অমুসলিমরা জাহান্নামী বলা ঘৃণিত চিন্তা?

বিষয়ঃ অমুসলিমরা জাহান্নামী বলা ঘৃণিত চিন্তা?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

============================


ভূমিকাঃ নাস্তিকিস্টরা দাবি করে থাকে ইসলাম নাকি মানুষকে ঘৃণা করতে শেখায় এমনকি অমুসলিমদেরকে যে জাহান্নামে দেয়া হবে এই চিন্তা করাও নাকি ঘৃণিত। আসলেই কি তাই? মুক্তমনাদের এরকম অভিযোগ কি আসলেই সত্য? শাণিত যুক্তির সাথে দলিলভিত্তিক প্রমাণের মাধ্যমে নাস্তিকদের অভিযোগকে তদন্ত করা হবে, যুক্তির সামনে দাড় করানো হবে, প্রমাণের নিচে রাখা হবে। আজকের লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম মানুষকে ঘৃণা শিক্ষা দেয় নাকি নাস্তিক্যধর্মই হিংসা-বিদ্বেষ ঘৃণা করা শিক্ষা দেয় সেটা অনুসন্ধান করে বের করা এমনকি নাস্তিকরা ইসলাম নিয়ে যেভাবে অপব্যাখ্যা, কুযুক্তি, গোঁজামিল দিয়ে থাকে তা নির্ণয় করে মুক্তমনাদের মনে যেই ইসলামবিদ্বেষ, মুসলিমবিদ্বেষ, কুরআনবিদ্বেষ, হাদিসবিদ্বেষ রয়েছে তা যৌক্তিকভাবে তুলে ধরা। পাঠকদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ থাকবে আমার প্রতিটি লেখা মন দিয়ে পড়বেন, বুঝার চেষ্টা করবেন ও যাচাই করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেবেন।


মুসলিমরা অপরাধ করলেও জান্নাতী?


নাস্তিকদের অভিযোগ হুবহু তুলে ধরছি, এরপরে লাইন ধরে ধরে দেখাবো কিভাবে কুরআন হাদিসের কথাকে ভুল দৃষ্টিতে পেশ করে মুক্তমনা আন্দোলনের পতাকাবাহী সৈন্য-বাহিনীরা।


নাস্তিকরা বলে,মুসলিমরা যত বড় খুনী ধর্ষক গণহত্যাকারী বদমাইশই হোক না কেন, তাদের জন্য রয়েছে অনন্তকালের জান্নাতের সুখ আর আনন্দ। ইসলাম মুসলিমদেরকে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করছে। কোরআন হাদিস থেকে এটিই জানা যায়।


জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৬৪৪, সহিহ হাদিস,আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমার নিকট এসে এই সুসংবাদ দেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে কিছু শারীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি প্রশ্ন করলাম, সে যদি ব্যভিচার করে থাকে, সে যদি চুরি করে থাকে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ (তবুও সে জান্নাতে যাবে)।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৭৫০৯, সহিহ হাদিস, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামাতের দিন যখন আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে তখন আমি বলব, হে আমার রব্ব! যার অন্তরে এক সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে তুমি জান্নাতে প্রবেশ করাও। তারপর তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তারপর আমি বলব, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করাও, যার অন্তরে সামান্য ঈমানও আছে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতের আঙুলগুলো যেন এখনো দেখছি।-ihadis.com


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১৬৭, সহিহ হাদিসঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর যে ব্যক্তির অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে না।-ihadis.com


মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ৩৬, সহিহ হাদিস, উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসূল, আল্লাহ (তাঁর অনুগ্রহে) তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন।-ihadis.com


নাস্তিকরা যে কুরআন-হাদিস ঠিক মতো বোঝে না এর নমুনা হিসেবে উপরের অভিযোগটি প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট নয় কি? কুরআন হাদিসে এই কথা কোথায় বলা হয়েছে যে মুসলিমরা অপরাধ করলে আখিরাতে শাস্তি হবেই না? উপরে বর্ণিত নাস্তিক্যঅভিযোগে কি মুসলিমদের শাস্তির কথাকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে না? উপরে যেই হাদিস গুলো দেখানো হয়েছে সেখানে এটা বলা হয়েছে ইমান আনলে মুসলিমরা জান্নাতে যাবে এমনকি অপরাধ করলেও কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে উপরের হাদিসের কোথাও তো এই কথা বলা হয় নি যে মুসলিমদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হবেই না? তাহলে মুসলিম ও ইসলামকে ঘৃণিত ভাবে তুলে ধরে কি নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিদ্বেষ ও মুসলিমবিদ্বেষের প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছে না? যেসব মুসলিমরা মুক্তচিন্তায় অপরাধ করতো, ইসলামে যা নিষেধ তা করতো যেমন ইসলামে সুদ খাওয়া খারাপ, ঘুষ খাওয়া খারাপ, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা নিষেধ ইত্যাদি অপরাধের সাথে যুক্ত মুসলিমরা যদি নিজেদের মুক্তচিন্তার অপরাধ থেকে ফিরে না আসে তাহলে অবশ্যই তাদের শাস্তি হবে। অথচ অপরাধী মুসলিমদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে এই কথা চিন্তার মুক্তির আন্দোলনের ঠেলায় নাস্তিকগুলো ধামাচাপা দিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। মুক্তচিন্তার আশ্রয়ে যেসব মুসলিম অপরাধ করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনোতারপর তাদের জাহান্নাম হতে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতঃপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের [বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) শব্দ দু’টির কোনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন] নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন নদীর তীরে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাও না সেগুলো কেমন হলুদ বর্ণের হয় ও ঘন হয়ে গজায়? উহাইব (রহঃ) বলেন, 'আমর (রহঃ) আমাদের কাছে حيا এর স্থলে حياة এবং خردل من ايمان এর স্থলে خردل من خير বর্ণনা করেছেন।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আবূ ‘আবদুল্লাহ বলেন, আবান (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাঃ) হতে এবং তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে নেকী –এর স্থলে ‘ঈমান’ শব্দটি রিওয়ায়াত করেছেন।-ihadis.com

আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমাদের কাছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, ক্বিয়ামাতের দিন মানুষ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তাই তারা আদাম (‘আ.)-এর কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। তিনি বলবেনঃ এ কাজের জন্য আমি নই। বরং তোমরা ইব্রাহীম (‘আ.)-এর কাছে যাও। কেননা, তিনি হলেন আল্লাহ্‌র খলীল। তখন তারা ইব্রাহীম (‘আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এ কাজের জন্য নই। তবে তোমরা মূসা (‘আ.)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহ্‌র সাথে বাক্যালাপ করেছেন। তখন তারা মূসা (‘আ.)-এর কাছে আসবে, তিনি বলবেনঃ আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং ‘ঈসা (‘আ.)-এর কাছে যাও। যেহেতু তিনিই আল্লাহ্‌র রূহ ও বাণী। তারা তখন ‘ঈসা (‘আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব, আমিই এ কাজের জন্য। আমি তখন আমার প্রতিপালকের কাছে অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। আমাকে প্রশংসা সম্বলিত বাক্য ইলহাম করা হবে যা দিয়ে আমি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করব, যেগুলো এখন আমার জানা নেই। আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে প্রশংসা করব এবং সাজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা ওঠাও। তুমি বল, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, তা দেয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলবো, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত। আমার উম্মাত। বলা হবে, যাও, যাদের হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দাও, আমি গিয়ে এমনই করব। অতঃপর আমি ফিরে আসব এবং পুনরায় সেসব প্রশংসা বাক্য দ্বারা আল্লাহ্‌র প্রশংসা করবো এবং সাজদায় পড়ে যাবো। তখন বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা ওঠাও। তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখনো আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত। আমার উম্মাত। অতঃপর বলা হবে, যাও, যাদের এক অণু কিংবা সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের কর। আমি গিয়ে তাই করব। অতঃপর আমি চতুর্থবার ফিরে আসবো এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করব এবং সাজদায় পড়ে যাবো। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। শাফা‘আত কর, গ্রহণ করা হবে। আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফা‘আত করার অনুমতি দান কর, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলেছে। তখন আল্লাহ্ বলবেন, আমার ইয্যত, আমার পরাক্রম, আমার বড়ত্ব ও আমার মহত্তের কসম! যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলেছে, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনব।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৪৩০৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আহা দোযখবাসী, যারা জাহান্নামবাসী তারা সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না। তবে কতক লোক তাদের ভুলত্রুটি ও গুনাহের কারণে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। আগুন তাদের দগ্ধীভূত করবে, ফলে তারা কয়লাবৎ হয়ে যাবে। তখন তাদের শাফাআতের অনুমতি দেয়া হবে। তাদের দলে দলে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে এবং জান্নাতের ঝরণার নিকট ছড়িয়ে রাখা হবে। তখন বলা হবে, হে জান্নাতবাসীরা! তোমরা তাদের উপর পানি ছিটিয়ে দাও। ফলে তারা প্লাবনের পর উর্বর মাটিতে চারাগাছ গজানোর মত গজিয়ে উঠবে। রাবী বলেন, উপস্থিত এক ব্যক্তি বললো, মনে হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেন বন-বাদাড়ে বসবাস করতেন।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৫৯৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কিছু তাওহীদবাদী লোককেও জাহান্নামের শাস্তি প্রদান করা হবে। এমনকি তারা তাতে পুড়তে পুড়তে কয়লার মতো হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলার রাহমাতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং জান্নাতের দরজায় নিক্ষেপ করা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে বসবাসকারীরা তাদের উপর পানি ছিটিয়ে দিবে। যার ফলে তারা সজীব হয়ে যাবে যেমনটি বন্যার স্রোত চলে যাবার পর মাটিতে উদ্ভিদ গঁজায়। তারপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি,  হাদিসঃ ২৫৯৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ (হিশামের বর্ণনায়) জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে অথবা (শু‘বাহ্‌র বর্ণনায়) যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন প্রভু নেই) বলেছে তাকে বের করে আন তার অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান থাকলেও। আর যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার অন্তরে যদি গমের দানা পরিমাণও ঈমান থাকে তবে তাকেও জাহান্নাম হতে বের করে আন। যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার অন্তরে যদি অনু পরিমাণও (শু‘বাহ্‌র বর্ণনায় আছে, একটি হালকা জোয়ারদানা পরিমাণ) ঈমান থাকে তবে তকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আন।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৬০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। এদের মুখমন্ডল ব্যতীত সারা দেহ জ্বলে পুড়ে গেছে। অবশেষে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।-ihadis.com

সততার সাথে চিন্তা করলে সহজেই বুঝা যায় অপরাধী মুসলিমদেরকে অবশ্যই জাহান্নামের আগুনে পুড়ানো হবে। যখন শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তখন ইমানের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অথচ এই সহজ বিষয়কে ধামাচাপা দিয়ে মুসলিমরা খুন-ধর্ষণ করলেও জাহান্নাতে যাবে দাবি করে ইসলাম নিয়ে যে ঘৃণা ছড়াচ্ছে নাস্তিকসম্প্রদায় সেটা অস্বীকার করা যাচ্ছে কি? কোনো মুসলিম যদি গণহত্যা করে বা ধর্ষণ করে তাহলে নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় সেই মুসলিমের কাজ বৈধ কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেই মুসলিম জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। যাই হোক, উক্ত হাদিস গুলোয় এটাও জানা যায় অপরাধী মুসলিমরা জাহান্নামে পুড়ে কালো হয়ে যাবে এরপরে সুপারিশ করলে ইমানের কারণে জান্নাতে যাবে। নাস্তিকরা বলে ইসলাম নাকি পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে-হাহাহাহাহা,পাঠক আপনাদের হাসি পায়নি? মুক্তচিন্তার অভার ডোজের এফেক্টে হয়তো এরকম কথা বলে ফেলেছে নাস্তিকগোষ্ঠী। ইসলাম কি শিক্ষা দেয় নিজেরাই পড়ুন অথচ নাস্তিকসম্প্রদায় বলছে ইসলাম নাকি পাপকাজে উৎসাহ দেয়-হায়রে মুক্তচিন্তার ঠেলা!!!

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) যিনি বদ্‌র যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও লায়লাতুল ‘আকাবার একজন নকীব। ‘উবাদাহ ইব্‌নুস সামিত (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশে একজন সাহাবীর উপস্থিতিতে তিনি বলেনঃ তোমরা আমার নিকট এই মর্মে বায়’আত গ্রহণ করো যে, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না এবং সৎকাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হলো এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্‌ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মার্জনা করবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। আমরা এর উপর বায়’আত গ্রহণ করলাম।-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬৭৮২ সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন সে মু’মিন থাকে না। এবং চোর যখন চুরি করে তখন সে মু’মিন থাকে না।-ihadis.com 

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তখন তাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করবে, কঠিন করবে না।-ihadis.com

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৪২১৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। তারা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি, কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ যার কোন গুনাহ নাই, নাই কোন দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা ও কপটতা।-ihadis.com

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ১৭৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণে র উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্ব জন, এতীম-মিসকীন , মুসাফির-ভিক্ষুকমুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার

প্রমাণ হয়ে গেলো ইসলাম পাপ কাজের আদেশ করতে বলে না। এটাও প্রমাণ হয়ে গেলো ইসলাম নিয়ে নাস্তিকরা মিথ্যা বলে যাচ্ছে। অন্যদিকে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষই নিজের মুক্তচিন্তায় যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা রাখে হোক সেটা গণহত্যা করার বা ধর্ষণ করার। পাঠক নিজেরাই যাচাই করে দেখুন ইসলামের দুশমনরা আসলেই সঠিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে নাকি মানুষকে ইসলাম বিষয় সত্য জানা থেকে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে? কারণ আপনারা যারা আমার লেখা পড়েন তারা ভালো করেই জানেন আমি নাস্তিকদের অভিযোগ হুবহু তুলে দেই এবং তারা ঠিক কোন জায়গায় মুক্তমনে ধোঁকাবাজি করতেছে তাও দেখিয়ে দেই। অস্বীকার করতে পারবেন? আপনারা সচেতন হোন এটাই আমি চাই। কারণ ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়,

আল কুরআন, সুরা হুজরাত,৪৯ঃ৬ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ১৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কোন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়-ihadis.com

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ৮৮৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি সত্য কথা বলবে যদিও তা তিক্ত (অপ্রিয়) হয়। ইবনু হিব্বান, তিনি দীর্ঘ একটি হাদীস বর্ণনা করে সহীহ্‌ বলেছেন।-ihadis.com

মুশরিকরা ভালো কাজ করলেও জাহান্নামী?


ইসলামের দৃষ্টিতে নাস্তিকদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং বাতিল। কেউ যদি মুক্তচিন্তায় ইসলামের সমালোচনা করাকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নেয় তখন অভিযোগ করা পেশা হয়ে দাড়ায় তাই যৌক্তিকভাবে কোনটি অভিযোগ আর কোনটি অভিযোগ না সেটাই ভুলে যায় তারা। যাই হোক পুরো অভিযোগটি পড়ুন এরপরে নিজেরাই দেখতে পারবেন নাস্তিকরা কিভাবে বাটপারি করে চলছে। 


নাস্তিকরা বলে,কোরআনে বলা হয়েছে, কাফের মুশরিকরা চিরকালের জন্য জাহান্নামী। অনন্তকাল তাদের আল্লাহ আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেবেন যা কোনদিন শেষ হবে না। এগুলোকি অমুসলিমদেরকে ঘৃণা করা শিক্ষা দিচ্ছে। তাই কুরআনের আয়াত গুলো অমানবিক।  


সুরা তওবা ৯ঃ৬৮ = ওয়াদা করেছেন আল্লাহ, মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারীদের এবং কাফেরদের জন্যে দোযখের আগুনের-তাতে পড়ে থাকবে সর্বদা। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আযাব।


এমনকি নবী মুহাম্মদের জন্ম হয়েছিল একটি মুশরিক পরিবারে, যেখানে নবী মুহাম্মদ নিজেই তার বাবা মা চাচা সকলকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করে গেছে। নিচের হাদিসগুলো থেকে জানা যায়, চাচা আবু তালিব এবং দাদা আবদুল মুত্তালিব, দুইজনই ছিলেন মুশরিক এবং জাহান্নামী। এমনকি নবী মোহাম্মদের পিতা জাহান্নামী।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩৮৮৪, সহিহ হাদিস, ইব্‌নু মুসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃইব্‌নু মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, যখন আবূ তালিবের মুমূর্ষ অবস্থা তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট গেলেন। আবূ জাহলও তার নিকট উপবিষ্ট ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, (আরবী) কলেমাটি একবার পড়ুন, তাহলে আমি আপনার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট কথা বলতে পারব। তখন আবূ জাহাল ও ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ উমাইয়া বলল, হে আবূ তালিব! তুমি কি ‘আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে ফিরে যাবে? এরা দু’জন তার সাথে একথাটি বারবার বলতে থাকল। সর্বশেষ আবূ তালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল, তাহল, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরেই আছি। এ কথার পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আপনার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়। এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হলঃ নবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী -(আত-তাওবাহ ১১৩)। আরো নাযিল হলঃ আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে হিদায়াত করতে পারবেন না- (আল-কাসাস ৫৬)।- এই হাদিসটি আরও রয়েছে, সহিহ বুখারী, হাদিস,১৩৬০ / আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১৬ > সহিহ হাদিস - ihadis.com


সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৮৮, সহিহ হাদিস, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃজনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল। আমার পিতা কোথায় আছেন জান্নাতে না জাহান্নামে? রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন চলে যেতে লাগল, তিনি ডাকলেন এবং বললেন, আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।-ihadis.com


মুশরিকদের জন্য মাগফেরাত কামরা করা হারাম।শুধু যে মুশরিকদের জন্য এই বিধান তাই নয়, ইসলামে এমনকি নিজের আপন মা মুশরিক হলে তার জন্যেও মাগফিরাতের কোন বিধান নেই। আল্লাহ সরাসরি মুশরিকদের মৃত্যুর পরে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে, নবীর নিজের মাকেও জাহান্নামী বলেছেন। ইসলাম কেমন বর্বর, খারাপ।


সুরা তওবা ৯ঃ১১৩ = নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করে, যদিও তারা আত্নীয় হোক একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা দোযখী


সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১৫৭২, সহিহ হাদিস, আবূ হুরায়রা (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মায়ের কবর যিয়ারত করেন। তিনি কান্নাকাটি করেন এবং তার সাথের লোকদেরও কাঁদান। অতঃপর তিনি বলেন, আমি আমার রবের নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। আমি আমার রবের নিকট তার কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দেয়।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ২০৩০, সহিহ হাদিস, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মাতার কবর যিয়ারত করার সময় ক্রন্দন করলেন, তাঁর আশ পাশের সবাইও ক্রন্দন করলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, আমি স্বীয় প্রভুর কাছে আমার মাতার মাগফিরাতের অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে তার অনুমতি দেওয়া হয়নি অতঃপর আমি তাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তার অনুমতি দেওয়া হয়। তাই তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা, তা তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।-ihadis.com


তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, ৬১ পৃষ্ঠাতেও বলা আছে, নবী করীম (সা) বলিলেন আমি আমার মহান প্রতিপালক প্রভুর নিকট আমার মায়ের জন্য ইস্তেকফার করিবার অনুমতি চাহিয়াছিলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দেন নাই। আমার মা দোযখের আগুনে পুড়িবেন-এই চিন্তায় আমার চোখে পানি আসিয়াছে


পাঠক মন দিয়ে যৌক্তিকচিন্তার সাথে বুঝে পড়ুন। এইযে 'ভালো কাজ' বলা হচ্ছে, এটা কীসের ভিত্তিতে? কার চোখে? কার মানদণ্ডে? কে ডিসাইড করবে কোনটা ভালো কাজ, কোনটা মন্দ কাজ? যদি বলেন ইসলাম ডিসাইড করবে, তাহলে তো ইসলামের ভালো কাজের সংজ্ঞায় শুরুতেই আসে 'ঈমান'৷ ঈমানের উপরে কোনো ভালো কাজ নেই। ঈমানই সর্বোচ্চ ভালো কাজ, বাকিসব এর পরে। আর সর্বোচ্চ ভালো কাজ তথা ইসলামের এডমিট কার্ড নিয়ে তবেই বাকি ভালো কাজগুলো করে জান্নাতের টিকিট পেতে হবে। আর যদি বলেন ইসলাম মানদণ্ড না, তাইলে ইসলামের 'জান্নাত' আপনার কি দরকার? আপনার মানদণ্ড যেটা, সেটাকে বলেন 'জান্নাত' প্রোভাইড করতে। তাদের জান্নাতে তারা যাক, ইসলামের জান্নাতে কেন যেতে হবে? ইসলামের 'ভালো'র সংজ্ঞায় উত্তীর্ণ না হয়ে ইসলামের জান্নাতে যাওয়ার এই খায়েশ ছেড়ে দেয়া যায় না? যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি তারা জান্নাতে যাবে না একে বর্বর বলা অবশ্যই ভুল যেমন যারা দেশদ্রোহী তারা নিজের বাসায়, নিজের দেশে কখনো থাকতে পারবে না মৃত্যুদণ্ডই তাদের প্রাপ্য এই কথাকে কেউ যদি বর্বর বা অমানবিক বলে এটা সেরকম ভুল। একেবারেই সহজেই বুঝিয়ে বললাম। না বুঝার কিছুই নেই এখানে।


উপরের হাদিস গুলো শক্তিশালীভাবে প্রমাণ করে ইসলামই সত্য। কিভাবে? আমি একটি হাদিস দিয়ে সহজেই বুঝিয়ে দিচ্ছি তাহলে অন্য গুলো নিয়েও বুঝতে পারবেন। আসুন যৌক্তিকচিন্তায় মগ্ন হই।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৩৮৮৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


ইব্‌নু মুসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃইব্‌নু মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, যখন আবূ তালিবের মুমূর্ষ অবস্থা তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিকট গেলেন। আবূ জাহলও তার নিকট উপবিষ্ট ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, (আরবী) কলেমাটি একবার পড়ুন, তাহলে আমি আপনার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট কথা বলতে পারব। তখন আবূ জাহাল ও ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ উমাইয়া বলল, হে আবূ তালিব! তুমি কি ‘আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে ফিরে যাবে? এরা দু’জন তার সাথে একথাটি বারবার বলতে থাকল। সর্বশেষ আবূ তালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল, তাহল, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরেই আছি। এ কথার পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আপনার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়। এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হলঃ নবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী -(আত-তাওবাহ ১১৩)। আরো নাযিল হলঃ আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে হিদায়াত করতে পারবেন না- (আল-কাসাস ৫৬)।- এই হাদিসটি আরও রয়েছে, সহিহ বুখারী, হাদিস,১৩৬০ / আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিসঃ ১৬ > সহিহ হাদিস - ihadis.com


মন দিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন। নবীজি (সা)কে নিয়ে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস হচ্ছে উনি নিজের স্বার্থে ইসলাম নামক ধর্ম বানিয়েছেন এমনকি কুরআন উনি নিজেই লিখেছেন-উপরের হাদিসটি পড়লে প্রমাণ হয় যে নবীজি (সা) কখনো নিজের স্বার্থে ইসলাম প্রচার করেন নাই এমনকি কুরআন নবীজি (সা) লিখেনই নাই। খেয়াল করুন, নবীজি (সা) যদি নিজের ইচ্ছামত ইসলামের নিয়ম তৈরি করতেন বা কুরআন লিখে থাকতেন তাহলে উনার চাচাকে কেন কালেমা পড়তে বলবেন? উনার চাচাকে কেন ইমান আনার জন্য উনি কষ্ট করবেন? কেন বড় বড় কাফেরদের বিরুদ্ধে গিয়ে লেখবেন? উনি তো ইচ্ছা করলেই এমন নিয়ম বানাতে পারতেন যে চাচা আপনি কালেমা না পড়লেও এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবেন? অথচ নবীজি (সা) কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হবার আশায় ছিলেন যে আল্লাহ এই বিষয় মানা না করা পর্যন্ত উনি চেষ্টা ছাড়বেন না এরপরেও কি বলা যায় কুরআন উনি লিখেছেন? অবশ্যই না। আরো আশ্চর্যের বিষয় দেখুন, কুরআনে যখন বলা হচ্ছে আপনি যাকে ভালোবাসেন ইচ্ছা করলেই তাকে হেদায়েত করতে পারবেন না- নবীজি (সা) প্রচুর চেষ্টা করে যাচ্ছেন উনার চাচা যাতে ইসলাম গ্রহণ করে নেয় অথচ কুরআনের আয়াত সম্পূর্ণ উনার বিপরীত নাজিল হয়েছে তাহলে কুরআন যদি উনার স্বার্থে উনি লিখতেন তাহলে তো কাফেরদের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের ক্ষতি করতেন না তাই না? নবী মোহাম্মদ (সা) চাইলেই কিন্তু পারতেন সকল কাফেরদেরকে খুশি করে নিজের স্বার্থকে পূর্ণ করার জন্য অথচ উনি এমন কেন করেন নাই? উনি চাইলেই এমন এমন নিয়ম তৈরি করতে পারতেন, বানাতে পারতেন যা কাফেরদের পক্ষে যাবে এতে কাফেররা খুশি হলে উনি যা চাইতেন তাই পেয়ে যেতেন।কেন করলেন না?


মিথ্যাকথা বলার জন্য সেই কয়টি কারণ থাকা দরকার অর্থাৎ একজন মানুষ তখনই মিথ্যা বলে যখন তার স্বার্থ সামনে আসে যেমন কারো টাকার খুব দরকার সে টাকার জন্য মিথ্যা বলতে পারে, কারো নেতা হবার খুব খায়েশ সে এটা অর্জন করার জন্য মিথ্যা বলতে পারে, কারো নারীর প্রতি আসক্ত থাকলে সে নারী পাবার জন্য মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে ইত্যাদি কিন্তু এর কোনটাই যদি পাওয়া না যায় তাহলে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে এটা মেনে নিতেই হবে যে সেই মানুষ যা বলছে তা সত্য। নবীজি (সা) যদি আসলেই খারাপ হতো যেভাবে নাস্তিকরা বিশ্বাস করে তাহলে কি উনি প্রথম সুযোগেই কাফেরদের পক্ষে নতুন নিয়ম বানাতে পারতেন না? ধনী ধনী কাফেররা উনাকে টাকা, নারী, সম্পদ এমনকি যা কিছু উনি চান সব কিছুই দেবার জন্য তৈরি ছিলো অথচ উনি একটিও গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। নবীজি (সা)কে সব কিছুই দিয়ে দিতে চেয়েছিল কাফেররা একটি শর্তে যে ইসলামের কথা বলা যাবে না কিন্তু নবীজি (সা) কি করেছিলেন জানেন? পুরোটা পড়ুন।

আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত “সীরাতুল মুস্তফা (সা)” ১ খণ্ড, ১৬৩,১৬৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

উতবা নবী (সা) এর নিকটে এলো এবং বলল, মোহাম্মদ! তোমার বংশ ,মর্যাদা, যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তুমি সমগ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ। তুমি আমাদের প্রতিমাগুলোকে মন্দ বলো, আমাদের পিতা-মাতামহকে বোকা ও মূর্খ বলো, তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলতে চাই। রাসুল (সা) বললেন, হে আবুল ওলীদ, বলুন, আমি শুনছি। উতবা বলল, ওহে আমার ভাতিজা! তোমার এ সব কথাবার্তার মূল উদ্দেশ্য কি? তুমি যদি ধন-দওলতের প্রত্যাশী হও, তা হলে আমরা সবাই মিলে এতটা পরমাণ সম্পদ একত্র করে দেব যে, বড় থেকে আমীর ব্যক্তিও তোমার সমকক্ষ হতে পারবে না। আর যদি তুমি বিয়ে করতে চাও, তা হলে যে মেয়েকে ইচ্ছা, যতজনকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পার। আর যদি সম্মান ও নেতৃত্ব লাভের ইচ্ছা পোষণ কর, তা হলে আমরা সবাই তোমাকে আমাদের নেতা হিসেবে মেনে নেব। আর যদি বাদশাহী চাও, তা হলে আমরা তোমাকে আমাদের বাদশাহ রূপে মেনে নেব। আর যদি তুমি অসুস্থ হয়ে থাক, তবে তোমার চিকিৎসা করাব। হযরত (সা) বললেন, হে আবুল ওলীদ, আপনার যা বলার ছিল, তা কি বলে শেষ করেছেন? উতবা বলল, হ্যাঁতিনি বললেন, আচ্ছা, এখন আমি যা বলি, তা শুনুনআপনাদের মাল-সম্পদের প্রয়োজন আমার নেই, আর আপনাদের নেতৃত্ব সর্দারী করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি তো আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ আমাকে আপনাদের প্রতি পয়গাম্বর করে প্রেরণ করেছেন, তিনি আমার প্রতি একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। তিনি আমাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি আপনাদেরকে আল্লাহ প্রদেয় নেকীর সুসংবাদ শোনাব এবং তাঁর আযাবের ভীতি প্রদর্শন করব। আমি আপনাদের কাছে আল্লাহ তা’লার পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। আপনাদের কল্যাণকামী হিসেবে উপদেশ আকারে তা অবহিত করেছি। যদি আপনারা তা গ্রহণ করেন তবে তা আপনাদের জন্য উভয় জগতের সৌভাগ্য ও কল্যাণের নিমিত্ত হবে। আর যদি আপনারা না মানেন, তা হলে আল্লাহ আমার এবং আপনাদের মধ্যে ফয়সালা না করা পর্যন্ত আমি সবর করব। 

নাস্তিকরা নবীজি (সা)কে যেভাবে খারাপ হিসেবে বিশ্বাস করে এই বিশ্বাস যদি আসলেই সঠিক হতো তাহলে নবীজি (সা) ধনী কাফেরদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতেন এমনকি নবীজি (সা) এমন এমন নিয়ম তৈরি করতেন যে ধনী কাফেররা তাঁকে মাথায় নিয়ে রাখবেন। কেন নবীজি (সা) কাফেরদের পক্ষে নিয়ম তৈরি করলেন না? নিজেকে নবী দাবি করার আগে সবাই উনাকে সম্মান করতো, আলামিন উপাধি দিয়েছিলো কিন্তু কেন উনি সবার বিরুদ্ধে গিয়ে এমন কিছু করতে যাবেন যাতে উনার নিজেরই ক্ষতি হবে? উনার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে দাঁড়াবে? এরপরেও কি নাস্তিকদের মনে চায় না নাস্তিকতার শেকল গলা থেকে খুলে ফেলে সত্যের স্বাদ গ্রহণ করে নিতে?


পাঠক লক্ষ্য করেছেন? আপনারা যাতে উপরের হাদিস গুলো নিয়ে এভাবে যৌক্তিক চিন্তাভাবনা করার সুযোগই না পান এই জন্য “অমুসলিমরা ইমান না আনলে জাহান্নামী হবে” “নবীর আত্মীয়দের মধ্যে জাহান্নামী হবে” এসব কথাকে নাস্তিকরা ঘৃণিত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। নাস্তিকরা কেমন ধোঁকাবাজ হয় প্রমাণ পেলেন তো? উদাহরণ হিসেবে বলা যায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু আইন কানুন থাকে কেউ যদি তা ত্যাগ করে তাহলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয় এমনকি কেউ যদি তা অবিশ্বাস করে তাহলে তো রাষ্ট্রদ্রোহীতার শাস্তিও হতে পারে। এখন কেউ যদি বলে দেশের আইন কানুন মানা না মানা আমার ব্যক্তিগত অধিকার এখানে দেশদ্রোহী কেন বলা হবে? বা অপরাধী বলে কেন ঘৃণা ছড়ানো হবে? এই প্রশ্ন গুলো যেমন ভুল তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতে যারা ইমান আনবে না,মহাবিশ্বের একমাত্র স্রস্টা আল্লাহর দেয়া বিধান মানবে না আল্লাহ ওদেরকে শাস্তি দিবেনই, জাহান্নাম। অমুসলিমরা জাহান্নামী কথাকে ঘৃণা বিদ্বেষ হিসেবে দেখানোটাও নাস্তিকদের ভুল বরং ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে নাস্তিকরাই যে ইসলামের বিরুদ্ধেই ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তা বুঝা যায়। পড়তে থাকুন সামনে আরো ধারালো শাণিত যুক্তির দেখা পাবেন। 


মুশরিকদেরকে ঘৃণা করতে শেখায় ইসলাম?


নাস্তিকরা বলে, কোরআন এবং হাদিসে অসংখ্য জায়গাতেই মুশরিকদের ঘৃণা এবং লাঞ্ছিত করতে মুসলিমদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো এতই সাম্প্রদায়িক, বর্বর এবং সংখ্যায় বেশি যে, সবগুলো এখানে উল্লেখ করাও কষ্টকর। তবে কয়েকটি উল্লেখ করতেই হচ্ছে।


সুরা বাইয়েনাহ,৯৮ঃ৬ = আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম<///> সুরা আনফাল ৮ঃ৫৫ = সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি। <///> সুরা বাকারা ২ঃ১৬১ = নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা’নত<///> সুরা বাকারা ২ঃ২৫৭ = আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। <///> সুরা আল ইমরান, ৩ঃ১২ = কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থানসুরা আল ইমরান ৩ঃ৩২ = বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না


সুরা আরাফ ৭ঃ১৭৯ = আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। <///> সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫৬ = অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। <///> সুরা আল ইমরান ৩ঃ১২৭ = যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন-যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়। <///> সুরা আল ইমরান ৩ঃ১৫১ = খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহ্র সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুত: জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।


চতুষ্পদ জন্তু থেকে বিবর্তিত হওয়া প্রাণীরা কি আর মানুষের মতো বুঝতে পারবে বলুন? তেমনি নাস্তিকরাও কুরআনের আয়াত গুলো বুঝতে পারে নি। উপরের আয়াতে আসলেই ঘৃণা-বিদ্বেষ শিক্ষা দিচ্ছে কিনা তা সহজ উদাহরণের মাধ্যমে আমরা বুঝে নিব। ধরুন দেশের কোনো একজন নেতা ভাষণ দেবার সময় বলছে “যারা বাংলাদেশকে নিজের দেশ হিসেবে বিশ্বাস করে না, এরা দেশদ্রোহী, নিকৃষ্টতম প্রাণী, এরা অমানুষ-এদেরকে আপনারা যেখানে পাবেন হাতে শিকল বেঁধে বন্দী করে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। এদের শাস্তি আজীবন কারাবাস। এমনকি এরা মারা গেলে এদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। খেয়াল করুন কোনো লোক যদি বলে এখানে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে তাহলে কি এটা যৌক্তিক কথা হবে? অথবা কেউ যদি বলে ‘কে কোন দেশের পক্ষে থাকবে নাকি থাকবে না’ সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার তাই রাষ্ট্রদ্রোহীতা বা দেশদ্রোহীতা ট্যাগ দেয়া ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোর নামান্তর এই কথা কি যৌক্তিক হবে? অবশ্যই না। কারণ দেশদ্রোহীরা একটি ভয়ংকর অপরাধ। প্রতিটি দেশের যেমন আইন-কানুন রয়েছে তেমনি মহাবিশ্বের একমাত্র স্রস্টা আল্লাহরও আইন রয়েছে মানুষের জন্যে। যে এই আইন অনুসরণ করবে সে জান্নাতী মেহমান হিসেবে সম্মান পাবে আর যে এই আইন মানবে না সে জাহান্নামী কয়েদী হবে। আল্লাহর কথা অমান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ আর তাই অপরাধীকে নিকৃষ্ট বলা,জাহান্নামী বলা ইত্যাদি কখনো বর্বর অমানবিক নয় বরং যৌক্তিক। ইসলামের দৃষ্টিতে নাস্তিকদের অভিযোগ আগাগোড়া বাতিল প্রমাণিত হয়ে গেলো।


তবে হ্যাঁ, মানুষ হিসেবে সকল মানুষ অর্থাৎ আদম সন্তান হিসেবে সকলেই মর্যাদাবান ও সুন্দর। এমনকি অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ। কুরআনের এই আয়াত গুলো নাস্তিকদের সহ্য হবে না কারণ কুরআন অনুযায়ী মানুষ অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অথচ নাস্তিক্যধর্ম বিশ্বাস মতে মানুষ বিবর্তিত চতুস্পদ আধুনিক জানোয়ার। বুদ্ধির দিক থেকে মানুষ একটু আলাদা হলেও দিন শেষে সে অন্যান্য প্রাণীদের মতো বিবর্তিত জানোয়ারই থাকবে। এখন আপনারাই বলুন ইসলাম কি আর নাস্তিকদের ভালো লাগবে?


