হারেসাহ সম্পর্কে কিছু বলবেন না? সে বদরের দিনে খুন হয়েছিল। যদি সে জান্নাতি হয়, তাহলে ধৈর্য ধারণ করব, অন্যথা তার জন্য মন ভরে অত্যধিক কান্না করব।’ তিনি বললেন, “হে হারেসার মা! জান্নাতের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের জান্নাত আছে। আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ ফিরদাউস (জান্নাতে) পৌঁছে গেছে। তিনি আরো বলেছেন, “যে মহিলার তিনটি শিশু মারা যাবে, সেই মহিলার জন্য ঐ শিশুরা জাহান্নাম থেকে পর্দা স্বরূপ হবে।” এক মহিলা বলল, আর দুটি মারা গেলে?” তিনি বললেন, “দুটি মারা গেলেও। (তারা তার মায়ের জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা হবে।)-ihadis.com

সবই তো আল্লাহর ইচ্ছায় হয় তাহলে আমার কি দোষ?

নাস্তিকরা একটি আয়াত দেখিয়ে প্রশ্ন করে,

সুরা তাকভীর ৮১ঃ২৯ আয়াতে আছে, তোমরা ইচ্ছে কর না যদি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছে না করেন।

তাহলে দুনিয়াতে যত অপরাধ হচ্ছে সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই হচ্ছে। তাহলে আল্লাহ দোষী হবে না কিভাবে? আল্লাহর ইচ্ছায় ধর্ষক ধর্ষণ করছে না? এমনকি নাস্তিকদেরকেও নাস্তিক বানিয়েছে আল্লাহ তাহলে নাস্তিকদের কি দোষ?

নাস্তিকরা পুরো কথা বলেন নাই এখানেই নাস্তিকদের চুরিবিদ্যা ধরা খেয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে প্রতিটি মানুষেরই ভালো ও মন্দ বাছাইয়ে স্বাধীনতা থাকবে। মানুষ ভালো-খারাপ পথ থেকে যা ইচ্ছা বাছাই করতে পারবে। আর মানুষের মাঝে "ইচ্ছাশক্তি"র অস্তিত্বটাই তো আল্লাহর ইচ্ছায় অস্তিত্ব পাওয়া। তাই না? তাই মানুষ যাই ইচ্ছা করে তা তো আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়,হচ্ছে কারণ আল্লাহ যদি মানুষকে ফ্রিডমের ইচ্ছা না দিতো তাহলে কি মানুষ ইচ্ছা করতে পারতো। এই কথাটিই বুঝিয়েছে উক্ত আয়াতে যে মানুষ ইচ্ছা করতে পারে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। তাহলে মন্দ কাজের জন্য নাস্তিকরা না অন্য অপরাধীরা কেন জাহান্নামে যাবে? আল্লাহ আপনাকে গাইড বুক দিয়েই রেখেছেন। এখন আপনি যদি নিজের ইচ্ছায় আল্লাহকে না মানেন তাহলে সেটার দায় আপনার কারণ আপনি যা ইচ্ছে করবেন সেটা আপনাকে আল্লাহর ইচ্ছায় করতে দেয়া হয়েছে। ইচ্ছা শক্তির অস্তিত্বটাই তো আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। বুঝেছেন?

সহজ উদাহরণ দেই। এইবার বুঝবেন আশা করি। ফেসবুকে আমরা যা যা করি সব কি জুকারবার্গ এর ইচ্ছায় হচ্ছে না? অবশ্যই। কারণ সে ফেসবুক না বানাইলে আমরা ফেসবুক চালাতেই পারতাম না। ধরুন সে বলল, ফেসবুক চালাতে চাইলেই তোমরা চালাতে পারবা না যদি না আমার ইচ্ছে হয়। কথাটি কিন্তু আসলেই সত্যি। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহার করে যে অপরাধ করা হয় এর জন্য কি মার্ক জুকারবার্গ দায়ী? আপনি বলতে পারেন " হুম" কারণ তার জন্যই ফেসবুক সবাই চালাতে পারছে কিন্তু আপনি তাকে অপরাধী বলতে পারবেন না। কেন? কারণ সে ফেসবুকে গাইড লাইন্স দিয়ে রেখেছে। এখন আপনি যদি আপনার ইচ্ছায় ফেসবুকের নিয়ম না মেনে অপরাধ করেন এর দায় আপনার, তার না। 

