মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অমানবিক?


বিষয়ঃ মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অমানবিক?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

=========================

ভূমিকাঃ ইসলামবিরোধী নাস্তিকরা এটা বিশ্বাস করে থাকে যে ইসলামে মুরতাদের যেই শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড এই শাস্তি নাকি অমানবিক। তারা আরও বলে ইসলাম নাকি মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। আরও নানান কথা রসিয়ে রসিয়ে বলে মানুষকে ইসলামকে একটা নেগেটিভ কিছু করে দেখাতে চায়। কিন্তু সেই সব নাস্তিকদের কথা কি আসলেই সত্য? মুরতাদের যেই শাস্তির বিধান ইসলাম দিয়েছে সেটা কি যৌক্তিকভাবেই মন্দ? নাকি কল্যাণকর? আজকে আমি নাস্তিকদের মিথ্যা অভিযোগ গুলোকে যাচাই করে দেখবো। বিচার করে দেখবো। আপনিও যাচাই করে দেখে নিবেন এই আশাই আমি করছি।

কুরআন থেকে মুরতাদের শাস্তির প্রমাণঃ

আল কুরআন, সুরা তওবা ৯ঃ ১১ থেকে ১৩ আয়াত হতে বর্ণিত হয়েছে,

“তবে তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তখন তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি। আর যদি তারা ভঙ্গ করে তাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর এবং বিদ্রুপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তাহলে সেই কুফর নেতৃত্বের সাথে লড়াই কর। কারণ, এদের কোন শপথ নেই যাতে তারা ফিরে আসে। তোমরা কি সেই দলের সাথে লড়াই করবে না যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রাসূলকে বহিষ্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ যদি তোমরা মুমিন হও।” 

তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন,৫৫৬ পৃষ্ঠা, সুরা তওবা উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে,

হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, এ আয়াত সকল কেবলানুসারী মুসলমানের রক্তকে হারাম করে দিয়েছে। অর্থাৎ, যারা নিয়মিত নামায ও যাকাত আদায় করে এবং ইসলামের বরখেলাফ কথা ও কর্মের প্রমাণ পাওয়া যায় না, সর্বক্ষেত্রে তারা মুসলমানরূপে গণ্য; তাদের অন্তরে সঠিক ঈমান বা মুনাফেকী যাই থাক না কেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এ আয়াত থেকে অন্ত্ৰধারণের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে সাহাবায়ে কেরামের সন্দেহ নিরসন করেছিলেন।-(ইবনে কাসীর)

এসব আয়াত পরিস্কার ইসলামদ্রোহীদের ব্যাপারে মৃত্যুর শাস্তি নিশ্চিত করে। আরও আয়াতে আছে যেমন,

আল কুরআন, সুরা আহযাব ৩৩ঃ৫৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি

আল কুরআন,সুরা আহযাব ৩৩ঃ ৬০, ৬১ ও ৬১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং মদীনায় গুজব রটনাকারীরা যদি বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে উত্তেজিত করব। অতঃপর এই শহরে আপনার প্রতিবেশী অল্পই থাকবে। অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।

সুতরাং যারা বলে যে কুরআনে মুরতাদের শাস্তির বিধানই নেই তারা ভুল বলে থাকেন।

সহিহ হাদিসে মুরতাদের শাস্তির প্রমাণঃ

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

ইকরিমাহ (রহ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আলী (রা) এর কাছে একদল যিন্দিককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীদের) আনা হল । তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রা) এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিষেধ আছে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম । কারন রাসুলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশ আছে যে, কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা করো।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী (সা) এর কাছে এলাম । আমার সাথে আশআরি গোত্রের দুজন লোক ছিল । একজন আমার ডানদিকে অপরজন আমার বামদিকে । আর রাসুল (সা) তখন মিসওয়াক করছিলেন । উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল । তখন তিনি বললেন, হে আবু মুসা ! অথবা বললেন হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স ! রাবি বলেন, আমি বললাম ঐ সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কি আছে তা আমাদের জানায়নি এবং তারা যে চাকরি পার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি যেন তখন তাঁর ঠোটের নিচে মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ করছিলাম যে তা এক কোনে সরে গেছে। তখন তিনি বললেন আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিযুক্ত করব না বা করি না যে নিজেই তা চায় । বরং হে আবু মুসা তুমি ইয়ামানে যাও , এরপর তিনি তার পেছনে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) কে পাঠালেন ।যখন তিনি সেখানে পৌঁছলেন, তখন আবু মুসা (রা) তার জন্য একটি গদি বিছালেন আর বললেন নেমে আসুন । ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শিকলে বাধা ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঐ লোকটি কে ? আবু মুসা (রা) বললেন, সে প্রথমে ইহুদি ছিল এবং মুসলিম হয়েছিল। কিন্তু আবার সে ইহুদি হয়ে গেছে । আবু মুসা (রা) বললেন, বসুন। মুয়াজ (রা) বললেন, না বসব না । যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে । এটাই আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের ফয়সালা । কথাটি তিনি তিনবার বলেন । এরপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল।-ihadis.com

