নাস্তিকরা যেভাবে লজিকাল ফ্যালাসি করে


বিষয়ঃ
নাস্তিকরা যেভাবে লজিকাল ফ্যালাসি করে

লিখেছেনঃ এমডি আলী

===========================================


ভূমিকাঃ যুক্তি প্রয়োগ করতে গিয়ে কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করাকেই লজিকাল ফ্যালাসি বলা হয়। হেত্বাভাস বা অপযুক্তির আশ্রয়ে কোনো দাবি উত্থাপন করলেই সেই দাবি ভুল হওয়ার যুক্তি হলো ফ্যালাসি। আমরা যারা যুক্তিবিদ্যা চর্চা করতে পছন্দ করি তারা বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হলেও অশিক্ষিত,মূর্খ ও বর্বর বিবর্তিত মস্তিস্কের লোকদের কাছে এই কুতর্কগুলোই এখনো যুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু কোনোটাই আসলে যুক্তি হিসেবে গণ্য নয়। এই ধরণের ভুল যুক্তি গুলো সবই যুক্তিবিদ্যার শুরুতেই বাতিল করে দেয়া হয়। সেসব আলোচনাতে আসবার যোগ্যতাই রাখতে পারে না। কেন এগুলো মিথ্যা-ভুল যুক্তি সেই বিষয় আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আপনি যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকলে লেখাটি সবার আগে মন দিয়ে পড়ে নেয়া প্রয়োজন। হয়তো আপনি নিজেই মনের অজান্তে নানা ধরণের ফ্যালাসি দিয়ে যুক্তিতর্ক করে যাচ্ছেন অথচ আপনি সেটা জানেনই না।

নাস্তিকরা বিভিন্ন সময়ে ইসলামের সমালোচনা করে থাকে। ইসলামিক রেফারেন্সের নামে সেই গোষ্ঠীরা যেই প্রতারণার আশ্রয় নেয় সেটা নিয়ে আজকে আলাপ করবো না। নাস্তিকগোষ্ঠীরা নিজেদের অন্ধবিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেভাবে লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয় গ্রহণ করে সেগুলোই আজকে আপনাদের সামনে আমি তুলে ধরবো। নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে রক্ষা করতে বিভিন্ন টাইপের অপযুক্তি/কুযুক্তি/ভুলযুক্তি/মিথ্যাযুক্তি বা কুতর্ক যুক্ত করে কথা বলে যেতে চেষ্টা করে থাকে। এগুলো সবই যে কুতর্ক তা দ্বিধাহীনভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তিতর্কের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, সততার সাথে বিতর্কে অংশ নেয়া এবং আপনার যুক্তি ভুল হয়ে থাকলে শুদ্ধটি দ্বারা তা শুধরে নেয়া। কিন্তু নাস্তিকগোষ্ঠীকে সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও তারা নিজেদের মিথ্যাচার তো ত্যাগ করেই না উল্টো বেশি করে মুক্তমনে জালিয়াতি করে যাচ্ছে। আজকের লেখাটির উদ্দেশ্য নাস্তিকদেরকে শিক্ষিত করে তোলা।

নবী মোহাম্মদ শিশুকামি ছিলেন-দাবিটির ফ্যালাসি

সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩৭১, সহিহ হাদিস,আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমার ছয় বছর বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বিবাহ করেন এবং আমার নয় বছর বয়সে তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করেন।-ihadis.com


দাবিঃ যেহেতু এখানে শিশু মেয়েকে বিয়ে করা হয়েছে সেহেতু নবী মোহাম্মদ একজন শিশুকামি ছিলেন।


দাবিটির ভ্রান্তিঃ এখানে দাবিটিতে যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে Straw man fallacy-কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। এই কুযুক্তিতে অন্য কারো কথাকে নিজের মতো করে ঘুরিয়ে-সাজিয়ে অথবা বিকৃত করে বলা হয় যেন আক্রমণ করা সহজ হয় একেই যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে Straw man fallacy বা কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তি বলা হয়। কোনো পুরুষ কোনো অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে করলেই সে শিশুকামি হয়ে যায় না। উপরের বক্তব্যে কোথাও এই কথা বলা হয়নি যে আয়েশা (রা) বলেছেন নবী মোহাম্মদ (সা) আমাকে শিশুকামিতার জন্য বিয়ে করেছেন। এমনকি নবী মোহাম্মদ (সা) থেকেও এই মর্মে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না বরং তার উল্টো বর্ণনা পাওয়া যায়।


নবী মোহাম্মদের অনুসারীরা যুদ্ধে নারী ধর্ষণ করতো-দাবিটির ফ্যালাসি

সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৩৪৩৬,সহিহ হাদিসঃইবনু মুহায়রিয (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি এবং আবূ সিরমাহ্ (রহঃ) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আবূ সিরমাহ্ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ সা’ঈদ! আপনি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ‘আয্ল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হাঁ আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে বানূ মুস্তালিক-এর যুদ্ধ করেছি। সে যুদ্ধে আমরা আরবের সবচেয়ে সুন্দরী বাঁদীদের বন্দী করলাম। এদিকে আমরা দীর্ঘকাল স্ত্রী সাহচর্য থেকে বঞ্চিত ছিলাম। অন্যদিকে আমরা ছিলাম সম্পদের প্রতি অনুরাগী। এমতাবস্হায় আমরা বাঁদীদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করার এবং ‘আয্ল করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমরা এ কথাও আলোচনা করলাম যে, আমরা কি এ কাজ করতে যাব, অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন তাঁর নিকট আমরা কি এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব না! তাই আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ ঐ কাজ না করাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করার কথা লিখে রেখেছেন সে সব মানুষ সৃষ্টি হবেই।-ihadis.com

দাবিঃ সেহেতু উনার অনুসারীরা সুন্দরী নারী পেয়েছেন এমনকি অনেকদিন নারী থেকে দূরে ছিলেন সেহেতু উনারা সবাই সেই নারীদের ধর্ষণ করেছেন।

দাবিটির ভ্রান্তিঃ এখানেও কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। এখানেও Straw man fallacy-কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। নিজের সুবিধা মতো ব্যাখ্যা করে দাবি করা হয়েছে। এমনকি উক্ত দাবিটিতে False analogy-ভ্রান্ত উপমার কুযুক্তিটিরও প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ যেহেতু তারা নারী থেকে দূরে ছিল সেহেতু নারী পেয়ে তারা সকলেই ধর্ষণ করেছে। এটি ভুল ও মিথ্যা যুক্তি।

উপরের তথ্যে কোথাও এটি উল্লেখ নেই যে উনারা সেই নারীদেরকে ধর্ষণ করেছেন। এমনকি নবী মোহাম্মদ (সা) উনার অনুসারীদেরকে কখনো নারী ধর্ষণের অনুমতি দিয়েছেন মর্মে কোনো তথ্যও পাওয়া যায় না। একইভাবে যারা বলেন দাসী সেক্স অন্যায়, অমানবিক তারাও একইসাথে উক্ত লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে মনের অজান্তেই। যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে কোনো নারী স্রেফ দাসী হলেই তার সাথে সেক্স করা অন্যায় হয়ে যায় না।

মুতা বিয়ে ও পতিতাবৃত্তি একইরকম-দাবিটির ফ্যালাসি

বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ৯৯৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,সালামাহ বিন আল-আক্‌ওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আওতাস’ অভিযানকালে তিন দিনের জন্য ‘মুত্‌আহ’ বা সাময়িক বিবাহ-এর অনুমতি দিয়েছিলেন, তারপর তিনি তা নিষিদ্ধ করে দেন।-ihadis.com

