একটি হাদিস যখন নাস্তিকদের পক্ষে !
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা মাঝে মাঝে চা আড্ডা দেই । আড্ডায় বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা হয় , মাঝে মাঝে আবার সুস্থ বিতর্ক করি আমরা এবং সময় ফুরালে আবার আমাদের গন্তব্যে রওয়ানাও হই । আলোচনার এক ফাকে রাফান বলল এই জানিস শুনলাম জুম্মা নাকি নাস্তিক ধর্ম গ্রহন করেছে ।
ছেলেটা তো আরবি শিখেছিল , তাছাড়া মাত্র কলেজে পড়ে , এখনই এইসবের কি দরকার ছিলরে , শুধু শুধুই মাথা ঘামায় এসব ফাপা জিনিস নিয়ে - বলল এরশাদ ।
আমাদের আলোচনার মধ্যে হটাত সায়েম তার ছোট ভাই জুম্মাকে নিয়ে আসলেন । তানভীর আবার ওকে দেখেই রেগে গেল আর জিজ্ঞেস করল আর বলল এই অল্প বয়সে খগেন হলা কেন ? এর উত্তরে জুম্মা বলল দেখেন ভাই আমি আরবি পারি তাই নাস্তিক হয়েছি ।
হো হো করে হেঁসে দিল রাফান । বলল আরে বোকা কেউ আরবি পারলে নাস্তিক হয় এটি আবার কেমন বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট । আমি তো বুঝলাম না । জুম্মার জন্য চা অর্ডার দিলেন এরশাদ । এরশাদ ওকে অনেক বুঝালেন আর কুরআনের মিরাকেল নিয়ে বুঝালেন কিন্তু বেচারা হয়ত ইচ্ছা করেই বুঝতে চাইছে না , কি আর করার !
আলী ভাই লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছিলেন । আমি দেখে ডাক দিলাম । তিনি আসলেন এবং বললেন এত জ্ঞানীজনেরা এখানে আমার তো দেখেই খুব আনন্দ লাগছে । মুচকি হাঁসি দিলেন আমাদের সবাইকে দেখে ।
রাফান বলল আলী জানিস সায়েমের ছোট ভাই জুম্মা নাস্তিকতা গ্রহন করেছে । আলী ভাই সাথে সাথেই বলল মুচকি হাঁসি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ - তো এখানে অবাক হওয়ার কি আছে ? বয়স কম , অভিজ্ঞতা কম , বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান কম - এমন মানুষ নাস্তিক হবে না তো কি আমি ওকে অস্কার পুরস্কার দিব ! এই কথা শুনে এরশাদ ভাই হেঁসে দিলেন ।
জুম্মা এইবার রেগে গিয়ে বলল দেখেন ভাইয়া যদি পারেন আমার প্রশ্নের উত্তর দিন আর নাইলে আমি চলে যাই , আমার আরও কাজ আছে । আলী ভাই বললেন আচ্ছা রাগ করো কেন তোমার সাথে আমরা মজা করব না তো কার সাথে করব তুমি আমাদের ছোট ভাই । মজা করা কি খারাপ, ভাই বল ? আচ্ছা বাদ দেও সেই কথা এখন শুনি তুমার কি কি অভিযোগ ।
জুম্মা প্রশ্ন করল সৃষ্টিকর্তা যে আছে তার প্রমান কি ?
