একই যুক্তি যখন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যায়।


বিষয়ঃ
একই যুক্তি যখন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যায়

লিখেছেনঃ এমডি আলী

—-------------------------------------------------------------

ছোট্ট উদাহরণ দিবো। নাস্তিকরা কতটা দুর্বল যুক্তিবিদ্যা চর্চায়। মুসলিমদের হারানো জন্য একটা যুক্তি দাঁড় করাবে কিন্তু একই মানের হুবহু যুক্তি যখন ওদেরই বিরুদ্ধে যাবে তখন পূর্বে দেওয়া নিজের যুক্তিকেই ওরা ভুল প্রমাণ করে দিবে। হাস্যকর না? আজকের লেখাটিকে এমন যুক্তির কথা তুলে ধরবো যেগুলো একই অথচ নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যায়। 

উদাহরণ ১ 

মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যা অমানবিক।

কেন অমানবিক? প্রশ্ন করা হলে নাস্তিকরা উত্তরে বলবেঃ

একজন মানুষের ইসলাম ভাল লাগে না এটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। সে মানবে কি মানবে না সেটা তার ব্যাপার। কেন ইসলাম সে ত্যাগ করলো সেটা প্রচার করাও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া মানে মানুষের বাক স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা। মুরতাদরা তো কাউকে ফিজিক্যালি ক্ষতি করেনি। তাই এটা অবশ্যই অমানবিক।

মজার কথা কি জানেন পাঠক? মুরতাদের পক্ষে নাস্তিকদের দেয়া একই যুক্তিতে রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও রাজাকারদের নীতিও সঠিক হয়ে যায়।

কিভাবে?

ধরুন কোনো নাস্তিক দাবি করলো কোনো মানুষ সে কোন দেশের পক্ষে থাকবে, কথা বলবে বা বিরোধিতা করবে সেটা তার নিজের ইচ্ছার স্বাধীনতা। কেন সে দেশদ্রোহীতা করবে,কেন সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিল-এসব প্রচার করাও সেই নাস্তিকের একান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা। এর জন্য মানুষকে রাজাকার বলা, দেশদ্রোহী বলা অমানবিকতা। একজন দেশদ্রোহীকে অথবা রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মূলত তাদের ব্যাক্তিস্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা হয়। আর দেশদ্রোহী আর রাজাকারেরা তো কারও ফিজিক্যালি ক্ষতি করেনি। তাই অবশ্যই এদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া অমানবিক। 

নাস্তিকরা কি নিজেদের দেয়া একই যুক্তিতে এটা মেনে নিবে?

কোনো দেশের মধ্যে থেকে সেই দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, সেটা প্রচার করা যেমন বড় অপরাধ তেমনি ইসলামিক রাষ্ট্রে ইসলামের বিরোধিতা করা, ইসলামিক রাষ্ট্রে থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটাও তেমনি বড় ধরণের অপরাধ। দুটোর অপরাধের শাস্তিই মৃত্যুদণ্ড।

ফিজিক্যালি কাউকে ক্ষতি না করে গালাগালি করা তাহলে নাস্তিক্যধর্মে বৈধ? এই কারণেই কি নাস্তিকরা ইসলাম এবং মুসলিমদেরকে গালাগাল করে?

উদাহরণ ২

নাস্তিকরা প্রাই বলে ধর্ম-টর্ম সব মানুষের কাল্পনিক আবিস্কার। মানুষ এসব তৈরি করেছে।  আসলে স্রষ্টাকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। সুতরাং স্রস্টা বলে কেউ নাই।

একই যুক্তিতে নাস্তিক্যবাদও মানুষের কাল্পনিক আবিষ্কার। নাস্তিকতাকেও তো মানুষই বানিয়েছে,স্রস্টা নেই এই কল্পনাও তো মানুষেরই, বিবর্তনবাদ তো একজন বুড়া মানুষের ধারনা মাত্র। তাহলে নাস্তিকদের যুক্তিতে এসব ভুয়াবিশ্বাস বাতিল হবে না কেন?

