প্রমানের বৈপরীত্য

প্রমানের বৈপরীত্য

লিখেছেনঃ এমডি আলী।

ভূমিকাঃ

স্রষ্টার প্রমান নেই, স্রষ্টার প্রমান নেই যখন প্রশ্ন করা হয় আপনি আসলে কেমন প্রমান চাচ্ছেন কারণ মুমিনরা একবার নয় বরং লক্ষবারের বেশি প্রমান দিয়েছে যে "স্রষ্টার আছেন" এখন প্রমান বলতে আপনি কেমন প্রমান চাইছেন? এটা বলেন না কেন? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব নাস্তিকরা ঠিক মতো দিতে চায় না অথবা দিতে পারে না। “স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” নাস্তিকদের এই বিশ্বাসটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঐক্যমত নেই। বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এই বিষয়ে। প্রমান নিজেই প্রমানিত কিনা বস্তুবাদী দৃষ্টিতে সেটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নাস্তিকরা বস্তুবাদী হয়ে থাকে। তাই বস্তুবাদী দৃষ্টিতে প্রমান নিয়ে কথা বলা দরকার আছে। নাস্তিকরা প্রমান নিয়ে স্পষ্ট করে তেমন একটা কথা বলে না। “প্রমান নেই” “প্রমান নেই” বলে মাঙ্কিদের মতো ফালাফালি না করে নাস্তিকদের উচিত আজকের লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করা।

বস্তুবাদী দৃষ্টিতে প্রমান আসলেই গুরুত্বপূর্ণ?

দুনিয়াতে সত্য জেনে লাভ কি? প্রশ্নটি আপনি প্রথম শুনে থাকলে আপনার কাছে অবাক লাগাটা স্বাভাবিক কিন্তু কেউ যদি বিশ্বাস করে আমাদের এই দুনিয়ার সব কিছুই অর্থহীন,আমাদের এই জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই, মৃত্যুর পড়ে কিছু নেই, স্রস্টা বলে কিছু নেই এমনকি মানবজাতির এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে জন্তু জানোয়ার হতে হতে বর্তমানের এই মানুষ সমাজের আসা। তখন প্রশ্নটি নিয়ে আপনার কথা কি হবে? সব কিছু যদি অর্থহীন হয় তাহলে সত্য জেনে লাভ কি? বস্তুবাদী দৃষ্টিতে একজন মানুষ যে কিনা কখনো সত্য জানে নাই তাহলে তার কি ক্ষতি হবে সে মানুষ মিথ্যা জেনে মরেছে তার তুলনায়? কোনো ক্ষতি আছে?

আমি নাস্তিকদেরকে যতোই যুক্তি প্রমান দিয়ে বুঝিয়ে বলি না কেন তারা সেটা স্বীকার করতে চাইবে না কারণ কি জানেন? কারণ হচ্ছে নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে এই দুনিয়া অর্থহীন। এই দুনিয়ার নৈতিকতা অর্থহীন। সব কিছু অর্থহীন। নাস্তিকদের মুক্তচিন্তার বই থেকেই এসব কথা বলা আছে। যেকোনো নাস্তিক চাইলেই সব কিছুকে অর্থহীন বিশ্বাস করতে পারবে এসব নাস্তিক্যধর্মের মুক্তচিন্তায় জায়েজ আছে।

আমাদেরকে সঠিক ভাবে নাস্তিক্যধর্ম জানতে দেয়া হয়নি বরং কিছু অসৎ মিথ্যুক নাস্তিক যারা এই নাস্তিক্যধর্মকে নিয়ে বিজনেস করছে অনলাইনে তারা আর যাই বলুক আমাদেরকে সঠিক এবং বিশুদ্ধ নাস্তিক্যধর্ম জানতে দিবে না এটা তো নিশ্চিত কারণ একজন সাধারন চিন্তাশীল মানুষ যদি এর ভিতরের লুকানো সত্যতা জেনে যায়, বুঝে যায় তাহলে সে আর এই মতবাদে যে বিশ্বাস ধরে রাখতে পারবে না এটাও সূর্যের মতোই পরিস্কার। নাস্তিকদের নাস্তিক্যধর্মকে বুঝতে হবে। যাচাই করতে হবে। প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। যুক্তি দিয়ে সমালোচনা করতে হবে। আসুনে জেনে নেই নাস্তিকদের বই পত্রে যা বলা আছে।

নাস্তিক মুক্তমনা হুমায়ুন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের ১৭ নং পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ 

তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক , আইনস্টাইন নিরর্থক, ওই গোলাপও নিরর্থক, ভোরের শিশিরও নিরর্থক, তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক, দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ

তাহলে স্পষ্ট যে প্রমান অর্থহীন, সত্য অর্থহীন, যুক্তি অর্থহীন, চিন্তা করা অর্থহীন, নৈতিকতা অর্থহীন ইত্যাদি সব কিছুই অর্থহীন। এখানে নাস্তিকরা যদি বলে হুমায়ুন আজাদের কথা মানি না তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আপনার কথাও তো হুমায়ুন আজাদ মানে নি, তাহলে? হুমায়ুন আজাদ যেই মুক্তচিন্তা করেছে সেটা যেমন নাস্তিক্যধর্মে জায়েজ তেমনি কোনো নাস্তিক যদি নিজের মতো করে অন্য মুক্তচিন্তা করে সেটাও নাস্তিক্যধর্মে জায়েজ আছে। কারণ নাস্তিক্যধর্মে চিন্তার মুক্তির স্বাধীনতা আছে।