তেমনিভাবে আল্লাহর ইচ্ছাতেই আমরা ইচ্ছা শক্তির ব্যবহার করতে পারি। মন্দ ও ভালো সব ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছাতে হয় কিন্তু আমরা আল্লাহকে অপরাধী বলতে পারি না কারণ উনি আমাদেরকে গাইড লাইন দিয়েছেন। উনি বলেছেন আমরা যাতে মন্দের ইচ্ছা না করি। এখন আল্লাহর দেয়া গাইড লাইন আপনি না মেনে যদি ভুল পথে চলেন সেটার দায় আপনার, অবশ্যই আল্লাহর নয়। তাছাড়া কুরআনে শুধু সেই একটা আয়াতই বর্ণিত হয় নাই আরও আয়াতও আছে। কিন্তু নাস্তিকরা এসব দেখাবে না।

আল কুরআন, সুরা কাহফ ১৮ঃ২৯ আয়াতে বর্ণিত, 

বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।

আল কুরআন, সুরা রুম ৩০ঃ৪৪ আয়াতে বর্ণিত,

যে কুফরী করে, তার কফুরের জন্যে সে-ই দায়ী এবং যে সৎকর্ম করে, তারা নিজেদের পথই শুধরে নিচ্ছে।

 আল্লাহ মানুষকে যে ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন সেটা তো আল্লাহর ইচ্ছাতেই মানুষ পেয়েছে তাই না? সেহেতু মানুষের মধ্যে যেই স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি রয়েছে সেটাকে যদি আল্লাহর ইচ্ছায় বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে তো মানুষের মধ্যে কোনো ইচ্ছা শক্তিই থাকবে না আর পরিক্ষা করাও যাবে সেহেতু আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষ স্বাধীন ইচ্ছা পেয়েছে কিন্তু এই শক্তির ভুল ব্যাবহার আল্লাহ নিষেধ করেছেন তাই এখন মানুষ যদি নিজের ইচ্ছার ভুল ব্যাবহার করে অপরাধ করে তাহলে সেটার জন্য মানুষ নিজেই দায়ী হবে। আল্লাহকে দায়ী করা যাবে না। আর সার্বিক দৃষ্টিতে এটাই হচ্ছে সেই আয়াতের স্পষ্ট ব্যাখ্যা যা নাস্তিকরা নিজেরা বুঝতে চায় না এবং অন্যকেও সঠিকটা বুঝতে দিতে চায় না।

আল্লাহ যখন কোনো কিছু সৃষ্টি করেন, তখন তিনি সেগুলো সৃষ্টি করেন যাতে তারা ভালো কিছু নিয়ে আসে। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতিটি বিষয়ে কল্যাণ বা উপকার আছে কিন্তু আপনি যদি সেই উপকার করা বস্তু গুলোকে ভুল প্রয়োগ করেন তাহলে সেটা আপনার জন্য মন্দ বলে গণ্য হবে। মানুষ তার নিজের ইচ্ছার মাধ্যমে মহাবিশ্বে সৃষ্টি করা ভাল জিনিসগুলিকে খারাপ জিনিসগুলিতে রূপান্তর করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আগুনের সৃষ্টি দরকারী। তবে কেউ যদি আগুনে হাত দেয় তবে তা তার জন্য মন্দ হবে। বস্তুত, আল্লাহ আগুন সৃষ্টি করেছেন যাতে মানুষ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারে। যদি কেউ নিজের ইচ্ছায় আগুনে হাত দেয়, তবে সে বলতে পারে না, "আল্লাহ কেন আগুন সৃষ্টি করেছেন?", "আগুন আমার হাত কেন পুড়িয়ে দিয়েছে?", "আল্লাহ কেন অনুমতি দিয়েছেন?" আল্লাহ মহাবিশ্বের উপর আরোপিত আইন আছে। আপনি যদি সেই আইনগুলি মেনে চলেন তবে আপনি কিছু সুবিধা পাবেন; অমান্য বা অবাধ্য হলে আপনার ক্ষতি হবে।