আল কুরআন, সুরা বনী ইসরাইল ১৭ঃ৭০ আয়াত থেকে বর্ণিত, 


নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি


আল কুরআন, সুরা তীন ৯৫ঃ৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,


আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে


আল কুরআন, সুরা তাগাবুন ৬৪ঃ৩ আয়াত থেকে বর্ণিত,

 

তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন।


“মানুষই যখন ইমান না এনে কাফের হয়ে যায়” তখন এই অপরাধময় কর্মের কারণে তাকে শাসনমূলক কথা বলা হয়েছে কুরআনে। যেমন ‘তারাই সৃষ্টির অধম’, ‘ফেরেশতাদের লানত’ ‘জাহান্নামী’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সাধারণ ব্যাপারটিকে না বুঝার ভান ধরে কেউ যদি বলে ইসলাম মুশরিকদের ঘৃণা করতে আদেশ দেয় বা কুরআনের আয়াত বর্বর অমানবিক তাহলে অবশ্যই এটি নাস্তিকদের অসীম মূর্খতার প্রমাণ হিসেবে ধর্তব্য হবে। লক্ষ্য করলে দেখছেন আমাদের ভুলের কারণে আমার পিতামাতা আমাদেরকে অনেক সময় শাসন করার অর্থে বলে থাকে বেহায়া, নির্লজ্জ, অভদ্র ইত্যাদি এখন নাস্তিকদের মতো কোনো মূর্খ যদি বলে পিতামাতা তার সন্তানদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ রাখছে তাহলে অবশ্যই এটি যেমন ভুল হবে তেমনি বান্দার ভুলের জন্য আল্লাহ কুরআনে শাসন অর্থে যেসব শব্দ ব্যাবহার করেছে তা ঘৃণা বিদ্বেষ ট্যাগ লাগানোটাও ভুল হবে। একেবারেই সহজ উদাহরণ দিয়েছি। দেশের সবাই নাগরিক হিসেবে মর্যাদাবান কিন্তু কর্মের কারণে ভালো অথবা খারাপ হিসেবে গণ্য হয় তেমনি মানুষ হিসেবে সকলেই সুন্দর কিন্তু কর্মের কারণে কেউ ভালো আবার কেউ খারাপ হয়। তবে এই কথাও সত্য যে অপরাধীকে ঘৃণা করা অবশ্যই অমানবিক বা বর্বর নয় বরং উত্তম, ঘৃণা করা উচিত। তেমনি আল্লাহও কাফেরদের অপরাধের কথা বর্ণনা করে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন যা বর্বর অমানবিক নয় বরং যৌক্তিকভাবেই উত্তম। পড়ুন।


তাফসীরে ইবনে কাসীর (ইসলামিক ফাউন্ডেশন),  ৪ খণ্ড,  ৪৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


উল্লেখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ পাক কাফিরদের প্রতি তাহাঁর ঘৃণা এবং তাহাদের অপকর্মের বর্ণনা দিয়া বলিতেছেন যে, ভূপৃষ্ঠে জীবকুলের মধ্যে বেঈমান কাফিরগণই হইল আল্লাহর নিকট অতি নিকৃষ্ট জীব। উহাদের মধ্যকার যাহাদের সাথে তুমি যখনই কোন চুক্তিতে আবদ্ধও হও, তখনই উহারা সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেযখন উহাদিগকে বিশ্বাস করিয়া আস্থা স্থাপন কর, তখন বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া তোমার আস্থা নষ্ট করিয়া ফেলে। উহারা আল্লাহকে আদৌ কোনরুপ ভয়ই করে না। নির্ভয় দাম্ভিকতার সহিত পাপাচারে লিপ্ত হয়


তাফসীরে জালালাইন, সপ্তম খণ্ড, ৫৩৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


উল্লিখিত (সুরা বাইয়েনাহ ৯৮ঃ৬,৭) আয়াতে আল্লাহ তা’লা কাফেরগণে সৃষ্টি সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট সৃষ্টি নামে আখ্যায়িত করেছেন। এর তাৎপর্য হলো যে, মানুষ সৃষ্টিকুলের মধ্যে জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেকের দিক দিয়ে আশরাফুল মাখলুকাত। কারণ অন্যান্য সৃষ্টিকে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেক দান করা হয়নি। আর তাদেরকে কর্মেও কোনো স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি, কিন্তু মানুষ এ সব অমূল্য রত্ন ও কর্মের স্বাধীনতা লাভ করেও তার সঠিক ব্যাবহার করে না। আল্লাহর প্রদর্শিত পথে তার প্রয়োগ দেখায় না; বরং তার প্রদর্শিত পথের বিপরীত পথেই নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধি পরিচালনা করেছে। সুতরাং এ মূল্যবান সম্পদের যথার্থ ব্যাবহার না করার কারণেই তারা সৃষ্টিকুলের মধ্যে নিকৃষ্টতর সৃষ্টি প্রমাণিত হয়েছে।……………যারা কুফরি ও শিরিক করে তারা আশরাফুল মাখলুকাত হয়েও সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব। আর যারা ইমান এনে সৎকর্ম করে তারা আশরাফুল মাখলুকাতের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করেছে এবং সৃষ্টির সেরা প্রাণীরুপে পরিগনিত হয়েছে


যেই নাস্তিকতা ইসলামকে ঘৃণা করতে শিখায় সেই নাস্তিকতাকে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি। যেসব নাস্তিকরা উপরের আয়াত গুলো থেকে এই মিথ্যাকথা বলে যে ইসলাম মানুষকে ঘৃণা করতে শেখায় এদের নিজেদের বইপত্র পড়লে বুঝা যায় ইসলাম নয় বরং এরা নিজেরাই আসলে ঘৃণা-বিদ্বেষের মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে থাকে। কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি নিজেরাই সুক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে পড়ে নিন। নাস্তিকরা নিজেদের বইপুস্তক বুঝে পড়ে দেখে না। নাস্তিক্যধর্মে যে অন্যকে ঘৃণা করার, বিদ্বেষ রাখার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দেয়া আছে এই কথা হয়তো তারা জানেই না। নাস্তিকরা নিজেদের বইপত্রে কিভাবে বিদ্বেষ ও ঘৃণার চর্চা করে থাকে এই মুহূর্তে দেখিয়ে দিচ্ছি। নাস্তিক্যধর্মই মানুষকে ঘৃণা করার স্বাধীনতা দেয়। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? এখনি হবে। মন দিয়ে পড়তে থাকুন।

মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদের লেখা “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ২৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া হয়, হিটলার-মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিল, তা ছিল অশুভ দাবানল, প্লাবন, অগ্নিগিরি, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। জনতাজাগানো নেতারা জনগণকে সৃষ্টি করতে পারে, আবার নষ্ট করতে পারে। তারা জনগণকে উন্মাদ মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো১৯৭১-এর মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলেন শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ অগ্নিগিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। 

ইসলামের দৃষ্টিতে হিটলার-মুসোলিনিরা নিঃসন্দেহে অন্যায় কাজ করেছে কিন্তু নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে হিটলার-মুসোলিনি যা করেছে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় করেছে এমনকি মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষের এই স্বাধীনতা রয়েছে সে ভালো কাজ করবে নাকি মন্দ তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিঃসন্দেহে মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে ভালো কাজ করেছিলেন কিন্তু হিটলার বা মুসোলিনির কাজকে কি মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে খারাপ বলার সুযোগ আছে? উত্তর হচ্ছে না, নেই। কেন? কারণ কেউ ক্ষমতা পেলে কিভাবে চালাবে নাকি চালাবে না সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। ইসলাম কেউ মানবে কি মানবে না এটা যেমন তার ব্যাপার, ঠিক তেমন। কথা এখানে নয়, কথা হচ্ছে হিটলারদের মতো মুক্তমনাদের বিরুদ্ধে নাস্তিক লোকটি যে বিদ্বেষ, ঘৃণা প্রকাশ করলো এটা কি নাস্তিকদের কাছে মানবিক, বর্বর? যদি বলেন, হিটলার-মুসোলিনির কর্ম খারাপ ছিল দেখেই তাদের সমালোচনা করা হয়েছে তাহলে যারা ইমান আনেনি তাদেরকে আল্লাহ কুরআনে সমালোচনা করেছেন এটা বুঝতে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন আপনাদের? হিটলার-মুসোলিনিরা আপনার দেয়া ভালো অনুযায়ী ভালো কাজ করেনি দেখে যদি আপনাদের ঘৃণা যৌক্তিক হয় তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো অনুযায়ী কেউ ভালো কাজ না করলে তার নিন্দা করা হলে সেটা কেন অমানবিক বা বর্বর হবে? কেন? তাহলে নাস্তিকরা আসলে কাদেরকে খুশি করার জন্য কুরআনের মিথ্যা সমালোচনা করে যাচ্ছে, হে?

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

শেক্সপিয়র বলেছিলেন, জনতার অনেক মাথা, কিন্তু ভেতরে কোনো ঘিলু নেই, এটাকে ব্যাবহার করে একনায়কেরা, তাদের মাতিয়ে তোলে

একটি দেশের পুরো জনগণের মাথায় ঘিলু নেই বলাটি বর্বর, অমানবিক হলো না? আরবদের থেকে খারাপ মানুষ নাকি সে কখনো দেখেনি এমনকি আরব নাকি জাহান্নাম- জানেন? নাস্তিকরা এগুলো পড়ে না? এখানে বিদ্বেষ, ঘৃণা খুজে পায় না? তাহলে? কথায় আছে না “নিজের বেলায় ষোলআনা অন্যের বেলায় তালবানা” নাস্তিকদের আচরণের সাথে পুরো মিলে গিয়েছে না?

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

আরবরা তো আমাদের সম্পূর্ণ বিপরীত, এখনো ওরা উগ্র যাযাবর, যাদের কাজই ছিলো গোত্রে গোত্রে হানাহানি করা, এখনো গোত্রীয় হানাহানি থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে নি; আরবদের সঙ্গে একটু বসলেই বোঝা যায় তারা কতো উগ্র, হঠাৎ ধনে অহমিকাপরায়ণ, অসংস্কৃত, আদিম, অশ্লীল, বর্বর, ইন্দ্রিয়পরায়ণ, ও প্রতিক্রিয়াশীল। ধর্ম ও সম্ভোগ- নারী ও মদ্য, যদিও এটি নিষিদ্ধ- ছাড়া তারা সাধারণত আর কিছু বোঝে না, জ্ঞান ও শিল্পকলা, সৃষ্টিশীলতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা তাদের শত্রু। আরবদের থেকে খারাপ মানুষ আমি খুবই কম দেখেছিতাই সেখানেই পাঠাতে হয় প্রেরিতপুরুষ

নিউ ইয়র্কে এক বাঙালি তরণের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিলো রাস্তায়। সে শিককাবাব বেচে ম্যানহাটনের টানেল স্ট্রিটে। সাত বছর সে এক আরব দেশে ছিলো, তার মতে দোজগে ছিলো, আর নিউ ইয়র্কে সে আছে বেহেশতে। আরব আর আমেরিকার মধ্যে বেহেশত-দোজগের পার্থক্য। ধর্মের ক্ষেত্রেও তারা খুবই কপট, যান্ত্রিকভাবে তারা নামাজ আদায় করে, এর বেশি কিছু করে না; একসঙ্গে অনেকগুলো স্ত্রী রাখে, দাসীও রাখে অনেকগুলো, যাদের তারা সম্ভোগ করে পিতা ও পুত্ররা মিলে। বাঙলাদেশ, শ্রীলংকা, ফিলিপাইনসের অনেক পরিচারিকা সেখানে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে সম্মিলিত ধর্ষণেরএকজন খাটি বাঙালি মুসলমান যতোটা ধার্মিক একজন খাটি সৌদি মুসলমান ততোটা ধার্মিক নয়, যদিও তাদেরই আমরা মনে করি ইসলামের বাহক

পাঠক এখানে অনেক কিছুই বুঝার রয়েছে। বুঝার চেষ্টা করতে হবে। মুক্তমনা নাস্তিক লোকটি যে আরবদেরকে উগ্র যাযাবর, অহমিকাপরায়ণ, অসংস্কৃত, আদিম, অশ্লীল, বর্বর, ইন্দ্রিয়পরায়ণ, ও প্রতিক্রিয়াশীল বলে বিদ্বেষ-ঘৃণা প্রকাশ করলো এমনকি পুরো আরবকে দোজগ হিসেবেও সমর্থনও করলো-এগুলো কিন্তু তার নিজের নৈতিকতার সাথে মিলে নি দেখে বলেছে। অন্য নাস্তিকরা এখানে এই নাস্তিক্কে অমানবিক বর্বর বলবে না, কেন? কারণ আরবদের মন্দের সমালোচনা করেছে তাই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে যেসব আরবরা ধর্ষণ করে তারা ইসলামের আইন অমান্য করে ধর্ষণ করেছে যা একপ্রকার প্রথাবিরোধী আন্দোলন হিসেবে গণ্য হতে পারে না কেন? ইসলামে সমকামীতা নিষেধ হওয়া সত্ত্বেও নাস্তিকরা যেমন এই বিধানকে না মেনে প্রথাবিরোধী আন্দোলনের ঠেলায় সমকামীতার চর্চা করে থাকে তেমনি ইসলামে ধর্ষণ করা নিষেধ এই বিধানকে উপরে বর্ণিত আরবরা না মেনে বাপ-ছেলে মিলে মুক্তমনের মুক্তচিন্তায় যে ধর্ষণ করেছে- নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এটি কেন খারাপ হবে? সেই বাপ ছেলে মিলে যদি সমকামিতা চর্চা করতো তখন দেখতেন নাস্তিক লোকটি কিভাবে আনন্দ প্রকাশ করে বলতো আরবরা উন্নত হচ্ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সমকামীতা চর্চা করা নাস্তিক আর মুক্তমনে ধর্ষণ করা বাপ-ছেলে এরা সকলেই ইসলামের বাইরে গিয়ে মুক্তচিন্তা করেছে, করেছে প্রথাবিরোধী কাজ।নাস্তিক্যধর্মে সমকামীতা যদি মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয়ে থাকে তাহলে বাপ-ছেলে মিলে কাউকে ধর্ষণ করলে কেন মুক্তবুদ্ধির চর্চা হবে না? সবাই সবার মুক্তচিন্তায় স্বাধীন হতে পারবে না কেন?

আল কুরআন, সূরা আনয়াম ৬ঃ১৫১ আয়াত থেকে বর্ণিতঃ 

তোমরা অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না।সেটা গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে।

সহিহ বুখারী,হাদিসঃ ৬৯৪৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিতঃ

লায়স (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সুফীয়্যাহ বিন্‌ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমর (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেনকিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী (রহঃ) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল, বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জারিমানা নেই। কিন্তু তার উপর ‘হদ’ জারি হবে।- ihadis.com

 “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ৮৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

ধর্মের যদি কোনো উপকারিতা থাকতো, তাহলে বাঙলাদেশ এখন পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও উন্নত দেশে পরিণত হতো; কিন্তু এটি পরিণত হয়েছে নষ্টতম দেশেধার্মিকদের দুর্নীতিতে দেশ এখন জর্জরিত। ধর্মের কোনো উপকারিতা নেই, অপকারিতা বিপুল

আসলে এই মূর্খ নাস্তিক লোকটি যে ইসলামও বুঝতো না ওর এমন কথা থেকেই পরিস্কার হয়ে যায়। ধার্মিক হচ্ছে সেই লোক যারা অন্যায় করে না অথচ অন্যায়কারীকে ধার্মিক বানিয়ে ডাহামিথ্যে কথা বললো মুক্তমনা হনুমান থুক্কু হুমায়ুন আজাদ। নাস্তিকটি কি এই হাদিস গুলো জীবনে চোখে দেখেনি?

