কাফের আবু রাফে কে অন্যায় ভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নবী মুহাম্মদ (সা) এর অনুসারীরা ?



প্রশ্নঃ কাফের আবু রাফে কে অন্যায় ভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নবী মুহাম্মদ (সা) এর অনুসারীরা ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ প্রথমে এই বিষয়ে হাদিস সমূহ আমরা জেনে নিব আসুন

* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিস ৩০২২ , সহিহ হাদিসঃ কাফের আবু রাফিকে ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় অথবা ঘুমন্ত অবস্তায় হত্যা করা হয় ।

*  ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিস ৩০২৩ , সহিহ হাদিসঃ  বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারীদের একদলকে আবূ রাফি’ ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আতীক (রাঃ) রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল।

উপরের হাদিসে সমূহে শুধু বলা হয়েছে আবু রাফেকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে কিন্তু এটি বলা হয়নি যে কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, কি তার অপরাধ ছিল । প্রশ্নকর্তাকে বলতে চাই আপনি যদি এই হাদিসের উপর ভিত্তি করেই নিজেই রায় দিয়ে দেন তাহলে আমি বলব এটি আপনার জালিয়াতি অথবা ইচ্ছা করেই মিথ্যাচার করলেন ইসলাম বিদ্বেষীতার কারনে । আর প্রশ্নকর্তা হয়ত জানেন না যে আবু রাফে একজন কাফের সন্ত্রাসী ছিল । একজন মানবিক দেশপ্রেমিক হিসেবে আমরা সন্ত্রাসীদের সমর্থন করতে পারি না এটিই ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়।

সন্ত্রাসী কাফের আবু রাফের ভয়ংকর অপরাধ সমূহঃ

* ই,ফাঃ আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া , ৪/২৫০ = খন্দক যুদ্ধে এবং বনু কুরাইজার ঘটনার পর আবু রাফে সালাম ইবনে আবুল হুকায়ক ছিল রাসুল (সা) এর বিরুদ্ধে যারা সম্মিলিত বাহিনীকে একত্র করে তাদের একজন । 

* সীরাতুর রাসুল (সা) , আসাদুল্লাহ আল গালিব , পৃষ্ঠাঃ ৪২৪ =  সালাম ইবন আবুল হুকায়ক এর উপনাম ছিল আবু রাফি । সে ছিল কাব বিন আশরাফের মত প্রচণ্ড ইসলাম ও রাসুল বিদ্বেষী ইহুদী নেতা । মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বদা সে শত্রুপক্ষকে সাহায্য করত ।

* সীরাতুল মোস্তফা (সা) , ২/১৫৮ , আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) = কাফের আবু রাফে রাসুল (সা) এর ভয়ংকর শত্রু এবং তাঁকে নানা ভাবে কষ্ট দিত । সে ছিল কাব বিন আশরাফের হিতাকাঙ্ক্ষী ও সাহায্যকারী । এই ব্যাক্তিই আহজাব যুদ্ধে মক্কার কুরাইশদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করে । এছাড়া প্রচুর ধন-সম্পদ দিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করত । সে সব সময়ই মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় প্রচুর অর্থ খরচ করত । অর্থাৎ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করতে চাইত । 

* ই,ফা, সীরাত বিশ্বকোষ , ৬/৩১০ = খন্দক যুদ্ধের জন্য (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) কুরাইশ বা অন্যান্য গোত্রকে সংগঠিত এবং তাদেরকে প্রচুর অর্থ দিয়ে সাহায্য করে এই ইহুদী (আবু রাফে) বণিকটি ইসলামের প্রচুর ক্ষতিসাধন করে ।

* ই,ফা, সীরাতে ইবনে হিশাম , ৩/২৭৯ = আবু রাফে যে রাসুল (সা) এর বিরুদ্ধে খেপিয়ে বিভিন্ন বাহিনীকে সংঘবদ্ধ করেছিল । অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সা) কে হত্যা করতে চাইত সব সময় ।

= কেন সন্ত্রাসী আবু রাফেকে গোপনে হত্যা করা হয় ?