ই,ফাঃ আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩০৫, সহিহ হাদিসঃ

একদিন আবু মুসা (রা) এর নিকট এক মুরতাদ ব্যাক্তিকে হাযির করা হয় । তিনি তাকে প্রায় ২০ দিন যাবত পুনরায় মুসলমান হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরে মুয়াজ (রা) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে দ্বীনের দাওয়াত দেনকিন্তু সে অস্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হয়

মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কি অমানবিক?

কোনো নাস্তিক যদি প্রশ্নটি করে তাহলে আমি জবাবে বলবো নাস্তিকের প্রশ্নটিই শুদ্ধ নয়। কেন? কারণ নাস্তিকরা বিশ্বাস করে প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা রয়েছে। নাস্তিকরা চায় সকলেই মুক্তচিন্তা করুক। প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান যদি ইসলামিক রাষ্ট্রে এমন বিধান করে যে কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে সেই মুসলিম শাসক উক্ত রাষ্ট্রদ্রোহীকে মৃত্যুদণ্ড দিবে তাহলে নাস্তিক্যবিশ্বাস মতে কেন সেই মুসলিম শাসকের কাজটি খারাপ হবে? নাস্তিক্যবিশ্বাস মতে অথবা নাস্তিক্যধর্ম অনুযায়ী সেই মুসলিম তো নিজে স্বাধীনভাবেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিচ্ছেন তাহলে কেন এটি খারাপ হবে? নাস্তিকরা শুধু নাস্তিক্যধর্মে স্বাধীনভাবে বিশ্বাস করতে পারবে মুসলিমরা ইসলামকে স্বাধীনভাবে বিশ্বাস করতে পারবে না? কেন? কোনটি অমানবিক ও কোনটি মানবিক এসব বিধান নাস্তিকরা কিভাবে নির্ধারণ করতে পারে? যদি বলে বিবেক থেকে তাহলে একই যুক্তিতে মুসলিম শাসক যদি নিজের বিবেক থেকে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডকে মানবিক মনে করে তবে কেন সেটা খারাপ হবে?

রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে মুক্তচিন্তার বিশ্বাস চলবে?

ধরুন কোনো এক নাস্তিকের নাম ডারউইন দাস। সে বাংলাদেশে বসবাস করে। সে চিন্তা করলো এই দেশ তার ভালো লাগছে না। সে চিন্তা করলো দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সে নিজের ইচ্ছে মতো দেশের সব কিছু পরিবর্তন করে ফেলবে। সেই নাস্তিক মুক্তচিন্তায় দেশের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলতে লাগলো। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে নানান কথা রসিয়ে রসিয়ে বলতে লাগলো। সেই নাস্তিকের এমন দেশদ্রোহীতার খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকেরা তাকে সংশোধন করার সুযোগ দেয় কিন্তু সেই নাস্তিক বলে আমার মুক্তচিন্তায় আমি কোন দেশকে পছন্দ করবো নাকি করবো না সেটা আমার মুক্তচিন্তায় সিদ্ধান্ত নিব, আপনি বলার কে? যখন দেখা গেলো সে তারপরেও সংশোধন হচ্ছে না পরবর্তীতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় যেভাবে পূর্বে রাজাকারদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। নাস্তিকদের কাছে দেশদ্রোহীতা মানবিক?

মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অমানবিক- নৈতিকতাটি নাস্তিকরা কি দিয়ে নির্ধারণ করেছে? যদি বলে বিবেক দিয়ে তাহলে বিবেক দিয়ে কোনো মুসলিম শাসক যদি এটিকে নৈতিক মনে করে সেটা কি নাস্তিকরা বৈধ হিসেবে মেনে নিবে? যদি নাস্তিকরা বলে রাষ্ট্র নির্ধারণ করবে কার কি শাস্তি হবে তাহলে একইযুক্তিতে তো ইসলামিক রাষ্ট্রেরও সেই অধিকার আছে তারা কাকে কি শাস্তি দিবে,তাই না? যদি নাস্তিকরা বলে সামাজিকভাবে নির্ধারণ হবে কার শাস্তি কি হবে এই একইযুক্তিতে মুসলিম সমাজ যদি নির্ধারণ করে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়াটাই ভালো তাহলে এই সামাজিকনীতি নাস্তিকরা মেনে নিবে?