মানুষের জন্য, কুরআনের অভিব্যক্তির মাধ্যমে, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাঁর ইবাদত করে; তিনি মানুষকে খারাপ কাজ, কুৎসিত কাজ ও দুষ্টুমি থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন; তিনি বলেছিলেন যে যারা তাঁর আনুগত্য করে না তাদের তিনি কঠোর অত্যাচারের সাথে শাস্তি দেবেন এবং তিনি একাধিক নবী প্রেরণের মাধ্যমে সমস্ত বিষয়ে মানুষকে সতর্ক পর্যন্ত করেছেন। যারা তাদের দায়িত্ব পালন করে না এবং সেই আদেশগুলি পালন করে না তারা পরিণতি ভোগ করবে তাদের কর্ম অনুযায়ী। আল্লাহ কেন মন্দ কাজ থেকে সরাসরি বাধা দেন না তার কারণ হল এই পৃথিবীতে আমাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পৃথিবী পরীক্ষার জায়গা; মানুষ ভাল কাজ এবং খারাপ কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়. যারা খারাপ কাজ করে এবং যারা ভুল করে তাদের যদি হস্তক্ষেপ করা হয় তবে পরীক্ষাটি অর্থহীন হবে। যারা ভালো কাজ করেছে তাদের ওপর যদি আকাশ থেকে গোলাপ নিক্ষেপ করা হয় এবং যারা খারাপ কাজ করে তাদের ওপর যদি কাঁটা ছুঁড়ে দেয়া হতো সাথে সাথে তাহলে পৃথিবীটা পরীক্ষার জায়গা হতো না।

দুনিয়ার সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। যতো খারাপ কাজ হয় সব আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। এই কথাটিও কিন্তু ভুল নয়। ভুল হচ্ছে কথাটি ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে নেয়া। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে কি অপরাধের জন্য আল্লাহ দায়ী? উত্তর হচ্ছে না। এমনকি আমার কথাটি বৈপরীত্যও হচ্ছে না। কিভাবে?

 সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারলে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। খাতায় ছাত্র ভুল লেখে,যা বৈধ নয় ঠিক নয় তা লেখে এসব কিন্তু শিক্ষকের ইচ্ছায় হয়। কারণ পরিক্ষাটা শিক্ষকই নিচ্ছেন। শিক্ষক পরিক্ষা না নিলে কিন্তু ছাত্র খাতায় লিখতেই পারতো না। শিক্ষক নিজেই দেখছেন ছাত্র ভুল লিখছে। এমনকি পরিক্ষার সিস্টেমটাই তো শিক্ষকরা বানিয়েছে। তো ছাত্র ফেল করলে ফেলটা কিন্তু শিক্ষকের ইচ্ছাতেই হলো। কিন্তু তার মানে কি শিক্ষককে দোষী বলা যাবে? উত্তর হচ্ছে না। কারণ শিক্ষকের গাইডলাইন। এই পয়েন্টটাই নিজেদের মূর্খতার জন্য নাস্তিকরা বুঝতে পারে না। না বুঝেই আল্লাহকে দোষ দেয়। সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হচ্ছে, আল্লাহই সব কিছুই হতে দিচ্ছেন। আল্লাহ ইচ্ছায় আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে উপভোগ করছি। কিন্তু তার মানে এই না যে আল্লাহ অপরাধী। আল্লাহ বান্দার অপরাধের জন্য দায়ী না কারণ আল্লাহ গাইডলাইন দিয়ে রেখেছেন। এখন আপনি যদি আল্লাহর গাইডলাইন না মেনে নিজের ইচ্ছায় খারাপ কাজ করেন এর জন্য আপনি নিজেই দায়ী। আল্লাহ কোনো ভাবেই দায়ী নয়। আপনাকে ছাড় দেয়া, আপনাকে স্বাধীনতা দেওয়া সবই আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীন। কিন্তু তার মানে এই না যে আল্লাহ চান আপনি অপরাধ করুন যেভাবে সব কিছু শিক্ষকের ইচ্ছাতে হলেও উনি চান না আপনি পরিক্ষায় ফেল মারুন।

