নাস্তিক্যধর্মের ভেদে মারেফত



বিষয়ঃ নাস্তিক্যধর্মের ভেদে মারেফত
👉লিখেছেনঃ এম ডি আলী
নৈতিকতা যুক্তিবিদ্যা এবং বিবর্তনবাদ এ তিনটি শব্দই সাংঘর্ষিক । কারন নৈতিকতাকে আপনি কখনোই যুক্তিবিদ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবেন না কারন নৈতিকতা শুধুই একটি বিশ্বাস । হ্যাঁ মুমিনরা এই বিশ্বাস করে কারন ইসলাম তাদের মানদণ্ড, কিন্তু সমকামীরা এই কথা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করবে না কারন নাস্তিক ধর্মে বিশ্বাস মানেই ভাইরাস।
নৈতিকতা সঠিক হলে বিবর্তন মিথ্যা আর বিবর্তন সঠিক হলে যুক্তিবিদ্যা ভুল । কিভাবে ? বিবর্তনের বিশুদ্ধ আকিদা মতে এই দুনিয়ার সবাই প্রাণী । একটি সাপ আর মানুষের মাঝে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই । তাই সাপই নয় শুধু বরং সকল প্রাণীকে যেখানে বিবর্তনবাদ নৈতিকতা দেয় নি বা অক্ষম সেখানে মানুষ নামক প্রাণীকে বিবর্তন কবে , কিভাবে নৈতিকতা দিয়েছে ? সহজ উত্তর হচ্ছে বিন্দুমাত্র নৈতিকতা দেয় নি । কোন প্রাণীর মাঝেই নৈতিকতা নেই ।
হয়ত বলতে পারে গরু ছাগলের মধ্যে তো নৈতিকতা আছে যেমন গাভী তার বাছুরকে ভালবাসে , ছাগল তার বাচ্চাদের ভালবাসে এভাবে ইত্যাদি । প্রশ্ন হল ভালবাসা কাকে বলে ? এটির সংজ্ঞা কে দিয়েছে এবং কারা দিয়েছেন ? তাদের কথা কি নাস্তিক ধর্ম ডিল করে ? তাদের কথা মানতে আমরা বাধ্য কেন ? যদি বাধ্য হই তাহলে আমাদের কি নিজের মতামত এর স্বাধীনতা নেই ? আমাদের ব্যাক্তি স্বাধীনতা নেই ? যদি স্বাধীনতা থাকে তাহলে সেসব বর্ণনা করাই বা কেন দরকার ? ইচ্ছা মত চললেই তো হয় ! নাস্তিক ধর্ম কি আসলেই এসব সমাধান দিতে পারে ?
সমকামীদের গরু ছাগলের নৈতিকতাই ধরে নিলাম সহিহ তাহলে প্রশ্ন হল গরুর নৈতিকতা কি ছাগলের মধ্যে পালনীয় ? অথবা ছাগলের নৈতিকতা কি কুকুরের মধ্যে পালনীয় ? গরু ছাগলের নৈতিকতা কি মানুষের মাঝে পালনীয়? ব্যাখ্যা করুন নাস্তিক ধর্ম দিয়ে। আপনিই বা ব্যাখ্যা করার কে ? আপনার ব্যাখ্যা কেন মানব সমাজ বিশ্বাস করবে যেখান নাস্তিক ধর্মে বিশ্বাস মানেই ভাইরাস ?
আমি একটি কথা প্রাই বলি বিবর্তন সত্য হলে নৈতিকতা অযৌক্তিক আর নৈতিকতা সত্য হলে যুক্তিবিদ্যা সেখানে অচল।
এখন আসি কেন নৈতিকতা আর যুক্তিবিদ্যা একে অপরকে বাতিল করে দেয় । আপনি চেষ্টা করুন। একজন বুড়ো মানুষকে কেন একটি যুবক সম্মান করবে ? এই প্রশ্নের পিছনে যৌক্তিক কারন বের করার চেষ্টা করুন তো । বরং যুক্তি দিয়ে এটা প্রমান করা যায় যে একজন শক্তিশালী যুবক কখনোই বড়দের সম্মান করতে পারে না কারন শক্তিশালী কেন দুর্বলকে সম্মান দিবে ? বিবর্তনে তো একটি বাঘ কখনোই হরিণকে সম্মান দেয় না ? একটা ছোট কুকুর তো বড় কুকুরকে সম্মান করে না,? সমুদ্রে হাজার হাজার কোটি কোটি প্রাণী আছে যাদের মধ্যে এসব সম্মান অথবা ভাল মন্দ বলে কিছুই নেই তাহলে মানুষের মাঝে কেন থাকবে? বিবর্তনের আকিদা মতে?