দেশদ্রোহীতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এখানে কিন্তু কোনো নাস্তিকের এই কথা বলার সুযোগ নেই যে মুক্তচিন্তায় কেউ চাইলে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশদ্রোহীতা করতে পারে। কারণ প্রতিটি দেশেই দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা অন্যায়। এখানে মুক্তচিন্তা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা অবশ্যই রাষ্ট্রকে অশান্তি বানিয়ে ফেলার নামান্তর। তেমনিভাবে ইসলামিক রাষ্ট্রে বসবাস করা কোনো মুসলিম যদি হটাত করে ইসলাম ত্যাগ করে ইসলামিক রাষ্ট্রে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, আল্লাহকে নিয়ে খারাপ কথা বলে, নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে নোংরা নোংরা মিথ্যাচার করে, কার্টুন অংকন করে তাহলে সেই মুরতাদকে ইসলামদ্রোহী অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং ইসলামিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান তাকে মৃত্যুদণ্ড দিবেন যাতে ইসলামিক রাষ্ট্রে কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে না পারে।

ইসলামিক রাষ্ট্রে মুরতাদের উপায় কি?

প্রথমত ইসলামিক রাষ্ট্রে ইসলামদ্রোহীতার মতো বড় অপরাধ না করা। যদি কেউ মুরতাদ হয়েও যায় তাহলে সে অবশ্যই চুপ থাকবে। ইসলাম বিষয় যারা এক্সপার্ট তাদেরকে মার্জিত ভাষায় প্রশ্ন করে ইসলাম বিষয় জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করবে। এরপরেও যদি তার ইসলামকে ভালো না লাগে তাহলে যেসব দেশে নাস্তিকতা চর্চা করা হয়, বাপ ছেলে মুক্তচিন্তায় সমকামীতার বৈধতা দেয়া হয়, মা ছেলে সম্মতিতে যৌনকর্মের সুযোগ দেয়া আছে সেই সব দেশে মুরতাদ অপরাধী লোকটি চলে যেতে পারে। এতে সে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে। কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পয়তারা করার দুঃসাহস করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। যদি দেশত্যাগ করে তাহলে রক্ষা পায়। তেমনি ইসলাম ত্যাগ করে যদি কেউ অন্য নাস্তিক্যধর্মের রাষ্ট্রে চলে যায়, তাহলে সেও হত্যা থেকে বেঁচে যায়।

মুরতাদের শাস্তির বিষয়টি ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত। যেখানে ইসলামী রাষ্ট্র নেই, সেখানে এ অন্যান্য শরয়ী শাস্তি বিধানের মতই মুরতাদের শাস্তিও প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু যেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে। সেখানে ইসলামের অন্যান্য হুদুদের সাথে মুরতাদের শাস্তি বিধানও প্রয়োগ হবে। কোন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণে কাউকে বাধ্য করা হয় না। কিন্তু নাগরিকত্ব গ্রহণ করে, সেই রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে,রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সেখানে বসবাস করার অধিকার তাকে দেয়া হবে না। এরকম কর্ম উক্ত রাষ্ট্রকে অপমান করা। তেমনি ইসলামে প্রবেশে কাউকে বাধ্য করা হয় না। কিন্তু প্রবেশ করে তাকে অপমান করে বের হয়ে গেলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সেনাবাহিনীতে ঢুকতে কাউকে বাধ্য করা হয় না। কিন্তু প্রবেশ করে হঠাৎ করে কেউ বের হতে পারে না। বের হলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

মুরতাদকে সুযোগ দেয়ার বিধানঃ

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৩৫৬, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

একই ঘটনা প্রসঙ্গে আবূ বুরদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ আবূ মুসার নিকট ইসলাম ত্যাগী একটি লোককে নিয়ে আসা হলোতিনি তাকে বিশ দিন অথবা এর কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ইসলামে ফিরে আসার আহবান জানানঅতঃপর মু‘আয (রাঃ) এসেও তাকে আহবান জানালেন; কিন্তু সে অস্বীকার করলোসুতরাং তাকে হত্যা করা হলো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ বুরদাহ হতে ‘আবদুল মালিক ইবনু ‘উমাইরের বর্ণিত হাদীসে ‘ইসলামে ফিরে আসার’ কথা উল্লেখ নেই। আর ইবনু ফুদাইল শাইবানীর সূত্রে সাঈদ ইবনু আবূ বুরদাহ হতে তার পিতা আবূ মুসা সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতেও ‘ইসলামে ফিরে আসার’ জন্য আহবান করার কথা উল্লেখ নেই।-ihadis.com

মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (রহ), পৃষ্ঠা ৬১৪-৬১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,

আবু মুসা আশআরি (রা) এর পক্ষ থেকে এক লোক উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর কাছে এলো । তিনি তাঁর কাছে ওখানকার লোকদের হাল-অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন । সে এ সম্পর্কে তাকে জানালো । উমর (রা) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন , তোমাদের কাছে কি নতুন কোন খবর আছে ? সে বলল হ্যাঁ । এক লোক ইসলাম গ্রহন করার পর মুরতাদ (ধর্ম ত্যাগী) হয়েছে । তিনি বলেন , তোমরা তার সাথে কি ব্যাবহার করেছ ? সে বলল , আমরা তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করেছি । তিনি বলেন, কেন তোমরা তাকে তিন দিন একটি ঘরে বন্দী করে রাখলে না ? প্রতিদিন তাকে খাবার খাওয়াতে । তাকে তওবা করতে বলতে । হয়ত সে তওবা করতো এবং পুনরায় আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসত ? (এরপর তিনি বলেন) হে আল্লাহ! আমি (তাদের) এই নির্দেশ দেইনি । আমি উপস্থিত ছিলাম না এবং আমার কাছে খবর পৌঁছালে তাতে আনন্দিতও হই নি।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৫৩৬ ,হাসান হাদিসঃ 

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ্‌ তার কোন আমলই গ্রহণ করবেন না। যাবত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে।-ihadis.com

সুনানে আন নাসায়ী, হাদিস নং ৪০৬৮, সহিহ হাদিস,

ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহনের পর মুরতাদ হয়ে গেল এবং মুশরিকদের সাথে মিলিত হল। পরে সে লজ্জিত হয়ে হয়ে নিজের কওমকে বলে পাঠালো, তোমরা নবী (সা) কে জিজ্ঞাসা করো, আমার কি তওবা করার সুযোগ আছে ? তার কওমের লোক নবী (সা) কে বললেন। অমুক ব্যাক্তি লজ্জিত হয়েছে। এখন কি তার তওবা কবুল হয়েছে? তখন এই আয়াত নাযিল হয় অর্থঃ ইমান আনার পর ও রাসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্যদানের পর যারা কুফরি করে আল্লাহ্‌ তাদের কিভাবে হিদায়েত দিবেন? (৩:৮৬ -৮৯)-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২২৯০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবু যিনার (রহ) মুহাম্মদ ইবনু হামযা আমর আসলামি (রহ) এর মাধ্যমে তাঁর পিতা হতে থেকে বর্ণিতঃ উমার (সা) তাঁকে সাদকা উশুলকারী নিযুক্ত করে পাঠান । সেখানে এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সাথে ব্যাভিচার করে বসল। তখন হামজা (রহ) কিছু লোককে তার পক্ষ হতে যামিন স্থির করলেন । পরে তিনি উমার (রা) এর নিকট ফিরে আসলেন । উমার (রা) উক্ত লোকটিকে একশত বেত্রাঘাত করলেন এবং লোকদের বিবরণকে সত্য বলে গ্রহণ করলেন । তারপর লোকটিকে তার অজ্ঞতার জন্য (স্ত্রীর দাসীর সাথে যৌন সম্ভোগ করা যে অবৈধ তা সে জানত না) অব্যাহতি দেন। জরির ও আশআস (রহ) মুরতাদ-ধর্মচ্যুত ব্যাক্তিদের সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) কে বলেন, তাদেরকে তওবা করতে বলুন এবং গোত্রের লোকেরা তাদের যামিন(দার) হয়ে গেল। হাম্মাদ (রহ) বলেন,যদি কোন ব্যাক্তি যামিন হবার পর মৃত্যুবরন করে তবে সে দায়মুক্ত থেকে যাবে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের উপর সে দায়িত্ব বর্তাবে)-ihadis.com 

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫৮ , হাসান হাদিস থেকে বর্ণিত,

ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনু আসুস সারহ রাসুলুল্লাহ (সা) এর ওহী লেখকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে কাফিরদের সঙ্গে মিশে যায়। মক্কাহ বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে হত্যার আদেশ দেন। কিন্তু উসমান ইবনে আফফান (রা) তার জন্য নিরাপত্তার জন্য আবেদন পেশ করলে রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন।-ihadis.com

এরকম করলে কেমন হয়?

