বিষয়ঃ মীরজাফরদের মুক্তচিন্তা
লিখেছেনঃ এমডি আলী
=======================
ভূমিকাঃ মুক্তচিন্তা কখনো নিয়মের গ্যাঁড়াকলে বন্দী থাকতে পারে না। একজন নাস্তিকের যেমন যা ইচ্ছে তাই মুক্তচিন্তা করার অধিকার রয়েছে তেমনি যে কোনো মানুষের রয়েছে নিজের ইচ্ছামতো মুক্তভাবে চিন্তা করার। ইসলাম আমি মানবো কি মানবো না এটা সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার যেমন আমার- নাস্তিকরা যেভাবে বলে আরকি, তেমন প্রতিটি মানুষের এই অধিকার রয়েছে সে কোন ধরনের নৈতিকতা মানবে নাকি মানবে না। চিন্তারমুক্তির আন্দোলন নামধারী সস্তা সংগঠনের কোনো নাস্তিক যদি বলে এভাবে মুক্তচিন্তা করা যাবে আর সেভাবে মুক্তচিন্তা করা যাবে না তাহলে যুক্তিগতভাবে সেটা আসলে মুক্তচিন্তার মধ্যেই গণ্য হবার নয়। যারা বিশ্বাস করে নৈতিকতা আকাশ থেকে এসে পড়ে না, মানুষই নৈতিকতার উৎস সেখানে কোনো নাস্তিক যদি অন্যরা কি মুক্তচিন্তা করবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে চায় তাহলে একে কি আসলেই মুক্তচিন্তা বলা যাবে?
পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফরের মুক্তচিন্তাঃ
রবার্ট ক্লাইভ দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের সাথে ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে সন্ধিভঙ্গের অভিযোগ আনয়ন যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং নবাবের বিরুদ্ধে সসৈন্যে আগ্রসর হন। অন্যদিকে, নবাবও পূর্ব থেকেই ইংরেজদের দুরভিসন্ধিমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে জ্ঞাত থাকায়, তিনিও ইংরেজদের বিরুদ্ধে সমর প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং সামনের দিকে অগ্রসর হন। মুর্শিদাবাদ হতে ২৩ মেইল দক্ষিণে ভাগীরথী নদীর তীরে নবাব সৈন্য মোতায়েন করেন। নবাবের সৈন্য বাহিনীতে ছিল ৫০০০০ পদাতিক ও ১৮ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের বিশাল বাহিনী। এছাড়া ছিল ৫৩টি কামান।
অপরপক্ষে, ধুরন্ধুর ক্লাইভ পলাশীর আম্রকাননে অবস্থান গ্রহণ করেন। ক্লাইভের বাহিনীতে ছিল ৩০০০ ইংরেজ ও ভারতীয় তথা দেশীয় সৈন্য এবং মাত্র ৮টি কামান। অতঃপর ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে এক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। মীরজাফর আলী খাঁ ক্লাইভের সাথে পূর্ব চুক্তিমত তার বিশাল বাহিনীসহ যুদ্ধক্ষেত্রে নির্লিপ্তের ভূমিকা পালন করেন। আর অন্যদিকে নবাবের একনিষ্ঠ ভক্ত এবং দেশপ্রেমিক মোহনলাল ও মীরমদন এবং ফরাসি সেনপতি সিনফ্রে প্রাণপণ যুদ্ধ করে ইংরেজ বাহিনীর উপর কঠিন আঘাত হেনে বিপর্যস্ত করে তোলে। ফলে নবাব বাহিনী সমর কুশলতার সম্মুখে ইংরেজ বাহিনী টিকে থাকতে ব্যর্থ হয় এবং পার্শ্ববর্তী আম্রকুঞ্জের আড়ালে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
আকস্মাৎ ইংরেজ সেনাদের নিক্ষিপ্ত গোলার আঘাতে মীরমদন নিহত হলে, নবাব হতভম্ব এবং অতিশয় বিচলিত হয়ে পড়েন। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা তাৎক্ষণিক সিপাহসালার মীরজাফর আলী খাঁনকে ডেকে অনেক অনুনয় বিনয়, এমনকি পবিত্র কুরআন শপথের মধ্যে দিয়ে ‘মুকুট’ তথা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অনুরোধ করেন। মীরজাফর নবাবকে মৌখিক আনুগত্য অতিমাত্রায় প্রদর্শন করে ক্লাইভের সাথে পূর্ব স্বাক্ষরিত ষড়যন্ত্র মোতাবেক নবাবের সর্বনাশ সাধনের চেষ্টা করতে থাকেন। সেনাপতি মোহনলাল ও সিনফ্রে প্রাণপণ যুদ্ধ করে যখন নবাবের বিজয়কে সুনিশ্চিত করেন, ঠিক-এমনকি মুহূর্তে মীরজাফরের পরামর্শে নবাব যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দেন। এতে করে মোহনলাল ও সিনফ্রে মর্মাহত হন।
বিজয়ের মুখে যুদ্ধ বন্ধ করার নবাবের এই আদেশ তার সৈন্যদেরকে নিরুৎসাহিত করে তুলে। নবাবের সৈন্যদের মধ্যে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। এই সুযোগে এবং মীরজাফরের ইঙ্গিতে রবার্ট ক্লাইভ নবাবের বিশৃঙ্খল বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করেন। এতে করে নবাবের বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। মীরজাফর, ইয়ার লতিফ খান, খাদিম হোসেন, রাজা রায় দুর্লভ ও রাজবল্লভের নির্দেশে তাদের নেতৃত্বাধীন সৈন্যগণ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে পড়ে এবং অনেকেই ইংরেজ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে। নবাবভক্ত মোহনলাল সামান্য কিছু সৈন্য নিয়ে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে চান। কিন্তু সল্পসংখ্যক সৈন্য দিয়ে তিনি শেষ রক্ষা করতে পারেন নি। ফলে পলাশীর প্রান্তরে অনেকটা বিনাযুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ জয় লাভ করেন।
