লিখেছেনঃ এমডি আলী
======================
ভূমিকাঃ
নাস্তিকদের অন্যতম গোঁজামিল মাস্টার সালমান রুশদীর কথা অনেকেই হয়তো জানেন না। প্রাণীটি অনেক পরিশ্রম করে জোড়াতালি দিয়ে ইসলামকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হয়নি। মিথ্যাচার করে কি সফল হওয়া যায়? উদাহরণ হিসেবে হিরো আলম যেমন অভিনয়, গানের ও ইত্যাদির বারোটা বাজিয়ে খুব ফেমাস হতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি তেমনি অন্ধবিশ্বাসী সালমান রুশদীর অবস্থাও অনেকটা তাই। বেচারা ইসলামের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই বলে ইসলামবিরোধীদের কাছে নায়ক সাজার সস্তা চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা যারা গভীরভাবে পড়াশোনা করি তারা খুব ভালো করেই জানি রুশদীরা ইসলামের বিরুদ্ধে কেমন ভয়ংকর প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
নাস্তিকরা বলে কে কি বলল নাকি কে কি করলো না সেটি নিয়ে নাকি নাস্তিকতা ডিল করে না অথচ এরাই আবার নিজেদের পক্ষের লোক হওয়াতে রুশদীর পক্ষে গোঁজামিল দেয়। কি হাস্যকর বৈপরীত্য।
নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় মিথ্যাচার কথা বৈধ। তাই সালমান রুশদীর মিথ্যাচারের জন্য আমি মোটেও অবাক নি। কারণ যাদের আদর্শে মিথ্যাচার, জালিয়াতি, প্রতারণা করা মুক্তচিন্তার অংশ তাদের এমন কর্ম দেখে অবাক হবার কি আছে তাই না? কুরআন যা বলবে কুরআনবিরোধীরা তো সেটার বিপরীত কাজটাই করবে।
আল কুরআন, সুরা বাকারা ২ঃ৪২ আয়াত থেকে বর্ণিত,
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে তোমরা গোপন করো না।
সুতরাং কুরআনের বিরোধীতা নাস্তিকরা করবেই এই কারণেই তারা ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে। নাস্তিকরা সত্যের সাথে মিথ্যা এবং মিথ্যার সাথে সত্যকে মিশাবেই। মুক্তচিন্তা করাতে নাস্তিকদের কেউ ঠেকাতে পারবে না।
পাঠক আজকে আপনি এমন সত্য জানবেন যা নাস্তিকরা আপনাকে জানতে দিতে চাইবে না। নিজের বিরুদ্ধে গেলেই যদি আপনি সত্যকে গ্রহণ করবার সাহস থাকে তাহলে লেখাটি পুরোটা পড়ুন আর নাহলে পড়বার দরকার নেই।
গারানীকের বিস্তারিত কাহিনীঃ
ইবনু শিহাব (রহ) হতে বর্ণিত আছে যে সূরা নাজম অবতীর্ণ হল এবং মুশরিকরা বলছিল যদি এই লোকটি তথা হযরত মুহাম্মদ (সা) আমাদের দেবতাগুলির বর্ণনা ভাল ভাষায় করতো তবে তো আমরা তাকে ও তার সাথীদের ছেড়ে দিতাম । কিন্তু তার অবস্থান তো এই যে সে তার ধর্মের বিরোধী ইহুদী ও খৃষ্টানদের চেয়ে বেশি খারাপ ভাষায় আমাদের দেবতাগুলির বর্ণনা দিচ্ছে এবং তাদেরকে গালি দিচ্ছে। ঐ সময় রাসুল (সা) ও তার সাহাবীদের কঠিন বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল। মুশরিকদের হিদায়াত লাভ তিনি কামনা করছিলেন।
যখন তিনি সূরা নাজম তিলওয়াত শুরু করেন এবং "তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত উজ্জা ও মানাত সম্পর্কে" পর্যন্ত পাঠ করেন তখন শয়তান দেবতাদের নাম উচ্চারনের সময় তার পবিত্র যুবানে কিছু কথা প্রক্ষিপ্ত করে।যথা "তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত উজ্জা ও মানাত সম্পর্কে যাদের থেকে সুপারিশের আশা করা যায়" - এটি ছিল শয়তানের ছন্দযুক্ত ভাষা । প্রত্যেক মুশরিকের অন্তরে এই কালেমা বসে যায়। প্রত্যেকের তা মুখস্ত হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত এটা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে যে হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজের পূর্ব ধর্ম হতে ফিরে এসেছেন।যখন রাসুল (সা) সূরা নাজমের তিলওয়াত শেষ করে সিজদা করেন তখন সমস্ত মুসলমান ও মুশরিকরাও সিজদায় পড়ে যায়। ওয়ালীদ ইবনু মুগীরা অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিল বলে সে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে ওটা কপালে ঠেকিয়ে দেয়। সবাই বিস্মিত হয়ে যায়। কেননা রাসুল (সা) দুটো দলই সিজদায় ছিল। মুসলমানরা বিস্মিত ছিলেন এই কারনে যে মুশরিকরা আল্লাহর উপর ইমান আনে নাই এটা তারা ভালরূপেই জানতেন। অথচ কি করে তারা রাসুল (সা) ও মুসলমানদের সাথে সিজদা করলো ? শয়তান যে শব্দগুলি মুশরিকদের কানে ফুঁকে দিয়েছিল মুসলমানরা তা শুনতেই পান নাই। এ দিকে তাদের অন্তর খোলা ছিল। কেননা শয়তান শব্দের মধ্যে শব্দ এমনভাবে মিলিয়ে দেয় যে মুশরিকরা তাতে পার্থক্য করতে পারছিল না । সে তো তাদের মনে এই দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিয়ে দিয়েছিল যে , স্বয়ং রাসুল (সা) এই সূরারই এই দুটো আয়াত পাঠ করেছেন।
সুতরাং প্রকৃত পক্ষে মুশরিকরা তাদের দেবতাগুলিকেই সিজদা করেছিল। শয়তান এই ঘটনাকে এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় যে এ খবর হাবশায় পৌঁছে গিয়েছিল । হযরত উসমান ইবনু মাযউন (রা) এবং তার সাথীরা যখন শুনতে পান যে , মক্কাবাসীরা মুসলমান হয়ে গেছে, এমনকি তারা রাসুল (সা) সাথে নামায পড়ছে এবং ওয়ালিদ ইবনু মুগীরা অধিক বুড়ো হওয়ার কারনে এক মুষ্টি মাটি উঠিয়ে নিয়ে তার মাথায় ঠেকিয়েছে এবং মুসলমানরা এখন পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা সাথে রয়েছে তখন তারা সেখান থেকে মক্কায় ফিরে আসার স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন । অতপর তারা খুশি মনে মক্কায় ফিরে আসেন। তাদের মক্কায় পৌছার পূর্বেই আল্লাহ তা"লা শয়তানের ঐ শব্দগুলির রহস্য খুলে দিয়েছিলেন এবং তা সরিয়ে ফেলে স্বীয় কালামকে রক্ষিত রেখেছিলেন। ফলে মুশরিকদের শত্রুতার অগ্নি আরও বেশি প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল তারা মুসলমানদের উপর নতুন বিপদ আপদের বৃষ্টি বর্ষণ শুরু করে দিয়েছিল।