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৭০০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

বারা ইবনু আযিয (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) হুদায়বিয়ার দিন মুশরিকদের সঙ্গে তিনটি বিষয় সন্ধি করেছিলেন। তা হলঃ মুশরিকরা কেউ মুসলিম হয়ে তার নিকট এলে তিনি তাকে তাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। মুসলিমদের কেউ মুরতাদ হয়ে তাদের নিকট গেলে তারা তাকে ফিরিয়ে দিবেন না।আর তিনি আগামি বছর মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং সেখানে তিন দিন অবস্থান করবেন। কোষাবদ্ধ তরবারি, ধনুক ও এরকম কিছু বেতিত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। ইতোমধ্যে আবু জান্দাল (রা) শিকল পরা অবস্থায় লাফিয়ে লাফিয়ে তার নিকট এলে, তাকে তিনি তাদের নিকট ফিরিয়ে দিলেন।-ihadis.com

এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে যদি এমন করা হয় যে বিভিন্ন দেশে যেখানে অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকে ইসলামিক দেশে পাঠিয়ে দেয়া এবং ইসলামিক রাষ্ট্রে যেসব মুরতাদ হয়ে যায় তাদেরকে সেই সব ইসলামবিরোধী দেশে পাঠিয়ে দেয়া। এটা করলে কেমন হয়? যেহেতু মুরতাদের শাস্তি দিবেন ইসলামিক রাষ্ট্রপ্রধানরা সেহেতু তারা ব্যাপারটি নিয়ে ভেবে চিন্তে দেখবেন।

ইসলামী রাষ্ট্রের কোনো সাধারণ মানুষ কোনো মুরতাদকে শাস্তি দিতে পারবে না। করলে তারই শাস্তি হবে তবে সেটা ইসলামী সরকার নির্ধারণ করবেন।

-বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের ভাষ্য (ই'ফা),খণ্ড ১, ধারা ৭২, পৃষ্ঠা ২৭৮,)

মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেবার কারণঃ

ইসলামিক রাষ্ট্রে মুরতাদ হচ্ছে সমাজে অশান্তি সৃষ্টিকারী। যেমনিভাবে দেশদ্রোহীরা হচ্ছে দেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টিকারী। ইসলামিক রাষ্ট্রে মুসলিমরা নামাজ আদায় করে, যাকাত প্রদান করে, দান করে, ইসলামের দেয়া আইন মেনে চলে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে এখন কেউ যদি ইসলামিক রাষ্ট্রে থেকে মুসলিম থেকে যদি ইসলাম ত্যাগ করে তাহলে সে অবশ্যই বড় অপরাধ করলো এবং তার এই অপরাধের জন্য শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড যদি যে নিজের অপরাধ থেকে বের না হয়ে আসে।

আপনি যদি কোনো দেশে যান সেই দেশের আইনের প্রতি যেমন আপনাকে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে তেমনি ইসলামিক রাষ্ট্রেও ইসলামের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা থাকতে হবে। আপনি যদি কোনো দেশে গিয়ে সেই দেশের নাগরিক হয়ে হুট করে সেই দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আপনাকে যেমন দেশদ্রোহী হিসেবে অপরাধী গণ্য করে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে তেমনি ইসলামিক রাষ্ট্রে আপনি ইসলাম গ্রহণ করে হুট করে ইসলাম ত্যাগ করলে আপনি ইসলামদ্রোহী হিসেবে গণ্য হবেন এবং আপনার শাস্তি অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড।

বুলগুল মারাম, হাদিস নং ১১৯৭, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, তোমাদের সংঘবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ আসে আর সে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইচ্ছা, চেষ্টা করে তবে তোমরা তাকে হত্যা করো।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৫২, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নাই আর আমি আল্লাহর রাসুল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় , যদি না সে তিনটি অপরাধের কোন একটি করে থাকে। ১/ বিবাহিত ব্যাক্তি যিনা করলে । ২/ কেউ কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে হত্যা এবং ৩/সমাজের ঐক্য বিনষ্টকারী মুরতাদ।-ihadis.com

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩০১৮, সহিহ হাদিসঃ 

নবী মুহাম্মদ (সা) উকল নামের এক দল যারা পরে মুরতাদ হয়, এবং এক রাখালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে রাসুল (সা) তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেন । আবু কিলাবা (রা) বলেন তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সা) এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।-ihadis.com

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪০৪৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন অবস্থা ব্যতীত মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়ঃ (১ম) যদি কোন মুসলমান বিবাহ করার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, (২য়) ঐ ব্যক্তি যে কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তাকে হত্যা করা যাবে এবং (৩য়) ঐ ব্যক্তি যে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হল, তাকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা দেশান্তর করা হবে।-ihadis.com

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৭৪৩,সহিহ হাদিস,

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেনঃ তিন অবস্থার যে কোন একটি ব্যতীত কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। প্রথমতঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তখন তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, এবং পরে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং আল্লাহ্‌র রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাকে হত্যা করা হবে বা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা দেশান্তর করা হবে।-ihadis.com 

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯৩০, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

সুয়ারদ ইবনে গাফালা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আলী (রা) বলেছেনঃ আমি যখন তমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা) এর কোন হাদিস বয়ান করি আল্লাহ্‌র শপথ তখন তার উপর মিথ্যা কথা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে নিচে পড়ে যাওয়াটাই আমার কাছে শ্রেয়। কিন্তু আমি যদি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলি তাহলে মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধ একটি কৌশল । আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্প বয়স্কা যুবক, নির্বোধ, তারা সৃষ্টির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে অথচ ইমান তাদের গলা অতিক্রম করবে না । তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায় । তাদেরকে যেখানে পাও তোমরা হত্যা করবে । কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কিয়ামতের দিন প্রতিদান আছে।-ihadis.com

এই হাদিস থেকে বুঝা যায় এমন কিছু মানুষ থাকবে যারা নিজেরা মুসলিম না কিন্তু ইসলামের কথাগুলা ভুলভাবে মানুষদের সাথে বলে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। অনেকেই আছে যারা ইসলাম গ্রহণ না আবার পরে ইচ্ছা করেই মুরতাদ হয়ে যায় যাতে মানুষদের ভ্রান্ত করতে পারে এমন ভয়ংকর মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে রাষ্ট্রীয় ভাবে। আপনি ইসলাম গ্রহণ করবেন এরপরে কিছুদিন মুমিন সেজে হুট করে বলবেন আমি ইসলাম ত্যাগ করলাম। যাতে অন্য সাধারণ মুসলিমরা ইসলাম নিয়ে ভুল বুঝবে এটা তো ইসলামিক রাষ্ট্রে হতে দেয়া যাবে না। আপনি মুরতাদ হয়ে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করবেন যেমন নবী মোহাম্মদ (সা) শিশুকামি ছিলেন, উনারা নাকি ধর্ষক ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ), উনি নাকি নারীলোভী ছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি মিথ্যাকথা বলবেন আর আপনাকে ইসলামের রাষ্ট্রপ্রধান কঠিন শাস্তি দিবেন না এটা তো হতেই পারে না।

সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯১৯ , সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

আবু বাকরাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিন বলেনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ সব থেকে কঠিন কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করা, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ামিথ্যা সাক্ষ্য কথাটি তিনবার বললেন । অথবা বলেছেন মিথ্যা বক্তব্য । কথাটি বারবার বলতে থাকলেন এমন কি আমরা আকাঙ্ক্ষা করতে লাগলাম হায় যদি তিনি নীরব হয়ে যেতেন।-ihadis.com

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৩৫৩, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত, 

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় তিনটি অপরাধের যে কোন একটিতে লিপ্ত না হলেঃ (১) বিবাহিত লোক ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে, (২) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে অথবা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হবে অথবা তাকে দেশ হতে নির্বাসন দেয়া হবে, (৩) আর কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে কিসাসস্বরূপ তাকেও হত্যা কয়া হবে।-ihadis.com

কেউ ইসলামিক দেশে থাকবে । ইসলামিক রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে আবার ইসলাম ত্যাগ করে ইসলামদ্রোহীতা করবে এটা কি হয় বলুন? অবশ্যই না। ইসলামিক রাষ্ট্রে থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে অবশ্যই এটা বড় অপরাধ। এই অপরাধ দমনে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড শাস্তি দেয়াটাই মানবিক।

আল কুরআন, সুরা ইমরান,৩ঃ৭২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

আহলে কিতাবের এক দল এটাই বলে যে, বিশ্বাস স্থাপনকারীদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তারপ্রতি আগে বিশ্বাস স্থাপন করো এবং পরে তা অস্বীকার করো - যেন তারা ফিরে আসে।

এই আয়াতের তাফসীরে, তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠাঃ ৯২, ডঃ মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, বর্ণিত হয়েছে,

মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য যে সব পন্থা তারা বের করেছে তার মধ্যে একটি কথা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, তারা পরামর্শ করে - তোমরা দিনের প্রথমাংশে ইমান আনবে এবং মুসলমানদের সাথে নামায পড়বে এবং শেষাংশে কাফির হয়ে যাবে। তাহলে মূর্খদেরও এ ধারনা হবে যে এরা এ ধর্মের ভিতরে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি পেয়েছে বলেই এটা গ্রহন করার পরেও তা হতে ফিরে গেল, কাজেই তারাও এ ধর্ম ত্যাগ করবে এতে বিস্ময়ের কিছু নাই মোটকথা তাদের এটা একটা কৌশল ছিল যে দুর্বল ঈমানের লোকেরা ইসলাম হতে ফিরে যাবে এই জেনে যে এ বিদ্বান! লোকগুলো যখন ইসলাম গ্রহনের পরেও তা হতে ফিরে গেল তাহলে অবশ্যই এ ধর্মের মধ্যে কিছু দোষত্রুটি রয়েছে।

ইসলামবিরোধীরা এই কুচালাকি করতো যে তারা প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করবে পরবর্তীতে ইসলাম ত্যাগ করে সাধারণ মানুষকে বুঝাবে যে আমরা যেহেতু ইসলাম ত্যাগ করেছি তোমরাও করো অথচ তারা জেনে বুঝে ইসলাম ত্যাগ করেনি বরং মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য ইসলাম ত্যাগের নাটক সাজিয়েছিল। বর্তমানেও ইসলামবিরোধীদেরকে এরকম নাটক সাজাতে দেখা যায়। আমি সেসব বানানো নাটক দেখে মোটেও অবাক হই না।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৩৬৪, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃউকল অথবা উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আসলো। মদিনায় বসবাস তাদের পক্ষে অনুপযোগী হওয়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে উটের পালের নিকট গিয়ে এগুলর পেশাব ও দুধ পান করতে আদেশ দেন। অতএব তারা সেখানে চলে গেলো। পরে তারা সুস্থ হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাখালকে হত্যা করে এবং উটের পালকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। দিনের প্রথমভাগে এ খবর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পৌঁছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পিছনে লোক পাঠান। উঠন্ত বেলায় তাদের ধরে নিয়ে আসা হয়। তাঁর আদেশে তাদের হাত পা কাঁটা হয় এবং লৌহ শলাকা তাদের চোখে বিদ্ধ করে উত্তপ্ত রদে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চাইলেও তা দেয়া হয়নি। আবূ ক্বিলাবাহ বলেন, এরা এমন একটি গোত্রের, যারা চুরি করেছে, ঈমান আনার পর কুফরী করেছে এবং সর্বোপরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।-ihadis.com

সেই রাখাল গুলো কেমন খারাপ ছিল ভাবতে পারেন? প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেছিল এরপরে নবীজি (সা)এর চিকিৎসায় তারা সুস্থ হলে ইসলাম ত্যাগ তো করেই সাথে একটি অসহায় রাখালকে হত্যা করে ফেলে। এরপরেই শাস্তি হিসেবে নবীজি (সা) তাদেরকেও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে দেন। এসব ঘটনাটাকে সামনে রাখলে যে কেউই এটা বলতে বাধ্য হবে যে মুরতাদের মতো খারাপ লোকদেরকে শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই ঠিক আছে এতে কেউ এই অপরাধ করার চিন্তা করবে না।

মুক্তচিন্তায় কতলের নিয়ম নেই?

বেশ কিছু লজ্জিত চেহারার নাস্তিকদেরকে বলতে শোনা যায়,মুক্তচিন্তায় মানুষ কতলের নিয়ম নেই। কথাটি একদম ডাহামিথ্যে। কোনো নাস্তিক যদি এই বিধান বর্ণনা করে যে “মুক্তচিন্তায় কতলের নিয়ম নেই” তাহলে এটি মুক্তচিন্তা হলো? বরং মুক্তচিন্তায় সবাই নিজের মতো করে চিন্তা করার বৈধতা পাবে।

পাঠক গভীরভাবে লক্ষ্য করলেও দেখা যাবে “মুক্তচিন্তা” শব্দটি এমন যে কোনো বাধা-নিষেধ বা নিয়মকানুনের মধ্যে যে চিন্তা সীমাবদ্ধ নয় এমন কিছুই নির্দেশ করে মুক্তচিন্তা। তাহলে কোনো নাস্তিক যদি নিজের মুক্তচিন্তায় এই চিন্তা করে যে সে মুসলিমদেরকে খুন করবে তাহলে কি অন্য নাস্তিকদের এই কথা বলার সুযোগ আছে যে মানুষ খুন করার মুক্তচিন্তা করা যাবে না? অবশ্যই না। কারণ নাস্তিকদের কাছে বিশ্বাস অবিশ্বাস নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কোনো নাস্তিকের কাছে নিজের শিশুকে ধর্ষণ করাটি খারাপ মনে হতেই পারে তারমানে এই না যে বাকি সব নাস্তিকের কাছে সেটি খারাপ হতে বাধ্য-কথাটি ভালো করে মাথায় ঢুকাতে হবে নাস্তিকগোষ্ঠীদের।

একটি কাল্পনিক উদাহরণের কথাই ভাবা যাক। ধরুন কোনো এক নাস্তিকের নাম আসিফ মহিউদ্দিন। সে নিজের কথিত বিবাহিত স্ত্রীকে তাকিলা খাইয়ে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করলেও নিজের কথিত ছেলেকে সে ধর্ষণ করাকে মুক্তচিন্তায় খারাপ হিসেবে মনে করে। হ্যাঁ, নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে সে এভাবে মুক্তচিন্তা করতেই পারে। অন্যদিকে মাতুব্বর আজাদ অভিজিত নামের এক নাস্তিক যে কিনা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করে নিজের সন্তানকে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। সে এও মনে করে শিশুর যেহেতু সম্মতি নেয়া যাবে না সেহেতু তাকে ক্ষতি না করে মুক্তচিন্তায় ধর্ষণ করা দোষের কিছু নয়। একদিন সুযোগ পেয়ে মাতুব্বর নামের নাস্তিকটি আসিফের বাসায় আসিফের যৌনসাথীকে না পেয়ে আসিফের প্রমাণহীন ছেলের সাথে সমকামীতা চর্চা করলো নিজের মুক্তবুদ্ধিতে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক আসিফের কাছে ব্যাপারটি মন্দ লাগলেও মাতুব্বরের মুক্তচিন্তায় শিশু ধর্ষণ অন্যায় নয় কারণ সে শিশুটির ক্ষতি করেনি। নাস্তিক্যধর্মের লীলাখেলা বুঝতে পেরেছেন?

সুতরাং যৌক্তিক বিবেচনায় নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে মুক্তচিন্তায় শিশু ধর্ষণ বৈধ। এমনকি কোনো নাস্তিক চাইলেই নিজের মাকে, নিজের বাবাকে পর্যন্ত ধর্ষণ করার বৈধতার মুক্তবুদ্ধি চর্চা করতে পারে। নাস্তিকরা তাদের নাস্তিক্যধর্মের এই বিশ্বাস সিস্টেম অস্বীকার করতে পারবে না। নাস্তিকদের এই কথা নির্দিষ্ট করে বলার সুযোগই নেই যে মুক্তচিন্তায় মানুষ খুনের বিধান নেই। তাছাড়া বর্তমান চীনের নাস্তিকরা মুসলিম নারীদেরকে যেভাবে মুক্তচিন্তায় গণধর্ষণ করে যাচ্ছে, পুরুষদেরকে গণহত্যা করে যাচ্ছে, শিশুদেরকে নির্যাতন করে যাচ্ছে সেই মুক্তচিন্তার আলাপ আজকে না হয় করলাম না। থাক।

উপসংহারঃ সার্বিক আলোচনা থেকে যৌক্তিকভাবেই এটা বলা যায় যে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এটা অমানবিক নয়। ইসলামিক রাষ্ট্রে এমন বিধান থাকাটাই স্বাভাবিক এমনকি এই বিধান কল্যাণকর। কেউ মুরতাদ হয়ে ইসলাম নিয়ে গালাগালি করবে, নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বানিয়ে বলবে, কুরআনের মিথ্যা ব্যাখ্যা বলবে, আল্লাহকে নিয়ে নিকৃষ্ট প্রতারণা করবে এটা তো ইসলামিক রাষ্ট্রে মেনে নেয়া হবে না। ইসলামিক রাষ্ট্রেই না শুধু কোনো দেশই চাইবে কেউ দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশদ্রোহী হয়ে নিজের দেশের বিরুদ্ধে, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিক। দেশদ্রোহীরা যেমন অপরাধী তেমনি ইসলামিক রাষ্ট্রে থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটাও বড় অপরাধ।

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post