পলাশী প্রান্তরে নবাব পরাজিত হয়ে পুনরায় মুর্শিদাবাদ ফিরে এসে সৈন্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। সৈন্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে নবাব স্বীয় স্ত্রী লুৎফুননেছা এবং কন্যার হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে পালায়ন করেন। পরিশেষে নবাব রাজমহল প্রত্যাবর্তনের পথে ভগবান গোলার ঘাটে মীরজাফরের জামাতা মীর কাশিম ধৃত হন। ধৃত নবাবকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে আসা হয়। অবশেষে ১৯৫৭ সালের ২ জুলাই মীরজাফরের দুশ্চরিত্র পুত্র মীরনের আদেশে মোহাম্মদী বেগ নবাবকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। সাথে আলীবদীখানের সকল উত্তরাধিকারীকেও হত্যা করা হয়। এর এভাবেই অবসান ঘটে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার অধ্যায়ের।
প্রধান সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা পলাশীর যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করেছিল। কারণ মীরজাফর যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করতো, তাহলে পলাশীর যুদ্ধের ফল উল্টো হতো বলে ধারণা করা হয়। মীরজাফর পুনরায় সেনাধ্যক্ষের পদ লাভ করে, সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে ‘ষড়যন্ত্রের নীলনকশা’ তৈরি করতে থাকেন। ক্লাইভ-মীরজাফরের আঁতাতের কথা কথা জানতে পেরেও নবাব মীরজাফরকে গ্রেপ্তার বা শাস্তি প্রদান করেন নি। বরং বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর ক্ষমা প্রদান করে এবং যুদ্ধের দায়িত্ব অর্পণ করে নবাব নিজের ভুলটি ডেকে আনেন।
নবাবের বিরুদ্ধে দরবারের অমাত্যবর্গের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র তার পতনের জন্য দায়ী ছিল। নবাব হিসেবে সিংহাসন বসার পর তার বিরুদ্ধে দরবারের অমাত্যবর্গ, যেমনঃ মীরজাফর, জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, মানিকচাঁদ, রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হন। নবাব দেশে ফিরে এই চক্রান্তের কথা জানতে পেরেও, তাদের কোঠর হস্তে দমন না করে তাদেরকে একাধিকবার ক্ষমা প্রদর্শন করেন। অথচ নবাব যদি তৎক্ষণাৎ ষড়যন্ত্রকারীদের আটক করতেন, তাহলে চক্রান্ত বেশিডুর গড়াতে পারতো না। কিন্তু নবাব এখানেই মারাত্তক ভুলটি করেন।
পরিশেষে বলা যায় যে,পলাশীর যুদ্ধ নিঃসন্দেহে বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে সর্বাধিক হৃদয়বিদারক ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজগণ কোন রণদক্ষতার দরুন নয়, বরং বিশ্বাসঘাতকতার দরুনই এদেশে শক্তি প্রতিষ্ঠায় জয়লাভ করে। এ যুদ্ধ মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী ও গৌরবময় ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে এবং বহুকাল ধরে মুসলমানগণ একটি হতাশাব্যঞ্জক, দিশেহারা ও দুর্দশাগ্রস্থ জাতিতে পরিণত হয়েছে। তাই বলা যায়, পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে অত্যন্ত করুণভাবে।পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করার মাধ্যমে ইংরেজরা বাংলার সম্পূর্ণ ক্ষমতা দখল করতে পারে নি। তারা প্রথমে মীরজাফর এবং পরে মীর কাশিমকে সিংহাসনে বসায়। যদিও প্রকৃত ক্ষমতা ইংরেজদের হাতেই সংরক্ষিত ছিল। মীর কাশিম ইংরেজদের বাধা দিতে গেলে ১৭৬৪ সাকে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। এরপর থেকেই পুরোপুরি ক্ষমতা দখল করতে শুরু করে ইংরেজরা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রফেসর ইয়াসমিন আহমেদ (সাবেক অধ্যক্ষ, ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) ও প্রভাষক রাখী বর্মণ (প্রাক্তন প্রভাষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এনাদের লিখিত “ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক উন্নয়ন” বইয়ের ৩০ থেকে ৩৬ পৃষ্ঠায় পড়ুন বিস্তারিত আরও জানতে। ঘটনাটি আমি এই বই থেকেই সংগ্রহ করেছি।
মীরজাফর কেমন লেভেলের মুক্তচিন্তক ছিল যে কুরআন দিয়ে শপথ করার পরেও সে অবিশ্বাসের কাজ করেছে। মুক্তবুদ্ধিতে মীরজাফর কার সাথে চুক্তি রাখবে বা রাখবে না এসব ওর একান্ত ব্যক্তিগত অধিকার। মীরজাফরের থেকে বেশি মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেছে রবার্ট ক্লাইভ। যারা মনে করে কথা দিয়ে কথা রাখতে হবে, বিশ্বাসঘাতকতা করা ঠিক না, শপথ করলে তা মেনে চলা উচিত সেখানে এসব প্রথা ভেঙ্গে মীরজাফর এবং রবার্ট ক্লাইভরা প্রথাবিরোধী কাজ গুলো করেননি? মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে রবার্ট ক্লাইভ ও মীরজাফর গ্যাং সম্মতিতে যে কাজগুলো সম্পাদনা করেছে তা ভালো হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তমনা মীরজাফররা প্রতারক এবং ধাপ্পাবাজ। সামনে আলোচনা আসবে,পড়তে থাকুন।
বিশ্বাস করা নিকৃষ্ট হলে বিশ্বাসহীনতা ভালো?