দাবিঃ যেহেতু মুতাহ বিয়েতে দুইজন অস্থায়ী সম্পর্কে লিপ্ত হয় অর্থের বিনিময়ে এরপরে দুইজনে আলাদা হয়ে যায় তেমনি পতিতালয়ে গিয়ে পুরুষরা অর্থ দিয়েই যৌনকর্ম করে সুতরাং মুতা বিয়ে ও পতিতাবৃত্তি একই ব্যাপার।


দাবিটির ভ্রান্তিঃ যেহেতু দুটো দেখতে একই রকম মনে হচ্ছে তাই দুটো একই জিনিস। একে Correlation is causation fallacy বলা হয়। সাদৃশ্য আছে মানেই একটার সাথে অন্যটার সম্পর্ক আছে এরকম ভুল চিন্তা করা। যখন কেউ বলে যেহেতু মুতা বিয়ে পতিতাবৃত্তির মতো যেহেতু মুতা বিয়েও এক প্রকার পতিতাবৃত্তি তখনই আসলে লজিকাল ফ্যালাসিটি করা হয়। দুটো জিনিস একই রকম হলেই দুটো এক হয়ে যায় না। এখানে একইসাথে False dichotomy- ভ্রান্ত দ্বি-বিভাজন লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয়ও নেয়া হয়েছে। এমনকি এখানে False analogy-ভ্রান্ত উপমার কুযুক্তিটিরও প্রয়োগ হয়েছে। তাই যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে মুতা বিয়ে ও পতিতাবৃত্তি একইরকম এরকম বলা কুযুক্তি ছাড়া আর কিছু নয়।

নবী মোহাম্মদের অনেক স্ত্রী ও দাসী আছে সুতরাং সে নারীকামী ও খারাপ লোক-দাবিটির ফ্যালাসি

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫০৬৮, সহিহ হাদিস, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, একই রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সকল স্ত্রীর নিকট যেতেন আর তাঁর ন’জন স্ত্রী।-ihadis.com

দাবিঃ যেহেতু নবী মোহাম্মদ (সা) এর একাধিক স্ত্রী ছিল তাই সে নারী আসক্ত সুতরাং সে খারাপ মানুষ।

দাবিটির ভ্রান্তিঃ  এখানে দুটো লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয় একত্রে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে  STRAW MAN FALLACY-কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তির অন্যটি হচ্ছে AD HOMINEM-অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তি আক্রমণ। এই ফ্যালাসিটি তখন হয় যখন কেউ অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তি আক্রমণ করে। যেমন,

তোদের নবীর অনেক স্ত্রী ছিল (আশ্রয় বাক্য)

অতএব তোদের নবী খারাপ তাই তোদের নবী ভালো হতে পারে না (সিদ্ধান্ত)

একেবারেই ভুয়া যুক্তি। সে কয়টা বিয়ে করেছে, কয়জন স্ত্রী ছিল এখানে সেটা মোটেও জরুরি ব্যাপার না। সে একজন মানুষ উনার একধিক স্ত্রী থাকতেই পারে এমনকি উনি নবীও হতে পারেন তাতে উনার ভালো অথবা খারাপের কোনো সম্পর্কে নেই।

দাবিঃ তুই তো মাদ্রাসায় পড়িস,তোর মধ্যে মাদ্রাসার ছাপ আছে তাই তুই অশিক্ষিত

দাবিটির ভ্রান্তিঃ এখানে Ad hominem তথা অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তি আক্রমণের কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ মাদ্রাসায় পড়ে তারমানে এই না যে সে অশিক্ষিত। অনেকে বিজ্ঞানী হয়েও অনেক কিছু তার না জানা থাকতেই পারে আবার কেউ মাদ্রাসায় পড়ে অনেক জ্ঞানীও হতে পারে এমনকি অনেক কিছুই জানতে পারে।

স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে?-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ মহাবিশ্বকে যদি কেউ সৃষ্টি করে থাকে তাহলে স্রস্টাকেও আরেকজন স্রষ্টা সৃষ্টি করেছে। না হলে স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে?

দাবিটির ভ্রান্তিঃ এখানে Red herring তথা প্রসঙ্গ ঘোরানোর লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করেছে এই দাবিটি ভুল প্রমাণ না করে দ্রুত প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাওয়াটাই Red herring ফ্যালাসি। স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করুক বা না করুক তার থেকে এটা প্রমাণ হয় না যে মহাবিশ্বকে কেউ সৃষ্টি করেনি। 

কুরআন আল্লাহর বাণী নয়-দাবিটির ফ্যালাসির

নাস্তিকরা মুসলিমদেরকে অযৌক্তিক প্রমাণ করার জন্য বলে থাকে,

অনেক মুসলিম প্রমাণ দেখাতে চেষ্টা করে থাকে যে কোরআন হাদিসেই বলা আছে যে, কোরআন অবিকৃত এবং সব ধরণের দূষণমুক্ত। কিন্তু এই ধরণের দাবী একটি খুব সাধারণমানের হেত্বাভাস বা লজিকাল ফ্যালাসি যাকে বলা হয়, চক্রাকার কুযুক্তি বা Circular logic Fallacy। যেমন ধরুন, প্রশ্ন-১ বাইবেল যে সত্য তার প্রমাণ কী? উত্তর-১ বাইবেল সত্য কারণ ঈশ্বর বলেছেন বাইবেল সত্য। প্রশ্ন-২ ঈশ্বর যে সত্য তার প্রমাণ কী? উত্তর-২ ঈশ্বর সত্য কারণ বাইবেলে লেখা আছে ঈশ্বর সত্য।

উপরের দাবী দুটো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একটি দাবী আরেকটি দাবীকে সত্য প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এই দাবী দুটো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এর কোনটাই প্রমাণিত নয়, তবে একটি আরেকটি দাবীর প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে বলে চক্রাকার যুক্তি বা সার্কুলার লজিক। তাই এই ধরণের যুক্তিকে যুক্তিবিদ্যায় গ্রহণ করা হয় না, এবং এগুলোকে কুযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই এই ধরণের দাবী আসলে যৌক্তিক আলোচনায় গ্রহণযোগ্য হয় না। তাহলে প্রশ্ন আসে, আমরা কেন কোরআন হাদিসের রেফারেন্সগুলোকে উল্লেখ করছি? কোরআন হাদিস এবং ইসলামিক ক্লাসিক্যাল যুগের রেফারেন্সগুলো আমরা উল্লেখ করছি কোরআন বা মুসলিমদের দাবীগুলোর স্ববিরোধী চরিত্র দেখাবার জন্য। আসলে আম মুসলিমদের অনেকেই জানেন না, ইসলামের রেফারেন্সগুলোই ইসলামকে ভুল প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। ইহুদী নাসারা নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র ছাড়াই, শুধুমাত্র ইসলামের রেফারেন্স দিয়েই ইসলামকে ভুল প্রমাণ করা যায়। সেটাই আমরা এই লেখাটিতে দেখবো।

প্রথম কথা হচ্ছে মুসলিমরা শুধুমাত্র সেই সকল আয়াত গুলো দেখায় না বরং মুসলিমরা একইসাথে বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য প্রমাণ দেখায় এবং প্রমাণ করে যে কুরআন বিকৃতি হয়নি। যেমন আমি একজন গবেষক মুসলিম। আমি কিন্তু শুধু মাত্র একটি আয়াত দেখাবো না। অন্যান্য আরও বিশুদ্ধ তথ্য প্রমাণ পেশ করে দেখাবো যে কুরআন আসলেই সম্পূর্ণ সংরক্ষিত রয়েছে। সুতরাং চক্রাকার কুযুক্তি যে মুসলিমদের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য না এই কথা সত্য। 

আরেকটি কথা হচ্ছে মুসলিমরা চক্রাকার কুযুক্তি বা Circular logic Fallacy করে নি বরং নাস্তিকরাই এই চক্রাকার কুযুক্তিটি করেছে। কিভাবে? নাস্তিকরা বলেছে যে ইসলামের রেফারেন্স গুলো থেকেই নাকি ইসলামকে ভুল প্রমাণ করা সম্ভব। একটি উদাহরণ খেয়াল করুন।

প্রশ্ন ১/ ইসলাম ভুল তার প্রমাণ কি? 