আমরা জানি কারো কোনো দাবি সত্য সাব্যস্ত করার জন্য সে তথ্য, সত্য সাক্ষ্য, দাবির পক্ষে যুক্তি বা বিশ্বাসযোগ্য সমর্থক কিছু ,সত্য বিশ্বাসযোগ্য নিদর্শন বা চিহ্ন, প্রত্যক্ষ নজির ইত্যাদি সবই প্রমানের অংশ অথবা সেসবের সম্মিলিত রুপকেই প্রমান বলা হয়। কিন্তু নাস্তিক্যধর্ম এই সংজ্ঞা ডিল করে না কারন স্রষ্টাকে প্রমানের অভাবে বাতিল করে দেয়াকেই নাস্তিক্যবাদ বলা হয় আর একে ধারন করা হয় বলেই আমরা একে নাস্তিক্যধর্ম বলে সম্বোধন করে থাকি। ফুটবল খেলা যেমন মানুষের জীবন দিয়ে ডিল করে না ঠিক নাস্তিক্যধর্ম মানুষের জীবন নিয়ে ডিল করে না এমনকি "প্রমানের সংজ্ঞার নীতি সেট করার সময়ও"। কোনো মানুষ কি করলো বা বলল ইত্যাদি নাস্তিক্যধর্ম ডিল করে না ঠিক একই যুক্তিতে প্রমান কাকে বলে এটার উত্তর কোনো মানুষ কখনোই প্রদান করতে পারবে না কারন মানুষের কোনো কিছু নিয়েই ডিল করে না। নাস্তিকরাই বলে থাকে নাস্তিকতা ধর্ষণ নিয়ে নাকি ডিল করে না, মানুষের কিছু নিয়ে ডিল না। তাহলে প্রশ্ন তো আসবেই তাহলে নাস্তিকরা কেন অন্যদের জীবন নিয়ে ডিল করতে যায়?

তাই এরপরে কোনো নাস্তিক যদি আপনার সামনে বলে “প্রমান দেন” “প্রমান দেন” তখন তাকে প্রশ্ন করবেন আপনার নাস্তিক্যধর্ম প্রমান নিয়ে ডিল করে কিভাবে? তাকে প্রশ্ন করুন আপনার কাছে যা প্রমান সেটা কি সবার কাছেই প্রমান? প্রমান কাকে বলা হবে এটা কোন মানুষ আপনাকে ঠিক করে দিয়েছে? প্রমান কাকে বলা হবে না সেটাও আপনাকে কোন মানুষ ঠিক করে দিয়েছে? তাকে প্রশ্ন করুন, মুক্তচিন্তায় প্রমানের সংজ্ঞা কি নিজ থেকে নির্ধারণ করা যাবে? 

অন্য মতবাদ বিষয় মুক্তচিন্তা করা যাবে আর নাস্তিক্যধর্ম নিয়ে মুক্তচিন্তা করা যাবে না এই ফতোয়া কে দিয়েছে শুনি? নাস্তিকতা নিয়ে মুক্তচিন্তা করা যাবে না কেন? সংশয়বাদ নিয়ে মুক্তচিন্তা করা যাবে না কেন? ডারউইনবাদ নিয়ে মুক্তচিন্তা করা যাবে না কেন? নাস্তিকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মুক্তচিন্তা করা যাবে না কেন? নাস্তিকদের বিশ্বাসের মধ্যে প্রচুর বৈপরীত্য রয়েছে কিন্তু নাস্তিকরা চিন্তাভাবনা করে না দেখে দেখতে পারে না। যেহেতু মৃত্যুই শেষ ঠিকানা তাই প্রমান চাইলেই কি? আর দিলেই বা কি? আর সত্য বললেই বা কি? মিথ্যা বললেই বা কি? সবই শুন্য কারন শেষ পরিনতি মৃত্যু এটাই নাস্তিক্যধর্মের সহিহ আকিদা বিশ্বাস। নাস্তিকরা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে তেমন একটা আলোচনা করতে পছন্দ করে না খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন।

বিজ্ঞানে ভণ্ডামি হয় না?

নাস্তিকরা নাকি বিজ্ঞানমনস্ক তাহলে যেসব বিজ্ঞানীরা যুক্তি প্রমান দিয়ে বলেন মহাবিশ্বকে স্রস্টা সৃষ্টি করেছে তখন নাস্তিকরা সেটা মানে না কেন? ডারউইনবাদ নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীরা সংশয় প্রকাশ করেছে এবং এটাও বলেছে যে তারা নিশ্চিত নয় এটা সত্য নাকি তখন নাস্তিকরা সেসব বিজ্ঞানীদেরকে মানে না কেন? নাস্তিকরা নাহলে স্বীকার করুক যে তারা শুধু নাস্তিক বিজ্ঞানীদের কথাই মানে তার বিপরীত অন্য বিজ্ঞানীদের কথা না? তারা নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক বলে দাবি করে থাকেন তারা আসলে কোন সাইডের বিজ্ঞানমনস্ক এবং কেন সেটাও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। 

আচ্ছা নাস্তিক্যধর্মে কি এমন কোনো বিধান আছে যে আস্তিক বিজ্ঞানীরা সব ভুল তথ্য দেয় আর নাস্তিক বিজ্ঞানীরাই হলেন আসল ফেরেশতা এমন কিছু? বিজ্ঞানের মধ্যেও রাজনীতি আছে। এসব ভিতরের কথা নাস্তিকরা প্রকাশ্যে বলতে সংকোচ অনুভব করবে। এখানে নাস্তিক বিজ্ঞানীরা যে আস্তিক বিজ্ঞানীদের গবেষণা সত্য হলেও মূল্যায়ন করবে না সেটাই সত্য এবং বাস্তব লুকানো সত্য। যেসব বিজ্ঞানীরা ডারউইনবাদকে যুক্তি প্রমান দিয়ে অকাট্য ভুল প্রমান করেছে সেসব গবেষণা নাস্তিক বিজ্ঞানীরা ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চায়। যেসব বিজ্ঞানী ডারউইনবাদ বিরোধী অথবা বিবর্তন যে একটি মিথ্যা ভুলে ভরা ধারনা প্রমান করেছেন - এরকম বিজ্ঞানীদের গবেষণা সত্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের গবেষণা যেন বাইরে বের না হয় এরকম ব্যবস্থা করা হয়। নাস্তিকরা এসব কথা কখনো আপনাকে বলেছে? বলবেও না।