খেয়াল করলে দেখবেন নাস্তিকরা মুমিনদেরকে বিশ্বাসী বলে একটু অবজ্ঞার সুরে ডেকে থাকে। কারণ নাস্তিকদের কাছে বিশ্বাস করা মানে যুক্তিহীন, অবৈজ্ঞানিক ব্যাপার। বিশ্বাসের বিপরীত কাজ নাস্তিকদের কাছে খুবই ভালো। নাস্তিকদের বইপত্র পড়লে দেখবেন বিশ্বাস করাকে তারা বিকৃত করে ফুটিয়ে তোলে ও অবিশ্বাস করাকে তারা প্রমোট করে। নাস্তিকরা চায় দুনিয়ার সব মানুষ বিশ্বাসহীন হয়ে উঠুক। প্রশ্ন হলো এটা কি শুধুই ইসলামের ক্ষেত্রে? নাকি সব ক্ষেত্রেই? যদি শুধু ইসলামের ক্ষেত্রে হয় তাহলে কেন অন্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না? আর সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ হলে অবশ্যই অবিশ্বাস করা বা বিশ্বাসঘাতকতা নাস্তিকদের কাছে ভালো হওয়াটা যৌক্তিক? কি? কোন বিশ্বাস করা খারাপ আর কোনটি ভাল এগুলোর বিধান নাস্তিকরা কেন নির্ধারণ করবে?
পাঠক আপনি জানেন যে এমডি আলী বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলে না সরাসরি বই থেকেই প্রমাণ দিয়ে কথা বলে। তাই আমি সরাসরি নাস্তিকদের বইপত্র থেকেই দেখিয়ে দিচ্ছি, বিশ্বাস করা মুক্তমনাদের কাছে কতো নিকৃষ্টতম ব্যাপার। এদের বই গুলো থেকেই প্রমাণ দিচ্ছি।
নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের লেখা "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ভূমিকার শেষের দিকে বর্ণিত হয়েছে,
মানুষের জন্যে যা ক্ষতিকর,সেগুলোর শুরুতেই রয়েছে বিশ্বাস,বিশ্বাস সত্যের বিরোধী,বিশ্বাসের কাজ অসত্যকে অস্তিত্বশীল করা,বিশ্বাস থেকে কখনো জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না,জ্ঞানের বিকাশ ঘটে অবিশ্বাস থেকে,প্রথাগত সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে না মেনে তা পরীক্ষা করার উৎসাহ থেকে।
'আমার অবিশ্বাস' বইয়ের ২২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধরে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে,পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস। বিশ্বাস কাকে বলে ? আমরা কি বলি পিঁপড়েয় বিশ্বাস করি,সাপে বিশ্বাস করি, জলে বিশ্বাস করি বা বজ্রপাতে বা পদ্মানদীতে বিশ্বাস করি?এসব এবং এমন বহু ব্যাপারে বিশ্বাসের কথা উঠে না,কেননা এগুলো বাস্তব সত্য বা প্রমাণিত। যা সত্য,যা প্রমাণিত যা সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই তাতে বিশ্বাস করতে হয় না,কেউ আমরা বলি না যে আমি বিদ্যুৎে বিশ্বাস করি বা রোদে বিশ্বাস করি বা গাড়িতে বিশ্বাস করি। কেননা সত্য বা প্রমাণিত ব্যাপারে বিশ্বাস করতে হয় না,বিশ্বাস করতে হয় অসত্য,অপ্রমাণিত,সন্দেহজনক বিষয়।অসত্য অপ্রমাণিত কল্পিত ব্যাপারে আস্থা পোষণই হচ্ছে বিশ্বাস।
"আমার অবিশ্বাস" ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
তবে সব কিছুই নিরর্থক,জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক,আইনস্টাইন নিরর্থক,ওই গোলাপও নিরর্থক,ভোরের শিশিরও নিরর্থক, তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক, দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।
বিশ্বাস নামটিই হয়তো দুনিয়া থেকে গুম করে দিলে হুমায়ুন আজাদ খুশি হতেন। হুমায়ুন আজাদ আরও বর্ণনা করেছেন দুনিয়ার সব কিছুই যুক্তি দিয়ে চলে, বিশ্বাস দিয়ে নয়। বিশ্বাস করাকে খুবই অবজ্ঞা করে এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ।
নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ“ধর্মানুভুতির উপকথা” বইতে লেখেন,
পৃথিবীর সব কিছুই চলে যুক্তির সাহায্যে, গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি থেকে শুরু করে সব কিছুই চলে যুক্তির সাহায্যে। কোনো জ্ঞানই যুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়, কোনো সত্যই যুক্তি ছাড়া উদঘাটন করা যায় না। অন্ধ বিশ্বাস দিয়ে আমরা ধান উৎপাদন করতে পারি না, বিশ্বাস দিয়ে আমরা গাড়ি চালাতে পারি না, বা খালের ওপর একটি বাঁশের সাঁকোও তৈরি করতে পারি না; কিন্তু বিশ্বাস দিয়ে আমরা একটি অসামান্য কাজ করতে পারি;- মৃত্যুর পর যেতে পারি চিরসুখের জগতে। মানুষের শুধু একটি এলাকাই আছে, যেখানে যুক্তি চলে না; সেটি খুবই ভিন্ন রকম এলাকা, সেখানকার সব সত্য লাভ করা যায় অযুক্তি আর অন্ধ বিশ্বাস দিয়ে। মানুষের এই অন্ধ বিশ্বাসই অভিহিত হয়ে থাকে ধর্মানুভুতি নামে।
নাস্তিক্যবাদ দিয়ে গাড়ি চালানো যায়? নাস্তিক্যবাদ দিয়ে বাঁশের সাঁকো থেকে শুরু করে ধান উৎপাদন করা যায়? এই প্রশ্ন গুলো না হয় অন্য আরেকদিন করবো কিন্তু নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে বিশ্বাস করা যে নিকৃষ্ট কাজ এটা নাস্তিকরা অবিশ্বাস করতে পারবে না। আরেকজন নাস্তিক তো “বিশ্বাসের ভাইরাস” নামে ২০০ পৃষ্ঠার বেশি একটি বই-ই লিখেছে।
বিশ্বাস করা মহামারী হলে বিশ্বাসঘাতকতা মানবিক?