* ই,ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ৬/৩১১ =  শত্রুদের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে পরাস্ত করার মত এই সমস্ত শত্রু সর্দার ও বড় বড় কবি ও দলনেতাকে গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করায় শত্রুপক্ষ দুর্বল ও নেতৃশুন্য হয়ে পড়ে । সেই যুগে এই কবিরা বর্তমান যুগের প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা পালন করত । এই কবিদের কবিতা মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে বিদ্বেষ ও উত্তেজনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ত । তাই তাদেরকে নির্মূল করা ইসলামের স্বার্থে ও রাসুল (সা) এর নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল । রাসুল (সা) এর আত্মউৎসর্গকারী সাহাবীগণ প্রানের ঝুঁকি নিয়ে তাই এই গুরুদায়িত্ব পালন করে ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন । গুপ্তহত্যার মাধ্যমে এই অপশক্তিকে নির্মূল না করলে এরা আরও অনেক যুদ্ধ ও রক্তপাতের কারন হয়ে দাঁড়াত । এদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পর মুসলমানগন ও আল্লাহর রাসুল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ।

* ই,ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ৬/৩১২ এবং স্টাডিজ ইন এ মসক, পৃষ্ঠা ৬৮ = সারকথা হল মদিনায় তখন কোন পুলিশ বা আধুনিক সময়ের মত কোন আদালত ছিল না যে ঐ দুষ্কৃতকারীদের হত্যার আদেশ কার্যকর করবে । তাই মোহাম্মদ (সা) এর কোন না কোন সহচরকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হত । সেটা প্রকাশে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির গোত্রের সামনে করতে গেলে সেটা হত আরও রক্তক্ষয়ী এবং গোটা শহর সেই দন্ধে জড়িয়ে পড়ত। চুপিসারে সেই কর্ম সমাপ্ত করা ছিল শ্রেয় ও যুক্তি সম্মত । নতুবা হিংসা-প্রতিহিংসার অনেক বিস্তার ঘটত । নবী মুহাম্মদ (সা) এই কাজ কোন ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছিল না , সেটি ছিল সময়ের এবং রাষ্ট্র ও জাতির প্রয়োজনে । সুতরাং গুপ্তহত্যার অপবাদ দেয়া এবং সেটার নিন্দা করা অবশ্যই অযৌক্তিক ।

উপরের অভিযোগ নির্মূল সমাপ্ত করে এবং বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান হাতে রেখে আমরা খুবই শক্তিশালীভাবে কিছু দাবী এবং কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিবঃ
১/ কাফের আবু রাফে একজন জঙ্গি সন্ত্রাসী ছিল ।

২/ কাফের আবু রাফে মুসলিমদের হত্যা করে চিরতরে ধ্বংস করতে চেয়েছিল ।

৩/ কাফের আবু রাফে মদিনার রাষ্ট্র প্রধান নবী মুহাম্মদ (সা) এর কে হত্যার চেষ্টা করেছিল বার বার ।

৪/ নবী মুহাম্মদ (সা)কে হত্যার জন্য কাফের আবু রাফে তার দলবল একত্র করছিল এবং তাদেরকে টাকা দিয়েও সাহায্য করত এর জন্য ।

৫/ কাফের আবু রাফে ইসলামকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং দুনিয়ার বুক থেকে যেন ইসলাম উঠে যায় সেই পরিকল্পনা করছিল ।

৬/ নবী মুহাম্মদ (সা)এর অনুসারীরা কাফের আবু রাফেকে হত্যা করে আসলে সন্ত্রাসীদের দমন করেছিলেন ।

৭/ সন্ত্রাসী কাফের আবু রাফেকে গোপনে হত্যা করার কারন ছিল যেন তার সন্ত্রাসী দলবল মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পায় যেহেতু সন্ত্রাসী আবু রাফে একজন ইহুদী নেতাও ছিল ।

৮/ নাস্তিকরা কেন এই সন্ত্রাসী তথা আবু রাফের পক্ষে কথা বলছেন আপনারা কি তাহলে সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করেন ?