এ বিষয় ইউটিউবে Expelled: No intelligence allowed লিখে সার্চ দিলেই সেই ডকুমেন্টারি দেখতে পাবেন। এই বিষয় বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ "গুনটার বেকলির" সাথে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা প্রাধান্য পায়। তিনি জার্মানির ষ্টেটগার্ডে অবস্থিত ষ্টেট মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিষ্ট্রি-তে কিউরেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন গুনটার বেকলি ফসিল ড্রাগন ফ্লাই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তিনি অনেকগুলো ফসিল ড্রাগন ফ্লাই প্রজাতি আবিষ্কার করেন এবং তার নামে একাধিক প্রজাতির নামকরনও করা হয়। তিনি ছিলেন বিবর্তনবাদী এবং ঐ মিউজিয়ামে বিবর্তন সম্পর্কে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর তিনি তার পড়ালেখার আলোকে বিবর্তনবাদের কথিত প্রমানাদির ওপর সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছান যে, এলোপাতাড়ি বিবর্তন এর প্রস্তাবিত কোন পদ্ধতিই প্রজাতির বিবর্তন প্রমানের জন্য যথেষ্ট না। প্রথম প্রথম তিনি তার সিদ্ধান্তের বিষয়টি গোপন রাখলেও গত বছর তা প্রকাশ করেন। যার ফলে তাকে মিউজিয়ামের কিউরেটর পদ থেকে কোন উপযুক্ত কারন প্রদর্শন না করেই অপসারণ করা হয়। উইকিপিডিয়ার মত তথাকথিত নিরপেক্ষ অনলাইন বিশ্বকোষ থেকে তার পেজটি এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয় যেন জীবাশ্মবিদ্যায় তার কোন অবদানই নাই।

রেফারেন্সঃ

Wikipedia Erases Paleontologist Günter Bechly:

https://evolutionnews.org/2017/10/wikipedia-erases-paleontologist-gunter-bechly/?fbclid=IwAR0BAeIYL63No_XkaDSba7-CuF64JIh6wmbN4oQ7VCxvvb9Tzw8ZLQEw-Pc

অ্যামেরিকান অণুজীব বিজ্ঞানী "জোনাথন ওয়েলস" ২০০০ সালে প্রকাশিত তার বই "Icons of Evolution" page 235-236 তে তিনি লিখেছেনঃ 

গোঁড়া ডারউনবাদীরা প্রথমে ডারউনের সংকীর্ণ ব্যাখ্যা চাপিয়ে দিয়ে ঘোষণা করে যে বিজ্ঞানচর্চার এটাই একমাত্র রাস্তাতখন সমালোচনাকারীরা হয়ে পড়ে অবৈজ্ঞানিক। সমালোচনা নিবন্ধ সমূহ গোঁড়াবাদী বিজ্ঞান-সাময়িকীগুলো প্রত্যাখ্যান করে। সরকারী সংস্থাগুলো সমালোচকদের অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানায়সবশেষে সমালোচকদের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় থেকে বহিস্কার করা হয়। এভাবেই ডারউনবাদী মতবাদের বিপক্ষে সকল প্রমান আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যায় অথবা প্রমানগুলোকে গায়েব করা হয় বিশেষায়িত প্রকাশনা গুলোতে,যার সন্ধান পায় কেবল অতি কৌতূহলী উদ্দীপক গবেষকরাই। আর যখনই সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং প্রমানগুলো গায়েব করে দেয়া হয়। ঠিক তখনই ডারউনবাদীরা প্রচার করে বেড়ায় যে, বিবর্তনবাদের বিপক্ষে বৈজ্ঞানিক বিতর্ক আছে কিন্তু কোন প্রমান মজুদ নেই

যৌক্তিকভাবে গভীরে ভাবলে বুঝা যায় নাস্তিক্যবাদের সীমানা হচ্ছে “স্রস্টা নেই” এই দুটো শব্দের মধ্যে। এছাড়া নাস্তিকরা কিছুই বলার যৌক্তিক অধিকার রাখে না। কেন? যাদের বিশ্বাসই হচ্ছে নিহিলিজম সেখানে গুরুত্ববলে কিছু আছে চিন্তা করাটাই অর্থহীন। নাস্তিকদের নির্দিষ্ট নৈতিকতা আছে? নাস্তিকদের নির্দিষ্ট আদর্শ আছে? নাস্তিকদের নির্দিষ্ট কোনো জীবন বিধান আছে? যা আছে সব কিছু ব্যক্তিগত। দুনিয়াতে কোটি কোটি মানুষ যা ইচ্ছা ব্যক্তিগত মানুক বা বলুক তাতে নাস্তিকদের সমস্যা কি? নাস্তিকরা বলে থাকে স্রষ্টার কথা, ধর্মের কথা এসব মানুষের বানানো তাই এসবের আসলে ভিত্তি নেই কিন্তু একইযুক্তিতে নাস্তিক্যবাদ, মুক্তচিন্তা, ডারউইনবাদ, ধর্মহীনতা এসবও তো মানুষের বানানো তাহলে একইযুক্তিতে নাস্তিকদেরকেও এসবকেও বাতিল এবং ভিত্তিহীন দাবি করতে হবে। নাস্তিকদের কথাতেই নাস্তিকরা বাতিল প্রমান হয়ে যায়।

বস্তুবাদী নিহিলিজমের দৃষ্টিতে প্রমান বিভ্রমঃ

১/ 

"প্রমান স্বয়ং" "কোন প্রমান" দ্বারা প্রমানিত?

২/ 

প্রমান কাকে বলে এর জবাবের নীতি কে ঠিক করবে এবং কেন ও কি দিয়ে ঠিক করবে?

৩/ 

নাস্তিকতা শুধু "স্রষ্টা নেই" এতটুকুই শেষ তাহলে কিভাবে "প্রমান" নিয়ে এটি ডিল করে?

৪/ 

"প্রমান পেলেই স্রষ্টাকে মেনে নেয়া হবে" এই নীতি নাস্তিক্যধর্মের কথায় আছে কারন যেখানে নাস্তিক্যধর্ম অর্থই স্রষ্টা নেই সেখানে প্রমান পেলে মেনে নিবে এটি কি পরস্পর বৈপরীত্য নয়,কিভাবে?

৫/ 

ডারউইনবাদ বিশ্বাসের সুত্র মতে প্রমান কাকে বলে? প্রাণীজগতের সবাই এক অর্থাৎ গাধা ও নাস্তিক টাইপ মানুষ উভয়ই সমান গাধার প্রমান লাগে না,সে সামনে যাই পায় তাই না বুঝেই মেনে নেয় আর সে চায়ও না প্রমান তাহলে নাস্তিক মিথ্যুকরা কোন লজ্জায় মুখে প্রমান চায়? প্রমান সত্য হক অথবা মিথ্যা, মৃত্যুই যখন শেষ ঠিকানা তাহলে প্রমান চেয়েই বা লাভ কি?