আমি যতো নাস্তিকদের বইপত্র পড়েছি একটি বিষয় খেয়াল করেছি এরা নিজের কথা নিজেরাই ঠিক মতো মেনে চলে না। মুক্তচিন্তার এফেক্ট হয়তো! যাই হউক।
নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের লেখা “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
যে-দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, চিন্তার স্বাধীনতা নেই, অধিকার নেই, যেখানে কয়েকটি দুর্বৃত্ত সর্বশক্তিমান, সেখানে উৎকৃষ্ট প্রতিভা জন্ম দেয়া দূরের থাক, একটি ভালো চর্মকারও জন্ম নিতে পারে না। নিকৃষ্টদের অধীনে সব কিছুই নিকৃষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যাদেরকে নিকৃষ্ট দাবি করতে চাইছেন তারা কি নিজেরা নিজেদের মতো মুক্তচিন্তা করেছে না? তারা তাদের মতো করে মুক্তচিন্তা করেছে সেখানে কোন যুক্তিতে তাদের মুক্তচিন্তাকে নিকৃষ্ট বলতে পারেন? যে দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, চিন্তার স্বাধীনতা নেই- আপনি যেভাবে বলতে চাইলেন আরকি কিন্তু প্রশ্ন হলো যারা আপনাকে বাকস্বাধীনতা দিচ্ছেনা তারা কিন্তু ঠিকই নিজেরা আপনার কথাকে বন্দী করে নিজেদের কথার বাকস্বাধীনতা চর্চা করছে? আপনার চিন্তার স্বাধীনতা হয়তো তারা দিচ্ছে না কিন্তু তারা নিজের মতো করে কিন্তু ঠিকই চিন্তা করছে, তাহলে আপনি কিভাবে মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে এটা বিশ্বাস করে যাচ্ছেন যে সবাই আপনার মতো করে বাকস্বাধীনতা চর্চা করবে? চিন্তার মুক্তির আন্দোলন আপনার মতো করে করবে?
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
আমার দেশ আমার,আমাদের, সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে; রাষ্ট্রচালকেরা আমার দেশকে বিশ্বাসঘাতক করে তুলেছে। অথচ কতো প্রত্যাশা ছিলো দেশের কাছে আমাদের।
হুমায়ুন আজাদের বই পড়ার সময় যখন এই কথাটি আমার সামনে আসে তখন আমার কাছে খুবই বিরক্ত লাগে যে “আমার অবিশ্বাস” নামে আগাগোড়া বই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখেছে অথচ সে নিজেই আবার বিশ্বাসঘাতককে খারাপ হিসেবে দেখানোর পয়তারা করে যাচ্ছে-এই দ্বিমুখী আচরণ কেন? বিশ্বাসঘাতকতা করা বা বিশ্বাসভঙ্গ করা বা বিশ্বাস ত্যাগ করা অবশ্যই হুমায়ুন আজাদের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক হবার কথা ছিল? রাষ্ট্রচালকেরা নিজেদের মুক্তচিন্তায় যেভাবে চাচ্ছে সেভাবেই তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে সেখানে আপনি কেন নিজের নৈতিকতা তাদের দিকে চাপাতে চাচ্ছেন? বিশ্বাস করা মহামারী মানুষের জন্য ক্ষতিকর তাহলে আপনার নিজের কথা থেকেই তো বিশ্বাসঘাতকতা উত্তম? প্রতিটি মানুষ অবিশ্বাস করা শিখুক আপনি কি চান না? কেউ যদি আপনাকে বিশ্বাস করে আপনি সেই বিশ্বাসকে ভেঙ্গে অবিশ্বাস করে ফেলুন এতে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে ভুল কোথায়?
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
ধর্ষণ এখন বাঙলাদেশের প্রধান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে, বাঙলাদেশ এখন ধর্ষণের প্রাক্ষাগার। ৫৬,০০০ বর্গমাইলব্যাপী বলাৎকারের রঙ্গমঞ্চ; পথে পথে ঘরে বাইরে ধর্ষিত হচ্ছে নারীরা, ২০০১-এর নির্বাচনের পর হিন্দু তরুণীদের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ধর্ষণের ঝড়, কিন্তু যে সবচেয়ে ধর্ষিত পীড়িত লাঞ্ছিত বলাৎকৃত সম্ভ্রমলুণ্ঠিত, তার নাম বাঙলাদেশ, আমার জন্মভূমি-বেদনাপীড়িত সোনার বাঙলা। আমরা বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন চারপাশে যে-বাঙলাদেশ দেখি, তাকে বাঙলাদেশ মনে হয় না, একে আমরা চাইনি, এভাবে চাই নি; একে মনে হয় এক বিকৃত নষ্ট বসবাসঅযোগ্য জনপদ, যাকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, যে তার কোনো প্রতিশ্রুতি পালন করে নি, যা তার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, যাকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে অসৎ করে ফেলা হয়েছে। বাঙলাদেশ হয়ে উঠেছে এক ভীতিকর জঙ্গল, নেকড়েরা যে-কোন সময় লাফিয়ে পড়তে পারে।
মনে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে আপনি নিজেই কেন সেইদিন অসহায় এক তরুণীকে সারা সন্ধ্যা চুইংগামের মতো চাবাতে চুষতে চেয়েছিলেন? কোনো নারীকে দেখে সারা সন্ধ্যা চুষতে চাওয়া, চাবাতে চাওয়াকে ধর্ষণ বলা যাবে না কেন? আপনি নিজেই কি তাহলে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণের সংস্কৃতি পালন করে ফেললেন না? আশেপাশে লোকদের হাতে গণপিটুনি খাবার ভয়ে ধর্ষণ করতে পারেন নাই?
