কুরবানীর ঈদ অমানবিক?

বিষয়ঃ কুরবানীর ঈদ অমানবিক?

লিখেছেনঃ এমডি আলী

========================================

ভূমিকাঃ সবাইকে কুরবানীর ঈদের শুভেচ্ছা। ধর্ম যার যার কুরবানীর গোস্ত সবার-এই শ্লোগানটি তাদেরকে দিতে দেখা যায় না যারা “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” ফতোয়া দিয়ে বেড়ায়। যারা বছর মাংস, বিফ কাবাব, বিফ তেহারি,ছাগলের ভুনা, কালা ভুনা, কাচ্ছি বিরিয়ানি আনন্দের সাথে মজা করে খাওয়া মুক্তমনারা যখন মুসলিমদের কুরবানীর ঈদ আসলে গরুপ্রেম, ছাগল প্রেম দেখায় তখন আসলে হাসি আটকিয়ে রাখা যায় না। মুক্তমনা নাস্তিকরা মুসলিমদের কুরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু হাস্যকর প্রশ্ন করে থাকে। সেগুলোর যৌক্তিক জবাব নিয়েই আজকে আমার লেখাটি।

গরু ছাগল প্রেমীদের প্রশ্নের জবাবঃ

নাস্তিক মুক্তমনারা প্রশ্ন করে, 

দয়ালু স্রষ্টা কেন এমন একটি সিস্টেম বানালেন যেখানে এক প্রানী অন্য প্রানীকে নির্মমভাবে মৃত্যুযন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করতে হয় নিজের টিকে থাকার জন্যে। এরকম স্রষ্টা কী আসলেই ভালো?

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রথমে জবাব দেই এরপরে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে জবাব দিব। মন দিয়ে বুঝে পড়ুন। ইসলামের দৃষ্টিতে উক্ত প্রশ্নের জবাব হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে তাই উনি এরকম সিস্টেম বানিয়েছেন। মানুষের জন্য নৈতিকতা আল্লাহই সৃষ্টি করে দিবেন এবং এর জন্য উনাকে জিজ্ঞাসা করার অধিকার কারও নেই কারণ উনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা। আমরা সকলেই উনার বান্দা।

আল কুরআন, সুরা আম্বিয়া ২১:২৩ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

আল্লাহ যা করেন সে বিষয়ে তিনি কারোর নিকট জিজ্ঞাসিত, জবাবদিহি করতে বাধ্য হন না বরং মানুষ যা করে সেটা নিয়ে জিজ্ঞাসিত করা হবে।

আল কুরআন, সুরা বুরুজ ৮৫:১৬ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

যা তিনি চান তা-ই তিনি করেন, করতে পারেন। 

আল কুরআন, সুরা কাসাস ২৮ :৮৮ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

নির্দেশ তিনিই দিতে পারেন, এবং তাঁরই নিকট তোমরা সকলে প্রত্যাবর্তিত হবে।

আল কুরআন, আরাফ ৭ :৫৪ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

সাবধান সৃষ্টি যার, নির্দেশ ও সার্বভৌমত্ব তাঁর’।

আল কুরআন, সুরা কাসাস ২৮:৬৮ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

আল্লাহর সৃষ্টি ও বিধান জারীতে কোনো অংশী নেই : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনার পালন কর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের কোন ক্ষমতা নেই।

আল্লাহ যে এরকম সিস্টেম সৃষ্টি করেছেন এটি কি খারাপ? যৌক্তিক হচ্ছে অবশ্যই না। কেননা এই সিস্টেমটি পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখে। বিজ্ঞানে খাদ্যজাল-খাদ্যশৃঙ্খল নিয়ে জানা লোক কখনো এরকম ফালতু প্রশ্ন করতে পারে না। একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বলি।

ধরুন একটি গরীব পরিবার। তাদের গরু আছে ৫ টি, দুটি গাভী আছে, একটি ষাঁড় আছে। সাথে আবার বাছুরও আছে দুইটি। এই পরিবারে যে দুটি গাভী আছে, তারা এই বছর দুটি করে বাচ্চা দিল। তাহলে তাদের মত গরুর সংখ্যা হবে ৯ টি। ধরুন তারা পশু হত্যায় বিশ্বাসী না। তাই তারা এই গরুগুলোকে বিক্রিও করে না কারণ তারা জানে যে বিক্রি হলে এই গরু গুলো কোথাও না কোথাও কুরবানী হবেই। আরও ধরুন এরপরের বছর আরও দুটি করে বাচ্চা দিল। তখন মত গরু ১৩ টি। এরপরের বছর দেখা গেল বাছুর গুলোর মধ্যে থেকে দুটি গাভী হয়ে উঠল , যারা বাচ্চা দিবে। এখন মত গাভীর সংখ্যা ৪ টি। ধরুন এই ৪ টি গাভীই এরপরের বছর আরও দুটি করে বাচ্চা দিল তাহলে , সে বছর ঐ পরিবারের মোট গরুর সংখ্যা হবে ১৯ টি। এখন এতগুলো গরু রাখার জন্য জায়গা, গরুকে খাওয়ানোর সামর্থ্য, পর্যাপ্ত ভুসি, খৈল, ঘাস তো একটি গরীব পরিবারের কাছে থাকে না, তাই না? তাহলে অটোমেটিক ঐ পরিবারের গরু গুলোকে বিক্রি করে দিতে হবে। এতে গরীব পরিবার ভালো অর্থ কামাতে পারবে আর যারা কিনবে তারা তো গরুকে গুদামে ভরবে না, তারা গরুগুলোকে জবাই করে মাংস বিক্রি করবে, গরুর মাংস আমিষের চাহিদা পূরণ করবে, আর চামড়াগুলো শিল্পের কাজে লাগবে। এটা সুন্দর একটি প্রাকৃতিক ব্যাল্যান্স। তাহলে কিন্তু প্রকৃতির ব্যাল্যান্স ঠিক রাখার জন্য পশুগুলোকে জবাই করতে হচ্ছে। সেটি এমনেই হক অথবা কুরবানী করে। তবে মুসলিমদের উৎসব, এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন , এখানে নাচগান নাই, আড্ডা-মাস্তি নেই, ড্রিংকস নাই, মিছিল সভাযাত্রা নাই। আছে ত্যাগ আর তাকওয়ার পরীক্ষা। আছে অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা তদবির। সমাজ থেকে শ্রেণী বৈষম্য দূর করতে, ধনী গরীবের সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এই রকম ভালো উৎসবের বিকল্প হয় না। সুতরাং যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিকভাবেই কুরবানীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যায় না।