৬/ 

বিজ্ঞানের দুনিয়ায় আস্তিক বিজ্ঞানীদের কাছে নাস্তিক বিজ্ঞানীদের গবেষণা ভুল আবার নাস্তিক বিজ্ঞানীদের কাছে আস্তিক বিজ্ঞানীদের গবেষণা ভুল। আসলে কে ভুল যেখানে সবাই বিজ্ঞানী এবং সকলেই মানুষ? এ দুই টাইপের বিজ্ঞানী কিন্তু প্রমান, যুক্তিবিদ্যা, তথ্য , বস্তু ইত্যাদির মাধ্যমেই গবেষণা করে তাহলে কি তারা সবাই ভুল?

৭/ 

প্রাচীন কালের সে সকল দার্শনিকদের নাম অথবা তাদের ছবি দাবি করা হয় আসলেই কি সেসব তাদেরই ছবি? সেগুলোর প্রমান কি? মুমিনরা না হয় সত্য সাক্ষ্যর উপর ভিত্তি করে সেসকল দার্শনিকদের অস্তিত্ব, তাদের গবেষণা অথবা তাদের চেহারা স্বীকার করে কিন্তু বস্তুবাদী বিশ্বাস মতে কিভাবে তাদেরকে প্রমান করা যাবে? কোনো একজন মানুষের মুখের কথার উপর ভিত্তি করে তাদেরেক বিশ্বাস করা কি অন্ধ বিশ্বাস নয়? আর যে কোনো কিছুই বিশ্বাস করার মানেই হল ভাইরাস তাহলে বস্তুবাদ কিভাবে মানুষের মুখের কথা বিশ্বাস করতে বলে?

৮/ 

অতিতকালের সমস্ত ইতিহাস কি বিশ্বাসযোগ্য নাস্তিক্যধর্ম মতে? আগের যুগে যাইই হয়েছে অথবা হয়নি এসব কিভাবে একজন নাস্তিক বিশ্বাস করতে পারেন? ইতিহাস শুধু মাত্র মানুষের লেখা অথবা মুখের কথা উপর ভিত্তি করেই মেনে নেয়া হয়। নাস্তিক্যধর্ম কিভাবে কিছু মানুষের মুখের কথার উপর বিশ্বাস রেখে সেগুলো বিশ্বাস করে? নাস্তিক্যধর্ম কি এসব ডিল করে? ইতিহাস সঠিক নাকি বেঠিক এসব কিভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে নাস্তিক্যধর্ম মতে?

৯/ 

বিদ্বেষী হিংসুকদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করে কুরআন যে আল্লাহর বানী সেটার প্রমান কি? এই প্রশ্ন দিয়ে যেমন নাস্তিকরা কুরআন মানে না ঠিক এই প্রশ্ন দিয়েই প্রাচীন সকল বই বাতিল বলে গণ্য করা হবে যেমন "অরিজিন অফ স্পিসিস" বই যে চার্লস ডারউইন দাদু লিখেছে সেটার প্রমান কি? "দ্যা রিপাবলিক" বই যে প্লেটোই লিখেছেন সেটার প্রমান কি? মানুষের মুখের সামান্য দাবি করলেই কি আমরা সেই বই বিশ্বাস করব? এভাবে প্রাচীন সব বই যে ঐ লেখকেরই বই সেটার প্রমান নাস্তিকরা কিভাবেক করে?

১০/ 

এক প্রমান সর্বত্র গ্রহনযোগ্য কিনা? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে সবাই তো যে কোনো কিছুই দাবি করে আবার এটাও দাবি করতে পারে তারটাই সঠিক আবার অন্য কেউই একই সিস্টেমে, একই প্রমানে কোনো কিছু প্রমান করে দাবি করতে পারে তারটাই সঠিক এখানে আসলে ভুল কে? ধরুন এক নাস্তিক নারী দাবি করলো আসিফ মহিউদ্দিন একজন ভয়ংকর ধর্ষক আবার সে নিজে দাবি করছে সে নিকৃষ্ট ধর্ষক নয় এখানে কোন নাস্তিক আসলে সঠিক তথ্য দিচ্ছে কারন দুইজনেই প্রমানের উপর অন্ধবিশ্বাসী এখানে কে ভুল? নাকি দুইজনেই সঠিক? কিভাবে দুইজনেই সঠিক হয়? সঠিক প্রমান আর ভুল প্রমান কি দিয়ে নির্ণয় করা হবে?

১১/ 

ধরুন কিছু ডাক্তারের কাছে সমকামীতা হল রোগ আবার কিছু ডাক্তারের কাছে রোগ না এখানে দুইজনেই ডাক্তার তাহলে সঠিক কে আর ভুল কে কারন তারা দুইজনের প্রমানের ভিত্তিতে দাবি করছে?

১২/ 

ধরুন একজন সমকামী দাবি করলো নাস্তিক্যধর্ম সত্য-মিথ্যা দিয়ে ডিল করে না এখন অন্য নাস্তিক হল সত্যবাদী এবং সে দাবি করলো নাস্তিক্যবাদই মানব ধর্ম। এখন সে নিজেকে সত্যবাদী দাবি করছে অথচ আগে বলেছে নাস্তিক্যধর্ম সত্য-মিথ্যা নিয়ে ডিল করে না তাহলে তার পরের দাবিটি কিভাবে সত্য অথবা মিথ্যা হয়?

১৩/ 

ধরুন হিন্দুরা দাবি করে নাস্তিকরা মিথ্যুক। আচ্ছা ধরে নিলাম “ক” একজন নাস্তিক আর “ক” মিথ্যুক এখন মুমিনরা সেটি প্রমান করুক। ওকে ফাইন। এখন সেই নাস্তিক প্রাণীটি যেহেতু ধরে নিয়েছে যে "নাস্তিকতা মিথ্যাবাদী" এখন তার দাবিটি সত্য হলে সে মিথ্যা বলছেন। মিথ্যাবাদী হলে তো মিথ্যাই বলবেন, নাকি? বিপরীতভাবে তার দাবি যদি মিথ্যা হয়, তাহলে তিনি মিথ্যা বলছেন না। সেক্ষেত্রে তিনি যা বলছেন, সত্য। তাহলে কিভাবে আসলে সত্য বলছে আবার কিভাবে মিথ্যা বলছে?