হুমায়ুন আজাদের লেখা “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় নিজেই বর্ণনা করেছেন যে,
যখন শিশু ছিলাম,কিশোর হয়ে উঠেছি যখন,তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি,আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছা করে। ছেলেবেলা ভরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরো গুলোকে চুষে দেখতে,ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হয়ে জ্বলজ্বল করতো,সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছা হতো,কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মতো এক তরুণীকে।
সমকামীতা করা আমার অধিকার, আমি কার সাথে কি করবো নাকি করবো না সেটা আমার সিদ্ধান্ত, নৈতিকতা আকাশ থেকে পড়ে না, মানুষ নিজেই নিজের নৈতিকতার উৎস- নাস্তিকরা যখন এসব কথা বলে তখন প্রশ্ন করতে মন চায় আপনাদের কথা যদি আসলেই সঠিক হিসেবে ধরে নেয়া হয় তাহলে একই ধরণের প্রশ্ন যদি অন্য নাস্তিকরা এভাবে করে যে ধর্ষণ করা আমার অধিকার, আমি কাকে মুক্তমনে ধর্ষণ করবো নাকি করবো না তা আমার নিজের মুক্তবুদ্ধির চর্চা থেকে নির্ধারণ করবো, আমাকে বাধা দেবার আপনি কে? আপনার মুক্তমনে ধর্ষণ করতে ভালো লাগে না আপনি কইরেন না কিন্তু অন্য নাস্তিকরা ধর্ষণ করতে চাইলে তাদের মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা সম্পূর্ণ বৈধ হবে না কেন? আপনার দেয়া বিধান সে কেন বিশ্বাস করবে? নাস্তিকরা কেন অন্য মানুষকে নিজেদের বানানো নৈতিকতায় আটকে রাখতে চায় আবার এরা স্বীকারও করে না যে নাস্তিক্যবাদ একটি ধর্মের নাম? কোনো মুক্তমনা যদি নিজেই নিজের জন্য এই নৈতিকতা বানায় যে, মিথ্যাচারই সত্যাচার, দুর্নীতিই সুনীতি, প্রতারণাই সুসমাচার, অবিচারই সুবিচার, অনধিকারই অধিকার, বর্বরতাই সভ্যতা, অন্ধকারই আলো, ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করাই মুক্তচিন্তার আন্দোলন তখন অন্য নাস্তিকদের কি যুক্তি আছে একে অন্যায় হিসেবে বিশ্বাস করার? অন্য নাস্তিকদের কি যুক্তি আছে তাদের দেয়া নৈতিকতা অনুযায়ী অন্য মুক্তমনারা চলবে?
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
বাঙালি+মুসলমান = এটা কোনো রোগের নাম? রোগটি নতুন নয়, চলে এসেছে মধ্যযুগ থেকেই, এখন চরমে পৌঁচেছে। কবি আবদুল হাকিমের বিখ্যাত ক্ষোভটি মনে পড়ে; বাঙালি মুসলমানদের একটি অংশের পিতার ঠিক নেই বলেই তো তিনি ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭১ ছিলো আমাদের শ্রেষ্ঠ সময়, তখন আমরা স্বাধীনতার জন্যে সব কিছু উৎসর্গ করেছিলাম।
আপনার কথাটি যদি আমি এভাবে বলি নাস্তিকতা+মুক্তচিন্তা = দুর্গন্ধযুক্ত চিন্তার রোগ। আপনি কি বললেন? বাংলাদেশ কি স্বাধীন হয়েছিল নাস্তিক্যধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য? মার্ক্সবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য? নারীদেরকে সারাসন্ধ্যা চুইংগামের মতো চুষার জন্য? চাবানোর জন্য? তাহলে?
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
কলাভবন, শরিফ মিয়ার ক্যান্টিন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস, নিউমার্কেটের নতুন ঝলমলে বইয়ের দোকান, এবং আরো নানা জায়গায় ছিলো আধুনিকতা সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক ও অনুপ্রাণিত হওয়ার স্থান; তখন অনাধুনিকতা, মধ্যযুগীয়তা, বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ জোব্বা বোরকা ছিলো হাস্যকর, হিজাবের কথা কেউ জানতোই না।
আপনি মিয়া ক্ষমতায় গেলে মুসলিম নারীদেরকে যে বোরখা পরিধানের স্বাধীনতা দিতেন না, মুসলিমদেরকে নিজেদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিতেন না এটা পরিস্কার। আপনি নিজেই তো মুসলিম নারীদের স্বাধীনতা দিচ্ছেন না আবার নিজেই অন্যের থেকে স্বাধীনতা চাচ্ছেন কোন লজ্জায়? আপনার লজ্জায় কি ফরমালিন মারা? আজ থেকে ২০০ বছর সামনে আপনার নাস্তিক্যধর্ম মধ্যযুগীয় হয়ে যাবে তাহলে আপনার নিজের যুক্তিতে আপনি নাস্তিক্যবাদকে ত্যাগ করবেন না কেন? বোরখা পরা মধ্যযুগীয় হলে যদি বোরখা বাদ দিতে হয় একই যুক্তিতে পোশাক পরিধান করাও তো মধ্যযুগীয় তাহলে আপনি ল্যাংটা হয়ে মুক্তমনে দেহ প্রদর্শন করে নিজের শিশ্ন কেন প্রকাশ করলেন না? আপনার মুক্তমনা ভক্তরা আপনার শিশ্ন দেখে মুক্তচিন্তায় হাত মারতো? সমকামীতার চর্চা করতো? নাকি আপনি এবং আপনার নির্লজ্জ ভক্তরা এখনো পুরোপুরি মুক্তমনে হতেই পারেন নাই?