এখন আসি নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে উক্ত প্রশ্নের জবাবে। উপরের প্রশ্নটি পাঠ করলে, প্রশ্নের মধ্যে যে দাবি ফুটে উঠে সেটা হলো, দয়ালু আল্লাহ এমন সিস্টেম বানাতে পারেন না, যে এক প্রানী আরেক প্রানীকে হত্যা করে আনন্দ উৎসব করবে তাই আল্লাহ ভালো না। পাঠক মনোযোগ দিন। আমরা জানি নাস্তিকতা অর্থ "আল্লাহর অস্তিত্ব নেই" এমন বিশ্বাস করা। তাহলে নাস্তিকদের দৃষ্টিতে যেই "আল্লাহর অস্তিত্ব নেই" সেই "আল্লাহ ভালো না" বিশ্বাস করা অবশ্যই অযৌক্তিক কারণ কখনোই কোনো নাস্তিক বিশ্বাস করতে পারে না আল্লাহ খারাপ। যদি বিশ্বাস করে তাহলে সে নাস্তিক থাকতেই পারবে না। আর আল্লাহ কি নৈতিকতা দিবেন সেটা নাস্তিকরা কেন ঠিক করে দেবে? কারণ নাস্তিকরা তো আল্লাহর অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না। বুঝতে পেরেছেন? অনেক মূর্খ নাস্তিককে বলতে দেখা যায় আমি যদি আল্লাহ হতাম "এটা করতাম" "সেটা করতাম" "ওইটা পড়তাম" আসলে বিনোদনের জাগা যে ফুরাইনি সেটা এই পশ্চাদগামীদের কথা শুনলেই বুঝা যায়। মূর্খ না হলে যে নাস্তিক হওয়া যায় না সেটা নাস্তিকদের অযৌক্তিক ও মূর্খতাময় প্রশ্ন ও অভিযোগ থেকেই বুঝা যায়।

এরপরে ইসলামবিদ্বেষীরা প্রশ্ন করে,

গরু জবাই করতে আপত্তি নেই কিন্তু তা স্রষ্টার নামে কেন করতে হবে?

ইসলামের আলোকে উত্তর হচ্ছে আল্লাহ তাঁর নাম নিয়েই কুরবানী করতে বলেছে তাই মুসলিমরা এটা করে। প্রশ্নকর্তার কাছে যদি গরু জবাই করতে আপত্তি না থাকে তারমানে এটা সে বৈধ মনে করছে তাহলে যেই কাজ করা বৈধ সেই কাজ করাতে আনন্দ কেন করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। তাছাড়া আমরা মুসলিমরা স্বাধীনভাবেই কুরবানী করে থাকি এবং আমাদের এসব ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কেন নাস্তিকগোষ্ঠী? আপনারা নাকি মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারের পক্ষে? ব্যক্তিস্বাধীনতার যুক্তিতে আমি মুসলিমের কথাই ধরুন। আমার টাকায় আমি গরু কিনবো, ছাগল কিনবো এবং সেসব কুরবানী করে গরীবদেরকে দান করবো তারা এসব প্রাণীর মাংস খেয়ে আনন্দ পাবে,তাদের পুষ্টি হবে এখন আপনাকে প্রশ্ন করছি আপনি যদি ব্যক্তিস্বাধীনতায় আসলেই বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে আমার এই কর্মে আপনার সমস্যা কোথায়? যেই নাস্তিক গরুপ্রেম দেখায়, ছাগলপ্রেম দেখায় সেই মূর্খ নাস্তিকটি কি জীবনে এসব প্রাণীর মাংস খায়নি? চেক করে দেখুন তারা ঠিকই মজা করে বিফ তেহারি খায়, কাচ্চি খায়। পশু কুরবানী করাতে যেহেতু খারাপ কিছু নেই সেহেতু আল্লাহর নাম নিয়ে কুরবানী করলেও সেটা খারাপ নয়। কথা একদম পরিস্কার।

এরপরে ইসলামবিরোধী মূর্খরা প্রশ্ন করে,

গরু কুরবানী দেয়াতে আমাদের নাস্তিকদের আপত্তি নাই কিন্তু একটা প্রানীকে মেরে আনন্দ উৎসব করা অমানবিকতা হবে না কেন?