১৪/ 

ধরুন নাস্তিকরা দাবি করছে "সকল নাস্তিকরাই সত্যবাদী" প্রশ্ন হল এই দাবি যে মিথ্যা নয় সেটার প্রমান কি? দাবিটি "কোন সত্য" দ্বারা "সত্য" প্রমানিত নাকি মুখের কথা শুনেই বিশ্বাস করতে হবে আর বিশ্বাস মানেই তো ভাইরাস?

১৫/

"প্রমান" এর মানদণ্ড কি? কে ঠিক করবে এই মানদণ্ড? ঠিক যে করবেন তাকে কি পুরো বিশ্বর মানুষ মানতে বাধ্য হবে? একজন মানুষকে কিভাবে আরেকজন মানুষ অনুসরণ করতে পারে বিবর্তন আকিদা মতে কারন গাধাকে কিন্তু অন্য কোন প্রাণীই অনুসরণ করে না তাহলে একজন মানুষকে কেন অনুসরণ করতে হবে? বিবর্তনের কি নিজস্ব নীতিমালা আছে নাকি ? সেটি কে ঠিক করবে এবং কেন ঠিক করবে, কি দিয়ে ঠিক করবে?

১৬/ 

নাস্তিক্যধর্ম ভাষা নিয়ে ডিল করে কিনা? কারন অক্ষর বা শব্দের উপরে বিশ্বাস না রাখলে কেউই ভাষা শিখতে পারবে না আর সকল নাস্তিকই যুক্তির উপরে বিশ্বাসী এখন "ক" এর পরে "খ" কেন হল এটার পিছনে যৌক্তিকতা কি? কারো বলা সিস্টেমের উপর বিশ্বাস করেই কি বিশ্বাস করতে হবে "ক" এর পরে "খ"ই হবে এর বাইরে যাওয়া যাবে না তাহলে মুক্তমনা আকিদা এখানে বৈপরীত্য হচ্ছে না? বাকস্বাধীনতা বাধা গ্রস্ত হচ্ছে না? নাস্তিক্যধর্ম কোন প্রমানের আলোকে এই সমসসার সমাধান দেয় এবং কেন?

১৭/ 

ধরুন একজন নাস্তিকদের নাম মাসুদ। তিনি সিদ্ধার্থ নামের এক ছেলেকে নিজের ছেলে বলে দাবি করে অথচ কোন প্রমান দেখায়নি। এখন সেই ছোট শিশুকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন সে। এটি কি অন্ধবিশ্বাস এবং মুক্তমনা চেতনা বিরোধী কাজের মধ্যে পড়ছে না? কারন স্কুলে পড়লে অনেক নিয়ম কানুন মানতেই হবে নাইলে স্কুলের থেকে বের করে দিবে। আর শিক্ষককে বিশ্বাস না করলে কোন ছাত্র জ্ঞান অর্জন করতেই পারবে না আর বিশ্বাস করা তো নাস্তিক্যধর্মে ভাইরাস, মহামারী এবং জ্ঞান অর্জন করার অন্তরায় তাহলে এই ক্ষেত্রে কি সমাধান দিবে নাস্তিক্যধর্ম? জ্ঞান নিজে কি জ্ঞানী? শুন্য থেকে কিভাবে জ্ঞান অস্তিত্ব আসলো? কেন আসলো? কিভাবে আসলো?

১৮/ 

নাস্তিকদের জীবনে কি কোন শিক্ষক ছিল? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে সেই শিক্ষকের যোগ্যতা আগে নির্ণয় করে পরে তার থেকে শিক্ষা নিয়েছে নাস্তিকরা নাকি বিনা প্রমানে আগেই সেই শিক্ষককে অন্ধ বিশ্বাস করেছে? একজন শিক্ষক যে সত্যিই বলছেন সেটি কিসের ভিত্তিতে নাস্তিকরা যাচাই করতো তখন? কাগজ কলমে লেখা থাকলেই কি যোগ্য হিসেবে প্রমানিত হয়ে যাবে? এই নীতির পিছনে নাস্তিক্য যৌক্তিকতা কি?

১৯/ 

ধরা যাক, একটি চাল পড়ে আছে মাটিতে। কেউ নিশ্চয়ই একে চালের স্তুপ বলবে না। সেখানে আরেকটি চাল যোগ করা হলো। তারপরেও কি কেউ একে চালের স্তুপ বলবে? অবশ্যই না। এভাবে প্রতিবার একটা একটা করে চাল যোগ করা হোক। সাধারণভাবে মাত্র একটা চালের কম-বেশি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। N সংখ্যক চালকে একত্রে রাখা হলে যদি চালের স্তূপ না হয়, তাহলে একটা বাড়িয়ে N+1 সংখ্যক চাল নিয়েও স্তূপ হবে না। অনুরূপভাবেই, যদি N সংখ্যক চালের সমাবেশকে স্তূপ বলা যায়, তাহলে তার থেকে একটা চাল কমিয়ে N-1 করা হলেও স্তূপ হবে। একটা চালে কি আর ‘স্তূপ না’ থেকে ‘স্তূপ আছে’ তৈরি করতে পারে? অথচ চোখের সামনে হামেশাই যে তো চালের স্তূপ হতে দেখা যায় । এমন সমসসার ক্ষেত্রে নাস্তিক্যধর্ম কিসের মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান দিবে যা সকলেই বিশ্বাস করবে?

২০/ 

ধরা যাক, একটি ক্ষুধার্ত গাধার ঠিক দু'পাশে সমান দূরত্বে দুটি খড়ের স্তূপ। রূপ আর গন্ধেও স্তূপ দুটি একই রকম। গাধাটি দুটো স্তূপের কোনটা থেকে খাবে, বুঝতে পারবে না। সুতরাং অপেক্ষা করবে এবং অনাহারে মারা যাবে। বিষয়টা কি ভ্রান্তিপূর্ণ না? এখন এই ভ্রান্তিপূর্ণ মাসালা কিভাবে ব্যাখ্যা করবে নাস্তিক্যধর্ম?