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৯৩৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যেনাকারী যখন যেনায় লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে নামদ্যপ যখন মদ পানে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে নাচোর যখন চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। আর লুটতরাজ ও ছিনতাইকারী যখন লুটতরাজ ও ছিনতাই করে এবং লোকজন তার দিকে চোখ তুলে তাকায়, তখন সে মুমিন থাকে না।-ihadis.com 

 উপদেশ, হাদিসঃ ১৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম এরশাদ করেন, (১) কোন যেনাকার যেনা করতে পারে না যখন সে যেনা করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (২) কোন মদখোর মদপান করতে পারে না যখন সে মদ্যপান করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (৩) কোন চোর চুরি করতে পারে না যখন সে চুরি করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (৪) কোন ডাকাত এরূপে ডাকাতি বা ছিনতাই করতে পারে না যে লোক তার প্রতি নযর উঠিয়ে দেখে (অর্থাৎ প্রকাশ্যে) যখন সে ডাকাতি করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (৫) তোমাদের কেউ গণীমতের মালে (বা কোন মালে) খেয়ানত করতে পারে না যখন সে খেয়ানত করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। অতএব তোমরা সাবধান হও? তোমরা সাবধান হও’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষ যখন খিয়ানত করে তখন মুমিন থাকে না। মুমিন হওয়ার জন্য তওবা করতে হবে।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেনঃ মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।-ihadis.com

নিজেদের নাস্তিকসম্প্রদায়কে ফেরেশতা প্রমাণ করার জন্য কিভাবে নিজের বইতে পামপট্টি মেরেছে নাস্তিকটি দেখুন। হাসতে হাসতে আপনার পেট ব্যথা হয়ে গেলে আমি দায়ী নই। 

“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ৮৩,৮৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

বাঙলাদেশে নাস্তিক আছে ক-জন? সবাই তো ধার্মিক। দেশে এতো খুন, করছে কারা? তারা কি নাস্তিক? না, তারা ধার্মিক, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। দেশে এতো ধর্ষণ, করছে কারা? তারা কি নাস্তিক? না, তারা সবাই ধার্মিক, তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। দেশে এতো ঘুষ খাওয়াখাওয়ি, এতো ঋণখেলাপিতারা কি নাস্তিক? না, তারা ধার্মিক, পাজেরো হাকিয়ে তারা মসজিদে যায়, তাদের সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে।

আমলারা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। দারোগাপুলিশরা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। কাস্টমসের লোকেরা, ব্যাংকের লোকেরা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। ডিসিরা, এসপিরা, জজরা কি নাস্তিক? না, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। হজ আর ওমরা কারা করে? তারা কি নাস্তিক, তারা আস্তিক, তাদের সব কাজে আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা।

এমনকি পতিতারাও এখানে নাস্তিক নয়, তাদেরও আছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা। তবু বাঙলাদেশ কেনো এতো দুর্নীতিগ্রস্ত? বিশ্বে প্রথম? একটি নাস্তিকও দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, কিন্তু প্রতিটি ধার্মিকই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের দুর্নীতি মূলস্তম্ভ টাকা, ঘুষ ছাড়া, অবৈধ উপায়ে টাকা বানানো ছাড়া,বাঙলাদেশে আর কোনো পবিত্র কাজ নেই

নিজের নাস্তিকসম্প্রদায়কে এভাবে পামপট্টি মারাটা আমার কাছে যৌক্তিক কারণে খুবই হাস্যকর লেগেছে। উপরে যারা দুর্নীতি করেছে, অন্যায় করেছে, খারাপ কাজ করেছে তারা ইসলামের বিধান অমান্য করে নিজেদের স্বাধীন চিন্তার মুক্তিতে করেছে। আল্লাহ কি বলেছেন তোমরা দুর্নীতি করো? নবী মোহাম্মদ (সা) কোথাও বলেছেন তোমরা সুদ খাও, ঘুষ খাও? কুরআন ও হাদিসের কোথায় আছে তোমরা মুমিনরা ধর্ষণ করো? তাহলে মুক্তমনা লোকটি যেভাবে নিজেদের গোয়ালঘর বাঁচানর জন্য এভাবে মিথ্যাকথা বললো একের পর এক তা কি অযৌক্তিক নয়? উপরে বর্ণিত প্রতিটি অপকর্মকারী ইসলামের আদেশ অমান্য করে নিজেদের মুক্তচিন্তায় দুর্নীতি করেছে, নিজেদের মুক্তচিন্তায় বেশ্যাদের সাথে শিশ্ন খেলা খেলেছে। হ্যাঁ এটা ঠিক যে তারা আস্তিক কিন্তু তাদের ‘মুক্তমন’ তাদের নিজস্ব ‘মুক্তচিন্তা’ তাদের নিজস্ব ‘মুক্তবুদ্ধির চর্চা’, তাদের ‘চিন্তার মুক্তি-ই দায়ী তাদের কর্মের জন্য - যা নাস্তিক্যধর্ম প্রতিটি মানুষকে স্বাধীনতা প্রদান করে। নাস্তিকরা যেমন ইসলামের বিধান অমান্য করে তেমনি তারাও করেছে। বিখ্যাত নাস্তিক মুক্তমনা প্রবীর ঘোষ স্বীকার করেছেন যে নাস্তিকরা লম্পট হয়, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। পড়ুন তার নিজের লেখা বই থেকে। প্রবীর ঘোষ লিখিত “যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি” বইয়ের ১০৩ পৃষ্ঠাতে প্রবীর ঘোষকে প্রশ্ন করা হয় যে তসলিমা একজন ধর্মহীন, মানবতাবাদী মানুষ এটা তো স্বীকার করবেন?

উত্তরে নাস্তিক প্রবীর ঘোষ বলেন তসলিমা কতটা মানবতাবাদী আসুন দেখি। কারণ ধর্মহীন বা নাস্তিক হলেই মানবতাবাদী, ভালো মানুষ হবেন এমনটা সত্যি নয়।নাস্তিক লম্পট,দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ আমরা অনেক দেখেছি


চিন্তার মুক্তিতে মানুষ যেমন ভালো কাজ করার অধিকার পাবে তেমনি কেউ চাইলে অপকর্ম করারো মুক্তচিন্তা করতে পারবে। নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে নামাজ আদায় করবে কি করবে না? পর্দা করবে কি করবে না? ইসলাম মানবে কি মানবে না? এগুলো যেমন ব্যক্তিগত ব্যাপার তেমনি কেউ মুক্তচিন্তায় কাউকে ঘৃণা করবে কি করবে না? মুক্তচিন্তায় মিথ্যা বলবে কি বলবে না? সুদ খাবে কি খাবে না? ঘুষ খাবে কি খাবে না? নিজের মাকে ধর্ষণ করবে কি করবে না? নিজের বাবার সাথে সমকামীতা চর্চা করবে কি করবে না? এগুলোও মুক্তবুদ্ধির দৃষ্টিতে একান্ত তার নিজস্ব ব্যাপার অর্থাৎ এগুলো সে চাইলে না করতে পারে আবার চাইলে করতেও পারবে। যৌক্তিক কারণে বলতে হচ্ছে ইসলাম ভালো কাজের আদেশ দেয় আর মন্দ কাজ করতে নিষেধ করে তাই ভালো কাজ করলে ইসলামের প্রশংসা করতে হবেই কিন্তু মন্দ কাজ যেহেতু করতে নিষেধ করেছে সেহেতু মন্দ কাজের জন্য ইসলাম কখনো দায়ী হবে না। বরং ইসলামের দেয়া বিধান অমান্য করে নিজস্ব ব্যক্তি স্বাধীনতায় যেইই অপকর্ম করুক সেটার জন্য মুক্তবুদ্ধির চর্চা দায়ী। এই সত্য কথাকে অস্বীকার করার যৌক্তিক ভিত্তি নেই নাস্তিকদের কাছে।


“নাস্তিক্যধর্ম” ত্যাগের মুক্তির অনুভূতির আনন্দ মুক্তমনারা সহ্য করতে পারে নাঃ


ইসলামে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া অমানবিক বলা নাস্তিকদেরকে এমন কথা বলতে শুনবেন যে ইসলাম ত্যাগ করার স্বাধীনতা আমার থাকা উচিত। আমি কি গ্রহণ করবো কি করবো না? আমি কি পোশাক পরিধান করবো কি করবো না? এগুলো আমার নিজের ব্যাপার, ইসলাম এখানে নাক গলাবে কেন?- যারা এমন প্রশ্ন করে এরা হয়তো জানেই না এদের গুরুরা এটা সহ্য করতে পারে না তাদেরকে, যারা নাস্তিক্যধর্মের শেকল গলা থেকে ফেলে দিয়েছিল। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? নিজেরাই পড়ে নিন।


 “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শুদ্ধ আধুনিক বাঙালিদের, বিশ্বমানবদের, একজন, উনিশ শতকের মাঝভাগেই এটা বুঝেছিলেন; তাকে যখন বলা হতো বিধবাবিবাহ প্রবর্তন ও বহুবিবাহ রহিত করার জন্যে ইংরেজদের সাহায্যে আইন প্রণয়ন করার দরকার নেই, শিক্ষাই একদিন একাজগুলো করবে, এসব নোংরামো দূর করবে, তিনি বলতেন তিনি তরুন বাঙ্গালিদের বিশ্বাস করেন না, কেননা এরা যৌবনে প্রচণ্ড বিপ্লবী ও নাস্তিক হতে পারে কিন্তু বুড়ো বয়সে এরা হবে ঘোর স্বার্থপর, প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধ। প্রকৃত শিক্ষা আমাদের মধ্যে কখনোই ঢোকে নি, আমরা পাশটাশ করেছি চাকুরি পাওয়ার জন্যে, জ্ঞান অর্জনের জন্যে নয়, জ্ঞানকে বাস্তবায়িত করার জন্যে নয়। ইয়ং বেঙ্গলদের অনেকেই পরে দুষ্ট বৃদ্ধ হিন্দু হয়েছিলো। বক্রিমচন্দ্র পঞ্চাশোত্তর বয়সে, এখন আর যাকে বৃদ্ধকাল বলা যায় না, নিজেকে ও হিন্দুদের নষ্ট করেছিলেন ধর্মান্ধতা দিয়ে


কেমন নির্লজ্জ হলে এমন কথা বলতে পারে চিন্তা করতে পারেন? যুবকদের যদি নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাস করার স্বাধীনতা থাকতে পারে তাহলে নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করার স্বাধীনতা কেন থাকবে না? কেন নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করলে তাকে স্বার্থপর বলা হবে? নাস্তিক্যধর্মে এসব প্রশ্নের উত্তর কি হবে? ধর্মান্ধতা করলে সমস্যা কিন্তু নাস্তিকান্ধতা করলে সমস্যা নেই, তাই না? এমনকি এক পরিসংখ্যানবিদ নাস্তিকান্ধতা ত্যাগ করার কারণে নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ কিভাবে তাকে নিয়ে কথা বলেছিলেন। দেখুন।


 “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৮ ও ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে


আমাদের এক পরিসংখ্যানবিদ, যিনি ১৯৫০-এর দশকে টেনিস খেলতেন, কন্যাদের রবীন্দ্রসঙ্গীতে পারদর্শী করে তুলেছিলেন, কিছু চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছিলেন, বুড়ো বয়সে মুখ ভরে দাড়ি রেখেছিলেন,মাথায় সব সময় টুপি পরতেন, খুবই অন্যমনস্ক আচরণ করতেন, তিনি তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতদক্ষ কন্যাকে বুড়ো বয়সে বলেছিলেন, জীবনে তিনি বড়ো ভুল করে ফেলেছেন, পরিসংখ্যান ও পদার্থবিজ্ঞান চর্চার বদলে যদি তিনি কোরান হাদিসের চর্চা করতেন ,তাহলে বেহেস্তে যেতে পারতেন, চিরকাল সুখে থাকতে পারতেনআমাদের আরো বহু বিখ্যাত পণ্ডিত যতো জ্ঞানচর্চা করেছেন, তার বড়ো অংশই অজ্ঞানতা চর্চা, জ্ঞান তাদের চর্চার বিষয় ছিলো না। বেহেস্ত নামক আষাঢ়ে গল্পের মোহ, ক্লান্তিহীন আশ্লেষের ক্ষুধা, মুসলমানদের মধ্যে আজো এতো দুর্মর, এজন্যেই মুসলমান আজো আধুনিক চেতনা আয়ত্ত করতে পারেনি। আমাদের দেশে যারা বিজ্ঞানচর্চা করেন, তাঁরা বুড়ো বয়সে অধিকাংশই হন বিজ্ঞানবিরোধী;অবয়বে হন মাওলানামৌলবি


কোনো যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ নাস্তিকান্ধতা ত্যাগ করলে তাকে কেমন চোখে দেখতো মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ বুঝতে পেরেছেন? হুমায়ুন আজাদের হাতে ক্ষমতা থাকলে হয়তো যারা নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করেছে তাদের কল্লা রশি দিয়ে বেঁধে ফাঁসিতে তুলে দিত। হুমায়ুন আজাদরা যদি সত্যিই ভদ্রমনা হতো তাহলে এভাবে বলতো, প্রতিটি মানুষের নাস্তিকতা ত্যাগের অধিকার রয়েছে। কে শেষ বয়সে দাড়ি রাখবে আর কে রাখবে না সেটা একান্ত তার ব্যাপার।কে পদার্থ বিজ্ঞান চর্চা করবে আর কে কোরান হাদিস সেটাও তার ব্যাপার। আমার কাছে তার নাস্তিকতা ত্যাগ করার বিষয়টি খারাপ লাগলেও তার কাছে তো লাগেনি সেহেতু তার কাছে নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করা ভালো কাজ। এরকম কিছু তো বলেই নাই উল্টো মুসলিমদেরকে বিজ্ঞানবিরোধী করে দেখানোর পয়তারা করলো। প্রশ্ন করতে থাকতে চাই, দুনিয়ার সকল বিজ্ঞানী কি নাস্তিক যে নাস্তিকতা ত্যাগ করলে তাকে বিজ্ঞানবিরোধী ট্যাগ দেয়া হবে? দুনিয়ার এমন হাজার হাজার নয় বরং এরচেয়েও বেশি বিজ্ঞানী রয়েছে যারা নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করেন তাহলে এই হিসেবে কেউ যদি নাস্তিকতাকে অবিশ্বাস করে সে তো বিজ্ঞানমনস্কতার কাজ করলো। নাস্তিক লোকটি কি জানতো না দুনিয়াতে নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করে এমন প্রচুর বিজ্ঞানী আছে? এইবার নাস্তিক লোকটির আধুনিক চেতনার কিছু নমুনা আপনাদের সামনে তুলে ধরি।


"আমার অবিশ্বাস" ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 


যখন শিশু ছিলাম, কিশোর হয়ে উঠেছি যখন,তখনও আমি সব কিছু চুষে দেখতে চেয়েছি।আজো অনেক কিছু চুষে আর চেখে দেখতে ইচ্ছে করে।ছেলেবেলা ভরে ইচ্ছে হতো চুলোর লাল আগুনের টুকরোগুলোকে চুষে দেখতে, ওগুলো লাল গোলাপের থেকেও লাল হয়ে জ্বলজ্বল করতো,সূর্যাস্তকেও চুষে স্বাদ নিতে ইচ্ছে হতো,কয়েক বছর আগে সারা সন্ধ্যা চুষতে চিবুতে ইচ্ছে হয়েছিল চুইংগামের মত এক তরুণীকে 


"আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


কোনো কোনো নারী দেখলে ছুঁতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ছুই না।সব ছোঁয়া অনুমোদিত নয়।ওষ্ঠ দিয়ে ছোঁয়া নিবিড়তম ছোঁয়া , আমি যা কিছু ওষ্ঠ দিয়ে ছিয়েছি তারাই আমাকে সুখী করেছে সবচেয়ে বেশি। আমাদের সমাজে ছোঁয়া খুবই নিষিদ্ধ ব্যাপার। আমরা খুব কম মানুষকেই ছুঁতে পারি , খুব কম মানুষকেই ছোঁয়ার অধিকার আছে আমাদের। ছোঁয়া এখানে পাপ। কোন নারী যদি কোন পুরুষকে ছোয় ,কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে ছোয়, তাতে সূর্য খসে পড়ে না,আকাশে হুলুস্থল শুরু হয়ে যায় না কিন্তু আমরা মনে করি মহাজগত তাতে খেপে উঠেছে


"আমার অবিশ্বাস" ১৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


আরও কিছুকাল আমি নক্ষত্র দেখতে চাই, নারী দেখতে চাই , শিশির ছুঁতে চাই,ঘাসের গন্ধ পেতে চাই,


নাস্তিকদের চিন্তার মুক্তির চেতনা যে কোন দিক দিয়ে আসে সেটা আজ না হয় আর নাই বললাম। “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” নামক বইতে নাস্তিক লোকটি অন্যের সমালোচনা করেছে। সে এটা কেন করলো? ওমুকে এটা করলো না কেন? আমাকে কেন বাক স্বাধীনতা দেয়া হলো না? মুক্তচিন্তা কেন করা যায় না? মুক্তবুদ্ধির চর্চা কেন করা যায় না? বাঙলাদেশ নষ্টভ্রষ্টদুষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আমি বাকস্বাধীনতা পাই না, আমাকে মুক্তচিন্তা করতে দেয়া হয় না ইত্যাদি ইত্যাদি অথচ এনি নিজেই আবার মুসলিম নারীদের ধর্মীও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কট্টরপন্থী অবস্থানে ছিলেন। যে লোক নিজেই অন্যের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলে সে নিজে কোন লজ্জায় অন্যদের থেকে অধিকার চায়? চায় মনের মতো স্বাধীনতা? আচ্ছা, নাস্তিকরা কি কখনো মানুষ হবে না? বারান্দায় কোনো নারী থাকলে নাস্তিকটি নারীর বাকতরঙ্গ দেহ দেখে সুখ নিতো। আপনার মার দিকে বা বোনের দিকে এমন মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে কেউ তাকাতে কি করতেন আপনি?


“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


এটাই দেখছি বাঙলাদেশঃ  ষাটের দশকে এক উগ্র আধুনিকাকে সেদিন দেখলাম, এখন সে বিসর্জিত দুর্গার মতো ভেঙ্গেচুরে গেছে, মুখে এতোটুকুও আভা নেই, একদা কলাভবনের বারান্দায় যার শরীরের বিভিন্ন বাঁকের তরঙ্গভঙ্গ দেখা আমাদের জন্য সুখকর ব্যাপার ছিলো, যার সম্মুখ ও পশ্চাৎ ছিলো সমান জলভ্রমিপূর্ণ, এখন সে বোরকা হিজাব তাঁবু বিসমিল্লায় সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, কয়েকবার পবিত্র মক্কা মদিনা মনোয়ারা ঘুরে এসেছে, ধনসম্পদে নিজেকে ভরে ফেলেছে ও ভরে চলছে- এটা করতে ভুল করে নি ও পবিত্র উপায়ে করে নি, কিন্তু এখন অন্ধকারে ঢেকে ফেলেছে নিজেকে, বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লা ইনশাল্লা ছাড়া কথা বলে না, ইসলামের জয়গানে সারাক্ষণ মুখর, সে জানে না তার এসবই পশুশ্রম, ধর্মগ্রন্থ ও সহিহ হাদিসগুলো সে পড়ে নি- হুররা তাকে তার কাম্য প্রাসাদে ঢুকতে দেবে না, তার সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।


“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

কলাভবন, শরিফ মিয়ার ক্যান্টিন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস, নিউমার্কেটের নতুন ঝলমলে বইয়ের দোকান, এবং আরো নানা জায়গায় ছিলো আধুনিকতা সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক ও অনুপ্রাণিত হওয়ার স্থান; তখন অনাধুনিকতা, মধ্যযুগীয়তা, বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ জোব্বা বোরকা ছিলো হাস্যকর, হিজাবের কথা কেউ জানতোই না


আমার দেহ, আমার সিদ্ধান্ত বলা কোনো নারী তার তরঙ্গভঙ্গ, উচ-নিচ দেহ দেখালে সেই নারী নাস্তিকটির কাছে খুবই আধুনিক অথচ একই নারী যখন সেচ্ছায় নিজেকে সভ্য করে তুলতে বোরখা পরিধান করে তখন আর নাস্তিকদের কাছে এটা ভালো লাগে না? কেন ভালো লাগে না? এর জবাব কি পরিস্কার করে বলতে হবে? নাস্তিকটি যে ইসলাম ঠিক মতো বুঝতো না সেটার প্রমাণ মেলে তার নিজেরই বইতে।


সুরা হামীম সিজদা ৪১ঃ৩০ ও ৩১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,


নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন। ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে তোমরা দাবী কর


কুরআন যেখানে পরিস্কার করে বলছে জান্নাতে যা চাওয়া হবে তাই দেয়া হবে সেখানে নাস্তিকটি এই কথা কিভাবে বলার সাহস পেলো যে “হুররা তাকে তার কাম্য প্রাসাদে ঢুকতে দেবে না তার সেখানে প্রবেশাধিকার নেই”? নিজে কোরান ও সহিহ হাদিস না পড়ে, না বুঝে অন্য নারীকে আবার বলছে সে নাকি এগুলো কিছু পড়ে নি, বোঝে নি। সেই নারী কুরআন ও হাদিসকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে দেখেই আপনার নাস্তিক্যবাদকে অবিশ্বাস করতে পেরেছে। আপনার যদি নাস্তিক্যবিশ্বাসের জয়গান গাওয়ার অধিকার থাকে তাহলে সেই নারীর কেন থাকবে না? নারীদের কেন নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগের স্বাধীনতা থাকবে না? নারীদের কেন বোরখা পরার অধিকার থাকবে না?