৯/ আবু রাফে নবী মুহাম্মদ (সা) হত্যার জন্য বিশাল দলকে একত্রে করছিল নাস্তিকরা কি চায় যে একজন দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে এইভাবে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হক ? নবী মুহাম্মদ (সা) তো কোন অপরাধ করেন নি তাহলে ?

১০/ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করার জন্য আবু রাফে প্রচুর অর্থ সম্পদ খরচ করেছে এখন একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এইভাবে সম্পর খরচ করা আমাদের সভ্য চিন্তাশীল মানুষের জন্য অন্যায় কিন্তু আপনারা কি এই অন্যায় কাজকে সমর্থন করছেন ?

১১/ মুসলিমদের বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে কাফের আবু রাফে নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা কি এখন তার এই কাজকে সাধুবাদ জানাবেন ?

১২/ বর্তমানেও কোন শান্তিপূর্ণ দেশে যদি কেউ রাষ্ট্র প্রধানের বিরুদ্ধে হত্যা করার জন্য বাহিনী ঘটন করে তাহলেও এই অপরাধের নাম বলা হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যা সম্পূর্ণ নিষেধ এবং অমানবিক । মদিনাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল সন্ত্রাসী আবু রাফি এই পরিবেশ নষ্ট করতে নবী মুহাম্মদ (সা) যিনি রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন তাঁকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী আবু রাফি বাহিনী তৈরি করে যা খুবই ভয়াবহ তাই এই সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা) এবং তাঁর অনুসারীরা তথা সাহাবীরা মানবতার কল্যাণের কাজটাই করেছেন ।

১৩/ সন্ত্রাসী আবু রাফে কাব বিন আশরাফকে সাহায্য করেছিল যখন কাব বিন আশরাফ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল । সন্ত্রাসী কাব বিন আশরাফকেও নবী মুহাম্মদ (সা) দমন করেন কারন ওর অপরাধ ছিলঃ সুনানে আল কুবরা - বায়হাকি ৯/১৮৩ এবং যুরকানি ২/১০ পৃষ্ঠা আছেঃ ইহুদি কবি কাব আল আশরাফ ছিল মদিনার অধিবাসী । বনী নাদির গোত্রের নেতা । আরবের লোকদের অন্যতম পেশা ছিল বিজনেস আর কাব আল আশরাফ নিজের ছিল অস্রের বিজনেস । বদর যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় দেখে সে হিংসায় ফেটে পড়ে এবং বুঝতে পারে তার অস্ত্র বিজনেসে ধস নামবে । এ জন্য সে পালিয়ে মক্কার কুরাইশদের কাছে চলে যায় । সেখানে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশদের স্বজনদের সাথে সহমর্মিতা পোষণ করে এবং নবী (সা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উস্কানি দেয় । শুধু তাই নয় বরং এ ছাড়া "মোস্তফা চরিত্র" লিখেছেনঃ মোঃ আকরাম খা, পৃষ্ঠা ৪৪৭, কাকলী প্রকাশনীঃ কাব বিন আশরাফ এর অপরাধ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন যার মাঝে মূল অপরাধ হল সে দেশদ্রোহী এবং নবী মুহাম্মদ (সা) সহ পুরা মুসলিম জাতিকে হত্যা করে ধ্বংস করতে চেয়েছিল এই কাব বিন আশরাফ । আর একেই সাহায্য করত কাফের আবু রাফে ।

১৪/ নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁর শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রকে  রক্ষা করতে ,  জাতিকে রক্ষা করতে মানবতার খাতিরেই মুলত সন্ত্রাসীদের গোপনে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ।

১৫/  যেহেতু নবী মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর অনুসারীরা সন্ত্রাসীদের দমন করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেহেতু অবশ্যই তাঁরা ইতিহাসে সব সময় সম্মানিত হয়ে থাকবেন মানবতাবাদী মানুষের কাছে । 


এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post