২১/ 

ধরা যাক, শিক্ষক এসে ক্লাসে ঘোষণা করলেন, আগামি সপ্তাহের যেকোনো দিনে সারপ্রাইজ টেস্ট নেয়া হবে। ছাত্ররা তখন ভাবতে শুরু করলো টেস্টটা কখন হতে পারে আসলে। কিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ কোত্থেকে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে গেল। আশ্বাস দিল- সারপ্রাইজ টেস্ট হওয়া সম্ভব না। পরীক্ষা বৃহস্পতিবারে হতে পারবে না। কারণ সপ্তাহের শেষদিন পর্যন্ত যদি অপেক্ষা করা হয় তাহলে তা আর সারপ্রাইজ থাকবে না। বুধবার বিকালেই সবাই টের পেয়ে যাবে পরের দিন পরীক্ষা। আবার বুধবারেও পরীক্ষা নেয়া অসম্ভব। কারণ বৃহস্পতিবারকে বাদ দিলে তো মঙ্গলবার বিকালেই জানা হয়ে গেলো বুধবার পরীক্ষা। অর্থাৎ আর সারপ্রাইজ থাকলো না। একইভাবে মঙ্গল, সোম কিংবা রবিবারেও পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না। ছাত্ররা সব হেসেখেলে বন্ধটা পার করলো। বইখাতার ধারেকাছেও গেলো না। তারপর সত্যি সত্যি তাদের অবাক করে দিয়ে বুধবার সারপ্রাইজ টেস্ট হয়ে গেল। কীভাবে সম্ভব? নাস্তিক্যধর্ম কি দিয়ে এই সমসসার সমাধান দিবে এবং কেন? নাস্তিক্যধর্ম কি আসলেই মুক্তির পথ ? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে উপরের ঘটনার যৌক্তিক ব্যাখ্যা কি আর যদি উত্তর না হয় তাহলে তো নাস্তিক্যধর্ম মুক্তির পথ নয় এটাই তো প্রমান হচ্ছে না কিভাবে ?

২২/ 

কোনো কারণ ছাড়াই আপনি একটি লটারির টিকেট কিনলেন। বিকেলে ড্র হবার আগে খবর শুনেছেন এক কোটি টিকেট বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ আপনার জেতার সম্ভাবনা এক কোটিতে একবার। ধরা যাক, র‌্যাফেল ড্রতে দূর্নীতি হয়নি এবং একটা টিকেট বিজয়ী হবেই। যদিও আপনি জিতে গেলে রীতিমত খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতেন। তবু নিজেকে যৌক্তিক দিকটা বুঝিয়ে হারবেন বলে মেনে নিলেন। একই যুক্তি দিয়েই সিদ্ধান্ত নিলে আপনার বন্ধু রাফি, ভাই আকিব এবং চাচা আফজাল সাহেবের কিনে রাখা টিকেটও হেরে যাবে। ওই বাসার মতি, পাশের পাড়ার মোজাম্মেলসহ সম্ভাবনার দাঁড়িপাল্লায় একে একে সবাই বাদ গেল। সম্ভাবনায় বাদ গেলো যাদের আপনি চেনেন না, তারাও। এককথায় যে টিকেটই বিক্রি করা হয়েছে, যৌক্তিকভাবে আপনি তার হেরে যাওয়াটাই সমর্থন করলেন। অর্থাৎ সব টিকেটই হেরে যাবে, কোনটিই জিতবে না। কিন্তু এ কথা সত্য যে কেউ না কেউ জিতবে। অর্থাৎ আপনি জানেন যে ভুল, তারপরেও এমন একটা কিছুতে সমর্থন রাখছেন। এটা কীভাবে হতে পারে?

২৩/ 

কথোপকথনে মগ্ন ছিলেন সক্রেটিস ও মিনো। বিষয় গুণ (Virtue)- এর যথার্থ প্রকৃতি অনুসন্ধান। মিনো একের পর এক দাবি উত্থাপন করছিল আর তার খুঁত ধরিয়ে নাকচ করে দিচ্ছিলেন সক্রেটিস। আবার সক্রেটিস নিজে দাবি করছিলেন যে, তিনি এর সঠিক উত্তর জানেন না। সুতরাং মিনো প্রশ্ন করলো- যদি তুমি না-ই গুণের মুখোমুখি হও, তবে একে চেনো কীভাবে? কেমনে ভাবো ‘গুণ কী’- এই প্রশ্নের একটা নির্দিষ্ট সঠিক উত্তর আছে, যদি না আগে থেকে তোমার কাছে এর উত্তর থাকে? অর্থাৎ ‍যদি আগে থেকে জেনে না থাকে তাহলে সক্রেটিস নাকচ করছে কীভাবে? আর যদি জেনেই থাকে, তবে তো প্রশ্নের পর্বই অনর্থক। সক্রেটিসের জবাব ছিলো জ্ঞানের মৌলিক উপাদানই সঠিক উত্তর চিনিয়ে দিতে যথেষ্ট। পূর্ব অভিজ্ঞতা সেই কাজ করে। তার প্রমাণ একটা দাসকেও জ্যামিতিক সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তোলা যায়। যদিও তাকে জ্যামিতির জ্ঞান দেয়া না হয়। এর থেকে মিনোর সমস্যার আধুনিক একটা রূপ দাঁড় করানো যায়। নামমাত্র কিংবা কোনো রকম নির্দেশনা ছাড়া কীভাবে মানুষ সফলভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে?

২৪/ 

ধরা যাক, আপনি মাহতাব। বসে আছেন একটা জানালা ছাড়া রুমে। হঠাৎ বৃষ্টি আরম্ভ হলো। মুষল ধারায় বৃষ্টি। আপনি আবহাওয়া বার্তা শোনেননি। সুতরাং বৃষ্টির হবার কথাটাও জানেন না। বৃষ্টি যে আদতে হচ্ছে, এটা আলবৎ বিশ্বাস করেন না। আপনার কাছের বন্ধু মাহদি। সে আপনার অবস্থাটা জানে বলে দাবি করতেই পারে- “এখন বৃষ্টি হচ্ছে, অথচ মাহতাব বিশ্বাস করে না”। কিন্তু আপনি যদি বলেন- “এখন বৃষ্টি হচ্ছে, অথচ আমি বিশ্বাস করি না”; নিঃসন্দেহে বন্ধু মাহদি মনে করবে আপনার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বাক্যটা কেন অর্থহীন হলো? এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন জি. ই. মুর- “আমার ব্যাপারে সত্য কিছু বলা আমার জন্য অর্থহীন হবে কেন”?

২৫/ 

সক্রেটিস বলেছিলেন, “আমি শুধু একটা জিনিসই জানি। সেটা হচ্ছে আমি কিছুই জানি না।” এর অর্থ সক্রেটিস কি আসলেই কিছু জানেন না, নাকি একটা জিনিস, বা অনেক জিনিসই জানেন? সক্রেটিস এর অস্তিত্ব যে ছিল সেটারই বা প্রমান কি?

২৬/ 

ধরুন একটি নাস্তিক পরিবারে স্ত্রী আর নিজ মায়ের সাথে এমন ঝগড়া হইসে নাস্তিকের নাস্তিক মা রাগ করে তার সন্তানকে বলেছে যে তুমি আর এই স্ত্রীর সাথে থাকতে পারবা না। প্রশ্ন হচ্ছে নাস্তিক ছেলেটি তার মায়ের কথা বিশ্বাস করবে নাকি স্ত্রীর কথা যে স্ত্রী বলেছে তোমার মাকে ত্যাগ করো নাহলে আমি অন্য ছেলের সাথে চলে যাব ? নাস্তিক ছেলেটি কোন প্রমানের ভিত্তিতে কার কথা বিশ্বাস করবে এবং কেন? স্ত্রীর কথা বিশ্বাস করলে মাকে অস্বীকার করা হবে আবার মায়ের কথা বিশ্বাস করলে স্ত্রীর কথা অবিশ্বাস করা হবে এই ক্ষেত্রে নাস্তিক্যধর্ম কি সমাধান দিবে এবং কেন ও কিভাবে?

২৭/ 

ধরুন দুইজন নাস্তিক আছেন । প্রথম নাস্তিক দ্বিতীয়জনকে ৫০ হাজার টাকা আমানত রাখলো বিশ্বাস করে । এখন সেই টাকা একদিন ফেরত চাইলে দ্বিতীয় নাস্তিক অস্বীকার করলো আর বলল তুমি আমাকে কিছুই দেউনি তোমার কাছে কোন প্রমান নেই যে তুমি আমাকে কিছু দিয়েছ। এখন প্রথম নাস্তিক কোন প্রমানের ভিত্তিতে দ্বিতীয়জনকে অপরাধী বলবে এবং কেন ? এই অপরাধের পিছনে যৌক্তিক কারন কি এবং এই কারনের কারনেই যে সেটি অপরাধ এটি সর্ব প্রথম কোন সৃষ্টি করেছেন ?

২৮/ 

মায়ের সাথে তার ছেলের সম্পর্ক, ভাইয়ের সাথে তার বোনের সম্পর্ক, স্বামীর সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্ক এভাবে ইত্যাদির সাথে ইত্যাদির সম্পর্ক । এসব সম্পর্ক কি বিশ্বাসযোগ্য নাস্তিক্যধর্ম মতে ? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে বিশ্বাসের তো অস্তিত্বই প্রমান করা সম্ভব নয় যদি উত্তর না হয় তাহলে যেখানে এসব সম্পর্ক নাস্তিক্যধর্ম মতে ভিত্তিহীন সেখানে মানবতার অস্তিত্ব কিভাবে প্রমানশীল?

২৯/ 

একজন জ্ঞানী মানুষের জ্ঞান সমাজের মাঝে ফুটে উঠে কোন প্রমানের ভিত্তিতে ? ধরুন জনাব "ক" একজন জ্ঞানী নারী এখন তার মৃত্যু হয়েছে তাহলে প্রশ্ন হল তার নিয়ে যাওয়া জ্ঞানের কি হবে ? সেটি কি ধ্বংস হয়ে যাবে নাকি সেটির অস্তিত্ব অসীম হবে এই সমস্যা কোন ভিত্তিতে প্রমান করে সমাধান দেয়া যাবে?

৩০/ 

প্রকৃতি কোন প্রমানের আলোকে মানুষকে একটি ব্রেন দিল ? শুন্য থেকেই ব্রেন দুটি হল না কেন সব মানুষের ? সমস্যা কোন প্রমান দ্বারা সমস্যা প্রমানিত ? মানুষের মৃত্যু হবেই এই নিয়ম কোন প্রমান দ্বারা প্রমানিত ? প্রকৃতি নিয়ম মানতে বাধ্য কেন , কেন নিয়ম মানতে তাকে বাধ্য করছে ?

৩১/ 

ধরুন একজন মানুষ কখনোই স্বপ্ন দেখেনি তাই বিশ্বাসও করে না এখন সে স্বপ্নের অস্তিত্বর প্রমান চাইলো নাস্তিক্যধর্মের কাছে এখন স্বপ্নর অস্তিত্ব কোন প্রমান দ্বারা বাস্তব সত্যি প্রমান করার সিদ্ধান্ত দিবে ? অনেকে বলে থাকেন স্বপ্ন হল তাই যা মানুষ চিন্তা করে কিন্তু এই ব্যাখ্যা যে সত্য সেটার প্রমান কি ? মানুষ তো এমনও অনেক কিছুই ঘুমে দেখে যা সে চিন্তাও করে না । একজন নাস্তিক ধরুন ২০০০ সালে যা যা স্বপ্ন দেখেছে অথবা চিন্তা করেছে তা কি প্রমান করে সত্য প্রমান করা যাবে ? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ তাহলে প্রমান করে দেখাক । যদি উত্তর হয় না তাহলে কি সে স্বপ্ন যা দেখেছে তার অস্তিত্বই নেই ? নাস্তিক্যধর্ম এসব মাসালার কি সমাধান দিবে ?