ইসলামের আলোকে জবাব হচ্ছে কুরবানী করে গরুর গোস্ত গরিব, অসহায়দের উপহার দিয়ে তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে উৎসব পালন করা অবশ্যই অমানবিকতা নয় বরং মানবিক। তাছাড়া যেই প্রাণী কুরবানী করাতে আপনাদের আপত্তি নেই তারমানে সেই প্রাণী কুরবানী করা বৈধ আর বৈধ জিনিস নিয়ে আনন্দ করা, উৎসব করা মোটেও অমানবিক কিছু নয় বরং যৌক্তিকভাবেই মানবিক। 

নাস্তিক প্রশ্নকর্তার যুক্তিটি পাঠক প্রথমে পড়ুন। প্রশ্নকর্তার যুক্তিটি বুঝুন "হত্যা করা যাবে কিন্তু আনন্দ করা যাবে না" কিন্তু আসলেই কি নাস্তিকদের এই বিধান যৌক্তিক? অথবা কল্যাণকর? পাঠক আসুন আমরা প্রশ্নের পাথরে, বুদ্ধির নখে শান দিয়ে বিশুদ্ধ যুক্তি প্রয়োগ করে দেখবো নাস্তিকদের বানানো বিধানটি অথবা অভিযোগটি আসলেই গ্রহণযোগ্য কিনা।

যেই জিনিস হত্যা করা বৈধ সেই জিনিস হত্যা করে আনন্দ করাটাও বৈধ হবে। আর যেই জিনিস হত্যা করা অবৈধ সেই জিনিস হত্যা করা এমনকি সেই জিনিস হত্যা করে আনন্দ করাটিও অবৈধ। এই সহজ কথাটি আমরা স্বাভাবিক মানুষরা বুঝতে পারলেও জন্তু থেকে বিবর্তিত মগজধারীরা বুঝতে পারে না। আসুন কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা যাক। পাঠক প্রশ্ন গুলো পড়লেই আপনি ধরতে পারবেন নাস্তিকরা কেন ও কিভাবে গণ্ডমূর্খ হয়ে থাকে। আরও বুঝতে পারবেন উপরের নাস্তিক প্রশ্নকর্তার যুক্তিতে কেমন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথার উপস্থিতি এমনকি মারাত্মক সমস্যা রয়েছে।

কৃষকরা ধান লাগায়। ধানে অনেক পোকামাকড় থাকে যা কৃষকরা বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে হত্যা করে। একটা সময়ে যখন কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গোলাভরা ধান হয় তখন কৃষকরা আনন্দ উৎসব করে। ধানের মধ্যে পোকামাকড়দের কেমিক্যাল দিয়ে হত্যা করে কৃষকদের আনন্দ উৎসব করা কি অমানবিক হবে? পোকামাকড়দের প্রাণ নেই? তারা কষ্ট পায় না? পোকামাকড়দের এই কষ্টতে নাস্তিকদের তো কখনো আন্দোলন করতে দেখলাম না কৃষকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখলাম না? এখন কি নাস্তিকরা বলবে পোকামাকড় মারা যাবে কিন্তু আনন্দ উৎসব করা যাবে না? আবার ধরুন একজন দেশপ্রেমি আর্মি অফিসার তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিয়ে কোন এক জাগায় যাচ্ছে। হঠাৎ চীনের সন্ত্রাসী নাস্তিকরা সেই আর্মি অফিসারদের উপর আক্রমণ শুরু করলো। সেই অফিসার তার বৃদ্ধ বাবা মাকে বাঁচানোর জন্য পাল্টা নাস্তিক সন্ত্রাসীদেরকে আক্রমণ করল এবং নাস্তিক সন্ত্রাসী জঙ্গিদেরকে দমন করলো এবং তার বৃদ্ধ বাবা-মা সহ সবাই রক্ষা পেল। এখন দেশপ্রেমী আর্মি অফিসারের বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের সন্তানকে নিয়ে প্রাউড ফিল করছে অথবা আনন্দ উৎসব করছে,এই ভেবে যে তাদের যোগ্য সন্তান নাস্তিক সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করেছে। এখন এই প্রাউড ফিল অথবা আনন্দ করা কি অমানবিক?