আরেক ভাবে বর্ণিত হয়েছে যেমন কাতাদা (রহ) বলেন যে মাকামে ইবরাহীমের (আ) পাশে নামাযরত অবস্থায় রাসুল (সা) একটু তন্দ্রা এসে যায় এবং ঐ সময় শয়তান তাঁর যুবান মুবারকে এই কথা প্রক্ষিপ্ত করে এবং তাঁর যুবান দিয়ে বেরিয়ে যায় যে দেবতাদের সুপারিশের আশা করা যায় ,মুশরিকরা এই কথাগুলি লুফে নেয় এবং শয়তান এটা ছড়িয়ে দেয়। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় (সূরা হজ ২২:৫৩,৫৪) এবং শয়তান লাঞ্ছিত হয়ে হয়।
গারানীকের ঘটনাটি আরও বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছেঃ
—তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১৪ খণ্ড , ৪৯০ থেকে ৪৯৪ পৃষ্ঠায়, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত।
—তাফসীরে জালালাইন, ৪ খণ্ড, ৩৯৫ থেকে ৩৯৬ পৃষ্ঠায়।
—তাফসীরে ইবনে আবাস, ২ খণ্ড , ৩৮৭ থেকে ৩৮৮ পৃষ্ঠায়।
—তাফহীমূল কুরআন , সূরা হজের ব্যাখ্যা।
—তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন, ৪ খণ্ড, ২৫০ থেকে ২৫১ পৃষ্ঠায়।
—তাফসীর ফী যিলাযিল কুরআন, ১৩ খণ্ড, ২৪৬ থেকে ২৫০ পৃষ্ঠায়।
—তাফসীরে মাযহারী, ৮ খণ্ড, ১৫৯ থেকে ১৬৪ পৃষ্ঠায়।
—তাফসীরে আহসানুল বয়ান , পৃষ্ঠা ৫৯১।
—তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ , সূরা হজ ২২:৫৩,৫৪ ব্যাখ্যায়।
—তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, সূরা হজ ২২:৫৩,৫৪ ব্যাখ্যায়।
গারানীকের ঘটনার বিশুদ্ধতা বিষয়ে বিখ্যাত মুসলিম গবেষকরা কি বলেন?
আসুন জেনে নেই শয়তানের আয়াত অথবা স্যাটানিক ভার্সেস ঘটনাটি কতটুকু সঠিক।
তাফহীমূল কুরআন, সূরা হজ ২২:৫৩,৫৪, পৃষ্ঠা ২১৮ থেকে ২২২ বলা হয়েছেঃ
ইবনে কাসীর ,বাইহাকী, কাযী আইয়ায, ইবনে খুযাইমা, কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবী, ইমাম রাযী, কুরতুবী, বদরুদ্দীন আইনী, শাওকানী, আল্লামা আলুসী প্রমুখ মহোদয়গণ এই ঘটনাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা গণ্য করেন। ইবনে কাসীর বলেন যতগুলো সনদের মাধ্যমে এ হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে সবগুলোই মুরসাল ও মুনকাতে । কোন সহিহ মুত্তাসিল সনদের মাধ্যমে এ হাদিস আমি পাইনি। বাইহাকী বলেন হাদিস বিচারের যথার্থ পদ্ধতিতে এ ঘটনাটি প্রমাণিত নয়। কাযী আইয়ায বলে এর দুর্বলতা এখান থেকেই সুস্পষ্ট যে সিহাহ সিত্তার লেখকদের একজনও নিজের গ্রন্থে একে স্থান দেননি এবং কোন সহিহ মুত্তাসিল ত্রুটিযুক্ত সনদ সহকারে নির্ভরযোগ্য রাবীদের মাধ্যমেও এটি বর্ণিত হয়নি। ইমাম রাযী , কাযী আবু বকর ও আলুসী এর উপর বিস্তারিত আলোচনা করে শক্তিশালী যুক্তির ভিত্তিতে একে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু অন্যদিকে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানীর মতো উচ্চস্তরের মুহাদ্দিস, আবু বকর জাসসাসের ন্যায় খ্যাতিমান ফকীহ, যামাখশারীর মতো যুক্তিবাদী মুফাসসির এবং ইবনে জারীররের ন্যায় তাফসীর, ইতিহাস ও ফিকাহর ইমাম একে সহিহ বলে স্বীকার করেন এবং একেই আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা গণ্য করেন।
ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৪ খণ্ড , ৪৯০ থেকে ৪৯৪ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত বলা হয়েছেঃ
এটা মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর ও এটা বর্ণনা করেছেন। এটা মুরসাল। মুসনাদে বাযযারেও এটা উল্লিখিত হওয়ার পরে রয়েছে যে শুধু এই সনদেই এটা মুত্তাসিলরুপে বর্ণিত হয়েছে। শুধু উমাইয়া ইবনু খালেদের মধ্যমেই এটা মুত্তাসিল হয়েছে । তিনি প্রসিদ্ধ ও বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারী । শুধু কালবীর পন্থাতেই এটা বর্ণিত হয়েছে । ইবনু আবি হাতিম (রহ) এটাকে দুটি সনদে গ্রহন করেছেন । কিন্তু দুটোই মুরসাল। ইবনু জারীরও মুরসাল রূপেই বর্ণনা করেছেন। গারানীকের এই রেওয়ায়েতটি মুরসাল। ইমাম বায়হাকীর (রহ) "কিতাবুল দালায়েলিন নবুওয়াহ" নামক গ্রন্থেও এ রেওয়ায়েতটি এনেছেন । ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইসহাকও (রহ) এটাকে স্বীয় "সীরাত" গ্রন্থে আনয়ন করেছেন । কিন্তু এই সব সনদই মুরসাল ও মুনকাতা।
তাফসীরে জালালাইন ৪ খণ্ড, ৩৯৬ পৃষ্ঠাঃ
গারানীকে কাহিনী অধিকাংশ মুহাদ্দিসের নিকট ঠিক নয়। কেউ কেউ এটাকে মওজু বলেছেন এবং নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের আবিষ্কৃত আখ্যা দিয়েছেন। যে সকল ব্যাক্তি এ ঘটনাকে কিছুটা গুরুত্ব দিয়েছেন বা ধর্তব্য করেছেন। সে ক্ষেত্রে এর জাহেরী শব্দ দ্বারা যে সকল সন্দেহ কুরআন ও হাদিসের অকাট্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সেগুলোর বিভিন্ন উত্তর দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়টি অতি স্পষ্ট যে এ (সূরা হজ ২২:৫৩,৫৪) আয়াতের ব্যাখ্যা এ ঘটনার উপর সীমাবদ্ধ নয়। ইমাম বায়হাকী (রহ) এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন বর্ণনা সূত্রে এ ঘটনা মোটেই স্বীকৃত নয়। ইমাম ইবনে খুযাইমা (রহ) বলেন এ কাহিনী কোন নাস্তিকদের উদ্ভাবিত।
তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ১৩ খণ্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
গারানীকের বিষয়ক বিস্তারিত বিবরণ একমাত্র ইবনে আবি হাতেমের বর্ণনা থেকে জানা যায় । ইবনে শিহাব নামের এক ব্যাক্তি হতে বিস্তারিত জানা যায় কিন্তু এই ব্যাক্তি সাহাবী কিনা তার কোন হদীস নাই।
তাফসীরে ফী যিলযিল কুরআন ১৩ খণ্ড, ২৪৮, ২৪৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