উত্তর ১/ ইসলামিক রেফারেন্স তার প্রমাণ।

প্রশ্ন ২/ নাস্তিকতা সত্য তার প্রমাণ কি?

উত্তর ২/ কারণ নাস্তিকরাই বলে নাস্তিকতা সত্য।

প্রশ্ন ৩/ মুক্তচিন্তা কেন ভালো?

উত্তর ৩/ কারণ নাস্তিকরা মুক্তচিন্তা করে।

উপরের দাবীটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একটি দাবী আরেকটি দাবীকে সত্য প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এই দাবী দুটো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এর কোনটাই প্রমাণিত নয়, তবে একটি আরেকটি দাবীর প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে বলে চক্রাকার যুক্তি বা সার্কুলার লজিক। তাই এই ধরণের যুক্তিকে যুক্তিবিদ্যায় গ্রহণ করা হয় না, এবং এগুলোকে কুযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই এই ধরণের দাবী আসলে যৌক্তিক আলোচনায় গ্রহণযোগ্য হয় না। 

সুতরাং যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে মুসলিমরা নয় বরং নাস্তিকগোষ্ঠীরাই কুযুক্তি দিয়ে যাচ্ছে অথচ নিজেদের গায়ের নির্লজ্জ দুর্গন্ধের দোষ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে মুসলিমদের দিকে যা সত্যিই হাস্যকর। নাস্তিকরা নিজেরাও হয়তো খেয়াল করেনি যে তারা নিজেরাই প্রকৃত অর্থে লজিকাল ফ্যালাসিতে আক্রান্ত। নাস্তিকরা ইসলামের সমালোচনা করার সময় প্রচুর পরিমাণে লজিকাল ফ্যালাসি করে যা আসলে আলোচনার করবার যোগ্যতাই রাখে না। নাস্তিকদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাস লজিকাল ফ্যালাসিতে পরিপূর্ণ, ভরপুর।

৪০০০ ধর্মের মধ্যে সব গুলোই মিথ্যা- দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ যেহেতু দুনিয়াতে হাজার হাজার ধর্ম আছে এবং সবাই একে অন্যকে ভুল বলে নিজেদেরকে সত্য বলে সেহেতু আসলে সবাই মিথ্যাবাদী অথবা সব ধর্মই ভুয়া।

দাবিটির ভ্রান্তিঃ এখানে ধরে নেয়া হয়েছে যেহেতু সবাই নিজেকে সঠিক এবং অন্যকে ভুল বলে সেহেতু সকলেই ভুল। এটি False dichotomy-ভ্রান্ত দ্বি-বিভাজন লজিকাল ফ্যালাসি। এই ধরণের দাবিতে যেটা হয় মানুষ সব ধরণের অপশন বিবেচনা করে না। একটা না হলেই আরেকটা হবে এমন কিছু একটা ধরে নিয়ে যুক্তি দেয়। সবাই নিজেকে সঠিক আর অন্যকে ভুল দাবি করলেই সবাই মিথ্যা হয়ে যায় না তেমনি সত্যও হয়ে যায় না। এখানে প্রয়োজন সব ধর্মকে যাচাই বাচাই করা এমনকি নাস্তিক্যধর্মকেও।

স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ যেহেতু তুমি জানো না বিগব্যাং এর আগে কি ছিল সেহেতু স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই দাবিটি সঠিক।

দাবিঃ যেহেতু তুমি স্রষ্টা আছের প্রমাণ দিতে পারলে না সেহেতু স্রষ্টা নেই দাবিটি প্রমাণিত।

দাবিঃ যেহেতু আমি স্রষ্টাকে দেখতে পারছি না সেহেতু মহাবিশ্বকে কেউ বানায় নাই।

দাবিগুলোর ভ্রান্তিঃ  এখানে Argument from ignorance fallacy-র আশ্রয় নেয়া হয়েছে। অজ্ঞতার আশ্রয় আরকি। ধরুন কেউ দাবি করলো “মহাবিশ্বের কোনো স্রষ্টা নেই” এবং যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করলো মানুষের অজ্ঞতাকে। যেহেতু মানুষরা দেখতে পারছে না স্রষ্টাকে সেহেতু মানুষ অজ্ঞ, মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ তাই আমার দাবিটি সঠিক। যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে কথাটি আসলে সঠিক নয়। স্রষ্টাকে দেখা যায় না বলেই মহাবিশ্বকে কেউ বানায় নাই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না। স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ কেউ দিতে না পারলে এটা প্রমাণ হয় না যে স্রষ্টা বলে আসলেই কেউই নেই। সে প্রমাণ দিতে পারেনি সেটা তার অজ্ঞতা কিন্তু এটাও অজ্ঞতা যে, সে প্রমাণ দিতে পারেনি দেখে স্রষ্টা নেই দাবিটি সঠিক।

তাই মহাবিশ্বকে কেউ বানিয়েছে সেটা জানি না-কিন্তু এটা জানা সম্ভব। কি করতে হবে? যেকোন অজানা বিষয়কে জানার পদ্ধতি হচ্ছে, তা নিয়ে পড়ালেখা করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য প্রমাণ যুক্তি দিয়ে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। রিচার্ড ডকিন্সের বইতে আছে, ডারউইন প্রমাণ করে ফেলেছে, সাম হেরিস থেকে এই কথা এসেছে এসব ইত্যাদি কথাকে ধরে নেয়া নয়। আপনি দেখেন না বা আপনি জানেন না তারমানে অন্য কিছু এরকম কথা প্রমাণ হতে পারে না। কোন অজানা বিষয় অপ্রমাণিত কোন কিছুর সপক্ষের যুক্তি বা প্রমাণ হতে পারে না।

এমন কোন বিষয় যা আসলে কেউই জানেন না, সেখানে অযাচিতভাবে “স্রষ্টা নাই” দাবিটিকে আমদানি করে ফেলা এবং আর্গুমেন্ট ফ্রম ইগনোরেন্স ব্যবহার করে সেখান থেকে “স্রষ্টা নাই” প্রমাণের চেষ্টা করা। এটি হচ্ছে নাস্তিক্য দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা এমন এক দৃষ্টিকোণ, যার মাধ্যমে বলা হয়, বিজ্ঞান যেহেতু এখনো প্রমাণ করতে পারেনি স্রষ্টার অস্তিত্বকে অর্থাৎ এখনো বিজ্ঞান সেই স্থানে যেতে পারেনি বিজ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে; আর এই ঘাটতি বা শুন্যস্থানকেই “অতএব স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই” দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। এটি ইসলামবিরোধীদের মস্তিষ্কপ্রসূত। এর মাধ্যমে তারা স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই প্রমাণ দিতে চেষ্টা করে।

ডারউইনবাদের পক্ষে ৯৮% বিজ্ঞানীদের সমর্থন আছে-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ বিজ্ঞানী ডারউইন বলেছে মানুষের পূর্বপুরুষ জানোয়ার তাই মানুষের পূর্বপুরুষ মানুষ নয়।

দাবিঃ ৯৮% বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে তাই এটি প্রমাণিত।

দাবিঃ নাস্তিকদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সুতরাং নাস্তিকতাই ভালো।

দাবিঃ এডওয়ার্ড সি. মুর নৈতিকতা নিয়ে যা বলেছেন সেটাই সত্যি।

দাবিগুলোর ভ্রান্তিঃ উক্ত দাবি গুলোতে দুই ধরণের লজিকাল ফ্যালাসির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। Argument from authority fallacy-এটি হচ্ছে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম অথবা কোনো বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করে এক ধরণের কর্তৃত্ব আরোপ করা, এবং তার নামকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করাকে কুযুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধরণের ঘটনা কোনো কিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে পারে না। কোন বিখ্যাত বিজ্ঞানী মানুষ কী বলেছেন বা করেছেন বা শুনেছেন তার ওপর যুক্তি নির্ভরশীল নয়।

অন্যদিকে Argument from popularity/ Argumentum ad populum লজিকাল ফ্যালাসিটিরও আশ্রয় নেয়া হয়েছে। জনসংখ্যার কত অংশ কী অবিশ্বাস করে, বা কি বিশ্বাস করে, কতটুকু সেটা জনপ্রিয়, যুক্তি তার ওপর নির্ভর করে না। যুক্তি বা বিজ্ঞান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয় যে, কত মানুষ তা মানলো সেটার ওপর নির্ভর করবে। যুক্তি শুধুমাত্র তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির ভ্যালিডিটির ওপর নির্ভরশীল। 

পৃথিবীর সকল মানুষও যদি অযৌক্তিক কিছু বলে, শুধু একজন মুসলিম যদি যৌক্তিক কথা বলে তাহলে ঐ একজন মুসলিমই সঠিক। পৃথিবীর লক্ষ সংখ্যার নাস্তিক নাস্তিকতাকে বিশ্বাস করলে সেটা কোনো যুক্তি নয়। কোনো দাবীর সত্যতা সেই দাবীটির তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির ওপর নির্ভরশীল, তা কতজন বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করে তার ওপর নয়।

মাদ্রাসার হুজুর মানেই খারাপ-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ আরে সে তো মাদ্রাসার হুজুর সে কি বোঝে?

দাবিঃ আপনি মাদ্রাসার হুজুর সুতরাং আপনি পটুকামী।

দাবিঃ নাস্তিকরা ভালো না হলে নাস্তিকরা কেন নাস্তিক হচ্ছে?

দাবিগুলোর ভ্রান্তিঃ এগুলো হচ্ছে কুপ্রশ্নের কুযুক্তি বা ফ্যালাসি Begging the question। উপরের দাবী প্রথম ও দ্বিতীয় দাবীগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, যিনি প্রশ্ন করেছেন, তিনি শুরুতেই ধরে নিয়েছেন, মাদ্রাসার হুজুর মানেই সে কিছু বোঝে না। আর মাদ্রাসার হুজুর মানেই হয়তো সমকামী। এগুলো সবই কুযুক্তি। অর্থাৎ যিনি প্রশ্ন করছেন সে একটি ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করেছেন যেই প্রশ্নটিই ভুল একইসাথে ভুলযুক্তি। তৃতীয় দাবিতে উনি ধরে নিয়েছেন নাস্তিকরা না বলে সেটাই সত্য। নাস্তিকরা যার বিরোধিতা করে সেটাই খারাপ। যুক্তিবিদ্যায় এরকম যুক্তি প্রদানকে কুযুক্তি বা ফ্যালাসি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ শুধুই আস্তিকরা দেবে-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” এটি প্রমাণিত সত্য। নাহলে প্রমাণ দেও স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে।

দাবিঃ স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই আমি কেন প্রমাণ করবো তুমি প্রমাণ করো যে স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে?

দাবিঃ এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকেই সকলেই এসেছে নাহলে তুমি প্রমাণ দেও এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে কেউ আসে নাই?

দাবিগুলোর ভ্রান্তিঃ এখানে Burden of proof-অপ্রমাণের বোঝা বা বস্তা ফ্যালাসি বা কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ নেয়া হয়েছে। উপরের দাবি গুলোর কুযুক্তি লক্ষ করুন। দাবিকারী নিজ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করে বিপরীত লোকটির দিকেই প্রমাণ চাপিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ তার নিজের কাছে দাবি প্রমাণের যথেষ্ট যুক্তি না থাকায় সে তার প্রতিপক্ষের দিকেই দাবি প্রমাণের বোঝা চাপাতে চাচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে আমরা Burden of proof-অপ্রমাণের বোঝা চাপানো বলি। প্রকৃত পক্ষে প্রমাণ বা যুক্তি উপস্থাপনের দায় তারই যিনি দাবি উত্থাপন করেছেন। নিজের দাবির প্রমাণ নিজেকেই প্রমাণ করতে হবে। “স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে” দাবিটি যে করবে তাকে তার দাবির পক্ষে প্রমাণ পেশ যেমন করতে হবে তেমনি “স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নেই” দাবিটিও যে করবে তাকে তার দাবির পক্ষেও প্রমাণ পেশ করতে হবে। সহজ কথায় যার যার দাবি তাকে তাকেই প্রমাণ করতে হবে।

যারা মুক্তচিন্তায় কুকর্ম করে তারা প্রকৃত মুক্তচিন্তক নয়-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ হুমায়ুন আজাদ মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করতে চেয়েছিল।

কুযুক্তিঃ উনি সত্যিকারের মুক্তচিন্তক নন।

দাবিঃ তসলিমা নাসরিন নারীদেরকে ধর্ষণ করতে উৎসাহিত করে।

কুযুক্তিঃ উনি সত্যিকার নারীবাদী নন।

দাবিঃ কমিউনিস্ট নাস্তিকরা কোটি কোটি মানুষকে গণহত্যা করেছে।

কুযুক্তিঃ তারা কেউই প্রকৃত নাস্তিক নয়।

দাবিগুলোর ভ্রান্তিঃ এখানে No true scotsman ফ্যালাসি করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো বিপদ দেখলেই উনি সত্যিকারের স্কটসম্যান নহেন,উনি মুক্তচিন্তক নন, উনি বিজ্ঞান বোঝেন না, ইত্যাদি বলতে থাকাকে যুক্তিবিদ্যায় No true scotsman কুযুক্তি বলা হয়।

মুমিনরা যাই প্রমাণ দিক মানুষের পূর্বপুরুষ জানোয়ারই--দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ আপনি যাই প্রমাণ দেখান না কেন ডারউইনবাদ অনুযায়ী আমাদের পূর্বপুরুষ চতুষ্পদ জন্তু জানোয়ার। আমাদের আদি পুরুষ কোনো মানুষ নয়।

দাবিঃ আপনি আমাকে যেভাবেই বুঝান না কেন নাস্তিকতাই সঠিক।

দাবিঃ আপনি আমাকে যতোই প্রমাণ দেন না কেন আমি তারপরেও বলবো ইসলাম সঠিক নয়।

দাবিঃ ইসলামে দাসবিধির যৌক্তিকতা,উপকারীতা আমাকে যেভাবেই প্রমাণ করেন না কেন ইসলামকে আমি খারাপ বলবোই।

দাবিগুলোর ভ্রান্তিঃ উপরের দাবি গুলোতে Argument from final Consequences ফ্যালাসি করা হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তি,তথ্য, প্রমাণ, জ্ঞান যাই হোক না কেন যুক্তিতর্কের ফলাফল আপনি আগেই নির্ধারণ করে সেই বিশ্বাসে স্থির থাকলে তাকে আমরা বলি আর্গুমেন্ট ফরম ফাইনাল কন্সিকুয়েন্সেস।

ধরুন আপনি বিশ্বাস করেন ডারউইনের বিবর্তনবাদ সত্য। আপনি ডারউইনবাদ নিয়ে বিতর্ক করতে আসলেন এবং ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সমস্ত তথ্য প্রমাণ যুক্তি শোনার পরেও, তার বিপরীতে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ যুক্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ার পরেও আপনি বলতে থাকলেন, যত যাই হোক, বিবর্তনবাদ সত্য। ৯৮% বিজ্ঞানী একে কি এমনিই সমর্থন করে? কারণ আপনার আস্থা যুক্তি বা প্রমাণে নয় আপনার আস্থা ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিশ্বাসে। এরকম অবস্থায় আপনার অবস্থানকে তালগাছবাদী কুযুক্তি বলা হবে। অর্থাৎ বিচার মানি তালগাছ আমার।

আবার ধরুন যুদ্ধে প্রতিপক্ষরা আপনাকে হারালে পারলে আপনাকে মেরে ফেলবে আপনার মা বোন স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে। এখন ইসলামের বিধান হচ্ছে দুশমন পক্ষের লোকদেরকে তাই এমন সিস্টেমে নিয়ে আসা যাতে তারা আপনার বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ করতে না পারে। ইসলাম বিধান দিচ্ছে তাদেরকে খাদেম বানিয়ে এবং তাদের নারীদেরকে নিজেদের দায়িত্বে এনে রাষ্ট্রীয় উপকারে ব্যাবহার করা। এতে করে তাদের উপর জুলুম অত্যাচার করা হচ্ছে না এমনকি তারা খাদ্য, পোশাক, শিক্ষা, এবং রাষ্ট্রের সুবিধাও তারা ভোগ করতে পারবে। আপনি বুঝলেন ইসলামের এই দাসবিধি যৌক্তিকভাবেই কল্যাণকর এবং উপকারী কিন্তু তারপরেও আপনি বিশ্বাস করে যাচ্ছেন ইসলাম মানেই খারাপ। এরকম অবস্থায় আপনার অবস্থানকে Argument from final Consequences ফ্যালাসি বলা হবে।

সমকামীতা প্রাকৃতিক তাই এটি ভালো-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ জন্তু জানোয়ারদের মধ্যে সমকামীর উপস্থিতি দেখা যায় সেহেতু মানুষের মধ্যেও সমকামীতা প্রাকৃতিক একটি ব্যাপার।

দাবিটির ভ্রান্তিঃ একে আমরা প্রকৃতিগত হেত্বাভাস বা কুযুক্তি বা ফ্যালাসি Naturalistic fallacy বলে অভিহিত করে থাকি। অনেকসময় যুক্তি হিসেবে বলা হয়, যেহেতু অমুক বিষয়টি প্রাকৃতিক, তাই ভাল বা নৈতিক। অথবা তমুক বিষয়টি অপ্রাকৃতিক, তাই মন্দ বা অনৈতিক। এরকম দাবীগুলোকে সাধারণভাবে প্রকৃতিগত হেত্বাভাস বলে। “সাধারণত কী হয়”, “সাধারণত কী হয় না”- এর উপর ভিত্তি করে “কী হওয়া উচিৎ”, “কী হওয়া বাধ্যতামূলক”, “কী হওয়া উচিৎ নয়”, “কী করা যাবে না” এরকম নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন এই বিশেষ হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। এই হেত্বাভাসটি খুব সাধারণ, এবং বেশিরভাগ লোকই স্বীকৃতি সামাজিক ও নৈতিক রীতির জন্য এটি নজরে নেন না। এর কারণে আমরা যুক্তি থেকে সরে এসে, যা হয় তাকে হতেই হবে বলে মনে করি। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাথে ভাল মন্দের সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হয় বলেই এর নাম “ন্যাচারালিস্টিক ফ্যালাসি”।

দাসী সেক্স ভালো না-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ দাসী সেক্স খারাপ কারণ এটি আমার কাছে ভালো না।

দাবিঃ চারজন নারী কেন একজন পুরুষকে বিয়ে করে খুশি থাকবে?

দাবিটির ভ্রান্তিঃ আপনার কাছে খারাপ অথবা ভালো না লাগলে তাতে অন্যের কিছু আসে যায় না। দাসী সেক্স আপনার কাছে খারাপ তারমানে এটা নয় যে অন্যদের কাছে সেটা খারাপ হতে হবে একইসাথে কোনো নারী যদি কোন পুরুষের দ্বিতীয় তৃতীয় অথবা চতুর্থ স্ত্রী হতে রাজি হয় এবং তারা সকলেই সুখে থাকে তাহলে এমন সম্পর্ক আপনার কাছে ভালো না লাগলেও যারা এমন সম্পর্কে সুখী তাদের কাছে ঠিকই ভালো। আপনার কাছে ভালো তাই সবার কাছে সেটাই ভালো মনে হতে হবে এটা এক প্রকার ফ্যালাসি। নীতিগত হেত্বাভাস বা কুযুক্তি অর্থাৎ মরালিস্টিক Moralistic fallacy। যখন কোন নৈতিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে “কী হতে হবে” বা “কী হওয়া যাবে না” বা কী ঘটতে পারে না, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়।

আয়েশা (রা) ৯ বছর বয়সেও প্রাপ্তবয়স্কা হয়নি-দাবিটির ফ্যালাসি

আয়েশা (রা) ৯ বছরেরও অবুঝ শিশু ছিলেন। প্রমাণ হিসেবে তারা "সহজ নসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, ১১ খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠায় উমডাতুল কারী বরাতে বলা হয়েছেঃ রাসুল (সা) হযরত আয়েশা (রা) এর প্রতি উদারচিত্ত ও হাস্যজ্বল ছিলেন।হাস্যরস করেছেন । এমনকি তিনি তাঁর পুতুল খেলায়ও সম্মতিতে দিয়েছেন। তাঁর সাথে খেলার জন্য তাঁর বান্ধবীদের ডেকে পাঠিয়েছেন। আর সে সময় হযরত আয়েশা (রা) নাবালিকা ছিলেন। তাই তিনি তাকে খেলাধুলার অনুমতি দিয়েছেনকিন্তু সাবালিকা নারীদের জন্য এটা মাকরুহ

দাবিঃ যেহেতু ইবনে হাজার আসকালানি বলেছেন আয়িশা তখন নাবালেগ ছিলেন সুতরাং সে সাবালিকা ছিলেন না।

দাবিটির ভ্রান্তিঃ এটি চেরি পিকিং ফ্যালাসির উদাহরণ। যখন আমরা বিভিন্ন রকম এভিডেন্স, ডেটা বা সম্ভাবনা থেকে আমাদের অনুকূলে যায় এরকম ডেটা বা এভিডেন্সকেই বা সম্ভাবনাকেই গ্রহণ করি তখন এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। যেখানে আম্মাজান আয়েশা (রা) নিজের ক্ষেত্রে বলেছেন উনি বয়স্কা রমণী হয়েছিলেন অর্থাৎ পুরো উপযুক্ত সেখানে অন্য কারো উক্তি বা বর্ণনা অটোম্যাটিক দুর্বল হয়ে যায়।

মুফতি আল্লামা তাকি উসমানী সাহেবের লিখিত বিখ্যাত বই দারসে তিরমিজি, ৩ খণ্ড, ৪৫৬ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছেঃ

নবীজি (সা) আয়েশা (রা)কে নিয়ে মধুরাত্রি যাপন করেছেন যখন তাঁর বয়স নয় বছর । হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন কোন মেয়ে ৯ বছরে পৌছলে সে বয়স্কা রমণী হয়ে যায়

মুতা বিয়ে ও পতিতাবৃত্তি একই এরকম, বিয়েতে কন্যাকে দেনমোহরের টাকা দেয়া ও পতিতালয়ে গিয়ে নারীভোগ করার পর টাকা দেয়া একই কথা-এরকম কথা গুলো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। দাবি গুলো চেরি পিকিং ফ্যালাসির অন্তর্ভুক্ত। লক্ষ্য করুন যতটুকু তথ্যের সাথে যতটুকু মিলছে, ততটুকুই উনি বলছেন। অন্যান্য বিষয়াদি উহ্য রেখে। তাই এটি একটি ফ্যালাসি, যাকে আমরা বলি চেরি পিকিং।

আয়েশা (রা) নবী মোহাম্মদকে সন্দেহ করতেন-দাবিটির ফ্যালাসি

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫১১৩, সহিহ হাদিস, হিশামের পিতা ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যে সব মহিলা নিজেদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর নিকট সমর্পণ করেছিলেন, খাওলা বিনতে হাকীম তাদেরই একজন ছিলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, মহিলাদের কি লজ্জা হয় না যে, নিজেদেকে পুরুষের কাছে সমর্পণ করছে? কিন্তু যখন কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হল- “হে মুহাম্মাদ! তোমাকে অধিকার দেয়া হল যে, নিজ স্ত্রীগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আলাদা রাখতে পার...।” (আল-আহযাব: ৫১) ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার মনে হয়, আপনার রব আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উক্ত হাদীসটি আবূ সা’ঈদ মুয়াদ্দিব, মুহাম্মাদ ইব্‌নু বিশ্‌র এবং ‘আবদাহ্‌ হিশাম থেকে আর হিশাম তার পিতা হতে একে অপরের চেয়ে কিছু বর্ধিতভাবে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।-ihadis.com

দাবিঃ আয়েশা একসময় খানিকটা বিরক্ত হয়েই নবী মুহাম্মদকে বলেছিলেন, আল্লাহ আপনার ইচ্ছা অনুসারে সাথে সাথে আয়াত নাজিল করেন। হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আয়েশার মন আমাদের ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে। আসলে আয়েশাও নবী মোহাম্মদকে সন্দেহ করতো তার নবী হওয়া নিয়ে।

দাবিটির ভ্রান্তিঃ এখানে একাধিক ফ্যালাসি করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে,Straw man fallacy -কাকতাড়ুয়া ভ্রান্তির ফ্যালাসি। Ad hominem-অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তি আক্রমণ ফ্যালাসি এবং Red herring তথা প্রসঙ্গ ঘোরানোর ফ্যালাসি। নিজের সুবিধামত ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে সেখানে Straw man fallacy করা হয়েছে। ব্যক্তি আক্রমণ করে Ad hominem ফ্যালাসি করা হয়েছে। আর মূল ঘটনা পরিবর্তন করে সেখানে Red herring তথা প্রসঙ্গ ঘোরানোর ফ্যালাসি করা হয়েছে। এমনকি উক্ত দাবিটিতে False analogy ফ্যালাসির প্রয়োগও দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ নাস্তিকরা মনে করছে আয়েশা (রা) যেহেতু রাগ প্রকাশ করেছে সেহেতু আয়েশা (রা) ও মনে হয় নাস্তিকদের মতো নবী মোহাম্মদ (সা)কে সন্দেহ অথবা ঘৃণা করে।

উক্ত দাবির ব্যাখ্যাটি যে ভুল-মিথ্যা আর প্রমাণ হচ্ছে কোনো সহিহ হাদিস থেকে অথবা তাফসীর থেকে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যেখানে বর্ণিত হয়েছে আয়েশা (রা) নবী মোহাম্মদ (সা)কে সন্দেহ করতেন দেখে রাগ করেছিলেন। তাফসীর থেকে এই প্রমাণ পাওয়া যায় যে উনার রাগ করার কারণ কি ছিল। 

তাফসীরে ইবনে কাসীর, ড, মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত,১৫ খণ্ড, ৮৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত উরওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) ঐ সব মহিলাকে অবজ্ঞা করতেন যারা নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হিবা করে দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন যে, নারীরা বিনা মহরে নিজেকে হিবা করতে লজ্জা বােধ করে না? অতঃপর আল্লাহ তা'আলা-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “আমি দেখি যে, আপনার চাহিদার ব্যাপারে প্রশস্ততা আনয়ন করেছেন।" ইমাম বুখারীও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যা ইতিপূর্বে গত হয়েছে। সুতরাং বুঝা গেল যে, এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য এই মহিলারাই। এদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে যে, তিনি যাকে ইচ্ছা ককূল করবেন এবং যাকে ইচ্ছা কবুল করবেন না। এর পরেও তাকে অধিকার দেয়া হয়েছে যে, যাদেরকে | তিনি কবুল করেননি তাদেরকেও ইচ্ছা করলে পরে কবুল করে নিতে পারেন।

বিনা মহরে নিজেকে নবীজি (সা)এর কাছে পেশ করার কারণে আয়েশা (রা) উক্ত নারীদের নিয়ে অবজ্ঞা করেছিলেন। এই কারণে নয় যে উনি উনার স্বামীকে সন্দেহ করতেন। যদি উনার স্বামীকে উনি সন্দেহ করতেন এবং পছন্দ না করতেন তাহলে উনার স্বামী উনাকে এই স্বাধীনতা দিয়েছিলেন যে আয়েশা (রা) চাইলে নবীজি (সা)কে ত্যাগ করে চলে যেতে পারেন অথচ আয়েশা (রা) উনার স্বামীকেই গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। এটাই প্রমাণ করে যে ইসলামবিরোধীদের উক্ত দাবিটি মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ ভুল যুক্তি তথা ফ্যালাসিতে ভরপুর। 

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৪৭৮৫ ও ৪৭৮৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

লায়স (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যখন রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সহধর্মিণীদের ব্যাপারে দু’টি পন্থার একটি পন্থা বেছে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হল, তখন তিনি প্রথমে আমাকে বললেন, তোমাকে একটি বিষয় সম্পর্কে বলব। তাড়াহুড়ো না করে তুমি তোমার আব্বা ও আম্মার সঙ্গে পরামর্শ করে নিবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি অবশ্যই জানতেন, আমার আব্বা-আম্মা তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বলবেন না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا إِلَى أَجْرًا عَظِيمًا “হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর.....মহা প্রতিদান পর্যন্ত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আমার আব্বা-আম্মার সঙ্গে পরামর্শের কী আছে? আমি তো আল্লাহ্, তাঁর রসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য সহধর্মিণী আমার মতই জবাব দিলেন।-ihadis.com

এরকম প্রচুর প্রমাণ আপনাদেরকে আমি দেখাতে পারবো যেখানে নবী মোহাম্মদ (সা) উনার স্ত্রী আয়েশা (রা) উনাকে ছেড়ে দেবার সুযোগ দেয়া সত্ত্বেও আয়েশা (রা) থেকে সব স্ত্রীরা নবীজি (সা)কেই পছন্দ করবার সম্মতি প্রদান করেন। তারমানে যদি মিথ্যুকবাজ নাস্তিকদের উক্ত দাবি গুলো সঠিক হতো তাহলে আয়েশা (রা) উনার স্বামী হযরত মোহাম্মদ (সা)কে ত্যাগ করতেন। কিন্তু উনি এরকম করেন নাই। নাস্তিক মুক্তমনারা এই তথ্য প্রমাণ গুলো দেখাতে চায় না কারণ নিজেদের মতো তাহলে বানিয়ে বানিয়ে ব্যাখ্যা করতে অসুবিধা হবে।

তুইও তো ধর্ষকরে-দাবিটির ফ্যালাসি

ধরুন নাদিয়া ইসলাম নামে একজন নারীবাদী দাবি করবো আসিফ মহিউদ্দিন একজন ধর্ষক। যে কিনা নিজের স্ত্রীকে মদ খাইয়ে মাতালা করে যৌনসঙ্গম করেছে সম্মতি নিতে ভুলে গিয়েছিল। এই কথা শুনে আসিফ মহিউদ্দিন পাল্টা জবাবে বলল, তুই তো ধর্ষক। তুই তো সেই দিন আরিফুর রহমানকে তাকিলা খাইয়ে রাতে সহবাস করেছিস।

এই ধরণের উত্তর একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে বলা হয় এপিল টু হিপোক্রেসি/ ধাপ্পাবাজি আশ্রিত কুযুক্তি Appeal to hypocrisy বা ট্যু ক্যুও- ক্যুই। মানে হচ্ছে, ইউ ট্যু বা তুমিও। কিন্তু অন্য আরেকজন ধর্ষণ করলেই প্রথম জনার ধর্ষণ দাবিটি মিথ্যা হয়ে যায় না।

দুনিয়ার মধ্যে একমাত্র নাস্তিক্যবাদই সত্য-দাবিটির ফ্যালাসি

যেহেতু আপনি নিজেকে নাস্তিক মুক্তমনা দাবি করে থাকেন। আপনার পাশে পাশে সকলেই নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাস রাখে। আপনি সবাইকে দেখছেন সকলেই ইসলামবিরোধীতা করাকে মুক্তচিন্তার চর্চা বলে মনে করে তাদের সাথে তাল দিয়ে আপনিও ইসলামবিরোধীতাকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হিসেবে বিশ্বাস করে নিয়েছেন। আপনি নাস্তিকতাকেই সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। তাই আপনার দাবি হচ্ছে পৃথিবীর ৪০০০ এর বেশি ধর্ম ও মতবাদের মধ্যে আপনার বিশ্বাস করা নাস্তিক্যবাদটি অথবা আপনার নাস্তিক্যধর্মটিই একমাত্র সঠিক এবং সত্য। বাদবাকি সবই ভুয়া এবং বিকৃত।

আপনি ভারতের কোনো হিন্দু পরিবারে জন্মালে ঠিক একইভাবে একই যুক্তিতে হিন্দু ধর্মটিই পৃথিবীর একমাত্র সত্য ধর্ম বলে তখন আপনার মনে হতো। যেহেতু আপনি কোন ধর্মটি বা মতবাদটি সঠিক তা তথ্য প্রমাণ দিয়ে যাচাই বাছাই না করে শুরুতেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, আপনি নাস্তিক পরিবারে জন্মসূত্রে পাওয়া আপনার নাস্তিক্যধর্মটি একমাত্র সঠিক। তাই আপনার দাবিটি পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। তাই এই যুক্তিটি একটি কুযুক্তি বা ফ্যালাসি।

বেশির ভাগ নাস্তিকই মনে নিজেকে একমাত্র সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে থাকে। সে নিজের পক্ষের প্রমাণ গুলো খুঁজে বের করে সে গুলো প্রচার করে। তার নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে, তার ইসলামবিরোধী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলোকে তিনি এড়িয়ে যান বা বাতিল করে দেন। এটাই পক্ষপাতদুষ্ট নিশ্চিত কুযুক্তি বা ফ্যালাসি Confirmation Bias Fallacy

মহাবিশ্বের জন্য স্রষ্টার প্রয়োজন নেই-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ মহাবিশ্ব থেকে নিয়ে সব কিছুর জন্য স্রষ্টার প্রয়োজন নেই। মহাবিশ্ব শুন্য থেকে এমনি এমনিই অস্তিত্বে এসেছে।

 

দাবিটির ভ্রান্তিঃ দাবিটি অনুসারে প্রথমে তিনি একটি প্রস্তাব দিয়েছেন যে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য স্রষ্টার প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে তিনি নিজেই আবার বলছে মহাবিশ্ব এমনি এমনিই অস্তিত্বে এসেছে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে মহাবিশ্ব কিভাবে অস্তিত্বে আসলো নিজে নিজেই? তখন সে মহাবিশ্বকে স্পেশাল সুবিধা দিয়ে বলে মহাবিশ্বকে কেউ বানিয়েছে এসব বলা যাবে না। আমাদেরকে বিশ্বাস  করে নিতেই হবে মহাবিশ্বকে কেউ বানায় নাই। এটি একটি কুযুক্তি। একে বলা হয় Special Pleading Fallacy-স্ববিশেষ মিনতি কুযুক্তি বা ফ্যালাসি।যখন কারও দেয়া সূত্র বা প্রস্তাব বা রুল সে বা অন্য কেউ ভঙ্গ করে, এবং সেই ভঙ্গ করাকে তিনিই স্পেশাল কিছু সুবিধা বলে চালিয়ে দিতে চান, তাকে আমরা স্ববিশেষ মিনতি কুযুক্তি বা ফ্যালাসি বলতে পারি।

 

প্রতিটি মানুষকে মুক্তচিন্তক হতে হবে-দাবিটির ফ্যালাসি

 

যখন কোন দাবীকে এই যুক্তিতে গ্রহণ করতে বলা হয় যে “আমার মুক্তচিন্তা এটাই চেয়েছে”, “এটাই আমার ফ্রিডম” “আমার দেহ আমার সিদ্ধান্ত” তখন এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। এই কুযুক্তিটিকে আমরা আপিল তো ফ্রি থিংকিং ফ্যালাসি বলে থাকি। যেমনঃ 

 

বিচারকঃ আপনি কেন নারীটিকে সারাসন্ধা চুষেছেন, চাবিয়েছেন?

অপরাধীঃ আমার মুক্তচিন্তায় এটি আমার কাছে বৈধ মনে হয়েছে তাই।

 

বক্তাঃ নাস্তিকরা সবাই মানবিক আর মুসলিমরা নাকে দড়ি বাধা উট।

উত্তরঃ আপনি সাপ্রদায়িকতা ছড়াচ্ছেন।

 

বিচারকঃ আপনি কেন শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুন করেছেন?

অপরাধীঃ বিবর্তিত মজগ থেকে মুক্তচিন্তা করার কারণে।

 

বিচারকঃ আপনি নিজের পিতার সাথে সমকামীতা কেন চর্চা করেন?

অপরাধীঃ কারণ এটি আমাদের একান্ত স্বাধীনতা।

 

এরকম মুক্তচিন্তার চিন্তার কারণে অনেকে অন্যের ক্ষতিও করে ফেলেন। বিচারব্যবস্থা এসবের তোয়াক্কা করেনা বলেই হয়তো অন্যের ক্ষতি করার পেছনে এরকম যুক্তি আর খাটে না, অপরাধ তো অপরাধই থাকে। যতোই মুক্তচিন্তার নামে সমকামীকে সমর্থন করা হউক না কেন, যতোই মুক্তচিন্তার নামে ইসলামবিরোধীতা করা হোক না কেন এগুলো যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে কুযুক্তি। ফ্যালাসির অন্তর্ভুক্ত।


ধর্ষণের মুক্তচিন্তা করা যাবে না-দাবিটির ফ্যালাসির

 বিতর্কের বিষয় হচ্ছেঃ মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ বৈধ কিনা?

 নাস্তিক পক্ষের একজন মুক্তচিন্তক দাবি করলেন, আমাদেরকে শুধু ইসলামের বাইরে মুক্তচিন্তা করতে হবে। এরপরে নাস্তিকটি নিজের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

 এটা হচ্ছে মুভিং দ্যা গোলপোস্ট লক্ষ্য পরিবর্তন কুযুক্তি বা ফ্যালাসি (Moving the goalposts)  বা ইনফরমাল লজিক্যাল ফ্যালাসি। বিতর্ক বা আলোচনার মূলবিষয়বস্তু থেকে সরে গিয়ে নতুন আরেকটি বিষয় নিয়ে বিতর্কের সুচনা করা, বা বিতর্কের মধ্যেই বিতর্কের নিয়ম পরিবর্তনের চেষ্টাকে লক্ষ্য পরিবর্তন কুযুক্তি বা কৌশল বলা হয়। নাস্তিকরা চায় সবাই মুক্তচিন্তা করতে শিখুক। ধর্ষক যে ধর্ষণ করে সেটা তার মুক্তচিন্তা থেকেই করে। বিতর্কের বিষয় হচ্ছে, মুক্তচিন্তায় নাস্তিকরা ধর্ষণের মুক্তচিন্তা করতে পারবে না? অথচ নাস্তিক পক্ষের লোকটি বলছে কুরআন অবৈজ্ঞানিক এরপরে এই নিয়েই যে তার প্রমাণ দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এটাই কুযুক্তি। এটা মুভিং দ্যা গোলপোস্ট লজিক্যাল ফ্যালাসি।

 

ছেলেকে মাদ্রাসায় দিয়েছেন জঙ্গি হবে, বলৎকারের শিকার হবে- দাবিটির ফ্যালাসি


দাবিঃ আপনার ছেলেকে যে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন সে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হবে। হুজুরদের হাতে বলৎকারের শিকার হবে।


দাবিটির ভ্রান্তিঃ  এই কুযুক্তি বা ফ্যালাসিকে বলা হয় Slippery slope-যুক্তির পিচ্ছিল ঢালে গড়িয়ে বহুদূর। অর্থাৎ কিছু একটা টার্গেট করে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া যা এখনো ঘটেই নি অথচ এমনভাবে তর্ক করে যাচ্ছে যেন সেটা হয়েই গিয়েছে। কেউই মাদ্রাসায় ভর্তি হলেই জঙ্গি-সন্ত্রাসী হয় না এমনকি হয় না বলৎকারের শিকার। সুতরাং সেখানে ভর্তি হলেই খারাপ হয়ে যাবে এমন যুক্তিটি ভুল।


পারলে উনার সাথে বিতর্কে আসেন-দাবিটির ফ্যালাসি

ধরুন কোন এক নাস্তিক ছেলের নাম আসিফ মহিউদ্দিন। সে ইসলামের বিরুদ্ধে ভিডিও বানায়। নিজেকে হিরো দেখানোর জন্য নিজের ভক্তদের মধ্য থেকেই মুসলিম সাজিয়ে তাদের সাথে লাইভে বিতর্ক করার নাটক করে নিজে হিরো সাজে। এক লোককে তার এক ভক্ত বলল, পারলে উনার সাথে বিতর্ক করুন। উনাকে হারিয়ে দিয়ে যান। দেখি কেমন পারেন আপনি।

এখানে একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি ঘটেছে। যাকে Bad reasons fallacy-দুর্বল যুক্তির ভ্রান্তি বলা হয়। কেউ নাস্তিক আর ইসলামের বিরুদ্ধে ভিডিও বানায় দেখেই যে সে ভালো বিতার্কিক হবেন এটা ভুল সিদ্ধান্ত। কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে নিজের পেইজে ভিডিও বানায় কিন্তু দক্ষ এবং যুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী কারো সাথে ডিবেট করলে সে জিতে যাবে এই কথা ঠিক না। সেই নাস্তিক মারাত্মক লেভেলের নাকানিচুবানিও খেতে পারে।

ধর্ষণের জন্য আল্লাহ দায়ী-দাবিটির ফ্যালাসি

দাবিঃ আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছে। আর মানুষ ধর্ষণ করে। সুতরাং আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির জন্য অপরাধী।

 

দাবিটির ভ্রান্তিঃ এখানে Post hoc ergo propter hoc লজিকাল ফ্যালাসি/কুযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। এটার মানে হচ্ছে যে একটা ঘটনার পরে অন্য একটা ঘটনা ঘটেছে। এটা দেখেই আপনি বুঝে নিলেন প্রথমটার কারণেই দ্বিতীয়টা ঘটেছে। এখানে সমস্যা হচ্ছে এই যুক্তিটি ঠিক যুক্তি নয়। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তারমানে এই না যে মানুষের অপরাধের জন্য আল্লাহ দায়ী। মানুষ নিজে সেই অপরাধ করেছে তার জন্য সে নিজেই দায়ী, আল্লাহ নয়। আল্লাহ মানুষকে তৈরি করার সাথে সাথে বিধানও দিয়ে দিয়েছেন। সেই বিধানে এমন কিছুই বর্ণিত নেই যে “তোমরা ধর্ষণ করো”। এই যুক্তিটির সমস্যা সহজে বুঝতে হলে এই কথাটি খেয়াল করুন- যেহেতু ধর্ষকের পিতা-মাতা ধর্ষক লোকটিকে জন্ম দিয়েছে, যদি জন্ম না দিতো তাহলে তো সে ধর্ষণ করতে পারত না সুতরাং ধর্ষকের ধর্ষণের জন্য পিতা-মাতা দায়ী। এই যুক্তিটি যেমন সমস্যাযুক্ত তেমনি সেটাও অর্থাৎ উভয় স্থানেই লজিকাল ফ্যালাসি করা হয়েছে। দুটোই যুক্তিবিদ্যার দৃষ্টিতে বাতিল।

উপসংহারঃ আমার কাম্য সততার সাথে যুক্তিতর্ক চলুক। মুক্তচিন্তার নামে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ হোক। ধর্ষক করে ধর্ষণের মুক্তচিন্তা,নাস্তিক করে ইসলামবিরোধী মুক্তচিন্তা, চোর করে চুরিবিদ্যার মুক্তচিন্তা, সন্ত্রাস করে সন্ত্রাসবাদের মুক্তচিন্তা, মিথ্যুক করে মিথ্যাচারের মুক্তচিন্তা, খুনি করে হত্যা করবার মুক্তচিন্তা, ডাকাত করে ডাকাতির মুক্তচিন্তা, ঘুষখোর করে ঘুষ খাওয়ার মুক্তচিন্তা, গাঁজাখোর করে গাজা সেবনের মুক্তচিন্তা এভাবে মুক্তচিন্তার লিস্ট অনেক লম্বা। আমরা এই মুক্তচিন্তা চাই না। চিন্তাকে মুক্ত নয় বরং চিন্তাকে সুস্থ ও সভ্যতা দিয়ে ঢেকে রাখা আবশ্যক। মুক্তচিন্তা নামক বর্বরতার বিষ দূর করতে সুস্থ ও সভ্য চিন্তার বিকল্প নেই।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post