"গরু হত্যা করা যাবে কিন্তু আনন্দ-উৎসব পালন করা যাবে না" এই কথাটা যে কতটা হাস্যকর এবং অযৌক্তিক সেটা নিচের প্রশ্নগুলো পড়লেও স্পষ্ট হয়ে যাবেন। ১৯৭১- এ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের হত্যা করে দেশকে স্বাধীন করে আনন্দ-উৎসব করেছিল এখন এই আনন্দ উৎসব করা নাস্তিকদের দৃষ্টিতে অমানবিকতা হবে না কেন,শুধু গোস্ত খায় নাই বলে? পয়েলা বৈশাখে অবলা,নিরীহ,নির্দোষ ইলিশ মাছদের  হত্যা করে বাংলা নববর্ষ পালন করে আনন্দ উৎসব করা হয় এটা নাস্তিকদের কাছে অমানবিক হবে না কেন? এই মাছ হত্যার বিরুদ্ধে নাস্তিকরা কি কি আন্দোলন করেছেন? থার্টি ফার্স্ট নাইটে মুরগীদের ভয়ংকর ভাবে পুরিয়ে চাবিয়ে চাবিয়ে গিলে আনন্দ উৎসব করা হয় সব সময়। এটা অমানবিকতা হবে না কেন? নাস্তিকদের এখানে চুপ থাকতেই বেশি দেখা যায় কেন? নাস্তিকদের প্রতিবাদ নেই কেন? নাস্তিকদের যুক্তি হলো কোনো কিছুকে হত্যা করে আনন্দ উৎসব অথবা মজা করা যাবে না। প্রশ্ন হলো নাস্তিকদের কি গোসল করতে মজা লাগে? উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয় তাহলে তারা তাদের দেহের প্রাণশীল জীবাণুদের হত্যা করছে যা অমানবিক আর যদি উত্তর 'না' হয় তাহলে নাস্তিকরা গোসল করে কেন? নাস্তিকদের যুক্তি তর্কের খাতিরে ধরে নিলে মাথায় শ্যাম্পু করাও অমানবিক হবে কারণ মাথার চুলে উকুনরা বসবাস করে তাদের ঘরবাড়ি শ্যাম্পু করে উড়িয়ে দেওয়া এবং শান্তি ভোগ করাও নাস্তিকদের যুক্তি অনুযায়ী অমানবিকতা হবে না কেন? শ্যামপুর বিরুদ্ধে, ফ্রিজের বিরুদ্ধে (গোস্ত রাখা হয়) গোসলের বিরুদ্ধে নাস্তিকরা কি কি আন্দোলন করেছে জানতে চাই? নাস্তিকদের প্রতিবাদের আচরণ কেমন এ ক্ষেত্রে?

মৎস্য চাষ করে কোটি কোটি মাছ চাষ করা হয় এবং সেগুলোকে বিক্রি করা হয় আর মানুষ বিভিন্ন মাছদের হত্যা করে খায় এবং মৎস্য চাষীরা মাছ বিক্রি করে আনন্দ পায় বেশি বিক্রি হলে তো উৎসবই করে। নাস্তিকদের উচিত মৎস্য চাষীদের মৎস্য চাষ বন্ধ করতে আন্দোলন করা কিন্তু তা করা হয় না কেন? হলিউড বলিউডের মুভি যেমন জুরাসি পার্ক, অ্যানাকোন্ডা বা এক কথায় যতো প্রানী হত্যার মুভি বানানো হয়েছে সেসবের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের আন্দোলন নেই কেন? নায়ক ভিলেনকে গুলি করে হত্যা করে নায়িকাকে নিয়ে আনন্দ উৎসব করছে, এসব মুভির বিরুদ্ধে নাস্তিকদের আন্দোলন কবে হয়েছে? মুভিতে হত্যা করে,আনন্দ উৎসব করা দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা পরিচালকরা কামিয়ে নিচ্ছে অথচ পশ্চাদগামী নাস্তিকরা এখানে চুপ, কেন? ইঁদুর,তেলাপোকা মারার ঔষধ বানিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে আনন্দে উৎসবে জীবন অতিবাহিত করছে কোম্পানির মালিকরা,অথচ নাস্তিকদের কোন আন্দোলন নেই? নাস্তিকদের উচিত তেলাপোকা ইঁদুর এদের ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষ নিয়ে আন্দোলন করা প্রতিবাদ করা।

কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল অথচ আজ পর্যন্ত কেউই কাঁঠালগাছের অনুমতি নিল না। অথচ নাস্তিক্যধর্মে সম্মতি নেওয়া আবশ্যক। উভয়ের সম্মতি থাকলে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে। আমরা জানি গাছেরও প্রাণ আছে সুতরাং গাছ থেকে তার ফল কে ছিনিয়ে নিয়ে বোবা প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে তার ফল চাবিয়ে খেয়ে আনন্দ উৎসব করা অমানবিকতা হবে না কেন, নাস্তিকরা কাঁঠাল গাছের পক্ষে কি কি আন্দোলন করেছে? এভাবে আম, জাম, লিচু গাছের ক্ষেত্রেও নাস্তিকরা মিলিয়ে দেখতে পারেন। গাছের কষ্টের অনুভূতি রয়েছে। গাছকে ভয়ংকর রূপে কুপিয়ে কুপিয়ে কেটেই তো ফার্নিচার বানানো হয়েছে। নাস্তিকরাও চেয়ার টেবিলে বসে মোবাইলে ফেসবুক চালিয়ে ইসলামকে গালাগালি করে আনন্দ পায়। অনেক বড় বড় অনুষ্ঠানে এই কাঠের ফার্নিচার ব্যবহার করা হয় এবং মানুষরা সেই অনুষ্ঠানে আনন্দ-উৎসব করে যা নাস্তিকদের যুক্তিতে অমানবিক তাই প্রশ্ন হলো ফার্নিচারে বিরুদ্ধে কি কি আন্দোলন করেছে? নাকি চেয়ার, টেবিল, সোফায় অথবা কাঠের তৈরি খাটে বসেই নাস্তিকরা আমার এই লেখা পড়ছেন। যদি পড়ে থাকেন অবশ্যই সে সব ফার্নিচার কে ছুড়ে ফেলে দিন এখনোই। কি পারবেন তো?