হাদিস বেত্তারা সম্মিলিতভাবে বলেছেন সিহাহ সিত্তার প্রণেতাদের কেউই এই হাদিসটি রেওয়াতের করেনি আর যারা এটা রেওয়ায়েত করেছেন তারাও রাসুল (সা) পর্যন্ত বর্ণনা ধারা পৌঁচেছে বলে দাবি করেননি অর্থাৎ তারা এটাকে মুত্তাসীল হাদিস বলেননি। এ কাল্পনিক হাদিসটিকে কেন্দ্র করে প্রাচ্যের কিছু উর্বর মস্তিষ্ক ব্যাক্তি এবং এ দ্বীনকে দোষারোপকারী কিছু ব্যাক্তি অনেক কিছু কল্পনার জাল বুনেছে এবং মনে করেছে সে এভাবে ইসলামের এই শাশ্বত জীবন সিস্টেমকে সংশয়পূর্ণ করে তোলা যাবে - কিন্তু তাদের এই দিবা স্বপ্ন কোন দিন সফল হয়নি আর কোন দিন হবেও না। ব্যাধিগ্রস্ত কিছু অন্তর ছাড়া এসব বাজে কথায় কেউই কোন দিন কান দেয়নি আর এটাকে কোন দিন আলোচনার কোন বিষয়বস্তু হিসেবেও মনে করা হয়নি। আল কুরআন থেকে যা জানা যায় তাতে এ কথা বেশ বুঝা যায় যে রাসুল (সা) এর জীবনে এই ধরণের ঘটনা কোন দিন ঘটেনি এবং এ ঘটনাটি আলোচ্য আয়াতের কোন শানে নুযূলও নয়।
তাফসীরে আহসানুল বয়ান , ৫৯১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে
গারানীকের ঘটনা কেউ কেউ বর্ণনা করে থাকেন। কিন্তু সত্যানুসন্ধানী উলামাদের কাছে তার কোন অস্তিত্ব নেই।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ , সূরা হজ , ২২:৫৩,৫৪ আয়াতের ব্যাখ্যায়,
গারানীক বিষয়ে দশটি বর্ণনা নিয়ে এসেছেন শায়েখ আলবানী (রহ) এবং সে সকল বর্ণনার ত্রুটি উল্লেখপূর্বক বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সার্বিক তথ্যের দৃষ্টিতে এটা বলা যায় অল্প কিছু মুহাদ্দিস উক্ত ঘটনাকে সহিহ মনে করলেও বেশির ভাগ মহাদ্দিসগণ উক্ত ঘটনাকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন। তবে উক্ত ঘটনা সহিহ অথবা জইফ যাই হোক না কেন তাতে মিথ্যুকবাজ ইসলামবিরোধীদের দাবি সত্য প্রমাণ হয় না। বিস্তারিত সব কিছুই সামনে আসছে। পড়তে থাকুন মন দিয়ে।
কুরআনের রক্ষক যখন আল্লাহ তখন কি করে শয়তানের বাণী আল্লাহর কালামের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে?
এই প্রশ্নটি করে মূর্খ নাস্তিকরা দাবি করে পুরো কুরআনটিই শয়তানের। কারণ শয়তান নিজেই নবীজি ধোঁকা দিয়েছে আর সে হয়তো বুঝতেই পারে নাই। নাস্তিকরা এমন কথা যে পরিস্কার মিথ্যাচার এটার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। আসুন পড়ি সেই প্রমাণ গুলো।
আল কুরআন, সুরা হাজ্জ্ব ২২:৫২,৫৩ আয়াত থেকে বর্ণিত,
আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে।এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়। এ কারণে যে, শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যারা পাষাণহৃদয়। গোনাহগাররা দূরবর্তী বিরোধিতায় লিপ্ত আছে।
আল কুরআন, সুরা শু’য়ারা ২৬:২১০,২১১ আয়াত থেকে বর্ণিত,
এই কোরআন শয়তানরা অবতীর্ণ করেনি। তারা এ কাজের উপযুক্ত নয় এবং তাদের ক্ষমতাও নেই।
আল কুরআন, সুরা তাকভীর ৮১:২৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,
কুরআন বিতাড়িত শয়তানের বানী নয়।
আল কুরআন, সুরা হিজর ১৫:৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,
আমি (আল্লাহ) স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
আল কুরআন, সুরা ইয়া-সীন ৩৬:৫ আয়াত থেকে বর্ণিত,
কুরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ।
আল কুরআন, সুরা হা-মীম ৪১:৪২ আয়াত থেকে বর্ণিত,
কুরআনে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।
আল কুরআন, সুরা হাক্বকাহ ৬৯:৪৩ আয়াত থেকে বর্ণিত,
কুরআন বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
আল কুরআন, সুরা কিয়ামা’ত ৭৫:১৭ আয়াত থেকে বর্ণিত,
এর সংরক্ষণ ও পাঠ আল্লাহরই দায়িত্ব।
যেসব নাস্তিকরা দাবি করছে কুরআন শয়তানের বাণী তাদের কাছে আমার প্রশ্ন থাকবে কুরআন থেকে এমন একটি মাত্র আয়াত দেখাক যেখানে বর্ণিত হয়েছে কুরআন শয়তানের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে? এখন আসুন তাফসীর থেকে প্রমাণ গুলো পড়ে নেই। পাঠক মন দিয়ে পাঠ করুন যাতে ইসলামবিরোধী অন্ধবিশ্বাসীরা আপনাদেরকে ধোঁকা দিতে না পারে।
ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৪ খণ্ড, ৪৯২ পৃষ্ঠায়ঃ
ইমাম বাগাভী (রহ) জবাব দিয়েছেন। মূলত শয়তান ঐ শব্দগুলি লোকদের কানে নিক্ষেপ করে এবং তাদের মধ্যে এই খেয়াল জাগিয়ে দেয় যে এই শব্দগুলি রাসুল (সা) এর পবিত্র মুখ দিয়ে বের হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এরুপ ছিল না। এটা ছিল শুধু শয়তানী কাজ কারবার। এটা রাসুল (সা) এর মুখের আওয়াজ মোটেই ছিল না। এসব ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৪ খণ্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠায়ঃ
মুসলিম গবেষক কাযী আইয়াযও (রহ) "কিতাবুল শিফা" গ্রন্থে একটি জবাব লিখেছেন যে মহান আল্লাহ বলেন আমি তোমার আগে সব রাসুল বা নবী পাঠিয়েছি তাদের কেউ যখনই কিছু আকাঙ্খা করেছে তখনই শয়তান তার আকাঙ্খায় কিছু প্রক্ষিপ্ত করেছে। এর দ্বারা রাসুল (সা) কে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে তার এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনই কারন নেই। কেননা তার আগের নবী রাসুলদেরও এরুপ ঘটনা ঘটেছিল। অর্থাৎ শয়তানের এসব কর্মে যেন নবীজি চিন্তায় না ভুগেন কারন আল্লাহ নিজেই শয়তানের সব কাজ ধ্বংস করে দিয়েছেন।
তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১৩ খণ্ড, ২৪৮ পৃষ্ঠায়ঃ
আল্লাহ যখন তাঁর ফয়সালার কথা জানিয়ে দিলেন এবং রাসুল (সা) এর কথাকে শয়তানের সে ছন্দময় কথা থেকে মুক্ত করলেন তখন মোশরেকরা আবারো তাদের ভুল পথে এবং মুসলমানদের বিরোধিতায় ফিরে গেলো বরং আগের থেকে আরও বেশি কঠিন হয়ে গেলো তাদের বিরোধি ভূমিকা।