নাস্তিকরা এখানে প্রশ্ন করতে পারে,আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিটাই বা কেন দিলেন? না দিলেই তো হতো,মানুষ অন্যায় কাজ করার ইচ্ছাটাই পেতো না। এই প্রশ্নের জবাব হচ্ছে,কাউকে স্বাধীন ইচ্ছা দেয়াটা মন্দ নয়। মন্দ হচ্ছে কেউ যখন নিজের ইচ্ছায় ভুল পথটা বেছে নেয় সেটা। উদাহরণ দিয়ে দিচ্ছি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনি।

ধরুন আপনার আট তোলা বাড়ি আছে। আপনার সেই বাড়িতে কিছু ভাড়াটিয়া ধরুন মুক্তচিন্তায় গাজার বিজনেস করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছে। পুলিশ তাদেরকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে সেই মুক্তমনারা যুক্তি দিল যে, আমাদের বাড়িওয়ালা যদি এই বাড়ি না বানাতেন তাহলে আমরা এই বাড়িতে আসতেও পারতাম না এমনকি মুক্তচিন্তায় গাজার বিজনেসও করতে পারতাম না সুতরাং আমাদের কোনো অপরাধ নেই। সব অপরাধ আমাদের সেই বাড়িওয়ালার। সেই মুক্তমনাদের যুক্তি কি ঠিক নাকি ভুল? আপনার মাথায় বুদ্ধি থাকলে আপনি অবশ্যই বলবেন তাদের যুক্তিটি ভুল। তার মিথ্যা কথাটি বলেছে। কারণ আপনি কখনোই এটা বলেননি যে আপনার বাড়িতে গাজার বিজনেস করা যাবে। অথচ আপনিই কিন্তু বাড়িটি বানিয়েছেন। বাড়ি বানানো অথবা কাউকে বাড়িতে থাকতে দেয়াটাও খারাপ বা মন্দ নয়। মন্দ বা খারাপ হবে তখন যখন কেউ নিজের ইচ্ছায় খারাপটি বেছে নিচ্ছে। 

আবার ধরুন মোবাইল আপনি আবিস্কার করেছেন। এখন কোনো ডাকাত দলের লিডার মোবাইল দিয়ে তার নিজের লোকদেরকে ডাকাতি করবার ফন্দি আটলো। এই ক্ষেত্রে কোনো লোক যদি বলে মোবাইল আবিস্কার না করলেও হতো। মোবাইল বানানো হয়েছে দেখেই ডাকাতটি নিজের লোকদেরকে নিয়ে এই পাপ কাজ করেছে। না হলে করতো না। কেউ চাইলে এই কথাটি বলতে পারে কিন্তু তার কথাটি সঠিক হবে না। কারণ আপনার মোবাইল আবিস্কার করাটি খারাপ নয়। খারাপ হচ্ছে কেউ যখন সেটিকে ভুল ভাবে প্রয়োগ করে সেটা। এর জন্য দায়ীও সেই লোক যিনি মোবাইলটি ভুল ব্যবহার করেছেন।

উদাহরণ গুলো বুঝে থাকলে এটা বুঝতে আপনার আর অসুবিধা হবে না যে, কাউকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দেওয়াটা মোটেও অন্যায় কিছু নয়। অন্যায় হবে তখন যখন কোনো লোক নিজের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিকে ভুল ব্যবহার করছে এবং এর জন্য সে নিজেই দায়ী কারণ সে নিজেই ভুল পথ বেছে নিচ্ছে। আল্লাহ কোনো ভাবেই এখানে দায়ী নন। কারণ আল্লাহ স্বাধীন ইচ্ছা ভুল ব্যাবহার করতে বলেন নাই। যদি বলতেন তাহলে আল্লাহকে আপনি দোষী বলতে পারতেন কিন্তু এখন পারবেন না কারণ আল্লাহ আপনাকে ভালো পথে চলতে বলেছেন এবং খারাপ পথ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আল্লাহ আপনাকে ভালো পথে চলতে আদেশ করেছেন আপনি সেই পথে কেন চলছেন না? নিজেকে সততার সাথে এই প্রশ্নটি করুন। আপনি নিজেই আরও জবাব পেয়ে যাবেন।

ইসলামে ধর্ষকের শাস্তি নাই?

নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইসলাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলতে বুক কাপে না মুক্তমনা নাস্তিকদের। তারা বলে থাকে ইসলামে নাকি ধর্ষণের শাস্তি নাই। কিন্তু এটি ইসলাম নিয়ে তাদের অন্ধবিশ্বাস। ইসলামের ধর্ষণের শাস্তি তো আছেই একইসাথে এর ধারের কাছেও যেতে নিষেধ করা হয়েছে ইসলামে। এখন এসব প্রমাণ যদি নাস্তিকরা লুকিয়ে রেখে দাবি করে ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি নাই তাহলে দোষটি আসলে কাদের?

আল কুরআন, সুরা আনআম,৬:১৫১ আয়াতে বলা আছে, 

অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না,প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭:৩৩ আয়াতে বলা আছে, 

আল্লাহ হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা। আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক করা যার কোন সনদ তিনি নাযিল করেননি।

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৫২২০,সহিহ হাদিসঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাশীল কেউ নয় এবং এ কারণেই তিনি সকল অশ্লীল কাজ হারাম করেছেন আর (আল্লাহ্‌র) প্রশংসার চেয়ে আল্লাহ্‌র অধিক প্রিয় কিছু নেই।-ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৪৬৩৪,সহিহ হাদিসঃ 

আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নিষিদ্ধ কার্যে মু’মিনদেরকে বাধা দানকারী আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক কেউ নেই, এজন্যই প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করেছেন, আল্লাহ্‌র প্রশংসা প্রকাশ করার চেয়ে প্রিয় তাঁর কাছে অন্য কিছু নেই, সেজন্যেই আল্লাহ আপন প্রশংসা নিজেই করেছেন। ‘আম্‌র ইবনু মুররাহ্ (রহ.) বলেন, আমি আবূ ওয়ায়িলকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, এটাকে কি তিনি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণী হিসেবে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।-ihadis.com

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৬৯৪৯,সহিহ হাদিসঃ 

লায়স (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ লায়স (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সুফীয়্যাহ বিন্‌ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমর (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী (রহঃ) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল, বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জারিমানা নেই। কিন্তু তার উপর ‘হদ’ জারি হবে।-ihadis.com

এতো এতো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় যে ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি নেই এরপরেও এটা প্রমাণ হয় না যে ধর্ষণের শাস্তি হবে না। ইসলামিক রাষ্ট্রে যদি ইসলামিক শাসক এই আইন প্রণয়ন করেন না যে ধর্ষণের শাস্তি হবে তাহলে সেটা কার্যকর বলে গণ্য হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা জায়েজ আছে।

জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ১৭০৭,সহিহ হাদিসঃ 

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল মুসলমানেরই নেতার কথা শোনা ও আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য, তা হোক তার পছন্দের বা অপছন্দের, তাকে যে পর্যন্ত গুনাহের কাজের নির্দেশ না দেওয়া হবে। যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেওয়া হয় তাহলে তা না শুনা এবং না মানাই তার কর্তব্য।

ইসলামে একজন নেতা অবশ্যই দায়িত্ববান হতে হবে। ইসলাম আমাদেরকে কি শিক্ষা দেয় ভালো করে মাথায় বসিয়ে নিন। কারণ নাস্তিকরা এসব আপনাদেরকে কখনো দেখাবে না। বলবেও না।