এই যে বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসের প্রাণ হত্যা করার জন্য কত বিষাক্ত বিষ আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে। ধরুন সফল হয়ে গেল। পুরো পৃথিবীর মানুষ কত আনন্দিত হবে জানেন? এই যে করোনা ভাইরাসের প্রাণ বিষাক্ত বিষ দিয়ে হত্যা করার পর পুরো দুনিয়ার মানুষ অনেক আনন্দ উৎসব করবে খুশিতে তখন কি মূর্খ নাস্তিকরা বলবে যে করোনা ভাইরাসের প্রান হত্যা করা ভাল কিন্তু তাই বলে আনন্দ উৎসব করা অমানবিক? এই আনন্দ উৎসব বন্ধ করার জন্য নাস্তিকরা কি পদক্ষেপ নিবে? পড়াশোনা না করা অনেকে মনে করে, গরুকে হত্যা করার জন্যই শুধু মুসলিমরা কুরবানীর ঈদে আনন্দ-উৎসব করে যা ভুল। কেননা আমরা মুসলিমরা শুধুমাত্র গরুকে হত্যা করার কারণেই উৎসব-আনন্দ করিনা বরং আল্লাহর দেওয়া আনুগত্য স্বীকার করে, তাকওয়ার সাথে গরুর গোস্ত গরিব দুঃখী মানুষদেরকে উপহার দিয়ে তাদের আনন্দে নিজেরা আনন্দিত হই।

আল কুরআন, সুরা হজ ২২:২৮ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও

আল কুরআন, সুরা হজ ২২:৩৭ আয়াত থেকে বর্ণিত, 

এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। 

আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী: ১০২৩৮, সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার হাতে কুরবানীর পশু পাঠান এবং নির্দেশ দেন, কুরবানীর দিন একে যবোহ করবে, নিজে খাবে, মিসকীনদেরকে দেবে এবং আমার ভাইয়ের ঘরে পাঠাবে। বিস্তারিত তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া,সুরা হজের আয়াত ২৮ এর ব্যাখ্যা দেখুন।

গরীব শিশুদের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কখনো, তারা কত খুশি নিয়ে কুরবানির ঈদে গরুর গোস্ত নিতে আসে এবং কত আনন্দ পায়? তাদের এই খুশিতে আমাদের কুরবানীর ঈদ সার্থক। কারণ তারা খুশি হলে আল্লাহও আমাদের উপর খুশি হবেন। আমি নিজে দেখেছি আমরা যখন গরুর মাংস গরীবদেরকে দিতে থাকি তখন ছোট ছোট শিশুরা হাসিখুশি হয়ে লাইনে দাড়িয়ে থাকে পিতামাতার সাথে। দেখতেও কত সুন্দর লাগে। নাস্তিকগোষ্ঠীদের চোখে আমাদের মুসলিমদের এই মানবতার সেবা করা কাজ গুলো দেখে না অথবা দেখতেও চায় না এই কারণে তারা নানা মিথ্যাচার করে নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রেখে যাচ্ছে।

গরুর মাংস খাওয়ার বৈজ্ঞানিক উপকারিতাঃ

“BBC NEWS বাংলা” পত্রিকায় ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখে “গরুর মাংস: কার জন্য কতোটুকু খাওয়া নিরাপদ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে বর্ণিত হয়েছে (১),

অনেকেরই ধারণা গরুর মাংস খেলেই বুঝি স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। গরুর মাংসে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকায় অনেকেই সেটি খাওয়া এড়িয়ে চলেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে, তেমনি এই মাংস অনেক উপকারও করে থাকেএবং গরুর মাংসে যতো পুষ্টিগুণ আছে সেগুলো অন্য কোন খাবার থেকে পাওয়া কঠিন। এখন এই মাংস আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না উপকারী, সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কতোটা নিয়ম মেনে, কি পরিমাণে খাচ্ছেন। পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, গরুর মাংসে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬, এবং বি১২। আর এই পুষ্টিকর উপাদানগুলো -রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পেশি, দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। ত্বক/চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অতিরিক্ত আলসেমি/ ক্লান্তি বা শরীরের অসাড়তা দূর করে কর্মোদ্যম রাখে।ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।খাবার থেকে দেহে শক্তি যোগান দেয়।স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।অবসাদ/ মানসিক বিভ্রান্তি/ হতাশা দূর করে। গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। মগজ ও কলিজায়, প্রোটিন থাকলেও সেটার পরিমান কম, বরং এর বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে কোলেস্টেরল। (এর আগে মগজ ও কলিজাকে ভুলক্রমে প্রোটিনের উৎস বলা হয়েছিল।) পুষ্টিবিদ চৌধুরী তাসনিম হাসিন জানিয়েছেন প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা নির্ভর করে আপনার ওজনের ওপর। ধরলাম একজন মানুষের আদর্শ ওজন ৫০ কেজি। তিনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে প্রতিদিন তার ৫০ গ্রামের মতো প্রোটিন প্রয়োজন, তবে যদি তার কিডনি জটিলতা থাকে তাহলে তিনি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। মানে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক। আবার মেয়েদের মাসিক চলাকালীন কিংবা গর্ভবতী অবস্থায় এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আদর্শ ওজন ৫০ কেজি হলে তারা ১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে পারবেন। যাদের ওজন আদর্শ ওজনের চাইতে কম তাদেরও বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন।তবে কারোই প্রতিদিন ৭০ গ্রামের বেশি এবং সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি প্রোটিন খাওয়া উচিত না বলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জানিয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফ্যাট থাকে। তার মানে প্রতিদিনের এই প্রোটিনের চাহিদা পূরণে কি আপনি ২৭০ গ্রাম মাংস খাবেন? একদমই না। কেননা দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা একটি খাবার নয় বরং বিভিন্ন খাবার ও পানীয় দিয়ে আমরা পূরণ করে থাকি।