পাঠক লক্ষ্য করুন। শয়তান কিন্তু তার শয়তানীতে সফল হয়নি যদি হতো তাহলে উপরের প্রশ্নটি যৌক্তিক হতো। নাস্তিকদের দাবিটি সত্য হতো কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। যেখানে আল্লাহ নিজে শয়তানের সেই চক্রান্তকে ধ্বংস করে দিয়েছেন সেখানে নাস্তিকদের দাবিটি যে মিথ্যা সেটা স্পষ্ট। শয়তান কিছুক্ষণের জন্য ধোঁকা দিয়েছে কিন্তু সে তাতেও সফল হয়নি কারণ আল্লাহ সেটা ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর কুরআন থেকেই স্পষ্ট যে কুরআন শয়তানের নয় বরং আল্লাহরই বাণী।
শয়তান তো মানুষকে ধোঁকা দিবেই। কিন্তু সেই থেকে কুরআন সম্পূর্ণ মুক্ত। নাস্তিকদের কাছে আমার প্রশ্ন থেকে যাবে যে তাফসীর থেকে এমন প্রমাণ দেখাক যেখানে বলা হয়েছে কুরআন শয়তানের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে? নবীজি (সা) শয়তানের বাণী প্রচার করতেন? সবাইকে নবীজি শয়তানের বাণী মানতে বলেছেন? নাস্তিকরা যদি নিজেদের দাবিতে আস্থা রাখে তাহলে প্রমাণ পেশ করুক।
নাস্তিকগোষ্ঠীরা বলে থাকে,
নিচের হাদিসটি থেকে জানা যায়, সুরা নাজমের আয়াত আবৃত্তি করার পরে শুধু মুসলিমগণই নয়, মুশরিকরাও নবী মুহাম্মদের (সা) সাথে তাঁর অনুসরণ করে সকলে সিজদা করলো। কিন্তু সেই সময়ে তো মুহাম্মদ (সা)এর সাথে মুশরিকদের চরম দ্বন্দ্ব এবং শত্রুতা চলছে। কী এমন হলো, যার ফলে নবী মুহাম্মদ (সা) এবং তাঁর অনুসারীরা, সেই সাথে মুশরিকরাও তাঁরই সাথে একত্রে কোরআনের একটি সুরার সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করলো? এমন কী ঘটে গেল? এরকম তো হওয়ার কথা নয়। ভেবে দেখুন, এত বড় আশ্চর্য ঘটনা কীভাবে ঘটে?
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৪৮৬২ , সহিহ হাদিসঃ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ নাজমের মধ্যে সাজদাহ্ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সাজদাহ্ করল। আইয়ুব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্রাহীম ইব্নু তাহ্মান (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইব্নু উলাইয়াহ (রহ.) আইয়ূব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি।-ihadis.com
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৪৮৬৩ , সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সাজদাহর আয়াত সম্বলিত অবতীর্ণ হওয়া সর্বপ্রথম সূরাহ হলো আন-নাজম। এ সূরার মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদাহ্ করলেন এবং সাজদাহ্ করল তাঁর পেছনের সকল লোক। তবে এক ব্যক্তিকে আমি দেখলাম, এক মুঠ মাটি হাতে তুলে তাতে সাজদাহ্ করছে। এরপর আমি তাকে কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। সে হল ‘উমাইয়াহ ইব্নু খাল্ফ।-ihadis.com
নাস্তিকরা পুরো তথ্য না দেখিয়ে অর্ধেক দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়। নাস্তিকদের এসব অন্যায় কাজকর্ম দেখে আমি এখন আর অবাক হই না। কারণ এসব করেই তারা ইসলামবিরোধী চিন্তার মুক্তির আন্দোলন করে। যাই হোক আসুন জবাবটি জেনে নেই।
সহজ নসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, ৯ খণ্ড, ৬২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
মুশরিকদের সিজদাহ করার কারন বর্ণনা করেছেন হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবি (রহ) তিনি লিখেন, সে সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল । তাই সকলেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সিজদাহ দিতে বাধ্য হয়েছিল । কিন্তু এক হতভাগা যার অন্তর ছিল মোহর করা । সে সিজদাহ করলো না। কিন্তু সেও জমি থেকে মাটি নিয়ে অল্প পরিমান কপালে লাগাল। সে বলল আমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। বিস্তারিত দেখুন ফাওয়ায়েদে উসমানি, সূরা নাজম।
যারা উক্ত ঘটনাটিকে সহিহ বলেন নি তাদের দৃষ্টিতে বললে তখন নবীজি (সা) সুরা নাজমের আয়াত তেলওয়াত করছিলেন। আর সুরার মোজেজার কারণেই সবাই ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় সেজদা দিয়েছিল আল্লাহকে। সুরা নাজমের সেই আয়াতটি ছিল এটা আল্লাহর বাণীঃ অতএব আল্লাহ্কে সাজদাহ্ কর এবং তাঁরই ‘ইবাদাত কর। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৬২)।
যদি সেই গারানীকের ঘটনাকে তর্কের খাতিরে সহিহ বলা হয় তাহলে সেই ঘটনার দৃষ্টিতে জবাব হচ্ছে, নবীজির (সা) মুখ থেকে কিছুক্ষণের জন্য কাফেরদের দেবতাদের প্রশংসা বের হয়ে যায় শয়তানের ধোঁকায় আর কাফেররা মনে করে নবীজি (সা) মনে হয় তাদের দেবতাদের মেনে নিয়েছেন, আসলে তা নয়। সুতরাং কাফেররা না বুঝেই সিজদা দিয়েছিল এরপরে অবশ্য জিবরাইল ফেরশতা নবীজিকে এই বিষয়ে জানানোর পরে তিনি কাফেরদের সেটি জানায় আর এতে উগ্র কাফেররা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে নবীজির প্রতি।
তাছাড়া নবীজি (সা) কে না জিজ্ঞাসা করেই কাফেররা সিজদা দেয় আর এটি তারা ছড়িয়ে দিয়েছিল সেহেতু বুঝা যায় যে কাফেররা না বুঝেই এই কাজ করে তাই এখানে কাফেরদের অজ্ঞতা দায়ী কারণ নবীজি (সা) কাফেরদের সিজদা দিতে বলেননি অথবা নবীজি ওদেরকে বলেননি যে তোমরা এটি ছড়াও। বরং আল্লাহ তাঁর ফেরেশতা জিবরাইল (আ) কে দিয়ে নবীজি (সা) কে সংশোধন করলে তিনি সেটা প্রকাশ করেন আর তাতে কাফেররা আরও ক্ষেপে যায়। সুতরাং একটা জিনিস প্রমাণ হয় যে নাস্তিকদের দাবি গুলো মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়। এই কারণেই আমি আগে বলেছিলাম উক্ত ঘটনা সহিহ হলেও কিছু আসে যায় না আর জইফ হলেও কিছু আসে যায় না।
মুসলিম স্কলাররা বিব্রত নাকি নাস্তিকরাই মূর্খ?