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৬১৮, সহিহ হাদিসঃ 

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্ববান এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ‘আমীর বা নেতা তার অধীনস্থ লোকদের উপর দায়িত্ববান এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের উপর দায়িত্বশীল, সে তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বীয় স্বামীর বাড়ী ও সন্তানের উপর দায়িত্ববান, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। গোলাম তার মুনিবের মাল-সম্পদের উপর দায়িত্ববান, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ওহে! তোমাদের প্রত্যেকেই (স্ব-স্ব স্থানে) একজন দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। - এখন কুরআন ও সুন্নাহের সকল বিধানের সুত্রকে একত্রে করে ইসলামের রাষ্ট্রের সরকার বা নেতা যদি একজন ধর্ষককে ফাঁসি দিক,ধর্ষকের কল্লা ফেলে দিক, যত কঠিন শাস্তিই দিক না কেন সেটা গ্রহনযোগ্য হবে।-ihadis.com

ইসলাম সরাসরি অশ্লীলতার (ধর্ষণের) কাছেও যেতে নিষেধ করেছেন এবং কেউ ধর্ষণ করলে তার শাস্তি হচ্ছে মেরে দেশ থেকে বের করে দেয়া। ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির বিধান নিয়ে একটি দলিল ভিত্তিক আলোচনা শুনুনঃ শায়েখ আহমাদুল্লাহ (হা:ফি) এর (৪)। ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী যদি আল্লাহ জবরদস্তি করে মানুষকে অপরাধ করাবেনই তাহলে ধর্ষণের শাস্তির বিধান দেয়া হতো না। দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে বা ধর্ষণ বন্ধ করতে আল্লাহ মানুষকে দায়িত্ব দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্ব পালন না করা মানুষদের জন্য অবশ্যই মন্দ কাজ।

আল কুরআন, সুরা নিসা ৪:৫৮ আয়াতে বলা আছে। 

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাং সা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।

আল কুরআন, সুরা আরাফ ৭:৫৬ আয়াতে বলা আছে,

দুনিয়াতে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিও না।

আল কুরআন, সুরা রাদ ১৩:১১ আয়াতে বলা আছে,

আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

সুতরাং ধর্ষণমুক্ত সমাজ বানাতে হবে। দুনিয়াকে অপরাধ মুক্ত করতে হবে এটা মানুষের উপর দায়িত্ব দিয়েছেন আল্লাহ। এখন মানুষ যদি সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে তাহলে আল্লাহ বিচার দিবসে কঠিন উপযুক্ত শাস্তি দিবেন। কোনো সংশয় নাই। তাই নাস্তিকরা যে বলে আল্লাহকে দুনিয়াতে এসে সব কাজে হস্তক্ষেপ করতে হবে এসব কথা আসলে নাস্তিকদের ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস। নাস্তিকদের দাবি ও ইসলামবিরোধী বিশ্বাসের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই।

অন্যায় কাজ হতে বাধা দেয়া ও সৎ উপদেশ দেয়াঃ


আল কুরআন, সুরা বাকারা, ২ঃ১৭৭ আয়াতে বলা আছে,

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।


আল কুরআন, সুরা মায়িদা ৫ঃ৩২ আয়াতে বলা আছে,

আল্লাহ ইরশাদ করেন : ‘কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যাকারী অথবা পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টিকারী ব্যতিত কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে যে হত্যা করল সে তো পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কোন নিরপরাধ ব্যক্তির প্রাণ রক্ষা করল সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’


আল কুরআন,সুরা বাকারা ২ঃ১৯৫ আয়াতে বলা আছে,

তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না আর মানুষের সঙ্গে সদাচরণ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সদাচরণকারীদের ভালোবাসেন।’


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৫৪১, সহিহ হাদিসঃ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা পথে বৈঠক করা হতে সাবধান থাকো। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! রাস্তায় বসা ব্যতীত আমাদের উপায় নেই। সেখানে আমরা আলাপচারিতায় থাকি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিতান্তই যদি তোমাদের বসতেই হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। তারা প্রশ্ন করলেন, রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি নিচু রাখা, (কাউকে) কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের উত্তর দেয়া এবং সৎ কাজের নির্দেশ করা ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।-ihadis.com


সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫৫, সহিহ হাদিসঃ

হুযায়ফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা উমার (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপর্যয় সম্পর্কে যেসব কথা বলে গেছেন, তোমাদের মধ্যে কে সেগুলো অধিক স্মরণ রাখতে পেরেছে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমি। উমার (রাঃ) বলেন, তুমি তো অবশ্যই বাহাদুর ছিলে। তিনি আরও বলেন, তা কিরূপ? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির পরিবার-পরিজনে, সন্তান ও প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে যে বিপদ অর্থাৎ ত্রুটিবিচ্যুতি হয়, এগুলোর কাফফারা হলো নামায, রোযা, দান-খয়রাত, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান। উমার (রাঃ) বলেন, আমি এ ফিতনা সম্পর্কে জানতে চাইনি। আমি সেই ফিতনা সম্পর্কে জানতে চাই যা সমুদ্রের তরঙ্গের ন্যায় মাথা তুলে আসবে। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এই ফিতনা ও আপনার মধ্যে কী সম্পর্ক? আপনার ও সেই ফিতনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা আছে। উমার (রাঃ) বলেন, সে দরজাটি কি ভাঙ্গা হবে, না খুলে দেয়া হবে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, না, বরং তা ভাঙ্গা হবে। উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর তা তো আর বন্ধ হওয়ার নয়। শাকীক (রাঃ) বলেন, আমরা হুযায়ফা (রাঃ)কে বললাম, উমার (রাঃ) কি সেই দরজা সম্পর্কে জানতেন? তিনি বলেন, হাঁ, এতটা জানতেন যেমনিভাবে আগামী কালকের দিন গত হওয়ার পর রাত আসা সম্পর্কে জানতেন। আমি তার নিকট একটি হাদীস বর্ণনা করেছি, যা ছিল নির্ভূল। অতঃপর আমরা হুযায়ফা (রাঃ) কে সেই দরজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে ভয় পাচ্ছিলাম। আমরা মাসরূক (রাঃ) কে বললাম, আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন। তিনি হুযায়ফা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সেই দরজাটি ছিল উমার (রাঃ)।-ihadis.com


রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ১৬৩১, সহিহ হাদিসঃ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওখানে আমাদের বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমরা (ওখানে) বসে বাক্যালাপ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমরা রাস্তায় বসা ছাড়া থাকতে না পার, তাহলে রাস্তার হক আদায় কর।’’ তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি অবনত রাখা, (অপরকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ দেওয়া ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।’’-ihadis.com


দুনিয়াতে আল্লাহ ভালো মন্দ উভয় কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলা যায়,আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীকে স্থায়ী পৃথিবী করেননি। এটি একটি অস্থায়ী পৃথিবী এবং এখানে সবকিছুর একটি সময়সীমা রয়েছে। যখন এর সময় আসবে তখন এটি মারা যাবে, শেষ হয়ে আসবে এবং শেষ হবে। এই জগতের ভালো জিনিস চিরস্থায়ী নয়, খারাপ জিনিসও চিরস্থায়ী নয়। আমরা এখানে অল্প সময়ের জন্য আছি এবং আমাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তারা একটি চিরন্তন জগত খুঁজে পাবে যা নিখুঁত এবং স্থায়ী। যারা এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে তারা তাদের পাপ ও দুর্নীতির খারাপ পরিণতি দেখতে পাবে। আল্লাহ এই মহাবিশ্বে একটি দৈহিক আইন এবং একটি নৈতিক আইন স্থাপন করেছেন। এই আইনগুলির এক বা একাধিক ভঙ্গ হলে আল্লাহ দুঃখকষ্ট ঘটতে অনুমতি দেন। শারীরিক আইন কারণ এবং প্রভাব উপর ভিত্তি করে. অসুস্থতা আসে যদি কেউ নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন না নেয় বা সংক্রমণের সংস্পর্শে আসে। একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে যখন কেউ সতর্ক না হয়, বা অসতর্কভাবে গাড়ি চালায়, অথবা যদি গাড়ি চেক না করা হয়, রাস্তা এবং ফ্রিওয়েগুলি তৈরি না করা হয় এবং সঠিক আকারে রাখা হয় না, বা ট্রাফিক আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না বা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না। সুরক্ষার সুবিধার্থে কারণ এবং প্রভাবের অধ্যয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানেও আমাদের মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ অনেক সময় আমাদের রক্ষা করেন এবং তিনি আমাদেরকে সব অবহেলায় কষ্ট পেতে দেন না। কতবার এমন হয় যে আমরা সতর্ক না হয়েও নিরাপদে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাই। কিছু শহরে লোকেরা যেভাবে গাড়ি চালায়, এটি একটি অলৌকিক ঘটনা যে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে না এবং বেশি লোকের ক্ষতি হয় না।