হায়রে কপাল! জুম্মা তুমি এমন এক প্রশ্ন করেছে যে এই প্রশ্নের উত্তর আমরা হাজার বার নয় এর থেকেও বেশি দিয়েছি - এরপরেও প্রমান চাচ্ছ - বলল আলী ।
নাই ভাইয়া আপনারা প্রমান করতে পারেন নাই তার জন্য আমরা সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করি ।
যদি তুমি এতই বুঝ যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নাকি প্রমান করা যায় না তো আমাকে আবার প্রথমে এই বিষয়ে প্রশ্নই বা কেন করেছ ? প্রশ্ন মানুষ করে অজানাকে জানার জন্য অথচ তুমি নিজেই আবার প্রশ্ন করছ আবার নিজেই সমাধান দিয়ে দিচ্ছ - দাগ মে কুচ অক্ষমতা হ্যাঁ ! মেরে ছটে ভাই ।
তাহলে আমাকে বুঝান যে সৃষ্টিকর্তা আছে - বলল জুম্মা খান ।
তাহলে এবার তোমাকে সিম্পলের মধ্যে গরজিয়াস স্টাইলে বুঝাই আর আমার প্রস্তাবে তুমি তোমার প্রশ্ন রাখতে পার এবং মন খুলে তুমি তোমার প্রশ্ন আমাকে জিজ্ঞাসা করবে হ্যাঁ , এতে আমি খুশি হব - বলল আলী ভাই ।
রাফান , সায়েম , এরশাদ , তানভীর ও আমি মনোযোগ দিয়ে আলীর কথা শুনছি । সে বলা শুরু করলঃ
জুম্মা আমি তোমার কাছে কিছু প্রস্তাব দাবী রাখছি খেয়াল করোঃ
* "শুন্য" থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ।
* মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে ।
* স্রষ্টা মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন ।
* "শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে" এটি সত্য হলেও স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই এটি প্রমান হচ্ছে না ।
জুম্মা,আমাদের চাক্ষুষ দেখা থেকে আমরা বলতে পারি "শুন্য" থেকে কখনো কিছু আসতে পারবে না । তুমি এখানে যেই কারনই দেখাবে সেটাই "শুন্যতা" তাহলে হচ্ছে না । ধরে নেও তোমাকে একটি খালি বাক্স দিয়ে যদি আমি তোমাকে সেখান থেকে ৫০০ ইট বের করতে বলি অথবা একটি গোলাপ ফুলের রচনা বের করতে বলি তুমি কিন্তু পারবে না । কারন সেখানে কিছুই নেই শুধুই শুন্যতা । এই বাস্তবতা থেকে কিন্তু সহজেই বুঝে নেয়া যায় যে শুন্যতা থেকে কিছুই হতে পারে না নিজে নিজেই । সুতরাং এই প্রস্তাব বাতিল ।
মহাবিশ্ব নিজেই যদি আগে থেকেই অস্তিত্বে থাকে তাহলে সে কেন নিজেকে আবার নিজেই সৃষ্টি করবে ? ধরে নিলাম যে মহাবিশ্ব নিজেকে সৃষ্টি করেছে তাহলে শুন্য থেকে তো মহাবিশ্ব হল না কারন সে আগেই থেকেই ছিল এরমানে প্রথম পয়েন্ট তো ডাহা বাতিল পরের পয়েন্ট তো মর্মান্তিক স্টাইলে বাতিল ।
"একটি সত্য কথা যে" যার শুরু আছে তার পিছনে একটি কারন আছে । এই হিসেবে মহাবিশ্বর যেহেতু একটি শুরু আছে তাই এর পিছনে একটি কারন আছেই । আর আমরা সেই কারনকেই স্রষ্টা বলে থাকি ।
কিন্তু আবার শুন্যতা থেকে যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে এটি সত্য ধরে নিলেও স্রষ্টা নেই এই কথা প্রমান হচ্ছে না যেহেতু স্রষ্টা মহাবিশ্বকে শুন্য থেকেও সৃষ্টি করতে পারেন । এটি তাঁর পক্ষে একে বারেই সহজ ।
জুম্মা বলে উঠল তাহলে সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে ?