নাস্তিকরা বলে,
শয়তানের এই আয়াতটি নিয়ে যে মুসলিম স্কলারগণ বিব্রত ছিলেন, তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় একটি হাদিস থেকে। দেখুন, একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, ইবনু আব্বাস (রা) কোরআনের আয়াতের লাত শব্দের অর্থ বানিয়েছিলেন, একজন ব্যক্তি। দাবি করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি যিনি হাজীদের জন্য ছাতু গুলাতো, এখানে দেবী লাত নয়- তার কথা বলা হয়েছে। অথচ, সহজেই বোঝা যায়, এখানে লাত এবং উজ্জা বলতে কী বোঝানো হয়েছে। এটি কি সাহাবীর ভুল ব্যাখ্যা নয়? যেমনঃ ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৪৮৫৯ , সহিহ হাদিসঃ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আল্লাহ্র বাণী اللاَّتَ وَالْعُزَّى এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ‘লাত’ বলে এ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত।
ইসলাম নিয়ে সঠিকভাবে নাস্তিকদের লেখাপড়া করবার যোগ্যতা নেই এই কারণে নিজের মূর্খ থেকে যা ইচ্ছে তাই বলে দোষ চাপায় মুসলিমদের দিকে। কারণ একটাই নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে হবে যেভাবেই হোক। মুসলিম গবেষকগণ মোটেও বিব্রত ছিলেন না বরং তারা এই ঘটনাকে একেবারেই সাধারণ মনে করতেন এমনকি কিছু কিছু গবেষকতো এই কাহিনীকে কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন বলেও মত পর্যন্ত দিয়েছেন। সুতরাং কোনো মুসলিম স্কলার এই কাহিনী নিয়ে মোটেও বিব্রত ছিলেন না।
এখন আসি প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে সেখানে আরও মিথ্যাচার করেছে মুক্তমনারা। হযরত আব্বাস (রা) নাকি অর্থ বানিয়েছেন কি ভিত্তিহীন কথা এটি। সেই নাস্তিকরা জানেই না যে হযরত আব্বাস (রা) একদম সঠিক ব্যাখ্যাই করেছেন। হযরত আব্বাস (রা) কেন এই ব্যাখ্যা করেছেন সেই “কেন” এর সঠিক কারণ নাস্তিকরা নিজেরা জানে না আর জানলেও সেটা লুকিয়ে অভিযোগটি করেছে।
সহজ নসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারীর খণ্ড ৯ ,৬১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে,
কুরআনের আয়াত "তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উজ্জা সম্বন্ধে" - হযরত আব্বাস (সা) বলেন এখানে লাত বলে এক ব্যাক্তিকে বুঝানো হয়েছে , যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত। কুরআনের আয়াতের সাথে হাদিসের স্পষ্ট মিল রয়েছে। লাত ছিল একজন মানুষ। যার নাম ছিল আমর ইবনে লুহাই । অনেকে বলেন তার নাম রাবীআ ইবনে হারিসা । সে হজের মৌসুমে তায়েফ কিংবা মক্কায় একটি পাথরের পাশে বসতো ও সেখানে ছাতু এবং ঘি মিশ্রিত করে হাজীদেরকে আপ্যায়ন করতো।সে দীর্ঘদিন বেঁচেছিল। যখন সে মারা যায় তখন তার সৃতি হিসেবে ওই পাথরকে তারা মূর্তির রুপ দিয়ে পূজা করতে শুরু করলো । আর এ পাথরের নাম রেখে দিল লাত । বলা হয়, যে তার ছাতু খেত সে মোটা হত বিধায় তার সৃতিস্বরূপ ওই পাথরকে পূজা করতে শুরু করলো ।
পাঠক নিজেরাই বুঝতে পেরেছেন আসল ঘটনাটি কি? স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে যে কুরআনের আয়াতে লাত বলতে এমন এক দেবতার কথা বলা হয়েছে যাকে অমুসলিমরা পূজা করতো এবং সেই দেবীর নাম এই লাত নামের মানুষের নামে ঠিক করা হয়। সুতরাং হযরত আব্বাস (রা) নিজ থেকে কিছু বানান নাই বরং যা সত্য সেটাই বলেছেন। উল্টো নাস্তিকরাই বানিয়ে বানিয়ে রসিয়ে রসিয়ে ইসলামবিরোধীতার বিশ্বাস প্রচার করে যাচ্ছে।
নবীজি (সা) কে আল্লাহর ফেরেশতা আর কে শয়তান পার্থক্য বুঝতেন না?
নাস্তিকরা বলে,
শয়তানের প্ররোচনায় আয়াত নাজিল হয়ে থাকলে, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি যেটি ওঠে, তা হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ (সা) কী কে আল্লাহর ফেরেশতা আর কে শয়তান, তার পার্থক্য বুঝতেন না? এমনও তো হতে পারে, সেই প্রথম যেদিন জিব্রাইলের আবির্ভাব হয়েছিল, সেই আসলে শয়তান ছিল। পুরো কুরআনই আসলে শয়তানের আয়াত। মাঝখানে সত্যিকারের আল্লাহ দুইটি সঠিক সুরা নাজিল করতে পেরেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে শয়তান আবার সেই আয়াতদুটি সংশোধন করে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আমরা কীভাবে শতভাগ নিশ্চিত হবো যে, যেই আল্লাহকে মুসলমানগণ সাড়ে ১৪০০ বছর ধরে উপাসনা করছে, সে আসলে শয়তান আর যাকে তারা শয়তান ভাবছে, সেই আসলে আল্লাহ কিনা। এরকম নিশ্চিতভাবে বোঝার উপায় কী? যেখানে খোদ নবী মুহাম্মদই ধোঁকা খেয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে ধোঁকাটি আরো বড় কিনা, রিভার্স ধোঁকা কিনা, আমাদের নিশ্চিত হওয়ার উপায় কী?