আমরা বলতে পারি যে আমাদেরকে আল্লাহর প্রাকৃতিক ও নৈতিক আইন মেনে চলতে হবে তা শেখানোর জন্য দুর্ভোগ ঘটে। এটা কখনো কখনো আল্লাহর প্রাকৃতিক বা নৈতিক আইন লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দেওয়া। এটা আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস পরীক্ষা করা এবং মানবিক মূল্যবোধ ও দাতব্যের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পরীক্ষা করা। যখনই আমরা দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হই তখনই আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিত, "আমরা কি আল্লাহর কোন বিধান ভঙ্গ করেছি?" আসুন আমরা সমস্যার কারণ অধ্যয়ন করি এবং সংশোধনমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করি। "এটা কি শাস্তি হতে পারে?" আসুন আমরা অনুতপ্ত হই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আমাদের পথ সংস্কার করি। "এটি কি আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা এবং পরীক্ষা হতে পারে?" আসুন এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি।

উপসংহারঃ

আল্লাহ দুনিয়াতে এসে সকল মন্দ কাজ দূর করে দিয়ে যাবেন এমন ধারণা ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। আল্লাহ মানুষকে ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে বিরত থাকতে বলেছেন। দুনিয়াকে আল্লাহ মানুষের জন্য পরিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বানিয়েছেন। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ যেমন ভালো কাজ করবার সুযোগ পাবে তেমনি মন্দ কাজ করবারও সুযোগ পাবে। অন্যদিকে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে মুক্তচিন্তায় শিশু হত্যা করা জায়েজ শুধু জায়েজই না বরং শিশুকে ধর্ষণ করার মুক্তচিন্তা করা যাবে যদি কোনো নাস্তিক চায়। শিশুর মৃত্যুতে কোনো পিতা দুঃখ কষ্ট থেকে ডিপ্রেশনে গিয়ে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হতে পারে কিন্তু ইসলাম মুসলিমদেরকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে এবং সকল দুঃখ কষ্ট অশান্তিকে মোকাবেলা করতে শিক্ষা দেয়। ইসলাম মন্দ কাজের আদেশ দেয় না। ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি রয়েছে। ইসলাম আমাদেরকে সভ্যতা শিক্ষা দেয় অন্যদিকে নাস্তিক্যধর্ম অসভ্যতারই অপর নাম।

তথ্যসুত্রঃ

(১) The six countries in the world with the most 'convinced atheists'

https://www.independent.co.uk/news/uk/atheists-countries-list-six-world-most-convinced-a6946291.html

(২) Incest Scandal Sets Off a New #MeToo Movement in France

https://www.nytimes.com/2021/01/18/world/europe/duhamel-france-incest.html?fbclid=IwAR3-EVutR-F8I97bPGPAxR8Cqc7RSsZGJdIWhxU3eKrJsWYznHYMU57UPeE

(৩) মৃত শিশুদের জান্নাত-জাহান্নাম

https://www.hadithbd.com/books/link/?id=12187

(৪) ইসলামে ধর্ষণের নজীর বিহীন শাস্তি, ধর্ষণ বন্ধের একমাত্র উপায়

https://www.youtube.com/watch?v=Px3RVz9ocxU

===

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post