৩২/ 

বিবর্তন কোন প্রমানের আলোকে বিবর্তিত হল এবং কেন হল, কিভাবে হল? প্রাণী জগতের মধ্যে কি প্রমানের অস্তিত্ব বিদ্ধমান? যদি থাকে তাহলে সেটি অস্তিত্ব কথায়? যদি না থাকে তাহলে প্রাণীদের প্রমান লাগে না নাস্তিক নামের মানুষদের কেন প্রমান লাগবে যেহেতু বিবর্তনে সব সমান?

৩৩/ 

বিগব্যাং এর কারনেই যে মহাবিশ্ব হয়েছে প্রশ্ন হচ্ছে বিগব্যাং নিজে কোন প্রমানের আলোকে বিস্ফোরিত হয়েছে এবং কেন ? সেই প্রমান এর অস্তিত্ব কিভাবে সম্ভব ? দুর্ঘটনার জন্যই যদি এই মহাবিশ্ব হয় তাহলে মহাবিশ্ব বিষয় অথবা মহাবিশ্ব ভিতরে সব কিছুরই কেন প্রমান লাগবে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে?

৩৪/ 

দিন, সপ্তাহ , মাস, বছর এসবের অস্তিত্ব কিভাবে প্রমানিত? মানুষ শুধুই এসব মুখে মুখে বলে আর খাতায় লিখে রাখে মুমিনরা না হয় এসব মেনে চলে তাই বলে কি নাস্তিকরাও কারন নাস্তিক্যধর্ম এসব তো প্রমান করতেই পারছে না এটার সমাধান কি ? সূর্য উঠে অস্ত যায় এই কারনেই দিন হয় এটার প্রমান কি ? সাত দিন হলেই এক সপ্তাহ হতে হবে কেন , এর পিছনে যৌক্তিক প্রমান কি? ৩০ দিনে এক মাস হবে কেন এটার প্রমান কি? ৩৬৫ দিনেই কেন ১ বছর হতে হবে ? এই নিয়ম সমূহ সর্ব প্রথম কারা ঠিক করেছিল এবং তারা কোন প্রমানের ভিত্তিতে এসব নিয়ম ঠিক করেছেন ? এসব নিয়মের পিছনে যৌক্তিক কারন কি? নাস্তিক্যধর্মের আলোকে ব্যাখ্যা করুন ?


৩৫/

ধরুন ৯০ বছরের কোনো এক বৃদ্ধ মানুষ সে অশিক্ষিত। কি যদি বিজ্ঞান শিখতে চায় কি করবে? ধরুন ডারউইনবাদ যে সত্য এটা সে কিভাবে বুঝবে? কারণ সে তো সব কিছু যাচাই করে দেখতে পারবে না? কি কি বিশ্বাস করবে নাকি প্রমান যাচাই করবে? আর প্রমান যাচাই করলে সেটা কিভাবে করবে?


৩৬/

স্রষ্টার অস্তিত্ব যে নাই এটা কোন প্রমান দ্বারা সত্য প্রমানিত? “স্রষ্টার অস্তিত্বের যে প্রমান নাই” কথাটি কি সত্য? যদি নাস্তিকদের কাছে সত্য হয় তাহলে এই সত্যতার প্রমান কোথায়? যুক্তি কোথায়? তথ্য কোথায়? প্রমান কোথায়? নাস্তিকরা কি প্রমান মানে না? যদি মানে তাহলে প্রমান দেয় না কেন?


টিকাঃ

নাস্তিকরা বস্তুবাদী হয়ে থাকে। নাস্তিকরা আত্মায় বিশ্বাস করে না। নাস্তিকরা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে স্বীকার করে না। নাস্তিকরা এটাও স্বীকার করে না যে আল্লাহ নবী রাসুল পাঠিয়েছেন। নাস্তিকরা ফেরেশতা, নবী রাসুল, জান্নাত, জাহান্নাম, বিচার দিবস এসবকে স্বীকার করে না কারণ এসব দুনিয়ার বস্তু দ্বারা সরাসরি দেখা যায় না, বোঝা যায় না। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে যা সরাসরি বুঝা যাবে সেটাই সঠিক এর বাইরে সব মিথ্যা। বস্তুবাদ (ইংরেজি: Materialism) হলো দর্শনের সবচেয়ে প্রাথমিক মতবাদগুলোর একটি। বস্তুবাদী মতবাদ এটি ধারণ করে যে আমাদের চারপাশের জগতের যেসব জিনিস অস্তিত্বশীল তা হয় বস্তু অথবা শক্তি। বস্তুবাদ অনুযায়ী সব জিনিসই বস্তু দ্বারা গঠিত, এবং সব প্রপঞ্চ (চেতনাসহ) বস্তুর পারস্পরিক আন্তক্রিয়ার ফলাফল। অন্য কথায় বস্তু হচ্ছে একমাত্র সারবস্তু এবং বাস্তবতা হচ্ছে শক্তি এবং বস্তুর প্রকৃত ঘটনা-অবস্থার পরিচায়ক। বস্তুবাদের কথা হলো, কেবল বস্তু অনাদি-অনন্ত। প্রাণহীন বস্তুজগত থেকে নিজে নিজেই প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল। বিবর্তনের মাধ্যমে প্রাণিদের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের উন্মেষ ঘটে এবং ঘটনাচক্রে বৃহৎ-মস্তিষ্ক-সম্পন্ন মানবপ্রজাতির আবির্ভাব ঘটে। বস্তুবাদীর কাছে বস্তুই একমাত্র আরাধ্য। ইহজগতই একমাত্র জগত। 


তাহলে উপরের সকল প্রশ্নের জবাব নাস্তিকদের বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দেয়া দরকার কিনা? অবশ্যই দরকার। নাস্তিকদের প্রমান করা দরকার কিনা যে বস্তুর বাইরে আসলেই কিছু নাই? “বস্তুর বাইরে কিছু নাই” দাবিটি সত্য হলে এর প্রমান থাকা কি আবশ্যক নয়? নাকি প্রমান ছাড়া নাস্তিকরা অন্ধবিশ্বাস করবে? তাই আপনি যদি নাস্তিক হয়ে থাকেন তাহলে উপরের প্রশ্ন গুলো ধরে ধরে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে উত্তর গুলো দিয়ে যাবেন এবং এটাও নিশ্চিত করবেন আপনার উত্তরই কেন চূড়ান্ত?

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post