নবীজি (সা) অবশ্যই পার্থক্য বুঝতে পারবেন এই কারণেই তো জিব্রাইল (আ) নবীজি (সা)কে বলে দিলে উনি সব কিছু ঠিক করে নেন তাহলে এখানে এই কথা কেন সত্য হবে যে নবীজি (সা) পার্থক্য করতে পারতেন না? তাছাড়া শয়তান যদি কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ করেই থাকে তাহলে শয়তান নিজেকে কেন জাহান্নামী বলবে? শয়তান কেন নিজেকেই অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা করবে? শয়তান কুরআনে আল্লাহকে কেন মহাবিশ্বের স্রস্টা বলে দাবি করতে চাইবে? তাছাড়া কুরআনের প্রচুর আয়াত রয়েছে যে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে সেখানে নাস্তিকদের মতো অযৌক্তিক কথায় বিশ্বাস করবার কোনো মানে হয় না।
নাস্তিকরা কি এটা বলে যে শয়তান আল্লাহর থেকে বেশি ক্ষমতাবান? তাহলে
আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:৩৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
এবং যখন আমি আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
প্রশ্ন হল ইবলিশ নিজেকে কেন রক্ষা করতে পারলো না? কেন ইবলিশ অনন্তকাল জান্নাতে থাকতে পারল না? কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে নাস্তিকরা পারলে স্পষ্ট জবাব দিক আমার প্রশ্ন গুলোর। নাস্তিকরা যখন মানুষের সামনে স্যাটানিক ভার্সেস নিয়ে কথা বলে তখন সব তথ্য গুলো দেখায় না। ততটুকুই দেখায় যতটুকু দেখালে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে নেয়া যাবে। কিন্তু আমি তো মানুষকে সত্যটা বলেই দিব। শয়তানের অপরাধের জন্য আল্লাহ শয়তানকে জাহান্নামে শাস্তি দিবেন।
আল কুরআন, সুরা বাকারা ২:৩৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,
আর যারা কুফুরি করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে।
নাস্তিকদের উপরের অভিযোগে এই লাইনটি লক্ষ্য করুন "মাঝখানে সত্যিকারের আল্লাহ দুইটি সঠিক সুরা নাজিল করতে পেরেছিলেন" নাস্তিকদের এই লাইনটিই থেকেই প্রমাণ হয় যে কুরআন আসলেই আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে। কিভাবে? কারণ আল্লাহ অবশ্যই শয়তানের থেকে বেশি ক্ষমতাবান। শয়তান হচ্ছে মাখলুক আর আল্লাহ হলেন মহাবিশ্বের স্রস্টা তাহলে আল্লাহ কিভাবে কুরআনে মাত্র দুটো আয়াত অবতীর্ণ করবেন আর শয়তান বাকি সব গুলো অবতীর্ণ করবেন? নাস্তিকদের মগজে যে যুক্তি ঠিক মতো কাজ করে না এটাই প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।
আর শয়তান তার শয়তানীতে সফল হয়নি। কারণ আল্লাহ কুরআনকে হেফাজত করেছেন। কুরআনে যেখানে আল্লাহ নিজেই বলে দিয়েছেন যে তিনিই কুরআনকে রক্ষা করেছেন সেখানে নাস্তিকদের অভিযোগের ভিত্তি কোথায়? কোনোই ভিত্তি নেই।
আল কুরআন, সুরা হিজর ১৫:৯ আয়াত থেকে বর্ণিত,
আমি (আল্লাহ) স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
সুতরাং আল্লাহ নিজে কুরআন রক্ষা করবেন সেখানে নবীজির ধোঁকা খাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। নবীজি (সা) ধোঁকা খানও নি কারণ আল্লাহই উনাকে রক্ষা করেছিলেন। সরাসরি কিছু প্রমাণ দেখে নেই যেখান থেকে প্রমাণ হবে যে নবীজি (সা) অবশ্যই পার্থক্য করতে পারতেন। নবীজি মুহাম্মদ (সা) জিবরাইলকে দেখেছিলেন এমনকি নবীজি মুহাম্মদ (সা) শয়তানকেও দেখেছিলেন। প্রমাণ দিচ্ছি পড়ুন।
সহিহ বুখারি, হাদিস ৬ , সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমাযানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরারীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমাযানের প্রতি রাতেই জিবরীল (‘আঃ) তাঁর সাথে দেখা করতেন এবং তারা একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রহমতের বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন।-hadis.com
সহিহ বুখারি , হাদিসঃ ৪৬১ , সহিহ হাদিস থেকে বর্ণিত,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ গত রাতে একটা অবাধ্য জ্বিন হঠাৎ আমার সামনে প্রকাশ পেল। রাবী বলেন, অথবা তিনি অনুরূপ কোন কথা বলেছেন, যেন সে আমার সালাতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দিলেন। আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, তাকে মসজিদের খুঁটিঁর সাথে বেঁধে রাখি, যাতে ভোর বেলা তোমরা সবাই তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখন আমার ভাই সুলায়মান (‘আঃ)–এর এই উক্তি আমার স্মরণ হলো, “হে প্রভু! আমাকে এমন রাজত্ব দান কর, যার অধিকারী আমার পরে আর কেউ না হয়”- (সূরা সোয়াদ ৩৮/৩৫)। (বর্ণনাকারী) রাওহ্ (রহঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই শয়তানটিকে অপমানিত করে ছেড়ে দিলেন।-ihadis.com
পাঠক এসব তথ্য প্রমাণ আপনারা নাস্তিকদেরকে দেখাতে দেখবেন না কারণ এসব তারা প্রকাশ করলে মানুষকে ঠিক মতো তারা ধোঁকা দিতে পারবে না। নবী মোহাম্মদ (সা) যে জিব্রাইল ও শয়তানের মধ্যে পার্থক্য করতে পারতেন না এসব কথা নাস্তিকদের মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।
শয়তান ওহী নিয়ে আসতো?
আসুন নাস্তিকদের আরও কিছু মিথ্যাচার দেখে নেই এবং তার সঠিক জবাব জেনে নেই।
নাস্তিকরা বলে,
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৪৪১ , সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ঘণ্টা হলো শাইতানের বাঁশি’।-ihadis.com
সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২ , সহিহ হাদিসঃ উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ হারিস ইব্নু হিশাম (রাঃ) আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার নিকট ওয়াহী কিরূপে আসে?’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ [কোন কোন সময় তা ঘন্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই মালাক (ফেরেশতা) যা বলেন তা আমি মুখস্ত করে নেই, আবার কখনো মালাক মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্ত করে নেই।] ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাঁর ললাট হতে ঘাম ঝরে পড়তো।-ihadis.com
যেখানে নবী নিজেই বলেছেন ঘণ্টা শয়তানের বাঁশি আর নবীর (সা) কাছে ওহী আসে ঘণ্টার মত তাহলে শয়তান কি ওহী আনছে না?