সমকামীরা অনেক সময় বলে তারা নাকি যুক্তিবাদী যদিও নাস্তিক ধর্ম যুক্তিবিদ্যা নিয়েও ডিল করে না । আচ্ছা ধরে নিলাম যে তারা যুক্তিবাদী তাহলে প্রমান করুন কেন একজন শক্তিশালী যুবক একজন বুড়ো বয়স্ক মানুষকে সম্মান করতে বাধ্য ? মাত্র একটি কারন আমি জানতে চাই । হ্যাঁ , মাত্র একটি। আবারো বলছি মাত্র একটা কারন দেখান আমাকে।
মরহুম পীরে কামেল জার্মানি, গবেষক, সমকামীতায় বিশ্বাসী, মুক্তচিন্তক, খগেনিজম প্রচারক অভিজিৎ রায় স্যার এর একটি বিখ্যাত কেতাব > নাম হল "বিশ্বাসের ভাইরাস" । এই কেতাবে 'বিশ্বাস' জিনিসটাই যে খারাপ সেটাই নাস্তিক ধর্ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । সুতরাং নাস্তিক ধর্মের সমকামীরা বিশ্বাস করতে পারবে না কিচ্ছুই । এমনকি ‌>
* স্রষ্টা নেই।
* বিবর্তন আকিদা বিশ্বাস সহিহ।
* ইসলাম নিয়ে সকল অভিযোগ সংশয়।
ইত্যাদি এসবের কোন কিছুই নাস্তিকরা বিশ্বাস করতে পারবে না এমনকি এর বিপরীত কিছুও বিশ্বাস করতে পারবে না । পারবে না অবিশ্বাস করতেও কারন অবিশ্বাস করাও এক প্রকার বিশ্বাস ।
নিচের ছোট আলাপটি কল্পনা করুনঃ
> আপনি কি অবিশ্বাস করেন যে স্রষ্টা আছে ?
= হ্যাঁ আমি অবিশ্বাস করি ।
> স্রষ্টা নেই এই আকিদা আপনি বিশ্বাস করেন ?
= হ্যাঁ করি
> তাহলে স্রষ্টা নেই এই কথাও আপনি অবিশ্বাস করছেন না ?
= না ।
> তাহলে স্রষ্টা আছে এই কথা আপনি বিশ্বাস করছেন না ?
= একদম না ।
> তাহলে স্রষ্টা নেই এটি বিশ্বাস করছেন ?
= হুম অবশ্যই করি ।
> কিন্তু নাস্তিক ধর্মে তো বিশ্বাস মানেই ভাইরাস, স্রষ্টা নেই এই বিশ্বাস করাও ভাইরাসের অন্তর্ভুক্ত ?
= খগেন ৪২০ ERROR
পাঠক আরও মজার ফতোয়া শুনুন । মরহুম নাস্তিক ধর্ম প্রচারক হুমায়ূন আজাদ স্যার তার 'আমার অবিশ্বাস' নামক কেতাবে বিশ্বাস কে মহামারী বলে ফতোয়াই নয় বরং সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন যে বিশ্বাস মানেই ভয়ংকর মহামারী ।
'আমার অবিশ্বাস' ২২ নং পৃষ্ঠাঃ বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধরে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে, পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস।
সুতরাং উপরের সহিহ ফতোয়া সামনে রাখলে নিচের সকল নাস্তিক ধর্মের মাসালা পরিস্কারঃ
১ > ইসলাম মিথ্যা = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
২ > স্রষ্টা নেই = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
৩ > বিবর্তন আকিদা সত্য = এী কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
৪ > সংশয়বাদী হওয়া উচিৎ = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
৫ > নাস্তিকতা মানব ধর্ম = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
৬ > সমকামীতা ভাল = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
৭ > নাস্তিক্যবাদী বিজ্ঞানীরা সহিহ কথা বলে = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
৮ > মরহুম ডারুইন কাকা সহিহ কথা বলেছেন = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
৯ > পরকাল নেই = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
১০ > জান্নাত জাহান্নাম সহ ইত্যাদি সকল অদৃশ্য এসব কিছুই নেই = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
১১ > সব কিছুই শুন্য থেকে নিজে নিজেই তৈরি হয়েছে = এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না ।
এরকম হাজার নয় আরও বেশি কিছু আছে যা নাস্তিক ধর্ম বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যেমন "বিশ্বাস হল মহামারী" এই কথাটিই ধরুন । যে মানুষ নিজে এই ফতোয়া দিয়েছেন তার কথাই তো বিশ্বাস করা যাবে না কারন আরেকজনের ফতোয়ায় আছে যে বিশ্বাসের ভাইরাস!!
তাই আমি > সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম সে কখনও করেনা বঞ্চনা ।
এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post