দেখ আমার পয়েন্ট ছিল যেহেতু মহাবিশ্বের শুরু আছে তাই পিছনে কারন আছে তাই সেই কারন হলেন স্রষ্টা - কিন্তু স্রষ্টার তো শুরুই নেই তাহলে তার কোন কারন নেই । যেহেতু তাঁর কারন নেই সেহেতু তাঁর স্রষ্টাও থাকার দরকার নেই । সহজ হিসাব ।
জুম্মা বলল না না ভাইয়া অবশ্যই কারন আছে । আপনারা বলেন যে একটি ঘড়ির স্রষ্টা আছে সে মানুষ তাহলে মানুষেরও স্রষ্টা আছে তাহলে আপনার যুক্তিতেই মানুষের স্রষ্টারও স্রষ্টা থাকা আবশ্যক ।
তুমি চেষ্টা করেছ যুক্তি দিতে এর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ । কিন্তু তোমার পয়েন্ট খুবই দুর্বল - বলল আলী
কিভাবে ? প্রশ্ন করল জুম্মা ।
আলী বলা শুরু করলঃ
আমার দাবী ছিলঃ
১/ যার শুরু আছে তার একটি কারন আছে ।
২/ মহাবিশ্বের যেহেতু একটি কারন আছে সেহেতু তার কারন হলেন স্রষ্টা ।
৩/ যেহেতু স্রষ্টার শুরু নেই তাঁর কারন নেই অর্থাৎ তাঁর স্রষ্টার দরকার নাই ।
আচ্ছা যদিও আমি তোমাকে ঘড়ির ঐ উদাহরণ দেই নাই তারপরেও তোমাকে হ্যাপি করার জন্য ধরে নিলাম যে আমি ঘড়ির উদাহরণ দিয়েছি। ঠিকাছে আমার ভাই ।
ঘড়ির উদাহরণ থেকে তুমি যেই যুক্তি পেশ করেছ সেখান থেকে আমরা পাইঃ
১/ ঘড়ির একজন সৃষ্টিকর্তা আছে ।
২/ মানুষেরও একজন সৃষ্টিকর্তা আছে ।
৩/ ১ নং পয়েন্ট অনুযায়ী তাহলে মানুষের স্রষ্টারও সৃষ্টিকর্তা আছে ।
জুম্মা আমার কথায় এখন মনোযোগ দেও । আসলে উপরের তিনটি পয়েন্টই তোমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে ।
কিভাবে ? প্রশ্ন করল জুম্মা
তোমার উপরের তিনটি কথাই আমি মেনে নিলাম সাময়িক ভাবে, হ্যাঁ । তুমি কি খেয়াল করেছ ? তারমানে তোমার ৩ নং পয়েন্ট ধরে আমি বলতে চাচ্ছি "সৃষ্টিকর্তাকেও কেউ সৃষ্টি করেছেন" এটি কি ঠিক বলেছি ? তোমার যুক্তির উপরে কি তোমার আস্থা আছে ?
হুম ভাইয়া, আপনি বলুন আমি শুনছি - বলল জুম্মা ।
আলী বলল তাহলে তুমি নাস্তিক কিভাবে থাকো ? তুমি দেখি তোমার নিজের যুক্তিতেই আস্তিক হয়ে গেলে । তুমি স্বীকার করে নিলে একাধিক স্রস্টায় । তাহলে তোমার সাথে আমার আলোচনার বিষয় হওয়ার দরকার ছিল "তাউহিদ vs বহুঈশ্বরবাদ" । দেখ সততার সাথে যদি তুমি আমার যুক্তির প্রথম অংশ মানলে ঠিক আছে কিন্তু আমার আরেকটি অংশ সেটি হল স্রষ্টা হলেন অসৃষ্ট এই অংশ যদি মানতে তাহলেই তো অংকের সমাধান হয়ে যেত । অথচ এখন তুমি তোমার নিজের যুক্তিতেই আস্তিক হয়ে গেলে ।
আমাদের সবার জুম্মার দিকে তাকাল সে একটিও কথা বলতে পারছে না , সে হয়ত ভাবছে যে তার এত দুর্বল যুক্তি দিয়ে সে কেন নাস্তিক ধর্মের মত এত পাতলা মতবাদ গ্রহন করতে গেল । যাকে সেলাইয়িন খাওয়ালেও ডায়রিয়ার সমস্যার সমাধান যাবে না !
জুম্মা চা সেবন করছে । আলী বলতে যাবে এমন সময় জুম্মা বলে উঠল আচ্ছা আলী ভাই আমি আপনার সব কথাই মেনে নিলাম তাহলে আমি যদি বলি যে আমি "ঘোড়ার ডিম নামক স্রস্টায় স্বীকার করি" আপনি কি মানবেন ?
আমার মানা না মানাতে কিছু আসে যায় না কিন্তু দেখ জুম্মা তুমি ঘোড়ার ডিম অথবা ইত্যাদি যেই নামেই স্রষ্টাকে ডাক না কেন সেটি তোমার একান্ত বিষয় । দেখ হিন্দু ভাইরা ৩৩ কোটি খোদায় বিশ্বাস করতে পারলে তুমি কেন মাত্র ঘোড়ার ডিম নামক স্রস্টায় বিশ্বাস করতে পারবে না? তুমি কিন্তু নাস্তিক আর থাকছ না এটি কিন্তু আমি ১০০ % শিওর । আলী সায়েমকে বলল সায়েম তর ভাই যেহেতু তাউহিদ স্বীকারই করতে চাইছে না - তাই তুই তর ভাইকে বেদ গিতা রামায়ন কিনে দেইস আচ্ছা থাক হয়ত সে এত খোদায় মানতে পারবে না তাই বাইবেল কিনে দেইস আপাতত ৩ খোদায় বিশ্বাস করে আনন্দে থাকুক তারপরেও তো সে নাস্তিক তো আর হচ্ছে না ! আস্তিকই তো হয়ে গেল - কথা গুলো বলছিল আর আলী হাঁসছিল । ওর দেখা দেখি আমরাও হাঁসছিলাম ।
আলী বলছে দেখ জুম্মা তুমি যেই যুক্তি দিলে সেখানে তোমার যুক্তি তোমাকে আস্তিক বানিয়ে দিল কিন্তু নাস্তিক বানাতে পারল না । তাহলে তুমি কি আমার সাথে এখন "তাউহিদ vs বহুঈশ্বরবাদ" নিয়ে আলাপ করতে চাইছ ! ?
জুম্মা বলছে আলী ভাই আপনি তাহলে কে ঘোড়ার ডিমের স্রস্টায় বিশ্বাস করেন না ?
কারন এখানে আমি আমার ব্যাক্তি স্বাধীনতায় আমি স্রষ্টাকে আল্লাহ বলে ডাকব এখানে বাধা দেওয়ার তুমি কে ? তুমি তোমার স্বাধীনতায় তাঁকে যা ইচ্ছা ডাক , নাস্তিক তো আর হলে না তুমি ? আমার মতই তো আস্তিক !
জুম্মা বলল আপনাদের রাসুল তো ভুল করেছেন , তিনি তো পাগল ছিলেন , সে অনেক বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল তাহলে আপনারা কিভাবে বলেন যে সে শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন ?
তানভীর বলল কিরে ভাই তুই এক টপিক থেকে অন্য বিষয়ে ক্যাংগারুর মত লাফ দিয়ে গেলি কেন ? রাফান বলল আরে ওকে জানতে দে সে পরক্ষ ভাবে আমাদের কথা স্বীকার করে নিয়েছে তাই হয়ত অন্য দিকে কথা ঘুরাচ্ছে সে সাধারন মুসলিমদের কাছে আরবি নিয়ে বাহাদুরি দেখায় অথচ আজকে সে নিজেই নাস্তিক আর হতে পারল না নিজের যুক্তি দিয়েই । সায়েম বলছে ভাই থাক আমার ভাইকে এভাবে বলিস না আমার কষ্ট লাগে ।
এরশাদ বলল থাক বেচারার বয়স কম না বুঝেই আবেগের তাড়নায় সে ভুল পথে গিয়েছে ! আলী বলল জুম্মা তুমি কোন হাদিসের কথা বলছ আমাকে রেফারেন্স দেও ।
জুম্মা বলল আমার মনে নেই এই মুহূর্তে হাদিসের রেফারেন্স ।
সায়েম বলল আমার মনে আছে । হাদিস তো অনেক বিশাল । পুরাটাই পড় বলল আলী । মবাইল থেকে হাদিসের এপ বের করে হাদিস পড়া শুরু করলঃ
ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৬৯৮২ , সহিহ হাদিসঃ আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াহীর শুরু হয় ঘুমের ঘোরে ভালো স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা ভোরের আলোর মত উদ্ভাসিত হতো। তিনি হেরা গুহায় গিয়ে সেখানে বেশ কয়েক রাত ‘ইবাদাতে কাটিয়ে দিতেন এবং এজন্য খাদ্য দ্রব্যও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এরপর খাদীজাহ (রাঃ)-এর কাছে ফিরে আসতেন এবং তিনি তাকে এরূপ খাদ্য দ্রব্য তৈরি করে দিতেন। শেষে তাঁর কাছে সত্যের বাণী (ওয়াহী) আসল। আর এ সময় তিনি হেরা গুহায় ছিলেন।
সেখানে ফেরেশতা এসে তাঁকে বলল, আপনি পড়ুন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি বললামঃ আমি তো পাঠক নই। তখন তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে চেপে ধরলেন। এমনকি এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি পাঠক নই। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন। এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পাঠক নই। এরপর তিনি তৃতীয়বার আমাকে শক্ত করে এমন চেপে ধরলেন যে, এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন......যা সে জানত না (সূরাহ আল-ইনশিরাহ ৯৪/১-৫) এ আয়াত পর্যন্ত।
এরপর তিনি তা নিয়ে খাদীজাহ (রাঃ)-এর কাছে কম্পিত হৃদয়ে ফিরে এলেন। আর বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। ফলে তাঁরা তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর থেকে ভীতি দূর হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, হে খাদীজাহ! আমার কী হল? এবং তাকে সমস্ত ঘটনা জানালেন। আর বললেনঃ আমি আমার জীবন সম্পর্কে শঙ্কাবোধ করছি। খাদীজাহ (রাঃ) তাকে বললেন, কক্ষনো না। আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম, আল্লাহ্ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা, আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্যকথা বলেন, অনাথ অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারী করেন এবং হকের পথে আগত যাবতীয় বিপদে সাহায্য করেন। অতপর খাদীজাহ (রাঃ) তাঁকে নিয়ে চললেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে ওরাকা ইবনু নাওফল ইবনু আসাদ ইবনু ‘আবদুল উযযা ইবনু কুসাই-এর কাছে এলেন। আর তিনি, খাজীদাহ (রাঃ)-এর চাচার পুত্র (চাচাত ভাই) এবং তার পিতার পক্ষ থেকে চাচাও ছিলেন। তিনি জাহিলীয়াতের যুগে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী কিতাব লিখতেন। তাই সে ইন্জীল আরবীতে অনুবাদ করতেন- যতখানি লেখা আল্লাহর মনযুর হত। তিনি ছিলেন অতি বৃদ্ধ, দৃষ্টিশক্তিহীন লোক। খাদীজাহ (রাঃ) তাকে বললেন, হে আমার চাচাতো ভাই! তোমার ভাতিজার কথা শুন। তখন ওরাকা বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ?
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু দেখেছিলেন তা তাকে জানালেন। তখন ওরাকা বললেন, এতো আল্লাহর সেই নামুস (দূত) যাঁকে মূসা (আঃ)-এর কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। হায় আফসোস! যদি সেদিন আমি জীবিত থাকতাম যেদিন তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ তারা কি আমাকে বের করে দেবে? ওরাকা বললেন, হ্যাঁ তুমি যা নিয়ে এসেছ, এমন বস্তু নিয়ে কোনদিনই কেউ আসেনি যার সঙ্গে শত্রুতা করা হয়নি। যদি তোমার জীবনকাল আমাকে পায়, তাহলে আমি সর্বতোভাবে তোমাকে সাহায্য করব। এরপর কিছু দিনের মধ্যেই ওরাকার মৃত্যু হয়। আর কিছু দিনের জন্য ওয়াহীও বন্ধ থাকে। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থার কারণে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি আমরা এ সম্পর্কে তার থেকে জানতে পেরেছি যে, তিনি পর্বতের চূড়া থেকে নিচে পড়ে যাবার জন্য একাধিকবার দ্রুত সেখানে চলে গেছেন। যখনই নিজেকে ফেলে দেয়ার জন্য পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিব্রীল (আঃ) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলতেন, হে মুহাম্মাদ! নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। এতে তাঁর অস্থিরতা দূর হত এবং নিজ মনে শান্তিবোধ করতেন। তাই সেখান থেকে ফিরে আসতেন। ওয়াহী বন্ধ অবস্থা যখন তাঁর উপর দীর্ঘ হত তখনই তিনি ঐরূপ উদ্দেশে দ্রুত চলে যেতেন। যখনই তিনি পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিব্রীল (আঃ) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে আগের মত বলতেন। [৩]
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, فَالِقُ الإِصْبَاحِ অর্থ দিনের বেলায় সূর্যের আলো ও রাতের বেলায় চাঁদের আলো। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১১)
সায়েমের হাদিস পড়া শেষ হলে , আলী বলল , জুম্মা তুমি এই হাদিস থেকে যেই অভিযোগ করার চেষ্টা করেছে আসলে খগেনরা আরও অভিযোগ করে । আমি সব গুলা ধাপে ধাপে উল্লেখ করে এরপরে তাদের ভিত্তিহীন অভিযোগের উত্তর দিব তাহলে তোমার সিদ্ধান্ত নিয়ে সুবিধা হবে । আচ্ছা আলী ভাই খগেন মানে কি ? এই নামটি শুনতে কেমন জানি লাগে আমার ।
আলী হেঁসে বলল আসলে খগেন মানে হল নিকৃষ্ট মানের মিথ্যাবাদী , যারা জেনে শুনে চিরন্তন সত্যকে গোপন করে । এখন শুন উপরের হাদিস থেকে খগেন সমাজরা যে প্রশ্ন উত্থাপন করে সেগুলা হলঃ
১/ হযরত মোহাম্মদ (সা) ওরাকা বিন নাওফল থেকে নবী হওয়া শিখেছে ।
২/ নবী মুহাম্মদ (সা) আত্মহত্যা করতে চাইতেন বারবার এরমানে তিনি স্রিজফ্রিনিয়া রোগী ছিলেন ।
৩/ জিবরাঈল ফেরেশতার অভিনয় করতেন ।
জুম্মা দেখ তো অভিযোগ সব ঠিক আছে কিনা ! জুম্মা বলল তাই তো এসব প্রশ্নও আসে মনে ! ওকে এখন সব গুলার অভিযোগের জবাব ভাল করে শুনে নেও এবং কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে জিজ্ঞাসাও করো কোন সমস্যা নেই ।
আলী আবার বলা শুরু করলঃ