নাস্তিকদের এমন গোঁজামিল দেখে আমার হাঁসতে হাঁসতে পেটে খিল ধরে গিয়েছিল। পাঠক আপনারাই বলুন তো নবীজি (সা) কি এটা বলেছেন যে আয়াত অবতীর্ণ হয় যখন তখন সেই ঘণ্টাটি হচ্ছে শয়তানের? এরকম কোনো কথা কি নবীজি (সা) বলেছিলেন? অবশ্যই না। তাছাড়া হাদিস থেকেই স্পষ্ট যে যখন আয়াত অবতীর্ণ হতো তখন ফেরেশতা আয়াত নিয়ে আসতো। ফেরেশতা যা বলতেন সেটাই উনি মুখস্ত করে নিতেন। উনি তো কখনো এমন কথাই বলেন নি শয়তান আমার কাছে আয়াত নিয়ে আসতো আর আমি তা মুখস্ত করে নিতাম। উনি কি কখনো এমন কথা বলেছেন? তাহলে?
"ঘণ্টা বাজার মতো মনে হওয়া" আর "স্বয়ং ঘণ্টা" দুটি শব্দ এবং অর্থও আলাদা। এই সহজ বিষয়টি নাস্তিকান্ধরা বুঝতেই পারেনি। নাস্তিকরা “ঘণ্টা শয়তানের বাশি” ও “ঘণ্টার মতো” দুটো আলাদা শব্দ ও আলাদা অর্থকে একত্রে গুলিয়ে ফেলেছে। আসলে মূর্খ না হলে তো আর নাস্তিক সাজা যায় না। যেই হাদিসে নবীজি (সা) বলেছেন যে ঘণ্টা বাজার মতো ওহী আসে এই ওহী যে শয়তানের ওহী এই কথা কি নবীজি (সা) বলেছেন? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং যেহেতু নবীজি (সা) এমন কিছুই বলেননি সেহেতু শয়তান ওহী নিয়ে আসতো এই দাবি বাতিল ও মিথ্যা।
সিগারেটের ধোঁয়াও আর রোগীকে অক্সিজেন দেয় সেটাও ধোঁয়া কিন্তু দুটোই আলাদা যদিও দুটোই ধোয়া। ইসলামে সিগারেটের ধোঁয়া হারাম ক্ষতিকর এবং রোগীকে অক্সিজেন দেয় এই ধোঁয়া জায়েজ ঠিক একই ভাবে ওহী নাযিলের সময় কেমন হতো এটি বুঝানোর জন্য ঘণ্টার আওয়াজের উদাহরণ নবীজি দিয়েছেন এটি নিঃসন্দেহে সত্য কিন্তু এটি শয়তানের ঘণ্টার মতো নয়। শীতের সকালের সাধারণ মুখের ধোঁয়া আর বিড়িখোরের মুখের ধোঁয়াও কিন্তু ধোঁয়া অথচ এই দুটোতে পার্থক্য আছে।
নসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, ১ খণ্ড, ১৬০ ও ১৬১ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়,
নবীজি (সা) এর কাছে "ঘণ্টাধ্বনির ন্যায় ওহী আসে" এই কথাটি উদাহরণ বা উপমা হিসেবে বলা হয়েছে। অথচ ঘণ্টার আওয়াজ খুবই নিন্দনীয়। যা করতে রাসুল (সা) নিষেধ করেছেন । এক বর্ণনায় আছে, যে কাফেলায় ঘণ্টি থাকে তার সাথে রহমতের ফেরেশতা থাকে না । কিন্তু যেহেতু উপরে সেই হাদিসে উপমার কারন স্পষ্ট, এটি হল ধারাবাহিক ও অবিরত হতে থাকা এজন্য কোন অসুবিধা নেই। এ ধরনের বহু উপমা হাদিসে রয়েছে। যদি কেউ বলে অমুক ব্যাক্তি সিংহের ন্যায়, তখন সর্ববিষয়ে উপমা দান উদ্দেশ্য হয় না বরং উপমা দানের একটি বিশেষ গুন থাকে। অর্থাৎ বীরত্ব। একইভাবে এই হাদিসেও উপমার কারন ধর্তব্য অর্থাৎ রাসুলের কাছে ওহী আসে ঘণ্টাধ্বনির ন্যায় কিন্তু এরমানে এই না যে শয়তান ওহী নিয়ে আসে।
নাস্তিকরা এরপরে বলে,
তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি, নবীর কাছে আল্লাহর ওহীই আসতো। কিন্তু মহাবিশ্বের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ পাকের ওহী সামান্য এক সৃষ্টি শয়তান উল্টেপাল্টে দিচ্ছে, ভুলভাল ঢুকিয়ে দিচ্ছে, এই কথা কী মেনে নেয়া যায়? আল্লাহ পাকের সিকিউরিটি সিস্টেম কী এতটাই দুর্বল ছিল?
আল্লাহর সিকিউরিটি সিস্টেম দুর্বল তখনই প্রমাণিত হতো যদি শয়তান তার শয়তানীতে সফল হতো কিন্তু যেহেতু সে সফল হয়নি সেহেতু আল্লাহর সিকিউরিটি সিস্টেম দুর্বল এই কথা ভিত্তিহীন। আর শয়তান এইটুকুও করতে পারছে কারণ আল্লাহ ওকে এই সুযোগটুকু দিয়েছে। এটি আল্লাহর পরীক্ষা বান্দার প্রতি। আল্লাহর সিকুউরিটি সিস্টেম মোটেও দুর্বল নয়। যদি দুর্বল হতো তাহলে আল্লাহ শয়তানের ধোঁকা নষ্ট কিভাবে করলো? আল্লাহ নিজেই যখন কুরআনে স্পষ্ট বলেছেন যে কুরআন আল্লাহ রক্ষা করবেন সেখানে আর কোনো কথা থাকে না। যেমন এই আয়াতটি পড়ুন।
আল কুরআন, সুরা হাজ্জ্ব ২২:৫৩ আয়াত থেকে বর্ণিত,
শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যারা পাষাণহৃদয়। গোনাহগাররা দূরবর্তী বিরোধিতায় লিপ্ত আছে।
নাস্তিকরা এরপরে প্রশ্ন করে,
শয়তানের ধোঁকা দূর করতে আল্লাহ কেন অনেক সময় নিয়েছিলেন?
উত্তর হচ্ছে, মোটেও অনেক সময় নেননি বরং উক্ত ঘটনা মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানা যায় নবীজি (সা) যখন সাময়িক শয়তানের ধোঁকার স্বীকার হন ঠিক তখনই আল্লাহ জিবরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে তা ঠিক করে দেন । কিন্তু পিছনে সেসব উগ্র কাফেররা উপস্থিত ও যারা শুনেছিল ছিল নবীজি (সা) তাদের সংশোধনের আগেই তারা না জেনেই ছড়িয়ে দেয় ফলে ব্যাপারটা গুজবে পরিণত হয়। সুতরাং আল্লাহ শয়তানের ধোঁকা দূর করতে সময় নিয়েছিলেন এটি মিথ্যা কথা।
স্যাটানিকের ভার্সেস ঘটনাটিকে সঠিক ধরে নিলেও কিছু আসে যায় না। নাস্তিকদের কাছে আমার আরও প্রশ্ন থেকে যাবে। তা হচ্ছে নবীজি মুহাম্মদ (সা) যদি ইচ্ছা করেই দেবতাদের প্রশংসা করেন কাফেরদের খুশি করার জন্য তাহলে তিনি এরপরে আবার কেন তাদের বিরুদ্ধে বলতে গেলেন? যেখানে কাফেরদের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাথে সাথেই সন্ত্রাসী কাফেররা নবীজির (সা) ও তার সাথীদের উপর আরও খেপে যায়? তাহলে কি এটা প্রমাণ হচ্ছে না যে কুরআন আসলে নবীজি (সা) নিজে বানিয়ে বানিয়ে বলেন নি বরং আল্লাহ যা বলতে বলেছেন সেটাই উনি বলেছেন? আর কুরআন নবীজি (সা) কোনো বই থেকেও কপি করেন নি? যদি করতেন তাহলে তো কাফেরদের দেবতাদের নিয়ে ভালো ভালো কথা লিখে কুরআন কাফেরদের কাছে সেল করতে পারতেন?