পাঠক, মুক্তমনা নাস্তিকদের মুক্তচিন্তা থেকে অবতীর্ণ হওয়া অপকর্ম বলতে থাকলে শেষ হবে না। লেখার লাইন, শব্দ, অক্ষর বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। মার্ক্সবাদীতা ছেড়ে মসজিদের সভাপতি হয়ে যায় এক ছাত্রনেতা-এটাও হজম করতে পারেনি কথিত ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী নাস্তিকটি। কিভাবে হিংসায় জ্বলে পুড়ে যেতো লেখাটি পড়লেই ধরতে পারবেন।


“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


ষাটের দশকে এক মার্ক্সবাদী ছাত্রনেতাকে দেখলাম টেলিভিশনে, যে উঠে এসেছিলো নোয়াখালির ধর্মান্ধতা থেকে, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে এক সময় যে কয়েক রাকাত নামাজ পড়তো বাবার পাঠানো নির্দেশ অনুসারে, এক অধ্যাপকের প্ররোচনায় ও নানা অশীল আদরে যে পরে হয়েছিল মার্ক্সবাদের নাবালক আদিরূপ,যে অনেক সুযোগসুবিধা নিয়েছে গত দশ বছরে, এখন আরো নেয়ার জন্যে অব্যবস্থিত হয়ে আছে, তাই এখন সে ইসলামের জয়গানে মুখর, যে একদিন মার্ক্স-এঙ্গেলস, দান্দিক বস্তুবাদ, শ্রেণীসংগ্রাম ছাড়া আর কিছু বুঝতো না, বলতো ধর্ম হচ্ছে জনগণের আফিম, সে আফিম সেবন করতে তার দু-দশক লেগেছে, আপাতত আর কিছু না পেয়ে এখন সে তার টাওয়ারের-একটি ফ্ল্যাট কিনতে সে দেরি করে নি- মসজিদ কমিটির সভাপতি হয়েছে।


“আমার অবিশ্বাস” বই পড়ে নাস্তিক্যধর্ম গ্রহণ করা নাস্তিকান্ধরাই আমাদেরকে আবার শেখাতে আসে ইসলাম নাকি ঘৃণা-বিদ্বেষ শিক্ষা দেয় হাহাহাহাহাহা ইসলাম নিয়ে মুক্তমনারা মিথ্যাচার করবে না তো কারা করবে? এদের গুরুই যেভাবে ইসলাম নিয়ে,নারীদের নিয়ে,বোরখা নিয়ে, ইসলামিক শব্দ নিয়ে ভিত্তিহীন কথা বলেছে আর এরাই বা ইসলাম নিয়ে সত্য কিভাবে বলতে পারবে? জানবে? বুঝবে? শিখবে? অনুধাবন করবে? যৌক্তিক অর্থে বলাই যায় নাস্তিকসম্প্রদায়ের মুক্তমনারা দৈহিকভাবে মানুষের মতো দেখতে হলেও এদের চিন্তাশক্তি,বোধশক্তি এখনো চতুষ্পদ প্রজাতিতেই আটকিয়ে থাকছে।


মুশরিকদের সাথে বসবাস নিষেধ?


একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন নাস্তিকরা এখন ইসলামের সমালোচনা করার জন্য মিথ্যাচারের টেকনিক বিবর্তন করেছে। আগের মতো নাস্তিকরা এখন সরাসরি কিছু দাবি করার সাহস পাচ্ছে না কারণ এরা ভালো করেই জানে নিজেদের মুক্তচিন্তা থেকে নির্লজ্জ মিথ্যাকথা গুলো ইসলামের সাথে মিশালে মানুষ সহজেই ধরে ফেলবে। এই কারণে হাদিসের শব্দে যা লেখা আছে সেটা দেখিয়ে বলে ফেলে “হাদিসে এটিই বলা” আবার কুরআনের আয়াত লাইন শব্দ দেখিয়ে বলবে “কুরআনে এটিই বলা” অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে এভাবে মিথ্যাচার করার পয়তারা করলে আরো সহজে ধরা খাবে। কেননা নাস্তিকরা যে কুরআন-হাদিসের উদ্দেশ্য, মূল প্রেক্ষাপট, ভাবার্থকে বদলে ফেলার পরিশ্রম করে যাচ্ছে তা সহজেই বুঝা হয়ে যাবে।


নাস্তিকরা বলে, মুশরিকদের সাথে বসবাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গেছেন। কোন মুসলিম কোন মুশরিক প্রতিবেশির সাথে মিলে মিশে বসবাস করতে পারবে না, এই হাদিসে এটিই বলা। এমন বর্বর অমানিক বিধান কেউ দিতে পারে?


সূনান আত তিরমিজী, হাদিসঃ ১৬০৫, সহিহ হাদিস, আবূ মুআবিয়ার হাদীসের মত হাদীস হান্নাদ-আবদাহ হতে, তিনি ইসমাঈল ইবনু আবৃ খালিদ হতে, তিনি কাইস ইবনু আবূ হাযিম (রাহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তবে এই সূত্রে জারীর (রাঃ)-এর উল্লেখ নেই এবং এটিই অনেক বেশি সহীহ। সামুরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, ইসমাঈলের বেশিরভাগ সঙ্গী তার হতে, তিনি কাইস ইবনু আবূ হাযিমের সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট বাহিনী পাঠান। এ সূত্রেও জারীরের উল্লেখ নেই। আবূ মুআবিয়ার হাদীসের মত হাদীস হাম্মাদ ইবনু সালামা-হাজ্জাজ ইবনু আরতাত হতে, তিনি ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ হতে, তিনি কাইস হতে, তিনি জারীর (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, সঠিক কথা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কাইসের বর্ণনাটি মুরসাল। সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মুশরিকদের সাথে তোমরা একত্রে বসবাস কর না, তাদের সংসর্গেও যেও না। যে মানুষ তাদের সাথে বসবাস করবে অথবা তাদের সংসর্গে থাকবে সে তাদের অনুরূপ বলে বিবেচিত হবে।”- hadithbd.com


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৭৮৭, সহিহ হাদিস, সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃঅতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কেউ কোন মুশরিকের সাহচর্যে থাকলে এবং তাদের সাথে বসবাস করলে সে তাদেরই মত।-ihadis.com


খেয়াল করলে দেখবেন উপরের হাদিস গুলো যুদ্ধের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে হাদিস গুলো যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্ণিত, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে নয়। যদি স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটে হাদিস গুলো বর্ণিত হতো তাহলে নবীজি (সা) কখনো অমুসলিম মায়ের কাছেও যেতে বলতেন না। উনি এটা বলতেন যে সে তো অমুসলিম তার কাছে কেন যাবে? অথচ উনি এমন কিছুই বলেন নাই।


রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ ৩৩০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আসমা বিন্‌তে আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা (ইসলাম) অপছন্দ করা অবস্থায় আমার সম্পদের লোভ রেখে আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৯৭৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 


আবূ বাক্‌র (রাঃ) -এর কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবীসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হাঁ।ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের ক’রে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।” (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)-ihadis.com


নবীজি (সা) যদি সব অবস্থার জন্য অমুসলিমদের সাথে বসবাস নিষেধ করতেন তাহলে ইহুদী যুবককে কেন উনার খাদিম হিসেবে রাখবেন? এটাই কি প্রমাণ করছে না যে যুদ্ধের মুহূর্তে অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা যাবে না? তবে স্বাভাবিক অবস্থায় যাবে?


মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ১৫৭৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী যুবক নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমাত করতেন। তাঁর মৃত্যুশয্যায় নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৯০৫, সহিহ হাদিস।-ihadis.com


স্বাভাবিক অবস্থায় যদি অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা নিষেধ হতো তাহলে অবশ্যই নবীজি (সা) কাফেরকে খাদেম হিসেবে রাখতেনই না। এটা প্রমাণ করে যে স্বাভাবিক অবস্থায় অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা যাবে তবে হ্যাঁ, যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে দূরে থাকাই ভালো। কাফেরদের সাথে স্বাভাবিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও মার্জিত ভাষায় কথা বলতেন নবী মোহাম্মদ (সা) এবং উনার সাথীরা। যদি উনি অমুসলিম বিদ্বেষ হতেন তাহলে ইহুদীকে বন্দী করে নির্যাতন করতো আর পাওনা দেয়া তো দূরে থাক কিন্তু উনি কি এরকম কিছু করেননি।


সুনানে আন নাসায়ী,হাদিসঃ ৩৬৩৯,সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


জাবির ইৱ্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমার পিতা এক ইয়াহুদি হতে খেজুর ধার নিয়েছিলেন। তার দেনা আদায় না হতেই তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন এবং দু’টি বাগান রেখে যান। ইয়াহুদির (পাওনা) খেজুর দুই বাগানের সব ফলকে পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিকে বললেনঃ তুমি কি এরূপ করতে পার যে, তোমার খেজুরের অর্ধেক এ বছর এবং বাকি অর্ধেক আগামী বছর নিবে? ইয়াহুদি এতে অস্বীকৃত জানালো। তিনি জাবির (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি খেজুর কাটার সময় আমাকে সংবাদ দিতে পারবে? আমি খেজুর কাটার সময় তাঁকে খবর দিলাম। তিনি আবু বকর (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে আসলেন এবং খেজুরের নিচের দিক হতে মেপে মেপে ও কেটে দেওয়া শুরু করা হল। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরকতের জন্য দু’আ করতে থাকলেন। ফলে তার সমস্ত পাওনা (আম্বারের বর্ণনা অনুসারে) আমাদের ছোট বাগানের খেজুর দ্বারাই আদায় হয়ে গেল। (আর বড় বাগান এমনই রয়ে গেল), জাবির (রাঃ) বলেনঃ পরে আমি তাঁদের নিকট তাজা খেজুর এবং পানি পেশ করলাম। (সকলের পানাহার শেষ হলে) পরে তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম বললেনঃ এগুলো সেই নিয়ামত, যে সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।-ihadis.com


এসব ঘটনা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় স্বাভাবিক অবস্থায় অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা যাবে। এমনকি নবী মোহাম্মদ (সা) উনার কোনো সাহাবাকে কোথাও পাঠাতে চাইলে কি শিক্ষা দিতেন পড়ুন,


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তখন তাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করবে, কঠিন করবে না।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪১৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে পাঠাতেন, তখন তাঁকে এ কথা বলতেন যে, তোমরা লোকদেরকে শুভ সংবাদ দেবে; ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াবে না, সহজ করবে; কঠিন করবে না।-ihadis.com

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫১১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ও মু’আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করে বললেনঃ তোমরা লোকদেরকে (দ্বীনের) আহ্বান করবে, সুখবর দিবে, কাউকে তাড়িয়ে দিবে নাসহজ করবে-কঠিন করবে না। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ইয়ামানে আমরা দু’রকমের মদ তৈরি করি, আপনি সে ব্যাপারে আমাদেরকে জানান। (১) আল-বিত’ই, যা মধু পাকিয়ে ঘন করে প্রস্তুত করা হয়; (২) আল-মিয্‌র, যা যব পাকিয়ে ঘন করে তৈরি হয়। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা পূর্ণতার সঙ্গে প্রকাশ করার সামর্থ্য দেয়া হয়েছিল। তিনি বললেনঃ প্রত্যেক নেশাযুক্ত জিনিস যা সলাত হতে গাফিল করে তা (পান করতে) বারণ করছি।-ihadis.com

পাঠক আমি আপনাদের সামনে যেই দলিল-প্রমাণ পেশ করলাম এগুলো নাস্তিকরা চাইবে না মানুষ জেনে যাক। এগুলো জেনে গেলে তো মানুষের সামনে ইসলামকে ভুল ভাবে দেখানো যাবে না। আপনি সুক্ষভাবে যাচাই করে দেখুন নাস্তিকরা আসলেই কিভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এদের না আছে যৌক্তিক চিন্তা করার বোধগম্যতা আর না আছে সত্যকে গ্রহণ করে নেবার সাহস। ইসলামের সমালোচনা করা যদি কারো পেশা হয়ে হয় তাহলে তাকে ইসলাম বুঝানো আর গাধাকে জ্ঞান অর্জনের উপকারিতা বুঝানো একই কথা। স্বাভাবিক অবস্থায় অমুসলিমদের সাথে বসবাস করা যাবে অমুসলিমদের সাথে বসবাস এবং খাবারের ব্যাপারে নবীজি (সা) যা বলেছেন,

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ২১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ শালাবা আল-খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমরা তো আহলে কিতাব আধুষিত এলাকায় বসবাস করি। তাহলে কি আমরা তাদের পাত্রে আহার করতে পারব? তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেগুলোতে খাবে না। তবে অন্য বাসনপত্র না পাও তবে খেতে পার; যদি না পাও তবে তা ধুয়ে নিয়ে তাতে খাবে।’-ihadis.com

 সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৪৭৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবূ সা’লাবা আল খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহ্‌র নবী! আমরা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস করিআমরা কি তাদের থালায় খেতে পারি? তাছাড়া আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি। তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দিয়ে শিকার করে থাকি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কোন্‌টা বৈধ হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ তুমি যে সকল আহলে কিতাবের কথা উল্লেখ করলে তাতে বিধান হলঃ যদি অন্য পাত্র পাও তাদের পাত্রে খাবে নাআর যদি না পাও, তাহলে তাদের পাত্রগুলো ধুয়ে নিয়ে তাতে আহার কর। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের দ্বারা শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ, সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দ্বারা শিকার করেছ, সেটি যদি যবহ করতে পার তবে তা খেতে পার।-ihadis.com

কাফেরদের খাবার দেয়া যাবে না?


নাস্তিকরা বলে, কাফেরদের খাবার দেয়ার বেলাতেও ইসলামে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা, এর অর্থ হচ্ছে মুশরিকদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোও যাবে না।


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩২, সহিহ হাদিস, আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মু’মিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়।-ihadis.com


অমুসলিমদেরকে খাদ্য দেয়া যাবে না এই কথা বলার সাহস এখানে নাস্তিকরা পায়নি তাই অভিযোগের বিবর্তনের ঠেলায় বলে দিয়েছে মুশরিকদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো যাবে না- হাহাহাহাহা এই হচ্ছে নাস্তিকদের অভিযোগ করার বিবর্তিত টেকনিক। যাই হোক নাস্তিকরা যদি একটু কষ্ট করে সামনের হাদিসটি পড়তে পারতো তাহলেই বুঝে যেত এই হাদিসের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ভালো মানুষ ছাড়া অন্য কারো সাথী হওয়া যাবে না এবং আপনার খাবার যেন পরহেযগার লোকে খায়। আপনি ভালো মানুষের সাথী হবেন এবং ভালো মানুষকে খাবার দাওয়াবেন এটিই এই হাদিসের প্রকৃত উদ্দেশ্য। প্রতিটি মানুষের জন্য ভালো মানুষকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবার এবং খাবার খাওয়ার কথা বলা কি অন্যায়? হাদিসে তো বলাও হয় নাই যে অমুসলিমদেরকে খাবার খাওয়ানো যাবে না? মুমিন ছাড়া অন্যদের সাথী হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করছে, ঠিকই তো বলেছে যেমন নাস্তিকদেরকে কেন বন্ধু হিসেবে আমি গ্রহণ করতে যাবো? নাস্তিকরা নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে নোংরা নোংরা অযৌক্তিক অপবাদ দেয়। আমি কিভাবে এদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবো? আপনার বাবা মাকে নিয়ে যারা নোংরা কথা বলে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন? তাদেরকে বাসায় দাওয়াত নিয়ে খাওয়াবেন?


সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৩৩,হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনাবী সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।-ihadis.com

আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ২৭২,২৭৩,২৭৪ আয়াত থেকে বর্ণিত,

তাদেরকে সৎপথে আনার দায় তোমার নয়। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে মাল তোমরা ব্যয় কর, তা নিজ উপাকারার্থেই করআল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। তোমরা যে, অর্থ ব্যয় করবে, তার পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না। খয়রাত ঐ সকল গরীব লোকের জন্যে যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে-জীবিকা র সন্ধানে অন্যত্র ঘোরাফেরা করতে সক্ষম নয়। অজ্ঞ লোকেরা যাঞ্চা না করার কারণে তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদেরকে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা চায় না। তোমরা যে অর্থ ব্যয় করবে, তা আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই পরিজ্ঞাত।যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্যে তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোন আশংঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না।

এই আয়াতের তাফসীরে, তাফসীরে ইবনে কাসীর, অনুবাদঃ মুজিবুর রহমান, ১ খণ্ড, ৭৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বলেন যে, মুসলমান সাহাবীগণ (রা) তাঁদের মুশরিক আত্মীয়দের সাথে আদান-প্রদান করতে অপছন্দ করতেন। অতপর রাসুল (সা)-কে এই সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং তাঁদেরকে তাঁদের মুশরিক আত্মীয়দের সাথে লেন-দেন করার অনুমতি দেয়া হয়। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বলেন যে, রাসুল (সা) বলতেনঃ সাদকা শুধুমাত্র মুসলমানদেরকে দেয়া হবে। যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসুল (সা) বলেন, ভিক্ষুক যে কোন মাযহাবের হোক না কেন তোমরা তাঁদেরকে সাদকা প্রদান কর

মুশরিকদেরকেও যে দান করা যাবে সেটা পরিস্কার। এখানে কথা হচ্ছে কেউ চাইলে খাদ্য দান করতে পারে বা খাওয়াতে পারে, কেউ চাইলে পোশাক উপহার দিতে পারে কেউ চাইলে নিজের বাসায় আহব্বান করেও কল্যাণময় যে কোনো কিছুই দিতে পারে অর্থাৎ সামর্থ্য অনুযায়ী। মুমিন ব্যক্তির আচরণ প্রসঙ্গে নবী মোহাম্মদ (সা) যা বলেছেন পড়ুন।

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেনঃ মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।-ihadis.com


যৌক্তিকভাবে কেউই কখনো চাইবে না খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে বা খারাপ মানুষকে খাবার দেবার। আপনি কখনো চাইবেন মদখোর, নেশাখোর, ইয়াবাখোর অপরিচিত লোকদেরকে বাসায় এনে খাবার খাওয়াতে? অথবা এমন কাউকে দাওয়াত দিয়ে বাসায় খাবার খাওয়াতে চাইবেন যে আপনার ক্ষতি করতে পারে? পাঠক এখন আপনাদের সামনে দেখাচ্ছি নবীজি (সা) নিজেই অমুসলিম, কাফেরদেরকে খাবার পাঠাতে উৎসাহ দিতেন। অথচ নাস্তিকান্ধরা এসব হাদিস দেখলেও পড়তে চাইবে না, আর পড়লেও মানুষ যাতে এগুলো জেনে না যায় সেটা চাইবে না। কারণ মিথ্যাচার করে হলেও নবী মোহাম্মদ (সা)কে খারাপ হিসেবে দেখাতেই হবে নাস্তিকদের। নবীজি (সা) যদি সর্ব অবস্থায় অমুসলিম,কাফেরদের খাবার খাওয়াতে নিষেধ করতেন তাহলে উনি নিজে কেন কাফের প্রতিবেশিদেরকে খাবার পাঠাতে বলবেন? এটি প্রমাণ করে শান্তিপূর্ণ অমুসলিম হলে অবশ্যই তাকে খাবার খাওয়ানো যাবে এমনকি নিজের বাসায় এনে দাওয়াতও দেয়া যাবে। মন দিয়ে পড়ুন হাদিস গুলো আর নিজেকে প্রশ্ন করুন নাস্তিকরা কেন এসব আপনাদেরকে জানাতে চায় না?


জামে আত তিরমিজি,হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১১১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয়।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১২৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।-ihadis.com 

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ১২১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আমর ইবনে মুআয আল-আশহালী (র) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেনঃ হে মুমিন নারীগণ! তোমাদের মধ্যকার কোন নারী যেন তার প্রতিবেশীকে যৎসামান্য দান করাকেও তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা রান্না করা বকরীর বাহুর সামান্য গোশতও হয়।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ ১২৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

জাহিদ (র) থেকে বর্ণিতঃআমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে গোশত দিবে। এক ব্যক্তি বললো, ইহুদী! আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে শুনেছি। এমনকি আমাদের আশংকা হলো বা আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন।-ihadis.com 

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১০৪, সহিহ হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তার জন্য একটি ছাগল যবেহ করা হলে তিনি তার গোলামকে বলতে লাগলেন, তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল (আবু দাউদ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অবিরত নসীহত করতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি তাকে হয়তো ওয়ারিস বানাবেন।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১০৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্যে কোন প্রতিবেশীকে আমি উপহারাদি দিবো? তিনি বলেনঃ যার দরজা তোমার অধিকতর নিকটবর্তী তাকে (বুখারী, আবু দাউদ)।-ihadis.com

ইহুদি প্রতিবেশী যদি নিজের ঘরের কাছে থাকে তাহলে তাকেই আগে খাবার খাওয়াতে হবে। অথচ নাস্তিকরা কিভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে ইসলাম নিয়ে। মানুষের কি এখনো সচেতন হবার সময় হয়নি? পাঠক মনে রাখবেন, সত্য নাস্তিকদের প্রকৃত দুশমন। প্রশ্ন নাস্তিকদের ভীতির কারণ। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই নবীজি (সা) অমুসলিমদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে নিষেধ করেছেন এরপরেও কি একে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে খারাপ প্রমাণ করা যাবে? কাউকে দাওয়াত নিয়ে না খাওয়ানো খারাপ কাজ এই নৈতিকতা নাস্তিকদেরকে কে ঠিক করে দিয়েছে? যদি বলে বিবেক দিয়ে বানিয়েছে তাহলে একইভাবে অন্য কোনো নেতা যদি বলে মুশরিকদেরকে আমরা দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবো না এখানে আপনি উনার বলা নৈতিকতাকে কেন খারাপ বলবেন? আপনার নিজের বিবেক দিয়ে আপনি কিছু বানাতে পারলে অন্য কেউ কেন পারবে না? নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে সবাই নিজস্ব নৈতিকতায় চলতে স্বাধীন। তাই কেউ যদি কারো নৈতিকতাকে অনৈতিক বলে তাহলে এটা সেই মানুষের জন্য অনৈতিক হিসেবে গণ্য হতে বাধ্য না কারণ নাস্তিক্যধর্মে সবাইকে নিজস্বভাবে চলতে স্বাধীনতা দেয়। অমুসলিমদেরকে উপহার দেবার ঘটনাও রয়েছে। কিন্তু এসব ইতিহাস নাস্তিকরা সামনে আনবে না কখনো। নাস্তিকদের প্রতারণাগুলো এভাবে সরাসরি প্রকাশ পাবার পরেও নাস্তিকরা স্বীকার করতে চায় না যে ওরা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৬১৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, (অধ্যায়ের নামঃ মুশরিকদের হাদিয়া প্রদান করা)


ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তিকে রেশমী বস্ত্র বিক্রি করতে দেখে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বললেন, এ জোড়াটি খরিদ করে নিন। জুমুআর দিনে এবং যখন আপনার নিকট কোন প্রতিনিধি দল আসে, তখন তা পরিধান করবেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এসব তো তারাই পরিধান করে, যাদের আখিরাতে কোন হিস্‌সা নেই। পরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কয়েক জোড়া রেশমী কাপড় এল। সেগুলো হতে একটি জোড়া তিনি ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বলেন, এটা আমি কিভাবে পরিধান করব। অথচ এ সম্পর্কে আপনি যা বলার বলেছেন। এতে তিনি বললেন, এটা তোমাকে আমি পরিধান করার জন্য দেইনি। হয় এটা বিক্রয় করে দিবে, নতুবা কাউকে দিয়ে দিবেতখন ‘উমার (রাঃ) সেটা মক্কার বাসিন্দা তাঁর এক ভাইকে ইসলাম গ্রহণের আগে হাদিয়া পাঠালেন।-ihadis.com


কোনো সন্তান নিজ মায়ের সাথে কেমন আচরণ করলে ভালো আচরণ করা হবে? আপনি এখানে যাই বলেন সব গুলোই সঠিক হবে, যেমন মায়ের সাথে একইসাথে খাবার খাওয়া, মায়ের সেবা যত্ন করা, মাকে উপহার দেয়া, মাকে বাসায় এনে দাওয়াত দেয়া ইত্যাদি। এখন দেখুন নবীজি (সা) অমুসলিম হলেও নিজের মায়ের সাথে সদাচরণ করার আদেশ দিয়েছেন। ইসলাম মানুষকে সঠিক মানবিকতা শেখায়, অমুসলিম হলেও মানবিক আচরণ করতে শেখায় অথচ নাস্তিকরা মানুষকে বুঝিয়ে যাচ্ছে ইসলাম নাকি অমানবিক! নাস্তিকরা নিজেরাও ইসলামের বিষয় বোঝে ভুল আর অন্যদেরকেও বুঝায় ভুল। ইসলাম শান্তিপূর্ণ অমুসলিমদের সাথে কেমন আচরণের নির্দেশ দেয় পড়ুন।


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ২৬২০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আসমা বিনতে আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ফাতওয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর।-ihadis.com


সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ১৯৩৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ থেকে বারণ করেছেন, অসুস্থের হাঁচি দাতার উত্তরে (আরবী) বলার, শপথ পূরণে সহায়তার, অত্যাচারিতের সাহায্য করার, সালাম বিস্তারের, আমন্ত্রণকারীর আমন্ত্রন গ্রহণ করার এবং জানাযার পিছু পিছু গমন করার তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি স্বর্ণের আংটি পরিধান, রৌপ্য পাত্র ব্যবহার, রেশম নির্মিত গদী ব্যবহার, কসি (এক প্রকার মিসরীয় কাপড়) নির্মিত কাপড় পরিধান, রেশমী মোটা কাপড় ব্যবহার এবং রেশম ও দীবাজ (এক প্রকার রেশমী পোষাক) ব্যবহার থেকে আমাদের নিষেধ করেছেন।-ihadis.com


মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ১৫৭৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী যুবক নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমাত করতেন। তাঁর মৃত্যুশয্যায় নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ৯০৫, সহিহ হাদিস।-ihadis.com


আল কুরআন, সুরা মুমতাহিনা ৬০ঃ৮ আয়াতে বর্ণিত,


মুশরিকদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজ দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন নাআল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন


তাফসীরে জালালাইন, ৬ খণ্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


যেসব কাফের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং মুসলমানদেরকে দেশ হতে বহিস্কাররেও অংশগ্রহণ করেনি; আলোচ্য আয়াতে তাদের সাথে সৎব্যাবহার ও ইনসাফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছেন্যায় ও সুবিচার তো প্রত্যেক কাফেরের সাথেও জরুরি। এতে জিম্মি কাফের, চুক্তিতে আবদ্ধও কাফের এবং শত্রু কাফের সবই সমান, বরং ইসলামে জন্তু-জানোয়ারদের সাথেও সুবিচার করা ওয়াজিব অর্থাৎ তাদের পৃষ্ঠে সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপানো যাবে না এবং ঘাস পানি ও বিশ্রামের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।-[মাআরেফুল কোরআন, কুরতুবী]


নাস্তিকরা বিশ্বাস করে নাস্তিকতা যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আসলেই কি তাই? কোনো নাস্তিক যদি সেচ্ছায় অন্য মানুষকে খাবার দেয়, হ্যাঁ সে এটা দিতেই পারে কিন্তু কোনো নাস্তিক যদি এটা বলে অন্য মানুষকে খাবার দেয়া যৌক্তিকভাবে ক্ষতিকর কারণ এখানে আমার নিজের টাকায় কেনা খাবার শেষ হচ্ছে অন্য মানুষকে দেবার কারণে। সেই মানুষের কাছে খাবার নেই সে বেঁচে থাকার লড়াই করুক ন্যাচারাল সিলেকশনে পাশ করলে এমনি বেঁচে থাকবে নাইলে মারা যাবে তাতে আমি মুক্তমনার কি আসে যায়?- এই ক্ষেত্রে কি কোনো নাস্তিকদের সুযোগ আছে এই নাস্তিককে যুক্তি দিয়ে এটা প্রমাণ করার যে কাউকে খাবার দেয়া ভালো কাজ? তাহলে দেখা যাচ্ছে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে নাস্তিকরা চাইলে খাবার দিতে পারে আবার কেউ চাইলে নাও দিতে পারে কিন্তু কেউ না দিলে তাকে মন্দ বলা হলেও তার নিজের দৃষ্টিতে মন্দ হিসেবে ধর্তব্য নয়। তাই যৌক্তিকভাবে বলা যায় যদি কোনো মানুষ কাউকে খাবার দিতে নিষেধ করেও এরপরেও নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে তাকে খারাপ বলার আসলে কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।


মায়ের স্তন নিয়ে নাস্তিকদের বইতে মুক্তচিন্তার নমুনাঃ


মুক্তমনাদের গুরু নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের অন্যতম একটি বই হচ্ছে “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ”। বইটিকে “যৌনমিলনের চিন্তার মুক্তির আন্দোলন” নাম দিলেও হয়তো ভুল হতো না। পুরো বইটি পড়লে যেকোনো সভ্য মানুষের বমি আসতে পারে। নাস্তিকরা চাইলে কি ধরণের মুক্তচিন্তা করতে পারে সেটার নমুনা এই বই থেকে পাওয়া যায়। পাঠক, আপনার বমি আসতে পারে এরপরেও পড়তে হবে কারণ আপনাকে জানতে হবে মুক্তমনারা কেমন নির্লজ্জ-বেহায়া ও ইতর প্রকৃতির মুক্তচিন্তা করতে পারে। সিদ্ধান্ত এখন আপনার আপনি মুক্তচিন্তা করবেন নাকি যৌক্তিক চিন্তা? আপনি নাস্তিক থাকবেন নাকি যৌক্তিক মানুষ? আপনি মুক্তবুদ্ধির চর্চা করবেন নাকি সুস্থবুদ্ধির চর্চা করবেন?

মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদের লিখিত কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, বইয়ের ৪০,৪১,৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

দুটি অ্যাডের স্ক্রিপ লেখার দায়িত্ব পরের দিনই লাফিয়ে পড়ে হাসানের ওপর। অ্যাড ১ঃ মাতৃদুগ্ধের গুণকীর্তন করে অ্যাড লিখতে হবে, চোখে খোঁচা দিয়ে দেখাতে হবে মাতৃদুগ্ধের কোনো বিকল্প নেই। অ্যাড ২ঃ ‘রাধিকা’ নামের একটি অস্ট্রেলীয় গুড়োদুধের অ্যাড লিখতে হবে, চোখে মায়াজাল ছড়িয়ে দেখাতে হবে এটা মাতৃদুগ্ধ থেকেও পুষ্টিকর, আর মায়ের দুধ বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু রাধিকার ধারা অফুরন্ত।……প্রথম অ্যাডটা সরকারি, জাতিসংঘফংঘ হয়তো বিশ্বমায়েদের ঝোলা স্তনের দিকে তাকিয়েছে দয়া করে, ফোলা স্তন দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, এবং বিশ্বের কোনো সম্পদকেই নষ্ট হতে দেবে না বলে মায়ের দুধের গুণকীর্তনের শ্লোগান তৈরি করে ফেলেছেহাসানকে তার অ্যাড লিখতে হবে। বেশ, সে লিখবে। দ্বিতীয়টা প্রাইভেট; ‘রাধিকা’র পিতৃপুরুষেরা মায়ের স্তনকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পুষ্টিকর খাদ্য মনে করে, শিশুর নয়, শিশুকালের স্তন নিয়ে টানাটানি ইত্যাদিতে কোমলমতি শিশুদের চরিত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে, দুধ খাওয়া ছেড়ে চোষাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়তে হবে, যা জাতির জন্য শুভ নয়; তাছাড়া মায়ের দুধ বিনেপয়সায় পাওয়া যায়, কিন্তু বিনেপয়সায় জিনিশে বিশ্ব চললে বিশ্ব চলতো না। ব্যবসা থেকে যেতো, ধস নামতো বাজারে। অন্য দিকে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন ব্যয়বহুল, আধলিটার মাতৃদুগ্ধের পেছনে খরচ হয় একশো টাকা, সেখানে এক লিটার রাধিকা পাওয়া যায় পাঁচ টাকায়। হাসানকে তার অ্যাড লিখতে হবে। বেশ,সে লিখবে।

প্রথম অ্যাডটি নিয়েই প্রথম বসে হাসান, সে মাতৃদুগ্ধ পান করাবে সবাইকেপ্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মহাপতি উপপতি অতিপতি যুগ্নপতি বিচারপতি আমলা মামলা অধ্যাপক পুলিশক এনজিওকে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ধর্ষক ধর্মক কর্মক চর্মক সবাইকেমাতৃদুগ্ধ পান করে তারা সুস্থ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠবে, তাদের অকল বিকল মাথাগুলো ঠিকভাবে কাজ করবে, রাস্তাঘাট ধানক্ষেত পাটক্ষেতে তার বিকাশ দেখা যাবে। ওহ, তারা এখন আর মাতৃদুগ্ধ পান করে না? ওই দুধের গন্ধে তাদের বমি আসে? তারা স্তন্য পান করতে পছন্দ করে না? তারা পছন্দ করে শুধু স্তন পান করতে? মায়ের না?, অন্য কারো? তাহলে শুধু শিশুদেরকেই পান করাতে হবে মাতৃদুগ্ধ? কিন্তু কেনো শুধু শিশুদেরই পান করাতে হবে মাতৃদুগ্ধ? হাসান একবার চোখ বুজে দেশ জুড়ে গোয়ালঘর দেখতে পায়, তাতে রাশিরাশি দুগ্ধবতী গাভী দেখতে পায়, তাদের বাট ফেটে পড়তে চাচ্ছেপরমুহূর্তে সে রাশিরাশি দুগ্ধবতী মাতাদের দেখতে পায়, তাদের বাঁট ফেটে পড়তে চাচ্ছে। মাতাদের জন্যে অমন গোয়ালঘর দরকার। মাতৃদুগ্ধ বিশ্বের সম্পদ, তার এক ফোঁটাও নষ্ট করা চলবে না, এর প্রতি ফোঁটা সম্মিলিতভাবে চুষে খেতে হবে; ফুরিয়ে আসছে গরিব বিশ্বের সম্পদ, নিশ্চিত করতে হবে তার সম্পদের চূড়ান্ত ব্যাবহার। সে মাতৃদুগ্ধ পান করাবে সবাইকে, দারোগা থেকে জেনারেল সবাইকে। মাতৃদুগ্ধের কোনো বিকল্প নিই, এর পুষ্টিকরতার সীমা নেই। এটা বিনিয়োগের শতাব্দী, মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এটা এক আশ্চর্য ঔষধ। এতে সারাক্ষণ লাফালাফি দৌড়াদৌড়ি কুচকাওয়াজ গোলাগুলি করছে এমন এক জীবন্ত কোষ, যা দেশরক্ষী বাহিনীর মতোই অতন্দ্র-এটা কোনো বিদেশি বাহিনীকে ঢুকতে দেয় না ত্রিসীমার মধ্যে; এটা খেলে ঘনঘন হাগু হয় না, বাতাসের নালি জ্বালাপোড়া করে না, দাঁতগণ আর মাঢ়ি হিমালয়ের পাথরের মতো শক্ত থাকে, মাথাটা মগজটা থাকে ঝকঝকে,যে খাবে সে নিউটন আইনস্টাইন রবিন্দ্রনাথ না হয়ে যাবে না। বেশি করে মাতৃদুগ্ধ খাও, জাতিসংঘ বলে দিয়েছে খাও, মাতৃদুগ্ধ খাও, এমন বিনিয়োগ আর হয় না

