বিষয়ঃ আজওয়া খেজুর খেলে বিষ কাজ করে না?
লিখেছেনঃ এমডি আলী।
============================
নাস্তিকরা বলে থাকে,
এই যে মুমিন সাহেব আপনাদের নবী বলেছেন প্রতিদিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেলে নাকি কোনো বিষই কাজ করতে পারে না। তো পারলে সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে এরপরে বিষাক্ত বিষ খেয়ে নিজেদের নবীর দাবি সত্যি প্রমাণ করে দেখাও তো দেখি। সব মুমিনদের উচিত আজওয়া খেজুর খাওয়ার পরে বিষাক্ত বিষ খেয়ে ফেলা তাহলেই তো ইসলাম সত্যি প্রমাণ হয়ে যায়। আসলে নবী ভুল কথা বলেছেন কারণ এটা কখনো সম্ভব না। এই হাদিসে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন পাকিস্তানীদের থেকে জানতে চাওয়া বোকামি তেমনি ইসলামের তথা কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা ইসলামবিরোধীদের থেকে জানতে চাওয়াটাও হাস্যকর ও ভিত্তিহীন। আমরা আজকে নাস্তিকদের অভিযোগটি যাচাই করে দেখবো আসলেই হাদিসের এমন দৃষ্টিভন্তিতে বলা হয়েছে নাকি হাদিসের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।
আসলেই কি এমন বিষ বুঝানো হয়েছে যে খেলে মানুষ সাথে সাথেই মারা যাবে?
প্রথমে হাদিস গুলো জেনে নেই।
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৪৪৫ ,সহিহ হাদিসঃ
সা’দ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সাতটি আজওয়া (উৎকৃষ্ট) খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করবে না।-ihadis.com
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫২৩৪ ,সহিহ হাদিসঃ
সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম –কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া (মদীনার উৎপন্ন এক জাতীয় উৎকৃষ্ট মানের খেজুর) আহার করে, সেদিন তাঁকে কোন বিষ বা যাদু অনিষ্ট করতে পারে না।-ihadis.com
ইসলাম নিয়ে অন্ধবিশ্বাস পোষণকারী মুক্তমনা নাস্তিকরা এই হাদিস থেকে দাবি করেছে এখানে নাকি এমন “বিষাক্ত বিষ”এর কথা বুঝানো হয়েছে যা খেলে মানুষ সরাসরি মারা যাবে। নাস্তিকদের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ এরকম বিষ সেবন করতে স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সা) সরাসরি নিষেধ করেছেন। তাই উক্ত হাদিস দ্বারা বিষের কথা বলা হয়েছে সেই বিষ আসলে হল, "শরীরের রোগজীবাণু সৃষ্টিকারী বিষ" অর্থাৎ আজওয়া খেজুর খেলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং রোগজীবাণুর বিষ আর কাজ করবে না। এমনকি উপরের বর্ণিত হাদিস দ্বারা বিষ ক্ষতি করতে পারবে না কথাটি বোঝাতে গিয়ে রসূল (সাঃ) খেঁজুরের রোগ নিরাময়কারী গুণাগুণকেই বুঝিয়েছেন। যেই হাদিস গুলো নাস্তিকরা ধামাচাপা দিয়ে রাখে সেই হাদিস গুলো জেনে নেই আসুন।
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫২৩৬, সহিহ হাদিসঃ
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মাদীনার উঁচু ভূমির ‘আজওয়াহ্ খেজুরে শিফা (রোগমুক্তি) রয়েছে। কিংবা তিনি বলেছেন, এগুলো প্রতি সকালে খাবারে বিষমুক্ত ঔষধের কাজ করে।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৪৫৩ ,সহিহ হাদিসঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘আজওয়া’ হলো জান্নাতের খেজুর এবং তা উন্মাদনার প্রতিষেধক।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৪৫৫ ,
সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আজওয়া হলো জান্নাতের খেজুর এবং বিষের প্রতিষেধক।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০৬৬, হাসান সহিহঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আজওয়া হচ্ছে জান্নাতের খেজুরবিশেষ এবং এর মধ্যে বিষের প্রতিষেধক রয়েছে।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০৬৮, সহিহ হাদিসঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কিছু সাহাবী বলেন, ছত্রাক হলো যমীনের বসন্ত রোগ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ছত্রাক হলো মান্নের অন্তর্ভুক্ত এবং এর পানি চক্ষুরোগের প্রতিষেধক। আজওয়া হলো বেহেশতের খেজুরের অন্তর্ভুক্ত এবং এটা বিষের প্রতিষেধক।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৪৫৯, সহিহ হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকৃষ্ট ও অনিষ্টকর ঔষধ অর্থাৎ বিষ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।-ihadis.com
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে আজওয়া খেজুর রোগ মুক্তির প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। কিন্ত তারমানে এই না যে সেই খেজুর খেয়ে সাথে সাথে বিষাক্ত বিষ খেয়ে নিতে হবে নাস্তিকরা যেভাবে বুঝাচ্ছে আরকি। এইবার সেই হাদিস গুলো পড়ে নেই যেখানে নবীজি (সা) স্পষ্ট বলেছেন যে আত্মহত্যাকারী জাহান্নামে যাবে। নাস্তিকদের কাছে বড় প্রশ্ন থেকে যাবে। যদি উক্ত হাদিসের অর্থ বিষাক্ত বিষ হয়েই থাকে অথবা মানুষ খেজুর খেয়ে সাথে সাথে বিষাক্ত বিষ খাবে এমন ব্যাখ্যা যদি উক্ত হাদিসের হয়েই থাকে তাহলে নবীজি (সা) আত্মহত্যা করতে কেন নিষেধ করলেন? নবী মোহাম্মদ (সা) কেন বললেন আজওয়া খেজুরের মধ্যে প্রতিষেধক আছে? উনি কেন এটা বললেন না যে তোমাদের যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে বিষাক্ত বিষ খাও এরপরে আজওয়া খেজুর খাও? রসূল সাঃ কী কখনো বিষাক্ত বিষপান রোগীকে বলেছেন যে, তুমি আজওয়া খাও, বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে? অথবা আরব সমাজে কেউ কি হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে এটা বলেছেন যে, আজওয়া খেয়ে বিষাক্ত বিষপান করলেও বিষ কাজ করবে না?
আরবদের তৎকালীন কোনো কাফেররা তো এটা বলে নি যে,ওহে, অমুক। শুনলাম আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ নাকি বলেছে প্রতিদিন সাতটি আজওয়া খেলে, বিষ খেলেও কোনো ক্ষতি হবে না? তো তুমি কী আজ আজওয়া খেয়েছ? যদি খেয়ে থাক, তবে এই নাও বিষ এবং বিষ খেয়ে প্রমাণ কর যে, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ সত্য বলেছে?এমন কোনো ঘটনা কী ঘটেছে? আধুনিক যুগের ইসলামবিদ্বেষীরা যেই অভিযোগ উৎঘাটন করেছে তা তৎকালীন বড় বড় ইসলাম বিদ্বেষী আরবরা কেন কাজে লাগায় নি? আরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা যদি আসলেই সেটা হতো যেটা নাস্তিকরা বুঝাচ্ছে তাহলে তো সাহাবীরা এই মিরাকল দেখিয়ে কাফেরদেরকে ইসলামের দিকে আহব্বান করতো কিন্তু উনারা এমন করেন নাই কেন? সাহাবীরা তো হাদিস বেশি বুঝার কথা, তাই নয় কি?
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৪৬০ ,
সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করলো, সে অনন্তকালের জন্য জাহান্নামী হয়ে এই বিষ গলাধঃকরণ করতে থাকবে।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০৪৩, সহিহ হাদিসঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) মারফূভাবে বর্ননা করেনঃ যে লোক লোহার অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে ঐ লৌহঅস্ত্র হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাজির হবে। সে নিজের পেটে এতা অবিরত ভাবে বিদ্ধ করতে থাকবে এবং সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। যে লোক বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে ঐ বিষ হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাযির হবে। সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে এবং সর্বদা এই বিষ গলাধঃকরণ করতে থাকবে।-ihadis.com
এমনকি কুরআনে আছে নিজেদের ক্ষতি করা হারাম। আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:১৯৫ আয়াতে বলা আছে,
তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেও না।
নাস্তিকদের মিথ্যাচারের নমুনা হচ্ছে অনেকটা এরকম। ধরুন কোনো এক মানুষ বলল ৭ ই মার্চের ভাষণ শুনে তৎকালীন মানুষদের এমন অবস্থা হয়েছিল যে যেন তাদেরকে আর কেউই হারাতে পারবে না। জনাব আব্দুল্লাহ তার মতই একজন নেতা। তার দেশপ্রেমের ভাষণ শুনলে আমাদের মনে এমন শক্তি উৎপন্ন হয় যে আর কোনো কিছুই আমাদের দমাতে পারবে না। এখন কোনো মূর্খ মানুষ বলল তাহলে তুমি ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে দেখাও তো যে তোমাকে কেউ দমাতে পারবে না তাহলে মেনে নিব। কি পাঠক ধরতে পেরেছেন? অথবা যদি কোনো মূর্খ মানুষ বলে যে আচ্ছা সামান্য একটি ভাষণে যদি এতই শক্তি আসে তাহলে বিষ খান তো দেখি আপনার সেই শক্তি আপনাকে এই বিষ থেকে বাঁচাতে পারে কিনা।
এই হাদিসটি পড়ুন।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৪৪২, হাসান হাদিসঃ
উম্মুল মুনযির বিনতু কায়স আল-আনসারী (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট প্রবেশ করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আলী বিন আবু তালিব (রাঃ)। আলী (রাঃ) সদ্য রোগমুক্তির কারণে দুর্বল ছিলেন। আমাদের এখানে খেজুরের ছড়া ঝুলিয়ে রাখা ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খেতে লাগলেন। আলীও তা খাওয়ার জন্য নিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ থামো হে আলী! তুমি তো অসুস্থতাজনিত দুর্বল। রাবী বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য রুটি ও বার্লি তৈরি করে আনলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ) কে বললেনঃ এটা থেকে খাও। এটা তোমার জন্য অধিক উপকারী।-ihadis.com
নাস্তিকদের জন্য প্রশ্নটি হচ্ছে যদি আজওয়া খেজুর খেলে বিষাক্ত বিষ দূর হয়ে যাবার কথাই হাদিসটির মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এখানে নবীজি (সা) কেন আলী (রা)কে আজওয়া খেজুর না দিয়ে রুটি ও বার্লি খেতে বললেন?
নবী মোহাম্মদ (সা)এর সুস্বাস্থ্যর ব্যাপারে কি বলেছেন আসুন জেনে নেই।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ৩০১, সহিহ হাদিসঃ
মুআয ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (র) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের কাছে বের হয়ে এলেন, তাঁর দেহে ছিল গোসলের আলামত এবং তিনি ছিলেন আনন্দচিত্ত। আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়তো তার কোন স্ত্রীর সঙ্গলাভ করেছেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনাকে প্রসন্ন হৃদয় দেখছি। তিনি বলেনঃ হাঁ, আলহামদু লিল্লাহ। তারপর প্রাচুর্যের প্রসঙ্গ এলো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্য ক্ষতিকর নয়। আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্যের চেয়ে সুস্বাস্থ্য অধিক উপকারী। মনের প্রসন্নতাও নেয়ামতের অন্তর্ভুক্ত।-ihadis.com
জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৩০৪, সহিহ হাদিসঃ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ এরূপ দুটি নিয়ামাত আছে যে ব্যাপারে বেশিরভাগ লোক ধোঁকায় নিপতিত : সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময়।-ihadis.com
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৪১৭০, সহিহ হাদিসঃ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমন দু’টি নিয়ামত আছে যে ব্যাপারে অধিকাংশ লোক ধোঁকায় পতিতঃ সুস্বাস্থ্য ও সুসময় বা অবসর।-ihadis.com
খেয়াল করলে দেখবেন আমাদেরকে ডাক্তাররা অনেক সময় বলে সকালে নিয়মিত ব্যায়াম করতে যাতে আমরা শারীরিকভাবে ফিট থাকতে পারি। এখন কেউ যদি একদিন ব্যায়াম করে অসুস্থ হয় অথবা ধরে নিলাম নিয়মিত ব্যায়াম করার পরেও যদি অসুস্থ হয় তাহলে কি সেই ডাক্তারের দোষ? অবশ্যই না। নবীজি (সা) ঠিক আমাদেরকে বুঝিয়েছেন যে আমরা যদি নিয়মিত আজওয়া খেজুর খাই তাহলে আমরা শারীরিকভাবে ফিট থাকতে পারবো। কিন্তু তারমানে এই না যে আমরা কখনো অসুস্থ হবো না অথবা আমরা কখনো মরবো না। নবী মোহাম্মদ (সা) তো এই কথা বলেন নাই যে তোমাদের যা ইচ্ছে করো এরপরে খেজুর খাও। নবী মোহাম্মদ (সা) বলেছেন প্রতিদিন খেজুর খেলে প্রতিষেধক হিসেবে এটা কাজে আসবে। হযরত আলী (রা) থেকে একটি হাদিস পাওয়া যায় যেটা কানজুল উম্মাল কিতাবের ২৮৪৭২ নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসে হযরত আলী (রা) বলেছেন,যে প্রতিদিন সাতটি খেঁজুর খায়, এটা তার পেটের রোগ গুলোকে মেরে ফেলে।-তাই সার্বিক দলিল প্রমাণকে সামনে রেখে এটা বলাই যায়, এখানে Injected বা বাইরের বিষ বোঝানো হয় নি, বরং শরীরে যে টক্সিন তৈরী করে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে তার কথা বলা হয়েছে। এটা Internal Toxin যা শরীরে উৎপত্তি হয়ে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে। এবং রসূল (সা) সেটাই বলেছেন।
নবী মোহাম্মদ (সা) নিজেই বলেছেন রোগ হলে ঔষধ সেবন করতে। হাদিসটি পড়ুন।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ২৯১, সহিহ হাদিসঃ
উসামা ইবনে শরীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন বিভিন্ন স্থান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেদুইন আসলো। লোকজন নির্বাক ছিলো। কেবল বেদুইনরাই কথা বলছিলো। তারা জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক অমুক ব্যাপারে আমাদের কোন দোষ হবে কি? তারা এমন কিছু মানবীয় বিষয় জিজ্ঞেস করে যাতে দোষের কিছু ছিলো না। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহ পাপকে রহিত করেছেন। পাপ তো এমন লোকের হতে পারে যে নিজের জন্য অত্যাচার-নির্যাতনকে অবধারিত করে নিয়েছে। এতে তার পাপ হয় এবং সে ধ্বংস হয়”। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা ঔষধপত্র ব্যবহার করবো কি? তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ঔষধ ব্যবহার করো। কেননা মহামহিম আল্লাহ এমন কোন রোগ রাখেননি, যার প্রতিষেধক রাখেননি, একটি রোগ ছাড়া। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি? তিনি বলেনঃ বাৰ্ধক্য। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষকে প্রদত্ত সর্বোত্তম জিনিস কি? তিনি বলেনঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্র।-ihadis.com
প্রিন্সিপাল হাফেজ নযর আহমদ লিখিত “তিব্বে নববী” কিতাবটি পড়লেও এই ব্যাপারে বিস্তারিত একটি ধারনা পাবেন। ইসলামে রোগ প্রতিরোধ করবার ব্যাপারে যথেষ্ট হুকুম রয়েছে। যেসব নাস্তিকরা উক্ত হাদিসকে কেন্দ্র করে বুঝাতে চাচ্ছে, পারলে বিষাক্ত বিষ খেয়ে এরপরে আজওয়া খেজুর খেয়ে দেখাও সেই সব নাস্তিকরা আসলে নিজেদেরকেই বেশি করে মূর্খ ও অন্ধবিশ্বাসী হিসেবে প্রমাণ করে দেখাচ্ছে।
আজওয়া খেজুরের বৈজ্ঞানিক উপকারীতাঃ
আজওয়া খেজুর নিয়মিত খাওয়া মানুষদের হৃদরোগ এবং পেটের সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে নিরাময় প্রভাব রয়েছে। এবং এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে (১)। ক্যানসারের মতো ভয়ংকর রোগের নিরাময় হিসেবেও কাজ করে এই খেজুর (২)। দেহের ইমিউনিটি সিস্টেম বুস্টার করতেও বেশ উপকারী (৩)। যেসব পুরুষের শুক্রাণু কম তাদের শুক্রাণু বৃদ্ধিতে আজওয়া খেজুর অনেক ভালো সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে (৪)। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে (৫)।
এই ধরনের খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে যা হাড় ও দাঁতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আজওয়া খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করা। এই খেজুরগুলিতে উপস্থিত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খনিজ এটিকে হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং বেদনাদায়ক অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সুপারফুড করে তোলে। আজওয়া খেজুর একটি চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎস হিসেবে কাজ করে। এতে উপস্থিত সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিও ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আজওয়া খেজুর অন্তর্ভুক্ত করা শরীরকে ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা ঠিক করতে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এটি অনুভূত হয় যে আজওয়া খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও প্রসারিত। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত আজওয়া খেজুর খাওয়া গর্ভের পেশী সক্রিয় করে এবং প্রসবের সময় গর্ভের নড়াচড়ায় সাহায্য করে। এই তারিখগুলি প্রসব-পরবর্তী রক্তপাতও কম করে (৬)। তীব্র ডাইক্লোফেনাক বিষাক্ততার কারণে টিস্যুর যেই ক্ষতি হয় সেটার বিরুদ্ধেও আজওয়া খেজুরের নির্যাসের প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব রয়েছে (৭)। এভাবে বলতে থাকলে আজওয়া খেজুরের উপকারীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। আপনারা আরও উপকারীতার কথা জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন (৮)।
তাই আসুন আমরা নিয়মিত সকালে আজওয়া খেজুর খাই এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকি। যেই সব নাস্তিকরা নবী মোহাম্মদ (সা)কে নিয়ে অন্ধবিশ্বাস করে যাচ্ছে তারা অন্ধবিশ্বাসকে ত্যাগ করে প্রতিদিন সকালে আজওয়া খেজুর খান আপনি নিজেই ভালো ফলাফল পাবেন। এছাড়া কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ঔষধ হাদিসটি নিয়েও নাস্তিকরা একই ধরণের মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এই বিষয় বিস্তারিত জবাব এখানে দেয়া আছে (৯)। আগ্রহীরা এখান থেকে জবাবটি জেনে নিন। এছাড়া বিভিন্ন জার্নালে আজওয়া খেজুর বিষয় বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে (১০)। আপনি নিয়মিত আজওয়া খেজুর খেলে শারীরিকভাবে অনেক শক্তিশালী তো হবেনই একইসাথে অনেক মানসিক আরামও পাবেন। তাই সার্বিক তথ্য প্রমাণ সামনে রাখলে বলতে বাধ্য হতে হয় মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহর পাঠানো নবী হযরত মোহাম্মদ (সা) আজওয়া খেজুর নিয়ে সত্যিই বলেছেন।
রেফারেন্স সমূহঃ
(১) Guide to Herbal Remedies
http://guide2herbalremedies.com/dates-protect-arteries/
(২) Anti-cancer effects of Ajwa dates (Phoenix dactylifera L.) in diethylnitrosamine induced hepatocellular carcinoma in Wistar rats
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5567468/#CR14
(৩) Links between the Prophet Muhammad (PBUH) recommended foods and disease management: A review in the light of modern superfoods
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5870322/
(৪) Ameliorative Influence of Ajwa Dates on Ochratoxin A-Induced Testis Toxicity
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6130239/
(৫) Effect of Ajwa Dates Consumption to Inhibit the Progression of Preeclampsia Threats on Mean Arterial Pressure and Roll-Over Test
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6925783/
(৬) 8 Benefits of Eating Ajwa Dates (Khajoor)
https://lifeinsaudiarabia.net/benefits-ajwa-dates-khajoor/
(৭) Protective effects of Ajwa date extract against tissue damage induced by acute diclofenac toxicity
(৮) The Benefits of Eating Ajwa Dates
https://ajfan.store/blogs/news/we-got-you-to-write-us-your-favourite-dates
(৯) কালোজিরার সর্বরোগের ঔষধ হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা
(১০) Protective Effect of Ajwa Fruit Extract on Nicotine Induced Oviduct
Morphometric Changes in Adult Albino Rats https://www.ijmrhs.com/medical-research/protective-effect-of-ajwa-fruit-extract-on-nicotine-induced-oviduct-morphometric-changes-in-adult-albino-rats.pdf?fbclid=IwAR1T0WYgFy_F5nnw5hm5SpnBJ85kUxEknmTtDiz7qaGJEC2qDC5NPeTg6uU
(১১) A review on chemistry and pharmacology of Ajwa date fruit and pit
(১২) Antioxidant and Anti-inflammatory Assays Confirm Bioactive Compounds in Ajwa Date Fruit
(১৩) Antioxidant and Tissue-Protective Studies on Ajwa Extract: Dates from Al Madinah Al-Monwarah, Saudi Arabia
(১৪) In Vivo Evaluation of Anti Diabetic, Hypolipidemic, Antioxidative Activities of Saudi Date Seed Extract on Streptozotocin Induced Diabetic Rats
(১৫) Research Journal of Pharmaceutical, Biological and Chemical
https://silo.tips/download/research-journal-of-pharmaceutical-biological-and-chemical-sciences-4