সন্ত্রাসী কাফেররা নবীজি (সা) থেকে শুরু করে উনার অনুসারীদেরকে হত্যা করতে চেয়েছিল এসব কি মুক্তচিন্তায় বৈধ নয়?
নাস্তিকদের আরও কিছু ধাপ্পাবাজিঃ
নাস্তিক্যধর্ম বিশ্বাসী নাস্তিকরা বিশ্বাস করে থাকে যে স্রস্টার অস্তিত্ব বলে কিছু নেই। পরকাল বলে কিছু নেই। নবী রাসুল বলে কিছু নেই। শয়তান, ফেরেশতা, জীন এসব বলে কিছুই নেই। কিন্তু নাস্তিকরাই আবার দাবি করে বসছে যে “কুরআন শয়তানের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে” কি হাস্যকর ও পরস্পর বৈপরীত্য তাই না? খেয়াল করেছেন। কোনো নাস্তিক যদি বিশ্বাস করে কুরআন শয়তানের পক্ষে থেকে অবতীর্ণ হয়েছে তাহলে সে নাস্তিক হতে পারছে? নাকি নাস্তিক্যধর্মের মুরতাদ হয়ে গেলো?
নাস্তিকরা কি বিজ্ঞান লেখক হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন এদের বই পড়ে টাইম মেশিন আবিস্কার করে শয়তানের সাক্ষাৎ পেয়েছিল নাকি? ইসলামের দেয়া পরিস্কার বর্ণনা ত্যাগ করে নাস্তিকরা নিজেরাই শয়তানের দেয়া বিধান আবিস্কার করছে না তো মনের অজান্তেই?
নাস্তিকরা বলে থাকে নাস্তিকতা নাকি কোনো ধর্ম নয়। কে কি করলো? কে কি করলো না? এসব নিয়ে নাকি নাস্তিকতা ডিল করে না তাহলে নবীজি (সা) কি করলো? ফেরেশতা কি করলো? শয়তান কি করলো? কুরআনে কি আছে কি নেই? এসব নিয়ে নাস্তিকরা কেন ডিল করতে চায়? নাস্তিকরা কেন মানুষকে ইসলাম ত্যাগ করতে বলে? শয়তানের অস্তিত্ব যেখানে অস্বীকার করে নাস্তিকরা সেখানে কুরআন শয়তানের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে কথাটি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারে?
নাস্তিকদের বই পত্র থেকে কিছু কথা জেনে নেই। তাহলে বুঝতে পারবেন নাস্তিকরা নিজেদের বই পত্রও ঠিক মতো পড়ে দেখে না।
ভাষাবিজ্ঞানী নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ তার “আমার অবিশ্বাস” বইয়ের ভূমিকার শেষের দিকে ফতোয়া পাওয়া যায় যে,
মানুষের জন্যে যা ক্ষতিকর , সেগুলোর শুরুতেই রয়েছে বিশ্বাস, বিশ্বাস সত্যের বিরোধী, বিশ্বাসের কাজ অসত্যকে অস্তিত্বশীল করা , বিশ্বাস থেকে কখনো জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না, জ্ঞানের বিকাশ ঘটে অবিশ্বাস থেকে, প্রথাগত সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে না মেনে তা পরীক্ষা করার উৎসাহ থেকে।
এই ফতোয়াকে সামনে রেখে আমরা নাস্তিকদের সকল অভিযোগ বিশ্বাস করবো না বরং অবিশ্বাস করবো তাহলে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। তাই পাঠক আমার সাথে সাথে বলুন আমরা অবিশ্বাস করি অর্থাৎ আমরা বিশ্বাস করি না যে "কুরআন শয়তানের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ” "নবীজি মুহাম্মদ (সা) এর কাছে শয়তান ওহী নিয়ে আসে" "আল্লাহর সিকিউরিটি সিস্টেম দুর্বল" "নবীজি শয়তানের থেকে রিভার্স ধোঁকা খেতে পারে" ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি নাস্তিকদের এসব অভিযোগ আমরা বিশ্বাস করি না। নাস্তিকদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে আমরা অবিশ্বাস করি। আমার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে এখন।
"আমার অবিশ্বাস" কিতাবের ১৭ পৃষ্ঠায় ফতোয়া দিয়েছেন যে,
তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথও নিরর্থক, আইনস্টাইনও নিরর্থক, ওই গোলাপও নিরর্থক, ভোরের শিশিরও নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ।
এই ফতোয়ার সুত্র থেকে স্পষ্ট পরিস্কার হয় যে "কুরআনে শয়তানের আয়াত আছে" "নবীজি মুহাম্মদ (সা) এর কাছে শয়তান ওহী নিয়ে আসতো" "আল্লাহর সিকিউরিটি সিস্টেম দুর্বল" ইত্যাদি সমস্ত অভিযোগও অর্থহীন অর্থাৎ নিরর্থক আর যেটা নিরর্থক সেগুলা বাতিল এবং ভিত্তিহীন। তাই নাস্তিকদের সকল অভিযোগ নিরর্থক ও ভিত্তিহীন।
"আমার অবিশ্বাস" কিতাবের ১০১ নং পৃষ্ঠায় ফতোয়া দিয়েছেন,
"যে শয়তান কোথাও নেই"।
সুতরাং নাস্তিকধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী যেহেতু শয়তান কোথাও নেই সেখানে নাস্তিকদের "কুরআন শয়তানের নাজিল করা বই” দাবি সহ ইত্যাদি দাবিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
উপসংহারঃ সকল তথ্য প্রমাণ সামনে রাখতে এটা যৌক্তিক যে কুরআনে কোথাও শয়তানের প্রভাব নেই। কুরআন সম্পূর্ণ আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে। নাস্তিকরা নিজেদের ইসলামবিরোধী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে মুক্তচিন্তায় মিথ্যাচার করেছে । নাস্তিকদের সকল অভিযোগ যে মিথ্যা তা প্রমাণ হয়েছে। সকল তথ্য প্রমাণ আপনাদের সামনে আপনারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
টিকাঃ স্যাটানিক ভার্সেসের ঘটনা গুলো যে বেশির ভাগই জাল জইফ তার প্রমাণ জানতে নিচের লেখা গুলো পড়তে পারেন।
The false story of Gharaaneeq:
“Satanic verses”: