কুরআনের বর্ণিত আকাশ সম্পর্কে সমস্ত অভিযোগের জবাব



বিষয়ঃ কুরআনের বর্ণিত আকাশ সম্পর্কে সমস্ত অভিযোগের জবাব
লিখেছেনঃ এম ডি আলী

প্রশ্ন ১ = নিচের আয়াত সমূহ পাঠ করলে বুঝা যায় যে অর্থাৎ আকাশ এত কঠিন যে আল্লাহ ইচ্ছা করলে আকাশ ভেঙ্গে মানুষকে আঘাত দিতে পারেন। আল্লাহ মানুষকে আকাশকে কঠিন বলে ভয় দেখাচ্ছে । ফেরেশতারা মানুষের জন্য দুয়া করে ফলে আল্লাহ কিছু করেন না । তবে কিয়ামতে এমনটা হবে - এই কি বৈজ্ঞানিক ভুল নয় ?

* সুরা হজ ২২:৬৫ = তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্টে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।
* সুরা সাবা ৩৪:৯ = তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খন্ড তাদের উপর পতিত করব। আল্লাহ অভিমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।
* সুরা শুরা ৪২:৫ = আকাশ উপর থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় আর তখন ফেরেশতাগণ তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। শুনে রাখ, আল্লাহই ক্ষমাশীল, পরম করুনাময়।
* সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৯২ = অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন, তেমনিভাবে আমাদের উপর আসমানকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে দেবেন অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন।

উত্তরঃ কুরআনের উপরের আয়াত সমূহকে সামনে রেখে আমরা যা পেলামঃ

* আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তাঁর আদেশ ছাড়া দুনিয়াতে পতিত বা পরে না যায় ।
* আল্লাহ ইচ্ছা করলে আকাশের এক খণ্ড ধসিয়ে দিতে পারেন ।
* আকাশ উপর থেকে ফেটে পরার উপক্রম হয় । আল্লাহর রহমতে সেরকম কিছুই হয় না ।

উপরের পয়েন্ট সমূহ মাথায় রেখে এখন একটি বাস্তব উদাহরণ কল্পনা করুন । ধরুন আপনার স্ত্রীকে আপনি খুবই ভালবাসেন । তাকে নিয়ে আপনি কোথাও ঘুরতে গেলেন । দুইজন ডিনার করছেন । আপনি আপনার স্ত্রীকে বলছেন আমি তোমাকে প্রচুর ভালবাসি । আমার ভালবাসার বিশ্বাস এতই শক্ত যে সেটি কখনো ফেটে ভেঙ্গে পরবে না, তুমি আমার ভালবাসায় কখনো ফাটল দেখতে পাবে না ইনশা আল্লাহ । আমি যে তোমাকে কত ভালবাসি এর একখণ্ড নমুনা মাত্র দেখালাম, এত সুন্দর একটি জাগায় ঘুরতে এনে । স্ত্রী লজ্জা পেয়ে উত্তর দিল আল্লাহ আপনার আর আমার ভালবাসা কখনো যেন ধসিয়ে না দেন এবং এইভাবেই আপনি আমাকে আর আমি আপনাকে যেন ভালবেসে যেতে পারি যা আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্থির থাকবে আমিন । হে আল্লাহ আমাদের দুয়া কবুল করুন আমিন ।

একজন সুস্থ মানুষ কখনোই উপরের উদাহরণ অথবা কথা সমূহকে ভুল বলতে পারবে না ।  কারন উপরের কথা সমূহ একেবারেই সাধারন এবং আমাদের জীবনের সাথে এতই সম্পর্কিত যে আমরা সবাই জানি এসব ঘটনা কারন এসব স্টাইলের কথা একেবারেই স্বাভাবিক একটি বিষয় । আমরা সবাই জানি যে ভালবাসা , বিশ্বাস এসব এমন কোন শক্ত কঠিন পদার্থ না যে স্থির থাকবে , ফেটে পরবে , ভেঙ্গে যাবে , ধসে পরবে ইত্যাদি । কিন্তু ভালবাসা , বিশ্বাস এগুলোর ক্ষেত্রেও "শক্ত হওয়া" "ফেটে পরা" "ভেঙ্গে যাওয়া" "ধসে পরা" "স্থির থাকা" ইত্যাদি শব্দ ব্যাবহার করা যায় এবং সেসব কখনোই ভুল হতে পারে না আবার সেটি কঠিন পদার্থ হওয়াও জরুরি না ।

এখন কেউ যদি বলে বিশ্বাস ও ভালবাসা তো কঠিন পদার্থ না যে তাকে শক্ত পদার্থ বলতেই হবে , বিশ্বাস কি স্থির থাকে ? বিশ্বাস কি ভেঙ্গে যায়, ভালবাসায় কি ফাটল ধরে , এটি কি স্থির থাকে ? আপনারা যারা চিন্তাশীল মানুষ আছেন তারা আগেই বুঝে গিয়েছেন যে এই ধরনের প্রশ্ন আসলে কতটা হাস্যকর এবং দুর্বল এবং ভিত্তিহীন । কারন শক্ত হওয়া , ফেটে পরা , ধসে যাওয়া,  স্থির থাকা এসব পরিভাষা শুধুই যে কঠিন পদার্থ হলেই ব্যাবহার করা যাবে আর অন্য কোন ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা যাবে না এই কথা কোন মূর্খ বলেছে শুনি ! তাছাড়া আমরা সকলেই জানি শব্দ অথবা পরিভাষা যে কোন ক্ষেত্রেই ব্যাবহার হতে পারে । যেমন অনেক সময় সিনেমার নায়ক বলে যে আমার ভালবাসায় এত শক্তি আছে যে পুরো দুনিয়া এক হলেও তোমার (নায়িকা) থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না । 

আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে । তৎকালীন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা এমনভাবে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে যে পাকিস্তানি হানাদাররা সেসব বাঙ্গালীদের দেশপ্রেম ভাঙতে পারেনি, দুর্বল করতে পারেনি, ধসিয়ে দিতে পারেনি, ফাটল ধরাতে পারেনি সেই ইতিহাসের মূল্য এখনো আমাদের মনে স্থির আছে - আচ্ছা দেশপ্রেম কি শক্ত কোন পদার্থ, ইট বালু সিমেন্ট পানি দিয়ে কি তৈরি ? উত্তর হল না । কিন্তু তারপরেও দেশপ্রেমের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য শক্ত হওয়া, ধসিয়ে পরা , স্থির হওয়া ইত্যাদি এসব পরিভাষা ব্যাবহার করা যায় কিন্তু কেউ যদি এসব বৈজ্ঞানিক ভুল বলতে চান তাহলে আমরা বলব, যারা দাবী করেন তাদের পূর্ব পুরুষ বানর ছিল তাদের কাছে এসব বৈজ্ঞানিক ভুল মনে হলে আমাদের কিছুই করার নাই দাদা , বুঝেছেন । কারন বানর মার্কা ব্রেন এসব তাৎপর্যময় পরিভাষা উপলব্ধি করার যোগ্যতা রাখে না কারন খগেনদের জ্ঞানে ফাটল ধরেছে ।

আরেকটি উদাহরণ খেয়াল করুন । আমরা অনেক সময় ক্রিকেট খেলার আলোচনায় বলে থাকি , এই জানিস সাকিব আল হাসান এমন ভাবে ক্রিকেট খেলেছে যে সে একাই পুরা ভারত টিমকে ধসিয়ে দিয়েছে , এমনভাবে বোলারদের ভেঙ্গেছে যে ভারতের বোলাররা আমাদের বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের সাথেই স্থির থাকতে পারেনি । সেই খেলেছে ভাই, পুরা মাঠ ফাটিয়ে দিয়েছে । আল্লাহ আমাদের বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমকে আরও ভাল খেলার তৌফিক দিক আমিন । - এই উদাহরণ থেকে কিন্তু এটি বুঝা যায় যে "ভারত ক্রিকেট টিম" শক্ত পদার্থের তৈরি ? কিন্তু উপরের শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে সেটি কিন্তু আমরা পরিস্কার জানি ।

উপরের উদাহরণ বুঝে থাকলে বুঝতে সহজ হবে যে ঠিক একইভাবে আল্লাহ যে আকাশকে স্থির রাখেন, ধসিয়ে দিতে পারেন , ফাটিয়ে দিতে পারেন , আকাশের খণ্ড ইত্যাদি যা আল্লাহ বলেছেন কুরআনে - এরমানে এটা কোন ভাবেই বুঝায় না যে আকাশকে একটি কঠিন পদার্থই হতে হবে অথবা আকাশ কঠিন পদার্থ কিছু বরং আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখেন মানে আকাশ তার নিয়মের মধ্যেই আছে আল্লাহর হুকুমে , আল্লাহ যদি আকাশকে হুকুম দেন তাহলে তার সব নিয়ম ভেঙ্গে যাবে এবং আমাদের উপর পতিত তথা কিয়ামত হয়ে যাবে । যেমন "আমার ভালবাসার এক খণ্ডর ওজন অনেক" এরমানে বুঝায় না যে ভালবাসা কঠিন পদার্থের কিছু ঠিক একইভাবে "আকাশের এক খণ্ড" অর্থাৎ আকাশের এক অংশ যা আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের উপর ধসিয়ে দিতে পারেন । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।

প্রশ্ন ২ = আকাশ হল এমন একটি ছাঁদ যা কঠিন পদার্থের সুরক্ষিত ছাঁদ আর এই ছাঁদ হতেই বৃষ্টি বর্ষণ হয়  - এটি তো বৈজ্ঞানিক ভুল?

* সুরা বাকারা ২:২২ = আকাশকে ছাঁদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে।
* সুরা আম্বিয়া ২১:৩২ = আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাঁদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।

উত্তরঃ প্রশ্নকর্তাকে বলছি আপনি উপরের আয়াতে কোথায় পেলেন "আকাশ হল এমন একটি ছাঁদ যা কঠিন পদার্থের সুরক্ষিত ছাঁদ আর এই ছাঁদ হতেই বৃষ্টি বর্ষণ হয় " ?