উদাহরণ ৩

মহাবিশ্ব অসীম আর বিজ্ঞান এখনো প্রমাণ করতে পারে নাই স্রস্টা আছে। অতএব স্রস্টা নাই। 

একই যুক্তিতে বিজ্ঞানীরা কি পুরো মহাবিশ্ব ভ্রমণ করে সেটার ভিডিও আমাদেরকে দেখিয়েছে। মহাবিশ্ব পুরো ফাকা বিজ্ঞান প্রমাণ করে ফেলেছে? মহাবিশ্বের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখে এসেছে যে স্রষ্টা বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই? যেহেতু এটা তারা পারেনি অতএব স্রস্টার অস্তিত্ব আছে একই যুক্তিতে।

উদাহরণ ৪ 

প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। আর নাস্তিকতা মানুষকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা দেয়। কারও ক্ষতি না করে ব্যক্তিস্বাধীনতা পালন করা মানুষের নৈতিক অধিকার। তাই নাস্তিকতা মানবিক। 

একই যুক্তিতে মুহাম্মদ (সা) একজন মানুষ। উনারও ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে। উনি একাধিক বিয়ে করেছেন,অল্প বয়সী মেয়েকেও বিয়ে করেছেন এবং এসবে বিন্দুমাত্র কারও ক্ষতি হয়নি। দাসীদের সাথেও উনি সহবাস করেছেন কিন্তু এতে কারো ক্ষতি হয়নি। অতএব নাস্তিকতার যুক্তি অনুপাতে মুহাম্মদ (সা) এর ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারে তিনি একজন মানবিক মানুষ। একইসাথে উনাকে কেউ যদি সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে মনে করে সেটার স্বাধীনতা রয়েছে।

উদাহরণ ৫ 

আদম (আ) নাকি ৬০ ফিট লম্বা ছিল আর এই যুগের মানুষ কত ছোট এটা হওয়া সম্ভব না। তাই আদম (আ)এর ইতিহাস ভুল। 

নাস্তিকদের একই যুক্তিতে এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে যদি পর্যায়ক্রমে একটা বন্দর, বিশাল হাতি, তালগাছ ইত্যাদি সবকিছু হতে পারে তাহলে মাত্র ৬০ ফিট মানুষ থেকে ৬ ফিট মানুষ পর্যাক্রমে কেনো আসতে পারবেনা? অতএব ডারউইনবাদের ইতিহাস ভুল। আদম (আ) ইতিহাসই সঠিক।

উদাহরণ ৬ 

ইসলামে নারীর দেনমহর মানে পতিতাদেরকে টাকা দেওয়ার মতো। দেনমহর আর পতিতাবৃত্তি একই।

নাস্তিকদের এই যুক্তিতে সকল এক্স মুসলিমদের মা'রাই পতিতা এবং তাদের বাবারা মা'দেরকে পতিতাবৃত্তি করে সেসব এক্স মুসলিমদের কে জন্ম দিয়েছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে নাস্তিকদের মা'রা পতিতা। নাস্তিক এক্স মুসলিমরা বেজন্মা। তাছাড়া কুরআন হাদিসের কোথাও দেনমহর অর্থ পতিতাবৃত্তির মতো এরকম ব্যাখ্যা করা নেই। এটা নাস্তিকদের দিনদুপুরে মিথ্যাচার করার মতো একটা পরিস্কার মিথ্যাচার।

উদাহরণ ৭ 

স্রস্টা আছে আস্তিকদের দাবি তাই তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে আগে। প্রমাণ করার দায়িত্ব নাস্তিকদের না,আস্তিকদের।

একই যুক্তিতে “স্রস্টা নেই” এই দাবিও নাস্তিকদের। তাই তাদেরও উচিত তাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ পেশ করা। প্রকৃত অর্থে প্রমাণ করার দায়িত্ব নাস্তিকদেরই।

উদাহরণ ৮ 

নাস্তিকতায় বিশ্বাস বলতে কিছু নেই। নাস্তিকরা অবিশ্বাস করে। যুক্তি প্রমাণ বিজ্ঞান মানে।

এই কথাকে অবিশ্বাস করলে এর ভিত্তিই মিথ্যা হয়ে যায় সুতরাং এসব কথা নাস্তিকরা বিশ্বাস করেই তারপর বলে। না হলে নিজের কথাতে যার নিজেরই বিলিভ নেই তাকে তো মিথ্যুক নির্বোধ বলা হবে। 

উদাহরণ ৯ 

সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ কে সমকামিতা বলা হয়। 

এই সুত্রে নাস্তিক বাবা তার নাস্তিক পুত্রের সাথে সম্মতিতে সমকামিতা করলে সেটা নাস্তিকতার সুত্র অনুযায়ী নাস্তিকদের কাছে ঘৃণিত কেন? নাস্তিক্যধর্মে এসব বৈধ। নাস্তিকরা কেন এসব যৌননীতি অস্বীকার করতে চায়?

উদাহরণ ১০ 

সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান,ভুত ইত্যাদির সাথে "মহাবিশ্বের স্রস্টাকে" তুলনা করে বাতিল করে দিতে চায় মূর্খ নাস্তিকরা।

অথচ একই যুক্তিতে চিন্তা করার ক্ষমতা,এনার্জি, সময়, এসবকেও বাতিল করা যায় কিন্তু এখানে ওরা নিরব।স্রস্টার অস্তিত্বর প্রমাণের বাস্তব প্রমাণ চায় আর অন্য সময় স্রেফ বিশ্বাস? কেন? নাস্তিকদের যে চেতনা রয়েছে সেটা কি সরাসরি প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে পারবে? নাকি পরোক্ষ প্রমাণ লাগবে?

উদাহরণ ১১

পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারলে তখনি প্রমাণিত হবে তিনি আছেন।

একই যুক্তিতে আপনার "অনুভুতি শক্তি" "অতীতকাল" "ভবিষ্যৎ কাল" "১৫৬৮ সাল" "আপনি যেদিন জন্ম নিয়েছেন সেই সময়" ইত্যাদি হাজার বিষয় আছে যা পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রমাণ করা যায় না অতএব এসবের অস্তিত্ব নেই? এগুলা কেন বিশ্বাস করেন? একই যুক্তিতে সেগুলো বাতিল?

উদাহরণ ১২

কুরআন যে আল্লাহর বানী সেটার প্রমাণ কি? 

একই সিস্টেমে অরিজিন অফ স্পিসিস এটার লেখক চার্লস ডারউইন সেটার প্রমাণ কি? "এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম" যে মরা স্টিফেন হকিংয়ের লেখা সেটার প্রমাণ কি?এরিস্টটল বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। তাকে প্রাণিবিজ্ঞানের জনক বলা হয় তার অস্তিত্বের প্রমাণ কি? প্রাচীন কালের সকল গবেষণা যেই বিজ্ঞানীরা করেছেন সেসব গবেষণা যে তাদেরই সেটার প্রমাণ কি?

উদাহরণ ১৩

কুরআনে নাকি বিজ্ঞান আছে তাই মুসলিমরা কুরআন পড়ে বিজ্ঞানী হয় না কেন?

একই দৃষ্টিতে তসলিমা নাসরিন, অভিজিৎ রায়, হুমায়ুন আজাদ এরা নাকি বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। এদের লেখায় নাকি বৈজ্ঞানিক কথা ভরপুর। তো এই দুনিয়াতে কতজন বঙ্গীয় নাস্তিক এদের বই পাঠ করেই বিজ্ঞানী হয়েছে? তারা কি সবাই নোবেল প্রাইজ পেয়েছে? একটি লিস্ট দেন দেখি।

উদাহরণ ১৪ 

প্রত্যেক মেয়ের স্বাধীনতা আছে। ইসলাম স্বাধীনতা দেয় না তাই ইসলাম অমানবিক।

একই যুক্তিতে বোরখা পরিহিত মেয়েরও স্বাধীনতা আছে। নাস্তিকরা বোরখার বিরুদ্ধে তাই বলা যায় নাস্তিকদের মুসলিম নারীদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। সুতরাং নাস্তিকদের যুক্তিতে নাস্তিকতাই অমানবিক। তাদের দেয়া যুক্তিতে ইসলাম ছেড়ে দিলে,একই যুক্তিতে নাস্তিক্যধর্মও ত্যাগ করা যৌক্তিক। মুক্তচিন্তা ত্যাগ করা উচিত। ডারউইনবাদকে অস্বীকার করা উচিত।

উদাহরণ ১৫ 

নাস্তিকরা কেউকে অনুসরণ করেনা। নিজের বিবেক দিয়ে চলে। তাই সবারই উচিত কাউকে অনুসরণ না করা।

আপনার এই কথাও আমি অনুসরণ করবো না। যেহেতু আপনার যুক্তি হচ্ছে কাউকেই অনুসরণ করা যাবে না।

পরিশেষেঃ

নাস্তিকরা কোনো যুক্তি প্রথমে পেশ করলে সেই একই যুক্তি তাদের বিরুদ্ধে গেলে সেটা নাস্তিক্যধর্ম দিয়ে কিভাবে সমাধান করা হবে? নাস্তিকরা কেন সুবিধাবাদী? নাস্তিকরা অবিশ্বাস করাকে কেন বিশ্বাস করে? আমাদেরকে যুক্তি মানতে হবে এই কথার প্রতিও বিশ্বাস করা হচ্ছে তাহলে বিশ্বাস করা সার্বজনীনভাবে খারাপ কিভাবে? নাস্তিকতায় মানবতার সমাধান কিভাবে দিবে? কারা দিবে? কোথায় দিবে?এই সমাধান কারা করবে এবং কেন করবে? এই সমাধান কোথায় করা হবে?

বিবর্তনবাদ বিষয় সব বিজ্ঞানীরা একমত না কেন? বিজ্ঞানে একমত বলে কিছু আছে? যদি উত্তর yes হয় তাহলে সেটা কেন? যদি উত্তর No হয় তাহলে সত্যর অস্তিত্বর প্রমান কিভাবে পাওয়া যাবে? কি দিয়ে পাওয়া যাবে? মরে গেলে সব শেষ হয়ে গেলে দুনিয়াতে সত্য জেনে লাভ কি? মিথ্যা পথে চললেই বা ক্ষতি কি? বাতাস কেন সৃষ্টি হলো? কেন এবং কি দিয়ে বাতাস বানানো হয়েছে? সময় বানানোর উপাদান কি?এই উপাদানের স্রস্টা কে?মহাবিশ্ব সৃষ্টির উপাদান কি দিয়ে তৈরি এবং কিভাবে সৃষ্টি হলো? কেন তৈরি হলো? মহা বিস্ফোরণ কেন হলো? কোনো কিছু বাস্ট হলে সেখান থেকে অর্থময় কিছু কিভাবে তৈরি হওয়া পসিবল?

 আমরা কেন বিশ্বাস করি বিজ্ঞান যা বলবে সেটাই একমাত্র সত্যি? আমরা নিজেরা আমাদের "চিন্তাশক্তি" বস্তু দিয়ে প্রমান করতে পারি না কিন্তু তারপরেও বিশ্বাস করি আমাদের চিন্তাশক্তি আছে তাহলে স্রস্টার অস্তিত্বের ক্ষেত্রে আসলেই কেন আমরা তাকে সরাসরি দেখতে চাই? আমরা কি বিশ্বাস করি আমরা অনুভব করতে পারি? আমরা অনুভুব করি এটা আমরা কেন বিশ্বাস করি?আমরা যে অস্তিত্বশীল সেটার প্রমান কি দিয়ে প্রমান করা পসিবল এবং কিভাবে? মস্তিস্ক কেন চিন্তা করে? ক্ষুধা কেন লাগে? উট কেন সৃষ্টি হলো ও কে বানিয়েছে? ধরুন "স্রস্টা নেই" এটিই স্রস্টার অস্তিত্বের প্রমান এই কথা দুনিয়ার সব মানুষ মেনে নিলে সেটা ভুল কিভাবে  সর্বজনীনভাবে প্রমাণ করা সম্ভব?

এমডি আলী

যিনি একজন লেখক, বিতার্কিক ও গবেষক। বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ বিষয় পড়াশোনা করেন। ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। “সত্যের অনুভূতি” উনার লেখা প্রথম বই। “ফ্যান্টাস্টিক হামজা” দ্বিতীয় বই। জবাব দেবার পাশাপাশি নাস্তিক মুক্তমনাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে থাকেন।

Previous Post Next Post