দেখ সায়েম যেই হাদিসটি পড়ল অর্থাৎ বুখারির ৬৯৮২ নং হাদিস । সেই হাদিসের কথাও কিন্তু এই কথা নেই যে " হযরত মোহাম্মদ (সা) ওরাকা বিন নাওফল থেকে নবী হওয়া শিখেছে " তাহলে এই কথা যে ভুল সেটি কিন্তু হাদিস থেকেও পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে আর অভিযোগ যে ভ্রান্ত সেটাও ক্লিয়ার হয়ে গেল । আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ সুরা নাজম ৫৩:২৮ এবং সুরা ইউনুস ১০:৩৬ = অবশ্যই সত্যের মুকাবেলায় অনুমানের কোনই মূল্য নাই ।
সুতরাং হাদিসটি সহিহ কিন্তু তোমার যেই দাবী সেটি ভ্রান্ত তাই ভ্রান্ত কথার দাম আমরা মুসলিমরা দেই না ।
দ্বিতীয় অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছু বলার আগে প্রথমে উদাহরণ দিয়ে শুরু করব । ধরে নেও তুমি একজন ভদ্র একটি ছেলে । এলাকার সবাই তোমাকে একজন ভাল সৎ মানুষ হিসেবেই জানে । তুমি সবার সাথে ভাল ব্যাবহার করো , মানুষকে দান করো , সত্য কথা বল ইত্যাদি ভাল কাজ তুমি পালন করো । এখন ধরে নেও তুমি একটি মেয়েকে প্রচুর ভালবাস আর মেয়েটিও তোমাকে খুব ভালবাসে । হটাত তুমি জানতে পারলে মেয়েটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে । তুমি এই ঘটনা জানতে পেরে এমন এক চাপ অনুভব করলে যে আত্মহত্যা করতে চাইলে , বিল্লিং থেকে লাভ দিয়ে চাইলে আর তোমার এক ফ্রেন্ড তোমাকে বাঁচিয়ে দেয় এভাবে তুমি বার বার আত্মহত্যা করতে চাইলে তোমার ঐ বন্ধু তোমাকে বাঁচিয়ে দেয় । এখন তুমি যে এই আত্মহত্যা করতে চেয়েছ এর থেকে কি প্রমান হয় যে তুমি একজন স্রিজফ্রিনিয়া রোগী? ধরে নেও তোমার শত্রু তোমাকে বলল যে তুই এই রোগের রোগী তুমি কি উত্তর দিবে ?
জুম্মা বলল আরে ভাইয়া এই আত্মহত্যার সাথে রোগীর আত্মহত্যার কোন সম্পর্ক নাই কারন আমি যেহেতু একজন ভাল মানুষ আমার চিন্তা ভাবনা ভাল , আমি আমার জীবন নিয়ে তো কখনোই হতাশ ছিলাম না , আমি তো সবার সাথেই মিশি কিন্তু যেহেতু একজন মেয়েকে আমি ভালবাসতাম তাই তাকে হারানোর কষ্ট আমি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার কাজটি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এর মানে এই না যে আমি কোন রোগী ।
আলী বলল ঠিক একই ভাবে নবী মুহাম্মদ (সা) যেই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন সেটাও তিনি মারাত্তক এক চাপের কারনেই করতে গিয়েছিলেন মজার বিষয় হল এই হাদিস থেকে প্রমানিত হয় যে নবী মুহাম্মদ (সা) একজন সত্য নবী ছিলেন যদি হাদিস অনুযায়ী ফেরেশতা নবীর সামনে এসে না দাঁড়াতেন তাহলে ঘটনা অন্য রকম হতেও পারত! কিন্তু ফেরেশতা এসে নবীকে কিন্তু আত্মহত্যার থেকে দূরে রেখেছে বুঝতে পারলে । কিন্তু এরমানে এই না যে তিনি কোন রোগী ছিলেন ।
তাছাড়া রাসূল সাঃ এর উপরোক্ত আমলটি ছিল মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক আমল। রাসূল সাঃ এর উপর প্রথম অহী নাজিল হবার পদ্ধতিটি ছিল খুবই অস্বাভাবিক। একটি গহীন স্থানে হঠাৎ ভিন গ্রহের একজন এসে বারবার জোরে জড়িয়ে ধরা। তারপর কিছু পড়তে বলা খুবই অস্বাভাবিক একটি বিষয়। যার ফলে একজন মানুষ স্বন্ত্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। আর যেহেতু তিনি নবী কি না? তা পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে কোন আয়াতও নাজিল হয়নি। তাই তিনি ছিলেন পেরেশান। সেই সাথে কাফেরদের ষড়যন্ত্র ও হত্যা চেষ্টার কারণে মানুষ হিসেবে ছিলেন তটস্ত। তাই এমন আচরণ কোন দোষণীয় থাকে না।