 

সুতরাং পরিমাণ মত গরুর মাংস খাওয়াতে কোনো ক্ষতি নেই। অন্যদিকে পরিমাণ মত ছাগলের মাংস খাওয়ার মধ্যে যা যা কল্যাণ আছে সেটা এখানে আলাদা করে বলার প্রয়োজন মনে করছি না। এখন দেখাই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা হয় এমন দেশে পশু হত্যার মুক্তচিন্তা সমূহ। ২০২১ সালে সবথেকে বেশি ডলার মূল্যের গরুর মাংস রপ্তানি করেছে এমন কিছু দেশের নাম তুলে ধরছি (২)। 

 

United States: US$9.3 billion (15.4% of total beef exports). Brazil: $8 billion (13.3%). Australia: $7.2 billion (11.9%). Canada: $3.2 billion (5.2%).Netherlands: $3.1 billion (5.2%). India: $3 billion (5%) .New Zealand: $2.85 billion (4.7%). Argentina: $2.76 billion (4.6%). Ireland: $2.5 billion (4.2%). Uruguay: $2.2 billion (3.6%). Mexico: $2.1 billion (3.4%).Poland: $1.9 billion (3.1%). Paraguay: $1.6 billion (2.6%).Germany: $1.4 billion (2.3%). France: $1.2 billion (2%).

 

উপরের একটিও দেশ মুমিনদের দেশ নয়। যারা বেশি ধর্মহীনতা চর্চা করে, মুক্তচিন্তার চর্চা করে, যারা কুরআনকে মানে না, নবীজি (সা)কে সত্য নবী হিসেবে স্বীকার করে না তাদের দেশেই গরু হত্যা করে মাংস রপ্তানির এই চেহারা। শুধু কি তাই? আরও আছে (৩)।

 

According to a report from the United States Department of Agriculture (USDA), over 160 million cattle, calves, hogs, sheep, and lambs were killed for food in the United States in 2019.A separate USDA report shows over 9 billion chickens, turkeys, and ducks were slaughtered in the U.S. during the same year.

 

ভাবানুবাদঃ ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৬০ মিলিয়নেরও বেশি গবাদি পশু, বাছুর, শূকর, ভেড়া এবং মেষশাবককে খাদ্যের জন্য হত্যা করা হয়েছিল। একটি পৃথক USDA রিপোর্ট দেখায় যে একই বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯ বিলিয়ন মুরগি, টার্কি এবং হাঁস জবাই করা হয়েছিল।


মুক্তমনাদের থাইল্যান্ড এবং চীনে কি কি প্রাণী খুন করে আনন্দের সাথে মজা করে খাওয়া হয় জানেন? বাংলার মূর্খ নাস্তিকরা কখনো চাইবে না আপনারা এসব সত্য জানুক। আমি সরাসরি ভিডিওর লিংক দিয়ে দিচ্ছি আপনারা চাইলে দেখে নিতে পারেন(৪)।

 

Snake soup,China, চাইনার মুক্তমনারা সাপের চামড়া জ্বালিয়ে এই সুপ তৈরি করে থাকে। গরম গরম সুপের সাথে সাপের মাংস ভিজিয়ে খেয়ে থাকে সেই মুক্তমনারা। এমনকি সাপের মাংস খাওয়ার জন্য চীনে সাপ চাষ পর্যন্ত করা হয়ে থাকে। এরপরে আছে, Rod duan,Thailand,বাশের ভিতির জন্ম নেয়া এক ধারালো পোকার খাবার। পোকাটিকে ভেজে খাওয়া হয়। ষ্ট্রীট ফুড দোকান গুলোতে এই খাবার গুলো পাওয়া যায়। Pigs nose,China,শূকরের নাক চাইনাতে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। শুকরকে খুন করবার পর চামড়া আলাদা করে শূকরের নাক রান্না করা হয়। এই খাবার নাকি খুবই মজাদার এমনটি দাবি করে চাইনার মানুষরা। Mok huak,Thailand,  বেঙাচি টাইপ এক খাবার যা থাইল্যান্ডের লোকদের কাছে নাকি জনপ্রিয়। এই বেঙাচি গুলোকে কাচাই খাওয়া হয়। খাবারের সময় তাদের নাড়াচাড়া টের পাওয়া যায়। Crap scorpion fry,China, এই পোকাকেও আগুনে তেলে জ্বালিয়ে মজা করে খায় সেখানকার মানুষরা। Bird fry,China, এটি বন্যপাখি অথবা কবুতর জাতিও পাখিকে হত্যা করে খেয়ে থাকে। 

 

আরও কত প্রকারের প্রাণী যে মুক্তচিন্তায় গণহত্যা করা হয় সেই আলাপ আজকে আর করলাম না থাক। ইসলামবিরোধীদেরকে দেখবেন না সেসব প্রাণীদের নিয়ে মায়াকান্না দেখাতে কারণ সেখানে যে ইসলাম নেই। তাদের অন্তর জ্বালা হচ্ছে ইসলাম নিয়ে। মুসলিমদের নিয়ে। কুরআন নিয়ে। নবীজি মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে। এসব প্রমাণ আপনাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তচিন্তায় যে প্রাণী হত্যা করে খাওয়া বৈধ সেটা বুঝিয়ে দেয়া। শুধুমাত্র ইসলামের বিরুদ্ধে বান্দরের মতো ফালাফালি করাই মুক্তচিন্তা নয়।

গরীবের আনন্দ ইসলামবিরোধীরা পছন্দ করে না কেন?