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শুদ্ধ আধুনিক বাঙালিদের, বিশ্বমানবদের, একজন, উনিশ শতকের মাঝভাগেই এটা বুঝেছিলেন; তাকে যখন বলা হতো বিধবাবিবাহ প্রবর্তন ও বহুবিবাহ রহিত করার জন্যে ইংরেজদের সাহায্যে আইন প্রণয়ন করার দরকার নেই, শিক্ষাই একদিন একাজগুলো করবে, এসব নোংরামো দূর করবে, তিনি বলতেন তিনি তরুন বাঙ্গালিদের বিশ্বাস করেন না, কেননা এরা যৌবনে প্রচণ্ড বিপ্লবী ও নাস্তিক হতে পারে কিন্তু বুড়ো বয়সে এরা হবে ঘোর স্বার্থপর, প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কাছে কি নিশ্চিত প্রমাণ ছিল যে তারা বুড়ো বয়সে নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করবে? নাস্তিক্যধর্মের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাবে? মুক্তচিন্তার নামে মূর্খতা ছেড়ে দিবে? ঈশ্বরচন্দ্র কি টাইমমেশিন দিয়ে দেখে এসেছিল? তাহলে বিনা প্রমাণে ঈশ্বরচন্দ্রের বিশ্বাস কি অন্ধবিশ্বাস হয়ে যাচ্ছে না? আপনি নিজেই দেখি অন্ধবিশ্বাসকে সমর্থন করছেন আবার নিজেই বলছেন বিশ্বাস করা মহামারী? হুমায়ুন আজাদ সাহেব আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে? কারণ আপনি নিজেই তো বহুবিবাহের পক্ষে কথা বলেছেন, কি ভুলে গেলেন? তাছাড়া আপনাদের মুক্তমনাদের বই পড়লে আরো বেশি যৌনমিলনের স্বাধীনতার কথা পাওয়া যায়। অস্বীকার করতেন পারবেন? আপনার “কবি অথবা দন্দিত অপুরুষ” বইতে হাসান নামক অবিশ্বাসীকে দিয়ে আপনি যেভাবে নারীদের সাথে যৌনমিলনের মুক্তচিন্তার প্রকাশ করেছেন অস্বীকার করতে পারবেন?
নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ১৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত
যদি কোনো পরুষ একাধিক নারীর সাথে বিবাহিত বা অবিবাহিত জীবন যাপন করতে চায়,তারা সবাই যদি তাতে সুখী হয়,তাতে কারো আপত্তি থাকা উচিত নয়; এবং কোনো নারী যদি একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহিত বা অবিবাহিত জীবন যাপন করতে চায়, তারা সবাই যদি তাতে সুখী হয়, তাতেও কারো আপত্তি থাকা উচিত নয়। তাদের এই জীবনযাপন অন্য কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, সুখী করে তাদের; তাই তা অনৈতিক নয়।
বহু বিবাহে একজন পুরুষ হয়তো একাধিক স্ত্রী বিয়ে করে কিন্তু স্ত্রী একাধিক স্বামী বিয়ে করে না কিন্তু আপনি নিজে তো আরো বেশি বেশি যৌনমিলনের পক্ষে সাফাই গাইলেন এখন কি হবে? বহুবিবাহ খারাপ হলে তো একই যুক্তিতে ফ্রিসেক্স নিষেধ হবার কথা? কিন্তু কোনো নাস্তিক কেন এই বিধান মেনে নিবে? কোনো নাস্তিক চাইলেই কেন নিজের নারীবাদী মায়ের সাথে যৌনমিলন করতে পারবে না? সমকামী পিতা কেন নিজের মুক্তমনা সন্তানদের সাথে যৌনমিলন করতে পারবে না? আপনি নিজেই যেখানে বলছেন যদি তারা সুখী হয় তাহলে আপত্তি থাকা উচিত নয় তাহলে চারজন স্ত্রী যদি একজন স্বামী নিয়ে সুখী হয় এখানে আপনার আপত্তি কিসের? তাছাড়া আপনি নিজেই আপনার বইতে বলেছিলেন একজন মানুষ আরেকজনকে পথ দেখাতে পারে না সেখানে আপনি নিজেই কেন ঈশ্বরচন্দ্রের কথা আনলেন? ঈশ্বরচন্দ্রকে মহান হিসেবে কেন দেখালেন আপনি? আপনার নিজেই বলা কথা অনুযায়ী আপনি নিজেই কি অন্ধকারের মধ্যে বন্দী হয়ে আছেন না?
নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত 'আমার অবিশ্বাস' ২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
কোনো পূর্বনির্ধারিত পথ নেই মানুষের জন্যে।কোনো গ্রন্থ পথ দেখাতে পারে না, কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক তার জন্যে পথ প্রস্তুত করতে পারেন না, ওই মহাপুরুষেরা তৈরি করেছেন নিজেদের পথ, অন্যদের নয়।প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে হয় নিজেদের পথ, তৈরি করতে হয় নিজেদের রাস্তা, অনেকের পথ আমাকে আলোড়িত করেছে, অনেক গ্রন্থ আমাকে আলো দিয়েছে, কিন্তু আমি ওইসব পথে চলি নি, ওই আলোতে পথ দেখি নি।
হুমায়ুন আজাদ সাহেব আপনি কি আসলেই যুক্তি বোঝেন? বিজ্ঞান বোঝেন? ইসলামে সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে? কুরআন-হাদিস আপনি আসলেই বোঝেন? কোনো মানুষ যদি সেচ্ছায় নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করতে চায় তাহলে আপনার তো উচিত ছিল তাকে স্বাগতম জানানো অথচ আপনি বলছেন স্বার্থপর হবে, কেন? কেউ যদি নাস্তিকতার শেকল থেকে মুক্ত হতে চায় আপনি কেন তাকে নিয়ে কটূক্তি করবেন? আপনি নিজে যে নাস্তিকান্ধতায় ডুবে গেছেন বুঝতে পারেননি এখনো?
"আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
কোনো কোনো নারী দেখলে ছুঁতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ছুই না। সব ছোঁয়া অনুমোদিত নয়।ওষ্ঠ দিয়ে ছোঁয়া নিবিড়তম ছোঁয়া ,আমি যা কিছু ওষ্ঠ দিয়ে ছিয়েছি তারাই আমাকে সুখী করেছে সবচেয়ে বেশি। আমাদের সমাজে ছোঁয়া খুবই নিষিদ্ধ ব্যাপার। আমরা খুব কম মানুষকেই ছুঁতে পারি , খুব কম মানুষকেই ছোঁয়ার অধিকার আছে আমাদের। ছোঁয়া এখানে পাপ। কোন নারী যদি কোন পুরুষকে ছোয় , কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে ছোয়, তাতে সূর্য খসে পড়ে না,আকাশে হুলুস্থল শুরু হয়ে যায় না কিন্তু আমরা মনে করি মহাজগত তাতে খেপে উঠেছে।
"আমার অবিশ্বাস" ১৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
আরও কিছুকাল আমি নক্ষত্র দেখতে চাই, নারী দেখতে চাই , শিশির ছুঁতে চাই,ঘাসের গন্ধ পেতে চাই।
আপনি যে কেন নারীদের বোরখার বিরুদ্ধে তা হয়তো আমাদের বুঝতে আর বাকী নেই। আপনারা যে চাচ্ছেন নারীরা মুক্তদেহে বিকিনি পরে রাস্তায় আসুক এর উদ্দেশ্য সহজেই অনুমেয়। আপনার নাস্তিকান্ধ ভক্তরা শিপ্পাঞ্জি থেকে মানুষের কাতারে ফিরে আসুক এই কামনা করছি।
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
আমি কখনো শ্লোগান দেই নি, কারো স্তব করি নি, কারো দিকে মাথা নত করি নি, করবোও না কখনো, কিন্তু সত্যকে মেনে নিতে কখনো দ্বিধা করি নি। আমার বন্ধুরা অনেক মহাপুরুষের জয়গান গেয়ে কবিতা লিখেছেন, আজো লিখছেন, বক্তৃতায় অনেকের স্তবে মুখর হয়েছেন, আমি লিখি নি, মুখর হই নি, কিন্তু সত্যকে মেনে নিতে দ্বিধা করি নি, এবং যে কোনো আরাধ্য ব্যক্তি ও বিশ্বাসের সমালোচনা করতেও দ্বিধা করি নি। কেননা কারো কাছে আমি কিছু চাই নি। আমি কারো দলে নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কখনো শ্লোগান দেন নাই, স্তব করেন নি, মাথা নত করেন নি সবই ঠিক আছে কিন্তু আপনি খুবই সুক্ষভাবে মিথ্যা কথা বলে ফেলেছেন। কিভাবে? আপনার বন্ধুরা মহাপুরুষের জয়গান গেয়ে কবিতা লিখেছে আপনি কখনো লিখেন নাই, মুখর হন নাই কিন্তু আপনি তো আপনার পুরো বই বাট্রান্ড রাসেল নামের এক মুক্তমনা লোককে উৎসর্গ করেছেন, কেন? আপনার বন্ধুরা অন্যকে নিয়ে কবিতা লিখেছে আপনি কখনো লিখেন নাই, মুখর হন নাই বলে যে নিজের ঢোল নিজে পেটালেন অথচ আপনি নিজেই পুরো একটি বই অন্য এক মানুষকে উৎসর্গ করলেন- এটা কি দুমুখো চরিত্র হয়ে গেলো না? আপনি বিশ্বাসের সমালোচনা করেছেন তাহলে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের নিয়ে কোন যুক্তিতে সমালোচনা করছেন, হে? আপনার সাথে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তো আপনার খুশি হবার কথা? আপনার নিজের যুক্তিতে তো অবিশ্বাস করা ভালো কাজ? তাই নয় কি? আপনি কারো দলে নেই ভালো কথা কিন্তু আপনার বই পড়ে যারা নাস্তিক্যধর্মের দলে যুক্ত হয়ে অন্ধবিশ্বাস পোষণ করছে তাদের কি হবে আপনার যুক্তিতে? আপনি নাকি সত্যকে মেনে নিতে দ্বিধা করেন না কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক্যবাদের বিশ্বাস যে সত্য তার প্রমাণ কি? নাস্তিকদের বিশ্বাস মতে ৪০০০ ধর্মের মধ্যে সকল ধর্মই ভুল একমাত্র নাস্তিক্যধর্ম সত্য কিন্তু সকল ধর্মের মধ্যে যে একমাত্র নাস্তিক্যবাদের ধর্ম সত্য সেটার গ্যারান্টি কি? সব ধর্ম ভুল হলে একই যুক্তিতে নাস্তিক্যধর্ম কেন ভুল হিসেবে মেনে নিচ্ছেন না আপনারা? এই যুক্তিতে সত্য বলে আসলে দুনিয়াতে কিছুই থাকছে না?