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, বইয়ের ৪২,৪৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

হাসান দেশের প্রধান নারীবাদীটির সাথে একটু কথা বলতে চায়। ইচ্ছে করে এখনি তাকে ফোন করে; তবে ফোন না করে মনে মনে ফোনে তার সাক্ষাৎকার নিতে থাকে। এর নাম সে দেয় মানসিক সাক্ষাৎকার। হাসান জিজ্ঞেস করে, একটু বলুন তো মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা কি? এভাবে প্রশ্ন করা কি ঠিক হলো বিখ্যাত নারীবাদীকে? সে ভাষা বদলে আবার জিজ্ঞেস করে, দয়া করে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা কি সে সম্পর্কে আপনার মতামত জানালে খুশি হবো। নারীবাদী হা হা হা হা হা হা করে হেসে উঠে বলেন, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলটির প্রতিদিন এক লিটার মাতৃদুগ্ধ খাওয়া উচিত, তাহলে তার মাথা সুস্থ থাকবে, পাগলামো করবে না। হাসান জিজ্ঞেস করে, আপনি কি তাহলে মাতৃদুগ্ধ খাওয়া বা খাওয়ানো পছন্দ করেন না? নারীবাদী হা হা হা করে বলেন, ওরা মনে করে নারীরা দুগ্ধবতী গাভী, নারীদের ওলানের দিকে এবার ওদের চোখ পড়েছে, আগামী বছর হয়তো ওরা উন্নত জাতের দুগ্ধবতী নারী উৎপাদনের জন্যে উন্নত মানের গোয়ালঘর বানানোর পরিকল্পনা নেবে, নারীদের উন্নত মানের ফিড দেবে, যাতে দেশে বেশি পরিমানে নারীদুগ্ধ মাতৃদুগ্ধ উৎপাদিত হয়।হাসান জিগেস করে, মাতৃদুগ্ধ থেকে কি আমরা আমাদের অতি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো? নারীবাদী বলেন, হ্যাঁ, তা খুবই পারা যাবে। বছরে যদি আমরা কয়েক কোটি লিটার মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন করি, তাহলে তা পলিথিনের ব্যাগে ভরে বেচা যাবে, ওই দুগ্ধ থেকে বাটার চিজ ঘি কন্ডেস্নড মিল্ক আইস ক্রিম উৎপাদন করা যাবে, হা হা হা হা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে, তখন নিজেরা অবশ্য খেতে পাবো না। হাসান বলে, আপনার কথা বেশ নেগেটিভ বলে মনে হচ্ছে। নারীবাদী বলেন, কোথায় নেগেটিভ? আমি তো খুবই পজিটিভ কহা বলছি। ব্যাপারটি হচ্ছে ওরা নারীদের ঘরে আটকে রাখার নতুন নতুন ফর্মুলা বের করছে। ওরা নারীর মগজ চায় না ওলান চায়, মেধা চায় না দুগ্ধ চায়, আর নারীর ঐতিহাসিক দেহখানা তো আছেই। মাতৃদুগ্ধ পান করানো হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে নতুন সুন্দর ফর্মুলা নতুন সুন্দর চক্রান্ত। হাসান জিজ্ঞেস করে, মাতৃদুগ্ধ পানে কি কোনোই উপকার হয় না? নারীবাদী বলেন, দেশে কোটি কোটি বাচ্চা মায়ের দুধ খাচ্ছে, তাতে কি তাদের স্বাস্থ্য মেধা অতুলনীয় হচ্ছে? আর মায়ের দুধে প্রতিভা? মায়ের দুধে নৈতিকতা? রবীন্দ্রনাথ তো মায়ের দুধ না খেয়েই প্রতিভাবান হয়েছেন, আর বস্তির বাচ্চাগুলো মায়ের দুঘ খেতে খেতে মরে যাচ্ছেওই দারোগা পুলিশ মাস্তানগুলো তো মায়ের দুধ খেয়েছে, ওই জেনারেলগুলোও মায়ের দুধ খেয়েছিলো। তাতে কি তারা নৈতিক হয়েছে? হা হা হা হা। হাসান জিজ্ঞেস করে, বুড়োদের মাতৃদুগ্ধ খাওয়ালে উপকার হতে পারে? নারীবাদী বলে, হ্যাঁ ওই বদমাশ বুড়োগুলোকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো দরকার; তাহলে হয়তো বদমাশি কিছুটা কমবে

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ, বইয়ের ৪৩,৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

হাসান নারীবাদীটির সাথে কথা বন্ধ করে তার সামনে একগুচ্ছ দৈনিক পত্রিকার একটির পাতা উল্টোতে শুরু করে; দ্বিতীয় পাতায় একটি সংবাদ তাকে যারপরনাই স্বস্তি দেয়। বাক্স করে সংবাদটি ছাপা হয়েছে, যার শিরোনাম স্ত্রীর স্তন্য পান করে বেঁচে আছেন মোহাম্মদ ফজর আলি’। সংবাদে বলা হয়েছে মোহাম্মদ ফজর আলি বছর বছর বিয়ে করে চলছেন, তার ঘরে সব সময়ই কমপক্ষে একটি করে গর্ভবতী স্ত্রী থাকে, এবং থাকে একটি নতুন সন্তানবতী স্ত্রী। মোহাম্মদ ফজর আলি তার শিশু সন্তানকে মায়ের স্তন্য পান করতে দেন না, তিনি নিজেই স্ত্রীকে চেপে ধরে সকাল দুপুর বিকেলে চারবেলা স্ত্রীর দুগ্ধ পান করেন। স্ত্রীর পুষ্টিকর দুগ্ধ পান না করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার গর্দান সরু হয়ে যায়; তাই এই কাজ তিনি করে আসছেন তিরিশ বছর ধরে। এবার তিনি গোলমালে পড়েছেন, তিনি নতুন বউটির স্তন্য পান করতে গেলে বউটি তাকে বাধা দেয়, তিনি জোর করে তিন মাস ধরে স্ত্রীর স্তন্য পান করেন, শিশু কন্যাটিকে স্তন্য পান করতে দেন না। মোহাম্মদ ফজর আলি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠলেও শিশুটি দিন দিন রোগাপটকা হয়ে পড়তে থাকে। স্বামীর স্তন্যপাননেশা বন্ধ করতে না পেরে অবশেষে বউটি গিয়ে থানায় মামলা দায়ের করে; এবং নীতিপরায়ণ পুলিশ ফজর আলিকে গ্রেফতার করে। হসান সংবাদটি পড়ে অভিবাদন জানায় মোহাম্মদ ফজর আলিকে। হাসান এবার আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করে যে নারীদের স্তন্য জাতীয় সম্পদ, তা নষ্ট হতে দেয়া যায় না। গরিব দেশে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি লিটার মাতৃদুগ্ধ; কিন্তু ওই মূল্যবান জাতীয় সম্পদ নষ্ট হতে দেয়া যায় না। মোহাম্মদ ফজর আলিকে হাসানের পথপ্রদর্শক বলে মনে হয়- আবার অভিনন্দন জানায় সে মোহাম্মদ ফজর আলিকে। জাতিসংঘ কি তাকে নেবে?

পুরো বইটি পড়লে এমন বর্বর, নির্লজ্জ ও বেহায়ামার্কা মুক্তচিন্তার নমুনা আপনারা দেখতে পাবেন। এদেরকে জুতালেও জুতাকে অসম্মান করা হবে। অন্যদিকে মায়ের প্রতি সন্তানের কি দায়িত্ব তা সুন্দর করে বর্ণনা করেছে ইসলাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মা খুবই সম্মানের। ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো সন্তানের এই অধিকার নেই মা নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বলার, অধিকার নেই মা নিয়ে মুক্তচিন্তা করবার। এমনকি কোনো সন্তান যদি মা-বাবার সেবা যত্ন না করে তাহলে সেই সন্তান জাহান্নামে যাবে।


উপদেশ, হাদিস, ৭৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত


আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না।-ihadis.com

হাদিস সম্ভার, হাদিসঃ ১৭১৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকিয়ে দেখবেন না; পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষবেশিনী বা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারিণী মহিলা এবং মেড়া পুরুষ; (যে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের চরিত্রহীনতা ও নোংরামিতে চুপ থাকে এবং বাধা দেয় না।) আর তিন ব্যক্তি বেহেশ্তে যাবে না; পিতা-মাতার নাফরমান ছেলে, মদপানে অভ্যাসী মাতাল এবং দান করার পর যে বলে ও গর্ব করে বেড়ায় এমন খোঁটাদানকারী ব্যক্তি।”-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৩, হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,


হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সদ্ব্যবহার পেতে কে অগ্রগণ্য? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা, তারপর ক্রমান্বয়ে আত্মীয়ের সম্পর্কের নৈকট্যের ভিত্তিতে।-ihadis.com 

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে আমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে তাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলো। এতে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগলে আমি তাকে হত্যা করি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বলেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি মহামহিম আল্লাহর নিকট তওবা করো এবং যথাসাধ্য তার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও। আতা (র) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তার মা জীবিত আছে কিনা তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করলেন? তিনি বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নাই।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৫, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃইয়া রাসূলাল্লাহ! সদাচার প্রাপ্তির অগ্রগণ্য ব্যক্তি কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা।-ihadis.com

আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ৬ , সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, আপনি আমাকে কি আদেশ করেন? তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে একই কথা বললে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে পুনরায় একই কথা বললে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে চতুর্থবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে পঞ্চমবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমার পিতার সাথে সদাচার করবে।-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ ৩৩০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আসমা বিন্‌তে আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা (ইসলাম) অপছন্দ করা অবস্থায় আমার সম্পদের লোভ রেখে আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)-ihadis.com

এমনকি মা যদি অমুসলিম হয় এরপরেও মায়ের সাথে মানবিক আচরণ করতে বলেছেন নবী মোহাম্মদ (সা)। এসব প্রমাণ দেখেও যারা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার ত্যাগ করতে পারছে না বুঝতে হবে তাদের দেহটা মানুষের মতো হলেও তাদের চিন্তার করার ক্ষমতা এখনো চতুষ্পদ প্রাণীতেই আটকিয়ে রয়েছে। মুক্তচিন্তা আন্দোলনের বাহিনীরা নিজেদেরকে কিভাবে সাধু সাজায় পড়ুন আর হাসুন। এরা বলে,

আমরা মানুষকে তার ধর্ম দিয়ে নয়, কর্ম দিয়ে বিবেচনা করি। আমরা মনে করি, পৃথিবীর সকল মানুষ সমান অধিকার এবং সম্মানের যোগ্য। মানুষকে মূল্যায়ন করা উচিত তার কাজ দিয়ে। লতা মুঙ্গেশকর নিঃসন্দেহে মানব জাতির জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তার গান যুগে যুগে মানুষকে ভালবাসা শেখাবে, বন্ধুত্ব আর শ্রদ্ধা করা শেখাবে। লতা মুঙ্গেশকরের মৃতদেহের সামনে দোয়া পাঠ করে শাহরুখ খান দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যে, মানুষে মানুষে আসলে কোন ভেদাভেদ নেই। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা কিন্তু সম্পুর্ণ ভিন্ন। ইসলাম মানুষে মানুষে বিভেদ আর ঘৃনা বিদ্বেষের শিক্ষাই দেয়। একজন মৃত মানুষকে পর্যন্ত অসম্মান করে। যা অসভ্য বর্বর মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ। লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে অনেক মুসলিমরা তার জন্য জাহান্নাম কামনা করেছে। উনার মৃত্যুর পরেই ভারতীয় সিনেমার খ্যাতনামা অভিনেতা শাহরুখ খান তার মৃতদেহ সৎকার পালনে চলে গিয়েছিলেন, এবং শাহরুখ তার নিজ ধর্মের রীতি অনুসারে লতার জন্য দোয়া করেন এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেননিঃসন্দেহে শাহরুখের এই কাজটি তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের পরিচয় বহন করেশাহরুখকে এই কাজের জন্য অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত। মুসলিমরা যে লতাকে ঘৃণা করছেন সেটার জন্য তাদের ইসলাম দায়ী। এই মুমিনদের সাম্প্রদায়িক ঘৃণা এবং বিদ্বেষী অবস্থানই আসলে ইসলাম।


পাঠক আপনাদের হাসি শেষ হলে এইবার আবার কথা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। যারা এভাবে নিজেদেরকে সাধু দেখানোর চেষ্টা করলো তাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই আপনার কাছে লতা মুঙ্গেশকর বিজ্ঞানমনস্ক নাকি অন্ধবিশ্বাসী? লতা মুঙ্গেশকরের মৃতদেহের সামনে দোয়া পাঠ করে শাহরুখ খান আসলে বৈজ্ঞানিক ভুল করেছেন-এই কথা কেন বললেন না? শাহরুখ খান লতার জন্য দোয়া করে ও তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মারাত্মক অন্ধবিশ্বাসের পরিচয় দিলেন যা বৈজ্ঞানিক ভুল এই কথা কেন বলতে চাইছেন না? শাহরুখ খানের অবৈজ্ঞানিক আর অন্ধবিশ্বাসের কাজকে সম্মান জানাতে চাইছেন যে? ওহহো! এখানে তো এসব বললে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে খারাপ হিসেবে দেখানো যাবে না,নিজেদেরকে সাধু হিসেবে দেখানো যাবে না, তাই না?


পাঠক নাস্তিকদের ভণ্ডামি দেখলেন তো? আরো প্রশ্ন করতে চাই,আমরা মানুষকে তার ধর্ম দিয়ে নয়, কর্ম দিয়ে বিবেচনা করি- আপনি মানুষের কর্ম দিয়ে অন্যকে বিবেচনা করলে ঠিক আর মহাবিশ্বের স্রস্টা আল্লাহ যদি মানুষের কর্ম দিয়ে মানুষকে যাচাই করে কুরআনে কিছু বলেন সেটা আপনার কাছে ঘৃণা? বাহ! পারেনও! আপনি যে ইসলাম নিয়ে পরিস্কার মিথ্যাচার করে ইসলামকে খারাপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন এগুলো কি ঘৃণা নয়? আপনার নিজের যুক্তিতে আপনি নিজেই ঘৃণিত কাজ করে যাচ্ছেন আবার দোষ দিচ্ছেন মুসলিমদের? কুরআন-হাদিস নিয়ে মিথ্যা বলা ছাড়বেন না? জালিয়াতি না করে, প্রতারণা না করে ইসলামের সমালোচনা কেন আপনারা করতে পারছে না? মুক্তমনা আন্দোলনের সস্তা নাস্তিকরা মানুষের সামনে নিজেদের সাধু সাজানোর জন্য ও মুসলিমদেরকে খারাপ প্রমাণের জন্য যেভাবে শাহরুখ খানের কর্মকে প্রশংসা করলো অথচ প্রার্থনা ব্যাপারে নাস্তিক গুরুদের বই পত্রে উল্টো কথা পাওয়া যায়। এটা পড়লেই বুঝতে পারবেন নাস্তিকরা কিভাবে অভিনয় করে নিজেদের নোংরামি গুলোকে লুকিয়ে রাখার পয়তারা করে যাচ্ছে।

কট্টরপন্থী নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের লেখা “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ৯৫ ও ৯৬ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

অক্ষয়কুমার দত্ত, বস্তুবাদী, সৎ, নাস্তিক, উনিশশতকের মধ্যভাগেই একটি চমৎকার সমীকরণ রচনা করেছিলেন, শ্রম=শস্য। শ্রম+প্রার্থনা=শস্য। সুতরাং প্রার্থনা = ০ । শুধু প্রার্থনা শুন্য ছাড়া কিছু মেলে না। প্রার্থনা কোনো ফল পাওয়া যায় না, কোনো দিনই পাওয়া যায় নি, যদিও মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে প্রার্থনা করে আসছে। আর বেশি প্রার্থনাও এক ধরনের অনৈতিকতা-আমাকে এটা দাও, ওটা দাও, সেটা দাও, এমন চাওয়া খুবই অনৈতিক ব্যাপারতবে আমরা মেতে আছি এই অনৈতিকতায়। আমরা সহস্র দুর্নীতি করছি, ঘুষ খাচ্ছি, ধর্ষণ করছি, এবং বেহেস্তের লোভে প্রার্থনায় মত্ত হয়ে আছি।

নাস্তিকরা যদি নিজেদের কিতাব পাঠ করে দেখতো তাহলে কি শাহরুখ খানের কর্মকে প্রশংসা করতে পারতো? অবশ্যই না। কারণ শাহরুখ খান যেই কাজ করেছে সেটা নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে অনৈতিকতা যার ফলাফল নাকি সম্পূর্ণ শুন্য। এমনকি দোয়া করা নাস্তিকদের কাছে বৈজ্ঞানিক ভুল। অন্যদিকে লতা মুঙ্গেশকরকে যেভাবে নাস্তিকরা অমূল্য সম্পদ বলে দাবি করলো এমনকি এই হিন্দু নারীর গান নাকি যুগে যুগে মানুষকে ভালবাসা শেখাবে, বন্ধুত্ব আর শ্রদ্ধা করা শেখাবে বলে নাস্তিকরা নিজেদেরকে ফেরেশতা প্রমাণের চেষ্টা করলো অথচ এদের নিজেরদের মুক্তচিন্তার কিতাবে পুরো উল্টো কথা পাওয়া যায়। কিভাবে? নিজেরাই পড়ে যাচাই করে নিন।

নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের লেখা "আমার অবিশ্বাস" ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক,আইনস্টাইন নিরর্থক,ওই গোলাপও নিরর্থক,ভোরের শিশিরও নিরর্থক, তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক, দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ

"আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, 

এই যে আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে সুখ পাচ্ছি । আমি মরে যাবো, এই হাস্যকর নিরর্থকতাকে কিভাবে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি? আমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার কখন পূর্বনির্ধারিত উপায় নেই। কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোন মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না।তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ,নিজেদের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পথঃ আমি তাদের পথে চলতে পারি না।আমি খুজতে চাই আমার পথ। নিজের জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে আমার নিজের।

'আমার অবিশ্বাস' বইয়ের ২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,

কোনো পূর্বনির্ধারিত পথ নেই মানুষের জন্যে। কোনো গ্রন্থ পথ দেখাতে পারে না ,কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক তার জন্যে পথ প্রস্তুত করতে পারেন না, ওই মহাপুরুষেরা তৈরি করেছেন নিজেদের পথ, অন্যদের নয়।প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে হয় নিজেদের পথ, তৈরি করতে হয় নিজেদের রাস্তা,অনেকের পথ আমাকে আলোড়িত করেছে,অনেক গ্রন্থ আমাকে আলো দিয়েছে, কিন্তু আমি ওইসব পথে চলি নি, ওই আলোতে পথ দেখি নি।

লতা মুঙ্গেশকরের পুরো জীবনই ছিল নিরর্থক। রবীন্দ্রনাথ যেমন নিরর্থক,আইনস্টাইন যেমন নিরর্থক। লতা মুঙ্গেশকরের পুরো জীবনটাই ছিল তেমন হাস্যকর নিরর্থক। তার গান যুগে যুগে মানুষকে ভালবাসা শেখাবে, বন্ধুত্ব আর শ্রদ্ধা করা শেখাবে- যারা এই কথা বলছেন তারা ভুল বলছেন কারণ লতাজি গান গেয়ে আসলে নিজের পথ নিজে তৈরি করেছেন উনি অন্যদের পথ তৈরি করতে পারেন না, পারেন না ভালবাসা-বন্ধুত্ব- শ্রদ্ধা শেখাতে। লতাজির জীবন তাৎপর্য করার দায়িত্ব একমাত্র উনার উনি নাস্তিকতায় আলো দেখেন নি, উনি বিজ্ঞানে আলো দেখেন নি, দেখেছেন হিন্দু ধর্মে, দেখেছেন গানে তাই গান গেয়েছেন। উনি নাস্তিকদের দেখানো পথেও আলো দেখেন নি। যেসব নাস্তিকরা লতাজি ও শাহরুখজিকে পামপট্টি মেরে নিজেদের সাধু করে দেখানোর চেষ্টা করেছে তারা কেন বলে নি যে এরা দুইজনেই বিশ্বাসের মহামারীতে আক্রান্ত শুধু এরা দুইজনই নয় বরং এর সংখ্যা আরো বেশি?

'আমার অবিশ্বাস' বইয়ের ২২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,


বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধরে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে, পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস। বিশ্বাস কাকে বলে ? আমরা কি বলি পিঁপড়েয় বিশ্বাস করি, সাপে বিশ্বাস করি, জলে বিশ্বাস করি বা বজ্রপাতে বা পদ্মানদীতে বিশ্বাস করি? এসব এবং এমন বহু ব্যাপারে বিশ্বাসের কথা উঠে না,কেননা এগুলো বাস্তব সত্য বা প্রমাণিত। যা সত্য,যা প্রমাণিত যা সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই তাতে বিশ্বাস করতে হয় না,কেউ আমরা বলি না যে আমি বিদ্যুৎে বিশ্বাস করি বা রোদে বিশ্বাস করি বা গাড়িতে বিশ্বাস করি। কেননা সত্য বা প্রমাণিত ব্যাপারে বিশ্বাস করতে হয় না,বিশ্বাস করতে হয় অসত্য,অপ্রমাণিত,সন্দেহজনক বিষয়।অসত্য অপ্রমাণিত কল্পিত ব্যাপারে আস্থা পোষণই হচ্ছে বিশ্বাস


নাস্তিকদের কিতাবে আরো যা যা পাওয়া যায় নিজেরাই পড়ে নিন। কট্টরপন্থী নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের লেখা “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইয়ের ৯৬ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,


এরশাদ ছিলো একটি চরম নষ্ট একনায়ক, সে পেয়েছিলো সমানে সমানে নষ্ট এক সহধর্মিণীকে, সংগ্রহ করেছিলো অসংখ্য নষ্ট নারী, এবং অজস্র নষ্ট দাসবাঙলাদেদশের পুরুষরা আগে থেকেই দূষিত ছিলো, এরশাদ দূষিত করে গেছে এমনকি নারী ও কবিতাকে। সে বাঙলাদেশের চরিত্রটিকেই নষ্ট দূষিত করে গেছে


এরশাদ যাই করুক সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়? এরশাদ কি হুমায়ুন আজাদের দেখানো পথে চলবে? এরশাদের স্ত্রীকে নিয়েও খারাপ কথা বলেছে নাস্তিকটি। কবিতাকে নাকি সে নষ্ট করেছে অথচ “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” বইতে হুমায়ুন আজাদ নিজেই কবিতাকে ধর্ষণ করেছে, বলা যায়। যারা বইটি পড়েন নি পড়ে দেখতে পারেন কবিতা নিয়ে কিভাবে অযৌক্তিক কথা বলেছে সে। হুমায়ুন আজাদ নষ্ট মেয়েদের সমালোচনা করে আর অন্যদিকে নারীবাদীদের বার্তাবাহক নাস্তিক তসলিমা নাসরিন নারীদেরকে বলছে নষ্ট মেয়ে হয়ে যেতে তাও আবার কবিতার মাধ্যমে। তসলিমা নাসরিনের একটি কবিতা আছে নাম “নষ্ট মেয়ে” আপনি গুগলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। কবিতায় বর্ণিত হয়েছে,


ওরা কারো কথায় কান দেয় না, যা ইচ্ছে তাই করে,কারও আদেশ উপদেশের তোয়াককা করে না,গলা ফাটিয়ে হাসে, চেঁচায়, যাকে তাকে ধমক দেয়,নীতি রীতির বালাই নেই, সবাই একদিকে যায়, ওরা যায় উল্টোদিকে,একদম পাগল!কাউকে পছন্দ হচ্ছে তো চুমু খাচ্ছে, পছন্দ হচ্ছে না, লাত্থি দিচ্ছে,লোকে কি বলবে না বলবে তার দিকে মোটেও তাকাচ্ছে না। ওদের দিকে লোকে থুতু ছোড়ে, পেচ্ছাব করে,ওদের ছায়াও কেউ মাড়ায় না, ভদ্রলোকেরা তো দৌড়ে পালায়। নষ্ট মেয়েদের মাথায় ঘিলু বলতেই নেই, সমুদ্রে যাচ্ছে, অথচ ঝড় হয় না তুফান হয়,একবারও আকাশটা দেখে নিচ্ছে না।ওরা এরকমই, কিছুকে পরোয়া করে না,গভীর অরণ্যে ঢুকে যাচ্ছে রাতবিরেতে, চাঁদের দিকেও দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে! আহ,আমার যে কী ভীষণ ইচ্ছে করে নষ্ট মেয়ে হতে


এমনকি “পারো তো ধর্ষণ করো” নামে কবিতাও আছে নারীবাদী তসলিনা নাসরিনের। পুরুষের মতো নারীও যদি মুক্তমনে ধর্ষণ করতে অনুপ্রাণিত হয় তাহলে কি মনে হয় সমাজ থেকে ধর্ষণ বন্ধ হবে? কবিতায় বর্ণিত হয়েছে, 


আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না,আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে। কোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল। আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ,পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে।ধর্ষিতা হয়ো না, বরং ধর্ষণ করতে আসা পুরুষের পুরুষাঙ্গ কেটে ধরিয়ে দাও হাতে,অথবা ঝুলিয়ে দাও গলায়,খোকারা এখন চুষতে থাক যার যার, দিগ্বিজয়ী অঙ্গ, চুষতে থাক নিরূপায় ঝুলে থাকা,অণ্ডকোষ, গিলতে থাক এসবের রস, কষ। ধর্ষিতা হয়ো না,পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,পতিত করো, পয়মাল করো,পারো তো ধর্ষণ করো,পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করোলোকে বলবে, ছি ছি, বলুক। লোকে বলবে এমন কী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতই,বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভালো নও,বলুক, কিছুতে কান দিও না, তোমার ভালো হওয়ার দরকার নেই,শত সহস্র বছর তুমি ভালো ছিলে মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও। চলো সবাই মিলে আমরা মন্দ হই, মন্দ হওয়ার মত ভালো আর কী আছে কোথায়!


নাস্তিক্যধর্মে নাস্তিকদের এই স্বাধীনতা রয়েছে মানুষকে ঘৃণা করার, বিদ্বেষ রাখার, হিংসা করার, অহংকার করার,সত্যকে অস্বীকার করার, মিথ্যাকে গ্রহণ করার,ধর্ষণ করার, সুদ খাওয়ার, ঘুষ খওয়ার, খুন করার, লুচ্চামি করার, দুর্নীতি করার, নিজের মায়ের সাথে যৌনমিলন করার, নিজের বাবার সাথে সমকামীতা চর্চার, নিজের কন্যার সাথে যৌনমিলন করার, চুরি করার,গালাগালি করার, শিশু হত্যা করার, ধর্ষণ করার ইত্যাদি। তবে হ্যাঁ, কোনো নাস্তিক চাইলে এগুলো নাও করতে পারে সেটা তার ব্যাপার।


নাস্তিকরা কেন ইসলাম নিয়ে মিথ্যা বলে?


নাস্তিকতা সম্পূর্ণ ইসলামের বিপরীত। ইসলামের প্রতিটি বিধান কল্যাণময় কিন্তু এই কথা নাস্তিকরা স্বীকার করতে চায় না। ইসলাম যতো শক্তিশালীই হোক না কেন ইসলামের বিরোধীতা নাস্তিকদের করতেই হবে এ যেনো নাস্তিকদের শপথ। ইসলাম শিক্ষা দেয় মিথ্যা বলা যাবে না কিন্তু যে কোনো নাস্তিক চাইলেই নিজের মুক্তবুদ্ধিতে মিথ্যাচার করতে পারে ইসলামকে অমান্য করে। কোনো নাস্তিক চাইলেই এই ধরণের যুক্তি পেশ করতে পারে যে মিথ্যা বলা যৌক্তিকভাবে সঠিক এতে নিজের স্বার্থ হাসিল হয়, নিজের উপকার হয় এখন নিজের স্বার্থ হাসিল করায় অন্যের ক্ষতি হলে তাতে আমার কি?


জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭১, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে। কেননা, সততাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোন মানুষ প্রতিনিয়ত সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের প্রতি মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। তোমরা মিথ্যাকে অবশ্যই পরিহার করবে। কেননা, মিথ্যা (মানুষকে) পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। কোন বান্দাহ প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ্‌ সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়।-ihadis.com

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৭৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, মিথ্যা হতে অধিক ঘৃণিত চরিত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আর কিছুই ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে কেউ মিথ্যা বললে তা অবিরত তার মনে থাকত, যে পর্যন্ত না তিনি জানতে পারতেন যে, মিথ্যাবাদী তাঁর মিথ্যা কথন হতে তাওবাহ করেছে।-ihadis.com

মিথ্যা কথা বলাকে ইসলাম নিষেধ করেছে কিন্তু ইসলাম বললেই কি সেটা নাস্তিকদেরকে মেনে নিতে হবে? এরকম প্রশ্ন করার অধিকার নাস্তিক্যধর্মের প্রতিটি নাস্তিকের রয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন নাস্তিকরা বলে থাকে আমি কিভাবে চলবো? কিভাবে খাবো? কার সাথে যৌনমিলন করবো? কিভাবে নিজের জীবন পরিচালনা করবো? কার সাথে কথা বলবো? এগুলো শিখতে ইসলামের প্রয়োজন নেই আমি নিজেই নিজের নৈতিকতা অনুযায়ী চলতে পারি ইসলাম আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় বাধা প্রদান করে। এরকম কথা যেমন নাস্তিকরা বলার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রাখে তেমনি অন্য নাস্তিকদেরও এই কথা বলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে যে ইসলাম কেন আমাকে মিথ্যা বলতে বাধা প্রদান করবে? মিথ্যাকথা বলা আমার নিজের ব্যক্তিগত অধিকার। ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করবো কি করবো না এগুলো আমার ব্যাপার। মুমিনরা বলার কে? নিজের নাস্তিক্যবাদকে ভালো দেখানোর জন্য আমরা মুক্তমনা আন্দোলনদের বাহিনীরা ভুরি ভুরি মিথ্যাচার করবো, জালিয়াতি করবো, প্রতারণা করবো মানুষকে ধোঁকা দিব তাতে অন্যের কি? আমাদের দেহ, আমাদের বিবর্তিত মস্তিস্ক, আমাদের স্বাধীনতা, যা ইচ্ছে করবো মুমিনরা কেন আমাদেরকে খারাপ বলতে আসবে?-পাঠক আপনাকেই এইবার বুঝে নিতে হবে নাস্তিকরা কেন ইসলাম নিয়ে ভুল ও মিথ্যাকথা বলে নিজেদের মুক্তচিন্তার আন্দোলন বাস্তবায়ন করে থাকে? মুক্তচিন্তায় ‘মিথ্যাচার করাটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’ প্রতিটি নাস্তিক এরকম স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে,চাইলেই। তাই নাস্তিকরা মুক্তবুদ্ধিতে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করা থামায় না। নাস্তিকরা কখনো ইসলামের দৃষ্টিতে ইসলামকে দেখে না আর দেখার চেষ্টাও করে না যার ফলে নাস্তিকরা যেমন ইসলাম নিয়ে নিজেরা ভুল বোঝে তেমনি নিজের অন্ধভক্তদের সেভাবে ভুল বুঝিয়ে ব্রেনওয়াশ করে যার ফলে এরা সত্যকে সামনে দেখেও গ্রহণ করার সাহস হারিয়ে ফেলে। এদের অপব্যাখ্যা গুলো এদের নিজেদের বইপত্র থেকে দেখিয়ে দিলেও এদের শিক্ষা হয় না। তাহলে কি করতে হবে? প্রতিটি নাস্তিককে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। প্রতিটি নাস্তিককে বিশ্বাস করাতে হবে সে মানুষ। নাস্তিক্যধর্মকে অবিশ্বাস করে নাস্তিকান্ধরা দূর করতে হবে। তারপরেও যদি নাস্তিকরা নিজেদের মিথ্যার উপর অটল থাকে তাহলে…


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১০৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১০৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু’য্‌-যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ আমি আমার পিতা যুবায়রকে বললামঃ আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেনঃ ‘জেনে রাখো, আমি তাঁর থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তাঁর ঠিকানা বানিয়ে নিবে (এজন্য হাদীস বর্ণনা করি না)।’-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১০৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদীস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।-ihadis.com


সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১০৯, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,


সালামা ইব্‌নু আক্‌ওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’-ihadis.com


আপনি যদি পেশাদার নাস্তিক না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য আমার কিছু কথা আছে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখবেন। নাস্তিক্যধর্ম গ্রহণ করলে যেমন কোনো লাভ নাই তেমনি একে ছেড়ে দিলেও একটি ক্ষতিও নাই। আপনি এটা নিজেও স্বীকার করবেন যে অন্যান্য ধর্মের থেকে ইসলাম বেশি শক্তিশালী যৌক্তিক এখন আপনার আর ইসলামের মধ্যে আপনার নাস্তিক্যধর্ম বাধা হয়ে রয়েছে তাই আপনাকে বলবো আপনি যদি আরেকটু অনুসন্ধান বৃদ্ধি করে দেন সততার সাথে তাহলে এটাও আপনি অনুধাবন করতে পারবেন যে সব দিক থেকেই নাস্তিক্যধর্মের চেয়ে ইসলাম প্রচুর ব্যাপক শক্তিশালী। মৃত্যু হয়ে গেলে পুনরায় দুনিয়াতে আসার সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত আপনার। আসলেই আপনার। আসলেই।


আল কুরআন, সুরা মূলক, ৬৭ঃ ৮,৯,১০,১১,১২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,


ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি?তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা'আলা কোন কিছু নাজিল করেননিতোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ।তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামীরা দূর হোক। নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার


আফসস করার আগেই বুদ্ধি প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। আপনি মানেন অথবা না মানেন, একদিন ঠিকই মনে করবেন। দুনিয়ার জীবন একটাই তাই আপনাকে যেনো এই আফসস গুলো করতে না হয় এই আশাই করি। ভালো থাকবেন।


আল কুরআন, সূরা আল-আনআম ৬ঃ২৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,


“আপনি যদি দেখতে পেতেন যখন তাদেরকে আগুনের পাশে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদেরকে আবার ফেরত পাঠানো হত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মু'মিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। 


আল কুরআন, সূরা আল-আনআম ৬ঃ৩১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,


“যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি হঠাৎ তাদের কাছে যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে, হায়! এটাকে আমরা যে অবহেলা করেছি তার জন্য আক্ষেপ। তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে; দেখুন, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট। 


আল কুরআন, সুরা ফুরকান ২৫ঃ২৭,২৮,২৯ আয়াতে থেকে বর্ণিত,


জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়।


উপসংহারঃ মানুষের কর্ম অনুপাতেই আল্লাহ উনার বান্দাদের যাচাই করেন, করবেন। আল্লাহকে অমান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ,সন্দেহ নেই নিজের স্রস্টা আল্লাহকে অস্বীকার করা অপরাধ। এই অপরাধের নিন্দা করার অর্থে যাই ইসলামে বলা থাকুন না কেন সেসবকে ঘৃণা-বিদ্বেষ ট্যাগ দেয়াটা নাস্তিকদের ভুল কারণ অপরাধকে ঘৃণা করা যৌক্তিক। অন্যদিকে নাস্তিকদের বইপত্র পড়লে পরিস্কার বুঝা যায় নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় মানুষকে ঘৃণা করার মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা রয়েছে, রয়েছে প্রতারণা করার বৈধতা। সত্যকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগই নাস্তিকদের কাছে নেই যার কারণে ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে ইসলামের সমালোচনা করতে হয় অথচ এরা নিজেরাই ইসলামের অপব্যাখ্যা করে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে যা যৌক্তিক কারণে ভুল। নাস্তিকতা সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত এই কথায় কোনো সংশয় নেই।


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post