মূর্খ নাস্তিকগোষ্ঠীরা আসলে ইসলামের আদর্শ দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে যায় কারণ তাদের নাস্তিক্যধর্মে তো কোনো আদর্শ নেই। নিজের নাস্তিক মায়ের সাথে সঙ্গম করা বৈধ এমন ফতোয়া দানকারী নাস্তিকদেরও দেখেছি ফেসবুকে ইলিশ মাছের ছবি হেসে হেসে পোস্ট করতে। এই ইলিশ মাছকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নিজেরা মজা করে ঠিকই খেয়েছে তখন সেই নাস্তিকদের মায়া কান্না কই জানি গায়েব হয়ে যায়। আবার মুসলিমদের কুরবানীর ঈদে যেই গরু-ছাগল প্রেম আবার জেগে উঠে।

মুমিনরা আল্লাহর সৃষ্টি করা খাবার খায় ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী কিন্তু সম্মতি থাকলে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে এরকম কথাই নাস্তিকরা সাধারণ মানুষদের গেলাতে চায় তাহলে শাক সবজি, মাছ, ইত্যাদি যত প্রাণ ওয়ালাদের খাবার নাস্তিকরা চাবিয়ে খায়, সেসব গাছের থেকে একবারও সম্মতি নেয়া হয়েছে কি? হে কলা গাছ তোমার কলা আমি নাস্তিক খাবো তুমি সম্মতি দেউ? হে আপেল গাছ তোমার আপেল আমরা নাস্তিকরা খাবো তুমি সম্মতি দেউ? হে গরু সারাজীবন KFC তে তোমার গোস্ত খাই কিন্তু কুরবানী আইলে আমরা তোমার পক্ষে মায়া কান্না দেখাই তাই তোমার দুধ আমাদের খেতে দাউ? নাস্তিকদের যুক্তি অনুযায়ী এসব নাস্তিকদেরকেই পালন করা উচিত। কিন্তু এখানে সকল পশ্চাদগামী নাস্তিকরাই নিরব কেন? নাস্তিকরা এখানে বলতে পারে তারা তো মানুষের মতো সম্মতি দিতে পারে না তাহলে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যেহেতু তাদের সম্মতি নেয়া যায় না তাহলে সম্মতি ছাড়া আপনারা কেন সেসব প্রাণওয়ালাদের নিজেদের জিনিস সম্মতি ছাড়া ব্যাবহার করতে চান? 

বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতেই শুধু নয় বরং নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতেও মুসলিমদের কুরবানীর ঈদ সম্পূর্ণ মানবিক এবং যৌক্তিক সেখানে কিছু অসৎ নাস্তিকদের নৈতিকহীন লাফালাফি জ্ঞানীদের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বরং বাতিল। কুরবানীর ঈদকে নিয়ে নাস্তিকগোষ্ঠীর অযৌক্তিক দাবি ও মিথ্যাচার সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গরীবরা গরু বিক্রি করবে,ধনীরা কিনবে। ফলে গরীবরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে এবং দেশের অর্থনীতিরও উন্নতি হবে। মুসলিম অসহায় গরীবদের আনন্দ উৎসব দেখে মানবতা বিরোধী উগ্রপন্থী নাস্তিকদের সহ্য হবে না এটাই তো স্বাভাবিক।

মুক্তচিন্তায় পশু হত্যা খারাপ?

চিন্তার মুক্তিকেই সহজ ভাষায় মুক্তচিন্তা বলে। কোনো নাস্তিক যদি চায় মুক্তচিন্তায় নিজের নাস্তিক পরিবার নিয়ে শূকর হত্যা করে খেয়ে আনন্দ প্রকাশ করবে সেটা সেই নাস্তিকের মুক্তচিন্তায় জায়েজ। আবার কোনো নাস্তিক যদি চায় যে ইট, বালু, সিমেন্ট, কাগজ খেয়ে বেঁচে থাকবে এই মুক্তচিন্তা করাটাও সেই নাস্তিকের মুক্তচিন্তায় বৈধ। বৈধ না কোনটা? যখন কোনো নাস্তিক এই বিধান দিতে চায় যে কোনো মানুষ পশুর মাংস খেতে পারবে না। কোনো মানুষ এই খাবার খেতে পারবে তো অন্য খাবার খেতে পারবে না- এরকম বিধান যখন কোন নাস্তিক দিতে চায় তখন এটা অন্য মানুষদের চিন্তার মুক্তিতে জায়েজ বলে গণ্য হবে না কারণ মুক্তচিন্তার দৃষ্টিতে সকল মানুষের অধিকার আছে যা ইচ্ছে সেটা চিন্তা করবার।