খেয়াল করুন প্রশ্নকর্তা দাবী করেছে "আকাশকে কঠিন পদার্থের ছাঁদের মত সৃষ্টি করা হয়েছে" সেই ছাঁদ থেকে বৃষ্টি পরে অথচ কুরআন কিন্তু একবারও বলে নাই যে আকাশ হল "কঠিন পদার্থের তৈরি ছাঁদের মত" । কুরআন বলেছে আল্লাহ আকাশকে ছাঁদ স্বরূপ বানিয়েছেন অর্থাৎ এখানে ছাঁদ হল রুপক অর্থে ব্যাবহার করা হয়েছে । কোন কিছুকে ছাঁদ বললেই যে সেটি কঠিন পদার্থের হবে এরকম কোন কথা নেই । আমরা অনেক সময় বলি আমাদের পরিবারের আমার পিতা হলেন আমাদের ছাঁদ স্বরূপ । এরমানে কি আপনার বাবার মাথা ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা ছাঁদের মত ? উত্তর হল না । একজন বাবা যেমন তার পরিবারকে রক্ষা করে সব দিক থেকে ছাঁদের মত তাই বাবাকে ছাঁদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এরমানে এই না যে বাবার মাথা কঠিন পদার্থের ছাঁদ !

একজন ছাত্রের কাছে একজন আদর্শ জ্ঞানী শিক্ষক হলেন ছাঁদের মত - এরমানে কি সকল শিক্ষকদের মাথা অথবা দেহ ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ? উত্তর হল না । একজন ছাত্রকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে এবং একজন ছাত্রকে অন্যায় এবং সুন্দর পথে হাটতে শিখায় যা একজন ছাত্রকে ভুল পথ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে - এই হিসেবে শিক্ষককেও ছাত্রের ছাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে । এরমানে এই না যে শিক্ষক হল ছাঁদের তৈরি !

আকাশ নিয়ে ইংরেজি অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে বলা আছে,- 'The region of the atmosphere and outer space seen from the earth', অর্থাৎ, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলের এবং তার বাইরে যা কিছু দেখা যায়, সেটাই আকাশ।

আবারঃ আকাশ নিয়ে উইকিপিডিয়া তে বলা আছে,- 'The sky (or celestial dome) is everything that lies above the surface of the Earth, including the atmosphere and outer space', অর্থাৎ, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্টের উপরে যা কিছু আছে, তার সবই আকাশের অন্তর্গত। এর মধ্যে বায়ুমন্ডল এবং তার বাইরের সবকিছুও আকাশের মধ্যে পড়ে'।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানিরা পৃথিবীর উপরিভাগে যে বায়ুমন্ডল আছে, তাতে কিছু স্তরের সন্ধান পেয়েছেন।আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এসব পুরু স্তর দ্বারা গঠিত।এই স্তরগুলো হচ্ছে- ১/ ট্রপোস্ফিয়ার ২/ স্ট্রাটোস্ফিয়ার ৩/ মেসোস্ফিয়ার ৪/ থার্মোস্ফিয়ার ৫/ এক্সোস্ফিয়ার। এই প্রত্যেকটি স্তরের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। বিজ্ঞানি Sir Venn Allen প্রমান করে দেখিয়েছেন, আমাদের পৃথিবীর ভূ-পৃষ্টের চারদিকে একটি শক্তিশালী Magnetic Field আছে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠের চারদিকে একটি বেল্টের মতো বলয় সৃষ্টি করে রেখেছে। বিজ্ঞানি স্যার Venn Allen এর নামে এই জিনিসটার নাম রাখা হয় Venn Allen Belt... এই বেল্ট চারপাশে ঘিরে রেখেছে আমাদের বায়ুমন্ডলকে। আমাদের বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম হচ্ছে 'ষ্ট্রাটোস্ফিয়ার।' এই স্তরের মধ্যে আছে এক জাদুকরি উপ-স্তর। এই উপ-স্তরের নাম হলো 'ওজোন স্তর।' এই ওজোন স্তরের কাজের কথায় পরে আসছি। আগে একটু সূর্যের কথা বলি। সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে যে বিস্ফোরণগুলো হয়, তা আমাদের চিন্তা-কল্পনারও বাইরে। এই বিস্ফোরণগুলোর ক্ষুদ্র একটি বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা এমন যে, তা জাপানের হিরোশিমায় যে এ্যাটমিক বোমা ফেলা হয়েছিলো, সেরকম দশ হাজার বিলিয়ন এ্যাটমিক বোমার সমান। চিন্তা করার মত বিষয় যে সেই বিস্ফোরণগুলোর একটু আঁচ যদি পৃথিবীতে লাগে, পৃথিবীর কি অবস্থা হতে পারে? এখানেই শেষ নয়। মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে নিক্ষিপ্ত হয় মারাত্মক তেজস্ক্রিয় উল্কাপিন্ড। এগুলোর একটি আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে পৃথিবী।

আমাদের এই পৃথিবীকে এরকম বিপদের হাত থেকে কোন জিনিসটা রক্ষা করে? সেটা হচ্ছে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডল।আরো স্পেশেফিকলি বলতে গেলে বলতে হয়, 'ওজোন স্তর।' শুধু তাই নয়, সূর্য থেকে যে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্নি আর গামা রশ্মি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, সেগুলো যদি পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারতো, তাহলে পৃথিবীতে কোন প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারতো না। এই অতি বেগুনি রশ্মির ফলে মানুষের শরীরে দেখা দিতো চর্ম ক্যান্সার। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষন হতো না।আপনি জানেন, সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে ধেঁয়ে আসা এসব ক্ষতিকর জিনিসকে কোন জিনিসটা আটকে দেয়? পৃথিবীতে ঢুকতে দেয় না? সেটা হলো বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর। এই ওজোন স্তর এসব ক্ষতিকর উপাদানকে স্ক্যানিং করে পৃথিবীতে প্রবেশে বাঁধা দেয়।

মজার ব্যাপার কি জানেন পাঠক? এই ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা কেবল সেসব উপাদানকেই পৃথিবীতে প্রবেশ করতে দেয়, যেগুলো পৃথিবীতে প্রাণের জন্য সহায়ক। যেমন, বেতার তরঙ্গ আর সূর্যের উপকারি রশ্মি। এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যে তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়, তার সবটাই যদি মহাকাশে বিলিন হয়ে যেতো, তাহলে রাতের বেলা পুরো পৃথিবী ঠান্ডা বরফে পরিণত হয়ে যেতো। মানুষ আর উদ্ভিদ বাঁচতেই পারতো না। কিন্তু, ওজোন স্তর সব কার্বন ডাই অক্সাইডকে মহাকাশে ফিরে যেতে দেয় না। কিছু কার্বন ডাই অক্সাইডকে সে ধরে রাখে যাতে পৃথিবী তাপ হারিয়ে একেবারে ঠান্ডা বরফ শীলত না হয়ে পড়ে।বিজ্ঞানিরা এটাকে 'গ্রীন হাউস' বলে।বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরের এই যে ফর্মুলা, কাজ, এটা কি আমাদের পৃথিবীকে সূর্যের বিস্ফোরিত গ্যাস, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, মহাকাশীয় উল্কাপিণ্ড থেকে 'ছাদ' এর মতো রক্ষা করছে না? আপনার বাসায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে পারে না আপনার বাসার ছাদের জন্য। বিভিন্ন দূর্যোগে আপনার বাসার ছাদ যেমন আপনাকে রক্ষা করছে, ঠিক সেভাবে বায়ুমন্ডলের এই ওজোন স্তর কি আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করছে না?

আমরা আকাশের সংজ্ঞা থেকে জানলাম যে, - পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে উপরের সবকিছুই আকাশের মধ্যে পড়ে। বায়ুমন্ডলও তো তাহলে আকাশের মধ্যে পড়ে, এবং আকাশের সংজ্ঞায় বায়ুমন্ডলের কথা আলাদা করেই বলা আছে। তাহলে বায়ুমন্ডলের এই যে আশ্চর্যরকম 'প্রটেক্টিং পাওয়ার', এটার উল্লেখ করে যদি আল্লাহ বলেন- 'আর আমরা আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ। অথচ, তারা আমাদের নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে', - বিজ্ঞান তো নিজেই বলছে, বায়ুমন্ডল, স্পেশালি বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর একটি ছাদের ন্যায় পৃথিবীকে রক্ষা করছে। তাহলে আল্লাহও যদি একই কথা বলে, তাহলে সেটা অবৈজ্ঞানিক হবে কেনো?

(উপরের তথ্যের অংশটুকু আরিফ আজাদ ভাইয়ের পেরাডক্সিকাল সাজিদ বই থেকে নেয়া)

প্রশ্ন ৩ =   নিচের আয়াতগুলার মানে এই যে আল্লাহর আকাশ এতো কঠিন যে, তাতে কোনো ফাটল নেই ?

* সুরা মূলক ৬৭:৩ = তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি?
* সুরা কাফ ৫০:৬ = তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই।

উত্তরঃ আকাশে ফাটল নেই, ছিদ্র নেই এরমানে এই না যে আকাশ কঠিন পদার্থের কোন বস্তু । যেমন ধরুন আমি যদি বলি পানিতে কোন ফাটল নেই এরমানে কি পানি শক্ত কিছু ? উত্তর হল না । কিন্তু আমি যে বললাম পানিতে ফাটল নেই আমার কথা কিন্তু বাস্তব সত্য কারন পানিতে আসলেই কোন ফাটল নেই, ছিদ্র নেই ।

"আমরা অনেক সময় বলি যে তোমার চিন্তাভাবনা এত স্বচ্ছ ও সুন্দর যে তাতে কোন ছিদ্র নেই" এরমানে কি মানুষের চিন্তাভাবনা কঠিন পদার্থের কিছু? উত্তর হল না । কিন্তু আমাদের ঐরকম কথাও কিন্তু ভুল না কারন যেসব ভাল চিন্তা করে সেসকল মানুষের চিন্তাভাবনায় ছিদ্র থাকতেই পারে না তথা ত্রুটি থাকতেই পারে না ।

আল্লাহ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে বলেছেন , আমরাও তাকালাম কি দেখলাম ? আসলেই তো তাতে কোন ফাটল নেই অথবা ছিদ্রও নেই অথবা ত্রুটি নেই - এরমানে এই না যে আকাশ কঠিন পদার্থের তৈরি এবং কুরআনের আয়াতও বাস্তব সত্য এবং সঠিক প্রমানিত হচ্ছে । 

প্রশ্ন ৪ =  নিচের আয়াত সমূহ পড়লে তো মনে হচ্ছে আকাশ এমন কঠিন জিনিস যে, তা সৃষ্টিতে খুঁটি লাগবে কিন্তু আল্লাহ খুটি ছাড়াই তা বানিয়েছেন। এখানে বুঝা যাচ্ছে যে, আকাশ কঠিন; না হলে খুঁটির কথা আসবে কেন?

* সূরা লোকমান, ৩১: ১০ = তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ ।
* সূরা রাদ,  ১৩:২ = আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত ।

উত্তরঃ এই আয়াত সমূহ বুঝার আগে একটি উদাহরণ কল্পনা করুন । ধরুন ক্লাসে একজন শিক্ষক আপনাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করছেন । তিনি বলছেন দেখ আমার ছাত্ররা কত সুন্দর এই প্রকৃতি তাই না ! বাতাসের দিকেই দেখ, সেটার কোন পিলার নেই , সে কোন খাবার খায় না সে মানুষের মত চিন্তাও করতে পারে না অথচ বাতাস কত গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে ।

উদাহরণ বুঝে থাকলে বলুন তো কোন সুস্থ মানুষ কি টিচারের ঐ কথাকে ভুল বলবে ? উত্তর হল না । কারন বাস্তবতা কিন্তু তাই , আসলেই তো বাতাসের কোন পিলার নেই, সে আমাদের মত খায় না , মানুষের মত চিন্তাও করে না । এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে স্যার বাতাসের পিলার থাকা কিভাবে সম্ভব , বাতাস কি কঠিন শক্ত পদার্থ ? উত্তর হল না , বাতাস কোন শক্ত পদার্থ না কিন্তু তারমানে কেউ এখানে অন্য কিছুর উদাহরণ দিতে পারবে না সেটি কিন্তু না ! বুঝাতে পারলাম । 

আমি যদি বলি প্রশ্নকর্তা হলেন মানুষ,সে বানর না, তার ব্রেনে তুলা নাই এরমানে কি আপনার বানর হওয়া জরুরি অথবা আপনার মাথায় তুলা থাকতেই হবে ? উত্তর হচ্ছে না । কিন্তু আমার কথা সম্পূর্ণই সঠিক । আবার খেয়াল করুন আমি বললাম যে আমার বাসায় একটি বিড়াল আছে এবং সে অ্যামেরিকার সরকার না - কেউ কি এখানে বলবে বিড়াল আবার অ্যামেরিকার সরকার হবে কেন ? উত্তর হচ্ছে না কিন্তু আমার কথাও কিন্তু ভুল না কারন অ্যামেরিকার সরকার আসলেই আমার বিড়াল না - মুলত এটি হল কথা বলার একটি অন্যরকম স্টাইল যা অবাক করার মত এই আর কি কিন্তু ভুল কখনো না ! 

ঠিক একইভাবে আল্লাহ বাস্তব কথাটিই বলছেন যে তোমরা দেখছ যে আকাশের মধ্যে কোন পিলার নেই কিন্তু এরমানে এই না যে আকাশ শক্ত কিছু অথবা খুঁটির কথা বলে এখানে ভুল কথা রয়েছে - ব্যাপারটা আসলে তা নয় । আসলে কথার বা লাইনের স্টাইলই এরকম কিন্তু এরমানে এই না যে আকাশকে শক্ত কোন পদার্থ বুঝানো হয়েছে ।

সূরা লোকমান, ৩১: ১০ = তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ - আমরা আসলেই দেখছি আকাশের কোন খুঁটি নেই ।

প্রশ্ন ৫ = কুরআনের মতে, মানুষ যেটাকে মেঘ বলে ভুল করে সেটা আসলে মেঘ নয়! আল্লাহর দাবী অনুযায়ী শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরী আকাশের কোন এক খন্ড! অর্থাৎ মেঘ তৈরী হয় আকাশের কোনো খন্ড থেকে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, মেঘ সৃষ্টি হয় পানি বাষ্প হয়ে........ কত অবৈজ্ঞানিক কুরআন?

 * সূরা তূর, ৫২: ৪৪ = তারা যদি আকাশের কোন খন্ডকে পতিত হতে দেখে, তবে বলে এটা তো পুঞ্জীভুত মেঘ।

উত্তরঃ পাঠক আপনারা আয়াতটি আবার পড়ুন তো , আল্লাহ কি একবারও দাবী করেছেন যে আকাশ শক্ত পদার্থ ? উত্তর হল না । আবার মেঘ তৈরি হয় আকাশের কোন এক খণ্ড থেকে এই কথা কি কুরআনের আয়াতে বলা আছে ? উত্তর হচ্ছে না । তাহলে কুরআনের আয়াত যা বলে নি সেখানে নিজের মিথ্যাচার প্রবেশ করিয়ে দিয়ে আবার নিজেই সেটির উপর ভিত্তি করে কোন একটি তথ্যকে ভুল প্রমান করা যে কতটুকু হাস্যকর সেটি আপনারাই বিচার করুন । তাই আমরা পরিস্কার ভাবে দেখতে পারছি যে প্রশ্নকর্তা সরাসরি ডাহা মিথ্যাচার করেছেন কুরআনের আয়াত নিয়ে এতে কোন সন্দেহ নেই ।

ধরুন আপনি আর আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি একটি মাঠের কিনারা দিয়ে । আপনি দেখতে পেলেন এক দল যুবক বিড়ি খাচ্ছে । আপনি তাদেরকে বাধা দিলেন এবং বুঝালেন যে দেখ ছেলেরা এসব নেশাদ্রব্য নাস্তিক ধর্মে জায়েজ থাকলেও , এটি খাওয়া ইসলামে নিষেধ , খারাপ কাজ, যা খেলে তমাদের গুনাহ হবে এবং তওবা না করলে মৃত্যুর পরে আল্লাহর আজাব আসবে । আপনি তাদেরকে এত ভাল করে বুঝানোর পরেও তারা আপনার কথায় পাত্তা দিল না । আমি আপনাকে বললাম যে ভাই আপনি তাদেরকে যাই উপদেশ দেন না কেন, আপনার উপদেশের খাজানার এক খণ্ড শুনেও বিড়ি খাওয়াকে একপ্রকার ফ্যাশনই মনে করবে তারা ।

আমার উদাহরণ বুঝে থাকলে বলুন আমি যে বললাম "উপদেশের এক খণ্ড শুনেও তারা বিড়ি সেবন করাকে এক প্রকার ফ্যাশন ভাববে" এরমানে কি আমি বিশ্বাস করি যে বিড়ি খেওয়া ফ্যাশন ? অথবা এরমানে কি আমি দাবী করেছি যে উপদেশ থেকে একখণ্ড পুষ্টিকর নাস্তিকিও বিড়ি তৈরি হয় ? উত্তর হচ্ছে না । ঠিক একইভাবে আল্লাহও কুরআনে সেই কথাটি বলছেন যে কাফেররা যদি আকাশের কোন খণ্ডকে পতিত হতে দেখে, তবে বলবে এটি তো পুঞ্জিভুত মেঘ - কিন্তু এরমানে এই না যে , আল্লাহ দাবী করছেন যে আকাশ শক্ত পদার্থ , এরমানে এই না যে মেঘ তৈরি হয় আকাশের এক খণ্ড থেকে অর্থাৎ কুরআনের আয়াতকে ভুল দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করে সরল সহজ মানুষদের কাছে ডাহা মিথ্যাচার করছেন নাস্তিক ধর্মের অন্ধ বিশ্বাসীরা । আমরা সভ্য চিন্তাশীল মানুষরা খগেনদের মিথ্যাচার দেখে মোটেও অবাক হই না কারন তাদের নাস্তিক ধর্মে মিথ্যা বলা জায়েজ কারন কুরআনে তথা সুরা হজ ২২:৩০ = বলা হয়েছে মিথ্যা হতে দূরে থাক । কুরআনের এই কথা মানলে তারা নাস্তিক হয় কিভাবে ? 

কাফেরদের ইসলাম বিদ্বেষীতা বুঝাতে গিয়েই আল্লাহ সূরা তূর, ৫২: ৪৪ এর কথা বলেছেনঃ বিস্তারিত জানতে দেখুন = তাফহীমুল কুরআন, সুরা তুর ৫২:৪৪ , ১২৮ পৃষ্ঠা দেখুন এবং ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৭/১২৮ পৃষ্ঠা দেখুন । 

প্রশ্ন ৬ = আকাশের দরজা আছে যা খুলে দেয়া হয় নিচের আয়াত তো সেটাই বলছে তারমানে যদি আকাশ শক্ত পদার্থের না হয় তাহলে এখানে দরজার কথা আসবে কেন ?

* সুরা হিজর ১৫:১৪ এবং ১৫ = যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোন দরজাও খুলে দেই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণ ও করতে থাকে। তবুও ওরা একথাই বলবে যে, আমাদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে না বরং আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছি ।

উত্তরঃ মূল উত্তরে যাওয়ার আগে একটি উদাহরণ বুঝে নিন । ধরুন আপনি দীর্ঘ বছর নাস্তিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন । আমাদের যুক্তি আমাদের প্রমান , কুরআনের সত্যতা , নবী মুহাম্মদ (সা) সততা আপনি যাচাই করে আবার এখন নাস্তিক ধর্মের মিথ্যাচার বুঝতে পেরে ইসলামে ফিরে আসলেন । আর আমাকে বললেন যে আলী ভাই আপনারা আমার চোখ খুলে দিয়েছেন, আমার মনের দরজা এতদিন মিথ্যা দিয়ে ডাকা ছিল যেটি আজকে খুলে গিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ ।

আচ্ছা আপনি যে আমাকে বললেন যে আপনার চোখ খুলে গিয়েছে অথবা আপনার মনের দরজা এতদিন বন্ধ ছিল, ইসলাম গ্রহন করার পর সেটি খুলে গিয়েছে - এরমানে কি আপনার চোখের মাঝে "আর এফ এল" এর একটি প্ল্যাস্টিকের দরজা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন অথবা আপনার মনের মাঝে কি কাঠের দরজা ফিট করেছিলেন যে সেটি বন্ধ ছিল ? আপনি সুস্থ মানুষ হলে অবশ্যই বলবেন যে না সেরকম কিছুই ছিল না কিন্তু আপনার কথা সম্পূর্ণ সত্য । সকল সুস্থ মানুষই বলবে যে হ্যাঁ আপনি ঠিক কথাই বলেছেন ।

ঠিক একইভাবে আল্লাহ যে বলেছেন আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এরমানে কি বুঝায় যে আকাশ শক্ত কিছু ? উত্তর হল না । আসলে এরমানে আল্লাহ ইচ্ছা করলে কাফেরদের এমন একটি সিস্টেম তৈরি করে দিতে পারেন যাতে তারা আকাশের দিকে আরোহণ করতে পারবে কিন্তু তারপরেও তারা সেটি মানবে না কারন তারা ইসলাম বিদ্বেষীতা নিয়েই পরে থাকে এবং তারা সত্য বিরোধী ।

তাফসীরে আহসানুল বয়ান , পৃষ্ঠা ৪৫৭ = তাদের (ইসলাম বিদ্বেষীদের) কুফুরী ও বিরুদ্ধাচরন এমন এক পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল যে ফেরেশতা অবতীর্ণ হওয়া তো দূরের কথা । যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং তারা সেই দরজা দিয়ে আকাশে যাওয়া আসা শুরু করে তবুও তাদের চক্ষুতে বিশ্বাস হবে না এবং রাসুলগণকে সত্যিবাদী বলে মেনে নিবে না । বরং তারা বলবে আমাদের চোখে বা আমাদের উপর যাদু করা হয়েছে , যার কারনে আমাদেরকে এরকম মনে হচ্ছে যে আমরা আকাশে আসা যাওয়া করছি , অথচ এমনটি নয় !

তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ১২/২৯ = আকাশের আরোহণ উদাহরণ পেশ করাটাকে তাদের হঠকারিতা বুঝানোর জন্যে ফেরেশতা নাযিলের উদাহরণ থেকে আরও বেশি জোরদার উপমা হিসেবে হাযির করা হয়েছে । কিন্তু হলে কি হবে , ওরা (ইসলাম বিদ্বেষীরা) তো সেই চরম জেদী ও হঠকারী জাতি, যারা সত্যকে দেখেও দেখে না এবং নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে বলে কোন যুক্তিই মানতে চায় না । এভাবে সত্যবিরোধী মনোভাব দেখাতে গিয়ে তারা এতটুকু লজ্জা অনুভব করে না , কোন যুক্তি প্রমান বা কোন দলীলের পরোয়াই তারা করে না আর এজন্যই দিনের আলোর মত সুস্পষ্ট সত্যের বিরোধিতা করতে তারা কুণ্ঠিত হয় না । 

সুতরাং আকাশ শক্ত পদার্থর তৈরি এই দাবী কোন ভাবেই সঠিক প্রমান হচ্ছে না আর আল্লাহর কাছে আকাশে যাওয়া দরজা ওপেন করা একেবারেই সহজ আকাশকে শক্ত পদার্থ না করে - আশা করি বুঝতে পেরেছেন । 

প্রশ্ন ৭ = নিচের আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে আসমান ৭ টি কিন্তু এটি তো অবৈজ্ঞানিক ? প্রকৃতপক্ষে এই মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র দিয়ে গঠিত, সেখানে সপ্তস্তর বলে কিছু নেই! তবে কেন এ ধরণের অসত্য তথ্য?

* সুরা বাকারাহ ২:২৯ = তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত" ।
* সূরা তারেক:১২ = তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং পৃথিবী সেই একই পরিমানে"।
* সুরা নুহ ৭১:১৫ = তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন?”

উত্তরঃ প্রশ্নকর্তার অভিযোগ আরেকবার মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলব আমার চিন্তাশীল পাঠকদের । মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র দিয়ে গঠিত - আচ্ছা এর দ্বারা কি প্রমান হয়েছে যে ৭ আসমান নেই ? উত্তর হচ্ছে না  । হ্যাঁ আপনি যদি বলতেন বিজ্ঞান হুজুর মহাবিশ্ব সম্পর্কে সমস্ত কিছু জেনে ফেলেছে তারা পুরা মহাবিশ্বের সব কিছুই জেনে ফেলেছে এবং তারা দেখেছে যে ৭ আসমান বলে কিছু এই - এই নেন আপনাকে পুরা মহাবিশ্বের এলাকার ঠিকানা দিলাম আপনিও একটা রকেট ভাড়া করে পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে আসেন নিজে চোখে দেখে নেন । - এরকম হলে কোন সমস্যা ছিল না । কিন্তু ৪২০ টাকা দিয়ে ভাড়া একটি রিকশা রকেট দিয়ে যেখানে সূর্য হুজুরের ধারের কাছেও যাওয়া যায় না সেই খগেনরা আবার বলছেন ৭ আসমান বলে কিছুই নেই , তারা মহাবিশ্বে ৭ আসমান বলে কিছু খুজেই পাই নাই - হাস্যকর লাগে এদের যুক্তির করুন অবস্থা দেখে  । নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা এমনভাবে বলে যে ৭ আসমান বলে কিছুই নাই যেন তারা মহাকাশের সীমা-পরিসীমা তাদের জানা রয়েছে তারা সব কিছুই ঘুরে দেখে এসেছে ।

আমরা যদি সাধারণ যুক্তিতে আসি, তাহলে বলতে পারিঃ যে কোন আয়তনের স্থানকেই নির্দিষ্ট পরিমাপ বা গুণাগুণের ভিত্তিতে ৭ বা যে কোন সংখ্যায় বিভক্ত করা যায়। কাজেই “মহাকাশ ৭ স্তরে বিভক্ত নয়” এই কথাটি তাত্ত্বিকভাবে ভুল ।

ধরুন , একটা আলমারীর ৭টা ড্রয়ার আছে। প্রত্যেকটা ড্রয়ারে ২০টা করে কলম আছে। অর্থাৎ আলমারীতে মোট কলম আছে ১৪০টা।কেউ বলা শুরু করলঃ এই আলমারীতে ১৪০টা কলম আছে; কাজেই এতে ৭টা ড্রয়ার থাকতে পারে না! এই ব্যক্তির কথাকে কি কোন যুক্তিসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারবে? নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের যুক্তিও অনেকটা এ রকম। কুরআন বলেছে আসমানের ৭টি স্তরের কথা। নাস্তিকরা এই কথাকে ভুল প্রমাণের জন্য নক্ষত্র আর ছায়াপথের কথা নিয়ে এসেছে। আর সমস্ত নাস্তিকরা পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে দেখে এসেছে এবং তারা ৭ আসমান খুইজা পায় নাইগা ! 

ধরে নিন আপনার বিশাল একটি নদী আছে এখন আপনি সেটাকে স্তরে সাজাবেন , এটিও ধরে নিন যে আপনার নদীর ৭ টি কিনারা আছে । এখন আপনি নৌকা দিয়ে পুরা নদী পর্যবেক্ষণ করলেন । কাগজের মধ্যে লিখলেন ১ নং কিনারা হল প্রথম স্তর এখানে আমি মাছ চাষ করব, ২ নং কিনারা হল দ্বিতীয় স্তর , এখানে আমি বিকেলে নৌকা দিয়ে ঘুরব , ৩ নং স্তরে  আমি একটি ফ্লোটিং মার্কেট বানাব যেখানে মানুষ এসে ঘুরতে পারবে এবং কিনতে পারবে .......এভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি বাকি স্তরকে বিভিন্ন ভাবে সাজালেন । এখন ধরুন আপনার নৌকার মাঝির নাম ছিল আসিফ মহিউদ্দিন । সে আপনাকে বলছে যে মালিক আপনার নদীতে তে তো অনেক মাছ আর অনেক গভীর তাই আপনি যেই স্তরে ভাগ করলেন সেটি অযৌক্তিক । - সহজেই বুঝতে পারছেন যে মাঝীর কথাই আসলে ভিত্তিহীন তেমনি নাস্তিকদের অভিযোগ দুর্বল ।

বিজ্ঞান মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারবে না এই কথার ভিত্তিতে তথা মানুষের সব রহস্য ভেদ করতে পারবে না তা এখন বিজ্ঞান স্বীকার করছে । "কোয়ান্টাম মেকানিক্স" পৃষ্ঠা ১০ -এ স্যার জাফর ইকবাল লিখেছেন যারা বিজ্ঞান চর্চা করে তারা ধরেই নিয়েছে আমরা যখন বিজ্ঞান দিয়ে পুরো প্রকৃতিটাকে বুঝে ফেলব । তখন আমরা সব সময় সবকিছু সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারব। যদি কখনো দেখি কিছু ব্যাখ্যা করতে পারছি না তখন বুঝতে হবে এর পিছনের বিজ্ঞানটা তখনো জানা হয়নি । জানা হলে তখন ব্যাখ্যা করা যাবে । এক কথায় বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বা ভবিষ্যবানী সব সময়ি নিখুত এবং সুনিশ্চিত - কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিজ্ঞানের এই ধারনাকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সবিস্ময়য়ে আবিস্কার করেছেন যে প্রকৃতি আসলে কখনোই সবকিছু জানতে দেবে না । সে তার ভিতরের কিছু কিছু জিনিস মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে । মানুষ কখনোই সেটি জানতে পারবে না । সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে এটি কিন্তু বিজ্ঞানের অক্ষমতা বা অসম্পূর্ণতা নয় । এটাই হচ্ছে বিজ্ঞান । বিজ্ঞানীরা একটি পর্যায়ে গিয়ে কখনোই আর জোরগলায় বলবে না "হবে" তারা মাথা নেড়ে বলবেন "হতে পারে" ।

সুতরাং বিজ্ঞান যেখানে বলছে মহাবিশ্ব সব কিছু এখনো আমাদের জানা হয়নি সেখান আপনি খগেন কিভাবে পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে দেখে আসলেন যে সাত আসমান নাই । আপনি কি পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে দেখেছেন সাত আসমান নাই ? উত্তর হচ্ছে না । তাহলে কুরআন কি দেখেছে মহাবিশ্বে সাত আসমান আছে ? উত্তর হচ্ছেঃ মহাবিশ্বর স্রষ্টা আল্লাহ আর তিনিই ভাল জানেন মহাবিশ্বর সাতটি আসমান আছে সুতরাং আমরাও তাই মানি । 

টীকাঃ আকাশ আল্লাহর একটি সৃষ্টি । তাই আল্লাহ ইচ্ছা করলে আকাশকে কঠিন পদার্থ না বানিয়েই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে কারন আল্লাহ কাছে এরকম করা একেবারেই সহজ ।

 = আল্লাহ্‌ সর্বশক্তিমানঃ তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবানঃতিনি সব কিছু করতে সক্ষমঃ
* সুরা বাকারা ২:২৮৪
* সুরা আল ইমরান ৩:১৮৯
* সুরা মায়দা ৫:১
* সুরা মায়দা ৫:১২০
* সুরা আনাআম ৬:৬৫
* সুরা আনআম ৬:৭৩
* সুরা নাহল ১৬:৭০
* সুরা হজ ২২:৬
* সুরা নুর ২৪:৪৫
* সুরা আনকাবুত ২৯:২০
* সুরা রুম ৩০:৫০
* সুরা ফাতির ৩৫:১
* সুরা ফাতির ৩৫:৪৪
* সুরা ফুসসিলাত ৪১:৩৯
* সুরা শুরা ৪২:৯
* সুরা হাদিদ ৫৭:২
* সুরা তাগাবুন ৬৪:১

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post