আর এ আমলটি ছিল মূলত আত্মহত্যা নিষিদ্ধ হবার আগের আমল। তাই এ বর্ণনা দ্বারা কোন প্রকার দলীল প্রমাণ পেশ করা বা রাসূল সাঃ চরিত্রে কালিমা লেপন করা বা বুখারী শরীফকে অগ্রহণীয় সাব্যস্ত করার পায়তারা কোনটিই সমীচিন হবে না।
তাছাড়া পরে আত্মহত্যা করা ইসলামে হারাম করা হয়েছেঃ
* ihadis.com, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৪৬০ , সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করলো, সে অনন্তকালের জন্য জাহান্নামী হয়ে এই বিষ গলাধঃকরণ করতে থাকবে।
* ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০৪৩, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) মারফূভাবে বর্ননা করেনঃ যে লোক লোহার অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে ঐ লৌহঅস্ত্র হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাজির হবে। সে নিজের পেটে এতা অবিরত ভাবে বিদ্ধ করতে থাকবে এবং সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। যে লোক বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে ঐ বিষ হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাযির হবে। সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে এবং সর্বদা এই বিষ গলাধঃকরণ করতে থাকবে।
* সুরা বাকারা ২:১৯৫ = তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেও না ।
সুতরাং নবী মুহাম্মদ (সা) যেহেতু আগে কখনোই ফেরেশতা দেখেন নাই তাই হটাত করে তাকে দেখে এবং সে জড়িয়ে ধরেছেন তাই এরকম অন্য রকম একটি ঘটনার সম্মুখে থেকে তিনি নার্ভাস হয়ে ছিলেন তাই মানুষ হিসেবে তাঁর উক্ত কাজ অস্বাভাবিকের কিছুই নয় । আর স্রিজফ্রিনিয়া রোগীরা সমাজ , রাষ্ট্র , পরিবার সব থেকে দূরে থাকে আর এসব নিয়ে তারা কিছুই করতে জানে না অথচ রাসুল (সা) একজন সামাজিক পরিবর্তনে কেমন ব্যাপক প্রভাব রেখেছেন সেটি এখনো ইতিহাস সাক্ষী , তিনি একজন রাষ্ট্র নেতা ছিলেন, একজন আদর্শ স্বামী ছিলেন । একজন ভাল পিতা ছিলেন ইত্যাদি সুন্দর চরিত্র তাঁর মাঝে ছিল তাহলে তিনি কিভাবে স্রিজফ্রিনিয়া রোগী হন ? এর থেকে আসলে খগেনদয়ের ৩ নং অভিযোগেরও জবাব হয়ে গিয়েছে কারন তিনি কেনই বা ৪০ বছরে গিয়ে হটাত জিবরাঈল ফেরেশতার অভিনয় করবে ? আগে কেন করে নাই ? এর উত্তর কি খগেনরা দিতে পারবে ?
সুতরাং ৩ নং অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং বাতিল ।
জুম্মা আলোচনা শেষ করে বলল ভাই আপনার সাথে আমার কথা বলে খুবই ভাল লেগেছে , আমি আপনার আরও বিষয় জানার চেষ্টা করব। ঠিক আছে কিন্তু আবেগ প্রবন হয়ে আগেই কোন সিদ্ধান্তে চলা ঠিক না । বুঝে পারলা ভাই ।
সায়েম বলল আচ্ছা আলী আজকে থাক আবার পরে কথা হবে এখন ঐ দিকে যেতে হবে , এরশাদ বলল আসলে খগেনরাই স্রিজফ্রিনিয়া রোগে আক্রান্ত কারন ওরা নিজেরাই মুখে বলে আল্লাহকে ওরা মানে না আবার তাঁকে নিয়েই আবার সমালোচনা করে , ডাক্তাররা বলেন স্রিজফ্রিনিয়া রোগীরা দুইমুখী মানুষ হয় এর বাস্তব প্রমান অনলাইনের খগেনরা
এরশাদের কথা শুনে আমরা সকলেই খিল খিল করে হাঁসলাম , জুম্মাও মুচকি হাঁসি দিয়ে তার ভাই সায়মের সাথে চলে গেল
ওহ ! আমার নাম তাই তো বলা হল না, আমার নাম হল মুশফিকুর রহমান মিনার ।