তাই বাংলার মূর্খ নাস্তিকগোষ্ঠীরা যেহেতু মুসলিমদের জন্য বিধান দিতে চায় যে মুসলিমরা কুরবানী করে অমানবিক কাজ করে তাহলে তাদেরকে এটা মেনে নিতে হবে নাস্তিক্যবাদও একটি ধর্ম। কারণ নাস্তিকরা অন্যদের জন্য নৈতিক বিধানের ফতোয়া দিচ্ছে। নৈতিকতা দিচ্ছে। মানুষকে নিজেদের বিধানে আটকিয়ে রাখতে চাইছে। তাই যৌক্তিকভাবেই কিছু প্রশ্নের উদয় হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। নাস্তিকগোষ্ঠীদের যেই প্রশ্নর যৌক্তিক জবাব পরিস্কার করে দেয়া উচিত। নাস্তিক্যধর্মে হত্যা করার বিধান কি?এই বিধান কে নির্ধারণ করবে? যে এই বিধান নির্ধারণ করবে তাকে কেন পুরো দুনিয়ার মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে? তার দেয়া আইন বিশ্বাস না করলে কি হবে? পাপ হবে? নাস্তিক্যধর্মের যুক্তি অনুযায়ী মানুষের নৈতিকতার মাপকাঠি কি হবে? মানুষ কখন হত্যা করতে পারবে এবং কখন হত্যা করতে পারবে না এসব বিধি-নিষেধ কিরকম নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে? 

ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যারা শক্তিশালী তারাই টিকে থাকে আর বিবর্তবাদে নাস্তিকদের কাছে মানুষ আর গরু সমান।গরু মানুষের সাথে পারে না তাই এখানে মানুষের জয় হয় সুতরাং যেহেতু মানুষ টিকেছে তাই মানুষ গরুর গোস্ত খাবে সাথে বিজয়ের আনন্দ করবে। এখন গরু যদি মানুষকে কুরবানী করতে পারতো তাহলে গরুও মানুষের মাংস খেতো। আর নাস্তিক আর গরুরা মিলে আনন্দে মাতামাতি করতো। বিবর্তনবাদে সিংহ যদি হরিণকে হত্যা করে খায় এটা অমানবিক নয়, এভাবে যত প্রানী আছে সব ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। তাহলে মানুষ যদি গরুকে হত্যা করে খায় এবং সাথে ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারে আনন্দ-উৎসব করে এটা বিবর্তনবাদের দৃষ্টিতে কিভাবে অমানবিক হবে? ডারউইনবাদের বিশ্বাস অনুযায়ী মুসলমানদের কুরবানীর ঈদ সম্পুর্ন যৌক্তিক। তাই কোনো নাস্তিক যদি আসলেই নিজেকে মুক্তচিন্তক বলে বিশ্বাস করে থাকে, নিজেকে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলে বিশ্বাস করে থাকে তাহলে সেই নাস্তিকদের উচিত হবে মুসলিমদের কুরবানীর ঈদকে সমর্থন করা। মুসলিমদেরকে বেশি করে উৎসাহিত করা যাতে মুসলিমরা কুরবানীর ঈদে বেশি বেশি কুরবানী করে সকলের মাঝে মাংস বিতরণ করতে পারে এবং সবাই আনন্দের সাথে মাংস খেতে পারে। সার্বিক যৌক্তিক দৃষ্টিতে কুরবানী মোটেও খারাপ কিছু নয়। নয় একে ঘিরে আনন্দ উৎসব করা। নাস্তিকগোষ্ঠীরা যুক্তি দিয়ে একে খারাপ প্রমাণ করতে না পেরে ইমোশনাল কার্ড প্লে করে যা সত্যিই হাস্যকর ব্যাপার-সেপার।

অমুসলিমদেরকে কুরবানীর মাংস অবশ্যই দেয়া যাবেঃ

জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে গোশত উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে-ihadis.com

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৩৩০, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আসমা বিন্‌তে আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা ইসলাম অপছন্দ করা অবস্থায় আমার সম্পদের লোভ রেখে আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।’’-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৯৭৮, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আবূ বাক্‌র (রাঃ) -এর কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হাঁ। ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের ক’রে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।” (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)-ihadis.com

সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৫৯৭৯, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে,

আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।-ihadis.com

সুতরাং অমুসলিম গরীবদেরকে কুরবানীর মাংস দেয়া যাবে না বলার কোনো সুযোগ নেই।

রেফারেন্সঃ

 

[১] গরুর মাংস: কার জন্য কতোটুকু খাওয়া নিরাপদঃ

https://www.bbc.com/bengali/news-53606277

 

[২] Top Beef Exporting Countries:

https://www.worldstopexports.com/top-beef-exporting-countries/?fbclid=IwAR0A34or3HdDplXW_DV8KfZ9pVlNN13dBkTTCzRIZV5R326yJOeCPorrZaw

[৩] How Many Animals Do Humans Kill Each Year?

https://www.treehugger.com/how-many-animals-are-killed-each-year-127631

[৪] থাইল্যান্ড এবং চীন বিপদজনক খাবার মজা করে খায় | Top 7 Shocking food in Thailand & China:

https://www.youtube.com/watch?v=06uMCnRB5Bo

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post