ইসলাম কি শিক্ষা দেয়?
বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ৮০৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা পণ্যবাহী কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে সস্তায় পণ্য খরিদের উদ্দেশে) সাক্ষাৎ করবে না এবং শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। রাবী তাউস (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে, তাঁর এ কথার অর্থ কী? তিনি বললেন, তার হয়ে যেন সে প্রতারণামূলক দালালী না করে। আব্বাসকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, শহরে লোক গ্রাম্য লোকের (ক্রয়-বিক্রয়ে) যেন দালালী না করে।-ihdis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৩১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃকোন একসময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বাজারে) একটি খাদ্যশস্যের স্তূপ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজের হাতকে স্তূপের মধ্যে প্রবেশ করালেন। তিনি তাঁর হাতে ভিজা অনুভব করেন। স্তূপের মালিককে তিনি প্রশ্ন করেনঃ এ কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল। তিনি বললেনঃ ভিজাগুলো স্তূপের উপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পেত? অতঃপর তিনি বললেনঃ প্রতারণাকারী ও ধোঁকাবাজকারীদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৪০৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
সুলাইমান ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তার বাবা থেকে বর্ণিতঃ তিনি (বুরাইদা) বলেন,যখন কোন লোককে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন বাহিনীর আমীর করে পাঠাতেন তখন তাকে বিশেষকরে আল্লাহভীতির উপদেশ দিতেন এবং তার সাথের মুসলিমদের সাথে সৎ ও কল্যাণময় আচরণের নির্দেশ দিতেন। তিনি বলতেনঃ তোমরা আল্লাহ্র নামে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর, আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরীকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, খিয়ানাত ও প্রতারণা কর না, বিশ্বাসঘাতকতা কর না।মুসলা (নাক, কান ইত্যাদি কর্তন) কর না এবং শিশুদের হত্যা কর না-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১৮৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএকদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদ্য শস্যের একটি স্তুপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি স্তুপের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলেন ফলে হাতের আঙল গুলো ভিজে গেল। তিনি বললেন হে স্তুপের মালিক! এ কি ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। তিনি বললেন, সেগুলো তুমি স্তুপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারতো। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।-ihadis.com
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেনঃ মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৫৮২, হাসান সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কারো ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করার চেষ্টা করা হলে এবং সে তা রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ চারটি (দোষ) যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সে খাঁটি মুনাফিক; আর যার মধ্যে এ দোষগুলির একটি বর্তমান রয়েছে তার ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব থেকে যায়। (১) যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, (২) সে সন্ধি চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে, (৩) সে ও’য়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৪) সে ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। সুফইয়ান-এর হাদীসের মধ্যে রয়েছেঃ “আর যদি কারোর মধ্যে এ দোষগুলোর একটি বিদ্যমান থাকে, তা হলে তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব রয়েছে।”-ihadis.com
আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ১৭৭ আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে,
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণে র উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্ব জন, এতীম-মিসকীন , মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ৩৬ আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে,
পিতামাতা, আত্মীয় স্বজন এতিম, অভাব গ্রস্থ, কাছের প্রতিবেশি, দুরের প্রতিবেশি, সঙ্গী-সাথী,মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি উত্তম ভাল ব্যাবহার করবে । নিশ্চয় আল্লাহ্অহংকারীদের পছন্দ করেন না।
আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ঃ৫৮ আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে,
নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের প্রাপকদের কাছে পৌছে দিতে ।তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায়-পরায়নতার সাথে বিচার করবে
আল কুরআন, সুরা মুমতাহিনা ৬০ঃ৮ আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে,
দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজ দেশ থেকে বের করেনি তাদের প্রতি ভাল ব্যাবহার ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ্তোমাদের প্রতি নিষেধ করেন না । আল্লাহ্তো ন্যায়-পরায়নদের ভালবাসেন।
উপসংহারঃ মুক্তচিন্তার আদলে সব ভালো কাজ যেমন বৈধ তেমন সমস্ত খারাপ কাজও বৈধ। নাস্তিকদের কোনো সুযোগ নেই “মুক্তচিন্তাকে” বিধানের মধ্যে আটকে ফেলার।বনু কুরাইজারাও মীরজাফরের মতো মুক্তচিন্তা করেছিল কিন্তু মীরজাফরদের মুক্তমনা গ্যাং সফল হলেও বনু কুরায়জা সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সফল হতে পারেনি। বনু কুরাইজা সন্ত্রাসীদের নবী মোহাম্মদ (সা) যৌক্তিকভাবে দমন করেছিলেন। বনু কুরাইজা বিষয় আমার লেখাটি পড়তে পারেন। মীরজাফরের কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ হলেও মুক্তচিন্তায় মীরজাফরগং খারাপ কিছুই করেন নাই। ইসলাম মানুষকে কথা দিয়ে কথা রাখার শিক্ষা দেয়। মানুষ যাতে একে অন্যকে ধোঁকা না দেয় সেই শিক্ষা দেয়। অন্যদিকে মুক্তচিন্তা মানুষকে যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা দেয়।